মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
১. আনাস্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আনসারীদের মধ্যে বেশি সম্পদশালী ছিলেন এবং তাঁর সম্পদের মধ্যে বায়রা’হা নামক বাগানবাড়িটিই ছিলো তাঁর নিকট অধিক প্রিয়। তা ছিলো মসজিদে নববীর সামনাসামনিই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে ঢুকে মিষ্টি পানি পান করতেন। আনাস্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়,
“তোমরা কখনোই কল্যাণের নাগাল পাবে না যতক্ষণ না তোমরা নিজের পছন্দনীয় বস্তু সদকা করো। তোমরা যা কিছুই আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করো তা সবই তিনি ভালোভাবে জানেন”। [সূরা আলে ‘ইমরান, আয়াত: ৯২]
যখন উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয় তখন আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তো উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন। আর আমার নিকট সবচাইতে প্রিয় সম্পদই হচ্ছে বায়রা’হা নামক বাগানবাড়িটি। সুতরাং এটি আমি আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা করে দিলাম। আমি আল্লাহ তা‘আলার নিকট এর সাওয়াব আশা করি। সুতরাং হে রাসূল! আপনি তা যেখানে ব্যয় করতে চান ব্যয় করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সাবাস! এতো খুব লাভজনক সম্পদ। এতো খুব লাভজনক সম্পদ। আমি তোমার কথা শুনেছি। তবে আমি চাই যে তুমি তা তোমার আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বন্টন করে দিবে। তখন আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাই করলেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৬১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৯৮]
২. সু’দা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা আমার স্বামী তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ্’র সামনে উপস্থিত হলে তাঁকে ভারী ভারী মনে হলো। যেন তিনি আমার উপর রাগ করে আছেন। আমি বললাম, আপনার কি হলো? হয়তো আপনি আমার কোনো কর্মকান্ডে অসন্তুষ্ট হয়েছেন তাই আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। তিনি বললেন, না। একজন মুসলিম পুরুষের জন্য তুমি কতোই না উত্তমা স্ত্রী! তবে একটি ঘটনা ঘটেছে। তা এই যে, আমার নিকট অনেকগুলো সম্পদ একত্রিত হয়েছে। আমি ভেবে পাচ্ছি না তা কিভাবে খরচ করবো? আমি বললাম, আপনার কিসের চিন্তা! আপনার বংশের লোকদেরকে ডাক দিয়ে তা তাদের মধ্যে বন্টন করে দিন। তখন তিনি নিজ গোলামকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে গোলাম! আমার বংশের লোকদেরকে ডেকে নিয়ে আসো। বর্ণনাকারিণী বলেন, আমি হিসাব রক্ষককে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি ইতোমধ্যে কতো টাকা বন্টন করলেন? সে বললো, চার লাখ। [সহীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ৯২৫]
৩. একদা তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট সাত লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে একটি বাগানবাড়ি বিক্রি করে দিলেন। ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন দিরহামগুলো নিয়ে আসলেন তখন তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, যে ব্যক্তির নিকট এতগুলো দিরহাম; অথচ সে জানে না তার মৃত্যু কখন হবে এরপরও সে এতগুলো দিরহাম নিয়ে রাত্রি যাপন করলো সে নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। অতঃপর তিনি লোক পাঠিয়ে দিলেন এগুলো মদীনার গলিতে গলিতে বিলি করতে। ফজরের সময় দেখা গেলো, তাঁর নিকট আর একটি দিরহামও নেই। [সিফাতুস-সাফওয়াহ ১/৩৪০]
৪. একদা উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু চার শত দিনার একটি থলিতে ভরে নিজ গোলামকে দিয়ে বললেন, এগুলো আবু উবাইদাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কে দিয়ে আসো। তবে কোনো একটা ব্যস্ততা দেখিয়ে তাঁর ঘরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে। তা হলে দেখতে পাবে সে দিনারগুলো কোন খাতে খরচ করে। গোলাম দিনারগুলো নিয়ে তাঁর কাছে পৌঁছে বললো, আমীরুল মু’মিনীন বলছেন, দিনারগুলো আপনার কোনো ব্যক্তিগত কাজে লাগাতে। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে তাঁর খাঁটি বান্দাহসুলভ সুসম্পর্ক অটুট রাখুক এবং তাঁকে দয়া করুক। অতঃপর বললেন, হে বান্দি! এ সাতটি দিনার অমুককে দিয়ে আসো, এ পাঁচটি অমুককে, আর এ পাঁচটি অমুককে। এমনকি তা কিছুক্ষণের মধ্যে বন্টন করা শেষ হয়ে গেলো। গোলামটি উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর নিকট এসে তা বিস্তারিত জানালেন। ইতোমধ্যে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আরো চার শত দিনার মু‘আয্ ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর জন্য প্রস্তুত করে রাখলেন। তিনি বললেন, এগুলো মু‘আয্ ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কে দিয়ে আসো। তবে কোনো একটা ব্যস্ততা দেখিয়ে তাঁর ঘরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে। তা হলে দেখতে পাবে সে দিনারগুলো কোনো খাতে খরচ করে। গোলাম দিনারগুলো নিয়ে তাঁর কাছে পৌঁছে বললো, আমীরুল মু’মিনীন বলছেন, দিনারগুলো আপনার কোনো ব্যক্তিগত কাজে লাগাতে। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে তাঁর খাঁটি বান্দাহসুলভ সুসম্পর্ক অটুট রাখুক এবং তাঁকে দয়া করুক। অতঃপর বললেন, হে বান্দি! এ কয়েকটি দিনার অমুকের ঘরে দিয়ে আসো, এগুলো অমুকের ঘরে, আরো এগুলো অমুকের ঘরে। ইতোমধ্যে মু‘আয্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর স্ত্রী তাঁর দিকে উঁকি মেরে বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা একান্ত দরিদ্র। সুতরাং আমাদেরকেও কিছু দিন। তখন তাঁর নিকট শুধুমাত্র দু’টি দিনারই অবশিষ্ট ছিলো এবং তাই তিনি তাঁর স্ত্রীর দিকে নিক্ষেপ করলেন। গোলামটি উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর নিকট এসে তা বিস্তারিত জানালেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাতে খুবই সন্তুষ্ট হলেন এবং বললেন, এরা সবাই ভাই ভাই। তাই আচরণে সবাই একই। [সহীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ৯২৬]
৫.’উরওয়াহ্ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে দেখেছি সত্তর হাজার দীনার বা দিরহাম সদকা করে দিতে; অথচ তিনি তাঁর পরনের কাপড় তালি লাগিয়ে পরছিলেন। [সিফাতুস সাফওয়াহ ২/৩০]
৬. আসমা বিনত আবী বকর আগামীকালের জন্য কিছুই রাখতেন না। তিনি সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় সদকা করে দিতেন। [আস-সিয়ার ৩/৩৮০]
৭. উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জনৈক সাহাবীকে একটি ছাগলের মাথা হাদিয়া দেওয়া হলো। তিনি মনে মনে ভাবলেন, আমার অমুক ভাই এ মাথাটির প্রতি আমার চাইতেও বেশি মুখাপেক্ষী। তাই তিনি মাথাটি তাঁর কাছেই পাঠিয়ে দিলেন। এমনিভাবে অপরজন অন্যের কাছে। পরিশেষে সাত ঘর ঘুরে মাথাটি প্রথম ঘরেই ফিরে আসলো। [এহইয়া ৩/২৭৩]
৮.আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এর নিকট যখনই তাঁর কোনো সম্পদ ভালো বা পছন্দনীয় মনে হতো তখনই তিনি তা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় সদকা করে দিতেন। [ওয়াফায়াতুল-আ’ইয়ান ৩/৩০]
৯.আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা কখনো কখনো একই মজলিশে ত্রিশ হাজার দীনার বা দিরহাম সদকা করে দিতেন; অথচ তিনি কোনো কোনো মাসে এক টুকরো গোস্ত খাওয়ার পয়সাও নিজের কাছে খুঁজে পেতেন না। [আস-সিয়ার ৩/২১৮]
১০. একদা উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর যুগে মদীনায় দুর্ভিক্ষ লেগে যায়। ইতোমধ্যে সিরিয়া থেকে উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর মালিকানাধীন এক হাজার উটের একটি বাণিজ্য কাফেলা মদীনায় পৌঁছে যায়। তাতে ছিলো হরেক রকমের খাদ্য সামগ্রী ও মূল্যবান পোশাক-পরিচ্ছদ। সে কঠিন সময়ে যার মূল্য ছিলো বর্ণনাতীত। ইতোমধ্যে সকল ব্যবসায়ীরা পণ্যসামগ্রীর জন্য তাঁর নিকট উপস্থিত। তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা আমাকে কতটুকু লাভ দিবে? তারা বললো, শতকরা পাঁচ ভাগ। তিনি বললেন, অন্যজন (আল্লাহ তা‘আলা) আরো বেশি দিতে প্রস্তুত। তারা বললো, আমরা আরো বাড়িয়ে দেবো। এমনকি তারা শতকরা দশ ভাগ লাভ দিতে প্রস্তুত হয়ে গেলো। তিনি বললেন, অন্যজন (আল্লাহ তা‘আলা) আরো বেশি দিতে প্রস্তুত। অতঃপর তিনি পুরো ব্যবসাটুকুই আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য মানুষের মাঝে বন্টন করে দেন। [আখলাকুনাল-ইজতিমা’ইয়্যাহ: ২১]
১১. একদা জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি চারটি দিয়্যাতের দায়িত্বভার নিয়ে মদীনায় উপস্থিত হলো। সে এ ব্যাপারে মদীনাবাসীদের সাহায্য কামনা করছিলো। জনৈক ব্যক্তি তাকে বললো, তুমি এ ব্যাপারে চার জনের যে কোনো এক জনের নিকট যেতে পারো। তাঁরা হচ্ছেন, হাসান ইবন ‘আলী, আব্দুল্লাহ্ ইবন জা’ফর, সা’ঈদ ইবনুল ‘আস এবং আব্দুল্লাহ্ ইবন ‘আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম। লোকটি মসজিদে গিয়ে দেখলো সা’ঈদ ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মসজিদে প্রবেশ করছেন। লোকটি তাঁর কাছে ব্যাপারটি খুলে বলতেই তিনি নিজ ঘর থেকে ঘুরে এসে বললেন, তুমি আরেকজনকে নিয়ে আসো তোমার সহযোগিতা করতে। লোকটি বললো, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে দয়া করুন! আমি তো এতো সম্পদ চাইনি? তিনি বললেন, আমি জানি। তুমি আরেকজনকে নিয়ে আসো তোমার সহযোগিতা করতে। অতঃপর তিনি তাকে চল্লিশ হাজার দীনার বা দিরহাম দিয়ে দিলেন। এরপর লোকটির আর কারোর কাছে যেতে হলো না। [আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ৮/৯৩]
১২. মাইমূন ইবন মিহরান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এর স্ত্রীকে বলা হলো, তুমি তোমার স্বামীর প্রতি কেন দয়া করো না? তিনি বললেন, আমি কি করবো?! তাঁর জন্য খানা তৈরি করলে তিনি অন্যদেরকে সাথে নিয়ে বসে যান। তখন আর তাঁর খাওয়া হয় না। অতঃপর তাঁর স্ত্রী একদা সকল মিসকিনদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ালেন যারা সর্বদা ইবন উমারের মসজিদ থেকে বের হওয়ার পথে বসে থাকে। এরপর তাদেরকে বিনয়ের সাথে বললেন, তোমরা ইবন উমারের পথে বসে থেকো না। অতঃপর ইবন উমার ঘরে এসে বললেন, অমুককে ডাকো, অমুককে ডাকো; অথচ তাঁর স্ত্রী তাদের নিকট খানা পাঠিয়ে বললেন, তোমাদেরকে ডাকলে তোমরা কেউ আর এসো না। তখন ইবন উমার বললেন, তোমরা চাচ্ছো, আমি যেন আজ রাত্রের খাবার না খাই। তাই তিনি আর রাত্রের খাবার খেলেন না। [হিল্য়াতুল-আউলিয়া’ ৭/২৯৮]
১৩. মুহাম্মাদ ইবন মুনকাদির রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা উম্মে দুররাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা [যিনি ছিলেন ‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর খাদিমা] তাঁকে বলেন, একদা মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর নিকট এক লক্ষ আশি হাজার দিরহাম পাঠান। তিনি দিরহামগুলো পেয়ে তার সবটুকুই মানুষের মাঝে বিলি করে দিলেন। যখন সন্ধ্যা হলো তখন তিনি নিজ খাদিমাকে বললেন, ইফতার নিয়ে আসো। অতঃপর তাঁর জন্য রুটি ও তেল নিয়ে আসা হলো। উম্মে দুররাহ বলেন, আজ একটি দিরহাম দিয়ে আমাদের ইফতারের জন্য এতটুকু গোস্তও কিনতে পারলেন না? ‘আয়িশা বলেন, আমাকে ইতোপূর্বে ব্যাপারটি স্মরণ করিয়ে দিলে না কেন? [এহইয়া’ ৩/২৬২]
১৪. সা’দ ইবন উবাদাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু প্রতি রাত্রে আশি জন সুফ্ফাবাসীকে খানা খাওয়াতেন। [আস-সিয়ার ১/২১৬]
১৫. মদীনাবাসীরা আব্দুর রহমান ইবন ‘আউফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর সম্পদের উপর বেশির ভাগই নির্ভরশীল ছিলো। কারণ, তিনি নিজ মালের এক তৃতীয়াংশ মানুষকে ঋণ দিতেন। আরেক তৃতীয়াংশ মানুষের ঋণ পরিশোধে ব্যয় করতেন। অন্য তৃতীয়াংশ আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষায় ব্যয় করতেন। [তারীখে বাগদাদ ১২/৪৯১]
১৬. একদা জনৈক ব্যক্তি হাসান ইবন ‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এর দিকে একটি চিরকুট তুলে ধরলেন। তখন তিনি তা দেখার পূর্বেই বললেন, তোমার প্রয়োজন মিটিয়ে দেওয়া হবে। জনৈক ব্যক্তি তাঁকে বললেন, হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তান! আপনি চিরকুটটি দেখেই উত্তর দিতেন তাই তো ভালো ছিলো। তিনি বললেন, আমি চিরকুটটি পড়া পর্যন্ত সে যতটুকু লাঞ্ছনা ভোগ করবে সে জন্য কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আমাকে জবাবদিহি করবেন। [এহইয়া ৩/৯৭]
১৭. যুবাইর ইবন ‘আউওয়াম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর এক হাজার গোলাম ছিলো যারা তাঁকে প্রতিদিনই নিজেদের উপার্জনগুলো দিয়ে দিতো। প্রতি রাত্রে তিনি সেগুলো সম্পূর্ণরূপে গরীবদের মাঝে বন্টন না করে কখনো ঘরে ফিরতেন না। [হিল্য়াতুল-আউলিয়া’ ১/৯০]
১৮. আহমাদ ইবন হাম্বাল রহ. আববাদ ইবন আববাদ সম্পর্কে বলেন, তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত দীনদার। যিনি নিজকে আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে তিন বা চার বার খরিদ করে নিয়েছেন। তিনি নিজকে ওজন করে সে পরিমাণ রূপা আল্লাহর রাস্তায় সদকা করেন। [তাযকিরাতুল-’হুফ্ফায ১/২১০]
১৯. ‘আমর ইবন দীনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আলী ইবন হুসাইন ইবন আলী রহ. মুহাম্মাদ ইবন উসামাহ্ ইবন যায়েদের সাক্ষাতে গেলে দেখলেন তিনি কাঁদছেন। আলী বললেন, তোমার কি হয়েছে। কাঁদছো কেন? তিনি বললেন, আমার উপর কিছু ঋণ রয়েছে তাই কাঁদছি। আলী বললেন, কতগুলো? তিনি বললেন, পনেরো হাজার দীনার। আলী বললেন, ঠিক আছে, তা আমিই দিয়ে দেবো। [তাযকিরাতুল-হুফ্ফায ১/৮১]
২০. আলী ইবন হাসান ইবন আলী রহ. এর নিকট কোনো ভিক্ষুক আসলে তিনি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলতেন, তোমাকে ধন্যবাদ! কারণ, তুমি আমার ধন-সম্পদ আখিরাতের দিকে বয়ে নিয়ে যাবে।
২১. উমার ইবন সাবিত রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আলী ইবন হুসাইন ইবন আলী রহ. মৃত্যুবরণ করলেন তখন তাঁকে ধোয়ানোর সময় তাঁর পিঠে অনেকগুলো কালো দাগ পরিলক্ষিত হয়। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলেন, তিনি রাত্রি বেলায় আটার বস্তা পিঠে নিয়ে মদীনার ফকিদের ঘরে ঘরে পৌঁছিয়ে দিতেন। [আস-সিয়ার ৪/১৩৯]
২২. আবুল হুসাইন নূরী রহ. বিশ বছর যাবত নিজ ঘর থেকে দু’টি রুটি নিয়ে বাজারের দিকে রওয়ানা করতেন তা সদকা করার জন্য। পথিমধ্যে তিনি মসজিদে ঢুকে নফল সালাতে ব্যস্ত হয়ে যেতেন যতক্ষণ না বাজারের সময় হতো। অতঃপর বাজারের সময় হলে তিনি সেখানে গিয়ে রুটি দু’টি সদকা করে দিতেন। সবাই মনে করতো, তিনি ঘর থেকে খানা খেয়ে বের হয়েছেন। আর ঘরের লোকেরা মনে করতো, তিনি তো দুপুরের খানা নিয়ে বের হয়েছেন; অথচ তিনি সাওম রয়েছেন। [মিন্হাজুল-কাসিদীন পৃ: ৪১]
২৩. ইমাম শা’বী বলেন, আমার এমন কোনো আত্মীয় মরেনি যার উপর কিছু না কিছু ঋণ আছে; অথচ আমি তা তার পক্ষ থেকে আদায় করিনি। [তাযকিরাতুল-হুফ্ফায ১/৮১]
২৪. আবু ইসহাক আত্ব-ত্বাবারী রহ. বলেন, নাজাদ নামক জনৈক ব্যক্তি সর্বদা সাওম রাখতো। একটি রুটি দিয়ে ইফতার করার সময় তিনি তা থেকে সামান্যটুকু ছিঁড়ে রাখতেন। শুক্রবার তিনি সে টুকরোগুলো খেয়ে সে দিনের রুটিটি সদকা করে দিতেন। [তায্কিরাতুল-হুফ্ফায ৩/৮৬৮]
২৫. দাউদ আত্ব-ত্বায়ির একটি বান্দি ছিলো। সে একদা তাঁকে বললো, আপনার জন্য কি কিছু চর্বি পাকাবো? তিনি বললেন, ঠিক আছে, পাকাও। তা পাকিয়ে যখন তাঁর কাছে আনা হলো তখন তিনি বললেন, অমুক ঘরের এতিমগুলোর কি অবস্থা? বান্দি বললো, আগের মতোই। তিনি বললেন, এগুলো তাদের কাছে নিয়ে যাও। বান্দি বললো, আপনি তো অনেক দিন থেকে রুটির সাথে কিছু খাননি। তিনি বললেন, তারা খেলে তো আল্লাহ তা‘আলার নিকট তা সংরক্ষিত থাকবে। আর আমি খেলে তা বাথরুমে যাবে। [তারিখে বাগদাদ ৮/৩৫৩]
২৬. শু’বাহ্ ইবন হাজ্জাজ একদা একটি গাধার উপর চড়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সুলাইমান ইবন মুগীরাহ্ নামক জনৈক ব্যক্তি তাঁর নিকট নিজ দীনতার কথা বর্ণনা করছিলো। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি এখন শুধু এ গাধাটিরই মালিক। অন্য কিছুর নয়। এরপরও তিনি গাধা থেকে নেমে গাধাটি সুলাইমানকে সদকা করে দিলেন। [হিল্য়াতুল-আউলিয়া’ ৭/১৪৬]
২৭. রাবী’ নামক জনৈক বুযুর্গ একদা অর্ধাঙ্গ রোগে ভোগছিলেন। দীর্ঘ দিন যাবত তিনি পুরো শরীরে খুব ব্যথা অনুভব করছিলেন। হঠাৎ তাঁর মুরগীর গোস্ত খাওয়ার ইচ্ছে হলো। চল্লিশ দিন যাবত এ ইচ্ছা তিনি কারোর কাছে ব্যক্ত করেননি। একদা তাঁর স্ত্রীর নিকট উক্ত ইচ্ছা ব্যক্ত করলে তিনি এক দিরহাম দু’ দানিক দিয়ে তাঁর জন্য একটি মুরগী খরিদ করে তা রান্না করলেন। সাথে কিছু রুটি এবং হালুয়াও তৈরি করা হলো। এ সব তাঁর নিকট উপস্থিত করা হলে যখন তিনি তা খেতে যাবেন তখনই জনৈক ভিক্ষুক এসে বললো, আমাকে কিছু সদকা দিন। তখন তিনি তা না খেয়ে তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ভিক্ষুককে এগুলো দিয়ে দাও। তাঁর স্ত্রী বললেন, আমি ভিক্ষুককে এমন কিছু দেবো যাতে সে আরো বেশি খুশি হয়ে যায়। তিনি বলেলন তা কি? তাঁর স্ত্রী বললেন, আমি তাকে এগুলোর পয়সা দিয়ে দেবো। আর আপনি এগুলো খাবেন। তিনি বললেন, ভালোই বলেছো। তা হলে পয়সাগুলো নিয়ে আসো। পয়সাগুলো নিয়ে আসা হলে তিনি বললেন, পয়সা এবং খাবার সবই তাকে দিয়ে দাও। [আহসানুল মাহাসিন, পৃ. ২৮৯]
২৮. ‘আমির ইবন আব্দুল্লাহ্ ইবন যুবাইর রহ. দীনার ও দিরহামের থলি নিয়ে মসজিদে মসজিদে ঘুরে বেড়াতেন। কোনো নেককার বান্দাহকে সিজদারত অবস্থায় দেখলে তার জুতার পার্শ্বে থলিটি রেখে দিতেন। যাতে লোকটি তাঁকে চিনতে না পারে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ থলিটি এদের বাড়িতে পাঠান না কেন? তখন তিনি বলেন, থলিটি তাদেরকে সরাসরি দিলে সময় সময় তারা আমাকে বা আমার প্রতিনিধিকে দেখে লজ্জা পাবে। [মিনহাজুল-ক্বাস্বিদীন, পৃ. ৪১]
২৯. ‘আমির ইবন আব্দুল্লাহ্ ইবন যুবাইর রহ. ছয়বার নিজের দিয়্যাত সমপরিমাণ সদকা করে আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে নিজকে কিনে নিয়েছেন। তেমনিভাবে হাবীব আল-‘আজমীও চল্লিশ হাজার দিরহাম সদকা করে নিজকে আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। [হিল্য়াতুল-আউলিয়া ৩/১৬৬]
৩০. মুওয়াররিক আল-ইজলী ব্যবসা করে যা লাভ হতো তার সবটুকুই গরীব-দুঃখীর মাঝে বন্টন করে দিতেন। তিনি বলতেন, গরীব-দুঃখী না থাকলে আমি কখনো ব্যবসাই করতাম না। [আয-যুহদ, পৃ. ৪৪]
৩১. রাক্বিদী রহ. বলেন, রাষ্ট্রপতি আমাকে ছয় লক্ষ দিরহাম দিয়েছেন; অথচ এগুলোর উপর কখনো যাকাত আসেনি। অর্থাৎ বছর ফুরানোর আগেই তিনি তা সব সদকা করে দিয়েছেন। [আস-সিয়ার ৯/৪৬৭]
৩২. লাইস ইবন সা’দ রহ.-এর বার্ষিক আয় ছিলো আশি হাজার দিনার; অথচ তাঁর উপর কখনো যাকাত ওয়াজিব হয়নি। অর্থাৎ বছর ফুরানোর আগেই তিনি তা সব সদকা করে দিয়েছেন। [ওয়াফায়াতুল-আইয়ান ৪/১৩০]
৩৩. একদা মা’রূফ কার্খী রহ. অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাঁকে বলা হলোঃ আপনি ওসিয়ত করুন। তিনি বললেন, আমি মরে গেলে আমার গায়ের জামাটি তোমরা সদকা করে দিবে। কারণ, আমি চাই, দুনিয়াতে আমি যেভাবে খালি এসেছি সেভাবেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেবো। [ওয়াফায়াতুল-আইয়ান ৫/২৩২]
৩৪. খলীফা আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ান একদা আসমা বিনত খারিজাকে ডেকে বললেন, তোমার কয়েকটি গুণ আমার কানে এসেছে তা এখন সরাসরি আমাকে খুলে বলবে কি? তিনি বললেন, এ ব্যাপারটি অন্যের থেকে শোনাই ভালো। খলীফা বললেন, না, তুমি আমাকে সেগুলো বলতেই হবে। তখন তিনি বললেন, হে আমীরুল-মু’মিনীন! গুণগুলো হচ্ছে এই যে, আমি কখনো কারোর সামনে পা ছড়িয়ে বসি না। আমি কখনো কাউকে খাবারের দাওয়াত করলে সেই আমাকে খোঁটা দেয় যা আমি দেই না। কেউ আমার নিকট কোনো কিছু চাইলে যা কিছুই আমি তাকে দেই তা বেশি মনে করি না। [এহইয়া’ ৩/২৬৫]
৩৫. একদা জনৈক সিরিয়াবাসী মদীনায় এসে বললো, সাফ্ওয়ান ইবন সুলাইম কে? আমি তাকে জান্নাতে দেখেছি। তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেছেন একটি জামার পরিবর্তে। যা একদা তিনি জনৈক ব্যক্তিকে পরিয়েছেন। তিনি একদা এক প্রচন্ড শীতের রাত্রিতে মসজিদ থেকে ঘরে রওয়ানা করছিলেন। পথিমধ্যে দেখছেন জনৈক ব্যক্তি উলঙ্গ। তখন তিনি জামাটি খুলে তাকে পরিয়ে দিলেন। [সিফাতুস সফওয়াহ ২/১৫৪]
৩৬. সা’লিম ইবন আবুল-জা’দ রহ. বলেন, একদা জনৈকা মহিলা নিজ সন্তানকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। পথিমধ্যে একটি বাঘ তার সন্তানটি ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। তখন মহিলাটি তার পিছু নেয়। তার সাথে একটি রুটি ছিলো। পথিমধ্যে সে রুটিটি একজন ভিক্ষুককে দিয়ে দেয়। তখন বাঘটি তার সন্তানটিকে ফেরত দেয়। তখন তার কানে একটি আওয়াজ আসে, এক নেওলার পরিবর্তে আরেকটি নেওলা। [তাম্বীহুল-গাফিলীন পৃ. ৫২১]
৩৭. ইবরাহীম ইবন বাশশার বলেন, একদা আমি ইবরাহীম ইবন আদমের সঙ্গে ত্রিপলী (বর্তমান লিবিয়ার রাজধানী) এলাকায় হাঁটছিলাম। আমার সাথে ছিলো শুধু দু’টি শুকনো রুটি। পথিমধ্যে জনৈক ভিক্ষুক কিছু চাইলে তিনি আমাকে বলেন, তোমার সাথে যা আছে তা একে দিয়ে দাও। আমি রুটি দু’টো দিতে একটু দেরি করলে তিনি বললেন, তুমি ওকে দিয়ে দাও। অতঃপর আমি রুটি দু’টো দিয়ে দিলাম। আমি তাঁর এ রকম কান্ড দেখে আশ্চর্য হলে তিনি আমাকে বলেন, হে আবু ইসহাক! তুমি কিয়ামতের দিন এমন বিপদাপদের সম্মুখীন হবে যা ইতোপূর্বে কখনো হওনি। তুমি তখন তাই পাবে যা তুমি এ দুনিয়া থেকে পরকালের জন্য এখন পাঠাচ্ছো। যা রেখে যাবে তা কখনোই পাবে না। সুতরাং তুমি এখন থেকেই প্রস্তুতি নাও। কারণ, তুমি জানো না কখন তোমার মৃত্যু হবে। তাঁর কথায় আমি কেঁদে ফেললাম। দুনিয়া আমার কাছে তখন কিছুই মনে হলো না। আমার দিকে তাকিয়ে তিনিও কেঁদে কেঁদে বললেন, এমনই হওয়া চাই। [আয-যুহ্দ/বায়হাক্বী ২৫১ স্বিফাতুস্ব-স্বাফওয়াহ ২/১৫৪]
৩৮. জরীর ইবন আব্দুল-’হামীদ বলেন, সুলাইমান আত-তাইমী যখনই হাতের নাগালে যাই পেতেন সদকা করে দিতেন। আর কোনো কিছু না পেলে দু’ রাক‘আত সালাত পড়তেন। [আস-সিয়ার ৬/১৯৯]
৩৯. একদা জনৈক ব্যক্তি তার বন্ধুর দরজায় আঘাত করলে সে ঘর থেকে বের হয়ে বললো, তুমি কি জন্য আসলে? সে বললো, আমি চারশত দিরহাম ঋণী যা এখনো আদায় করতে পারছি না। বন্ধুটি সাথে সাথে চারশত দিরহাম গুণে তার হাতে তুলে দিলো। অতঃপর ঘরে এসে সে কাঁদতে লাগলো। তার স্ত্রী বললো, এতো কষ্ট লাগলে দিলে কেন? সে বললো, দেওয়ার জন্য কাঁদছি না। কাঁদছি এ জন্য যে, আমি তার বন্ধু হয়ে এতোদিন কেন তার কোনো খোঁজখবর রাখিনি। যার দরুন তাকে আজ আমার নিকট আসতে হলো। [এহইয়া’ ৩/৯৭]
৪০. সুফইয়ান ইবন উয়াইনাহ্ রহ. একদা রাস্তা দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় জনৈক ভিক্ষুক তাঁর কাছে কিছু ভিক্ষা চাইলে তিনি তাকে কিছুই দিতে পারলেন না। তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন। জনৈক ব্যক্তি বললো, হে আবু মুহাম্মাদ! আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, এর চাইতে আর বড় বিপদ কি হতে পারে যে, কেউ তোমার নিকট কিছু চাইলো আর তুমি তাকে কিছুই দিতে পারলে না। [ওয়াফায়াতুল-আইয়ান ২/২৯৩]
৪১. জনৈকা মহিলা হাসসান ইবন আবু সিনান রহ. এর নিকট কিছু ভিক্ষা চাইলে তিনি তাঁর শরীককে দু’টি অঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করেন। তাঁর শরীক মহিলাটিকে দু’টি দিরহাম দিতে গেলে তিনি নিজে উঠে গিয়ে মহিলাটিকে দু’শত দিরহাম দিলেন। জিজ্ঞাসা করা হলোঃ হে আবু আব্দুল্লাহ্! আপনি তো এ দু’শত দিরহাম দিয়ে অনেকগুলো ভিক্ষুককে সন্তুষ্ট করতে পারতেন। তিনি বললেন, আমি যা ভাবছি তোমরা তা ভাবোনি। আমি ভাবলাম, মহিলাটি তো এখনো যুবতী। তাই আমি চাই না মহিলাটি প্রয়োজনের তাড়নায় ব্যভিচার করে বসুক। [সিফাতুস সফওয়াহ ৩/৩৩৮]
৪২. ‘আলী ইবন ঈসা আল-ওয়াযীর রহ. বলেন, আমি এ যাবত সাত লাখ দীনার কামিয়েছি। তার মধ্য থেকে ছয় লাখ আশি হাজার দিরহামই আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় খরচ করে দিয়েছি। [আস-সিয়ার ১৫/৩০০]
৪৩. সুফইয়ান ইবন উয়াইনাহ্ রহ. বলেন, আমার পিতা পঞ্চাশ হাজার দিরহাম মিরাস পেয়েছেন। অতঃপর তিনি তা থলে ভরে ভাইদের নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং বললেন, আমি আমার নফল সালাতগুলোতে আমার ভাইদের জন্য জান্নাতের দো‘আ করি। সুতরাং তাদের সাথে আমার সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করবো কেন?
৪৪. শফিক ইবন ইবরাহীম বলেন, একদা আমরা ইবরাহীম ইবন আদহামের নিকট ছিলাম। এমতাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। তিনি বললেন, এ কি অমুক ব্যক্তি নয়? বলা হলোঃ হ্যাঁ। তখন তিনি জনৈক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি ওর কাছে গিয়ে বলোঃ ইবরাহীম ইবন আদহাম বলছেন, কেন তুমি তাঁকে সালাম করোনি? সে বললো, আল্লাহর কসম! আমি এখন পাগলের ন্যায়। আমার স্ত্রী সন্তান প্রসব করেছে; অথচ আমার নিকট কিছুই নেই। ইবরাহীম ইবন আদহামকে ব্যাপারটি বলা হলে তিনি বললেন, ইন্নালিল্লাহ্! আমাদের কি হলো! লোকটির কোনো খবরই নিলাম না; অথচ লোকটি সমস্যাগ্রস্ত। অতঃপর তিনি জনৈক ব্যক্তিকে বললেন, এ বাগানের মালিকের কাছ থেকে দু’টি দীনার ধার নিয়ে একটি দীনার দিয়ে তার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র খরিদ করো। অতঃপর জিনিসগুলো এবং বাকি দীনারটি তাকে দিয়ে আসবে। লোকটি বললো, আমি বাজার থেকে জিনিসপত্র কিনে যখন তার দরজায় গিয়ে আঘাত করি তখন তার স্ত্রী বললো, কে? আমি বললাম, আমি অমুককে চাই। তার স্ত্রী বললো, সে তো ঘরে নেই। আমি বললাম, দরজাটি খুলে একটু সরে দাঁড়াও। মহিলাটি দরজা খুললে আমি আসবাবপত্রগুলো ঘরের মেঝে রেখে বাকি দীনারটি তার হাতে তুলে দিলে সে বললো, এগুলো কে পাঠালো। আমি বললাম, তোমার স্বামীকে বলবে, এগুলো ইবরাহীম ইবন আদহাম পাঠিয়েছে। মহিলাটি বললো, হে আল্লাহ! আপনি ইবরাহীম ইবন আদহামকে এ দিনের প্রতিদান দিন। [সিফাতুস সফওয়াহ ৪/১৫৫]
৪৫. বায়ান মিসরী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি মক্কায় বসা ছিলাম। আমার সামনে ছিলো জনৈক যুবক। জনৈক ব্যক্তি যুবকটিকে দিরহাম ভর্তি একটি থলি দিলে সে বললো, এতে আমার কোনো প্রয়োজন নেই। লোকটি বললো, তোমার কোনো প্রয়োজন না থাকলে মিসকিনদেরকে দিয়ে দিবে। অতঃপর যুবকটি সবগুলো দিরহাম মিসকিনদেরকে দিয়ে দিলো। যখন রাত্রের খাবারের সময় হলো তখন আমি যুবকটিকে দেখতে পেলাম মাঠে পরিত্যক্ত কোনো খাবার যেন সে খুঁজছে। আমি বললাম, এ সময়ের জন্য কয়েকটি দিরহাম রেখে দিলে না কেন? সে বললো, এ পর্যন্ত বাঁচবো বলে আমি এতটুকুও নিশ্চিত ছিলাম না।
৪৬. জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি সা’ঈদ ইবন ‘আস-এর নিকট কোনো কিছু চাইলে তিনি তাঁর খাদিমকে বললেন, একে পাঁচশত দিয়ে দাও। খাদিম বললো, পাঁচশত দীনার দেবো না দিরহাম? তিনি বললেন, আমি পাঁচশত দিরহাম দিতেই বলেছিলাম। তবে যখন তোমার অন্তরে দীনারের কথাই আসলো তা হলে তাকে পাঁচশত দীনারই দিয়ে দাও। গ্রাম্য ব্যক্তিটি তা গ্রহণ করে কাঁদতে লাগলো। তিনি বললেন, কাঁদো কেন? তুমি যা চাইলে তা তো পেয়ে গেলে? সে বললো, অবশ্যই। তবে আমি কাঁদছি এ জন্য যে, মৃত্যুর পর আপনার মতো মানুষকে জমিন কিভাবে খেয়ে ফেলবে? [আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ৮/৯৩]
৪৭. রাবী’ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জনৈক ভিক্ষুক ইমাম শাফি’য়ী রহ. এর ঘোড়ার লাগাম ধরলে তিনি আমাকে বললেন, লোকটিকে চারটি দীনার দিয়ে দাও। আর আমার পক্ষ থেকে তার নিকট এ বলে ক্ষমা চাও যে, সময়ের অভাবে আমি তার কোনো খবরাখবর রাখতে পারি নি। [আস-সিয়ার ১০/৩৭]
৪৮. হাকীম ইবন হিযাম রহ. কোনো দিন কোনো ভিক্ষুককে না দেখলে তিনি খুব মন খারাপ করে বলতেন, আমি কোনো দিন সকালে যদি আমার ঘরের দরজায় কোনো ভিক্ষুককে না পাই তা হলে আমি সে দিনকে বড়ো বিপদের দিন মনে করি।
৪৯. ইবন শুবরুমাহ্ রহ. একদা জনৈক ব্যক্তির একটি বড় প্রয়োজন মিটিয়ে দিলেন। অতঃপর লোকটি তাঁর নিকট কিছু হাদিয়া নিয়ে আসলে তিনি বললেন, এটি কি? সে বললো, আপনি যে অমুক দিন আমার বড় একটি উপকার করেছেন তাই আপনার জন্য কিছু হাদিয়া নিয়ে আসলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে সুস্থ রাখুন! এটি নিয়ে যাও। মনে রাখবে, তুমি কারোর নিকট কোনো প্রয়োজন উপস্থাপন করলে সে যদি তা মেটানোর যথাসাধ্য চেষ্টা না করে তা হলে তুমি ভালোভাবে ওযু করে তার জানাযার সালাতটুকু পড়ে দিবে। কারণ, সে মৃত সমতুল্য। [এহইয়া’ ২/১৫৯]
৫০. মালিক ইবন দীনার রহ. একদা বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় জনৈক ভিক্ষুক তাঁর নিকট কিছু চাইলে তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, খেজুরের পাত্রটি নিয়ে আসো। অতঃপর তিনি সেখান থেকে অর্ধেক খেজুর ভিক্ষুকটিকে দিয়ে দিলেন। তাঁর স্ত্রী বললো, তোমার মতো মানুষকে যাহিদ বলা হয়?! তোমার নাকি দুনিয়ার প্রতি কোনো লোভ নেই। তুমি কি কখনো দেখেছো কোনো রাষ্ট্রপতিকে অর্ধেক হাদিয়া দিতে। অতঃপর তিনি ভিক্ষুকটিকে সবই দিয়ে দিলেন। এরপর তাঁর স্ত্রীকে বললেন, তুমি ভালোই করেছো। আরো করতে চেষ্টা করো। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“(ফিরিশতাদেরকে বলা হবেঃ) তাকে ধরো। অতঃপর তার গলোদেশে বেড়ি পরিয়ে দাও। এরপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করো। পুনরায় তাকে শৃঙ্খলিত করো সত্তর হাত দীর্ঘ এক শৃঙ্খলে। কারণ, সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিলো না এবং অভাবগ্রস্তকে অন্নদানে উৎসাহিত করতো না”। [সূরা আল-হা-ক্কাহ্, আয়াত: ৩০-৩৪]
মালিক ইবন দীনার তাঁর স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা এ কঠিন পরিস্থিতির অর্ধেক এড়াতে আল্লাহ তা‘আলার উপর ঈমান এনেছি। বাকি অর্ধেক এড়াবো সদকা-খয়রাত করে। [তাম্বীহুল-গাফিলীন, পৃ. ২৫২]
৫১. আব্দুল্লাহ্ ইবন জা’ফর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা এক হারানো জিনিসের খোঁজে বের হলাম। পথিমধ্যে একটি খেজুর বাগানে ঢুকে দেখি, তাতে একটি কালো গোলাম কাজ করছে। তার খাবার উপস্থিত করা হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাতে একটি কুকুর ঢুকে পড়লো। কুকুরটি গোলামের নিকটবর্তী হতেই সে তাকে এক টুকরো রুটি ছিঁড়ে দিলো। অতঃপর আরেক টুকরো। এরপর আরেক টুকরো। এমনকি কুকুরটি তার পুরো খাবারই খেয়ে ফেলে। অতঃপর আমি বললাম, হে গোলাম! প্রতিদিন তুমি কতটুকু খাবার পাও। সে বললো, এতটুকুই যা আপনি ইতোপূর্বে দেখেছেন। আমি বললাম, তা হলে কুকুরটিকে খাওয়ালে কেন? সে বললো, এ এলাকাতে কুকুর নেই। অতএব কুকুরটি ক্ষিধার জ্বালায় নিশ্চয় অনেক দূর থেকেই এসেছে। আর আমি চাই না যে, আমি খাবো আর কুকুরটি উপবাস থাকবে। আমি বললাম, তা হলে তুমি আজ খাবে কি? সে বললো, আমি আজ আর কিছুই খাবো না। উপবাস থাকবো। তখন আমি মনে মনে বললাম, আমাকে মানুষ দানশীলতার জন্য তিরস্কার করে। এতো বেশি দান করি কেন? অথচ এ গোলামটি আমার চাইতেও অধিক দানশীল। অতঃপর আমি বাগানবাড়িটি গোলাম ও সকল আসবাবপত্রসহ খরিদ করলাম এবং গোলামটিকে স্বাধীন করে বাগানবাড়িটি তাকে দিয়ে দিলাম। [এহইয়া’ ৩/৩৭৩]
৫৩. জা’ফর ইবন মুহাম্মাদ ইবন ‘আলী রহ. মানুষদেরকে এতো বেশি খাওয়াতেন যে, পরিশেষে তাঁর পরিবারের জন্য খাবারের কিছুই থাকতো না। [সিফাতুস সফওয়াহ ২/১৬৯]
৫৪. মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক রহ. বলেন, মদীনাবাসীরা অত্যন্ত সুন্দরভাবে জীবন যাপন করে যাচ্ছিলো। তারা কখনো জানতো না রাতের অন্ধকারে তাদের খাবার-দাবার কোথায় থেকে আসে। যখন ‘আলী ইবন হাসান রহ. মারা গেলেন তখন ব্যাপারটি সুস্পষ্ট হয়ে যায়। কারণ, রাতের অন্ধকারে তাদেরকে আর কেউ খাবার-দাবার দিয়ে যায় না। [আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ৯/১১৭]
৫৫. একদা জনৈকা মহিলা লাইস ইবন সা’দ রহ. এর নিকট এসে বললো, হে আবুল-হারিস! আমার সন্তানটি রোগাক্রান্ত। সে মধু খেতে চায়। তখন লাইস তাঁর গোলামকে বললেন, মহিলাটিকে একশত বিশ লিটারের একটি মধুর ভান্ড দিয়ে দাও।
৫৬. আহমাদ ইবন্ ইবরাহীম বেশি বেশি সদকা করতেন। একদা জনৈক ভিক্ষুক তাঁর নিকট কিছু চাইলে তিনি তাকে দু’টি দিরহাম দান করেন। ভিক্ষুকটি বললো, আল-’হামদুলিল্লাহ্। তখন তিনি আরো তিনটি দিরহাম দিলেন। ভিক্ষুকটি বললো, আল-’হামদুলিল্লাহ্। তখন তিনি আরো পাঁচটি দিরহাম দিলেন। এভাবে তিনি বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আর ভিক্ষুকটি শুধু আল-’হামদুলিল্লাহ্ বলছে। এমনকি তিনি ভিক্ষুকটিকে একশতটি দিরহাম দিয়ে দিলেন। তখন ভিক্ষুকটি বললো, আল্লাহ তা‘আলা আপনার সম্পদকে বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুন এবং তা দীর্ঘস্থায়ী করুন। তখন তিনি ভিক্ষুকটিকে বললেন, আল্লাহর কসম! তুমি যদি আরো আল-’হামদুলিল্লাহ্ বলতে আমি তোমাকে আরো বাড়িয়ে দিতাম। যদিও তা দশ হাজার দিরহাম হোক না কেন। [আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ১১/১৩১]
৫৭. হাসান ইবন সাহল রহ. কে যখন তিরস্কার করে বলা হলো, সীমাতিরিক্ত দানে কোনো সাওয়াব নেই। তিনি বললেন, দানের মধ্যে সীমাতিরিক্ত বলতে কিছুই নেই। [ওয়াফায়াতুল-আ’ইয়ান ২/১২১]
৫৮. খালিদ আত্ব-ত্বাহ্হান রহ. নিজকে আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে চার বার খরিদ করেছেন। নিজকে ওজন করে নিজ ওজন সমপরিমাণ রূপা তিনি আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় সদকা করেন।
৫৯. ইয়াযীদ ইবন আবু হাবীব রহ. বর্ণনা করেন, মিসরের মারসাদ ইবন আবু আব্দুল্লাহ্ আল-ইয়াযানী রহ. সবার আগে মসজিদে যেতেন। যখনই তিনি মসজিদে আসতেন তখনই তাঁর সাথে কিছু না কিছু সদকা নিয়ে আসতেন। তা পয়সা, রুটি, গম যাই হোক না কেন। একদা তিনি পিঁয়াজ নিয়ে মসজিদে আসলেন। ইয়াযীদ বলেন, একদা আমি তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললাম, হে কল্যাণকামী মহান ব্যক্তিত্ব! এ পিঁয়াজ তো আপনার পোশাক-পরিচ্ছদ গন্ধময় করে দিবে। তখন তিনি বলেন, হে আবু হাবীবের ছেলে! আমি তো এ পিঁয়াজ ছাড়া ঘরে সদকা দেওয়ার মতো আর কিছুই পেলাম না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈক সাহাবী আমাকে বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“কিয়ামতের দিন একজন মু’মিনের জন্য তার সদকাই হবে তার জন্য ছায়া”। [সহীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ৮৭২]
আপনি যতো বড়ো ধনীই হোন না কেনো তবুও আপনি এ ব্যাপারে কখনো নিশ্চিত নন যে, আপনি অন্ততপক্ষে কাফনের কাপড়টুকু নিয়ে হলেও কবরে যেতে পারবেন।
বনী বুওয়াই রাষ্ট্রপতি ফখরুদ-দাউলাহ্ ‘আলী ইবন রুকন সর্বদা বলে বেড়াতেন, আমি এতোগুলো সম্পদের মালিক যা আমার সন্তান ও সেনা বাহিনী সবাই মিলে পনেরো বছর খেলেও তা শেষ হবে না। কিন্তু যখন তিনি রায় নামক এলাকার সুপ্রসিদ্ধ কেল্লাতে মারা যান তখন তার ধন-ভান্ডারের চাবি ছিলো তাঁর ছেলের কাছে। তাঁর ছেলেটি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলো না। যার দরুন তাঁর কাফনের কাপড়টুকুরও ব্যবস্থা হয়নি। পরিশেষে তাঁর কাফনের জন্য কেল্লাটির নিচে অবস্থিত জামে’ মসজিদের জনৈক দায়িত্বশীল থেকে এক টুকরো কাপড় কেনা হলো যা তিনি নিজেই একদা মসজিদের জন্য রেখে গিয়েছিলেন। তাঁর সেনারা উক্ত কাফনের ব্যাপারে মতানৈক্য করলে তাঁকে এভাবেই দীর্ঘ সময় রাখা হয়। ইতোমধ্যে তাঁর শরীরে পঁচন ধরে যায়। তখন তাঁর নিকটবর্তী হওয়াই কারোর পক্ষে সম্ভব ছিলো না। অতএব তাঁর লাশে রশি বেঁধে কেল্লার সিঁড়ি দিয়ে দূর থেকে টেনে নিচে নামানো হয়। তাতে করে তাঁর লাশটি ছিঁড়ে খন্ড খন্ড হয়ে যায়; অথচ তিনি আটাশ লক্ষ ছাপ্পান্ন হাজার দীনার নগদ অর্থ, চৌদ্দ হাজার পাঁচ শত হীরা-জাওয়াহির মণি-মুক্তা যার মূল্য দশ লক্ষ দীনার, ত্রিশ লক্ষ দীনারের বাসন-কোসন, তিন হাজার উটের বোঝাই ঘরের আসবাবপত্র, এক হাজার উটের বোঝাই যুদ্ধাস্ত্র এবং দু’ হাজার পাঁচ শত উটের বোঝাই বিছানাপত্র রেখে যান। [শাযারাতুয-যাহাব ৩/১২৪]
সদকা সম্পর্কে এতো কিছু শোনার পরও এমন হবেন না যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“হ্যাঁ, তোমরাই তো ওরা যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা করতে বলা হয়েছে; অথচ তোমাদের অনেকেই এ ব্যাপারে কৃপণতা দেখাচ্ছে। মূলতঃ যারা কার্পণ্য করে তারা তো নিজেদের ব্যাপারেই কার্পণ্য করে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তো ধনী-অভাবমুক্ত। তাঁর কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই। বরং তোমরাই গরীব। যদি তোমরা আল্লাহ তা‘আলার পথে খরচ করতে বিমুখ হও তা হলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে বাদ দিয়ে অন্য আরেক জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন যারা কখনোই তোমাদের মতো হবে না”। [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৮]
ওদের মতোও হবেন না যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যারা কৃপণতা করে এবং লোকদেরকে কার্পণ্য শিক্ষা দেয়। উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত সম্পদসমূহ লুকিয়ে রাখে (তারা তো বস্তুতঃ কাফির) আর আল্লাহ তা‘আলা তো এমন কাফিরদের জন্য অপমানজনক শাস্তির ব্যবস্থাই রেখেছেন”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৭]
কখনো এমন মনে করবেন না যে, আপনি নিজেই আপনার মেধা ও বাহুবলে আপনার সম্পদগুলো কামিয়েছেন। বরং তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার একান্ত মেহেরবানিতেই সম্ভবপর হয়েছে। অভিশপ্ত কারূন তো নিজের সম্পদের ব্যাপারে এমন ধারণাই পোষণ করতো। তার কথাই তো আল্লাহ তা‘আলা নিজ কুরআন মাজীদে উল্লেখ করেন।
“সে বললো, এ সম্পদ তো শুধু আমি আমার মেধার বলেই লাভ করেছি। সে কি জানে না যে, আল্লাহ তা‘আলা ইতোপূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকেই ধ্বংস করে দিয়েছেন। যারা ছিলো তার চাইতেও অনেক বেশি শক্তিশালী এবং প্রচুর সম্পদের মালিক। অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করার তো কোনো প্রয়োজনই নেই। (কারণ, সবই তো আল্লাহ তা‘আলা তাদের আমলনামায় লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন”। [সূরা আল-কাসাসা, আয়াত: ৭৮]
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যে সম্পদ দিয়েছেন সে জন্য একমাত্র তাঁরই প্রশংসা করুন। তা নিজেও খান। অপরকেও খাওয়ান। আল্লাহর রাস্তায় যথাসাধ্য খরচ করুন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে সদকা দেওয়ার উপযুক্ত বানিয়েছেন। খাওয়ার নয়। সর্বদা নিম্নোক্ত আয়াত স্মরণ করুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“হে ঈমানদাররা! আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা হতে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় খরচ করো এমন দিন আসার পূর্বে যে দিন কোনো ক্রয়-বিক্রয় চলবে না, না কোনো বন্ধুত্ব কাজে আসবে, না কারোর সুপারিশ ফায়দা দিবে। কাফিররা তো সত্যিই যালিম”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৪]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁরই দীন প্রতিষ্ঠা এবং মানবতার কল্যাণে যথাসাধ্য ব্যয় করার তাওফীক দান করুন। আমীন, সুম্মা আমীন। ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।