hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হাফেয ইবন কাসীরের তাফসীর থেকে সংক্ষেপিত সূরা আল-আনফালের তাফসীর

লেখকঃ শাইখ আহমদ মুহাম্মাদ শাকের

২০
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দেওয়ার নির্দেশ:
ইমাম বুখারী রহ. বলেন, اسْتَجِيبُوا “ডাকে সাড়া দাও” لِمَا يُحْيِيكُمْ “যা তোমাদের মাঝে জীবন সঞ্চার করে” যা তোমাদেরকে সংশোধন করে। আবু সা‘ঈদ ইবনুল মু‘আল্লা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সালাতে রত ছিলাম এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে ডাক দেন; কিন্তু আমি সালাত আদায় করার পরে তাঁর নিকট আসি, তখন তিনি বলেন, «مَا مَنَعَكَ أَنْ تَأْتِيَنِي؟»أَلَمْ يَقُلِ اللَّهُ : يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ “কিসে তোমাকে আমার নিকট আসতে বাধা দিয়ে রেখেছিল? আল্লাহ কি বলেন নি? يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দাও যখন তোমাদেরকে ডাকা হয় (এমন বিষয়ের দিকে) যা তোমাদের মাঝে জীবন সঞ্চার করে” এরপর তিনি বলেন, আমি বের হয়ে যাওয়ার পূর্বে তোমাকে কুরআনের সবচেয়ে সম্মানিত সূরাটি শিক্ষা দিব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে যেতে উদ্যত হন, আমি তাঁকে (বিষয়টি) স্মরণ করিয়ে দেই। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হাফ্স ইবন ‘আসিম আবু সা‘ঈদ (যিনি) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের অন্যতম তাঁকে এ সম্পর্কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, তা হলো, الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সমগ্র সৃষ্টির রব” তা হচ্ছে সাতটি বারংবার পঠিতব্য আয়াত। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৫৪৭]

মুজাহিদ রহ. বলেন, لِمَا يُحْيِيكُمْ অর্থাৎ হকের জন্য। কাতাদাহ বলেন, لما يحييكم আর তা হলো, কুরআন; যাতে রয়েছে নাজাত, বাকী থাকা ও জীবন।

সুদ্দি রহ. বলেন, ইসলামের মধ্যে রয়েছে তাদের পূণরায় জীবন; কুফুরীর কারণে তা মৃত হয়ে যাওয়ার পর। যুদ্ধের জন্য; যার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা অপমানিত হওয়ার পরে তোমাদেরকে সম্মানিত করেন, দুর্বলতার পরে তোমাদেরকে শক্তিশালী করেন আর তোমাদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর পরে শত্রুদেরকে তোমাদের থেকে বাধা দেন।

আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মধ্যবর্তী হয়ে থাকেন:

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ “আর জেনে রেখ যে আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মধ্যবর্তী হয়ে থাকেন” আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, মুমিন এবং কুফুরীর মধ্যবর্তী হয়ে থাকেন এবং কাফের ও ঈমানের মধ্যবর্তী হয়। হাকিম তাঁর মুস্তাদরাকে মাওকূফরূপে এর উল্লেখ করেছেন আর তিনি বলেন, বর্ণনাটি বিশুদ্ধ কিন্তু ইমাম বুখারী ও মুসলিম তাদের গ্রন্থদ্বয়ে এটি উল্লেখ করেন নি। অনুরূপ মত পোষণ করেছেন মুজাহিদ, সা‘ঈদ, ইকরিমা, দাহ্হাক, আবু সালিহ, আতিয়্যাহ, মুকাতিল ইবন হাইইয়ান এবং সুদ্দী রহ.। মুজাহিদ রহ. এর এক বর্ণনায় রয়েছে, তিনি يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ “আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মধ্যবর্তী হয়ে থাকেন” এ আয়াত সম্পর্কে বলেন, তারা বোঝে না এরূপ অবস্থায় তাদের রেখে দেন। সুদ্দী রহ. বলেন, মানুষ এবং তার অন্তরের মধ্যবর্তী হন ফলে সে তার অনুমতি ছাড়া ঈমান আনতে পারে না, কুফুরী করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বহু হাদীস এ বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে যা এ আয়াতের সাথে সম্পর্ক রাখে। কাতাদাহ রহ. বলেন, এটি আল্লাহর বাণী ﴿وَنَحۡنُ أَقۡرَبُ إِلَيۡهِ مِنۡ حَبۡلِ ٱلۡوَرِيدِ ١٦﴾ [ق: ١٦ ]এর মতো।

ইমাম আহমাদ রহ. বর্ণনা করেন, আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি এ দো‘আ করতেন: يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلى دِيْنِكَ ‘হে অন্তরের পরিবর্তনকারী, আপনি আমার অন্তর আপনার দীনের ওপর অটল রাখুন’। তিনি বলেন, আমরা বলি: হে আল্লাহর রাসূল, আমরা আপনার ওপর এবং আপনি যা নিয়ে এসেছেন তার ওপর ঈমান এনেছি, আপনি কি আমাদের ব্যাপারে আশঙ্কা করেন? তিনি বলেন, نَعَمْ إِنَّ الْقُلُوبَ بَيْنَ أصبعين من أصابع الله تعالى يقلبها ‘হাঁ, নিশ্চয় অন্তরসমূহ আল্লাহ তা‘আলার আঙ্গুলসমূহের মধ্য হতে দু’আঙ্গুলের মাঝে থাকে তিনি সেগুলো উলট-পালট করেন। এভাবে ইমাম তিরমিযী (হাদীস নং ২১৪০) তার ‘জামে‘ গ্রন্থের কাদর অধ্যায়ে এর উল্লেখ করেছেন আর তিনি বলেন, (হাদীসটি) হাসান। [ইমাম আহমাদ রহ. নাওয়াস ইবন সাম‘আন আল-কিলাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, «مَا مِنْ قَلْبٍ إِلَّا وَهُوَ بَيْنُ أُصْبُعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ الرَّحْمَنِ رَبِّ الْعَالَمِينَ إِذَا شَاءَ أَنْ يُقِيمَهُ أَقَامَهُ، وإن شَاءَ أَنْ يُزِيغَهُ أَزَاغَهُ» “যে কোনো অন্তর সমগ্র বিশ্বের রব দয়াময়ের আঙ্গুলসমূহের দুই আঙ্গুলের মাঝে থাকে, তিনি যখন সেটাকে প্রতিষ্ঠিত রাখার ইচ্ছা করেন, তখন প্রতিষ্ঠিত রাখেন আর যখন তাতে বক্রতা আনয়নের ইচ্ছা করেন সেটাকে বাঁকিয়ে দেন”। আর তিনি বলতেন: يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلى دِيْنِكَ “হে অন্তরের পরিবর্তনকারী, আপনি আমার অন্তর আপনার দীনের ওপর অটল রাখুন”। তিনি বলেন, «والميزان بيد الرحمن يخفضه ويرفعه» “দাঁড়িপাল্লা দয়াময়ের হাতে রয়েছে, তিনি তাকে নিচে নামান আবার উপরে তোলেন”। এভাবে নাসাঈ (হাদীস নং ৭৭৩৮) এবং ইবন মাজাহ (হাদীস নং ১৯৯) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। (অনুবাদক)]

ইমাম আহমাদ রহ. বলেন, উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে হাদীস বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ يُكْثِرُ فِي دُعَائِهِ يقول : «اللَّهُمَّ مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ» قَالَتْ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ الله أن القَلْبَ لَتُقَلَّبُ؟ قَالَ : «نَعَمْ مَا خَلَقَ اللَّهُ مِنْ بَشَرٍ مِنْ بَنِي آدَمَ إِلَّا أَنَّ قَلْبَهُ بَيْنَ أُصْبُعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ اللَّهِ عزَّ وجلَّ، فَإِنْ شَاءَ أَقَامَهُ، وَإِنْ شَاءَ أَزَاغَهُ . فَنَسْأَلُ الله ربنا أن لا يزيع قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَانَا، وَنَسْأَلُهُ أَنْ يَهَبَ لَنَا مِنْ لَدُنْهُ رَحْمَةً إِنَّهُ هُوَ الْوَهَّابُ» قالت، فقلت : يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلَا تُعَلِّمُنِي دَعْوَةً أَدْعُو بِهَا لِنَفْسِي؟ قَالَ : «بَلَى، قُولِي اللَّهُمَّ رَبَّ النَّبِيِّ مُحَمَّدٍ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، وَأَذْهِبْ غَيْظَ قَلْبِي، وَأَجِرْنِي مِنْ مُضِلَّاتِ الْفِتَنِ مَا أَحْيَيْتَنِي» .

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো‘আতে এ কথা অধিকহারে বলতেন, «اللَّهُمَّ مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ» আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! অন্তর পরিবর্তন হয়? বলল, হ্যাঁ আল্লাহ তা‘আলা এমন কোনো আদম সন্তান সৃষ্টি করেন নি, তবে প্রত্যেকের অন্তর সমগ্র বিশ্বের রব দয়াময়ের আঙ্গুলসমূহের দুই আঙ্গুলের মাঝে থাকে, তিনি যখন সেটাকে প্রতিষ্ঠিত রাখার ইচ্ছা করেন তখন প্রতিষ্ঠিত রাখেন আর যখন তাতে বক্রতা আনয়নের ইচ্ছা করেন সেটাকে বাঁকিয়ে দেন। আমরা আল্লাহর কাছে কামনা করি, তিনি যেন আমাদের অন্তরকে হিদায়াতের পর বক্র করে না দেন। আর আমরা তার কাছে চাই তিনি যেন আমাদের তার নিজের পক্ষ থেকে রহমত দান করেন। তিনি বলেন, আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল আপনি আমাকে এমন একটি দো‘আ শিখিয়ে দিন যদ্বারা আমি আমার অন্তরের জন্য দো‘আ করব। তিনি বললেন, তুমি এ দো‘আ পড় - اللَّهُمَّ رَبَّ النَّبِيِّ مُحَمَّدٍ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، وَأَذْهِبْ غَيْظَ قَلْبِي، وَأَجِرْنِي مِنْ مُضِلَّاتِ الْفِتَنِ مَا أَحْيَيْتَنِي “হে আল্লাহ তুমি নবী মুহাম্মাদের রব, আমার গুনাহ ক্ষমা কর, আমার অন্তরের ক্ষোভ দূর কর, যতদিন তুমি আমাকে বাঁচিয়ে রাখ, আমাকে ফিতনার গোমরাহী থেকে পরিত্রাণ দাও”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫২২। তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান, মুসনাদ: ৬/৩০১]

ইমাম আহমদ রহ. আব্দুল্লাহ ইবন আমর থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামকে বলতে শুনেছেন... “বান্দাগণের অন্তরসমূহ সমগ্র বিশ্বের রব দয়াময়ের আঙ্গুলসমূহের দুই আঙ্গুলের মাঝে থাকে, এক অন্তরের মতো। তিনি যেভাবে চান পরিবর্তন করেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে অন্তরসমূহ পরিবর্তনকারী দয়াময় আল্লাহ, তুমি আমাদের অন্তরসমূহকে তোমার আদেশের অনুসরণ করার দিক ফিরিয়ে দাও। এ হাদীস কেবল ইমাম মুসলিম (২৬৫৪) বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন নি”।

﴿وَٱتَّقُواْ فِتۡنَةٗ لَّا تُصِيبَنَّ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنكُمۡ خَآصَّةٗۖ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٢٥﴾ [ الانفال : ٢٥ ]

অর্থানুবাদ:

“সতর্ক থাক সেই ফিতনা থেকে যা বিশেষভাবে তোমাদের যালিম লোকেদের মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে না আর জেনে রেখ, যে আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২৪]

তাফসীর:

চারিদিক থেকে বেষ্টনকারী ফিৎনা থেকে সতর্কীকরণ:

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে ফিতনা এবং পরীক্ষার সতর্ক করছেন যা দুর্বল এবং তাদের পাশে যারা রয়েছে তাদেরকে বেষ্টন করে ফেলবে। এতে শুধুমাত্র গোনাহগার এবং মন্দ লোকেরাই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং সকলের নিকট তা পৌঁছে যাবে যদি গোনাহ বন্ধ না হয়। যেমন, ইমাম আহমাদ রহ. বর্ণনা করেন, মুতাররিফ রহ. বলেন, আমরা যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস করি: হে আবু আব্দুল্লাহ, তোমরা কী নিয়ে এসেছ? (উটের যুদ্ধের জন্য) তোমরা খলীফাকে পরিত্যাগ করেছ যিনি নিহত হয়েছেন। এরপর তোমরা তাঁর রক্তপণের দাবি নিয়ে এসেছ? ফলে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর, উমার এবং উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম-এর যুগে পাঠ করতাম وَٱتَّقُواْ فِتۡنَةٗ لَّا تُصِيبَنَّ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنكُمۡ خَآصَّةٗۖ “সতর্ক থাক সেই ফিতনা থেকে যা বিশেষভাবে তোমাদের যালিম লোকেদের মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে না” তবে আমরা ভাবিনি যে, এতে আমরাও পতিত হব; কিন্তু এখন আমাদের থেকে যা ঘটার ঘটে গেছে। [আহমদ, নাসাঈ হাদীস নং ১১২০৬; বাযযার হাদীস নং ৯৭৬। (যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আয়াতটি আমরা দীর্ঘ সময় তিলাওয়াত করি, তবে আমরা নিজেদের তার আওতাধীন মনে করতাম না। কিন্তু দেখা গেল আমরাই এ আয়াতের নির্দিষ্ট যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَٱتَّقُواْ فِتۡنَةٗ لَّا تُصِيبَنَّ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنكُمۡ خَآصَّةٗۖ “সতর্ক থাক সেই ফিতনা থেকে যা বিশেষভাবে তোমাদের যালিম লোকেদের মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে না”। (অনুবাদক)] হাসান রহ. বলেন, এ আয়াত আলী, আম্মার, তালহা ও যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম সম্পর্কে নাযিল হয়। আর সুদ্দি রহ. বলেন, আয়াতটি বিশেষ করে বদরী সাহাবীগণের শানে নাযিল হয়, জামালের দিন তারা ফিতনায় আক্রান্ত হয় এবং পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে তাঁর অপর এক বর্ণনায় এ আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে এসেছে: আল্লাহ তা‘আলা মুমিনগণকে নির্দেশ দেন তারা যেন তাদের মাঝে মন্দ কাজে স্বীকৃতি না দেয় নইলে আল্লাহ তা‘আলার আযাব তাদেরকেও শামিল করে নিবে। এ ধরণের তাফসীর খুবই সুন্দর। এ কারণে মুজাহিদ রহ. وَٱتَّقُواْ فِتۡنَةٗ لَّا تُصِيبَنَّ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنكُمۡ خَآصَّةٗۖ “সতর্ক থাক সেই ফিতনা থেকে যা বিশেষভাবে তোমাদের যালিম লোকেদের মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে না” এ আয়াত সম্পর্কে বলেন, এটি তোমাদের জন্যও। অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন দাহ্হাক, ইয়াযীদ ইবন আবু হাবীব সহ অন্যান্যারা। [আলী ইবন আবু তালহা বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এ আয়াতটি সম্পর্কে বলেন, এখানে বিশেষভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। তবে এ কথা বলা যে, এখানে সতর্কিকরণ সাহাবী ও অন্যান্যরা সবাই শামিল তা উত্তম এবং অধিক শুদ্ধ। এ মতের পক্ষে ফিতনা থেকে সতর্ক বিষয়ক হাদীসগুলো দলীলস্বরূপ। (অনুবাদক)] আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তোমাদের প্রত্যেকেই ফিতনার মধ্যে শামিল রয়েছ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّمَآ أَمۡوَٰلُكُمۡ وَأَوۡلَٰدُكُمۡ فِتۡنَةٞۚ ١٥﴾ [ التغابن : ١٥ ] “তোমাদের ধন-সম্পদ আর সন্তানাদি পরীক্ষা (এর বস্তু) মাত্র”। [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৫] তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আশ্রয় চায় সে যেন ফিতনার গোমরাহী থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশ্রয় চায়।

এখানে কথা হচ্ছে এ সতর্কতার মধ্যে সাহাবী এবং অন্যান্যরাও শামিল। যদিও তাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে, তাই সঠিক। ফিতনা থেকে সতর্কীকরণ সংক্রান্ত বর্ণিত হাদীসসমূহ এ ব্যাপারে প্রমাণ করে। [ইমাম আহমাদ রহ. আদী ইবন উমাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, «إِنَّ اللَّهَ عزَّ وجلَّ لَا يُعَذِّبُ الْعَامَّةَ بِعَمَلِ الْخَاصَّةِ حَتَّى يَرَوُا الْمُنْكَرَ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ وَهُمْ قَادِرُونَ عَلَى أَنْ يُنْكِرُوهُ فَلَا يُنْكِرُوهُ، فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَذَّبَ اللَّهُ الخاصة والعامة» “আল্লাহ তা‘আলা বিশেষ লোকদের কু-কর্মের কারণে সর্ব সাধারণকে শাস্তি দেন না। কিন্তু যখন তারা প্রকাশ্য নাফরমানী সংঘটিত হতে দেখেন এবং তারা তা প্রতিহত করতে সক্ষম কিন্তু করে না, তখন আল্লাহ তা‘আলা সাধারণ ও বিশেষ লোক সবাইকে আযাব দেন”। (অনুবাদক) বর্ণনায় আহমাদ: (৪/১৯২) ইবন কাসীর রহ. বলেন, হাদীসটি ছয়টি কিতাবে উল্লেখ করা হয় নি। হাদীসের সনদে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি রয়েছেন।] অপর হাদীস ইমাম আহমদ রহ. হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: «وَالَّذِي نَفْسِي بيده لتأمرن بالمعروف ولتنهن عَنِ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْ عِنْدِهِ، ثُمَّ لَتَدْعُنَّهُ فَلَا يستجيب لكم» “যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে নয়ত আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর শাস্তি প্রেরণ করবেন এরপর তোমরা দো‘আ করবে; কিন্তু তিনি তোমাদের দো‘আ কবুল করবেন না”। [মুসনাদ ৫/৩৮৮; অপর একটি হাদীস—ইমাম আহমাদ রহ. বর্ণনা করেন, আবুর রিক্বাদ রহ. বলেন, আমি হুযাইফা রাদিয়াল্লাহ ‘আনহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কোনো ব্যক্তি (চরম) কোনো কথা বলার কারণে মুনাফিক হয়ে যেত, আর এখন তোমাদের থেকে এ জাতীয় কথা একই বৈঠকে চারবার শুনতে পাচ্ছি। তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ দিবে আর অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে আর একে অপরকে ভালোকাজে উৎসাহিত করবে নয়ত আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সকলকে তাঁর শাস্তিতে নিমজ্জিত করবেন অথবা তোমাদের ওপর তোমাদের মধ্যেকার মন্দ লোককে ক্ষমতায় বসাবেন, এরপর তোমাদের ভালো লোকেরা দো‘আ করবে কিন্তু তাদের দো‘আ কবুল করা হবে না। মুসনাদ ৫/৩৯০। (অনুবাদক)]

ইমাম আহমাদ রহ. আরও একটি হাদীস বর্ণনা করেন, নু‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবা দেন এ সময় তিনি তাঁর দুই আঙ্গুল দ্বারা তাঁর দু’কানে ইঙ্গিত করে বলেন, مَثَلُ الْقَائِمِ عَلَى حُدُودِ اللَّهِ وَالْوَاقِعِ فِيهَا والمدهن فِيهَا كَمَثَلِ قَوْمٍ رَكِبُوا سَفِينَةً فَأَصَابَ بَعْضُهُمْ أَسْفَلَهَا وَأَوْعَرَهَا وَشَرَّهَا، وَأَصَابَ بَعْضُهُمْ أَعْلَاهَا، فَكَانَ الَّذِينَ فِي أَسْفَلِهَا إِذَا اسْتَقَوُا الْمَاءَ مَرُّوا عَلَى مَنْ فَوْقَهُمْ فَآذُوهُمْ، فَقَالُوا : لَوْ خَرَقْنَا فِي نَصِيبِنَا خَرْقًا فَاسْتَقَيْنَا مِنْهُ وَلَمْ نُؤْذِ مَنْ فَوْقَنَا ! فَإِنْ تَرَكُوهُمْ وَأَمْرَهُمْ هَلَكُوا جَمِيعًا، وإن أخذوا على أيديهم نجوا جميعاً . “আল্লাহ তা‘আলার সীমারেখার (নির্দেশের) ওপর প্রতিষ্ঠিত আর তাতে বিদ্যমান ব্যক্তি এবং যে আল্লাহ তা‘আলার সীমারেখা লঙ্ঘন করে তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে একদল লোকের মত যারা নৌকায় আরোহণ করে, এদের কেউ নৌকার নিচের তলায় আরোহণ করে যা নৌকাটির নিকৃষ্ট অংশ ও কষ্টদায়ক অংশ, আর কেউ উপরের তলায় আরোহণ করে, নিচের তলার লোকেরা পানি সংগ্রহের জন্য উপরের তলায় গেলে তারা অস্বস্তি বোধ করে, ফলে তারা (নিচের তলার লোকেরা) বলে: আমরা যদি আমাদের অংশটিতে ফুটো করে নেই তাহলে আমরা এ থেকে পানি সংগ্রহ করতে পারব আর আমাদের দ্বারা উপরের তলার লোকেরা কষ্ট পাবে না। এখন যদি উপরের তলার লোকেরা তাদেরকে তাদের কাজে ছেড়ে দেয় তবে সকলে ধ্বংস হয়ে যাবে; কিন্তু যদি তারা তাদেরকে এ কাজে বাধা দেয় তবে তারা সকলে পরিত্রাণ পাবে”। [ইমাম বুখারী (হাদীস নং ২৪৯৩) এককভাবে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন, ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন নি, তারা সকলে অংশীদার এবং সাক্ষ্য প্রদানের অধ্যায়ে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (হাদীস নং ২১৭৩) কর্তৃকও বিভিন্ন সূত্রে ফিতনার অধ্যায়ে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।]

অন্য হাদীস: ইমাম আহমাদ রহ. বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী উম্মু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, «إِذَا ظَهَرَتِ الْمَعَاصِي فِي أُمَّتِي عَمَّهُمُ اللَّهُ بِعَذَابٍ مِّنْ عِنْدِهِ» فَقُلْتُ؟ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَمَا فِيهِمْ أُنَاسٌ صَالِحُونَ؟ قَالَ : «بَلَى» قَالَتْ : فَكَيْفَ يَصْنَعُ أُولَئِكَ؟ قَالَ : «يُصِيبُهُمْ مَا أَصَابَ النَّاسُ ثُمَّ يَصِيرُونَ إلى مَغْفِرَةٍ مِّن الله ورضوان» “আমার উম্মাতের মাঝে যদি পাপাচারিতা প্রকাশ পায় তবে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পক্ষ থেকে সকলকে শাস্তি প্রদান করবেন”। আমি বলি: হে আল্লাহর রাসূল, তাদের মাঝে কি সৎকর্মশীল বান্দা নেই? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অবশ্যই”, তিনি বলেন, তবে তাদের কী হবে? “তারাও লোকেদের মতো আক্রান্ত হবে তবে তাদের পরিসমাপ্তি ঘটবে আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমা ও সন্তুষ্টি নিয়ে”। [মুসনাদ ৬/৩০৪ অপর হাদীস, ইমাম আহমাদ রহ. আরও বর্ণনা করেন, জারির রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: «مَا مِنْ قَوْمٍ يَعْمَلُونَ بِالْمَعَاصِي وَفِيهِمْ رَجُلٌ أعز منهم ولا أمنع لا يغيّره،إِلَّا عَمَّهُمُ اللَّهُ بِعِقَابٍ أَوْ أَصَابَهُمُ الْعِقَابُ» “যখন কোনো কাওমের মাঝে গোনাহ সংঘটিত হয় আর এতে লিপ্ত থাকা লোকদের চেয়ে এ থেকে বিরত থাকা লোকেরা অধিক শক্তিশালী ও সংখ্যায় বেশি হয়; কিন্তু তারপরও তারা তাদেরকে এ থেকে নিষেধ করে না, তবে আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলকে শাস্তি প্রদান করবেন”। (ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪০০৯)। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে অপর একটি মারফু‘ হাদীস বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «إِذَا ظَهَرَ السُّوءُ فِي الْأَرْضِ أَنْزَلَ اللَّهُ بأهل الأرض بأسه» فقلت : وَفِيهِمْ أَهْلُ طَاعَةِ اللَّهِ؟ قَالَ : «نَعَمْ ثُمَّ يصيرون إلى رحمة الله» “যখন জমিনে অশ্লীলতা প্রকাশ পাবে, আল্লাহ তা‘আলা জমিনবাসীর ওপর তার আযাব নাযিল করবেন। আমি বললাম, তাদের মধ্যে আল্লাহ হুকুম মান্যকারী থাকবে না? বলল, হ্যাঁ, তারপর তারা আল্লাহর রহমতের দিকে যাবে”। (অনুবাদক) মুসনাদ: ৬/৪১]

﴿وَٱذۡكُرُوٓاْ إِذۡ أَنتُمۡ قَلِيلٞ مُّسۡتَضۡعَفُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ تَخَافُونَ أَن يَتَخَطَّفَكُمُ ٱلنَّاسُ فَ‍َٔاوَىٰكُمۡ وَأَيَّدَكُم بِنَصۡرِهِۦ وَرَزَقَكُم مِّنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ٢٦﴾ [ الانفال : ٢٦ ]

অর্থানুবাদ:

“স্মরণ কর সে সময়ের কথা যখন তোমরা ছিলে সংখ্যায় অল্প, দুনিয়াতে তোমাদেরকে দুর্বল হিসেবে গণ্য করা হত। তোমরা আশঙ্কা করতে যে, মানুষেরা তোমাদের কখন না হঠাৎ ধরে নিয়ে যায়। এমন অবস্থায় তিনি তোমাদেরকে আশ্রয় দিলেন, তাঁর সাহায্য দিয়ে তোমাদেরকে শক্তিশালী করলেন, তোমাদের উত্তম জীবিকা দান করলেন যাতে তোমরা (তাঁর নির্দেশ পালনের মাধ্যমে) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২৬]

তাফসীর:

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন