HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ভালো ছাত্র হওয়ার উপায়

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
ভালো ছাত্র হওয়ার উপায়

উৎসর্গ

‘‘যারা লেখাপড়া করে জ্ঞানার্জন ও চরিত্র গঠনের মাধ্যমে

প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে চান তাদের জন্যে’’।

রচনায় :

শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

আরবি প্রভাষক :

আলহাজ্জ মোহাম্মদ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মাদরাসা

৮-৯ লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, ঢাকা- ১১০০।

সম্পাদনায় :

মোহাম্মদ ইমাম হুসাইন কামরুল

ব্যবস্থাপনা পরিচালক

ইমাম পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ভূমিকা
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ

‘ভালো ছাত্র হওয়ার উপায়’ বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ বের করতে পেরে আল্লাহ তা‘আলার অগণিত শুকরিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর।

মহান আল্লাহ রববুল ‘আলামীন মানব জাতিকে অতি সুন্দর আকৃতি দিয়ে সৃষ্টির সেরা এবং সম্মানিত জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মানুষের এ শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মানকে ধরে রাখতে হলে অবশ্যই তাকে জ্ঞানার্জন করতে হবে এবং উত্তম চারিত্রিক গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে। সুনানে ইবনে মাজায় মাক্তাবাতুশ্ শামেলার নম্বর অনুযায়ী ২২৪ নং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلٰى كُلِّ مُسْلِمٍ

‘‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞানার্জন করা ফরয’’।

এই জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়েই ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের জীবনের অধ্যায় সূচনা করে। সকল ছাত্র-ছাত্রীই নিজের অধ্যয়নকৃত বিষয়টি ভালোভাবে মনের মধ্যে গেঁথে রাখতে চায়, তবে সকলেই তা পারে না। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়া মুখস্থ করে থাকে; কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই তা ভুলে যায়। এজন্য কিভাবে পড়াশোনা করলে পড়া মনে থাকবে এবং কিভাবে প্রস্তুতি নিলে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা যাবে- আর কী কী গুণাবলী অর্জন করলে একজন আদর্শ ও যোগ্য মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যাবে- এ গ্রন্থে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় সংস্করণে আরো কিছু নতুন আকর্ষণীয় বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। জ্ঞানার্জন ও চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে বইটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবে। ইনশা-আল্লাহ!

যাদের জন্য এ লেখা তারা কিছুটা উপকৃত হলেই আমাদের শ্রম সার্থক হবে। বইটি প্রকাশনার কাজে যারা সহযোগিতা করেছেন সবাইকে যেন আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করেন এবং আমাদের এ শ্রম ও খেদমতকে কবুল করে সকলের নাজাতের উসীলা বানিয়ে দেন। আমীন!



মা‘আস্সালাম

শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

শিক্ষার সংজ্ঞা
বাংলা অভিধানসমূহে ‘শিক্ষা’ শব্দের যেসব অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে তা হল :

জ্ঞান, চর্চা, অধ্যয়ন, আক্কেল, অভ্যাস, অভিজ্ঞতা, জ্ঞানার্জন, বিদ্যার্জন, বিদ্যাভ্যাস, উপদেশ ও নির্দেশ ইত্যাদি।

ইংরেজি ভাষায় শিক্ষার জন্য যেসব শব্দ ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে রয়েছে :

Education (এডুকেশন), Knowledge (নলেজ), Study (স্টাডি), Lesson (লেসন), Art (আর্ট), Learning (লার্নিং), Culture (কালচার) এবং Practise (প্র্যাকটিস) ইত্যাদি।

আরবি ভাষায় শিক্ষার ক্ষেত্রে যেসব পরিভাষা ব্যবহার হয়েছে তা হল :

اَلتَّعْلِيْمُ (আত্তা‘লীমু), اَلتَّدْرِيْسُ (আত্তাদ্রীসু), اَلتَّرْبِيَةُ (আত্তার্বিয়াতু), اَلتَّدْرِيْبُ (আত্তাদ্রীবু) এবং اَلتَّادِِيْبُ (আত্তা’দীবু) ইত্যাদি।

শিক্ষাবিদগণ বিভিন্নভাবে শিক্ষার সংজ্ঞা দিয়েছেন। এক সংজ্ঞায় বলা হয়েছে :

‘‘শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করার নাম হল শিক্ষা’’।

শিক্ষার সংজ্ঞায় মহাকবি জন মিলটন বলেছেন,

‘‘Education is the harmonious development of body, mind and soul’’.

‘‘শিক্ষা হচ্ছে দেহ, মন ও আত্মার সুসমন্বিত উন্নতি সাধনের নাম’’।

ব্যাপক অর্থে, ‘‘যা কিছু ব্যক্তির মধ্যে আত্মপর্যালোচনার ভাবধারা সৃষ্টি করে এবং সময় ও সমাজের চাহিদার প্রেক্ষিতে দক্ষ, কর্মমুখী, সৎ, চরিত্রবান, ন্যায়পরায়ণ, বিশ্বস্ত ও সাহসী মানুষ সৃষ্টি করে তাই হল শিক্ষা।’’

শিক্ষার উদ্দেশ্য
১. শিক্ষার উদ্দেশ্য হল- চরিত্র গঠন, সুন্দর জীবনের জন্য প্রস্তুতি এবং ভালো দেহ ও ভালো মন গড়ে তোলা।

২. শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবতাবোধ সৃষ্টি করা এবং তাদেরকে মানবতার কল্যাণে উদ্বুদ্ধ করা।

৩. শিক্ষার্থীদের মধ্যে আল্লাহর দাস ও প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রেরণা ও যোগ্যতা সৃষ্টি করা।

৪. শিক্ষার্থীদের মধ্যে বলিষ্ঠ নৈতিকতা ও চেতনা জাগ্রত করা।

৫. সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথাযোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি করা।

৬. আল্লামা ইকবালের মতে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হল পূর্ণাঙ্গ মুসলিম তৈরি করা।

জ্ঞানের মূল উৎস আলস্নাহ তা‘আলা

মানুষ ও বিশ্বজাহানের স্রষ্টা মহান আল্লাহই সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল উৎস। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

قُلْ إِنَّمَا الْعِلْمُ عِنْدَ اللهِ

‘‘তুমি বলো! সমস্ত জ্ঞানই আল্লাহর নিকট রয়েছে।’’ (সূরা মুলক- ২৬)

وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖ إِلَّا بِمَا شَآءَ

‘‘তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে কেউ কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না।’’ (সূরা বাকারাহ- ২৫৫)

আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জ্ঞান লাভের মাধ্যম হল ওহী। আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে বিভিন্ন জাতির মধ্য হতে কিছু ব্যক্তিকে নবী ও রাসূল নিযুক্ত করে তাদের কাছে তিনি প্রকৃত জ্ঞান অবতীর্ণ করেন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট তিনি মানবতার মুক্তির জন্য পরিপূর্ণ জ্ঞান অবতীর্ণ করেছেন এবং এর সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলা নিজেই গ্রহণ করেছেন। কুরআন এবং হাদীসের মধ্যে এসব জ্ঞান সংরক্ষিত রয়েছে।

শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
কথায় আছে,

‘‘Education is the backbone of a nation’’.

‘‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’’।

সুশিক্ষা না পেলে কোনো মানুষ ব্যক্তিত্ব অর্জনে সক্ষম হয় না। যারা শিক্ষার অভাবে জ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত থাকে তাদেরকে বলা হয় মূর্খ। মূর্খ মানুষকে অজ্ঞতার অন্ধকার হতে বেরিয়ে এসে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যুগোপযোগী, সামাজিক, আত্মনির্ভর, শ্রেষ্ঠ এবং পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে অবশ্যই শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষা ব্যতীত কেউ যোগ্য, দক্ষ ও ভদ্র মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।

জীবন অত্যন্ত কঠিন এবং সমস্যাবহুল। বাঁচার জন্য প্রত্যেককেই সংগ্রাম করতে হয়। জীবনকে উন্নত করতে হলে অনেক কিছু জানতে হয়, শিখতে হয়। নিজের ও সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় কর্তব্য পালন করতে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। চিন্তাশক্তির উন্মেষ, জীবিকা অর্জন, আদর্শ সমাজ গঠন, রাষ্ট্রীয় কর্তব্য পালন, সভ্যতার অগ্রগতি সাধন এবং সুন্দরভাবে জীবনযাপন এসব ক্ষেত্রে শিক্ষা ছাড়া বিকল্প কিছু চিন্তা করা যায় না।

শিক্ষা সম্পর্কে কুরআনের ভাষ্য

জ্ঞানার্জনের নির্দেশ এবং জ্ঞানীদের প্রশংসায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

اِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ - خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ - اِقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ - الَّذِيْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ - عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ -

‘‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করো, তোমার পালনকর্তর্া অতি দয়ালু। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’’ (সূরা আলাক- ১-৫)

قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ اِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ

‘‘বলো! যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে যারা বুদ্ধিমান।’’ (সূরা যুমার- ৯)

يَرْفَعِ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَالَّذِيْنَ أُوْتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ

‘‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেন।’’ (সূরা মুজাদালা- ১১)

وَاَنْزَلَ اللهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللهِ عَلَيْكَ عَظِيْمًا

‘‘আল্লাহ তোমার প্রতি কিতাব ও হিকমাত (প্রজ্ঞা) নাযিল করেছেন এবং তুমি যা জানতে না তা তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন; তোমার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ অতি মহান।’’ (সূরা নিসা- ১১৩)

শিক্ষা সম্পর্কে হাদীসের বাণী

বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্ঞানী ব্যক্তি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্ঞানার্জনের অনেক গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনা করেছেন।

 রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের উদ্দেশে কোনো পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। তার সম্মানে ফেরেশতারা নিজেদের পাখা বিছিয়ে দেয় এবং তার জন্য আসমান ও যমীনের সবকিছু এমনকি পানির মাছ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে। একজন ইবাদতকারীর উপর একজন জ্ঞানীর মর্যাদা তেমন যেমন সমস্ত তারকারাজির উপর চাঁদের মর্যাদা। জ্ঞানীরা হলেন নবীদের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ উত্তরাধিকার হিসেবে দিনার বা দিরহাম (অর্থ সম্পদ) রেখে যান না; বরং তারা জ্ঞান রেখে যান। সুতরাং যে জ্ঞান অর্জন করল সে যেন পূর্ণ অংশই পেল।’’ সহীহ মুসলিম, হা/২২৩; আবু দাউদ, হা/৩৬৪৩।

 রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْاٰنَ وَعَلَّمَهٗ

‘‘তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হল সেই ব্যক্তি, যে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।’’ (বুখারী হা/ ৫০২৭)

 রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,

‘‘যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়; কিন্তু তিনটি আমল ব্যতীত (সেগুলোর সওয়াব বন্ধ হয় না)। (১) সাদাকায়ে জারিয়া, (২) জ্ঞান- যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং (৩) সুসন্তান- যে তার পিতা-মাতার জন্য দু‘আ করে।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/৪৩১০; আবু দাউদ, হা/২৮৮২)

 হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘‘দুই প্রকার লোক কখনো তৃপ্ত হয় না (ক) জ্ঞান অন্বেষণকারী (খ) সম্পদের লোভী।’’ (মুসতাদরাক হা/৩১২)

বিদ্বান ও মনীষীদের কথা

 আলী (রাঃ) বলেন, ‘‘জ্ঞান অর্থসম্পদের চেয়ে উত্তম। কেননা জ্ঞান তোমাকে পাহারা দেয়; কিমুত অর্থসম্পদকে সংরক্ষণ করতে হয়। জ্ঞান হল শাসক, আর অর্থ হল শাসিত। অর্থ ব্যয় করলে নিঃশেষ হয়ে যায়; কিমুত জ্ঞান বিতরণ করলে আরো বৃদ্ধি পায়।’’ (ইহয়াউল উলূম, ১/১৭-১৮ পৃঃ)

 মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, ‘‘তোমরা জ্ঞানার্জন করো। জ্ঞান চর্চা করা হল তাসবীহ, জ্ঞানের অনুসন্ধান করা জিহাদ, অজ্ঞ ব্যক্তিকে জ্ঞান দেয়া সাদাকা, জ্ঞান হালাল-হারাম জানার মানদন্ড, একাকিত্বের বন্ধু, নিঃসঙ্গতার সঙ্গী, চরিত্রের সৌন্দর্য, অপরিচিত লোকদের সাথে পরিচিত হওয়ার মাধ্যম। আল্লাহ জ্ঞানের দ্বারা মানুষকে এমন মর্যাদাবান করেন যা স্থায়ীভাবে তাকে অনুসরণীয় করে রাখে।’’ (আল-আজুরী, আখলাকুল উলামা)

 আবূ দারদা (রাঃ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি কল্যাণের খোঁজে ব্যতিব্যস্ত হয় সে কল্যাণ লাভ করে। যে অকল্যাণ থেকে বাঁচার চেষ্টা করে সে অকল্যাণ থেকে রক্ষা পায়। কোনো মানুষ জ্ঞানী হয়ে জন্ম নেয় না। তাকে জ্ঞান অর্জন করতে হয়।’’ (কিতাবুল ইলম, ইবনে খায়ছামাহ, পৃঃ ২৮)

 হাসান বসরী (রহঃ) বলেন, ‘‘অজ্ঞ আমলকারী পথহারা পথিকের ন্যায়। সে কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বেশি করে। অতএব তুমি এমনভাবে জ্ঞানার্জন করো- যাতে আমল ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’’

 মুজাহিদ বিন জুবায়ের (রহঃ) বলেন, ‘‘লজ্জা ও ভয় হল জ্ঞানার্জনের প্রতিবন্ধকতা।’’ (ইবনে হাজার, ফাতহূল বারী-১/২২৮ পৃঃ)

 ইবনে শিহাব যুহরী (রহঃ) বলেন, ‘‘ইল্ম/জ্ঞান হল সংরক্ষিত সম্পদ, আর এ সম্পদের চাবি হল প্রশ্ন করা।’’

 ইয়াহ্ইয়া বিন খালেদ (রহঃ) বলেন, ‘‘তুমি অল্প হলেও জ্ঞানের প্রতিটি শাখাকে আয়ত্ত করো। কারণ যে বিষয়টি তুমি জান না তা তোমার জন্য শত্রুস্বরূপ। জ্ঞানের মাধ্যমেই তুমি তা থেকে নিরাপদ হতে পার।’’

 মাসরূক (রহঃ) বলেন, ‘‘একজন ব্যক্তির জ্ঞানী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে আল্লাহকে ভয় করে আর তার মূর্খ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে নিজের জ্ঞান নিয়ে অহংকার করে।’’

 ‘আওন বিন আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ‘‘তোমার যদি জ্ঞানী হওয়ার সাধ্য থাকে তবে জ্ঞানী হও, আর যদি সাধ্য না থাকে তাহলে জ্ঞানান্বেষী হও। আর যদি জ্ঞানান্বেষী হওয়ার সাধ্যও না থাকে তবে জ্ঞানীদের প্রতি ভালোবাসা রাখ, তাও যদি না পার কমপক্ষে তাদেরকে ঘৃণা করো না।’’

 ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন, ‘‘তুমি কোনো বিষয় জানলে তার চিহ্ন ও প্রভাব তোমার চেহারায় ফুটে উঠবে। জ্ঞানীরা কখনো বাঁচালের মত কথা বলেন না। মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তি রয়েছে যারা একমাসের কথা এক ঘণ্টায় বলে।’’ (ইবনুল হাজ, আল-মাদখাল- ২/১২৪)

 মুহাম্মাদ ইবনে ফজল (রহঃ) বলেন, ‘‘অনেক মূর্খ ব্যক্তি রয়েছে যাদের কাছে জ্ঞান উপস্থিত হয়েছে; কিমুত তারা তা দূরে নিক্ষেপ করেছে। বহু দুনিয়া ত্যাগী আমলকারী রয়েছে যারা জাহেলিয়াতের আমল করে তাদের আমলগুলো নষ্ট করে ফেলেছে। মানুষের সর্বপ্রথম বের হওয়া জিনিসটি হল তার জিহবা (কথা বলা) আর জ্ঞান থেকে বের হওয়া প্রথম জিনিসটি হল ধৈর্য।’’ (শু‘আবূল ঈমান- ৭/৪২৮)

 ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, ‘‘খাদ্য ও পানীয়ের চেয়ে জ্ঞানের গুরুত্ব অধিক। কারণ খাদ্য দিনে একবার বা দু’বার প্রয়োজন হয়; কিমুত জ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে প্রতিটি নিঃশ্বাসের সমপরিমাণ।’’ (মাদারিজুস সালেকীন )

 শ্রেষ্ঠ বইগুলো হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বন্ধু । -লর্ড চেষ্টার ফিল্ড

 যে গৃহে বই নেই সে গৃহে আত্মাও নেই। -জন হেনরী

 আমি তাকে সোনা কিংবা রোপা দেইনি, কিন্তু তার চেয়েও মূল্যবান জিনিস বই দিয়েছি। -এডওয়ার্ড ওয়ার্ড

 যে বই পড়ে না তার মাঝে মর্যাদাবোধ জন্ম নেয় না। -পি. জি.

 আমি পড়তে পড়তে বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি; কিন্তু প্রতিদিন যা পড়ি তা আমার কাছে নতুন মনে হয়। -টমাস জেফার্সন

 শিক্ষার যে অংশটুকু তোমার জীবনে কাজে লাগবে সেটুকু হচ্ছে সমগ্র শিক্ষা জীবনের মূল অংশ। -জে. আর. লওয়ে

 বিদ্যা অর্জনে লজ্জা করা উচিত নয়, কেননা মূর্খতা লজ্জা হতেও নিকৃষ্টতর। -প্লেটো

ছাত্র-ছাত্রীর পরিচয়
সমগ্র বিশ্ব জুড়ে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা ও মক্তব- এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তারাই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঐ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে পরিচিত। আর যারা শিক্ষকদের অনুকরণে অর্জিত জ্ঞানের মাধ্যমে মহান স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশিত ও রাসূল সল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়াসলাম -এর দেখানো পথের অনুসরণ করে চিন্তা-চেতনা, লেখাপড়া, কথাবার্তা ও কাজকর্ম করে এবং সকলের সাথে আদর্শিক আচার-আচরণ প্রকাশ করে তাদেরকেই বলা হয় আদর্শ ছাত্র-ছাত্রী। এমন ছাত্র-ছাত্রীরা পরিবার, সমাজ ও দেশের সম্পদ। এজন্য সকলেই তাদের প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল হয়।

ছাত্র-ছাত্রীর মৌলিক গুণাবলী
ছাত্র-ছাত্রীদের কিছু মৌলিক গুণাবলী এখানে আলোচনা করা হল। ছাত্র-ছাত্রীরা যদি নিজেদের জীবনে এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন করে তাহলে তারা ভালো এবং আদর্শবান হিসেবে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে- ইনশা-আল্লাহ!

বিশ্ব বিখ্যাত ফার্সী কবি আল্লামা শেখ সাদী সিরাজী (রহঃ) ছাত্র-ছাত্রীদের কতগুলো মৌলিক গুণাবলীর বর্ণনা দিতে গিয়ে কাব্যের ভাষায় বলেন :

‘‘ইল্মেরা হর্গিয্ নায়াবী তানাবাশদ্ শশ্ খিসাল,

হির্সে কুতাহ, ফাহ্মে কামিল, জাম্য়ি খাতির কুল্লে হাল।

খেদ্মতে উস্তাদ বায়দ্, হাম্ ছবক্ খানি মুদাম,

লফ্জেরা তাহ্কীক্ খানি তাশয়ী মর্দে কামাল।’’

অর্থ : ‘‘তুমি কখনোই ইল্ম বা জ্ঞান পাবে না, যতক্ষণ না ছয়টি গুণ অর্জন করবে। গুণগুলো হল- লোভ সংবরণ করা, ভালোভাবে বুঝা, মনোযোগ ধরে রাখা, ক্লাসে উপস্থিত থাকা, সহপাঠীদের সাথে পাঠচর্চা করা ও শব্দের বিশ্লেষণ জানা।’’

উদ্ধৃত চরণগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের ছয়টি মৌলিক গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে- যা ব্যতীত একজন শিক্ষার্থী সত্যিকারভাবে শিক্ষা লাভ করতে পারে না। নিম্নে এ ছয়টি গুণাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হল :

১. লোভ সংবরণ করা

যদি কোনো শিক্ষার্থী পড়ার সময় অর্থের চিন্তা করে এবং একটি চাকুরী পেলেই পড়াশোনা ছেড়ে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় তবে তার আর পড়াশোনা হবে না। অর্থের লোভ তার পড়াশোনার মানসিকতা নষ্ট করে দেবে। এভাবে যারাই ছাত্রজীবনে অর্থের লোভে পড়ে যাবে এবং লোভ সংবরণ করতে না পারবে তাদের মানসিক টেনশন বৃদ্ধি পাবে এবং অধ্যয়নে চরম ব্যাঘাত ঘটবে। কথায় বলে,

‘‘Greed begets sin, sin begets death’’.

অর্থাৎ ‘‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’’।

অতএব ছাত্র-ছাত্রীদের লোভ-লালসা সংবরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে ছাত্রজীবন অর্থ ব্যয়ের এবং জ্ঞানার্জনের সময়। এসময় তাকে অর্থ খরচ করে জ্ঞানার্জন করতেই হবে। এ ব্যাপারে কার্পণ্য করা ঠিক নয়। তবে যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাদেরকে অবশ্যই হিসাব অনুযায়ী চলতে হবে।

২. ভালোভাবে বুঝা

যে বিষয়টি পড়বে তা কয়েকবার পড়ে ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে, এতে পঠিত বিষয়টি অন্তরে গেঁথে যাবে। কেননা ভালোভাবে বুঝাই হল অর্ধেক মুখস্ত করা। আর যারা না বুঝেই মুখস্ত করবে তাদের ঐ মুখস্ত করা বিষয়টি কিছুক্ষণ পরেই আর স্মৃতিতে থাকবে না।

৩. মনোযোগী হওয়া

মনোযোগ ছাড়া কোনো কাজই ভালোভাবে সম্পন্ন হয় না। তাই অধ্যয়নের সময় গভীর মনোযোগী হতে হবে, একাগ্রচিত্তে অধ্যয়ন করতে হবে এবং আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিতে হবে। পড়ার সময় দু’মনা হলে পড়াটি মুখস্ত হবে না এবং মনে থাকবে না। একদিকে টেবিলের সামনে বসে পড়বে, অন্যদিকে মনে মনে হরেক রকম চিন্তাভাবনা করবে এটা হতে পারে না। পড়াটাই ছাত্র-ছাত্রীর আসল কাজ, অধ্যয়নই তাদের আসল দায়িত্ব, এ মহান কাজ ও দায়িত্বে শতভাগ একাগ্রতা নিয়ে গভীর মনোযোগের সাথে পড়ার টেবিলে বসতে হবে। মন থেকে দুনিয়ার সকল বাজে চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে হবে এবং মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর উপর ভরসা করে অধ্যয়ন করতে হবে। তাহলে সহজেই পড়াটা আয়ত্তে আসবে, মুখস্ত হবে এবং অনেক দিন পর্যন্ত সেটা মনের মধ্যে গেঁথে থাকবে।

৪. শিক্ষকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা

সকল ছাত্র-ছাত্রীকে অবশ্যই তাদের শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষককে সম্মান করতে হবে। অন্তর থেকেই তাদেরকে ভালোবাসতে হবে এবং শিক্ষকদের কথাবার্তা গভীর মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করতে হবে। কোনো বিষয় না বুঝে থাকলে বিনয় ও ভদ্রতার সাথে ঐ বিষয়টি পুনরায় বুঝানোর জন্য শিক্ষককে অনুরোধ করবে। এতে লজ্জা-শরমের কিছু নেই।

শিক্ষক বিরক্তিবোধ করতে পারেন এমন ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। খুব সাবধানে এবং সতর্কাবস্থায় শিক্ষকমন্ডলীর সাথে কথা বলতে হবে। তোমার আচার-আচরণ, চাল-চলন যেভাবে দেখলে তাঁরা খুশি হয়ে তোমার জন্য প্রাণ খুলে দু‘আ করেন সেভাবেই চলার চেষ্টা করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, শিক্ষক যদি কারো ব্যবহারে কষ্ট পান এবং বদ্দু‘আ করে ফেলেন তাহলে ঐ ছাত্রের জীবনটা বরবাদ হয়ে যেতে পারে। তাই কোনো সময় যদি কারো প্রতি কোনো শিক্ষক নারাজ হয়ে যান তাহলে ঐ ছাত্র যেন তখনই শিক্ষকের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে লজ্জাবোধ না করে।

যারা তোমার চেয়ে বয়সে বড় বা ক্লাসের দিক থেকে সিনিয়র তারা সবাই এক হিসেবে তোমার শিক্ষক। তাই তাদের সাথেও ভালো ব্যবহার করতে হবে এবং সম্মান দেখাতে হবে। এ ক্ষেত্রে তোমার মাতা-পিতা এবং বড় ভাই-বোনরাও শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাইতো আরবী কবি হাফেজ ইবরাহীম বলেছেন, ‘‘মা হলেন ঐ সকল মহান শিক্ষকদের শিক্ষক, যাদের কীর্তিসমূহ সারা পৃথিবীতে ভরপুর।’’

৫. সহপাঠীর সাথে পাঠচর্চা করা

নিয়মিতভাবে যদি সহশিক্ষার্থীদের সাথে পাঠচর্চা করা যায়, তাহলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। কারণ যে বিষয়টি একাকী বুঝতে কষ্ট হয়, তা দশ জনে মিলে আলোচনা করলে অনেক সহজেই বুঝা যায়। কথায় বলে,

‘‘দশের লাঠি একের বোঝা’’।

একজন যা বুঝতে পারছে না, তা যদি কয়েকজনে মিলে চেষ্টা করে তাহলে সহজে বুঝা যাবে এবং দীর্ঘক্ষণ মনে থাকবে। কবি বলেন,

‘‘দশে মিলে করি কাজ

হারি জিতি নাহি লাজ’’।

৬. শব্দের প্রকৃত অর্থ ও বিশ্লেষণ জানা

প্রতিটি বাক্যের প্রতিটি শব্দের প্রকৃত অর্থ ও বিশ্লেষণ জানতে হবে। যদি প্রতিটি শব্দের তাহকীক বা বিশ্লেষণ জেনে অধ্যয়ন করা যায় তাহলে ঐ পড়াটি দীর্ঘদিন মনে থাকবে, জ্ঞানের গভীরতা অর্জিত হবে এবং ভাষার উপরও দক্ষতা বাড়বে। যেমন- Student অর্থ ছাত্র-ছাত্রী। এটি Parts of Speech হিসেবে- Noun, লিঙ্গ হিসেবে Common Gender, Number হিসেবে Singular. আরবীতে تِلْمِيْذٌ অর্থ ছাত্র। এটি বচন হিসেবে وَاحِدٌ এবং লিঙ্গ হিসেবে مُذَكَّر এভাবে প্রতিটি শব্দের বিশ্লেষণ করে পড়তে পারলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।

Student শব্দের মধ্যে লুকায়িত গুণাবলী
এবার ‘ছাত্র-ছাত্রী’-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ Student (স্টুডেন্ট) এর মধ্যে লুকায়িত কিছু গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করব। Student শব্দের মধ্যে সাতটি বর্ণ আছে। যথা- S, T, U, D, E, N, T এই এক একটি বর্ণ যেন এক একটি অপরিহার্য গুণ। যেমন-

প্রথম বর্ণ, S = Study (স্টাডি) অধ্যয়ন

অধ্যয়নই ছাত্র-ছাত্রীদের একমাত্র পেশা ও নেশা হওয়া চাই। তারা নিজেদের ইচ্ছায় বারবার অধ্যয়ন করবে। সংস্কৃত ভাষায় একটি কথা বহুল প্রচলিত রয়েছে, ‘‘ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ’’ অর্থাৎ অধ্যয়নই ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা বা সাধনা। সাধু ও দরবেশরা যেমন একাগ্রচিত্তে ধ্যানে বা সাধনায় মগ্ন থাকেন ঠিক তেমনিভাবে ছাত্রদেরকেও পড়ালেখার ধ্যানে একাগ্রচিত্তে মগ্ন থাকতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো একটি বিষয় ভালোভাবে বুঝে না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্যসহকারে তা বারবার বুঝার চেষ্টা করতে হবে। কোনো বিষয়কে ভালোভাবে আয়ত্ত করার উদ্দেশে ধৈর্যসহকারে বারবার প্রচেষ্টার নামই অধ্যবসায়। ছাত্রদেরকে এ গুণটি অর্জন করতে হবে। তাহলে তারা প্রতিটি বিষয় আয়ত্ত করতে পারবে। কবি বলেন,

‘‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর

কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার

দশ জনে পারে যাহা, তুমিও পারিবে তাহা

পারিবে না এ কথাটি বলিও না আর।’’

দ্বিতীয় বর্ণ T = Tendency (টেন্ডেন্সি) ঝোঁক

অধ্যয়নের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের ঝোঁক-প্রবণতা থাকতে হবে। অধ্যয়ন প্রবণতাই হবে তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাদের কাজকর্ম, খেলাধুলা, ভ্রমণ ইত্যাদি সবকিছুই যেন অধ্যয়নকেন্দ্রিক এবং শিক্ষামূলক হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অধ্যয়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে এবং মনোযোগের ক্ষতি সাধিত হবে এমনসব কাজকর্ম থেকে ছাত্ররা অবশ্যই দূরে থাকবে।

ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লার মত অধ্যয়নের প্রতি ঝোঁক থাকতে হবে। এরকম অন্যান্য মনীষীদের জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের জীবনে অধ্যয়নের প্রেরণা ও আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে।

তৃতীয় বর্ণ U= Unity (ইউনিটি) একতা

ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে একতা থাকা আবশ্যক। কেননা ‘‘Unity is the Best Strength.’’ ‘‘একতাই সবচেয়ে বড় শক্তি’’। ছাত্রসমাজের মধ্যে যদি একতার গুণটি বিদ্যমান থাকে তবে তারা একে অপরের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হবে, একে অন্যের সুখ-দুঃখের সাথী হতে পারবে। তাদের মধ্যে একজন কোনো পড়া না বুঝলে অন্যরা তাকে ঐ বিষয়টি বুঝিয়ে দিতে সাহায্য করবে। সকলেই ভালো ছাত্র হবে বলে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলে এবং এ ব্যাপারে একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করলে তারা সবাই তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। কোনো অপশক্তি তাদেরকে ঐ লক্ষ্যস্থল থেকে দূরে সরিয়ে আনার দুঃসাহস পাবে না।

চতুর্থ বর্ণ D = Discipline (ডিসিপ্লিন) নিয়ম-শৃংখলা

অস্কার ওয়াইন্ড বলেন, ‘‘নিয়মানুবর্তিতা আরো দশটি কাজ বেশি করার পথ দেখিয়ে দেয়’’। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিয়মতান্ত্রিক ও পরিকল্পিত জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। এজন্য একটি দৈনন্দিন রুটিন তৈরি করে নিতে হবে। কারণ ‘‘A good plan is half of done’’. ‘‘একটা ভালো পরিকল্পনা কোনো কাজের অর্ধেক’’। তাদেরকে পড়ার সময় পড়া, লেখার সময় লেখা, খেলাধুলার সময় খেলাধুলা এবং ভ্রমণের সময় ভ্রমণ করতে হবে। প্রতিদিন সকালে মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে শুরু করবে দিনের প্রাথমিক কাজ তথা নিজেদের ক্লাসের পড়াশোনা। তারপর একটা নির্দিষ্ট সময়ে গোসল করে খাবার গ্রহণ করবে, এরপর ক্লাস থাকলে ক্লাসে যাবে। ক্লাস থেকে ফেরার পর একটু বিশ্রাম নিয়ে রুটিন অনুযায়ী অবশিষ্ট কাজগুলো সম্পন্ন করবে।

রাত্রে বেশি সময় না জেগে ১০/১১ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়বে এবং সকাল সকাল উঠবে। ভোরে উঠলে কাজের জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। কথায় আছে- ‘‘Early to bed and early to rise, makes a man healthy, wealthy and wise’’. অর্থাৎ সকাল সকাল ঘুমানো এবং সকাল সকাল জেগে উঠা একজন মানুষকে স্বাস্থ্যবান, সম্পদশালী এবং জ্ঞানী করে তুলে। ভোরের মুক্ত বাতাস স্বাস্থ্যের জন্য নিয়ামত। প্রবাদ আছে, ‘‘সুবেহ কি হাওয়া হাজার বিমারো কা দাওয়া’’। অর্থাৎ ভোরের বাতাস হাজার রোগের ঔষধ। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীদের মতে তিনটি ব্যায়াম উত্তম- ভোরের মুক্ত বাতাসে হাঁটা, সাঁতার কাটা এবং ঘোড়ায় চড়ে বেড়ানো। অনেকে বেশি রাত্রি জেগে সকালে ঘুমায়, এটা ঠিক নয়।

কবির ভাষায়, ‘‘সূয্যি মামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে’’।

এল. উইল ক∙ বলেন, ‘‘দিনের সবচেয়ে মধুরতম সময় হচ্ছে ভোরবেলা’’।

তাই ছাত্রদের উচিত হবে সূর্য উঠার পূর্বে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া এবং সকালে না ঘুমিয়ে পূর্ণভাবে অধ্যয়ন করা। কেননা দিনের কাজ সকালে ভালোভাবে উদ্বোধন করতে পারলে সারাদিনই ভালোভাবে কেটে যাবে এবং শরীর ও মন ভালো থাকবে, অলসতা দূর হবে। কথায় বলে,

‘‘Well starting is the half of the finishing work’’.

অর্থাৎ ‘‘সুন্দর আরম্ভই কোনো কাজ শেষ করার অর্ধেক’’।

তাছাড়া সকালে তাড়াতাড়ি কাজে হাত দিলে আমাদের প্রিয় নবীর দু‘আ পাওয়া যায়। তিনি বলতেন, ‘‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের সকালের সময়ের মধ্যে বরকত দান করো।’’ তিরমিযী) সারা দিনের কাজকর্মকে সুন্দর করার উদ্দেশে ভোরেই নিম্নোক্ত বিষয়াবলী নিয়ে ভাবতে হবে।

(i) সূর্য উঠার পূর্বে ঘুম থেকে উঠতে পেরেছি কি?

(ii) আজকের পড়া তৈরি করেছি কি? না হয়ে থাকলে খুব দ্রুত তা তৈরি করে নিতে হবে।

(iii) আজকের দিনটি কিভাবে সুন্দর করা যায়?

অনুরূপভাবে রাত্রিতে ঘুমানোর পূর্বেও ভাবতে হবে।

(i) আজ সকল কাজ ঠিকমত করতে পেরেছি কি?

(ii) রুটিন মত চলতে পেরেছি কি?

(iii) কোথাও ভুল হয়েছে কি? কোনো ভুল বা অন্যায় হয়ে থাকলে তা যেন ভবিষ্যতে আর না হয়, সে ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করতে হবে।

(iv) ভালো কাজ করার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে এবং কোনো অন্যায় করে থাকলে ক্ষমা চাইবে।

(v) দৈনিক পড়াশোনা কম পক্ষে ৫ ঘণ্টার কম হলে আগামীতে তা বাড়ানোর জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

এভাবে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সকল প্রকার নিয়ম-শৃংখলা মেনে চলতে হবে। অনিয়মিত চললে কোনো কাজই ভালোভাবে সম্পাদিত হবে না। সর্বোপরি তখন জীবনে দেখা দেবে বিশৃংখলা ও অনিয়মতান্ত্রিকতা। দিনের পড়া দিনেই না শিখলে বকেয়া পড়ার একটা স্তুপ তৈরি হয়ে যাবে। তখন পরীক্ষার সময় আসলে তাদেরকে মনমরা দেখাবে, পরীক্ষাটা একটা বাড়তি ঝামেলা মনে হবে, পরীক্ষার সময় ভীতির সঞ্চার হবে। এভাবে তারা আস্তে আস্তে ছাত্রত্বের গুণাবলী হারিয়ে ফেলবে। পরবর্তীতে বেকার জীবনের অভিশাপ নিয়েই কর্মজীবনের ফিতা কাটতে হবে।

সুতরাং طِفْلُ الْيَوْمِ رَجَلُ الْغَدِ অর্থাৎ ‘‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’’। এ সূত্র ধরেই ছাত্রদেরকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলতে হবে। দিনের পড়াটা দিনেই শিখে নিয়ে তার সারমর্মটা মনের মণিকোঠায় গেঁথে রেখে সামনে অগ্রসর হতে থাকলে পরবর্তীতে এই ছাত্রজীবনই তাকে জাতির অভিভাবকে পরিণত করতে ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করবে।

পঞ্চম বর্ণ E = Energy (এনার্জি) শক্তি

ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শক্তি ও সাহসের অধিকারী হতে হবে। দুর্বলমনা ব্যক্তি পদে পদে অবহেলার শিকার হয়ে থাকে। ছাত্র-ছাত্রীদের মনের মধ্যে কোনো প্রকার দুর্বলতা, হীনমন্যতা থাকবে না, তারা নীচু মনের অধিকারী হতে পারবে না। তারা সর্বদা সাহসী, বুদ্ধিমান, চালাক-চতুর, দৃঢ়চেতা ও অন্যায়ের প্রতিবাদে কঠোর হবে। শিষ্টের লালন ও দুষ্টের দমনের জন্য হবে অনড় মনোবলের অধিকারী। তাদের সিদ্ধান্ত হবে, অধ্যবসায়ের মাধ্যমে অধ্যয়নকৃত বিষয়টি নিজে গভীরভাবে বুঝা এবং অন্যকে বুঝানোর ক্ষমতা অর্জন করা। একবার না পারলে বিষয়টিকে বারবার পড়তে হবে, প্রয়োজনে অন্যের সহযোগিতা নিতে হবে। ভালোভাবে না বুঝা পর্যন্ত ঐ বিষয়টিকে ছেড়ে দেয়া যাবে না।

ছাত্রদেরকে শক্তি ও সাহস নিয়ে সামনের পড়ার দিকে অগ্রসর হতে হবে। সামনের পড়াগুলো অবশ্যই বুঝতে এবং বুঝাতে পারবে এরকম মনোবলের অধিকারী হতে হবে।

ষষ্ঠ বর্ণ N = Neat and clean (নীট এন্ড ক্লীন) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

সবাইকে সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। কেননা মহাগ্রন্থ আল- কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ অর্থাৎ ‘‘তোমার পোশাক পবিত্র রাখো।’’ (সূরা মুদ্দাস্সির- ৪)

হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

اَلطُّهُوْرُ شَطْرُ الْاِيْمَانِ অর্থাৎ ‘‘পবিত্রতা ঈমানের অংশ’’ (সহীহ মুসলিম হা/ ৫৫৬)

এখানে আমাদের সকলকে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পবিত্রতা তথা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মানুষকে করে সজীব, সতেজ এবং হৃদয়ে এনে দেয় আনন্দ। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় যেহেতু ছাত্রজীবন, তাই ছাত্র-ছাত্রীদেরকে জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পরিচ্ছন্ন থাকা আবশ্যক। নিজের পড়ার কক্ষ, খাবার কক্ষ, থাকার জায়গা, নিজের পোশাক, শরীর এবং বাড়ির আঙ্গিনাকে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিজের পড়ার টেবিলকে রাখতে হবে সুসজ্জিত, বইগুলো গুছিয়ে রাখতে হবে। এবং চোখের সামনে রাখবে দৈনন্দিন কাজকর্মের রুটিন। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে গোসল করবে। তবে সকালের দিকে গোসল করাটা উত্তম, এতে মনটা স্বচ্ছ থাকে, ভালো লাগে এবং সারা দিনের কাজকর্মের মধ্যে বরকতও পাওয়া যায়।

জেনে রাখা দরকার যে, পবিত্রতা দু’ধরনের। যেমন :

(১) বাহ্যিক পবিত্রতা- যা এতক্ষণ আলোচনা করা হল।

(২) আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা বা মনের পরিচ্ছন্নতা।

আর তা হল- মনকে সর্বদা কুচিন্তা হতে মুক্ত রাখা। সবধরনের বাজে চিন্তা থেকে, বাজে কল্পনা থেকে, কুপরামর্শ থেকে এবং অবৈধ মেয়েলি চিন্তাভাবনা থেকে মনকে পবিত্র রাখতে হবে।

ছাত্রজীবনে যারা অবৈধ প্রেমে জড়িয়ে পড়ে তাদের মনে রাখা উচিত যে, ছাত্রজীবনের প্রেম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টিকে না; বরং এ প্রেমই ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়। ছাত্রজীবন মূল্যবান সময়। এই সময়কে যারা প্রেম করে ব্যয় করেছেন বা করছেন তাদের জন্য জনৈক প্রেমিক বন্ধুর কয়েকটি উপদেশ-

‘‘প্রেম হচ্ছে আগুন, যে আগুনে একবার পা দিলে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায় জীবনের মূল্যবান সময়। প্রেম হচ্ছে জ্বালা-যন্ত্রণা বা দহনের অপর নাম। প্রেম হচ্ছে জ্বলন্ত সিগারেট- যার শুরুতে আগুন শেষে ছাই। অন্তরের মধ্যে সর্বদা প্রেমিক বা প্রেমিকার কল্পনাই জীবনকে জ্বালিয়ে দেয়। এর মধ্যে সামান্য একটু হাসি, আনন্দ থাকলেও দুঃখ-যন্ত্রনাই অনেক বেশি।’’

সবশেষে ঐ প্রেমিক ব্যক্তি ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা যেন মূল্যবান সময়কে প্রেমের আত্মঘাতি ফাঁদে ফেলে নষ্ট না করে।

একদা যুগ বিখ্যাত ও সনামধন্য এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনার এত সফলতার কারণ কি? তিনি উত্তরে বললেন, বোধ হয় প্রেমকে প্রত্যাখ্যান করার ফলেই। আরেকটু বিশ্লেষণ করে বললেন, আমার ছাত্রজীবনে কয়েকজন মেয়ে প্রেমে সাড়া দিতে আহবান করেছিল; কিন্তু আমি তখন اِتَّقِ اللهَ ‘‘আল্লাহকে ভয় করো’’ বলে তাদের প্রেমকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। যদি তাদের কারো প্রেমে মোহিত হয়ে সাড়া দিতাম তাহলে আমার জীবনে এত সফলতার স্বপ্নও আমি কল্পনা করতে পারতাম না।

অনেক প্রতিভাবান ছাত্র-ছাত্রী কেবলমাত্র অবৈধ প্রেমের ফাঁদে পড়ে তাদের মূল্যবান সময়কে নষ্ট করার কারণে সারা জীবন এর মাশুল দিতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের সামাজিক জীবনের দিকে তাকালে বুঝা যায় এর পরিণতি কত ভয়াবহ।

দেহ-মনকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে প্রত্যককেই তাদের স্ব-স্ব ধর্মীয় বিধানকে মেনে চলতে হবে। ধর্মই কর্ম, ধর্মই কল্যাণ। ধর্ম মানুষকে সৎ বানায় এবং সৎ পথে চলতে সহায়তা করে। ধর্ম মানুষকে পাপকাজ থেকে বিরত রাখে। আর পাপকাজ থেকে বিরত থাকতে পারলে শরীর ও মন ভালো থাকবে এবং স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পাবে। ফলে অল্প সময় পড়ে অনেক বেশি সময় মনে রাখা যাবে।

সপ্তম বর্ণ T = Truthfulness (ট্রুথফুলনেস) সত্যবাদিতা

সত্যবাদিতা একটি মহৎ গুণ। প্রত্যেককেই এ গুণটির অধিকারী হতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সত্য কথা বলতে হবে। সত্যের ধ্বংস নেই, সত্যের ক্ষয় নেই। সত্যবাদী ব্যক্তিরাই সম্মানের পাত্র। সত্যবাদী ছাত্র-ছাত্রী সর্বদা সত্য কথা বলার কারণে তারা সকলের স্নেহ ও ভালোবাসা পেয়ে থাকে। তারাই জীবনে সুখী হয় এবং অন্যকেও সুখী করতে পারে।

হাদীসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সত্য বলা নেকী, আর নেকী জান্নাতের দিকে পথ দেখায়। অপর দিকে মিথ্যা বলা পাপ, আর পাপ জাহান্নামের দিকে পথ দেখায়।’’ (সহীহ মুসলিম হা/৬৮০৪)

আরো বলা হয় - يُنْجِىْ وَ الْكِذْبَ يُهْلِكُ اِنَّ الصِّدْقَ

‘‘সত্য মুক্তি দেয় এবং মিথ্যা ধ্বংস করে’’।

এখানে যেসকল গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করা হল এসব গুণাবলী অর্জন করেই ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। তাহলে সাধারণ লোক, পিতা-মাতা, ভাই-বোন এবং শিক্ষক সকলেই তাদেরকে অন্তর থেকে ভালোবাসবে। ছাত্র-ছাত্রীরা লোকদেরকে সম্মান করবে, শ্রদ্ধা করবে, বিপদের সময় লোকদের পাশে দাঁড়াবে, পিতা-মাতার কথা মেনে চলবে, গুরুজনকে ভক্তি করবে এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলীর সাথে নম্রভাবে কথা বলবে, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে, পার্শ্ববর্তী লোকদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে এবং ছোটদের প্রতি স্নেহমমতা প্রদর্শন করবে। এভাবে তারা সকলের নিকট গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে আদর্শ ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে গড়ে উঠার চেষ্টা করবে। কারণ তারাই জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। দেশ ও জাতি তাদেরই নেতৃত্ব কামনা করে।

পড়াশোনা করার নিয়ম
কোনো বিষয়ে ব্যাপক উপলব্ধি ও যোগ্যতা অর্জন করতে হলে অনেক পড়াশোনা করতে হয়। পড়ার সময় নিচের বিষয়গুলো লক্ষণীয় :

১। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগ্রহ সহকারে দায়িত্ববোধ নিয়ে মনোযোগের সাথে পড়তে হবে।

২। যখন যে বিষয়টি পড়লে আয়ত্ত করতে সুবিধা হয় তখন সে বিষয়টি পড়াই ভালো ।

৩। রুটিন মেনে প্রতিদিন নিয়মিত পড়তে থাকলে মনে রাখা সহজ হয়।

৪। অনেক সময় পড়ালেখায় মন বসে না। এভাবে বেশি সময় চলতে থাকলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। তাই অনুশীলনের অভ্যাস ঠিক রাখার স্বার্থে রুটিন ভঙ্গ না করে পড়াশোনায় মন বসানোর চেষ্টা করতে হবে।

৫। পড়ার সময় কাগজ, কলম ও পেন্সিল সাথে রাখা উচিত।

৬। বইয়ের ভিতরের মূল কথাগুলোর নিচে বা পাশে আন্ডারলাইন করে রাখলে সেগুলো সহজে নজরে পড়বে।

৭। কোনো অধ্যায় বা অধ্যায়ের অংশ পড়ার পর উহার মূল কথাগুলো মনে করা এবং সারসংক্ষেপ লেখার চেষ্টা করতে হবে।

৮। কোনো অংশ না বুঝলে একাধিকবার চেষ্টা করবে। তবে সমস্ত প্যারা বা অধ্যায় পড়ার আগে বুঝার জন্য জিদ ধরা যাবে না; কারণ অনেক সময় পরবর্তী অংশ পড়ার পর পূর্ববর্তী দুর্বোধ্য অংশের অর্থ আপনা আপনি পরিষ্কার হয়ে যায় ।

৯। পড়ার সময় মাঝে মাঝে থেমে মনে মনে ভাবতে হবে এ পর্যন্ত কী জানলাম। কেননা খেতে যত সময় লাগে হজম করতে তার চেয়ে বেশি সময় লাগে। বিদ্যার্জনও ঠিক সেরকম।

১০। পড়া মনে রাখার জন্য আল্লাহর সাহায্য চেয়ে বেশি বেশি প্রার্থনা করতে হবে।

১১। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা করার নিয়ম বর্ণনা করতে গিয়ে মনোবিজ্ঞানী রবিনসন অধ্যয়নের একটি চমৎকার পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। কোনো ছাত্র-ছাত্রী সে পদ্ধতি মেনে চললে তারা ভালো ও আদর্শবান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। নিচে সেই পদ্ধতি উল্লেখ করা হল :

তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিকে Survey Q 3R (সার্ভে কিউ থ্রী আর) পদ্ধতি বলে। অর্থাৎ- Survey, Question, Read, Recite, Review.

জরিপ করা, প্রশ্ন করা, পড়া, আবৃত্তি করা ও পুনরায় স্মরণ করা।

Survey- (সার্ভে) মানে জরিপ করো। তুমি এতদিন যে কয়টি বিষয় বা অধ্যায় পড়েছ তার মধ্যে জরিপ চালাও। কয়টি বিষয় তোমার মনে আছে, কি কি মনে নেই এবং কোন্টি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা আছে ইত্যাদি। যে বিষয়টি ভুলেগেছ তা আবার পড়ো, বুঝ এবং মুখস্ত করে ফেল। এভাবে নিয়মিত জরিপ চালিয়ে পড়লে স্মৃতি শক্তিতে অধ্যয়নকৃত বিষয়টি গেঁথে যাবে এবং তা মনে থাকবে।

Q- মানে Question (কোশ্চেন) বা প্রশ্ন। অন্যকে নয় বরং তুমি নিজেকেই বারবার প্রশ্ন করতে থাক- এখানে এ শব্দটা কেন হল? এ বাক্যটা অন্যভাবে কী বলা যাবে? এ অধ্যায়ে কী কী প্রশ্ন হতে পারে? প্রভৃতি প্রশ্নের আলোকে ভালোভাবে উত্তর খুঁজে বের করো এবং বারবার চর্চা করতে থাক, তাহলে অবশ্যই তুমি ভালো ফল পাবে।

3R- এর মধ্যকার প্রথম R- এর অর্থ হল Read (রিড) বা পড়া। যে বিষয়টি তুমি পড়বে বলে ঠিক করেছ, তা ভালো করে কয়েকবার পড়ো এবং বুঝার চেষ্টা কর। কোনো একটি বিষয় বুঝে না আসলে তা ধৈর্যসহকারে বারবার পড়তে থাক।

২য় R- এর অর্থ হল Recite (রিসাইট) বা আবৃত্তি করা। পড়া বিষয়টি যদি আকারে-ইঙ্গিতে বা ভাব-ভঙ্গিমায় প্রকাশ করা যায় বা ভালোভাবে আবৃত্তি করা যায় তাহলে ঐ বিষয়টি অনেক দিন মনে থাকবে।

৩য় R- এর অর্থ হল Review (রিভিউ) বা পুনরায় স্মরণ করা। অধ্যয়নকৃত বিষয়টিকে একবার পড়ে ছেড়ে দেয়া সম্পূর্ণ অনুচিত; বরং বারবার তা স্মরণ করতে হবে। কোনো অংশ ভুলে গেলে তা আবার পড়ে নিতে হবে।

এভাবে Survey Q 3R পদ্ধতি অনুসরণ করলে পড়াশোনায় উন্নতি হবে এবং অধ্যয়নকৃত বিষয়টিকে দীর্ঘদিন মনে রাখা সম্ভব হবে। সুতরাং ছাত্র-ছাত্রীদের নিজেদের জীবনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এবং দেশ ও জাতির সেবার উদ্দেশে আলোচ্য প্রবন্ধের সকল গুণাবলীর পূর্ণ অনুশীলনকারী হতে হবে এবং এগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে একজন কম মেধাবী ছাত্র বা ছাত্রীও একজন ভালো ও আদর্শবান ছাত্র বা ছাত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।

১০
পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার উপায়
অনেক ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষাজীবনে ভালো ফলাফল করতে পারে না- যার কারণে তারা কর্মজীবনেও ভালো কিছু করতে পারে না। একজন শিক্ষার্থীকে ভাবতে হবে ভবিষ্যতে আমাকে ভালো মানের কিছু হতে হবে। আর সে জন্য সেভাবেই পড়তে হবে এবং পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে হবে। পরীক্ষার প্রসুততি যেমন নেয়া হয় নম্বরও তেমন পাওয়া যায়। কথায় আছে-

‘‘As you sow, so you reap’’. ‘‘যেমন কর্ম তেমন ফল’’।

পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার কিছু নিয়ম নিচে আলোচনা করা হল :

১. পাঠ্যবই ভালোভাবে পড়া

দিন যত যাচ্ছে পরীক্ষার পদ্ধতিতেও তত পরিবর্তন আসছে। শুধু সাজেশনের উপর নির্ভর করলে হবে না, মূল বই ভালোভাবে পড়তে হবে। ভালো ফলাফল করতে হলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে পাঠ্যবইয়ের প্রতি। পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায় এবং পাঠ ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। মূল পাঠ ভালোভাবে বুঝে নিলে সেখান থেকে যেকোনভাবে যেকোন প্রশ্ন আসুক না কেন উত্তর লেখা সম্ভব হবে।

২. নিয়মিত ক্লাস করা

পাঠ্যবই ভালোভাবে বুঝতে হলে নিয়মিত ক্লাস করতে হবে। কারণ শিক্ষক ক্লাসের মধ্যে বিভিন্নভাবে পাঠ্যবই বুঝিয়ে থাকেন এবং পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে ধারণা দেন। এজন্য ক্লাস ফাঁকি দেয়া একদম ঠিক হবে না।

৩. সাজেশন তৈরি করা

একেকটি অধ্যায়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন হতে পারে। তন্মধ্যে সব প্রশ্নই গুরুত্বপূর্ণ নয়। পরীক্ষায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোই আসে। পূর্ববর্তী কয়েক বছরের প্রশ্নপত্র পড়ে দেখলেই কোন্ ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এ ধারণার উপর নির্ভর করে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো বাছাই করে নেবে। বাজারে প্রচলিত সাজেশন ও ক্লাসে দেয়া সাজেশনের সাথে তোমার নিজের সাজেশন তুলনা করে একটা ফাইনাল সাজেশন তৈরি করতে হবে।

৪. হ্যান্ডনোট তৈরি করা

পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হলে অবশ্যই হ্যান্ডনোট তৈরি করে পড়তে হবে। মূল বই, বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন রকম গাইড বই, বিভিন্ন রেফারেন্স বই ইত্যাদির সাহায্য নিয়ে নোট তৈরি করা যায়। হ্যান্ডনোটের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে সূচনা, উপসংহার এবং প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে কোটেশন ও উদ্ধৃতি দিতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

৫. প্রশ্নের উত্তর পড়া এবং মনে রাখা

 প্রশ্নের উত্তর একাধিকবার পড়ে মনে রাখতে হবে। প্রতিদিন অবশ্যই কিছু প্রশ্নের উত্তর রিভিশন দিতে হবে। মাত্র দু’চার দিন খুব পড়ে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব নয়। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ধৈর্য হারালে চলবে না।

 পড়ার সময় শব্দ করে পড়ার চেয়ে নীরবে পড়াই উত্তম। কারণ নিঃশব্দে পড়লে মিনিটে প্রায় ১০ থেকে ১৫টি শব্দ বেশি পড়া যায়।

 একটি বিষয় একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পড়ে শেষ করা উচিত। এভাবে প্রতিটি বিষয় প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে পুনরায় পঠিত বিষয়গুলো রিভিশন দিতে হবে।

 সর্বোপরি পড়ার জন্য প্রয়োজন সুন্দর পরিবেশ, যেখানে মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া করা সম্ভব। ভালো রেজাল্ট করার জন্য আরো প্রয়োজন দৃঢ়-প্রত্যয়, অধ্যবসায় এবং প্রচুর আগ্রহ। তবেই কেবল প্রত্যাশিত রেজাল্ট করা সম্ভব।

 প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করার পাশাপাশি কোন্ প্রশ্নের উত্তরে কয়টি পয়েনট আছে তা মনে রাখতে হবে।

 প্রথম সারির সবকয়টি প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই শিখতে হবে। এছাড়া অন্যান্য সকল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কেও ভালো ধারনা রাখতে হবে এবং নিজে নিজে উত্তর বানিয়ে লেখার অভ্যাস করতে হবে।

৬. হাতের লেখা দ্রম্নত ও সুন্দর করা

 মূলত লেখা এবং পড়া- এ দু’টি কাজ নিয়মিত যথাযথভাবে করতে হয়। এজন্য প্রতিদিন কিছু লেখার অভ্যাস করতে হবে। যত বেশি লেখা হবে ততই অধিক মনে থাকবে এবং হাতের লেখা দ্রুত ও সুন্দর হবে। এছাড়া নিয়মিত লিখলে বানান শুদ্ধ হবে এবং ভাষার উপর দক্ষতা বাড়বে। ছাত্রজীবনে সফলতার জন্য এটা অত্যন্ত প্রয়োজন। সময়ের অভাবে কোনো প্রশ্নের উত্তর লিখতে না পারলে নম্বর কমে যাবে। আজকাল প্রতিযোগিতা এতটা তীব্র যে, তুমি যদি পাঁচ নম্বরের প্রশ্নও ছেড়ে দাও তাহলে অনেক পিছিয়ে পড়বে।

 পরীক্ষার খাতায় যেমন করে লেখো, ঠিক সে রকমভাবেই পাতার পার্শ্বে ও উপরে মার্জিন টেনে এবং ডানে, বামে, নিচে এবং উপরে কিছুটা করে জায়গা ছেড়ে দিয়ে লেখার অভ্যাস করো। লেখার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে স্কেচ পেন দিয়ে দাগিয়ে নেবে। এভাবে যদি লেখার চর্চা করা হয় তাহলে লেখা সুন্দর হবে, দ্রুত লেখা যাবে এবং পরীক্ষার হলে তোমার কোনো অসুবিধা হবে না।

৭. ভাষা ও বানান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা

ভাষা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। একই উত্তরে সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ ঘটানো যাবে না। চলিত ভাষায় উত্তর লেখা ভালো। বর্তমানে বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকায় চলিত ভাষাই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। বানান সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে। ভুল বানানের কারণে নম্বর কাটা যায়।

১১
পরীক্ষার হলে করণীয়
১. পরীক্ষার দিন কলম, স্কেল, প্রবেশপত্রসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে যথাসময়ে বাসা থেকে বের হতে হবে- যাতে কোন তাড়াহুড়া ছাড়া সময়মত পরীক্ষার হলে পৌঁছা যায়।

২. উত্তরপত্র বা কাগজ পাওয়ার পর তাতে পরীক্ষার্থীর যেসব তথ্য লেখা প্রয়োজন তা সচেতনভাবে লিখতে হবে এবং উত্তরপত্রে প্রয়োজনীয় মার্জিন ও পৃষ্ঠার নম্বর বসাতে হবে।

৩. প্রশ্নপত্র হাতে পেলেই সম্পূর্ণটা একনজর পড়ে নিতে হবে। তারপর বেশি কমন পড়া প্রশ্নগুলো পর্যায়ক্রমে লিখতে হবে। উত্তর লেখার পূর্বে প্রশ্নের নম্বর সঠিকভাবে বসাতে হবে।

৪. কোন্ প্রশ্নে কত নম্বর আছে তা বুঝে সে অনুপাতে উত্তর লিখতে হবে।

৫. কয়টি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে তা জেনে সে অনুযায়ী সময় ভাগ করে নিতে হবে- যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সকল প্রশ্নের উত্তর লেখা যায়।

৬. প্রশ্ন যদি ভেঙ্গে ভেঙ্গে করা হয়, তাহলে উত্তরও আলাদা আলাদা প্যারাগ্রাফ বা অনুচ্ছেদে লিখতে হবে।

৭. সন, তারিখ ও উদ্ধৃতি এসব যাতে ভুল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সঠিক উত্তর বাছাই করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।

৮. কোটেশন ও পয়েন্টগুলো ভিন্ন কালিতে লিখলে অথবা আন্ডার লাইন করে দিলে ভাল হয়, তাহলে সহজেই তা পরীক্ষকের দৃষ্টিগোচর হবে।

৯. উত্তরপত্র পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোন লেখা ভুল হয়ে গেলে ঘষামাজা না করে একটানে কেটে দিতে হবে।

১০. পরীক্ষার সময় শেষ হওয়ার ৫/৭ মিনিট আগেই লেখা শেষ করে খাতা জমা দেয়ার পূর্বে একনজর দেখে নিতে হবে, কোন ভুল ধরা পড়লে সংশোধন করে দিতে হবে।

এসব নিয়মাবলী অনুসরণ করলে যেকোন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাবে- ইনশা-আল্লাহ!

১২
জীবন গড়ার জন্য দৈনিক রুটিন
লাগামহীনভাবে চলাফেরা করলে কখনো জীবন গঠন করা যায় না। যখন যা ইচ্ছা করলাম, যখন যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে গেলাম এরকম করলে কোনো কাজেই সফল হওয়া যায় না। প্রত্যেক মানুষের উচিত জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা। তারপর সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য যেসব কাজ করতে হয় সে কাজগুলো রুটিন তৈরি করে নির্দিষ্ট সময়ে ভাগ করে নিতে হবে এবং নিয়মিত কাজ চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে ঐ কাজে সফলতা আসবে।

একজন মানুষ মুসলমান হওয়ার পর তাকে অবশ্যই এমনকিছু কাজ করতে হয়- যা না করলে মুসলমান হওয়ার কোনো অর্থ থাকে না। আল্লাহর কাছে বংশগত মুসলমানের কোনো দাম নেই। কাজেকর্মে মুসলমান হতে পারলেই জান্নাতে যাওয়ার আশা করা যায়। জীবনের লক্ষ্য অনুযায়ী মূল কাজের পাশাপাশি করণীয় কয়েকটি কাজ হচ্ছে-

১. কুরআন পড়া : নিয়মিত কুরআন মাজীদ পড়তে হবে। কুরআনের শব্দ তেলাওয়াত করলে ছওয়াব পাওয়া যায়- এটা কুরআনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে কুরআন নাযিল হয়েছে তা অর্জনের জন্য কুরআন বুঝার চেষ্টা করতে হবে। নিজের ভাষায় কুরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা (তাফসীর) পড়ে আল্লাহর বিধান কী তা জানতে হবে। সূরা মুহাম্মদের ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

اَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَ اَمْ عَلٰى قُلُوْبٍ اَقْفَالُهَا

‘‘তারা কি কুরআন সম্পর্কে গবেষণা করে না, নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ হয়ে গেল।’’ এ আয়াত থেকে বুঝা গেল, যারা কুরআন বুঝার চেষ্টা করবে না তাদের অন্তরে তালা লেগে যাবে। অর্থাৎ তারা হেদায়াত পাবে না।

হাদীসে বর্ণিত আছে-

اِنَّ الَّذِيْ لَيْسَ فِيْ جَوْفِهٖ شَيْءٌ مِّنَ الْقُرْاٰنِ كَالْبَيْتِ الْخَرِبِ

‘‘যার মধ্যে কুরআনের কিছু নেই তার অন্তর উজাড় ঘরের মত’’। (তিরমিযী হা/২৫০)

তাই অনুধাবনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে।

২. হাদীস পড়া : কুরআন সংক্ষিপ্ত কিতাব, এর ব্যাখ্যা হল হাদীস। কুরআনকে যাতে মানুষ ভালোভাবে বুঝতে পারে সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নমুনা বা জীবন্ত কুরআন হিসেবে পাঠিয়েছেন। তিনি নবুয়াতের তেইশ বছরের মধ্যে শরীয়তের ব্যাপারে যা কিছু বলেছেন, করেছেন ও সমর্থন দিয়েছেন সবই হাদীস। তাই হাদীস এবং সীরাত (নবীর জীবনী) পড়তে হবে।

৩. দু‘আ শিখা : দৈনন্দিন জীবনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক দু‘আ পড়তেন ও পড়ার আদেশ দিতেন, এগুলো শিখতে হবে এবং যথাস্থানে পড়তে হবে ।

৪. পাঠ্যবই পড়া : ছাত্র-ছাত্রীদের প্রধান কাজ হল পাঠ্যবই পড়া এবং পরীক্ষায় আসার মত প্রশ্নগুলো শিখা ও মুখস্ত করা।

৫. সিলেবাস বহির্ভূত বই পড়া : জ্ঞানকে প্রসারিত করতে হলে সিলেবাস বহির্ভূত বই এবং ইসলামী গবেষণামূলক বইও পড়তে হবে।

৬. নামায পড়া : পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামা‘আতে পড়ার অভ্যাস করতে হবে, কারণ নামায জান্নাতের চাবী। হাদীসে এসেছে,

‘‘পরকালে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব দিতে হবে। নামাযের হিসাবে সফল না হলে আর কোথাও সফল হওয়ার আশা নেই।’’ (তিরমিযী, নাসায়ী)

উমর (রাঃ) বলেন, ‘‘আল্লাহর কাছে হিসাব দেয়ার আগে নিজে নিজের হিসাব নাও’’। তাই কাগজ-কলম হাতে নিয়ে একমাসের একটি রুটিন তৈরি করুন। এখানে একটি নমুনা দেয়া হল :

মাসের নাম ................সন .............

তারিখ

কুরআন

তেলাওয়াত

অর্থসহ কুরআন

হাদীস

পাঠ্য

বই

নামায

ইসলামী বই

দু‘আ



৫ রুকু

৪আয়াত

৩টি

৫ঘঃ

৫ওয়াক্ত

৫ পৃঃ

১টি







লেখার নিয়ম :

তেলাওয়াতের রুকু বা পৃষ্ঠার সংখ্যা লিখবেন। যেমন- ৫ রুকু।

অর্থসহ পঠিত আয়াতের সংখ্যা লিখবেন। যেমন- ৪ আয়াত।

যতটি হাদীস বুঝে পড়বেন তার সংখ্যা। যেমন- ৩টি।

পাঠ্যবই পড়ার সময়ের হিসাব। যেমন- ৫ ঘণ্টা।

ইসলামী বইয়ের পৃষ্ঠার সংখ্যা লিখবেন। যেমন- ৫ পৃষ্ঠা

নামায পাঁচ ওয়াক্ত জামা‘আতে হলে ৫, চার ওয়াক্ত জামা‘আতে হলে ৪, আর কোনো ওয়াক্ত কাজা হয়ে গেলে তা লিখবেন। তবে নামায যাতে কাজা না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

পঠিত দু‘আর সংখ্যা লিখবেন। যেমন- ১টি।

এবার কোন্টি কখন পড়বেন সময় ঠিক করবেন; নতুবা দিন চলে যাবে পড়া হবে না। যেমন- রাতে ফজরের আগে উঠার অভ্যাস না থাকলেও কমপক্ষে এ পরিমাণ সময় হাতে নিয়ে উঠতে হবে- যাতে পবিত্রতা অর্জন করে সুন্নাত পড়ে প্রথম তাকবীরের সাথে জামা‘আতে ফজরের নামায পড়া যায়। নামায শেষে কুরআন মাজীদ পড়বেন। পারলে প্রথমে সূরা ‘ইয়াসীন’ ও সূরা ‘আর-রাহমান’ পড়ে অর্থসহ কিছুসময় কুরআন পড়বেন। এরপর দু’চারটি হাদীস পড়বেন। এ আমল সারা জীবন পালন করবেন। আসরের পরে ইসলামী বই পড়ুন। এসময় কিছু হাঁটা-চলা করা ভালো। এশার নামাযের পর কমপক্ষে একটি দু‘আ মুখস্ত করবেন এবং সারাদিনের কাজের হিসাব লিখে রাখবেন। ছাত্র-ছাত্রীরা এসব বিষয় পড়ে খাওয়া, ঘুম ও জরুরী কাজে যে সময় লাগবে তা বাদ দিয়ে বাকী সময় পাঠ্যবই পড়বে। পাঠ্যবইয়ের মধ্যে কোন্টি কোন্ সময় পড়বে নিজের সুবিধা অনুযায়ী সময় ঠিক করে নেবে।

১৩
পড়ালেখায় মন বসানোর পদ্ধতি
একজন মানুষের সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে বড় কাজ হল সঠিক জ্ঞান লাভ করা। এজন্য যে শব্দটি দিয়ে কুরআন নাযিল শুরু হয়েছে তা হল إِقْرَأْ ‘পড়ো’ অর্থাৎ সবকিছুর আগে তোমাকে পড়তে হবে, জানতে হবে। পড়ালেখা করা আল্লাহ তা‘আলারই আদেশ। কিন্তু অনেকেরই পড়ালেখায় মন বসতে চায় না। এর কারণ হল- শয়তান সবসময় সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে বিপথগামী করতে চায়। এজন্য মানুষের মন বিভিন্ন সময় খারাপের দিকে ধাবিত হয়। তেমনি ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। শয়তান তাদেরকে অন্যমনস্ক করে দেয়ার চেষ্টা করে। তাই ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ালেখার মত কল্যাণময় কাজ থেকে বঞ্চিত হয়ে জীবনে নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত হয়ে থাকে। এজন্য শয়তানের প্ররোচনায় না পড়ে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করাই হবে ছাত্র-ছাত্রীদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।

পড়ালেখায় মন বসানোর কতিপয় পদ্ধতি এখানে উপস্থাপন করা হল :

১. সমাজে যারা উচ্চশিক্ষিত, আদর্শবান এবং ভালো ফলাফল অর্জনকারী তাদের থেকে প্রেরণা নেবে।

২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা ভালো হিসেবে পরিচিত তাদের চালচলন ও উত্তম কাজকে নিজেদের মধ্যে বাস্ত বায়ন করার চেষ্টা করবে।

৩. পাঠ্যবই পড়ার পাশাপাশি ইসলামিক বই, আদর্শ ব্যক্তিদের জীবনী ও ইতিহাস এসব পড়বে।

৪. ইসলাম ও মানবতা বিরোধী কোনো কাজের চিন্তা মনে আসলে ঘৃণাবোধ জাগ্রত করে মন থেকে তা দূর করে দেবে।

৫. কিছু চরিত্র ধ্বংসকারী, অশ্লীল পত্রিকা ও বই আছে, এগুলো পড়লে শয়তান মনে প্রভাব বিস্তার করে। তাই এসব পড়বে না।

৬. টিভি, কম্পিউটার এবং মোবাইলে অশ্লীল ছবি ও গান-বাজনা দেখা ও শোনা হতে বিরত থাকবে। এসবের মধ্যে শিক্ষণীয় অনুষ্ঠান, ইসলামী গান, কুরআন তেলায়াত এবং ভালো ওয়াজ-নসীহত উপভোগ করবে।

৭. সকল প্রকার দুশ্চিন্তা থেকে মনকে মুক্ত রাখবে। কোনোকিছু না পাওয়ার হতাশা থাকতে পারে; কিন্তু দুশ্চিন্তা না করে আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাইতে হবে। প্রত্যেক পিতা-মাতাই তাদের সন্তানদেরকে সবকিছু দিতে চায়; কিন্তু অনেকে তা পারে না।

মনে রাখবে, জগতে অনেকেই দারিদ্রতার মাঝে পড়ালেখা করে অনেক কিছু করেছেন। দারিদ্রতাই অনেককে মহান করেছে।

১৪
দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচার উপায়
দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন গড়তে হলে অতীত এবং ভবিষ্যতকে ভুলে বর্তমানে কী করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে এবং কাজ করতে হবে। অতীত থেকে যে শিক্ষা নিতে হবে তা হল- অতীতে যে ভুলগুলো হয়েছে তার কারণ মনে রেখে ভবিষ্যতে সতর্ক হয়ে চলতে হবে যাতে এরকম আর না ঘটে। প্রতিটি দিনকে নতুন জীবন মনে করতে হবে। প্রত্যেক দিনের প্রফুল্লতার জন্য একটি কর্মসূচী তৈরি করা যায় এভাবে-

আজকের জন্য আমি সুখী হব। আমার মনের কাছে আমি সুখী হব। কারণ সুখ বাইরের বস্তু নয়, তা হল অন্তরের।

আজকের জন্য আমি শরীরের যত্ন নেব।

আজকের প্রয়োজনীয় কাজগুলো আজকেই করে নেব।

আজ আমি একটি হলেও অপরের উপকার করব। আর কিছু না পারলেও তার জন্য দু‘আ করব।

আজকের জন্য আমি হাসি মুখে থাকব, শান্ত থাকব, কারো ক্ষতি করব না, অন্যের গীবত ও অহেতুক সমালোচনায় লিপ্ত হব না।

আজকের সমস্যার সমাধান নিয়ে চিন্তা করব।

আগামী দিন কি কি কাজ করব তা ঘুমানোর পূর্বে ঠিক করে রাখব।

প্রতিদিন খোঁজ নেব- আজ আমি কী করেছি। কারণ আমার আজকের দিনটি চলে যাওয়া মানে আমার জীবন থেকে একটি দিন ঝরে যাওয়া- যা আর কোনো দিন ফিরে আসবে না।

এভাবে প্রতিটি দিনকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে, যাতে আজে-বাজে চিন্তায় পড়ে জীবনের মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট না হয়। তাহলে দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচা যাবে এবং লেখাপড়াসহ যেকোন কাজে সফলতা আসবে।

১৫
লেখাপড়ায় অগ্রগতির আমল
পড়ার বই, লেখার খাতা-কলম হাতে নিয়ে শুরুতেই শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। কারণ শয়তান ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অন্যমনস্ক করে দেয়ার চেষ্টা করে। কুরআন মাজীদ পড়তে বসলে অবশ্যই প্রথমে - اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইতা-নির রাজীম) পড়তে হবে। এর অর্থ : ‘‘আমি বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।’’ আল্লাহ তা‘আলা বলেন- ‘‘তুমি যখন কুরআন পড়বে, তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে পাঠ শুরু করবে।’’ (সূরা নাহল- ৯৮)

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য চেয়ে - بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ (বিসমিল্লা-হির রাহ্মা-নির রাহীম) বলে পড়া শুরু করবে। এর অর্থ : ‘‘পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।’’

পড়া আরম্ভের সময় নিচের দু‘আ দু’টি অর্থ বুঝে পড়বে :

رَبِّ زِدْنِيْ عِلْمًا রাবিব যিদ্নী ‘ইলমা।

অর্থ : ‘‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন।’’ (সূরা ত্বাহা- ১১৪)

رَبِّ اشْرَحْ لِيْ صَدْرِيْ - وَيَسِّرْ لِيْ اَمْرِيْ - وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّنْ لِّسَانِيْ - يَفْقَهُوْا قَوْلِيْ

রাবিবশ্ রাহ্লী সাদ্রী, ওয়া ইয়াস্সির লী আম্রী, ওয়াহ্লুল্ ‘উক্বদাতাম মিল্লিসা-নী, ইয়াফ্ক্বাহু ক্বওলী।

অর্থ : ‘‘হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ উন্মুক্ত করে দাও, আমার কাজ সহজ করে দাও, আর আমার জিহবার জড়তা দূর করে দাও- যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে।’’ (সূরা ত্বাহা ২৫-২৮)

ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর নিচের দু‘আ দু’টি পড়বে :

اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا وَرِزْقًا طَيِّبًا

আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন ওয়া ‘আমালান মুতাকাববালান ওয়া রিয্কান তায়্যিবা।

অর্থ : ‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উপকারী জ্ঞান, গ্রহণযোগ্য আমল এবং পবিত্র রিযিক চাচ্ছি।’’ (আহমাদ, ইবনে মাজাহ)

اَللّٰهُمَّ انْفَعْنِيْ بِمَا عَلَّمْتَنِيْ وَ عَلِّمْنِيْ مَا يَنْفَعُنِيْ

আল্লা-হুম্মান ফা‘নী বিমা ‘আল্লাম্তানী ওয়া ‘আল্লিম্নী মা ইয়ানফা‘উনী।

অর্থ : ‘‘হে আল্লাহ! আমাকে যা শিখিয়েছ তা দ্বারা উপকৃত করো এবং আমাকে এমন জ্ঞান শিক্ষা দাও যা আমার উপকারে আসে।

১৬
স্মরণশক্তি বাড়ানোর পদ্ধতি
যার স্মৃতিশক্তি যত বেশি কর্মক্ষেত্রে তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। তাই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ অনুসরণ করলে অবশ্যই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন নিয়মিত অনুশীলন স্মৃতিশক্তির উন্নয়ন ঘটিয়ে থাকে।

স্মৃতিশক্তির উন্নয়নে নিম্নের পদক্ষেপগুলো তোমাকে সহযোগিতা করবে :

 ধরে নাও তোমার একটি ভালো স্মৃতিশক্তি আছে :

অনেকেই ধারণা করে থাকে তাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল। তোমার মাঝে এ ধারণা থাকলে তা দূর করো এবং নিজের প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠ, তাহলে তুমি নিজেই নিজের স্মৃতিশক্তির উন্নতি বুঝতে পারবে।

 নিজের মস্তিষ্ককে সচল রাখো :

ব্যয়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, এতে স্মৃতিশক্তির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নতুন কোনো কাজ করার চেষ্টা তোমার বুদ্ধিমত্তাকে সচল রাখতে সহায়তা করবে। যেমন- নতুন কোনো ভাষা শেখা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করা।

 মানসিক চাপ কমিয়ে নাও :

মানসিক চাপ কমাতে হবে। কারণ দীর্ঘস্থায়ী চাপ স্মৃতিশক্তিকে দুর্বল করে দেয়। আর সাময়িক চাপের কারণে অনেক সময় মনোযোগ ব্যাহত হয়।

 ভালো খাবারের অভ্যাস করো :

ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘বি-৬’ এবং অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত খেতে হবে। একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে খাবার গ্রহণ করলে মস্তিষ্কসহ মানসিক উন্নয়ন ঘটবে।

 যা মনে রাখা প্রয়োজন তা পুনরাবৃত্তি করো :

তুমি অধিক সময় যা দেখবে, শুনবে এবং চিন্তা করবে তা-ই অধিক মনে রাখতে সক্ষম হবে। তাই পুনরাবৃত্তি করো এবং ভাবতে থাক।

 যা কিছু মনে রাখা প্রয়োজন তা সুবিন্যস্ত করো :

উদ্দেশ্যহীন বা খেয়ালখুশিমত কোনোকিছু সাজানো হলে তা মনে রাখা কঠিন। একে সহজ করার জন্য শ্রেণীবদ্ধভাবে অথবা পৃথক পৃথকভাবে তালিকা তৈরি করে নাও।

 তোমার জীবনকে সংগঠিত করো :

তোমার অতি প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন- চাবি, চশমা, টুপি, মিসওয়াক, মোবাইল এবং ঘড়ি এগুলো সবসময় কোনো নির্দিষ্ট ও নিরাপদ জায়গায় রাখো। ফোন নম্বর এবং ঠিকানা একটি নির্দিষ্ট রেজিস্টার খাতায় অথবা ব্যক্তিগত কম্পিউটারে বা মোবাইল ফোনে লিখে নাও।

 গভীর ধ্যানে অনুশীলন করো :

গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত গভীরভাবে ধ্যান করে তারা অধিক বিষয় স্মৃতিতে রাখতে পারে। নিয়মিত ধ্যান অনুশীলনকে ঘনীভূত করে। অনেক গবেষক বিশ্বাস করেন যে, ধ্যান সচেতনতা এবং বুদ্ধিমত্তা সম্প্রসারণ করে থাকে।

 পরিমাণমত ঘুমাও :

পরিমিত ঘুম মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে এবং স্মৃতিশক্তিকে দীর্ঘমেয়াদি করে।

এ কৌশলগুলো স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির সহায়ক। এগুলো বাস্তবায়ন করলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটবে। এছাড়াও সকল প্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, নীরব পরিবেশ বজায় রাখা এবং কম কথা বলার অভ্যাস করা স্মৃতিশক্তির বৃদ্ধির সহায়ক।

১৭
স্মরণশক্তি কমে যাওয়ার কারণ
স্মরণশক্তি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এক মহান নেয়ামত। এজন্য স্মরণশক্তি যাতে কমে না যায় সেদিকে আমাদের সবার খেয়াল রাখতে হবে।

এখানে স্মরণশক্তি কমে যাওয়ার কিছু কারণ উল্লেখ করা হল :

 সুষম খাবার না খেলে।

 কুচিন্তা ও কুকর্মে নিয়োজিত হলে।

 অন্যের হক হরণ এবং হারাম খাবার খেলে।

 কবীরা গুনাহের কাজ করলে।

 আল্লাহ তা‘আলা এবং নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নাফরমানী করলে স্মরণশক্তি কমতে পারে।

ইমাম শাফেয়ী সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-

شَكَوْتُ إِلٰى وَكِيْعٍ سُوْءَ حِفْظِيْ

فَأَرْشَدَنِيْ اِلٰى تَرْكِ الْمَعَاصِيْ

وَقَالَ اِعْلَمْ بِأَنَّ الْعِلْمَ نُوْرٌ

وَنُوْرُ اللهِِِ لَا يُؤْتَاهُ عَاصِيْ

আমি অভিযোগ করেছি ওয়াকীর কাছে আমার স্বরণশক্তির দুর্বলতার,

তিনি আমাকে পরামর্শ দিলেন পাপকাজ ছেড়ে দেয়ার \

এবং বললেন, ইল্ম/জ্ঞান হল নূর আল্লাহর পক্ষ থেকে,

আর আল্লাহর নূর দেয়া হয় না কোনো পাপীকে \

১৮
সুস্থ থাকার নিয়মাবলী
‘‘শরীর তোমার ভাবনাও তোমার’’।

‘‘তোমার স্বাস্থ্য তোমার হাতে’’।

মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে তার স্বাস্থ্য। বলা হয়, ‘‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’’। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে কোনোকিছুই ভালো লাগে না। মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে হলে অবশ্যই শরীরটা সুস্থ রাখতে হবে। মানবদেহ একটি যন্ত্রবিশেষ- যা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চালু থাকে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতিকে সচল রাখার জন্য যেমন যত্ন নিতে হয় তেমনি শরীরেরও যত্ন নিতে হয়। এজন্য সবসময় কিছু নিয়মকানুন মেনে চলা উচিত, যাতে সহজে কোনো শারীরিক সমস্যা না হয়। শরীর সুস্থ রাখতে হলে যে কয়টি জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে তা হল- খাদ্য, পানীয়, বিশ্রাম, ঘুম, আলো-বাতাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, গোসল, সংযম ও শারীরিক পরিশ্রম অথবা ব্যায়াম। এসব দিকে নজর দেয়ার পরও যদি কোনো রোগ দেখা দেয় তবে গাছ-গাছড়া ব্যবহার করা উচিত। আর রোগ যদি জটিল হয় তবে অবশ্যই তাড়াতাড়ি ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।

সুস্থ থাকার জন্য যেসব নিয়ম পালন করা কর্তব্য তা হল :

 পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে। পানি ছাড়া জীব বাঁচে না। সবসময় বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। টিউবওয়েলের পানি পান করা ভালো। তবে সবচেয়ে ভালো পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করা।

 মুক্ত বায়ু ছাড়া শরীর সুস্থ থাকে না। তাই যে ঘরে মুক্ত বায়ু থাকে সেই ঘরে বাস করা উচিত।

 প্রতিদিন কিছুক্ষণ রোদে থাকা শরীরের জন্য ভালো।

 প্রত্যেক সুস্থ মানুষের ৫ থেকে ৭ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। তবে একমাত্র রোগী ও শিশু ছাড়া কারও দিনে ঘুমানো অনুচিত।

 মলমূত্র আটকে রাখা এবং হঠাৎ গরম থেকে ঠান্ডায় যাওয়া এবং ঠান্ডা থেকে গরমে আসা অনুচিত। এতে স্বাস্থ্যহানি হয়।

খাদ্য নির্বাচন

 বয়সের হিসাব মতে এবং শরীরের গ্রহণীয় ক্ষমতা, হজমশক্তি ও রুচি অনুযায়ী খাদ্য নির্বাচন করতে হবে।

 পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্য ও যতটা সম্ভব সহজে হজম হয় এমন খাদ্য খাওয়া উচিত।

 রোগ প্রতিরোধ করতে পারে এমনসব খাবার খাওয়া উচিত। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম চিকিৎসা।

 তরিতরকারী ও ফলমূল সবসময় ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে।

 রাস্তা-ঘাটের খোলামেলা জিনিষ, পঁচা-বাসি জিনিষ খাওয়া ঠিক নয়।

 ধুমপান, মাদকদ্রব্য ও সকল প্রকার ক্ষতিকর জিনিস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

 হালাল খাবার খেতে হবে :

শরীর সুস্থ রাখার জন্য যে খাবার খাওয়া হয় তার প্রথম শর্তই হচ্ছে হালাল ও পবিত্র জিনিস খাওয়া। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,

يَا اَيُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ

‘‘হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র বস্তু রয়েছে তা থেকে তোমরা খাও এবং শয়তানের পদচিহ্ন অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’’ (সূরা বাকারা- ১৬৮)

মনে রাখতে হবে, হালাল খাবার শুধু দেহের ক্ষুদাই নিবারণ করে না; বরং অন্তরে প্রশান্তি আনয়ন করে।

 পরিমিত আহার করতে হবে :

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্দিষ্ট পরিমাণে আহার করতে হবে। এটি এমন একটি ভালো অভ্যাস, যে ব্যক্তি তা পালন করে সে নানা অসুখ থেকে নিরাপদ থাকে, তার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং অলসতা সৃষ্টি হয় না। মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْا اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ

‘‘তোমরা খাও এবং পান করো; কিমুত অপচয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’’ (সূরা আরাফ- ৩১)

উমর (রাঃ) বলেন, ‘‘যুবক যদি তিনটি অঙ্গের হেফাযত করতে পারে তবে সে যৌবনের সকল ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারবে। (১) মুখ (২) লজ্জাস্থান (৩) পেট, অর্থাৎ হারাম ও মাত্রাতিরিক্ত খাবে না।’’

জ্ঞানের জন্য তিনটি জিনিস উপকারী :

(১) পরিমিত আহার করা, (২) পরিমিত ঘুমানো, (৩) কম কথা বলা।

খাদ্যের প্রকারভেদ

বিজ্ঞানীরা খাদ্যকে ছয় প্রকার বলে বর্ণনা করেছেন :

১। প্রোটিন জাতীয় খাদ্য : এ জাতীয় খাদ্য দেহের ক্ষয় পূরণ করে এবং পুষ্টি যোগায়। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ছানা ও ডাল প্রোটিন জাতীয় খাদ্য।

২। চর্বি জাতীয় খাদ্য : এ জাতীয় খাদ্য শরীরের মেদ, কর্মক্ষমতা ও উষ্ণতা তৈরি করে। চর্বি, ঘি, মাখন, তেল ও বাদাম চর্বি জাতীয় খাদ্য।

৩। শর্করা জাতীয় খাদ্য : এ জাতীয় খাদ্য দেহের শক্তি, তাপ ও মেদ তৈরি করে। ভাত, রুটি, চিরা, আলু, চিনি ও খেজুর শর্করা জাতীয় খাদ্য।

৪। পানি : পানির অপর নাম জীবন। খাবার হজম করা থেকে শুরু করে দেহের সব কাজে সাহায্য করা এবং শরীরের অস্বাস্থ্যকর পদার্থ বের করে দেয়ার জন্য পানি খুবই প্রয়োজন।

৫। লবণ : শরীরের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হল লবণ। সাধারণ লবণ ছাড়াও ফলমূল, শাকসবজী, চুন, সোডা ও পটাশ প্রভৃতিতে লবণ রয়েছে।

৬। ভিটামিন : এসব উপাদান ছাড়াও শরীরের আরো একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হল ভিটামিন। ভিটামিনের অভাব হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে শরীরে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। তাই এর নাম ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ।

নিচে ভিটামিন সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হল :

ভিটামিনের প্রকারভেদ ও উপাদানসমূহ

(১) ভিটামিন- ‘এ’ : এ ভিটামিনের অভাব দেখা দিলে রাতকানা, চোখ ও কানের রোগ, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, মূত্রপাথরী প্রভৃতি রোগ হয়ে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। পালংশাক, টমেটো, লাল আলু, গাজর, মটরশুটি, বাধাকপি, পেপে, লাউ, পাকা আম, সবুজ ও হলুদ রঙ্গের শাকসবজী, পল, দুধ, মাখন, ডিম, মাছের তেল ও খাসির চর্বিতে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ থাকে।

(২) ভিটামিন- ‘বি’ : এ ভিটামিনের অভাব দেখা দিলে অজীর্ণ, অক্ষুধা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মুখে ও জিভে ঘা, বেরিবেরি, শিশুদের ওজন কমা, শীর্ণতা ও স্তনে দুধের অভাব দেখা দেয়। ভুট্টা, ছোলা, যবের ছাতু, ডাল, কড়াইশুটি, বিভিন্ন প্রকারের সবুজ সবজি, বাধাকপি, পেয়াজ, টমেটো, আলু, সিম, সয়াবিন, চীনাবাদাম, কমলালেবু, মাছের ডিম, ডিমের কুসুম ও ছানা প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘বি’ পাওয়া যায়।

(৩) ভিটামিন- ‘সি’ : এ ভিটামিনের অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়। রোগ প্রতিষেধক ক্ষমতা কমে যায়। দাঁত উঠতে দেরি হয়, হাঁড় শক্ত হতে পারে না, শিশুদের ওজন হ্রাস পায় ও খিটখিটে স্বভাব হয়।

সবরকম লেবু, আনারস, কলা, আপেল, পেয়াজ, আখ, টমেটো, পালংশাক, বাধাকপি, লাল আলু, মুগ, যব, ছোলা, মটরশুটি, দুধ, দৈ ও বিভিন্ন ধরনের টক ফল প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ থাকে।

(৪) ভিটামিন- ‘ডি’ : এ ভিটামিনের অভাবে শিশুদের শীর্ণতা, রিকেট ও দাঁতে পোকা প্রভৃতি হয়, হাঁড় শক্ত হয় না। কডলিভার অয়েল, মাছের ডিম, ডিমের কুসুম, দুধ, মাখন ও আচার প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘ডি’ আছে। সকালের রোদে ভিটামিন ‘ডি’ থাকে। এজন্য সূর্যের আলো গায়ে লাগাতে হবে। সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠলে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভিটামিন ‘ডি’ সহজেই শরীর সংগ্রহ করতে পারে- যা হাতে গোনা কয়েকটি খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায়।

(৫) ভিটামিন- ‘ই’ : ভিটামিন ‘ই’ -এর অভাবে গর্ভ নষ্ট হয়। নারিকেল, কলা, সয়াবিন, বাদাম, মাংসের চর্বি, মাছের তেল, মাংস ও ডিম প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘ই’ পাওয়া যায়।

চোখের যত্নে করণীয়

লেখাপড়া চোখের উপর নির্ভরশীল। চোখের মাধ্যমে পাঠের বিষয়বস্তু মস্তিষ্কে পৌঁছে থাকে। লেখাপড়া ছাড়াও চোখ মানুষের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি সম্পদ। তাই চোখের যত্ন নেয়া জরুরী। দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখার জন্য নিম্নলিখিত নিয়ম মেনে চললে সুফল পাওয়া যায়।

১. সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে জেগে উঠা।

২. প্রতিদিন ৪/৫ বার চোখ ধৌত করা। ওযু দ্বারা এ কাজ হয়ে যায়।

৩. স্বল্প আলো বা অধিক আলোতে লেখাপড়া করলে চোখের ক্ষতি হয়।

৪. দীর্ঘক্ষণ পড়াশোনা করার সময় এক ঘণ্টা পড়ার পর অন্তত ৫ মিনিট বিশ্রাম নেয়া উচিত। এ সময় সবুজ গাছপালার দিকে দৃষ্টিপাত করতে পারলে উপকার পাওয়া যায়।

৫. ছোটমাছ, মিষ্টিকুমড়া ও সবুজ শাকসবজি নিয়মিত খেতে হবে। চোখের জন্য ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাদ্য বিশেষ উপকারী। অধিক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা চোখের জন্য ক্ষতিকর।

১৯
শারীরিক ব্যায়াম
শরীর সুস্থ রাখতে হলে শারীরিক পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। আর যারা শারীরিক পরিশ্রম করে না তাদের নিয়মিত শরীরচর্চা করা একান্ত কর্তব্য। ব্যায়াম করলে শরীরে যথেষ্ঠ অক্সিজেনের চাহিদা সৃষ্টি হয়, তখন রক্তের গতি বৃদ্ধি পায়।

প্রতিদিন ব্যায়াম করার জন্য একটি সময় ঠিক করে নেবে। জার্মানের এক দার্শনিক ব্যায়ামের ব্যাপারে এতটাই সময়নিষ্ঠ ছিলেন যে, মানুষ তাকে ভ্রমণ করতে দেখে বুঝতে পারত কয়টা বাজে। অর্থাৎ তিনি প্রতিদিনই একটি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম করতেন।

শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করার জন্য ব্যায়ামাগারে যাওয়া জরুরী নয়। দৌড়, সাঁতার কাটা, হাঁটা, সাইকেল চালানো, একই স্থানে দাঁড়িয়ে দৌড়ের মত লাফানো এসব ব্যায়াম যথেষ্ট উপকারী।

লেখাপড়া করার যেমন একটি নিয়ম আছে অনুরূপভাবে ব্যায়াম করারও নিয়মকানুন আছে। এখানে কয়েকটি ব্যায়াম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল। এগুলোর মধ্য থেকে যার যার সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো একটি ব্যায়াম করতে পারেন।

১. সাঁতার কাটা

শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য প্রতিদিন গোসল করতে হয়। আর গোসল যদি খাল, বিল, পুকুর বা নদীতে করা যায় তবে এক সাথে দু’টি কাজ হয়ে যাবে। গ্রামে তো সাঁতার কাটার অনেক জায়গা আছে, খোঁজ করলে শহরেও সাঁতার কাটার জায়গা পাওয়া যায়। সাঁতার কাটার সময় প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে নড়াচড়া করে বিধায় সাঁতার কাটাকে শ্রেষ্ঠ ব্যায়াম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সাঁতার বলতে ফ্রি স্টাইলে সাঁতার কাটাকেই বুঝানো হয়েছে। প্রথম দিন একশ গজ দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে আড়াই মিনিটে। পরে আস্তে আস্তে গতি এবং দূরত্ব বৃদ্ধি করতে হবে।

২. দৌড়ানো

দৌড়ালে শরীরের সকল পেশী সঞ্চালিত হয় বিধায় পেশীগুলো দৃঢ় হয়। সর্বাধিক উপকার হয় হাত, পা এবং তলপেটের। দৌড়ানোর উপযুক্ত সময় সকালবেলা। প্রথম দিনেই অধিক দ্রুতগতিতে দৌড় দেয়া ঠিক নয়। ক্রমে ক্রমে গতি বাড়াতে হবে। প্রতিদিন ১৫/২০ মিনিট দৌড়ানো উচিত।

৩. একই স্থানে দাঁড়িয়ে দৌড়ানো

এ ব্যায়াম করতে খুব অল্প জায়গার প্রয়োজন হয়। তাই ঝড়বৃষ্টির দিনেও সময় মত ব্যায়ামটা করা যায়। একই স্থানে দাঁড়িয়ে দৌড়াতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পা যেন মাটি থেকে অন্তত ৮ ইঞ্চি উপরে ওঠে। এ ব্যায়ামটি মেয়েদের জন্যও সহজ। কেননা তাদের পক্ষে রাস্তায় দৌড়ানো সম্ভব হয় না। এ ব্যায়ামের পূর্ণ মাত্রা ১৭ মিনিট।

৪. সাইকেল চালানো

সাইকেল চালাতে অনেকেই পছন্দ করে। তোমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি বাড়ি থেকে ২/৩ কিলেমিটার দূরে হয় তবে বাসে বা রিকশায় না যেয়ে সাইকেল যোগে আসা-যাওয়া করলে তোমার ব্যায়াম হয়ে যাবে। তবে রাস্তা যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয় তবে খোলা মাঠে সাইকেল চালাতে পারো।

৫. স্কিপিং

মেয়েরা রশি নিয়ে লাফালাফি করতে পছন্দ করে। তাই ব্যায়াম হিসেবে স্কিপিং করা যায়। অনেক ছেলেও আজকাল স্কিপিং করে থাকে।

৬. হাঁটা

প্রতিদিন অন্তত ২/৩ মাইল হাঁটতে পারলে তাতেও ব্যায়াম হয়ে যাবে। তোমার স্কুল, কলেজ বা মাদরাসা যদি বাড়ি থেকে দুই বা আড়াই কিলেমিটার দূরে অবস্থিত হয় তবে কোনো যানবাহন ব্যবহার না করে পায়ে হেঁটে যেতে পার। ছেলেদের পক্ষে পায়ে হেঁটে যাওয়া কোনো সমস্যা নয়। ছাত্রীরাও কয়েকজন মিলে একসাথে পায়ে হেঁটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করতে পারে।

২০
ছাত্র-ছাত্রীর আদর্শিক গুণাবলী
ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ফ্যাশনের পরিচয় বাহক না হয়ে ছাত্রত্বের পরিচয় বাহক হতে হবে। ছাত্রদের মাথায় লম্বা চুল, দাঁতে ময়লা, হাত-পায়ের আঙ্গুলে লম্বা লম্বা নখ, গায়ে অশালীন জামা, হাতে চুড়ি- এসব কোনো আদর্শ ছাত্রের মডেল হতে পারে না। নিজেদেরকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপনের নেশায় বর্তমানে এক শ্রেণীর ছাত্ররা এই অদ্ভূত বেশ ধরতে চায়। মানুষ তাদেরকে দেখলে মন্তব্য করে যে, এরা কি ছাত্র? ছাত্রের বেশভূষা কি এমন হয়!

মুসলিম জাতির জন্য বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সবচেয়ে উত্তম আদর্শ। জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁর নীতি ও আদর্শের অনুসরণ করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا

‘‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ (তাঁর সন্তুষ্টি) ও কিয়ামতের দিনের (মুক্তি) কামনা করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে- তাদের জন্য অবশ্যই উত্তম আদর্শ রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে।’’ (সূরা আহযাব- ২১)

২১
চুল রাখার নিয়ম
ছাত্রদের মাথার চুল হবে ছোট, পরিপাটি। ওয়ায়েল ইবনে হুজ্র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত হলাম, এ সময় আমার মাথার চুল খুবই লম্বা ছিল। তিনি আমাকে দেখে বললেন : অশুভ! অমঙ্গলজনক! তখন আমি ফিরে এসে চুল কেটে ফেলি। পরদিন আমি যখন তাঁর কাছে আসলাম তখন তিনি বললেন, আমি তোমার কোনো ক্ষতি করিনি, এটাই উত্তম। (আবূ দাউদ হা/৪১৯২)

চুল আঁচড়ানো প্রসঙ্গে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল কাজ ডানদিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। এমনকি জুতা পরিধান করা, মাথার চুল আঁচড়ানো এবং পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রেও।’’ (মুসলিম হা/৬৩৯)

উল্লেখিত হাদীসসমূহ হতে জানা গেল যে, মাথার চুল ছোট রাখা এবং ডান দিক হতে চুল আঁচড়ানো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাত। বাবরী চুল রাখলে কানের লতি বা ঘাড়ের বরাবর কেটে সমান করে রাখতে হবে। চুল আঁচড়িয়ে পরিপাটি করে রাখতে হবে, তবে ঘন ঘন আঁচড়িয়ে ফ্যাশনে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া সমীচীন নয়।

সাধারণভাবে ছাত্রীদের মাথার চুল ছেলেদের চেয়ে লম্বা রাখা হলেও যত্ন করা এবং চিরুনি দিয়ে আঁচড়িয়ে পরিপাটি করার ব্যাপারে উপর্যুক্ত নির্দেশনাসমূহ তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কোনোভাবেই মাথার চুল বব কাটিং করা (কপাল ও চোখের উপর ফেলে রাখা) আদর্শ ছাত্রীদের কাজ হতে পারে না। আবার চুল কাঁধ পর্যন্ত কেটে শ্যম্পু করে রাখা এটাও আদর্শ সংস্কৃতি নয়। সুতরাং আদর্শ ছাত্রীরা এসব পরিত্যাগ করে তাদের মাথার চুলকে একটা বয়স থেকে লম্বা হতে দেবে এবং আঁচড়িয়ে পরিপাটি করে মাথায় স্কার্ফ বা বড় কাপড় ব্যবহার করবে।

২২
গোঁফ ও হাত-পায়ের নখ ছোট রাখা
অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে যারা অনেক লম্বা নখ রাখে। এটা কোনো মুসলিমের আদর্শ নয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফিতরাত অর্থাৎ মানুষের স্বভাব ধর্ম ৫টি :

১. খতনা (মুসলমানি) করা, ২. ক্ষুর দ্বারা নাভীর নিচ পরিষ্কার করা, ৩. বগলের পশম তুলে ফেলা, ৪. নখ কাটা, ৫. গোঁফ ছোট করা। (সহীহ বুখারী হা/৫৮৮৯)

হাত-পায়ের নখ প্রতি বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার কেটে ছোট করা উত্তম।

২৩
জুতা পরার নিয়ম
মুসলমানের প্রতিটি কাজ সুন্নাত অনুযায়ী হওয়া উচিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ জুতা পরিধান করবে তখন সে যেন ডান দিক থেকে আরম্ভ করে। আর যখন খোলবে তখন যেন বাম দিক থেকে আরম্ভ করে- যাতে পরার সময় প্রথমে ডান পা এবং খোলার সময় প্রথমে বাম পা হয়।’’ (বুখারী হা/৫৫১৭)

২৪
পোশাক পরিধানের নিয়ম
পোশাক-পরিচ্ছদ মানব সভ্যতার আদর্শের প্রতীক। এটা মানব জাতির প্রতি মহান আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম নিয়ামত ও করুণা।

কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

يَا بَنِيْ اٰدَمَ قَدْ اَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُّوَارِيْ سَوْاٰتِكُمْ وَرِيْشًا - وَّلِبَاسُ التَّقْوٰى ذٰلِكَ خَيْرٌ

‘‘হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের প্রতি পোশাক নাযিল করেছি। যাতে তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকা যায় এবং সাজসজ্জা হয়। আর তাকওয়ার পোশাকই সবচেয়ে উত্তম।’’ (সূরা আরাফ- ২৬)

পোশাকের মূল লক্ষ্য হচ্ছে শরীর আবৃত করে সৌন্দর্য প্রকাশের মাধ্যমে আল্লাহ-ভীতি অর্জন করা। যে পোশাকে প্রয়োজন পূর্ণ হয় এবং শালীনতা রক্ষিত হয় সেই পোশাকই উত্তম।

২৫
পোশাকের ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো লক্ষণীয় :
১. পোশাক পরিধানে অহংকার প্রকাশ পাবে না। এ প্রসঙ্গে ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ اَلْبَسَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَوْبَ مَذَلَّةٍ

‘‘যে ব্যক্তি প্রসিদ্ধি লাভের মানসে পোশাক পরবে আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন অপমানের পোশাক পরাবেন।’’ (ইবনে মাজাহ হা/৩৬০৬) এ হাদীসে অহংকার প্রকাশের লক্ষ্যে নামী-দামী পোশাক পরা আবার ফকির সাজার লক্ষ্যে নিম্ন মানের পোশাক পরা উভয়টিই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

২. বিজাতির অনুসরণে পোশাক পরিধান করা যাবে না।

৩. এত পাতলা পোশাক পরা যাবে না যাতে শরীরের অঙ্গ স্পষ্ট দেখা যায়।

৪. এত টাইট পোশাক পরিধান করা যাবে না যাতে শরীরের ভাঁজ ফুটে উঠে এবং বসতে ও নামায পড়তে কষ্ট হয়।

৫. টাখনুর নিচে পোশাক পরা যাবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘লুঙ্গির যে অংশ টাখনুর নিচে যাবে তা জাহান্নামে জ্বলবে।’’ (বুখারী হা/৫৪৫০)

অর্থাৎ পায়জামা, পেন্ট ও লুঙ্গি টাখনুর নিচে পরিধান করা এত বড় পাপ- যার ফলে ঐ ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে।

৬. সতর ঢেকে রাখা ফরয। পুরুষদের সতর নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত। আর মহিলাদের হাতের কব্জি ও পায়ের টাখনুর নিচের অংশ ছাড়া সম্পূর্ণ শরীর সতর। অনেকের মতে তারা মুখমন্ডল খোলা রাখতে পারবে, তবে ঢেকে রাখা উত্তম; কিন্তু মাথা, চুল ও গলা খোলা রাখলে পাপ হবে।

২৬
হিজাব ব্যবহার
ছাত্রীরা ছোটবেলা থেকেই শালীন পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করবে। মাথায় স্কার্ফ ও ওড়না ব্যবহার করে আল্লাহ তা‘আলার বিধান মেনে চলাকে অভ্যাসে পরিণত করবে। এ ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মায়েরা যদি পোশাক ব্যবহারে শালীন হয় এবং হিজাব পরে তবে তাদের মেয়েরাও সহজেই তাদের অনুসরণ করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيْبِهِنَّ ذٰلِكَ اَدْنٰى اَنْ يُّعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ

‘‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রী, মেয়ে ও সাধারণ মু’মিন নারীদের বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের (মাথার) উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে (যে, তারা সম্মানিত মহিলা)। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।’’ (সূরা আহযাব- ৫৯)

বর্তমানে অনেক ছাত্রী বখাটে ছেলেদের দ্বারা অপমানিত হচ্ছে। তারা যদি আল্লাহর বিধান মেনে চলত তবে এমনটা হত না।

ছাত্রীরা এমনভাবে সাজসজ্জা করবে না যাতে তাদের পড়ালেখা ব্যহত হয় এবং দুস্কৃতিকারীদের কবলে পড়তে হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِيْنَ مِنْ زِيْنَتِهِنَّ

‘‘তারা যেন এমনভাবে পদচারণা না করে- যাতে (চলার আওয়াজে) তাদের গোপন সাজসজ্জা লোকদের কাছে প্রকাশ পেয়ে যায়।’’ (সূরা নূর- ৩১)

মেয়েদের সুগন্ধি ব্যবহার করার প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরুৎসাহিত করেছেন। আবূ মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যদি কোনো মহিলা সুগন্ধি লাগিয়ে পুরুষদের মাঝে যায়- যাতে তারা তার সুগন্ধির ঘ্রাণ গ্রহণ করে তবে সে এরূপ এরূপ। অর্থাৎ সে যেন ব্যভিচারিণী।’’ (আবূ দাউদ হা/৪১৭৫)

হাদীসে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

اَلْمَرْاَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتْ اِسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ

‘‘মহিলাদের পর্দা করা কর্তব্য। কোনো মেয়েলোক যখন বেপর্দা হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে তখন শয়তান তাকে কাবু করে নেয়।’’ (তিরমিযী হা/১১৭৩)

اَ لَا لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِاِمْرَاَةٍ اِلَّا كَانَ ثَالِثُهُمَا الشَّيْطَانُ

‘‘একজন বেগানা পুরুষ ও একজন বেগানা মহিলা যখন একত্রে অবস্থান করে তখন শয়তান সেখানে তৃতীয় জন হিসেবে উপস্থিত হয়।’’ (তিরমিযী হা/২১৬৫)

জেনে রাখা প্রয়োজন যে, পর্দার বিধান কেবল মহিলাদের জন্য নয়। পর্দা রক্ষায় নারী-পুরুষ সকলের সদিচ্ছা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা একান্ত কাম্য। মহান আল্লাহ প্রথমে মু’মিন পুরুষদের সম্পর্কে বলেন-

قُلْ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ اَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ ذٰلِكَ أَزْكٰى لَهُمْ

‘‘মু’মিন পুরুষদেরকে বলো! তারা যেন তাদের দৃষ্টি নিম্নগামী করে এবং নিজ নিজ যৌনাঙ্গের হেফাযত করে; এটা তাদের জন্য অধিক উত্তম।’’ (সূরা নূর- ৩০)

অতঃপর মু’মিন নারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ اَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ

‘‘আর মু’মিন নারীদেরকে বলো! তারা যেন তাদের দৃষ্টি নিম্নগামী করে এবং নিজ নিজ যৌনাঙ্গের হেফাযত করে।’’ (সূরা নূর- ৩১)

২৭
খাওয়ার নিয়মাবলী
১. মেঝেতে দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়া সুন্নাত।

২. খাওয়ার সময় উভয় হাঁটু উঠিয়ে অথবা উভয় হাঁটু বিছিয়ে অথবা এক হাঁটু উঠিয়ে অপর হাঁটু বিছিয়ে এ তিন নিয়মের যেকোন এক নিয়মে বসা উত্তম।

৩. খাওয়ার আগে হাত ধোয়া।

৪. ডান হাত দিয়ে খাওয়া।

৫. ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাওয়া শুরু করা। শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে যখনই মনে পড়বে তখনই ‘বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আ-খিরাহ’ পড়া। হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আহারের পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া হয় না- ঐ খাবারে শয়তান শরীক হয়। (আবূ দাউদ হা/৩৭৬৮)

৬. পরিমিত খাওয়া।

৭. ছোট ছোট লোকমা নিয়ে ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া।

৮. অন্য লোকের লোকমার দিকে না তাকানো উত্তম।

৯. হাতের আঙ্গুল ও থালা চেটে খাওয়া।

১০. খাওয়ার পর মেসওয়াক বা ব্রাশ করা, প্রয়োজনে দাঁত খিলাল করা।

১১. আহারের পর হাত ও মুখ ধুয়ে ফেলা, প্রয়োজনে সাবান ব্যবহার করা।

১২. তোয়ালে দিয়ে হাত ও মুখ মোছা যায়। পরনের কাপড় দিয়ে হাত-মুখ মোছা ঠিক নয়।

১৩ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিষ্টি, মধু, সিরকা, খেজুর, তরমুজ, খিরা এবং লাউ পছন্দ করতেন।

১৪. খাবারের দোষ আলোচনা করা উচিত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো খাবারের দোষত্রুটি আলোচনা করতেন না। উপস্থিত খাবার পছন্দ হলে খেতেন আর পছন্দ না হলে খেতেন না। (মুসলিম হা/৫৫০১)

১৫. দুপুরের খাওয়ার পর কিছুক্ষণ শয়ন করা এবং রাত্রে খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটা উত্তম।

১৬. খাওয়ার পর দু‘আ পড়া। (এ বইয়ের ৫৯ পৃষ্টায় দু‘আ অংশে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দু‘আসমূহ দেয়া আছে)

২৮
পান করার নিয়মাবলী
পানি মহান আল্লাহ তা‘আলার এক বড় নিয়ামত। পানি ছাড়া জীবন রক্ষা করা অসম্ভব। প্রতিটি জীব পানি পান করে। পানীয় দ্রব্য পান করার ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো লক্ষণীয় :

১. স্বাভাবিক অবস্থায় ঠান্ডা পানি পান করা ভালো।

২. পানীয় দ্রব্যে ফুঁ দেয়া নিষেধ।

৩. পানীয় দ্রব্য তিন নিঃশ্বাসে পান করা সুন্নাত।

৪. পান করার সময় গ্লাসের মধ্যে নিশ্বাস ছাড়া অনুচিত।

৫. পান করার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ এবং শেষে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা কর্তব্য।

২৯
ঘুমানোর নিয়মাবলী
১. ওজু অবস্থায় শোয়া সুন্নাত।

২. শোয়ার আগে ব্রাশ বা মেসওয়াক ব্যবহার করে মুখ পরিষ্কার করা।

৩. ডান কাতে শয়ন করা। ডান কাতে ঘুমালে অনেক রোগ থেকে বাঁচা যায়। যেমন- হার্টের রোগ, লিভারের রোগ, স্টমাকের রোগ এবং বদহজমী। উপুড় হয়ে পেটের উপর ভর করে শয়ন করা ঠিক নয়। এতে হার্টের ক্ষতি হয়।

৪. তাহাজ্জুদের নিয়তে শয়ন করা। কেননা শেষ রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদের নামায পড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। এটা জান্নাতী লোকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৫. শোয়ার সময় দু‘আ পড়া। সম্ভব হলে সূরা ফাতেহা, আয়াতুল কুরসী, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, সূরা কাফিরূন, সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক, সূরা নাস ও কয়েকবার দরূদ পড়া।

৬. ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দু‘আ পাঠ করা, বিছানা গুটিয়ে রাখা ও মেসওয়াক করা।

৭. দুপুরে খাওয়ার পর কিছুক্ষণ শয়ন করা সুন্নাত।

৮. ফজর এবং আসরের পর শয়ন করা ভালো নয়।

৯. বেষ্টনী, দেয়াল ছাড়া ছাদে শয়ন করা উচিত নয়।

১০. দু’জন পুরুষ বা দু’জন মহিলা একই চাদরের নিচে শয়ন করা দূষণীয়।

১১. চেরাগ, বাতি জ্বলন্ত রেখে শয়ন করা নিষেধ।

১২. মন্দ স্বপ্ন দেখলে ‘আউযুবিল্লাহ’ তিনবার বলে বামদিকে থুথু ফেলবে। আর ভালো স্বপ্ন দেখলে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ তিনবার পড়বে।

৩০
প্রস্রাব-পায়খানার নিয়মাবলী
১. প্রস্রাব-পায়খানার বেগ যখন হবে তখনই তা করা উচিত। প্রস্রাব-পায়খানার বেগ থামানোর চেষ্টা করা ক্ষতিকর।

২. প্রস্রাব-পায়খানায় যাওয়ার সময় পবিত্রতার উপকরণ যেমন- ঢিলা, টিসু বা পানি সঙ্গে নিয়ে যাওয়া। টয়লেটে পানি আছে কি না আগে চেক করা।

৩. প্রস্রাব-পায়খানায় প্রবেশের পূর্বে দু‘আ পাঠ করা।

৪. প্রস্রাব-পায়খানায় ঢোকার সময় প্রথমে বাম পা দিয়ে ঢোকা এবং বের হওয়ার সময় প্রথমে ডান পা দিয়ে বের হওয়া।

৫. হাঁটু ঢেকে বসা এবং প্রস্রাবের ছিটা যাতে কাপড়ে ও শরীরে না লাগে সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখা।

৬. আল্লাহর নাম সম্বলিত আংটি বা কুরআনের আয়াত খোলা অবস্থায় সঙ্গে নিয়ে প্রস্রাব-পায়খানায় প্রবেশ না করা।

৭. পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে প্রস্রাব-পায়খানা না করা।

৮. একান্ত প্রয়োজন ছাড়া দাঁড়িয়ে প্রস্রাব-পায়খানা না করা।

৯. দাঁড়ানো অবস্থায় কাপড় না উঠায়ে বসার সঙ্গে সঙ্গে কাপড় উঠানো।

১০. প্রস্রাব-পায়খানা করা অবস্থায় কথাবার্তা না বলা।

১১. প্রস্রাব-পায়খানায় বসে সালামের উত্তর না দেয়া। এ অবস্থায় কেউ সালাম দিয়ে ফেললে পবিত্র হয়ে উত্তর দেয়া।

১২. প্রস্রাব-পায়খানা করা অবস্থায় হাঁচি দিলে মুখে উচ্চারণ না করে মনে মনে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলা।

১৩. হাড্ডি, কয়লা, কাগজ, কাঁচ, গোবর, খাদ্যদ্রব্য, এবং ডান হাত দ্বারা শৌচকার্য না করা।

১৪. প্রস্রাবের শেষ ফুটা ভালোভাবে নিষ্কাশন হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময় নেয়া। তবে ঢিলা ব্যবহারের সময় লজ্জা বজায় রাখা উচিত।

১৫. প্রস্রাব-পায়খানা হতে উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করা ফরয। প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন না করা কবিরা গুনাহ। এ পাপ করলে মৃত্যুর পর কবর থেকেই আযাব শুরু হয়ে যাবে। (বুখারী-হাঃ নং ২১৮)

৩১
চারিত্রিক গুণাবলী
মানুষের আচার-আচরণ ও দৈনন্দিন কাজকর্মের মধ্য দিয়ে যে স্বভাব প্রকাশ পায় তাকে আখলাক বা চরিত্র বলে। আখলাক এমন এক ব্যাপক শব্দ যার দ্বারা একজন মানুষের জীবনের সমস্ত আচার-আচরণকে বুঝায়। মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, ধর্মীয়, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সব দিকই আখলাকের অন্তর্ভুক্ত।

মানবচরিত্রের দু’টি দিক রয়েছে, একটি হল ইতিবাচক দিক- যাকে সচ্চরিত্র বা আখলাকে হামীদাহ বলা হয়। অপরটি হল নেতিবাচক দিক- যাকে অসচ্চরিত্র বা আখলাকে যামীমাহ বলা হয়।

মানুষের চরিত্রে যা কিছু ভালো ও উত্তম তা সবই আখলাকে হামীদার অন্তর্ভুক্ত। নবী-রাসূলগণ এসব চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। আর মানব জীবনের যা কিছু নিন্দনীয় ও মন্দ তা সবই আখলাকে যামীমার অন্তর্ভুক্ত। আখলাকে যামীমাহ মানেই অসচ্চরিত্র, অন্যায় ও গুনাহের কাজ।

৩২
আখলাকে যামীমাহ বা অসচ্চরিত্রের সংক্ষিপ্ত তালিকা
(১) শির্ক করা।

(২) অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা।

(৩) নামায না পড়া।

(৪) যাকাত না দেয়া।

(৫) রমাযানের রোযা না রাখা।

(৬) সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করা।

(৭) জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা।

(৮) রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত করা।

(৯) তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস না রাখা।

(১০) জ্যোতিষী ও গনকের কথা বিশ্বাস করা।

(১১) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে প্রাণী যবাই করা।

(১২) সত্যের বিরোধিতা করা।

(১৩) আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি মিথ্যাচার করা।

(১৪) আল্লাহর আযাব ও গযব সম্পর্কে উদাসীন হওয়া।

(১৫) আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া।

(১৬) পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া।

(১৭) নিজের পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতৃরূপে স্বীকৃতি দেয়া।

(১৮) আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা।

(১৯) জাদু করা।

(২০) যিনা/ব্যভিচার করা।

(২১) সমকামিতা করা।

(২২) সতী নারীর প্রতি যিনার অপবাদ দেয়া।

(২৩) সুদ ও ঘুষ দেয়া ও নেয়া।

(২৪) এতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা।

(২৫) গনীমতের মাল আত্মসাৎ করা।

(২৬) চুরি করা।

(২৭) ডাকাতি, রাহাজানি ও অপহরণ করা।

(২৮) চাঁদাবাজি করা।

(২৯) হারাম খাদ্য গ্রহণ করা।

(৩০) অহংকার করা।

(৩১) মদ্য পান করা।

(৩২) জুয়া খেলা।

(৩৩) মিথ্যা কথা বলা।

(৩৪) মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।

(৩৫) মিথ্যা শপথ করা।

(৩৬) গালি দেয়া।

(৩৭) কোনো মু’মিনকে লানত (অভিশাপ) দেয়া।

(৩৮) শাসক কর্তৃক জনগণকে প্রতারণা ও জুলুম করা।

(৩৯) জুলুম-অত্যাচার করা। পাওনাদারের প্রতি জুলুম করা। স্ত্রীর প্রতি জুলুম করা। শ্রমিক ও অধিনস্ত কর্মচারীদের প্রতি জুলুম করা।

(৪০) দাস-দাসী, দুর্বল শ্রেণীর মানুষ এবং জীব জন্তুর সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করা।

(৪১) স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের অধিকার খর্ব করা।

(৪২) প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া।

(৪৩) দান করে খোটা দেয়া।

(৪৪) আমানতের খিয়ানত করা।

(৪৫) আত্মহত্যা করা।

(৪৬) অন্যায়ভাবে বিচার করা।

(৪৭) পুরুষ মহিলার এবং মহিলা পুরুষের আকৃতি/বেশ ধারণ করা।

(৪৮) পরিবার ও সমাজে অশ্লীল কাজকে প্রশ্রয় দেয়া।

(৪৯) প্রস্রাবের ছিটা থেকে পবিত্র না থাকা।

(৫০) দ্বীনি ইল্ম/জ্ঞান গোপন করা।

(৫১) কারো গোপন কথা শ্রবণ করার চেষ্টা করা।

(৫২) মুসলমানদের গোপনীয় বিষয় প্রকাশ করে দেয়া।

(৫৩) গীবত করা।

(৫৪) চোগলখোরী করা।

(৫৫) ওয়াদা ভঙ্গ করা।

(৫৬) প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা।

(৫৭) ঘরের দেয়ালে প্রাণীর ছবি ঝুলিয়ে রাখা।

(৫৮) কেউ মারা গেলে বিলাপ করে ক্রন্দন করা, শরীরে আঘাত করা।

(৫৯) পুরুষদের টাখনুর নিচে পোশাক পরা।

(৬০) পুরুষের স্বর্ণালঙ্কার ও রেশম ব্যবহার করা।

(৬১) মাপে ও ওজনে কম দেয়া।

(৬২) ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা করা।

(৬৩) বিনা ওযরে জুমু‘আ ও জামা‘আত ত্যাগ করা।

(কবীরা গুনাহ : ইমাম আয্যাহাবী)

এসব কদর্য ও নিন্দনীয় কাজ থেকে নিজেকে সর্বক্ষণ দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন!

৩৩
আখলাকে হামীদাহ বা সচ্চরিত্রের গুরুত্ব
ভালো ছাত্র-ছাত্রী মানেই সচ্চরিত্রের অধিকারী। ইসলামে সচ্চরিত্রের গুরুত্ব সর্বাধিক। চরিত্রহীন মানুষ পশুর চেয়েও অধম। সচ্চরিত্র এমন এক সম্পদ যা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সকলের কাছে প্রিয় করে তুলে। কাজেই তারা পড়ালেখার পাশাপাশি পুরো জীবনব্যবস্থার মাঝেই উত্তম চরিত্রের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করবে। ইসলামী জীবনাচার, আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার সকলের জীবনে বাস্তবায়িত করতে হবে। যে ব্যক্তি নিজের লেনদেন ও কাজ-কারবারে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত, ওয়াদা পালন করে, মানুষকে ধোঁকা দেয় না, আমানতের খেয়ানত করে না, মানুষের হক নষ্ট করে না, যাবতীয় অবৈধ রোজগার থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলে এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে সদা সচেতন থাকে সে-ই হল প্রকৃত মুসলমান। সে-ই সবচেয়ে ভালো মুসলমান, যার স্বভাব তার পরিবারের কাছে ভালো বলে বিবেচিত।

প্রত্যেক ব্যক্তি তার উন্নতিতে সাহায্য পাবে তার চরিত্র অনুসারে। সচ্চরিত্র উন্নত জাতির জীবনীশক্তি। যে জাতির চরিত্র যত সুন্দর সে জাতি তত শক্তিশালী। সকল নবীই নিজ নিজ জাতিকে উত্তম চরিত্রের শিক্ষা দিয়েছেন। আর শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা‘আলা পাঠিয়েছেন উত্তম চরিত্রকে পূর্ণতা দানের জন্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

اِنَّمَا بُعِثْتُ لِأُتَمِّمَ مَكَارِمَ الْأَخْلاَقِ

‘‘আমি উত্তম চরিত্রকে পূর্ণতা দানের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’’ (বায়হাকী হা/২০৫৭১)

আদর্শের প্রতীক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আদর্শ অনুযায়ী জীবন গঠন করলে দুনিয়ার অঙ্গনে যেমন সম্মান পাওয়া যায় তেমনি আখেরাতেও আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে বিরাট পুরস্কার ও মর্যাদা পাওয়া যাবে। সর্বক্ষেত্রে নবীর অনুসরণ যত বেশি হবে মর্যাদা তত বেশি বাড়বে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মু’মিনের আমলের পাল্লায় কিয়ামতের দিন সবচেয়ে ভারী জিনিস হবে তার সচ্চরিত্র’’। (তিরমিযী হা/২০০২)

পরিপূর্ণভাবে সচ্চরিত্রের অধিকারী হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!

৩৪
সচ্চরিত্রের বিভিন্ন দিকসমূহ
(১) ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাবসমূহ নিয়মানুযায়ী পালন করা।

(২) পিতা-মাতার হক আদায় করা।

(৩) আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা।

(৪) গরীব, দুঃখী, এতীম, মিসকীন ও অসহায়দের সাহায্য করা।

(৫) প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা।

(৬) বড়দের সম্মান করা এবং ছোটদের স্নেহ করা।

(৭) শির্ক, কুফ্র, গীবত ও বেদআত থেকে বেঁচে থাকা।

(৮) প্রত্যেক কাজে সুন্নাতের অনুসরণ করা।

(৯) মিথ্যা, পরনিন্দা ও চোগলখোরী না করা।

(১০) অন্যের হক সরিষা পরিমাণও নষ্ট না করা।

(১১) সত্যের উপর অটল থাকা।

(১২) হারাম বর্জন করা, হালালের উপর অটল থাকা।

(১৩) বিন্দু পরিমাণও অহংকার না করা।

(১৪) ওজনে বেশি না নেয়া এবং কম না দেয়া।

(১৫) আমানতের খেয়ানত না করা।

(১৬) জীব-জন্তুর প্রতি দয়া করা।

(১৭) সাধ্যমত দান-খয়রাত করা।

(১৮) সাদাকায়ে জারিয়ার প্রতি গুরুত্ব দেয়া।

(১৯) ওয়াদা পালন করা।

(২০) সঠিকভাবে লেনদেন করা।

(২১) দ্বীনি ইল্ম অর্জন করে তদনুযায়ী আমল করা।

(২২) সংসারে দ্বীনি পরিবেশ কায়েম রাখা।

(২৩) নারীদের পর্দা করা এবং স্বামীর হুকুম পালন করা।

(২৪) স্বামীর খেদমত করা এবং সন্তানের যত্ন নেয়া।

(২৫) আচরণে বিনয়ী হওয়া।

(২৬) পরোপকারে সচেষ্ট হওয়া।

(২৭) চাকুরী, ব্যবসা ও কর্মক্ষেত্রে দ্বীনি পরিবেশ বজায় রাখা।

(২৮) অধিনস্তদের প্রতি দয়াপরবশ হওয়া।

(২৯) সুখে-দুঃখে সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করা।

(৩০) কৃপণতা না করা।

(৩১) দু’মুখো নীতি বর্জন করা।

(৩২) অন্যের দোষত্রুটি প্রকাশ না করা।

(৩৩) অপর ভাই-বোনের ইজ্জত নষ্ট না করা।

৩৫
উত্তম চরিত্রের আরো কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করা হল :
মানুষের সাথে উত্তম ব্যবহার করা

‘‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়,

নহে আশরাফ আছে যার বংশ পরিচয়’’।

ব্যবহার মানবজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। সর্বোত্তম ব্যবহার, বিনয় প্রদর্শন, সহযোগিতামূলক আচরণ, সুসম্পর্ক ও সৌজন্য বজায় রাখা ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সে-ই পূর্ণ মুসলমান যার আচরণ সর্বোত্তম। মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে হবে। বিপদাপদে আশপাশের সবার খোঁজখবর নিতে হবে। বাড়িতে এলে সম্মানের সঙ্গে তাদের বসতে দিতে হবে এবং সুযোগমত উপযুক্ত আতিথেয়তাও করতে হবে। মানুষের মধ্যে তারাই রাসূলের সবচেয়ে প্রিয় ও পরকালে ঘনিষ্ঠতম যারা শিষ্টাচার পরায়ণ আর তারা সবচেয়ে বড় শত্রু যারা বদমেজাজি। উত্তম গুণাবলীতে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা সদা অব্যাহত রাখতে হবে। জনসাধারণের সঙ্গে এমন আচরণ করা যাবে না যার ফলে ইসলামী আদর্শের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং বিবাদে জড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। অবাধ্যতা পরিহার করতে হবে, গুজব ছড়ানো যাবে না ও অমার্জিত ভাষায় কথা বলা যাবে না। হিংসা, ঘৃণা পোষণ, অশুভ কামনা, নিন্দা করা, কপটতা ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে স্বভাবে উত্তম।’’ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বভাবে অশালীন ছিলেন না এবং তিনি অশালীন উক্তিও করতেন না। (বুখারী হা/৩৩৬৬)

সালাম দেয়া

সালাম অর্থ শান্তি। কাউকে সালাম দেয়া মানে হচ্ছে তার জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা। সালামের ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা একে অপরের সাথে সাক্ষাত হলেই সালাম বিনিময় করব। পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেব। যে আগে সালাম দেয় সে-ই উত্তম। সুযোগ পেলে মুসাফাহা করতে হবে। অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করে পরিবারের লোকদের খোঁজখবর নেয়া যেতে পারে।

সালাম প্রদানের অপরিসীম গুরুত্ব হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ৫টি হক রয়েছে। তা হল :

১. সাক্ষাত হলে সালাম দেবে।

২. অসুস্থ হলে সেবা করবে।

৩. মৃত্যুবরণ করলে জানাযায় অংশগ্রহণ করবে।

৪. দাওয়াত দিলে কবুল করবে।

৫. হাঁচিদাতার উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে। (বুখারী হা/১১৮৩)

খুশি মনে সালামের জবাব দেয়া সবার কর্তব্য। সালামের উত্তরে শব্দ বাড়িয়ে বলা সুন্নাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

وَاِذَا حُيِّيْتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوْا بِأَحْسَنَ مِنْهَا اَوْ رُدُّوْهَا اِنَّ اللهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا

‘‘কেউ যখন তোমাকে সৌজন্যমূলক সম্ভাষণ (সালাম) জানাবে, প্রতি উত্তরে তুমি তাকে তার চেয়ে উত্তম সম্ভাষণ জানাও, কিংবা অন্তত ততটুকুই জানাও, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।’’ (সূরা নিসা- ৮৬)

সৃষ্টির সেবা করা

ইসলাম একটি সেবার ধর্ম। সেজন্য সেবা দানের ব্যাপারে আজকের মুসলমানদের মধ্যে স্পৃহা সৃষ্টি করতে হবে। সর্বোত্তম মানবসেবা চালিয়ে যাওয়া আমাদের একটি দায়িত্ব। আমাদেরকে প্রতিযোগিতামূলকভাবে, যোগ্যতার মাধ্যমে, দ্রুততা ও দক্ষতার সঙ্গে জীব-জগতের সেবা প্রদান করা উচিত। কেউ যদি তার ভাইয়ের অভাব মোচনের চেষ্টা করে সফল না হয় তবুও আল্লাহ তাকে সওয়াব দেবেন। পথের কাঁটা সরিয়ে দেয়াও ঈমানের অংশ। আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি যে দয়াশীল হয়, আল্লাহ তার প্রতি দয়ার হাত বাড়ান। মানুষের সেবা করলে আল্লাহরই সেবা করা হয়।

‘‘পরের জন্য করলে কিছু নিজের জন্য করা হয়

আল্লাহ তা‘আলার কাছে পাওয়া যায় তার বিনিময়’’।

পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা

সন্তানের উপর পিতা-মাতার প্রতি পালনীয় অনেক দায়িত্ব রয়েছে- যা পালন করা প্রতিটি সন্তানের উপর অত্যাবশ্যক। পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়া হারাম। মহান আল্লাহ তাঁর হুকুম পালনের পরই পিতা-মাতার স্থান নির্ধারণ করেছেন। সর্বদা পিতা-মাতার সাথে ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে নম্রভাবে কথা বলা, তাদের সাথে আদব রক্ষা করা প্রতিটি সন্তানের একান্ত কর্তব্য। ইসলাম বিরোধী না হলে তাদের যেকোনো নির্দের্র্র্র্শ পালন করা সন্তানের দায়িত্ব। তাদের ভরণপোষনের ব্যবস্থা করা, খেদমত করা, ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করা, তাদের বৈধ অসিয়ত পালন করা এমনকি তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সাথেও সদ্ব্যবহার করা প্রতিটি সন্তানের অবশ্য কর্তব্য। সবসময় তাদের নেকহায়াত, মাগফিরাত ও কষ্ট লাঘবের জন্য দু‘আ করা জরুরী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

وَقَضٰى رَبُّكَ اَ لَّا تَعْبُدُوْا اِلَّا اِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا اِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَا اَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَا اُفٍّ وَّلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيْمًا- وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ - وَقُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا

‘‘তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদাত করবে এবং তোমাদের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। যদি তাদের মধ্যে একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তুমি তাদের ক্ষেত্রে ‘উহ্’ শব্দটি পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; বরং তাদের সাথে নম্রভাবে সম্মানসূচক কথা বল। মমতাবশে তাদের প্রতি বিনয়ী হও। আর এরূপ দু‘আ করতে থাক-

رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا

(রাবিবর হামহুমা কামা রাববায়ানী সগীরা)।

‘‘হে আমার রব! আমার পিতা-মাতা উভয়ের প্রতি দয়া করুন, যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালনপালন করেছেন।’’ (সূরা বানী ইসরাঈল- ২৩, ২৪)

মেহমানের সম্মান করা

হাসিমুখে ও আন্তরিকতার সঙ্গে সবাইকে গ্রহণ করা আমাদের কর্তব্য। যে হৃদয়ে মানুষের জন্য ভালোবাসা ও সহানুভূতি নেই সে হৃদয়ের কোন মূল্য নেই। মানুষকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তাদের সঙ্গে সবসময় হাসিমুখে কথা বলতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলতেন। সুতরাং বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি দ্বারা আগতকে অভ্যর্থনা জানাতে হবে। একজন হাস্যোজ্জ্বল মানুষের সঙ্গে যে কেউ কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا اَوْ لِيَصْمُتْ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَلَا يُؤْذِ جَارَهٗ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهٗ ‏‏ .‏

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে, সে অবশ্যই ভালো কথা বলবে অথবা চুপ থাকবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে, সে অবশ্যই তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেবে না। (তিনি আরো বলেন,) যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালের উপর ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই তার মেহমানকে সম্মান করে।’’ (বুখারী হা/৬০১৮)

কাউকে দাওয়াত দেয়া হলে সে যেন তা গ্রহণ করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমন্ত্রণ পেয়ে দাওয়াতে যায়নি সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করেছে।’’ (আবূ দাউদ হা/৩৭৪৪)

এসব হাদীস থেকে জানা গেল যে, কোনো ওযর ছাড়া দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করা ঠিক নয়, আবার বিনা দাওয়াতে খেতে যাওয়াও ঠিক নয়। আর মেহমানের সমাদর করা মু’মিনের দায়িত্ব।

সুন্দরভাবে কথা বলা

আদর্শ ছাত্র-ছাত্রী মাত্রই শিক্ষক, অভিভাবকসহ সকলের সাথে সুন্দরভাবে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলবে। তারা সবসময় অসুন্দর বা মন্দ কথা পরিহার করে চলবে। শিক্ষকদের সমালোচনা, মানুষকে ভৎর্সনা এবং আত্মীয়-স্বজনের প্রতি বিদ্রূপাত্মক আচরণ তারা করবে না। পৃথিবীতে যত আদর্শ প্রচারিত হয়েছে তা হয়েছে সুন্দর কথা দিয়েই। অসুন্দর কথা ও কুবচন দিয়ে কোনো আদর্শ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সুন্দর কথা দিয়ে সহজেই মানুষের মন জয় করা যায়। শ্রেষ্ঠ মনীষীরা সুভাষী ছিলেন। সুন্দর কথার হাত-পা আছে, জীবন আছে। সুন্দর কথায় রোগজীবাণু ধ্বংসের ঔষধ আছে, সুন্দর কথায় শর্করার শক্তি আছে, ভিটামিনের সঞ্জীবনী আছে, আমিষের পুষ্টিগুণ আছে। একটি সুন্দর কথা একটি ভালো গাছের মত- যার শিকড় মাটিতে বদ্ধমূল আর তার শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত, যে গাছ অফুরন্ত ফল বিলিয়ে দেয়। শুদ্ধভাবে গুছিয়ে সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে হবে। মানুষের সঙ্গে বাক্যালাপ করতে হবে তাদের বোধশক্তি অনুসারে। কথা হবে মাধুর্যপূর্ণ, সংক্ষিপ্ত ও যথাযথ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا

‘‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বল।’’ (সূরা আহযাব-৭০)

‘‘তাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়ো না। তাদেরকে উপদেশ দাও এবং তাদের সাথে হৃদয়স্পর্শী কথা বল।’’ (সূরা নিসা- ৬৩)

শিষ্টতার সাথে চলাফেরা করা

আদর্শ ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গমন, শিক্ষকদের বাসায় যাওয়া-আসা, বাসায় চলাফেরাসহ সর্বত্র অত্যন্ত শালীন ও নমনীয়তার সাথে হাঁটাচলা করবে। তারা ধপাস-ধপাস করে বা সজোরে মাটির উপর বা সিঁড়িতে চলাফেরা করে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا اِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَنْ تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُوْلًا

‘‘মাটির বুকে গর্বের সাথে চলবে না। নিশ্চয় তুমি মাটিকে ফাটিয়ে দিতে পারবে না আর পাহাড়ের সমান উঁচুও হতে পারবে না।’’ (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৭)

وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ - وَاقْصِدْ فِيْ مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ اِنَّ اَنْكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيْرِ

‘‘তুমি মানুষের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখে কথা বলবে না। এবং পৃথিবীতে গর্বের সাথে চলবে না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো বড়াইকারী ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না। তোমার চালচলনে মধ্যম পন্থা গ্রহণ করো এবং আওয়াজকে নীচু করো। নিশ্চয় আওয়াজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ আওয়াজ হচ্ছে গাধার আওয়াজ।’’ (সূরা লুকমান ১৮-১৯)

সময়ের গুরুত্ব দেয়া

বেকন বলেন, ‘‘অল্পবয়সী মনটা হিসাবে বড় হতে পারে যদি সে সময় নষ্ট না করে’’। প্রবাদে আছে- ‘‘Time and tide wait for none’’. ‘‘সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না’’। আমাদের জীবনের মেয়াদ সংক্ষিপ্ত অথচ জীবনে কাজের শেষ নেই। এ ক্ষুদ্র জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে যারা কাজে লাগায় তারাই জীবনে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় অনেকেই সময়ের মূল্য দিতে পারে না। সময়মত অত্যাবশ্যকীয় কাজকর্ম ও দায়িত্ব পালনে যারা সচেতন নয় তাদের ব্যক্তিজীবন যেমন দুর্বল হয়ে পড়ে, তেমনি জাতীয় পর্যায়েও তারা কিছু করতে পারে না। এজন্য দার্শনিকরা মন্তব্য করেন, ‘‘কর্মহীন দীর্ঘ জীবনের চেয়ে কর্মোজ্জ্বল জীবনের কয়েকটা বছরও অনেক মূল্যবান’’।

জীবনটা সময়ের সমষ্টি দিয়েই গড়া। অনেকেই সময়ের সদ্ধ্যবহার করে অল্প বয়েসেই জীবনকে কীর্তিময় করে গেছেন। আজকের পৃথিবীতে যে জাতি উন্নতির চরম অবস্থানে উঠতে পেরেছে, তাদের উন্নতির মূলে রয়েছে সময়নিষ্ঠা। সময় মানব জাতির প্রতি আল্লাহ তা‘আলার এক বড় নিয়ামত। কাজেই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে অবশ্যই সময়ের মূল্য দিতে হবে।

আত্মবিশ্বাসী হওয়া

কোনো কাজকে ভয় করলে সে কাজে সফল হওয়া যায় না। লেখাপড়াকে ভয় করলে লেখাপড়ায় ভালো করা যায় না। হিলারী হিমালয়কে ভয় পাননি, তাই তিনি এভারেষ্ট জয় করতে পেরেছিলেন। আত্মবিশ্বাসের বলে মানুষ অসম্ভবকে সম্ভভ^ব করেছে। কোনো কোনো বিষয় বুঝতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তোমার সহপাঠীরা যা পারে তোমার তা না পারার কী কারণ থাকতে পারে। ঠিক নিয়মে লেখাপড়া করলে নিশ্চয়ই তুমিও পারবে।

অধ্যবসায়ী হওয়া

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সময়ের মূল্যের সাথে নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, শ্রমের মর্যাদা প্রভৃতি একে অপরের সম্পূরক। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি প্রাপ্তির আশা করা যায় না। সর্বপ্রকার সুখ ও সমৃদ্ধির মূলে রয়েছে পরিশ্রম। প্রত্যেক কাজ সময়ের সাথে মিল রেখে নিয়মানুযায়ী করতে পারলে বারবার চেষ্টা করার অভ্যাস গড়ে ওঠে। আর বারবার চেষ্টার নামই অধ্যবসায়। বারবার চেষ্টা করে মানুষ নিজের ভাগ্য গঠন করতে পারে।

ধৈর্যশীল হওয়া

দুনিয়া ফুলশয্যা নয়, এখানে বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হওয়া স্বাভাবিক। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

اَلدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَ جَنَّةُ الْكَافِرِ

‘‘দুনিয়াটা মু’মিনের জন্য জেলখানা আর কাফিরের জন্য জান্নাত’’। (মুসলিম হা/৭৬০৬)

যেকোনো মহান কাজে সফল হতে হলে সমস্যার ভিতর দিয়েই অগ্রসর হতে হয়। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে-

‘‘The way of truth is full of thorns’’.

অর্থাৎ ‘‘সত্যের পথ কাঁটায় ভরা’’।

গোলাপ একটি মূল্যবান ফুল কিন্তু একে কুড়াতে হলে কাঁটার আঘাত সহ্য করতে হয়। যারা এ কষ্ট সহ্য করতে পারে না তারা গোলাপফুল তুলতে পারে না। এ জন্যই বলা হয়-

‘‘কাঁটা হেরী ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে, দ্র

দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কী মহীতে’’।

তাই সকল বাধার প্রাচীর ভেঙ্গে ধৈর্যের সাথে সামনে অগ্রসর হতে হবে তাহলেই জীবনে সফলতা আসবে। ইনশা-আল্লাহ!

রাগ দমন করা

অযথা রাগ করা যাবে না। কথায় আছে, ‘‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’’। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি রাগ করো না। লোকটি কয়েকবার এ আরজ করলে নবী প্রত্যেকবারই বললেন, তুমি রাগ করো না। (বুখারী হা/৬১১৬)

মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করা

‘‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো’’।

জীবনে জন্মগ্রহণ যেমন সত্য তেমনি মৃত্যুবরণও সত্য। যেহেতু জীবনের শেষ আছে এবং তা চরম সত্য সেহেতু প্রত্যেকের জীবনের একটা লক্ষ্য থাকা উচিত। কারণ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করলাম আর চলে গেলাম, দ্বীন ও মানবতার কল্যাণে কিছু করতে পারলাম না, তাহলে জীবনের সার্থকতা থাকল না। মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, জীবনে যা কিছু প্রয়োজন তাও দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান স্বরূপ আল-কুরআনুল কারীম দিয়েছেন। এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া স্বরূপ লেখাপড়া ও অন্যান্য কাজকর্মের্র পাশাপাশি আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও মানবতার কল্যাণের লক্ষ্যে আমাদের কাজ করা কর্তব্য।

‘‘এমন জীবন করিবে গঠন মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন।

এমন জীবন করো না গঠন মরণে কাঁদিবে তুমি হাসিবে ভূবন’’।

সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করা

অনেক মানুষ ভুলপথে জীবন পরিচালনা করে। তাদেরকে সঠিক পথে আহবান করতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন-

وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ اُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ اِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاُوْلٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ

‘‘তোমাদের মাঝে এমন দল থাকা আবশ্যক যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বারণ করবে। যারা এ কাজ করবে তারাই সাফল্যমন্ডিত হবে।’’ (সূরা আলে ইমরান- ১০৪)

اُدْعُ إِلٰى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ

‘‘তুমি হেকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে তোমার রবের পথে আহবান করো এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক করো।’’ (সূরা নাহল- ১২৫)

وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَا اِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَّقَالَ اِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ

‘‘ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয় এবং নিজেও নেক আমল করে। আর সে বলে, আমি মুসলমানদের মধ্যে একজন।’’ (সূরা হামীম সিজদা- ৩৩)

সহীহ বুখারীতে এসেছে (হা: নং ৩৪৬১), নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

بَلِّغُوْا عَنِّىْ وَلَوْ اٰيَةً

‘‘আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও তা অন্যের নিকট পৌঁছে দাও।’’

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোনো অন্যায় কাজ হতে দেখে, তখন সে যেন স্বহস্তে তা পরিবর্তন করে দেয়। যদি সে এতে সক্ষম না হয়, তবে মুখ দ্বারা যেন তার প্রতিবাদ করে। আর যদি এটাও সে না পারে, তবে যেন অন্তর দিয়ে উহাকে ঘৃণা করে, এটা হলো ঈমানে দুর্বলতম স্তর।’’ (মুসলিম হা/১৮৬, মিশকাত হা/৫১৩৭)

নবী আরো বলেছেন, ‘‘সেই সত্তার কসম- যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ দেবে এবং খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করবে। নতুবা অনতিবিলম্বেই আল্লাহ তা‘আলা নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের উপর আযাব প্রেরণ করবেন। অতঃপর তোমরা তার নিকট দু‘আ করবে; কিমুত তোমাদের দু‘আ কবুল করা হবে না।’’ (তিরমিযী হা/২১৬৯, মিশকাত হা/৫১৪০)

৩৬
মু’মিন ব্যক্তির বিশেষ বৈশিষ্ট্য
একজন মু’মিন ব্যক্তি বিশেষভাবে যারা কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান লাভ করতে চায় তাদেরকে বিশেষ কিছু গুণে গুণান্বিত হতে হবে; নতুবা এর প্রভাব (ইল্মের আছর) তাদের অন্তরে পৌঁছবে না। আর তা হল :

 তার লেবাস-পোশাক ও বাহ্যিক আচরণ তার জ্ঞানী হওয়ার স্বাক্ষ্য দেবে।

 সে জ্ঞানে হবে গভীর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, কাজকর্মে হবে বিচক্ষণ।

 তার নীরবতা হবে গবেষণা, দেখা হবে উপদেশ ও শিক্ষা লাভের জন্য।

 তার প্রতিটি কাজ হবে আল্লাহর নির্দেশ ও নবীর সুন্নাত অনুযায়ী।

 জ্ঞানীদের সাথে মিশবে জানার জন্য, নীরব থাকবে নিরাপদ থাকার জন্য।

 অনর্থক কথা ও কাজে জড়িত হবে না, গুরুত্বপূর্ণ কাজে মশগুল থাকবে।

 কথা বলবে কম, কাজ করবে বেশি। কথায় ও কাজে মিল রাখবে।

 পরের দোষ কম দেখবে, নিজের দোষ বেশি দেখবে।

 কাউকে গালি দেবে না, লজ্জা দেবে না এবং বিবাদ সৃষ্টি করবে না।

 তার উপর অন্যায় করা হলেও সে ইনসাফ (ন্যায়বিচার) করবে।

 কেউ ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করে দেবে।

 তার দিল হবে নরম, ঈমান হবে মযবুত।

 ভালো কাজে আনন্দ পাবে, গুনাহ করলে ক্ষমা চাইবে।

 নেক কাজে আগে থাকবে, পাপ থেকে দূরে থাকবে।

 অভাব ও বিপদে পড়লেও শুকরিয়া আদায় করবে এবং ধৈর্যধারণ করবে।

 শরীয়তের হুকুমের উপর অটল থাকবে, অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করবে।

আল্লাহর নবীর সাহাবীরা এমনই ছিলেন। পূর্ববর্তী নেককার মুসলমানরাও এরকম ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তারা আল্লাহর সাথে মিলে গেছেন; কিন্তু এখন মানুষ এসব পরিবর্তন করে দিয়েছে। তাই আল্লাহ তা‘আলাও তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়েছেন।

اِنَّ اللهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتّٰى يُغَيِّرُوْا مَا بِأَنْفُسِهِمْ

‘‘আল্লাহ তা‘আলা কোনো জাতির ভাগ্য ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরা তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে।’’ (সূরা রা’দ- ১১)

তাফসীরে মাআরিফুল কুরআনে লেখা আছে- লোকমান যার নাম কুরআনে এসেছে, বাল্যকালে তিনি মেষ চরাতেন। কিন্তু পরে আল্লাহ তা‘আলা তাকে বহু জ্ঞানী ও সম্মানী করে তুলেন। একদিন তিনি এক জনসমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন, এমন সময় একজন লোক বলে উঠল আপনি কি সেই লোক, যে আমার সাথে ছাগল চরাত? তিনি বললেন হ্যাঁ। এরপর লোকটি বলল : তাহলে আপনি এ স্তরে কিভাবে পৌঁছলেন যে, আপনার কথা শোনার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে সমবেত হয়, আল্লাহর গোটা সৃষ্টি আপনাকে সম্মান করে। তখন তিনি বললেন, দু’টি কাজ আমাকে এ স্তরে পৌঁছিয়েছে। একটি হল- সর্বদা সত্য কথা বলা, অপরটি হল- জবানকে হেফাযত করা।

এরপর তিনি বললেন, এমন কিছু কাজ আছে যেগুলো পালন করলে তুমিও এ স্তরে পৌঁছতে পারবে। কাজগুলো হল :

হালাল রুজিতে সন্তুষ্ট থাকা।

চোখ দু’টিকে হারাম জিনিস হতে ফিরায়ে রাখা।

লজ্জাস্থানের হেফাযত করা।

সত্য কথায় অটল থাকা।

অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা।

ওয়াদা পালন করা।

মেহমান ও প্রতিবেশীর সম্মান করা।

হাদীসে বর্ণিত আছে, ‘‘দু’টি কাজ করা সহজ কিন্তু মু’মিনের নেক আমলের পাল্লায় খুবই ভারী। একটি হল- বিনা প্রয়োজনে কথা না বলা, অপরটি হল- উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া।’’ (শু‘আবুল ঈমান হা/৮০০৬)

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘‘প্রকৃত মুসলিম ঐ ব্যক্তি যার জিহবা ও হাতের অনিষ্ট হতে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।’’ (মুসলিম হা/১৭১)

৩৭
চরিত্র গঠনে নামাযের ভূমিকা
উত্তম চারিত্রিক গুণাবলীর অধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে নামাযের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এজন্য লোকমান হাকিম তাঁর ছেলেকে নামাযের অসিয়ত করে বলেছিলেন : ‘‘হে আমার ছেলে! নামায কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করো এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয়ই এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ।’’ (সূরা লোকমান- ১৭)

নিয়মিত সুন্দরভাবে নামায আদায় করলে শরীর ও মন পবিত্র থাকে, ভালো কাজের দিকে মন আকৃষ্ট হয় এবং খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। ‘‘নামায মানুষকে অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে দূরে রাখে।’’ (সূরা আনকাবূত- ৪৫)

তাই ছোটকাল থেকেই নামাযের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের সন্তানরা যখন ৭ বৎসরে পৌঁছবে তখন তাদেরকে নামাযের জন্য আদেশ করবে। আর যখন তাদের বয়স ১০ বৎসর হবে তখন নামায না পড়লে তাদেরকে শাস্তি দেবে। আর এ বয়সেই তাদের শোয়ার বিছানা পৃথক করে দেবে।’’ (আবূ দাউদ হা/৪৯৪)

কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় যে, সাধারণ লোক তো বটেই, অনেক ছাত্র-ছাত্রীও নামায পড়ে না। এ বদ্অভ্যাস ছাড়তে হবে। কারণ নামায না পড়লে ফিরাউন, হামান ও উবাই ইবনে খাল্ফ এসব বড় বড় কাফেরদের সাথে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। (মুসনাদে আহমাদ হা/২২৭৫৬ , দারেমী হা/২৭৬৩)

নামাযের কিছু মৌলিক বিষয়

নামায সম্পর্কে অধিক জানতে আমার লেখা ‘মন দিয়ে নামায পড়ার উপায়’ বইটি পড়তে পারেন। এখানে নামাযের মৌলিক কিছু বিষয় তুলে ধরছি।

নামাযের ফরযসমূহ

নামাযের শুরুতে ৭টি ফরয : (১) শরীর পাক হওয়া (২) কাপড় পাক হওয়া (৩) নামাযের জায়গা পাক হওয়া (৪) সতর ঢাকা (৫) কেবলামুখী হওয়া (৬) নিয়ত করা (৭) নির্দিষ্ট সময়ে নামায পড়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘নির্ধারিত সময়ে নামায পড়া ইমানদারগণের উপর অবশ্য কর্তব্য।’’

(সূরা নিসা- ১০৩)

নামাযের ভিতরে ৬টি ফরয : (১) তাকবীরে তাহরীমা বা নামায শুরুর তাকবীর, (২) দাঁড়িয়ে নামায পড়া, (৩) কিরাআত (কুরআনের সূরা বা কিছু আয়াত) পড়া, (৪) রুকু করা, (৫) সিজদা করা, (৬) শেষ বৈঠক করা।

নামাযের ওয়াজিবসমূহ

(১) প্রতি রাকআতে সূরা ফাতিহা পড়া।

(২) ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকআতে এবং অন্যান্য নামাযের প্রতি রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়া।

(৩) জোরের স্থানে জোরে এবং আস্তের জায়গায় আস্তে কিরাআত পড়া।

(৪) রুকু ও সিজদার মধ্যে একটু দেরি করা।

(৫) রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।

(৬) দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা।

(৭) তিন অথবা চার রাকআত বিশিষ্ট নামাযে দুই রাকআতের পর বসা।

(৮) উভয় বৈঠকে তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়া।

(৯) নামাযের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।

(১০) মুক্তাদির জন্য ইমামের অনুসরণ করা।

(১১) ঈদের নামাযে অতিরিক্ত তাকবীর বলা।

(১২) বিতরের নামাযে দু‘আয়ে কুনুত পড়া।

(১৩) ধীরস্থিরভাবে নামায পড়া।

(১৪) সালাম ফিরায়ে নামায শেষ করা।

নামাযের কোনো ওয়াজিব বাদ পড়লে অথবা কোনো কাজ বেশি করলে ভুলের জন্য সাহু সিজদা দিলে নামায হয়ে যাবে; তবে কোনো ফরয বাদ পড়লে পুনরায় নাময পড়তে হবে।

দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামায পড়া ফরয

(১) ফজর, (২) জোহর, (৩) আসর, (৪) মাগরিব, (৫) এশা।

এই পাঁচ ওয়াক্তে সর্বমোট ১৭ রাকআত নামায ফরয। ফজরের ২ রাকআত, জোহরের ৪ রাকআত, আসরের ৪ রাকআত, মাগরিবের ৩ রাকআত এবং এশার ৪ রাকআত। শুক্রবারে জোহরের চার রাকআত ফরযের পরিবর্তে জুমু‘আর দু’টি খুৎবা শুনতে হয় এবং দু’রাকআত ফরয নামায আদায় করতে হয়।

সুন্নাতে মুয়াক্কাদা

ফরয নামাযের আগে ও পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা ১২ রাকআত সুন্নাত পড়তেন। এ নামাযকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলে। এ ১২ রাকআত নামায হচ্ছে : ফজরের ফরয নামাযের পূর্বে ২ রাকআত, জোহরের পূর্বে ৪ রাকআত ও পরে ২ রাকআত, মাগরিবের পরে ২ রাকআত এবং এশার পরে ২ রাকআত।

নামাযের সময়সূচী

আমরা ঘড়ির কাটা দেখে নামায পড়ি, তবে আল্লাহ তা‘আলা নামাযের সময়কে সূর্যের সাথে নির্ধারণ করেছেন। এজন্য নামাযের সময় পরিবর্তনশীল। কুরআন ও হাদীসে নামাযের সময়ের যে মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়েছে তা হল :

সুবহে সাদিক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত ফজরের সময়। সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ার পর হতে শুরু করে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জোহরের সময়। জোহরের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আসরের সময়, তবে সূর্যের রং লাল হওয়ার আগে আসর পড়ে নেয়া জরুরী। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে শুরু করে পশ্চিম আকাশের লালবর্ণ শেষ হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের সময়, তবে তাড়াতাড়ি মাগরিব পড়ে নেয়া উত্তম। সন্ধ্যার পর আকাশ কালো বর্ণ ধারণ করা হতে সুবহে সাদিক পর্যন্তএশার ওয়াক্ত, তবে রাত্রের প্রথম প্রহরে পড়া উত্তম।

নামাযের সময়সূচীর একটি স্থায়ী ক্যালেন্ডার সকলের সংগ্রহে থাকা উচিত।

৩৮
নামায পড়ার সংক্ষিপ্ত নিয়ম
নামাযের নিয়তে পবিত্র স্থানে দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে কানের লতি বা কাঁধ বরাবর হাত উঠায়ে আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধবে। অতঃপর ছানা পড়ে اَعُوْذُبِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْم (আ‘উযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইতা-নির রাজীম) এবং بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ (বিসমিল্লা-হির রাহ্মা-নির রাহীম পড়বে। অতঃপর সূরা ফাতিহা পড়ে অন্য একটি সূরা বা কিছু আয়াত পড়বে। কিরাআত শেষ করার পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে রুকুতে যাবে। রুকুর তাসবীহ পড়ে سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه (সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ) বলে রুকু থেকে সোজা হয়ে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে (রাববানা ওয়ালাকাল হামদু হামদান কাছীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহ্) বলার পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সিজদায় যাবে। সিজদার তাসবীহ পড়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে বসবে, স্থির হয়ে বসে দুই সিজদার মধ্যখানের দু‘আ পড়ে দ্বিতীয় সিজদা করে দাঁড়িয়ে যাবে। এরপর পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় রাকআত আদায় করার পর বসে তাশাহহুদ পড়বে, তারপর দরূদে ইব্রাহীম ও দু‘আয়ে মাছুরা পড়ে সালাম ফিরায়ে নামায শেষ করবে।

তিন বা চার রাকআত বিশিষ্ট নামাযে প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দাঁড়িয়ে বাকী নামায নিয়মানুসারে আদায় করবে।

মসজিদের আদব

জামাআতে নামায পড়ার জন্য মসজিদে যাতায়াত করা মু’মিনের বিশেষ গুণ। যাদের অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা হাশরের দিন তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। (বুখারী হা/৬০৬)

মসজিদের কিছু আদব রয়েছে, তা হল :

 মসজিদে প্রবেশ করার এবং বের হওয়ার দু‘আ পাঠ করা।

 মসজিদে প্রবেশ করার সময় আগে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা।

 মসজিদে প্রবেশ করে বসার আগে দু’রাকআত ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ -এর নামায পড়া।

 মসজিদের ভিতর আমলে মশগুল থাকা।

 মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় আগে বাম পা দিয়ে বের হওয়া এবং ডান পায়ে আগে জুতা পরা।

৩৯
কতিপয় জরুরী দু‘আ
১. ঘুম থেকে জাগার পর দু‘আ :

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ اَحْيَانَا بَعْدَ مَا اَمَاتَنَا واِلَيْهِ النُّشُوْرُ

আল্হাম্দুলিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়া-না বা‘দা মা আমা-তানা ওয়াইলাইহিন নুশূর

অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি আমাদেরকে মরণের পর জীবিত করেছেন এবং তাঁর দিকেই আবার প্রত্যাবর্তর্ন করতে হবে। (বুখারী হা/৬৩১২)

২. প্রস্রাব-পায়খানায় প্রবেশের দু‘আ :

اَللّٰهُمَّ اِنِّى اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ

আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়ালখাবা-ইস।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট অপবিত্র মহিলা ও পুরুষ জ্বিন হতে আশ্রয় চাচ্ছি। (বুখারী, হা/১৪২, মুসলিম, হা/৮৫৭)

৩. প্রস্রাব-পায়খানা থেকে বের হওয়ার পর দু‘আ :

غُفْرَانَكَ (গুফরা-নাকা); অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি ক্ষমা চাচ্ছি। (আবু দাঊদ, হা/৩০)

৪. বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দু‘আ :

بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلاَّ بِاللهِ

বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লাহ লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ

অর্থ : আল্লাহর নামে বের হলাম, তাঁর উপর ভরসা করলাম। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপায় ও ক্ষমতা নেই। (আবু দাঊদ, হা/৫০৯৭; তিরমিযী, হা/৩৪২৬)

৫. ওযুর শুরুতে পড়ার দু‘আ :

بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ)। অর্থাৎ আল্লাহর নামে শুরু করছি। (তিরমিযী, হা/২৫)

৬. ওযুর শেষে পড়ার দু‘আ :

اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ

আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়ারাসূলুহ্।

অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো মা‘বুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। (মুসলিম হা/৫৭৬)

৭. মসজিদে প্রবেশের সময় দু‘আ :

اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِىْ اَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

আল্লা-হুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রাহ্মাতিক।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমার জন্য তোমার রহমতের দরজা খোলে দাও। (মুসলিম, হা/১৬৮৫)

৮. মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় দু‘আ :

اَللّٰهُمَّ اِنِّى اَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ

আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন ফাযলিক।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। (মুসলিম, হা/১৬৮৫)

৯. খাওয়ার শুরুতে দু‘আ :

بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ)। অর্থাৎ আল্লাহর নামে শুরু। (বুখারী, হা/৫৩৭৬)

১০. খাওয়ার শুরুতে বিসমিলস্নাহ ভুলে গেলে বলতে হয় :

بِسْمِ اللهِ اَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ

বিসমিল্লাহি আউওয়ালাহু ওয়া আ-খিরাহ।

অর্থ : খাওয়ার শুরু ও শেষ আল্লাহর নামে। (আবু দাঊদ, হা/৩৭৬৯)

আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির উপর সন্তুষ্ট হন, যে খাওয়া এবং পান করার মাঝে মাঝে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলে। (মুসলিম)

১১. খাওয়ার পর দু‘আ :

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ اَطْعَمَنِيْ هٰذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلَا قُوَّةٍ

আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি আত্‘আমানী হা-যা ওয়া রাযাকানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিননী ওয়ালা কূওয়াহ। (আবু দাঊদ, হা/৪০২৫)

অর্থ : সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে এ পানাহার করালেন এবং আমার সামর্থ্য ও উপায় না থাকা সত্ত্বেও তা আমাকে দান করেছেন।

১২. কেউ দাওয়াত খাওয়ালে তার জন্য দু‘আ :

اَللّٰهُمَّ اَطْعِمْ مَنْ اَطْعَمَنِىْ وَاسْقِ مَنْ سَقَانِىْ

আল্লা-হুম্মা আত্‘ইম মান আত্‘আমানী ওয়াস্ক্বি মান সাক্বা-নী।

অর্থ : হে আল্লাহ! যে আমাকে আহার করালো তুমি তাকে আহার করাও, যে আমাকে পান করালো তুমি তাকে পান করাও। (মুসলিম, হা/৫৪৮২)

১৩. সালাম দেয়ার সময় বলতে হয় :

اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَ رَحْمَةُ اللهِ

আস্সালা-মু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হ।

অর্থ : আপনার উপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩১৬)

১৪. সালামের উত্তর দেয়ার সময় বলতে হয় :

وَ عَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَ رَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهٗ

ওয়া ‘আলাইকুমুস্ সালা-মু ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহ।

অর্থ : আর আপনার উপরও শান্তি ও আল্লাহর রহমত এবং বরকত বর্ষিত হোক।

(মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩১৬)

১৫. অন্যের মাধ্যমে কেউ সালাম পাঠালে উত্তরে বলতে হয় :

عَلَيْكَ وَ عَلَيْهِ السَّلَامُ

‘আলাইকা ওয়া ‘আলাইহিস্ সালা-ম

অর্থ : আপনার উপর এবং তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। (আবু দাঊদ, হা/৫২৩৩)

১৬. মুসাফাহার দু‘আ :

نَحْمَدُ اللهَ وَ نَسْتَغْفِرُهٗ

নাহমাদুল্লা-হা ওয়া নাস্তাগ্ফিরুহ।

অর্থ : আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।

নবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন কোন দু’জন মুসলমান মিলিত হয় অতঃপর মুসাফাহা করে এবং আল্লাহর প্রশংসা ও ক্ষমা-প্রার্থনা করে তখন তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (আবূ দাউদ হা/৫২১২)

১৭. হাঁচি দাতা ও শ্রোতার জন্য পঠিতব্য দু‘আ :

হাঁচি দাতা ব্যক্তি বলবে, اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদুলিল্লা-হ) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যারা এটা শুনবে তারা বলবে - يَرْحَمُكَ اللهُ (ইয়ারহামুকাল্লাহ) আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করুন। অতঃপর হাঁচি দাতা ব্যক্তি পুনরায় বলবে - يَهْدِيْكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ (ইয়াহ্দীকুমুল্লা-হু ওয়া ইউসলিহু বা-লাকুম। অর্থাৎ, আল্লাহ যেন তোমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেন এবং তোমাদের অবস্থা ভালো করে দেন। (বুখারী, হা/৬২২৪; আবু দাঊদ, হা/৫০৩৫)

১৮. আত্মার পবিত্রতা লাভের দু‘আ :

اَللّٰهُمَّ اٰتِ نَفْسِيْ تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا اَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا اَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا

আল্লা-হুম্মা আ-তি নাফ্সী তাক্বওয়া-হা, ওয়া যাক্কিহা- আন্তা খাইরু মান যাককা-হা আন্তা ওয়ালিয়্যুহা- ওয়ামাও লা-হা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমার আত্মাকে সংযম দান কর এবং তাকে পবিত্র কর। আত্মা পবিত্রকারীদের মধ্যে তুমিই উত্তম, তুমিই তার মালিক। (মুসলিম, হা/৭০৮১)

১৯. অন্তর স্থির রাখার দু‘আ :

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلٰى دِيْنِكَ

ইয়া- মুক্বাল্লিবাল কুলূব, সাব্বিত ক্বালবী ‘আলা- দীনিক।

অর্থ : হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! তোমার দ্বীনের উপর আমার অন্তরকে প্রতিষ্ঠিত রাখ। (তিরমিযী, হা/২১৪০)

২০. হিদায়াতের উপর টিকে থাকার দু‘আ :

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ

রাববানা- লা- তুযিগ কুলূবানা- বা‘দা ইয্ হাদাইতানা- ওয়াহাব্লানা- মিল্লাদুনকা রাহমাহ্, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহ্হা-ব।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! হিদায়াত দানের পর তুমি আমাদের অন্তরগুলোকে বাঁকা করে দিও না, আমাদেরকে তোমার নিকট হতে রহমত দান কর, অবশ্যই তুমি মহান দাতা। (সূরা আলে ইমরান- ৮)

২১. শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে আশ্রয় চাওয়ার দু‘আ :

رَبِّ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ - وَاَعُوْذُ بِكَ رَبِّ اَنْ يَّحْضُرُوْنِ

রাবিব আ‘ঊযু বিকা মিন হামাযা-তিশ শায়া-তীন, ওয়া আ‘ঊযু বিকা রাবিব আই ইয়াহ্যুরূন।

অর্থ : হে আমার রব! আমি শয়তানদের কুমন্ত্রণা হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তারা আমার কাছে না আসতে পারে। (সূরা মু’মিনূন- ৯৭)

২২. দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের দু‘আ :

رَبَّنَا اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِي الْاٰ خِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ

রাববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা ‘আযা-বান্না-র।

অর্থ : হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়া এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করুন আর আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করুন। (সূরা বাকারা- ২০১)

২৩. মাতা-পিতার জন্য দু‘আ :

رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا

রাবিবর হামহুমা কামা রাববাইয়া-নী সাগীরা।

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমার মাতা-পিতার প্রতি দয়া করুন, যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালনপালন করেছেন। (সূরা বানী ইসরাঈল- ২৪)

২৪. পাপ মোচনের দু‘আ :

رَبَّنَا ظَلَمْنَا اَنْفُسَنَا وَاِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ

রাববানা যালাম্না আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগ্ফির্লানা ওয়া তার্হাম্না লানাকূনান্না মিনাল খা-সিরীন।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা আ‘রাফ- ২৩)

২৫. ঘুমানোর সময় দু‘আ :

اَمُوْتُ وَ اَحْيَا اَللّٰهُمَّ بِاسْمِكَ

আল্লা-হুম্মা বিস্মিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নামে মৃত্যুবরণ করি (ঘুমাই) এবং আপনার নামেই জাগ্রত হই। (বুখারী হাঃ ৫৯৫৫)

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ঘুমানোর জন্য নিজের বিছানায় যেতেন তখন সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব, ও সূরা নাস পাঠ করতেন ও দু’হাত মিলিয়ে তাতে ফুঁ দিতেন এবং মাথা থেকে আরম্ভ করে যতটুকু সম্ভব নিজের শরীরে হাত বুলাতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৫০১৭; আবু দাঊদ, হা/৫০৫৮; মিশকাত- ২১৩২)

সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস :

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْم - قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ - اَللهُ الصَّمَدُ -‐ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ -‐ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ - بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْم - ‐ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ - مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ - وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ - وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِيْ الْعُقَدِ - وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ - ‐ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ -‐ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ - مَلِكِ النَّاسِ - اِلٰهِ النَّاسِ -‐ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ - اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ - مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ

কুরআনের সূরা ও দু‘আসমূহ উচ্চারণ না দেখে মূল আরবি দেখে পড়া শিখতে হবে। কারণ উচ্চারণ দেখে পড়লে পড়া ভুল হয়।

৪০
উপদেশমূলক কয়েকটি কথা
চারটি লক্ষণ ভালো নয় :

(১) চক্ষু শুষ্ক হওয়া, অর্থাৎ আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন না করা।

(২) অন্তর কঠিন হওয়া, অর্থাৎ আখেরাতের ভয়ে নরম না হওয়া।

(৩) আশা-আকাঙ্খা দীর্ঘ হওয়া, অর্থাৎ পরকাল ভুলে যাওয়া।

(৪) দুনিয়ার লোভ বেশি হওয়া, অর্থাৎ ইবাদাত হতে বিমুখ হওয়া।

চারটি কাজ করলে চরিত্র সুন্দর হয় :

(১) নিয়মিত ইবাদাতে লিপ্ত থাকা।

(২) মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়া।

(৩) উত্তম গুণাবলী অর্জনের চেষ্টা করা।

(৪) দুনিয়ার প্রয়োজনকে সীমাবদ্ধ রাখা।

ব্যক্তিত্বের দিক থেকে মানুষ চার ভাগে বিভক্ত :

(১) সংকীর্ণ : তারা পরচর্চা করে সময় কাটায়।

(২) সাধারণ : তারা নিত্যঘটিত ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করে আনন্দ

পায়, নিজেরা কিছু করে না।

(৩) মহৎ : তারা সমাজ গঠনে আত্মনিয়োগ করে।

(৪) শ্রেষ্ঠ : তারা নীরবে কাজ করে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।

জ্ঞানী লোকেরা কথা বলে কম, কাজ করে বেশি। সুতরাং তুমি ধৈর্যের সাথে কাজ করে যাও। মানুষের কল্যাণে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করো। কাউকে কষ্ট দিও না। পাপ থেকে দূরে থাকো। বেশি বেশি নেক আমল করো। তোমার জীবন সফল হবেই, ইনশা-আলস্নাহ।

سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ - وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ

وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন