hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হাফেয ইবন কাসীরের তাফসীর থেকে সংক্ষেপিত সূরা আল-আনফালের তাফসীর

লেখকঃ শাইখ আহমদ মুহাম্মাদ শাকের

৩৪
শত্রুদের মুকবিলা করার সময় দৃঢ় থাকার নির্দেশ:
আল্লাহ তা‘আলা শত্রুদের সাথে যুদ্ধের সময় দৃঢ় থাকার এবং তাদের সাথে লড়াই করার মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ প্রদান করেন, কাজেই তারা পালিয়ে যাবে না, ভয় পেয়ে সরে পড়বে না, ভীরুতা দেখাবে না। সে অবস্থায় তারা আল্লাহকে স্মরণ করবে, তাঁকে ভুলে যাবে না; বরং তাঁর কাছে সাহায্য চাইবে এবং তাঁর ওপর ভরসা করবে, শত্রুদের বিরুদ্ধে তাঁর কাছে সাহায্য চাইবে। আর সে অবস্থায় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে যে নির্দেশ দেন সেগুলো তারা পালন করবে আর যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকবে, তারা নিজেরা আপসে বিবাদে লিপ্ত হবে না, ফলে তাদের মাঝে মতভেদের সৃষ্টি হবে আর সেটা তাদের দুর্বলতা এবং ব্যর্থতার কারণ হবে। وَتَذۡهَبَ رِيحُكُمۡۖ “তোমাদের শক্তি-ক্ষমতা বিলুপ্ত হবে” অর্থাৎ তোমাদের শক্তি, তোমাদের ঐক্য এবং তোমাদের যে মনোযোগ রয়েছে (তা চলে যাবে)। وَٱصۡبِرُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ “আর ধৈর্য ধারণ করবে, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন” সাহাবীগণের ছিল এমন সাহসিকতা এবং তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশের প্রতি ছিলেন এতটা আনুগত্যশীল আর তারা তাদেরকে যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন তা এতটা পালনকারী, যা তাদের পূর্বে কোনো জাতির মাঝে এবং তাদের পূর্বের শতাব্দিগুলোতে দেখা যায় নি, আর তাদের পরে যারা এসেছে তাদের মাঝেও দেখা যায় নি। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যের কল্যাণে এবং তিনি তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তার প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে তাদের আল্লাহ তাদের অন্তরগুলোকে উন্মোচন করে দেন। আর অল্প সময়ের মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিমে বিভিন্ন অঞ্চল তারা জয় করেছিল। অথচ ঐ সমস্ত অঞ্চলগুলোর সৈন্যসামন্তদের সংখ্যার তুলনায় তাদের সংখ্যা ছিল নিতান্ত অল্প। যেমন, রোম, পারস্য, তুরস্ক, পূর্ব ইউরোপ, বার্বার, ইথিওপিয়া, সুদানের কিছু অঞ্চল, মিসরীয় এলাকা এবং আদম সন্তানদের আরও অনেক। তারা তাদের সকলের ওপর বিজয়ী হয়েছিল অবশেষে আল্লাহর বাণী উর্ধ্বে উন্নীত হয়। আর সমস্ত দীনের ওপর তাঁর দীন বিজয় লাভ করে, ত্রিশ বৎসরের কম সময়ে ইসলামী সাম্রাজ্য দুনিয়ার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে সম্প্রসারিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর সন্তুষ্ট হোন আর তাদের সকলকে তিনি সন্তুষ্ট করুন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত করুন, নিশ্চয় তিনি উদার এবং দানশীল।

﴿وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ خَرَجُواْ مِن دِيَٰرِهِم بَطَرٗا وَرِئَآءَ ٱلنَّاسِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۚ وَٱللَّهُ بِمَا يَعۡمَلُونَ مُحِيطٞ ٤٧ وَإِذۡ زَيَّنَ لَهُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَعۡمَٰلَهُمۡ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ ٱلۡيَوۡمَ مِنَ ٱلنَّاسِ وَإِنِّي جَارٞ لَّكُمۡۖ فَلَمَّا تَرَآءَتِ ٱلۡفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَىٰ عَقِبَيۡهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيٓءٞ مِّنكُمۡ إِنِّيٓ أَرَىٰ مَا لَا تَرَوۡنَ إِنِّيٓ أَخَافُ ٱللَّهَۚ وَٱللَّهُ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٤٨ إِذۡ يَقُولُ ٱلۡمُنَٰفِقُونَ وَٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ غَرَّ هَٰٓؤُلَآءِ دِينُهُمۡۗ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَإِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٤٩﴾ [ الانفال : ٤٧، ٤٩ ]

অর্থানুবাদ:

“তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা গর্ব অহঙ্কারসহ লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহর পথে বাধা দেওয়ার জন্য নিজেদের ঘর থেকে বের হয়েছিল। তারা যা কিছুই করুক না কেন, আল্লাহ তাদেরকে ঘিরে রেখেছেন। স্মরণ কর, যখন শয়তান তাদের কার্যকলাপকে তাদের দৃষ্টিতে খুবই চাকচিক্যময় করে দেখিয়েছিল আর তাদেরকে বলেছিল, ‘আজ তোমাদেরকে পরাজিত করতে পারে মানুষের মাঝে এমন কেউই নেই, আমি তোমাদের পাশেই আছি।’ অতঃপর দল দু’টি যখন পরস্পরের দৃষ্টির হলো তখন সে পিছনে সরে পড়ল আর বলল, ‘তোমাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্কই নেই, আমি তো দেখি (কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহর নাযিলকৃত ফিরিশতা) যা তোমরা দেখতে পাও না, আমি অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করি। কেননা আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর। যখন মুনাফিকরা আর যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা বলে, ‘এ লোকগুলোকে তাদের দীন ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে’। (কিন্তু আসল ব্যাপার হলো) কেউ যদি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাহলে আল্লাহ তো প্রবল পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞানী”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৪৭-৪৯]

তাফসীর:

বদরের দিন মুশরিকরা যেভাবে বের হয়:

আল্লাহ তা‘আলা মুমিনগণকে নির্দেশ প্রদান করেন তারা যেন তাঁর পথে আন্তরিকভাবে যুদ্ধ করে, বেশি বেশি তাঁর যিকির করে, আর তাদেরকে মুশরিকদের মতো নিজেদের গৃহ থেকে বের হয়ে আসতে নিষেধ করেন, بَطَرٗا “দম্ভভরে” সত্যকে প্রতিহত করে, وَرِئَآءَ ٱلنَّاسِ “লোক দেখানোর জন্য” অর্থাৎ তাদের ওপর গর্ব অহঙ্কার প্রকাশ করা। যেমন, আবু জাহলকে যখন বলা হয়: বাণিজ্য কাফেলা বেঁচে গেছে কাজেই ফিরে চল, তখন সে বলল: না, আল্লাহর শপথ, আমরা ফিরে যাব না যতক্ষণ না বদরের কূপে এসে উপনিত হই, উট কুরবাণী করি, মদ পান করি, আর গায়িকারা আমাদেরকে গান গেয়ে শুনায়, আর আরবরা সর্বদাই আমাদের অবস্থান আর আমরা যা করেছি এ সম্পর্কে আলোচনা করবে; কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণরূপে তার বিপরীতে চলে যায়। কেননা তারা যখন বদরের কূপে এসে উপনীত হয় তখন তারা নিজেদেরকে মৃত্যুর নিকট নিয়ে আসে, (বদরে তাদের শেষ পরিণতি ছিল) তাদেরকে বদরের কূপে অপমান-অপদস্থ করে নিক্ষেপ করা হয়, তারা চিরকালের শাস্তির মধ্যে দুর্বিসহ জীবন-যাপন করে। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَٱللَّهُ بِمَا يَعۡمَلُونَ مُحِيطٞ “তারা যা কিছুই করুক না কেন, আল্লাহ তাদেরকে ঘিরে রেখেছেন” অর্থাৎ তিনি জানেন তারা কীভাবে এবং কী নিয়ে এসেছে? এ কারণে তিনি তাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি প্রদান করবেন। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা, মুজাহিদ, কাতাদা, দাহ্হাক, সুদ্দী রহ. وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ خَرَجُواْ مِن دِيَٰرِهِم بَطَرٗا وَرِئَآءَ ٱلنَّاسِ “তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা গর্ব অহঙ্কারসহ লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহর পথে বাধা দেওয়ার জন্য নিজেদের ঘর থেকে বের হয়েছিল” তারা বলেন, এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত মুশরিক যারা বদরের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। মুহাম্মাদ ইবন কা‘আব বলেন, কুরাইশরা যখন মক্কা থেকে বদরের উদ্দেশ্যে বের হয় তখন তারা গায়িকা এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বের হয়েছিল, ফলে তাদের বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা আয়াত অবতরণ করে বলেন -وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ خَرَجُواْ مِن دِيَٰرِهِم بَطَرٗا وَرِئَآءَ ٱلنَّاسِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۚ وَٱللَّهُ بِمَا يَعۡمَلُونَ مُحِيطٞ “তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা গর্ব অহঙ্কারসহ লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহর পথে বাধা দেওয়ার জন্য নিজেদের ঘর থেকে বের হয়েছিল, তারা যা কিছুই করুক না কেন, আল্লাহ তাদেরকে ঘিরে রেখেছেন”।

শয়তান কর্তৃক (মন্দকে) সুশোভিত করে দেখানো আর মুশরিকদেরকে তার বিভ্রান্ত করা:

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَإِذۡ زَيَّنَ لَهُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَعۡمَٰلَهُمۡ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ ٱلۡيَوۡمَ مِنَ ٱلنَّاسِ وَإِنِّي جَارٞ لَّكُمۡۖ “স্মরণ কর, যখন শয়তান তাদের কার্যকলাপকে তাদের দৃষ্টিতে খুবই চাকচিক্যময় করে দেখিয়েছিল আর তাদেরকে বলেছিল, ‘আজ তোমাদেরকে পরাজিত করতে পারে মানুষের মাঝে এমন কেউই নেই, আমি তোমাদের পাশেই আছি” শয়তান (তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ) মুশরিকদের পরিকল্পনা তাদের দৃষ্টিতে চাকচিক্যময় করে তোলে, আর তাদেরকে প্রলুব্ধ করে যে, এ দিনে কোনো লোকই তাদেরকে পরাজিত করতে পারবে না। আর তাদের দেশে তাদের শত্রু বনু বাকর আক্রমণ করতে আসবে এ থেকে তাদের ভয় দুর করে দেয়। আর বলে: আমি তোমাদের পড়শি, সে বানু মুদলিজের সর্দার সুরাকাহ ইবন মালিক ইবন জু‘শুমের রূপ ধরে তাদের কাছে আসে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা তার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ﴿يَعِدُهُمۡ وَيُمَنِّيهِمۡۖ وَمَا يَعِدُهُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ إِلَّا غُرُورًا ١٢٠﴾ [ النساء : ١٢٠ ] “সে তাদেরকে আশ্বাস দেয়, মিথ্যা প্রলোভন দেয়, বস্তুতঃ শয়তান তাদেরকে যে আশ্বাস দেয় তা ছলনা ছাড়া আর কিছুই নয়” আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এ আয়াত সম্পর্কে বলেন, বদর যুদ্ধের দিন ইবলিস তার পতাকা এবং তার দলবল সহ মুশরিকদের সাথে যাত্রা করে, আর মুশরিকদের অন্তরে ঢুকিয়ে দেয় এবং বলে যে لَا غَالِبَ لَكُمُ ٱلۡيَوۡمَ مِنَ ٱلنَّاسِ وَإِنِّي جَارٞ لَّكُمۡۖ কেউ তাদেরকে পরাজিত করতে পারবে না আর আমি তোমাদের পড়শি হিসেবে আছি; কিন্তু যখন মুসলিমবৃন্দের সাথে তাদের সাক্ষাত হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মুষ্টি মাটি নিয়ে মুশরিকদের দিক নিক্ষেপ করেন, শয়তান ফিরিশতাদের সাহায্য প্রত্যক্ষ করে, তখন শয়তান পলায়ন কনের نَكَصَ عَلَىٰ عَقِبَيۡهِ “তখন সে পিছনে সরে পড়ল” তিনি বলেন, পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে ফিরে যায়, আর বলে: إِنِّيٓ أَرَىٰ مَا لَا تَرَوۡنَ “আমি তো দেখি যা তোমরা দেখতে পাও না”।

আলী ইবন আবু তালহা বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, বদরের যুদ্ধে ইবলিস মুদলিজ গোত্রের সুরাকাহ ইবন মালিক ইবন জু‘শুমের আকৃতি ধরে শয়তান বাহিনীর সাথে আসে এ সময় তার সাথে ছিল পতাকা, তখন শয়তান মুশরিকদের বলে: আজ কেউ তোমাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারবে না আর আমি তোমাদের পড়শি, যখন উভয় বাহিনী মুখোমুখী হয় তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মুষ্টি বালি নিয়ে মুশরিকদের মুখে ছুঁড়ে মারেন, ফলে তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়ন করে, জিবরীল আলাইহিস সালাম ইবলিসের মুখোমুখী হন, এরপর সে যখন জিবরীল আলাইহিস সালামকে দেখে এ সময় তার হাত ছিল এক মুশরিকের হাতে, সে তখন টান মেরে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে তার বাহিনীর সাথে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়ন করে তখন সেই মুশরিক বলে, ওহে সুরাকাহ, তুমি কি মনে কর না যে, তুমি আমাদের পড়শি? সে বলে: আমি যা দেখি তোমরা তা দেখ না, আমি আল্লাহকে ভয় করি, আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা, এ কথা সে তখন বলে যখন ফিরিশতাকে প্রত্যক্ষ করে। আল্লাহর শত্রু মিথ্যা কথা বলে, আল্লাহর শপথ সে কখনোই আল্লাহকে ভয় করে না। কিন্তু সে বুঝতে পারছে যে, তার কিছু করার কোনো শক্তি নেই। যারা আল্লাহর আনুগত্য করে ও তার অনুসরণ করে তাদের ক্ষেত্রে আল্লাহর দুশমনের অভ্যাস এমনই হয়ে থাকে। এমনকি দেখা যাবে, যখন হক ও বাতিলের মাঝে যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তখন সে সময়মত তাদের ছেড়ে দেয় এবং তাদের থেকে দায় মুক্তির ঘোষণা দেয়।

আমি বলি, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿كَمَثَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ إِذۡ قَالَ لِلۡإِنسَٰنِ ٱكۡفُرۡ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّي بَرِيٓءٞ مِّنكَ إِنِّيٓ أَخَافُ ٱللَّهَ رَبَّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦﴾ [ الحشر : ١٦ ] “(এরা) শয়তানের ন্যায়, সে মানুষকে বলেছিল, ‘কুফুরী কর’, অতঃপর যখন সে কুফুরী করল তখন সে বলল, আমি তোমার থেকে মুক্ত; নিশ্চয় আমি সকল সৃষ্টির রব আল্লাহকে ভয় করি”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১৬] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَقَالَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لَمَّا قُضِيَ ٱلۡأَمۡرُ إِنَّ ٱللَّهَ وَعَدَكُمۡ وَعۡدَ ٱلۡحَقِّ وَوَعَدتُّكُمۡ فَأَخۡلَفۡتُكُمۡۖ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيۡكُم مِّن سُلۡطَٰنٍ إِلَّآ أَن دَعَوۡتُكُمۡ فَٱسۡتَجَبۡتُمۡ لِيۖ فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوٓاْ أَنفُسَكُمۖ مَّآ أَنَا۠ بِمُصۡرِخِكُمۡ وَمَآ أَنتُم بِمُصۡرِخِيَّ إِنِّي كَفَرۡتُ بِمَآ أَشۡرَكۡتُمُونِ مِن قَبۡلُۗ إِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٢٢﴾ [ ابراهيم : ٢٢ ] “আর যখন যাবতীয় বিষয়ের ফয়সালা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলেন সত্য ওয়াদা, তোমাদের ওপর আমার কোনো আধিপত্য ছিল না, তবে আমিও তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলাম, এখন আমি তা ভঙ্গ করলাম। তোমাদেরকে দাওয়াত দিয়েছি, আর তোমরা আমার দাওয়াতে সাড়া দিয়েছ। সুতরাং তোমরা আমাকে ভর্ৎসনা করো না; বরং নিজদেরকেই ভর্ৎসনা কর। আমি তোমাদের উদ্ধারকারী নই, আর তোমরাও আমার উদ্ধারকারী নও। ইতোপূর্বে তোমরা আমাকে যার সাথে শরীক করেছ, নিশ্চয় আমি তা অস্বীকার করছি। নিশ্চয় যালিমদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব’’। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ২২]

বদর যুদ্ধে মুনাফিকদের অবস্থান:

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: إِذۡ يَقُولُ ٱلۡمُنَٰفِقُونَ وَٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ غَرَّ هَٰٓؤُلَآءِ دِينُهُمۡۗ “যখন, মুনাফিক্বরা আর যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা বলে, ‘এ লোকগুলোকে তাদের দীন ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে” আলী ইবন আবু তালহা বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এ আয়াত সম্পর্কে বলেন, যখন উভয় পক্ষ পরস্পর মুখোমুখী হয় আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের চোখে মুসলিমবৃন্দের সংখ্যা কম করে দেখান, আর মুসলিমবৃন্দের চোখে মুশরিকদের সংখ্যা কম করে দেখান, তখন মুশরিকরা বলে: غَرَّ هَٰٓؤُلَآءِ دِينُهُمۡۗ তাদের দীন তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে, এ কথা তারা এ জন্য বলে কেননা তাদের চোখে মুসলিমবৃন্দের সংখ্যা কম ধরা পড়ে, তারা মনে করে যে, তারা অচিরেই পরাজিত হবে, এতে তারা বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ করে না, এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَإِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ “কেউ যদি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাহলে আল্লাহ তো প্রবল পরাক্রান্ত”।

কাতাদা রহ. বলেন, তারা একদল মুমিনকে দেখে যে, তারা আল্লাহ তা‘আলার বিধানের ব্যাপারে বড়ই কঠোর, আমাদেরকে বলা হয়েছে: আল্লাহর শত্রু আবু জাহল যখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণকে প্রত্যক্ষ করে তখন সে বলে: আল্লাহর শপথ, আজকের দিনের পর তারা আর কখনই আল্লাহর ইবাদাত করবে না, সে একথা বলে ধৃষ্টতা এবং একগুঁয়েমী বশতঃ।

মুজাহিদ রহ. বলেন, তারা হলো কুরাইশ। মক্কা থেকে কুরাইশদের সাথে বের হয়। অতঃপর সংশয় তাদের বিরত রাখে। তারা যখন রাসূলের সাহাবীগণকে দেখতে পায়, তারা বলে তাদেরকে তাদের দীন ধোঁকায় ফেলেছে, ফলে তারা তাদের নিজেদের সংখ্যা কম আর শত্রুদের সংখ্যা বেশি হওয়া সত্বেও এখানে এসেছে। একই কথা মুহাম্মদ ইবন ইসহাক ইবন ইয়াসার বলেছেন।

এ আয়াত সম্পর্কে ইবন জারির রহ. হাসান রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তারা হলো, যারা বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে নি, ফলে তাদের মুনাফিক নাম রাখা হয়। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ “কেউ যদি আল্লাহর ওপর ভরসা করে” অর্থাৎ তাঁর সম্মানের ওপর ভরসা করে, فَإِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ “তাহলে আল্লাহ তো প্রবল পরাক্রান্ত” যে ব্যক্তি তাঁর নিকট আশ্রয় নেয়, حَكِيمٞ “মহাবিজ্ঞানী” তাঁর কর্মসমূহে, তিনি সবকিছুকে তার সঠিক স্থানে রাখেন। ফলে তিনি তাকে সাহায্য করেন যে সাহায্য পাওয়ার উপযুক্ত আর তাকে অপদস্থ করেন যে তার যোগ্য।

﴿وَلَوۡ تَرَىٰٓ إِذۡ يَتَوَفَّى ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَضۡرِبُونَ وُجُوهَهُمۡ وَأَدۡبَٰرَهُمۡ وَذُوقُواْ عَذَابَ ٱلۡحَرِيقِ ٥٠ ذَٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتۡ أَيۡدِيكُمۡ وَأَنَّ ٱللَّهَ لَيۡسَ بِظَلَّٰمٖ لِّلۡعَبِيدِ ٥١﴾ [ الانفال : ٥٠، ٥١ ]

অর্থানুবাদ:

“তুমি যদি দেখতে যখন ফিরিশতারা কাফেরদের প্রাণবায়ু নির্গত করে তখন তাদের মুখে আর পিঠে প্রহার করে আর বলে অগ্নিতে দগ্ধ হওয়ার যন্ত্রণা ভোগ কর। এটি হলো তা-ই যা তোমাদের হস্তগুলো (অর্জন করে) আগে পাঠিয়েছে কেননা আল্লাহ তো তাঁর বান্দার প্রতি অত্যাচারী নন”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৫০-৫১]

তাফসীর:

ফিরিশতামণ্ডলি যখন কাফেরদের রূহগুলো কবজ করছিল তখন তাদেরকে প্রহার করা:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যদি তুমি স্বচক্ষে দেখতে, হে মুহাম্মাদ, যখন ফিরিশতারা কাফেরদের রূহগুলোকে কবজ করছিল তবে তুমি এক ভয়ানক মন্দ বিষয় দেখতে পেতে, যখন يَضۡرِبُونَ وُجُوهَهُمۡ وَأَدۡبَٰرَهُمۡ “তাদের মুখে আর পিঠে প্রহার করে” তারা তাদেরকে বলে: وَذُوقُواْ عَذَابَ ٱلۡحَرِيقِ “আর বলে অগ্নিতে দগ্ধ হওয়ার যন্ত্রণা ভোগ কর” ইবন জুরাইয বর্ণনা করেন: মুজাহিদ রহ. বলেন, وَأَدۡبَٰرَهُمۡ (পিঠে) তাদের পেছনের দিকে, তিনি বলেন, বদরের দিন। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, মুশরিকরা যখন বদর যুদ্ধে মুসলিমদের মুখোমুখী হয় তখন তারা তরবারী দ্বারা মুশরিকদের মুখে আঘাত করে, এরপর যখন তারা পলায়ন করে তখন ফিরিশতারা তাদেরকে ধরে তাদের পশ্চাৎদেশে আঘাত করে। সা‘ঈদ ইবন জুবাইর বলেন, يَضۡرِبُونَ وُجُوهَهُمۡ وَأَدۡبَٰرَهُمۡ অর্থাৎ নিতম্ব।

এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ফিরিশতারা তাদেরকে বলবে: وَذُوقُواْ عَذَابَ ٱلۡحَرِيقِ “অগ্নিতে দগ্ধ হওয়ার যন্ত্রণা ভোগ কর”।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ذَٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتۡ أَيۡدِيكُمۡ “এটি হলো তাই যা তোমাদের হস্তগুলো (অর্জন করে) আগে পাঠিয়েছে” অর্থাৎ তোমরা তোমাদের দুনিয়াবী জীবনে যে মন্দ আমল করেছ, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে এর বদলে এ শাস্তি প্রদান করবেন, وَأَنَّ ٱللَّهَ لَيۡسَ بِظَلَّٰمٖ لِّلۡعَبِيدِ “আল্লাহ তো তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যাচারী নন” তিনি তাঁর বান্দাদের কারও প্রতি যুলুম করেন না; বরং তিনি ন্যায়বিচারক যিনি অত্যাচার করেন না, তিনি বরকতময়, সুউচ্চ, পাক-পবিত্র, অভাবমুক্ত প্রশংসিত। এ কারণে সহীহ হাদীসে এসেছে, ইমাম মুসলিম রহ. আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: «يَا عِبَادِي إِنِّي حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِي وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلَا تَظَالَمُوا، يَا عِبَادِي إِنَّمَا هِيَ أَعْمَالُكُمْ أُحْصِيهَا لَكُمْ، فَمَنْ وَجَدَ خَيْرًا فَلْيَحْمَدِ اللَّهَ، وَمِنْ وَجَدَ غير ذلك فلا يلومن إلا نفسه» “হে আমার বান্দাগণ, আমি আমার ওপর যুলুমকে হারাম করে নিয়েছি আর তা তোমাদের মাঝেও হারাম করে দিয়েছি, কাজেই তোমরা পরস্পর যুলুম-অত্যাচার করোনা, হে আমার বান্দা, এগুলো হচ্ছে তোমাদের আমল যা আমি তোমাদের জন্য গণনা করে রাখছি, কাজেই যে ব্যক্তি ভালো কিছু পায় সে যেন আল্লাহর সুখ্যাতি করে, আর যে ব্যক্তি এটি ছাড়া অন্য কিছু পায় সে যেন শুধুমাত্র নিজেকেই তিরস্কার করে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৭৭] এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿كَدَأۡبِ ءَالِ فِرۡعَوۡنَ وَٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡۚ كَفَرُواْ بِ‍َٔايَٰتِ ٱللَّهِ فَأَخَذَهُمُ ٱللَّهُ بِذُنُوبِهِمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ قَوِيّٞ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٥٢﴾ [ الانفال : ٥٢ ]

অর্থানুবাদ:

“ফির‘আউনের লোকজন ও তাদের আগের লোকেদের মতোই, এরা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে প্রত্যাখ্যান করেছে, কাজেই তাদের পাপের কারণে আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৫২]

তাফসীর:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে সে ব্যাপারে অস্বীকারকারী ঐ সমস্ত মুশরিকরা তাই করেছে হে মুহাম্মাদ, যা তাদের পূর্ববর্তী অস্বীকারকারী জাতিসমূহ করেছে। ফলে আমরা তাদের সাথে তাই করেছি যা আমাদের অভ্যাস এবং রীতিনীতি তাদের মতো অস্বীকারকারীদের ব্যাপারে। যেমন, ফির‘আউনের সম্প্রদায় এবং তাদের পূর্বে আরও যে সমস্ত জাতি রাসূলগণকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল এবং আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাদিকে অস্বীকার করেছিল। فَأَخَذَهُمُ ٱللَّهُ بِذُنُوبِهِمۡۚ “কাজেই তাদের পাপের কারণে আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেছেন” অর্থাৎ তাদের গোনাহের কারণে তাদেরকে তিনি ধ্বংস করে দেন আর তাদেরকে পাকড়াও করেছিলেন মহাপরাক্রমশালী ও ক্ষমতাবানের পাকড়াওয়ে। إِنَّ ٱللَّهَ قَوِيّٞ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ “নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর” কোনো বিজয়ী তাকে পরাজিত করতে পারে না আর কোনো পলায়নকারী তাঁর থেকে পালাতে পারে না।

﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ لَمۡ يَكُ مُغَيِّرٗا نِّعۡمَةً أَنۡعَمَهَا عَلَىٰ قَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡ وَأَنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ٥٣ كَدَأۡبِ ءَالِ فِرۡعَوۡنَ وَٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡۚ كَذَّبُواْ بِ‍َٔايَٰتِ رَبِّهِمۡ فَأَهۡلَكۡنَٰهُم بِذُنُوبِهِمۡ وَأَغۡرَقۡنَآ ءَالَ فِرۡعَوۡنَۚ وَكُلّٞ كَانُواْ ظَٰلِمِينَ ٥٤﴾ [ الانفال : ٥٣، ٥٤ ]

অর্থানুবাদ:

“এটি এজন্য যে, আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের নিকট দেওয়া তাঁর অবদানকে পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরাই (তাদের কর্মনীতির মাধ্যমে) তা পরিবর্তন করে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। ফির‘আউনের লোকজন ও তাদের আগের লোকেদের মতই তারা তাদের রবের নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা জেনেছিল। কাজেই তাদের পাপের কারণে আমরা তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম আর ফির‘আউনের লোকজনকে ডুবিয়ে মেরেছিলাম। এরা সবাই ছিল যালিম। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৫৩-৫৪]

তাফসীর:

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মীমাংসায় তাঁর পূর্ণ ইনসাফ এবং ন্যায়বিচার সম্পর্কে বলেন যে, নিশ্চয় তিনি কারও ওপর অনুগ্রহ করলে তার নি‘আমতকে পরিবর্তন করে ফেলেন না, তবে তার দ্বারা সংঘটিত পাপের কারণে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡۗ وَإِذَآ أَرَادَ ٱللَّهُ بِقَوۡمٖ سُوٓءٗا فَلَا مَرَدَّ لَهُۥۚ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِۦ مِن وَالٍ ١١﴾ [ الرعد : ١١ ] “আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরাই নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আল্লাহ তা’আলা কোনো সম্প্রদায়ের অকল্যাণ করতে চাইলে তা রদ করার কেউ নেই, আর তিনি ছাড়া তাদের কোনো অভিভাবক নেই”। [সূরা আর-রা‘আদ, আয়াত: ১১]

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: كَدَأۡبِ ءَالِ فِرۡعَوۡنَ “ফির‘আওনের লোকজন” যেভাবে তিনি ফির‘আউনের সম্প্রদায় এবং তাদের মত অন্যান্যদের সাথে করেছিলেন, যখন তারা তাঁর নিদর্শণসমূহকে অস্বীকার করেছিল, আল্লাহ তা‘আলা তাদের গোনাহের কারণে তাদেরকে ধ্বংস করে দেন, আর সে সমস্ত নি‘আমতকে ছিনিয়ে নেন যা তিনি তাদের জন্য বরাদ্দ করেছিলেন, যেমন উদ্যান, ঝর্ণা, শস্য, ভাণ্ডার এবং মনোরম বাসস্থান। সব ধরণের নি‘আমতরাজি যা তারা ভোগ করেছিল। আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে তাদের প্রতি যুলুম করেন নি; বরং তারাই ছিল অত্যাচারী।

﴿إِنَّ شَرَّ ٱلدَّوَآبِّ عِندَ ٱللَّهِ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ فَهُمۡ لَا يُؤۡمِنُونَ ٥٥ ٱلَّذِينَ عَٰهَدتَّ مِنۡهُمۡ ثُمَّ يَنقُضُونَ عَهۡدَهُمۡ فِي كُلِّ مَرَّةٖ وَهُمۡ لَا يَتَّقُونَ ٥٦ فَإِمَّا تَثۡقَفَنَّهُمۡ فِي ٱلۡحَرۡبِ فَشَرِّدۡ بِهِم مَّنۡ خَلۡفَهُمۡ لَعَلَّهُمۡ يَذَّكَّرُونَ ٥٧﴾ [ الانفال : ٥٥، ٥٧ ]

অর্থানুবাদ:

“যারা কুফুরী করে আল্লাহর নিকট তারাই নিকৃষ্টতম জীব, অতঃপর আর তারা ঈমান আনবে না। তাদের মধ্যে (বিশেষভাবে নিকৃষ্ট তারা) তুমি যাদের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হও, অতঃপর তারা সে চুক্তি প্রত্যেকবার ভঙ্গ করে আর তারা (আল্লাহকে) ভয় করে না। যুদ্ধে তোমরা যদি তাদেরকে বাগে পেয়ে যাও তাহলে ওদের পেছনে যারা ওদের সাথী-সঙ্গী আছে তাদের থেকে ওদেরকে এমনভাবে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে যাতে মনে রাখার মত তারা একটা শিক্ষা পেয়ে যায়”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৫৫-৫৭]

তাফসীর:

যারা কুফুরী করে এবং অঙ্গিকার ভঙ্গ করে তাদেরকে কঠিন মার দেওয়ার নির্দেশ:

আল্লাহ তা‘আলা অবহিত করেন: জমিনে বিচরণকারী সবচেয়ে নিকৃষ্ট সৃষ্টি হচ্ছে তারাই যারা কাফের, যারা ঈমান আনয়ন করে না, যারা যখনই অঙ্গিকার করে তখনই ভঙ্গ করে এবং যখনই তারা সেটা রক্ষা করার জন্য শপথ করে তারা সেটা ভঙ্গ করে। وَهُمۡ لَا يَتَّقُونَ “আর তারা (আল্লাহকে) ভয় করে না” অর্থাৎ তারা যে সমস্ত গোনাহ কামিয়েছে তার কোনো কিছুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করেনা, َإِمَّا تَثۡقَفَنَّهُمۡ فِي ٱلۡحَرۡبِ “যুদ্ধে তোমরা যদি তাদেরকে বাগে পেয়ে যাও” অর্থাৎ যদি তুমি তাদেরকে পরাজিত কর, আর যুদ্ধে তাদের ওপর বিজয় অর্জন কর فَشَرِّدۡ بِهِم مَّنۡ خَلۡفَهُمۡ “তাহলে ওদের পেছনে যারা ওদের সাথী-সঙ্গী আছে তাদের থেকে ওদেরকে এমনভাবে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে” অর্থাৎ গ্রেফতারকৃতদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা, হাসান আল-বাসরী, দাহ্হাক, সুদ্দী, ‘আতা’ আল খুরাসানী এবং ইবন ‘উয়াইনাহ এ মত ব্যক্ত করেছেন, অর্থাৎ তাদেরকে কঠিন শাস্তি দাও এবং হত্যা কর, যাতে করে আরবের এবং অন্যান্য যে সব শত্রুরা রয়েছে তারা ভয় পায় আর তাদের জন্য একটা শিক্ষা হয়ে যায়। لَعَلَّهُمۡ يَذَّكَّرُونَ “যাতে মনে রাখার মত তারা একটা শিক্ষা পেয়ে যায়”।

সুদ্দী বলেন, এর অর্থ, আল্লাহ বলেন, যাতে করে তারা অঙ্গিকার ভঙ্গ করা থেকে বিরত থাকে। অন্যথায় তাদের সাথেও অনুরূপ করা হবে।

﴿وَإِمَّا تَخَافَنَّ مِن قَوۡمٍ خِيَانَةٗ فَٱنۢبِذۡ إِلَيۡهِمۡ عَلَىٰ سَوَآءٍۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡخَآئِنِينَ ٥٨﴾ [ الانفال : ٥٨ ]

অর্থানুবাদ:

“যদি তুমি কোনো সম্প্রদায়ের চুক্তি ভঙ্গের আশঙ্কা কর তাহলে (তাদের চুক্তিকে) তাদের প্রতি নিক্ষেপ কর যাতে সমান সমান অবস্থা বিরাজিত হয়। আল্লাহ নিশ্চয় (ওয়াদা-চুক্তি-প্রতিশ্র“তি) ভঙ্গকারীদের পছন্দ করেন না”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৫৮]

তাফসীর:

সমান সমান অবস্থা বিরাজিত হওয়ার ওপর অঙ্গিকার ভঙ্গের নির্দেশ:

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, َإِمَّا تَخَافَنَّ مِن قَوۡمٍ “যদি তুমি কোনো সম্প্রদায়ের আশঙ্কা কর” যাদের সাথে অঙ্গিকার করেছ - خِيَانَةٗ “চুক্তি ভঙ্গের” অর্থাৎ তোমার এবং তাদের মাঝে সংঘটিত কোনো চুক্তি ভঙ্গের فَٱنۢبِذۡ إِلَيۡهِمۡ “তাদের প্রতি নিক্ষেপ কর” অর্থাৎ তাদের চুক্তিকে عَلَىٰ سَوَآءٍۚ “যাতে সমান সমান অবস্থা বিরাজিত হয়” তাদেরকে অবহিত কর যে, তুমি তাদের চুক্তি ভঙ্গ করেছ, যাতে করে তুমি এবং তারা অবগত থাক যে, তোমাদের মাঝে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করবে, এবং সমান সমানভাবে তোমার এবং তাদের মাঝে কোনো প্রকার চুক্তি নেই। অর্থাৎ তুমি এবং তারা এ ব্যাপারে সমান সমান। আল্লাহর বাণী: إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡخَآئِنِينَ “আল্লাহ নিশ্চয় (ওয়াদা-চুক্তি-প্রতিশ্রুতি) ভঙ্গকারীদের পছন্দ করেন না” অর্থাৎ যদিও তা কাফেরদের অধিকারের ব্যাপারে হোক না কেন, এটিও আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না।

ইমাম আহমাদ ও আবূ দাউদ রহ. বর্ণনা করেন, সুলাইম ইবন ‘আমির বলেন, মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রোম দেশের প্রতি যাত্রা করেন, সে সময় তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি চলছিল, তিনি তাদের নিকটবর্তী হয়ে থাকার ইচ্ছা করেন, এরপর যখন চুক্তি শেষ হবে তখন তিনি তাদের ওপর হামলা করবেন, কিন্তু তাঁর বাহনে আরোহণকারী এক বৃদ্ধ ব্যক্তি বলেন, الله أكبر (আল্লাহ মহান) الله أكبر (আল্লাহ মহান) সততা রক্ষা করুন, চুক্তি ভঙ্গ করবেন না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: «وَمَنْ كَانَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ قَوْمٍ عَهْدٌ فَلَا يَحِلَّنَّ عُقْدَةً وَلَا يَشُدَّهَا، حَتَّى يَنْقَضِيَ أَمَدُهَا، أَوْ يَنْبِذَ إِلَيْهِمْ عَلَى سَوَآءٍ» ‘‘যে ব্যক্তি এবং কোনো সম্প্রদায়ের মাঝে চুক্তি রয়েছে তার উচিৎ নয় এর কোনো অংশ খুলে ফেলা অথবা একে আরও শক্ত করে বাঁধা, যে পর্যন্ত না চুক্তি তার মেয়াদ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অর্থাৎ তার কর্তৃক চুক্তি বাতিল বা বলবৎ রয়েছে মর্মে ঘোষণা দেওয়া অথবা সমান সমান অবস্থা বিরাজের উদ্দেশ্যে তাদের প্রতি তা নিক্ষেপ করা’’। ফলে এ কথা যখন মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট পৌঁছে তখন তিনি ফিরে আসেন। সেই বৃদ্ধ ব্যক্তিটি ছিলেন ‘আমর ইবন আনবাসাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। [আবু দাউদ আত-তয়ালিসী, হাদীস নং ১১৫৫; সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ২৭৫৯; তিরমিযী, হাদীস নং ১৫৮০; নাসাঈ, হাদীস নং ৮৭৩২ এবং ইবন হিব্বান তার ‘সহীহ’ গ্রন্থে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান-সহীহ।]

﴿وَلَا يَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ سَبَقُوٓاْۚ إِنَّهُمۡ لَا يُعۡجِزُونَ ٥٩ وَأَعِدُّواْ لَهُم مَّا ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن قُوَّةٖ وَمِن رِّبَاطِ ٱلۡخَيۡلِ تُرۡهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ ٱللَّهِ وَعَدُوَّكُمۡ وَءَاخَرِينَ مِن دُونِهِمۡ لَا تَعۡلَمُونَهُمُ ٱللَّهُ يَعۡلَمُهُمۡۚ وَمَا تُنفِقُواْ مِن شَيۡءٖ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ يُوَفَّ إِلَيۡكُمۡ وَأَنتُمۡ لَا تُظۡلَمُونَ ٦٠﴾ [ الانفال : ٥٩، ٦٠ ]

অর্থানুবাদ:

“যারা কুফুরী করে তারা যেন এটি ধারণা না করে যে তারা প্রাধান্য লাভ করে নিয়েছে, তারা মুমিনদেরকে কক্ষনো পরাজিত করতে পারবে না। আর তাদেরকে মুকাবালা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী সদা প্রস্তুত রাখবে যদ্দ্বারা তোমরা ভয় দেখাতে থাকবে আল্লাহর শত্রু আর তোমাদের শত্রুকে, আর তাদের ছাড়াও অন্যান্যদেরকেও যাদেরকে তোমরা জান না, কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে জানেন। তোমরা আল্লাহর পথে যা খরচ কর তার পুরোপুরি প্রতিদান তোমাদেরকে দেওয়া হবে, আর তোমাদের সাথে কক্ষনো যুলুম করা হবে না”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৫৯-৬০]

তাফসীর:

আল্লাহর শত্রুকে ভয় দেখাতে সামর্থ্য অনুযায়ী যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করার নির্দেশ:

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে বলেন, وَلَا تَحْسَبَنّ তুমি মনে করো না, হে মুহাম্মাদ, ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ سَبَقُوٓاْۚ “যারা কুফুরী করে তারা প্রাধান্য লাভ করে নিয়েছে” অর্থাৎ আমাদের থেকে তারা পালিয়ে গেছে ফলে আমরা তাদের ওপর কোনো ক্ষমতা রাখি না; বরং তারা আমাদের সামর্থ্যের ও ক্ষমতার অধিনে রয়েছে, আমাদের ইচ্ছার আয়ত্তে রয়েছে, তারা আমাদেরকে অপারগ করতে পারবে না। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَمۡ حَسِبَ ٱلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِ أَن يَسۡبِقُونَاۚ سَآءَ مَا يَحۡكُمُونَ ٤﴾ [ العنكبوت : ٤ ] “যারা মন্দ কাজ করে তারা কি ভেবে নিয়েছে যে, তারা আমার আগে বেড়ে যাবে? তাদের ফায়সালা বড়ই খারাপ” অর্থাৎ যা তারা ধারণা করে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿لَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مُعۡجِزِينَ فِي ٱلۡأَرۡضِۚ وَمَأۡوَىٰهُمُ ٱلنَّارُۖ وَلَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ٥٧﴾ [ النور : ٥٧ ] “তুমি কাফেরদেরকে এমন মনে কর না যে, তারা পৃথিবীতে আল্লাহর ইচ্ছেকে পরাভূত করার ক্ষমতা রাখে, তাদের বাসস্থান আগুন; কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল!”। অনুরূপ আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ فِي ٱلۡبِلَٰدِ ١٩٦ مَتَٰعٞ قَلِيلٞ ثُمَّ مَأۡوَىٰهُمۡ جَهَنَّمُۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمِهَادُ ١٩٧﴾ [ ال عمران : ١٩٦، ١٩٧ ] “দেশে দেশে কাফেরদের সদম্ভ পদচারণা তোমাকে যেন বিভ্রান্ত না করে। সামান্য ভোগ, তারপর জাহান্নাম তাদের আবাস, আর তা কতই না নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯৬-১৯৭]

এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সামর্থ্য ও ক্ষমতা অনুযায়ী যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করার নির্দেশ প্রদান করে বলেন - وَأَعِدُّواْ لَهُم مَّا ٱسۡتَطَعۡتُم “আর সদা প্রস্তুত রাখবে তাদেরকে মুকাবেলা করার জন্য যথাসাধ্য”। অর্থাৎ তোমাদের যেরূপ সমার্থ্য রয়েছে, مِّن قُوَّةٖ وَمِن رِّبَاطِ ٱلۡخَيۡلِ “শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী” ইমাম আহমাদ রহ. বর্ণনা করেন, উক্ববাহ ইবন ‘আমির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিম্বারে দাঁড়িয়ে ভাষণে বলতে শুনেছি: وَأَعِدُّواْ لَهُم مَّا ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن قُوَّةٖ “আর তাদেরকে মুকাবেলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি সদা প্রস্তুত রাখবে” « أَلَا إِنَّ الْقُوَّةَ الرمي، إلا إن القوة الرمي» “জেনে রাখ, শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপ করা, জেনে রাখ, শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপ করা”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৫১৪; ইবন মাজাহ: ১৩/২৮। ইমাম আহমাদ রহ. আহলুস-সুনান থেকে বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «ارْمُوا وَارْكَبُوا وَأَنْ تَرْمُوا خَيْرٌ مِنْ أَنْ تركبوا» . “তোমরা তীর নিক্ষেপ কর, আরোহণ কর, তীর নিক্ষেপ করা আরোহণ করা থেকে উত্তম”। (অনুবাদক) মুসনাদ: ৪/১৪৪] ইমাম মালিক বর্ণনা করেন, আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«الْخَيْلُ لِثَلَاثَةٍ : لِرَجُلٍ أَجْرٌ، وَلِرَجُلٍ سِتْرٌ، وَعَلَى رَجُلٍ وِزْرٌ . فَأَمَّا الَّذِي لَهُ أَجْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَأَطَالَ لَهَا فِي مَرْجٍ أَوْ رَوْضَةٍ، فَمَا أَصَابَتْ فِي طِيَلِهَا ذَلِكَ مِنَ الْمَرْجِ أَوْ الرَّوْضَةِ كَانَتْ لَهُ حَسَنَاتٌ،وَلَوْ أَنَّهَا قَطَعَتْ طِيَلَهَا فَاسْتَنَّتْ شَرَفًا أو شرفين كانت آثارها وأورائها حَسَنَاتٍ لَهُ، وَلَوْ أَنَّهَا مَرَّتْ بِنَهَرٍ فَشَرِبَتْ مِنْهُ وَلَمْ يُرِدْ أَنْ يَسْقِيَ بِهِ كَانَ ذَلِكَ حَسَنَاتٍ لَهُ، فَهِيَ لِذَلِكَ الرَّجُلِ أَجْرٌ، وَرَجُلٌ رَبَطَهَا تَغَنِّيًا وَتَعَفُّفًا وَلَمْ يَنْسَ حَقَّ اللَّهِ فِي رِقَابِهَا وَلَا في ظُهُورِهَا فَهِيَ لَهُ سِتْرٌ، وَرَجُلٌ رَبَطَهَا فَخْرًا وَرِيَاءً وَنِوَاءً فَهِيَ عَلَى ذَلِكَ وِزْر وَسُئِلَ رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الْحُمُرِ؟ فَقَالَ» : مَا أَنْزَلَ اللَّهُ عَلَيَّ فِيهَا شَيْئًا إِلَّا هَذِهِ الْآيَةَ الْجَامِعَةَ الْفَاذَّةَ : ﴿فَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٍ خَيۡرٗا يَرَهُۥ ٧ وَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ شَرّٗا يَرَهُۥ ٨ ﴾ [ الزلزلة : ٧، ٨ ]

“ঘোড়া হচ্ছে তিন ব্যক্তির জন্য, এক ব্যক্তির জন্য তা পুরস্কারস্বরূপ, আরেক ব্যক্তির জন্য ঢালস্বরূপ এবং আরেক ব্যক্তির ওপর তা বোঝাস্বরূপ, যার জন্য সেটা পুরস্কারস্বরূপ সে ঐ ব্যক্তি যে তাকে আল্লাহর পথে (ব্যবহারের জন্য) বেঁধে রেখেছে, এভাবে তার পুরো জীবনটাকে ব্যয় করে চারণভুমি অথবা বাগানেতে পশু পালনের মাধ্যমে, (জিহাদের জন্য প্রস্তুতিতে অপেক্ষা করে) কাজেই চারণভুমি অথবা বাগানে সে এ দীর্ঘ সময়ে যে ক্লেশ অনুভব করে তার জন্য তাঁর সাওয়াব হতে থাকে, তাদের এ দীর্ঘ সময় যদি শেষ হয়ে যায়, এরপর সেগুলো একটি অথবা দু’টি মহান যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর ক্ষুরের ছাপ, মল সব সাওয়াব হিসেবে গন্য হয়। যদি এ অশ্ব কোনো নদীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তার পানি পান করে আর এ ব্যক্তি যদিও তাকে পানি পান করানোর ইচ্ছা না থাকে এ সবের কারণে ঐ ব্যক্তির জন্য সাওয়াব রয়েছে। আর যে ব্যক্তি সম্পদশালী হওয়ার জন্য এবং অন্যের কাছে যাতে চাইতে না হয়-এ জন্য ঘোড়া পালে, আর এগুলোর ঘাড়ের এবং পিঠের উপর আল্লাহ তা‘আলার অধিকারের কথা ভুলে যায় না, (অর্থাৎ যাকাত ও বাহন হাওলাত প্রদান করে) তবে সেগুলো হবে তার জন্য ঢালস্বরূপ (জাহান্নাম থেকে বাঁচার) আর যে ব্যক্তি গর্ব-অহঙ্কার, লোক দেখানোর জন্য তবে সেগুলো হবে তার জন্য বোঝাস্বরূপ (কিয়ামত দিবসে)। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা এদের সম্পর্কে কোনো কিছু অবতীর্ণ করেন নি, তবে এ একক সমন্বিত আয়াতটি ﴿فَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٍ خَيۡرٗا يَرَهُۥ ٧ وَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ شَرّٗا يَرَهُۥ ٨﴾ [ الزلزلة : ٧، ٨ ] “অতএব, কেউ অণু পরিমাণও সৎ কাজ করলে সে তা দেখবে, আর কেউ অণু পরিমাণও অসৎ কাজ করলে সে তা দেখবে”। ইমাম বুখারী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন, এগুলো তারই শব্দ, মুসলিমও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক: ৪৪৪/২; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩৭১, মুসলিম ৯৮৭/২৪]

অধিকাংশ আলেম এ মত পোষণ করেন যে, তীর নিক্ষেপ উত্তম ঘোড়ায় আরোহণ করা হতে। ইমাম মালেক বলেন, আরোহণ করা উত্তম তীর নিক্ষেপ করা হতে। হাদীসের আলোকে জামহুরের মত অধিক শক্তিশালী। আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহর রাস্তায় ঘোড়া প্রস্তুত করার ফযীলত বিষয়ক হাদীস আরো অনেক রয়েছে। [ইমাম আহমাদ রহ. বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: «الْخَيْلُ ثَلَاثَةٌ : فَفَرَسٌ لِلرَّحْمَنِ، وَفَرَسٌ لِلشَّيْطَانِ، وَفَرَسٌ لِلْإِنْسَانِ، فَأَمَّا فَرَسُ الرَّحْمَنِ فَالَّذِي يُرْبَطُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، فَعَلَفُهُ وَرَوْثُهُ وَبَوْلُهُ، وَذَكَرَ مَا شَاءَ اللَّهُ . وَأَمَّا فَرَسُ الشَّيْطَانِ فَالَّذِي يُقَامَرُ أَوْ يُرَاهَنُ عَلَيْهِ، وَأَمَّا فَرَسُ الْإِنْسَانِ فَالْفَرَسُ يَرْتَبِطُهَا الْإِنْسَانُ يَلْتَمِسُ بَطْنَهَا، فَهِيَ سَتْرٌ مِنْ فَقْرٍ» “ঘোড়া হচ্ছে তিনটি, একটি ঘোড়া হচ্ছে দয়াময়ের জন্য, একটি ঘোড়া হচ্ছে শয়তানের জন্য আর একটি হচ্ছে মানুষের জন্য। দয়াময়ের ঘোড়া হচ্ছে সেটা যা আল্লাহ তা‘আলার পথে বেঁধে রাখা হয়, এর খাদ্য, গোবর, মুত্র- এরপর তিনি আরও কিছু উল্লেখ করেন যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন- শয়তানের ঘোড়া হচ্ছে সেটা যা জুয়া খেলায় ব্যবহার করা হয়, আর মানুষের ঘোড়া হচ্ছে সেটা যার থেকে সে ফায়দা হাসিলের জন্য তাকে বেঁধে রাখে, এটি হচ্ছে তার দারিদ্রতার বিরুদ্ধে ঢালস্বরূপ” মুসনাদ: ১/৩৯৫। অপর হাদীসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «الْخَيْلُ مَعْقُودٌ فِي نَوَاصِيهَا الْخَيْرُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَأَهْلُهَا مُعَانُونَ عَلَيْهَا، وَمَنْ رَبَطَ فَرَسًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَانَتِ النَّفَقَةُ عَلَيْهِ كَالْمَادِّ يده بالصدقة لا يقبضها» “কিয়ামত দিবস পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে কল্যাণ টিকে থাকবে, মালিক তার ওপর সাহায্য প্রাপ্ত হবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় ঘোড়াকে বাঁধে, তারপর সে ঘোড়ার জন্য যে যা খরচা করে থাকে তা তার জন্য ঐ ব্যক্তি মতো হবে যে আল্লাহর রাস্তায় দানের হাতকে প্রসারিত করে সংকোচিত করে না”। (অনুবাদক) আল-মু‘জামুল কবীর: ৬/৯৮] সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে উরওয়া ইবন আবুল জা‘আদ আল-বারিক্বী বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: «الْخَيْلُ مَعْقُودٌ فِي نَوَاصِيهَا الْخَيْرُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ الْأَجْرُ وَالْمَغْنَمُ» “কিয়ামত দিবস পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে কল্যাণ টিকে থাকবে, (তা হচ্ছে) পুরস্কার এবং গনীমত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৫০]

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: تُرْهِبُونَ “তোমরা ভয় দেখাতে থাকবে” অর্থাৎ ভীতি ছড়াবে بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ “এর দ্বারা আল্লাহর শত্রু আর তোমাদের শত্রুকে” অর্থাৎ কাফেরদেরকে وَآخَرِينَ مِنْ دُونِهِمْ “আর তাদের ছাড়াও অন্যান্যদেরকেও”। মুজাহিদ রহ. বলেন, অর্থাৎ বানু কুরাইযা। সুদ্দী রহ. বলেন, পারস্য। সুফীয়ান সাওরী বলেন, তারা হলো শয়তান। মুকাতিল ইবন হাইইয়ান, আব্দুর রহমান ইবন যাইদ ইবন আসলাম বলেন, তারা হচ্ছে মুনাফিকরা, এ মত সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। আর এ মতের সাক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَمِمَّنْ حَوْلَكُمْ مِنَ الأعْرَابِ مُنَافِقُونَ وَمِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ مَرَدُوا عَلَى النِّفَاقِ لا تَعْلَمُهُمْ نَحْنُ نَعْلَمُهُمْ “তোমাদের চতুষ্পার্শ্বে কতক বেদুঈন হলো মুনাফিক, আর মাদীনাবাসীদের কেউ কেউ মুনাফিকীতে অনঢ়, তুমি তাদেরকে চেন না, আমি তাদেরকে চিনি”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০১]

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَمَا تُنفِقُواْ مِن شَيۡءٖ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ يُوَفَّ إِلَيۡكُمۡ وَأَنتُمۡ لَا تُظۡلَمُونَ “তোমরা আল্লাহর পথে যা খরচ কর তার পুরোপুরি প্রতিদান তোমাদেরকে দেওয়া হবে, আর তোমাদের সাথে কখনো যুলুম করা হবে না” তোমরা জিহাদে যা কিছুই খরচ করবে তা তোমাদেরকে পুরোপুরি দিয়ে দেওয়া হবে।

﴿وَإِن جَنَحُواْ لِلسَّلۡمِ فَٱجۡنَحۡ لَهَا وَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ٦١ وَإِن يُرِيدُوٓاْ أَن يَخۡدَعُوكَ فَإِنَّ حَسۡبَكَ ٱللَّهُۚ هُوَ ٱلَّذِيٓ أَيَّدَكَ بِنَصۡرِهِۦ وَبِٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٦٢ وَأَلَّفَ بَيۡنَ قُلُوبِهِمۡۚ لَوۡ أَنفَقۡتَ مَا فِي ٱلۡأَرۡضِ جَمِيعٗا مَّآ أَلَّفۡتَ بَيۡنَ قُلُوبِهِمۡ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ أَلَّفَ بَيۡنَهُمۡۚ إِنَّهُۥ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٦٣﴾ [ الانفال : ٦١، ٦٣ ]

অর্থনুবাদ:

“তারা যদি সন্ধির দিকে ঝুঁকে, তুমিও তার দিকে ঝুঁকে পড়, আর আল্লাহর ওপর নির্ভর কর, নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। তারা যদি তোমাকে ধোঁকা দেওয়ার নিয়্যাত করে, সেক্ষেত্রে আল্লাহই তোমার জন্য যথেষ্ট। তিনি তো তাঁর সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা তোমাকে শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদের হৃদয়গুলোকে প্রীতির বন্ধনে জুড়ে দিয়েছেন। দুনিয়ায় যা কিছু আছে তার সবটুকু খরচ করলেও তুমি তাদের অন্তরগুলোকে প্রীতির ডোরে বাঁধতে পারতে না; কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করে দিয়েছেন, তিনি তো প্রবল পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞানী”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬১-৬৩]

তাফসীর:

শত্রুরা যদি সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়ে তবে সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়ার নির্দেশ:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যদি তোমরা লোকেদের থেকে বিশ্বাসঘাতকতার আশঙ্কা কর, তবে তাদের চুক্তি তাদের দিকে ছুঁড়ে মার যাতে করে সমান সমান হয়, তারা যদি তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ও বিরোধিতায় নিরবচ্ছিন্ন থাকে তবে তুমিও তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর। وَإِن جَنَحُواْ “তারা যদি ঝুঁকে পড়ে” অর্থাৎ নুয়ে পড়ে لِلسَّلْمِ “সন্ধির দিকে” অর্থাৎ মীমাংসা, আপোস-নামা এবং মিত্রতার দিকে فَاجْنَحْ لَهَا “তুমিও তার দিকে ঝুঁকে পড়” তবে তুমিও নুয়ে পড় আর তাদের থেকে সেটা গ্রহণ কর। এ কারণে হুদায়বিয়ার বৎসর মুশরিকরা যখন সন্ধির প্রস্তাব করে এবং তাদের এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাঝে নয় বৎসর কোনো যুদ্ধ হবে না মর্মে আহ্বান জানায়, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতে সাড়া দেন যদিও তারা অন্যান্য কিছু শর্তারোপ করেছিল। [ইমাম আহমাদ রহ. বর্ণনা করেন, আলী ইবন আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: " أنه سَيَكُونُ بِعْدِي اخْتِلَافٌ -أَوْ : أَمْرٌ -فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ يَكُونَ السِّلْمُ، فَافْعَلْ " “আমার পরে অচিরেই মতভেদ দেখা দিবে কাজেই তোমরা যদি সন্ধির মাধ্যমে তা সমাধা করতে পার তবে তাই কর। যাওয়ায়েদুল মুসনাদ: ১/৯০, হাইসামী মাজমা‘তে বলেন, বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। (অনুবাদক)]

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِۚ “আর আল্লাহর ওপর নির্ভর কর” অর্থাৎ তাদের সাথে সন্ধি কর এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য যথেষ্ট, তিনি তোমার সাহায্যকারী, যদিও তারা ধোকা দেওয়ার জন্য সন্ধি করতে চায়, যাতে করে তারা একত্রিত হতে পারে এবং তাদের শক্তি পুনর্গঠিত করতে পারে। فَإِنَّ حَسۡبَكَ ٱللَّهُۚ “সেক্ষেত্রে আল্লাহই তোমার জন্য যথেষ্ট” তিনি একাই তোমার জন্য যথেষ্ট।

মুমিনদের হৃদয়গুলোকে প্রীতির বন্ধনে জুড়ে দেওয়া সংক্রান্ত নি‘আমত স্মরণ করিয়ে দেওয়া:

এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ওপর তাঁর নি‘আমতকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তন্মধ্যে তিনি তাকে মুমিন মুহাজির ও আনসারগণের দ্বারা শক্তিশালী করেছেন তিনি বলেন, هُوَ ٱلَّذِيٓ أَيَّدَكَ بِنَصۡرِهِۦ وَبِٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٦٢ وَأَلَّفَ بَيۡنَ قُلُوبِهِمۡۚ “তিনি তো তাঁর সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা তোমাকে শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদের হৃদয়গুলোকে প্রীতির বন্ধনে জুড়ে দিয়েছেন”। আল্লাহ তা‘আলা তোমার প্রতি বিশ্বাস, তোমার আনুগত্য, তোমাকে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য মুমিনদের অন্তরকে একত্রিত করে দিয়েছেন, لَوۡ أَنفَقۡتَ مَا فِي ٱلۡأَرۡضِ جَمِيعٗا مَّآ أَلَّفۡتَ بَيۡنَ قُلُوبِهِمۡ “দুনিয়ায় যা কিছু আছে তার সবটুকু খরচ করলেও তুমি তাদের অন্তরগুলোকে প্রীতির ডোরে বাঁধতে পারতে না” কেননা জাহেলী যুগে আনসারগণের আওস ও খাজরায গোত্রের মাঝে বহু যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল আরও অন্যান্য মন্দ ধারাবাহিকভাবে চলে আসছিল, অবশেষে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানের আলো দ্বারা এ সব মন্দ দূর করে দেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَٱذۡكُرُواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ إِذۡ كُنتُمۡ أَعۡدَآءٗ فَأَلَّفَ بَيۡنَ قُلُوبِكُمۡ فَأَصۡبَحۡتُم بِنِعۡمَتِهِۦٓ إِخۡوَٰنٗا وَكُنتُمۡ عَلَىٰ شَفَا حُفۡرَةٖ مِّنَ ٱلنَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنۡهَاۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمۡ ءَايَٰتِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٠٣﴾ [ ال عمران : ١٠٣ ] “আল্লাহর রজ্জুকে সমবেতভাবে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর নি‘আমত স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু, তিনি তোমাদের অন্তরে প্রীতির সঞ্চার করলেন, ফলে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নি-গহ্বরের প্রান্তে ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করলেন। এভাবে আল্লাহ নিজের নিদর্শনাবলী তোমাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা সঠিক পথ প্রাপ্ত হও”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আনসারবৃন্দের মাঝে হুনাইনের গনীমতের ব্যাপারে সম্বোধন করে ভাষণ দেন, তিনি তাদেরকে বলেন, «يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ أَلَمْ أَجِدْكُمْ ضُلَّالًا فَهَدَاكُمُ اللَّهُ بِي، وَعَالَةً فَأَغْنَاكُمُ اللَّهُ بِي، وَكُنْتُمْ مُتَفَرِّقِينَ فَأَلَّفَكُمُ اللَّهُ بِي» ‘হে আনসারগণ, আমি কি তোমাদেরকে বিভ্রান্ত পাই নি, এরপর আল্লাহ তা‘আলা আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে পথ দেখিয়েছেন, (তোমাদেরকে কি পাই নি) অভাবি, এরপর আল্লাহ তা‘আলা আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে সম্পদশালী করেছেন, তোমরা ছিলে দলে দলে বিভক্ত, এরপর আল্লাহ তা‘আলা আমার মাধ্যমে তোমাদের মাঝে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছেন। যখনই তিনি তাদেরকে কিছু বলেন, তারা বলে: সত্যই, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে দয়া। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৬১/১৩৯]

এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ أَلَّفَ بَيۡنَهُمۡۚ إِنَّهُۥ عَزِيزٌ حَكِيمٞ “কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করে দিয়েছেন, তিনি তো প্রবল পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞানী” তিনি সম্মানিত সর্বশক্তিমান, যে ব্যক্তি তাঁর ওপর ভরসা রাখে সে আশাহত হয় না, তিনি প্রজ্ঞাবান তাঁর কাজেকর্মে ও বিধিবিধানে। হাকিম রহ. এবং ইমাম নাসাঈ রহ. আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, لَوۡ أَنفَقۡتَ مَا فِي ٱلۡأَرۡضِ جَمِيعٗا مَّآ أَلَّفۡتَ بَيۡنَ قُلُوبِهِمۡ “দুনিয়ায় যা কিছু আছে তার সবটুকু খরচ করলেও তুমি তাদের অন্তরগুলোকে প্রীতির ডোরে বাঁধতে পারতে না”। তারা হলেন যারা একে অপরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসেন। অপর বর্ণনায় এসেছে, যে দুই ব্যক্তি একে অপরকে আল্লাহর জন্য মহব্বত করেন তাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। হাকেম হাদীসটি সহীহ আখ্যায়িত করেন। [নাসাঈ, হাদীস নং ১২১০; হাকেম, হাদীস নং ৩২৯/২] মুজাহিদ রহ. বলেন, যখন দুই বন্ধু একে অপরের সাথে সাক্ষাত হয় এবং একজন অপর জনের হাত ধরে মুছকি হাসি দেয়, তাদের উভয়ের গুনাহ এমনভাবে ঝরে পড়ে যেমনটি ঝরে পড়ে গাছের পাতাগুলো। আবদাহ বলেন, আমি বললাম, নিশ্চয় এটি খুবই কম। তিনি বললেন, তুমি এ কথা কথা বলো না। কারণ, আল্লাহ তা’আলা বলেন, তারপর তিনি এ আয়াত - لَوۡ أَنفَقۡتَ مَا فِي ٱلۡأَرۡضِ جَمِيعٗا مَّآ أَلَّفۡتَ بَيۡنَ قُلُوبِهِمۡ “দুনিয়ায় যা কিছু আছে তার সবটুকু খরচ করলেও তুমি তাদের অন্তরগুলোকে প্রীতির ডোরে বাঁধতে পারতে না” তিলাওয়াত করেন। আবদাহ রহ. বলেন, এতে আমি বুঝতে পারলাম তিনি আমার চেয়েও অধিক জ্ঞানী। তাবরানী সালমান আল-ফারসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «إِنَّ الْمُسْلِمَ إِذَا لَقِيَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ فَأَخَذَ بِيَدِهِ تَحَاتَّتْ عَنْهُمَا ذنوبهما كما تحات الْوَرَقُ عَنِ الشَّجَرَةِ الْيَابِسَةِ فِي يَوْمِ رِيحٍ عاصف، وإلا غفر لهما ذنوبهما ولو كانت مِثْلَ زَبَدِ الْبِحَارِ» . “যখন কোনো মুসলিম অপর মুসলিমের সাথে সাক্ষাৎ করে একে অপরের সাথে হাত মেলায়, তাদের উভয়ের গুনাহগুলো এমনভাবে ঝরে পড়ে যেমনভাবে প্রবল বাতাসের সময় গাছের শুকনো পাতাগুলো ঝরে পড়ে। অন্যথায় তাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়ে থাকে”। [আল-মু‘জামুল কবীর: ৬/২৫৬]

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ حَسۡبُكَ ٱللَّهُ وَمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٦٤ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ حَرِّضِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ عَلَى ٱلۡقِتَالِۚ إِن يَكُن مِّنكُمۡ عِشۡرُونَ صَٰبِرُونَ يَغۡلِبُواْ مِاْئَتَيۡنِۚ وَإِن يَكُن مِّنكُم مِّاْئَةٞ يَغۡلِبُوٓاْ أَلۡفٗا مِّنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِأَنَّهُمۡ قَوۡمٞ لَّا يَفۡقَهُونَ ٦٥ ٱلۡـَٰٔنَ خَفَّفَ ٱللَّهُ عَنكُمۡ وَعَلِمَ أَنَّ فِيكُمۡ ضَعۡفٗاۚ فَإِن يَكُن مِّنكُم مِّاْئَةٞ صَابِرَةٞ يَغۡلِبُواْ مِاْئَتَيۡنِۚ وَإِن يَكُن مِّنكُمۡ أَلۡفٞ يَغۡلِبُوٓاْ أَلۡفَيۡنِ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ ٦٦﴾ [ الانفال : ٦٤، ٦٦ ]

অর্থানুবাদ:

“হে নবী! আল্লাহই তোমার আর তোমার অনুসারী ঈমানদারদের জন্য যথেষ্ট। হে নাবী! যুদ্ধের ব্যাপারে মুমিনদেরকে উদ্বুদ্ধ কর। তোমাদের মধ্যে বিশজন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দু’শ জনের ওপর জয়ী হবে এবং তোমাদের মধ্যে (ঐরূপ) একশ’ জন থাকলে তারা একহাজার কাফিরের ওপর বিজয়ী হবে। কেননা তারা হচ্ছে এমন লোক যারা (ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে) কোনো বোধ রাখে না। (তবে) এখন আল্লাহ তোমাদের দায়িত্বভার কমিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তো জানেন যে তোমাদের ভিতর দুর্বলতা রয়ে গেছে, কাজেই তোমাদের মাঝে যদি একশ’ জন ধৈর্যশীল হয় তবে তারা দু’শ জনের ওপর বিজয়ী হবে। আর যদি তোমাদের মাঝে এক হাজার (ঐ রকম) লোক পাওয়া যায় তাহলে তারা আল্লাহর হুকুমে দু’হাজার লোকের ওপর জয়ী হবে। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে (আছেন)।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬৪-৬৬]

তাফসীর:

যুদ্ধের জন্য উৎসাহ প্রদান এবং এ ব্যাপারে সুসংবাদ প্রদান যে, অল্পসংখ্যক মুসলিম বহুসংখ্যক কাফেরের ওপর জয়লাভ করবে:

তা‘আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুমিনগণকে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে উৎসাহিত করছেন, এবং তাদের দলবলের বিপক্ষে সংগ্রাম করার নির্দেশ দেন, তিনি তাদেরকে অবহিত করেন যে, তিনি তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে তাদের জন্য যথেষ্ট, তিনি তাদেরকে সাহায্য করবেন, তাদেরকে শক্তিশালী করবেন, যদিও শত্রুদের সংখ্যা বেশি হয় আর একের পর এক তাদের জন্য সাহায্য আসে, আর মুমিনদের সংখ্যা অল্প হয়। ইবন আবী হাতিম শা‘আবী থেকে আল্লাহর বাণী يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ حَسۡبُكَ ٱللَّهُ وَمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ হে নাবী! আল্লাহই তোমার আর তোমার অনুসারী ঈমানদারদের জন্য যথেষ্ট” বিষয়ে বলেন, আল্লাহ আপনার জন্য এবং আপনার সাথে যারা আপনার অনুসারী রয়েছে তাদের জন্য যথেষ্ট। আতা আল-খুরাসানী এবং আব্দুর রহমান ইবন যায়েদ থেকেও অনুরূপ বর্ণনা বর্ণিত।

এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ حَرِّضِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ عَلَى ٱلۡقِتَالِۚ “হে নবী! যুদ্ধের ব্যাপারে মুমিনদেরকে উদ্বুদ্ধ কর” অর্থাৎ তাদেরকে উৎসাহিত কর, তাদেরকে নির্দেশ দাও। এ কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের জন্য তাদেরকে উৎসাহিত করতেন, যখন তারা শত্রুদের মুখোমুখি হতেন, বদর যুদ্ধের দিন কাফেররা যখন তাদের দলবল ও যোগান নিয়ে হাযির হয়, তখন তিনি তাঁর সাহাবীগণকে বলেন, «قُومُوا إلى جنة عرضها السموات والأرض» ‘তোমরা জান্নাতের প্রতি উঠে দাঁড়াও যা আসমানসমূহ ও জমিনের সমান প্রশস্ত’। তখন উমাইর ইবনল হুমাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এটি কি আসমানসমূহ ও জমিনের মতো প্রশস্ত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হাঁ, তখন তিনি বলেন, بخ بخ (কতইনা চমৎকার, কতইনা চমৎকার) এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «مَا يَحْمِلُكَ عَلَى قَوْلِكَ بَخٍ بَخٍ» কিসে তোমাকে بخ بخ কথাটি বলতে উদ্বুদ্ধ করেছে? তিনি বলেন, এ আশায় যেন আমি এর অধিবাসী হতে পারি, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « فَإِنَّكَ مِنَ أَهْلِهَا » “তুমি এর অধিবাসী, লোকটি তখন সম্মুখে অগ্রসর হয়, তিনি তার তরবারীর কোষ ভেঙ্গে ফেলেন, এরপর খেজুর বের করে খেতে থাকেন, এরপর তিনি বাকি খেজুরগুলো তার হাত থেকে ফেলে দিয়ে বলেন, আমি যদি এগুলো খাওয়ার জন্য বেঁচে থাকি তবে তো সেটা বড় দীর্ঘ জীবন, এরপর তিনি সম্মুখে এগিয়ে গিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হন অবশেষে শহীদ হন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯০১]

এরপর আল্লাহ তা‘আলা মুমিনগণকে সু-সংবাদ প্রদান করে এবং নির্দেশ দিয়ে বলেন, إِن يَكُن مِّنكُمۡ عِشۡرُونَ صَٰبِرُونَ يَغۡلِبُواْ مِاْئَتَيۡنِۚ وَإِن يَكُن مِّنكُم مِّاْئَةٞ يَغۡلِبُوٓاْ أَلۡفٗا مِّنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ “তোমাদের মধ্যে বিশজন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দু’শ জনের ওপর জয়ী হবে এবং তোমাদের মধ্যে (ঐরূপ) একশ’ জন থাকলে তারা একহাজার কাফিরের ওপর বিজয়ী হবে” প্রতি একজন দশজনের মোকাবিলায় ধৈর্য্য করতে পারবে, এরপর আল্লাহ তা‘আলা এ বিষয়টি রোহিত করে দেন আর সুসংবাদ বাকি রেখে দেন। আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক বলেন, হাদীসটি আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন জারীর ইবন হাযিম, (তিনি বলেন) হাদীসটি আমার নিকট বর্ণনা করেছেন আয-যুবাইর ইবন র্খিরীত (তিনি) ইকরিমা থেকে (তিনি) আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে, তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। إِن يَكُن مِّنكُمۡ عِشۡرُونَ صَٰبِرُونَ يَغۡلِبُواْ مِاْئَتَيۡنِۚ “তোমাদের মধ্যে বিশজন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দু’শ জনের ওপর জয়ী হবে” তখন বিষয়টি মুসলিমবৃন্দের নিকট কঠিন মনে হয় অবশেষে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর ফরয করেন যে, একজন যেন দশজন মুশরিকের মোকাবিলায় ধৈর্য্য ধারণ করে, এরপর হালকা করে আয়াত অবতীর্ণ হয়, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ٱلۡـَٰٔنَ خَفَّفَ ٱللَّهُ عَنكُمۡ “(তবে) এখন আল্লাহ তোমাদের দায়িত্বভার কমিয়ে দিয়েছেন” এখান থেকে يَغۡلِبُواْ مِاْئَتَيۡنِ (দু’শ জনের ওপর জয়ী হবে” এ পর্যন্ত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তাদের থেকে বৈরিতা কমিয়ে দেন, আর কমিয়ে দেওয়ার অনুপাতে ধৈর্য্যরে নির্দেশও হাল্কা করেন।

﴿مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَن يَكُونَ لَهُۥٓ أَسۡرَىٰ حَتَّىٰ يُثۡخِنَ فِي ٱلۡأَرۡضِۚ تُرِيدُونَ عَرَضَ ٱلدُّنۡيَا وَٱللَّهُ يُرِيدُ ٱلۡأٓخِرَةَۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٦٧ لَّوۡلَا كِتَٰبٞ مِّنَ ٱللَّهِ سَبَقَ لَمَسَّكُمۡ فِيمَآ أَخَذۡتُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ٦٨ فَكُلُواْ مِمَّا غَنِمۡتُمۡ حَلَٰلٗا طَيِّبٗاۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٦٩﴾ [ الانفال : ٦٧، ٦٩ ]

অর্থানুবাদ:

“কোনো নবীর জন্য এটি সঠিক কাজ নয় যে, দেশে (আল্লাহর শত্রুদেরকে) পুরোমাত্রায় পরাভূত না করা পর্যন্ত তার (হাতে) যুদ্ধ-বন্দী থাকবে। তোমরা দুনিয়ার স্বার্থ চাও আর আল্লাহ চান আখিরাত (এর সাফল্য), আল্লাহ প্রবল পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞানী। আল্লাহর লেখন যদি পূর্বেই লেখা না হত তাহলে তোমরা যা (মুক্তিপণ হিসেবে) গ্রহণ করেছ তজ্জন্য তোমাদের ওপর মহাশাস্তি পতিত হত। এক্ষণে, যুদ্ধে গনীমত হিসেবে যা তোমরা লাভ করেছ তা ভোগ কর, তা বৈধ ও পবিত্র। আল্লাহকে ভয় করে চলো, নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬৭-৬৯]

তাফসীর:

ইমাম আহমাদ রহ. বর্ণনা করেন, আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর যুদ্ধের বন্দীদের ব্যাপারে (সাহাবীগণের নিকট) পরামর্শ চান, তারপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তারা আপনার স্বজাতী ও আত্মীয় আপনি তাদের বাচিয়ে রাখেন এবং তাদের তাওবা করতে বলেন। হতে পারে আল্লাহ তা‘আলা তাদের তওবা কবুল করবেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসূল তারা আপনাকে অস্বীকার করছে, আপনাকে বের করে দিয়েছে, আপনি অগ্রসর হয়ে তাদের গর্দান উড়িয়ে দিন। আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এমন একটি এলাকায় রয়েছেন যাতে প্রচুর জালানি রয়েছে, আপনি মাঠে আগুন জালান তারপর তাদের আগুনে নিক্ষেপ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপচাপ থাকলেন তাদের কথার কোনো উত্তর তিনি দিলেন না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিতরে প্রবেশ করলেন। তখন তারা বলাবলি করতে লাগল, কেউ বলে, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর মতামত গ্রহণ করবেন। আর কতক মানুষ বলে, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মতামত গ্রহণ করবেন আর কেউ কেউ বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মতামত গ্রহণ করবেন। তারপর তিনি বের হলেন, আল্লাহ তা‘আলা কতক মানুষের অন্তরকে নরম করে দেন ফলে তা দুধের চেয়ে নরম হয়। আবার কতক মানুষের অন্তরকে কঠিন করেন ফলে তা পাথরের চেয়ে কঠিন হয়। হে আবু বকর তোমার দৃষ্টান্ত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মত। তিনি বলেন, ﴿فَمَن تَبِعَنِي فَإِنَّهُۥ مِنِّيۖ وَمَنۡ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣٦﴾ [ ابراهيم : ٣٦ ] “সুতরাং যে আমার অনুসরণ করেছে, নিশ্চয় সে আমার দলভুক্ত, আর যে আমার অবাধ্য হয়েছে, তবে নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’’। [সূরা ইবরাহী, আয়াত: ৩৬] হে আবু বকর! তোমার দৃষ্টান্ত ঈসা আলাইহিস সালামের মতো। তিনি বলেন, ﴿إِن تُعَذِّبۡهُمۡ فَإِنَّهُمۡ عِبَادُكَۖ وَإِن تَغۡفِرۡ لَهُمۡ فَإِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ١١٨﴾ [ المائ‍دة : ١١٨ ] যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারা আপনারই বান্দা, আর তাদেরকে যদি ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ১১৮] হে উমার! তোমার দৃষ্টান্ত মূসা আলাইহিস সালামের মতো, তিনি বলেন, ﴿رَبَّنَا ٱطۡمِسۡ عَلَىٰٓ أَمۡوَٰلِهِمۡ وَٱشۡدُدۡ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ فَلَا يُؤۡمِنُواْ حَتَّىٰ يَرَوُاْ ٱلۡعَذَابَ ٱلۡأَلِيمَ ٨٨﴾ [ يونس : ٨٨ ] “হে আমাদের রব, তাদের ধন-সম্পদ নিশ্চি‎হ্ন করে দিন, তাদের অন্তরসমূহকে কঠোর করে দিন। ফলে তারা ঈমান আনবে না, যতক্ষণ না যন্ত্রণাদায়ক আযাব দেখে’। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৮৮] হে আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহা তোমার দৃষ্টান্ত নূহ আলাইহিস সালামের মতো, তিনি বলেন, ﴿وَقَالَ نُوحٞ رَّبِّ لَا تَذَرۡ عَلَى ٱلۡأَرۡضِ مِنَ ٱلۡكَٰفِرِينَ دَيَّارًا ٢٦﴾ [ نوح : ٢٦ ] “আর নূহ বলল, ‘হে আমার রব! জমিনের উপর কোনো কাফেরকে অবশিষ্ট রাখবেন না’। [সূরা নূহ, আয়াত: ২৬] ইবন মাসউদ বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! «إِلَّا سُهَيْلُ بْنُ بيضاء» ‘তবে সুহাইল ইবন বাইদা’ কারণ সে ইসলামের কথা আলোচনা করে। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকেন। আমি আমার ওপর আসমান থেকে পাথর বর্ষিত হওয়ার প্রকট আশঙ্কার ভয়ে ভীত হওয়াটা ঐ দিনের চেয়ে অধিক আর কখনো দেখিনি। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে, «إِلَّا سُهَيْلُ بْنُ بيضاء» তারপর আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত - مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَن يَكُونَ لَهُۥٓ أَسۡرَىٰ শেষ পর্যন্ত নাযিল করেন। [আহমাদ; তিরমিযী, হাদীস নং ৩০৮৪; হাকিম স্বীয় মুস্তাদরাকে এবং তিনি বলেন, বিশুদ্ধ সনদ। ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি উল্লেখ করেন নি।]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, বদর যুদ্ধে যখন বন্দীদের বন্দী করা হয়, তাদের মধ্যে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছিলেন, তাকে একজন আনসারী বন্দী করেন। সে বলে আমি আনসারীদের ওয়া‘দা দিয়েছি তারা তাকে হত্যা করবে। এ সংবাদটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, " إِنِّي لَمْ أَنَمِ اللَّيْلَةَ مِنْ أَجْلِ عَمِّي الْعَبَّاسِ، وَقَدْ زَعَمَتِ الْأَنْصَارُ أَنَّهُمْ قَاتِلُوهُ " “আমি আমার চাচা আব্বাসের চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি নি। আমার মনে হচ্ছিল আনসাররা তাকে হত্যা করে ফেলবে” তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি কি তাদের নিকট যাব? বললেন, হাঁ, তারপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আনসারদের নিকট আসলেন এবং বললেন, তোমরা আব্বাসকে ছেড়ে দাও। তারা বলল, আল্লাহর শপথ আমরা তাকে ছাড়বো না, তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের বললেন, যদি আল্লাহর রাসূল তাতে রাযি হয়? তারা বলল, যদি আল্লাহর রাসূল তাতে রাজি হয়, তবে তুমি তাকে নিয়ে যাও। তারপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে ছাড়ালেন। তারপর যখন সে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাতে ছিলেন, তখন তিনি তাকে বলল, হে আব্বাস তুমি ইসলাম গ্রহণ কর, আল্লাহর শপথ তোমার ইসলাম গ্রহণ করা আমার নিকট খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ করা হতে প্রিয়। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি তাকে তোমার ইসলাম কবুল করা খুশি করবে। তিনি তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরামর্শ চাইলেন, তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এরাতো আপনার গোত্রের লোক তাদের ছেড়ে দিন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট পরামর্শ চান তখন তিনি বলেন, আপনি তাদের হত্যা করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের থেকে ফিদইয়া গ্রহণ করলেন, তখন আল্লাহ তা‘আলা مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَن يَكُونَ لَهُۥٓ أَسۡرَىٰ حَتَّىٰ يُثۡخِنَ فِي ٱلۡأَرۡضِۚ “কোনো নবীর জন্য এটি সঠিক কাজ নয় যে, দেশে (আল্লাহর শত্রুদেরকে) পুরোমাত্রায় পরাভূত না করা পর্যন্ত তার (হাতে) যুদ্ধ-বন্দী থাকবে। এ আয়াত নাযিল করেন। [মুস্তাদরাকে (২/৩২৯) এবং হাকিম বলেন, সনদ শুদ্ধ।]

ইমাম আহমাদ রহ. বর্ণনা করেন, আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর যুদ্ধের বন্দীদের ব্যাপারে (সাহাবীগণের নিকট) পরামর্শ চান, তিনি বলেন, إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَمْكَنَكُمْ مِنْهُمْ আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর তোমাদেরকে বিজয়ী করেছেন’ তখন উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি তাদের গর্দান উড়িয়ে দিন, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন, এরপর আবারও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَمْكَنَكُمْ مِنْهُمْ “হে লোক সকল, আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর তোমাদেরকে বিজয় দান করেছেন, আর এরা গতকাল (পূর্বে) ছিল তোমাদেরই ভাই। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তাদের গর্দান উড়িয়ে দিন, কিন্তু এবারও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন, এরপর আবারও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের নিকট আগের কথাই বলেন, তখন আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দাঁড়িয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা মনে করি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন, আর তাদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করুন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারায় চিন্তার যে ছাপ ছিল তার দূর হয়, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন আর তাদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন, لَّوۡلَا كِتَٰبٞ مِّنَ ٱللَّهِ سَبَقَ لَمَسَّكُمۡ فِيمَآ أَخَذۡتُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ “আল্লাহর লেখন যদি পূর্বেই লেখা না হত তাহলে তোমরা যা (মুক্তিপণ হিসেবে) গ্রহণ করেছ তজ্জন্য তোমাদের ওপর মহাশাস্তি পতিত হত” আলী ইবন আবু তালহা বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা لَّوۡلَا كِتَٰبٞ مِّنَ ٱللَّهِ سَبَقَ “আল্লাহর লেখন যদি পূর্বেই লেখা না হত” এ আয়াত সম্পর্কে বলেন, অর্থাৎ সংরক্ষিত গ্রন্থে যে, গনীমত এবং বন্দী তোমাদের জন্য হালাল, لَمَسَّكُمۡ فِيمَآ أَخَذۡتُمۡ (মুক্তিপণ হিসেবে) “গ্রহণ করেছ তজ্জন্য তোমাদের ওপর পতিত হত” অর্থাৎ বন্দীদের থেকে, عَذَابٌ عَظِيمٞ “মহাশাস্তি” আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَكُلُواْ مِمَّا غَنِمۡتُمۡ حَلَٰلٗا طَيِّبٗاۚ “এক্ষণে, যুদ্ধে গনীমত হিসেবে যা তোমরা লাভ করেছ তা ভোগ কর, তা বৈধ ও পবিত্র”। আউফী রহ. আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন, অনুরূপ বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রাহ, আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ, সা‘ঈদ ইবন জুবাইর, ‘আতা’, হাসান আল-বাসরী, কাতাদা এবং আ‘মাশ থেকেও। لَّوۡلَا كِتَٰبٞ مِّنَ ٱللَّهِ سَبَقَ “আল্লাহর লেখন যদি পূর্বেই লেখা না হত” এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে এ জাতির জন্য গনীমত হালাল। এ মতের সাক্ষ্য প্রদান করে (এ হাদীসটি যা) ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম তাদের ‘সহীহ’ গ্রন্থদ্বয়ে বর্ণনা করেছেন, জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, " أُعْطِيتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ قَبْلِي : نصرتُ بِالرُّعْبِ مَسِيرَةَ شَهْرٍ، وَجُعِلَتْ لِي الْأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا، وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ وَلَمْ تُحَلَّ لِأَحَدٍ قَبْلِي، وَأُعْطِيتُ الشَّفَاعَةَ، وَكَانَ النَّبِيُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ عَامَّةً ". “আমাকে পাঁচটি জিনিস দেওয়া হয়েছে যা আমার পূর্বে আর কোনো নবীকে দেওয়া হয় নি, আমাকে এক মাসের দুরত্বে থেকে ভয় দেখানোর মাধ্যমে কাফেরেদের ওপর জয় দেওয়া হয়েছে, সমস্ত পৃথিবীকে আমার জন্য মসজিদ (সালাত আদায়ের স্থান) এবং পবিত্র করা হয়েছে, আমার জন্য গনীমতকে হালাল করা হয়েছে, আমার পূর্বে আর কারও জন্য হালাল করা হয় নি। আমাকে শাফা‘আত দেওয়া হয়েছে, কোনো নবীকে শুধুমাত্র তার জাতির প্রতি প্রেরণ করা হত, আর আমাকে সকল মানুষের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫২১]

আ‘মাশ বলেন, আবু সালিহ আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘গনীমতকে আমাদের ছাড়া মানবজাতির আর কারও জন্য কখনই বৈধ করা হয় নি। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, َكُلُواْ مِمَّا غَنِمۡتُمۡ حَلَٰلٗا طَيِّبٗاۚ “এক্ষণে, যুদ্ধে গনীমত হিসেবে যা তোমরা লাভ করেছ তা ভোগ কর” সে সময় তারা বন্দীদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করেন। ইমাম আবু দাঊদ তাঁর ‘সুনানে’ উল্লেখ করেন, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের দিন জাহেলী যুগের লোকেদের মুক্তিপণ ধার্য করেন চারশত। জমহুর উলামার নিকট বন্দীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হচ্ছে বিষয়টি ইসলামী নেতার ইখতিয়ারে, ইচ্ছা হলে তিনি তাদেরকে হত্যা করবেন। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানু কুরাইযার বন্দীদের ক্ষেত্রে করেছিলেন, আবার ইচ্ছা হলে মুক্তিপণ নিতে পারেন। যেমন, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের বন্দীদের ব্যাপারে করেছিলেন। অথবা মুসলিম বন্দীদের বিনিময়ে মুক্ত করবেন। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈকা দাসী ও তার কন্যার ব্যাপারে করেছিলেন। এরা সালামাহ ইবনুল আকওয়ার নিকট বন্দী হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদেরকে ফিরিয়ে দিয়ে তাদের পরিবর্তে মুসলিম বন্দীদের গ্রহণ করেছিলেন। অথবা তিনি ইচ্ছা করলে বন্দীদেরকে কয়েদী করে রাখতে পারেন। এটি ইমাম শাফে‘ঈ এবং একদল আলেমের মতামত। এ মাসআলা বিষয়ে ইমামদের আরো মতামত রয়েছে যা ফিকাহের কিতাবসমূহে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّمَن فِيٓ أَيۡدِيكُم مِّنَ ٱلۡأَسۡرَىٰٓ إِن يَعۡلَمِ ٱللَّهُ فِي قُلُوبِكُمۡ خَيۡرٗا يُؤۡتِكُمۡ خَيۡرٗا مِّمَّآ أُخِذَ مِنكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٧٠ وَإِن يُرِيدُواْ خِيَانَتَكَ فَقَدۡ خَانُواْ ٱللَّهَ مِن قَبۡلُ فَأَمۡكَنَ مِنۡهُمۡۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ ٧١﴾ [ الانفال : ٧٠، ٧١ ]

অর্থানুবাদ:

“হে নবী! তোমাদের হাতে যে সব যুদ্ধ-বন্দী আছে তাদেরকে বল, ‘আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তরে ভালো কিছু দেখেন তাহলে তোমাদের কাছ থেকে (মুক্তিপণ) যা নেওয়া হয়েছে তাত্থেকে উত্তম কিছু তোমাদেরকে তিনি দান করবেন আর তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।’ যদি তারা তোমার সাথে খিয়ানাত করার ইচ্ছে করে (তবে সেটা অসম্ভব কিছু নয়, কারণ এর থেকেও গুরুতর যে) তারা পূর্বে আল্লাহর সাথে খিয়ানাত করেছে, কাজেই আল্লাহ তাদেরকে তোমার অধীন করে দিয়েছেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে বিশেষভাবে অবগত, সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞাবান”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৭০-৭১]

তাফসীর:

বন্দীদেরকে উত্তম বিনিময় প্রদানের অঙ্গিকার:

মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের দিন বলেন, «إني قد عرفت أَنَّ أُنَاسًا مِنْ بَنِي هَاشِمٍ وَغَيْرِهِمْ قَدْ أُخْرِجُوا كُرْهًا لَا حَاجَةَ لَهُمْ بِقِتَالِنَا، فَمَنْ لَقِيَ مِنْكُمْ أَحَدًا مِنْهُمْ - أَيْ مِنْ بَنِي هاشم - فلا يقتله، ومن لقي الْبَخْتَرِيِّ بْنَ هِشَامٍ فَلَا يَقْتُلُهُ، وَمَنْ لَقِيَ الْعَبَّاسَ بْنَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَلَا يَقْتُلُهُ، فَإِنَّهُ إنما خرج مُسْتَكْرَهًا» “আমি জানি যে, বানু হাশিম এবং অন্যান্য গোত্রের কতিপয় ব্যক্তিকে বদর যুদ্ধে জোরপূর্বক বের করে আনা হয়েছে, আমাদের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ করার বাসনা ছিল না, তাদের কারও সাথে যদি তোমাদের কারও সাক্ষাত হয় অর্থাৎ বাণী হাশিমের- তবে তাকে হত্যা করো না, যে ব্যক্তির আবুল বাখতারী ইবন হিশামের সাথে সাক্ষাত হয় তাকে হত্যা করো না, যার সাথে আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিবের দেখা হয় তাকে হত্যা করো না। কেননা তাকে জোরপূর্বক বের করে আনা হয়েছে”। তখন আবু হুযাইফা ইবন উৎবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা আমাদের পিতা, আমাদের সন্তানাদি, আমাদের ভাতৃমণ্ডলি এবং আমাদের আত্মীস্বজনদের হত্যা করব আর আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে ছেড়ে দিব, আল্লাহর শপথ, আমার সাথে যদি তার সাক্ষাত হয় তবে তরবারী দ্বারা তাকে হত্যা করব। এ কথা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌঁছে তখন তিনি উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন, হে আবু হাফস (উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এ ছিল প্রথম দিন যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উপনাম ধরে ডাকেন) আল্লাহর রাসূলের চাচার মুখে কি তরাবারি দ্বারা আঘাত করা হবে? তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই, সে মুনাফিক হয়ে গেছে, আবু হুযাইফাহ এরপরে বলতেন: আল্লাহর শপথ, আমি আমার এ কথার জন্য নিজেকে নিরাপদ মনে করি না আর সর্বদা আমি এর ভয়ে ভীত, তবে আমার শাহাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা এর ক্ষতিপূরণ করে দিবেন, এরপর তিনি ইয়ামামার যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। [সীরাতে ইবনে হিশাম: ২৭১/২। সহীহ বুখারীতে এসেছে মূসা ইবন উক্ববাহ বর্ণনা করেন, ইবন শিহাব বলেন, হাদীসটি আমার নিকট বর্ণনা করেছেন আনাস ইবন মালিক, কতিপয় আনসারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসার অনুমতি চান এরপর বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদেরকে অনুমতি দিন, আমরা আমাদের মামাত ভাই আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে বিনা মুক্তিপণে ছেড়ে দেই তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «لَا وَاللَّهِ لَا تَذَرُونَ مِنْهُ دِرْهَمًا» ‘না, আল্লাহর শপথ, তার থেকে একটি দিরহামও ছেড় না’। (অনুবাদক) সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪০২৬]

ইউনুস ইবন বুকাইর বর্ণনা করেন মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক থেকে (তিনি) ইয়াযীদ ইবন রূমান থেকে (তিনি) উরওয়া থেকে (তিনি) যুহরী থেকে (তিনি) একদল (বর্ণনাকারী থেকে) তিনি তাদের নাম বলেন, তারা বলেন, কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তাদের বন্দীদের মুক্তিপণ প্রেরণ করে, প্রতিটি কাওম তাদের বন্দীদের জন্য এমন পরিমাণ মুক্তিপণ পাঠায় যাতে তিনি খুশি হয়ে যান, আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি তো মুসলিম ছিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «اللَّهُ أَعْلَمُ بِإِسْلَامِكَ، فَإِنْ يَكُنْ كَمَا تَقُولُ فَإِنَّ اللَّهَ يَجْزِيكَ، وَأَمَّا ظَاهِرُكَ فَقَدْ كَانَ عَلَيْنَا، فَافْتَدِ نَفْسَكَ وابني أخيك نوفل وعقيل، وحليفك عتبة بن عمرو» “আল্লাহ তা‘আলা আপনার ইসলাম সম্পর্কে ভালো অবগত আছেন, প্রকৃত বিষয় যদি তাই হয় যা আপনি বলছেন তবে আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে বদলা দিবেন, তবে আপনার বাহ্যিক বিষয়টি আমাদের বিরুদ্ধে, কাজেই আপনার মুক্তিপণ দিন, আরও দিন আপনার দুই চাচাত ভাই নাউফাল ইবনুল হারিস ইবন আব্দুল মুত্তালিব এবং আক্বীল ইবন আবু তালিব ইবন আব্দুল মুত্তালিবের আর আপনার মিত্র বানু হারিস ইবন ফিহর ভাই উৎবা ইবন আমরের। তখন তিনি (আব্বাস) বলেন, আমার নিকট মুক্তিপণ নেই ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «فَأَيْنَ الْمَالُ الَّذِي دَفَنْتَهُ أَنْتَ وَأُمُّ الْفَضْلِ؟ فَقُلْتَ لَهَا إِنْ أُصِبْتُ فِي سَفَرِي هَذَا، فَهَذَا الْمَالُ الَّذِي دَفَنْتُهُ لِبَنِيَّ الْفَضْلِ وَعَبْدِ اللَّهِ وَقُثَمَ» “সেই সম্পদ কোথায় যা আপনি এবং উম্মুল ফায্ল পুঁতে রেখেছেন আর আপনি তাকে বলেছিলেন: আমি যদি সফরে নিহত হই তবে আমার এ পুঁতে রাখা সম্পদ আমার সন্তান ফযল, আব্দুল্লাহ এবং কুসামের জন্য? তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ, ইয়া রাসূলাল্লাহ, নিঃসন্দেহে আমি অবগত আছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল, এটি এমন একটি বিষয় যা আমি আর ফযলের মা ছাড়া আর কেউ জানে না, তাহলে আপনারা আমার কাছে থাকা যে বিশ উকিয়া নিয়ে নিয়েছেন সেটাকেই আমার মুক্তিপণ হিসেবে গ্রহণ করুন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «لَا، ذَاكَ شَيْءٌ أَعْطَانَا اللَّهُ تَعَالَى مِنْكَ» না, সেটা তো আল্লাহ তা‘আলা নিজ অনুগ্রহে আপনার থেকে আমাদেরকে দিয়েছেন। সুতরাং আব্বাস নিজের, তাঁর দুই ভাতুষ্পুত্র এবং তাঁর হালীফের (মিত্রের) পক্ষ থেকে মুক্তিপণ আদায় করেন। সে সময় আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেন - يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّمَن فِيٓ أَيۡدِيكُم مِّنَ ٱلۡأَسۡرَىٰٓ إِن يَعۡلَمِ ٱللَّهُ فِي قُلُوبِكُمۡ خَيۡرٗا يُؤۡتِكُمۡ خَيۡرٗا مِّمَّآ أُخِذَ مِنكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ “হে নবী! তোমাদের হাতে যে সব যুদ্ধবন্দী আছে তাদেরকে বল, ‘আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তরে ভালো কিছু দেখেন তাহলে তোমাদের কাছ থেকে (মুক্তিপণ) যা নেওয়া হয়েছে তাত্থেকে উত্তম কিছু তোমাদেরকে তিনি দান করবেন আর তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন, আর আল্লাহ তা‘আলা পরম ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু”।

আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আপনি যা নিয়ে এসেছি আর আমরা সাক্ষ্য দিই যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। আমরা অবশ্যই আমাদের কাওমের ওপর আপনা কল্যাণকে প্রাধান্য দেব। তারপর আল্লাহ নাযিল করেন, إِن يَعۡلَمِ ٱللَّهُ فِي قُلُوبِكُمۡ خَيۡرٗا يُؤۡتِكُمۡ خَيۡرٗا مِّمَّآ أُخِذَ مِنكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের থেকে যা নেওয়া হয়েছে তার বিনিময়ে তোমাদের উত্তম বদলা দেবেন। وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۚ তোমাদের শির্ক যার ওপর তোমরা ছিলে। এ আয়াত নাযিলের পর আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমার সম্পর্কে এ আয়াত নাযিল না হয়ে সমগ্র দুনিয়া আমাকে দেওয়া হোক তা আমি পছন্দ করি না। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, يُؤۡتِكُمۡ خَيۡرٗا مِّمَّآ أُخِذَ مِنكُمۡ আমার থেকে যা নেওয়া হয়েছে তার একশত গুণ বেশি উত্তম আমাকে দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۚ আশা করি তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَإِن يُرِيدُواْ خِيَانَتَكَ “যদি তারা তোমার সাথে খিয়ানাত করার ইচ্ছে” (তবে সেটা অসম্ভব কিছু নয়, কারণ এর থেকেও গুরুতর যে) অর্থাৎ তারা যে সমস্ত কথাবার্তা প্রকাশ করে তাতে فَقَدۡ خَانُواْ ٱللَّهَ مِن قَبۡلُ “তারা পূর্বে আল্লাহর সাথে খিয়ানাত করেছে” অর্থাৎ বদর যুদ্ধের পূর্বে তাঁকে অস্বীকার করে। فَأَمۡكَنَ مِنۡهُمۡۗ “কাজেই আল্লাহ তাদেরকে তোমার অধীন করে দিয়েছেন” তাদেরকে বদরে বন্দী করার মাধ্যমে। وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ “আল্লাহ সর্ব বিষয়ে বিশেষভাবে অবগত, সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞাবান” তিনি তাঁর কর্ম সম্পর্কে পূর্ণ অবগত আর সে ব্যাপারে প্রজ্ঞাবান।

কাতাদাহ বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন আবী সারাহ যখন সে মুরতাদ হয়ে মুশরিকদের সাথে মিলিত হয় তার সম্পর্কে আয়াত নাযিল হয়।

আতা আল-খুরাসানী বলেন, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেছেন, আব্বাস ও তার সাথীদের বিষয়ে নাযিল হয়েছে যখন তারা বলে আমরা আমাদের সম্প্রদায়ের ওপর আপনার কল্যাণকে প্রাধান্য দেব। সূদ্দী রহ. বলেন, আয়াতটি ব্যাপক। তার কথাই স্পষ্ট ও ব্যাপক। আল্লাহ ভালো জানেন।

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَهَاجَرُواْ وَجَٰهَدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلَّذِينَ ءَاوَواْ وَّنَصَرُوٓاْ أُوْلَٰٓئِكَ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَلَمۡ يُهَاجِرُواْ مَا لَكُم مِّن وَلَٰيَتِهِم مِّن شَيۡءٍ حَتَّىٰ يُهَاجِرُواْۚ وَإِنِ ٱسۡتَنصَرُوكُمۡ فِي ٱلدِّينِ فَعَلَيۡكُمُ ٱلنَّصۡرُ إِلَّا عَلَىٰ قَوۡمِۢ بَيۡنَكُمۡ وَبَيۡنَهُم مِّيثَٰقٞۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ ٧٢﴾ [ الانفال : ٧٢ ]

অর্থনুবাদ:

“যারা ঈমান এনেছে, হিজরাত করেছে, নিজেদের মাল দিয়ে জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে আর যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য করেছে, এরা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। আর যারা ঈমান এনেছে কিন্তু হিজরাত করে নি তারা হিজরাত না করা পর্যন্ত তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করার কোনো দায়-দায়িত্ব তোমার ওপর নেই, তবে তারা যদি দীনের ব্যাপারে তোমাদের সাহায্য চায় তাহলে তাদেরকে সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য, তবে তাদের বিরুদ্ধে নয় যাদের সঙ্গে তোমাদের মৈত্রী চুক্তি রয়েছে। তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৭২]

তাফসীর:

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন