hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ভালো ছাত্র হওয়ার উপায়

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৩৫
উত্তম চরিত্রের আরো কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করা হল :
মানুষের সাথে উত্তম ব্যবহার করা

‘‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়,

নহে আশরাফ আছে যার বংশ পরিচয়’’।

ব্যবহার মানবজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। সর্বোত্তম ব্যবহার, বিনয় প্রদর্শন, সহযোগিতামূলক আচরণ, সুসম্পর্ক ও সৌজন্য বজায় রাখা ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সে-ই পূর্ণ মুসলমান যার আচরণ সর্বোত্তম। মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে হবে। বিপদাপদে আশপাশের সবার খোঁজখবর নিতে হবে। বাড়িতে এলে সম্মানের সঙ্গে তাদের বসতে দিতে হবে এবং সুযোগমত উপযুক্ত আতিথেয়তাও করতে হবে। মানুষের মধ্যে তারাই রাসূলের সবচেয়ে প্রিয় ও পরকালে ঘনিষ্ঠতম যারা শিষ্টাচার পরায়ণ আর তারা সবচেয়ে বড় শত্রু যারা বদমেজাজি। উত্তম গুণাবলীতে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা সদা অব্যাহত রাখতে হবে। জনসাধারণের সঙ্গে এমন আচরণ করা যাবে না যার ফলে ইসলামী আদর্শের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং বিবাদে জড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। অবাধ্যতা পরিহার করতে হবে, গুজব ছড়ানো যাবে না ও অমার্জিত ভাষায় কথা বলা যাবে না। হিংসা, ঘৃণা পোষণ, অশুভ কামনা, নিন্দা করা, কপটতা ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে স্বভাবে উত্তম।’’ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বভাবে অশালীন ছিলেন না এবং তিনি অশালীন উক্তিও করতেন না। (বুখারী হা/৩৩৬৬)

সালাম দেয়া

সালাম অর্থ শান্তি। কাউকে সালাম দেয়া মানে হচ্ছে তার জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা। সালামের ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা একে অপরের সাথে সাক্ষাত হলেই সালাম বিনিময় করব। পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেব। যে আগে সালাম দেয় সে-ই উত্তম। সুযোগ পেলে মুসাফাহা করতে হবে। অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করে পরিবারের লোকদের খোঁজখবর নেয়া যেতে পারে।

সালাম প্রদানের অপরিসীম গুরুত্ব হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ৫টি হক রয়েছে। তা হল :

১. সাক্ষাত হলে সালাম দেবে।

২. অসুস্থ হলে সেবা করবে।

৩. মৃত্যুবরণ করলে জানাযায় অংশগ্রহণ করবে।

৪. দাওয়াত দিলে কবুল করবে।

৫. হাঁচিদাতার উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে। (বুখারী হা/১১৮৩)

খুশি মনে সালামের জবাব দেয়া সবার কর্তব্য। সালামের উত্তরে শব্দ বাড়িয়ে বলা সুন্নাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

وَاِذَا حُيِّيْتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوْا بِأَحْسَنَ مِنْهَا اَوْ رُدُّوْهَا اِنَّ اللهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا

‘‘কেউ যখন তোমাকে সৌজন্যমূলক সম্ভাষণ (সালাম) জানাবে, প্রতি উত্তরে তুমি তাকে তার চেয়ে উত্তম সম্ভাষণ জানাও, কিংবা অন্তত ততটুকুই জানাও, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।’’ (সূরা নিসা- ৮৬)

সৃষ্টির সেবা করা

ইসলাম একটি সেবার ধর্ম। সেজন্য সেবা দানের ব্যাপারে আজকের মুসলমানদের মধ্যে স্পৃহা সৃষ্টি করতে হবে। সর্বোত্তম মানবসেবা চালিয়ে যাওয়া আমাদের একটি দায়িত্ব। আমাদেরকে প্রতিযোগিতামূলকভাবে, যোগ্যতার মাধ্যমে, দ্রুততা ও দক্ষতার সঙ্গে জীব-জগতের সেবা প্রদান করা উচিত। কেউ যদি তার ভাইয়ের অভাব মোচনের চেষ্টা করে সফল না হয় তবুও আল্লাহ তাকে সওয়াব দেবেন। পথের কাঁটা সরিয়ে দেয়াও ঈমানের অংশ। আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি যে দয়াশীল হয়, আল্লাহ তার প্রতি দয়ার হাত বাড়ান। মানুষের সেবা করলে আল্লাহরই সেবা করা হয়।

‘‘পরের জন্য করলে কিছু নিজের জন্য করা হয়

আল্লাহ তা‘আলার কাছে পাওয়া যায় তার বিনিময়’’।

পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা

সন্তানের উপর পিতা-মাতার প্রতি পালনীয় অনেক দায়িত্ব রয়েছে- যা পালন করা প্রতিটি সন্তানের উপর অত্যাবশ্যক। পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়া হারাম। মহান আল্লাহ তাঁর হুকুম পালনের পরই পিতা-মাতার স্থান নির্ধারণ করেছেন। সর্বদা পিতা-মাতার সাথে ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে নম্রভাবে কথা বলা, তাদের সাথে আদব রক্ষা করা প্রতিটি সন্তানের একান্ত কর্তব্য। ইসলাম বিরোধী না হলে তাদের যেকোনো নির্দের্র্র্র্শ পালন করা সন্তানের দায়িত্ব। তাদের ভরণপোষনের ব্যবস্থা করা, খেদমত করা, ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করা, তাদের বৈধ অসিয়ত পালন করা এমনকি তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সাথেও সদ্ব্যবহার করা প্রতিটি সন্তানের অবশ্য কর্তব্য। সবসময় তাদের নেকহায়াত, মাগফিরাত ও কষ্ট লাঘবের জন্য দু‘আ করা জরুরী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

وَقَضٰى رَبُّكَ اَ لَّا تَعْبُدُوْا اِلَّا اِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا اِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَا اَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَا اُفٍّ وَّلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيْمًا- وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ - وَقُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا

‘‘তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদাত করবে এবং তোমাদের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। যদি তাদের মধ্যে একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তুমি তাদের ক্ষেত্রে ‘উহ্’ শব্দটি পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; বরং তাদের সাথে নম্রভাবে সম্মানসূচক কথা বল। মমতাবশে তাদের প্রতি বিনয়ী হও। আর এরূপ দু‘আ করতে থাক-

رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا

(রাবিবর হামহুমা কামা রাববায়ানী সগীরা)।

‘‘হে আমার রব! আমার পিতা-মাতা উভয়ের প্রতি দয়া করুন, যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালনপালন করেছেন।’’ (সূরা বানী ইসরাঈল- ২৩, ২৪)

মেহমানের সম্মান করা

হাসিমুখে ও আন্তরিকতার সঙ্গে সবাইকে গ্রহণ করা আমাদের কর্তব্য। যে হৃদয়ে মানুষের জন্য ভালোবাসা ও সহানুভূতি নেই সে হৃদয়ের কোন মূল্য নেই। মানুষকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তাদের সঙ্গে সবসময় হাসিমুখে কথা বলতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলতেন। সুতরাং বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি দ্বারা আগতকে অভ্যর্থনা জানাতে হবে। একজন হাস্যোজ্জ্বল মানুষের সঙ্গে যে কেউ কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا اَوْ لِيَصْمُتْ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَلَا يُؤْذِ جَارَهٗ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهٗ ‏‏ .‏

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে, সে অবশ্যই ভালো কথা বলবে অথবা চুপ থাকবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে, সে অবশ্যই তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেবে না। (তিনি আরো বলেন,) যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালের উপর ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই তার মেহমানকে সম্মান করে।’’ (বুখারী হা/৬০১৮)

কাউকে দাওয়াত দেয়া হলে সে যেন তা গ্রহণ করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমন্ত্রণ পেয়ে দাওয়াতে যায়নি সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করেছে।’’ (আবূ দাউদ হা/৩৭৪৪)

এসব হাদীস থেকে জানা গেল যে, কোনো ওযর ছাড়া দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করা ঠিক নয়, আবার বিনা দাওয়াতে খেতে যাওয়াও ঠিক নয়। আর মেহমানের সমাদর করা মু’মিনের দায়িত্ব।

সুন্দরভাবে কথা বলা

আদর্শ ছাত্র-ছাত্রী মাত্রই শিক্ষক, অভিভাবকসহ সকলের সাথে সুন্দরভাবে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলবে। তারা সবসময় অসুন্দর বা মন্দ কথা পরিহার করে চলবে। শিক্ষকদের সমালোচনা, মানুষকে ভৎর্সনা এবং আত্মীয়-স্বজনের প্রতি বিদ্রূপাত্মক আচরণ তারা করবে না। পৃথিবীতে যত আদর্শ প্রচারিত হয়েছে তা হয়েছে সুন্দর কথা দিয়েই। অসুন্দর কথা ও কুবচন দিয়ে কোনো আদর্শ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সুন্দর কথা দিয়ে সহজেই মানুষের মন জয় করা যায়। শ্রেষ্ঠ মনীষীরা সুভাষী ছিলেন। সুন্দর কথার হাত-পা আছে, জীবন আছে। সুন্দর কথায় রোগজীবাণু ধ্বংসের ঔষধ আছে, সুন্দর কথায় শর্করার শক্তি আছে, ভিটামিনের সঞ্জীবনী আছে, আমিষের পুষ্টিগুণ আছে। একটি সুন্দর কথা একটি ভালো গাছের মত- যার শিকড় মাটিতে বদ্ধমূল আর তার শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত, যে গাছ অফুরন্ত ফল বিলিয়ে দেয়। শুদ্ধভাবে গুছিয়ে সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে হবে। মানুষের সঙ্গে বাক্যালাপ করতে হবে তাদের বোধশক্তি অনুসারে। কথা হবে মাধুর্যপূর্ণ, সংক্ষিপ্ত ও যথাযথ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا

‘‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বল।’’ (সূরা আহযাব-৭০)

‘‘তাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়ো না। তাদেরকে উপদেশ দাও এবং তাদের সাথে হৃদয়স্পর্শী কথা বল।’’ (সূরা নিসা- ৬৩)

শিষ্টতার সাথে চলাফেরা করা

আদর্শ ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গমন, শিক্ষকদের বাসায় যাওয়া-আসা, বাসায় চলাফেরাসহ সর্বত্র অত্যন্ত শালীন ও নমনীয়তার সাথে হাঁটাচলা করবে। তারা ধপাস-ধপাস করে বা সজোরে মাটির উপর বা সিঁড়িতে চলাফেরা করে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا اِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَنْ تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُوْلًا

‘‘মাটির বুকে গর্বের সাথে চলবে না। নিশ্চয় তুমি মাটিকে ফাটিয়ে দিতে পারবে না আর পাহাড়ের সমান উঁচুও হতে পারবে না।’’ (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৭)

وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ - وَاقْصِدْ فِيْ مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ اِنَّ اَنْكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيْرِ

‘‘তুমি মানুষের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখে কথা বলবে না। এবং পৃথিবীতে গর্বের সাথে চলবে না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো বড়াইকারী ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না। তোমার চালচলনে মধ্যম পন্থা গ্রহণ করো এবং আওয়াজকে নীচু করো। নিশ্চয় আওয়াজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ আওয়াজ হচ্ছে গাধার আওয়াজ।’’ (সূরা লুকমান ১৮-১৯)

সময়ের গুরুত্ব দেয়া

বেকন বলেন, ‘‘অল্পবয়সী মনটা হিসাবে বড় হতে পারে যদি সে সময় নষ্ট না করে’’। প্রবাদে আছে- ‘‘Time and tide wait for none’’. ‘‘সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না’’। আমাদের জীবনের মেয়াদ সংক্ষিপ্ত অথচ জীবনে কাজের শেষ নেই। এ ক্ষুদ্র জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে যারা কাজে লাগায় তারাই জীবনে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় অনেকেই সময়ের মূল্য দিতে পারে না। সময়মত অত্যাবশ্যকীয় কাজকর্ম ও দায়িত্ব পালনে যারা সচেতন নয় তাদের ব্যক্তিজীবন যেমন দুর্বল হয়ে পড়ে, তেমনি জাতীয় পর্যায়েও তারা কিছু করতে পারে না। এজন্য দার্শনিকরা মন্তব্য করেন, ‘‘কর্মহীন দীর্ঘ জীবনের চেয়ে কর্মোজ্জ্বল জীবনের কয়েকটা বছরও অনেক মূল্যবান’’।

জীবনটা সময়ের সমষ্টি দিয়েই গড়া। অনেকেই সময়ের সদ্ধ্যবহার করে অল্প বয়েসেই জীবনকে কীর্তিময় করে গেছেন। আজকের পৃথিবীতে যে জাতি উন্নতির চরম অবস্থানে উঠতে পেরেছে, তাদের উন্নতির মূলে রয়েছে সময়নিষ্ঠা। সময় মানব জাতির প্রতি আল্লাহ তা‘আলার এক বড় নিয়ামত। কাজেই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে অবশ্যই সময়ের মূল্য দিতে হবে।

আত্মবিশ্বাসী হওয়া

কোনো কাজকে ভয় করলে সে কাজে সফল হওয়া যায় না। লেখাপড়াকে ভয় করলে লেখাপড়ায় ভালো করা যায় না। হিলারী হিমালয়কে ভয় পাননি, তাই তিনি এভারেষ্ট জয় করতে পেরেছিলেন। আত্মবিশ্বাসের বলে মানুষ অসম্ভবকে সম্ভভ^ব করেছে। কোনো কোনো বিষয় বুঝতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তোমার সহপাঠীরা যা পারে তোমার তা না পারার কী কারণ থাকতে পারে। ঠিক নিয়মে লেখাপড়া করলে নিশ্চয়ই তুমিও পারবে।

অধ্যবসায়ী হওয়া

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সময়ের মূল্যের সাথে নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, শ্রমের মর্যাদা প্রভৃতি একে অপরের সম্পূরক। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি প্রাপ্তির আশা করা যায় না। সর্বপ্রকার সুখ ও সমৃদ্ধির মূলে রয়েছে পরিশ্রম। প্রত্যেক কাজ সময়ের সাথে মিল রেখে নিয়মানুযায়ী করতে পারলে বারবার চেষ্টা করার অভ্যাস গড়ে ওঠে। আর বারবার চেষ্টার নামই অধ্যবসায়। বারবার চেষ্টা করে মানুষ নিজের ভাগ্য গঠন করতে পারে।

ধৈর্যশীল হওয়া

দুনিয়া ফুলশয্যা নয়, এখানে বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হওয়া স্বাভাবিক। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

اَلدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَ جَنَّةُ الْكَافِرِ

‘‘দুনিয়াটা মু’মিনের জন্য জেলখানা আর কাফিরের জন্য জান্নাত’’। (মুসলিম হা/৭৬০৬)

যেকোনো মহান কাজে সফল হতে হলে সমস্যার ভিতর দিয়েই অগ্রসর হতে হয়। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে-

‘‘The way of truth is full of thorns’’.

অর্থাৎ ‘‘সত্যের পথ কাঁটায় ভরা’’।

গোলাপ একটি মূল্যবান ফুল কিন্তু একে কুড়াতে হলে কাঁটার আঘাত সহ্য করতে হয়। যারা এ কষ্ট সহ্য করতে পারে না তারা গোলাপফুল তুলতে পারে না। এ জন্যই বলা হয়-

‘‘কাঁটা হেরী ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে, দ্র

দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কী মহীতে’’।

তাই সকল বাধার প্রাচীর ভেঙ্গে ধৈর্যের সাথে সামনে অগ্রসর হতে হবে তাহলেই জীবনে সফলতা আসবে। ইনশা-আল্লাহ!

রাগ দমন করা

অযথা রাগ করা যাবে না। কথায় আছে, ‘‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’’। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি রাগ করো না। লোকটি কয়েকবার এ আরজ করলে নবী প্রত্যেকবারই বললেন, তুমি রাগ করো না। (বুখারী হা/৬১১৬)

মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করা

‘‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো’’।

জীবনে জন্মগ্রহণ যেমন সত্য তেমনি মৃত্যুবরণও সত্য। যেহেতু জীবনের শেষ আছে এবং তা চরম সত্য সেহেতু প্রত্যেকের জীবনের একটা লক্ষ্য থাকা উচিত। কারণ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করলাম আর চলে গেলাম, দ্বীন ও মানবতার কল্যাণে কিছু করতে পারলাম না, তাহলে জীবনের সার্থকতা থাকল না। মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, জীবনে যা কিছু প্রয়োজন তাও দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান স্বরূপ আল-কুরআনুল কারীম দিয়েছেন। এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া স্বরূপ লেখাপড়া ও অন্যান্য কাজকর্মের্র পাশাপাশি আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও মানবতার কল্যাণের লক্ষ্যে আমাদের কাজ করা কর্তব্য।

‘‘এমন জীবন করিবে গঠন মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন।

এমন জীবন করো না গঠন মরণে কাঁদিবে তুমি হাসিবে ভূবন’’।

সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করা

অনেক মানুষ ভুলপথে জীবন পরিচালনা করে। তাদেরকে সঠিক পথে আহবান করতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন-

وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ اُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ اِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاُوْلٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ

‘‘তোমাদের মাঝে এমন দল থাকা আবশ্যক যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বারণ করবে। যারা এ কাজ করবে তারাই সাফল্যমন্ডিত হবে।’’ (সূরা আলে ইমরান- ১০৪)

اُدْعُ إِلٰى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ

‘‘তুমি হেকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে তোমার রবের পথে আহবান করো এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক করো।’’ (সূরা নাহল- ১২৫)

وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَا اِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَّقَالَ اِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ

‘‘ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয় এবং নিজেও নেক আমল করে। আর সে বলে, আমি মুসলমানদের মধ্যে একজন।’’ (সূরা হামীম সিজদা- ৩৩)

সহীহ বুখারীতে এসেছে (হা: নং ৩৪৬১), নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

بَلِّغُوْا عَنِّىْ وَلَوْ اٰيَةً

‘‘আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও তা অন্যের নিকট পৌঁছে দাও।’’

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোনো অন্যায় কাজ হতে দেখে, তখন সে যেন স্বহস্তে তা পরিবর্তন করে দেয়। যদি সে এতে সক্ষম না হয়, তবে মুখ দ্বারা যেন তার প্রতিবাদ করে। আর যদি এটাও সে না পারে, তবে যেন অন্তর দিয়ে উহাকে ঘৃণা করে, এটা হলো ঈমানে দুর্বলতম স্তর।’’ (মুসলিম হা/১৮৬, মিশকাত হা/৫১৩৭)

নবী আরো বলেছেন, ‘‘সেই সত্তার কসম- যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ দেবে এবং খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করবে। নতুবা অনতিবিলম্বেই আল্লাহ তা‘আলা নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের উপর আযাব প্রেরণ করবেন। অতঃপর তোমরা তার নিকট দু‘আ করবে; কিমুত তোমাদের দু‘আ কবুল করা হবে না।’’ (তিরমিযী হা/২১৬৯, মিশকাত হা/৫১৪০)

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন