HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
কুরআন ও হাদীসের আলোকে সহজ আকীদা
লেখকঃ ড. আহমাদ ইবন আব্দুর রহমান আল-কাযী
কুরআন ও হাদীসের আলোকে সহজ আকীদা
ড. আহমাদ ইবন আব্দুর রহমান আল-কাযী
অনুবাদক: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদক: ড. আবু বাকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
নিরীক্ষক: ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ
প্রথম সংস্করণ
সন 1437 হিজরী {2016 খ্রিস্টাব্দ }
প্রকাশনায়:
দাওয়া ও প্রবাসী শিক্ষা বিভাগ
রাবওয়া দাওয়া, এরশাদ ও প্রবাসীদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানদান কার্য়ালয়, রিয়াদ, সৌদি আরব
ড. আহমাদ ইবন আব্দুর রহমান আল-কাযী
অনুবাদক: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদক: ড. আবু বাকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
নিরীক্ষক: ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ
প্রথম সংস্করণ
সন 1437 হিজরী {2016 খ্রিস্টাব্দ }
প্রকাশনায়:
দাওয়া ও প্রবাসী শিক্ষা বিভাগ
রাবওয়া দাওয়া, এরশাদ ও প্রবাসীদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানদান কার্য়ালয়, রিয়াদ, সৌদি আরব
ইসলামী আকীদা ও বিশ্বাস সম্পর্কে জ্ঞান থাকা একজন মুসলিমের জন্য খুবই জরুরী। নাবীদের ও তার উত্তরসূরিদের দা‘ওয়াতের লক্ষ্যই ছিল মানুষকে আল্লাহ সম্পর্কে, তার রাসূলদের সম্পর্কে এবং আখিরাত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান প্রদান করা। আল্লাহ ও তার রাসূলদের সত্তা ও গুণাগুণ এবং আল্লাহর নামসমূহের ও সিফাতসমূহের জ্ঞান থাকা এবং আখিরাত দিবসের প্রতি জ্ঞান থাকা ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়গুলো মানবজাতির সামনে তুলে ধরার জন্য যারা যে ভাবে কাজ করেছেন ইতিহাসে তারাই ধন্য। কুরআন ও হাদীসের আলোকে সহজ সাবলীল ভাষায় ইসলামী আকীদাগুলো মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়া একটি মৌলিক কর্ম। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে অনেক বাড়াবাড়ি ছিল। ফলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফিরকা, দল, উপদল ও বিভক্তি তৈরি হয়েছে। অনেকেই বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে গোমরাহ হয়েছে এবং সত্য বিমুখ ও বিচ্যুত হয়েছে। কিন্তু আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বৈশিষ্ট্য হলো, কুরআন ও হাদীস থেকে সাহাবীগণের অনুকরণে ঈমান ও আকীদাকে গ্রহণ করা। ইসলামী আকীদা গ্রহণ করা ও জানার ক্ষেত্রে কুরআন হাদীস নির্ভর হওয়াই তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
কুরআন হাদীস অনুযায়ী বিশুদ্ধ আকীদা ও ঈমানের রুকনগুলো অনেকেই আলোচনা করেছেন। তবে শাইখ আহমদ ইবন আব্দুর রহমান আল-কাযী ইসলামী আকীদা ও ঈমানের বিষয়গুলো হাদীসে জিবরীলের তারতীবে যেভাবে ধারাবাহিক আলোচনা করেছেন তার কোনো তুলনা হয় না। কুরআন ও হাদীস থেকে ঈমানের বিষয়গুলো শিক্ষা করার বিষয়ে এ ধরণের একটি বই পাওয়া খুবই দুর্লভ। বইটি মূলত: আরবী ভাষায় রচিত। তবে বইটির বিষয় বস্তুগুলো বাংলা ভাষাভাষি ভাইদের জন্য খুবই জরুরি। বিষয়গুলো জানা না থাকলে ঈমান পরিপূর্ণ হয় না। এ কারণে ইসলামী আকীদার বিষয়গুলো বাংলা ভাষা-ভাষি ভাই বোনদের জন্য তুলে ধরার লক্ষ্যে বইটি অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। সহজ ও সাবলিল ভাষায় বইটি অনুবাদ করে বিষয় বস্তুগুলোকে ফুটে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি। আশা করি এ বইটি পড়ে ইসলামী আকীদা ও ঈমানের বিষয়গুলো শিখা ও শেখানো মুসলিম ভাই বোনদের জন্য সহজ হবে।
অনুবাদক
জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
কুরআন হাদীস অনুযায়ী বিশুদ্ধ আকীদা ও ঈমানের রুকনগুলো অনেকেই আলোচনা করেছেন। তবে শাইখ আহমদ ইবন আব্দুর রহমান আল-কাযী ইসলামী আকীদা ও ঈমানের বিষয়গুলো হাদীসে জিবরীলের তারতীবে যেভাবে ধারাবাহিক আলোচনা করেছেন তার কোনো তুলনা হয় না। কুরআন ও হাদীস থেকে ঈমানের বিষয়গুলো শিক্ষা করার বিষয়ে এ ধরণের একটি বই পাওয়া খুবই দুর্লভ। বইটি মূলত: আরবী ভাষায় রচিত। তবে বইটির বিষয় বস্তুগুলো বাংলা ভাষাভাষি ভাইদের জন্য খুবই জরুরি। বিষয়গুলো জানা না থাকলে ঈমান পরিপূর্ণ হয় না। এ কারণে ইসলামী আকীদার বিষয়গুলো বাংলা ভাষা-ভাষি ভাই বোনদের জন্য তুলে ধরার লক্ষ্যে বইটি অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। সহজ ও সাবলিল ভাষায় বইটি অনুবাদ করে বিষয় বস্তুগুলোকে ফুটে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি। আশা করি এ বইটি পড়ে ইসলামী আকীদা ও ঈমানের বিষয়গুলো শিখা ও শেখানো মুসলিম ভাই বোনদের জন্য সহজ হবে।
অনুবাদক
জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
নিশ্চয় সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, তাঁর নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁরই নিকট ক্ষমা চাই। আর আমরা আমাদের আত্মার অনিষ্টতা থেকে এবং আমাদের আমলসমূহের মন্দ পরিণতি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই এবং যাকে গোমরাহ করেন তাকে হিদায়াত দেওয়ারও কেউ নেই। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো ইলাহ নেই, তার কোনো শরীক নেই। যিনি এ কথা বলেন:
﴿هُوَ ٱلَّذِي بَعَثَ فِي ٱلۡأُمِّيِّۧنَ رَسُولٗا مِّنۡهُمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٖ ٢﴾ [ الجمعة : ٢ ]
“তিনিই উম্মীদের [উম্মী দ্বারা আরবের লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে।] মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যে তাদের কাছে তেলাওয়াত করে তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করে এবং তাদেরকে শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমাত। যদিও ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল”। [সূরা আল-জুমু‘আ, আয়াত: ২] আর আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তার বান্দা ও রাসূল। যাকে প্রেরণ করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি করুণা করেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ١٦٤﴾ [ ال عمران : ١٦٤ ]
“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যেহেতু তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যেন সে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৪ ]
অতঃপর...
মহান আল্লাহ তার রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্য দীন ও হিদায়াতের আলোকবর্তিকা দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে এবং স্পষ্ট গোমরাহী থেকে এমন পরিপূর্ণ হিদায়াত যা দ্বারা বক্ষ প্রশস্ত হয় এবং অন্তরসমূহ পরিতৃপ্তি লাভ করে তার দিকে বের করে নিয়ে আসেন। কারণ, হিদায়াত হলো, (উপকারী ইলম) ও (সত্য দীন) হলো, নেক আমল। এ দুটি মহান রুকনের উপর ভিত্তি করেই হায়াতে তাইয়্যেবা তথা পবিত্র জীবন অস্তিত্ব লাভ করে।
একজন বান্দা তার বিশ্বাস, ইবাদাত, মু‘আমালা ও চারিত্রিক গুণাবলীর বিষয়ে যতকিছুর মুখাপেক্ষি হয় তার সবই মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের অন্তর্ভুক্ত। কুরআনে যা সংক্ষিপ্ত তার বর্ণনা এবং যা অস্পষ্ট তার ব্যাখ্যা এবং যা ব্যাপক তার বিস্তারিত জ্ঞান প্রদানের জন্য রয়েছে পবিত্র নির্ভরযোগ্য হাদীস । যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ألا وإني أوتيت الكتاب، ومثله معه»
“জেনে রেখো, অবশ্যই আমাকে কিতাব দেওয়া হয়েছে এবং কিতাবের সাথে দেওয়া হয়েছে কিতাবের মতো অন্য একটি বিষয়” যাকে হাদীস বলা হয়। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৬]
এ দীনের বুনিয়াদ, মূলনীতি, শক্তির উৎস এবং এ দীন সমস্ত দীনের উপর বিজয়ী দীন হওয়ার অন্তর্নিহিত কারণ হলো, ইসলামী আকীদা। কারণ, ইসলামী আকীদায় রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য যা অন্য কোনো দীনের মধ্যে নেই। যেমন,
প্রথমত: তাঅহীদ: আল্লাহ তা‘আলাকে ইবাদতের ক্ষেত্রে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ-অনুকরণের ক্ষেত্রে একক জ্ঞান করার নাম তাঅহীদ।
দ্বিতীয়ত: অহী-নির্ভরতা: আর তা হলো, উৎস হিসেবে অহীকেই গ্রহণ করা, কুরআন ও হাদীসের বাইরে না যাওয়া এবং কোনো যুক্তি ও কিয়াসের প্রতি ঝুঁকে না পড়া।
তৃতীয়ত: শয়তানের ছোঁয়া লাগার পূর্বে মহান আল্লাহ মানবজাতিকে যে ফিতরাত বা স্বভাবজাত ব্যবস্থাপনার উপর সৃষ্টি করেছেন সে ফিতরাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া।
চতুর্থত: সন্দেহ ও সংশয় মুক্ত, সু-স্পষ্ট বিবেক বুদ্ধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া।
পঞ্চমত: ব্যাপকতা: সৃষ্টি, জীবন ও মানুষের জীবনের এমন কোনো দিক নেই যার সু-স্পষ্ট বর্ণনা ও সমাধান তাতে করা হয় নি।
ষষ্টত: সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সদৃশ হওয়া: দীনের কোনো একটি বিধানের মধ্যে কোনো প্রকার বৈপরীত্য নেই এবং কোনো একটি বিধানের সাথে অপর কোনো বিধানের অসঙ্গতি নেই। বরং একটি অপরটিকে সত্যায়ন করে।
সপ্তম: মাধ্যম পন্থা: বিবিধ মতবাদের মাঝে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির যে দোষ রয়েছে, তা থেকে তা মুক্ত। বরং ইসলামী আকীদা সেগুলোর মাঝখানে ন্যায় ও ইনসাফের একটি দাঁড়িপাল্লা।
এ বৈশিষ্ট্যসমূহের ফলাফল হলো নিম্নলিখিত বিষয়গুলো:
প্রথমত: মাখলুকের গোলামী পরিহার করে রাব্বুল আলামীনের গোলামীকে বাস্তবায়ন করা।
দ্বিতীয়ত: বিদ‘আতী ও বিদ‘আত মুক্ত হয়ে রাব্বুল আলামীনের রাসূলের অনুসরণ-অনুকরণকে বাস্তবায়ন করা।
তৃতীয়ত: মহা প্রজ্ঞাবান ও মহা পরিচালক স্রষ্টার সাথে সু-সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে আত্মার প্রশান্তি ও অন্তরের নিরাপত্তা লাভ করা।
চতুর্থত: কুসংস্কার ও বিবাদ থেকে নিরাপত্তা লাভ করা, চিন্তার পরিতৃপ্ততা ও বুদ্ধির যথাযথ ব্যবহারের সুযোগ লাভ করা।
পঞ্চমত: দেহ ও আত্মার প্রয়োজনে সাড়া দেওয়া এবং বিশ্বাস ও চাল-চলন, আচার ব্যবহারের মাঝে পূর্ণতা।
আলেমগণ সর্বদা ইসলামী আকীদাকে তাদের প্রধান লক্ষ্য হিসেবেই বিবেচনা করতেন। তারা ইসলামী আকীদা শিক্ষা দেওয়া, ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি কাজেই তাদের সব রকম চেষ্টা ব্যয় করতেন। এ বিষয়ে তারা কেউ কেউ সংক্ষিপ্ত কিতাব বা ভাষ্য আকারে আবার কেউ কেউ ব্যাখ্যা আকারে বিস্তারিত কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন। আবার কোনো কোনো সময় তারা সালাফদের আকীদার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, আবার কখনো নির্দিষ্ট কোনো মাসআলা, আবার কখনো বিদ‘আতী ও প্রবৃত্তির অনুসারীদের জবাব দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কিতাবাদি লিখতেন।
আমি আকীদার মাসায়েলকে কাছাকাছি করা এবং ঈমানের ছয়টি মূলনীতি যার আলোচনা ধারাবাহিকভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রসিদ্ধ হাদীস, হাদীসে জিবরীল-এ রয়েছে সে তারতীব অনুযায়ী শুধুমাত্র দু’টি অহীর নস-কুরআন ও হাদীসের উপর নির্ভর করে আলোচনা করাকে ভালো মনে করেছি। প্রতিটি মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন মাসআলা মূলনীতির আলোকে তুলে ধরা আর যারা এ অধ্যায়ের আলোকে পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ হয়েছে তাদের চিহ্নিত করা এবং সংক্ষেপে তাদের যুক্তিকে খন্ডন করার বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছি। ফলে এ আকীদার কিতাবটি দীর্ঘ লম্বা ও সংক্ষিপ্ত উভয়ের মাঝামাঝি রচিত হয়েছে। অর্থাৎ একেবারে লম্বাও নয় আবার একেবারে সংক্ষিপ্তও নয়। বইটির বর্ণনাকে খুবই স্পষ্ট ও সহজ করা হয়েছে যাতে প্রতিটি মুসলিম এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে এবং সহজ ও ধারাবাহিকভাবে সালাফদের আকীদার সার সংক্ষেপ জেনে মহান লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। আমি এ কিতাবের নাম রেখেছি, ‘কুরআন ও হাদীসের আলোকে সহজ আকীদা’ বা
( العقيدة الميسرة من الكتاب العزيز والسنة المطهرة )
আল্লাহ তা‘আলার নিকট আমার কামনা, তিনি যেন আমার এ আমলকে কবুল করেন এবং তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অসীলা করেন। আর এর দ্বারা তিনি তার বান্দাদেরকে উপকৃত করেন।
وصلى الله وسلم على نبينا محمد ، وعلى آله وصحبه أجمعين .
লেখক: আহমাদ ইবন আব্দুর রহমান আল-কাযী
উনাইযাহ: সৌদি আরব
তাং ১৭/২/১৪২৭
﴿هُوَ ٱلَّذِي بَعَثَ فِي ٱلۡأُمِّيِّۧنَ رَسُولٗا مِّنۡهُمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٖ ٢﴾ [ الجمعة : ٢ ]
“তিনিই উম্মীদের [উম্মী দ্বারা আরবের লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে।] মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যে তাদের কাছে তেলাওয়াত করে তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করে এবং তাদেরকে শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমাত। যদিও ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল”। [সূরা আল-জুমু‘আ, আয়াত: ২] আর আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তার বান্দা ও রাসূল। যাকে প্রেরণ করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি করুণা করেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ١٦٤﴾ [ ال عمران : ١٦٤ ]
“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যেহেতু তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যেন সে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৪ ]
অতঃপর...
মহান আল্লাহ তার রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্য দীন ও হিদায়াতের আলোকবর্তিকা দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে এবং স্পষ্ট গোমরাহী থেকে এমন পরিপূর্ণ হিদায়াত যা দ্বারা বক্ষ প্রশস্ত হয় এবং অন্তরসমূহ পরিতৃপ্তি লাভ করে তার দিকে বের করে নিয়ে আসেন। কারণ, হিদায়াত হলো, (উপকারী ইলম) ও (সত্য দীন) হলো, নেক আমল। এ দুটি মহান রুকনের উপর ভিত্তি করেই হায়াতে তাইয়্যেবা তথা পবিত্র জীবন অস্তিত্ব লাভ করে।
একজন বান্দা তার বিশ্বাস, ইবাদাত, মু‘আমালা ও চারিত্রিক গুণাবলীর বিষয়ে যতকিছুর মুখাপেক্ষি হয় তার সবই মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের অন্তর্ভুক্ত। কুরআনে যা সংক্ষিপ্ত তার বর্ণনা এবং যা অস্পষ্ট তার ব্যাখ্যা এবং যা ব্যাপক তার বিস্তারিত জ্ঞান প্রদানের জন্য রয়েছে পবিত্র নির্ভরযোগ্য হাদীস । যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ألا وإني أوتيت الكتاب، ومثله معه»
“জেনে রেখো, অবশ্যই আমাকে কিতাব দেওয়া হয়েছে এবং কিতাবের সাথে দেওয়া হয়েছে কিতাবের মতো অন্য একটি বিষয়” যাকে হাদীস বলা হয়। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৬]
এ দীনের বুনিয়াদ, মূলনীতি, শক্তির উৎস এবং এ দীন সমস্ত দীনের উপর বিজয়ী দীন হওয়ার অন্তর্নিহিত কারণ হলো, ইসলামী আকীদা। কারণ, ইসলামী আকীদায় রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য যা অন্য কোনো দীনের মধ্যে নেই। যেমন,
প্রথমত: তাঅহীদ: আল্লাহ তা‘আলাকে ইবাদতের ক্ষেত্রে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ-অনুকরণের ক্ষেত্রে একক জ্ঞান করার নাম তাঅহীদ।
দ্বিতীয়ত: অহী-নির্ভরতা: আর তা হলো, উৎস হিসেবে অহীকেই গ্রহণ করা, কুরআন ও হাদীসের বাইরে না যাওয়া এবং কোনো যুক্তি ও কিয়াসের প্রতি ঝুঁকে না পড়া।
তৃতীয়ত: শয়তানের ছোঁয়া লাগার পূর্বে মহান আল্লাহ মানবজাতিকে যে ফিতরাত বা স্বভাবজাত ব্যবস্থাপনার উপর সৃষ্টি করেছেন সে ফিতরাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া।
চতুর্থত: সন্দেহ ও সংশয় মুক্ত, সু-স্পষ্ট বিবেক বুদ্ধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া।
পঞ্চমত: ব্যাপকতা: সৃষ্টি, জীবন ও মানুষের জীবনের এমন কোনো দিক নেই যার সু-স্পষ্ট বর্ণনা ও সমাধান তাতে করা হয় নি।
ষষ্টত: সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সদৃশ হওয়া: দীনের কোনো একটি বিধানের মধ্যে কোনো প্রকার বৈপরীত্য নেই এবং কোনো একটি বিধানের সাথে অপর কোনো বিধানের অসঙ্গতি নেই। বরং একটি অপরটিকে সত্যায়ন করে।
সপ্তম: মাধ্যম পন্থা: বিবিধ মতবাদের মাঝে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির যে দোষ রয়েছে, তা থেকে তা মুক্ত। বরং ইসলামী আকীদা সেগুলোর মাঝখানে ন্যায় ও ইনসাফের একটি দাঁড়িপাল্লা।
এ বৈশিষ্ট্যসমূহের ফলাফল হলো নিম্নলিখিত বিষয়গুলো:
প্রথমত: মাখলুকের গোলামী পরিহার করে রাব্বুল আলামীনের গোলামীকে বাস্তবায়ন করা।
দ্বিতীয়ত: বিদ‘আতী ও বিদ‘আত মুক্ত হয়ে রাব্বুল আলামীনের রাসূলের অনুসরণ-অনুকরণকে বাস্তবায়ন করা।
তৃতীয়ত: মহা প্রজ্ঞাবান ও মহা পরিচালক স্রষ্টার সাথে সু-সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে আত্মার প্রশান্তি ও অন্তরের নিরাপত্তা লাভ করা।
চতুর্থত: কুসংস্কার ও বিবাদ থেকে নিরাপত্তা লাভ করা, চিন্তার পরিতৃপ্ততা ও বুদ্ধির যথাযথ ব্যবহারের সুযোগ লাভ করা।
পঞ্চমত: দেহ ও আত্মার প্রয়োজনে সাড়া দেওয়া এবং বিশ্বাস ও চাল-চলন, আচার ব্যবহারের মাঝে পূর্ণতা।
আলেমগণ সর্বদা ইসলামী আকীদাকে তাদের প্রধান লক্ষ্য হিসেবেই বিবেচনা করতেন। তারা ইসলামী আকীদা শিক্ষা দেওয়া, ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি কাজেই তাদের সব রকম চেষ্টা ব্যয় করতেন। এ বিষয়ে তারা কেউ কেউ সংক্ষিপ্ত কিতাব বা ভাষ্য আকারে আবার কেউ কেউ ব্যাখ্যা আকারে বিস্তারিত কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন। আবার কোনো কোনো সময় তারা সালাফদের আকীদার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, আবার কখনো নির্দিষ্ট কোনো মাসআলা, আবার কখনো বিদ‘আতী ও প্রবৃত্তির অনুসারীদের জবাব দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কিতাবাদি লিখতেন।
আমি আকীদার মাসায়েলকে কাছাকাছি করা এবং ঈমানের ছয়টি মূলনীতি যার আলোচনা ধারাবাহিকভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রসিদ্ধ হাদীস, হাদীসে জিবরীল-এ রয়েছে সে তারতীব অনুযায়ী শুধুমাত্র দু’টি অহীর নস-কুরআন ও হাদীসের উপর নির্ভর করে আলোচনা করাকে ভালো মনে করেছি। প্রতিটি মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন মাসআলা মূলনীতির আলোকে তুলে ধরা আর যারা এ অধ্যায়ের আলোকে পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ হয়েছে তাদের চিহ্নিত করা এবং সংক্ষেপে তাদের যুক্তিকে খন্ডন করার বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছি। ফলে এ আকীদার কিতাবটি দীর্ঘ লম্বা ও সংক্ষিপ্ত উভয়ের মাঝামাঝি রচিত হয়েছে। অর্থাৎ একেবারে লম্বাও নয় আবার একেবারে সংক্ষিপ্তও নয়। বইটির বর্ণনাকে খুবই স্পষ্ট ও সহজ করা হয়েছে যাতে প্রতিটি মুসলিম এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে এবং সহজ ও ধারাবাহিকভাবে সালাফদের আকীদার সার সংক্ষেপ জেনে মহান লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। আমি এ কিতাবের নাম রেখেছি, ‘কুরআন ও হাদীসের আলোকে সহজ আকীদা’ বা
( العقيدة الميسرة من الكتاب العزيز والسنة المطهرة )
আল্লাহ তা‘আলার নিকট আমার কামনা, তিনি যেন আমার এ আমলকে কবুল করেন এবং তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অসীলা করেন। আর এর দ্বারা তিনি তার বান্দাদেরকে উপকৃত করেন।
وصلى الله وسلم على نبينا محمد ، وعلى آله وصحبه أجمعين .
লেখক: আহমাদ ইবন আব্দুর রহমান আল-কাযী
উনাইযাহ: সৌদি আরব
তাং ১৭/২/১৪২৭
ইসলামী আকীদার মূল ভিত্তি হলো, আল্লাহ, ফিরিশতাগণ, আসমানী কিতাবসমূহ, আল্লাহর প্রেরিত নাবী-রাসূলগণ, আখিরাত দিবস এবং তাকদীরের ভালো কিংবা মন্দের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَٰكِنَّ ٱلۡبِرَّ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ وَٱلۡكِتَٰبِ وَٱلنَّبِيِّۧنَ﴾ [ البقرة : ١٧٧ ]
“বরং ভালো কাজ হলো, যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফিরিশতাগণ, কিতাব ও নাবীগণের প্রতি”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৭]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ﴾ [ البقرة : ٢٨٥ ]
“রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফিরিশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮৫]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَن يَكۡفُرۡ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلَۢا بَعِيدًا ١٣٦﴾ [ النساء : ١٣٦ ]
“আর যে কেউ আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং শেষ দিনকে অস্বীকার করবে, সে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত হবে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩৬]
জিবরীল আলাইহিস সালাম ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেন:
«أن تؤمن بالله، وملائكته، وكتبه، ورسله، واليوم الآخر، وتؤمن بالقدر خبره وشره»
“ঈমান হলো, আল্লাহর উপর ঈমান স্থাপন করা, আল্লাহর ফিরিশতা, আসমানী কিতাবসমূহ, আল্লাহর প্রেরিত নাবী-রাসূলগণ, আখিরাত দিবস এবং তাকদীরের ভালো কিংবা মন্দের উপর ঈমান আনয়ন করা”। [সহীহ মুসলিম ২/৮]
﴿وَلَٰكِنَّ ٱلۡبِرَّ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ وَٱلۡكِتَٰبِ وَٱلنَّبِيِّۧنَ﴾ [ البقرة : ١٧٧ ]
“বরং ভালো কাজ হলো, যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফিরিশতাগণ, কিতাব ও নাবীগণের প্রতি”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৭]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ﴾ [ البقرة : ٢٨٥ ]
“রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফিরিশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮৫]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَن يَكۡفُرۡ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلَۢا بَعِيدًا ١٣٦﴾ [ النساء : ١٣٦ ]
“আর যে কেউ আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং শেষ দিনকে অস্বীকার করবে, সে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত হবে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩৬]
জিবরীল আলাইহিস সালাম ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেন:
«أن تؤمن بالله، وملائكته، وكتبه، ورسله، واليوم الآخر، وتؤمن بالقدر خبره وشره»
“ঈমান হলো, আল্লাহর উপর ঈমান স্থাপন করা, আল্লাহর ফিরিশতা, আসমানী কিতাবসমূহ, আল্লাহর প্রেরিত নাবী-রাসূলগণ, আখিরাত দিবস এবং তাকদীরের ভালো কিংবা মন্দের উপর ঈমান আনয়ন করা”। [সহীহ মুসলিম ২/৮]
আল্লাহর উপর ঈমান হলো, আল্লাহর অস্তিত্বের উপর সু-দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। তিনি প্রতিটি বস্তুর রব, যাবতীয় ইবাদতের তিনিই একক হকদার ও উপযুক্ত, তিনি ছাড়া আর কেউ ইবাদতের হকদার নয়। তিনিই পরিপূর্ণতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার সব গুণে গুণান্বিত। সব ধণের দুর্বলতা ও অপূর্ণতার গুণাবলি থেকে তিনি পবিত্র।
প্রথমত: আল্লাহর অস্তিত্বের উপর ঈমান:
সবচেয়ে বড় সত্য ও বাস্তবতা হলো, আল্লাহর অস্তিত্ব। একে স্বীকার করাই সত্যবাদিতা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ هُوَ ٱلۡبَٰطِلُ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡكَبِيرُ ٦٢﴾ [ الحج : ٦٢ ]
“আর এটা এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে, অবশ্যই তা বাতিল। আর নিশ্চয় আল্লাহ তো সমুচ্চ, সুমহান”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৬২]
আর আল্লাহর অস্তিত্বে সন্দেহ করাই হচ্ছে বড় মিথ্যাচার ও জঘন্য পাপাচার। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قَالَتۡ رُسُلُهُمۡ أَفِي ٱللَّهِ شَكّٞ فَاطِرِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ ١٠﴾ [ ابراهيم : ١٠ ]
“তাদের রাসূলগণ বলেছিল, ‘আল্লাহর ব্যাপারেও কি কোনো সন্দেহ আছে, যিনি আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা?”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ১০]
আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হটকারিতা, অহংকার ও কুফরি। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قَالَ لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَآ أَنزَلَ هَٰٓؤُلَآءِ إِلَّا رَبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ بَصَآئِرَ وَإِنِّي لَأَظُنُّكَ يَٰفِرۡعَوۡنُ مَثۡبُورٗا ١٠٢﴾ [ الاسراء : ١٠٢ ]
“সে বলল, ‘তুমি জান যে, এ সকল বিষয় কেবল আসমানসমূহ ও জমিনের রবই নাযিল করেছেন প্রত্যক্ষ প্রমাণ হিসেবে। আর হে ফির‘আউন, আমি তো ধারণা করি তুমি ধ্বংসপ্রাপ্ত”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১০২]
মহান আল্লাহ আরও বলেন:
﴿قَالَ فِرۡعَوۡنُ وَمَا رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٣ قَالَ رَبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَمَا بَيۡنَهُمَآۖ إِن كُنتُم مُّوقِنِينَ ٢٤ قَالَ لِمَنۡ حَوۡلَهُۥٓ أَلَا تَسۡتَمِعُونَ ٢٥ قَالَ رَبُّكُمۡ وَرَبُّ ءَابَآئِكُمُ ٱلۡأَوَّلِينَ ٢٦ قَالَ إِنَّ رَسُولَكُمُ ٱلَّذِيٓ أُرۡسِلَ إِلَيۡكُمۡ لَمَجۡنُونٞ ٢٧ قَالَ رَبُّ ٱلۡمَشۡرِقِ وَٱلۡمَغۡرِبِ وَمَا بَيۡنَهُمَآۖ إِن كُنتُمۡ تَعۡقِلُونَ ٢٨﴾ [ الشعراء : ٢٣، ٢٨ ]
“ফির‘আউন বলল, ‘সৃষ্টিকুলের রব কে?’ মূসা বলল, ‘ তিনি হলেন আসমানসমূহ ও জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর রব, যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসী হয়ে থাক।’ ফির‘আউন তার আশেপাশে যারা ছিল তাদেরকে বলল, ‘তোমরা কি মনোযোগসহ শুনছ না’? মূসা বলল, ‘তিনি তোমাদের রব এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদেরও রব’। ফির‘আউন বলল, ‘তোমাদের কাছে প্রেরিত তোমাদের এই রাসূল নিশ্চয়ই পাগল’। মূসা বলল, ‘তিনি পূর্ব ও পশ্চিম এবং এতদোভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর রব, যদি তোমরা বুঝে থাক’।
[সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ২৩, ২৮]
সবচেয়ে বড় সত্য ও বাস্তবতা হলো, আল্লাহর অস্তিত্ব। একে স্বীকার করাই সত্যবাদিতা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ هُوَ ٱلۡبَٰطِلُ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡكَبِيرُ ٦٢﴾ [ الحج : ٦٢ ]
“আর এটা এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে, অবশ্যই তা বাতিল। আর নিশ্চয় আল্লাহ তো সমুচ্চ, সুমহান”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৬২]
আর আল্লাহর অস্তিত্বে সন্দেহ করাই হচ্ছে বড় মিথ্যাচার ও জঘন্য পাপাচার। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قَالَتۡ رُسُلُهُمۡ أَفِي ٱللَّهِ شَكّٞ فَاطِرِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ ١٠﴾ [ ابراهيم : ١٠ ]
“তাদের রাসূলগণ বলেছিল, ‘আল্লাহর ব্যাপারেও কি কোনো সন্দেহ আছে, যিনি আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা?”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ১০]
আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হটকারিতা, অহংকার ও কুফরি। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قَالَ لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَآ أَنزَلَ هَٰٓؤُلَآءِ إِلَّا رَبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ بَصَآئِرَ وَإِنِّي لَأَظُنُّكَ يَٰفِرۡعَوۡنُ مَثۡبُورٗا ١٠٢﴾ [ الاسراء : ١٠٢ ]
“সে বলল, ‘তুমি জান যে, এ সকল বিষয় কেবল আসমানসমূহ ও জমিনের রবই নাযিল করেছেন প্রত্যক্ষ প্রমাণ হিসেবে। আর হে ফির‘আউন, আমি তো ধারণা করি তুমি ধ্বংসপ্রাপ্ত”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১০২]
মহান আল্লাহ আরও বলেন:
﴿قَالَ فِرۡعَوۡنُ وَمَا رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٣ قَالَ رَبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَمَا بَيۡنَهُمَآۖ إِن كُنتُم مُّوقِنِينَ ٢٤ قَالَ لِمَنۡ حَوۡلَهُۥٓ أَلَا تَسۡتَمِعُونَ ٢٥ قَالَ رَبُّكُمۡ وَرَبُّ ءَابَآئِكُمُ ٱلۡأَوَّلِينَ ٢٦ قَالَ إِنَّ رَسُولَكُمُ ٱلَّذِيٓ أُرۡسِلَ إِلَيۡكُمۡ لَمَجۡنُونٞ ٢٧ قَالَ رَبُّ ٱلۡمَشۡرِقِ وَٱلۡمَغۡرِبِ وَمَا بَيۡنَهُمَآۖ إِن كُنتُمۡ تَعۡقِلُونَ ٢٨﴾ [ الشعراء : ٢٣، ٢٨ ]
“ফির‘আউন বলল, ‘সৃষ্টিকুলের রব কে?’ মূসা বলল, ‘ তিনি হলেন আসমানসমূহ ও জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর রব, যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসী হয়ে থাক।’ ফির‘আউন তার আশেপাশে যারা ছিল তাদেরকে বলল, ‘তোমরা কি মনোযোগসহ শুনছ না’? মূসা বলল, ‘তিনি তোমাদের রব এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদেরও রব’। ফির‘আউন বলল, ‘তোমাদের কাছে প্রেরিত তোমাদের এই রাসূল নিশ্চয়ই পাগল’। মূসা বলল, ‘তিনি পূর্ব ও পশ্চিম এবং এতদোভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর রব, যদি তোমরা বুঝে থাক’।
[সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ২৩, ২৮]
এ ছাড়াও অসংখ্য বিষয় রয়েছে যেগুলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে। তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে:
এক. সুস্থ মানব স্বভাব:
যেকোনো সুস্থ মানব স্বভাব বা প্রকৃতির সাথে আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়টি জড়িত। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَأَقِمۡ وَجۡهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفٗاۚ فِطۡرَتَ ٱللَّهِ ٱلَّتِي فَطَرَ ٱلنَّاسَ عَلَيۡهَاۚ لَا تَبۡدِيلَ لِخَلۡقِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلۡقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ٣٠﴾ [ الروم : ٣٠ ]
“অতএব, তুমি একনিষ্ঠ হয়ে দীনের জন্য নিজকে প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতি, [ فطرة অর্থ, স্বভাব, প্রকৃতি। মহান আল্লাহ মানুষকে যে সহজাত প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তাকেই فطرة الله বলা হয়েছে। আর فطرة الله এর মর্মার্থ হলো ইসলাম।] যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোনো পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না”। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৩০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ما من مولود إلا يولد على الفطرة فأبواه يهودانه، أو ينصرانه، أو يمجسانه» .
“প্রতিটি নবজাতক ফিতরাতে ইসলামীর উপর জন্মগ্রহণ করে। পরবর্তীতে তার মাতা-পিতা তাকে ইয়াহূদী, খৃষ্টান অথবা অগ্নিপূজকে রুপান্তরিত করে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৫৮]
প্রতিটি মাখলুক বড় না হওয়া পর্যন্ত তার আসল ফিতরাতের উপর বাকী থাকে এবং তার অন্তরে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি ঈমান প্রগাঢ়ভাবে গেঁতে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে তার স্বভাব ও প্রকৃতির উপর এমন কিছু চেপে বসে যা তার বিশ্বাসকে নষ্ট করে দেয় এবং তাকে ঈমান থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যেমন, মহান আল্লাহ হাদীসে কুদসীতে বলেন:
«إني خلقت عبادي حنفاء كلهم ، وإنهم أتتهم الشياطين ، فاجتالتهم عن دينهم» .
“নিশ্চয় আমি একনিষ্ঠভাবে নীরেট একত্ববাদে বিশ্বাসী করে আমার সমস্ত বান্দাদের সৃষ্টি করেছি। তারপর তাদের নিকট শয়তানগুলো আসল এবং তাদেরকে দীন থেকে দূরে সরিয়ে দিল”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৬৫]
দুই. সঠিক বিবেক:
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَمۡ خُلِقُواْ مِنۡ غَيۡرِ شَيۡءٍ أَمۡ هُمُ ٱلۡخَٰلِقُونَ ٣٥﴾ [ الطور : ٣٤ ]
“তারা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে, না তারাই স্রষ্টা?”। [সূরা আত-তূর, আয়াত: ৩৪]
সন্দেহ ও সংশয় থেকে নিরাপদ জ্ঞান ও বিবেক এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বাধ্য যে, সৃষ্টির জন্য অবশ্যই একজন স্রষ্টার প্রয়োজন আছে। কারণ, এ সু-বিশাল সৃষ্টি জগত একাকী-নিজে নিজে বা আকস্মিকভাবে অস্তিত্বে আসা কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়। আবার অস্তিত্বহীন বস্তুও কোনো কিছুকে অস্তিত্ব দান করতে পারে না। সুতরাং অবশ্যই সৃষ্টির জন্য একজন স্রষ্টার অস্তিত্ব থাকা প্রয়োজন। আর তিনি হলেন, আল্লাহ তা‘আলা। জাহেলিয়্যাতের যুগে আরবের খতীব ক্বিস ইবন সা‘য়েদাহ আল-ইয়াদী সু-স্পষ্ট বিবেকের দলীল পেশ করে বলেন:
«البعرة تدل على البعير . والأثر يدل على المسير . فسماء ذات أبراج، وأرض ذات فجاج، أفلا تدل على الصانع الخبير»
“লাদ প্রমাণ করে নিশ্চয় এখানে উট ছিল, পদ চিহ্ন প্রমাণ করে নিশ্চয় এ পথ দিয়ে কেউ চলাচল করছিল। সুতরাং সু-বিশাল নক্ষত্র খচিত আসমান, নদ-নদী, গাছ-পালা ও সমূদ্রে ভরা পৃথিবী কি এ কথা প্রমাণ করে না যে, নিশ্চয় এর জন্য একজন কারিগর বা স্রষ্টা রয়েছেন?”
তিন. ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সাক্ষ্য:
মহান আল্লাহ তার স্বীয় নাবী নূহ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন:
﴿فَدَعَا رَبَّهُۥٓ أَنِّي مَغۡلُوبٞ فَٱنتَصِرۡ ١٠ فَفَتَحۡنَآ أَبۡوَٰبَ ٱلسَّمَآءِ بِمَآءٖ مُّنۡهَمِرٖ ١١ وَفَجَّرۡنَا ٱلۡأَرۡضَ عُيُونٗا فَٱلۡتَقَى ٱلۡمَآءُ عَلَىٰٓ أَمۡرٖ قَدۡ قُدِرَ ١٢ وَحَمَلۡنَٰهُ عَلَىٰ ذَاتِ أَلۡوَٰحٖ وَدُسُرٖ ١٣ تَجۡرِي بِأَعۡيُنِنَا جَزَآءٗ لِّمَن كَانَ كُفِرَ ١٤﴾ [ القمر : ١٠، ١٤ ]
“অতঃপর সে তার রবকে আহ্বান করল যে, ‘নিশ্চয় আমি পরাজিত, অতএব তুমিই প্রতিশোধ গ্রহণ কর’। ফলে আমি বর্ষণশীল বারিধারার মাধ্যমে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দিলাম। আর ভূমিতে আমি ঝর্ণা উৎসারিত করলাম। ফলে সকল পানি মিলিত হলো নির্ধারিত নির্দেশনা অনুসারে। আর আমি তাকে (নূহকে) কাঠ ও পেরেক নির্মিত নৌযানে আরোহণ করালাম। যা আমার চাক্ষুস তত্ত্বাবধানে চলত, তার জন্য পুরস্কারস্বরূপ, যাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল”। [সূরা আল-কামার, আয়াত: ১০-১৪]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَأَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰٓ أَنِ ٱضۡرِب بِّعَصَاكَ ٱلۡبَحۡرَۖ فَٱنفَلَقَ فَكَانَ كُلُّ فِرۡقٖ كَٱلطَّوۡدِ ٱلۡعَظِيمِ ٦٣ وَأَزۡلَفۡنَا ثَمَّ ٱلۡأٓخَرِينَ ٦٤ وَأَنجَيۡنَا مُوسَىٰ وَمَن مَّعَهُۥٓ أَجۡمَعِينَ ٦٥ ثُمَّ أَغۡرَقۡنَا ٱلۡأٓخَرِينَ ٦٦ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗۖ وَمَا كَانَ أَكۡثَرُهُم مُّؤۡمِنِينَ ٦٧﴾ [ الشعراء : ٦٣، ٦٧ ]
“অতঃপর আমি মূসার প্রতি অহী পাঠালাম, ‘তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত কর।’ ফলে তা বিভক্ত হয়ে গেল। তারপর প্রত্যেক ভাগ বিশাল পাহাড়সদৃশ হয়ে গেল। আর আমি অপর দলটিকে সেই জায়গায় নিকটবর্তী করলাম, আর আমরা মূসা ও তার সাথে যারা ছিল সকলকে উদ্ধার করলাম, তারপর অপর দলটিকে ডুবিয়ে দিলাম। নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন। আর তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়”। [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ৪৯]
মহান আল্লাহ তার নাবী ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন:
﴿وَرَسُولًا إِلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ أَنِّي قَدۡ جِئۡتُكُم بَِٔايَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ أَنِّيٓ أَخۡلُقُ لَكُم مِّنَ ٱلطِّينِ كَهَيَۡٔةِ ٱلطَّيۡرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيۡرَۢا بِإِذۡنِ ٱللَّهِۖ وَأُبۡرِئُ ٱلۡأَكۡمَهَ وَٱلۡأَبۡرَصَ وَأُحۡيِ ٱلۡمَوۡتَىٰ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۖ وَأُنَبِّئُكُم بِمَا تَأۡكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمۡۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لَّكُمۡ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٤٩﴾ [ ال عمران : ٤٩ ]
“আর বানী ইসরাঈলদের রাসূল বানাবেন (সে বলবে) ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিদর্শন নিয়ে এসেছি যে, অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য কাদামাটি দিয়ে পাখির আকৃতি বানাব, অতঃপর আমি তাতে ফুঁক দেব। ফলে আল্লাহর হুকুমে সেটি পাখি হয়ে যাবে। আর আমি আল্লাহর হুকুমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রুগীকে সুস্থ করব এবং মৃতকে জীবিত করব। আর তোমরা যা আহার কর এবং তোমাদের ঘরে যা জমা করে রাখ তা আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব। নিশ্চয় এতে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা মুমিন হও’’। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৪৯]
মহান আল্লাহ সবাইকে সম্বোধন করে বলেন:
﴿أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ﴾ [ النمل : ٦٢ ]
“বরং তিনি, যিনি নিরুপায়ের আহ্বানে সাড়া দেন এবং বিপদ দূরীভূত করেন”। [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৬২]
নাবী-রাসূলদের হাতে প্রদর্শিত নিদর্শন, আহ্বানকারীদের আহ্বানে সাড়া দেওয়া, বিপদগ্রস্তদের বিপদ থেকে রক্ষা করা, এ কথার সু-স্পষ্ট ও জ্বলন্ত প্রমাণ যে, নাবীদের প্রেরণকারী, আহ্বানকারীর ডাকে সাড়াদানকারী এবং বিপদ থেকে রক্ষাকারী একজন মহান আল্লাহ অবশ্যই রয়েছেন।
চার. বিশুদ্ধ শরী‘আত:
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَۚ وَلَوۡ كَانَ مِنۡ عِندِ غَيۡرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُواْ فِيهِ ٱخۡتِلَٰفٗا كَثِيرٗا ٨٢﴾ [ النساء : ٨٢ ]
“তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮২]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَكُم بُرۡهَٰنٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكُمۡ نُورٗا مُّبِينٗا ١٧٤﴾ [ النساء : ١٧٤ ]
“হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট প্রমাণ এসেছে এবং আমরা তোমাদের নিকট স্পষ্ট আলো পবিত্র কুরআন নাযিল করেছি”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৭৪]
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَتۡكُم مَّوۡعِظَةٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَشِفَآءٞ لِّمَا فِي ٱلصُّدُورِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ ٥٧ ﴾ [ يونس : ٥٧ ]
“হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তরসমূহে যা থাকে তার শিফা, আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৭]
পূর্বে সংঘটিত যে সব গাইবী সংবাদ, বিশুদ্ধ আকীদা, ইনসাফপূর্ণ বিধান এবং উন্নত চরিত্রের আলোচনা কুরআনে কারীমে রয়েছে, তা দ্বারা এ কথা অবশ্যই প্রমাণিত হয় যে, কুরআন নিঃসন্দেহে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ একটি মহা গ্রন্থ। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মাখলুকের পক্ষ থেকে এ ধরণের কিতাব আসা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।
এক. সুস্থ মানব স্বভাব:
যেকোনো সুস্থ মানব স্বভাব বা প্রকৃতির সাথে আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়টি জড়িত। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَأَقِمۡ وَجۡهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفٗاۚ فِطۡرَتَ ٱللَّهِ ٱلَّتِي فَطَرَ ٱلنَّاسَ عَلَيۡهَاۚ لَا تَبۡدِيلَ لِخَلۡقِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلۡقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ٣٠﴾ [ الروم : ٣٠ ]
“অতএব, তুমি একনিষ্ঠ হয়ে দীনের জন্য নিজকে প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতি, [ فطرة অর্থ, স্বভাব, প্রকৃতি। মহান আল্লাহ মানুষকে যে সহজাত প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তাকেই فطرة الله বলা হয়েছে। আর فطرة الله এর মর্মার্থ হলো ইসলাম।] যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোনো পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না”। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৩০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ما من مولود إلا يولد على الفطرة فأبواه يهودانه، أو ينصرانه، أو يمجسانه» .
“প্রতিটি নবজাতক ফিতরাতে ইসলামীর উপর জন্মগ্রহণ করে। পরবর্তীতে তার মাতা-পিতা তাকে ইয়াহূদী, খৃষ্টান অথবা অগ্নিপূজকে রুপান্তরিত করে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৫৮]
প্রতিটি মাখলুক বড় না হওয়া পর্যন্ত তার আসল ফিতরাতের উপর বাকী থাকে এবং তার অন্তরে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি ঈমান প্রগাঢ়ভাবে গেঁতে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে তার স্বভাব ও প্রকৃতির উপর এমন কিছু চেপে বসে যা তার বিশ্বাসকে নষ্ট করে দেয় এবং তাকে ঈমান থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যেমন, মহান আল্লাহ হাদীসে কুদসীতে বলেন:
«إني خلقت عبادي حنفاء كلهم ، وإنهم أتتهم الشياطين ، فاجتالتهم عن دينهم» .
“নিশ্চয় আমি একনিষ্ঠভাবে নীরেট একত্ববাদে বিশ্বাসী করে আমার সমস্ত বান্দাদের সৃষ্টি করেছি। তারপর তাদের নিকট শয়তানগুলো আসল এবং তাদেরকে দীন থেকে দূরে সরিয়ে দিল”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৬৫]
দুই. সঠিক বিবেক:
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَمۡ خُلِقُواْ مِنۡ غَيۡرِ شَيۡءٍ أَمۡ هُمُ ٱلۡخَٰلِقُونَ ٣٥﴾ [ الطور : ٣٤ ]
“তারা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে, না তারাই স্রষ্টা?”। [সূরা আত-তূর, আয়াত: ৩৪]
সন্দেহ ও সংশয় থেকে নিরাপদ জ্ঞান ও বিবেক এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বাধ্য যে, সৃষ্টির জন্য অবশ্যই একজন স্রষ্টার প্রয়োজন আছে। কারণ, এ সু-বিশাল সৃষ্টি জগত একাকী-নিজে নিজে বা আকস্মিকভাবে অস্তিত্বে আসা কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়। আবার অস্তিত্বহীন বস্তুও কোনো কিছুকে অস্তিত্ব দান করতে পারে না। সুতরাং অবশ্যই সৃষ্টির জন্য একজন স্রষ্টার অস্তিত্ব থাকা প্রয়োজন। আর তিনি হলেন, আল্লাহ তা‘আলা। জাহেলিয়্যাতের যুগে আরবের খতীব ক্বিস ইবন সা‘য়েদাহ আল-ইয়াদী সু-স্পষ্ট বিবেকের দলীল পেশ করে বলেন:
«البعرة تدل على البعير . والأثر يدل على المسير . فسماء ذات أبراج، وأرض ذات فجاج، أفلا تدل على الصانع الخبير»
“লাদ প্রমাণ করে নিশ্চয় এখানে উট ছিল, পদ চিহ্ন প্রমাণ করে নিশ্চয় এ পথ দিয়ে কেউ চলাচল করছিল। সুতরাং সু-বিশাল নক্ষত্র খচিত আসমান, নদ-নদী, গাছ-পালা ও সমূদ্রে ভরা পৃথিবী কি এ কথা প্রমাণ করে না যে, নিশ্চয় এর জন্য একজন কারিগর বা স্রষ্টা রয়েছেন?”
তিন. ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সাক্ষ্য:
মহান আল্লাহ তার স্বীয় নাবী নূহ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন:
﴿فَدَعَا رَبَّهُۥٓ أَنِّي مَغۡلُوبٞ فَٱنتَصِرۡ ١٠ فَفَتَحۡنَآ أَبۡوَٰبَ ٱلسَّمَآءِ بِمَآءٖ مُّنۡهَمِرٖ ١١ وَفَجَّرۡنَا ٱلۡأَرۡضَ عُيُونٗا فَٱلۡتَقَى ٱلۡمَآءُ عَلَىٰٓ أَمۡرٖ قَدۡ قُدِرَ ١٢ وَحَمَلۡنَٰهُ عَلَىٰ ذَاتِ أَلۡوَٰحٖ وَدُسُرٖ ١٣ تَجۡرِي بِأَعۡيُنِنَا جَزَآءٗ لِّمَن كَانَ كُفِرَ ١٤﴾ [ القمر : ١٠، ١٤ ]
“অতঃপর সে তার রবকে আহ্বান করল যে, ‘নিশ্চয় আমি পরাজিত, অতএব তুমিই প্রতিশোধ গ্রহণ কর’। ফলে আমি বর্ষণশীল বারিধারার মাধ্যমে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দিলাম। আর ভূমিতে আমি ঝর্ণা উৎসারিত করলাম। ফলে সকল পানি মিলিত হলো নির্ধারিত নির্দেশনা অনুসারে। আর আমি তাকে (নূহকে) কাঠ ও পেরেক নির্মিত নৌযানে আরোহণ করালাম। যা আমার চাক্ষুস তত্ত্বাবধানে চলত, তার জন্য পুরস্কারস্বরূপ, যাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল”। [সূরা আল-কামার, আয়াত: ১০-১৪]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَأَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰٓ أَنِ ٱضۡرِب بِّعَصَاكَ ٱلۡبَحۡرَۖ فَٱنفَلَقَ فَكَانَ كُلُّ فِرۡقٖ كَٱلطَّوۡدِ ٱلۡعَظِيمِ ٦٣ وَأَزۡلَفۡنَا ثَمَّ ٱلۡأٓخَرِينَ ٦٤ وَأَنجَيۡنَا مُوسَىٰ وَمَن مَّعَهُۥٓ أَجۡمَعِينَ ٦٥ ثُمَّ أَغۡرَقۡنَا ٱلۡأٓخَرِينَ ٦٦ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗۖ وَمَا كَانَ أَكۡثَرُهُم مُّؤۡمِنِينَ ٦٧﴾ [ الشعراء : ٦٣، ٦٧ ]
“অতঃপর আমি মূসার প্রতি অহী পাঠালাম, ‘তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত কর।’ ফলে তা বিভক্ত হয়ে গেল। তারপর প্রত্যেক ভাগ বিশাল পাহাড়সদৃশ হয়ে গেল। আর আমি অপর দলটিকে সেই জায়গায় নিকটবর্তী করলাম, আর আমরা মূসা ও তার সাথে যারা ছিল সকলকে উদ্ধার করলাম, তারপর অপর দলটিকে ডুবিয়ে দিলাম। নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন। আর তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়”। [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ৪৯]
মহান আল্লাহ তার নাবী ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন:
﴿وَرَسُولًا إِلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ أَنِّي قَدۡ جِئۡتُكُم بَِٔايَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ أَنِّيٓ أَخۡلُقُ لَكُم مِّنَ ٱلطِّينِ كَهَيَۡٔةِ ٱلطَّيۡرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيۡرَۢا بِإِذۡنِ ٱللَّهِۖ وَأُبۡرِئُ ٱلۡأَكۡمَهَ وَٱلۡأَبۡرَصَ وَأُحۡيِ ٱلۡمَوۡتَىٰ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۖ وَأُنَبِّئُكُم بِمَا تَأۡكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمۡۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لَّكُمۡ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٤٩﴾ [ ال عمران : ٤٩ ]
“আর বানী ইসরাঈলদের রাসূল বানাবেন (সে বলবে) ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিদর্শন নিয়ে এসেছি যে, অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য কাদামাটি দিয়ে পাখির আকৃতি বানাব, অতঃপর আমি তাতে ফুঁক দেব। ফলে আল্লাহর হুকুমে সেটি পাখি হয়ে যাবে। আর আমি আল্লাহর হুকুমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রুগীকে সুস্থ করব এবং মৃতকে জীবিত করব। আর তোমরা যা আহার কর এবং তোমাদের ঘরে যা জমা করে রাখ তা আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব। নিশ্চয় এতে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা মুমিন হও’’। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৪৯]
মহান আল্লাহ সবাইকে সম্বোধন করে বলেন:
﴿أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ﴾ [ النمل : ٦٢ ]
“বরং তিনি, যিনি নিরুপায়ের আহ্বানে সাড়া দেন এবং বিপদ দূরীভূত করেন”। [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৬২]
নাবী-রাসূলদের হাতে প্রদর্শিত নিদর্শন, আহ্বানকারীদের আহ্বানে সাড়া দেওয়া, বিপদগ্রস্তদের বিপদ থেকে রক্ষা করা, এ কথার সু-স্পষ্ট ও জ্বলন্ত প্রমাণ যে, নাবীদের প্রেরণকারী, আহ্বানকারীর ডাকে সাড়াদানকারী এবং বিপদ থেকে রক্ষাকারী একজন মহান আল্লাহ অবশ্যই রয়েছেন।
চার. বিশুদ্ধ শরী‘আত:
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَۚ وَلَوۡ كَانَ مِنۡ عِندِ غَيۡرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُواْ فِيهِ ٱخۡتِلَٰفٗا كَثِيرٗا ٨٢﴾ [ النساء : ٨٢ ]
“তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮২]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَكُم بُرۡهَٰنٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكُمۡ نُورٗا مُّبِينٗا ١٧٤﴾ [ النساء : ١٧٤ ]
“হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট প্রমাণ এসেছে এবং আমরা তোমাদের নিকট স্পষ্ট আলো পবিত্র কুরআন নাযিল করেছি”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৭৪]
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَتۡكُم مَّوۡعِظَةٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَشِفَآءٞ لِّمَا فِي ٱلصُّدُورِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ ٥٧ ﴾ [ يونس : ٥٧ ]
“হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তরসমূহে যা থাকে তার শিফা, আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৭]
পূর্বে সংঘটিত যে সব গাইবী সংবাদ, বিশুদ্ধ আকীদা, ইনসাফপূর্ণ বিধান এবং উন্নত চরিত্রের আলোচনা কুরআনে কারীমে রয়েছে, তা দ্বারা এ কথা অবশ্যই প্রমাণিত হয় যে, কুরআন নিঃসন্দেহে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ একটি মহা গ্রন্থ। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মাখলুকের পক্ষ থেকে এ ধরণের কিতাব আসা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।
এ কারণেই দেখা যায়, বর্তমান ও পূর্বের যুগে কতক নাস্তিক ছাড়া আদম সন্তানের কেউ আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে নি। শুধুমাত্র কয়েক শ্রেণির নাস্তিক ও দাম্ভিক লোকরাই আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করার দুঃসাহস প্রদর্শন করে থাকে। তারা হলো:
এক. বস্তুবাদী (তথা কালচক্রে বিশ্বাসী):
যাদের মতবাদ ও দর্শন সম্পর্কে মহান আল্লাহ কুরআনের কারীমে বলেন:
﴿وَقَالُواْ مَا هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا ٱلدُّنۡيَا نَمُوتُ وَنَحۡيَا وَمَا يُهۡلِكُنَآ إِلَّا ٱلدَّهۡرُۚ وَمَا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنۡ عِلۡمٍۖ إِنۡ هُمۡ إِلَّا يَظُنُّونَ ٢٤﴾ [ الجاثية : ٢٤ ]
“আর তারা বলে, ‘দুনিয়ার জীবনই আমাদের একমাত্র জীবন। আমরা মরি ও বাঁচি এখানেই। আর কাল-ই কেবল আমাদেরকে ধ্বংস করে।’ বস্তুতঃ এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা শুধু ধারণাই করে”। [সূরা আল-জাসিয়াহ, আয়াত: ২৪]
তারা মনে করে পৃথিবী এমনিতেই গতানুগতিক নিজস্ব গতিতে কোনো পরিচালক ছাড়াই চলছে। পৃথিবী সর্বদা ছিল এবং সব সময় থাকবে। তারা বলে পেটসমূহ ঠেলে দেওয়া হবে আর মাটি তা গিলে ফেলবে। আর কালই শুধু আমাদের ধ্বংস করে। এভাবে তারা সৃষ্টিকে স্রষ্টা শুন্য মনে করে। মহান আল্লাহ তাদের দাবীকে এ বলে প্রত্যাখ্যান করেন যে, وَمَا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنۡ عِلۡمٍ “বস্তুতঃ এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই”। অর্থাৎ তাদের নিকট তাদের মতবাদের পক্ষে যৌক্তিক, বর্ণভিত্তিক, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও প্রকৃতিগত কোনো প্রমাণ নেই। তারা শুধু ধারণাপ্রসূত ও অলিক চিন্তার অধিকারী। মহান আল্লাহ বলেন: إِنۡ هُمۡ إِلَّا يَظُنُّونَ “তারা শুধু ধারণাই করে”।
দুই. প্রকৃতিবাদী:
যারা বলে, জগতটি প্রকৃতিরই সৃষ্টি। অর্থাৎ গাছ-পালা, তরু-লতা, জীব-জন্তু, জীব ও জড় যতকিছুই আমরা দুনিয়াতে দেখি না কেন, তা সবই নিজে নিজে নড়-চড় করে এবং নিজে নিজে অস্তিত্বে এসেছে। এদের কোনো স্রষ্টা বা পরিচালক নেই। বস্তুত এদের দাবি সম্পূর্ণ অবান্তর এবং এদের কথার উত্তর একেবারেই স্পষ্ট। কারণ, একই বস্তু একই মুহূর্তে স্রষ্টা ও সৃষ্টি উভয় হওয়া একেবারেই অসম্ভব ও অবাস্তব। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَمۡ خُلِقُواْ مِنۡ غَيۡرِ شَيۡءٍ أَمۡ هُمُ ٱلۡخَٰلِقُونَ ٣٥﴾ [ الطور : ٣٤ ]
“তারা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে, না তারাই স্রষ্টা”?। [সূরা আত-তূরা, আয়াত: ৩৪]
তারা যে প্রকৃতিকে স্রষ্টা বলে দাবি করছে তা মূলত: প্রাণহীন জড় পদার্থ, স্থবির নড়-চড় করতে পারে না, বধির শুনতে পায় না, অন্ধ দেখতে পায় না, তার কোনো অনুভুতি নাই। যার নিজের কোনো জীবন নেই সে কীভাবে এমন একটি জীবন্ত বস্তু সৃষ্টি করবে, যে শুনবে, দেখবে, কথা বলবে, ব্যাথা অনুভব করবে? কোনো বস্তু তার নিজের মধ্যে যা নেই তা সে অন্যকে কখনোই দিতে পারে না।
তিন. আকস্মিকতাবাদী:
তারা বলে এ জগত হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ দুনিয়াতে যা কিছু দেখা যায় তার সবই একই মুহূর্তে সৃষ্টি এবং একই মুহূর্তে তাদের জীবন লাভ, বড় হওয়া ও পূর্ণাঙ্গতা লাভ করা। বিভিন্ন ধরণের মাখলুক যা আমরা দুনিয়াতে দেখতে পাই, পূর্ব কোনো পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত ও চিন্তা ছাড়াই সৃষ্টি হয়ে গেছে! বস্তুত তাদের এ দাবি সম্পর্কে চিন্তা করাটাই তাদের দাবিটি অমূলক, বাতিল, অযৌক্তিক ও ভ্রান্ত প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট। কারণ, বাস্তবে সৃষ্টির মধ্যে সূক্ষ্ম কারিগরি, অভিনব ধরণ-পদ্ধতি, চিরন্তন নিয়মতান্ত্রিকতা, সৃষ্টির ভারসাম্যতা, ক্রমাগত বর্ধন ও পরিবর্তন আকস্মিক সৃষ্টি হওয়ার দাবিকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿صُنْعَ اللَّهِ الَّذِي أَتْقَنَ كُلَّ شَيْء﴾ النمل : 88
“(এটা) আল্লাহর কাজ, যিনি সব কিছু দৃঢ়ভাবে করেছেন”। [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৮৮]
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ سَبۡعَ سَمَٰوَٰتٖ وَمِنَ ٱلۡأَرۡضِ مِثۡلَهُنَّۖ يَتَنَزَّلُ ٱلۡأَمۡرُ بَيۡنَهُنَّ لِتَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ وَأَنَّ ٱللَّهَ قَدۡ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عِلۡمَۢا ١٢﴾ [ الطلاق : ١٢ ]
“তিনি আল্লাহ, যিনি সাত আসমান এবং অনুরূপ জমিন সৃষ্টি করেছেন; এগুলির মাঝে তাঁর নির্দেশ অবতীর্ণ হয় যেন তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞান তো সব কিছুকে বেষ্টন করে আছে”। [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ১২]
চার. কমুনিস্ট বা তথাকথিত সাম্যবাদের প্রবক্তা:
তারা বলে ইলাহ বলতে কোনো কিছুই নেই। জীবন হচ্ছে বস্তুবাদের নাম।
পাঁচ. ইতিহাস পরম্পরায় আগত মুষ্টিমেয় কয়েকজন ক্ষমতাধর:
যেমন, ফির‘আউন, যে বলেছে,
﴿وَمَا رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٣ ﴾ [ الشعراء : ٢٣ ]
“রাব্বুল আলামীন আবার কি?” [সূরা আশ-শু‘আরা:২৩]
অনুরূপ নামরুদ -তার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:
﴿أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِي حَآجَّ إِبۡرَٰهِۧمَ فِي رَبِّهِۦٓ أَنۡ ءَاتَىٰهُ ٱللَّهُ ٱلۡمُلۡكَ إِذۡ قَالَ إِبۡرَٰهِۧمُ رَبِّيَ ٱلَّذِي يُحۡيِۦ وَيُمِيتُ قَالَ أَنَا۠ أُحۡيِۦ وَأُمِيتُۖ قَالَ إِبۡرَٰهِۧمُ فَإِنَّ ٱللَّهَ يَأۡتِي بِٱلشَّمۡسِ مِنَ ٱلۡمَشۡرِقِ فَأۡتِ بِهَا مِنَ ٱلۡمَغۡرِبِ فَبُهِتَ ٱلَّذِي كَفَرَۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٢٥٨﴾ [ البقرة : ٢٥٨ ]
“তুমি কি সে ব্যক্তিকে দেখ নি, যে ইবরাহীমের সাথে তার রবের ব্যাপারে বিতর্ক করেছে যে, আল্লাহ তাকে রাজত্ব দিয়েছেন? যখন ইবরাহীম বলল, ‘আমার রব তিনিই’ যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমিই জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটাই। ইবরাহীম বলল, নিশ্চয় আল্লাহ পূর্বদিক থেকে সূর্য আনেন। অতএব, তুমি তা পশ্চিম দিক থেকে আন। ফলে কাফির ব্যক্তি হতভম্ব হয়ে গেল। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৮]
বস্তুত এরা সবাই স্ববিরোধিতায় লিপ্ত এবং স্বভাবজাত বিষয়কে অস্বিকারকারী। যেমন, মহান আল্লাহ তাদের বিপক্ষে স্বীয় বাণী দ্বারা সাক্ষ্য প্রদান করে বলেন:
﴿وَجَحَدُواْ بِهَا وَٱسۡتَيۡقَنَتۡهَآ أَنفُسُهُمۡ ظُلۡمٗا وَعُلُوّٗاۚ فَٱنظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ١٤﴾ [ النمل : ١٤ ]
“আর তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করল। অথচ তাদের অন্তর তা নিশ্চিত বিশ্বাস করেছিল। অতএব দেখ, ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল”। [সূরা আন-নামল, আয়াত: ১৪]
এ কারণেই তাদের কোনো দাবী প্রতিষ্ঠিত হয় নি আর তাদের কারও অস্তিত্বও টিকে থাকে নি।
এক. বস্তুবাদী (তথা কালচক্রে বিশ্বাসী):
যাদের মতবাদ ও দর্শন সম্পর্কে মহান আল্লাহ কুরআনের কারীমে বলেন:
﴿وَقَالُواْ مَا هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا ٱلدُّنۡيَا نَمُوتُ وَنَحۡيَا وَمَا يُهۡلِكُنَآ إِلَّا ٱلدَّهۡرُۚ وَمَا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنۡ عِلۡمٍۖ إِنۡ هُمۡ إِلَّا يَظُنُّونَ ٢٤﴾ [ الجاثية : ٢٤ ]
“আর তারা বলে, ‘দুনিয়ার জীবনই আমাদের একমাত্র জীবন। আমরা মরি ও বাঁচি এখানেই। আর কাল-ই কেবল আমাদেরকে ধ্বংস করে।’ বস্তুতঃ এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা শুধু ধারণাই করে”। [সূরা আল-জাসিয়াহ, আয়াত: ২৪]
তারা মনে করে পৃথিবী এমনিতেই গতানুগতিক নিজস্ব গতিতে কোনো পরিচালক ছাড়াই চলছে। পৃথিবী সর্বদা ছিল এবং সব সময় থাকবে। তারা বলে পেটসমূহ ঠেলে দেওয়া হবে আর মাটি তা গিলে ফেলবে। আর কালই শুধু আমাদের ধ্বংস করে। এভাবে তারা সৃষ্টিকে স্রষ্টা শুন্য মনে করে। মহান আল্লাহ তাদের দাবীকে এ বলে প্রত্যাখ্যান করেন যে, وَمَا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنۡ عِلۡمٍ “বস্তুতঃ এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই”। অর্থাৎ তাদের নিকট তাদের মতবাদের পক্ষে যৌক্তিক, বর্ণভিত্তিক, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও প্রকৃতিগত কোনো প্রমাণ নেই। তারা শুধু ধারণাপ্রসূত ও অলিক চিন্তার অধিকারী। মহান আল্লাহ বলেন: إِنۡ هُمۡ إِلَّا يَظُنُّونَ “তারা শুধু ধারণাই করে”।
দুই. প্রকৃতিবাদী:
যারা বলে, জগতটি প্রকৃতিরই সৃষ্টি। অর্থাৎ গাছ-পালা, তরু-লতা, জীব-জন্তু, জীব ও জড় যতকিছুই আমরা দুনিয়াতে দেখি না কেন, তা সবই নিজে নিজে নড়-চড় করে এবং নিজে নিজে অস্তিত্বে এসেছে। এদের কোনো স্রষ্টা বা পরিচালক নেই। বস্তুত এদের দাবি সম্পূর্ণ অবান্তর এবং এদের কথার উত্তর একেবারেই স্পষ্ট। কারণ, একই বস্তু একই মুহূর্তে স্রষ্টা ও সৃষ্টি উভয় হওয়া একেবারেই অসম্ভব ও অবাস্তব। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَمۡ خُلِقُواْ مِنۡ غَيۡرِ شَيۡءٍ أَمۡ هُمُ ٱلۡخَٰلِقُونَ ٣٥﴾ [ الطور : ٣٤ ]
“তারা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে, না তারাই স্রষ্টা”?। [সূরা আত-তূরা, আয়াত: ৩৪]
তারা যে প্রকৃতিকে স্রষ্টা বলে দাবি করছে তা মূলত: প্রাণহীন জড় পদার্থ, স্থবির নড়-চড় করতে পারে না, বধির শুনতে পায় না, অন্ধ দেখতে পায় না, তার কোনো অনুভুতি নাই। যার নিজের কোনো জীবন নেই সে কীভাবে এমন একটি জীবন্ত বস্তু সৃষ্টি করবে, যে শুনবে, দেখবে, কথা বলবে, ব্যাথা অনুভব করবে? কোনো বস্তু তার নিজের মধ্যে যা নেই তা সে অন্যকে কখনোই দিতে পারে না।
তিন. আকস্মিকতাবাদী:
তারা বলে এ জগত হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ দুনিয়াতে যা কিছু দেখা যায় তার সবই একই মুহূর্তে সৃষ্টি এবং একই মুহূর্তে তাদের জীবন লাভ, বড় হওয়া ও পূর্ণাঙ্গতা লাভ করা। বিভিন্ন ধরণের মাখলুক যা আমরা দুনিয়াতে দেখতে পাই, পূর্ব কোনো পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত ও চিন্তা ছাড়াই সৃষ্টি হয়ে গেছে! বস্তুত তাদের এ দাবি সম্পর্কে চিন্তা করাটাই তাদের দাবিটি অমূলক, বাতিল, অযৌক্তিক ও ভ্রান্ত প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট। কারণ, বাস্তবে সৃষ্টির মধ্যে সূক্ষ্ম কারিগরি, অভিনব ধরণ-পদ্ধতি, চিরন্তন নিয়মতান্ত্রিকতা, সৃষ্টির ভারসাম্যতা, ক্রমাগত বর্ধন ও পরিবর্তন আকস্মিক সৃষ্টি হওয়ার দাবিকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿صُنْعَ اللَّهِ الَّذِي أَتْقَنَ كُلَّ شَيْء﴾ النمل : 88
“(এটা) আল্লাহর কাজ, যিনি সব কিছু দৃঢ়ভাবে করেছেন”। [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৮৮]
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ سَبۡعَ سَمَٰوَٰتٖ وَمِنَ ٱلۡأَرۡضِ مِثۡلَهُنَّۖ يَتَنَزَّلُ ٱلۡأَمۡرُ بَيۡنَهُنَّ لِتَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ وَأَنَّ ٱللَّهَ قَدۡ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عِلۡمَۢا ١٢﴾ [ الطلاق : ١٢ ]
“তিনি আল্লাহ, যিনি সাত আসমান এবং অনুরূপ জমিন সৃষ্টি করেছেন; এগুলির মাঝে তাঁর নির্দেশ অবতীর্ণ হয় যেন তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞান তো সব কিছুকে বেষ্টন করে আছে”। [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ১২]
চার. কমুনিস্ট বা তথাকথিত সাম্যবাদের প্রবক্তা:
তারা বলে ইলাহ বলতে কোনো কিছুই নেই। জীবন হচ্ছে বস্তুবাদের নাম।
পাঁচ. ইতিহাস পরম্পরায় আগত মুষ্টিমেয় কয়েকজন ক্ষমতাধর:
যেমন, ফির‘আউন, যে বলেছে,
﴿وَمَا رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٣ ﴾ [ الشعراء : ٢٣ ]
“রাব্বুল আলামীন আবার কি?” [সূরা আশ-শু‘আরা:২৩]
অনুরূপ নামরুদ -তার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:
﴿أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِي حَآجَّ إِبۡرَٰهِۧمَ فِي رَبِّهِۦٓ أَنۡ ءَاتَىٰهُ ٱللَّهُ ٱلۡمُلۡكَ إِذۡ قَالَ إِبۡرَٰهِۧمُ رَبِّيَ ٱلَّذِي يُحۡيِۦ وَيُمِيتُ قَالَ أَنَا۠ أُحۡيِۦ وَأُمِيتُۖ قَالَ إِبۡرَٰهِۧمُ فَإِنَّ ٱللَّهَ يَأۡتِي بِٱلشَّمۡسِ مِنَ ٱلۡمَشۡرِقِ فَأۡتِ بِهَا مِنَ ٱلۡمَغۡرِبِ فَبُهِتَ ٱلَّذِي كَفَرَۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٢٥٨﴾ [ البقرة : ٢٥٨ ]
“তুমি কি সে ব্যক্তিকে দেখ নি, যে ইবরাহীমের সাথে তার রবের ব্যাপারে বিতর্ক করেছে যে, আল্লাহ তাকে রাজত্ব দিয়েছেন? যখন ইবরাহীম বলল, ‘আমার রব তিনিই’ যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমিই জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটাই। ইবরাহীম বলল, নিশ্চয় আল্লাহ পূর্বদিক থেকে সূর্য আনেন। অতএব, তুমি তা পশ্চিম দিক থেকে আন। ফলে কাফির ব্যক্তি হতভম্ব হয়ে গেল। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৮]
বস্তুত এরা সবাই স্ববিরোধিতায় লিপ্ত এবং স্বভাবজাত বিষয়কে অস্বিকারকারী। যেমন, মহান আল্লাহ তাদের বিপক্ষে স্বীয় বাণী দ্বারা সাক্ষ্য প্রদান করে বলেন:
﴿وَجَحَدُواْ بِهَا وَٱسۡتَيۡقَنَتۡهَآ أَنفُسُهُمۡ ظُلۡمٗا وَعُلُوّٗاۚ فَٱنظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ١٤﴾ [ النمل : ١٤ ]
“আর তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করল। অথচ তাদের অন্তর তা নিশ্চিত বিশ্বাস করেছিল। অতএব দেখ, ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল”। [সূরা আন-নামল, আয়াত: ১৪]
এ কারণেই তাদের কোনো দাবী প্রতিষ্ঠিত হয় নি আর তাদের কারও অস্তিত্বও টিকে থাকে নি।
এর অর্থ: এ কথার দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে এক আল্লাহই রব, স্রষ্টা, মালিক ও হুকুমদাতা। রব অর্থ— মনিব, মালিক, পরিচালক যিনি স্বীয় নেয়ামত দ্বারা সমগ্র জগত পরিচালনা করেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قَالَ فَمَن رَّبُّكُمَا يَٰمُوسَىٰ ٤٩ قَالَ رَبُّنَا ٱلَّذِيٓ أَعۡطَىٰ كُلَّ شَيۡءٍ خَلۡقَهُۥ ثُمَّ هَدَىٰ ٥٠﴾ [ طه : ٤٩، ٥٠ ]
ফির‘আউন বলল, ‘হে মূসা, তাহলে কে তোমাদের রব’? মূসা বলল, ‘আমাদের রব তিনি, যিনি সকল বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সেগুলিকে তাদের জীবনযাপনের সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন’। [সূরা ত্বাহা, আয়াত: ৪৯, ৫০]
﴿قَالَ فَمَن رَّبُّكُمَا يَٰمُوسَىٰ ٤٩ قَالَ رَبُّنَا ٱلَّذِيٓ أَعۡطَىٰ كُلَّ شَيۡءٍ خَلۡقَهُۥ ثُمَّ هَدَىٰ ٥٠﴾ [ طه : ٤٩، ٥٠ ]
ফির‘আউন বলল, ‘হে মূসা, তাহলে কে তোমাদের রব’? মূসা বলল, ‘আমাদের রব তিনি, যিনি সকল বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সেগুলিকে তাদের জীবনযাপনের সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন’। [সূরা ত্বাহা, আয়াত: ৪৯, ৫০]
তাহলে বুঝা গেলো যে, রবুবিয়্যাতের ভিত্তি তিনটি বিষয়ের উপর:
এক. সৃষ্টি: মহান আল্লাহ প্রতিটি বস্তুর স্রষ্টা। আল্লাহ ছাড়া বাকী সবকিছু মাখলুক বা সৃষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ وَكِيلٞ ٦٢﴾ [ الزمر : ٦١ ]
“আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সব কিছুর তত্ত্বাবধায়ক”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬১]
মহান আল্লাহ আরও বলেন:
﴿وَخَلَقَ كُلَّ شَيۡءٖ فَقَدَّرَهُۥ تَقۡدِيرٗا ٢﴾ [ الفرقان : ٢ ]
“তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তা নিপুণভাবে নিরূপণ করেছেন”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২]
আল্লাহ ছাড়া অন্য মাখলুকের প্রতি সৃষ্টি করার সম্পর্ক করা আপেক্ষিক। অর্থাৎ মাখলুকগণ কোনো কিছু বানায়, জোড়া লাগায় এবং পরিমিত আকার প্রদান করে। অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্বে আনতে পারে না। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَتَبَارَكَ ٱللَّهُ أَحۡسَنُ ٱلۡخَٰلِقِينَ ١٤﴾ [ المؤمنون : ١٤ ]
“অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কেই তিনি মঙ্গলময়!”। [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১৪]
দুই. মালিক। মহান আল্লাহ সবকিছুর মালিক। আল্লাহ ছাড়া সবকিছুই আল্লাহর মালিকানায়। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَلَمۡ تَعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۗ ١٠٧﴾ [ البقرة : ١٠٧ ]
“তুমি কি জান না যে, নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহর”? [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১০৭]
﴿وَلِلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ١٨٩﴾ [ ال عمران : ١٨٩ ]
“আর আল্লাহর জন্যই আসমান ও জমিনের রাজত্ব। আর আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৯]
আরও বলেন:
﴿قُلِ ٱللَّهُمَّ مَٰلِكَ ٱلۡمُلۡكِ تُؤۡتِي ٱلۡمُلۡكَ مَن تَشَآءُ وَتَنزِعُ ٱلۡمُلۡكَ مِمَّن تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَآءُۖ بِيَدِكَ ٱلۡخَيۡرُۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ٢٦﴾ [ ال عمران : ٢٦ ]
“বল, ‘হে আল্লাহ, রাজত্বের মালিক, আপনি যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আর যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন এবং আপনি যাকে চান সম্মান দান করেন। আর যাকে চান অপমানিত করেন, আপনার হাতেই কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান’’। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ২৬]
﴿وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ شَرِيكٞ فِي ٱلۡمُلۡكِ ١١١﴾ [ الاسراء : ١١١ ]
“মালিকানায় (রাজত্বে) তাঁর কোনো শরীক নেই”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১১১]
﴿ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡ لَهُ ٱلۡمُلۡكُۚ وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ ١٣﴾ [ فاطر : ١٣ ]
“তিনি আল্লাহ, তোমাদের রব; সমস্ত মালিকানা তাঁরই, আর আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাকো তারা খেজুরের আঁটির আবরণেরও মালিক নয়”। [সূরা ফাতির, আয়াত: ১১৩]
মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য যে সব সৃষ্টির প্রতি মালিকানার সম্পর্ক স্থাপন করা হয় তা সাময়িক, আপেক্ষিক, ও বিচ্ছিন্ন বিষয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলার কথা (ফির‘আউন গোত্রের মুমিন লোকটি বলেছিল)
﴿يَٰقَوۡمِ لَكُمُ ٱلۡمُلۡكُ ٱلۡيَوۡمَ ظَٰهِرِينَ فِي ٱلۡأَرۡضِ ٢٩﴾ [ غافر : ٢٩ ]
“হে আমার কওম, আজকের দিনে জমিনের বুকে তোমাদের মালিকানা স্বীকৃত; প্রকাশ্যভাবে তোমরাই তাতে কর্তৃত্বশীল”। [সূরা গাফির, আয়াত: ২৯]
﴿أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡۚ﴾ [ النساء : ٣ ]
“অথবা তোমাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে।”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩]
﴿إِنَّا نَحۡنُ نَرِثُ ٱلۡأَرۡضَ وَمَنۡ عَلَيۡهَا وَإِلَيۡنَا يُرۡجَعُونَ ٤٠﴾ [ مريم : ٤٠ ]
“নিশ্চয় আমি জমিন ও এর উপরে যা রয়েছে তার চূড়ান্ত মালিক হব [চূড়ান্ত ওয়ারিস বলতে বুঝানো হয়েছে চূড়ান্ত মালিক অর্থাৎ সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর একমাত্র আল্লাহই থাকবেন এবং সবকিছু থাকবে তাঁর মালিকানাধীন।] এবং আমারই নিকট তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৪০]
তিন. হুকুম/ বিধান: যাবতীয় বিধান প্রদানের মালিক কেবল আল্লাহ। মহান আল্লাহ বিধানদাতা; তিনি ছাড়া সবাই তার হুকুমের গোলাম বা আদিষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلۡ إِنَّ ٱلۡأَمۡرَ كُلَّهُۥ لِلَّهِۗ ١٥٤﴾ [ ال عمران : ١٥٤ ]
“বল, নিশ্চয় সকল নির্দেশ কেবল আল্লাহরই”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৪]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤﴾ [ الاعراف : ٥٣ ]
“জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব”। [সূরা আল আ‘রাফ, আয়াত: ৫৩]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَقُضِيَ ٱلۡأَمۡرُۚ وَإِلَى ٱللَّهِ تُرۡجَعُ ٱلۡأُمُورُ ٢١٠﴾ [ البقرة : ٢١٠ ]
“এবং সব বিষয়ের ফয়সালা করে দেওয়া হয়েছে। আর আল্লাহরই নিকট সব বিষয় প্রত্যাবর্তিত হবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১০]
মহান আল্লাহ স্বীয় নাবীকে সম্বোধন করে বলেন:
﴿لَيۡسَ لَكَ مِنَ ٱلۡأَمۡرِ شَيۡءٌ ١٢٨﴾ [ ال عمران : ١٢٨ ]
দ“হুকুম/বিধান/ফয়সালা/পরিচালনাগত বিষয়ে তোমার কোনো অধিকার নেই”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৮] রাসূলের কাছে যদি সেটা না থাকে তবে অন্যদের কাছে সেটার ক্ষমতা কীভাবে থাকতে পারে?
মহান আল্লাহ আরও বলেন:
﴿لِلَّهِ ٱلۡأَمۡرُ مِن قَبۡلُ وَمِنۢ بَعۡدُۚ ٤﴾ [ الروم : ٤ ]
“পূর্বের ও পরের সব পরিচালনা/ফয়সালা আল্লাহরই মালিকানাধীন”। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৪] সুতরাং কেবল তিনি আল্লাহই তার সৃষ্টির ব্যাপারে নির্দেশদাতা, তিনিই সৃষ্টির ব্যাপারে ফয়সালা প্রদানকারী। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দিকে হুকুম বা বিধান বা ফয়সালা বা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সম্পর্কিত করার বিষয়টি আপেক্ষিক। কারণ আল্লাহ ব্যতীত অন্যদের দ্বারা কোনো নির্দেশ/ফয়সালা/নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ণ সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছার অধীন। তিনি যদি চান তবে সেটা তিনি বাস্তবায়িত হতে দেন, যদি তিনি চান তবে সেটা রুদ্ধ করে দেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলার বাণী
﴿فَٱتَّبَعُوٓاْ أَمۡرَ فِرۡعَوۡنَۖ وَمَآ أَمۡرُ فِرۡعَوۡنَ بِرَشِيدٖ ٩٧﴾ [ هود : ٩٧ ]
“অতঃপর তারা ফির‘আউনের নির্দেশের অনুসরণ করল। আর ফির‘আউনের নির্দেশ সঠিক ছিল না”। [সূরা হূদ, আয়াত: ৯৭]
স্মরণ রাখা দরকার যে, আল্লাহর নির্দেশ বলে আল্লাহর দু’ প্রকার নির্দেশ অর্থাৎ আল্লাহর কাওনী (প্রকৃতিগত/সৃষ্টিগত) নির্দেশ এবং আল্লাহর শারী‘আতগত নির্দেশ উভয়টি বুঝানো হয়েছে। কাওনী নির্দেশ তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। এটি আল্লাহর সর্বময় ইচ্ছা’র সমার্থবোধক। সে হিসেবে মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ إِنَّمَآ أَمۡرُهُۥٓ إِذَآ أَرَادَ شَيًۡٔا أَن يَقُولَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٨٢ ﴾ [ يس : ٨٢ ]
“তাঁর নির্দেশ তো এমন যে যখন তিনি কোনো কিছুর ইচ্ছা করেন তখন শুধু বলেন: হও, আর তাতেই তা হয়ে যায়”। [সূরা ইয়াসিন: ৮২]
অপরদিকে শর‘য়ী নির্দেশ পরীক্ষার স্থান। আর এটি মহব্বতের সমার্থবোধক। এ নির্দেশ কখনো সংঘটিত হয় আবার কখনো সংঘটিত হয় না। তবে এসবই আল্লাহর ব্যাপক ইচ্ছার অন্তর্ভুক্ত। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لِمَن شَآءَ مِنكُمۡ أَن يَسۡتَقِيمَ ٢٨ وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٩﴾ [ التكوير : ٢٨، ٣٠ ]
“যে তোমাদের মধ্যে সরল পথে চলতে চায়, তার জন্য এই পবিত্র কুরআন সৎ পথের প্রদর্শক। আর তোমরা ইচ্ছা করলেই তা সংঘটিত হয় না, যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ ইচ্ছা করেন”। [সূরা আত-তাকওয়ীর, আয়াত: ২৮, ২৯]
আল্লাহর রবুবিয়্যাতের অন্যান্য সিফাত বা গুণগুলো যেমন, রিযিক পৌঁছানো, জীবন দান, মৃত্যু দান, আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ, জমিন থেকে ফসল উৎপাদন, বাতাসকে নিয়ন্ত্রণ করা, সমূদ্রের জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করা, রাত ও দিনের পরিবর্তন করা, সুস্থতা দান করা, অসুস্থতা প্রদান, ইজ্জত দেওয়া, বেইজ্জত করা ইত্যাদি সবই উল্লিখিত তিনটি অর্থাৎ সৃষ্টি, মালিকানা ও নির্দেশের প্রতি প্রত্যাবর্তন করে।
আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের প্রতি ঈমান মানব স্বভাবের সাথে গেঁথে দেওয়া আছে। নূন্যতম জ্ঞান যার রয়েছে সেও তা প্রত্যক্ষ্য করে, এ জগতের মধ্যে তা অবশ্যই অনুভুত এবং কুরআন ও হাদীসে এর প্রমাণ অসংখ্য।
এক. সৃষ্টি: মহান আল্লাহ প্রতিটি বস্তুর স্রষ্টা। আল্লাহ ছাড়া বাকী সবকিছু মাখলুক বা সৃষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ وَكِيلٞ ٦٢﴾ [ الزمر : ٦١ ]
“আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সব কিছুর তত্ত্বাবধায়ক”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬১]
মহান আল্লাহ আরও বলেন:
﴿وَخَلَقَ كُلَّ شَيۡءٖ فَقَدَّرَهُۥ تَقۡدِيرٗا ٢﴾ [ الفرقان : ٢ ]
“তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তা নিপুণভাবে নিরূপণ করেছেন”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২]
আল্লাহ ছাড়া অন্য মাখলুকের প্রতি সৃষ্টি করার সম্পর্ক করা আপেক্ষিক। অর্থাৎ মাখলুকগণ কোনো কিছু বানায়, জোড়া লাগায় এবং পরিমিত আকার প্রদান করে। অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্বে আনতে পারে না। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَتَبَارَكَ ٱللَّهُ أَحۡسَنُ ٱلۡخَٰلِقِينَ ١٤﴾ [ المؤمنون : ١٤ ]
“অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কেই তিনি মঙ্গলময়!”। [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১৪]
দুই. মালিক। মহান আল্লাহ সবকিছুর মালিক। আল্লাহ ছাড়া সবকিছুই আল্লাহর মালিকানায়। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَلَمۡ تَعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۗ ١٠٧﴾ [ البقرة : ١٠٧ ]
“তুমি কি জান না যে, নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহর”? [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১০৭]
﴿وَلِلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ١٨٩﴾ [ ال عمران : ١٨٩ ]
“আর আল্লাহর জন্যই আসমান ও জমিনের রাজত্ব। আর আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৯]
আরও বলেন:
﴿قُلِ ٱللَّهُمَّ مَٰلِكَ ٱلۡمُلۡكِ تُؤۡتِي ٱلۡمُلۡكَ مَن تَشَآءُ وَتَنزِعُ ٱلۡمُلۡكَ مِمَّن تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَآءُۖ بِيَدِكَ ٱلۡخَيۡرُۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ٢٦﴾ [ ال عمران : ٢٦ ]
“বল, ‘হে আল্লাহ, রাজত্বের মালিক, আপনি যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আর যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন এবং আপনি যাকে চান সম্মান দান করেন। আর যাকে চান অপমানিত করেন, আপনার হাতেই কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান’’। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ২৬]
﴿وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ شَرِيكٞ فِي ٱلۡمُلۡكِ ١١١﴾ [ الاسراء : ١١١ ]
“মালিকানায় (রাজত্বে) তাঁর কোনো শরীক নেই”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১১১]
﴿ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡ لَهُ ٱلۡمُلۡكُۚ وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ ١٣﴾ [ فاطر : ١٣ ]
“তিনি আল্লাহ, তোমাদের রব; সমস্ত মালিকানা তাঁরই, আর আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাকো তারা খেজুরের আঁটির আবরণেরও মালিক নয়”। [সূরা ফাতির, আয়াত: ১১৩]
মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য যে সব সৃষ্টির প্রতি মালিকানার সম্পর্ক স্থাপন করা হয় তা সাময়িক, আপেক্ষিক, ও বিচ্ছিন্ন বিষয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলার কথা (ফির‘আউন গোত্রের মুমিন লোকটি বলেছিল)
﴿يَٰقَوۡمِ لَكُمُ ٱلۡمُلۡكُ ٱلۡيَوۡمَ ظَٰهِرِينَ فِي ٱلۡأَرۡضِ ٢٩﴾ [ غافر : ٢٩ ]
“হে আমার কওম, আজকের দিনে জমিনের বুকে তোমাদের মালিকানা স্বীকৃত; প্রকাশ্যভাবে তোমরাই তাতে কর্তৃত্বশীল”। [সূরা গাফির, আয়াত: ২৯]
﴿أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡۚ﴾ [ النساء : ٣ ]
“অথবা তোমাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে।”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩]
﴿إِنَّا نَحۡنُ نَرِثُ ٱلۡأَرۡضَ وَمَنۡ عَلَيۡهَا وَإِلَيۡنَا يُرۡجَعُونَ ٤٠﴾ [ مريم : ٤٠ ]
“নিশ্চয় আমি জমিন ও এর উপরে যা রয়েছে তার চূড়ান্ত মালিক হব [চূড়ান্ত ওয়ারিস বলতে বুঝানো হয়েছে চূড়ান্ত মালিক অর্থাৎ সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর একমাত্র আল্লাহই থাকবেন এবং সবকিছু থাকবে তাঁর মালিকানাধীন।] এবং আমারই নিকট তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৪০]
তিন. হুকুম/ বিধান: যাবতীয় বিধান প্রদানের মালিক কেবল আল্লাহ। মহান আল্লাহ বিধানদাতা; তিনি ছাড়া সবাই তার হুকুমের গোলাম বা আদিষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلۡ إِنَّ ٱلۡأَمۡرَ كُلَّهُۥ لِلَّهِۗ ١٥٤﴾ [ ال عمران : ١٥٤ ]
“বল, নিশ্চয় সকল নির্দেশ কেবল আল্লাহরই”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৪]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤﴾ [ الاعراف : ٥٣ ]
“জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব”। [সূরা আল আ‘রাফ, আয়াত: ৫৩]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَقُضِيَ ٱلۡأَمۡرُۚ وَإِلَى ٱللَّهِ تُرۡجَعُ ٱلۡأُمُورُ ٢١٠﴾ [ البقرة : ٢١٠ ]
“এবং সব বিষয়ের ফয়সালা করে দেওয়া হয়েছে। আর আল্লাহরই নিকট সব বিষয় প্রত্যাবর্তিত হবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১০]
মহান আল্লাহ স্বীয় নাবীকে সম্বোধন করে বলেন:
﴿لَيۡسَ لَكَ مِنَ ٱلۡأَمۡرِ شَيۡءٌ ١٢٨﴾ [ ال عمران : ١٢٨ ]
দ“হুকুম/বিধান/ফয়সালা/পরিচালনাগত বিষয়ে তোমার কোনো অধিকার নেই”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৮] রাসূলের কাছে যদি সেটা না থাকে তবে অন্যদের কাছে সেটার ক্ষমতা কীভাবে থাকতে পারে?
মহান আল্লাহ আরও বলেন:
﴿لِلَّهِ ٱلۡأَمۡرُ مِن قَبۡلُ وَمِنۢ بَعۡدُۚ ٤﴾ [ الروم : ٤ ]
“পূর্বের ও পরের সব পরিচালনা/ফয়সালা আল্লাহরই মালিকানাধীন”। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৪] সুতরাং কেবল তিনি আল্লাহই তার সৃষ্টির ব্যাপারে নির্দেশদাতা, তিনিই সৃষ্টির ব্যাপারে ফয়সালা প্রদানকারী। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দিকে হুকুম বা বিধান বা ফয়সালা বা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সম্পর্কিত করার বিষয়টি আপেক্ষিক। কারণ আল্লাহ ব্যতীত অন্যদের দ্বারা কোনো নির্দেশ/ফয়সালা/নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ণ সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছার অধীন। তিনি যদি চান তবে সেটা তিনি বাস্তবায়িত হতে দেন, যদি তিনি চান তবে সেটা রুদ্ধ করে দেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলার বাণী
﴿فَٱتَّبَعُوٓاْ أَمۡرَ فِرۡعَوۡنَۖ وَمَآ أَمۡرُ فِرۡعَوۡنَ بِرَشِيدٖ ٩٧﴾ [ هود : ٩٧ ]
“অতঃপর তারা ফির‘আউনের নির্দেশের অনুসরণ করল। আর ফির‘আউনের নির্দেশ সঠিক ছিল না”। [সূরা হূদ, আয়াত: ৯৭]
স্মরণ রাখা দরকার যে, আল্লাহর নির্দেশ বলে আল্লাহর দু’ প্রকার নির্দেশ অর্থাৎ আল্লাহর কাওনী (প্রকৃতিগত/সৃষ্টিগত) নির্দেশ এবং আল্লাহর শারী‘আতগত নির্দেশ উভয়টি বুঝানো হয়েছে। কাওনী নির্দেশ তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। এটি আল্লাহর সর্বময় ইচ্ছা’র সমার্থবোধক। সে হিসেবে মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ إِنَّمَآ أَمۡرُهُۥٓ إِذَآ أَرَادَ شَيًۡٔا أَن يَقُولَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٨٢ ﴾ [ يس : ٨٢ ]
“তাঁর নির্দেশ তো এমন যে যখন তিনি কোনো কিছুর ইচ্ছা করেন তখন শুধু বলেন: হও, আর তাতেই তা হয়ে যায়”। [সূরা ইয়াসিন: ৮২]
অপরদিকে শর‘য়ী নির্দেশ পরীক্ষার স্থান। আর এটি মহব্বতের সমার্থবোধক। এ নির্দেশ কখনো সংঘটিত হয় আবার কখনো সংঘটিত হয় না। তবে এসবই আল্লাহর ব্যাপক ইচ্ছার অন্তর্ভুক্ত। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لِمَن شَآءَ مِنكُمۡ أَن يَسۡتَقِيمَ ٢٨ وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٩﴾ [ التكوير : ٢٨، ٣٠ ]
“যে তোমাদের মধ্যে সরল পথে চলতে চায়, তার জন্য এই পবিত্র কুরআন সৎ পথের প্রদর্শক। আর তোমরা ইচ্ছা করলেই তা সংঘটিত হয় না, যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ ইচ্ছা করেন”। [সূরা আত-তাকওয়ীর, আয়াত: ২৮, ২৯]
আল্লাহর রবুবিয়্যাতের অন্যান্য সিফাত বা গুণগুলো যেমন, রিযিক পৌঁছানো, জীবন দান, মৃত্যু দান, আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ, জমিন থেকে ফসল উৎপাদন, বাতাসকে নিয়ন্ত্রণ করা, সমূদ্রের জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করা, রাত ও দিনের পরিবর্তন করা, সুস্থতা দান করা, অসুস্থতা প্রদান, ইজ্জত দেওয়া, বেইজ্জত করা ইত্যাদি সবই উল্লিখিত তিনটি অর্থাৎ সৃষ্টি, মালিকানা ও নির্দেশের প্রতি প্রত্যাবর্তন করে।
আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের প্রতি ঈমান মানব স্বভাবের সাথে গেঁথে দেওয়া আছে। নূন্যতম জ্ঞান যার রয়েছে সেও তা প্রত্যক্ষ্য করে, এ জগতের মধ্যে তা অবশ্যই অনুভুত এবং কুরআন ও হাদীসে এর প্রমাণ অসংখ্য।
কুরআন থেকে এ বিষয়ের উপর বিভিন্ন প্রমাণাদি:
﴿إِنَّ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفِ ٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ وَٱلۡفُلۡكِ ٱلَّتِي تَجۡرِي فِي ٱلۡبَحۡرِ بِمَا يَنفَعُ ٱلنَّاسَ وَمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مِن مَّآءٖ فَأَحۡيَا بِهِ ٱلۡأَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَآبَّةٖ وَتَصۡرِيفِ ٱلرِّيَٰحِ وَٱلسَّحَابِ ٱلۡمُسَخَّرِ بَيۡنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَعۡقِلُونَ ١٦٤﴾ [ البقرة : ١٦٤ ]
“নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে, সে নৌকায় যা সমুদ্রে মানুষের জন্য কল্যাণকর বস্তু নিয়ে চলে এবং আসমান থেকে আল্লাহ যে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন অতঃপর তার মাধ্যমে মরে যাওয়ার পর জমিনকে জীবিত করেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সকল প্রকার বিচরণশীল প্রাণী ও বাতাসের পরিবর্তনে এবং আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানে নিয়োজিত মেঘমালায় রয়েছে নিদর্শনসমূহ এমন কওমের জন্য, যারা বিবেকবান”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৪]
﴿تُولِجُ ٱلَّيۡلَ فِي ٱلنَّهَارِ وَتُولِجُ ٱلنَّهَارَ فِي ٱلَّيۡلِۖ وَتُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَتُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّۖ وَتَرۡزُقُ مَن تَشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٖ ٢٧﴾ [ ال عمران : ٢٧ ]
‘‘আপনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান। আর মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন। আর যাকে চান বিনা হিসাবে রিযিক দান করেন’’। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ২৭]
﴿۞إِنَّ ٱللَّهَ فَالِقُ ٱلۡحَبِّ وَٱلنَّوَىٰۖ يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَمُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتِ مِنَ ٱلۡحَيِّۚ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُۖ فَأَنَّىٰ تُؤۡفَكُونَ ٩٥ فَالِقُ ٱلۡإِصۡبَاحِ وَجَعَلَ ٱلَّيۡلَ سَكَنٗا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ حُسۡبَانٗاۚ ذَٰلِكَ تَقۡدِيرُ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡعَلِيمِ ٩٦ وَهُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلنُّجُومَ لِتَهۡتَدُواْ بِهَا فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۗ قَدۡ فَصَّلۡنَا ٱلۡأٓيَٰتِ لِقَوۡمٖ يَعۡلَمُونَ ٩٧ وَهُوَ ٱلَّذِيٓ أَنشَأَكُم مِّن نَّفۡسٖ وَٰحِدَةٖ فَمُسۡتَقَرّٞ وَمُسۡتَوۡدَعٞۗ قَدۡ فَصَّلۡنَا ٱلۡأٓيَٰتِ لِقَوۡمٖ يَفۡقَهُونَ ٩٨ وَهُوَ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَخۡرَجۡنَا بِهِۦ نَبَاتَ كُلِّ شَيۡءٖ فَأَخۡرَجۡنَا مِنۡهُ خَضِرٗا نُّخۡرِجُ مِنۡهُ حَبّٗا مُّتَرَاكِبٗا وَمِنَ ٱلنَّخۡلِ مِن طَلۡعِهَا قِنۡوَانٞ دَانِيَةٞ وَجَنَّٰتٖ مِّنۡ أَعۡنَابٖ وَٱلزَّيۡتُونَ وَٱلرُّمَّانَ مُشۡتَبِهٗا وَغَيۡرَ مُتَشَٰبِهٍۗ ٱنظُرُوٓاْ إِلَىٰ ثَمَرِهِۦٓ إِذَآ أَثۡمَرَ وَيَنۡعِهِۦٓۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكُمۡ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ٩٩﴾ [ الانعام : ٩٥، ٩٩ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ বীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী। তিনি মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বেরকারী। তিনিই আল্লাহ, সুতরাং (সৎপথ থেকে) কোথায় তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে? (তিনি) প্রভাত উদ্ভাসক। তিনি বানিয়েছেন রাতকে প্রশান্তি এবং সূর্য ও চন্দ্রকে সময় নিরূপক। এটা সর্বজ্ঞ পরাক্রমশালীর নির্ধারণ। আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য তারকারাজি, যাতে তোমরা এ দ্বারা পথপ্রাপ্ত হও স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারে। অবশ্যই আমি আয়াতসমূহকে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি এমন কওমের জন্য যারা জানে। আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এক নফস থেকে। অতঃপর রয়েছে আবাসস্থল ও সমাধিস্থল। অবশ্যই আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করেছি, এমন কওমের জন্য যারা ভালভাবে বুঝে। আর তিনিই আসমান থেকে বর্ষণ করেছেন বৃষ্টি। অতঃপর আমি এ দ্বারা উৎপন্ন করেছি সব জাতের উদ্ভিদ। অতঃপর আমি তা থেকে বের করেছি সবুজ ডাল-পালা। আমি তা থেকে বের করি ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা। আর খেজুর বৃক্ষের মাথি থেকে (বের করি) ঝুলন্ত থোকা। আর (উৎপন্ন করি) আঙ্গুরের বাগান এবং সাদৃশ্যপূর্ণ ও সাদৃশ্যহীন যয়তুন ও আনার। দেখ তার ফলের দিকে, যখন সে ফলবান হয় এবং তার পাকার প্রতি। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য যারা ঈমান আনে”। [সূরা আন‘আম, আয়াত: ৯৫, ৯৯]
﴿ٱللَّهُ ٱلَّذِي رَفَعَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ بِغَيۡرِ عَمَدٖ تَرَوۡنَهَاۖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ وَسَخَّرَ ٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَۖ كُلّٞ يَجۡرِي لِأَجَلٖ مُّسَمّٗىۚ يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَ يُفَصِّلُ ٱلۡأٓيَٰتِ لَعَلَّكُم بِلِقَآءِ رَبِّكُمۡ تُوقِنُونَ ٢ وَهُوَ ٱلَّذِي مَدَّ ٱلۡأَرۡضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَٰسِيَ وَأَنۡهَٰرٗاۖ وَمِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ جَعَلَ فِيهَا زَوۡجَيۡنِ ٱثۡنَيۡنِۖ يُغۡشِي ٱلَّيۡلَ ٱلنَّهَارَۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٣ وَفِي ٱلۡأَرۡضِ قِطَعٞ مُّتَجَٰوِرَٰتٞ وَجَنَّٰتٞ مِّنۡ أَعۡنَٰبٖ وَزَرۡعٞ وَنَخِيلٞ صِنۡوَانٞ وَغَيۡرُ صِنۡوَانٖ يُسۡقَىٰ بِمَآءٖ وَٰحِدٖ وَنُفَضِّلُ بَعۡضَهَا عَلَىٰ بَعۡضٖ فِي ٱلۡأُكُلِۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَعۡقِلُونَ ٤﴾ [ الرعد : ٢، ٤ ]
“আল্লাহ, যিনি খুঁটি ছাড়া আসমানসমূহ উঁচু করেছেন যা তোমরা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশের ঊর্ধ্বে অবস্থিত হয়েছেন এবং সূর্য ও চাঁদকে নিয়োজিত করেছেন। এর প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলবে। তিনি সবকিছু পরিচালনা করেন। আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করেন, যাতে তোমাদের রবের সাক্ষাতের ব্যাপারে তোমরা দৃঢ়বিশ্বাসী হতে পার। আর তিনিই জমিনকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে সুদৃঢ় পর্বতমালা ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন। আর সকল প্রকারের ফল তিনি জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। নিশ্চয় যে কওম চিন্তাভাবনা করে তাদের জন্য এতে নিদর্শনাবলি রয়েছে। আর জমিনে আছে পরস্পর পাশাপাশি ভূখণ্ড, আঙ্গুর-বাগান, শস্যক্ষেত, খেজুর গাছ, যেগুলোর মধ্যে কিছু একই মূল থেকে উদগত আর কিছু ভিন্ন ভিন্ন মূল থেকে উদগত, যেগুলো একই পানি দ্বারা সেচ করা হয়, আর আমি খাওয়ার ক্ষেত্রে একটিকে অপরটির তুলনায় উৎকৃষ্ট করে দেই, এতে নিদর্শন রয়েছে ঐ কওমের জন্য যারা বুঝে”। [সূরা আর-রা‘আদ, আয়াত: ২, ৪]
﴿خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ بِٱلۡحَقِّۚ تَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٣ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ مِن نُّطۡفَةٖ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٞ مُّبِينٞ ٤ وَٱلۡأَنۡعَٰمَ خَلَقَهَاۖ لَكُمۡ فِيهَا دِفۡءٞ وَمَنَٰفِعُ وَمِنۡهَا تَأۡكُلُونَ ٥ وَلَكُمۡ فِيهَا جَمَالٌ حِينَ تُرِيحُونَ وَحِينَ تَسۡرَحُونَ ٦ وَتَحۡمِلُ أَثۡقَالَكُمۡ إِلَىٰ بَلَدٖ لَّمۡ تَكُونُواْ بَٰلِغِيهِ إِلَّا بِشِقِّ ٱلۡأَنفُسِۚ إِنَّ رَبَّكُمۡ لَرَءُوفٞ رَّحِيمٞ ٧ وَٱلۡخَيۡلَ وَٱلۡبِغَالَ وَٱلۡحَمِيرَ لِتَرۡكَبُوهَا وَزِينَةٗۚ وَيَخۡلُقُ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٨ وَعَلَى ٱللَّهِ قَصۡدُ ٱلسَّبِيلِ وَمِنۡهَا جَآئِرٞۚ وَلَوۡ شَآءَ لَهَدَىٰكُمۡ أَجۡمَعِينَ ٩ هُوَ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗۖ لَّكُم مِّنۡهُ شَرَابٞ وَمِنۡهُ شَجَرٞ فِيهِ تُسِيمُونَ ١٠ يُنۢبِتُ لَكُم بِهِ ٱلزَّرۡعَ وَٱلزَّيۡتُونَ وَٱلنَّخِيلَ وَٱلۡأَعۡنَٰبَ وَمِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ١١ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَۖ وَٱلنُّجُومُ مُسَخَّرَٰتُۢ بِأَمۡرِهِۦٓۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَعۡقِلُونَ ١٢ وَمَا ذَرَأَ لَكُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُخۡتَلِفًا أَلۡوَٰنُهُۥٓۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لِّقَوۡمٖ يَذَّكَّرُونَ ١٣ وَهُوَ ٱلَّذِي سَخَّرَ ٱلۡبَحۡرَ لِتَأۡكُلُواْ مِنۡهُ لَحۡمٗا طَرِيّٗا وَتَسۡتَخۡرِجُواْ مِنۡهُ حِلۡيَةٗ تَلۡبَسُونَهَاۖ وَتَرَى ٱلۡفُلۡكَ مَوَاخِرَ فِيهِ وَلِتَبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِهِۦ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٤ وَأَلۡقَىٰ فِي ٱلۡأَرۡضِ رَوَٰسِيَ أَن تَمِيدَ بِكُمۡ وَأَنۡهَٰرٗا وَسُبُلٗا لَّعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٥ وَعَلَٰمَٰتٖۚ وَبِٱلنَّجۡمِ هُمۡ يَهۡتَدُونَ ١٦ أَفَمَن يَخۡلُقُ كَمَن لَّا يَخۡلُقُۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ١٧ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَةَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ ١٨﴾ [ النحل : ٣ - ١٨ ]
“তিনি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথ ভাবে, তারা যা শরীক করে, তা থেকে তিনি ঊর্ধ্বে। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ‘নুতফা’ [‘নুতফা’ হচ্ছে নারী ও পুরুষের যৌথ বীর্য, যা ভ্রুণে পরিণত হয়।] থেকে, অথচ সে প্রকাশ্য বিতন্ডাকারী। আর চতুষ্পদ জন্তুগুলো তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন তাতে রয়েছে উষ্ণতার উপকরণ ও বিবিধ উপকার। আর তা থেকে তোমরা আহার গ্রহণ কর। আর তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে সৌন্দর্য যখন সন্ধ্যায় তা ফিয়য়ে আন এবং সকালে চারণে নিয়ে যাও। আর এগুলো তোমাদের বোঝা বহন করে এমন দেশে নিয়ে যায়, ভীষণ কষ্ট ছাড়া যেখানে তোমরা পৌঁছতে সক্ষম হতে না। নিশ্চয় তোমাদের রব দয়াশীল, পরম দয়ালু। আর (তিনি সৃষ্টি করেছেন) ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা, তোমাদের আরোহণ ও শোভার জন্য এবং তিনি সৃষ্টি করবেন এমন কিছু, যা তোমরা জান না। আর সঠিক পথ বাতলে দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব, এবং পথের মধ্যে কিছু আছে বক্র। আর তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদের সকলকে হিদায়াত করতেন। তিনিই সে সত্তা, যিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, যাতে রয়েছে তোমাদের জন্য পানীয় এবং তা থেকে হয় উদ্ভিত, যাতে তোমরা জন্তু চরাও। তার মাধ্যমে তিনি তোমাদের জন্য উৎপন্ন করেন ফসল, যাইতুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর এবং সকল ফল-ফলাদি। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। আর তিনি তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিনকে এবং সূর্য ও চাঁদকে এবং তারকাসমূহও তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। নিশ্চয় এতে অনেক নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য যারা বুঝে। আর তিনি তোমাদের জন্য জমিনে যা সৃষ্টি করেছেন, বিচিত্র রঙের করে, নিশ্চয় তাতেও নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য, যারা উপদেশ গ্রহণ করে। আর তিনিই সে সত্তা, যিনি সমুদ্রকে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা (মাছের) গোশত খেতে পার এবং তা থেকে বের করতে পার অলংকারাদি, যা তোমরা পরিধান কর। আর তুমি তাতে নৌযান দেখবে তা পানি চিরে চলছে এবং যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পার এবং যাতে তোমরা শোকরিয়া আদায় কর। আর জমিনে তিনি স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা, যাতে তোমাদের নিয়ে জমিন হেলে না যায় এবং নদ-নদী ও পথসমূহ, যাতে তোমরা পথপ্রাপ্ত হও। আর (দিনের) পথ-নির্দেশক চিহ্নসমূহ, আর (রাতে) তারকার মাধ্যমে তারা পথ পায়। সুতরাং যে সত্তা সৃষ্টি করতে পারেন, তিনি কি সেই বস্তুর মত, যে বস্তু কিছু সৃষ্টি করতে পারে না? অতএব তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না? আর যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে তার ইয়ত্তা পাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩ - ১৮]
﴿وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ مِن سُلَٰلَةٖ مِّن طِينٖ ١٢ ثُمَّ جَعَلۡنَٰهُ نُطۡفَةٗ فِي قَرَارٖ مَّكِينٖ ١٣ ثُمَّ خَلَقۡنَا ٱلنُّطۡفَةَ عَلَقَةٗ فَخَلَقۡنَا ٱلۡعَلَقَةَ مُضۡغَةٗ فَخَلَقۡنَا ٱلۡمُضۡغَةَ عِظَٰمٗا فَكَسَوۡنَا ٱلۡعِظَٰمَ لَحۡمٗا ثُمَّ أَنشَأۡنَٰهُ خَلۡقًا ءَاخَرَۚ فَتَبَارَكَ ٱللَّهُ أَحۡسَنُ ٱلۡخَٰلِقِينَ ١٤ ثُمَّ إِنَّكُم بَعۡدَ ذَٰلِكَ لَمَيِّتُونَ ١٥ ثُمَّ إِنَّكُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ تُبۡعَثُونَ ١٦ وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا فَوۡقَكُمۡ سَبۡعَ طَرَآئِقَ وَمَا كُنَّا عَنِ ٱلۡخَلۡقِ غَٰفِلِينَ ١٧ وَأَنزَلۡنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءَۢ بِقَدَرٖ فَأَسۡكَنَّٰهُ فِي ٱلۡأَرۡضِۖ وَإِنَّا عَلَىٰ ذَهَابِۢ بِهِۦ لَقَٰدِرُونَ ١٨ فَأَنشَأۡنَا لَكُم بِهِۦ جَنَّٰتٖ مِّن نَّخِيلٖ وَأَعۡنَٰبٖ لَّكُمۡ فِيهَا فَوَٰكِهُ كَثِيرَةٞ وَمِنۡهَا تَأۡكُلُونَ ١٩ وَشَجَرَةٗ تَخۡرُجُ مِن طُورِ سَيۡنَآءَ تَنۢبُتُ بِٱلدُّهۡنِ وَصِبۡغٖ لِّلۡأٓكِلِينَ ٢٠ وَإِنَّ لَكُمۡ فِي ٱلۡأَنۡعَٰمِ لَعِبۡرَةٗۖ نُّسۡقِيكُم مِّمَّا فِي بُطُونِهَا وَلَكُمۡ فِيهَا مَنَٰفِعُ كَثِيرَةٞ وَمِنۡهَا تَأۡكُلُونَ ٢١ وَعَلَيۡهَا وَعَلَى ٱلۡفُلۡكِ تُحۡمَلُونَ ٢٢﴾ [ المؤمنون : ١٢ - ٢٢ ]
“আর অবশ্যই আমি মানুষকে মাটির নির্যাস থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর আমি তাকে শুক্ররূপে সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। তারপর শুক্রকে আমি ‘আলাকায় পরিণত করি। তারপর ‘আলাকাকে গোশতপিণ্ডে পরিণত করি। তারপর গোশতপিণ্ডকে হাড়ে পরিণত করি। তারপর হাড়কে গোশ্ত দিয়ে আবৃত করি। অতঃপর তাকে অন্য এক সৃষ্টিরূপে গড়ে তুলি। অতএব, সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ মহা কল্যাণদায়ক। এরপর অবশ্যই তোমরা মরবে। তারপর কিয়ামতের দিন অবশ্যই তোমরা পুনরুত্থিত হবে। আর অবশ্যই আমি তোমাদের উপর সাতটি স্তর সৃষ্টি করেছি। আর আমি সৃষ্টি সম্পর্কে উদাসীন ছিলাম না। আর আমি আকাশ থেকে পরিমিতভাবে পানি বর্ষণ করেছি। অতঃপর আমি তা জমিনে সংরক্ষণ করেছি। আর অবশ্যই আমি সেটাকে অপসারণ করতেও সক্ষম। তারপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগানসমূহ সৃষ্টি করেছি। তাতে তোমাদের জন্য প্রচুর ফল থাকে। আর তা থেকেই তোমরা খাও। আর এক বৃক্ষ যা সিনাই পাহাড় হতে উদ্গত হয়, যা আহারকারীদের জন্য তেল ও তরকারী উৎপন্ন করে। আর নিশ্চয় গবাদিপশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। তাদের পেটে যা আছে তা থেকে আমি তোমাদেরকে পান করাই। আর এতে তোমাদের জন্য প্রচুর উপকারিতা রয়েছে এবং তা থেকে তোমরা খাও। আর এসবদ পশু ও নৌকায় তোমাদেরকে আরোহণ করানো হয়”। [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১২ - ২২]
﴿أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يُزۡجِي سَحَابٗا ثُمَّ يُؤَلِّفُ بَيۡنَهُۥ ثُمَّ يَجۡعَلُهُۥ رُكَامٗا فَتَرَى ٱلۡوَدۡقَ يَخۡرُجُ مِنۡ خِلَٰلِهِۦ وَيُنَزِّلُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مِن جِبَالٖ فِيهَا مِنۢ بَرَدٖ فَيُصِيبُ بِهِۦ مَن يَشَآءُ وَيَصۡرِفُهُۥ عَن مَّن يَشَآءُۖ يَكَادُ سَنَا بَرۡقِهِۦ يَذۡهَبُ بِٱلۡأَبۡصَٰرِ ٤٣ يُقَلِّبُ ٱللَّهُ ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَعِبۡرَةٗ لِّأُوْلِي ٱلۡأَبۡصَٰرِ ٤٤ وَٱللَّهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٖ مِّن مَّآءٖۖ فَمِنۡهُم مَّن يَمۡشِي عَلَىٰ بَطۡنِهِۦ وَمِنۡهُم مَّن يَمۡشِي عَلَىٰ رِجۡلَيۡنِ وَمِنۡهُم مَّن يَمۡشِي عَلَىٰٓ أَرۡبَعٖۚ يَخۡلُقُ ٱللَّهُ مَا يَشَآءُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ٤٥﴾ [ النور : ٤٣- ٤٥ ]
“তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ মেঘমালাকে পরিচালিত করেন, তারপর তিনি সেগুলোকে একত্রে জুড়ে দেন, তারপর সেগুলো স্তুপীকৃত করেন, তারপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে বৃষ্টির বের হয়। আর তিনি আকাশে স্থিত মেঘমালার পাহাড় থেকে শিলা বর্ষণ করেন। তারপর তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন। আর যার কাছ থেকে ইচ্ছা তা সরিয়ে দেন। এর বিদ্যুতের ঝলক দৃষ্টিশক্তি প্রায় কেড়ে নেয়। আল্লাহ দিন ও রাতের আবর্তন ঘটান, নিশ্চয়ই এতে অন্তরদৃষ্টিসম্পন্নদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। আর আল্লাহ প্রত্যেক জীবকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাদের কোনটি পেটে ভর দিয়ে চলে, কোনটি চলে দু’পায়ের উপর, আবার কোনটি চার পায়ের উপর চলে। আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৪৩-৪৫]
﴿أَلَمۡ تَرَ إِلَىٰ رَبِّكَ كَيۡفَ مَدَّ ٱلظِّلَّ وَلَوۡ شَآءَ لَجَعَلَهُۥ سَاكِنٗا ثُمَّ جَعَلۡنَا ٱلشَّمۡسَ عَلَيۡهِ دَلِيلٗا ٤٥ ثُمَّ قَبَضۡنَٰهُ إِلَيۡنَا قَبۡضٗا يَسِيرٗا ٤٦ وَهُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلَّيۡلَ لِبَاسٗا وَٱلنَّوۡمَ سُبَاتٗا وَجَعَلَ ٱلنَّهَارَ نُشُورٗا ٤٧ وَهُوَ ٱلَّذِيٓ أَرۡسَلَ ٱلرِّيَٰحَ بُشۡرَۢا بَيۡنَ يَدَيۡ رَحۡمَتِهِۦۚ وَأَنزَلۡنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ طَهُورٗا ٤٨ لِّنُحۡـِۧيَ بِهِۦ بَلۡدَةٗ مَّيۡتٗا وَنُسۡقِيَهُۥ مِمَّا خَلَقۡنَآ أَنۡعَٰمٗا وَأَنَاسِيَّ كَثِيرٗا ٤٩ وَلَقَدۡ صَرَّفۡنَٰهُ بَيۡنَهُمۡ لِيَذَّكَّرُواْ فَأَبَىٰٓ أَكۡثَرُ ٱلنَّاسِ إِلَّا كُفُورٗا ٥٠ وَلَوۡ شِئۡنَا لَبَعَثۡنَا فِي كُلِّ قَرۡيَةٖ نَّذِيرٗا ٥١ فَلَا تُطِعِ ٱلۡكَٰفِرِينَ وَجَٰهِدۡهُم بِهِۦ جِهَادٗا كَبِيرٗا ٥٢ ۞وَهُوَ ٱلَّذِي مَرَجَ ٱلۡبَحۡرَيۡنِ هَٰذَا عَذۡبٞ فُرَاتٞ وَهَٰذَا مِلۡحٌ أُجَاجٞ وَجَعَلَ بَيۡنَهُمَا بَرۡزَخٗا وَحِجۡرٗا مَّحۡجُورٗا ٥٣ وَهُوَ ٱلَّذِي خَلَقَ مِنَ ٱلۡمَآءِ بَشَرٗا فَجَعَلَهُۥ نَسَبٗا وَصِهۡرٗاۗ وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرٗا ٥٤ ﴾ [ الفرقان : ٤٥ - ٥٤ ]
“তুমি কি দেখ নি! কীভাবে তোমার প্রতিপালক ছায়াকে প্রসারিত করেছেন, আর তিনি যদি চাইতেন, তাহলে তাকে অবশ্যই স্থির করে দিতে পারতেন। আর আমি সূর্যকে ছায়া সৃষ্টি হওয়ার নিদর্শন বানিয়ে দিয়েছি। তারপর আমি এই ছায়াকে ধীরে ধীরে আমার ইচ্ছাক্রমে গুটিয়ে আনি। আর তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে আবরণ ও নিদ্রাকে আরামপ্রদ করেছেন এবং দিনকে করেছেন জাগ্রত থাকার সময়। আর তিনিই তাঁর রহমতের প্রাক্কালে সুসংবাদস্বরূপ বায়ু পাঠিয়েছেন এবং আমি আকাশ থেকে পবিত্র পানি বর্ষণ করেছি, মৃত ভূ-খণ্ডকে জীবিত করার জন্য এবং আমি যে সকল জীবজন্তু ও মানুষ সৃষ্টি করেছি, তার মধ্য থেকে অনেককে তা পান করাই। আর আমি তা তাদের মধ্যে বণ্টন করি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে; তারপর অধিকাংশ লোক শুধু অকৃতজ্ঞতাই প্রকাশ করে। আর আমি ইচ্ছা করলে প্রতিটি জনপদে একজন সতর্ককারী পাঠাতাম। সুতরাং তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি কুরআনের দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম কর। আর তিনিই দু’টো সাগরকে একসাথে প্রবাহিত করেছেন। একটি সুপেয় সুস্বাদু, অপরটি লবণাক্ত ক্ষারবিশিষ্ট এবং তিনি এতদোভয়ের মাঝখানে একটি অন্তরায় ও একটি অনতিক্রম্য সীমানা স্থাপন করেছেন। আর তিনিই বীর্য দ্বারা মানুষ সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কযুক্ত করেছেন। আর তোমার রব হলো প্রভূত ক্ষমতাবান”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৪৫-৫৪]
﴿فَسُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ حِينَ تُمۡسُونَ وَحِينَ تُصۡبِحُونَ ١٧ وَلَهُ ٱلۡحَمۡدُ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَعَشِيّٗا وَحِينَ تُظۡهِرُونَ ١٨ يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَيُحۡيِ ٱلۡأَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِهَاۚ وَكَذَٰلِكَ تُخۡرَجُونَ ١٩ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٖ ثُمَّ إِذَآ أَنتُم بَشَرٞ تَنتَشِرُونَ ٢٠ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٢١ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦ خَلۡقُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفُ أَلۡسِنَتِكُمۡ وَأَلۡوَٰنِكُمۡۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّلۡعَٰلِمِينَ ٢٢ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦ مَنَامُكُم بِٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ وَٱبۡتِغَآؤُكُم مِّن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَسۡمَعُونَ ٢٣ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦ يُرِيكُمُ ٱلۡبَرۡقَ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَيُنَزِّلُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَيُحۡيِۦ بِهِ ٱلۡأَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِهَآۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَعۡقِلُونَ ٢٤ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَن تَقُومَ ٱلسَّمَآءُ وَٱلۡأَرۡضُ بِأَمۡرِهِۦۚ ثُمَّ إِذَا دَعَاكُمۡ دَعۡوَةٗ مِّنَ ٱلۡأَرۡضِ إِذَآ أَنتُمۡ تَخۡرُجُونَ ٢٥ وَلَهُۥ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ كُلّٞ لَّهُۥ قَٰنِتُونَ ٢٦ وَهُوَ ٱلَّذِي يَبۡدَؤُاْ ٱلۡخَلۡقَ ثُمَّ يُعِيدُهُۥ وَهُوَ أَهۡوَنُ عَلَيۡهِۚ وَلَهُ ٱلۡمَثَلُ ٱلۡأَعۡلَىٰ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٢٧﴾ [ الروم : ١٧ - ٢٧ ]
“অতএব তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর, যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে এবং সকালে উঠবে। আর অপরাহ্নে ও জোহরের সময়ে; আর আসমান ও জমিনে সকল প্রশংসা একমাত্র তাঁরই। তিনি মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন। আর তিনি জমিনকে জীবিত করেন তার মৃত্যুর পর। আর এভাবেই তোমরা উত্থিত হবে। আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে এই বিষয়টি রয়েছে যে, তিনি তোমাদের পিতা আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমরা মানুষ হয়ে ছড়িয়ে পড়ছ। আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে এই বিষয়টিও রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্যে থেকেই তোমাদের স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও তোমাদের বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য। আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে রাতে ও দিনে তোমাদের নিদ্রা এবং তাঁর অনুগ্রহ থেকে তোমাদের (জীবিকা) অন্বেষণ। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কওমের জন্য যারা শোনে। আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে এই বিষয়টিও রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে ভয় ও ভরসাস্বরূপ বিদ্যুৎ দেখান, আর আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা দ্বারা জমিনকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কওমের জন্য যারা অনুধাবন করে। আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে, তাঁরই নির্দেশে আসমান ও জমিন স্থিতিশীল থাকে। তারপর তিনি যখন তোমাদেরকে জমিন থেকে বের হয়ে আসার জন্য একবার আহ্বান করবেন তখনই তোমরা বের হয়ে আসবে। আর আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সব তাঁরই। সব কিছুই তাঁর অনুগত। আর তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেন তারপর তিনিই এর পুনরাবৃত্তি করবেন। আর এটা তো তাঁর জন্য অধিকদতর সহজ। আসমান ও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ১৭-২৭]
﴿ٱلرَّحۡمَٰنُ ١ عَلَّمَ ٱلۡقُرۡءَانَ ٢ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ ٣ عَلَّمَهُ ٱلۡبَيَانَ ٤ ٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُ بِحُسۡبَانٖ ٥ وَٱلنَّجۡمُ وَٱلشَّجَرُ يَسۡجُدَانِ ٦ وَٱلسَّمَآءَ رَفَعَهَا وَوَضَعَ ٱلۡمِيزَانَ ٧ أَلَّا تَطۡغَوۡاْ فِي ٱلۡمِيزَانِ ٨ وَأَقِيمُواْ ٱلۡوَزۡنَ بِٱلۡقِسۡطِ وَلَا تُخۡسِرُواْ ٱلۡمِيزَانَ ٩ وَٱلۡأَرۡضَ وَضَعَهَا لِلۡأَنَامِ ١٠ فِيهَا فَٰكِهَةٞ وَٱلنَّخۡلُ ذَاتُ ٱلۡأَكۡمَامِ ١١ وَٱلۡحَبُّ ذُو ٱلۡعَصۡفِ وَٱلرَّيۡحَانُ ١٢ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ١٣ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ مِن صَلۡصَٰلٖ كَٱلۡفَخَّارِ ١٤ وَخَلَقَ ٱلۡجَآنَّ مِن مَّارِجٖ مِّن نَّارٖ ١٥ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ١٦ رَبُّ ٱلۡمَشۡرِقَيۡنِ وَرَبُّ ٱلۡمَغۡرِبَيۡنِ ١٧ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ١٨ مَرَجَ ٱلۡبَحۡرَيۡنِ يَلۡتَقِيَانِ ١٩ بَيۡنَهُمَا بَرۡزَخٞ لَّا يَبۡغِيَانِ ٢٠ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٢١ يَخۡرُجُ مِنۡهُمَا ٱللُّؤۡلُؤُ وَٱلۡمَرۡجَانُ ٢٢ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٢٣ وَلَهُ ٱلۡجَوَارِ ٱلۡمُنشََٔاتُ فِي ٱلۡبَحۡرِ كَٱلۡأَعۡلَٰمِ ٢٤ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٢٥﴾ [ الرحمن : ١، ٢٥ ]
“পরম করুণাময়, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনি তাকে শিখিয়েছেন ভাষা। সূর্য ও চাঁদ তাদের নির্ধারিত স্থানে চলে, আর লতা ও বৃক্ষ উদ্ভিদ আল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করে। আর তিনি আকাশকে সমুন্নত করেছেন এবং দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করেছেন। যাতে তোমরা দাঁড়িপাল্লায় সীমালঙ্ঘন না কর। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে ওজন প্রতিষ্ঠা কর এবং ওজনকৃত বস্তু কম দিও না। আর জমিনকে বিছিয়ে দিয়েছেন সৃষ্টজীবের জন্য। তাতে রয়েছে ফলমূল ও খেজুরগাছ, যার খেজুর আবরণযুক্ত। আর আছে খোসাযুক্ত দানা ও সুগন্ধিযুক্ত ফুল। সুতরাং তোমাদের রবের কোন্ নেয়ামতকে তোমরা উভয়ে [‘উভয়ে’ দ্বারা জিন্ন ও মানুষকে বুঝানো হয়েছে।] অস্বীকার করবে? তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুষ্ক ঠনঠনে মাটি থেকে যা পোড়া মাটির ন্যায়। আর তিনি জিনকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াবিহীন অগ্নিশিখা থেকে। সুতরাং তোমাদের রবের কোন্ নেয়ামতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে? তিনি দুই পূর্ব ও দুই পশ্চিমের [দুই পূর্ব বলতে গ্রীষ্ম ও শীতকালের উদয়স্থল এবং দুই পশ্চিম বলতে গ্রীষ্ম ও শীতকালের অস্তস্থলকে বুঝানো হয়েছে।] রব। সুতরাং তোমাদের রবের কোন্ নেয়ামতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে? তিনি দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়। উভয়ের মধ্যে রয়েছে এক আড়াল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। সুতরাং তোমাদের রবের কোন নেয়ামতকে দতোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে? উভয় সমুদ্র থেকে উৎপন্ন হয় মণিমুক্তা ও প্রবাল। সুতরাং, তোমাদের রবের কোন্ নেয়ামতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে? আর সমুদ্রে চলমান পাহাড়সম জাহাজসমূহ তাঁরই। সুতরাং তোমাদের রবের কোন নেয়ামতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে?। [সূরা আর-রহমান, আয়াত: ১-২৫]
﴿ أَلَمۡ نَجۡعَلِ ٱلۡأَرۡضَ مِهَٰدٗا ٦ وَٱلۡجِبَالَ أَوۡتَادٗا ٧ وَخَلَقۡنَٰكُمۡ أَزۡوَٰجٗا ٨ وَجَعَلۡنَا نَوۡمَكُمۡ سُبَاتٗا ٩ وَجَعَلۡنَا ٱلَّيۡلَ لِبَاسٗا ١٠ وَجَعَلۡنَا ٱلنَّهَارَ مَعَاشٗا ١١ وَبَنَيۡنَا فَوۡقَكُمۡ سَبۡعٗا شِدَادٗا ١٢ وَجَعَلۡنَا سِرَاجٗا وَهَّاجٗا ١٣ وَأَنزَلۡنَا مِنَ ٱلۡمُعۡصِرَٰتِ مَآءٗ ثَجَّاجٗا ١٤ لِّنُخۡرِجَ بِهِۦ حَبّٗا وَنَبَاتٗا ١٥ وَجَنَّٰتٍ أَلۡفَافًا ١٦ ﴾ [ النبا : ٦ - ١٦ ]
“আমি কি বানাই নি জমিনকে বিছানা? আর পর্বতসমূহকে পেরেক? আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়। আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি বিশ্রাম। আর আমি রাতকে করেছি আবরণ। আর আমি দিনকে করেছি জীবিকার্জনের সময়। আর আমি তোমাদের উপরে বানিয়েছি সাতটি সুদৃঢ় আকাশ। আর আমি সৃষ্টি করেছি উজ্জ্বল একটি প্রদীপ সূর্য। আর আমি মেঘমালা থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করেছি। যাতে তা দিয়ে আমি শস্য ও উদ্ভিদ উৎপন্ন করতে পারি। আর ঘন উদ্যানসমূহ”। [সূরা আন-নাবা, আয়াত: ৬ - ১৬]
﴿ءَأَنتُمۡ أَشَدُّ خَلۡقًا أَمِ ٱلسَّمَآءُۚ بَنَىٰهَا ٢٧ رَفَعَ سَمۡكَهَا فَسَوَّىٰهَا ٢٨ وَأَغۡطَشَ لَيۡلَهَا وَأَخۡرَجَ ضُحَىٰهَا ٢٩ وَٱلۡأَرۡضَ بَعۡدَ ذَٰلِكَ دَحَىٰهَآ ٣٠ أَخۡرَجَ مِنۡهَا مَآءَهَا وَمَرۡعَىٰهَا ٣١ وَٱلۡجِبَالَ أَرۡسَىٰهَا ٣٢﴾ [ النازعات : ٢٦ - ٣٢ ]
“তোমাদেরকে সৃষ্টি করা অধিক কঠিন, না আসমান সৃষ্টি করা? তিনি তা বানিয়েছেন। তিনি এর ছাদকে উচ্চ করেছেন এবং তাকে সুসম্পন্ন করেছেন। আর তিনি এর রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন এবং এর দিনকে আলোকিত করেছেন। এরপর তিনি জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছেন। তিনি তার ভিতর থেকে বের করেছেন তার পানি ও তার তৃণভূমি। আর পর্বতগুলোকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন”। [সূরা আন-নাযি‘আত, আয়াত: ২৬ - ৩২]
﴿فَلۡيَنظُرِ ٱلۡإِنسَٰنُ إِلَىٰ طَعَامِهِۦٓ ٢٤ أَنَّا صَبَبۡنَا ٱلۡمَآءَ صَبّٗا ٢٥ ثُمَّ شَقَقۡنَا ٱلۡأَرۡضَ شَقّٗا ٢٦ فَأَنۢبَتۡنَا فِيهَا حَبّٗا ٢٧ وَعِنَبٗا وَقَضۡبٗا ٢٨ وَزَيۡتُونٗا وَنَخۡلٗا ٢٩ وَحَدَآئِقَ غُلۡبٗا ٣٠ وَفَٰكِهَةٗ وَأَبّٗا ٣١ مَّتَٰعٗا لَّكُمۡ وَلِأَنۡعَٰمِكُمۡ ٣٢﴾ [ عبس : ٢٤ - ٣٢ ]
“কাজেই মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। নিশ্চয় আমি প্রচুর পরিমাণে পানি বর্ষণ করি। তারপর জমিনকে যথাযথভাবে বিদীর্ণ করি। অতঃপর তাতে আমি উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর ও শাক-সবজি, যায়তূন ও খেজুর বন, ঘনবৃক্ষ শোভিত বাগ-বাগিচা, আর ফল ও তৃণগুল্ম। তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুগুলোর জীবনোপকরণস্বরূপ”। [সূরা আবাসা, আয়াত: ২৪ - ৩২]
সাধারণত পৃথিবীতে বসবাসকারী সমস্ত লোক সামগ্রিকভাবে আল্লাহর প্রভুত্ব, কর্তৃত্ব এবং আধিপত্য বা রবুবিয়্যাতকে স্বীকার করে। তারা এ কথা স্বীকার করে যে, আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, আল্লাহ মালিক এবং আল্লাহই সবকিছুর পরিচালক। এমনকি মক্কার মুশরিকরাও এ কথা স্বীকার করত। মহান আল্লাহ তাদের এ স্বীকার করাকে কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় তুলে ধরেছেন। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُل لِّمَنِ ٱلۡأَرۡضُ وَمَن فِيهَآ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٨٤ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ٨٥ قُلۡ مَن رَّبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ ٱلسَّبۡعِ وَرَبُّ ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡعَظِيمِ ٨٦ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٨٧ قُلۡ مَنۢ بِيَدِهِۦ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيۡءٖ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيۡهِ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٨٨ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ فَأَنَّىٰ تُسۡحَرُونَ ٨٩﴾ [ المؤمنون : ٨٤ - ٨٩ ]
“বল, ‘এ জমিন ও এতে যারা আছে তারা কার যদি তোমরা এর সৃষ্টিকর্তার বিষয়ে জ্ঞান কোনো রাখ? অচিরেই তারা বলবে, ‘আল্লাহর’। বল, ‘তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?’ বল, ‘কে সাত আসমানের রব এবং মহা আরশের রব’? তারা বলবে, ‘আল্লাহ।’ বল, ‘তবুও কি তোমরা আল্লাহর শাস্তি হতে সতর্ক হবে না? বল, ‘তিনি কে যার হাতে সকল কিছুর কর্তৃত্ব, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যাঁর উপর কোন আশ্রয়দাতা নেই?’ যদি তোমরা জানতে। তারা বলবে, ‘আল্লাহ।’ বল, ‘তবুও কীভাবে তোমরা বিভ্রান্ত হচ্ছ?’’। [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৮৪ - ৮৯]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡعَلِيمُ ٩﴾ [ الزخرف : ٩ ]
“আর তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর যে, আসমানসমূহ ও জমিনকে কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে, মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ মহান আল্লাহই কেবল এগুলো সৃষ্টি করেছেন”। [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৯]
﴿إِنَّ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفِ ٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ وَٱلۡفُلۡكِ ٱلَّتِي تَجۡرِي فِي ٱلۡبَحۡرِ بِمَا يَنفَعُ ٱلنَّاسَ وَمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مِن مَّآءٖ فَأَحۡيَا بِهِ ٱلۡأَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَآبَّةٖ وَتَصۡرِيفِ ٱلرِّيَٰحِ وَٱلسَّحَابِ ٱلۡمُسَخَّرِ بَيۡنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَعۡقِلُونَ ١٦٤﴾ [ البقرة : ١٦٤ ]
“নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে, সে নৌকায় যা সমুদ্রে মানুষের জন্য কল্যাণকর বস্তু নিয়ে চলে এবং আসমান থেকে আল্লাহ যে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন অতঃপর তার মাধ্যমে মরে যাওয়ার পর জমিনকে জীবিত করেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সকল প্রকার বিচরণশীল প্রাণী ও বাতাসের পরিবর্তনে এবং আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানে নিয়োজিত মেঘমালায় রয়েছে নিদর্শনসমূহ এমন কওমের জন্য, যারা বিবেকবান”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৪]
﴿تُولِجُ ٱلَّيۡلَ فِي ٱلنَّهَارِ وَتُولِجُ ٱلنَّهَارَ فِي ٱلَّيۡلِۖ وَتُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَتُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّۖ وَتَرۡزُقُ مَن تَشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٖ ٢٧﴾ [ ال عمران : ٢٧ ]
‘‘আপনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান। আর মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন। আর যাকে চান বিনা হিসাবে রিযিক দান করেন’’। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ২৭]
﴿۞إِنَّ ٱللَّهَ فَالِقُ ٱلۡحَبِّ وَٱلنَّوَىٰۖ يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَمُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتِ مِنَ ٱلۡحَيِّۚ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُۖ فَأَنَّىٰ تُؤۡفَكُونَ ٩٥ فَالِقُ ٱلۡإِصۡبَاحِ وَجَعَلَ ٱلَّيۡلَ سَكَنٗا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ حُسۡبَانٗاۚ ذَٰلِكَ تَقۡدِيرُ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡعَلِيمِ ٩٦ وَهُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلنُّجُومَ لِتَهۡتَدُواْ بِهَا فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۗ قَدۡ فَصَّلۡنَا ٱلۡأٓيَٰتِ لِقَوۡمٖ يَعۡلَمُونَ ٩٧ وَهُوَ ٱلَّذِيٓ أَنشَأَكُم مِّن نَّفۡسٖ وَٰحِدَةٖ فَمُسۡتَقَرّٞ وَمُسۡتَوۡدَعٞۗ قَدۡ فَصَّلۡنَا ٱلۡأٓيَٰتِ لِقَوۡمٖ يَفۡقَهُونَ ٩٨ وَهُوَ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَخۡرَجۡنَا بِهِۦ نَبَاتَ كُلِّ شَيۡءٖ فَأَخۡرَجۡنَا مِنۡهُ خَضِرٗا نُّخۡرِجُ مِنۡهُ حَبّٗا مُّتَرَاكِبٗا وَمِنَ ٱلنَّخۡلِ مِن طَلۡعِهَا قِنۡوَانٞ دَانِيَةٞ وَجَنَّٰتٖ مِّنۡ أَعۡنَابٖ وَٱلزَّيۡتُونَ وَٱلرُّمَّانَ مُشۡتَبِهٗا وَغَيۡرَ مُتَشَٰبِهٍۗ ٱنظُرُوٓاْ إِلَىٰ ثَمَرِهِۦٓ إِذَآ أَثۡمَرَ وَيَنۡعِهِۦٓۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكُمۡ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ٩٩﴾ [ الانعام : ٩٥، ٩٩ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ বীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী। তিনি মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বেরকারী। তিনিই আল্লাহ, সুতরাং (সৎপথ থেকে) কোথায় তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে? (তিনি) প্রভাত উদ্ভাসক। তিনি বানিয়েছেন রাতকে প্রশান্তি এবং সূর্য ও চন্দ্রকে সময় নিরূপক। এটা সর্বজ্ঞ পরাক্রমশালীর নির্ধারণ। আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য তারকারাজি, যাতে তোমরা এ দ্বারা পথপ্রাপ্ত হও স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারে। অবশ্যই আমি আয়াতসমূহকে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি এমন কওমের জন্য যারা জানে। আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এক নফস থেকে। অতঃপর রয়েছে আবাসস্থল ও সমাধিস্থল। অবশ্যই আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করেছি, এমন কওমের জন্য যারা ভালভাবে বুঝে। আর তিনিই আসমান থেকে বর্ষণ করেছেন বৃষ্টি। অতঃপর আমি এ দ্বারা উৎপন্ন করেছি সব জাতের উদ্ভিদ। অতঃপর আমি তা থেকে বের করেছি সবুজ ডাল-পালা। আমি তা থেকে বের করি ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা। আর খেজুর বৃক্ষের মাথি থেকে (বের করি) ঝুলন্ত থোকা। আর (উৎপন্ন করি) আঙ্গুরের বাগান এবং সাদৃশ্যপূর্ণ ও সাদৃশ্যহীন যয়তুন ও আনার। দেখ তার ফলের দিকে, যখন সে ফলবান হয় এবং তার পাকার প্রতি। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য যারা ঈমান আনে”। [সূরা আন‘আম, আয়াত: ৯৫, ৯৯]
﴿ٱللَّهُ ٱلَّذِي رَفَعَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ بِغَيۡرِ عَمَدٖ تَرَوۡنَهَاۖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ وَسَخَّرَ ٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَۖ كُلّٞ يَجۡرِي لِأَجَلٖ مُّسَمّٗىۚ يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَ يُفَصِّلُ ٱلۡأٓيَٰتِ لَعَلَّكُم بِلِقَآءِ رَبِّكُمۡ تُوقِنُونَ ٢ وَهُوَ ٱلَّذِي مَدَّ ٱلۡأَرۡضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَٰسِيَ وَأَنۡهَٰرٗاۖ وَمِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ جَعَلَ فِيهَا زَوۡجَيۡنِ ٱثۡنَيۡنِۖ يُغۡشِي ٱلَّيۡلَ ٱلنَّهَارَۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٣ وَفِي ٱلۡأَرۡضِ قِطَعٞ مُّتَجَٰوِرَٰتٞ وَجَنَّٰتٞ مِّنۡ أَعۡنَٰبٖ وَزَرۡعٞ وَنَخِيلٞ صِنۡوَانٞ وَغَيۡرُ صِنۡوَانٖ يُسۡقَىٰ بِمَآءٖ وَٰحِدٖ وَنُفَضِّلُ بَعۡضَهَا عَلَىٰ بَعۡضٖ فِي ٱلۡأُكُلِۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَعۡقِلُونَ ٤﴾ [ الرعد : ٢، ٤ ]
“আল্লাহ, যিনি খুঁটি ছাড়া আসমানসমূহ উঁচু করেছেন যা তোমরা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশের ঊর্ধ্বে অবস্থিত হয়েছেন এবং সূর্য ও চাঁদকে নিয়োজিত করেছেন। এর প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলবে। তিনি সবকিছু পরিচালনা করেন। আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করেন, যাতে তোমাদের রবের সাক্ষাতের ব্যাপারে তোমরা দৃঢ়বিশ্বাসী হতে পার। আর তিনিই জমিনকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে সুদৃঢ় পর্বতমালা ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন। আর সকল প্রকারের ফল তিনি জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। নিশ্চয় যে কওম চিন্তাভাবনা করে তাদের জন্য এতে নিদর্শনাবলি রয়েছে। আর জমিনে আছে পরস্পর পাশাপাশি ভূখণ্ড, আঙ্গুর-বাগান, শস্যক্ষেত, খেজুর গাছ, যেগুলোর মধ্যে কিছু একই মূল থেকে উদগত আর কিছু ভিন্ন ভিন্ন মূল থেকে উদগত, যেগুলো একই পানি দ্বারা সেচ করা হয়, আর আমি খাওয়ার ক্ষেত্রে একটিকে অপরটির তুলনায় উৎকৃষ্ট করে দেই, এতে নিদর্শন রয়েছে ঐ কওমের জন্য যারা বুঝে”। [সূরা আর-রা‘আদ, আয়াত: ২, ৪]
﴿خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ بِٱلۡحَقِّۚ تَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٣ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ مِن نُّطۡفَةٖ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٞ مُّبِينٞ ٤ وَٱلۡأَنۡعَٰمَ خَلَقَهَاۖ لَكُمۡ فِيهَا دِفۡءٞ وَمَنَٰفِعُ وَمِنۡهَا تَأۡكُلُونَ ٥ وَلَكُمۡ فِيهَا جَمَالٌ حِينَ تُرِيحُونَ وَحِينَ تَسۡرَحُونَ ٦ وَتَحۡمِلُ أَثۡقَالَكُمۡ إِلَىٰ بَلَدٖ لَّمۡ تَكُونُواْ بَٰلِغِيهِ إِلَّا بِشِقِّ ٱلۡأَنفُسِۚ إِنَّ رَبَّكُمۡ لَرَءُوفٞ رَّحِيمٞ ٧ وَٱلۡخَيۡلَ وَٱلۡبِغَالَ وَٱلۡحَمِيرَ لِتَرۡكَبُوهَا وَزِينَةٗۚ وَيَخۡلُقُ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٨ وَعَلَى ٱللَّهِ قَصۡدُ ٱلسَّبِيلِ وَمِنۡهَا جَآئِرٞۚ وَلَوۡ شَآءَ لَهَدَىٰكُمۡ أَجۡمَعِينَ ٩ هُوَ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗۖ لَّكُم مِّنۡهُ شَرَابٞ وَمِنۡهُ شَجَرٞ فِيهِ تُسِيمُونَ ١٠ يُنۢبِتُ لَكُم بِهِ ٱلزَّرۡعَ وَٱلزَّيۡتُونَ وَٱلنَّخِيلَ وَٱلۡأَعۡنَٰبَ وَمِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ١١ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَۖ وَٱلنُّجُومُ مُسَخَّرَٰتُۢ بِأَمۡرِهِۦٓۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَعۡقِلُونَ ١٢ وَمَا ذَرَأَ لَكُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُخۡتَلِفًا أَلۡوَٰنُهُۥٓۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لِّقَوۡمٖ يَذَّكَّرُونَ ١٣ وَهُوَ ٱلَّذِي سَخَّرَ ٱلۡبَحۡرَ لِتَأۡكُلُواْ مِنۡهُ لَحۡمٗا طَرِيّٗا وَتَسۡتَخۡرِجُواْ مِنۡهُ حِلۡيَةٗ تَلۡبَسُونَهَاۖ وَتَرَى ٱلۡفُلۡكَ مَوَاخِرَ فِيهِ وَلِتَبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِهِۦ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٤ وَأَلۡقَىٰ فِي ٱلۡأَرۡضِ رَوَٰسِيَ أَن تَمِيدَ بِكُمۡ وَأَنۡهَٰرٗا وَسُبُلٗا لَّعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٥ وَعَلَٰمَٰتٖۚ وَبِٱلنَّجۡمِ هُمۡ يَهۡتَدُونَ ١٦ أَفَمَن يَخۡلُقُ كَمَن لَّا يَخۡلُقُۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ١٧ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَةَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ ١٨﴾ [ النحل : ٣ - ١٨ ]
“তিনি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথ ভাবে, তারা যা শরীক করে, তা থেকে তিনি ঊর্ধ্বে। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ‘নুতফা’ [‘নুতফা’ হচ্ছে নারী ও পুরুষের যৌথ বীর্য, যা ভ্রুণে পরিণত হয়।] থেকে, অথচ সে প্রকাশ্য বিতন্ডাকারী। আর চতুষ্পদ জন্তুগুলো তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন তাতে রয়েছে উষ্ণতার উপকরণ ও বিবিধ উপকার। আর তা থেকে তোমরা আহার গ্রহণ কর। আর তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে সৌন্দর্য যখন সন্ধ্যায় তা ফিয়য়ে আন এবং সকালে চারণে নিয়ে যাও। আর এগুলো তোমাদের বোঝা বহন করে এমন দেশে নিয়ে যায়, ভীষণ কষ্ট ছাড়া যেখানে তোমরা পৌঁছতে সক্ষম হতে না। নিশ্চয় তোমাদের রব দয়াশীল, পরম দয়ালু। আর (তিনি সৃষ্টি করেছেন) ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা, তোমাদের আরোহণ ও শোভার জন্য এবং তিনি সৃষ্টি করবেন এমন কিছু, যা তোমরা জান না। আর সঠিক পথ বাতলে দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব, এবং পথের মধ্যে কিছু আছে বক্র। আর তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদের সকলকে হিদায়াত করতেন। তিনিই সে সত্তা, যিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, যাতে রয়েছে তোমাদের জন্য পানীয় এবং তা থেকে হয় উদ্ভিত, যাতে তোমরা জন্তু চরাও। তার মাধ্যমে তিনি তোমাদের জন্য উৎপন্ন করেন ফসল, যাইতুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর এবং সকল ফল-ফলাদি। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। আর তিনি তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিনকে এবং সূর্য ও চাঁদকে এবং তারকাসমূহও তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। নিশ্চয় এতে অনেক নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য যারা বুঝে। আর তিনি তোমাদের জন্য জমিনে যা সৃষ্টি করেছেন, বিচিত্র রঙের করে, নিশ্চয় তাতেও নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য, যারা উপদেশ গ্রহণ করে। আর তিনিই সে সত্তা, যিনি সমুদ্রকে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা (মাছের) গোশত খেতে পার এবং তা থেকে বের করতে পার অলংকারাদি, যা তোমরা পরিধান কর। আর তুমি তাতে নৌযান দেখবে তা পানি চিরে চলছে এবং যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পার এবং যাতে তোমরা শোকরিয়া আদায় কর। আর জমিনে তিনি স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা, যাতে তোমাদের নিয়ে জমিন হেলে না যায় এবং নদ-নদী ও পথসমূহ, যাতে তোমরা পথপ্রাপ্ত হও। আর (দিনের) পথ-নির্দেশক চিহ্নসমূহ, আর (রাতে) তারকার মাধ্যমে তারা পথ পায়। সুতরাং যে সত্তা সৃষ্টি করতে পারেন, তিনি কি সেই বস্তুর মত, যে বস্তু কিছু সৃষ্টি করতে পারে না? অতএব তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না? আর যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে তার ইয়ত্তা পাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩ - ১৮]
﴿وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ مِن سُلَٰلَةٖ مِّن طِينٖ ١٢ ثُمَّ جَعَلۡنَٰهُ نُطۡفَةٗ فِي قَرَارٖ مَّكِينٖ ١٣ ثُمَّ خَلَقۡنَا ٱلنُّطۡفَةَ عَلَقَةٗ فَخَلَقۡنَا ٱلۡعَلَقَةَ مُضۡغَةٗ فَخَلَقۡنَا ٱلۡمُضۡغَةَ عِظَٰمٗا فَكَسَوۡنَا ٱلۡعِظَٰمَ لَحۡمٗا ثُمَّ أَنشَأۡنَٰهُ خَلۡقًا ءَاخَرَۚ فَتَبَارَكَ ٱللَّهُ أَحۡسَنُ ٱلۡخَٰلِقِينَ ١٤ ثُمَّ إِنَّكُم بَعۡدَ ذَٰلِكَ لَمَيِّتُونَ ١٥ ثُمَّ إِنَّكُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ تُبۡعَثُونَ ١٦ وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا فَوۡقَكُمۡ سَبۡعَ طَرَآئِقَ وَمَا كُنَّا عَنِ ٱلۡخَلۡقِ غَٰفِلِينَ ١٧ وَأَنزَلۡنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءَۢ بِقَدَرٖ فَأَسۡكَنَّٰهُ فِي ٱلۡأَرۡضِۖ وَإِنَّا عَلَىٰ ذَهَابِۢ بِهِۦ لَقَٰدِرُونَ ١٨ فَأَنشَأۡنَا لَكُم بِهِۦ جَنَّٰتٖ مِّن نَّخِيلٖ وَأَعۡنَٰبٖ لَّكُمۡ فِيهَا فَوَٰكِهُ كَثِيرَةٞ وَمِنۡهَا تَأۡكُلُونَ ١٩ وَشَجَرَةٗ تَخۡرُجُ مِن طُورِ سَيۡنَآءَ تَنۢبُتُ بِٱلدُّهۡنِ وَصِبۡغٖ لِّلۡأٓكِلِينَ ٢٠ وَإِنَّ لَكُمۡ فِي ٱلۡأَنۡعَٰمِ لَعِبۡرَةٗۖ نُّسۡقِيكُم مِّمَّا فِي بُطُونِهَا وَلَكُمۡ فِيهَا مَنَٰفِعُ كَثِيرَةٞ وَمِنۡهَا تَأۡكُلُونَ ٢١ وَعَلَيۡهَا وَعَلَى ٱلۡفُلۡكِ تُحۡمَلُونَ ٢٢﴾ [ المؤمنون : ١٢ - ٢٢ ]
“আর অবশ্যই আমি মানুষকে মাটির নির্যাস থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর আমি তাকে শুক্ররূপে সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। তারপর শুক্রকে আমি ‘আলাকায় পরিণত করি। তারপর ‘আলাকাকে গোশতপিণ্ডে পরিণত করি। তারপর গোশতপিণ্ডকে হাড়ে পরিণত করি। তারপর হাড়কে গোশ্ত দিয়ে আবৃত করি। অতঃপর তাকে অন্য এক সৃষ্টিরূপে গড়ে তুলি। অতএব, সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ মহা কল্যাণদায়ক। এরপর অবশ্যই তোমরা মরবে। তারপর কিয়ামতের দিন অবশ্যই তোমরা পুনরুত্থিত হবে। আর অবশ্যই আমি তোমাদের উপর সাতটি স্তর সৃষ্টি করেছি। আর আমি সৃষ্টি সম্পর্কে উদাসীন ছিলাম না। আর আমি আকাশ থেকে পরিমিতভাবে পানি বর্ষণ করেছি। অতঃপর আমি তা জমিনে সংরক্ষণ করেছি। আর অবশ্যই আমি সেটাকে অপসারণ করতেও সক্ষম। তারপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগানসমূহ সৃষ্টি করেছি। তাতে তোমাদের জন্য প্রচুর ফল থাকে। আর তা থেকেই তোমরা খাও। আর এক বৃক্ষ যা সিনাই পাহাড় হতে উদ্গত হয়, যা আহারকারীদের জন্য তেল ও তরকারী উৎপন্ন করে। আর নিশ্চয় গবাদিপশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। তাদের পেটে যা আছে তা থেকে আমি তোমাদেরকে পান করাই। আর এতে তোমাদের জন্য প্রচুর উপকারিতা রয়েছে এবং তা থেকে তোমরা খাও। আর এসবদ পশু ও নৌকায় তোমাদেরকে আরোহণ করানো হয়”। [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১২ - ২২]
﴿أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يُزۡجِي سَحَابٗا ثُمَّ يُؤَلِّفُ بَيۡنَهُۥ ثُمَّ يَجۡعَلُهُۥ رُكَامٗا فَتَرَى ٱلۡوَدۡقَ يَخۡرُجُ مِنۡ خِلَٰلِهِۦ وَيُنَزِّلُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مِن جِبَالٖ فِيهَا مِنۢ بَرَدٖ فَيُصِيبُ بِهِۦ مَن يَشَآءُ وَيَصۡرِفُهُۥ عَن مَّن يَشَآءُۖ يَكَادُ سَنَا بَرۡقِهِۦ يَذۡهَبُ بِٱلۡأَبۡصَٰرِ ٤٣ يُقَلِّبُ ٱللَّهُ ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَعِبۡرَةٗ لِّأُوْلِي ٱلۡأَبۡصَٰرِ ٤٤ وَٱللَّهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٖ مِّن مَّآءٖۖ فَمِنۡهُم مَّن يَمۡشِي عَلَىٰ بَطۡنِهِۦ وَمِنۡهُم مَّن يَمۡشِي عَلَىٰ رِجۡلَيۡنِ وَمِنۡهُم مَّن يَمۡشِي عَلَىٰٓ أَرۡبَعٖۚ يَخۡلُقُ ٱللَّهُ مَا يَشَآءُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ٤٥﴾ [ النور : ٤٣- ٤٥ ]
“তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ মেঘমালাকে পরিচালিত করেন, তারপর তিনি সেগুলোকে একত্রে জুড়ে দেন, তারপর সেগুলো স্তুপীকৃত করেন, তারপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে বৃষ্টির বের হয়। আর তিনি আকাশে স্থিত মেঘমালার পাহাড় থেকে শিলা বর্ষণ করেন। তারপর তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন। আর যার কাছ থেকে ইচ্ছা তা সরিয়ে দেন। এর বিদ্যুতের ঝলক দৃষ্টিশক্তি প্রায় কেড়ে নেয়। আল্লাহ দিন ও রাতের আবর্তন ঘটান, নিশ্চয়ই এতে অন্তরদৃষ্টিসম্পন্নদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। আর আল্লাহ প্রত্যেক জীবকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাদের কোনটি পেটে ভর দিয়ে চলে, কোনটি চলে দু’পায়ের উপর, আবার কোনটি চার পায়ের উপর চলে। আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৪৩-৪৫]
﴿أَلَمۡ تَرَ إِلَىٰ رَبِّكَ كَيۡفَ مَدَّ ٱلظِّلَّ وَلَوۡ شَآءَ لَجَعَلَهُۥ سَاكِنٗا ثُمَّ جَعَلۡنَا ٱلشَّمۡسَ عَلَيۡهِ دَلِيلٗا ٤٥ ثُمَّ قَبَضۡنَٰهُ إِلَيۡنَا قَبۡضٗا يَسِيرٗا ٤٦ وَهُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلَّيۡلَ لِبَاسٗا وَٱلنَّوۡمَ سُبَاتٗا وَجَعَلَ ٱلنَّهَارَ نُشُورٗا ٤٧ وَهُوَ ٱلَّذِيٓ أَرۡسَلَ ٱلرِّيَٰحَ بُشۡرَۢا بَيۡنَ يَدَيۡ رَحۡمَتِهِۦۚ وَأَنزَلۡنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ طَهُورٗا ٤٨ لِّنُحۡـِۧيَ بِهِۦ بَلۡدَةٗ مَّيۡتٗا وَنُسۡقِيَهُۥ مِمَّا خَلَقۡنَآ أَنۡعَٰمٗا وَأَنَاسِيَّ كَثِيرٗا ٤٩ وَلَقَدۡ صَرَّفۡنَٰهُ بَيۡنَهُمۡ لِيَذَّكَّرُواْ فَأَبَىٰٓ أَكۡثَرُ ٱلنَّاسِ إِلَّا كُفُورٗا ٥٠ وَلَوۡ شِئۡنَا لَبَعَثۡنَا فِي كُلِّ قَرۡيَةٖ نَّذِيرٗا ٥١ فَلَا تُطِعِ ٱلۡكَٰفِرِينَ وَجَٰهِدۡهُم بِهِۦ جِهَادٗا كَبِيرٗا ٥٢ ۞وَهُوَ ٱلَّذِي مَرَجَ ٱلۡبَحۡرَيۡنِ هَٰذَا عَذۡبٞ فُرَاتٞ وَهَٰذَا مِلۡحٌ أُجَاجٞ وَجَعَلَ بَيۡنَهُمَا بَرۡزَخٗا وَحِجۡرٗا مَّحۡجُورٗا ٥٣ وَهُوَ ٱلَّذِي خَلَقَ مِنَ ٱلۡمَآءِ بَشَرٗا فَجَعَلَهُۥ نَسَبٗا وَصِهۡرٗاۗ وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرٗا ٥٤ ﴾ [ الفرقان : ٤٥ - ٥٤ ]
“তুমি কি দেখ নি! কীভাবে তোমার প্রতিপালক ছায়াকে প্রসারিত করেছেন, আর তিনি যদি চাইতেন, তাহলে তাকে অবশ্যই স্থির করে দিতে পারতেন। আর আমি সূর্যকে ছায়া সৃষ্টি হওয়ার নিদর্শন বানিয়ে দিয়েছি। তারপর আমি এই ছায়াকে ধীরে ধীরে আমার ইচ্ছাক্রমে গুটিয়ে আনি। আর তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে আবরণ ও নিদ্রাকে আরামপ্রদ করেছেন এবং দিনকে করেছেন জাগ্রত থাকার সময়। আর তিনিই তাঁর রহমতের প্রাক্কালে সুসংবাদস্বরূপ বায়ু পাঠিয়েছেন এবং আমি আকাশ থেকে পবিত্র পানি বর্ষণ করেছি, মৃত ভূ-খণ্ডকে জীবিত করার জন্য এবং আমি যে সকল জীবজন্তু ও মানুষ সৃষ্টি করেছি, তার মধ্য থেকে অনেককে তা পান করাই। আর আমি তা তাদের মধ্যে বণ্টন করি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে; তারপর অধিকাংশ লোক শুধু অকৃতজ্ঞতাই প্রকাশ করে। আর আমি ইচ্ছা করলে প্রতিটি জনপদে একজন সতর্ককারী পাঠাতাম। সুতরাং তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি কুরআনের দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম কর। আর তিনিই দু’টো সাগরকে একসাথে প্রবাহিত করেছেন। একটি সুপেয় সুস্বাদু, অপরটি লবণাক্ত ক্ষারবিশিষ্ট এবং তিনি এতদোভয়ের মাঝখানে একটি অন্তরায় ও একটি অনতিক্রম্য সীমানা স্থাপন করেছেন। আর তিনিই বীর্য দ্বারা মানুষ সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কযুক্ত করেছেন। আর তোমার রব হলো প্রভূত ক্ষমতাবান”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৪৫-৫৪]
﴿فَسُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ حِينَ تُمۡسُونَ وَحِينَ تُصۡبِحُونَ ١٧ وَلَهُ ٱلۡحَمۡدُ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَعَشِيّٗا وَحِينَ تُظۡهِرُونَ ١٨ يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَيُحۡيِ ٱلۡأَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِهَاۚ وَكَذَٰلِكَ تُخۡرَجُونَ ١٩ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٖ ثُمَّ إِذَآ أَنتُم بَشَرٞ تَنتَشِرُونَ ٢٠ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٢١ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦ خَلۡقُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفُ أَلۡسِنَتِكُمۡ وَأَلۡوَٰنِكُمۡۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّلۡعَٰلِمِينَ ٢٢ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦ مَنَامُكُم بِٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ وَٱبۡتِغَآؤُكُم مِّن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَسۡمَعُونَ ٢٣ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦ يُرِيكُمُ ٱلۡبَرۡقَ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَيُنَزِّلُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَيُحۡيِۦ بِهِ ٱلۡأَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِهَآۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَعۡقِلُونَ ٢٤ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَن تَقُومَ ٱلسَّمَآءُ وَٱلۡأَرۡضُ بِأَمۡرِهِۦۚ ثُمَّ إِذَا دَعَاكُمۡ دَعۡوَةٗ مِّنَ ٱلۡأَرۡضِ إِذَآ أَنتُمۡ تَخۡرُجُونَ ٢٥ وَلَهُۥ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ كُلّٞ لَّهُۥ قَٰنِتُونَ ٢٦ وَهُوَ ٱلَّذِي يَبۡدَؤُاْ ٱلۡخَلۡقَ ثُمَّ يُعِيدُهُۥ وَهُوَ أَهۡوَنُ عَلَيۡهِۚ وَلَهُ ٱلۡمَثَلُ ٱلۡأَعۡلَىٰ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٢٧﴾ [ الروم : ١٧ - ٢٧ ]
“অতএব তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর, যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে এবং সকালে উঠবে। আর অপরাহ্নে ও জোহরের সময়ে; আর আসমান ও জমিনে সকল প্রশংসা একমাত্র তাঁরই। তিনি মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন। আর তিনি জমিনকে জীবিত করেন তার মৃত্যুর পর। আর এভাবেই তোমরা উত্থিত হবে। আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে এই বিষয়টি রয়েছে যে, তিনি তোমাদের পিতা আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমরা মানুষ হয়ে ছড়িয়ে পড়ছ। আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে এই বিষয়টিও রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্যে থেকেই তোমাদের স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও তোমাদের বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য। আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে রাতে ও দিনে তোমাদের নিদ্রা এবং তাঁর অনুগ্রহ থেকে তোমাদের (জীবিকা) অন্বেষণ। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কওমের জন্য যারা শোনে। আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে এই বিষয়টিও রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে ভয় ও ভরসাস্বরূপ বিদ্যুৎ দেখান, আর আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা দ্বারা জমিনকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কওমের জন্য যারা অনুধাবন করে। আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে, তাঁরই নির্দেশে আসমান ও জমিন স্থিতিশীল থাকে। তারপর তিনি যখন তোমাদেরকে জমিন থেকে বের হয়ে আসার জন্য একবার আহ্বান করবেন তখনই তোমরা বের হয়ে আসবে। আর আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সব তাঁরই। সব কিছুই তাঁর অনুগত। আর তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেন তারপর তিনিই এর পুনরাবৃত্তি করবেন। আর এটা তো তাঁর জন্য অধিকদতর সহজ। আসমান ও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ১৭-২৭]
﴿ٱلرَّحۡمَٰنُ ١ عَلَّمَ ٱلۡقُرۡءَانَ ٢ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ ٣ عَلَّمَهُ ٱلۡبَيَانَ ٤ ٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُ بِحُسۡبَانٖ ٥ وَٱلنَّجۡمُ وَٱلشَّجَرُ يَسۡجُدَانِ ٦ وَٱلسَّمَآءَ رَفَعَهَا وَوَضَعَ ٱلۡمِيزَانَ ٧ أَلَّا تَطۡغَوۡاْ فِي ٱلۡمِيزَانِ ٨ وَأَقِيمُواْ ٱلۡوَزۡنَ بِٱلۡقِسۡطِ وَلَا تُخۡسِرُواْ ٱلۡمِيزَانَ ٩ وَٱلۡأَرۡضَ وَضَعَهَا لِلۡأَنَامِ ١٠ فِيهَا فَٰكِهَةٞ وَٱلنَّخۡلُ ذَاتُ ٱلۡأَكۡمَامِ ١١ وَٱلۡحَبُّ ذُو ٱلۡعَصۡفِ وَٱلرَّيۡحَانُ ١٢ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ١٣ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ مِن صَلۡصَٰلٖ كَٱلۡفَخَّارِ ١٤ وَخَلَقَ ٱلۡجَآنَّ مِن مَّارِجٖ مِّن نَّارٖ ١٥ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ١٦ رَبُّ ٱلۡمَشۡرِقَيۡنِ وَرَبُّ ٱلۡمَغۡرِبَيۡنِ ١٧ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ١٨ مَرَجَ ٱلۡبَحۡرَيۡنِ يَلۡتَقِيَانِ ١٩ بَيۡنَهُمَا بَرۡزَخٞ لَّا يَبۡغِيَانِ ٢٠ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٢١ يَخۡرُجُ مِنۡهُمَا ٱللُّؤۡلُؤُ وَٱلۡمَرۡجَانُ ٢٢ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٢٣ وَلَهُ ٱلۡجَوَارِ ٱلۡمُنشََٔاتُ فِي ٱلۡبَحۡرِ كَٱلۡأَعۡلَٰمِ ٢٤ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٢٥﴾ [ الرحمن : ١، ٢٥ ]
“পরম করুণাময়, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনি তাকে শিখিয়েছেন ভাষা। সূর্য ও চাঁদ তাদের নির্ধারিত স্থানে চলে, আর লতা ও বৃক্ষ উদ্ভিদ আল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করে। আর তিনি আকাশকে সমুন্নত করেছেন এবং দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করেছেন। যাতে তোমরা দাঁড়িপাল্লায় সীমালঙ্ঘন না কর। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে ওজন প্রতিষ্ঠা কর এবং ওজনকৃত বস্তু কম দিও না। আর জমিনকে বিছিয়ে দিয়েছেন সৃষ্টজীবের জন্য। তাতে রয়েছে ফলমূল ও খেজুরগাছ, যার খেজুর আবরণযুক্ত। আর আছে খোসাযুক্ত দানা ও সুগন্ধিযুক্ত ফুল। সুতরাং তোমাদের রবের কোন্ নেয়ামতকে তোমরা উভয়ে [‘উভয়ে’ দ্বারা জিন্ন ও মানুষকে বুঝানো হয়েছে।] অস্বীকার করবে? তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুষ্ক ঠনঠনে মাটি থেকে যা পোড়া মাটির ন্যায়। আর তিনি জিনকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াবিহীন অগ্নিশিখা থেকে। সুতরাং তোমাদের রবের কোন্ নেয়ামতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে? তিনি দুই পূর্ব ও দুই পশ্চিমের [দুই পূর্ব বলতে গ্রীষ্ম ও শীতকালের উদয়স্থল এবং দুই পশ্চিম বলতে গ্রীষ্ম ও শীতকালের অস্তস্থলকে বুঝানো হয়েছে।] রব। সুতরাং তোমাদের রবের কোন্ নেয়ামতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে? তিনি দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়। উভয়ের মধ্যে রয়েছে এক আড়াল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। সুতরাং তোমাদের রবের কোন নেয়ামতকে দতোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে? উভয় সমুদ্র থেকে উৎপন্ন হয় মণিমুক্তা ও প্রবাল। সুতরাং, তোমাদের রবের কোন্ নেয়ামতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে? আর সমুদ্রে চলমান পাহাড়সম জাহাজসমূহ তাঁরই। সুতরাং তোমাদের রবের কোন নেয়ামতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে?। [সূরা আর-রহমান, আয়াত: ১-২৫]
﴿ أَلَمۡ نَجۡعَلِ ٱلۡأَرۡضَ مِهَٰدٗا ٦ وَٱلۡجِبَالَ أَوۡتَادٗا ٧ وَخَلَقۡنَٰكُمۡ أَزۡوَٰجٗا ٨ وَجَعَلۡنَا نَوۡمَكُمۡ سُبَاتٗا ٩ وَجَعَلۡنَا ٱلَّيۡلَ لِبَاسٗا ١٠ وَجَعَلۡنَا ٱلنَّهَارَ مَعَاشٗا ١١ وَبَنَيۡنَا فَوۡقَكُمۡ سَبۡعٗا شِدَادٗا ١٢ وَجَعَلۡنَا سِرَاجٗا وَهَّاجٗا ١٣ وَأَنزَلۡنَا مِنَ ٱلۡمُعۡصِرَٰتِ مَآءٗ ثَجَّاجٗا ١٤ لِّنُخۡرِجَ بِهِۦ حَبّٗا وَنَبَاتٗا ١٥ وَجَنَّٰتٍ أَلۡفَافًا ١٦ ﴾ [ النبا : ٦ - ١٦ ]
“আমি কি বানাই নি জমিনকে বিছানা? আর পর্বতসমূহকে পেরেক? আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়। আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি বিশ্রাম। আর আমি রাতকে করেছি আবরণ। আর আমি দিনকে করেছি জীবিকার্জনের সময়। আর আমি তোমাদের উপরে বানিয়েছি সাতটি সুদৃঢ় আকাশ। আর আমি সৃষ্টি করেছি উজ্জ্বল একটি প্রদীপ সূর্য। আর আমি মেঘমালা থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করেছি। যাতে তা দিয়ে আমি শস্য ও উদ্ভিদ উৎপন্ন করতে পারি। আর ঘন উদ্যানসমূহ”। [সূরা আন-নাবা, আয়াত: ৬ - ১৬]
﴿ءَأَنتُمۡ أَشَدُّ خَلۡقًا أَمِ ٱلسَّمَآءُۚ بَنَىٰهَا ٢٧ رَفَعَ سَمۡكَهَا فَسَوَّىٰهَا ٢٨ وَأَغۡطَشَ لَيۡلَهَا وَأَخۡرَجَ ضُحَىٰهَا ٢٩ وَٱلۡأَرۡضَ بَعۡدَ ذَٰلِكَ دَحَىٰهَآ ٣٠ أَخۡرَجَ مِنۡهَا مَآءَهَا وَمَرۡعَىٰهَا ٣١ وَٱلۡجِبَالَ أَرۡسَىٰهَا ٣٢﴾ [ النازعات : ٢٦ - ٣٢ ]
“তোমাদেরকে সৃষ্টি করা অধিক কঠিন, না আসমান সৃষ্টি করা? তিনি তা বানিয়েছেন। তিনি এর ছাদকে উচ্চ করেছেন এবং তাকে সুসম্পন্ন করেছেন। আর তিনি এর রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন এবং এর দিনকে আলোকিত করেছেন। এরপর তিনি জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছেন। তিনি তার ভিতর থেকে বের করেছেন তার পানি ও তার তৃণভূমি। আর পর্বতগুলোকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন”। [সূরা আন-নাযি‘আত, আয়াত: ২৬ - ৩২]
﴿فَلۡيَنظُرِ ٱلۡإِنسَٰنُ إِلَىٰ طَعَامِهِۦٓ ٢٤ أَنَّا صَبَبۡنَا ٱلۡمَآءَ صَبّٗا ٢٥ ثُمَّ شَقَقۡنَا ٱلۡأَرۡضَ شَقّٗا ٢٦ فَأَنۢبَتۡنَا فِيهَا حَبّٗا ٢٧ وَعِنَبٗا وَقَضۡبٗا ٢٨ وَزَيۡتُونٗا وَنَخۡلٗا ٢٩ وَحَدَآئِقَ غُلۡبٗا ٣٠ وَفَٰكِهَةٗ وَأَبّٗا ٣١ مَّتَٰعٗا لَّكُمۡ وَلِأَنۡعَٰمِكُمۡ ٣٢﴾ [ عبس : ٢٤ - ٣٢ ]
“কাজেই মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। নিশ্চয় আমি প্রচুর পরিমাণে পানি বর্ষণ করি। তারপর জমিনকে যথাযথভাবে বিদীর্ণ করি। অতঃপর তাতে আমি উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর ও শাক-সবজি, যায়তূন ও খেজুর বন, ঘনবৃক্ষ শোভিত বাগ-বাগিচা, আর ফল ও তৃণগুল্ম। তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুগুলোর জীবনোপকরণস্বরূপ”। [সূরা আবাসা, আয়াত: ২৪ - ৩২]
সাধারণত পৃথিবীতে বসবাসকারী সমস্ত লোক সামগ্রিকভাবে আল্লাহর প্রভুত্ব, কর্তৃত্ব এবং আধিপত্য বা রবুবিয়্যাতকে স্বীকার করে। তারা এ কথা স্বীকার করে যে, আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, আল্লাহ মালিক এবং আল্লাহই সবকিছুর পরিচালক। এমনকি মক্কার মুশরিকরাও এ কথা স্বীকার করত। মহান আল্লাহ তাদের এ স্বীকার করাকে কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় তুলে ধরেছেন। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُل لِّمَنِ ٱلۡأَرۡضُ وَمَن فِيهَآ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٨٤ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ٨٥ قُلۡ مَن رَّبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ ٱلسَّبۡعِ وَرَبُّ ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡعَظِيمِ ٨٦ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٨٧ قُلۡ مَنۢ بِيَدِهِۦ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيۡءٖ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيۡهِ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٨٨ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ فَأَنَّىٰ تُسۡحَرُونَ ٨٩﴾ [ المؤمنون : ٨٤ - ٨٩ ]
“বল, ‘এ জমিন ও এতে যারা আছে তারা কার যদি তোমরা এর সৃষ্টিকর্তার বিষয়ে জ্ঞান কোনো রাখ? অচিরেই তারা বলবে, ‘আল্লাহর’। বল, ‘তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?’ বল, ‘কে সাত আসমানের রব এবং মহা আরশের রব’? তারা বলবে, ‘আল্লাহ।’ বল, ‘তবুও কি তোমরা আল্লাহর শাস্তি হতে সতর্ক হবে না? বল, ‘তিনি কে যার হাতে সকল কিছুর কর্তৃত্ব, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যাঁর উপর কোন আশ্রয়দাতা নেই?’ যদি তোমরা জানতে। তারা বলবে, ‘আল্লাহ।’ বল, ‘তবুও কীভাবে তোমরা বিভ্রান্ত হচ্ছ?’’। [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৮৪ - ৮৯]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡعَلِيمُ ٩﴾ [ الزخرف : ٩ ]
“আর তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর যে, আসমানসমূহ ও জমিনকে কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে, মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ মহান আল্লাহই কেবল এগুলো সৃষ্টি করেছেন”। [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৯]
তবে গুটিকয়েক গোষ্ঠীর মানুষই কেবল এ বিষয়ে আংশিক পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়েছে। তারা রবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে শরীক করেন। যেমন,
এক- অগ্নিপুজকদের থেকে এক দল যারা দ্বিত্ববাদী। তারা বলে এ জগতের স্রষ্টা দুই জন। একজন হলো, নূরের ইলাহ; যিনি কল্যাণের সৃষ্টিকর্তা, দ্বিতীয়জন অন্ধকারের ইলাহ; যিনি মন্দের সৃষ্টিকারী। নূর যে অন্ধকার থেকে উত্তম এ বিষয়ে তারা একমত। তবে অন্ধকার (কাদীম বা) সর্বপ্রাচীন নাকি পরবর্তীতে যোগ হয়েছে এ বিষয়ে তাদের মধ্যেও একাধিক মত রয়েছে।
দুই- খৃষ্টান: যারা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করে। তারা একজন ইলাহকে তাদের ধারণা অনুযায়ী তিনটি ভাগে বিভক্ত করে থাকে। পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা।
তিন- আরবের কতকগুলো মুশরিক। যারা তাদের কিছু ইলাহের মধ্যে কোনো কোনো কল্যাণ-অকল্যান ও পরিচালনা করার ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করতো।
চার- কাদরীয়্যাহ ফের্কার লোকরা: যারা এ দাবি করে যে, বান্দা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার নিজ কর্ম সে নিজেই সৃষ্টি করতে পারে।
বস্তুত মানব স্বভাব, জ্ঞান-বুদ্ধি, বাস্তবতা এবং শরী‘আতের নির্দেশনায় মহান আল্লাহ তার সৃষ্টি, রাজত্ব বা মালিকানা এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে একক হওয়ার প্রমাণ দ্বারা এ ধরণেরগোমরাহী প্রত্যাখ্যাত। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿مَا ٱتَّخَذَ ٱللَّهُ مِن وَلَدٖ وَمَا كَانَ مَعَهُۥ مِنۡ إِلَٰهٍۚ إِذٗا لَّذَهَبَ كُلُّ إِلَٰهِۢ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعۡضُهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ سُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ ٩١﴾ [ المؤمنون : ٩١ ]
“আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেন নি, তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই। (যদি থাকত) তবে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত; তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর”!। [সূরা আল-মুমিন, আয়াত: ৯১]
কেননা, যিনি সত্যিকার ইলাহ হবেন তাকে অবশ্যই একজন স্রষ্টা ও তিনি যা চান তার বাস্তবায়নকারী হতে হবে। যদি তার সাথে কেউ শরীক থাকে তখন সেও সৃষ্টি করবে এবং কর্ম করবে। তখন দুই সম্ভাবনার যে কোনো একটি পাওয়া যাবে। হয়তো প্রতিটি ইলাহ তার নিজ নিজ সৃষ্টির উপর দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং তাদের উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। এতে জগতের নিয়ম-কানুন ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে এবং জগতের পরিচালনা ঠিক থাকবে না।
অথবা একজন ইলাহ অপরের উপর ক্ষমতাবান ও বিজয়ী হবে। তখন একজন একটি দেহকে নাড়াতে চাইবে অপর জন স্থির রাখতে চাইবে এবং একজন কাউকে মারতে চাইবে আরেকজন তাকে বাঁচাতে চাইবে। তখন হয়ত উভয় ইলাহের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে, অথবা একজনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে, অথবা কারো উদ্দেশ্যই বাস্তবায়িত হবে না। প্রথম ও তৃতীয়টি সম্পূর্ণ অসম্ভব। কারণ, দুটি বিপরীতমুখী জিনিস একসাথে একত্র হতে পারে না এবং দুটি একসাথে বাদও হয়ে যেতে পারে না। সুতরাং দ্বিতীয়টি নির্ধারিত। তখন যার উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হলো, সেই সক্ষম ইলাহ। আর যার উদ্দেশ্য হাসিল হলো না সে ইলাহ হওয়ার অযোগ্য। ফলে ইলাহ বা রব, স্রষ্টা ও পরিচালনাকারী একজন হওয়াই প্রমাণিত ও সাব্যস্ত।
এক- অগ্নিপুজকদের থেকে এক দল যারা দ্বিত্ববাদী। তারা বলে এ জগতের স্রষ্টা দুই জন। একজন হলো, নূরের ইলাহ; যিনি কল্যাণের সৃষ্টিকর্তা, দ্বিতীয়জন অন্ধকারের ইলাহ; যিনি মন্দের সৃষ্টিকারী। নূর যে অন্ধকার থেকে উত্তম এ বিষয়ে তারা একমত। তবে অন্ধকার (কাদীম বা) সর্বপ্রাচীন নাকি পরবর্তীতে যোগ হয়েছে এ বিষয়ে তাদের মধ্যেও একাধিক মত রয়েছে।
দুই- খৃষ্টান: যারা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করে। তারা একজন ইলাহকে তাদের ধারণা অনুযায়ী তিনটি ভাগে বিভক্ত করে থাকে। পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা।
তিন- আরবের কতকগুলো মুশরিক। যারা তাদের কিছু ইলাহের মধ্যে কোনো কোনো কল্যাণ-অকল্যান ও পরিচালনা করার ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করতো।
চার- কাদরীয়্যাহ ফের্কার লোকরা: যারা এ দাবি করে যে, বান্দা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার নিজ কর্ম সে নিজেই সৃষ্টি করতে পারে।
বস্তুত মানব স্বভাব, জ্ঞান-বুদ্ধি, বাস্তবতা এবং শরী‘আতের নির্দেশনায় মহান আল্লাহ তার সৃষ্টি, রাজত্ব বা মালিকানা এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে একক হওয়ার প্রমাণ দ্বারা এ ধরণেরগোমরাহী প্রত্যাখ্যাত। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿مَا ٱتَّخَذَ ٱللَّهُ مِن وَلَدٖ وَمَا كَانَ مَعَهُۥ مِنۡ إِلَٰهٍۚ إِذٗا لَّذَهَبَ كُلُّ إِلَٰهِۢ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعۡضُهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ سُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ ٩١﴾ [ المؤمنون : ٩١ ]
“আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেন নি, তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই। (যদি থাকত) তবে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত; তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর”!। [সূরা আল-মুমিন, আয়াত: ৯১]
কেননা, যিনি সত্যিকার ইলাহ হবেন তাকে অবশ্যই একজন স্রষ্টা ও তিনি যা চান তার বাস্তবায়নকারী হতে হবে। যদি তার সাথে কেউ শরীক থাকে তখন সেও সৃষ্টি করবে এবং কর্ম করবে। তখন দুই সম্ভাবনার যে কোনো একটি পাওয়া যাবে। হয়তো প্রতিটি ইলাহ তার নিজ নিজ সৃষ্টির উপর দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং তাদের উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। এতে জগতের নিয়ম-কানুন ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে এবং জগতের পরিচালনা ঠিক থাকবে না।
অথবা একজন ইলাহ অপরের উপর ক্ষমতাবান ও বিজয়ী হবে। তখন একজন একটি দেহকে নাড়াতে চাইবে অপর জন স্থির রাখতে চাইবে এবং একজন কাউকে মারতে চাইবে আরেকজন তাকে বাঁচাতে চাইবে। তখন হয়ত উভয় ইলাহের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে, অথবা একজনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে, অথবা কারো উদ্দেশ্যই বাস্তবায়িত হবে না। প্রথম ও তৃতীয়টি সম্পূর্ণ অসম্ভব। কারণ, দুটি বিপরীতমুখী জিনিস একসাথে একত্র হতে পারে না এবং দুটি একসাথে বাদও হয়ে যেতে পারে না। সুতরাং দ্বিতীয়টি নির্ধারিত। তখন যার উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হলো, সেই সক্ষম ইলাহ। আর যার উদ্দেশ্য হাসিল হলো না সে ইলাহ হওয়ার অযোগ্য। ফলে ইলাহ বা রব, স্রষ্টা ও পরিচালনাকারী একজন হওয়াই প্রমাণিত ও সাব্যস্ত।
অর্থাৎ এ কথার দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে, একক আল্লাহ তা‘আলাই সত্যিকার ইলাহ, মা‘বুদ/উপাস্য। তিনিই ইবাদত পাওয়ার উপযুক্ত। তিনি ছাড়া আর কেউ ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত নয়। কারণ, ইলাহ অর্থ এমন উপাস্য যাকে অন্তরসমূহ ভালোবাসা ও সম্মানের সাথে ইলাহ হিসেবে মান্য করে। আর ইবাদতের হাকীকত হলো, পরিপূর্ণ ভালোবাসা, পূর্ণ বিনয়, পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন ও পুরোপুরি অবনত হওয়া। আর তা একমাত্র একজন ইলাহের জন্যেই হতে হবে। এ ধরণের ঈমানের বিষয়টি মহা সাক্ষ্য, মহা সাক্ষ্য দাতা থেকে মহা সাক্ষী হিসেবে এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿شَهِدَ ٱللَّهُ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَأُوْلُواْ ٱلۡعِلۡمِ قَآئِمَۢا بِٱلۡقِسۡطِۚ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ١٨﴾ [ ال عمران : ١٨ ]
“আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, আর ফিরিশতা ও জ্ঞানীগণও। তিনি ন্যায় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮]
﴿وَإِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلرَّحۡمَٰنُ ٱلرَّحِيمُ ١٦٣﴾ [ البقرة : ١٦٣ ]
“তোমাদের সত্য ইলাহ বা উপাস্য একই সত্য ইলাহ বা উপাস্য। তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি পরম করুনাময় ও অতি দয়ালু”। [সূরা আল বাকারাহ, আয়াত: 163]
মহান আল্লাহ মাখলুক থেকে সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষি হওয়ার পরও সমস্ত মাখলুক মানব দানব সবকিছুকেই তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ مَآ أُرِيدُ مِنۡهُم مِّن رِّزۡقٖ وَمَآ أُرِيدُ أَن يُطۡعِمُونِ ٥٧﴾ [ الذاريات : ٥٦، ٥٧ ]
“আর জিন্ন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা যেন আমার ইবাদাত করে। আমি তাদের কাছে কোনো রিযিক চাই না; আর আমি চাই না যে, তারা আমাকে খাবার দিবে”। [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬, ৫৭]
এবং ঈমানকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে এ সব নাবী ও রাসূলদের দুনিয়াতে মানব জাতির নিকট প্রেরণ করেছেন। আর এ ঈমানের বাস্তবায়নের দাবি হলো, যাবতীয় ইবাদত একমাত্র একক আল্লাহর জন্য হবে। যদি কেউ ইবাদাতের কিছু অংশ গাইরুল্লাহর জন্য সোপর্দ করে সে অবশ্যই কাফির ও মুশরিক হয়ে যাবে। আর এ ইবাদত কয়েক প্রকার:
﴿شَهِدَ ٱللَّهُ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَأُوْلُواْ ٱلۡعِلۡمِ قَآئِمَۢا بِٱلۡقِسۡطِۚ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ١٨﴾ [ ال عمران : ١٨ ]
“আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, আর ফিরিশতা ও জ্ঞানীগণও। তিনি ন্যায় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮]
﴿وَإِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلرَّحۡمَٰنُ ٱلرَّحِيمُ ١٦٣﴾ [ البقرة : ١٦٣ ]
“তোমাদের সত্য ইলাহ বা উপাস্য একই সত্য ইলাহ বা উপাস্য। তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি পরম করুনাময় ও অতি দয়ালু”। [সূরা আল বাকারাহ, আয়াত: 163]
মহান আল্লাহ মাখলুক থেকে সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষি হওয়ার পরও সমস্ত মাখলুক মানব দানব সবকিছুকেই তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ مَآ أُرِيدُ مِنۡهُم مِّن رِّزۡقٖ وَمَآ أُرِيدُ أَن يُطۡعِمُونِ ٥٧﴾ [ الذاريات : ٥٦، ٥٧ ]
“আর জিন্ন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা যেন আমার ইবাদাত করে। আমি তাদের কাছে কোনো রিযিক চাই না; আর আমি চাই না যে, তারা আমাকে খাবার দিবে”। [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬, ৫৭]
এবং ঈমানকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে এ সব নাবী ও রাসূলদের দুনিয়াতে মানব জাতির নিকট প্রেরণ করেছেন। আর এ ঈমানের বাস্তবায়নের দাবি হলো, যাবতীয় ইবাদত একমাত্র একক আল্লাহর জন্য হবে। যদি কেউ ইবাদাতের কিছু অংশ গাইরুল্লাহর জন্য সোপর্দ করে সে অবশ্যই কাফির ও মুশরিক হয়ে যাবে। আর এ ইবাদত কয়েক প্রকার:
এক- অন্তরের ইবাদাত: যেমন,
মহব্বত করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ ١٦٥﴾ [ البقرة : ١٦٥ ]
“আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার মত ভালবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালোবাসায় দৃঢ়তর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৫]
ভয় করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَلَا تَخَافُوهُمۡ وَخَافُونِ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١٧٥﴾ [ ال عمران : ١٧٥ ]
“তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হও”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৫]
আশা করা, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠﴾ [ الكهف : ١١٠ ]
“সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে’’। [সূরা আল-কাহ্ফ, আয়াত: ১১০]
আল্লাহর উপর ভরসা করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَعَلَى ٱللَّهِ فَتَوَكَّلُوٓاْ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٢٣﴾ [ المائدة : ٢٣ ]
“আর আল্লাহর উপর ভরসা কর যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হও’। [সূরা আল- মায়িদা, আয়াত: 23]
দেহের সংশোধনের মূল হলো আত্মার সংশোধন। যেমনটি হাদীসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ألا وإن في الجسد مضغة؛ إذا صلحت صلح الجسد كله،وإذا فسدت فسد الجسد كله،ألا وهي القلب»
“মনে রাখ, নিশ্চয় মানব দেহে একটি গোস্তের টুকরা রয়েছে, যখন তা সঠিক হয়, তখন পূর্ণ দেহ সঠিক হয়, আর যখন তা নষ্ট হয়, তখন পূর্ণ দেহই নষ্ট হয়। আর তা হলো অন্তর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৯৯]
দুই- মৌখিক ইবাদত: যেমন,
দো‘আ। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨﴾ [ الجن : ١٨ ]
“আর নিশ্চয় মাসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না”। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮]
আশ্রয় চাওয়া। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلۡفَلَقِ ١﴾ [ الفلق : ١ ]
“বল, ‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের কাছে”। [সূরা আল-ফালাক, আয়াত: ১]
মহান আল্লাহ আরও বলেন:
﴿قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ ١﴾ [ الناس : ١ ]
“বল, ‘আমি আশ্রয় চাই মানুষের রবের নিকট”। [সূরা আন-নাস, আয়াত: ১]
উদ্ধার চাওয়া। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِذۡ تَسۡتَغِيثُونَ رَبَّكُمۡ فَٱسۡتَجَابَ لَكُمۡ أَنِّي مُمِدُّكُم بِأَلۡفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُرۡدِفِينَ ٩﴾ [ الانفال : ٩ ]
“আর স্মরণ কর, যখন তোমরা তোমাদের রবের নিকট উদ্ধার কামনা করে ফরিয়াদ করছিলে, তখন তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন যে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পর পর আগমনকারী এক হাজার ফিরিশতা দ্বারা সাহায্য করছি’’। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮]
তিন- দৈহিক ইবাদত। যেমন,
সালাত আদায় ও জবেহ করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢﴾ [ الانعام : ١٦٢ ]
“বল, ‘নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব’। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৬২]
মহান আল্লাহ আরও বলেন:
﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢﴾ [ الكوثر : ٢ ]
“অতএব, তোমার রবের উদ্দেশ্যেই নামাজ পড় এবং কুরবানী কর”। [সূরা আল-কাওসার, আয়াত: ২]
চার- আর্থিক ইবাদত। যেমন,
বাধ্যতামূলক খরচ-পাতি, যাকাত, সদকা, ওয়াসিয়ত, ওয়াকফ ও হিবা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمِنَ الأَعْرَابِ مَن يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ قُرُبَاتٍ عِندَ اللّهِ وَصَلَوَاتِ الرَّسُولِ أَلا إِنَّهَا قُرْبَةٌ لَّهُمْ سَيُدْخِلُهُمُ اللّهُ فِي رَحْمَتِهِ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾ [ التوبة : ٩٩ ]
“আর বেদুইনদের কেউ কেউ আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে এবং যা ব্যয় করে তাকে আল্লাহর নিকট নৈকট্য ও রাসূলের দো‘আর উপায় হিসেবে গণ্য করে। জেনে রাখ, নিশ্চয় তা তাদের জন্য নৈকট্যের মাধ্যম। অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে তাঁর রহমতে প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৯৯]
অনুরূপভাবে খাবার খাওয়ানো: মহান আল্লাহ আরও বলেন:
﴿وَيُطۡعِمُونَ ٱلطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ مِسۡكِينٗا وَيَتِيمٗا وَأَسِيرًا ٨ إِنَّمَا نُطۡعِمُكُمۡ لِوَجۡهِ ٱللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمۡ جَزَآءٗ وَلَا شُكُورًا ٩﴾ [ الانسان : ٨ - ١٠ ]
“তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে। তারা বলে, ‘আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদেরকে খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের থেকে কোন প্রতিদান চাই না এবং কোনো শোকরও না”। [সূরা আল-ইনসান, আয়াত: ৮ - ১০]
স্মর্তব্য যে, আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের উপর ঈমান স্থাপন করার বাধ্যবাধকতা ও দাবি হলো, আল্লাহর উলুহিয়্যাতের উপর ঈমান স্থাপন করা। যে ব্যক্তি এ কথা স্বীকার করে যে, আল্লাহ তা‘আলাই স্রষ্টা, তিনিই মালিক এবং পরিচালক, তার জন্য করণীয় হলো, যিনি তার স্রষ্টা, মালিক বা তত্বাবধায়ক ও পরিচালক সে তার দাসত্ব ও গোলামীকে স্বীকার করবে এবং ইবাদতের ক্ষেত্রে তাকে একক বলে জানবে। মহান আল্লাহ মুশরিকদের বিপক্ষে এ স্বীকারোক্তির মাধ্যমে স্বীয় কিতাব কুরআনের একাধিক স্থানে দলীল উপস্থাপন করেন। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُمۡ وَٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ٢١ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلۡأَرۡضَ فِرَٰشٗا وَٱلسَّمَآءَ بِنَآءٗ وَأَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَخۡرَجَ بِهِۦ مِنَ ٱلثَّمَرَٰتِ رِزۡقٗا لَّكُمۡۖ فَلَا تَجۡعَلُواْ لِلَّهِ أَندَادٗا وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٢٢﴾ [ البقرة : ٢١ - ٢٢ ]
“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত কর, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদেরকে, যাতে তোমরা জাহান্নামের শাস্তি হতে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হও। যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে করেছেন বিছানা এবং আসমানকে করেছেন ছাদ আর আসমান থেকে নাযিল করেছেন বৃষ্টি। অতঃপর তাঁর মাধ্যমে উৎপন্ন করেছেন ফল-ফলাদি, তোমাদের জন্য রিযিকস্বরূপ। সুতরাং তোমরা আল্লাহর জন্য সমকক্ষ নির্ধারণ করো না আর তোমরা তো জানো যে, তিনি একাই এই সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করেছেন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১ - ২২]
﴿ قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أَمَّن يَمۡلِكُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَمَن يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُۚ فَقُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٣١ فَذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمُ ٱلۡحَقُّۖ فَمَاذَا بَعۡدَ ٱلۡحَقِّ إِلَّا ٱلضَّلَٰلُۖ فَأَنَّىٰ تُصۡرَفُونَ ٣٢﴾ [ يونس : ٣١ - ٣٢ ]
“বল, ‘আসমান ও জমিন থেকে কে তোমাদের রিযিক দেন? অথবা কে (তোমাদের) শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তির মালিক? আর কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন আর জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন? কে সব বিষয় পরিচালনা করেন’? তখন তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’। সুতরাং, তুমি বল, ‘তারপরও কি তোমরা আল্লাহর সাথে অংশিদার স্থাপন হতে সতর্ক হবে না’? অতএব, তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রকৃত রব। অতঃপর সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া কী থাকে? অতএব কোথায় তোমাদেরকে ঘুরানো হচ্ছে”?। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩১ - ৩২]
﴿قُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَسَلَامٌ عَلَى عِبَادِهِ الَّذِينَ اصْطَفَى آللَّهُ خَيْرٌ أَمَّا يُشْرِكُونَ . أَمَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَأَنزَلَ لَكُم مِّنَ السَّمَاءِ مَاء فَأَنبَتْنَا بِهِ حَدَائِقَ ذَاتَ بَهْجَةٍ مَّا كَانَ لَكُمْ أَن تُنبِتُوا شَجَرَهَا أَإِلَهٌ مَّعَ اللَّهِ بَلْ هُمْ قَوْمٌ يَعْدِلُونَ . أَمَّن جَعَلَ الْأَرْضَ قَرَاراً وَجَعَلَ خِلَالَهَا أَنْهَاراً وَجَعَلَ لَهَا رَوَاسِيَ وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزاً أَإِلَهٌ مَّعَ اللَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ . أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَاء الْأَرْضِ أَإِلَهٌ مَّعَ اللَّهِ قَلِيلاً مَّا تَذَكَّرُونَ . أَمَّن يَهْدِيكُمْ فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَن يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْراً بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهِ أَإِلَهٌ مَّعَ اللَّهِ تَعَالَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ . أَمَّن يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَمَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أَإِلَهٌ مَّعَ اللَّهِ قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ﴾ النمل : ٥٩ -٦٤
“বল, ‘সকল প্রশংসাই আল্লাহর নিমিত্তে। আর শান্তি তাঁর বান্দাদের প্রতি যাদের তিনি মনোনীত করেছেন। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, না কি যাদেরকে এরা শরীক করে তারা’? বরং তিনি (শ্রেষ্ঠ), যিনি আসমানসমূহ ও জমিনকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য তিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা দ্বারা আমি মনোরম উদ্যান সৃষ্টি করি। তার বৃক্ষাদি উৎপন্ন করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোন ইলাহ আছে? বরং তারা এমন এক কওম যারা শির্ক করে। বরং তিনি, যিনি জমিনকে আবাসযোগ্য করেছেন এবং তার মধ্যে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা। আর তাতে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা এবং দুই সমুদ্রের মধ্যখানে অন্তরায় সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে? বরং তাদের অধিকাংশই সত্য বিষয়টি জানে না; বরং তিনি, যিনি নিরুপায়ের আহ্বানে সাড়া দেন এবং বিপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে জমিনের প্রতিনিধি বানান। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোন ইলাহ আছে? তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। বরং তিনি, যিনি তোমাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রের অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি স্বীয় রহমতের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বাতাস প্রেরণ করেন। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে? তারা যা কিছু শরীক করে আল্লাহ তা থেকে ঊর্ধ্বে; বরং তিনি, যিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর তার পুনরাবৃত্তি করবেন এবং যিনি তোমাদেরকে আসমান ও জমিন থেকে রিযিক দান করেন, আল্লাহর সাথে কি কোনো ইলাহ আছে? বল, ‘তোমাদের প্রমাণ নিয়ে এসো যদি তোমরা সত্যবাদী হও”। [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৫৯ - ৬৪]
এভাবেই মহান আল্লাহ উল্লিখিত আয়াতসমূহে তাঅহীদে রুবুবিয়্যাকে স্বীকার করার দ্বারা তাঅহীদে উলুহিয়্যার উপর প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।
অনুরূপ মুশরিকদের ইলাহসমূহ যেগুলোর মধ্যে রবুবিয়্যাতের কোনো বৈশিষ্ট্য নেই সেগুলোর ইলাহ হওয়াকে বাতিল করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَيُشۡرِكُونَ مَا لَا يَخۡلُقُ شَيۡٔٗا وَهُمۡ يُخۡلَقُونَ ١٩١ وَلَا يَسۡتَطِيعُونَ لَهُمۡ نَصۡرٗا وَلَآ أَنفُسَهُمۡ يَنصُرُونَ ١٩٢ وَإِن تَدۡعُوهُمۡ إِلَى ٱلۡهُدَىٰ لَا يَتَّبِعُوكُمۡۚ سَوَآءٌ عَلَيۡكُمۡ أَدَعَوۡتُمُوهُمۡ أَمۡ أَنتُمۡ صَٰمِتُونَ ١٩٣ إِنَّ ٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ عِبَادٌ أَمۡثَالُكُمۡۖ فَٱدۡعُوهُمۡ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لَكُمۡ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ١٩٤ أَلَهُمۡ أَرۡجُلٞ يَمۡشُونَ بِهَآۖ أَمۡ لَهُمۡ أَيۡدٖ يَبۡطِشُونَ بِهَآۖ أَمۡ لَهُمۡ أَعۡيُنٞ يُبۡصِرُونَ بِهَآۖ أَمۡ لَهُمۡ ءَاذَانٞ يَسۡمَعُونَ بِهَاۗ قُلِ ٱدۡعُواْ شُرَكَآءَكُمۡ ثُمَّ كِيدُونِ فَلَا تُنظِرُونِ ١٩٥ إِنَّ وَلِـِّۧيَ ٱللَّهُ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡكِتَٰبَۖ وَهُوَ يَتَوَلَّى ٱلصَّٰلِحِينَ ١٩٦ وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ لَا يَسۡتَطِيعُونَ نَصۡرَكُمۡ وَلَآ أَنفُسَهُمۡ يَنصُرُونَ ١٩٧ وَإِن تَدۡعُوهُمۡ إِلَى ٱلۡهُدَىٰ لَا يَسۡمَعُواْۖ وَتَرَىٰهُمۡ يَنظُرُونَ إِلَيۡكَ وَهُمۡ لَا يُبۡصِرُونَ ١٩٨﴾ [ الاعراف : ١٩٠ - ١٩٨ ]
“তারা কি এমন কিছুকে শরীক করে, যারা কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়? আর তারা তাদেরকে কোন সাহায্য করতে পারে না এবং তারা নিজদেরকেও সাহায্য করতে পারে না। আর তোমরা যদি তাদেরকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান কর, তারা তোমাদের অনুসরণ করবে না। তোমরা তাদেরকে ডাক অথবা তোমরা চুপ থাক, তা তোমাদের নিকট সমান। আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাক তারা তোমাদের মতো বান্দা। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ডাক। অতঃপর তারা যেন তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তাদের কি পা আছে যার সাহায্যে তারা চলে? বা তাদের কি হাত আছে যা দ্বারা তারা ধরে? বা তাদের কি চক্ষু আছে যার মাধ্যমে তারা দেখে? অথবা তাদের কি কান আছে যা দ্বারা তারা শুনে? বল, ‘তোমরা তোমাদের শরীকদের ডাক। তারপর আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর এবং আমাকে অবকাশ দিয়ো না’। ‘নিশ্চয় আমার অভিভাবক আল্লাহ, যিনি কিতাব নাযিল করেছেন। আর তিনি নেককারদের দেখাশোনা করেন’। আর তাঁকে ছাড়া তোমরা যাদেরকে ডাক তারা তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে না এবং তারা নিজদেরকেও সাহায্য করতে পারে না। তুমি যদি তাদেরকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান কর, তারা শুনবে না। আর তুমি তাদেরকে দেখবে যে, তারা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে, অথচ তারা দেখছে না।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৯০ - ১৯৮]
আরও বলেন:
﴿وَٱتَّخَذُواْ مِن دُونِهِۦٓ ءَالِهَةٗ لَّا يَخۡلُقُونَ شَيۡٔٗا وَهُمۡ يُخۡلَقُونَ وَلَا يَمۡلِكُونَ لِأَنفُسِهِمۡ ضَرّٗا وَلَا نَفۡعٗا وَلَا يَمۡلِكُونَ مَوۡتٗا وَلَا حَيَوٰةٗ وَلَا نُشُورٗا ٣﴾ [ الفرقان : ٣ ]
“আর তারা আল্লাহ ছাড়া অনেক ইলাহ গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা নিজদের কোনো কল্যাণ ও অকল্যাণ করার ক্ষমতা রাখে না এবং মৃত্যু, জীবন ও পুনরুত্থান করতেও সক্ষম হয় না”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৩]
আরও বলেন:
﴿قُلِ ٱدۡعُواْ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ لَا يَمۡلِكُونَ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَمَا لَهُمۡ فِيهِمَا مِن شِرۡكٖ وَمَا لَهُۥ مِنۡهُم مِّن ظَهِيرٖ ٢٢ وَلَا تَنفَعُ ٱلشَّفَٰعَةُ عِندَهُۥٓ إِلَّا لِمَنۡ أَذِنَ لَهُۥۚ﴾ [ سبا : ٢٢ - ٢٣ ]
“বল, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে করতে তাদেরকে আহ্বান কর। তারা আসমানসমূহ ও জমিনে অণু পরিমাণ কোনো কিছুর মালিক নয়। আর এ দু’য়ের মধ্যে তাদের কোন অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্যে কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নেই। আর আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া তাঁর কাছে কোন সুপারিশ কারো উপকার করবে না”। [সূরা আস-সাবা, আয়াত: ২২ - ২৩]
এ কারণেই সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ কবীরা গুনাহ এবং মহা অন্যায় হলো আল্লাহর ইবাদতে কাউকে শরীক করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ ٱلشِّرۡكَ لَظُلۡمٌ عَظِيمٞ ١٣﴾ [ لقمان : ١٣ ]
“নিশ্চয় শির্ক করা মহা অন্যায়”। [সূরা লুকমান, আয়াত: ১৩]
সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীস বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ألا أنبئكم بأكبر الكبائر ؟ قلنا : بلى ، يا رسول الله . قال : الإشراك بالله» .
“আমি কি তোমাদের বড় কবীরা গুনাহ সম্পর্কে সংবাদ দেবো? আমরা বললাম হ্যাঁ আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শির্ক করা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৩]
অপর একটি হাদীসে বর্ণিত,
«وسئل صلى الله عليه وسلم أي الذنب أعظم ؟ قال : أن تجعل لله نداً، وهو خلقك» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সবচেয়ে বড় গুনাহ কী? তিনি বললেন, “আল্লাহর জন্য শরীক সাব্যস্ত করা অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪৭৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৬]
মহব্বত করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ ١٦٥﴾ [ البقرة : ١٦٥ ]
“আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার মত ভালবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালোবাসায় দৃঢ়তর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৫]
ভয় করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَلَا تَخَافُوهُمۡ وَخَافُونِ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١٧٥﴾ [ ال عمران : ١٧٥ ]
“তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হও”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৫]
আশা করা, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠﴾ [ الكهف : ١١٠ ]
“সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে’’। [সূরা আল-কাহ্ফ, আয়াত: ১১০]
আল্লাহর উপর ভরসা করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَعَلَى ٱللَّهِ فَتَوَكَّلُوٓاْ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٢٣﴾ [ المائدة : ٢٣ ]
“আর আল্লাহর উপর ভরসা কর যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হও’। [সূরা আল- মায়িদা, আয়াত: 23]
দেহের সংশোধনের মূল হলো আত্মার সংশোধন। যেমনটি হাদীসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ألا وإن في الجسد مضغة؛ إذا صلحت صلح الجسد كله،وإذا فسدت فسد الجسد كله،ألا وهي القلب»
“মনে রাখ, নিশ্চয় মানব দেহে একটি গোস্তের টুকরা রয়েছে, যখন তা সঠিক হয়, তখন পূর্ণ দেহ সঠিক হয়, আর যখন তা নষ্ট হয়, তখন পূর্ণ দেহই নষ্ট হয়। আর তা হলো অন্তর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৯৯]
দুই- মৌখিক ইবাদত: যেমন,
দো‘আ। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨﴾ [ الجن : ١٨ ]
“আর নিশ্চয় মাসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না”। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮]
আশ্রয় চাওয়া। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلۡفَلَقِ ١﴾ [ الفلق : ١ ]
“বল, ‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের কাছে”। [সূরা আল-ফালাক, আয়াত: ১]
মহান আল্লাহ আরও বলেন:
﴿قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ ١﴾ [ الناس : ١ ]
“বল, ‘আমি আশ্রয় চাই মানুষের রবের নিকট”। [সূরা আন-নাস, আয়াত: ১]
উদ্ধার চাওয়া। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِذۡ تَسۡتَغِيثُونَ رَبَّكُمۡ فَٱسۡتَجَابَ لَكُمۡ أَنِّي مُمِدُّكُم بِأَلۡفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُرۡدِفِينَ ٩﴾ [ الانفال : ٩ ]
“আর স্মরণ কর, যখন তোমরা তোমাদের রবের নিকট উদ্ধার কামনা করে ফরিয়াদ করছিলে, তখন তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন যে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পর পর আগমনকারী এক হাজার ফিরিশতা দ্বারা সাহায্য করছি’’। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮]
তিন- দৈহিক ইবাদত। যেমন,
সালাত আদায় ও জবেহ করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢﴾ [ الانعام : ١٦٢ ]
“বল, ‘নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব’। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৬২]
মহান আল্লাহ আরও বলেন:
﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢﴾ [ الكوثر : ٢ ]
“অতএব, তোমার রবের উদ্দেশ্যেই নামাজ পড় এবং কুরবানী কর”। [সূরা আল-কাওসার, আয়াত: ২]
চার- আর্থিক ইবাদত। যেমন,
বাধ্যতামূলক খরচ-পাতি, যাকাত, সদকা, ওয়াসিয়ত, ওয়াকফ ও হিবা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمِنَ الأَعْرَابِ مَن يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ قُرُبَاتٍ عِندَ اللّهِ وَصَلَوَاتِ الرَّسُولِ أَلا إِنَّهَا قُرْبَةٌ لَّهُمْ سَيُدْخِلُهُمُ اللّهُ فِي رَحْمَتِهِ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾ [ التوبة : ٩٩ ]
“আর বেদুইনদের কেউ কেউ আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে এবং যা ব্যয় করে তাকে আল্লাহর নিকট নৈকট্য ও রাসূলের দো‘আর উপায় হিসেবে গণ্য করে। জেনে রাখ, নিশ্চয় তা তাদের জন্য নৈকট্যের মাধ্যম। অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে তাঁর রহমতে প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৯৯]
অনুরূপভাবে খাবার খাওয়ানো: মহান আল্লাহ আরও বলেন:
﴿وَيُطۡعِمُونَ ٱلطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ مِسۡكِينٗا وَيَتِيمٗا وَأَسِيرًا ٨ إِنَّمَا نُطۡعِمُكُمۡ لِوَجۡهِ ٱللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمۡ جَزَآءٗ وَلَا شُكُورًا ٩﴾ [ الانسان : ٨ - ١٠ ]
“তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে। তারা বলে, ‘আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদেরকে খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের থেকে কোন প্রতিদান চাই না এবং কোনো শোকরও না”। [সূরা আল-ইনসান, আয়াত: ৮ - ১০]
স্মর্তব্য যে, আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের উপর ঈমান স্থাপন করার বাধ্যবাধকতা ও দাবি হলো, আল্লাহর উলুহিয়্যাতের উপর ঈমান স্থাপন করা। যে ব্যক্তি এ কথা স্বীকার করে যে, আল্লাহ তা‘আলাই স্রষ্টা, তিনিই মালিক এবং পরিচালক, তার জন্য করণীয় হলো, যিনি তার স্রষ্টা, মালিক বা তত্বাবধায়ক ও পরিচালক সে তার দাসত্ব ও গোলামীকে স্বীকার করবে এবং ইবাদতের ক্ষেত্রে তাকে একক বলে জানবে। মহান আল্লাহ মুশরিকদের বিপক্ষে এ স্বীকারোক্তির মাধ্যমে স্বীয় কিতাব কুরআনের একাধিক স্থানে দলীল উপস্থাপন করেন। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُمۡ وَٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ٢١ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلۡأَرۡضَ فِرَٰشٗا وَٱلسَّمَآءَ بِنَآءٗ وَأَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَخۡرَجَ بِهِۦ مِنَ ٱلثَّمَرَٰتِ رِزۡقٗا لَّكُمۡۖ فَلَا تَجۡعَلُواْ لِلَّهِ أَندَادٗا وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٢٢﴾ [ البقرة : ٢١ - ٢٢ ]
“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত কর, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদেরকে, যাতে তোমরা জাহান্নামের শাস্তি হতে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হও। যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে করেছেন বিছানা এবং আসমানকে করেছেন ছাদ আর আসমান থেকে নাযিল করেছেন বৃষ্টি। অতঃপর তাঁর মাধ্যমে উৎপন্ন করেছেন ফল-ফলাদি, তোমাদের জন্য রিযিকস্বরূপ। সুতরাং তোমরা আল্লাহর জন্য সমকক্ষ নির্ধারণ করো না আর তোমরা তো জানো যে, তিনি একাই এই সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করেছেন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১ - ২২]
﴿ قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أَمَّن يَمۡلِكُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَمَن يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُۚ فَقُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٣١ فَذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمُ ٱلۡحَقُّۖ فَمَاذَا بَعۡدَ ٱلۡحَقِّ إِلَّا ٱلضَّلَٰلُۖ فَأَنَّىٰ تُصۡرَفُونَ ٣٢﴾ [ يونس : ٣١ - ٣٢ ]
“বল, ‘আসমান ও জমিন থেকে কে তোমাদের রিযিক দেন? অথবা কে (তোমাদের) শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তির মালিক? আর কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন আর জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন? কে সব বিষয় পরিচালনা করেন’? তখন তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’। সুতরাং, তুমি বল, ‘তারপরও কি তোমরা আল্লাহর সাথে অংশিদার স্থাপন হতে সতর্ক হবে না’? অতএব, তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রকৃত রব। অতঃপর সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া কী থাকে? অতএব কোথায় তোমাদেরকে ঘুরানো হচ্ছে”?। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩১ - ৩২]
﴿قُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَسَلَامٌ عَلَى عِبَادِهِ الَّذِينَ اصْطَفَى آللَّهُ خَيْرٌ أَمَّا يُشْرِكُونَ . أَمَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَأَنزَلَ لَكُم مِّنَ السَّمَاءِ مَاء فَأَنبَتْنَا بِهِ حَدَائِقَ ذَاتَ بَهْجَةٍ مَّا كَانَ لَكُمْ أَن تُنبِتُوا شَجَرَهَا أَإِلَهٌ مَّعَ اللَّهِ بَلْ هُمْ قَوْمٌ يَعْدِلُونَ . أَمَّن جَعَلَ الْأَرْضَ قَرَاراً وَجَعَلَ خِلَالَهَا أَنْهَاراً وَجَعَلَ لَهَا رَوَاسِيَ وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزاً أَإِلَهٌ مَّعَ اللَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ . أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَاء الْأَرْضِ أَإِلَهٌ مَّعَ اللَّهِ قَلِيلاً مَّا تَذَكَّرُونَ . أَمَّن يَهْدِيكُمْ فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَن يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْراً بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهِ أَإِلَهٌ مَّعَ اللَّهِ تَعَالَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ . أَمَّن يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَمَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أَإِلَهٌ مَّعَ اللَّهِ قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ﴾ النمل : ٥٩ -٦٤
“বল, ‘সকল প্রশংসাই আল্লাহর নিমিত্তে। আর শান্তি তাঁর বান্দাদের প্রতি যাদের তিনি মনোনীত করেছেন। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, না কি যাদেরকে এরা শরীক করে তারা’? বরং তিনি (শ্রেষ্ঠ), যিনি আসমানসমূহ ও জমিনকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য তিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা দ্বারা আমি মনোরম উদ্যান সৃষ্টি করি। তার বৃক্ষাদি উৎপন্ন করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোন ইলাহ আছে? বরং তারা এমন এক কওম যারা শির্ক করে। বরং তিনি, যিনি জমিনকে আবাসযোগ্য করেছেন এবং তার মধ্যে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা। আর তাতে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা এবং দুই সমুদ্রের মধ্যখানে অন্তরায় সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে? বরং তাদের অধিকাংশই সত্য বিষয়টি জানে না; বরং তিনি, যিনি নিরুপায়ের আহ্বানে সাড়া দেন এবং বিপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে জমিনের প্রতিনিধি বানান। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোন ইলাহ আছে? তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। বরং তিনি, যিনি তোমাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রের অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি স্বীয় রহমতের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বাতাস প্রেরণ করেন। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে? তারা যা কিছু শরীক করে আল্লাহ তা থেকে ঊর্ধ্বে; বরং তিনি, যিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর তার পুনরাবৃত্তি করবেন এবং যিনি তোমাদেরকে আসমান ও জমিন থেকে রিযিক দান করেন, আল্লাহর সাথে কি কোনো ইলাহ আছে? বল, ‘তোমাদের প্রমাণ নিয়ে এসো যদি তোমরা সত্যবাদী হও”। [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৫৯ - ৬৪]
এভাবেই মহান আল্লাহ উল্লিখিত আয়াতসমূহে তাঅহীদে রুবুবিয়্যাকে স্বীকার করার দ্বারা তাঅহীদে উলুহিয়্যার উপর প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।
অনুরূপ মুশরিকদের ইলাহসমূহ যেগুলোর মধ্যে রবুবিয়্যাতের কোনো বৈশিষ্ট্য নেই সেগুলোর ইলাহ হওয়াকে বাতিল করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَيُشۡرِكُونَ مَا لَا يَخۡلُقُ شَيۡٔٗا وَهُمۡ يُخۡلَقُونَ ١٩١ وَلَا يَسۡتَطِيعُونَ لَهُمۡ نَصۡرٗا وَلَآ أَنفُسَهُمۡ يَنصُرُونَ ١٩٢ وَإِن تَدۡعُوهُمۡ إِلَى ٱلۡهُدَىٰ لَا يَتَّبِعُوكُمۡۚ سَوَآءٌ عَلَيۡكُمۡ أَدَعَوۡتُمُوهُمۡ أَمۡ أَنتُمۡ صَٰمِتُونَ ١٩٣ إِنَّ ٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ عِبَادٌ أَمۡثَالُكُمۡۖ فَٱدۡعُوهُمۡ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لَكُمۡ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ١٩٤ أَلَهُمۡ أَرۡجُلٞ يَمۡشُونَ بِهَآۖ أَمۡ لَهُمۡ أَيۡدٖ يَبۡطِشُونَ بِهَآۖ أَمۡ لَهُمۡ أَعۡيُنٞ يُبۡصِرُونَ بِهَآۖ أَمۡ لَهُمۡ ءَاذَانٞ يَسۡمَعُونَ بِهَاۗ قُلِ ٱدۡعُواْ شُرَكَآءَكُمۡ ثُمَّ كِيدُونِ فَلَا تُنظِرُونِ ١٩٥ إِنَّ وَلِـِّۧيَ ٱللَّهُ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡكِتَٰبَۖ وَهُوَ يَتَوَلَّى ٱلصَّٰلِحِينَ ١٩٦ وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ لَا يَسۡتَطِيعُونَ نَصۡرَكُمۡ وَلَآ أَنفُسَهُمۡ يَنصُرُونَ ١٩٧ وَإِن تَدۡعُوهُمۡ إِلَى ٱلۡهُدَىٰ لَا يَسۡمَعُواْۖ وَتَرَىٰهُمۡ يَنظُرُونَ إِلَيۡكَ وَهُمۡ لَا يُبۡصِرُونَ ١٩٨﴾ [ الاعراف : ١٩٠ - ١٩٨ ]
“তারা কি এমন কিছুকে শরীক করে, যারা কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়? আর তারা তাদেরকে কোন সাহায্য করতে পারে না এবং তারা নিজদেরকেও সাহায্য করতে পারে না। আর তোমরা যদি তাদেরকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান কর, তারা তোমাদের অনুসরণ করবে না। তোমরা তাদেরকে ডাক অথবা তোমরা চুপ থাক, তা তোমাদের নিকট সমান। আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাক তারা তোমাদের মতো বান্দা। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ডাক। অতঃপর তারা যেন তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তাদের কি পা আছে যার সাহায্যে তারা চলে? বা তাদের কি হাত আছে যা দ্বারা তারা ধরে? বা তাদের কি চক্ষু আছে যার মাধ্যমে তারা দেখে? অথবা তাদের কি কান আছে যা দ্বারা তারা শুনে? বল, ‘তোমরা তোমাদের শরীকদের ডাক। তারপর আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর এবং আমাকে অবকাশ দিয়ো না’। ‘নিশ্চয় আমার অভিভাবক আল্লাহ, যিনি কিতাব নাযিল করেছেন। আর তিনি নেককারদের দেখাশোনা করেন’। আর তাঁকে ছাড়া তোমরা যাদেরকে ডাক তারা তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে না এবং তারা নিজদেরকেও সাহায্য করতে পারে না। তুমি যদি তাদেরকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান কর, তারা শুনবে না। আর তুমি তাদেরকে দেখবে যে, তারা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে, অথচ তারা দেখছে না।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৯০ - ১৯৮]
আরও বলেন:
﴿وَٱتَّخَذُواْ مِن دُونِهِۦٓ ءَالِهَةٗ لَّا يَخۡلُقُونَ شَيۡٔٗا وَهُمۡ يُخۡلَقُونَ وَلَا يَمۡلِكُونَ لِأَنفُسِهِمۡ ضَرّٗا وَلَا نَفۡعٗا وَلَا يَمۡلِكُونَ مَوۡتٗا وَلَا حَيَوٰةٗ وَلَا نُشُورٗا ٣﴾ [ الفرقان : ٣ ]
“আর তারা আল্লাহ ছাড়া অনেক ইলাহ গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা নিজদের কোনো কল্যাণ ও অকল্যাণ করার ক্ষমতা রাখে না এবং মৃত্যু, জীবন ও পুনরুত্থান করতেও সক্ষম হয় না”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৩]
আরও বলেন:
﴿قُلِ ٱدۡعُواْ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ لَا يَمۡلِكُونَ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَمَا لَهُمۡ فِيهِمَا مِن شِرۡكٖ وَمَا لَهُۥ مِنۡهُم مِّن ظَهِيرٖ ٢٢ وَلَا تَنفَعُ ٱلشَّفَٰعَةُ عِندَهُۥٓ إِلَّا لِمَنۡ أَذِنَ لَهُۥۚ﴾ [ سبا : ٢٢ - ٢٣ ]
“বল, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে করতে তাদেরকে আহ্বান কর। তারা আসমানসমূহ ও জমিনে অণু পরিমাণ কোনো কিছুর মালিক নয়। আর এ দু’য়ের মধ্যে তাদের কোন অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্যে কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নেই। আর আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া তাঁর কাছে কোন সুপারিশ কারো উপকার করবে না”। [সূরা আস-সাবা, আয়াত: ২২ - ২৩]
এ কারণেই সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ কবীরা গুনাহ এবং মহা অন্যায় হলো আল্লাহর ইবাদতে কাউকে শরীক করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ ٱلشِّرۡكَ لَظُلۡمٌ عَظِيمٞ ١٣﴾ [ لقمان : ١٣ ]
“নিশ্চয় শির্ক করা মহা অন্যায়”। [সূরা লুকমান, আয়াত: ১৩]
সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীস বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ألا أنبئكم بأكبر الكبائر ؟ قلنا : بلى ، يا رسول الله . قال : الإشراك بالله» .
“আমি কি তোমাদের বড় কবীরা গুনাহ সম্পর্কে সংবাদ দেবো? আমরা বললাম হ্যাঁ আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শির্ক করা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৩]
অপর একটি হাদীসে বর্ণিত,
«وسئل صلى الله عليه وسلم أي الذنب أعظم ؟ قال : أن تجعل لله نداً، وهو خلقك» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সবচেয়ে বড় গুনাহ কী? তিনি বললেন, “আল্লাহর জন্য শরীক সাব্যস্ত করা অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪৭৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৬]
শির্কের ভয়াবহতা ও নিকৃষ্টতার কারণে মহান আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে শির্কের কিছু বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছেন: যেমন,
এক- ক্ষমা না করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفۡتَرَىٰٓ إِثۡمًا عَظِيمًا ٤٨﴾ [ النساء : ٤٨ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮]
দুই- জান্নাতকে হারাম করেছেন এবং জাহান্নামে চিরদিন থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [ المائدة : ٧٢ ]
“নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২]
তিন- সমস্ত আমল নষ্ট হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥﴾ [ الزمر : ٦٤ ]
“আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে অহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শির্ক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই। আর অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। [সূরা আল-যুমার, আয়াত: ৬৪]
চার- হত্যা করা এবং ধন-সম্পদ হালাল হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَاقْتُلُواْ الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُواْ لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ الصَّلاَةَ وَآتَوُاْ الزَّكَاةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ﴾ [ التوبة : ٥ ]
“অতঃপর যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর এবং তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে অবরোধ কর এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে বসে থাক। তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সালাত কায়েম করে, আর যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৫], ( এই আয়াতটি সকল স্থানের জন্য প্রযোজ্য নয় শুধূ মাত্র আরব দ্বীপের মূর্তিপূজক ও মুশরিকদের জন্য প্রযোজ্য। নিরীক্ষক: ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ) ।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أمرت أن أقاتل الناس حتى يقولوا : لا إله إلا الله ، فإذا قالوها عصموا مني دماءهم وأموالهم ، إلا بحقها» .
“আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আমি যেন, মানুষের সাথে যুদ্ধ করি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা এ কথা বলে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। যখন তারা এ কথা বলবে, তখন ঈমানের দাবি ছাড়া তাদের জান ও মাল আমার থেকে নিরাপদ থাকবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১। ( এই হাদীসটি সকল স্থানের জন্য প্রযোজ্য নয় শুধূ মাত্র আরব দ্বীপ অথবা দ্বীপের একটি অংশ হিজাজের জন্য প্রযোজ্য। নিরীক্ষক: ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ)]
শির্কে লিপ্ত লোকদের কিছু নমূনা:
শির্কে লিপ্ত হওয়ার কারণে আদম সন্তান থেকে অসংখ্য মানুষ ধ্বংস ও পথভ্রষ্ট হয়েছে। তারা হলো:
এক. মূর্তিপূজক: যদিও এদের উপাস্য একাধিক। যেমন, গাছ, পাথর, মানুষ, জীন, ফিরিশতা, নক্ষত্র, জন্তু ইত্যাদি। এ সবের মাধ্যমে শয়তান তাদের পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ করেছে।
দুই. কবরপন্থীরা: যারা কবরস্থ মৃতদের বিপদ-আপদে ডাকে। কবরবাসীদের উদ্দেশ্যে মানত করে, তাদের জন্য হাদীয়া-তোহফা পেশ করে এবং তাদের নিকট উপকার চায় এবং ক্ষতি প্রতিহত করা কামনা করে।
তিন. জাদুকর, গণক: যারা গাইবী সংবাদ পাওয়ার আশায় জিন্নের পূজা করে অথবা তাদের উপস্থিত করে অথবা জীন্নদের তাদের অনুগত করে।
শির্কের মাধ্যম হতে সাবধান করা:
ইবাদতের মধ্যে শির্কের পরিণতি ভয়াবহ হওয়ার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব কারণসমূহ মানুষকে শির্কের দিকে পৌঁছায় সে সব কারণসমূহ থেকে উম্মতকে সতর্ক করেছেন, যাতে তারা শির্কে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকে। এ ধরণের কয়েকটি দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরা হলো:
এক. পীর, আওলিয়া, বুজুর্গ ও দরবেশগণের বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা থেকে সতর্কতা অবলম্বন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إياكم والغلو، فإنما أهلك من كان قبلكم الغلو» .
সাবধান, তোমরা বাড়াবাড়ি করো না, তোমাদের পূর্বের উম্মাতদের অতিরিক্ত বাড়াবাড়িই ধ্বংস করেছে। [নাসাঈ, হাদীস নং ৩০৫৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩০২৯]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন—
«لا تطروني كما أطرت النصارى ابن مريم ! إنما أنا عبد، فقولوا عبد الله ورسوله» .
“আমাকে নিয়ে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না, যেমনি খৃষ্টানরা করেছিল মারইয়ামের ছেলে ঈসাকে নিয়ে। আমি তো একজন বান্দা। তোমরা আমার সম্পর্কে এ কথা বল যে, আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৪৫]
পীর, আওলিয়া, বুজুর্গদের বিষয়ে বাড়াবাড়ির একটি বাড়াবাড়ি হলো, তাদেরকে অবৈধ এবং নিষিদ্ধ অসীলা বা মাধ্যম সাব্যস্ত করা। আর এটি দুই প্রকার:
এক. শির্কী অসীলা: এ ধরণের অসীলা সাব্যস্ত করার কারণে একজন মুসলিম ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায়। আর তা হলো, বিপদ-আপদ দূর করা এবং প্রয়োজন মিটানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে তাদের কাছে সাহায্য ও সহযোগীতা প্রার্থনা করা।
দুই. বিদ‘আতী অসীলা: আল্লাহর নিকট পৌঁছার জন্য এমন কিছুকে মাধ্যম নির্ধারণ করা যে মাধ্যমগুলোর অনুমোদন বা বৈধতা মহান আল্লাহ দেন নি। যেমন, নেককার, পীর, বজুর্গ ও মাশাইখদের সত্ত্বা, ইজ্জত ও সম্মান ইত্যাদিকে অসীলা বা মাধ্যম সাব্যস্ত করা।
এক- ক্ষমা না করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفۡتَرَىٰٓ إِثۡمًا عَظِيمًا ٤٨﴾ [ النساء : ٤٨ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮]
দুই- জান্নাতকে হারাম করেছেন এবং জাহান্নামে চিরদিন থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [ المائدة : ٧٢ ]
“নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২]
তিন- সমস্ত আমল নষ্ট হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥﴾ [ الزمر : ٦٤ ]
“আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে অহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শির্ক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই। আর অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। [সূরা আল-যুমার, আয়াত: ৬৪]
চার- হত্যা করা এবং ধন-সম্পদ হালাল হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَاقْتُلُواْ الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُواْ لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ الصَّلاَةَ وَآتَوُاْ الزَّكَاةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ﴾ [ التوبة : ٥ ]
“অতঃপর যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর এবং তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে অবরোধ কর এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে বসে থাক। তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সালাত কায়েম করে, আর যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৫], ( এই আয়াতটি সকল স্থানের জন্য প্রযোজ্য নয় শুধূ মাত্র আরব দ্বীপের মূর্তিপূজক ও মুশরিকদের জন্য প্রযোজ্য। নিরীক্ষক: ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ) ।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أمرت أن أقاتل الناس حتى يقولوا : لا إله إلا الله ، فإذا قالوها عصموا مني دماءهم وأموالهم ، إلا بحقها» .
“আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আমি যেন, মানুষের সাথে যুদ্ধ করি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা এ কথা বলে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। যখন তারা এ কথা বলবে, তখন ঈমানের দাবি ছাড়া তাদের জান ও মাল আমার থেকে নিরাপদ থাকবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১। ( এই হাদীসটি সকল স্থানের জন্য প্রযোজ্য নয় শুধূ মাত্র আরব দ্বীপ অথবা দ্বীপের একটি অংশ হিজাজের জন্য প্রযোজ্য। নিরীক্ষক: ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ)]
শির্কে লিপ্ত লোকদের কিছু নমূনা:
শির্কে লিপ্ত হওয়ার কারণে আদম সন্তান থেকে অসংখ্য মানুষ ধ্বংস ও পথভ্রষ্ট হয়েছে। তারা হলো:
এক. মূর্তিপূজক: যদিও এদের উপাস্য একাধিক। যেমন, গাছ, পাথর, মানুষ, জীন, ফিরিশতা, নক্ষত্র, জন্তু ইত্যাদি। এ সবের মাধ্যমে শয়তান তাদের পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ করেছে।
দুই. কবরপন্থীরা: যারা কবরস্থ মৃতদের বিপদ-আপদে ডাকে। কবরবাসীদের উদ্দেশ্যে মানত করে, তাদের জন্য হাদীয়া-তোহফা পেশ করে এবং তাদের নিকট উপকার চায় এবং ক্ষতি প্রতিহত করা কামনা করে।
তিন. জাদুকর, গণক: যারা গাইবী সংবাদ পাওয়ার আশায় জিন্নের পূজা করে অথবা তাদের উপস্থিত করে অথবা জীন্নদের তাদের অনুগত করে।
শির্কের মাধ্যম হতে সাবধান করা:
ইবাদতের মধ্যে শির্কের পরিণতি ভয়াবহ হওয়ার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব কারণসমূহ মানুষকে শির্কের দিকে পৌঁছায় সে সব কারণসমূহ থেকে উম্মতকে সতর্ক করেছেন, যাতে তারা শির্কে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকে। এ ধরণের কয়েকটি দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরা হলো:
এক. পীর, আওলিয়া, বুজুর্গ ও দরবেশগণের বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা থেকে সতর্কতা অবলম্বন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إياكم والغلو، فإنما أهلك من كان قبلكم الغلو» .
সাবধান, তোমরা বাড়াবাড়ি করো না, তোমাদের পূর্বের উম্মাতদের অতিরিক্ত বাড়াবাড়িই ধ্বংস করেছে। [নাসাঈ, হাদীস নং ৩০৫৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩০২৯]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন—
«لا تطروني كما أطرت النصارى ابن مريم ! إنما أنا عبد، فقولوا عبد الله ورسوله» .
“আমাকে নিয়ে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না, যেমনি খৃষ্টানরা করেছিল মারইয়ামের ছেলে ঈসাকে নিয়ে। আমি তো একজন বান্দা। তোমরা আমার সম্পর্কে এ কথা বল যে, আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৪৫]
পীর, আওলিয়া, বুজুর্গদের বিষয়ে বাড়াবাড়ির একটি বাড়াবাড়ি হলো, তাদেরকে অবৈধ এবং নিষিদ্ধ অসীলা বা মাধ্যম সাব্যস্ত করা। আর এটি দুই প্রকার:
এক. শির্কী অসীলা: এ ধরণের অসীলা সাব্যস্ত করার কারণে একজন মুসলিম ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায়। আর তা হলো, বিপদ-আপদ দূর করা এবং প্রয়োজন মিটানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে তাদের কাছে সাহায্য ও সহযোগীতা প্রার্থনা করা।
দুই. বিদ‘আতী অসীলা: আল্লাহর নিকট পৌঁছার জন্য এমন কিছুকে মাধ্যম নির্ধারণ করা যে মাধ্যমগুলোর অনুমোদন বা বৈধতা মহান আল্লাহ দেন নি। যেমন, নেককার, পীর, বজুর্গ ও মাশাইখদের সত্ত্বা, ইজ্জত ও সম্মান ইত্যাদিকে অসীলা বা মাধ্যম সাব্যস্ত করা।
বৈধ অসীলা হলো, আল্লাহর উপর ঈমান স্থাপন করাকে অসীলা বা মাধ্যম সাব্যস্ত করা অথবা আল্লাহর নামসমূহ ও সিফাতসমূহ থেকে কোনো নাম বা সিফাতকে অসীলা বা মাধ্যম বানানো অথবা কোনো নেককার বান্দার নিকট দু‘আ চাওয়া। যেমন, উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,
«اللهم إنا كنا إذا أجدبنا توسلنا إليك بنبينا، فتسقينا، وإنا نتوسل إليك بعم نبينا فاسقنا» .
“হে আল্লাহ আমরা যখন খরা দেখতাম, তখন আমরা আমাদের নাবীর দো‘আর মাধ্যমে তোমার নিকট প্রার্থনা করতাম। তখন তুমি আমাদের বৃষ্টি দান করতে। আর আমরা এখন তোমার নিকট আমাদের নাবীর চাচার দো‘আর মাধ্যমে প্রার্থনা করছি, তুমি আমাদের বৃষ্টি দান কর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০১০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শির্কের মাধ্যম নিষিদ্ধ করার জন্য আরও যে সব বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,
দুই. কবর দ্বারা ফিতনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে সতর্কতা: এর কিছু পদ্ধতি হলো:
কবরসমূহকে সেজদার জায়গা বানানো। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে হাদীস বর্ণিত, তিনি বলেন:
«لما نزل برسول الله صلى الله عليه وسلم طفق يطرح خميصة له على وجهه ، فإذا اغتم كشفها . فقال، وهو كذلك : « لعنة الله على اليهود والنصارى؛ اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد » يحذر ما صنعوا . ولولا ذلك لأبرز قبره ، غير أنه خشي أن يتخذ مسجداً» .
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যখন মৃত্যু উপস্থিত হলো, তখন তিনি তার চেহারার উপর একটি চাদর টেনে দিচ্ছিলেন, যখন কষ্ট অনুভূত হতো তখন তিনি তা খুলে ফেলতেন। এ অবস্থায় তিনি বললেন, ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নাবীদের কবরসমূহকে মাসজিদ বানিয়েছে। তিনি তারা যা করছিলে তা থেকে স্বীয় উম্মতকে সতর্ক করছিলেন। (আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন) যদি সে সম্ভাবনা না হতো তাহলে তার কবরকে খোলা স্থানে করা হত। তিনি তো তাঁর কবরকে মাসজিদ বানানোর আশঙ্কা করেছিলেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫২৯।]
অপর বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন:
«ألا، وإن من كان قبلكم كانوا يتخذون قبور أنبيائهم مساجد . ألا فلا تتخذوا القبور مساجد ، فإني أنهاكم عن ذلك» .
“সাবধান! তোমাদের পূর্বের উম্মতরা তাদের নাবীদের কবরসমূহকে মাসজিদ বানিয়েছিল। তোমরা কবরসমূহকে মাসজিদ বানাবে না। আমি তোমাদের এ থেকে নিষেধ করছি”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩২।]
মাসজিদ বানানো অর্থ, কবরের পাশে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্য করা, যদিও সেখানে মাসজিদ নির্মিত হয় নি। কারণ, মাসজিদ হলো, সাজদার স্থান।
কবরের উপর কিছু নির্মাণ করা, কবরের মাটিকে উঁচু করা, কবর পাকা করা:
কারণ, আবুল হাইয়্যাজ আল-আসাদী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: আমাকে আলী ইবন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
«ألا أبعثك على ما بعثني عليه رسول الله صلى الله عليه وسلم ؛ ألا تدع تمثالاً إلا طمسته، ولا قبراً مشرفاً إلا سويته»
“আমি কি তোমাকে এমন একটি দায়িত্ব দিয়ে পাঠাবো যে দায়িত্ব দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছেন। তুমি কোনো মুর্তিকে দেখতে পেলে তা ভেঙ্গে ফেলবে, আর কোন উঁচু কবরকে দেখতে পেলে তা সমান করে দেবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৬৯।]
অনুরূপ জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن تجصيص القبر ، وأن يقعد عليه ، وأن يبنى عليه بناء» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করা, কবররের উপর বসা এবং কবরের উপর কোনো কিছু নির্মাণ করা থেকে নিষেধ করেছেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৭০।]
আর কবরের উপর গম্ভুজ নির্মাণ করা, কবর পাকা করা ও কবরকে সু-সজ্জিত করাও কবর কেন্দ্রিক ফিতনা সংক্রান্ত নিষিদ্ধ কাজের অন্তর্ভুক্ত।
কবরের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা:
কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لا تشدُّ الرحال إلا إلى ثلاثة مساجد : المسجد الحرام، ومسجدي هذا، والمسجد الأقصى» .
“(ইবাদত বা সাওয়াবের নিয়তে) তিনটি মাসজিদ ছাড়া অন্য কোনো স্থানকে উদ্দেশ্য করে ভ্রমণ করা যাবে না। তিনটি মাসজিদ হলো, মসজিদে হারাম, আমার এ মাসজিদ এবং মসজিদে আকসা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯৭।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরকে ঈদ উদযাপনের স্থান বানানো থেকে সতর্ক করা:
এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لا تجعلوا قبري عيداً»
“তোমরা আমার কবরকে ঈদ উদযাপনের স্থান বা সম্মিলন স্থান বানাবে না”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৪২।]
ঈদ বলা হয়, যেখানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে ঐ স্থানের উদ্দেশ্যে মানুষ একত্র হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শির্কের মাধ্যম নিষিদ্ধ করার জন্য আরও যে সব বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,
তিন. আকীদা, ইবাদত, অভ্যাস, আচার, আচরণের ক্ষেত্রে মুশরিক ও আহলে কিতাবদের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করা থেকে সতর্ক করা:
এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«خالفوا المشركين»
“তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৯।]
তিনি আরো বলেন:
«خالفوا المجوس»
“তোমরা অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা কর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬০।]
তিনি আরও বলেন:
«خالفوا اليهود» .
“তোমরা ইয়াহুদীদের বিরোধিতা কর”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৫২।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শির্কের মাধ্যম নিষিদ্ধ করার জন্য আরও যে সব বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,
চার. প্রতিকৃতি, মূর্তি, ভাষ্কর্য ইত্যাদি থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা:
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলের নিকট একটি গির্জার কথা আলোচনা করলেন যেটি তিনি হাবশায় দেখেছিলেন। তার কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«أولئك إذا مات فيهم الرجل الصالح ، بنوا على قبره مسجداً، وصوروا فيه تلك الصور . أولئك شرار الخلق عند الله» .
তারা এমন লোক, যাদের কোনো ভালো লোক যখন মারা যেত তখন তারা তার কবরের উপর মাসজিদ বানাত এবং তারা তার প্রতিকৃতি, মূর্তি নির্মাণ করত। এরা আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪২৭; মুসলিম, হাদীস নং ৫২৮।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শির্কের মাধ্যম নিষিদ্ধ করার জন্য আরও যে সব বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,
পাঁচ. র্শিকী শব্দসমূহ থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা: যেমন,
গাইরুল্লাহর নামে শপথ করা:
কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«من حلف بغير الله فقد كفر أو أشرك»
“যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে সপথ করবে, সে কুফুরী বা শির্কে নিক্ষিপ্ত হবে।”। [তিরমিযী, হাদীস নং ১৫৩৫]
(আল্লাহ ও বান্দার) ইচ্ছার মধ্যে সমান সাব্যস্ত করা:
কারণ, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ما شاء الله وشئت “আল্লাহ যা চান এবং আপনি যা চান” বলেছিল, তাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, «أجعلتني لله نداً ! قل : ما شاء الله وحده» . “তুমি আমাকে আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করলে? তুমি বল শুধু আল্লাহ যা চান”। [নাসাঈ, হাদীস নং ৩৭৭৩]
কাওনী বা প্রকৃতি বা সৃষ্টিগত কোনো কর্মকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও দিকে সম্পর্কযু্ক্ত করা:
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ হাদীসে কুদসীতে বলেন:
«وأما من قال : مطرنا بنوء كذا وكذا، فذلك كافر بي، مؤمن بالكوكب»
“আর যে বলে, অমুক নক্ষত্র দ্বারা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছে, সে আমাকে অস্বীকার করল এবং নক্ষত্রে বিশ্বাস করল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৪৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শির্কের মাধ্যম নিষিদ্ধ করার জন্য আরও যে সব বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,
ছয়. শির্কী কর্ম-কাণ্ডসমূহ থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা: যেমন,
মুসীবত দূর করা বা তা প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে হাতে বা গলায় সূতা বা মাল্য পরিধান করা। কারণ,
ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«أن النبي صلى الله عليه وسلم رأى رجلاً في يده حلقة ، فقال : «ما هذا ؟» قال : من الواهنة . قال : «انزعها ! فإنها لا تزيدك إلا وهناً، فإنك لو مت وهي عليك ما أفلحت أبداً» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে দেখলেন, তার হাতের মধ্যে একটি গোলাকার সূতা বা রিং। তিনি বললেন, “এটি কি? বলল, এটি দুর্বলকারী রোগের কারণে লাগানো হয়েছে। তখন তিনি তাকে বললেন, “এটি খুলে ফেল, এটি তোমার কোনো উপকারে আসবে না বরং তোমার দুর্বলতা আরো বাড়িয়ে দেবে। আর যদি তুমি এ অবস্থায় মারা যাও তুমি কখনো সফল হবে না”। [আহমদ, হাদীস নং ২০০০০; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬০৮৫।]
বদ নজর ইত্যাদি থেকে বাচার উদ্দেশ্যে তা‘বিয ঝুলানো, গলায় হার লাগানো, পুঁথি লাগানো ও মালা লাগানো ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকা:
কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«من تعلق تميمة فلا أتم الله له، ومن تعلق ودعة فلا ودع الله له»
“যে ব্যক্তি তাবিযের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করলো মহান আল্লাহ তার জন্য কোনো পূর্ণতা দান করবেন না। আর যে ব্যক্তি গলায় কোনো বিপদ দূরকারী সূতা লাগালো মহান আল্লাহ তার বিপদ দূর করবেন না”। [আহমদ, হাদীস নং ১৭৪০৪; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬০৮৬; হাকিম, হাদীস নং ৪১৭।]
হাকিম ও আহমদের এক বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«من تعلق تميمة فقد أشرك»
“যে ব্যক্তি তাবিযের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করল সে শির্ক করল”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لا تبقين في بعير قلادة من وتر، أو قلادة، إلا قطعت» .
“তোমরা কোনো উটের গলায় কোনো সুতার হার অথবা কোনো হার কেটে ফেলা ছাড়া অবশিষ্ট কিছু রাখবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১১৫]
শির্ক সম্বলিত কথা-বার্তা দ্বারা ঝাড়, ফুঁক করা:
কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إن الرقى، والتمائم، والتولة شرك»
“ঝাড়-ফুঁক, তাবিয ও তিওয়ালা শির্ক”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৮৮৩। তবে শরী‘আত সম্মত ঝাঁড়-ফুক অন্য হাদীস দ্বারা এ ব্যাপক বিধান থেকে আলাদা করা হয়েছে। সুতরাং তা জায়েয। [সম্পাদক]]
‘তিওয়ালা’ বলা হয়, এমন কিছু করা যাকে তারা এ বলে বিশ্বাস করত যে, তা একজন নারীকে তার স্বামীর নিকট খুব প্রিয় বা অপ্রিয় বানিয়ে দেয়।
শির্কের স্থানে জবেহ করা:
কারণ, এক লোক বাওয়ানাহ নামক স্থানে জবেহ করার জন্য মান্নত করার পর সে স্থানে জবেহ করা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন,
«هل كان فيها وثن من أوثان الجاهلية يعبد؟» قالوا : لا . قال : «فهل كان فيها عيد من أعيادهم؟» قالوا : لا . فقال : «أوف بنذرك» .
“ঐ স্থানে জাহেলিয়্যাতের যুগে উপাসনা করা হতো এমন কোনো মুর্তি আছে কিনা? সে বলল, না, তিনি বললেন, সে স্থানে তাদের কোন ঈদ উদযাপন করা হতো কিনা? সে বলল, না, তখন তিনি বললেন, তুমি তোমার মান্নত পুরণ কর”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৩১৩]
শুভাশুভ নির্ণয়ের কুলক্ষণ নেওয়ার বিধান:
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ থেকে মারফূ‘ হাদীস বর্ণিত, তিনি বলেন:
«الطيرة شرك . الطيرة شرك» .
“কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শির্ক, কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শির্ক”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯১০; তিরমিযি, হাদীস নং ১৬১৪]
«اللهم إنا كنا إذا أجدبنا توسلنا إليك بنبينا، فتسقينا، وإنا نتوسل إليك بعم نبينا فاسقنا» .
“হে আল্লাহ আমরা যখন খরা দেখতাম, তখন আমরা আমাদের নাবীর দো‘আর মাধ্যমে তোমার নিকট প্রার্থনা করতাম। তখন তুমি আমাদের বৃষ্টি দান করতে। আর আমরা এখন তোমার নিকট আমাদের নাবীর চাচার দো‘আর মাধ্যমে প্রার্থনা করছি, তুমি আমাদের বৃষ্টি দান কর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০১০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শির্কের মাধ্যম নিষিদ্ধ করার জন্য আরও যে সব বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,
দুই. কবর দ্বারা ফিতনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে সতর্কতা: এর কিছু পদ্ধতি হলো:
কবরসমূহকে সেজদার জায়গা বানানো। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে হাদীস বর্ণিত, তিনি বলেন:
«لما نزل برسول الله صلى الله عليه وسلم طفق يطرح خميصة له على وجهه ، فإذا اغتم كشفها . فقال، وهو كذلك : « لعنة الله على اليهود والنصارى؛ اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد » يحذر ما صنعوا . ولولا ذلك لأبرز قبره ، غير أنه خشي أن يتخذ مسجداً» .
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যখন মৃত্যু উপস্থিত হলো, তখন তিনি তার চেহারার উপর একটি চাদর টেনে দিচ্ছিলেন, যখন কষ্ট অনুভূত হতো তখন তিনি তা খুলে ফেলতেন। এ অবস্থায় তিনি বললেন, ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নাবীদের কবরসমূহকে মাসজিদ বানিয়েছে। তিনি তারা যা করছিলে তা থেকে স্বীয় উম্মতকে সতর্ক করছিলেন। (আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন) যদি সে সম্ভাবনা না হতো তাহলে তার কবরকে খোলা স্থানে করা হত। তিনি তো তাঁর কবরকে মাসজিদ বানানোর আশঙ্কা করেছিলেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫২৯।]
অপর বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন:
«ألا، وإن من كان قبلكم كانوا يتخذون قبور أنبيائهم مساجد . ألا فلا تتخذوا القبور مساجد ، فإني أنهاكم عن ذلك» .
“সাবধান! তোমাদের পূর্বের উম্মতরা তাদের নাবীদের কবরসমূহকে মাসজিদ বানিয়েছিল। তোমরা কবরসমূহকে মাসজিদ বানাবে না। আমি তোমাদের এ থেকে নিষেধ করছি”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩২।]
মাসজিদ বানানো অর্থ, কবরের পাশে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্য করা, যদিও সেখানে মাসজিদ নির্মিত হয় নি। কারণ, মাসজিদ হলো, সাজদার স্থান।
কবরের উপর কিছু নির্মাণ করা, কবরের মাটিকে উঁচু করা, কবর পাকা করা:
কারণ, আবুল হাইয়্যাজ আল-আসাদী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: আমাকে আলী ইবন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
«ألا أبعثك على ما بعثني عليه رسول الله صلى الله عليه وسلم ؛ ألا تدع تمثالاً إلا طمسته، ولا قبراً مشرفاً إلا سويته»
“আমি কি তোমাকে এমন একটি দায়িত্ব দিয়ে পাঠাবো যে দায়িত্ব দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছেন। তুমি কোনো মুর্তিকে দেখতে পেলে তা ভেঙ্গে ফেলবে, আর কোন উঁচু কবরকে দেখতে পেলে তা সমান করে দেবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৬৯।]
অনুরূপ জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن تجصيص القبر ، وأن يقعد عليه ، وأن يبنى عليه بناء» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করা, কবররের উপর বসা এবং কবরের উপর কোনো কিছু নির্মাণ করা থেকে নিষেধ করেছেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৭০।]
আর কবরের উপর গম্ভুজ নির্মাণ করা, কবর পাকা করা ও কবরকে সু-সজ্জিত করাও কবর কেন্দ্রিক ফিতনা সংক্রান্ত নিষিদ্ধ কাজের অন্তর্ভুক্ত।
কবরের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা:
কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لا تشدُّ الرحال إلا إلى ثلاثة مساجد : المسجد الحرام، ومسجدي هذا، والمسجد الأقصى» .
“(ইবাদত বা সাওয়াবের নিয়তে) তিনটি মাসজিদ ছাড়া অন্য কোনো স্থানকে উদ্দেশ্য করে ভ্রমণ করা যাবে না। তিনটি মাসজিদ হলো, মসজিদে হারাম, আমার এ মাসজিদ এবং মসজিদে আকসা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯৭।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরকে ঈদ উদযাপনের স্থান বানানো থেকে সতর্ক করা:
এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لا تجعلوا قبري عيداً»
“তোমরা আমার কবরকে ঈদ উদযাপনের স্থান বা সম্মিলন স্থান বানাবে না”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৪২।]
ঈদ বলা হয়, যেখানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে ঐ স্থানের উদ্দেশ্যে মানুষ একত্র হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শির্কের মাধ্যম নিষিদ্ধ করার জন্য আরও যে সব বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,
তিন. আকীদা, ইবাদত, অভ্যাস, আচার, আচরণের ক্ষেত্রে মুশরিক ও আহলে কিতাবদের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করা থেকে সতর্ক করা:
এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«خالفوا المشركين»
“তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৯।]
তিনি আরো বলেন:
«خالفوا المجوس»
“তোমরা অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা কর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬০।]
তিনি আরও বলেন:
«خالفوا اليهود» .
“তোমরা ইয়াহুদীদের বিরোধিতা কর”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৫২।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শির্কের মাধ্যম নিষিদ্ধ করার জন্য আরও যে সব বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,
চার. প্রতিকৃতি, মূর্তি, ভাষ্কর্য ইত্যাদি থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা:
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলের নিকট একটি গির্জার কথা আলোচনা করলেন যেটি তিনি হাবশায় দেখেছিলেন। তার কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«أولئك إذا مات فيهم الرجل الصالح ، بنوا على قبره مسجداً، وصوروا فيه تلك الصور . أولئك شرار الخلق عند الله» .
তারা এমন লোক, যাদের কোনো ভালো লোক যখন মারা যেত তখন তারা তার কবরের উপর মাসজিদ বানাত এবং তারা তার প্রতিকৃতি, মূর্তি নির্মাণ করত। এরা আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪২৭; মুসলিম, হাদীস নং ৫২৮।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শির্কের মাধ্যম নিষিদ্ধ করার জন্য আরও যে সব বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,
পাঁচ. র্শিকী শব্দসমূহ থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা: যেমন,
গাইরুল্লাহর নামে শপথ করা:
কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«من حلف بغير الله فقد كفر أو أشرك»
“যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে সপথ করবে, সে কুফুরী বা শির্কে নিক্ষিপ্ত হবে।”। [তিরমিযী, হাদীস নং ১৫৩৫]
(আল্লাহ ও বান্দার) ইচ্ছার মধ্যে সমান সাব্যস্ত করা:
কারণ, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ما شاء الله وشئت “আল্লাহ যা চান এবং আপনি যা চান” বলেছিল, তাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, «أجعلتني لله نداً ! قل : ما شاء الله وحده» . “তুমি আমাকে আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করলে? তুমি বল শুধু আল্লাহ যা চান”। [নাসাঈ, হাদীস নং ৩৭৭৩]
কাওনী বা প্রকৃতি বা সৃষ্টিগত কোনো কর্মকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও দিকে সম্পর্কযু্ক্ত করা:
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ হাদীসে কুদসীতে বলেন:
«وأما من قال : مطرنا بنوء كذا وكذا، فذلك كافر بي، مؤمن بالكوكب»
“আর যে বলে, অমুক নক্ষত্র দ্বারা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছে, সে আমাকে অস্বীকার করল এবং নক্ষত্রে বিশ্বাস করল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৪৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শির্কের মাধ্যম নিষিদ্ধ করার জন্য আরও যে সব বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,
ছয়. শির্কী কর্ম-কাণ্ডসমূহ থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা: যেমন,
মুসীবত দূর করা বা তা প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে হাতে বা গলায় সূতা বা মাল্য পরিধান করা। কারণ,
ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«أن النبي صلى الله عليه وسلم رأى رجلاً في يده حلقة ، فقال : «ما هذا ؟» قال : من الواهنة . قال : «انزعها ! فإنها لا تزيدك إلا وهناً، فإنك لو مت وهي عليك ما أفلحت أبداً» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে দেখলেন, তার হাতের মধ্যে একটি গোলাকার সূতা বা রিং। তিনি বললেন, “এটি কি? বলল, এটি দুর্বলকারী রোগের কারণে লাগানো হয়েছে। তখন তিনি তাকে বললেন, “এটি খুলে ফেল, এটি তোমার কোনো উপকারে আসবে না বরং তোমার দুর্বলতা আরো বাড়িয়ে দেবে। আর যদি তুমি এ অবস্থায় মারা যাও তুমি কখনো সফল হবে না”। [আহমদ, হাদীস নং ২০০০০; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬০৮৫।]
বদ নজর ইত্যাদি থেকে বাচার উদ্দেশ্যে তা‘বিয ঝুলানো, গলায় হার লাগানো, পুঁথি লাগানো ও মালা লাগানো ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকা:
কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«من تعلق تميمة فلا أتم الله له، ومن تعلق ودعة فلا ودع الله له»
“যে ব্যক্তি তাবিযের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করলো মহান আল্লাহ তার জন্য কোনো পূর্ণতা দান করবেন না। আর যে ব্যক্তি গলায় কোনো বিপদ দূরকারী সূতা লাগালো মহান আল্লাহ তার বিপদ দূর করবেন না”। [আহমদ, হাদীস নং ১৭৪০৪; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬০৮৬; হাকিম, হাদীস নং ৪১৭।]
হাকিম ও আহমদের এক বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«من تعلق تميمة فقد أشرك»
“যে ব্যক্তি তাবিযের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করল সে শির্ক করল”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لا تبقين في بعير قلادة من وتر، أو قلادة، إلا قطعت» .
“তোমরা কোনো উটের গলায় কোনো সুতার হার অথবা কোনো হার কেটে ফেলা ছাড়া অবশিষ্ট কিছু রাখবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১১৫]
শির্ক সম্বলিত কথা-বার্তা দ্বারা ঝাড়, ফুঁক করা:
কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إن الرقى، والتمائم، والتولة شرك»
“ঝাড়-ফুঁক, তাবিয ও তিওয়ালা শির্ক”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৮৮৩। তবে শরী‘আত সম্মত ঝাঁড়-ফুক অন্য হাদীস দ্বারা এ ব্যাপক বিধান থেকে আলাদা করা হয়েছে। সুতরাং তা জায়েয। [সম্পাদক]]
‘তিওয়ালা’ বলা হয়, এমন কিছু করা যাকে তারা এ বলে বিশ্বাস করত যে, তা একজন নারীকে তার স্বামীর নিকট খুব প্রিয় বা অপ্রিয় বানিয়ে দেয়।
শির্কের স্থানে জবেহ করা:
কারণ, এক লোক বাওয়ানাহ নামক স্থানে জবেহ করার জন্য মান্নত করার পর সে স্থানে জবেহ করা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন,
«هل كان فيها وثن من أوثان الجاهلية يعبد؟» قالوا : لا . قال : «فهل كان فيها عيد من أعيادهم؟» قالوا : لا . فقال : «أوف بنذرك» .
“ঐ স্থানে জাহেলিয়্যাতের যুগে উপাসনা করা হতো এমন কোনো মুর্তি আছে কিনা? সে বলল, না, তিনি বললেন, সে স্থানে তাদের কোন ঈদ উদযাপন করা হতো কিনা? সে বলল, না, তখন তিনি বললেন, তুমি তোমার মান্নত পুরণ কর”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৩১৩]
শুভাশুভ নির্ণয়ের কুলক্ষণ নেওয়ার বিধান:
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ থেকে মারফূ‘ হাদীস বর্ণিত, তিনি বলেন:
«الطيرة شرك . الطيرة شرك» .
“কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শির্ক, কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শির্ক”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯১০; তিরমিযি, হাদীস নং ১৬১৪]
অর্থাৎ এ কথা দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আল্লাহ তা‘আলার রয়েছে সুন্দর নামসমূহ এবং মহৎ গুনাগুণ। মহান আল্লাহ তার স্বীয় কিতাবে নিজের জন্য যা সাব্যস্ত করেছেন এবং তার রাসূল স্বীয় সুন্নাতে আল্লাহর জন্য যে সব পরিপূর্ণতা ও মহত্বের গুণাগুণ সাব্যস্ত করেছেন তা কোনো প্রকার পদ্ধতি নির্ধারণ, ধরণ ও দৃষ্টান্ত ছাড়া তার জন্য সাব্যস্ত করা। আর মহান আল্লাহ স্বীয় কিতাবে এবং তার নাবী স্বীয় সুন্নাতে যে সব অপূর্ণতা, দোষ ও মাখলুকের সাদৃশ হওয়ার গুণাগুণকে নিজের জন্য নিষেধ করেছেন তা মহান আল্লাহ থেকে নিষেধ করা। আল্লাহর নাম ও গুণের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার বিকৃতি ও অকার্যকর করার নীতিও অবলম্বন করা যাবে না। মহান আল্লাহ এ বিষয়ে বলেন:
﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ وَذَرُواْ ٱلَّذِينَ يُلۡحِدُونَ فِيٓ أَسۡمَٰٓئِهِۦۚ سَيُجۡزَوۡنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٨٠﴾ [ الاعراف : ١٧٩ ]
“আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেওয়া হবে”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৭৯]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : ١١ ]
“তাঁর মতো কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
আল্লাহ তা‘লার নাম ও সিফাতসমূহ দলীল নির্ভর। এখানে যুক্তির কোনো স্থান নেই। মহান আল্লাহ তার নিজের সম্পর্কে অথবা তার রাসূল আল্লাহ সম্পর্কে যে সব গুণের বর্ণনা দিয়েছেন তা ছাড়া অন্য কোনো গুণে তাকে গুনান্বিত বা নামকরণ করা যাবে না। এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসকে অতিক্রম করার কোনো সুযোগ নেই। যে সব গুণাগুণ সম্পর্কে আল্লাহ ও তার রাসূল চুপ থেকেছেন, সে সব গুণাগুণ থেকে চুপ থাকা ওয়াজিব।
কোনো গুণকে আল্লাহর জন্য না করা ও সাব্যস্ত করা উভয় ক্ষেত্রে দলীল নির্ভর হতে হবে। আল্লাহর নাম ও গুণের বর্ণনাকারী থেকে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। যদি ভালো ও বিশুদ্ধ অর্থ উদ্দেশ্য হয়, তা গ্রহণ করা হবে এবং শব্দ প্রত্যাখান করা হবে। আর যদি অশুদ্ধ অর্থ উদ্দেশ্য হয়, তাহলে শব্দ ও অর্থ উভয়টি প্রত্যাখ্যান করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۚ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسُۡٔولٗا ٣٦﴾ [ الاسراء : ٣٦ ]
“আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ -এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে”। সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৬]
আল্লাহর নামসমূহের সৌন্দর্য্য অসীম ও তুলনাহীন। এ গুলো সবই আল্লাহর সত্ত্বার উপর নিদর্শন এবং তার গুণাগুণের বর্ণনা। আর আল্লাহর গুণসমূহ স্বয়ংসম্পন্ন ও পরিপূর্ণ।
কোনো দিক থেকে তার মধ্যে কোনো প্রকার খুঁত নেই। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَهُ ٱلۡمَثَلُ ٱلۡأَعۡلَىٰ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٢٧﴾ [ الروم : ٢٧ ]
“আসমান ও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ২৭]
আর তা সত্য। সুতরাং কোনো প্রকার বিকৃতি ছাড়া তার অর্থকে বাহ্যিক বা শাব্দিক অর্থের উপর প্রয়োগ করা ওয়াজিব। এগুলোর মধ্যে দৃষ্টান্ত বা অকার্যকর বানানো দ্বারা বিকৃতি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথবা যে নামে মহান আল্লাহ তার নিজের নাম রাখেন নি এমন কোনো নাম আল্লাহর জন্য সৃষ্টি করা অথবা আল্লাহর কোনো নামকে গাইরুল্লাহর জন্য প্রয়োগ করা সম্পূর্ণ হারাম।
কোনো কিছু চাওয়ার জন্য এবং তার ইবাদতের জন্য আল্লাহকে তার নামসমূহের মাধ্যমে ডাকা ওয়াজিব। আল্লাহর নামসমূহের সংরক্ষণ, মর্মার্থ অনুধাবন করা, এ সম্পর্কীয় বিভিন্ন বর্ণনায় চিন্তা-ফিকির করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা জরুরি। আর এ ধরণের ইলম হলো, সবচেয়ে সম্মানী ইলম।
﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ وَذَرُواْ ٱلَّذِينَ يُلۡحِدُونَ فِيٓ أَسۡمَٰٓئِهِۦۚ سَيُجۡزَوۡنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٨٠﴾ [ الاعراف : ١٧٩ ]
“আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেওয়া হবে”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৭৯]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : ١١ ]
“তাঁর মতো কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
আল্লাহ তা‘লার নাম ও সিফাতসমূহ দলীল নির্ভর। এখানে যুক্তির কোনো স্থান নেই। মহান আল্লাহ তার নিজের সম্পর্কে অথবা তার রাসূল আল্লাহ সম্পর্কে যে সব গুণের বর্ণনা দিয়েছেন তা ছাড়া অন্য কোনো গুণে তাকে গুনান্বিত বা নামকরণ করা যাবে না। এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসকে অতিক্রম করার কোনো সুযোগ নেই। যে সব গুণাগুণ সম্পর্কে আল্লাহ ও তার রাসূল চুপ থেকেছেন, সে সব গুণাগুণ থেকে চুপ থাকা ওয়াজিব।
কোনো গুণকে আল্লাহর জন্য না করা ও সাব্যস্ত করা উভয় ক্ষেত্রে দলীল নির্ভর হতে হবে। আল্লাহর নাম ও গুণের বর্ণনাকারী থেকে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। যদি ভালো ও বিশুদ্ধ অর্থ উদ্দেশ্য হয়, তা গ্রহণ করা হবে এবং শব্দ প্রত্যাখান করা হবে। আর যদি অশুদ্ধ অর্থ উদ্দেশ্য হয়, তাহলে শব্দ ও অর্থ উভয়টি প্রত্যাখ্যান করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۚ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسُۡٔولٗا ٣٦﴾ [ الاسراء : ٣٦ ]
“আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ -এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে”। সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৬]
আল্লাহর নামসমূহের সৌন্দর্য্য অসীম ও তুলনাহীন। এ গুলো সবই আল্লাহর সত্ত্বার উপর নিদর্শন এবং তার গুণাগুণের বর্ণনা। আর আল্লাহর গুণসমূহ স্বয়ংসম্পন্ন ও পরিপূর্ণ।
কোনো দিক থেকে তার মধ্যে কোনো প্রকার খুঁত নেই। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَهُ ٱلۡمَثَلُ ٱلۡأَعۡلَىٰ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٢٧﴾ [ الروم : ٢٧ ]
“আসমান ও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ২৭]
আর তা সত্য। সুতরাং কোনো প্রকার বিকৃতি ছাড়া তার অর্থকে বাহ্যিক বা শাব্দিক অর্থের উপর প্রয়োগ করা ওয়াজিব। এগুলোর মধ্যে দৃষ্টান্ত বা অকার্যকর বানানো দ্বারা বিকৃতি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথবা যে নামে মহান আল্লাহ তার নিজের নাম রাখেন নি এমন কোনো নাম আল্লাহর জন্য সৃষ্টি করা অথবা আল্লাহর কোনো নামকে গাইরুল্লাহর জন্য প্রয়োগ করা সম্পূর্ণ হারাম।
কোনো কিছু চাওয়ার জন্য এবং তার ইবাদতের জন্য আল্লাহকে তার নামসমূহের মাধ্যমে ডাকা ওয়াজিব। আল্লাহর নামসমূহের সংরক্ষণ, মর্মার্থ অনুধাবন করা, এ সম্পর্কীয় বিভিন্ন বর্ণনায় চিন্তা-ফিকির করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা জরুরি। আর এ ধরণের ইলম হলো, সবচেয়ে সম্মানী ইলম।
আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার দিক বিবেচনায় আল্লাহ তা‘আলার সিফাতসমূহ একাধিক ভাগে বিভক্ত:
এক- সত্তাগত সিফাত। এ ধরণের সিফাতগুলো তার পবিত্র সত্বা বা অস্তিত্বের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন, জীবন, শ্রবণ, দর্শন, ইলম, কুদরত, ইচ্ছা, হিকমত, শক্তি ইত্যাদি। এ ধরণের সিফাতগুলো আল্লাহর সত্বা থেকে পৃথক হয় না বা পৃথক হওয়ার কথা চিন্তা করা যায় না।
দুই- কর্মগত সিফাত। এ ধরণের সিফাতগুলো আল্লাহর ইচ্ছা ও হিকমতের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি তার মহা হিকমতের চাহিদা অনুযায়ী যখন চান, যেভাবে চান তা বাস্তবায়ন করেন। যেমন, উপরে উঠা, অবতরণ, মহব্বত, শত্রুতা, খুশি হওয়া, আশ্চর্য হওয়া, হাসা, আসা ইত্যাদি সিফাত, যেগুলোর বর্ণনা কুরআনে অথবা বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে।
এ ধরণের কতক সিফাতকে সত্বা বা অস্তিত্বের ও কর্মের সিফাত বলা যায়। যেমন কালাম বা কথা বলার গুণ বা সিফাত। মূল সিফাতের বিবেচনায় এ সিফাতটি স্বত্তাগত আবার একক ও অংশের দিক বিবেচনায় এটি কর্মগত সিফাত। (অর্থাৎ একক কোনো কোনো কথা ও বিশেষ কথা সময় ও অবস্থা অনুসারে হয়ে থাকে।) অথবা এটা বলা যাবে যে, এ ধরণের সিফাতের ধরণ কাদীম বা সর্বপ্রাচীন। কিন্তু তার কোনো কোনোটি পরবর্তীতে সংঘটিত হয়।
আবার কতক সিফাতকে খবরীয়্যাহ বলা হয়। আর তা হলো ঐ সব সিফাত যে গুলো প্রমাণিত হওয়ার একমাত্র উপায় শুধু (আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত) সংবাদ, বিবেক নয়। যেমন, চেহারা, দুই হাত, দুই চোখ, পা ইত্যাদি সিফাত যে গুলো সম্পর্কে বিশুদ্ধ সংবাদ রয়েছে।
এক- সত্তাগত সিফাত। এ ধরণের সিফাতগুলো তার পবিত্র সত্বা বা অস্তিত্বের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন, জীবন, শ্রবণ, দর্শন, ইলম, কুদরত, ইচ্ছা, হিকমত, শক্তি ইত্যাদি। এ ধরণের সিফাতগুলো আল্লাহর সত্বা থেকে পৃথক হয় না বা পৃথক হওয়ার কথা চিন্তা করা যায় না।
দুই- কর্মগত সিফাত। এ ধরণের সিফাতগুলো আল্লাহর ইচ্ছা ও হিকমতের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি তার মহা হিকমতের চাহিদা অনুযায়ী যখন চান, যেভাবে চান তা বাস্তবায়ন করেন। যেমন, উপরে উঠা, অবতরণ, মহব্বত, শত্রুতা, খুশি হওয়া, আশ্চর্য হওয়া, হাসা, আসা ইত্যাদি সিফাত, যেগুলোর বর্ণনা কুরআনে অথবা বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে।
এ ধরণের কতক সিফাতকে সত্বা বা অস্তিত্বের ও কর্মের সিফাত বলা যায়। যেমন কালাম বা কথা বলার গুণ বা সিফাত। মূল সিফাতের বিবেচনায় এ সিফাতটি স্বত্তাগত আবার একক ও অংশের দিক বিবেচনায় এটি কর্মগত সিফাত। (অর্থাৎ একক কোনো কোনো কথা ও বিশেষ কথা সময় ও অবস্থা অনুসারে হয়ে থাকে।) অথবা এটা বলা যাবে যে, এ ধরণের সিফাতের ধরণ কাদীম বা সর্বপ্রাচীন। কিন্তু তার কোনো কোনোটি পরবর্তীতে সংঘটিত হয়।
আবার কতক সিফাতকে খবরীয়্যাহ বলা হয়। আর তা হলো ঐ সব সিফাত যে গুলো প্রমাণিত হওয়ার একমাত্র উপায় শুধু (আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত) সংবাদ, বিবেক নয়। যেমন, চেহারা, দুই হাত, দুই চোখ, পা ইত্যাদি সিফাত যে গুলো সম্পর্কে বিশুদ্ধ সংবাদ রয়েছে।
এক- উঁচু বা উপরে থাকার গুণ: এ গুণটি তিন প্রকার: ক্ষমতার দিক থেকে উচ্চতা, সত্তার দিক থেকে উচ্চতা, পরাক্রমশীলতার দিক থেকে উচ্চতা; আল্লাহ সবকিছুর ঊর্ধ্বে, তার মাখলুকের কোনো মাখলুক তার ঊর্ধ্বে নয়। তিনি তার আসমানসমূহের উপর স্বীয় আরশের ঊর্ধ্বে রয়েছেন। তিনি তার মাখলুক বা সৃষ্টি থেকে আলাদা, তার মধ্যে তার সৃষ্টির কিছু নেই এবং তার মাখলুকের মধ্যে তার কোনো কিছুই নেই। এটি আল্লাহর একটি সত্বাগত গুণ।
দুই- ইস্তেওয়া বা উপরে উঠার সিফাত: অর্থাৎ মহান আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির পর স্বীয় আরশের ঊর্ধ্বে উঠেছেন। তিনি বাস্তবেই তার শান ও বড়ত্ব অনুযায়ী আরশের ঊর্ধ্বে অবস্থিত হয়েছেন। তার ঊর্ধ্বে উঠা ও থাকা মাখলুকের ঊর্ধ্বে উঠা বা থাকার মত নয়। বরং তা তার শান অনুযায়ী। এটি আল্লাহর কর্মগত গুণাগুণ।
তিন- কালাম বা কথা বলার সিফাত: অর্থাৎ মহান আল্লাহ অক্ষর ও স্বর দ্বারা বাস্তবেই কথা বলে থাকেন, তার কথা শোনা যায়। আল্লাহর কথা মাখলুকের কথার মতো নয়। তিনি যখন চান, যেভাবে চান, যা চান তা বলেন। তার কথা ইনসাফপূর্ণ ও সত্য। তার কথা কখনো শেষ হবে না। তিনি সর্বদা কথা বলার গুণে গুণান্বিত ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। এটি মূল বৈশিষ্ট্যের দিক বিবেচনায় আল্লাহর সত্বাগত সিফাত আর তার কোনো কোনোটি সিফাত বা গুণাগুণ অংশবিশেষ বিবেচনায় কর্মগত সিফাত।
উল্লিখিত সব ধরণের সিফাত বাস্তব ও সত্য। ফলে এগুলোর বর্ণনা যেভাবে এসেছে সেভাবে সাব্যস্ত করা, তার উপর ছেড়ে দেওয়া এবং তার কোনো প্রকার পদ্ধতি বর্ণনা করা ছাড়া প্রকাশ্য অর্থের উপর প্রয়োগ করা ওয়াজিব। এ মূলনীতিটি সমস্ত সিফাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং কোনো একটি সিফাতের ক্ষেত্রে কথা বলা মানে অন্য সব সিফাতের বিষয়ে কথা বলা, এতে কোনো পার্থক্য নেই। আর যে ব্যক্তি পার্থক্য করবে সে দলীল প্রমাণ ছাড়া কোনো একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিয়জিত হবে।
দুই- ইস্তেওয়া বা উপরে উঠার সিফাত: অর্থাৎ মহান আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির পর স্বীয় আরশের ঊর্ধ্বে উঠেছেন। তিনি বাস্তবেই তার শান ও বড়ত্ব অনুযায়ী আরশের ঊর্ধ্বে অবস্থিত হয়েছেন। তার ঊর্ধ্বে উঠা ও থাকা মাখলুকের ঊর্ধ্বে উঠা বা থাকার মত নয়। বরং তা তার শান অনুযায়ী। এটি আল্লাহর কর্মগত গুণাগুণ।
তিন- কালাম বা কথা বলার সিফাত: অর্থাৎ মহান আল্লাহ অক্ষর ও স্বর দ্বারা বাস্তবেই কথা বলে থাকেন, তার কথা শোনা যায়। আল্লাহর কথা মাখলুকের কথার মতো নয়। তিনি যখন চান, যেভাবে চান, যা চান তা বলেন। তার কথা ইনসাফপূর্ণ ও সত্য। তার কথা কখনো শেষ হবে না। তিনি সর্বদা কথা বলার গুণে গুণান্বিত ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। এটি মূল বৈশিষ্ট্যের দিক বিবেচনায় আল্লাহর সত্বাগত সিফাত আর তার কোনো কোনোটি সিফাত বা গুণাগুণ অংশবিশেষ বিবেচনায় কর্মগত সিফাত।
উল্লিখিত সব ধরণের সিফাত বাস্তব ও সত্য। ফলে এগুলোর বর্ণনা যেভাবে এসেছে সেভাবে সাব্যস্ত করা, তার উপর ছেড়ে দেওয়া এবং তার কোনো প্রকার পদ্ধতি বর্ণনা করা ছাড়া প্রকাশ্য অর্থের উপর প্রয়োগ করা ওয়াজিব। এ মূলনীতিটি সমস্ত সিফাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং কোনো একটি সিফাতের ক্ষেত্রে কথা বলা মানে অন্য সব সিফাতের বিষয়ে কথা বলা, এতে কোনো পার্থক্য নেই। আর যে ব্যক্তি পার্থক্য করবে সে দলীল প্রমাণ ছাড়া কোনো একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিয়জিত হবে।
একই কিবলার অধিবাসী অনেক মুসলিম জামা‘আত আল্লাহর নাম ও সিফাতসমূহের অধ্যায়ে পথভ্রষ্ট হয়েছেন। তারা হলো:
এক- আহলুত-তামসীল (মুমাসসিলা সম্প্রদায়) বা সাদৃশ্যবাদী: যারা সিফাত সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে বেশি বাড়াবাড়ি করার ফলে সাদৃশ্যবাদে পতিত হয়েছে। তাদের সংশয় হচ্ছে এই যে, তারা বলেন: “আমরা যা বলি এগুলোই হলো কুরআন ও হাদীসের বাণীর মর্মার্থ। কারণ, মহান আল্লাহ মানুষকে এমন কথা দ্বারা সম্বোধন করেন যেগুলো তার সৃষ্টি জগতের বা মাখলুকাতের মধ্যে সচরাচর বিদ্যমান।” (অর্থাৎ তারা বলেন, আমরা আল্লাহর গুণাগুণ সৃষ্টিকুলের গুণাগুণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ মনে করি)
এদের যুক্তি ও দাবির উত্তর একাধিক:
প্রথমত: মহান আল্লাহ নিজেই অকাট্য ও সু-স্পষ্ট আয়াত দ্বারা তার নিজেকে কোনো প্রকার দৃষ্টান্ত, সমকক্ষ ও শরীক হওয়া থেকে বিমুক্ত ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : ١١ ]
“তাঁর মতো কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
﴿فَلَا تَجۡعَلُواْ لِلَّهِ أَندَادٗا وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٢٢﴾ [ البقرة : ٢٢ ]
“সুতরাং তোমরা জেনে-বুঝে আল্লাহর জন্য সমকক্ষ নির্ধারণ করো না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২]
﴿وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ ٤﴾ [ الاخلاص : ٤ ]
“আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই”। [সূরা আল-ইখলাস, আয়াত: ৪]
আর আল্লাহর কথার মধ্যে পরস্পর বিরোধিতা কখনোই সম্ভব নয়। (সুতরাং আল্লাহর জন্য সাদৃশ্য সাব্যস্ত করা যাবে না)।
দ্বিতীয়ত: একজন স্বয়ং-সম্পন্ন সত্তা, ক্ষমতাধর স্রষ্টা ও উপাস্য অপর জন দুর্বল অসম্পন্ন, অক্ষম সৃষ্টি ও উপাসনাকারী এবং সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য উভয়ে এক রকম হওয়া কোনো সুস্থ জ্ঞান ও বিবেক কখনোই মেনে নিতে পারে না। যেমনি-ভাবে তার সত্তা অন্য সত্তাসমূহের অনুরূপ হয় না তেমনিভাবে তার সিফাতসমূহ অন্যান্য সিফাতের মত হয় না।
তৃতীয়ত: মূল অর্থের দিক থেকে মহান আল্লাহ বান্দাগণকে তারা যা বুঝতে সক্ষম তা দ্বারাই সম্বোধন করেছেন। মাখলুক ও খালেকের গুণাগুণের মাঝে সামগ্রিক অর্থে মিল হলেও উভয়ের হাকীকত ও পদ্ধতি এক হওয়াকে বাধ্য করে না। একাধিক মাখলুকের নাম এক হওয়া একজন অপরজনের মতো হওয়াকে সাব্যস্ত করে না। যেমন, কান, চোখ ও কুদরত শব্দগুলো। সুতরাং খালেক ও মাখলুকের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি যুক্তিযুক্ত। [ফলে খালেক যিনি স্রষ্টা তার শোনা বা দেখা একজন মাখলুকের শোনা বা দেখা কখনোই এক হবে না। উভয়ের দেখা বা শোনার মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য রয়েছে। -অনুবাদক]
দুই- আহলুত তা‘তীল (মু‘আত্তিলাহ সম্প্রদায়) বা নিষ্ক্রিয়বাদী: যারা আল্লাহর গুণাগুণ অস্বীকার করার বিষয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করার ফলে শূণ্যবাদে বা নিষ্ক্রিয়বাদে নিপতিত হয়েছে। তাদের প্রশ্ন হলো, কোনো সিফাতকে প্রমাণ করা দ্বারা সাদৃশ্য হওয়া বাধ্যতামূলক। কারণ, এ ধরণের সিফাত বা গুণাগুণ এমন, যেগুলো দ্বারা একজন মাখলুকও গুণান্বিত হয়। তাই খালেকের মধ্যে এসব গুণ থাকতে পারে না। এগুলো থেকে খালেককে বিমুক্ত ঘোষণা করা সুনির্দিষ্ট। তারা কোনো গুণে গুণান্বিত হওয়া ছাড়াই আল্লাহর অস্তিত্ব থাকাকে সাব্যস্ত করার চেষ্টা করে। কারামিতা বাতেনী সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের এ মতবাদের কট্টরপন্থী দল। যারা আল্লাহর জন্য দু’ বিপরীতমুখী সিফাত বা গুণাগুণ সাব্যস্ত করতেও নারাজ। (তারা আল্লাহর অস্তিত্ব আছে বা অস্তিত্ব নাই এর কোনোটিই মেনে নিতে চায় না।) তারপরের স্থান হলো, জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায়ের, যারা আল্লাহর নাম ও সিফাত উভয়কে অস্বীকার করে। তারপর রয়েছে মু‘তাযিলা সম্প্রদায়; যারা আল্লাহর নামসমূহকে স্বীকার করে, কিন্তু তারা সেসব নামের অন্তর্গত সিফাত বা গুণকে অস্বীকার করে।
এদের যুক্তি ও দাবির উত্তর একাধিক:
প্রথমত: প্রকাশ্য, সু-স্পষ্ট ও অকাট্য আয়াতসমূহে মহান আল্লাহ তার নিজের জন্য সিফাত সাব্যস্ত করেছেন এবং তিনি তা সাদৃশ্যতাকে অস্বীকার করার সাথে একত্র করে সিফাতের আলোচনা করেছেন। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : ١١ ]
“তাঁর মতো কিছু নেই, আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
আর আল্লাহ তা‘আলার কথা একটি অপরটির বিপরীত বা পরস্পরবিরোধী হওয়া অসম্ভব। (অর্থাৎ একই আয়াতে তিনি তাঁর সাদৃশ্য অস্বীকার করার সাথে সাথে তাঁর নিজের জন্য গুণাগুণ সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং সাদৃশ্য নিষেধ করা হবে কিন্তু গুণ সাব্যস্ত করা হবে। যদি তা না করা হয় তাহলে আল্লাহর আয়াতের অর্থ করা কঠিন।)
দ্বিতীয়ত: কোনো বস্তু কোনো না কোনো গুণে গুণান্বিত হওয়া ছাড়া শুধু তার অস্তিত্ব প্রমাণ করা কখনো সম্ভব নয়। বাস্তবে এ ধরণের কোনো কিছু পাওয়া যায় না, শুধুমাত্র মনে মনে ভাবা যায়। ফলে তাদের কথার পরিণতি হলো, স্রষ্টাকে অস্বীকার করা।
তৃতীয়ত: সামগ্রিক ও ব্যাপক শব্দসমূহ দ্বারা বর্ণিত গুণ কোনো একটি নির্দিষ্ট বস্তুর মধ্যে পাওয়া এ কথাকে বাধ্য করে না যে ঐ গুণটি হুবহু অপর একটি নির্ধারিত বস্তুর মধ্যে একই রকম হবে, বরং এ দুটি বস্তুর প্রতিটি ঐ ব্যাপক গুণটির একক গুণ হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ, গুণকে যখন কোনো বস্তুর সাথে সম্পৃক্ত করা হয় বা কোনো বস্তুর প্রতি সম্পর্কযুক্ত করা হয়, তখন বাস্তবে তা ব্যাপকতা হারিয়ে ফেলে এবং অন্যের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার বৈশিষ্ট্য থেকে দূরে সরে যায়।
তিন- আহলুত তা‘ওয়ীল (তাবীলপন্থী) বা অপব্যাখ্যাকারী: যারা এ বিশ্বাস করে যে, কুরআন ও হাদীসের প্রমাণ বা ভাষ্যসমূহ আল্লাহর জন্য সত্যিকার অর্থে বা বাস্তবে কোনো গুণ রয়েছে এমন কোনো প্রমাণ বহন করে না। ফলে তারা কুরআন ও হাদীসের প্রমাণ সমূহের ভিন্ন কোনো অর্থ তালাশ করতে থাকে যার উপর প্রমাণসমূহকে প্রয়োগ করা যায়। তখন তারা কোনো প্রকার বিশুদ্ধ দলীল (যদ্ধারা বাহ্যিক অর্থ থেকে অন্য অর্থের দিক ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে) ছাড়াই প্রমাণসমূহকে ভিন্ন অর্থের উপর প্রয়োগ করে। তারা তাদের এ ধরণের বিকৃতিকে প্রমাণসমূহের ব্যাখ্যা বলে আখ্যায়িত করে থাকে।
এদের যুক্তি ও দাবির উত্তরও একাধিক:
প্রথমত: মহান আল্লাহ তার মাখলুক থেকে তার নিজের সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত, অধিক সত্যবাদী এবং সুন্দর বাণীর অধিকারী। আর আল্লাহর রাসূল তার রব সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত, সু-স্পষ্টভাষী, সর্বোচ্চ সত্যবাদী এবং উম্মতের জন্য সবচেয়ে বেশি কল্যাণকামী। সুতরাং, আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর অপর ব্যক্তি কিভাবে বেশি বুঝতে সক্ষম হয় এবং তাদের বাণীকে গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট হওয়ার অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করে।
দ্বিতীয়ত: যে কোনো কথার ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, কথাকে তার বাস্তব অর্থের উপর প্রয়োগ করা। বাহ্যিক অর্থ থেকে রূপক অর্থ গ্রহণ করতে বাধ্য করে, এমন কোনো বিশুদ্ধ কোনো দলীল না পাওয়া পর্যন্ত কোনো কথাকে তার বাহ্যিক অর্থ থেকে রূপক অর্থের দিকে নিয়ে যাওয়া বিকৃত করারই নামান্তর; যা কোনোক্রমেই বৈধ নয়। আর আল্লাহর গুণবাচক এসব প্রমাণকে তার বাহ্যিক অর্থ থেকে অন্য অর্থে নিতে বাধ্য করার মত কোনো দলীল নেই। সুতরাং তা করা যাবে না।
তৃতীয়ত: আল্লাহর রাসূল আল্লাহর পক্ষ থেকে তার উপর যা কিছু নাযিল হয়েছে তা তিনি মানুষের জন্য বর্ণনা করেছেন এবং তাদের কাছে তিনি পুরোপুরি পৌঁছে দিয়েছেন। এ মহান অধ্যায়ের কোনো মনগড়া ও বানানো অর্থ যা এ সব বিকৃতকারীরা দাবী করছে, তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা না করে ছেড়ে যাবেন তা কখনোই সম্ভব নয়।
চার- আহলুত তাজহীল (জাহেল পন্থী) বা মূর্খতা অবলম্বনকারী: যারা বিশ্বাস করে যে, মহান আল্লাহ তার নিজের সম্পর্কে এবং তার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে যে সংবাদ দিয়েছেন সেসব কিছুর অর্থ অজ্ঞাত। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না এবং কারো জন্য তা জানার কোনো উপায় নেই। তারা তাদের নিজেদের মুফাওয়াযাহ( مفوضة ) বলে দাবী করে এবং তাদের পথ হলো, তাফবীয( التفويض ) সমর্পণ করা।
এদের যুক্তি ও দাবির উত্তর একাধিক:
প্রথমত: আল্লাহ সম্পর্কে জানার অধ্যায় যা দীনের অধ্যায়সমূহের সবচেয়ে মহান ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, তা আবদ্ধ করে রাখা বা তা জানার পথকে রুদ্ধ করে রাখা কোনো জ্ঞান বা প্রমাণ দ্বারা তা জানা যাবে না তা কখনোই সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত: মহান আল্লাহ সু-স্পষ্ট আরবী ভাষায় কুরআন নাযিল করেছেন এবং স্বীয় বান্দাদের তা বুঝতে এবং গবেষণা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনের কোন অংশ বাদ দেন নি। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, কুরআনের অর্থ বুঝা সম্ভব। কেবল ধরণ ও প্রকৃতির জ্ঞান হলো অদৃশ্য ও গাইবী বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত, যার জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত।
তৃতীয়ত: এ মতবাদ গ্রহণ করার অর্থ হচ্ছে, এ উম্মতের পূর্বসূরী যারা প্রথম যুগে অতিবাহিত হয়েছেন তাদেরকে নিরক্ষর, অজ্ঞ ও মূর্খ বলার চেষ্টা করা এবং তাদের সম্পর্কে এ কথা বলা যে, তারা কেবল পড়া ছাড়া আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে কিছুই জানতো না। আর এটা বলা যে, সিফাত সম্পর্কীয় আয়াতসমূহ কেবল চিত্র ও অক্ষরের মতো, যার কোনো গ্রহণ যোগ্য অর্থ নেই। (নাউযুবিল্লাহ)
এক- আহলুত-তামসীল (মুমাসসিলা সম্প্রদায়) বা সাদৃশ্যবাদী: যারা সিফাত সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে বেশি বাড়াবাড়ি করার ফলে সাদৃশ্যবাদে পতিত হয়েছে। তাদের সংশয় হচ্ছে এই যে, তারা বলেন: “আমরা যা বলি এগুলোই হলো কুরআন ও হাদীসের বাণীর মর্মার্থ। কারণ, মহান আল্লাহ মানুষকে এমন কথা দ্বারা সম্বোধন করেন যেগুলো তার সৃষ্টি জগতের বা মাখলুকাতের মধ্যে সচরাচর বিদ্যমান।” (অর্থাৎ তারা বলেন, আমরা আল্লাহর গুণাগুণ সৃষ্টিকুলের গুণাগুণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ মনে করি)
এদের যুক্তি ও দাবির উত্তর একাধিক:
প্রথমত: মহান আল্লাহ নিজেই অকাট্য ও সু-স্পষ্ট আয়াত দ্বারা তার নিজেকে কোনো প্রকার দৃষ্টান্ত, সমকক্ষ ও শরীক হওয়া থেকে বিমুক্ত ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : ١١ ]
“তাঁর মতো কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
﴿فَلَا تَجۡعَلُواْ لِلَّهِ أَندَادٗا وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٢٢﴾ [ البقرة : ٢٢ ]
“সুতরাং তোমরা জেনে-বুঝে আল্লাহর জন্য সমকক্ষ নির্ধারণ করো না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২]
﴿وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ ٤﴾ [ الاخلاص : ٤ ]
“আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই”। [সূরা আল-ইখলাস, আয়াত: ৪]
আর আল্লাহর কথার মধ্যে পরস্পর বিরোধিতা কখনোই সম্ভব নয়। (সুতরাং আল্লাহর জন্য সাদৃশ্য সাব্যস্ত করা যাবে না)।
দ্বিতীয়ত: একজন স্বয়ং-সম্পন্ন সত্তা, ক্ষমতাধর স্রষ্টা ও উপাস্য অপর জন দুর্বল অসম্পন্ন, অক্ষম সৃষ্টি ও উপাসনাকারী এবং সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য উভয়ে এক রকম হওয়া কোনো সুস্থ জ্ঞান ও বিবেক কখনোই মেনে নিতে পারে না। যেমনি-ভাবে তার সত্তা অন্য সত্তাসমূহের অনুরূপ হয় না তেমনিভাবে তার সিফাতসমূহ অন্যান্য সিফাতের মত হয় না।
তৃতীয়ত: মূল অর্থের দিক থেকে মহান আল্লাহ বান্দাগণকে তারা যা বুঝতে সক্ষম তা দ্বারাই সম্বোধন করেছেন। মাখলুক ও খালেকের গুণাগুণের মাঝে সামগ্রিক অর্থে মিল হলেও উভয়ের হাকীকত ও পদ্ধতি এক হওয়াকে বাধ্য করে না। একাধিক মাখলুকের নাম এক হওয়া একজন অপরজনের মতো হওয়াকে সাব্যস্ত করে না। যেমন, কান, চোখ ও কুদরত শব্দগুলো। সুতরাং খালেক ও মাখলুকের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি যুক্তিযুক্ত। [ফলে খালেক যিনি স্রষ্টা তার শোনা বা দেখা একজন মাখলুকের শোনা বা দেখা কখনোই এক হবে না। উভয়ের দেখা বা শোনার মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য রয়েছে। -অনুবাদক]
দুই- আহলুত তা‘তীল (মু‘আত্তিলাহ সম্প্রদায়) বা নিষ্ক্রিয়বাদী: যারা আল্লাহর গুণাগুণ অস্বীকার করার বিষয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করার ফলে শূণ্যবাদে বা নিষ্ক্রিয়বাদে নিপতিত হয়েছে। তাদের প্রশ্ন হলো, কোনো সিফাতকে প্রমাণ করা দ্বারা সাদৃশ্য হওয়া বাধ্যতামূলক। কারণ, এ ধরণের সিফাত বা গুণাগুণ এমন, যেগুলো দ্বারা একজন মাখলুকও গুণান্বিত হয়। তাই খালেকের মধ্যে এসব গুণ থাকতে পারে না। এগুলো থেকে খালেককে বিমুক্ত ঘোষণা করা সুনির্দিষ্ট। তারা কোনো গুণে গুণান্বিত হওয়া ছাড়াই আল্লাহর অস্তিত্ব থাকাকে সাব্যস্ত করার চেষ্টা করে। কারামিতা বাতেনী সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের এ মতবাদের কট্টরপন্থী দল। যারা আল্লাহর জন্য দু’ বিপরীতমুখী সিফাত বা গুণাগুণ সাব্যস্ত করতেও নারাজ। (তারা আল্লাহর অস্তিত্ব আছে বা অস্তিত্ব নাই এর কোনোটিই মেনে নিতে চায় না।) তারপরের স্থান হলো, জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায়ের, যারা আল্লাহর নাম ও সিফাত উভয়কে অস্বীকার করে। তারপর রয়েছে মু‘তাযিলা সম্প্রদায়; যারা আল্লাহর নামসমূহকে স্বীকার করে, কিন্তু তারা সেসব নামের অন্তর্গত সিফাত বা গুণকে অস্বীকার করে।
এদের যুক্তি ও দাবির উত্তর একাধিক:
প্রথমত: প্রকাশ্য, সু-স্পষ্ট ও অকাট্য আয়াতসমূহে মহান আল্লাহ তার নিজের জন্য সিফাত সাব্যস্ত করেছেন এবং তিনি তা সাদৃশ্যতাকে অস্বীকার করার সাথে একত্র করে সিফাতের আলোচনা করেছেন। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : ١١ ]
“তাঁর মতো কিছু নেই, আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
আর আল্লাহ তা‘আলার কথা একটি অপরটির বিপরীত বা পরস্পরবিরোধী হওয়া অসম্ভব। (অর্থাৎ একই আয়াতে তিনি তাঁর সাদৃশ্য অস্বীকার করার সাথে সাথে তাঁর নিজের জন্য গুণাগুণ সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং সাদৃশ্য নিষেধ করা হবে কিন্তু গুণ সাব্যস্ত করা হবে। যদি তা না করা হয় তাহলে আল্লাহর আয়াতের অর্থ করা কঠিন।)
দ্বিতীয়ত: কোনো বস্তু কোনো না কোনো গুণে গুণান্বিত হওয়া ছাড়া শুধু তার অস্তিত্ব প্রমাণ করা কখনো সম্ভব নয়। বাস্তবে এ ধরণের কোনো কিছু পাওয়া যায় না, শুধুমাত্র মনে মনে ভাবা যায়। ফলে তাদের কথার পরিণতি হলো, স্রষ্টাকে অস্বীকার করা।
তৃতীয়ত: সামগ্রিক ও ব্যাপক শব্দসমূহ দ্বারা বর্ণিত গুণ কোনো একটি নির্দিষ্ট বস্তুর মধ্যে পাওয়া এ কথাকে বাধ্য করে না যে ঐ গুণটি হুবহু অপর একটি নির্ধারিত বস্তুর মধ্যে একই রকম হবে, বরং এ দুটি বস্তুর প্রতিটি ঐ ব্যাপক গুণটির একক গুণ হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ, গুণকে যখন কোনো বস্তুর সাথে সম্পৃক্ত করা হয় বা কোনো বস্তুর প্রতি সম্পর্কযুক্ত করা হয়, তখন বাস্তবে তা ব্যাপকতা হারিয়ে ফেলে এবং অন্যের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার বৈশিষ্ট্য থেকে দূরে সরে যায়।
তিন- আহলুত তা‘ওয়ীল (তাবীলপন্থী) বা অপব্যাখ্যাকারী: যারা এ বিশ্বাস করে যে, কুরআন ও হাদীসের প্রমাণ বা ভাষ্যসমূহ আল্লাহর জন্য সত্যিকার অর্থে বা বাস্তবে কোনো গুণ রয়েছে এমন কোনো প্রমাণ বহন করে না। ফলে তারা কুরআন ও হাদীসের প্রমাণ সমূহের ভিন্ন কোনো অর্থ তালাশ করতে থাকে যার উপর প্রমাণসমূহকে প্রয়োগ করা যায়। তখন তারা কোনো প্রকার বিশুদ্ধ দলীল (যদ্ধারা বাহ্যিক অর্থ থেকে অন্য অর্থের দিক ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে) ছাড়াই প্রমাণসমূহকে ভিন্ন অর্থের উপর প্রয়োগ করে। তারা তাদের এ ধরণের বিকৃতিকে প্রমাণসমূহের ব্যাখ্যা বলে আখ্যায়িত করে থাকে।
এদের যুক্তি ও দাবির উত্তরও একাধিক:
প্রথমত: মহান আল্লাহ তার মাখলুক থেকে তার নিজের সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত, অধিক সত্যবাদী এবং সুন্দর বাণীর অধিকারী। আর আল্লাহর রাসূল তার রব সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত, সু-স্পষ্টভাষী, সর্বোচ্চ সত্যবাদী এবং উম্মতের জন্য সবচেয়ে বেশি কল্যাণকামী। সুতরাং, আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর অপর ব্যক্তি কিভাবে বেশি বুঝতে সক্ষম হয় এবং তাদের বাণীকে গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট হওয়ার অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করে।
দ্বিতীয়ত: যে কোনো কথার ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, কথাকে তার বাস্তব অর্থের উপর প্রয়োগ করা। বাহ্যিক অর্থ থেকে রূপক অর্থ গ্রহণ করতে বাধ্য করে, এমন কোনো বিশুদ্ধ কোনো দলীল না পাওয়া পর্যন্ত কোনো কথাকে তার বাহ্যিক অর্থ থেকে রূপক অর্থের দিকে নিয়ে যাওয়া বিকৃত করারই নামান্তর; যা কোনোক্রমেই বৈধ নয়। আর আল্লাহর গুণবাচক এসব প্রমাণকে তার বাহ্যিক অর্থ থেকে অন্য অর্থে নিতে বাধ্য করার মত কোনো দলীল নেই। সুতরাং তা করা যাবে না।
তৃতীয়ত: আল্লাহর রাসূল আল্লাহর পক্ষ থেকে তার উপর যা কিছু নাযিল হয়েছে তা তিনি মানুষের জন্য বর্ণনা করেছেন এবং তাদের কাছে তিনি পুরোপুরি পৌঁছে দিয়েছেন। এ মহান অধ্যায়ের কোনো মনগড়া ও বানানো অর্থ যা এ সব বিকৃতকারীরা দাবী করছে, তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা না করে ছেড়ে যাবেন তা কখনোই সম্ভব নয়।
চার- আহলুত তাজহীল (জাহেল পন্থী) বা মূর্খতা অবলম্বনকারী: যারা বিশ্বাস করে যে, মহান আল্লাহ তার নিজের সম্পর্কে এবং তার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে যে সংবাদ দিয়েছেন সেসব কিছুর অর্থ অজ্ঞাত। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না এবং কারো জন্য তা জানার কোনো উপায় নেই। তারা তাদের নিজেদের মুফাওয়াযাহ( مفوضة ) বলে দাবী করে এবং তাদের পথ হলো, তাফবীয( التفويض ) সমর্পণ করা।
এদের যুক্তি ও দাবির উত্তর একাধিক:
প্রথমত: আল্লাহ সম্পর্কে জানার অধ্যায় যা দীনের অধ্যায়সমূহের সবচেয়ে মহান ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, তা আবদ্ধ করে রাখা বা তা জানার পথকে রুদ্ধ করে রাখা কোনো জ্ঞান বা প্রমাণ দ্বারা তা জানা যাবে না তা কখনোই সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত: মহান আল্লাহ সু-স্পষ্ট আরবী ভাষায় কুরআন নাযিল করেছেন এবং স্বীয় বান্দাদের তা বুঝতে এবং গবেষণা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনের কোন অংশ বাদ দেন নি। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, কুরআনের অর্থ বুঝা সম্ভব। কেবল ধরণ ও প্রকৃতির জ্ঞান হলো অদৃশ্য ও গাইবী বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত, যার জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত।
তৃতীয়ত: এ মতবাদ গ্রহণ করার অর্থ হচ্ছে, এ উম্মতের পূর্বসূরী যারা প্রথম যুগে অতিবাহিত হয়েছেন তাদেরকে নিরক্ষর, অজ্ঞ ও মূর্খ বলার চেষ্টা করা এবং তাদের সম্পর্কে এ কথা বলা যে, তারা কেবল পড়া ছাড়া আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে কিছুই জানতো না। আর এটা বলা যে, সিফাত সম্পর্কীয় আয়াতসমূহ কেবল চিত্র ও অক্ষরের মতো, যার কোনো গ্রহণ যোগ্য অর্থ নেই। (নাউযুবিল্লাহ)
ফিরিশতাদের বিষয়ে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা:
প্রথমত: তারা আল্লাহর সম্মানিত বান্দা: তারা তাদের রবের প্রতি অনুগত এবং তারা সদা সর্বদা তাদের রবের সম্মান ও ভক্তির সহিত ভয়ে ভীত। তারা আল্লাহর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত অনুগত বান্দা। তাদের মধ্যে রবুবিয়্যত ও উলুহিয়্যাতের কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। মহান আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন:
﴿وَقَالُواْ ٱتَّخَذَ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَلَدٗاۗ سُبۡحَٰنَهُۥۚ بَلۡ عِبَادٞ مُّكۡرَمُونَ ٢٦ لَا يَسۡبِقُونَهُۥ بِٱلۡقَوۡلِ وَهُم بِأَمۡرِهِۦ يَعۡمَلُونَ ٢٧ يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡ وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ وَهُم مِّنۡ خَشۡيَتِهِۦ مُشۡفِقُونَ ٢٨﴾ [ الانبياء : ٢٦- ٢٨ ]
“আর তারা বলে, ‘পরম করুণাময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি পবিত্র বরং ফিরিশতাগণ [. বনূ খুযা‘আ দাবী করত, ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা। এ ভুল ধারণা দূর করতে আল্লাহ বলেন, ফিরিশতারা আল্লাহর সন্তান নয়; বরং তারা সম্মানিত বান্দা। আল-কাশ্শাফ] আল্লাহর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ও সম্মানিত বান্দা। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া কোন কথা বলে না, তাঁর নির্দেশেই তো তারা কাজ করে। অতীত কালের এবং ভবিষ্যৎ কালের সব কিছুই তিনি জানেন। আর তারা শুধু তাদের জন্যই সুপারিশ করে যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট। তারা তাঁর সম্মান ও ভক্তির সহিত ভয়ে ভীত [. ফিরিশতারা আল্লাহর ভয়ে সর্বদা ভীত থাকে।]”। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২৬-২৮]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَخَافُونَ رَبَّهُم مِّن فَوۡقِهِمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ۩ ٥٠﴾ [ النحل : ٥٠ ]
“তারা তাদের উপরস্থ রবকে ভয় করে এবং তাদেরকে যা নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা তা করে”। [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৫০]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦﴾ [ التحريم : ٦ ]
“আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়”। [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৬]
﴿كِرَامِۢ بَرَرَةٖ ١٦﴾ [ عبس : ١٦ ]
“যারা মহাসম্মানিত, আল্লাহর অনুগত”। [সূরা আবাসা, আয়াতদ: ১৬]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَيَوۡمَ يَحۡشُرُهُمۡ جَمِيعٗا ثُمَّ يَقُولُ لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ أَهَٰٓؤُلَآءِ إِيَّاكُمۡ كَانُواْ يَعۡبُدُونَ ٤٠ قَالُواْ سُبۡحَٰنَكَ أَنتَ وَلِيُّنَا مِن دُونِهِمۖ بَلۡ كَانُواْ يَعۡبُدُونَ ٱلۡجِنَّۖ أَكۡثَرُهُم بِهِم مُّؤۡمِنُونَ ٤١﴾ [ سبا : ٤٠، ٤١ ]
“আর স্মরণ কর, যেদিন তিনি তাদের সকলকে সমবেত করবেন তারপর ফিরিশতাদেরকে বলবেন: ‘এরা কি তোমাদেরই ইবাদত বা উপাসনা করত?’ তারা (ফিরিশতারা) বলবে, ‘আমরা আপনার পবিত্র ঘোষণা করি, আপনিই আমাদের অভিভাবক, তারা নয়, বরং তারা জিনদের ইবাদত বা উপাসনা করত। এদের অধিকাংশই তাদের প্রতি ঈমান রাখত”। [সূরা সাবা, আয়াত: ৪০, ৪১]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قَالُواْ سُبۡحَٰنَكَ لَا عِلۡمَ لَنَآ إِلَّا مَا عَلَّمۡتَنَآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَلِيمُ ٱلۡحَكِيمُ ٣٢﴾ [ البقرة : ٣٢ ]
“তারা বলল, ‘আমরা আপনার পবিত্র ঘোষণা করি। আপনি আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের কোনো জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৩২]
দ্বিতীয়ত: ফিরিশতারা নূর থেকে সৃষ্ট: বিশাল আকৃতির অধিকারী, বিশাল ডানা বিশিষ্ট এবং বিভিন্ন আকৃতির অধিকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«خلقت الملائكة من نور»
“ফিরিশতাদেরকে নূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৯৬]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ فَاطِرِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ جَاعِلِ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ رُسُلًا أُوْلِيٓ أَجۡنِحَةٖ مَّثۡنَىٰ وَثُلَٰثَ وَرُبَٰعَۚ يَزِيدُ فِي ٱلۡخَلۡقِ مَا يَشَآءُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ١﴾ [ فاطر : ١ ]
“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আসমানসমূহ ও জমিনের স্রষ্টা, ফিরিশতাদেরকে বাণীবাহকরূপে নিযুক্তকারী, যারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার পাখাবিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান”। [সূরা ফাতির, আয়াত: ১]
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
«رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم جبريل في صورته ، وله ستمائة جناح ، كل جناح منها قد سد الأفق ، يسقط من جناحه التهاويل من الدر واليواقيت»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল আলাইহিস সালামকে স্বীয় আকৃতিতে দেখেছেন। তার ছয়শত ডানা রয়েছে। তার প্রতিটি ডানা পৃথিবীর এক প্রান্তকে ডেকে ফেলছে। তার ডানা থেকে মণি মুক্তা দানা পড়তে থাকে”। [আহমদ, হাদীস নং ৩৭৪৮] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أذن لي أن أحدث عن أحد حملة العرش ، ما بين شحمة أذنه ، وعاتقه ، مسيرة سبعمائة عام»
“আরশ বহনকারী একজন ফিরিশতা সম্পর্কে বর্ণনা দিতে আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তার কানের লতি থেকে গর্দানের মাঝখানের জায়গাটির দূরত্ব সাতশত বছরের রাস্তা”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭২৭।]
তাবরানীর অপর এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন:
«أُذِنَ لِي أَنْ أُحَدِّثَ عَنْ مَلَكٍ مِنْ حَمَلَةِ الْعَرْشِ، رِجْلَاهُ فِي الْأَرْضِ السُّفْلَى، وَعَلَى قَرْنِهِ الْعَرْشُ، وَبَيْنَ شَحْمَةِ أُذُنِهِ وَعَاتِقِهِ خَفَقَانُ الطَّيْرِ سَبْعمِائَةِ سَنَةٍ، يَقُولُ الْمَلَكُ : سُبْحَانَكَ حَيْثُ كُنْتَ»
“আরশ বহনকারী একজন ফিরিশতা সম্পর্কে বর্ণনা দিতে আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তার পাদ্বয় নিম্নস্তরের জমিনে, তার শিংয়ের উপর রয়েছে তার ‘আরশ। আর তার কানের লতি ও তার গর্দানের মাঝখানের দূরত্ব দ্রুতগামী পাখীর সাতশত বছরের রাস্তা। [বর্ণনায় তাবরানী, হাদীস নং ৬৫০৩ (এই হাদিসটি দুর্বল, তবে আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন, নিরীক্ষক: ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ )।] সে বলে আপনি যেখানেই থাকেন না কেন, আমি আপনার পবিত্র ঘোষণা করি।
ফিরিশতারা বাস্তব মাখলুক, তারা কোনো আধ্যাত্মিক শক্তি নয়। যেমনটি কতক ধারণাকারী মনে করে থাকে। তারা অসংখ্য মাখলুক। তাদের সংখ্যা কত তা তাদের স্রষ্টা ছাড়া আর কেউ জানে না।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে মি‘রাজের ঘটনায় আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে:
«أن النبي صلى الله عليه وسلم ، رفع له البيت المعمور، في السماء السابعة ، يصلي فيه كل يوم سبعون ألف ملك ، إذا خرجوا لم يعودوا إليه ، آخر ما عليهم»
“সপ্তম আসমানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে বাইতুল মা‘মুর তুলে ধরা হয়েছিল, প্রতিদিন সত্তর হাজার ফিরিশতা তাতে নামাজ আদায় করেন। সেখান থেকে তারা যখন নামাজ আদায় করে বের হয়, তখন তারা শেষ পর্যন্ত আর কোনো দিন দ্বিতীয়বার সেখানে ফিরে আসার সুযোগ পায় না”। [বর্ণনায় মুসলিম, হাদীস নং ১৬৪]
তৃতীয়ত: ফিরিশতারা কাতারবন্দী ও তাছবীহরত: মহান আল্লাহ তাদের তাঁর তাসবীহ সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন এবং তার আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। আর তিনি তাদের তা বাস্তবায়নের শক্তি দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَا مِنَّآ إِلَّا لَهُۥ مَقَامٞ مَّعۡلُومٞ ١٦٤ وَإِنَّا لَنَحۡنُ ٱلصَّآفُّونَ ١٦٥ وَإِنَّا لَنَحۡنُ ٱلۡمُسَبِّحُونَ ١٦٦﴾ [ الصافات : ١٦٤- ١٦٦ ]
ফিরিশতারা বলেন: “আমাদের [এটা ফিরিশতাদের বক্তব্য।] প্রত্যেকের জন্যই আসমানে মহান আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা করার জন্য একটি নির্ধারিতস্থান [ مقام অর্থ: স্থান, মর্যাদা, ইত্যাদি।] রয়েছে। আর অবশ্যই আমরা সারিবদ্ধ হয়ে মহান আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা করি। আর আমরা অবশ্যই মহান আল্লাহর পবিত্র ঘোষণা করি।” [সূরা আস-সাফ্ফাত, আয়াত: ১৬৪ - ১৬৬]
﴿وَلَهُۥ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَمَنۡ عِندَهُۥ لَا يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِهِۦ وَلَا يَسۡتَحۡسِرُونَ ١٩ يُسَبِّحُونَ ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَ لَا يَفۡتُرُونَ ٢٠﴾ [ الانبياء : ١٩، ٢٠ ]
“আর আসমান-জমিনে যারা আছে তারা সবাই তাঁর; আর তাঁর কাছে যারা আছে তারা অহঙ্কারবশতঃ তাঁর ইবাদাত থেকে বিমুখ হয় না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না। তারা দিন-রাত তাঁর তাসবীহ পাঠ করে, তারা শিথিলতা দেখায় না”। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১৯, ২০]
হাকীম ইবন হিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের মাঝে অবস্থান করছিলেন, তখন তিনি তাদের বললেন,
«أتسمعون ما أسمع ؟ قالوا : ما نسمع من شيء ؟ قال : إني لأسمع أطيط السماء، وما تلام أن تئط، وما فيها موضع شبر إلا وعليه ملك ساجد أو قائم»
“আমি যা শুনি তোমরা কি তা শোন? তারা বলল, না আমরা কিছুই শুনি না। তিনি বললেন, আমি আসমানের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। যদিও তার শব্দ হওয়া দোষণীয় নয়। আসমানে এমন এক বিঘত পরিমাণ জায়াগাও নেই যেখানে একজন ফিরিশতা হয় সাজদা অবস্থায় অথবা কিয়াম অবস্থায় নেই।” [হাদীসটি তাবরানী বর্ণনা করেন, আর আলবানী রহ. বলেন, মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী তা সহীহ।]।
চতুর্থত: ফিরিশতাগণ লোক চক্ষুর অন্তরালে অবস্থানকারী: তারা গায়েবী জগতের অধিবাসী। দুনিয়ার জীবনে মানব ইন্দ্রীয় দ্বারা তাদের সাক্ষাত লাভ করা যায় না। তবে আল্লাহ যাকে তাওফীক দেন তার কথা ভিন্ন। যেমন, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল আলাইহিস সালামকে মহান আল্লাহ যে আকৃতিতে তাকে সৃষ্টি করেছেন সে আকৃতিতে দেখেছেন, তবে ফিরিশতাদের আখিরাতে অবশ্যই দেখা যাবে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَوۡمَ يَرَوۡنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةَ لَا بُشۡرَىٰ يَوۡمَئِذٖ لِّلۡمُجۡرِمِينَ وَيَقُولُونَ حِجۡرٗا مَّحۡجُورٗا ٢٢﴾ [ الفرقان : ٢٢ ]
“যেদিন তারা ফিরিশতাদের দেখবে, সেদিন অপরাধীদের জন্য কোনো সু-সংবাদ থাকবে না। আর তারা বলবে, ‘হায় কোনো বাধা যদি তা আটকে রাখত’’। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২২]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَدۡخُلُونَ عَلَيۡهِم مِّن كُلِّ بَابٖ ٢٣﴾ [ الرعد : ٢٣ ]
“আর ফিরিশতারা প্রতিটি দরজা দিয়ে তাদের নিকট প্রবেশ করবে”। [সূরা আর-রা‘আদ, আয়াত: ২৩] তবে মহান আল্লাহ ফিরিশতাদেরকে মানুষের আকৃতি ও রূপ ধারণ করার ক্ষমতা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَأَرۡسَلۡنَآ إِلَيۡهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرٗا سَوِيّٗا ١٧﴾ [ مريم : ١٧ ]
“তখন আমি তার নিকট আমার (কাছ থেকে) রূহ (জিবরীল)-কে প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর সে তার সামনে পূর্ণ মানবের রূপ ধারণ করেছিল”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ১৭ ]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَقَدۡ جَآءَتۡ رُسُلُنَآ إِبۡرَٰهِيمَ بِٱلۡبُشۡرَىٰ قَالُواْ سَلَٰمٗاۖ قَالَ سَلَٰمٞۖ فَمَا لَبِثَ أَن جَآءَ بِعِجۡلٍ حَنِيذٖ ٦٩ فَلَمَّا رَءَآ أَيۡدِيَهُمۡ لَا تَصِلُ إِلَيۡهِ نَكِرَهُمۡ وَأَوۡجَسَ مِنۡهُمۡ خِيفَةٗۚ قَالُواْ لَا تَخَفۡ إِنَّآ أُرۡسِلۡنَآ إِلَىٰ قَوۡمِ لُوطٖ ٧٠ ﴾ [ هود : ٦٩، ٧٠ ]
“আর অবশ্যই আমার ফিরিশতারা সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীমের কাছে আসল, তারা বলল: আপনার প্রতি শান্তি অবতীর্ণ হোক । তিনি বললেন: আপনাদের প্রতি শান্তি অবতীর্ণ হোক । বিলম্ব না করে সে একটি ভুনা গো বাছুর নিয়ে আসল। অতঃপর যখন সে দেখতে পেল, তাদের হাত আহার্য্যের দিকে প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তিনি তাদেরকে অস্বাভাবিক মনে করে তাদের সম্পর্কে ভয় অনুভব করল। তারা বলল, ‘ভয় করো না, নিশ্চয় আমরা লূতের কওমের প্রতি প্রেরিত হয়েছি’’। [সূরা হূদ, আয়াত: ৬৯, ৭০]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَمَّا جَآءَتۡ رُسُلُنَا لُوطٗا سِيٓءَ بِهِمۡ وَضَاقَ بِهِمۡ ذَرۡعٗا وَقَالَ هَٰذَا يَوۡمٌ عَصِيبٞ ٧٧ وَجَآءَهُۥ قَوۡمُهُۥ يُهۡرَعُونَ إِلَيۡهِ وَمِن قَبۡلُ كَانُواْيَعۡمَلُونَ ٱلسَّئَِّاتِۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ هَٰٓؤُلَآءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطۡهَرُ لَكُمۡۖ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُخۡزُونِ فِي ضَيۡفِيٓۖ أَلَيۡسَ مِنكُمۡ رَجُلٞ رَّشِيدٞ ٧٨﴾ [ هود : ٧٧، ٧٨ ]
“আর যখন লূতের কাছে আমার ফিরিশতা আসল, তখন তাদের (আগমনের) কারণে তার অস্বস্তিবোধ হলো এবং তার অন্তর খুব সঙ্কুচিত হয়ে গেল। আর সে বলল, ‘এ তো কঠিন দিন’। আর তার কওম তার কাছে ছুটে আসল এবং ইতোপূর্বে তারা মন্দ কাজ করত। সে বলল, ‘হে আমার কওম, এরা আমার মেয়ে, তারা তোমাদের জন্য পবিত্র। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার মেহমানদের ব্যাপারে তোমরা আমাকে অপমানিত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কোনো সুবোধ ব্যক্তি নেই’?। [সূরা হূদ, আয়াত: ৭৭, ৭৮] এই সমস্ত ফিরিশতা ছিল পুরুষদের আকৃতিতে।
অনুরূপ জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন একজন অপরিচিত লোকের আকৃতিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসেন। তার কাপড় ছিল ধবধবে সাদা এবং মাথার চুল ছিল কুছকুছে কালো। আবার কোনো সময় তিনি সাহাবী দিহয়া আল-কালবী রাদিয়াল্লাহু আনহু-র আকৃতিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসতেন।
পঞ্চমত: তারা বিভিন্ন ধরণেরকর্ম সম্পাদনের দায়িত্বে নিয়োজিত: তারা তাদের মূল দায়িত্ব অর্থাৎ সব সময় রবের ইবাদত ও তাছবীহ পড়ায় লিপ্ত থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে থাকেন। যেমন—
এক. অহী নিয়ে আসা: এটি জিবরীল আলাইহিস সালামের দায়িত্ব: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلۡ نَزَّلَهُۥ رُوحُ ٱلۡقُدُسِ مِن رَّبِّكَ بِٱلۡحَقِّ لِيُثَبِّتَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَهُدٗى وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ ١٠٢﴾ [ النحل : ١٠٢ ]
“বল, রুহুল কুদস (জিবরীল) একে তোমার রবের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে নাযিল করেছেন। যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং হিদায়াত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১০২]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَإِنَّهُۥ لَتَنزِيلُ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٩٢ نَزَلَ بِهِ ٱلرُّوحُ ٱلۡأَمِينُ ١٩٣ عَلَىٰ قَلۡبِكَ لِتَكُونَ مِنَ ٱلۡمُنذِرِينَ ١٩٤﴾ [ الشعراء : ١٩٢، ١٩٤ ]
“আর নিশ্চয় এ কুরআন সৃষ্টিকুলের রবেরই নাযিলকৃত। বিশ্বস্ত আত্মা [এখানে ‘বিশ্বস্ত আত্মা’ দ্বারা জিবরীল (আঃ) কে বুঝানো হয়েছে।] এটা নিয়ে অবতরণ করেছে। তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হও”। [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ১৯২, ১৯৪]
দুই. গর্ভজাত শিশুর দেখা শোনা করা: তার রুহ প্রদান করা, তার রিযিক, হায়াত-মওত, কর্ম ও নেক না বদকার তা লিপিবদ্ধ করা।
তিন. আদম সন্তানদের হিফাযত করা: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَهُۥ مُعَقِّبَٰتٞ مِّنۢ بَيۡنِ يَدَيۡهِ وَمِنۡ خَلۡفِهِۦ يَحۡفَظُونَهُۥ مِنۡ أَمۡرِ ٱللَّهِۗ ١١﴾ [ الرعد : ١١ ]
“মানুষের জন্য রয়েছে, সামনে ও পেছনে, একের পর এক আগমনকারী প্রহরী, যারা আল্লাহর নির্দেশে তাকে হেফাযত করে”। [সূরা আর-রা‘আদ, আয়াত: ১১]
চার. আদম সন্তানের আমলের সংরক্ষণ করা: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِذۡ يَتَلَقَّى ٱلۡمُتَلَقِّيَانِ عَنِ ٱلۡيَمِينِ وَعَنِ ٱلشِّمَالِ قَعِيدٞ ١٧ مَّا يَلۡفِظُ مِن قَوۡلٍ إِلَّا لَدَيۡهِ رَقِيبٌ عَتِيدٞ ١٨﴾ [ق: ١٧، ١٨ ]
“যখন ডানে ও বামে বসা দু’জন লিপিবদ্ধকারী পরস্পর গ্রহণ করবে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে তার কাছে সদা উপস্থিত সংরক্ষণকারী রয়েছে”। [সূরা ক্বাফ, আয়াত: ১৭, ১৮]
পাঁচ. মুমিনদের অবিচল রাখা ও সাহায্য করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِذۡ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ أَنِّي مَعَكُمۡ فَثَبِّتُواْ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْۚ سَأُلۡقِي فِي قُلُوبِ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ٱلرُّعۡبَ فَٱضۡرِبُواْ فَوۡقَ ٱلۡأَعۡنَاقِ وَٱضۡرِبُواْ مِنۡهُمۡ كُلَّ بَنَانٖ ١٢﴾ [ الانفال : ١٢ ]
“স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফিরিশতাদের প্রতি অহী প্রেরণ করেন যে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে আছি। সুতরাং যারা ঈমান এনেছে তোমরা তাদেরকে অনড় রাখ’। অচিরেই আমি ভীতি ঢেলে দেব তাদের হৃদয়ে যারা কুফুরী করেছে। অতএব তোমরা আঘাত কর ঘাড়ের উপরে এবং আঘাত কর তাদের প্রত্যেক আঙুলের অগ্রভাগে”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ১২]
ছয়. মানুষের রুহসমূহ কবয করা: এটি মালাকুল মাওত ফিরিশতার দায়িত্ব। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلۡ يَتَوَفَّىٰكُم مَّلَكُ ٱلۡمَوۡتِ ٱلَّذِي وُكِّلَ بِكُمۡ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُمۡ تُرۡجَعُونَ ١١﴾ [ السجدة : ١١ ]
“বল, ‘তোমাদেরকে মৃত্যু দেবে মৃত্যুর ফিরিশতা, যাকে তোমাদের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। তারপর তোমাদের রবের নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে’’। [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১১]
সাত. মুনকার ও নাকীর দুই ফিরিশতার দায়িত্ব হলো, কবরে মানুষকে তার রব, দীন ও নাবী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা:
আট. শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া: এটি দায়িত্ব হলো, ইসরাফিল আলাইহিস সালামের। তিনি বেহুঁশ করে মৃত্যু দেওয়ার জন্য ও পুণরুত্থানের জন্য শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُۖ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخۡرَىٰ فَإِذَا هُمۡ قِيَامٞ يَنظُرُونَ ٦٨﴾ [ الزمر : ٦ 8]
“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই মৃত্যুবরণ করবে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬8]
নয়. জাহান্নামের পাহারা দেওয়া: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَا جَعَلۡنَآ أَصۡحَٰبَ ٱلنَّارِ إِلَّا مَلَٰٓئِكَةٗۖ ٣١﴾ [ المدثر : ٣١ ]
“আর আমি ফিরিশতাদেরকেই জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক বানিয়েছি”। [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৩১]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَنَادَوۡاْ يَٰمَٰلِكُ لِيَقۡضِ عَلَيۡنَا رَبُّكَۖ قَالَ إِنَّكُم مَّٰكِثُونَ ٧٧﴾ [ الزخرف : ٧٧ ]
“তারা চিৎকার করে বলবে, ‘হে মালিক, তোমার রব যেন আমাদেরকে শেষ করে দেন’। সে বলবে, ‘নিশ্চয় তোমরা অবস্থানকারী’’। [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৭৭]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦﴾ [ التحريم : ٦ ]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর। যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফিরিশতাকূল, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়”। [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৬]
দশ. মুমিনদের জন্য ক্ষমা চাওয়া, দো‘আ করা, সু-সংবাদ দেওয়া ও জান্নাতে তাদের সম্মান করা: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ٱلَّذِينَ يَحۡمِلُونَ ٱلۡعَرۡشَ وَمَنۡ حَوۡلَهُۥ يُسَبِّحُونَ بِحَمۡدِ رَبِّهِمۡ وَيُؤۡمِنُونَ بِهِۦ وَيَسۡتَغۡفِرُونَ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْۖ رَبَّنَا وَسِعۡتَ كُلَّ شَيۡءٖ رَّحۡمَةٗ وَعِلۡمٗا فَٱغۡفِرۡ لِلَّذِينَ تَابُواْ وَٱتَّبَعُواْ سَبِيلَكَ وَقِهِمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ ٧ رَبَّنَا وَأَدۡخِلۡهُمۡ جَنَّٰتِ عَدۡنٍ ٱلَّتِي وَعَدتَّهُمۡ وَمَن صَلَحَ مِنۡ ءَابَآئِهِمۡ وَأَزۡوَٰجِهِمۡ وَذُرِّيَّٰتِهِمۡۚ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٨ وَقِهِمُ ٱلسَّئَِّاتِۚ وَمَن تَقِ ٱلسَّئَِّاتِ يَوۡمَئِذٖ فَقَدۡ رَحِمۡتَهُۥۚ وَذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ٩﴾ [ غافر : ٧، ٩ ]
“যারা আরশকে ধারণ করে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করে এবং তাঁর প্রতি ঈমান রাখে। আর মুমিনদের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলে যে, ‘হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব, যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন’। ‘হে আমাদের রব, আর আপনি তাদেরকে স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করান, যার ওয়াদা আপনি তাদেরকে দিয়েছেন। আর তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নি ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে তাদেরকেও। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়।’ ‘আর আপনি তাদের অপরাধের আযাব হতে রক্ষা করুন এবং সেদিন আপনি যাকে অপরাধের আযাব থেকে রক্ষা করবেন, অবশ্যই তাকে অনুগ্রহ করবেন। আর এটিই মহাসাফল্য”। [সূরা গাফের, আয়াত: ৭, ৯]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠﴾ [ فصلت : ٣٠ ]
“নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অতঃপর অবিচল থাকে, ফিরিশতারা তাদের কাছে নাযিল হয় (এবং বলে) ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেওয়া হয়েছিল’’। [সূরা আল-ফুস্সিলাত, আয়াত: ৩০]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَدۡخُلُونَ عَلَيۡهِم مِّن كُلِّ بَابٖ ٢٣ سَلَٰمٌ عَلَيۡكُم بِمَا صَبَرۡتُمۡۚ فَنِعۡمَ عُقۡبَى ٱلدَّارِ ٢٤﴾ [ الرعد : ٢٣، ٢٤ ]
“আর ফিরিশতারা প্রতিটি দরজা দিয়ে তাদের নিকট প্রবেশ করবে। (আর বলবে) ‘শান্তি তোমাদের উপর, কারণ তোমরা সবর করেছ, আর আখিরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম’’। [সূরা আর-রা‘আদ, আয়াত: ২৩, ২৪]
প্রথমত: তারা আল্লাহর সম্মানিত বান্দা: তারা তাদের রবের প্রতি অনুগত এবং তারা সদা সর্বদা তাদের রবের সম্মান ও ভক্তির সহিত ভয়ে ভীত। তারা আল্লাহর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত অনুগত বান্দা। তাদের মধ্যে রবুবিয়্যত ও উলুহিয়্যাতের কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। মহান আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন:
﴿وَقَالُواْ ٱتَّخَذَ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَلَدٗاۗ سُبۡحَٰنَهُۥۚ بَلۡ عِبَادٞ مُّكۡرَمُونَ ٢٦ لَا يَسۡبِقُونَهُۥ بِٱلۡقَوۡلِ وَهُم بِأَمۡرِهِۦ يَعۡمَلُونَ ٢٧ يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡ وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ وَهُم مِّنۡ خَشۡيَتِهِۦ مُشۡفِقُونَ ٢٨﴾ [ الانبياء : ٢٦- ٢٨ ]
“আর তারা বলে, ‘পরম করুণাময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি পবিত্র বরং ফিরিশতাগণ [. বনূ খুযা‘আ দাবী করত, ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা। এ ভুল ধারণা দূর করতে আল্লাহ বলেন, ফিরিশতারা আল্লাহর সন্তান নয়; বরং তারা সম্মানিত বান্দা। আল-কাশ্শাফ] আল্লাহর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ও সম্মানিত বান্দা। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া কোন কথা বলে না, তাঁর নির্দেশেই তো তারা কাজ করে। অতীত কালের এবং ভবিষ্যৎ কালের সব কিছুই তিনি জানেন। আর তারা শুধু তাদের জন্যই সুপারিশ করে যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট। তারা তাঁর সম্মান ও ভক্তির সহিত ভয়ে ভীত [. ফিরিশতারা আল্লাহর ভয়ে সর্বদা ভীত থাকে।]”। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২৬-২৮]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَخَافُونَ رَبَّهُم مِّن فَوۡقِهِمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ۩ ٥٠﴾ [ النحل : ٥٠ ]
“তারা তাদের উপরস্থ রবকে ভয় করে এবং তাদেরকে যা নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা তা করে”। [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৫০]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦﴾ [ التحريم : ٦ ]
“আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়”। [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৬]
﴿كِرَامِۢ بَرَرَةٖ ١٦﴾ [ عبس : ١٦ ]
“যারা মহাসম্মানিত, আল্লাহর অনুগত”। [সূরা আবাসা, আয়াতদ: ১৬]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَيَوۡمَ يَحۡشُرُهُمۡ جَمِيعٗا ثُمَّ يَقُولُ لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ أَهَٰٓؤُلَآءِ إِيَّاكُمۡ كَانُواْ يَعۡبُدُونَ ٤٠ قَالُواْ سُبۡحَٰنَكَ أَنتَ وَلِيُّنَا مِن دُونِهِمۖ بَلۡ كَانُواْ يَعۡبُدُونَ ٱلۡجِنَّۖ أَكۡثَرُهُم بِهِم مُّؤۡمِنُونَ ٤١﴾ [ سبا : ٤٠، ٤١ ]
“আর স্মরণ কর, যেদিন তিনি তাদের সকলকে সমবেত করবেন তারপর ফিরিশতাদেরকে বলবেন: ‘এরা কি তোমাদেরই ইবাদত বা উপাসনা করত?’ তারা (ফিরিশতারা) বলবে, ‘আমরা আপনার পবিত্র ঘোষণা করি, আপনিই আমাদের অভিভাবক, তারা নয়, বরং তারা জিনদের ইবাদত বা উপাসনা করত। এদের অধিকাংশই তাদের প্রতি ঈমান রাখত”। [সূরা সাবা, আয়াত: ৪০, ৪১]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قَالُواْ سُبۡحَٰنَكَ لَا عِلۡمَ لَنَآ إِلَّا مَا عَلَّمۡتَنَآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَلِيمُ ٱلۡحَكِيمُ ٣٢﴾ [ البقرة : ٣٢ ]
“তারা বলল, ‘আমরা আপনার পবিত্র ঘোষণা করি। আপনি আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের কোনো জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৩২]
দ্বিতীয়ত: ফিরিশতারা নূর থেকে সৃষ্ট: বিশাল আকৃতির অধিকারী, বিশাল ডানা বিশিষ্ট এবং বিভিন্ন আকৃতির অধিকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«خلقت الملائكة من نور»
“ফিরিশতাদেরকে নূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৯৬]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ فَاطِرِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ جَاعِلِ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ رُسُلًا أُوْلِيٓ أَجۡنِحَةٖ مَّثۡنَىٰ وَثُلَٰثَ وَرُبَٰعَۚ يَزِيدُ فِي ٱلۡخَلۡقِ مَا يَشَآءُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ١﴾ [ فاطر : ١ ]
“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আসমানসমূহ ও জমিনের স্রষ্টা, ফিরিশতাদেরকে বাণীবাহকরূপে নিযুক্তকারী, যারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার পাখাবিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান”। [সূরা ফাতির, আয়াত: ১]
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
«رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم جبريل في صورته ، وله ستمائة جناح ، كل جناح منها قد سد الأفق ، يسقط من جناحه التهاويل من الدر واليواقيت»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল আলাইহিস সালামকে স্বীয় আকৃতিতে দেখেছেন। তার ছয়শত ডানা রয়েছে। তার প্রতিটি ডানা পৃথিবীর এক প্রান্তকে ডেকে ফেলছে। তার ডানা থেকে মণি মুক্তা দানা পড়তে থাকে”। [আহমদ, হাদীস নং ৩৭৪৮] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أذن لي أن أحدث عن أحد حملة العرش ، ما بين شحمة أذنه ، وعاتقه ، مسيرة سبعمائة عام»
“আরশ বহনকারী একজন ফিরিশতা সম্পর্কে বর্ণনা দিতে আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তার কানের লতি থেকে গর্দানের মাঝখানের জায়গাটির দূরত্ব সাতশত বছরের রাস্তা”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭২৭।]
তাবরানীর অপর এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন:
«أُذِنَ لِي أَنْ أُحَدِّثَ عَنْ مَلَكٍ مِنْ حَمَلَةِ الْعَرْشِ، رِجْلَاهُ فِي الْأَرْضِ السُّفْلَى، وَعَلَى قَرْنِهِ الْعَرْشُ، وَبَيْنَ شَحْمَةِ أُذُنِهِ وَعَاتِقِهِ خَفَقَانُ الطَّيْرِ سَبْعمِائَةِ سَنَةٍ، يَقُولُ الْمَلَكُ : سُبْحَانَكَ حَيْثُ كُنْتَ»
“আরশ বহনকারী একজন ফিরিশতা সম্পর্কে বর্ণনা দিতে আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তার পাদ্বয় নিম্নস্তরের জমিনে, তার শিংয়ের উপর রয়েছে তার ‘আরশ। আর তার কানের লতি ও তার গর্দানের মাঝখানের দূরত্ব দ্রুতগামী পাখীর সাতশত বছরের রাস্তা। [বর্ণনায় তাবরানী, হাদীস নং ৬৫০৩ (এই হাদিসটি দুর্বল, তবে আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন, নিরীক্ষক: ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ )।] সে বলে আপনি যেখানেই থাকেন না কেন, আমি আপনার পবিত্র ঘোষণা করি।
ফিরিশতারা বাস্তব মাখলুক, তারা কোনো আধ্যাত্মিক শক্তি নয়। যেমনটি কতক ধারণাকারী মনে করে থাকে। তারা অসংখ্য মাখলুক। তাদের সংখ্যা কত তা তাদের স্রষ্টা ছাড়া আর কেউ জানে না।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে মি‘রাজের ঘটনায় আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে:
«أن النبي صلى الله عليه وسلم ، رفع له البيت المعمور، في السماء السابعة ، يصلي فيه كل يوم سبعون ألف ملك ، إذا خرجوا لم يعودوا إليه ، آخر ما عليهم»
“সপ্তম আসমানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে বাইতুল মা‘মুর তুলে ধরা হয়েছিল, প্রতিদিন সত্তর হাজার ফিরিশতা তাতে নামাজ আদায় করেন। সেখান থেকে তারা যখন নামাজ আদায় করে বের হয়, তখন তারা শেষ পর্যন্ত আর কোনো দিন দ্বিতীয়বার সেখানে ফিরে আসার সুযোগ পায় না”। [বর্ণনায় মুসলিম, হাদীস নং ১৬৪]
তৃতীয়ত: ফিরিশতারা কাতারবন্দী ও তাছবীহরত: মহান আল্লাহ তাদের তাঁর তাসবীহ সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন এবং তার আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। আর তিনি তাদের তা বাস্তবায়নের শক্তি দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَا مِنَّآ إِلَّا لَهُۥ مَقَامٞ مَّعۡلُومٞ ١٦٤ وَإِنَّا لَنَحۡنُ ٱلصَّآفُّونَ ١٦٥ وَإِنَّا لَنَحۡنُ ٱلۡمُسَبِّحُونَ ١٦٦﴾ [ الصافات : ١٦٤- ١٦٦ ]
ফিরিশতারা বলেন: “আমাদের [এটা ফিরিশতাদের বক্তব্য।] প্রত্যেকের জন্যই আসমানে মহান আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা করার জন্য একটি নির্ধারিতস্থান [ مقام অর্থ: স্থান, মর্যাদা, ইত্যাদি।] রয়েছে। আর অবশ্যই আমরা সারিবদ্ধ হয়ে মহান আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা করি। আর আমরা অবশ্যই মহান আল্লাহর পবিত্র ঘোষণা করি।” [সূরা আস-সাফ্ফাত, আয়াত: ১৬৪ - ১৬৬]
﴿وَلَهُۥ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَمَنۡ عِندَهُۥ لَا يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِهِۦ وَلَا يَسۡتَحۡسِرُونَ ١٩ يُسَبِّحُونَ ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَ لَا يَفۡتُرُونَ ٢٠﴾ [ الانبياء : ١٩، ٢٠ ]
“আর আসমান-জমিনে যারা আছে তারা সবাই তাঁর; আর তাঁর কাছে যারা আছে তারা অহঙ্কারবশতঃ তাঁর ইবাদাত থেকে বিমুখ হয় না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না। তারা দিন-রাত তাঁর তাসবীহ পাঠ করে, তারা শিথিলতা দেখায় না”। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১৯, ২০]
হাকীম ইবন হিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের মাঝে অবস্থান করছিলেন, তখন তিনি তাদের বললেন,
«أتسمعون ما أسمع ؟ قالوا : ما نسمع من شيء ؟ قال : إني لأسمع أطيط السماء، وما تلام أن تئط، وما فيها موضع شبر إلا وعليه ملك ساجد أو قائم»
“আমি যা শুনি তোমরা কি তা শোন? তারা বলল, না আমরা কিছুই শুনি না। তিনি বললেন, আমি আসমানের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। যদিও তার শব্দ হওয়া দোষণীয় নয়। আসমানে এমন এক বিঘত পরিমাণ জায়াগাও নেই যেখানে একজন ফিরিশতা হয় সাজদা অবস্থায় অথবা কিয়াম অবস্থায় নেই।” [হাদীসটি তাবরানী বর্ণনা করেন, আর আলবানী রহ. বলেন, মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী তা সহীহ।]।
চতুর্থত: ফিরিশতাগণ লোক চক্ষুর অন্তরালে অবস্থানকারী: তারা গায়েবী জগতের অধিবাসী। দুনিয়ার জীবনে মানব ইন্দ্রীয় দ্বারা তাদের সাক্ষাত লাভ করা যায় না। তবে আল্লাহ যাকে তাওফীক দেন তার কথা ভিন্ন। যেমন, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল আলাইহিস সালামকে মহান আল্লাহ যে আকৃতিতে তাকে সৃষ্টি করেছেন সে আকৃতিতে দেখেছেন, তবে ফিরিশতাদের আখিরাতে অবশ্যই দেখা যাবে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَوۡمَ يَرَوۡنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةَ لَا بُشۡرَىٰ يَوۡمَئِذٖ لِّلۡمُجۡرِمِينَ وَيَقُولُونَ حِجۡرٗا مَّحۡجُورٗا ٢٢﴾ [ الفرقان : ٢٢ ]
“যেদিন তারা ফিরিশতাদের দেখবে, সেদিন অপরাধীদের জন্য কোনো সু-সংবাদ থাকবে না। আর তারা বলবে, ‘হায় কোনো বাধা যদি তা আটকে রাখত’’। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২২]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَدۡخُلُونَ عَلَيۡهِم مِّن كُلِّ بَابٖ ٢٣﴾ [ الرعد : ٢٣ ]
“আর ফিরিশতারা প্রতিটি দরজা দিয়ে তাদের নিকট প্রবেশ করবে”। [সূরা আর-রা‘আদ, আয়াত: ২৩] তবে মহান আল্লাহ ফিরিশতাদেরকে মানুষের আকৃতি ও রূপ ধারণ করার ক্ষমতা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَأَرۡسَلۡنَآ إِلَيۡهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرٗا سَوِيّٗا ١٧﴾ [ مريم : ١٧ ]
“তখন আমি তার নিকট আমার (কাছ থেকে) রূহ (জিবরীল)-কে প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর সে তার সামনে পূর্ণ মানবের রূপ ধারণ করেছিল”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ১৭ ]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَقَدۡ جَآءَتۡ رُسُلُنَآ إِبۡرَٰهِيمَ بِٱلۡبُشۡرَىٰ قَالُواْ سَلَٰمٗاۖ قَالَ سَلَٰمٞۖ فَمَا لَبِثَ أَن جَآءَ بِعِجۡلٍ حَنِيذٖ ٦٩ فَلَمَّا رَءَآ أَيۡدِيَهُمۡ لَا تَصِلُ إِلَيۡهِ نَكِرَهُمۡ وَأَوۡجَسَ مِنۡهُمۡ خِيفَةٗۚ قَالُواْ لَا تَخَفۡ إِنَّآ أُرۡسِلۡنَآ إِلَىٰ قَوۡمِ لُوطٖ ٧٠ ﴾ [ هود : ٦٩، ٧٠ ]
“আর অবশ্যই আমার ফিরিশতারা সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীমের কাছে আসল, তারা বলল: আপনার প্রতি শান্তি অবতীর্ণ হোক । তিনি বললেন: আপনাদের প্রতি শান্তি অবতীর্ণ হোক । বিলম্ব না করে সে একটি ভুনা গো বাছুর নিয়ে আসল। অতঃপর যখন সে দেখতে পেল, তাদের হাত আহার্য্যের দিকে প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তিনি তাদেরকে অস্বাভাবিক মনে করে তাদের সম্পর্কে ভয় অনুভব করল। তারা বলল, ‘ভয় করো না, নিশ্চয় আমরা লূতের কওমের প্রতি প্রেরিত হয়েছি’’। [সূরা হূদ, আয়াত: ৬৯, ৭০]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَمَّا جَآءَتۡ رُسُلُنَا لُوطٗا سِيٓءَ بِهِمۡ وَضَاقَ بِهِمۡ ذَرۡعٗا وَقَالَ هَٰذَا يَوۡمٌ عَصِيبٞ ٧٧ وَجَآءَهُۥ قَوۡمُهُۥ يُهۡرَعُونَ إِلَيۡهِ وَمِن قَبۡلُ كَانُواْيَعۡمَلُونَ ٱلسَّئَِّاتِۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ هَٰٓؤُلَآءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطۡهَرُ لَكُمۡۖ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُخۡزُونِ فِي ضَيۡفِيٓۖ أَلَيۡسَ مِنكُمۡ رَجُلٞ رَّشِيدٞ ٧٨﴾ [ هود : ٧٧، ٧٨ ]
“আর যখন লূতের কাছে আমার ফিরিশতা আসল, তখন তাদের (আগমনের) কারণে তার অস্বস্তিবোধ হলো এবং তার অন্তর খুব সঙ্কুচিত হয়ে গেল। আর সে বলল, ‘এ তো কঠিন দিন’। আর তার কওম তার কাছে ছুটে আসল এবং ইতোপূর্বে তারা মন্দ কাজ করত। সে বলল, ‘হে আমার কওম, এরা আমার মেয়ে, তারা তোমাদের জন্য পবিত্র। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার মেহমানদের ব্যাপারে তোমরা আমাকে অপমানিত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কোনো সুবোধ ব্যক্তি নেই’?। [সূরা হূদ, আয়াত: ৭৭, ৭৮] এই সমস্ত ফিরিশতা ছিল পুরুষদের আকৃতিতে।
অনুরূপ জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন একজন অপরিচিত লোকের আকৃতিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসেন। তার কাপড় ছিল ধবধবে সাদা এবং মাথার চুল ছিল কুছকুছে কালো। আবার কোনো সময় তিনি সাহাবী দিহয়া আল-কালবী রাদিয়াল্লাহু আনহু-র আকৃতিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসতেন।
পঞ্চমত: তারা বিভিন্ন ধরণেরকর্ম সম্পাদনের দায়িত্বে নিয়োজিত: তারা তাদের মূল দায়িত্ব অর্থাৎ সব সময় রবের ইবাদত ও তাছবীহ পড়ায় লিপ্ত থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে থাকেন। যেমন—
এক. অহী নিয়ে আসা: এটি জিবরীল আলাইহিস সালামের দায়িত্ব: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلۡ نَزَّلَهُۥ رُوحُ ٱلۡقُدُسِ مِن رَّبِّكَ بِٱلۡحَقِّ لِيُثَبِّتَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَهُدٗى وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ ١٠٢﴾ [ النحل : ١٠٢ ]
“বল, রুহুল কুদস (জিবরীল) একে তোমার রবের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে নাযিল করেছেন। যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং হিদায়াত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১০২]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَإِنَّهُۥ لَتَنزِيلُ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٩٢ نَزَلَ بِهِ ٱلرُّوحُ ٱلۡأَمِينُ ١٩٣ عَلَىٰ قَلۡبِكَ لِتَكُونَ مِنَ ٱلۡمُنذِرِينَ ١٩٤﴾ [ الشعراء : ١٩٢، ١٩٤ ]
“আর নিশ্চয় এ কুরআন সৃষ্টিকুলের রবেরই নাযিলকৃত। বিশ্বস্ত আত্মা [এখানে ‘বিশ্বস্ত আত্মা’ দ্বারা জিবরীল (আঃ) কে বুঝানো হয়েছে।] এটা নিয়ে অবতরণ করেছে। তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হও”। [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ১৯২, ১৯৪]
দুই. গর্ভজাত শিশুর দেখা শোনা করা: তার রুহ প্রদান করা, তার রিযিক, হায়াত-মওত, কর্ম ও নেক না বদকার তা লিপিবদ্ধ করা।
তিন. আদম সন্তানদের হিফাযত করা: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَهُۥ مُعَقِّبَٰتٞ مِّنۢ بَيۡنِ يَدَيۡهِ وَمِنۡ خَلۡفِهِۦ يَحۡفَظُونَهُۥ مِنۡ أَمۡرِ ٱللَّهِۗ ١١﴾ [ الرعد : ١١ ]
“মানুষের জন্য রয়েছে, সামনে ও পেছনে, একের পর এক আগমনকারী প্রহরী, যারা আল্লাহর নির্দেশে তাকে হেফাযত করে”। [সূরা আর-রা‘আদ, আয়াত: ১১]
চার. আদম সন্তানের আমলের সংরক্ষণ করা: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِذۡ يَتَلَقَّى ٱلۡمُتَلَقِّيَانِ عَنِ ٱلۡيَمِينِ وَعَنِ ٱلشِّمَالِ قَعِيدٞ ١٧ مَّا يَلۡفِظُ مِن قَوۡلٍ إِلَّا لَدَيۡهِ رَقِيبٌ عَتِيدٞ ١٨﴾ [ق: ١٧، ١٨ ]
“যখন ডানে ও বামে বসা দু’জন লিপিবদ্ধকারী পরস্পর গ্রহণ করবে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে তার কাছে সদা উপস্থিত সংরক্ষণকারী রয়েছে”। [সূরা ক্বাফ, আয়াত: ১৭, ১৮]
পাঁচ. মুমিনদের অবিচল রাখা ও সাহায্য করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِذۡ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ أَنِّي مَعَكُمۡ فَثَبِّتُواْ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْۚ سَأُلۡقِي فِي قُلُوبِ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ٱلرُّعۡبَ فَٱضۡرِبُواْ فَوۡقَ ٱلۡأَعۡنَاقِ وَٱضۡرِبُواْ مِنۡهُمۡ كُلَّ بَنَانٖ ١٢﴾ [ الانفال : ١٢ ]
“স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফিরিশতাদের প্রতি অহী প্রেরণ করেন যে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে আছি। সুতরাং যারা ঈমান এনেছে তোমরা তাদেরকে অনড় রাখ’। অচিরেই আমি ভীতি ঢেলে দেব তাদের হৃদয়ে যারা কুফুরী করেছে। অতএব তোমরা আঘাত কর ঘাড়ের উপরে এবং আঘাত কর তাদের প্রত্যেক আঙুলের অগ্রভাগে”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ১২]
ছয়. মানুষের রুহসমূহ কবয করা: এটি মালাকুল মাওত ফিরিশতার দায়িত্ব। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلۡ يَتَوَفَّىٰكُم مَّلَكُ ٱلۡمَوۡتِ ٱلَّذِي وُكِّلَ بِكُمۡ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُمۡ تُرۡجَعُونَ ١١﴾ [ السجدة : ١١ ]
“বল, ‘তোমাদেরকে মৃত্যু দেবে মৃত্যুর ফিরিশতা, যাকে তোমাদের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। তারপর তোমাদের রবের নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে’’। [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১১]
সাত. মুনকার ও নাকীর দুই ফিরিশতার দায়িত্ব হলো, কবরে মানুষকে তার রব, দীন ও নাবী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা:
আট. শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া: এটি দায়িত্ব হলো, ইসরাফিল আলাইহিস সালামের। তিনি বেহুঁশ করে মৃত্যু দেওয়ার জন্য ও পুণরুত্থানের জন্য শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُۖ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخۡرَىٰ فَإِذَا هُمۡ قِيَامٞ يَنظُرُونَ ٦٨﴾ [ الزمر : ٦ 8]
“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই মৃত্যুবরণ করবে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬8]
নয়. জাহান্নামের পাহারা দেওয়া: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَا جَعَلۡنَآ أَصۡحَٰبَ ٱلنَّارِ إِلَّا مَلَٰٓئِكَةٗۖ ٣١﴾ [ المدثر : ٣١ ]
“আর আমি ফিরিশতাদেরকেই জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক বানিয়েছি”। [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৩১]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَنَادَوۡاْ يَٰمَٰلِكُ لِيَقۡضِ عَلَيۡنَا رَبُّكَۖ قَالَ إِنَّكُم مَّٰكِثُونَ ٧٧﴾ [ الزخرف : ٧٧ ]
“তারা চিৎকার করে বলবে, ‘হে মালিক, তোমার রব যেন আমাদেরকে শেষ করে দেন’। সে বলবে, ‘নিশ্চয় তোমরা অবস্থানকারী’’। [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৭৭]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦﴾ [ التحريم : ٦ ]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর। যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফিরিশতাকূল, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়”। [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৬]
দশ. মুমিনদের জন্য ক্ষমা চাওয়া, দো‘আ করা, সু-সংবাদ দেওয়া ও জান্নাতে তাদের সম্মান করা: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ٱلَّذِينَ يَحۡمِلُونَ ٱلۡعَرۡشَ وَمَنۡ حَوۡلَهُۥ يُسَبِّحُونَ بِحَمۡدِ رَبِّهِمۡ وَيُؤۡمِنُونَ بِهِۦ وَيَسۡتَغۡفِرُونَ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْۖ رَبَّنَا وَسِعۡتَ كُلَّ شَيۡءٖ رَّحۡمَةٗ وَعِلۡمٗا فَٱغۡفِرۡ لِلَّذِينَ تَابُواْ وَٱتَّبَعُواْ سَبِيلَكَ وَقِهِمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ ٧ رَبَّنَا وَأَدۡخِلۡهُمۡ جَنَّٰتِ عَدۡنٍ ٱلَّتِي وَعَدتَّهُمۡ وَمَن صَلَحَ مِنۡ ءَابَآئِهِمۡ وَأَزۡوَٰجِهِمۡ وَذُرِّيَّٰتِهِمۡۚ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٨ وَقِهِمُ ٱلسَّئَِّاتِۚ وَمَن تَقِ ٱلسَّئَِّاتِ يَوۡمَئِذٖ فَقَدۡ رَحِمۡتَهُۥۚ وَذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ٩﴾ [ غافر : ٧، ٩ ]
“যারা আরশকে ধারণ করে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করে এবং তাঁর প্রতি ঈমান রাখে। আর মুমিনদের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলে যে, ‘হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব, যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন’। ‘হে আমাদের রব, আর আপনি তাদেরকে স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করান, যার ওয়াদা আপনি তাদেরকে দিয়েছেন। আর তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নি ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে তাদেরকেও। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়।’ ‘আর আপনি তাদের অপরাধের আযাব হতে রক্ষা করুন এবং সেদিন আপনি যাকে অপরাধের আযাব থেকে রক্ষা করবেন, অবশ্যই তাকে অনুগ্রহ করবেন। আর এটিই মহাসাফল্য”। [সূরা গাফের, আয়াত: ৭, ৯]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠﴾ [ فصلت : ٣٠ ]
“নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অতঃপর অবিচল থাকে, ফিরিশতারা তাদের কাছে নাযিল হয় (এবং বলে) ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেওয়া হয়েছিল’’। [সূরা আল-ফুস্সিলাত, আয়াত: ৩০]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَدۡخُلُونَ عَلَيۡهِم مِّن كُلِّ بَابٖ ٢٣ سَلَٰمٌ عَلَيۡكُم بِمَا صَبَرۡتُمۡۚ فَنِعۡمَ عُقۡبَى ٱلدَّارِ ٢٤﴾ [ الرعد : ٢٣، ٢٤ ]
“আর ফিরিশতারা প্রতিটি দরজা দিয়ে তাদের নিকট প্রবেশ করবে। (আর বলবে) ‘শান্তি তোমাদের উপর, কারণ তোমরা সবর করেছ, আর আখিরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম’’। [সূরা আর-রা‘আদ, আয়াত: ২৩, ২৪]
এ কথার দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে, মহান আল্লাহ মানুষের হিদায়েতের জন্য তার নাবীদের উপর সত্যের পয়গাম সম্বলিত কিতাবসমূহ নাযিল করেছেন, যা তাদের প্রতি অনুগ্রহ, তাদের জন্য উপদেশ, তাদের উপর দলীল স্বরূপ এবং তাতে তাদের জন্য রয়েছে প্রতিটি বস্তুর বর্ণনা। কিতাবসমূহের উপর ঈমান স্থাপন করা কয়েকটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে:
প্রথমত: যে সব কিতাবসমূহের নাম আমরা জানতে পেরেছি তার প্রতি সু-নির্দিষ্টভাবে ঈমান স্থাপন করা। আর যে সব কিতাবসমূহের নাম আমরা জানতে পারি নি, সে সব কিতাবসমূহের প্রতি সামগ্রিকভাবে ঈমান স্থাপন করা।
মহান কিতাব তিনটি:
এক. তাওরাত: মহান আল্লাহ মূসা আলাহিস সালামের উপর তাওরাত নাযিল করেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قَالَ يَٰمُوسَىٰٓ إِنِّي ٱصۡطَفَيۡتُكَ عَلَى ٱلنَّاسِ بِرِسَٰلَٰتِي وَبِكَلَٰمِي فَخُذۡ مَآ ءَاتَيۡتُكَ وَكُن مِّنَ ٱلشَّٰكِرِينَ ١٤٤ وَكَتَبۡنَا لَهُۥ فِي ٱلۡأَلۡوَاحِ مِن كُلِّ شَيۡءٖ مَّوۡعِظَةٗ وَتَفۡصِيلٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ فَخُذۡهَا بِقُوَّةٖ وَأۡمُرۡ قَوۡمَكَ يَأۡخُذُواْ بِأَحۡسَنِهَاۚ سَأُوْرِيكُمۡ دَارَ ٱلۡفَٰسِقِينَ ١٤٥﴾ [ الاعراف : ١٤٣، ١٤٤ ]
“তিনি বললেন, ‘হে মূসা, আমি আমার রিসালাত ও বাক্যালাপ দ্বারা তোমাকে মানুষের উপর বেছে নিয়েছি। সুতরাং যা কিছু আমি তোমাকে প্রদান করলাম তা গ্রহণ কর এবং শোকর আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’ আর আমি তার জন্য ফলকসমূহে লিখে দিয়েছি প্রত্যেক বিষয়ের উপদেশ এবং প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা। সুতরাং তা শক্ত করে ধর এবং তোমার কওমকে নির্দেশ দাও, যেন তারা গ্রহণ করে এর উত্তম বিষয়গুলো। আমি অচিরেই তোমাদেরকে দেখাব ফাসিকদের আবাস”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৪৩, ১৪৪]
﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَا ٱلتَّوۡرَىٰةَ فِيهَا هُدٗى وَنُورٞۚ يَحۡكُمُ بِهَا ٱلنَّبِيُّونَ ٱلَّذِينَ أَسۡلَمُواْ لِلَّذِينَ هَادُواْ وَٱلرَّبَّٰنِيُّونَ وَٱلۡأَحۡبَارُ بِمَا ٱسۡتُحۡفِظُواْ مِن كِتَٰبِ ٱللَّهِ وَكَانُواْ عَلَيۡهِ شُهَدَآءَۚ ٤٤﴾ [ المائدة : ٤٤ ]
“নিশ্চয় আমি তাওরাত নাযিল করেছি, তাতে ছিল হিদায়াত ও আলো, এর মাধ্যমে ইয়াহূদীদের জন্য ফয়সালা প্রদান করত অনুগত নাবীগণ এবং সৎকর্মপরায়ণ ও ধর্মবিদগণ। কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল এবং তারা ছিল এর উপর সাক্ষী”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৪]
দুই. ইঞ্জিল: মহান আল্লাহ ঈসা আলাইহিস সালামের উপর নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ثُمَّ قَفَّيۡنَا عَلَىٰٓ ءَاثَٰرِهِم بِرُسُلِنَا وَقَفَّيۡنَا بِعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَ وَءَاتَيۡنَٰهُ ٱلۡإِنجِيلَۖ ٢٧﴾ [ الحديد : ٢٧ ]
“আর আমি তাদের পেছনে মারইয়াম পুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্মুখে বিদ্যমান তাওরাতের সত্যায়নকারীরূপে এবং তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জিল”। [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২৭]
﴿وَءَاتَيۡنَٰهُ ٱلۡإِنجِيلَ فِيهِ هُدٗى وَنُورٞ وَمُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ مِنَ ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَهُدٗى وَمَوۡعِظَةٗ لِّلۡمُتَّقِينَ ٤٦﴾ [ المائدة : ٤٦ ]
“এবং আমি তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জিল, এতে ছিল হিদায়াত ও আলো এবং (তা ছিল) তার সম্মুখে অবশিষ্ট তাওরাতের সত্যায়নকারী, হিদায়াত ও মুত্তাকীদের জন্য উপদেশস্বরূপ”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৬]
তিন. কুরআন: মহান আল্লাহ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَمُهَيۡمِنًا عَلَيۡهِۖ ٤٨﴾ [ المائدة : ٤٨ ]
“আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর উপর তদারককারীরূপে”। সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৮
আল্লাহর কিতাবসমূহের একটি কিতাব হচ্ছে:
যবূর: যে কিতাবটি দাউদ আলাইহিস সালামকে দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَءَاتَيۡنَا دَاوُۥدَ زَبُورٗا ٥٥﴾ [ الاسراء : ٥٥ ]
“আর আমি দাউদকে যবুর দিয়েছি”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৫৫]
অনুরূপ আরও দেওয়া হয়েছে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সালামকে সহীফা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ هَٰذَا لَفِي ٱلصُّحُفِ ٱلۡأُولَىٰ ١٨ صُحُفِ إِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ ١٩﴾ [ الاعلى : ١٨، ١٩ ]
“নিশ্চয় এটা আছে পূর্ববর্তী সহীফাসমূহে। ইবরাহীম ও মূসার সহীফাসমূহে”। [সূরা আল-আ‘লা, আয়াত: ১৮, ১৯]
দ্বিতীয়ত: কিতাবসমূহের যে সব বিধান বিকৃত হয়নি তা বিশ্বাস স্থাপন করা: মহান আল্লাহ সংবাদ দেন যে, বানী ইসরাঈলদের উপর নাযিলকৃত কিতাবসমূহে শাব্দিক ও অর্থগত উভয় প্রকার বিকৃতি প্রবেশ কা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿مِّنَ ٱلَّذِينَ هَادُواْ يُحَرِّفُونَ ٱلۡكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِۦ٤٦﴾ [ النساء : ٤٦ ]
“ইয়াহূদীদের মধ্যে কিছু এমন লোক আছে যারা কালামসমূহকে তার স্থান থেকে পরিবর্তন করে ফেলে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৬]
﴿يُحَرِّفُونَ ٱلۡكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِۦ ١٣﴾ [ المائدة : ١٣ ]
“তারা শব্দগুলোকে আপন স্থান থেকে বিকৃত করে”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ১৩]
﴿يُحَرِّفُونَ ٱلۡكَلِمَ مِنۢ بَعۡدِ مَوَاضِعِهِ ٤١﴾ [ المائدة : ٤١ ]
“তারা শব্দগুলোকে যথাযথ সুবিন্যস্ত থাকার পরও আপন স্থান থেকে বিকৃত করে”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪১]
﴿وَإِنَّ مِنۡهُمۡ لَفَرِيقٗا يَلۡوُۥنَ أَلۡسِنَتَهُم بِٱلۡكِتَٰبِ لِتَحۡسَبُوهُ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَمَا هُوَ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَيَقُولُونَ هُوَ مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ وَمَا هُوَ مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ وَيَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلۡكَذِبَ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ٧٨﴾ [ ال عمران : ٧٨ ]
“তাদের মধ্যে একদল রয়েছে, যারা নিজদের জিহ্বা দ্বারা বিকৃত করে কিতাব পাঠ করে, যাতে তোমরা সেটা কিতাবের অংশ মনে কর, অথচ সেটি কিতাবের অংশ নয়। তারা বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, অথচ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। আর তারা আল্লাহর উপর মিথ্যা বলে, অথচ তারা জানে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭৮]
পক্ষান্তরে মহান আল্লাহ নিজেই মহা গ্রন্থ আল-কুরআনকে হিফাযত করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩﴾ [ الحجر : ٩ ]
“নিশ্চয় আমি কুরআন [ الذكر দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন।] নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী”। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯]
এবং তিনি তার হিফাযত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَإِنَّهُۥ لَكِتَٰبٌ عَزِيزٞ ٤١ لَّا يَأۡتِيهِ ٱلۡبَٰطِلُ مِنۢ بَيۡنِ يَدَيۡهِ وَلَا مِنۡ خَلۡفِهِۦۖ تَنزِيلٞ مِّنۡ حَكِيمٍ حَمِيدٖ ٤٢﴾ [ فصلت : ٤١، ٤٢ ]
“আর এটি নিশ্চয় এক সম্মানিত গ্রন্থ। বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না, না সামনে থেকে, না পিছন থেকে। এটি প্রজ্ঞাময়, সপ্রশংসিতের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত”। [সূরা আল-ফুসসিলাত, আয়াত: ৪১, ৪২]
এ কথার ভিত্তিতে মনে রাখতে হবে, আহলে কিতাবদের কিতাবসমূহে উল্লিখিত কিচ্ছা ও সংবাদসমূহ যেগুলোকে পরিভাষায় ঈসরাইলী বর্ণনা বলা হয়, সেগুলো তিন অবস্থা থেকে মুক্ত নয়:
এক: কুরআনে যা রয়েছে তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে: তখন আমরা আমাদের কিতাব কুরআনে তার সাক্ষ্য ও সমর্থন পাওয়ার কারণে এগুলোকে শুদ্ধ বলে বিশ্বাস করব। যেমন, কিয়ামতের আলোচনা, ফির‘আউন সম্প্রদায়ের লোকদের ডুবে যাওয়া এবং ঈসা আলাইহিস সালামের নিদর্শনসমূহ।
দুই: কুরআনে যা রয়েছে তার বিরোধী হবে। তখন আমরা এগুলোকে বাতিল বলে বিশ্বাস করব। এ গুলো তারা আবিষ্কার ও নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেছে এবং তারা মুখ দ্বারা প্রচার করেছে মাত্র। যেমন, তারা বলে লূত আলাইহিস সালাম মদ পান করেছেন এবং তার নিজ কন্যাদ্বয়ের সাথে ব্যভিচার করেছেন। (না‘উযুবিল্লাহ) আল্লাহ তাকে সম্মানিত করুন। অনুরূপ ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে তাদের দাবি হলো, তিনি হয় আল্লাহ অথবা আল্লাহর বেটা অথবা তিনজনের একজন। তাদের কথা থেকে মহান আল্লাহ অনেক ঊর্ধ্বে।
তিন: কুরআনের বিরোধীও নয় আবার সামঞ্জস্যপূর্ণও নয় এমন বর্ণনাসমূহ। এ বিষয়গুলোকে আমরা বিশ্বাসও করবো না আবার বাতিলও বলবো না। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إذا حدثكم أهل الكتاب فلا تصدقوهم، ولا تكذبوهم، وقولوا : آمنا بالله، وكتبه، ورسله . فإن كان حقاً لم تكذبوهم وإن كان باطلاً لم تصدقوهم»
“যখন তোমাদের নিকট আহলে কিতাবগণ হাদীস বর্ণনা করবে, তখন তোমরা তা বিশ্বাস করবে না এবং মিথ্যাও বলবে না। আর তোমরা বলবে, আমরা আল্লাহ, তার কিতাবসমূহ এবং তার রাসূলদের প্রতি ঈমান স্থাপন করেছি। যদি (তাদের বর্ণনা করা বিষয়সমূহ) সত্য হয় তাহলে তোমরা তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করবে না। আর যদি বাতিল হয়, তাহলে তোমরা তা বিশ্বাস করবে না”। [আহমদ, হাদীস নং ১৭২২৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৬৪৪]
তবে তাদের থেকে কোনো কিছু বর্ণনা করা বৈধ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«وحدثوا عن بني إسرائيل، ولا حرج» .
“তোমরা বানী ইসরাঈলদের থেকে বর্ণনা কর তাতে কোনো অসুবিধা নেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৬১]
কিতাবের উপর ঈমানের জন্য আরও জরুরী হচ্ছে:
তৃতীয়ত: কুরআনের শরী‘আত অনুযায়ী ফায়সালা প্রদান: কারণ, মহান আল্লাহ প্রবিত্র ও মহা গ্রন্থ আল-কুরআনকে পূর্বের কিতাবসমূহের উপর কর্তৃত্বদানকারী, ফায়সালাকারী, আমানতদার, তত্বাবধায়ক ও সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে নাযিল করেছেন। যাবতীয় কল্যাণ কুরআনেই নিহিত। আর পূর্বের কিতাবসমূহের কতক বিধানকে রহিত করেছেন। ফলে কুরআনের বিধান ছাড়া অন্য কোনো বিধানের অনুসরণ করা বৈধ নয়। মহান আল্লাহ তাওরাত ও ইঞ্জীলের আলোচনা করার পর বলেন:
﴿وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَمُهَيۡمِنًا عَلَيۡهِۖ فَٱحۡكُم بَيۡنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُۖ وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ ٱلۡحَقِّۚ لِكُلّٖ جَعَلۡنَا مِنكُمۡ شِرۡعَةٗ وَمِنۡهَاجٗاۚ وَلَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ لَجَعَلَكُمۡ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ وَلَٰكِن لِّيَبۡلُوَكُمۡ فِي مَآ ءَاتَىٰكُمۡۖ فَٱسۡتَبِقُواْ ٱلۡخَيۡرَٰتِۚ إِلَى ٱللَّهِ مَرۡجِعُكُمۡ جَمِيعٗا فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ فِيهِ تَخۡتَلِفُونَ ٤٨﴾ [ المائدة : ٤٨ ]
“আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর উপর তদারককারীরূপে। সুতরাং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তুমি তার মাধ্যমে ফয়সালা কর এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে, তা ত্যাগ করে তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আমরা নির্ধারণ করেছি শরী‘আত ও স্পষ্ট পন্থা এবং আল্লাহ যদি চাইতেন, তবে তোমাদেরকে এক উম্মত বানাতেন; কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। সুতরাং তোমরা ভাল কাজে প্রতিযোগিতা কর। আল্লাহরই দিকে তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তনস্থল। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন, যা নিয়ে তোমরা মতবিরোধ করতে”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৮]
﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ لِتَحۡكُمَ بَيۡنَ ٱلنَّاسِ بِمَآ أَرَىٰكَ ٱللَّهُۚ وَلَا تَكُن لِّلۡخَآئِنِينَ خَصِيمٗا ١٠٥﴾ [ النساء : ١٠٥ ]
“নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে ফয়সালা কর সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন। আর তুমি খিয়ানতকারীদের পক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৫ ]
চতুর্থত: পরিপূর্ণ কিতাবের উপর ঈমান স্থাপন করা এবং কিতাবের কোনো অংশকে বাদ না দেওয়া: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَفَتُؤۡمِنُونَ بِبَعۡضِ ٱلۡكِتَٰبِ وَتَكۡفُرُونَ بِبَعۡضٖۚ فَمَا جَزَآءُ مَن يَفۡعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمۡ إِلَّا خِزۡيٞ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰٓ أَشَدِّ ٱلۡعَذَابِۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَٰفِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُونَ ٨٥﴾ [ البقرة : ٨٥ ]
“তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৮৫]
﴿هَٰٓأَنتُمۡ أُوْلَآءِ تُحِبُّونَهُمۡ وَلَا يُحِبُّونَكُمۡ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱلۡكِتَٰبِ كُلِّهِۦ ١١٩﴾ [ ال عمران : ١١٩ ]
“শোন, তোমরাই তো তাদেরকে ভালোবাস এবং তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। অথচ তোমরা সব কিতাবের প্রতি ঈমান রাখ”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১৯]
পঞ্চমত: কুরআনের কোনো অংশকে গোপন করা, তাতে কোনো প্রকার বিকৃতি করা, কুরআন বিষয়ে বিবাদ করা এবং আল্লাহর কিতাবের একটি অংশ দ্বারা অপর অংশকে অকার্যকর সাব্যস্ত করাকে হারাম বলে বিশ্বাস স্থাপন করা:
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَإِذۡ أَخَذَ ٱللَّهُ مِيثَٰقَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ لَتُبَيِّنُنَّهُۥ لِلنَّاسِ وَلَا تَكۡتُمُونَهُۥ فَنَبَذُوهُ وَرَآءَ ظُهُورِهِمۡ وَٱشۡتَرَوۡاْ بِهِۦ ثَمَنٗا قَلِيلٗاۖ فَبِئۡسَ مَا يَشۡتَرُونَ ١٨٧﴾ [ ال عمران : ١٨٧ ]
“আর স্মরণ কর, যখন আল্লাহ কিতাবপ্রাপ্তদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, ‘অবশ্যই তোমরা তা মানুষের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করবে এবং তা গোপন করবে না’। কিন্তু তারা তা তাদের পেছনে ফেলে দেয় এবং তা বিক্রি করে তুচ্ছ মূল্যে। অতএব তারা যা ক্রয় করে, তা কতইনা মন্দ!”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৭]
আরও বলেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡتُمُونَ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَيَشۡتَرُونَ بِهِۦ ثَمَنٗا قَلِيلًا أُوْلَٰٓئِكَ مَا يَأۡكُلُونَ فِي بُطُونِهِمۡ إِلَّا ٱلنَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ ٱللَّهُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمۡ وَلَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ١٧٤ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱشۡتَرَوُاْ ٱلضَّلَٰلَةَ بِٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡعَذَابَ بِٱلۡمَغۡفِرَةِۚ فَمَآ أَصۡبَرَهُمۡ عَلَى ٱلنَّارِ ١٧٥ ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ نَزَّلَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّۗ وَإِنَّ ٱلَّذِينَ ٱخۡتَلَفُواْ فِي ٱلۡكِتَٰبِ لَفِي شِقَاقِۢ بَعِيدٖ ١٧٦﴾ [ البقرة : ١٧٤، ١٧٦ ]
“নিশ্চয় যারা গোপন করে যে কিতাব আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং এর বিনিময়ে সামান্য মূল্য গ্রহণ করে, তারা শুধু আগুনই তাদের উদরে পুরে। আর আল্লাহ কিয়ামতের দিনে তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। তারাই হিদায়াতের পরিবর্তে পথভ্রষ্টতা এবং মাগফিরাতের পরিবর্তে আযাব ক্রয় করেছে। জাহান্নামের আগুনের সামনে তারা কত বড় দুঃসাহসিক! তা এ কারণে যে, আল্লাহ যথার্থরূপে কিতাব নাযিল করেছেন। আর নিশ্চয় যারা কিতাবে মতবিরোধ করেছে, তারা অবশ্যই সুদূর মতানৈক্যে রয়েছে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৪, ১৭৬]
আরও বলেন:
﴿فَوَيۡلٞ لِّلَّذِينَ يَكۡتُبُونَ ٱلۡكِتَٰبَ بِأَيۡدِيهِمۡ ثُمَّ يَقُولُونَ هَٰذَا مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ لِيَشۡتَرُواْ بِهِۦ ثَمَنٗا قَلِيلٗاۖ فَوَيۡلٞ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتۡ أَيۡدِيهِمۡ وَوَيۡلٞ لَّهُم مِّمَّا يَكۡسِبُونَ ٧٩﴾ [ البقرة : ٧٩ ]
“সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে। তারপর বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, যাতে তা তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করতে পারে। সুতরাং তাদের হাত যা লিখেছে তার পরিণামে তাদের জন্য ধ্বংস, আর তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৭৯]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لا تضربوا كتاب الله بعضه ببعض، فإنه ما ضل قوم قط إلا أوتوا الجدل» .
“তোমরা আল্লাহর কিতাবের কিছু অংশকে কিছু অংশ দ্বারা আঘাত করবে না। যখনই কোনো জাতি বিবাদে লিপ্ত হয়েছে তখনই তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে”। [তাফসীরে তাবারী]
প্রথমত: যে সব কিতাবসমূহের নাম আমরা জানতে পেরেছি তার প্রতি সু-নির্দিষ্টভাবে ঈমান স্থাপন করা। আর যে সব কিতাবসমূহের নাম আমরা জানতে পারি নি, সে সব কিতাবসমূহের প্রতি সামগ্রিকভাবে ঈমান স্থাপন করা।
মহান কিতাব তিনটি:
এক. তাওরাত: মহান আল্লাহ মূসা আলাহিস সালামের উপর তাওরাত নাযিল করেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قَالَ يَٰمُوسَىٰٓ إِنِّي ٱصۡطَفَيۡتُكَ عَلَى ٱلنَّاسِ بِرِسَٰلَٰتِي وَبِكَلَٰمِي فَخُذۡ مَآ ءَاتَيۡتُكَ وَكُن مِّنَ ٱلشَّٰكِرِينَ ١٤٤ وَكَتَبۡنَا لَهُۥ فِي ٱلۡأَلۡوَاحِ مِن كُلِّ شَيۡءٖ مَّوۡعِظَةٗ وَتَفۡصِيلٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ فَخُذۡهَا بِقُوَّةٖ وَأۡمُرۡ قَوۡمَكَ يَأۡخُذُواْ بِأَحۡسَنِهَاۚ سَأُوْرِيكُمۡ دَارَ ٱلۡفَٰسِقِينَ ١٤٥﴾ [ الاعراف : ١٤٣، ١٤٤ ]
“তিনি বললেন, ‘হে মূসা, আমি আমার রিসালাত ও বাক্যালাপ দ্বারা তোমাকে মানুষের উপর বেছে নিয়েছি। সুতরাং যা কিছু আমি তোমাকে প্রদান করলাম তা গ্রহণ কর এবং শোকর আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’ আর আমি তার জন্য ফলকসমূহে লিখে দিয়েছি প্রত্যেক বিষয়ের উপদেশ এবং প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা। সুতরাং তা শক্ত করে ধর এবং তোমার কওমকে নির্দেশ দাও, যেন তারা গ্রহণ করে এর উত্তম বিষয়গুলো। আমি অচিরেই তোমাদেরকে দেখাব ফাসিকদের আবাস”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৪৩, ১৪৪]
﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَا ٱلتَّوۡرَىٰةَ فِيهَا هُدٗى وَنُورٞۚ يَحۡكُمُ بِهَا ٱلنَّبِيُّونَ ٱلَّذِينَ أَسۡلَمُواْ لِلَّذِينَ هَادُواْ وَٱلرَّبَّٰنِيُّونَ وَٱلۡأَحۡبَارُ بِمَا ٱسۡتُحۡفِظُواْ مِن كِتَٰبِ ٱللَّهِ وَكَانُواْ عَلَيۡهِ شُهَدَآءَۚ ٤٤﴾ [ المائدة : ٤٤ ]
“নিশ্চয় আমি তাওরাত নাযিল করেছি, তাতে ছিল হিদায়াত ও আলো, এর মাধ্যমে ইয়াহূদীদের জন্য ফয়সালা প্রদান করত অনুগত নাবীগণ এবং সৎকর্মপরায়ণ ও ধর্মবিদগণ। কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল এবং তারা ছিল এর উপর সাক্ষী”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৪]
দুই. ইঞ্জিল: মহান আল্লাহ ঈসা আলাইহিস সালামের উপর নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ثُمَّ قَفَّيۡنَا عَلَىٰٓ ءَاثَٰرِهِم بِرُسُلِنَا وَقَفَّيۡنَا بِعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَ وَءَاتَيۡنَٰهُ ٱلۡإِنجِيلَۖ ٢٧﴾ [ الحديد : ٢٧ ]
“আর আমি তাদের পেছনে মারইয়াম পুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্মুখে বিদ্যমান তাওরাতের সত্যায়নকারীরূপে এবং তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জিল”। [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২৭]
﴿وَءَاتَيۡنَٰهُ ٱلۡإِنجِيلَ فِيهِ هُدٗى وَنُورٞ وَمُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ مِنَ ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَهُدٗى وَمَوۡعِظَةٗ لِّلۡمُتَّقِينَ ٤٦﴾ [ المائدة : ٤٦ ]
“এবং আমি তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জিল, এতে ছিল হিদায়াত ও আলো এবং (তা ছিল) তার সম্মুখে অবশিষ্ট তাওরাতের সত্যায়নকারী, হিদায়াত ও মুত্তাকীদের জন্য উপদেশস্বরূপ”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৬]
তিন. কুরআন: মহান আল্লাহ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَمُهَيۡمِنًا عَلَيۡهِۖ ٤٨﴾ [ المائدة : ٤٨ ]
“আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর উপর তদারককারীরূপে”। সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৮
আল্লাহর কিতাবসমূহের একটি কিতাব হচ্ছে:
যবূর: যে কিতাবটি দাউদ আলাইহিস সালামকে দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَءَاتَيۡنَا دَاوُۥدَ زَبُورٗا ٥٥﴾ [ الاسراء : ٥٥ ]
“আর আমি দাউদকে যবুর দিয়েছি”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৫৫]
অনুরূপ আরও দেওয়া হয়েছে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সালামকে সহীফা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ هَٰذَا لَفِي ٱلصُّحُفِ ٱلۡأُولَىٰ ١٨ صُحُفِ إِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ ١٩﴾ [ الاعلى : ١٨، ١٩ ]
“নিশ্চয় এটা আছে পূর্ববর্তী সহীফাসমূহে। ইবরাহীম ও মূসার সহীফাসমূহে”। [সূরা আল-আ‘লা, আয়াত: ১৮, ১৯]
দ্বিতীয়ত: কিতাবসমূহের যে সব বিধান বিকৃত হয়নি তা বিশ্বাস স্থাপন করা: মহান আল্লাহ সংবাদ দেন যে, বানী ইসরাঈলদের উপর নাযিলকৃত কিতাবসমূহে শাব্দিক ও অর্থগত উভয় প্রকার বিকৃতি প্রবেশ কা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿مِّنَ ٱلَّذِينَ هَادُواْ يُحَرِّفُونَ ٱلۡكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِۦ٤٦﴾ [ النساء : ٤٦ ]
“ইয়াহূদীদের মধ্যে কিছু এমন লোক আছে যারা কালামসমূহকে তার স্থান থেকে পরিবর্তন করে ফেলে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৬]
﴿يُحَرِّفُونَ ٱلۡكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِۦ ١٣﴾ [ المائدة : ١٣ ]
“তারা শব্দগুলোকে আপন স্থান থেকে বিকৃত করে”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ১৩]
﴿يُحَرِّفُونَ ٱلۡكَلِمَ مِنۢ بَعۡدِ مَوَاضِعِهِ ٤١﴾ [ المائدة : ٤١ ]
“তারা শব্দগুলোকে যথাযথ সুবিন্যস্ত থাকার পরও আপন স্থান থেকে বিকৃত করে”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪১]
﴿وَإِنَّ مِنۡهُمۡ لَفَرِيقٗا يَلۡوُۥنَ أَلۡسِنَتَهُم بِٱلۡكِتَٰبِ لِتَحۡسَبُوهُ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَمَا هُوَ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَيَقُولُونَ هُوَ مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ وَمَا هُوَ مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ وَيَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلۡكَذِبَ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ٧٨﴾ [ ال عمران : ٧٨ ]
“তাদের মধ্যে একদল রয়েছে, যারা নিজদের জিহ্বা দ্বারা বিকৃত করে কিতাব পাঠ করে, যাতে তোমরা সেটা কিতাবের অংশ মনে কর, অথচ সেটি কিতাবের অংশ নয়। তারা বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, অথচ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। আর তারা আল্লাহর উপর মিথ্যা বলে, অথচ তারা জানে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭৮]
পক্ষান্তরে মহান আল্লাহ নিজেই মহা গ্রন্থ আল-কুরআনকে হিফাযত করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩﴾ [ الحجر : ٩ ]
“নিশ্চয় আমি কুরআন [ الذكر দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন।] নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী”। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯]
এবং তিনি তার হিফাযত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَإِنَّهُۥ لَكِتَٰبٌ عَزِيزٞ ٤١ لَّا يَأۡتِيهِ ٱلۡبَٰطِلُ مِنۢ بَيۡنِ يَدَيۡهِ وَلَا مِنۡ خَلۡفِهِۦۖ تَنزِيلٞ مِّنۡ حَكِيمٍ حَمِيدٖ ٤٢﴾ [ فصلت : ٤١، ٤٢ ]
“আর এটি নিশ্চয় এক সম্মানিত গ্রন্থ। বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না, না সামনে থেকে, না পিছন থেকে। এটি প্রজ্ঞাময়, সপ্রশংসিতের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত”। [সূরা আল-ফুসসিলাত, আয়াত: ৪১, ৪২]
এ কথার ভিত্তিতে মনে রাখতে হবে, আহলে কিতাবদের কিতাবসমূহে উল্লিখিত কিচ্ছা ও সংবাদসমূহ যেগুলোকে পরিভাষায় ঈসরাইলী বর্ণনা বলা হয়, সেগুলো তিন অবস্থা থেকে মুক্ত নয়:
এক: কুরআনে যা রয়েছে তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে: তখন আমরা আমাদের কিতাব কুরআনে তার সাক্ষ্য ও সমর্থন পাওয়ার কারণে এগুলোকে শুদ্ধ বলে বিশ্বাস করব। যেমন, কিয়ামতের আলোচনা, ফির‘আউন সম্প্রদায়ের লোকদের ডুবে যাওয়া এবং ঈসা আলাইহিস সালামের নিদর্শনসমূহ।
দুই: কুরআনে যা রয়েছে তার বিরোধী হবে। তখন আমরা এগুলোকে বাতিল বলে বিশ্বাস করব। এ গুলো তারা আবিষ্কার ও নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেছে এবং তারা মুখ দ্বারা প্রচার করেছে মাত্র। যেমন, তারা বলে লূত আলাইহিস সালাম মদ পান করেছেন এবং তার নিজ কন্যাদ্বয়ের সাথে ব্যভিচার করেছেন। (না‘উযুবিল্লাহ) আল্লাহ তাকে সম্মানিত করুন। অনুরূপ ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে তাদের দাবি হলো, তিনি হয় আল্লাহ অথবা আল্লাহর বেটা অথবা তিনজনের একজন। তাদের কথা থেকে মহান আল্লাহ অনেক ঊর্ধ্বে।
তিন: কুরআনের বিরোধীও নয় আবার সামঞ্জস্যপূর্ণও নয় এমন বর্ণনাসমূহ। এ বিষয়গুলোকে আমরা বিশ্বাসও করবো না আবার বাতিলও বলবো না। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إذا حدثكم أهل الكتاب فلا تصدقوهم، ولا تكذبوهم، وقولوا : آمنا بالله، وكتبه، ورسله . فإن كان حقاً لم تكذبوهم وإن كان باطلاً لم تصدقوهم»
“যখন তোমাদের নিকট আহলে কিতাবগণ হাদীস বর্ণনা করবে, তখন তোমরা তা বিশ্বাস করবে না এবং মিথ্যাও বলবে না। আর তোমরা বলবে, আমরা আল্লাহ, তার কিতাবসমূহ এবং তার রাসূলদের প্রতি ঈমান স্থাপন করেছি। যদি (তাদের বর্ণনা করা বিষয়সমূহ) সত্য হয় তাহলে তোমরা তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করবে না। আর যদি বাতিল হয়, তাহলে তোমরা তা বিশ্বাস করবে না”। [আহমদ, হাদীস নং ১৭২২৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৬৪৪]
তবে তাদের থেকে কোনো কিছু বর্ণনা করা বৈধ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«وحدثوا عن بني إسرائيل، ولا حرج» .
“তোমরা বানী ইসরাঈলদের থেকে বর্ণনা কর তাতে কোনো অসুবিধা নেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৬১]
কিতাবের উপর ঈমানের জন্য আরও জরুরী হচ্ছে:
তৃতীয়ত: কুরআনের শরী‘আত অনুযায়ী ফায়সালা প্রদান: কারণ, মহান আল্লাহ প্রবিত্র ও মহা গ্রন্থ আল-কুরআনকে পূর্বের কিতাবসমূহের উপর কর্তৃত্বদানকারী, ফায়সালাকারী, আমানতদার, তত্বাবধায়ক ও সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে নাযিল করেছেন। যাবতীয় কল্যাণ কুরআনেই নিহিত। আর পূর্বের কিতাবসমূহের কতক বিধানকে রহিত করেছেন। ফলে কুরআনের বিধান ছাড়া অন্য কোনো বিধানের অনুসরণ করা বৈধ নয়। মহান আল্লাহ তাওরাত ও ইঞ্জীলের আলোচনা করার পর বলেন:
﴿وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَمُهَيۡمِنًا عَلَيۡهِۖ فَٱحۡكُم بَيۡنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُۖ وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ ٱلۡحَقِّۚ لِكُلّٖ جَعَلۡنَا مِنكُمۡ شِرۡعَةٗ وَمِنۡهَاجٗاۚ وَلَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ لَجَعَلَكُمۡ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ وَلَٰكِن لِّيَبۡلُوَكُمۡ فِي مَآ ءَاتَىٰكُمۡۖ فَٱسۡتَبِقُواْ ٱلۡخَيۡرَٰتِۚ إِلَى ٱللَّهِ مَرۡجِعُكُمۡ جَمِيعٗا فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ فِيهِ تَخۡتَلِفُونَ ٤٨﴾ [ المائدة : ٤٨ ]
“আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর উপর তদারককারীরূপে। সুতরাং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তুমি তার মাধ্যমে ফয়সালা কর এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে, তা ত্যাগ করে তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আমরা নির্ধারণ করেছি শরী‘আত ও স্পষ্ট পন্থা এবং আল্লাহ যদি চাইতেন, তবে তোমাদেরকে এক উম্মত বানাতেন; কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। সুতরাং তোমরা ভাল কাজে প্রতিযোগিতা কর। আল্লাহরই দিকে তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তনস্থল। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন, যা নিয়ে তোমরা মতবিরোধ করতে”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৮]
﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ لِتَحۡكُمَ بَيۡنَ ٱلنَّاسِ بِمَآ أَرَىٰكَ ٱللَّهُۚ وَلَا تَكُن لِّلۡخَآئِنِينَ خَصِيمٗا ١٠٥﴾ [ النساء : ١٠٥ ]
“নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে ফয়সালা কর সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন। আর তুমি খিয়ানতকারীদের পক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৫ ]
চতুর্থত: পরিপূর্ণ কিতাবের উপর ঈমান স্থাপন করা এবং কিতাবের কোনো অংশকে বাদ না দেওয়া: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَفَتُؤۡمِنُونَ بِبَعۡضِ ٱلۡكِتَٰبِ وَتَكۡفُرُونَ بِبَعۡضٖۚ فَمَا جَزَآءُ مَن يَفۡعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمۡ إِلَّا خِزۡيٞ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰٓ أَشَدِّ ٱلۡعَذَابِۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَٰفِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُونَ ٨٥﴾ [ البقرة : ٨٥ ]
“তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৮৫]
﴿هَٰٓأَنتُمۡ أُوْلَآءِ تُحِبُّونَهُمۡ وَلَا يُحِبُّونَكُمۡ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱلۡكِتَٰبِ كُلِّهِۦ ١١٩﴾ [ ال عمران : ١١٩ ]
“শোন, তোমরাই তো তাদেরকে ভালোবাস এবং তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। অথচ তোমরা সব কিতাবের প্রতি ঈমান রাখ”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১৯]
পঞ্চমত: কুরআনের কোনো অংশকে গোপন করা, তাতে কোনো প্রকার বিকৃতি করা, কুরআন বিষয়ে বিবাদ করা এবং আল্লাহর কিতাবের একটি অংশ দ্বারা অপর অংশকে অকার্যকর সাব্যস্ত করাকে হারাম বলে বিশ্বাস স্থাপন করা:
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَإِذۡ أَخَذَ ٱللَّهُ مِيثَٰقَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ لَتُبَيِّنُنَّهُۥ لِلنَّاسِ وَلَا تَكۡتُمُونَهُۥ فَنَبَذُوهُ وَرَآءَ ظُهُورِهِمۡ وَٱشۡتَرَوۡاْ بِهِۦ ثَمَنٗا قَلِيلٗاۖ فَبِئۡسَ مَا يَشۡتَرُونَ ١٨٧﴾ [ ال عمران : ١٨٧ ]
“আর স্মরণ কর, যখন আল্লাহ কিতাবপ্রাপ্তদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, ‘অবশ্যই তোমরা তা মানুষের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করবে এবং তা গোপন করবে না’। কিন্তু তারা তা তাদের পেছনে ফেলে দেয় এবং তা বিক্রি করে তুচ্ছ মূল্যে। অতএব তারা যা ক্রয় করে, তা কতইনা মন্দ!”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৭]
আরও বলেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡتُمُونَ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَيَشۡتَرُونَ بِهِۦ ثَمَنٗا قَلِيلًا أُوْلَٰٓئِكَ مَا يَأۡكُلُونَ فِي بُطُونِهِمۡ إِلَّا ٱلنَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ ٱللَّهُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمۡ وَلَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ١٧٤ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱشۡتَرَوُاْ ٱلضَّلَٰلَةَ بِٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡعَذَابَ بِٱلۡمَغۡفِرَةِۚ فَمَآ أَصۡبَرَهُمۡ عَلَى ٱلنَّارِ ١٧٥ ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ نَزَّلَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّۗ وَإِنَّ ٱلَّذِينَ ٱخۡتَلَفُواْ فِي ٱلۡكِتَٰبِ لَفِي شِقَاقِۢ بَعِيدٖ ١٧٦﴾ [ البقرة : ١٧٤، ١٧٦ ]
“নিশ্চয় যারা গোপন করে যে কিতাব আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং এর বিনিময়ে সামান্য মূল্য গ্রহণ করে, তারা শুধু আগুনই তাদের উদরে পুরে। আর আল্লাহ কিয়ামতের দিনে তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। তারাই হিদায়াতের পরিবর্তে পথভ্রষ্টতা এবং মাগফিরাতের পরিবর্তে আযাব ক্রয় করেছে। জাহান্নামের আগুনের সামনে তারা কত বড় দুঃসাহসিক! তা এ কারণে যে, আল্লাহ যথার্থরূপে কিতাব নাযিল করেছেন। আর নিশ্চয় যারা কিতাবে মতবিরোধ করেছে, তারা অবশ্যই সুদূর মতানৈক্যে রয়েছে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৪, ১৭৬]
আরও বলেন:
﴿فَوَيۡلٞ لِّلَّذِينَ يَكۡتُبُونَ ٱلۡكِتَٰبَ بِأَيۡدِيهِمۡ ثُمَّ يَقُولُونَ هَٰذَا مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ لِيَشۡتَرُواْ بِهِۦ ثَمَنٗا قَلِيلٗاۖ فَوَيۡلٞ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتۡ أَيۡدِيهِمۡ وَوَيۡلٞ لَّهُم مِّمَّا يَكۡسِبُونَ ٧٩﴾ [ البقرة : ٧٩ ]
“সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে। তারপর বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, যাতে তা তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করতে পারে। সুতরাং তাদের হাত যা লিখেছে তার পরিণামে তাদের জন্য ধ্বংস, আর তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৭৯]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لا تضربوا كتاب الله بعضه ببعض، فإنه ما ضل قوم قط إلا أوتوا الجدل» .
“তোমরা আল্লাহর কিতাবের কিছু অংশকে কিছু অংশ দ্বারা আঘাত করবে না। যখনই কোনো জাতি বিবাদে লিপ্ত হয়েছে তখনই তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে”। [তাফসীরে তাবারী]
রাসূলদের উপর ঈমান স্থাপন করার অর্থ এ কথার বিশ্বাস স্থাপন করা যে, মানবজাতি থেকে কতক লোককে মহান আল্লাহ রাসূল হিসেবে নির্বাচন করেছেন। মহান আল্লাহ তাদের কাছে অহী প্রেরণ করেছেন। তাদেরকে তিনি মানুষের জন্য সু-সংবাদদাতা, ভয়প্রদর্শনকারীরূপে প্রেরণ করেছেন। তারা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর সৃষ্টিকুলের কাছে রিসালাতের দায়িত্ব, অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাগুত তথা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদত করা হয় তাদের পরিত্যাগ করার পরিপূর্ণ দা‘ওয়াত মানবজাতির নিকট যথাযথভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। এ সবই করেছেন মহান আল্লাহ তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে এবং তাদের বিপক্ষে প্রমাণ সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ٱللَّهُ يَصۡطَفِي مِنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ رُسُلٗا وَمِنَ ٱلنَّاسِۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعُۢ بَصِيرٞ ٧٥﴾ [ الحج : ٧٥ ]
“আল্লাহ ফিরিশতা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন। অবশ্যই আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭৫]
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ إِلَّا رِجَالٗا نُّوحِيٓ إِلَيۡهِمۡۖ فَسَۡٔلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلذِّكۡرِ إِن كُنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٤٣﴾ [ النحل : ٤٣ ]
“আর আমি তোমার পূর্বে কেবল পুরুষদেরকেই রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছি, যাদের প্রতি আমি অহী পাঠিয়েছি। সুতরাং জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জানো”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭৫] আমি
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿رُّسُلٗا مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى ٱللَّهِ حُجَّةُۢ بَعۡدَ ٱلرُّسُلِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمٗا ١٦٥﴾ [ النساء : ١٦٥ ]
“আর আমি (পাঠিয়েছি) রাসূলগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, যাতে আল্লাহর বিপক্ষে রাসূলদের পর মানুষের জন্য কোনো অজুহাত না থাকে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬৫]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ ٣٦﴾ [ النحل : ٣٦ ]
“আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতির প্রতি রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং পরিহার কর তাগূতকে”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৬]
﴿ٱللَّهُ يَصۡطَفِي مِنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ رُسُلٗا وَمِنَ ٱلنَّاسِۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعُۢ بَصِيرٞ ٧٥﴾ [ الحج : ٧٥ ]
“আল্লাহ ফিরিশতা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন। অবশ্যই আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭৫]
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ إِلَّا رِجَالٗا نُّوحِيٓ إِلَيۡهِمۡۖ فَسَۡٔلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلذِّكۡرِ إِن كُنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٤٣﴾ [ النحل : ٤٣ ]
“আর আমি তোমার পূর্বে কেবল পুরুষদেরকেই রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছি, যাদের প্রতি আমি অহী পাঠিয়েছি। সুতরাং জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জানো”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭৫] আমি
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿رُّسُلٗا مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى ٱللَّهِ حُجَّةُۢ بَعۡدَ ٱلرُّسُلِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمٗا ١٦٥﴾ [ النساء : ١٦٥ ]
“আর আমি (পাঠিয়েছি) রাসূলগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, যাতে আল্লাহর বিপক্ষে রাসূলদের পর মানুষের জন্য কোনো অজুহাত না থাকে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬৫]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ ٣٦﴾ [ النحل : ٣٦ ]
“আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতির প্রতি রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং পরিহার কর তাগূতকে”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৬]
প্রথমত: এ কথা বিশ্বাস স্থাপন করা যে, কাউকে রাসূল বানানো এটি আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। এ মহৎ কর্মটি শুধুমাত্র তাঁর ইচ্ছা ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী হয়। তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَإِذَا جَآءَتۡهُمۡ ءَايَةٞ قَالُواْ لَن نُّؤۡمِنَ حَتَّىٰ نُؤۡتَىٰ مِثۡلَ مَآ أُوتِيَ رُسُلُ ٱللَّهِۘ ٱللَّهُ أَعۡلَمُ حَيۡثُ يَجۡعَلُ رِسَالَتَهُۥۗ ١٢٤﴾ [ الانعام : ١٢٤ ]
“আর যখন তাদের নিকট কোনো নিদর্শন আসে, তারা বলে, আমরা কখনই ঈমান আনব না, যতক্ষণ না আল্লাহর রাসূলদেরকে যা দেওয়া হয়েছে আমাদেরকে তার অনুরূপ দেওয়া হয়। আল্লাহ ভালো জানেন, তিনি কোথায় তাঁর রিসালাত অর্পণ করবেন”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২৪]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَقَالُواْ لَوۡلَا نُزِّلَ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانُ عَلَىٰ رَجُلٖ مِّنَ ٱلۡقَرۡيَتَيۡنِ عَظِيمٍ ٣١ أَهُمۡ يَقۡسِمُونَ رَحۡمَتَ رَبِّكَۚ نَحۡنُ قَسَمۡنَا بَيۡنَهُم مَّعِيشَتَهُمۡ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۚ وَرَفَعۡنَا بَعۡضَهُمۡ فَوۡقَ بَعۡضٖ دَرَجَٰتٖ لِّيَتَّخِذَ بَعۡضُهُم بَعۡضٗا سُخۡرِيّٗاۗ وَرَحۡمَتُ رَبِّكَ خَيۡرٞ مِّمَّا يَجۡمَعُونَ ٣٢﴾ [ الزخرف : ٣١، ٣٢ ]
“আর তারা বলল, ‘এ কুরআন কেন দুই জনপদের মধ্যকার কোনো মহান ব্যক্তির উপর নাযিল করা হলো না’?। তারা কি তোমার রবের রহমত ভাগ-বণ্টন করে? আমরাই দুনিয়ার জীবনে তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করে দেই এবং তাদের একজনকে অপর জনের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি যাতে একে অপরকে অধিনস্থ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। আর তারা যা সঞ্চয় করে তোমার রবের রহমত তা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট”। [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৩১, ৩২]
সুতরাং রিসালত ও নবুওয়ত চেষ্টা সাধনা ও মুজাহাদা করে পাওয়া যায় না। যেমনটি কতক যিনদীক সূফীরা বিশ্বাস করে থাকে, বরং নবুওয়াত ও রিসালাত শুধুমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহ ও নির্বাচন। আল্লাহ তার সম্মানিত মাখলুক থেকে যাকে চান তাকে এ দায়িত্বের জন্য নির্বাচন করেন।
দ্বিতীয়ত: সমস্ত নাবী ও রাসূলদের উপর ঈমান আনতে হবে। যাদের নাম জানা আছে তাদের প্রতি নির্ধারিতভাবে তাদের নাম অনুযায়ী ঈমান আনতে হবে। আর যাদের নাম জানা নেই তাদের প্রতি সামগ্রিকভাবে ঈমান আনতে হবে। নাবীদের থেকে যাদের নাম আমরা জানতের পেরেছি তা ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের আলোচনার পর একসাথে মহান আল্লাহ বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَوَهَبۡنَا لَهُۥٓ إِسۡحَٰقَ وَيَعۡقُوبَۚ كُلًّا هَدَيۡنَاۚ وَنُوحًا هَدَيۡنَا مِن قَبۡلُۖ وَمِن ذُرِّيَّتِهِۦ دَاوُۥدَ وَسُلَيۡمَٰنَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَىٰ وَهَٰرُونَۚ وَكَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٨٤ وَزَكَرِيَّا وَيَحۡيَىٰ وَعِيسَىٰ وَإِلۡيَاسَۖ كُلّٞ مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ٨٥ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَٱلۡيَسَعَ وَيُونُسَ وَلُوطٗاۚ وَكُلّٗا فَضَّلۡنَا عَلَى ٱلۡعَٰلَمِينَ ٨٦﴾ [ الانعام : ٨٤، ٨٦ ]
“আর আমি ইব্রাহিমকে দান করেছি ইসহাক ও ইয়াকূবকে। প্রত্যেককে আমি হিদায়াত দিয়েছি এবং নূহকে পূর্বে হিদায়াত দিয়েছি। আর তার সন্তানদের মধ্য থেকে দাঊদ, সুলাইমান, আইয়ুব, ইউসুফ, মূসা ও হারূনকে হিদায়াত দিয়েছি। আর আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদেরকে প্রতিদান প্রদান করি। আর যাকারিয়্যা, ইয়াহইয়া, ঈসা ও ইলয়াসকে। প্রত্যেকেই নেককারদের অন্তর্ভুক্ত। আর ইসমাঈল, আল ইয়াসা‘, ইউনুস ও লূতকে। প্রত্যেককে আমি সৃষ্টিকুলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৮৪, ৮৬]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَرُسُلٗا قَدۡ قَصَصۡنَٰهُمۡ عَلَيۡكَ مِن قَبۡلُ وَرُسُلٗا لَّمۡ نَقۡصُصۡهُمۡ عَلَيۡكَۚ﴾ [ النساء : ١٦٤ ]
“আর অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা তোমাকে পূর্বে দিয়েছি এবং অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা তোমাকে প্রদান করি নি”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬৪]
সুতরাং ওয়াজিব হলো, সমস্ত নাবীদের প্রতি ঈমান স্থাপন করা। কারণ, তাদের সবার দাওয়াত এক ও অভিন্ন। আল্লাহ তা‘লা বলেন:
﴿۞شَرَعَ لَكُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِۦ نُوحٗا وَٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ وَمَا وَصَّيۡنَا بِهِۦٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰٓۖ أَنۡ أَقِيمُواْ ٱلدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُواْ فِيهِۚ كَبُرَ عَلَى ٱلۡمُشۡرِكِينَ مَا تَدۡعُوهُمۡ إِلَيۡهِۚ ٱللَّهُ يَجۡتَبِيٓ إِلَيۡهِ مَن يَشَآءُ وَيَهۡدِيٓ إِلَيۡهِ مَن يُنِيبُ ١٣﴾ [ الشورى : ١٣ ]
“তিনি তোমাদের জন্য দীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; যে বিষয়ে তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমি তোমার কাছে যে অহী পাঠিয়েছি এবং ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হলো, তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না। তুমি মুশরিকদেরকে যেদিকে আহ্বান করছ তা তাদের কাছে কঠিন মনে হয়; আল্লাহ যাকে চান তার দিকে নিয়ে আসেন। আর যে তাঁর অভিমুখী হয় তাকে তিনি হিদায়াত দান করেন”। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১৩]
কোনো একজন নাবীকে অস্বীকার করার অর্থ সব নাবীকেই অস্বীকাদর করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿كَذَّبَتۡ قَوۡمُ نُوحٍ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ١٠٥﴾ [ الشعراء : ١٠٥ ]
“নূহ-এর কওম রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল”। [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ১০৫] অথচ তিনিই হলেন সর্বপ্রথম রাসূল। সুতরাং আল্লাহর রাসূলদের মধ্যে পার্থক্য করা এবং কারো প্রতি ঈমান স্থাপন করা আবার কাউকে অস্বীকার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যে এমন করবে সে অবশ্যই কাফের হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡفُرُونَ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُواْ بَيۡنَ ٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيَقُولُونَ نُؤۡمِنُ بِبَعۡضٖ وَنَكۡفُرُ بِبَعۡضٖ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُواْ بَيۡنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا ١٥٠ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ حَقّٗاۚ وَأَعۡتَدۡنَا لِلۡكَٰفِرِينَ عَذَابٗا مُّهِينٗا ١٥١ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَلَمۡ يُفَرِّقُواْ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّنۡهُمۡ أُوْلَٰٓئِكَ سَوۡفَ يُؤۡتِيهِمۡ أُجُورَهُمۡۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٥٢﴾ [ النساء : ١٥٠، ١٥٢ ]
“নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফুরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি আর কতকের সাথে কুফুরী করি’ এবং তারা এর মাঝামাঝি একটি পথ গ্রহণ করতে চায়, তারাই প্রকৃত কাফির এবং আমি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছি অপমানকর আযাব। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করে নি, তাদেরকে অচিরেই তিনি তাদের প্রতিদান দিবেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৫০, ১৫২]
তৃতীয়ত: নাবী ও রাসূলদের বিশ্বাস স্থাপন করা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা উম্মতদের যে সংবাদ দিয়েছেন তা কবুল করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَكُمُ ٱلرَّسُولُ بِٱلۡحَقِّ مِن رَّبِّكُمۡ فََٔامِنُواْ خَيۡرٗا لَّكُمۡۚ وَإِن تَكۡفُرُواْ فَإِنَّ لِلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمٗا ١٧٠﴾ [ النساء : ١٧٠ ]
“হে মানুষ, অবশ্যই তোমাদের নিকট রাসূল এসেছে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য ধর্ম ইসলাম নিয়ে। সুতরাং তোমরা ঈমান আন, তা তোমাদের জন্য উত্তম হবে। আর যদি কুফুরী কর, তবে নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনে যা রয়েছে, তা আল্লাহর জন্যই এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৭০]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَٱلَّذِي جَآءَ بِٱلصِّدۡقِ وَصَدَّقَ بِهِۦٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُتَّقُونَ ٣٣﴾ [ الزمر : ٣٣ ]
“আর যে সত্য নিয়ে এসেছে এবং যে তা সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারাই হলো শির্ত বর্জনকারী”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩৩]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَٱلنَّجۡمِ إِذَا هَوَىٰ ١ مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمۡ وَمَا غَوَىٰ ٢ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤ عَلَّمَهُۥ شَدِيدُ ٱلۡقُوَىٰ ٥﴾ [ النجم : ١، ٥ ]
“কসম নক্ষত্রের, যখন তা অস্ত যায়। তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হয় নি এবং বিপথগামীও হয় নি। আর সে মনগড়া কথা বলে না। তাতো কেবল অহী, যা তার প্রতি অহীরূপে প্রেরণ করা হয়। তাকে শিক্ষা দিয়েছে প্রবল শক্তিধর”। [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ১, ৫]
আগেকার নাবীদের যে সব সংবাদ মহান আল্লাহ তার কিতাবে তুলে ধরেছেন এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে আমরা জানতে পেরেছি, তার প্রতি ঈমান স্থাপন করা ও বিশ্বাস স্থাপন করা আমাদের উপর ওয়াজিব। এ ছাড়া ইসরাঈলী বর্ণনায় তাদের বিষয়ে যে সব কথা-বার্তা, কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণিত রয়েছে তার উপর ঐ বিধানই প্রয়োগ হবে যার বিস্তারিত আলোচনা আমি কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান অধ্যায়ে করেছি। আর নাবীদের বিষয়ে যে সব কথা আমাদের নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়ে থাকে, তার সহীহ হওয়া বা না হওয়ার ক্ষেত্রে হাদীস বিশারদের মূলনীতি বাস্তবায়িত হবে। সহীহ সনদে প্রমাণিত বিষয়গুলো কবুল করা ও তার প্রতি ঈমান স্থাপন করা ওয়াজিব।
চতুর্থত: নাবী ও রাসূলদের আনুগত্য করা, তাদের অনুসরণ করা এবং তাদেরকে বিচারক মানা:
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ٦٤﴾ [ النساء : ٦٤ ]
“আর আমি যে কোনো রাসূল প্রেরণ করেছি তা কেবল এ জন্য, যেন আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদের আনুগত্য করা হয়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৪]
প্রত্যেক উম্মতের জন্য ওয়াজিব হলো, তাদের নিকট যে নাবীকে প্রেরণ করা হয়েছে, তার আনুগত্য-অনুসরণ-অনুকরণ করা। যেহেতু দুনিয়াতে নাবীদের শেষ নাবী মুহম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার আগমনের পর আর কোনো নাবী আসবে না এবং তার শরী‘আত পূর্বের সমস্ত নাবীদের শরী‘আতকে রহিত করে দিয়েছে, তাই যারা তার সংবাদ পাবে তাদের উপর তার প্রতি ঈমান স্থাপন করা ও তার আনুগত্য করা ওয়াজিব হওয়া নির্ধারিত। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِيَّ ٱلۡأُمِّيَّ ٱلَّذِي يَجِدُونَهُۥ مَكۡتُوبًا عِندَهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَٰلَ ٱلَّتِي كَانَتۡ عَلَيۡهِمۡۚ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُواْ ٱلنُّورَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٥٧ ﴾ [ الاعراف : ١٥٦، ١٥٧ ]
“যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যে উম্মী নাবী; যার গুণাবলী তারা নিজদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃঙ্খল - যা তাদের উপরে ছিল- অপসারণ করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে পবিত্র কুরআন নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে তারাই সফলকাম”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৬, ১৫৭]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٣٢﴾ [ ال عمران : ٣١، ٣٢ ]
“বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। বল, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর’। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১, ৩২]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ النساء : ٦٥ ]
“অতএব, তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫]
পঞ্চমত: নাবী ও রাসূলদের মহব্বত করা, তাদের সম্মান রক্ষা করা, তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلَّذِينَ يُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَهُمۡ رَٰكِعُونَ ٥٥ وَمَن يَتَوَلَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ فَإِنَّ حِزۡبَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡغَٰلِبُونَ ٥٦﴾ [ المائدة : ٥٥، ٥٦ ]
“তোমাদের বন্ধু কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ, যারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে বিনীত হয়ে। আর যে আল্লাহ, তাঁর রাসূদল ও মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহর দলই বিজয়ী”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৫৫, ৫৬]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَلَمَّآ أَحَسَّ عِيسَىٰ مِنۡهُمُ ٱلۡكُفۡرَ قَالَ مَنۡ أَنصَارِيٓ إِلَى ٱللَّهِۖ قَالَ ٱلۡحَوَارِيُّونَ نَحۡنُ أَنصَارُ ٱللَّهِ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَٱشۡهَدۡ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ ٥٢﴾ [ ال عمران : ٥٢ ]
“অতঃপর যখন ঈসা তাদের পক্ষ হতে কুফুরী উপলব্ধি করল, তখন বলল, ‘কে আল্লাহর জন্য আমার সাহায্যকারী হবে’? হাওয়ারীগণ বলল, ‘আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম’’। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৫২]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنْ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ﴾ [ التوبة : ٢٤ ]
“বল, ‘তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের সে সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর সে ব্যবসা যার মন্দা হওয়ার আশঙ্কা তোমরা করছ এবং সে বাসস্থান, যা তোমরা পছন্দ করছ, যদি তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয় আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত’। আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না”। [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ২৪]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَسَلَٰمٌ عَلَى ٱلۡمُرۡسَلِينَ ١٨١﴾ [ الصافات : ١٨١ ]
“আর রাসূলদের প্রতি সালাম”। [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ১৮১]
আমাদের নাবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لِّتُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُۚ وَتُسَبِّحُوهُ بُكۡرَةٗ وَأَصِيلًا ٩﴾ [ الفتح : ٩ ]
“যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আন, তাকে সাহায্য ও সম্মান কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ কর”। [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ৯]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦﴾ [ الاحزاب : ٥٦ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফিরিশতাদের মধ্যে) নাবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণ নাবীর জন্য দো‘আ করেন [ইমাম বুখারী আবুল ‘আলিয়া থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর আল্লাহর সালাত’ বলতে বুঝানো হয়েছে ফিরিশতাদের কাছে নাবীর প্রশংসা এবং ফিরিশতাদের সালাত হলো দো‘আ। আর ইমাম তিরমিযী সুফীয়ান সওরী রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, এখানে আল্লাহর সালাত বলতে রহমত এবং ফিরিশতাদের সালাত বলতে ইস্তেগফার বুঝানো হয়েছে। (তাফসীর ইবন কাসীর)।]। হে মুমিনগণ, তোমরাও নাবীর উপর দুরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৬]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من والده، وولده، والناس أجمعين» .
“যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমাদের নিকট তোমাদের সন্তান, মাতা-পিতা ও সমস্ত মানুষ থেকে অধিক প্রিয় না হব, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৪।]
﴿وَإِذَا جَآءَتۡهُمۡ ءَايَةٞ قَالُواْ لَن نُّؤۡمِنَ حَتَّىٰ نُؤۡتَىٰ مِثۡلَ مَآ أُوتِيَ رُسُلُ ٱللَّهِۘ ٱللَّهُ أَعۡلَمُ حَيۡثُ يَجۡعَلُ رِسَالَتَهُۥۗ ١٢٤﴾ [ الانعام : ١٢٤ ]
“আর যখন তাদের নিকট কোনো নিদর্শন আসে, তারা বলে, আমরা কখনই ঈমান আনব না, যতক্ষণ না আল্লাহর রাসূলদেরকে যা দেওয়া হয়েছে আমাদেরকে তার অনুরূপ দেওয়া হয়। আল্লাহ ভালো জানেন, তিনি কোথায় তাঁর রিসালাত অর্পণ করবেন”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২৪]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَقَالُواْ لَوۡلَا نُزِّلَ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانُ عَلَىٰ رَجُلٖ مِّنَ ٱلۡقَرۡيَتَيۡنِ عَظِيمٍ ٣١ أَهُمۡ يَقۡسِمُونَ رَحۡمَتَ رَبِّكَۚ نَحۡنُ قَسَمۡنَا بَيۡنَهُم مَّعِيشَتَهُمۡ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۚ وَرَفَعۡنَا بَعۡضَهُمۡ فَوۡقَ بَعۡضٖ دَرَجَٰتٖ لِّيَتَّخِذَ بَعۡضُهُم بَعۡضٗا سُخۡرِيّٗاۗ وَرَحۡمَتُ رَبِّكَ خَيۡرٞ مِّمَّا يَجۡمَعُونَ ٣٢﴾ [ الزخرف : ٣١، ٣٢ ]
“আর তারা বলল, ‘এ কুরআন কেন দুই জনপদের মধ্যকার কোনো মহান ব্যক্তির উপর নাযিল করা হলো না’?। তারা কি তোমার রবের রহমত ভাগ-বণ্টন করে? আমরাই দুনিয়ার জীবনে তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করে দেই এবং তাদের একজনকে অপর জনের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি যাতে একে অপরকে অধিনস্থ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। আর তারা যা সঞ্চয় করে তোমার রবের রহমত তা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট”। [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৩১, ৩২]
সুতরাং রিসালত ও নবুওয়ত চেষ্টা সাধনা ও মুজাহাদা করে পাওয়া যায় না। যেমনটি কতক যিনদীক সূফীরা বিশ্বাস করে থাকে, বরং নবুওয়াত ও রিসালাত শুধুমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহ ও নির্বাচন। আল্লাহ তার সম্মানিত মাখলুক থেকে যাকে চান তাকে এ দায়িত্বের জন্য নির্বাচন করেন।
দ্বিতীয়ত: সমস্ত নাবী ও রাসূলদের উপর ঈমান আনতে হবে। যাদের নাম জানা আছে তাদের প্রতি নির্ধারিতভাবে তাদের নাম অনুযায়ী ঈমান আনতে হবে। আর যাদের নাম জানা নেই তাদের প্রতি সামগ্রিকভাবে ঈমান আনতে হবে। নাবীদের থেকে যাদের নাম আমরা জানতের পেরেছি তা ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের আলোচনার পর একসাথে মহান আল্লাহ বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَوَهَبۡنَا لَهُۥٓ إِسۡحَٰقَ وَيَعۡقُوبَۚ كُلًّا هَدَيۡنَاۚ وَنُوحًا هَدَيۡنَا مِن قَبۡلُۖ وَمِن ذُرِّيَّتِهِۦ دَاوُۥدَ وَسُلَيۡمَٰنَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَىٰ وَهَٰرُونَۚ وَكَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٨٤ وَزَكَرِيَّا وَيَحۡيَىٰ وَعِيسَىٰ وَإِلۡيَاسَۖ كُلّٞ مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ٨٥ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَٱلۡيَسَعَ وَيُونُسَ وَلُوطٗاۚ وَكُلّٗا فَضَّلۡنَا عَلَى ٱلۡعَٰلَمِينَ ٨٦﴾ [ الانعام : ٨٤، ٨٦ ]
“আর আমি ইব্রাহিমকে দান করেছি ইসহাক ও ইয়াকূবকে। প্রত্যেককে আমি হিদায়াত দিয়েছি এবং নূহকে পূর্বে হিদায়াত দিয়েছি। আর তার সন্তানদের মধ্য থেকে দাঊদ, সুলাইমান, আইয়ুব, ইউসুফ, মূসা ও হারূনকে হিদায়াত দিয়েছি। আর আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদেরকে প্রতিদান প্রদান করি। আর যাকারিয়্যা, ইয়াহইয়া, ঈসা ও ইলয়াসকে। প্রত্যেকেই নেককারদের অন্তর্ভুক্ত। আর ইসমাঈল, আল ইয়াসা‘, ইউনুস ও লূতকে। প্রত্যেককে আমি সৃষ্টিকুলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৮৪, ৮৬]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَرُسُلٗا قَدۡ قَصَصۡنَٰهُمۡ عَلَيۡكَ مِن قَبۡلُ وَرُسُلٗا لَّمۡ نَقۡصُصۡهُمۡ عَلَيۡكَۚ﴾ [ النساء : ١٦٤ ]
“আর অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা তোমাকে পূর্বে দিয়েছি এবং অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা তোমাকে প্রদান করি নি”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬৪]
সুতরাং ওয়াজিব হলো, সমস্ত নাবীদের প্রতি ঈমান স্থাপন করা। কারণ, তাদের সবার দাওয়াত এক ও অভিন্ন। আল্লাহ তা‘লা বলেন:
﴿۞شَرَعَ لَكُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِۦ نُوحٗا وَٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ وَمَا وَصَّيۡنَا بِهِۦٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰٓۖ أَنۡ أَقِيمُواْ ٱلدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُواْ فِيهِۚ كَبُرَ عَلَى ٱلۡمُشۡرِكِينَ مَا تَدۡعُوهُمۡ إِلَيۡهِۚ ٱللَّهُ يَجۡتَبِيٓ إِلَيۡهِ مَن يَشَآءُ وَيَهۡدِيٓ إِلَيۡهِ مَن يُنِيبُ ١٣﴾ [ الشورى : ١٣ ]
“তিনি তোমাদের জন্য দীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; যে বিষয়ে তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমি তোমার কাছে যে অহী পাঠিয়েছি এবং ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হলো, তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না। তুমি মুশরিকদেরকে যেদিকে আহ্বান করছ তা তাদের কাছে কঠিন মনে হয়; আল্লাহ যাকে চান তার দিকে নিয়ে আসেন। আর যে তাঁর অভিমুখী হয় তাকে তিনি হিদায়াত দান করেন”। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১৩]
কোনো একজন নাবীকে অস্বীকার করার অর্থ সব নাবীকেই অস্বীকাদর করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿كَذَّبَتۡ قَوۡمُ نُوحٍ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ١٠٥﴾ [ الشعراء : ١٠٥ ]
“নূহ-এর কওম রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল”। [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ১০৫] অথচ তিনিই হলেন সর্বপ্রথম রাসূল। সুতরাং আল্লাহর রাসূলদের মধ্যে পার্থক্য করা এবং কারো প্রতি ঈমান স্থাপন করা আবার কাউকে অস্বীকার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যে এমন করবে সে অবশ্যই কাফের হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡفُرُونَ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُواْ بَيۡنَ ٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيَقُولُونَ نُؤۡمِنُ بِبَعۡضٖ وَنَكۡفُرُ بِبَعۡضٖ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُواْ بَيۡنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا ١٥٠ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ حَقّٗاۚ وَأَعۡتَدۡنَا لِلۡكَٰفِرِينَ عَذَابٗا مُّهِينٗا ١٥١ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَلَمۡ يُفَرِّقُواْ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّنۡهُمۡ أُوْلَٰٓئِكَ سَوۡفَ يُؤۡتِيهِمۡ أُجُورَهُمۡۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٥٢﴾ [ النساء : ١٥٠، ١٥٢ ]
“নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফুরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি আর কতকের সাথে কুফুরী করি’ এবং তারা এর মাঝামাঝি একটি পথ গ্রহণ করতে চায়, তারাই প্রকৃত কাফির এবং আমি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছি অপমানকর আযাব। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করে নি, তাদেরকে অচিরেই তিনি তাদের প্রতিদান দিবেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৫০, ১৫২]
তৃতীয়ত: নাবী ও রাসূলদের বিশ্বাস স্থাপন করা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা উম্মতদের যে সংবাদ দিয়েছেন তা কবুল করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَكُمُ ٱلرَّسُولُ بِٱلۡحَقِّ مِن رَّبِّكُمۡ فََٔامِنُواْ خَيۡرٗا لَّكُمۡۚ وَإِن تَكۡفُرُواْ فَإِنَّ لِلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمٗا ١٧٠﴾ [ النساء : ١٧٠ ]
“হে মানুষ, অবশ্যই তোমাদের নিকট রাসূল এসেছে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য ধর্ম ইসলাম নিয়ে। সুতরাং তোমরা ঈমান আন, তা তোমাদের জন্য উত্তম হবে। আর যদি কুফুরী কর, তবে নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনে যা রয়েছে, তা আল্লাহর জন্যই এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৭০]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَٱلَّذِي جَآءَ بِٱلصِّدۡقِ وَصَدَّقَ بِهِۦٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُتَّقُونَ ٣٣﴾ [ الزمر : ٣٣ ]
“আর যে সত্য নিয়ে এসেছে এবং যে তা সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারাই হলো শির্ত বর্জনকারী”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩৩]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَٱلنَّجۡمِ إِذَا هَوَىٰ ١ مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمۡ وَمَا غَوَىٰ ٢ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤ عَلَّمَهُۥ شَدِيدُ ٱلۡقُوَىٰ ٥﴾ [ النجم : ١، ٥ ]
“কসম নক্ষত্রের, যখন তা অস্ত যায়। তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হয় নি এবং বিপথগামীও হয় নি। আর সে মনগড়া কথা বলে না। তাতো কেবল অহী, যা তার প্রতি অহীরূপে প্রেরণ করা হয়। তাকে শিক্ষা দিয়েছে প্রবল শক্তিধর”। [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ১, ৫]
আগেকার নাবীদের যে সব সংবাদ মহান আল্লাহ তার কিতাবে তুলে ধরেছেন এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে আমরা জানতে পেরেছি, তার প্রতি ঈমান স্থাপন করা ও বিশ্বাস স্থাপন করা আমাদের উপর ওয়াজিব। এ ছাড়া ইসরাঈলী বর্ণনায় তাদের বিষয়ে যে সব কথা-বার্তা, কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণিত রয়েছে তার উপর ঐ বিধানই প্রয়োগ হবে যার বিস্তারিত আলোচনা আমি কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান অধ্যায়ে করেছি। আর নাবীদের বিষয়ে যে সব কথা আমাদের নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়ে থাকে, তার সহীহ হওয়া বা না হওয়ার ক্ষেত্রে হাদীস বিশারদের মূলনীতি বাস্তবায়িত হবে। সহীহ সনদে প্রমাণিত বিষয়গুলো কবুল করা ও তার প্রতি ঈমান স্থাপন করা ওয়াজিব।
চতুর্থত: নাবী ও রাসূলদের আনুগত্য করা, তাদের অনুসরণ করা এবং তাদেরকে বিচারক মানা:
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ٦٤﴾ [ النساء : ٦٤ ]
“আর আমি যে কোনো রাসূল প্রেরণ করেছি তা কেবল এ জন্য, যেন আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদের আনুগত্য করা হয়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৪]
প্রত্যেক উম্মতের জন্য ওয়াজিব হলো, তাদের নিকট যে নাবীকে প্রেরণ করা হয়েছে, তার আনুগত্য-অনুসরণ-অনুকরণ করা। যেহেতু দুনিয়াতে নাবীদের শেষ নাবী মুহম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার আগমনের পর আর কোনো নাবী আসবে না এবং তার শরী‘আত পূর্বের সমস্ত নাবীদের শরী‘আতকে রহিত করে দিয়েছে, তাই যারা তার সংবাদ পাবে তাদের উপর তার প্রতি ঈমান স্থাপন করা ও তার আনুগত্য করা ওয়াজিব হওয়া নির্ধারিত। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِيَّ ٱلۡأُمِّيَّ ٱلَّذِي يَجِدُونَهُۥ مَكۡتُوبًا عِندَهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَٰلَ ٱلَّتِي كَانَتۡ عَلَيۡهِمۡۚ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُواْ ٱلنُّورَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٥٧ ﴾ [ الاعراف : ١٥٦، ١٥٧ ]
“যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যে উম্মী নাবী; যার গুণাবলী তারা নিজদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃঙ্খল - যা তাদের উপরে ছিল- অপসারণ করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে পবিত্র কুরআন নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে তারাই সফলকাম”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৬, ১৫৭]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٣٢﴾ [ ال عمران : ٣١، ٣٢ ]
“বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। বল, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর’। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১, ৩২]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ النساء : ٦٥ ]
“অতএব, তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫]
পঞ্চমত: নাবী ও রাসূলদের মহব্বত করা, তাদের সম্মান রক্ষা করা, তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلَّذِينَ يُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَهُمۡ رَٰكِعُونَ ٥٥ وَمَن يَتَوَلَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ فَإِنَّ حِزۡبَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡغَٰلِبُونَ ٥٦﴾ [ المائدة : ٥٥، ٥٦ ]
“তোমাদের বন্ধু কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ, যারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে বিনীত হয়ে। আর যে আল্লাহ, তাঁর রাসূদল ও মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহর দলই বিজয়ী”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৫৫, ৫৬]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَلَمَّآ أَحَسَّ عِيسَىٰ مِنۡهُمُ ٱلۡكُفۡرَ قَالَ مَنۡ أَنصَارِيٓ إِلَى ٱللَّهِۖ قَالَ ٱلۡحَوَارِيُّونَ نَحۡنُ أَنصَارُ ٱللَّهِ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَٱشۡهَدۡ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ ٥٢﴾ [ ال عمران : ٥٢ ]
“অতঃপর যখন ঈসা তাদের পক্ষ হতে কুফুরী উপলব্ধি করল, তখন বলল, ‘কে আল্লাহর জন্য আমার সাহায্যকারী হবে’? হাওয়ারীগণ বলল, ‘আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম’’। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৫২]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنْ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ﴾ [ التوبة : ٢٤ ]
“বল, ‘তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের সে সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর সে ব্যবসা যার মন্দা হওয়ার আশঙ্কা তোমরা করছ এবং সে বাসস্থান, যা তোমরা পছন্দ করছ, যদি তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয় আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত’। আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না”। [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ২৪]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَسَلَٰمٌ عَلَى ٱلۡمُرۡسَلِينَ ١٨١﴾ [ الصافات : ١٨١ ]
“আর রাসূলদের প্রতি সালাম”। [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ১৮১]
আমাদের নাবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لِّتُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُۚ وَتُسَبِّحُوهُ بُكۡرَةٗ وَأَصِيلًا ٩﴾ [ الفتح : ٩ ]
“যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আন, তাকে সাহায্য ও সম্মান কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ কর”। [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ৯]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦﴾ [ الاحزاب : ٥٦ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফিরিশতাদের মধ্যে) নাবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণ নাবীর জন্য দো‘আ করেন [ইমাম বুখারী আবুল ‘আলিয়া থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর আল্লাহর সালাত’ বলতে বুঝানো হয়েছে ফিরিশতাদের কাছে নাবীর প্রশংসা এবং ফিরিশতাদের সালাত হলো দো‘আ। আর ইমাম তিরমিযী সুফীয়ান সওরী রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, এখানে আল্লাহর সালাত বলতে রহমত এবং ফিরিশতাদের সালাত বলতে ইস্তেগফার বুঝানো হয়েছে। (তাফসীর ইবন কাসীর)।]। হে মুমিনগণ, তোমরাও নাবীর উপর দুরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৬]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من والده، وولده، والناس أجمعين» .
“যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমাদের নিকট তোমাদের সন্তান, মাতা-পিতা ও সমস্ত মানুষ থেকে অধিক প্রিয় না হব, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৪।]
এ কথার দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে, মহান আল্লাহ যে দিন বান্দাদেরকে তাদের কবরসমূহ থেকে বের করবেন, তাদের কৃতকর্মের হিসাব নিবেন এবং তার উপর বিনিময়ে হয় জান্নাত অথবা জাহান্নাম দেবেন সেদিন পর্যন্ত তাদের অবকাশ দেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمۡ لِيَوۡمٖ تَشۡخَصُ فِيهِ ٱلۡأَبۡصَٰرُ ٤٢﴾ [ ابراهيم : ٤٢ ]
“আল্লাহ তো তাদের অবকাশ দিচ্ছেন, ঐ দিন পর্যন্ত যে দিন চোখ পলকহীন তাকিয়ে থাকবে”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪২]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿زَعَمَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ أَن لَّن يُبۡعَثُواْۚ قُلۡ بَلَىٰ وَرَبِّي لَتُبۡعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلۡتُمۡۚ وَذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٧﴾ [ التغابن : ٧ ]
“কাফিররা ধারণা করেছিল যে, তারা কখনোই পুনরুত্থিত হবে না। বল, ‘হ্যাঁ, আমার রবের কসম, তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমরা যা আমল করেছিলে তা অবশ্যই তোমাদের জানানো হবে। আর এটি আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ”। [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ৭]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَيَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ يَوۡمَئِذٖ يَتَفَرَّقُونَ ١٤ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَهُمۡ فِي رَوۡضَةٖ يُحۡبَرُونَ ١٥ وَأَمَّا ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَكَذَّبُواْ بَِٔايَٰتِنَا وَلِقَآيِٕ ٱلۡأٓخِرَةِ فَأُوْلَٰٓئِكَ فِي ٱلۡعَذَابِ مُحۡضَرُونَ ١٦﴾ [ الروم : ١٤، ١٦ ]
“আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন তারা বিভক্ত হয়ে পড়বে। অতএব যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে জান্নাতে পরিতুষ্ট করা হবে। আর যারা কুফুরী করেছে এবং আমার আয়াত ও আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছে, তাদেরকে আযাবের মধ্যে উপস্থিত করা হবে”। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ১৪, ১৬]
﴿إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمۡ لِيَوۡمٖ تَشۡخَصُ فِيهِ ٱلۡأَبۡصَٰرُ ٤٢﴾ [ ابراهيم : ٤٢ ]
“আল্লাহ তো তাদের অবকাশ দিচ্ছেন, ঐ দিন পর্যন্ত যে দিন চোখ পলকহীন তাকিয়ে থাকবে”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪২]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿زَعَمَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ أَن لَّن يُبۡعَثُواْۚ قُلۡ بَلَىٰ وَرَبِّي لَتُبۡعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلۡتُمۡۚ وَذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٧﴾ [ التغابن : ٧ ]
“কাফিররা ধারণা করেছিল যে, তারা কখনোই পুনরুত্থিত হবে না। বল, ‘হ্যাঁ, আমার রবের কসম, তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমরা যা আমল করেছিলে তা অবশ্যই তোমাদের জানানো হবে। আর এটি আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ”। [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ৭]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَيَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ يَوۡمَئِذٖ يَتَفَرَّقُونَ ١٤ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَهُمۡ فِي رَوۡضَةٖ يُحۡبَرُونَ ١٥ وَأَمَّا ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَكَذَّبُواْ بَِٔايَٰتِنَا وَلِقَآيِٕ ٱلۡأٓخِرَةِ فَأُوْلَٰٓئِكَ فِي ٱلۡعَذَابِ مُحۡضَرُونَ ١٦﴾ [ الروم : ١٤، ١٦ ]
“আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন তারা বিভক্ত হয়ে পড়বে। অতএব যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে জান্নাতে পরিতুষ্ট করা হবে। আর যারা কুফুরী করেছে এবং আমার আয়াত ও আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছে, তাদেরকে আযাবের মধ্যে উপস্থিত করা হবে”। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ১৪, ১৬]
আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে:
প্রথমত: মৃত্যুর পর যা সংঘটিত হবে তার প্রতি ঈমান স্থাপন করা: মৃত্যুর সময় ফিরিশতাদের দেখা, কবরের পরীক্ষা যা দুই জন ফিরিশতা একজন বান্দাকে কবরে রাখার পর তার রব, দীন ও রাসূল সম্পর্কে জিজ্ঞাসার সম্মূখীন হবে, কবরের শাস্তি ও নি‘আমত যা আলমে বারযখে সংঘটিত হবে ইত্যাদি বিষয়সমূহের প্রতি ঈমান স্থাপন করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَوۡ تَرَىٰٓ إِذۡ يَتَوَفَّى ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَضۡرِبُونَ وُجُوهَهُمۡ وَأَدۡبَٰرَهُمۡ وَذُوقُواْ عَذَابَ ٱلۡحَرِيقِ ٥٠﴾ [ الانفال : ٥٠ ]
“আর যদি তুমি দেখতে, যখন ফিরিশতারা কাফিরদের প্রাণ হরণ করছিল, তাদের চেহারায় ও পশ্চাতে আঘাত করে, আর (বলছিল) ‘তোমরা জ্বলন্ত আগুনের আযাব আস্বাদন কর’’। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৫০]
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠﴾ [ فصلت : ٣٠ ]
“নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অতঃপর অবিচল তারা তাতে থাকে, ফিরিশতারা তাদের কাছে নাযিল হয় (এবং বলে,) ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেওয়া হয়েছিল’’। [সূরা আল-ফুসসিলাত, আয়াত: ৩০]
﴿وَحَاقَ بَِٔالِ فِرۡعَوۡنَ سُوٓءُ ٱلۡعَذَابِ ٤٥ ٱلنَّارُ يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا غُدُوّٗا وَعَشِيّٗاۚ وَيَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ أَدۡخِلُوٓاْ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ أَشَدَّ ٱلۡعَذَابِ ٤٦ ﴾ [ غافر : ٤٥، ٤٦ ]
“আর ফির‘আউনের অনুসারীদেরকে ঘিরে ফেলল কঠিন আযাব। আগুন, তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে উপস্থিত করা হয়, আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে (সেদিন ঘোষণা করা হবে), ‘ফির‘আউনের অনুসারীদেরকে কঠোরতম আযাবে প্রবেশ করাও”। [সূরা গাফির, আয়াত: ৪৫, ৪৬]
দ্বিতীয়ত: কিয়ামত ও তার আলামতসমূহের প্রতি ঈমান স্থাপন করা: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَا يُدۡرِيكَ لَعَلَّ ٱلسَّاعَةَ قَرِيبٞ ١٧ يَسۡتَعۡجِلُ بِهَا ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِهَاۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مُشۡفِقُونَ مِنۡهَا وَيَعۡلَمُونَ أَنَّهَا ٱلۡحَقُّۗ أَلَآ إِنَّ ٱلَّذِينَ يُمَارُونَ فِي ٱلسَّاعَةِ لَفِي ضَلَٰلِۢ بَعِيدٍ ١٨﴾ [ الشورى : ١٧، ١٨ ]
“আল্লাহ, যিনি সত্যসহ কিতাব ও মীযান [সনদ, ন্যায় বিচার, ইনসাফ, ইত্যাদি।] নাযিল করেছেন। আর কিসে তোমাকে জানাবে, হয়ত কিয়ামত খুবই নিকটবর্তী? যারা এতে ঈমান আনে না, তারাই তা ত্বরান্বিত করতে চায়। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা একে ভয় করে এবং তারা জানে যে, এটা অবশ্যই সত্য। জেনে রেখ, নিশ্চয় যারা কিয়ামত সম্পর্কে বাক-বিতন্ডা করে তারা সুদূর পথভ্রষ্টতায় নিপতিত”। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১৭, ১৮] মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَهَلۡ يَنظُرُونَ إِلَّا ٱلسَّاعَةَ أَن تَأۡتِيَهُم بَغۡتَةٗۖ فَقَدۡ جَآءَ أَشۡرَاطُهَاۚ ١٨﴾ [ محمد : ١٨ ]
“সুতরাং তারা কি কেবল এই অপেক্ষা করছে যে, কিয়ামত তাদের উপর আকস্মিকভাবে এসে পড়ুক? অথচ কিয়ামতের আলামতসমূহ তো এসেই পড়েছে”। [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৮]
কিয়ামতের বড় আলামতসমূহের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী দ্বারা প্রমাণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إنها لن تقوم حتى ترون قبلها عشر آيات، فذكر : الدخان، والدجال، والدابة، وطلوع الشمس من مغربها، ونزول عيسى بن مريم، ويأجوج ومأجوج، وثلاثة خسوف : خسف بالمشرق، وخسف بالمغرب، وخسف بجزيرة العرب، وآخر ذلك نار تخرج من اليمن تطرد الناس إلى محشرهم»
“কিয়ামতের পূর্বে দশটি নিদর্শন সংঘটিত হওয়া ছাড়া কিয়ামত সংঘটিত হবে না। আর তা হলো, (দুখান) ধোঁয়া, দাজ্জাল, (দাব্বাতুল আরদ) জমিনে বিচরণকারী বিশেষ জন্তু, সূর্য পশ্চিম দিকে উদয় হওয়া, ঈসা আলাইহিস সালামের আবতরণ, ইয়াজুজ ও মাজুজের বের হওয়া, তিনটি ভূমি ধস -একটি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে, একটি পশ্চিম প্রান্তে এবং একটি আরব উপত্তাকায়, আর সর্বশেষ নিদর্শন হলো, আগুন যা ইয়ামন থেকে বের হবে, মানুষকে তাদের হাশরের দিকে নিয়ে যাবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯০১]
হঠাৎ ও দ্রুত কিয়ামত এসে যাওয়া: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَسَۡٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرۡسَىٰهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّيۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقۡتِهَآ إِلَّا هُوَۚ ثَقُلَتۡ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ لَا تَأۡتِيكُمۡ إِلَّا بَغۡتَةٗۗ يَسَۡٔلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنۡهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ ٱللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ١٨٧﴾ [ الاعراف : ١٨٦ ]
“তারা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করে, ‘তা কখন ঘটবে’? তুমি বল, ‘এর জ্ঞান তো রয়েছে আমার রবের নিকট। তিনিই এর নির্ধারিত সময়ে তা প্রকাশ করবেন। আসমানসমূহ ও জমিনের উপর তা (কিয়ামত) কঠিন হবে। তা তোমাদের নিকট হঠাৎ এসে পড়বে। তারা তোমাকে প্রশ্ন করছে যেন তুমি এ সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত। বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকট আছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না’’। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৮৬]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَآ أَمۡرُ ٱلسَّاعَةِ إِلَّا كَلَمۡحِ ٱلۡبَصَرِ أَوۡ هُوَ أَقۡرَبُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ٧٧﴾ [ النحل : ٧٧ ]
“আর কিয়ামতের ব্যাপারটি শুধু চোখের পলকের ন্যায়। কিংবা তা আরো নিকটবর্তী। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান”। [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৭৭]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُۖ ٦٨﴾ [ الزمر : ٦٧ ]
“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই মৃত্যুবরণ করবে”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৮]
তৃতীয়ত: পূণরুত্থানের প্রতি ঈমান স্থাপন করা: অর্থাৎ দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার পর মহান আল্লাহ তার বান্দাদের কবরসমূহে থেকে জীবিত, বস্ত্রহীন, খালি পা ও কপালে দাগবিশিষ্ট অবস্থায় বের করবেন। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ আরও বলেন:
﴿ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخۡرَىٰ فَإِذَا هُمۡ قِيَامٞ يَنظُرُونَ ٦٨﴾ [ الزمر : ٦٧ ]
“তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৮]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ ٱلۡأَجۡدَاثِ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ يَنسِلُونَ ٥١﴾ [ يس : ٥١ ]
“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে তাদের রবের দিকে ছুটে আসবে”। [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৫১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا» .
“কিয়ামতের দিন মানুষকে খালি পায়ে, বস্ত্রহীন ও খতনা বিহীন করে উঠানো হবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৫৯]
চতুর্থত: কিয়ামতে কুবরা বা বড় দণ্ডায়মানের উপর ঈমান স্থাপন করা: কিয়ামতের মাঠে সমস্ত মানুষ রাব্বুল আলামীনের সামনে দীর্ঘ সময় দন্ডায়মান থাকা। আহ্বানকারীর আহ্বান শুনতে পাওয়া, চোখ দিয়ে সব দেখতে সমর্থ হওয়া। সেদিন কঠিন সময় ও ভয়াল অবস্থানে সূর্য্য তাদের নিকটে নিয়ে আসা হবে। ঘাম তাদের মূখ পর্যন্ত পৌঁছবে, হাউজে কাউছারে পানি পান করতে সবাই একত্র হবে, তাদের আমলের দপ্তরগুলো খোলা হবে, আমল মাপার জন্য দাড়ি পাল্লা স্থাপন করা হবে, পুলসিরাত দাঁড় করানো হবে।
পঞ্চমত: হিসাব নিকাশের উপর ঈমান স্থাপন করা: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ إِلَيۡنَآ إِيَابَهُمۡ ٢٥ ثُمَّ إِنَّ عَلَيۡنَا حِسَابَهُم ٢٦﴾ [ الغاشية : ٢٥، ٢٦ ]
“নিশ্চয় আমারই নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন। তারপর নিশ্চয় তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্বে”। [সূরা আল-গাশিয়াহ, আয়াত: ২৫, ২৬] মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَأَمَّا مَنۡ أُوتِيَ كِتَٰبَهُۥ بِيَمِينِهِۦ ٧ فَسَوۡفَ يُحَاسَبُ حِسَابٗا يَسِيرٗا ٨﴾ [ الانشقاق : ٧، ٨ ]
“অতঃপর যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে; অত্যন্ত সহজভাবেই তার হিসাব-নিকাশ করা হবে”। [সূরা আল-ইনশিকাক, আয়াত: ৭, ৮]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٍ خَيۡرٗا يَرَهُۥ ٧ وَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ شَرّٗا يَرَهُۥ ٨﴾ [ الزلزلة : ٧، ٨ ]
“অতএব, কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে তা সে দেখবে, আর কেউ অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করলে তাও সে দেখবে”। [সূরা আয-যিলযাল, আয়াত: ৭, ৮]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَنَضَعُ ٱلۡمَوَٰزِينَ ٱلۡقِسۡطَ لِيَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ فَلَا تُظۡلَمُ نَفۡسٞ شَيۡٔٗاۖ وَإِن كَانَ مِثۡقَالَ حَبَّةٖ مِّنۡ خَرۡدَلٍ أَتَيۡنَا بِهَاۗ وَكَفَىٰ بِنَا حَٰسِبِينَ ٤٧﴾ [ الانبياء : ٤٧ ]
“আর কিয়ামতের দিন আমি ন্যায়বিচারের পাল্লাসমূহ স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না। কারো কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা হাযির করব। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট”। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৪৭]
বস্তুত মাখলুকের হিসাব দু’ প্রকার:
এক. মুমিনদের হিসাব। মুমিনদের হিসাব কেবল পেশ করা বা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা। যার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সৌভাগ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে, সে সব সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের জন্য হলো, হিসাব পেশ করা। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমার হাদীস এ বিষয়ের প্রমাণস্বরূপ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إن الله يدني المؤمن، فيضع عليه كنفه، ويستره، فيقول : أتعرف ذنب كذا؟ أتعرف ذنب كذا؟ فيقول : نعم، أي رب ! حتى إذا قرره بذنوبه، ورأى أنه قد هلك، قال : قد سترتها عليك في الدنيا ، وأنا أغفرها لك اليوم . فيعطى كتاب حسناته»
“মহান আল্লাহ মুমিনের খুব কাছাকাছি আসবেন। তারপর তিনি তাদের কাঁধের উপর হাত রেখে গোপনে বলবেন, তুমি কি তোমার অমুক গুনাহ সম্পর্কে জান? তুমি কি তোমার অমুক গুনাহ সম্পর্কে জান? তখন সে বলবে হ্যাঁ, হে আমার রব, এমনকি যখন সে তার গুনাহ সম্পর্কে স্বীকারোক্তি প্রদান করবে এবং বুঝতে পারবে যে সে ধ্বংস হতে চলেছে। তখন মহান আল্লাহ বলবেন, দুনিয়াতে আমি তোমার গুনাহগুলো গোপন করেছি। আজ আমি তোমার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেব। তারপর মহান আল্লাহ তার সামনে তার নেক আমলের দপ্তর পেশ করবেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৪১]
আর জিজ্ঞাসাবাদের হিসাব তাঅহীদপন্থীদের মধ্যে যারা কবীরা গুনাহকারী, তারা এ ধরণের হিসাবের মুখোমুখি হবে। তাদের গুনাহের কারণে আল্লাহ যদি চান তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি দেবেন। তবে পরিণতিতে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। এর উপর প্রমাণ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ليس أحد يحاسب يوم القيامة إلا هلك» فقلت : يا رسول الله ، أليس قد قال الله : فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ . فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَاباً يَسِيراً ؟ فقال : «إنما ذلك العرض، وليس أحد يناقش الحساب يوم القيامة إلا عذب» .
“কিয়ামতের দিন যার কাছ থেকে হিসাব নেওয়া হবে সেই ধ্বংসা হবে। আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! মহান আল্লাহ কি এ কথা فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ . فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَاباً يَسِيراً “যার আমল নামা ডান হাতে দেওয়া হবে, অচিরেই তার হিসাব সহজ করা হবে” বলেন নি? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ হলো, কেবল পেশ করা, কিয়ামতের দিন যার হিসাব নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তাকেই শাস্তি দেওয়া হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৩৭]
দুই. কাফিরদের হিসাব, কাফিরদের হিসাব তাদের নেক আমল ও বদ আমলকে ওজন দেওয়ার মাধ্যমে হবে না। কারণ, তাদের কোনো নেক আমল নেই। বরং তাদেরকে তাদের আমল বিষয়ে অবগত করা হবে এবং তারা তা স্বীকার করবে। পূর্বে উল্লিখিত ইবন উমারের হাদীসে বর্ণিত:
«وأما الكفار والمنافقون، فينادى بهم على رؤوس الخلائق : هؤلاء الذين كذبوا على ربهم، ألا لعنة الله على الظالمين» .
“আর কাফির ও মুনাফিকদেরকে সমগ্র মাখলুকের সামনে উপস্থিত করা হবে, আর বলা হবে, এরা ঐ সব লোক যারা তাদের রবের উপর মিথ্যা আরোপ করেছিল, মনে রাখবে আল্লাহর অভিশাপ জালিমদের জন্য অবধারিত”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৬৮।]
ষষ্টত: প্রতিদানের প্রতি ঈমান: আর এর অর্থ হলো, এ কথার প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা যে, জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য। জান্নাত আল্লাহর মুত্তাকী বান্দাদের জন্য তাদের আমলের বিনিময় হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। তাতে রয়েছে অসংখ্য নি‘আমত যা কখনো কোনো চক্ষু প্রত্যক্ষ করে নি, কোনো কর্ণ শুনে নি এবং কোনো মানুষ তা চিন্তাও করে নি। আর জাহান্নাম মহান আল্লাহ তার কাফির বান্দাদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন। যাতে রয়েছে আত্মিক ও দৈহিক উভয়ের জন্য বিভিন্ন ধরণেরশাস্তি ও আযাব। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ثُمَّ أَوۡرَثۡنَا ٱلۡكِتَٰبَ ٱلَّذِينَ ٱصۡطَفَيۡنَا مِنۡ عِبَادِنَاۖ فَمِنۡهُمۡ ظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِۦ وَمِنۡهُم مُّقۡتَصِدٞ وَمِنۡهُمۡ سَابِقُۢ بِٱلۡخَيۡرَٰتِ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَضۡلُ ٱلۡكَبِيرُ ٣٢ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٣٣ وَقَالُواْ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِيٓ أَذۡهَبَ عَنَّا ٱلۡحَزَنَۖ إِنَّ رَبَّنَا لَغَفُورٞ شَكُورٌ ٣٤ ٱلَّذِيٓ أَحَلَّنَا دَارَ ٱلۡمُقَامَةِ مِن فَضۡلِهِۦ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٞ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٞ ٣٥ وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لَهُمۡ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقۡضَىٰ عَلَيۡهِمۡ فَيَمُوتُواْ وَلَا يُخَفَّفُ عَنۡهُم مِّنۡ عَذَابِهَاۚ كَذَٰلِكَ نَجۡزِي كُلَّ كَفُورٖ ٣٦ وَهُمۡ يَصۡطَرِخُونَ فِيهَا رَبَّنَآ أَخۡرِجۡنَا نَعۡمَلۡ صَٰلِحًا غَيۡرَ ٱلَّذِي كُنَّا نَعۡمَلُۚ أَوَ لَمۡ نُعَمِّرۡكُم مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَآءَكُمُ ٱلنَّذِيرُۖ فَذُوقُواْ فَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِن نَّصِيرٍ ٣٧﴾ [ فاطر : ٣٢، ٣٧ ]
“অতঃপর আমি এ কিতাবটির উত্তরাধিকারী করেছি আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে, যাদেরকে আমি মনোনীত করেছি। তারপর তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি যুলুমকারী এবং কেউ কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী। আবার তাদের কেউ কেউ আল্লাহর অনুমতিসাপেক্ষে কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী। এটাই হলো মহাঅনুগ্রহ। চিরস্থায়ী জান্নাত, এতে তারা প্রবেশ করবে। যেখানে তাদেরকে স্বর্ণের চুড়ি ও মুক্তা দ্বারা অলঙ্কৃত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের। আর তারা বলবে, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আমাদের রব পরম ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী’। ‘যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী নিবাসে স্থান দিয়েছেন, যেখানে কোন কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করবে না এবং যেখানে কোন ক্লান্তিও আমাদেরকে স্পর্শ করবে না’। আর যারা প্রকৃত ইসলাম ধর্মবলম্বী হবে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের প্রতি এমন কোন ফয়সালা দেওয়া হবে না যে, তারা মারা যাবে, এবং তাদের কাছ থেকে জাহান্নামের আযাবও লাঘব করা হবে না। এভাবেই আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। আর সেখানে তারা আর্তনাদ করে বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করে দিন, আমরা পূর্বে যে আমল করতাম, তার পরিবর্তে আমরা নেক আমল করব’। (আল্লাহ বলবেন) ‘আমি কি তোমাদেরকে এতটা বয়স প্রদান করি নি যে, তখন কেউ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারত? আর তোমাদের কাছে তো সতর্ককারী এসেছিল। কাজেই তোমরা আযাব আস্বাদন কর, আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই”। [সূরা ফাতির, আয়াত: ৩২, ৩৭]
প্রথমত: মৃত্যুর পর যা সংঘটিত হবে তার প্রতি ঈমান স্থাপন করা: মৃত্যুর সময় ফিরিশতাদের দেখা, কবরের পরীক্ষা যা দুই জন ফিরিশতা একজন বান্দাকে কবরে রাখার পর তার রব, দীন ও রাসূল সম্পর্কে জিজ্ঞাসার সম্মূখীন হবে, কবরের শাস্তি ও নি‘আমত যা আলমে বারযখে সংঘটিত হবে ইত্যাদি বিষয়সমূহের প্রতি ঈমান স্থাপন করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَوۡ تَرَىٰٓ إِذۡ يَتَوَفَّى ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَضۡرِبُونَ وُجُوهَهُمۡ وَأَدۡبَٰرَهُمۡ وَذُوقُواْ عَذَابَ ٱلۡحَرِيقِ ٥٠﴾ [ الانفال : ٥٠ ]
“আর যদি তুমি দেখতে, যখন ফিরিশতারা কাফিরদের প্রাণ হরণ করছিল, তাদের চেহারায় ও পশ্চাতে আঘাত করে, আর (বলছিল) ‘তোমরা জ্বলন্ত আগুনের আযাব আস্বাদন কর’’। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৫০]
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠﴾ [ فصلت : ٣٠ ]
“নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অতঃপর অবিচল তারা তাতে থাকে, ফিরিশতারা তাদের কাছে নাযিল হয় (এবং বলে,) ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেওয়া হয়েছিল’’। [সূরা আল-ফুসসিলাত, আয়াত: ৩০]
﴿وَحَاقَ بَِٔالِ فِرۡعَوۡنَ سُوٓءُ ٱلۡعَذَابِ ٤٥ ٱلنَّارُ يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا غُدُوّٗا وَعَشِيّٗاۚ وَيَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ أَدۡخِلُوٓاْ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ أَشَدَّ ٱلۡعَذَابِ ٤٦ ﴾ [ غافر : ٤٥، ٤٦ ]
“আর ফির‘আউনের অনুসারীদেরকে ঘিরে ফেলল কঠিন আযাব। আগুন, তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে উপস্থিত করা হয়, আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে (সেদিন ঘোষণা করা হবে), ‘ফির‘আউনের অনুসারীদেরকে কঠোরতম আযাবে প্রবেশ করাও”। [সূরা গাফির, আয়াত: ৪৫, ৪৬]
দ্বিতীয়ত: কিয়ামত ও তার আলামতসমূহের প্রতি ঈমান স্থাপন করা: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَا يُدۡرِيكَ لَعَلَّ ٱلسَّاعَةَ قَرِيبٞ ١٧ يَسۡتَعۡجِلُ بِهَا ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِهَاۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مُشۡفِقُونَ مِنۡهَا وَيَعۡلَمُونَ أَنَّهَا ٱلۡحَقُّۗ أَلَآ إِنَّ ٱلَّذِينَ يُمَارُونَ فِي ٱلسَّاعَةِ لَفِي ضَلَٰلِۢ بَعِيدٍ ١٨﴾ [ الشورى : ١٧، ١٨ ]
“আল্লাহ, যিনি সত্যসহ কিতাব ও মীযান [সনদ, ন্যায় বিচার, ইনসাফ, ইত্যাদি।] নাযিল করেছেন। আর কিসে তোমাকে জানাবে, হয়ত কিয়ামত খুবই নিকটবর্তী? যারা এতে ঈমান আনে না, তারাই তা ত্বরান্বিত করতে চায়। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা একে ভয় করে এবং তারা জানে যে, এটা অবশ্যই সত্য। জেনে রেখ, নিশ্চয় যারা কিয়ামত সম্পর্কে বাক-বিতন্ডা করে তারা সুদূর পথভ্রষ্টতায় নিপতিত”। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১৭, ১৮] মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَهَلۡ يَنظُرُونَ إِلَّا ٱلسَّاعَةَ أَن تَأۡتِيَهُم بَغۡتَةٗۖ فَقَدۡ جَآءَ أَشۡرَاطُهَاۚ ١٨﴾ [ محمد : ١٨ ]
“সুতরাং তারা কি কেবল এই অপেক্ষা করছে যে, কিয়ামত তাদের উপর আকস্মিকভাবে এসে পড়ুক? অথচ কিয়ামতের আলামতসমূহ তো এসেই পড়েছে”। [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৮]
কিয়ামতের বড় আলামতসমূহের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী দ্বারা প্রমাণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إنها لن تقوم حتى ترون قبلها عشر آيات، فذكر : الدخان، والدجال، والدابة، وطلوع الشمس من مغربها، ونزول عيسى بن مريم، ويأجوج ومأجوج، وثلاثة خسوف : خسف بالمشرق، وخسف بالمغرب، وخسف بجزيرة العرب، وآخر ذلك نار تخرج من اليمن تطرد الناس إلى محشرهم»
“কিয়ামতের পূর্বে দশটি নিদর্শন সংঘটিত হওয়া ছাড়া কিয়ামত সংঘটিত হবে না। আর তা হলো, (দুখান) ধোঁয়া, দাজ্জাল, (দাব্বাতুল আরদ) জমিনে বিচরণকারী বিশেষ জন্তু, সূর্য পশ্চিম দিকে উদয় হওয়া, ঈসা আলাইহিস সালামের আবতরণ, ইয়াজুজ ও মাজুজের বের হওয়া, তিনটি ভূমি ধস -একটি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে, একটি পশ্চিম প্রান্তে এবং একটি আরব উপত্তাকায়, আর সর্বশেষ নিদর্শন হলো, আগুন যা ইয়ামন থেকে বের হবে, মানুষকে তাদের হাশরের দিকে নিয়ে যাবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯০১]
হঠাৎ ও দ্রুত কিয়ামত এসে যাওয়া: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَسَۡٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرۡسَىٰهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّيۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقۡتِهَآ إِلَّا هُوَۚ ثَقُلَتۡ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ لَا تَأۡتِيكُمۡ إِلَّا بَغۡتَةٗۗ يَسَۡٔلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنۡهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ ٱللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ١٨٧﴾ [ الاعراف : ١٨٦ ]
“তারা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করে, ‘তা কখন ঘটবে’? তুমি বল, ‘এর জ্ঞান তো রয়েছে আমার রবের নিকট। তিনিই এর নির্ধারিত সময়ে তা প্রকাশ করবেন। আসমানসমূহ ও জমিনের উপর তা (কিয়ামত) কঠিন হবে। তা তোমাদের নিকট হঠাৎ এসে পড়বে। তারা তোমাকে প্রশ্ন করছে যেন তুমি এ সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত। বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকট আছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না’’। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৮৬]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَآ أَمۡرُ ٱلسَّاعَةِ إِلَّا كَلَمۡحِ ٱلۡبَصَرِ أَوۡ هُوَ أَقۡرَبُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ٧٧﴾ [ النحل : ٧٧ ]
“আর কিয়ামতের ব্যাপারটি শুধু চোখের পলকের ন্যায়। কিংবা তা আরো নিকটবর্তী। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান”। [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৭৭]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُۖ ٦٨﴾ [ الزمر : ٦٧ ]
“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই মৃত্যুবরণ করবে”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৮]
তৃতীয়ত: পূণরুত্থানের প্রতি ঈমান স্থাপন করা: অর্থাৎ দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার পর মহান আল্লাহ তার বান্দাদের কবরসমূহে থেকে জীবিত, বস্ত্রহীন, খালি পা ও কপালে দাগবিশিষ্ট অবস্থায় বের করবেন। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ আরও বলেন:
﴿ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخۡرَىٰ فَإِذَا هُمۡ قِيَامٞ يَنظُرُونَ ٦٨﴾ [ الزمر : ٦٧ ]
“তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৮]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ ٱلۡأَجۡدَاثِ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ يَنسِلُونَ ٥١﴾ [ يس : ٥١ ]
“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে তাদের রবের দিকে ছুটে আসবে”। [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৫১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا» .
“কিয়ামতের দিন মানুষকে খালি পায়ে, বস্ত্রহীন ও খতনা বিহীন করে উঠানো হবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৫৯]
চতুর্থত: কিয়ামতে কুবরা বা বড় দণ্ডায়মানের উপর ঈমান স্থাপন করা: কিয়ামতের মাঠে সমস্ত মানুষ রাব্বুল আলামীনের সামনে দীর্ঘ সময় দন্ডায়মান থাকা। আহ্বানকারীর আহ্বান শুনতে পাওয়া, চোখ দিয়ে সব দেখতে সমর্থ হওয়া। সেদিন কঠিন সময় ও ভয়াল অবস্থানে সূর্য্য তাদের নিকটে নিয়ে আসা হবে। ঘাম তাদের মূখ পর্যন্ত পৌঁছবে, হাউজে কাউছারে পানি পান করতে সবাই একত্র হবে, তাদের আমলের দপ্তরগুলো খোলা হবে, আমল মাপার জন্য দাড়ি পাল্লা স্থাপন করা হবে, পুলসিরাত দাঁড় করানো হবে।
পঞ্চমত: হিসাব নিকাশের উপর ঈমান স্থাপন করা: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ إِلَيۡنَآ إِيَابَهُمۡ ٢٥ ثُمَّ إِنَّ عَلَيۡنَا حِسَابَهُم ٢٦﴾ [ الغاشية : ٢٥، ٢٦ ]
“নিশ্চয় আমারই নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন। তারপর নিশ্চয় তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্বে”। [সূরা আল-গাশিয়াহ, আয়াত: ২৫, ২৬] মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَأَمَّا مَنۡ أُوتِيَ كِتَٰبَهُۥ بِيَمِينِهِۦ ٧ فَسَوۡفَ يُحَاسَبُ حِسَابٗا يَسِيرٗا ٨﴾ [ الانشقاق : ٧، ٨ ]
“অতঃপর যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে; অত্যন্ত সহজভাবেই তার হিসাব-নিকাশ করা হবে”। [সূরা আল-ইনশিকাক, আয়াত: ৭, ৮]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٍ خَيۡرٗا يَرَهُۥ ٧ وَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ شَرّٗا يَرَهُۥ ٨﴾ [ الزلزلة : ٧، ٨ ]
“অতএব, কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে তা সে দেখবে, আর কেউ অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করলে তাও সে দেখবে”। [সূরা আয-যিলযাল, আয়াত: ৭, ৮]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَنَضَعُ ٱلۡمَوَٰزِينَ ٱلۡقِسۡطَ لِيَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ فَلَا تُظۡلَمُ نَفۡسٞ شَيۡٔٗاۖ وَإِن كَانَ مِثۡقَالَ حَبَّةٖ مِّنۡ خَرۡدَلٍ أَتَيۡنَا بِهَاۗ وَكَفَىٰ بِنَا حَٰسِبِينَ ٤٧﴾ [ الانبياء : ٤٧ ]
“আর কিয়ামতের দিন আমি ন্যায়বিচারের পাল্লাসমূহ স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না। কারো কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা হাযির করব। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট”। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৪৭]
বস্তুত মাখলুকের হিসাব দু’ প্রকার:
এক. মুমিনদের হিসাব। মুমিনদের হিসাব কেবল পেশ করা বা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা। যার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সৌভাগ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে, সে সব সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের জন্য হলো, হিসাব পেশ করা। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমার হাদীস এ বিষয়ের প্রমাণস্বরূপ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إن الله يدني المؤمن، فيضع عليه كنفه، ويستره، فيقول : أتعرف ذنب كذا؟ أتعرف ذنب كذا؟ فيقول : نعم، أي رب ! حتى إذا قرره بذنوبه، ورأى أنه قد هلك، قال : قد سترتها عليك في الدنيا ، وأنا أغفرها لك اليوم . فيعطى كتاب حسناته»
“মহান আল্লাহ মুমিনের খুব কাছাকাছি আসবেন। তারপর তিনি তাদের কাঁধের উপর হাত রেখে গোপনে বলবেন, তুমি কি তোমার অমুক গুনাহ সম্পর্কে জান? তুমি কি তোমার অমুক গুনাহ সম্পর্কে জান? তখন সে বলবে হ্যাঁ, হে আমার রব, এমনকি যখন সে তার গুনাহ সম্পর্কে স্বীকারোক্তি প্রদান করবে এবং বুঝতে পারবে যে সে ধ্বংস হতে চলেছে। তখন মহান আল্লাহ বলবেন, দুনিয়াতে আমি তোমার গুনাহগুলো গোপন করেছি। আজ আমি তোমার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেব। তারপর মহান আল্লাহ তার সামনে তার নেক আমলের দপ্তর পেশ করবেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৪১]
আর জিজ্ঞাসাবাদের হিসাব তাঅহীদপন্থীদের মধ্যে যারা কবীরা গুনাহকারী, তারা এ ধরণের হিসাবের মুখোমুখি হবে। তাদের গুনাহের কারণে আল্লাহ যদি চান তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি দেবেন। তবে পরিণতিতে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। এর উপর প্রমাণ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ليس أحد يحاسب يوم القيامة إلا هلك» فقلت : يا رسول الله ، أليس قد قال الله : فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ . فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَاباً يَسِيراً ؟ فقال : «إنما ذلك العرض، وليس أحد يناقش الحساب يوم القيامة إلا عذب» .
“কিয়ামতের দিন যার কাছ থেকে হিসাব নেওয়া হবে সেই ধ্বংসা হবে। আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! মহান আল্লাহ কি এ কথা فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ . فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَاباً يَسِيراً “যার আমল নামা ডান হাতে দেওয়া হবে, অচিরেই তার হিসাব সহজ করা হবে” বলেন নি? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ হলো, কেবল পেশ করা, কিয়ামতের দিন যার হিসাব নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তাকেই শাস্তি দেওয়া হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৩৭]
দুই. কাফিরদের হিসাব, কাফিরদের হিসাব তাদের নেক আমল ও বদ আমলকে ওজন দেওয়ার মাধ্যমে হবে না। কারণ, তাদের কোনো নেক আমল নেই। বরং তাদেরকে তাদের আমল বিষয়ে অবগত করা হবে এবং তারা তা স্বীকার করবে। পূর্বে উল্লিখিত ইবন উমারের হাদীসে বর্ণিত:
«وأما الكفار والمنافقون، فينادى بهم على رؤوس الخلائق : هؤلاء الذين كذبوا على ربهم، ألا لعنة الله على الظالمين» .
“আর কাফির ও মুনাফিকদেরকে সমগ্র মাখলুকের সামনে উপস্থিত করা হবে, আর বলা হবে, এরা ঐ সব লোক যারা তাদের রবের উপর মিথ্যা আরোপ করেছিল, মনে রাখবে আল্লাহর অভিশাপ জালিমদের জন্য অবধারিত”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৬৮।]
ষষ্টত: প্রতিদানের প্রতি ঈমান: আর এর অর্থ হলো, এ কথার প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা যে, জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য। জান্নাত আল্লাহর মুত্তাকী বান্দাদের জন্য তাদের আমলের বিনিময় হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। তাতে রয়েছে অসংখ্য নি‘আমত যা কখনো কোনো চক্ষু প্রত্যক্ষ করে নি, কোনো কর্ণ শুনে নি এবং কোনো মানুষ তা চিন্তাও করে নি। আর জাহান্নাম মহান আল্লাহ তার কাফির বান্দাদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন। যাতে রয়েছে আত্মিক ও দৈহিক উভয়ের জন্য বিভিন্ন ধরণেরশাস্তি ও আযাব। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ثُمَّ أَوۡرَثۡنَا ٱلۡكِتَٰبَ ٱلَّذِينَ ٱصۡطَفَيۡنَا مِنۡ عِبَادِنَاۖ فَمِنۡهُمۡ ظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِۦ وَمِنۡهُم مُّقۡتَصِدٞ وَمِنۡهُمۡ سَابِقُۢ بِٱلۡخَيۡرَٰتِ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَضۡلُ ٱلۡكَبِيرُ ٣٢ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٣٣ وَقَالُواْ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِيٓ أَذۡهَبَ عَنَّا ٱلۡحَزَنَۖ إِنَّ رَبَّنَا لَغَفُورٞ شَكُورٌ ٣٤ ٱلَّذِيٓ أَحَلَّنَا دَارَ ٱلۡمُقَامَةِ مِن فَضۡلِهِۦ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٞ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٞ ٣٥ وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لَهُمۡ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقۡضَىٰ عَلَيۡهِمۡ فَيَمُوتُواْ وَلَا يُخَفَّفُ عَنۡهُم مِّنۡ عَذَابِهَاۚ كَذَٰلِكَ نَجۡزِي كُلَّ كَفُورٖ ٣٦ وَهُمۡ يَصۡطَرِخُونَ فِيهَا رَبَّنَآ أَخۡرِجۡنَا نَعۡمَلۡ صَٰلِحًا غَيۡرَ ٱلَّذِي كُنَّا نَعۡمَلُۚ أَوَ لَمۡ نُعَمِّرۡكُم مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَآءَكُمُ ٱلنَّذِيرُۖ فَذُوقُواْ فَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِن نَّصِيرٍ ٣٧﴾ [ فاطر : ٣٢، ٣٧ ]
“অতঃপর আমি এ কিতাবটির উত্তরাধিকারী করেছি আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে, যাদেরকে আমি মনোনীত করেছি। তারপর তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি যুলুমকারী এবং কেউ কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী। আবার তাদের কেউ কেউ আল্লাহর অনুমতিসাপেক্ষে কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী। এটাই হলো মহাঅনুগ্রহ। চিরস্থায়ী জান্নাত, এতে তারা প্রবেশ করবে। যেখানে তাদেরকে স্বর্ণের চুড়ি ও মুক্তা দ্বারা অলঙ্কৃত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের। আর তারা বলবে, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আমাদের রব পরম ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী’। ‘যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী নিবাসে স্থান দিয়েছেন, যেখানে কোন কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করবে না এবং যেখানে কোন ক্লান্তিও আমাদেরকে স্পর্শ করবে না’। আর যারা প্রকৃত ইসলাম ধর্মবলম্বী হবে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের প্রতি এমন কোন ফয়সালা দেওয়া হবে না যে, তারা মারা যাবে, এবং তাদের কাছ থেকে জাহান্নামের আযাবও লাঘব করা হবে না। এভাবেই আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। আর সেখানে তারা আর্তনাদ করে বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করে দিন, আমরা পূর্বে যে আমল করতাম, তার পরিবর্তে আমরা নেক আমল করব’। (আল্লাহ বলবেন) ‘আমি কি তোমাদেরকে এতটা বয়স প্রদান করি নি যে, তখন কেউ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারত? আর তোমাদের কাছে তো সতর্ককারী এসেছিল। কাজেই তোমরা আযাব আস্বাদন কর, আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই”। [সূরা ফাতির, আয়াত: ৩২, ৩৭]
আর তা হচ্ছে এ কথার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে, মহান আল্লাহ তার চিরন্তন ও অনাদি জ্ঞানে সমস্ত মাখলুকের ভাগ্যকে নির্ধারণ করে রেখেছেন এবং লাওহে মাহফুজে তা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তিনি তার ইচ্ছা অনুযায়ী তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন এবং স্বীয় কুদরাত দ্বারা তা সংঘটিত ও বাস্তবায়ন করেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩﴾ [ القمر : ٤٩ ]
“নিশ্চয় আমি সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী”। [সূরা আল-কামার, আয়াত: ৪৯]
﴿وَخَلَقَ كُلَّ شَيۡءٖ فَقَدَّرَهُۥ تَقۡدِيرٗا ٢﴾ [ الفرقان : ٢ ]
“তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তা নিপুণভাবে নিরূপণ করেছেন”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২]
﴿ إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩﴾ [ القمر : ٤٩ ]
“নিশ্চয় আমি সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী”। [সূরা আল-কামার, আয়াত: ৪৯]
﴿وَخَلَقَ كُلَّ شَيۡءٖ فَقَدَّرَهُۥ تَقۡدِيرٗا ٢﴾ [ الفرقان : ٢ ]
“তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তা নিপুণভাবে নিরূপণ করেছেন”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২]
প্রথমত: আল্লাহর কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত সর্বপ্রাচীন, চিরস্থায়ী জ্ঞানের উপর ঈমান রাখা, যে জ্ঞান সৃষ্টির সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে; যেমন জীবন- মৃত্যু, রিযিক অথবা তার বান্দাদের কর্মের সাথে সম্পৃক্ত যেমন, ইবাদত-বন্দেগী ও আল্লাহর নাফরমানী ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ের সবকিছুর প্রতি ঈমান স্থাপন করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَهُوَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٞ ٢٩﴾ [ البقرة : ٢٩ ]
“আর সব কিছু সম্পর্কে তিনি সম্যক জ্ঞাত”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৯]
﴿ذَٰلِكَ تَقۡدِيرُ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡعَلِيمِ ٩٦﴾ [ الانعام : ٩٦ ]
“এটা সর্বজ্ঞ পরাক্রমশালীর নির্ধারণ”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৯৬]
সুতরাং তিনি ভালো করেই জানেন কে তাঁর আনুগত্য করবে, আর কে তার অবাধ্য হবে? যেমনিভাবে তিনি কাকে কতটুকু হায়াত বাড়াবেন এবং কার থেকে কতটুকু বয়স কমাবেন তা তিনি জানেন।
দ্বিতীয়ত: লাওহে মাহফুজে মহান আল্লাহ ভাগ্যের লিখনের প্রতি ঈমান স্থাপন করা: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿مَآ أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مِّن قَبۡلِ أَن نَّبۡرَأَهَآۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٢٢﴾ [ الحديد : ٢٢ ]
“জমিনে এবং তোমাদের নিজদের মধ্যে এমন কোনো মুসীবত আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রাখি নি। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ”। [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২২]
﴿قُلۡ بَلَىٰ وَرَبِّي لَتَأۡتِيَنَّكُمۡ عَٰلِمِ ٱلۡغَيۡبِۖ لَا يَعۡزُبُ عَنۡهُ مِثۡقَالُ ذَرَّةٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَآ أَصۡغَرُ مِن ذَٰلِكَ وَلَآ أَكۡبَرُ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٣﴾ [ سبا : ٣ ]
“বল, ‘অবশ্যই, আমার রবের কসম! যিনি গায়েব সম্পর্কে অবগত, তা তোমাদের কাছে আসবেই। আসমানসমূহ ও জমিনে অনু পরিমাণ কিংবা তদপেক্ষা ছোট অথবা বড় কিছুই তাঁর অগোচরে নেই, বরং সবই সুস্পষ্ট কিতাবে রয়েছে”। [সূরা সাবা, আয়াত: ৩]
আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন:
«كتب الله مقادير الخلائق قبل أن يخلق السماوات والأرض بخمسين ألف سنة ، قال : وعرشه على الماء»
“মহান আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বৎসর পূর্বে মাখলুকের তাকদীরসমূহ লিপিবদ্ধ করেন। তিনি বলেন: আর তখন তার আরশ ছিল পানির উপর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৫৩]
উবাদাহ ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন:
«إن أول ما خلق الله تعالى القلم فقال له : اكتب، فقال : رب وماذا أكتب؟ قال : اكتب مقادير كل شيء حتى تقوم الساعة»
“নিশ্চয় মহান আল্লাহ কলম সৃষ্টি করে সর্বপ্রথমে বলেছিলেন: লিপিবদ্ধ কর। তখন সে বলল, হে আমার রব, আমি কি লিখব? উত্তরে তিনি বললেন, কিয়ামতের পূর্ব পযর্ন্ত অনাগত সমস্ত বস্তুর ভাগ্য লিপিবদ্ধ কর”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭০০]
মহান আল্লাহ ইলম (জ্ঞান) ও কিতাবত (লেখা) দুটিকে নিম্ন লিখিত আয়াতে একত্রে বর্ণনা করেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَلَمۡ تَعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ مَا فِي ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِۚ إِنَّ ذَٰلِكَ فِي كِتَٰبٍۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٧٠﴾ [ الحج : ٧٠ ]
“তুমি কি জান না যে, আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, আল্লাহ তা জানেন? নিশ্চয় তা একটি কিতাবে রয়েছে। অবশ্যই এটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭০]
তৃতীয়ত: আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছার বাস্তবায়নের প্রতি ঈমান স্থাপন করা: অর্থাৎ আল্লাহ যা চান তা হয়, যা চান না তা হয় না, তিনি যা দান করেন তা বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আর তিনি যা দান করেন না, তার কোনো দাতাও নেই। তিনি যা ফায়সালা করেন, তা প্রতিহত করার কেউ নেই। তিনি যা চান না তার রাজত্বে তা সংঘটিত হওয়ার নয়। আল্লাহ যাকে চান তার অনুগ্রহ দ্বারা হিদায়াত দেন। যাকে চান স্বীয় ইনসাফের মাধ্যমে তাকে গোমরাহ করেন। তার নির্দেশের বিরোধিতাকারী কেউ নেই। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ مَا ٱقۡتَتَلَ ٱلَّذِينَ مِنۢ بَعۡدِهِم مِّنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُ وَلَٰكِنِ ٱخۡتَلَفُواْ فَمِنۡهُم مَّنۡ ءَامَنَ وَمِنۡهُم مَّن كَفَرَۚ وَلَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ مَا ٱقۡتَتَلُواْ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يَفۡعَلُ مَا يُرِيدُ ٢٥٣﴾ [ البقرة : ٢٥٣ ]
“আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাদের পরবর্তীরা লড়াই করত না, তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ আসার পর। কিন্তু তারা মতবিরোধ করেছে। ফলে তাদের মধ্যে কেউ ঈমান এনেছে, আর তাদের কেউ কুফুরী করেছে। আর আল্লাহ যদি চাইতেন, তাহলে তারা লড়াই করত না; কিন্তু আল্লাহ যা চান, তা করেন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৩]
﴿لِمَن شَآءَ مِنكُمۡ أَن يَسۡتَقِيمَ ٢٨ وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٩﴾ [ التكوير : ٢٨، ٢٩ ]
“যে তোমাদের মধ্যে সরল পথে চলতে চায়, তার জন্য। আর তোমরা ইচ্ছা করতে পার না, যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ ইচ্ছা করেন”। [সূরা আত-তাকবীর, আয়াত: ২৮, ২৯]
চতুর্থত: সমস্ত জগত আল্লাহর সৃষ্টি ও তাঁরই আবিষ্কার, এ কথার উপর ঈমান আনয়ন করা: আল্লাহই সৃষ্টি কর্তা, তিনি ছাড়া বাকী সবই মাখলুক। সমস্ত বস্তু ও তার নড়চড়, গুণাগুণ ও সত্বা সবই মাখলুক ক্ষণস্থায়ী। আল্লাহই স্রষ্টা ও আবিষ্কারক। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖۖ ٦٢﴾ [ الزمر : ٦١ ]
“আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬১]
﴿ وَٱللَّهُ خَلَقَكُمۡ وَمَا تَعۡمَلُونَ ٩٦﴾ [ الصافات : ٩٦ ]
“অথচ আল্লাহই তোমাদেরকে এবং তোমরা যা কর তা সৃষ্টি করেছেন’’। [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৯৬]
সুতরাং বান্দার কর্মসমূহ আল্লাহর সৃষ্ট এবং বান্দার উপার্জন।
﴿لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ﴾ [ البقرة : ٢٨٦ ]
“সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮৬]
পঞ্চমত: আল্লাহর (মাশীআহ) সাধারণ ব্যাপক চাওয়া এটার সাথে ভালোবাসা থাকতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই, এ কথার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা: অভিষ্ট কোনো লক্ষ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং হিকমতের কারণে তিনি যা মহব্বত করেন না তাও চান এবং যা চান না তাকেও মহব্বত করেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَوۡ شِئۡنَا لَأٓتَيۡنَا كُلَّ نَفۡسٍ هُدَىٰهَا وَلَٰكِنۡ حَقَّ ٱلۡقَوۡلُ مِنِّي لَأَمۡلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ ٱلۡجِنَّةِ وَٱلنَّاسِ أَجۡمَعِينَ ١٣﴾ [ السجدة : ١٣ ]
“আর যদি আমি ইচ্ছা করতাম, তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার হিদায়াত দান করতাম। কিন্তু আমার কথাই সত্যে পরিণত হবে যে, ‘নিশ্চয় আমি জিন্ন ও মানুষ উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব’’। [সূরা আস-সাজাদাহ, আয়াত: ১৩]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِن تَكۡفُرُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنكُمۡۖ وَلَا يَرۡضَىٰ لِعِبَادِهِ ٱلۡكُفۡرَۖ وَإِن تَشۡكُرُواْ يَرۡضَهُ لَكُمۡۗ ٧﴾ [ الزمر : ٧ ]
“তোমরা যদি কুফুরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ তোমাদের থেকে অমুখাপেক্ষী; আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফুরী পছন্দ করেন না এবং তোমরা যদি শোকর কর তবে তোমাদের জন্য তিনি তা পছন্দ করেন”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৭]
ষষ্টত: শরী‘আত ও তাকদীরের মধ্যে কোনো স্ববিরোধিতা নেই এ কথার উপর ঈমান আনয়ন করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ سَعۡيَكُمۡ لَشَتَّىٰ ٤ فَأَمَّا مَنۡ أَعۡطَىٰ وَٱتَّقَىٰ ٥ وَصَدَّقَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٦ فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلۡيُسۡرَىٰ ٧ وَأَمَّا مَنۢ بَخِلَ وَٱسۡتَغۡنَىٰ ٨ وَكَذَّبَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٩ فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلۡعُسۡرَىٰ ١٠﴾ [ الليل : ٤، ١٠ ]
“নিশ্চয় তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা বিভিন্ন প্রকারের। সুতরাং যে দান করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে, আর উত্তমকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, আমি তার জন্য সহজ পথে চলা সুগম করে দেব। আর যে কার্পণ্য করেছে এবং নিজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করেছে, আর উত্তমকে মিথ্যা বলে মনে করেছে, আমি তার জন্য কঠিন পথে চলা সুগম করে দেব”। [সূরা আল-লাইল, আয়াত: ৪, ১০]
এর কারণ, হলো, শরী‘আত একটি উম্মুক্ত কিতাব আর তাকদীর হলো, অদৃশ্য খনি। মহান আল্লাহ বান্দাদের তাকদীর নির্ধারণ করেছেন এবং তা তাদের থেকে গোপন রেখেছেন। তিনি তাদের আদেশ দিয়েছেন এবং তাদের নিষেধ করেছেন। তিনি তাদের তৈরী করেছেন এবং সহযোগিতা করেছেন যাতে তারা নির্দেশ পালন করতে ও নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থাকতে পারে। যখন কোনো ওজর বা প্রতিবন্ধকতা তাদের সামনে আসে, তখন তিনি তাদের ওজরকে গ্রহণ করেছেন। পূর্ব নির্ধারিত তাকদীরের কারণে গুনাহ করা ও আল্লাহর বন্দেগী ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে কারো জন্য কোনো প্রমাণ নেই। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿سَيَقُولُ ٱلَّذِينَ أَشۡرَكُواْ لَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ مَآ أَشۡرَكۡنَا وَلَآ ءَابَآؤُنَا وَلَا حَرَّمۡنَا مِن شَيۡءٖۚ كَذَٰلِكَ كَذَّبَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡ حَتَّىٰ ذَاقُواْ بَأۡسَنَاۗ قُلۡ هَلۡ عِندَكُم مِّنۡ عِلۡمٖ فَتُخۡرِجُوهُ لَنَآۖ إِن تَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ وَإِنۡ أَنتُمۡ إِلَّا تَخۡرُصُونَ ١٤٨ قُلۡ فَلِلَّهِ ٱلۡحُجَّةُ ٱلۡبَٰلِغَةُۖ فَلَوۡ شَآءَ لَهَدَىٰكُمۡ أَجۡمَعِينَ ١٤٩﴾ [ الانعام : ١٤٨، ١٤٩ ]
“অচিরেই মুশরিকরা বলবে, ‘আল্লাহ যদি চাইতেন, আমরা শির্ক করতাম না এবং আমাদের পিতৃপুরুষরাও না এবং আমরা কোন কিছু হারাম করতাম না’। এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, যে পর্যন্ত না তারা আমার আযাব আস্বাদন করেছে। বল, ‘তোমাদের কাছে কি কোনো জ্ঞান আছে, যা তোমরা আমার জন্য প্রকাশ করবে? তোমরা তো শুধু ধারণার অনুসরণ করছ এবং তোমরা তো কেবল অনুমান করছ’। বল, ‘চূড়ান্ত প্রমাণ আল্লাহরই। সুতরাং যদি তিনি চান, অবশ্যই তোমাদের সবাইকে হিদায়াত দেবেন”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৪৮, ১৪৯]
এ আয়াতে কয়েকটি কথা মহান আল্লাহ বলেছেন, প্রথমত: তাদের দাবীকে মিথ্যা আখ্যায়িত করেন। দ্বিতীয়ত: তিনি তাদেরকে শাস্তি আস্বাদন করাবেন বলে সাবধান করেছেন। তাকদীর নির্ধারণে যদি তাদের পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকত, তাহলে তিনি তাদের শাস্তি আস্বাদন করাতেন না আর এভাবেই তিনি তাদের দাবির মুখোশ খুলে দিয়েছেন। তৃতীয়ত: তারা তাদের কিতাব সম্পর্কে অবগত নয় যাতে তাদের জ্ঞান থেকে তা প্রকাশ পেত এবং তা হত তাদের জন্য প্রমাণস্বরূপ। বরং তা ধারণা ও অনুমান ভিত্তিক। তা কিছুই না! ফলে অকাট্য প্রমাণ কেবল আল্লাহর জন্যই।
﴿وَهُوَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٞ ٢٩﴾ [ البقرة : ٢٩ ]
“আর সব কিছু সম্পর্কে তিনি সম্যক জ্ঞাত”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৯]
﴿ذَٰلِكَ تَقۡدِيرُ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡعَلِيمِ ٩٦﴾ [ الانعام : ٩٦ ]
“এটা সর্বজ্ঞ পরাক্রমশালীর নির্ধারণ”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৯৬]
সুতরাং তিনি ভালো করেই জানেন কে তাঁর আনুগত্য করবে, আর কে তার অবাধ্য হবে? যেমনিভাবে তিনি কাকে কতটুকু হায়াত বাড়াবেন এবং কার থেকে কতটুকু বয়স কমাবেন তা তিনি জানেন।
দ্বিতীয়ত: লাওহে মাহফুজে মহান আল্লাহ ভাগ্যের লিখনের প্রতি ঈমান স্থাপন করা: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿مَآ أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مِّن قَبۡلِ أَن نَّبۡرَأَهَآۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٢٢﴾ [ الحديد : ٢٢ ]
“জমিনে এবং তোমাদের নিজদের মধ্যে এমন কোনো মুসীবত আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রাখি নি। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ”। [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২২]
﴿قُلۡ بَلَىٰ وَرَبِّي لَتَأۡتِيَنَّكُمۡ عَٰلِمِ ٱلۡغَيۡبِۖ لَا يَعۡزُبُ عَنۡهُ مِثۡقَالُ ذَرَّةٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَآ أَصۡغَرُ مِن ذَٰلِكَ وَلَآ أَكۡبَرُ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٣﴾ [ سبا : ٣ ]
“বল, ‘অবশ্যই, আমার রবের কসম! যিনি গায়েব সম্পর্কে অবগত, তা তোমাদের কাছে আসবেই। আসমানসমূহ ও জমিনে অনু পরিমাণ কিংবা তদপেক্ষা ছোট অথবা বড় কিছুই তাঁর অগোচরে নেই, বরং সবই সুস্পষ্ট কিতাবে রয়েছে”। [সূরা সাবা, আয়াত: ৩]
আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন:
«كتب الله مقادير الخلائق قبل أن يخلق السماوات والأرض بخمسين ألف سنة ، قال : وعرشه على الماء»
“মহান আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বৎসর পূর্বে মাখলুকের তাকদীরসমূহ লিপিবদ্ধ করেন। তিনি বলেন: আর তখন তার আরশ ছিল পানির উপর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৫৩]
উবাদাহ ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন:
«إن أول ما خلق الله تعالى القلم فقال له : اكتب، فقال : رب وماذا أكتب؟ قال : اكتب مقادير كل شيء حتى تقوم الساعة»
“নিশ্চয় মহান আল্লাহ কলম সৃষ্টি করে সর্বপ্রথমে বলেছিলেন: লিপিবদ্ধ কর। তখন সে বলল, হে আমার রব, আমি কি লিখব? উত্তরে তিনি বললেন, কিয়ামতের পূর্ব পযর্ন্ত অনাগত সমস্ত বস্তুর ভাগ্য লিপিবদ্ধ কর”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭০০]
মহান আল্লাহ ইলম (জ্ঞান) ও কিতাবত (লেখা) দুটিকে নিম্ন লিখিত আয়াতে একত্রে বর্ণনা করেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَلَمۡ تَعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ مَا فِي ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِۚ إِنَّ ذَٰلِكَ فِي كِتَٰبٍۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٧٠﴾ [ الحج : ٧٠ ]
“তুমি কি জান না যে, আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, আল্লাহ তা জানেন? নিশ্চয় তা একটি কিতাবে রয়েছে। অবশ্যই এটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭০]
তৃতীয়ত: আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছার বাস্তবায়নের প্রতি ঈমান স্থাপন করা: অর্থাৎ আল্লাহ যা চান তা হয়, যা চান না তা হয় না, তিনি যা দান করেন তা বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আর তিনি যা দান করেন না, তার কোনো দাতাও নেই। তিনি যা ফায়সালা করেন, তা প্রতিহত করার কেউ নেই। তিনি যা চান না তার রাজত্বে তা সংঘটিত হওয়ার নয়। আল্লাহ যাকে চান তার অনুগ্রহ দ্বারা হিদায়াত দেন। যাকে চান স্বীয় ইনসাফের মাধ্যমে তাকে গোমরাহ করেন। তার নির্দেশের বিরোধিতাকারী কেউ নেই। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ مَا ٱقۡتَتَلَ ٱلَّذِينَ مِنۢ بَعۡدِهِم مِّنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُ وَلَٰكِنِ ٱخۡتَلَفُواْ فَمِنۡهُم مَّنۡ ءَامَنَ وَمِنۡهُم مَّن كَفَرَۚ وَلَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ مَا ٱقۡتَتَلُواْ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يَفۡعَلُ مَا يُرِيدُ ٢٥٣﴾ [ البقرة : ٢٥٣ ]
“আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাদের পরবর্তীরা লড়াই করত না, তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ আসার পর। কিন্তু তারা মতবিরোধ করেছে। ফলে তাদের মধ্যে কেউ ঈমান এনেছে, আর তাদের কেউ কুফুরী করেছে। আর আল্লাহ যদি চাইতেন, তাহলে তারা লড়াই করত না; কিন্তু আল্লাহ যা চান, তা করেন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৩]
﴿لِمَن شَآءَ مِنكُمۡ أَن يَسۡتَقِيمَ ٢٨ وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٩﴾ [ التكوير : ٢٨، ٢٩ ]
“যে তোমাদের মধ্যে সরল পথে চলতে চায়, তার জন্য। আর তোমরা ইচ্ছা করতে পার না, যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ ইচ্ছা করেন”। [সূরা আত-তাকবীর, আয়াত: ২৮, ২৯]
চতুর্থত: সমস্ত জগত আল্লাহর সৃষ্টি ও তাঁরই আবিষ্কার, এ কথার উপর ঈমান আনয়ন করা: আল্লাহই সৃষ্টি কর্তা, তিনি ছাড়া বাকী সবই মাখলুক। সমস্ত বস্তু ও তার নড়চড়, গুণাগুণ ও সত্বা সবই মাখলুক ক্ষণস্থায়ী। আল্লাহই স্রষ্টা ও আবিষ্কারক। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖۖ ٦٢﴾ [ الزمر : ٦١ ]
“আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬১]
﴿ وَٱللَّهُ خَلَقَكُمۡ وَمَا تَعۡمَلُونَ ٩٦﴾ [ الصافات : ٩٦ ]
“অথচ আল্লাহই তোমাদেরকে এবং তোমরা যা কর তা সৃষ্টি করেছেন’’। [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৯৬]
সুতরাং বান্দার কর্মসমূহ আল্লাহর সৃষ্ট এবং বান্দার উপার্জন।
﴿لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ﴾ [ البقرة : ٢٨٦ ]
“সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮৬]
পঞ্চমত: আল্লাহর (মাশীআহ) সাধারণ ব্যাপক চাওয়া এটার সাথে ভালোবাসা থাকতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই, এ কথার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা: অভিষ্ট কোনো লক্ষ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং হিকমতের কারণে তিনি যা মহব্বত করেন না তাও চান এবং যা চান না তাকেও মহব্বত করেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَوۡ شِئۡنَا لَأٓتَيۡنَا كُلَّ نَفۡسٍ هُدَىٰهَا وَلَٰكِنۡ حَقَّ ٱلۡقَوۡلُ مِنِّي لَأَمۡلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ ٱلۡجِنَّةِ وَٱلنَّاسِ أَجۡمَعِينَ ١٣﴾ [ السجدة : ١٣ ]
“আর যদি আমি ইচ্ছা করতাম, তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার হিদায়াত দান করতাম। কিন্তু আমার কথাই সত্যে পরিণত হবে যে, ‘নিশ্চয় আমি জিন্ন ও মানুষ উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব’’। [সূরা আস-সাজাদাহ, আয়াত: ১৩]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِن تَكۡفُرُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنكُمۡۖ وَلَا يَرۡضَىٰ لِعِبَادِهِ ٱلۡكُفۡرَۖ وَإِن تَشۡكُرُواْ يَرۡضَهُ لَكُمۡۗ ٧﴾ [ الزمر : ٧ ]
“তোমরা যদি কুফুরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ তোমাদের থেকে অমুখাপেক্ষী; আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফুরী পছন্দ করেন না এবং তোমরা যদি শোকর কর তবে তোমাদের জন্য তিনি তা পছন্দ করেন”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৭]
ষষ্টত: শরী‘আত ও তাকদীরের মধ্যে কোনো স্ববিরোধিতা নেই এ কথার উপর ঈমান আনয়ন করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ سَعۡيَكُمۡ لَشَتَّىٰ ٤ فَأَمَّا مَنۡ أَعۡطَىٰ وَٱتَّقَىٰ ٥ وَصَدَّقَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٦ فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلۡيُسۡرَىٰ ٧ وَأَمَّا مَنۢ بَخِلَ وَٱسۡتَغۡنَىٰ ٨ وَكَذَّبَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٩ فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلۡعُسۡرَىٰ ١٠﴾ [ الليل : ٤، ١٠ ]
“নিশ্চয় তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা বিভিন্ন প্রকারের। সুতরাং যে দান করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে, আর উত্তমকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, আমি তার জন্য সহজ পথে চলা সুগম করে দেব। আর যে কার্পণ্য করেছে এবং নিজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করেছে, আর উত্তমকে মিথ্যা বলে মনে করেছে, আমি তার জন্য কঠিন পথে চলা সুগম করে দেব”। [সূরা আল-লাইল, আয়াত: ৪, ১০]
এর কারণ, হলো, শরী‘আত একটি উম্মুক্ত কিতাব আর তাকদীর হলো, অদৃশ্য খনি। মহান আল্লাহ বান্দাদের তাকদীর নির্ধারণ করেছেন এবং তা তাদের থেকে গোপন রেখেছেন। তিনি তাদের আদেশ দিয়েছেন এবং তাদের নিষেধ করেছেন। তিনি তাদের তৈরী করেছেন এবং সহযোগিতা করেছেন যাতে তারা নির্দেশ পালন করতে ও নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থাকতে পারে। যখন কোনো ওজর বা প্রতিবন্ধকতা তাদের সামনে আসে, তখন তিনি তাদের ওজরকে গ্রহণ করেছেন। পূর্ব নির্ধারিত তাকদীরের কারণে গুনাহ করা ও আল্লাহর বন্দেগী ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে কারো জন্য কোনো প্রমাণ নেই। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿سَيَقُولُ ٱلَّذِينَ أَشۡرَكُواْ لَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ مَآ أَشۡرَكۡنَا وَلَآ ءَابَآؤُنَا وَلَا حَرَّمۡنَا مِن شَيۡءٖۚ كَذَٰلِكَ كَذَّبَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡ حَتَّىٰ ذَاقُواْ بَأۡسَنَاۗ قُلۡ هَلۡ عِندَكُم مِّنۡ عِلۡمٖ فَتُخۡرِجُوهُ لَنَآۖ إِن تَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ وَإِنۡ أَنتُمۡ إِلَّا تَخۡرُصُونَ ١٤٨ قُلۡ فَلِلَّهِ ٱلۡحُجَّةُ ٱلۡبَٰلِغَةُۖ فَلَوۡ شَآءَ لَهَدَىٰكُمۡ أَجۡمَعِينَ ١٤٩﴾ [ الانعام : ١٤٨، ١٤٩ ]
“অচিরেই মুশরিকরা বলবে, ‘আল্লাহ যদি চাইতেন, আমরা শির্ক করতাম না এবং আমাদের পিতৃপুরুষরাও না এবং আমরা কোন কিছু হারাম করতাম না’। এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, যে পর্যন্ত না তারা আমার আযাব আস্বাদন করেছে। বল, ‘তোমাদের কাছে কি কোনো জ্ঞান আছে, যা তোমরা আমার জন্য প্রকাশ করবে? তোমরা তো শুধু ধারণার অনুসরণ করছ এবং তোমরা তো কেবল অনুমান করছ’। বল, ‘চূড়ান্ত প্রমাণ আল্লাহরই। সুতরাং যদি তিনি চান, অবশ্যই তোমাদের সবাইকে হিদায়াত দেবেন”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৪৮, ১৪৯]
এ আয়াতে কয়েকটি কথা মহান আল্লাহ বলেছেন, প্রথমত: তাদের দাবীকে মিথ্যা আখ্যায়িত করেন। দ্বিতীয়ত: তিনি তাদেরকে শাস্তি আস্বাদন করাবেন বলে সাবধান করেছেন। তাকদীর নির্ধারণে যদি তাদের পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকত, তাহলে তিনি তাদের শাস্তি আস্বাদন করাতেন না আর এভাবেই তিনি তাদের দাবির মুখোশ খুলে দিয়েছেন। তৃতীয়ত: তারা তাদের কিতাব সম্পর্কে অবগত নয় যাতে তাদের জ্ঞান থেকে তা প্রকাশ পেত এবং তা হত তাদের জন্য প্রমাণস্বরূপ। বরং তা ধারণা ও অনুমান ভিত্তিক। তা কিছুই না! ফলে অকাট্য প্রমাণ কেবল আল্লাহর জন্যই।
দু’টি গ্রুপ তাকদীরের অধ্যায়ে পথভ্রষ্ট:
এক- কাদারিয়্যাহ, যারা তাকদীরকে অস্বীকার করে। তারা দু শ্রেণিতে বিভক্ত:
ক- কট্টর গোষ্ঠী: তারা এ গোষ্ঠীর প্রথমযুগের মানুষ, যারা আল্লাহ তা‘আলার ইলম ও লিখন উভয়টিকেই অস্বীকার করেছিল এবং তারা দাবি করেছিল যে, সব কিছুই ঘটে আকস্মিকভাবে।
খ- নমনীয় গোষ্ঠী: তারা মু‘তাযিলা ফের্কা, তারা আল্লাহর ইচ্ছা ও সৃষ্টিকে অস্বীকার করেছিল। তারা বিশ্বাস করত যে, বান্দা নিজেই তার কর্মের স্রষ্টা।
দুই: জাবারিয়্যাহ, যারা বলে, বান্দা তার কর্মে বাধ্য। তারা বান্দা থেকে তার ইচ্ছা, কর্মক্ষমতা ও স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে। তারা বান্দার নড়চড় করাকে প্যারালাইসিস রুগির মত বাধ্যতামূলক মনে করে। আর তারা আল্লাহর কর্মসমূহে হিকমত ও কারণকে অস্বীকার করে।
বস্তুত কাদরিয়াহ ও জাবরিয়াহ এ উভয় শ্রেণি বাস্তবতা ও শরী‘আত উভয় দ্বারা পরাজিত ও প্রত্যাখ্যাত। কারণ,
১. চার স্তরে তাকদীর সাব্যস্তকারী সু-স্পষ্ট নসসমূহ তাকদীর অস্বীকারকারীদের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে। আর বাস্তবতাও প্রমাণ করে যে, মানুষ কোনো কর্ম করার ইচ্ছা করে এবং তা তার ইচ্ছা ও সে কাজের মাঝখানে প্রতিবন্ধকতা এসে থাকে। (সুতরাং বুঝা যায়, মানুষের ইচ্ছা আছে তবে তাতে অন্য কোনো সত্ত্বার হস্তক্ষেপ আছে)
২. আর কট্টর জাবরিয়া গোষ্ঠী যারা তাকদীর প্রমাণে বাড়াবাড়ি করে মানুষকে কর্মকাণ্ডমুক্ত মনে করে, যে সমস্ত দলিল প্রমাণ বা ভাষ্য কর্ম ও মানুষের ইচ্ছা সাব্যস্ত করে সেগুলো তাদের উক্ত দাবীকে খণ্ডন করে দেয়। তাছাড়া বাস্তবতাও প্রমাণ করে যে, প্রতিটি মানুষ তার ইচ্ছাকৃত কর্ম ও অনিচ্ছাকৃত কর্মের মধ্যে পার্থক্য করে নিতে পারে।
অনুরূপভাবে শরী‘আতের বহু দলিল এটা প্রমাণ করছে যে আল্লাহ তা‘আলার কর্মকাণ্ডে হিকমত রয়েছে এবং তাতে কারণও রয়েছে।
এক- কাদারিয়্যাহ, যারা তাকদীরকে অস্বীকার করে। তারা দু শ্রেণিতে বিভক্ত:
ক- কট্টর গোষ্ঠী: তারা এ গোষ্ঠীর প্রথমযুগের মানুষ, যারা আল্লাহ তা‘আলার ইলম ও লিখন উভয়টিকেই অস্বীকার করেছিল এবং তারা দাবি করেছিল যে, সব কিছুই ঘটে আকস্মিকভাবে।
খ- নমনীয় গোষ্ঠী: তারা মু‘তাযিলা ফের্কা, তারা আল্লাহর ইচ্ছা ও সৃষ্টিকে অস্বীকার করেছিল। তারা বিশ্বাস করত যে, বান্দা নিজেই তার কর্মের স্রষ্টা।
দুই: জাবারিয়্যাহ, যারা বলে, বান্দা তার কর্মে বাধ্য। তারা বান্দা থেকে তার ইচ্ছা, কর্মক্ষমতা ও স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে। তারা বান্দার নড়চড় করাকে প্যারালাইসিস রুগির মত বাধ্যতামূলক মনে করে। আর তারা আল্লাহর কর্মসমূহে হিকমত ও কারণকে অস্বীকার করে।
বস্তুত কাদরিয়াহ ও জাবরিয়াহ এ উভয় শ্রেণি বাস্তবতা ও শরী‘আত উভয় দ্বারা পরাজিত ও প্রত্যাখ্যাত। কারণ,
১. চার স্তরে তাকদীর সাব্যস্তকারী সু-স্পষ্ট নসসমূহ তাকদীর অস্বীকারকারীদের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে। আর বাস্তবতাও প্রমাণ করে যে, মানুষ কোনো কর্ম করার ইচ্ছা করে এবং তা তার ইচ্ছা ও সে কাজের মাঝখানে প্রতিবন্ধকতা এসে থাকে। (সুতরাং বুঝা যায়, মানুষের ইচ্ছা আছে তবে তাতে অন্য কোনো সত্ত্বার হস্তক্ষেপ আছে)
২. আর কট্টর জাবরিয়া গোষ্ঠী যারা তাকদীর প্রমাণে বাড়াবাড়ি করে মানুষকে কর্মকাণ্ডমুক্ত মনে করে, যে সমস্ত দলিল প্রমাণ বা ভাষ্য কর্ম ও মানুষের ইচ্ছা সাব্যস্ত করে সেগুলো তাদের উক্ত দাবীকে খণ্ডন করে দেয়। তাছাড়া বাস্তবতাও প্রমাণ করে যে, প্রতিটি মানুষ তার ইচ্ছাকৃত কর্ম ও অনিচ্ছাকৃত কর্মের মধ্যে পার্থক্য করে নিতে পারে।
অনুরূপভাবে শরী‘আতের বহু দলিল এটা প্রমাণ করছে যে আল্লাহ তা‘আলার কর্মকাণ্ডে হিকমত রয়েছে এবং তাতে কারণও রয়েছে।
কুরআন আল্লাহর বাণী: মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَإِنۡ أَحَدٞ مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٱسۡتَجَارَكَ فَأَجِرۡهُ حَتَّىٰ يَسۡمَعَ كَلَٰمَ ٱللَّهِ﴾ [ التوبة : ٦ ]
“আর যদি মুশরিকদের কেউ তোমার কাছে আশ্রয় চায়, তাহলে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনে”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিভিন্ন মওসূমে বিভিন্ন গোত্রের নিকট দা‘ওয়াত নিয়ে যান, তখন তিনি বলেন:
«ألا رجل يحملني إلى قومه، لأبلغ كلام ربي ؛ فإن قريشاً قد منعوني أن أبلغ كلام ربي عز وجل» .
“এমন কোনো লোক আছে কি যে সে আমাকে তার সম্প্রদায়ের নিকট নিয়ে যাবে, যাতে আমি তাদের নিকট আল্লাহর বাণী প্রচার করতে পারি। কারণ, কুরাইশরা আমাকে আল্লাহর বাণী প্রচার করতে বাধা দিচ্ছে”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭৩৪]
কুরআন বাস্তবেই আল্লাহর কালাম, মাখলুকের কথার মত নয়। কুরআনের শব্দ ও অর্থ মাখলুকের কথার সাথে সাদৃশ্য নেই। এটি আল্লাহর অবতীর্ণ বাণী, সৃষ্ট নয়। মহান আল্লাহ প্রথমে এ দ্বারা কথা বলেন। এবং তিনি তা রুহুল আমীন জিবরীলের নিকট অহী হিসেবে প্রেরণ করেন। তারপর খণ্ড খণ্ড করে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্তরে তা অবতীর্ণ হয়। অতঃপর তিনি তা মানুষকে পড়ে শোনান। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَقُرۡءَانٗا فَرَقۡنَٰهُ لِتَقۡرَأَهُۥ عَلَى ٱلنَّاسِ عَلَىٰ مُكۡثٖ وَنَزَّلۡنَٰهُ تَنزِيلٗا ١٠٦﴾ [ الاسراء : ١٠٦ ]
“আর কুরআন আমি নাযিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ধীরে ধীরে এবং আমি তা নাযিল করেছি পর্যায়ক্রমে”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১০৬]
যখন মানুষ কুরআনকে তিলাওয়াত করে অথবা মুসহাফে লিপিবদ্ধ করে অথবা হিফয করে, তাতে কুরআন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কালাম হওয়া থেকে বের হয় না। কারণ, সাধারণত প্রথমে যিনি কথাটি বলেন তার প্রতিই সম্বোধন করা হয় এবং তা তাঁরই কথা হয়ে থাকে; যে কথাটি পৌঁছায় বা উচ্চারণ করে তা তার কথা হয় না। সুতরাং তিলাওয়াত করা এবং যা তিলাওয়াত করা হয়েছে দু’টি বিষয়, অনুরূপ লিখন এবং যা লিখা হয় তাও দু’টি বিষয়, তদ্রূপ হিফয করা এবং যা হিফয করা হয়েছে দু’টি বিষয়। অনুরূপভাবে যাবতীয় কর্ম। ফলে তিলাওয়াত করা ক্বারীর, লেখা লেখকের এবং হিফয করা হাফেযের কর্ম কিন্তু মূলকথা আল্লাহ তা‘আলার কথা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلۡ نَزَّلَهُۥ رُوحُ ٱلۡقُدُسِ مِن رَّبِّكَ بِٱلۡحَقِّ لِيُثَبِّتَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَهُدٗى وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ ١٠٢ وَلَقَدۡ نَعۡلَمُ أَنَّهُمۡ يَقُولُونَ إِنَّمَا يُعَلِّمُهُۥ بَشَرٞۗ لِّسَانُ ٱلَّذِي يُلۡحِدُونَ إِلَيۡهِ أَعۡجَمِيّٞ وَهَٰذَا لِسَانٌ عَرَبِيّٞ مُّبِينٌ ١٠٣﴾ [ النحل : ١٠٢، ١٠٣ ]
“বল, রুহুল কুদস (জিবরীল) একে তোমার রবের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে নাযিল করেছেন। যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং মুসলিমদের জন্য তা হিদায়াত ও সুসংবাদস্বরূপ। আর আমি অবশ্যই জানি যে, তারা বলবে, তাকে তো শিক্ষা দেয় একজন মানুষ, যার দিকে তারা ঈঙ্গিত করেছে, তার ভাষা হচ্ছে অনারবী। অথচ এটা হচ্ছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষা”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১০২, ১০৩]
যে ব্যক্তি আল্লাহর বাণীকে মানুষের বাণী বলেছে, তাকে কাফির বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং তাকে জাহান্নামের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿سَأُصۡلِيهِ سَقَرَ ٢٦﴾ [ المدثر : ٢٦ ]
“অচিরেই আমি তাকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাব”। [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ২৬]
﴿وَإِنۡ أَحَدٞ مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٱسۡتَجَارَكَ فَأَجِرۡهُ حَتَّىٰ يَسۡمَعَ كَلَٰمَ ٱللَّهِ﴾ [ التوبة : ٦ ]
“আর যদি মুশরিকদের কেউ তোমার কাছে আশ্রয় চায়, তাহলে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনে”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিভিন্ন মওসূমে বিভিন্ন গোত্রের নিকট দা‘ওয়াত নিয়ে যান, তখন তিনি বলেন:
«ألا رجل يحملني إلى قومه، لأبلغ كلام ربي ؛ فإن قريشاً قد منعوني أن أبلغ كلام ربي عز وجل» .
“এমন কোনো লোক আছে কি যে সে আমাকে তার সম্প্রদায়ের নিকট নিয়ে যাবে, যাতে আমি তাদের নিকট আল্লাহর বাণী প্রচার করতে পারি। কারণ, কুরাইশরা আমাকে আল্লাহর বাণী প্রচার করতে বাধা দিচ্ছে”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭৩৪]
কুরআন বাস্তবেই আল্লাহর কালাম, মাখলুকের কথার মত নয়। কুরআনের শব্দ ও অর্থ মাখলুকের কথার সাথে সাদৃশ্য নেই। এটি আল্লাহর অবতীর্ণ বাণী, সৃষ্ট নয়। মহান আল্লাহ প্রথমে এ দ্বারা কথা বলেন। এবং তিনি তা রুহুল আমীন জিবরীলের নিকট অহী হিসেবে প্রেরণ করেন। তারপর খণ্ড খণ্ড করে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্তরে তা অবতীর্ণ হয়। অতঃপর তিনি তা মানুষকে পড়ে শোনান। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَقُرۡءَانٗا فَرَقۡنَٰهُ لِتَقۡرَأَهُۥ عَلَى ٱلنَّاسِ عَلَىٰ مُكۡثٖ وَنَزَّلۡنَٰهُ تَنزِيلٗا ١٠٦﴾ [ الاسراء : ١٠٦ ]
“আর কুরআন আমি নাযিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ধীরে ধীরে এবং আমি তা নাযিল করেছি পর্যায়ক্রমে”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১০৬]
যখন মানুষ কুরআনকে তিলাওয়াত করে অথবা মুসহাফে লিপিবদ্ধ করে অথবা হিফয করে, তাতে কুরআন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কালাম হওয়া থেকে বের হয় না। কারণ, সাধারণত প্রথমে যিনি কথাটি বলেন তার প্রতিই সম্বোধন করা হয় এবং তা তাঁরই কথা হয়ে থাকে; যে কথাটি পৌঁছায় বা উচ্চারণ করে তা তার কথা হয় না। সুতরাং তিলাওয়াত করা এবং যা তিলাওয়াত করা হয়েছে দু’টি বিষয়, অনুরূপ লিখন এবং যা লিখা হয় তাও দু’টি বিষয়, তদ্রূপ হিফয করা এবং যা হিফয করা হয়েছে দু’টি বিষয়। অনুরূপভাবে যাবতীয় কর্ম। ফলে তিলাওয়াত করা ক্বারীর, লেখা লেখকের এবং হিফয করা হাফেযের কর্ম কিন্তু মূলকথা আল্লাহ তা‘আলার কথা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قُلۡ نَزَّلَهُۥ رُوحُ ٱلۡقُدُسِ مِن رَّبِّكَ بِٱلۡحَقِّ لِيُثَبِّتَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَهُدٗى وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ ١٠٢ وَلَقَدۡ نَعۡلَمُ أَنَّهُمۡ يَقُولُونَ إِنَّمَا يُعَلِّمُهُۥ بَشَرٞۗ لِّسَانُ ٱلَّذِي يُلۡحِدُونَ إِلَيۡهِ أَعۡجَمِيّٞ وَهَٰذَا لِسَانٌ عَرَبِيّٞ مُّبِينٌ ١٠٣﴾ [ النحل : ١٠٢، ١٠٣ ]
“বল, রুহুল কুদস (জিবরীল) একে তোমার রবের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে নাযিল করেছেন। যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং মুসলিমদের জন্য তা হিদায়াত ও সুসংবাদস্বরূপ। আর আমি অবশ্যই জানি যে, তারা বলবে, তাকে তো শিক্ষা দেয় একজন মানুষ, যার দিকে তারা ঈঙ্গিত করেছে, তার ভাষা হচ্ছে অনারবী। অথচ এটা হচ্ছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষা”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১০২, ১০৩]
যে ব্যক্তি আল্লাহর বাণীকে মানুষের বাণী বলেছে, তাকে কাফির বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং তাকে জাহান্নামের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿سَأُصۡلِيهِ سَقَرَ ٢٦﴾ [ المدثر : ٢٦ ]
“অচিরেই আমি তাকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাব”। [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ২৬]
আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কিয়ামত দিবসে স্ব-চক্ষে কোনো প্রকার পর্দা ছাড়াই দুটি স্থানে মুমিনদের আল্লাহর দর্শন লাভ করা।
এক- কিয়ামতের মাঠে যেখানে হিসাব-নিকাশ হবে।
দুই- জান্নাতে প্রবেশের পর।
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣﴾ [ القيامة : ٢٢، ٢٣ ]
“সেদিন কতক মুখমণ্ডল হবে হাস্যোজ্জ্বল। তাদের রবের প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপকারী”। [সূরা আল-কিয়ামাহ, আয়াত: ২২, ২৩]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِ يَنظُرُونَ ٢٣﴾ [ المطففين : ٢٣ ]
“সুসজ্জিত আসনে বসে তারা দেখতে থাকবে”। [সূরা আল-মুতাফফিফীন, আয়াত: ২৩] মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لِّلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ ٱلۡحُسۡنَىٰ وَزِيَادَةٞۖ ٢٦﴾ [ يونس : ٢٦ ]
“যারা ভালো কাজ করেছে তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম (জান্নাত) এবং আল্লাহর দর্শন লাভ”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৬]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إنكم سترون ربكم كما ترون القمر ليلة البدر، لا تضامون في رؤيته» .
“পূণির্মার রাতে চাঁদকে যেমন দেখতে পাও তেমনিভাবে তোমারা তোমাদের রবকে দেখতে পাবে। তাকে দেখতে তোমাদের কোনো কষ্ট হবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮২]
এক- কিয়ামতের মাঠে যেখানে হিসাব-নিকাশ হবে।
দুই- জান্নাতে প্রবেশের পর।
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣﴾ [ القيامة : ٢٢، ٢٣ ]
“সেদিন কতক মুখমণ্ডল হবে হাস্যোজ্জ্বল। তাদের রবের প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপকারী”। [সূরা আল-কিয়ামাহ, আয়াত: ২২, ২৩]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِ يَنظُرُونَ ٢٣﴾ [ المطففين : ٢٣ ]
“সুসজ্জিত আসনে বসে তারা দেখতে থাকবে”। [সূরা আল-মুতাফফিফীন, আয়াত: ২৩] মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لِّلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ ٱلۡحُسۡنَىٰ وَزِيَادَةٞۖ ٢٦﴾ [ يونس : ٢٦ ]
“যারা ভালো কাজ করেছে তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম (জান্নাত) এবং আল্লাহর দর্শন লাভ”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৬]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إنكم سترون ربكم كما ترون القمر ليلة البدر، لا تضامون في رؤيته» .
“পূণির্মার রাতে চাঁদকে যেমন দেখতে পাও তেমনিভাবে তোমারা তোমাদের রবকে দেখতে পাবে। তাকে দেখতে তোমাদের কোনো কষ্ট হবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮২]
এক- ঈমান হলো, কথা ও কাজ; অন্তরের কথা, মুখের কথা এবং অন্তরের আমল এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও মুখের আমলের নাম ঈমান। অন্তরের কথার অর্থ, বিশ্বাস স্থাপন করা, সত্যায়ন করা ও গ্রহণ করা।
আর মুখের কথার অর্থ: ইসলামের কালেমা উচ্চারণ করা এবং উভয় কালেমায়ে শাহাদাতের ঘোষণা দেওয়া।
অন্তরের আমল: মানুষের নিয়্যত ও ইচ্ছা যার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়, তাকে অন্তরের আমল বলা হয়। যেমন, ভয়, আশা ও আল্লাহর উপর ভরসা করা ইত্যাদি।
মুখের আমল: যিকির, তিলাওয়াত ও দো‘আ যার দ্বারা উচ্চারিত হয়।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও মুখের আমল: দৈহিক বিভিন্ন ইবাদাতের কারণে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের নড়াচড়া করা।
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتۡ قُلُوبُهُمۡ وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ ٢ ٱلَّذِينَ يُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ٣ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ حَقّٗاۚ لَّهُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ رَبِّهِمۡ وَمَغۡفِرَةٞ وَرِزۡقٞ كَرِيمٞ ٤﴾ [ الانفال : ٢، ٤ ]
“মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে। যারা নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের নিকট উচ্চ মর্যাদাসমূহ এবং ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২, ৪]
আরও বলেন:
﴿إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمۡ يَرۡتَابُواْ وَجَٰهَدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ ١٥﴾ [ الحجرات : ١٥ ]
“মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করে নি। আর নিজদের সম্পদ ও নিজদের জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে। এরাই সত্যনিষ্ঠ”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৫]
অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«الإيمان بضع وسبعون، أو بضع وستون ، شعبة ؛ فأفضلها قول لا إله إلا الله، وأدناها إماطة الأذى عن الطريق ، والحياء شعبة من الإيمان» .
“ঈমানের শাখা-প্রশাখা সত্তুরের অধিক অথবা ষাটের অধিক। সর্ব উত্তম শাখা হলো, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা। আর সর্ব নিম্ন হলো, কষ্টদায়ক বস্তু রাস্তা থেকে দূর করে দেওয়া। আর লজ্জাও ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫]
সুতরাং ঈমান মূলত কথা ও কর্মের সমষ্টি। আর তা এমন বিশ্বাস যা কথা ও কর্মকে বাধ্য করে। ফলে কথা ও কর্ম না থাকা বিশ্বাস না থাকাকে বাধ্য করে।
দুই- ঈমান শব্দটি যখন একা উল্লেখ করা হয় তখন তার অর্থে ইসলামও অন্তর্ভুক্ত হয়। অনুরূপ যখন ইসলামকে একা উল্লেখ করা হয়। কারণ, ঈমান ও ইসলাম উভয়টিই হলো, পূর্ণাঙ্গ দীন। আর যখন ঈমান ও ইসলাম উভয়টি একত্রে উল্লেখ করা হয়, তখন ঈমান অর্থ অন্তরের বিশ্বাস আর ইসলাম অর্থ বাহ্যিক আমল। প্রত্যেক মুমিন মুসলিম। তবে প্রত্যেক মুসলিম মুমিন নয়। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قَالَتِ ٱلۡأَعۡرَابُ ءَامَنَّاۖ قُل لَّمۡ تُؤۡمِنُواْ وَلَٰكِن قُولُوٓاْ أَسۡلَمۡنَا وَلَمَّا يَدۡخُلِ ٱلۡإِيمَٰنُ فِي قُلُوبِكُمۡۖ ١٤﴾ [ الحجرات : ١٤ ]
“বেদুঈনরা বলল, ‘আমরা ঈমান আনলাম’। বল, ‘তোমরা ঈমান আননি’। বরং তোমরা বল, ‘আমরা আত্মসমর্পণ করলাম’। আর এখন পর্যন্ত তোমাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি”। [সূরা আল-হুজরাত, আয়াত: ১৪]
তিন- ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং কমে যায়; আল্লাহর সম্পর্কে জানা, আল্লাহর নিদর্শনসমূহে চিন্তা-ফিকির করা, ইবাদত-বন্দেগী করা এবং গুণাহের কর্মসমূহ ছেড়ে দেওয়ার দ্বারা ঈমান বৃদ্ধি পায়। প্রক্ষান্তরে আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞতা, আল্লাহর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে অমনোযোগী হওয়া, গুনাহ করা, ইবাদত-বন্দেগী থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি ঈমানকে দুর্বল করে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا ٢ ﴾ [ الانفال : ٢ ]
“আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا فَزَادَتْهُمْ إِيمَاناً وَهُمْ يَسْتَبْشِرُونَ﴾ التوبة : 124
“অতএব, যারা মুমিন, নিশ্চয় তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দিত হয়”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১২৪]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿هُوَ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ فِي قُلُوبِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ لِيَزۡدَادُوٓاْ إِيمَٰنٗا مَّعَ إِيمَٰنِهِمۡۗ ٤﴾ [ الفتح : ٤ ]
“তিনিই মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেছিলেন যেন তাদের ঈমানের সাথে ঈমান বৃদ্ধি পায়”। [সূরা আল-ফাতাহ, আয়াত: ৪]
চার- ঈমান বিভিন্ন স্তরের হয়ে থাকে। ঈমানের কিছু অংশ তার অন্য অংশের চেয়ে উন্নত ও উত্তম হয়। যেমনটি উল্লিখিত হাদীস:
«الإيمان بضع وسبعون، أو بضع وستون، شعبة ؛ فأفضلها قول لا إله إلا الله، وأدناها إماطة الأذى عن الطريق، والحياء شعبة من الإيمان» .
“ঈমানের শাখা-প্রশাখা সত্তুরের অধিক অথবা ষাটের অধিক। সর্ব উত্তম শাখা হলো, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা। আর সর্ব নিম্ন হলো, কষ্টদায়ক বস্তু রাস্তা থেকে দূর করে দেওয়া। আর লজ্জাও ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫]
পাঁচ- ঈমাদারগণের স্তর একাধিক: কতক ঈমানদার কতকের তুলনায় অধিক পরিপূর্ণ ঈমানদার। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ ثُمَّ أَوۡرَثۡنَا ٱلۡكِتَٰبَ ٱلَّذِينَ ٱصۡطَفَيۡنَا مِنۡ عِبَادِنَاۖ فَمِنۡهُمۡ ظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِۦ وَمِنۡهُم مُّقۡتَصِدٞ وَمِنۡهُمۡ سَابِقُۢ بِٱلۡخَيۡرَٰتِ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَضۡلُ ٱلۡكَبِيرُ ٣٢ ﴾ [ فاطر : ٣٢ ]
“অতঃপর আমি এ কিতাবটির উত্তরাধিকারী করেছি আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে, যাদেরকে আমি মনোনীত করেছি। তারপর তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি যুলুমকারী এবং কেউ কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী। আবার তাদের কেউ কেউ আল্লাহর অনুমতিসাপেক্ষে কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী। এটাই হলো মহাঅনুগ্রহ”। [সূরা ফাতির, আয়াত: ৩২]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أكمل المؤمنين إيماناً، أحسنهم خلقاً» .
“ঈমানের বিষয়ে পরিপূর্ণ ব্যক্তি তাকেই বলা যাবে যে তার চরিত্রের দিক দিয়ে অধিক সুন্দর”। [আহমদ, হাদীস নং ৭৪০২ আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬৮২ তিরমিযি, হাদীস নং ১১৬২]
যে ব্যক্তি কালিমায়ে শাহাদাতের উভয় অংশের অর্থের উপর বিশ্বাস স্থাপন করল এবং শাহাদতদ্বয়ের দাবিকে অনুসরণ করল, সেই প্রকৃতপক্ষে মূল ঈমান রক্ষা ও পালন করল। আর যে ব্যক্তি ওয়াজিবগুলো পালন করল এবং নিষিদ্ধ বিষয়গুলো ছেড়ে দিল, সে ওয়াজিব ঈমানকে রক্ষা করল। আর যে ব্যক্তি ওয়াজিব ও মুস্তাহাবসমূহ পালন করল এবং হারাম ও মাকরুহসমূহ ছেড়ে দিল, সে পরিপূর্ণ ঈমানকে রক্ষা করল।
ছয়- ঈমানের মধ্যে (ইস্তেসনা তথা) ইনশাআল্লাহ বলা; অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি এ কথা বলে যে, ইনশাআল্লাহ আমি একজন মুমিন। এর অর্থ হলো, আল্লাহ যদি চান তবে আমি মুমিন। এ ধরণেরকথার তিন অবস্থা:
১- যদি ঈমানের মূলে সন্দেহ পোষণ করে এ কথা বলে থাকে, তাহলে এ ধরণেরকথা বলা হারাম এমনকি কুফরি হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ, ঈমান সন্দেহ গ্রহণ করে না। ঈমান হলো, দৃঢ় বিশ্বাস ও প্রত্যয়।
২- পরিপূর্ণ ঈমানদার ও ওয়াজিব ঈমান বাস্তবায়নের দাবিদার হওয়ার মাধ্যমে নিজেকে পবিত্র বলে মনে করার ভয় থেকে এ ধরণেরকথা বলে তাহলে তা বলা ওয়াজিব।
৩- আর যদি আল্লাহর নামের উচ্চারণ বরকতের জন্য করে থাকে তবে এ ধরণেরকথা বলা বৈধ।
আর মুখের কথার অর্থ: ইসলামের কালেমা উচ্চারণ করা এবং উভয় কালেমায়ে শাহাদাতের ঘোষণা দেওয়া।
অন্তরের আমল: মানুষের নিয়্যত ও ইচ্ছা যার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়, তাকে অন্তরের আমল বলা হয়। যেমন, ভয়, আশা ও আল্লাহর উপর ভরসা করা ইত্যাদি।
মুখের আমল: যিকির, তিলাওয়াত ও দো‘আ যার দ্বারা উচ্চারিত হয়।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও মুখের আমল: দৈহিক বিভিন্ন ইবাদাতের কারণে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের নড়াচড়া করা।
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتۡ قُلُوبُهُمۡ وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ ٢ ٱلَّذِينَ يُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ٣ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ حَقّٗاۚ لَّهُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ رَبِّهِمۡ وَمَغۡفِرَةٞ وَرِزۡقٞ كَرِيمٞ ٤﴾ [ الانفال : ٢، ٤ ]
“মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে। যারা নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের নিকট উচ্চ মর্যাদাসমূহ এবং ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২, ৪]
আরও বলেন:
﴿إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمۡ يَرۡتَابُواْ وَجَٰهَدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ ١٥﴾ [ الحجرات : ١٥ ]
“মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করে নি। আর নিজদের সম্পদ ও নিজদের জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে। এরাই সত্যনিষ্ঠ”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৫]
অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«الإيمان بضع وسبعون، أو بضع وستون ، شعبة ؛ فأفضلها قول لا إله إلا الله، وأدناها إماطة الأذى عن الطريق ، والحياء شعبة من الإيمان» .
“ঈমানের শাখা-প্রশাখা সত্তুরের অধিক অথবা ষাটের অধিক। সর্ব উত্তম শাখা হলো, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা। আর সর্ব নিম্ন হলো, কষ্টদায়ক বস্তু রাস্তা থেকে দূর করে দেওয়া। আর লজ্জাও ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫]
সুতরাং ঈমান মূলত কথা ও কর্মের সমষ্টি। আর তা এমন বিশ্বাস যা কথা ও কর্মকে বাধ্য করে। ফলে কথা ও কর্ম না থাকা বিশ্বাস না থাকাকে বাধ্য করে।
দুই- ঈমান শব্দটি যখন একা উল্লেখ করা হয় তখন তার অর্থে ইসলামও অন্তর্ভুক্ত হয়। অনুরূপ যখন ইসলামকে একা উল্লেখ করা হয়। কারণ, ঈমান ও ইসলাম উভয়টিই হলো, পূর্ণাঙ্গ দীন। আর যখন ঈমান ও ইসলাম উভয়টি একত্রে উল্লেখ করা হয়, তখন ঈমান অর্থ অন্তরের বিশ্বাস আর ইসলাম অর্থ বাহ্যিক আমল। প্রত্যেক মুমিন মুসলিম। তবে প্রত্যেক মুসলিম মুমিন নয়। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿قَالَتِ ٱلۡأَعۡرَابُ ءَامَنَّاۖ قُل لَّمۡ تُؤۡمِنُواْ وَلَٰكِن قُولُوٓاْ أَسۡلَمۡنَا وَلَمَّا يَدۡخُلِ ٱلۡإِيمَٰنُ فِي قُلُوبِكُمۡۖ ١٤﴾ [ الحجرات : ١٤ ]
“বেদুঈনরা বলল, ‘আমরা ঈমান আনলাম’। বল, ‘তোমরা ঈমান আননি’। বরং তোমরা বল, ‘আমরা আত্মসমর্পণ করলাম’। আর এখন পর্যন্ত তোমাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি”। [সূরা আল-হুজরাত, আয়াত: ১৪]
তিন- ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং কমে যায়; আল্লাহর সম্পর্কে জানা, আল্লাহর নিদর্শনসমূহে চিন্তা-ফিকির করা, ইবাদত-বন্দেগী করা এবং গুণাহের কর্মসমূহ ছেড়ে দেওয়ার দ্বারা ঈমান বৃদ্ধি পায়। প্রক্ষান্তরে আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞতা, আল্লাহর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে অমনোযোগী হওয়া, গুনাহ করা, ইবাদত-বন্দেগী থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি ঈমানকে দুর্বল করে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا ٢ ﴾ [ الانفال : ٢ ]
“আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا فَزَادَتْهُمْ إِيمَاناً وَهُمْ يَسْتَبْشِرُونَ﴾ التوبة : 124
“অতএব, যারা মুমিন, নিশ্চয় তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দিত হয়”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১২৪]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿هُوَ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ فِي قُلُوبِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ لِيَزۡدَادُوٓاْ إِيمَٰنٗا مَّعَ إِيمَٰنِهِمۡۗ ٤﴾ [ الفتح : ٤ ]
“তিনিই মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেছিলেন যেন তাদের ঈমানের সাথে ঈমান বৃদ্ধি পায়”। [সূরা আল-ফাতাহ, আয়াত: ৪]
চার- ঈমান বিভিন্ন স্তরের হয়ে থাকে। ঈমানের কিছু অংশ তার অন্য অংশের চেয়ে উন্নত ও উত্তম হয়। যেমনটি উল্লিখিত হাদীস:
«الإيمان بضع وسبعون، أو بضع وستون، شعبة ؛ فأفضلها قول لا إله إلا الله، وأدناها إماطة الأذى عن الطريق، والحياء شعبة من الإيمان» .
“ঈমানের শাখা-প্রশাখা সত্তুরের অধিক অথবা ষাটের অধিক। সর্ব উত্তম শাখা হলো, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা। আর সর্ব নিম্ন হলো, কষ্টদায়ক বস্তু রাস্তা থেকে দূর করে দেওয়া। আর লজ্জাও ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫]
পাঁচ- ঈমাদারগণের স্তর একাধিক: কতক ঈমানদার কতকের তুলনায় অধিক পরিপূর্ণ ঈমানদার। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ ثُمَّ أَوۡرَثۡنَا ٱلۡكِتَٰبَ ٱلَّذِينَ ٱصۡطَفَيۡنَا مِنۡ عِبَادِنَاۖ فَمِنۡهُمۡ ظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِۦ وَمِنۡهُم مُّقۡتَصِدٞ وَمِنۡهُمۡ سَابِقُۢ بِٱلۡخَيۡرَٰتِ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَضۡلُ ٱلۡكَبِيرُ ٣٢ ﴾ [ فاطر : ٣٢ ]
“অতঃপর আমি এ কিতাবটির উত্তরাধিকারী করেছি আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে, যাদেরকে আমি মনোনীত করেছি। তারপর তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি যুলুমকারী এবং কেউ কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী। আবার তাদের কেউ কেউ আল্লাহর অনুমতিসাপেক্ষে কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী। এটাই হলো মহাঅনুগ্রহ”। [সূরা ফাতির, আয়াত: ৩২]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أكمل المؤمنين إيماناً، أحسنهم خلقاً» .
“ঈমানের বিষয়ে পরিপূর্ণ ব্যক্তি তাকেই বলা যাবে যে তার চরিত্রের দিক দিয়ে অধিক সুন্দর”। [আহমদ, হাদীস নং ৭৪০২ আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬৮২ তিরমিযি, হাদীস নং ১১৬২]
যে ব্যক্তি কালিমায়ে শাহাদাতের উভয় অংশের অর্থের উপর বিশ্বাস স্থাপন করল এবং শাহাদতদ্বয়ের দাবিকে অনুসরণ করল, সেই প্রকৃতপক্ষে মূল ঈমান রক্ষা ও পালন করল। আর যে ব্যক্তি ওয়াজিবগুলো পালন করল এবং নিষিদ্ধ বিষয়গুলো ছেড়ে দিল, সে ওয়াজিব ঈমানকে রক্ষা করল। আর যে ব্যক্তি ওয়াজিব ও মুস্তাহাবসমূহ পালন করল এবং হারাম ও মাকরুহসমূহ ছেড়ে দিল, সে পরিপূর্ণ ঈমানকে রক্ষা করল।
ছয়- ঈমানের মধ্যে (ইস্তেসনা তথা) ইনশাআল্লাহ বলা; অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি এ কথা বলে যে, ইনশাআল্লাহ আমি একজন মুমিন। এর অর্থ হলো, আল্লাহ যদি চান তবে আমি মুমিন। এ ধরণেরকথার তিন অবস্থা:
১- যদি ঈমানের মূলে সন্দেহ পোষণ করে এ কথা বলে থাকে, তাহলে এ ধরণেরকথা বলা হারাম এমনকি কুফরি হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ, ঈমান সন্দেহ গ্রহণ করে না। ঈমান হলো, দৃঢ় বিশ্বাস ও প্রত্যয়।
২- পরিপূর্ণ ঈমানদার ও ওয়াজিব ঈমান বাস্তবায়নের দাবিদার হওয়ার মাধ্যমে নিজেকে পবিত্র বলে মনে করার ভয় থেকে এ ধরণেরকথা বলে তাহলে তা বলা ওয়াজিব।
৩- আর যদি আল্লাহর নামের উচ্চারণ বরকতের জন্য করে থাকে তবে এ ধরণেরকথা বলা বৈধ।
সাত- সাধারণ গুনাহ ও কবীরাহ গুনাহের কারণে একজন মানুষের ঈমানের গুণ কখনো দূর হয় না, তবে এ সব কারণে মূল ঈমান অবশিষ্ট থাকার সাথে সাথে ঈমান দুর্বল হয়। কবীরা গুনাহকারীকে বলা হবে, মু’মিন দুর্বল ঈমানদার। ঈমান স্থাপন করার কারণে তাকে মুমিন বলা হবে আর কবীরাহ গুনাহের কারণ তাকে ফাসিক বলা হবে। এ ব্যক্তি দুনিয়াতে ইসলাম থেকে বের হবে না এবং আখিরাতে সে চির জাহান্নামী হবে না; বরং সে আল্লাহর ইচ্ছার আওতায় থাকবে। আল্লাহ যদি চান, তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং জান্নাতের প্রবেশ করাবে। আর যদি চান তিনি তাকে তার সব গুনাহ বা আংশিক গুনাহের কারণে শাস্তি দেবেন। অতঃপর সে সুপারিশকারীর সুপারিশের কারণে অথবা পরম দয়ালু আল্লাহর রহমতের কারণে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং তার শেষ পরিণতি হবে জান্নাত। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفۡتَرَىٰٓ إِثۡمًا عَظِيمًا ٤٨﴾ [ النساء : ٤٨ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«يدخل أهل الجنة الجنة، وأهل النار النار، ثم يقول الله تعالى : أخرجوا من كان في قلبه مثقال حبة من خردل من إيمان . فيخرجون منها، قد اسودوا، فيلقون في نهر الحياة»
“জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করার পর মহান আল্লাহ বলবেন, যার অন্তরে এক দানা পরিমাণ ঈমান রয়েছে তাকে তোমরা জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে এসো। তখন তারা জাহান্নাম থেকে জাহান্নামীকে বের করবে এমন অবস্থায় যে সে কালো হয়ে গেছে। তারপর তাকে হায়াতের নহরে নিক্ষেপ করা হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৬০] এবং তিনি বলেন:
«يَخرج من النار من قال : لا إله إلا الله ، وفي قلبه وزن شعيرة من خير، و يَخرج من النار من قال : لا إله إلا الله ، وفي قلبه وزن برة من خير، ويَخرج من النار من قال : لا إله إلا الله ، وفي قلبه وزن ذرة من خير» .
“যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে এবং তার অন্তরে একটি যব পরিমাণ ঈমান রয়েছে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে এবং তার অন্তরে একটি গম পরিমাণ ঈমান রয়েছে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে এবং তার অন্তরে একটি অণু-কণা পরিমাণ ঈমান রয়েছে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪]
অপর এক বর্ণনায় ঈমানের স্থানে কল্যাণের কথা এসেছে।
(কবিরা গুনাহের ব্যাপারে ভ্রষ্ট মতসমূহ)
দুই শ্রেণির লোক এ মাসাআলায় পথভ্রষ্ট হয়েছে:
প্রথম শ্রেণি: আল-ওয়া‘য়িদিয়্যাহ: যারা হুমকি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা বলে এবং তাওহীদপন্থীদের যারা অপরাধী ও কবীরাহ গুনাহকারী তাদের বিষয়ে সুপারিশকে অস্বীকার করে। তাদের শ্রেণি দুটি:
এক- খারেজী: তারা বলে, কবীরাহ গুনাহকারী ঈমান থেকে বের হয়ে যায় এবং কুফরে প্রবেশ করে। দুনিয়াতে সে কাফির এবং আখিরাতে চির জাহান্নামী।
দুই- মু‘তাযিলা: তারা বলে, কবীরাহ গুনাহকারী ঈমান থেকে বের হয়ে যায় তবে সে কুফরে প্রবেশ করে না। সে দুনিয়াতের মুমিন ও কাফির উভয়ের মাঝামাঝি কোনো একটি দস্থানে অবস্থান করে। ফলে সে দুনিয়াতে কাফিরও নয় মুমিনও নয়। আর আখিরাতে সে চির জাহান্নামী।
ও‘য়িদিয়্যাদের কথার উত্তর একাধিক। যেমন,
প্রথমত: মহান আল্লাহ যারা দুনিয়াতে কবীরাহ গুনাহ করে তাদের জন্য ঈমান সাব্যস্ত করেছেন এবং ঈমানী ভ্রাতৃত্বের গুণকে অবশিষ্ট রেখেছেন। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِصَاصُ فِي ٱلۡقَتۡلَىۖ ٱلۡحُرُّ بِٱلۡحُرِّ وَٱلۡعَبۡدُ بِٱلۡعَبۡدِ وَٱلۡأُنثَىٰ بِٱلۡأُنثَىٰۚ فَمَنۡ عُفِيَ لَهُۥ مِنۡ أَخِيهِ شَيۡءٞ فَٱتِّبَاعُۢ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَأَدَآءٌ إِلَيۡهِ بِإِحۡسَٰنٖۗ ١٧٨﴾ [ البقرة : ١٧٨ ]
“হে মুমিনগণ, নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের উপর ‘কিসাস’ ফরয করা হয়েছে। স্বাধীনের বদলে স্বাধীন, দাসের বদলে দাস, নারীর বদলে নারী। তবে যাকে কিছুটা ক্ষমা করা হবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে, তাহলে সততার অনুসরণ করবে এবং সুন্দরভাবে তাকে আদায় করে দেবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৮]
আয়াতে হত্যাকারীকে নিহতের ভাই বলে নামকরণ করা হয়েছে। যেমনিভাবে আল্লাহর অপর একটি বাণী এ বিষয়ে বিদ্যমান মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَإِن طَآئِفَتَانِ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱقۡتَتَلُواْ فَأَصۡلِحُواْ بَيۡنَهُمَاۖ فَإِنۢ بَغَتۡ إِحۡدَىٰهُمَا عَلَى ٱلۡأُخۡرَىٰ فَقَٰتِلُواْ ٱلَّتِي تَبۡغِي حَتَّىٰ تَفِيٓءَ إِلَىٰٓ أَمۡرِ ٱللَّهِۚ فَإِن فَآءَتۡ فَأَصۡلِحُواْ بَيۡنَهُمَا بِٱلۡعَدۡلِ وَأَقۡسِطُوٓاْۖ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُقۡسِطِينَ ٩ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ فَأَصۡلِحُواْ بَيۡنَ أَخَوَيۡكُمۡۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٠﴾ [ الحجرات : ٩، ١٠ ]
“আর যদি মুমিনদের দু’দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করবে, তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তারপর যদি দলটি ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা কর এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালোবাসেন। নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ- মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ৯, ১০]
উল্লিখিত আয়াতে মারামারিতে লিপ্ত উভয় দলের প্রতি ঈমানের সম্বোধন করা হয়েছে এবং উভয় দলের জন্য ঈমান সাব্যস্ত করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: মহান আল্লাহ শির্ক ছাড়া অন্য গুনাহ যাকে চান তাকে ক্ষমা করে দেন এবং যার অন্তরে শস্য দানার চেয়েও ছোট পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট থাকে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। এ বিষয়ে সুপারিশের হাদীসগুলোর বর্ণনা মুতাওয়াতির পর্যায়ের।
দ্বিতীয় শ্রেণি: আল-মুরজিয়া: যারা আমলসমূহকে ঈমান থেকে অকার্যকর বলে দাবি করে। ফলে গুনাহের কারণে ঈমান কোনো রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয় না যেমনিভাবে কুফরের সাথে ইবাদত বা ভালো কর্ম কোনো উপকারে আসে না। তারা ঈমানের সংজ্ঞার ক্ষেত্রে একাধিক শ্রেণিতে বিভক্ত।
এক- জাহমিয়্যাহ: তার বলে ঈমান হলো, শুধুমাত্র অন্তরে বিশ্বাস বা অন্তরে মা‘রেফাত।
দুই- আল-কাররামিয়্যাহ: যার বলে ঈমান হলো, শুধু মুখে উচ্চারণ করা।
তিন- মুরজিয়াতুল ফুকাহা: তারা বলে, ঈমান শুধুমাত্র অন্তরে বিশ্বাস, মুখের উচ্চারণ। আর আমলসমূহ ঈমানের হাকীকত ও সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয় বরং তা হলো ঈমানের ফলাফল।
মুরজিয়াদের কথার উত্তর একাধিকভাবে দেওয়া যায়:
প্রথমত: মহান আল্লাহ আমলসমূহকেও ঈমান বলে আখ্যায়িত করেছেন। যারা বাইতুল মুকাদ্দাসের দিক মুখ করে নামাজ আদায় করেছেন এবং কিবলা পরিবর্তনের পূর্বে মারা গেছেন তাদের বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَٰنَكُمۡۚ ١٤٣﴾ [ البقرة : ١٤٣ ]
“এবং আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তোমাদের নামাজকে বিনষ্ট করবেন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৪৩] অর্থাৎ তোমাদের সালাতকে বিনষ্ট করবেন”। অর্থাৎ এখানে ঈমান অর্থ নামাজ।
দ্বিতীয়ত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমলের ক্ষেত্রে কবীরাহ গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি থেকে সাধারণ ঈমানকে অবশিষ্ট থাকবে না বলেছেন। তিনি বলেন:
«لا يزني الزاني، حين يزني، وهو مؤمن . ولا يسرق السارق، حين يسرق، وهو مؤمن . ولا يشرب الخمر، حين يشربها، وهو مؤمن . ولا ينتهب نهبة ذات شرف، يرفع الناس إليه فيها أبصارهم، حين ينتهبها، وهو مؤمن» .
“একজন ব্যভিচারী যখন সে ব্যভিচার করে তখন সে মুমিন থাকা অবস্থায় ব্যভিচার করতে পারে না। একজন চোর যখন সে চুরি করে তখন সে মুমিন থাকা অবস্থায় চুরি করতে পারে না। একজন মদ্যপানকারী যখন সে মদপান করে তখন সে মুমিন থাকা অবস্থায় মদপান করতে পারে না। একজন সম্মানের অধিকারী ব্যক্তি যার দিক মানুষ মাথা উঁচু করে দেখে সে কখনো মুমিন থাকা অবস্থায় ছিনতাই করতে পারে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৭]
মুরাজিয়াহ ও ও‘য়িদিয়্যাহ উভয় দলের কথা অমুলক হওয়ার উৎস:
তারা উভয় দল এ কথা বিশ্বাস করে যে, ঈমান হলো, এক বস্তু। হয় তা পুরোপুরি পাওয়া যাবে অথবা পুরোপুরি না হয়ে যাবে। মুরাজিয়ারা শুধুমাত্র অন্তরে বা মুখে বা অন্তর ও মুখ উভয় দ্বারা স্বীকার করাকে ঈমান সাব্যস্ত করার চেষ্টা করে দথাকে, যদিও এ ব্যক্তি কখনোই কোনো আমল করে নি। আর এরা হলো, আহলে তাফরীত (বা ছাড়গোষ্ঠী)। আর ও‘য়িদিয়্যাহ যারা সামান্য গুনাহের কারণে ঈমানকে না করে দেয়, তারা হলো, আহলে ইফরাত (কট্টর গোষ্ঠী)। উভয় দলের শুরু এক ও অভিন্ন কিন্তু তাদের ফলাফল সম্পূর্ণ বিপরীত।
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفۡتَرَىٰٓ إِثۡمًا عَظِيمًا ٤٨﴾ [ النساء : ٤٨ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«يدخل أهل الجنة الجنة، وأهل النار النار، ثم يقول الله تعالى : أخرجوا من كان في قلبه مثقال حبة من خردل من إيمان . فيخرجون منها، قد اسودوا، فيلقون في نهر الحياة»
“জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করার পর মহান আল্লাহ বলবেন, যার অন্তরে এক দানা পরিমাণ ঈমান রয়েছে তাকে তোমরা জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে এসো। তখন তারা জাহান্নাম থেকে জাহান্নামীকে বের করবে এমন অবস্থায় যে সে কালো হয়ে গেছে। তারপর তাকে হায়াতের নহরে নিক্ষেপ করা হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৬০] এবং তিনি বলেন:
«يَخرج من النار من قال : لا إله إلا الله ، وفي قلبه وزن شعيرة من خير، و يَخرج من النار من قال : لا إله إلا الله ، وفي قلبه وزن برة من خير، ويَخرج من النار من قال : لا إله إلا الله ، وفي قلبه وزن ذرة من خير» .
“যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে এবং তার অন্তরে একটি যব পরিমাণ ঈমান রয়েছে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে এবং তার অন্তরে একটি গম পরিমাণ ঈমান রয়েছে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে এবং তার অন্তরে একটি অণু-কণা পরিমাণ ঈমান রয়েছে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪]
অপর এক বর্ণনায় ঈমানের স্থানে কল্যাণের কথা এসেছে।
(কবিরা গুনাহের ব্যাপারে ভ্রষ্ট মতসমূহ)
দুই শ্রেণির লোক এ মাসাআলায় পথভ্রষ্ট হয়েছে:
প্রথম শ্রেণি: আল-ওয়া‘য়িদিয়্যাহ: যারা হুমকি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা বলে এবং তাওহীদপন্থীদের যারা অপরাধী ও কবীরাহ গুনাহকারী তাদের বিষয়ে সুপারিশকে অস্বীকার করে। তাদের শ্রেণি দুটি:
এক- খারেজী: তারা বলে, কবীরাহ গুনাহকারী ঈমান থেকে বের হয়ে যায় এবং কুফরে প্রবেশ করে। দুনিয়াতে সে কাফির এবং আখিরাতে চির জাহান্নামী।
দুই- মু‘তাযিলা: তারা বলে, কবীরাহ গুনাহকারী ঈমান থেকে বের হয়ে যায় তবে সে কুফরে প্রবেশ করে না। সে দুনিয়াতের মুমিন ও কাফির উভয়ের মাঝামাঝি কোনো একটি দস্থানে অবস্থান করে। ফলে সে দুনিয়াতে কাফিরও নয় মুমিনও নয়। আর আখিরাতে সে চির জাহান্নামী।
ও‘য়িদিয়্যাদের কথার উত্তর একাধিক। যেমন,
প্রথমত: মহান আল্লাহ যারা দুনিয়াতে কবীরাহ গুনাহ করে তাদের জন্য ঈমান সাব্যস্ত করেছেন এবং ঈমানী ভ্রাতৃত্বের গুণকে অবশিষ্ট রেখেছেন। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِصَاصُ فِي ٱلۡقَتۡلَىۖ ٱلۡحُرُّ بِٱلۡحُرِّ وَٱلۡعَبۡدُ بِٱلۡعَبۡدِ وَٱلۡأُنثَىٰ بِٱلۡأُنثَىٰۚ فَمَنۡ عُفِيَ لَهُۥ مِنۡ أَخِيهِ شَيۡءٞ فَٱتِّبَاعُۢ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَأَدَآءٌ إِلَيۡهِ بِإِحۡسَٰنٖۗ ١٧٨﴾ [ البقرة : ١٧٨ ]
“হে মুমিনগণ, নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের উপর ‘কিসাস’ ফরয করা হয়েছে। স্বাধীনের বদলে স্বাধীন, দাসের বদলে দাস, নারীর বদলে নারী। তবে যাকে কিছুটা ক্ষমা করা হবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে, তাহলে সততার অনুসরণ করবে এবং সুন্দরভাবে তাকে আদায় করে দেবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৮]
আয়াতে হত্যাকারীকে নিহতের ভাই বলে নামকরণ করা হয়েছে। যেমনিভাবে আল্লাহর অপর একটি বাণী এ বিষয়ে বিদ্যমান মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَإِن طَآئِفَتَانِ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱقۡتَتَلُواْ فَأَصۡلِحُواْ بَيۡنَهُمَاۖ فَإِنۢ بَغَتۡ إِحۡدَىٰهُمَا عَلَى ٱلۡأُخۡرَىٰ فَقَٰتِلُواْ ٱلَّتِي تَبۡغِي حَتَّىٰ تَفِيٓءَ إِلَىٰٓ أَمۡرِ ٱللَّهِۚ فَإِن فَآءَتۡ فَأَصۡلِحُواْ بَيۡنَهُمَا بِٱلۡعَدۡلِ وَأَقۡسِطُوٓاْۖ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُقۡسِطِينَ ٩ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ فَأَصۡلِحُواْ بَيۡنَ أَخَوَيۡكُمۡۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٠﴾ [ الحجرات : ٩، ١٠ ]
“আর যদি মুমিনদের দু’দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করবে, তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তারপর যদি দলটি ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা কর এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালোবাসেন। নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ- মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ৯, ১০]
উল্লিখিত আয়াতে মারামারিতে লিপ্ত উভয় দলের প্রতি ঈমানের সম্বোধন করা হয়েছে এবং উভয় দলের জন্য ঈমান সাব্যস্ত করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: মহান আল্লাহ শির্ক ছাড়া অন্য গুনাহ যাকে চান তাকে ক্ষমা করে দেন এবং যার অন্তরে শস্য দানার চেয়েও ছোট পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট থাকে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। এ বিষয়ে সুপারিশের হাদীসগুলোর বর্ণনা মুতাওয়াতির পর্যায়ের।
দ্বিতীয় শ্রেণি: আল-মুরজিয়া: যারা আমলসমূহকে ঈমান থেকে অকার্যকর বলে দাবি করে। ফলে গুনাহের কারণে ঈমান কোনো রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয় না যেমনিভাবে কুফরের সাথে ইবাদত বা ভালো কর্ম কোনো উপকারে আসে না। তারা ঈমানের সংজ্ঞার ক্ষেত্রে একাধিক শ্রেণিতে বিভক্ত।
এক- জাহমিয়্যাহ: তার বলে ঈমান হলো, শুধুমাত্র অন্তরে বিশ্বাস বা অন্তরে মা‘রেফাত।
দুই- আল-কাররামিয়্যাহ: যার বলে ঈমান হলো, শুধু মুখে উচ্চারণ করা।
তিন- মুরজিয়াতুল ফুকাহা: তারা বলে, ঈমান শুধুমাত্র অন্তরে বিশ্বাস, মুখের উচ্চারণ। আর আমলসমূহ ঈমানের হাকীকত ও সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয় বরং তা হলো ঈমানের ফলাফল।
মুরজিয়াদের কথার উত্তর একাধিকভাবে দেওয়া যায়:
প্রথমত: মহান আল্লাহ আমলসমূহকেও ঈমান বলে আখ্যায়িত করেছেন। যারা বাইতুল মুকাদ্দাসের দিক মুখ করে নামাজ আদায় করেছেন এবং কিবলা পরিবর্তনের পূর্বে মারা গেছেন তাদের বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَٰنَكُمۡۚ ١٤٣﴾ [ البقرة : ١٤٣ ]
“এবং আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তোমাদের নামাজকে বিনষ্ট করবেন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৪৩] অর্থাৎ তোমাদের সালাতকে বিনষ্ট করবেন”। অর্থাৎ এখানে ঈমান অর্থ নামাজ।
দ্বিতীয়ত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমলের ক্ষেত্রে কবীরাহ গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি থেকে সাধারণ ঈমানকে অবশিষ্ট থাকবে না বলেছেন। তিনি বলেন:
«لا يزني الزاني، حين يزني، وهو مؤمن . ولا يسرق السارق، حين يسرق، وهو مؤمن . ولا يشرب الخمر، حين يشربها، وهو مؤمن . ولا ينتهب نهبة ذات شرف، يرفع الناس إليه فيها أبصارهم، حين ينتهبها، وهو مؤمن» .
“একজন ব্যভিচারী যখন সে ব্যভিচার করে তখন সে মুমিন থাকা অবস্থায় ব্যভিচার করতে পারে না। একজন চোর যখন সে চুরি করে তখন সে মুমিন থাকা অবস্থায় চুরি করতে পারে না। একজন মদ্যপানকারী যখন সে মদপান করে তখন সে মুমিন থাকা অবস্থায় মদপান করতে পারে না। একজন সম্মানের অধিকারী ব্যক্তি যার দিক মানুষ মাথা উঁচু করে দেখে সে কখনো মুমিন থাকা অবস্থায় ছিনতাই করতে পারে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৭]
মুরাজিয়াহ ও ও‘য়িদিয়্যাহ উভয় দলের কথা অমুলক হওয়ার উৎস:
তারা উভয় দল এ কথা বিশ্বাস করে যে, ঈমান হলো, এক বস্তু। হয় তা পুরোপুরি পাওয়া যাবে অথবা পুরোপুরি না হয়ে যাবে। মুরাজিয়ারা শুধুমাত্র অন্তরে বা মুখে বা অন্তর ও মুখ উভয় দ্বারা স্বীকার করাকে ঈমান সাব্যস্ত করার চেষ্টা করে দথাকে, যদিও এ ব্যক্তি কখনোই কোনো আমল করে নি। আর এরা হলো, আহলে তাফরীত (বা ছাড়গোষ্ঠী)। আর ও‘য়িদিয়্যাহ যারা সামান্য গুনাহের কারণে ঈমানকে না করে দেয়, তারা হলো, আহলে ইফরাত (কট্টর গোষ্ঠী)। উভয় দলের শুরু এক ও অভিন্ন কিন্তু তাদের ফলাফল সম্পূর্ণ বিপরীত।
(নেতৃত্ব ও ঐক্যবদ্ধ থাকা)
এক- শাসকের হাতে বাই‘আত করা ওয়াজিব: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«من مات وليس في عنقه بيعة، مات ميتةً جاهلية»
“যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ তার গলায় কোনো বাই‘আত থাকলো না, সে যেন জাহেলী যুগে মরার মতো মরল”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৫১]
দুই- সৎ কর্মের আদেশের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত দায়িত্বশীলদের কথা শোনা ও মানা:
হজ, জুমু‘আ ও ঈদসমূহ আমীরদের সাথে একত্রে পালন করা চাই তারা নেককার হোক অথবা বদকার হোক। তাদের কল্যাণ কামনা করা। যখন কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিবে, তখন বিবাদ মীমাংসার জন্য কুরআন ও হাদীসের শরণাপন্ন হতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩﴾ [ النساء : ٥٩ ]
“হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«على المرء المسلم السمع والطاعة فيما أحب وكره، إلا أن يؤمر بمعصية، فإذا أمر بمعصية فلا سمع ولا طاعة»
“একজন মুসলিমের দায়িত্ব হলো, শাসক তার পছন্দ হোক বা না হোক তার কথা শোনা ও আনুগত্য করা অপরিহার্য, যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে গুনাহের আদেশ দেওয়া না হবে। আর যখন কোনো অন্যায়ে আদেশ দেওয়া হবে তখন তা শোনা ও মানা যাবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৪৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৩৯]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«من خلع يداً من طاعة، لقي الله يوم القيامة ولا حجة له»
“যে ব্যক্তি শাসকের আনুগত্য থেকে বের হবে, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে এমন অবস্তায় যে তার কোন প্রমাণ থাকবে না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৫১।]
তিন- তাদের বিরুদ্ধে বের হওয়া ও তাদের বিরোধিতা করা হারাম যদিও তারা যুলুম অত্যাচার করে। কিন্তু যদি তারা সু-স্পষ্ট ও সরাসরি কোন কুফুরী করে, তখন তাদের বিরোধিতা করা যাবে, এ ক্ষেত্রে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে রয়েছে অকাট্য প্রমাণ। উবাদাহ ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«دعانا النبي صلى الله عليه وسلم، فبايعناه، فقال فيما أخذ علينا أن بايعنا على السمع والطاعة في منشطنا، ومكرهنا، وعسرنا، ويسرنا، وأثرة علينا، وأن لا ننازع الأمر أهله، إلا أن تروا كفراً بَواحاً، عندكم من الله فيه برهان» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বাই‘আত গ্রহণ করার আহ্বান করলে, আমরা তার হাতে বাই‘আত গ্রহণ করি। তিনি বলেন: তিনি আমাদের থেকে যে সব বিষয়ে বাই‘আত গ্রহণ করেছিলেন, তা ছিল, আমরা আমাদের খুশি, অখুশি, সচ্ছল, অসচ্ছল, সর্বাবস্থায় যেন আমরা তার কথা শুনি এবং তার আনুগত্য করি এবং তাকে প্রাধান্য দি। আর আমরা যেন আমাদের দায়িত্বশীলদের সাথে বিবাদ বা বিরোধিতা না করি। তবে যদি তাদের থেকে সু-স্পষ্ট কোনো কুফুরী প্রকাশ পায়, যা সম্পর্কে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭০৫৬ ।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إنكم سترون بعدي أثرةً وأموراً تنكرونها» قالوا : فما تأمرنا يا رسول الله ؟ قال : «أدُّوا إليهم حقهم، وسلوا الله حقكم» .
“তোমরা আমার পর স্বার্থপরতা মাধ্যমে প্রাধান্য দেওয়া এবং অসংখ্য অপছন্দনীয় বিষয় দেখতে পাবে। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল তখন আপনি আমাদের কি করার পরমর্শ দেন। তিনি বললেন, তোমরা তাদের হক তাদেরকেপ্রদান করবে। আর আল্লাহ তা‘আলার নিকট তোমরা তোমাদের হকের জন্য প্রার্থনা কর। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩১৬৩।]
এক- শাসকের হাতে বাই‘আত করা ওয়াজিব: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«من مات وليس في عنقه بيعة، مات ميتةً جاهلية»
“যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ তার গলায় কোনো বাই‘আত থাকলো না, সে যেন জাহেলী যুগে মরার মতো মরল”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৫১]
দুই- সৎ কর্মের আদেশের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত দায়িত্বশীলদের কথা শোনা ও মানা:
হজ, জুমু‘আ ও ঈদসমূহ আমীরদের সাথে একত্রে পালন করা চাই তারা নেককার হোক অথবা বদকার হোক। তাদের কল্যাণ কামনা করা। যখন কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিবে, তখন বিবাদ মীমাংসার জন্য কুরআন ও হাদীসের শরণাপন্ন হতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩﴾ [ النساء : ٥٩ ]
“হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«على المرء المسلم السمع والطاعة فيما أحب وكره، إلا أن يؤمر بمعصية، فإذا أمر بمعصية فلا سمع ولا طاعة»
“একজন মুসলিমের দায়িত্ব হলো, শাসক তার পছন্দ হোক বা না হোক তার কথা শোনা ও আনুগত্য করা অপরিহার্য, যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে গুনাহের আদেশ দেওয়া না হবে। আর যখন কোনো অন্যায়ে আদেশ দেওয়া হবে তখন তা শোনা ও মানা যাবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৪৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৩৯]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«من خلع يداً من طاعة، لقي الله يوم القيامة ولا حجة له»
“যে ব্যক্তি শাসকের আনুগত্য থেকে বের হবে, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে এমন অবস্তায় যে তার কোন প্রমাণ থাকবে না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৫১।]
তিন- তাদের বিরুদ্ধে বের হওয়া ও তাদের বিরোধিতা করা হারাম যদিও তারা যুলুম অত্যাচার করে। কিন্তু যদি তারা সু-স্পষ্ট ও সরাসরি কোন কুফুরী করে, তখন তাদের বিরোধিতা করা যাবে, এ ক্ষেত্রে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে রয়েছে অকাট্য প্রমাণ। উবাদাহ ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«دعانا النبي صلى الله عليه وسلم، فبايعناه، فقال فيما أخذ علينا أن بايعنا على السمع والطاعة في منشطنا، ومكرهنا، وعسرنا، ويسرنا، وأثرة علينا، وأن لا ننازع الأمر أهله، إلا أن تروا كفراً بَواحاً، عندكم من الله فيه برهان» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বাই‘আত গ্রহণ করার আহ্বান করলে, আমরা তার হাতে বাই‘আত গ্রহণ করি। তিনি বলেন: তিনি আমাদের থেকে যে সব বিষয়ে বাই‘আত গ্রহণ করেছিলেন, তা ছিল, আমরা আমাদের খুশি, অখুশি, সচ্ছল, অসচ্ছল, সর্বাবস্থায় যেন আমরা তার কথা শুনি এবং তার আনুগত্য করি এবং তাকে প্রাধান্য দি। আর আমরা যেন আমাদের দায়িত্বশীলদের সাথে বিবাদ বা বিরোধিতা না করি। তবে যদি তাদের থেকে সু-স্পষ্ট কোনো কুফুরী প্রকাশ পায়, যা সম্পর্কে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭০৫৬ ।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إنكم سترون بعدي أثرةً وأموراً تنكرونها» قالوا : فما تأمرنا يا رسول الله ؟ قال : «أدُّوا إليهم حقهم، وسلوا الله حقكم» .
“তোমরা আমার পর স্বার্থপরতা মাধ্যমে প্রাধান্য দেওয়া এবং অসংখ্য অপছন্দনীয় বিষয় দেখতে পাবে। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল তখন আপনি আমাদের কি করার পরমর্শ দেন। তিনি বললেন, তোমরা তাদের হক তাদেরকেপ্রদান করবে। আর আল্লাহ তা‘আলার নিকট তোমরা তোমাদের হকের জন্য প্রার্থনা কর। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩১৬৩।]
যারা রাসূলের প্রতি ঈমান স্থাপন করা অবস্থায় তাঁর সাথে একত্র হয়েছেন এবং ঈমানের উপর মারা গিয়েছেন, তাদেরকে সাহাবী বলা হয়। নাবীদের পর তারাই হলেন, সর্বোত্তম মানুষ এবং এই মুসলিম উম্মতের শ্রেষ্ট জাতি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«خير الناس قرني» وقال : «خير أمتي قرني» .
“সবচেয় উত্তম মানুষ আমার যুগের মানুষ”। তিনি আরও বলেন: “সব চেয়ে উত্তম উম্মত আমার যুগের উম্মত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৩৩]
তারা সবই ন্যায়নিষ্ঠার অধিকারী। মহান আল্লাহ তাদেরকে তার নাবীর সাথী হিসেবে নির্বাচন করেছেন, তাদেরকে পাক-পবিত্র করেছেন, তাদের তাওবা কবুল করেছেন, তাদেরকে বিশেষগুণে গুণান্বিত করেছেন এবং তাদের জন্য উত্তম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ تَرَىٰهُمۡ رُكَّعٗا سُجَّدٗا يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗاۖ سِيمَاهُمۡ فِي وُجُوهِهِم مِّنۡ أَثَرِ ٱلسُّجُودِۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِۚ وَمَثَلُهُمۡ فِي ٱلۡإِنجِيلِ كَزَرۡعٍ أَخۡرَجَ شَطَۡٔهُۥ فََٔازَرَهُۥ فَٱسۡتَغۡلَظَ فَٱسۡتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِۦ يُعۡجِبُ ٱلزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ ٱلۡكُفَّارَۗ وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ مِنۡهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمَۢا ٢٩﴾ [ الفتح : ٢٩ ]
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকূকারী, সিজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজীলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মত, যে তার শাখা প্রশাখা উদগত করেছে ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কান্ডের উপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষীকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন”। [সূরা আল-ফাতাহ, আয়াত: ২৯]
তারপরও মর্যাদার দিক বিবেচনায় তাদের মধ্যে বিশেষ ও সামগ্রিক পার্থক্য রয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় তাদের মর্যাদার পার্থক্য ও স্তর নিম্নরূপ:
এক- মুহাজিরগণ: মুহাজিরগণ আনসারদের তুলনায় উত্তম। কারণ, হিজরত ও নুসরাত উভয়টি তারা একত্র করেছেন। মহান আল্লাহ সাহাবীগণের আলোচনায় মুহাজিরদের নাম প্রথমে উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لِلۡفُقَرَآءِ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ ٱلَّذِينَ أُخۡرِجُواْ مِن دِيَٰرِهِمۡ وَأَمۡوَٰلِهِمۡ يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗا وَيَنصُرُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ ٨ وَٱلَّذِينَ تَبَوَّءُو ٱلدَّارَ وَٱلۡإِيمَٰنَ مِن قَبۡلِهِمۡ يُحِبُّونَ مَنۡ هَاجَرَ إِلَيۡهِمۡ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمۡ حَاجَةٗ مِّمَّآ أُوتُواْ وَيُؤۡثِرُونَ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ وَلَوۡ كَانَ بِهِمۡ خَصَاصَةٞۚ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفۡسِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٩﴾ [ الحشر : ٨، ٩ ]
“এই সন্ধিসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ নিঃস্ব মুহাজরিদের জন্য, যাদেরকে নিজেদের ঘর-বাড়ী ও ধন-সম্পত্তি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে, তারাই হল সত্যবাদী। আর এই সন্ধিসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদীনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং ঈমান এনেছে (সেই সব আনসারীদের জন্যও এই সন্ধিসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদে অংশ রয়েছে), আর তারা ওই সকল মুহাজরিদেরকে ভালোবাসে যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে। আর মুহাজরিদেরকে যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের উপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যাদেরকে নিজেদের প্রতি থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৮, ৯]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنْ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَداً ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾ التوبة : ١٠٠،
“আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০০]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَقَدْ تَابَ اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِنْ بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٍ مِنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ إِنَّهُ بِهِمْ رَءُوفٌ رَحِيمٌ ﴾ التوبة : ١١٧
“অবশ্যই আল্লাহ নাবী, মুহাজির ও আনসারদের তাওবা কবুল করলেন, যারা তার অনুসরণ করেছে সংকটপূর্ণ মুহূর্তে। তাদের মধ্যে এক দলের হৃদয় সত্যচ্যূত হওয়ার উপক্রম হবার পর। তারপর আল্লাহ তাদের তাওবা কবূল করলেন। নিশ্চয় তিনি তাদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১১৭]
দুই- হুদাইবিয়্যার পূর্বের সাহাবীগণ: যারা হুদাইবিয়্যার সন্ধির পূর্বে জিহাদ করেছেন এবং আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেছেন তারা তাদের থেকে উত্তম যারা হুদাইবিয়্যার সন্ধির পরে ব্যয় করেছেন এবং যুদ্ধ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَا يَسۡتَوِي مِنكُم مَّنۡ أَنفَقَ مِن قَبۡلِ ٱلۡفَتۡحِ وَقَٰتَلَۚ أُوْلَٰٓئِكَ أَعۡظَمُ دَرَجَةٗ مِّنَ ٱلَّذِينَ أَنفَقُواْ مِنۢ بَعۡدُ وَقَٰتَلُواْۚ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١٠﴾ [ الحديد : ١٠ ]
“তোমাদের মধ্যে যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে এবং যুদ্ধ করেছে তারা সমান নয়। তারা মর্যাদায় তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, যারা পরে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে। তবে আল্লাহ প্রত্যেকের জন্যই কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আর তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবগত”। [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ১০]
তিন- বদরী সাহাবীগণ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতিব ইবন আবী বুলতা‘আহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘটনায় উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন:
«إنه شهد بدراً، وما يدريك لعل الله أن يكون قد اطلع على أهل بدر فقال اعملوا ما شئتم فقد غفرت لكم» .
“লোকটি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। আর তুমি কি জান না মহান আল্লাহ অবশ্যই বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের বিষয়ে অবগত রয়েছেন। ফলে তিনি বলেন: তোমরা যা চাও তাই কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯৪]
চার- বাই‘আতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারীগণ: মহান আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন:
﴿لَّقَدۡ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ يُبَايِعُونَكَ تَحۡتَ ٱلشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمۡ فَأَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ عَلَيۡهِمۡ وَأَثَٰبَهُمۡ فَتۡحٗا قَرِيبٗا ١٨﴾ [ الفتح : ١٨ ]
“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার হাতে বাই‘আত গ্রহণ করেছিল। অতঃপর তিনি তাদের অন্তরে কি ছিল তা জেনে নিয়েছেন, ফলে তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করলেন নিকটবর্তী বিজয় দিয়ে”। [সূরা আল-ফাতাহ, আয়াত: ১৮]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لا يدخل النار، إن شاء الله، من أصحاب الشجرة أحد الذين بايعوا تحتها» .
“যারা গাছের নিচে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বাই‘আত গ্রহণ করেছেন, তাদের একজন ব্যক্তিও ইনশা আল্লাহ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯৬]
«خير الناس قرني» وقال : «خير أمتي قرني» .
“সবচেয় উত্তম মানুষ আমার যুগের মানুষ”। তিনি আরও বলেন: “সব চেয়ে উত্তম উম্মত আমার যুগের উম্মত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৩৩]
তারা সবই ন্যায়নিষ্ঠার অধিকারী। মহান আল্লাহ তাদেরকে তার নাবীর সাথী হিসেবে নির্বাচন করেছেন, তাদেরকে পাক-পবিত্র করেছেন, তাদের তাওবা কবুল করেছেন, তাদেরকে বিশেষগুণে গুণান্বিত করেছেন এবং তাদের জন্য উত্তম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ تَرَىٰهُمۡ رُكَّعٗا سُجَّدٗا يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗاۖ سِيمَاهُمۡ فِي وُجُوهِهِم مِّنۡ أَثَرِ ٱلسُّجُودِۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِۚ وَمَثَلُهُمۡ فِي ٱلۡإِنجِيلِ كَزَرۡعٍ أَخۡرَجَ شَطَۡٔهُۥ فََٔازَرَهُۥ فَٱسۡتَغۡلَظَ فَٱسۡتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِۦ يُعۡجِبُ ٱلزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ ٱلۡكُفَّارَۗ وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ مِنۡهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمَۢا ٢٩﴾ [ الفتح : ٢٩ ]
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকূকারী, সিজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজীলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মত, যে তার শাখা প্রশাখা উদগত করেছে ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কান্ডের উপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষীকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন”। [সূরা আল-ফাতাহ, আয়াত: ২৯]
তারপরও মর্যাদার দিক বিবেচনায় তাদের মধ্যে বিশেষ ও সামগ্রিক পার্থক্য রয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় তাদের মর্যাদার পার্থক্য ও স্তর নিম্নরূপ:
এক- মুহাজিরগণ: মুহাজিরগণ আনসারদের তুলনায় উত্তম। কারণ, হিজরত ও নুসরাত উভয়টি তারা একত্র করেছেন। মহান আল্লাহ সাহাবীগণের আলোচনায় মুহাজিরদের নাম প্রথমে উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لِلۡفُقَرَآءِ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ ٱلَّذِينَ أُخۡرِجُواْ مِن دِيَٰرِهِمۡ وَأَمۡوَٰلِهِمۡ يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗا وَيَنصُرُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ ٨ وَٱلَّذِينَ تَبَوَّءُو ٱلدَّارَ وَٱلۡإِيمَٰنَ مِن قَبۡلِهِمۡ يُحِبُّونَ مَنۡ هَاجَرَ إِلَيۡهِمۡ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمۡ حَاجَةٗ مِّمَّآ أُوتُواْ وَيُؤۡثِرُونَ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ وَلَوۡ كَانَ بِهِمۡ خَصَاصَةٞۚ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفۡسِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٩﴾ [ الحشر : ٨، ٩ ]
“এই সন্ধিসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ নিঃস্ব মুহাজরিদের জন্য, যাদেরকে নিজেদের ঘর-বাড়ী ও ধন-সম্পত্তি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে, তারাই হল সত্যবাদী। আর এই সন্ধিসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদীনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং ঈমান এনেছে (সেই সব আনসারীদের জন্যও এই সন্ধিসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদে অংশ রয়েছে), আর তারা ওই সকল মুহাজরিদেরকে ভালোবাসে যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে। আর মুহাজরিদেরকে যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের উপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যাদেরকে নিজেদের প্রতি থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৮, ৯]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنْ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَداً ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾ التوبة : ١٠٠،
“আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০০]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَقَدْ تَابَ اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِنْ بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٍ مِنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ إِنَّهُ بِهِمْ رَءُوفٌ رَحِيمٌ ﴾ التوبة : ١١٧
“অবশ্যই আল্লাহ নাবী, মুহাজির ও আনসারদের তাওবা কবুল করলেন, যারা তার অনুসরণ করেছে সংকটপূর্ণ মুহূর্তে। তাদের মধ্যে এক দলের হৃদয় সত্যচ্যূত হওয়ার উপক্রম হবার পর। তারপর আল্লাহ তাদের তাওবা কবূল করলেন। নিশ্চয় তিনি তাদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১১৭]
দুই- হুদাইবিয়্যার পূর্বের সাহাবীগণ: যারা হুদাইবিয়্যার সন্ধির পূর্বে জিহাদ করেছেন এবং আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেছেন তারা তাদের থেকে উত্তম যারা হুদাইবিয়্যার সন্ধির পরে ব্যয় করেছেন এবং যুদ্ধ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَا يَسۡتَوِي مِنكُم مَّنۡ أَنفَقَ مِن قَبۡلِ ٱلۡفَتۡحِ وَقَٰتَلَۚ أُوْلَٰٓئِكَ أَعۡظَمُ دَرَجَةٗ مِّنَ ٱلَّذِينَ أَنفَقُواْ مِنۢ بَعۡدُ وَقَٰتَلُواْۚ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١٠﴾ [ الحديد : ١٠ ]
“তোমাদের মধ্যে যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে এবং যুদ্ধ করেছে তারা সমান নয়। তারা মর্যাদায় তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, যারা পরে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে। তবে আল্লাহ প্রত্যেকের জন্যই কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আর তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবগত”। [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ১০]
তিন- বদরী সাহাবীগণ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতিব ইবন আবী বুলতা‘আহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘটনায় উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন:
«إنه شهد بدراً، وما يدريك لعل الله أن يكون قد اطلع على أهل بدر فقال اعملوا ما شئتم فقد غفرت لكم» .
“লোকটি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। আর তুমি কি জান না মহান আল্লাহ অবশ্যই বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের বিষয়ে অবগত রয়েছেন। ফলে তিনি বলেন: তোমরা যা চাও তাই কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯৪]
চার- বাই‘আতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারীগণ: মহান আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন:
﴿لَّقَدۡ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ يُبَايِعُونَكَ تَحۡتَ ٱلشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمۡ فَأَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ عَلَيۡهِمۡ وَأَثَٰبَهُمۡ فَتۡحٗا قَرِيبٗا ١٨﴾ [ الفتح : ١٨ ]
“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার হাতে বাই‘আত গ্রহণ করেছিল। অতঃপর তিনি তাদের অন্তরে কি ছিল তা জেনে নিয়েছেন, ফলে তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করলেন নিকটবর্তী বিজয় দিয়ে”। [সূরা আল-ফাতাহ, আয়াত: ১৮]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لا يدخل النار، إن شاء الله، من أصحاب الشجرة أحد الذين بايعوا تحتها» .
“যারা গাছের নিচে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বাই‘আত গ্রহণ করেছেন, তাদের একজন ব্যক্তিও ইনশা আল্লাহ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯৬]
এক- খুলাফায়ে রাশেদীন বা চার খলীফা:
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতৈক্যে নাবীর পর এ উম্মতের সর্বত্তোম ব্যক্তি আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহু, তারপর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু।
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আশিটিরও অধিক মুতাওয়াতির সনদে বিষয়টি বর্ণিত, তিনি একদিন কূফার মিম্বারে খুৎবায় বলেন:
«خير هذه الأمة بعد نبيها أبو بكر، ثم عمر» رواه أحمد بأسانيد صحيحة، وابن أبي عاصم، وصححه الألباني . ولا يقطع علي، رضي الله عنه، بذلك إلا عن علم . ورواه الترمذي عنه مرفوعاً .
“এ উম্মাতের নাবীর পর সবোর্ত্তম ব্যক্তি আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তারপর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু”। ইমাম আহমাদ একাধিক বিশুদ্ধ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। [আহমদ, হাদীস নং ৮৩৭] আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এ বিষয়ে পুরোপুরি জানা ছাড়া এ সিদ্ধান্ত দেন নি। ইমাম তিরমিযি তার থেকে মারফু‘ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
মর্যাদার দিক দিয়ে তাদের উভয়ের সাথেই রয়েছে উসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু। ইমাম বুখারী ও মুসলিম রাহিমাহুমাল্লাহ আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন:
«كنا نفاضل على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم : أبو بكر، ثم عمر، ثم عثمان» وفي لفظ : «يبلغ ذلك النبي صلى الله عليه وسلم ولا ينكره » .
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আবু বাকর তারপর উমার তারপর উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে প্রাধান্য দিয়ে থাকতাম। বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত জানাজানি হত, তিনি কখনো তার প্রতিবাদ করেন নি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৬৫৫]
আইউব আস-সুখতিয়ানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: যে ব্যক্তি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর উপর প্রাধান্য দেয়, সে অবশ্যই মুহাজির ও আনসারদের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করল। কারণ, তারা খিলাফতের ক্ষেত্রে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর পর মর্যাদার দিক দিয়ে পরবর্তী অবস্থান আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর।
দুই- জান্নাতের সু-সংবাদ প্রাপ্ত সাহাবীগণ:
তারা হলেন, চার খলীফা, আব্দুর রহমান ইবন আউফ, সা‘আদ ইবন আবী ওয়াক্কাস, তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ, যুবায়ের ইবন আওয়াম, আবু উবাইদাহ আমের ইবনুল জাররাহ এবং সা‘ঈদ ইবন যায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহুম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লিখিত দশজন সাহাবীর জন্য দুনিয়াতেই জান্নাতের সাক্ষ্য প্রদান করেন। বর্ণনায় পাঁচটি প্রসিদ্ধ সুনানগ্রন্থ এবং বর্ণনাগুলো বিশুদ্ধ। তারা ছাড়া আরও কতক সাহাবীকে জান্নাতের সু-সংবাদ দেওয়ার প্রমাণ একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, বিলাল, সাবেত ইবনে ক্বাইস এবং আব্দুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহ আনহুম।
তিন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারবর্গ:
তারা পাঁচটি গোত্র, যাদের উপর সাদকা খাওয়া নিষিদ্ধ। তারা হলো, আলে ‘আলী, আলে জা‘ফর, আলে আকীল, আলে ‘আব্বাস এবং বনূ হারেস ইবন ‘আব্দুল মুত্তালিব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إن الله اصطفى إسماعيل، واصطفى من بني إسماعيل كنانة، واصطفى من كنانة قريشاً، واصطفى من قريش بني هاشم، واصطفاني من بني هاشم»
“মহান আল্লাহ ইসমাঈলকে নির্বাচন করেন, আর ইসমাঈলের গোত্র থেকে নির্বাচন করে বানী কিনানাহকে আর বানী কিনানাহ থেকে নির্বাচন করেন, কুরাইশকে আর কুরাইশ থেকে নির্বাচন করেন, বানী হাশেমকে আর আমাকে নির্বাচন করেন বানী হাশিম থেকে«”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৭৬]
তিনি আরো বলেন:
«أذكركم الله في أهل بيتي . أذكركم الله في أهل بيتي» .
“আমি তোমাদেরকে আমার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমি তোমাদেরকে আমার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৮]
আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কতক কুরাইশ বানী হাশেমের উপর নির্যাতন করার অভিযোগ করলেন, তখন তিনি বললেন,
«والذي نفسي بيده لا يؤمنون حتى يحبوكم لله ولقرابتي» .
“ঐ সত্তার সপথ যার হাতে আমার জীবন, তারা কখনোই ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদেরকে আল্লাহর জন্য এবং আমার নিকট আত্মীয় হওয়ার কারণে ভালো না বাসবে”। [আহমদ]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র স্ত্রীগণ রাসূলের পরিবার বর্গের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣﴾ [ الاحزاب : ٣٣ ]
“হে নাবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]
মহান আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় নাবীর জন্য নির্বাচন করেছেন এবং মহান আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তাদেরকে তার স্ত্রী বানিয়েছেন। আর তাদের মুমিনদের মাতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের সবোর্ত্তম খাদীজাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা ও আয়েশা বিনতে আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। আর বাকী স্ত্রীগণ হলেন, সাওদা বিনতে যাম‘আহ, হাফসা বিনতে উমার, উম্মে সালমাহ, উম্মে হাবীবাহ বিনতে আবু সূফিয়ান, সফীয়্যাহ বিনতে হুয়াই, যায়নাব বিনতে জাহাস, জুয়াইরিয়্যাহ, মাইমূনাহ, যায়নাব বিনতে খুযাইমাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুন্না।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতৈক্যে নাবীর পর এ উম্মতের সর্বত্তোম ব্যক্তি আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহু, তারপর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু।
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আশিটিরও অধিক মুতাওয়াতির সনদে বিষয়টি বর্ণিত, তিনি একদিন কূফার মিম্বারে খুৎবায় বলেন:
«خير هذه الأمة بعد نبيها أبو بكر، ثم عمر» رواه أحمد بأسانيد صحيحة، وابن أبي عاصم، وصححه الألباني . ولا يقطع علي، رضي الله عنه، بذلك إلا عن علم . ورواه الترمذي عنه مرفوعاً .
“এ উম্মাতের নাবীর পর সবোর্ত্তম ব্যক্তি আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তারপর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু”। ইমাম আহমাদ একাধিক বিশুদ্ধ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। [আহমদ, হাদীস নং ৮৩৭] আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এ বিষয়ে পুরোপুরি জানা ছাড়া এ সিদ্ধান্ত দেন নি। ইমাম তিরমিযি তার থেকে মারফু‘ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
মর্যাদার দিক দিয়ে তাদের উভয়ের সাথেই রয়েছে উসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু। ইমাম বুখারী ও মুসলিম রাহিমাহুমাল্লাহ আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন:
«كنا نفاضل على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم : أبو بكر، ثم عمر، ثم عثمان» وفي لفظ : «يبلغ ذلك النبي صلى الله عليه وسلم ولا ينكره » .
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আবু বাকর তারপর উমার তারপর উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে প্রাধান্য দিয়ে থাকতাম। বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত জানাজানি হত, তিনি কখনো তার প্রতিবাদ করেন নি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৬৫৫]
আইউব আস-সুখতিয়ানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: যে ব্যক্তি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর উপর প্রাধান্য দেয়, সে অবশ্যই মুহাজির ও আনসারদের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করল। কারণ, তারা খিলাফতের ক্ষেত্রে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর পর মর্যাদার দিক দিয়ে পরবর্তী অবস্থান আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর।
দুই- জান্নাতের সু-সংবাদ প্রাপ্ত সাহাবীগণ:
তারা হলেন, চার খলীফা, আব্দুর রহমান ইবন আউফ, সা‘আদ ইবন আবী ওয়াক্কাস, তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ, যুবায়ের ইবন আওয়াম, আবু উবাইদাহ আমের ইবনুল জাররাহ এবং সা‘ঈদ ইবন যায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহুম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লিখিত দশজন সাহাবীর জন্য দুনিয়াতেই জান্নাতের সাক্ষ্য প্রদান করেন। বর্ণনায় পাঁচটি প্রসিদ্ধ সুনানগ্রন্থ এবং বর্ণনাগুলো বিশুদ্ধ। তারা ছাড়া আরও কতক সাহাবীকে জান্নাতের সু-সংবাদ দেওয়ার প্রমাণ একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, বিলাল, সাবেত ইবনে ক্বাইস এবং আব্দুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহ আনহুম।
তিন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারবর্গ:
তারা পাঁচটি গোত্র, যাদের উপর সাদকা খাওয়া নিষিদ্ধ। তারা হলো, আলে ‘আলী, আলে জা‘ফর, আলে আকীল, আলে ‘আব্বাস এবং বনূ হারেস ইবন ‘আব্দুল মুত্তালিব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إن الله اصطفى إسماعيل، واصطفى من بني إسماعيل كنانة، واصطفى من كنانة قريشاً، واصطفى من قريش بني هاشم، واصطفاني من بني هاشم»
“মহান আল্লাহ ইসমাঈলকে নির্বাচন করেন, আর ইসমাঈলের গোত্র থেকে নির্বাচন করে বানী কিনানাহকে আর বানী কিনানাহ থেকে নির্বাচন করেন, কুরাইশকে আর কুরাইশ থেকে নির্বাচন করেন, বানী হাশেমকে আর আমাকে নির্বাচন করেন বানী হাশিম থেকে«”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৭৬]
তিনি আরো বলেন:
«أذكركم الله في أهل بيتي . أذكركم الله في أهل بيتي» .
“আমি তোমাদেরকে আমার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমি তোমাদেরকে আমার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৮]
আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কতক কুরাইশ বানী হাশেমের উপর নির্যাতন করার অভিযোগ করলেন, তখন তিনি বললেন,
«والذي نفسي بيده لا يؤمنون حتى يحبوكم لله ولقرابتي» .
“ঐ সত্তার সপথ যার হাতে আমার জীবন, তারা কখনোই ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদেরকে আল্লাহর জন্য এবং আমার নিকট আত্মীয় হওয়ার কারণে ভালো না বাসবে”। [আহমদ]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র স্ত্রীগণ রাসূলের পরিবার বর্গের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣﴾ [ الاحزاب : ٣٣ ]
“হে নাবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]
মহান আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় নাবীর জন্য নির্বাচন করেছেন এবং মহান আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তাদেরকে তার স্ত্রী বানিয়েছেন। আর তাদের মুমিনদের মাতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের সবোর্ত্তম খাদীজাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা ও আয়েশা বিনতে আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। আর বাকী স্ত্রীগণ হলেন, সাওদা বিনতে যাম‘আহ, হাফসা বিনতে উমার, উম্মে সালমাহ, উম্মে হাবীবাহ বিনতে আবু সূফিয়ান, সফীয়্যাহ বিনতে হুয়াই, যায়নাব বিনতে জাহাস, জুয়াইরিয়্যাহ, মাইমূনাহ, যায়নাব বিনতে খুযাইমাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুন্না।
সাহাবীগণের শ্রেণি ও মর্যাদা বিভিন্ন হওয়া সত্বেও তাদের বিষয়ে আমাদের করনীয়:
প্রথমত: সাহাবীগণের একক ও সামগ্রীকভাবে মহব্বত করা, তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা, তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তাদের প্রসংশা করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ﴾ [ التوبة : ٧١ ]
“আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু”। [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৭১]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ ١٠﴾ [ الحشر : ١٠ ]
“যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে: ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« آية الإيمان حب الأنصار، وآية النفاق بغض الأنصار » رواه البخاري ،
“ঈমানের আলামত হলো, আনসারদেরকে মহব্বত করা আর মুনাফেকীর আলামত হলো, আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন:
«لا يحبك إلا مؤمن، ولا يبغضك إلا منافق» .
“কেবল একজন মুমিনই তোমাকে মহব্বত করবে এবং একজন মুনাফিক ছাড়া কেউ তোমাকে ঘৃণা করবে না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮]
দ্বিতীয়ত: অন্তর ও যবানকে তাদের প্রতি খারাপ ধারণা ও বিদ্বেষ পোষণ এবং তাদের সমালোচনা ও অভিশাপ করা থেকে মুক্ত রাখা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠﴾ [ الحشر : ١٠ ]
“এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম করুণাময়।”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لا تسبوا أصحابي؛ فوالذي نفسي بيده، لو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهباً ، ما بلغ مدَّ أحدهم ولا نصيفه» .
“তোমরা আমার সাহাবীগণ গাল দেবে না। ঐ আল্লাহর সপথ যার হাতে আমার জীবন রয়েছে, যদি তোমাদের কেউ ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তাদের কারো দানের এক মুদ (মুদ বলঅ হয় এক মতে 812,5 গ্রাম অন্য মতে বলা হয় 510 গ্রাম ) বা অর্ধ মুদ পর্যন্ত দান করা সমান হবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৬৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪১১]
তৃতীয়ত: সাহাবীগণের মধ্যে সংঘটিত বিবাদ বিষয়ে মুখ খোলা থেকে বিরত থাকা, তাদের প্রতি সু-ধারণা পোষণ করা, তারা সবাই মুজতাহিদ হওয়ার কারণে যদি তারা সঠিক করে থাকেন তবে তারা দ্বিগুণ সাওয়াব পাবেন এবং যদি কোন ভুল করে থাকেন তবে তারা অবশ্যই একগুণ সাওয়াব পাবেন। যদি তাদের থেকে কোনো গুনাহ প্রকাশ পেয়েও থাকে, তবে তাদের উঁচু মর্যাদা, অগ্রগামী হওয়া এবং তাদের নেক আমল এত বেশি যা তাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমার জন্য যথেষ্ট।
চতুর্থত: শিয়া-রাফেযীদের পথ থেকে মুক্ত থাকা: যারা রাসূলের পরিবারবর্গ সম্পর্কে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে এবং অন্যান্য সাহাবীদের গাল-মন্দ করে এবং তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। অনুরূপ খারেজী-নাওয়াসেবদের থেকে মুক্ত থাকা: যারা রাসূলের পরিবারবর্গের উপর যুলুম অত্যাচার করে এবং তাদেরকেদ কষ্ট দেয়।
প্রথমত: সাহাবীগণের একক ও সামগ্রীকভাবে মহব্বত করা, তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা, তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তাদের প্রসংশা করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ﴾ [ التوبة : ٧١ ]
“আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু”। [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৭১]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ ١٠﴾ [ الحشر : ١٠ ]
“যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে: ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« آية الإيمان حب الأنصار، وآية النفاق بغض الأنصار » رواه البخاري ،
“ঈমানের আলামত হলো, আনসারদেরকে মহব্বত করা আর মুনাফেকীর আলামত হলো, আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন:
«لا يحبك إلا مؤمن، ولا يبغضك إلا منافق» .
“কেবল একজন মুমিনই তোমাকে মহব্বত করবে এবং একজন মুনাফিক ছাড়া কেউ তোমাকে ঘৃণা করবে না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮]
দ্বিতীয়ত: অন্তর ও যবানকে তাদের প্রতি খারাপ ধারণা ও বিদ্বেষ পোষণ এবং তাদের সমালোচনা ও অভিশাপ করা থেকে মুক্ত রাখা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠﴾ [ الحشر : ١٠ ]
“এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম করুণাময়।”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لا تسبوا أصحابي؛ فوالذي نفسي بيده، لو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهباً ، ما بلغ مدَّ أحدهم ولا نصيفه» .
“তোমরা আমার সাহাবীগণ গাল দেবে না। ঐ আল্লাহর সপথ যার হাতে আমার জীবন রয়েছে, যদি তোমাদের কেউ ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তাদের কারো দানের এক মুদ (মুদ বলঅ হয় এক মতে 812,5 গ্রাম অন্য মতে বলা হয় 510 গ্রাম ) বা অর্ধ মুদ পর্যন্ত দান করা সমান হবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৬৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪১১]
তৃতীয়ত: সাহাবীগণের মধ্যে সংঘটিত বিবাদ বিষয়ে মুখ খোলা থেকে বিরত থাকা, তাদের প্রতি সু-ধারণা পোষণ করা, তারা সবাই মুজতাহিদ হওয়ার কারণে যদি তারা সঠিক করে থাকেন তবে তারা দ্বিগুণ সাওয়াব পাবেন এবং যদি কোন ভুল করে থাকেন তবে তারা অবশ্যই একগুণ সাওয়াব পাবেন। যদি তাদের থেকে কোনো গুনাহ প্রকাশ পেয়েও থাকে, তবে তাদের উঁচু মর্যাদা, অগ্রগামী হওয়া এবং তাদের নেক আমল এত বেশি যা তাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমার জন্য যথেষ্ট।
চতুর্থত: শিয়া-রাফেযীদের পথ থেকে মুক্ত থাকা: যারা রাসূলের পরিবারবর্গ সম্পর্কে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে এবং অন্যান্য সাহাবীদের গাল-মন্দ করে এবং তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। অনুরূপ খারেজী-নাওয়াসেবদের থেকে মুক্ত থাকা: যারা রাসূলের পরিবারবর্গের উপর যুলুম অত্যাচার করে এবং তাদেরকেদ কষ্ট দেয়।
প্রত্যেক মুমিন মুত্তাকীই আল্লাহর ওলী। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَلَآ إِنَّ أَوۡلِيَآءَ ٱللَّهِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٦٢ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ٦٣﴾ [ يونس : ٦٢، ٦٣ ]
“শুনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর ওলী বা বন্ধু তারাই যাদের কোনো ভয় নেই এবং দুশ্চিন্তাও নেই। তারা ঈমানদার এবং আল্লাহর সঠিক অনুগত মানুষ”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৬২, ৬৩]
আল্লাহর ওলী হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের মান মর্যাদা ও সম্মান তাদের ঈমান ও তাকওয়া অনুযায়ী নির্ধারণ হয়ে থাকে। তাদের দাবি বা বংশ মর্যাদার কারণে নয়। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ ١٣﴾ [ الحجرات : ١٣ ]
“তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন”। [সূরা আল-হুজরাত, আয়াত: ১৩]
﴿أَلَآ إِنَّ أَوۡلِيَآءَ ٱللَّهِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٦٢ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ٦٣﴾ [ يونس : ٦٢، ٦٣ ]
“শুনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর ওলী বা বন্ধু তারাই যাদের কোনো ভয় নেই এবং দুশ্চিন্তাও নেই। তারা ঈমানদার এবং আল্লাহর সঠিক অনুগত মানুষ”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৬২, ৬৩]
আল্লাহর ওলী হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের মান মর্যাদা ও সম্মান তাদের ঈমান ও তাকওয়া অনুযায়ী নির্ধারণ হয়ে থাকে। তাদের দাবি বা বংশ মর্যাদার কারণে নয়। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ ١٣﴾ [ الحجرات : ١٣ ]
“তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন”। [সূরা আল-হুজরাত, আয়াত: ১৩]
কারামত হচ্ছে, অলৌকিক কর্মকাণ্ড, যেগুলো মহান আল্লাহ তার কোনো ওলীর হাতে তার সম্মানার্থে এবং যে নাবীর অনুসরণ করে তার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য ঘটিয়ে থাকেন। আর কারামত দুই প্রকার:
এক- জ্ঞান, দূরদর্শিতা, অবগত হওয়া, জ্ঞান চক্ষু অবারিত হওয়া ইত্যাদির ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
দুই- ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি ইত্যাদির ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
এক- জ্ঞান, দূরদর্শিতা, অবগত হওয়া, জ্ঞান চক্ষু অবারিত হওয়া ইত্যাদির ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
দুই- ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি ইত্যাদির ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
এক- আকীদা, শরী‘আতের বিধান ও আচার-আচরণগুলো গ্রহণ করার মূলনীতিসমূহ হলো, কিতাব, বিশুদ্ধ হাদীস ও গ্রহণযোগ্য ইজমা। কোনো মতামত, কিয়াস, রুচি, বাস্তবতা অথবা কারো কথা সে যেই হোক না কেন এগুলো দ্বারা কুরআন, হাদীস ও গ্রহণযোগ্য ইজমার বিরোধিতা করা বৈধ নয়।
দুই- কুরআন ও হাদীস বুঝা ও জানার পথ হলো, প্রথম যুগের মুহাজির ও আনসার এবং ইহসানের সাথে যারা তাদের অনুসারী, তাদের পথে চলা। আর বিদ‘আতপন্থীদের পথসমূহ থেকে বিরত থাকা, যে পথগুলো কালামশাস্ত্রবিদ, তর্কশাস্ত্রবিদরা ও সূফীরা আবিষ্কার করেছে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥﴾ [ النساء : ١١٥ ]
“আর যে ব্যক্তি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে তার জন্য হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করবে, আমি তাকে সেই পথে নিয়ে যাব যে পথের সে পথিক হতে ইচ্ছা করবে। এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৫]
তিন- সন্দেহ সংশয় মুক্ত সুস্পষ্ট জ্ঞান কখনও দোষ-কলুষমুক্ত বিশুদ্ধ দলীলের বিরোধিতা করে না। শরী‘আতের দলিলসমূহ বিবেককে হতভম্ব করে দেয়, কিন্তু বিবেক সেগুলোকে অসম্ভব বলে না। আর যে এ ধারণা পোষণ করে যে, দলিলসমূহ ও বিবেকের মধ্যে বৈপরীত্য রয়েছে তাহলে মনে করতে হবে যে তার বিবেক নষ্ট হয়ে গেছে। তখন দলিলসমূহ তথা শরী‘আতের ভাষ্যকে বিবেকের উপর প্রাধান্য দিতে হবে।
চার- বিদ‘আত: দীনের মধ্যে নব আবিষ্কৃত একটি পথ, যা শরী‘আতকে কলুষিত করে। বিদ‘আতের উপর চলা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর জন্য ইবাদত করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা। আর বিদ‘আতের রয়েছে বিবিধ প্রকার: আকীদাগত, আমলগত, কঠিন ও সহজ, কুফুরী ও ফাসেকী।
দুই- কুরআন ও হাদীস বুঝা ও জানার পথ হলো, প্রথম যুগের মুহাজির ও আনসার এবং ইহসানের সাথে যারা তাদের অনুসারী, তাদের পথে চলা। আর বিদ‘আতপন্থীদের পথসমূহ থেকে বিরত থাকা, যে পথগুলো কালামশাস্ত্রবিদ, তর্কশাস্ত্রবিদরা ও সূফীরা আবিষ্কার করেছে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥﴾ [ النساء : ١١٥ ]
“আর যে ব্যক্তি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে তার জন্য হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করবে, আমি তাকে সেই পথে নিয়ে যাব যে পথের সে পথিক হতে ইচ্ছা করবে। এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৫]
তিন- সন্দেহ সংশয় মুক্ত সুস্পষ্ট জ্ঞান কখনও দোষ-কলুষমুক্ত বিশুদ্ধ দলীলের বিরোধিতা করে না। শরী‘আতের দলিলসমূহ বিবেককে হতভম্ব করে দেয়, কিন্তু বিবেক সেগুলোকে অসম্ভব বলে না। আর যে এ ধারণা পোষণ করে যে, দলিলসমূহ ও বিবেকের মধ্যে বৈপরীত্য রয়েছে তাহলে মনে করতে হবে যে তার বিবেক নষ্ট হয়ে গেছে। তখন দলিলসমূহ তথা শরী‘আতের ভাষ্যকে বিবেকের উপর প্রাধান্য দিতে হবে।
চার- বিদ‘আত: দীনের মধ্যে নব আবিষ্কৃত একটি পথ, যা শরী‘আতকে কলুষিত করে। বিদ‘আতের উপর চলা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর জন্য ইবাদত করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা। আর বিদ‘আতের রয়েছে বিবিধ প্রকার: আকীদাগত, আমলগত, কঠিন ও সহজ, কুফুরী ও ফাসেকী।
এক- ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কর্ম থেকে নিষেধ করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٤﴾ [ ال عمران : ١٠٤ ]
“আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪]
দুই- ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে স্বচেষ্ট হওয়া এবং মতবিরোধ ও দলাদলিকে প্রত্যাখ্যান করা এবং জামা‘আত ও জুম‘আর হিফাযত করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ وَٱذۡكُرُواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ إِذۡ كُنتُمۡ أَعۡدَآءٗ فَأَلَّفَ بَيۡنَ قُلُوبِكُمۡ فَأَصۡبَحۡتُم بِنِعۡمَتِهِۦٓ إِخۡوَٰنٗا وَكُنتُمۡ عَلَىٰ شَفَا حُفۡرَةٖ مِّنَ ٱلنَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنۡهَاۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمۡ ءَايَٰتِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٠٣﴾ [ ال عمران : ١٠٣ ]
“আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালোবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বয়ান করেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُواْ وَٱخۡتَلَفُواْ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ١٠٥﴾ [ ال عمران : ١٠٥ ]
“আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর আযাব”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৫]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَنۡ أَقِيمُواْ ٱلدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُواْ فِيهِۚ ١٣﴾ [ الشورى : ١٣ ]
“তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না”। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১৩]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«المؤمن للمؤمن كالبنيان يشد بعضه بعضاً» وشبَّك بين أصابعه» .
“একজন মুমিন অপর মুমিনের জন্য প্রাসাদের মত তার একটি অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে। এ বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ করান”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৮৫]
তিন- উন্নত চরিত্র ও সুন্দর আমলসমূহ: যেমন, ধৈর্য, সাহস, সহ্য, বিনয়, ক্ষমা, দয়া ইত্যাদি অবলম্বন করা ও এ সবের বিপরীত গুণ ছেড়ে দেওয়া। মাতা-পিতার সাথে সৎ ব্যবহার করা, আত্মীয়তা বজায় রাখা, প্রতিবেশির সাথে ভালো ব্যবহার করা, মিসকীন, মুসাফির ও ইয়াতীমদের প্রতি দয়া করা।
﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٤﴾ [ ال عمران : ١٠٤ ]
“আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪]
দুই- ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে স্বচেষ্ট হওয়া এবং মতবিরোধ ও দলাদলিকে প্রত্যাখ্যান করা এবং জামা‘আত ও জুম‘আর হিফাযত করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ وَٱذۡكُرُواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ إِذۡ كُنتُمۡ أَعۡدَآءٗ فَأَلَّفَ بَيۡنَ قُلُوبِكُمۡ فَأَصۡبَحۡتُم بِنِعۡمَتِهِۦٓ إِخۡوَٰنٗا وَكُنتُمۡ عَلَىٰ شَفَا حُفۡرَةٖ مِّنَ ٱلنَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنۡهَاۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمۡ ءَايَٰتِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٠٣﴾ [ ال عمران : ١٠٣ ]
“আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালোবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বয়ান করেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُواْ وَٱخۡتَلَفُواْ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ١٠٥﴾ [ ال عمران : ١٠٥ ]
“আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর আযাব”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৫]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿أَنۡ أَقِيمُواْ ٱلدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُواْ فِيهِۚ ١٣﴾ [ الشورى : ١٣ ]
“তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না”। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১৩]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«المؤمن للمؤمن كالبنيان يشد بعضه بعضاً» وشبَّك بين أصابعه» .
“একজন মুমিন অপর মুমিনের জন্য প্রাসাদের মত তার একটি অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে। এ বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ করান”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৮৫]
তিন- উন্নত চরিত্র ও সুন্দর আমলসমূহ: যেমন, ধৈর্য, সাহস, সহ্য, বিনয়, ক্ষমা, দয়া ইত্যাদি অবলম্বন করা ও এ সবের বিপরীত গুণ ছেড়ে দেওয়া। মাতা-পিতার সাথে সৎ ব্যবহার করা, আত্মীয়তা বজায় রাখা, প্রতিবেশির সাথে ভালো ব্যবহার করা, মিসকীন, মুসাফির ও ইয়াতীমদের প্রতি দয়া করা।
আল্লাহর মনোনীত দীন একটি। আর তা হলো ইসলাম। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ ١٩﴾ [ ال عمران : ١٩ ]
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট ধর্ম হচ্ছে ইসলাম”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯]
পূর্বের ও পরের সকলের জন্যই আল্লাহর ধর্ম ইসলাম। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَا ٱلتَّوۡرَىٰةَ فِيهَا هُدٗى وَنُورٞۚ يَحۡكُمُ بِهَا ٱلنَّبِيُّونَ ٱلَّذِينَ أَسۡلَمُواْ﴾ [ المائدة : ٤٤ ]
“নিশ্চয় আমি তাওরাত নাযিল করেছি, তাতে ছিল হিদায়াত ও আলো, এর মাধ্যমে ইয়াহূদীদের জন্য ফয়সালা প্রদান করেন অনুগত নাবীগণ”। [সূরা আল- মায়েদা, আয়াত: ৪৪]
ব্যাপক অর্থে ইসলাম বলা হয়, আল্লাহকে একক জ্ঞান করে তার জন্য মাথা অবনত করা, ইবাদতে কেবল তার আনুগত্য করা এবং শির্ক থেকে মুক্ত থাকা।
আর বিশেষ অর্থে ইসলাম হলো, বিশুদ্ধ আকীদা, ইনসাফপূর্ণ বিধান, সৎকর্মময় ও উন্নত চরিত্র সম্বোলিত যে সত্য ধর্ম ও হিদায়াত দিয়ে মহান আল্লাহ স্বীয় নাবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন তার নাম ইসলাম। মহান আল্লাহ ইসলামকে পূর্বের সকল ধর্মের রহিতকারী করেছেন। ফলে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [ ال عمران : ٨٥ ]
“আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম অবলম্বন করতে ইচ্ছা করবে, তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«والذي نفسي بيده لا يسمع بي أحد من هذه الأمة؛ يهودي، ولا نصراني، ثم يموت ولم يؤمن بالذي أرسلت به إلا كان من أصحاب النار»
“ঐ সত্তার সপথ যার হাতে আমার জীবন রয়েছে, এই উম্মাতের যে কোন মানুষ ইয়াহুদী হোক বা খৃষ্টান হোক, আমার আগমনের কথা শোনার পর আমাকে যে পয়গামসহ প্রেরণ করা হয়েছে, তার প্রতি ঈমান স্থাপন করা ছাড়া যে ব্যক্তি মারা যাবে, সে অবশ্যই জাহান্নামবাসী হবে”। [বর্ণনায় মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩]
মহান আল্লাহ ইতিপূর্বে যারা তার পক্ষ থেকে সু-খ্যাতি নিয়ে অতিবাহিত হয়েছে তাদের মুসলিম বলে আখ্যায়িত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿مِّلَّةَ أَبِيكُمۡ إِبۡرَٰهِيمَۚ هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ﴾ [ الحج : ٧٨ ]
“এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের ধর্ম। তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন ‘মুসলিম’”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭৮]
কিন্তু সৃষ্টির মধ্যে মতবিরোধ, মত পার্থক্য ও অনৈক্য আল্লাহর চিরাচরিত নিয়ম হিসেবে চলে আসছে। যেমন, তার নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ألا وإن من كان قبلكم من أهل الكتاب افترقوا على ثنتين وسبعين ملة،وإن هذه الملة ستفترق على ثلاث وسبعين؛ ثنتان وسبعون في النار، وواحدة في الجنة، وهي الجماعة»
“মনে রাখবে, তোমাদের পূর্বে আহলে কিতাবগণ বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল, আর এ উম্মাত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। বাহাত্তর দলই জাহান্নামে যাবে। আর এক দল জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তারা হলো, আল-জামা‘আত”। [বর্ননা, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৫৯৭, ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৩৯৯।]
আর এ মুক্তিপ্রাপ্ত দল হলো, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত যারা আল্লাহর কিতাব ও বিদ‘আত কু-সংস্কার মুক্ত রাসূলের খাটি সুন্নাতকে মজবুত করে আঁকড়ে ধরেন। আর তারাই হলো, বিজয়ী জামা‘আত যাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لا تزال طائفة من أمتي قائمة بأمر الله، لا يضرهم من خذلهم أو خالفهم، حتى يأتي أمر الله وهم ظاهرون على الناس» .
“আমার উম্মতের একুটি জামা‘আত আল্লাহর নির্দেশের উপর অবিচল থাকবে। যারা তাদের বিরোধিতা করবে এবং তাদেরকে অপদস্থ করবে আল্লাহর নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তারা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এবং মানুষের উপর বিজয়ী থাকবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯২০]
আহলে সুন্নাত ওয়াল-জামা‘আত হচ্ছে মধ্যপন্থী দল:
তারা দুই দিকের মাঝে মধ্যপন্থী, দুই বক্রতার মাঝে ইনসাফবাদী ও দুই গোমরাহীর মাঝে হিদায়াতপ্রাপ্ত।
১- আল্লাহর সিফাত অধ্যায়ে মুশাব্বিহা ও মু‘আত্তিলাদের মাঝে তাদের অবস্থান।
২- আল্লাহর কর্মসমূহের ক্ষেত্রে জাবারিয়্যাহ ও কাদারিয়্যাহদের মাঝামাঝি তাদের অবস্থান।
৩- আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাঁর নামসমূহের অধ্যায়ে এবং ওয়া‘য়িদের অধ্যায়ে মুরজিয়া ও ওয়া‘য়িদিয়্যাহ উভয় সম্প্রদায়ের মাঝে তাদের অবস্থান।
৪- রাসূলের সাহাবীগণের অধ্যায়ে খারেজী ও শিয়া-রাফেযী উভয় সম্প্রদায়ে মাঝে তাদের অবস্থান।
তারা এ ধরণের বাতিল, গোমরাহী ও অগ্রহণযোগ্য মতাদর্শ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। মহান আল্লাহ তাদের অন্তরে ঈমানকে সু-সজ্জিত ও প্রিয় করে দিয়ে এবং কুফুরী, নাফরমানী ও অন্যায় করাকে ঘৃণিত করে দিয়ে তাদের উপর যে ইহসান ও দয়া করেছেন তাতে তারা গর্বিত। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَنِعۡمَةٗۚ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٨﴾ [ الحجرات : ٨ ]
“আল্লাহর পক্ষ থেকে করুণা ও নি‘আমতস্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ৮]
وصلى الله وسلم على عبده ونبيه محمد، وعلى آله وصحبه أجمعين
লেখক:
ড. আহমদ ইবন আব্দুর রহমান উসমান আল-কাযী
সমাপ্ত কাল: ১৫/০২/১৪২৭ হি.
উনাইযাহ
﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ ١٩﴾ [ ال عمران : ١٩ ]
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট ধর্ম হচ্ছে ইসলাম”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯]
পূর্বের ও পরের সকলের জন্যই আল্লাহর ধর্ম ইসলাম। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَا ٱلتَّوۡرَىٰةَ فِيهَا هُدٗى وَنُورٞۚ يَحۡكُمُ بِهَا ٱلنَّبِيُّونَ ٱلَّذِينَ أَسۡلَمُواْ﴾ [ المائدة : ٤٤ ]
“নিশ্চয় আমি তাওরাত নাযিল করেছি, তাতে ছিল হিদায়াত ও আলো, এর মাধ্যমে ইয়াহূদীদের জন্য ফয়সালা প্রদান করেন অনুগত নাবীগণ”। [সূরা আল- মায়েদা, আয়াত: ৪৪]
ব্যাপক অর্থে ইসলাম বলা হয়, আল্লাহকে একক জ্ঞান করে তার জন্য মাথা অবনত করা, ইবাদতে কেবল তার আনুগত্য করা এবং শির্ক থেকে মুক্ত থাকা।
আর বিশেষ অর্থে ইসলাম হলো, বিশুদ্ধ আকীদা, ইনসাফপূর্ণ বিধান, সৎকর্মময় ও উন্নত চরিত্র সম্বোলিত যে সত্য ধর্ম ও হিদায়াত দিয়ে মহান আল্লাহ স্বীয় নাবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন তার নাম ইসলাম। মহান আল্লাহ ইসলামকে পূর্বের সকল ধর্মের রহিতকারী করেছেন। ফলে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [ ال عمران : ٨٥ ]
“আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম অবলম্বন করতে ইচ্ছা করবে, তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«والذي نفسي بيده لا يسمع بي أحد من هذه الأمة؛ يهودي، ولا نصراني، ثم يموت ولم يؤمن بالذي أرسلت به إلا كان من أصحاب النار»
“ঐ সত্তার সপথ যার হাতে আমার জীবন রয়েছে, এই উম্মাতের যে কোন মানুষ ইয়াহুদী হোক বা খৃষ্টান হোক, আমার আগমনের কথা শোনার পর আমাকে যে পয়গামসহ প্রেরণ করা হয়েছে, তার প্রতি ঈমান স্থাপন করা ছাড়া যে ব্যক্তি মারা যাবে, সে অবশ্যই জাহান্নামবাসী হবে”। [বর্ণনায় মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩]
মহান আল্লাহ ইতিপূর্বে যারা তার পক্ষ থেকে সু-খ্যাতি নিয়ে অতিবাহিত হয়েছে তাদের মুসলিম বলে আখ্যায়িত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿مِّلَّةَ أَبِيكُمۡ إِبۡرَٰهِيمَۚ هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ﴾ [ الحج : ٧٨ ]
“এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের ধর্ম। তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন ‘মুসলিম’”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭৮]
কিন্তু সৃষ্টির মধ্যে মতবিরোধ, মত পার্থক্য ও অনৈক্য আল্লাহর চিরাচরিত নিয়ম হিসেবে চলে আসছে। যেমন, তার নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ألا وإن من كان قبلكم من أهل الكتاب افترقوا على ثنتين وسبعين ملة،وإن هذه الملة ستفترق على ثلاث وسبعين؛ ثنتان وسبعون في النار، وواحدة في الجنة، وهي الجماعة»
“মনে রাখবে, তোমাদের পূর্বে আহলে কিতাবগণ বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল, আর এ উম্মাত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। বাহাত্তর দলই জাহান্নামে যাবে। আর এক দল জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তারা হলো, আল-জামা‘আত”। [বর্ননা, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৫৯৭, ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৩৯৯।]
আর এ মুক্তিপ্রাপ্ত দল হলো, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত যারা আল্লাহর কিতাব ও বিদ‘আত কু-সংস্কার মুক্ত রাসূলের খাটি সুন্নাতকে মজবুত করে আঁকড়ে ধরেন। আর তারাই হলো, বিজয়ী জামা‘আত যাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لا تزال طائفة من أمتي قائمة بأمر الله، لا يضرهم من خذلهم أو خالفهم، حتى يأتي أمر الله وهم ظاهرون على الناس» .
“আমার উম্মতের একুটি জামা‘আত আল্লাহর নির্দেশের উপর অবিচল থাকবে। যারা তাদের বিরোধিতা করবে এবং তাদেরকে অপদস্থ করবে আল্লাহর নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তারা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এবং মানুষের উপর বিজয়ী থাকবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯২০]
আহলে সুন্নাত ওয়াল-জামা‘আত হচ্ছে মধ্যপন্থী দল:
তারা দুই দিকের মাঝে মধ্যপন্থী, দুই বক্রতার মাঝে ইনসাফবাদী ও দুই গোমরাহীর মাঝে হিদায়াতপ্রাপ্ত।
১- আল্লাহর সিফাত অধ্যায়ে মুশাব্বিহা ও মু‘আত্তিলাদের মাঝে তাদের অবস্থান।
২- আল্লাহর কর্মসমূহের ক্ষেত্রে জাবারিয়্যাহ ও কাদারিয়্যাহদের মাঝামাঝি তাদের অবস্থান।
৩- আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাঁর নামসমূহের অধ্যায়ে এবং ওয়া‘য়িদের অধ্যায়ে মুরজিয়া ও ওয়া‘য়িদিয়্যাহ উভয় সম্প্রদায়ের মাঝে তাদের অবস্থান।
৪- রাসূলের সাহাবীগণের অধ্যায়ে খারেজী ও শিয়া-রাফেযী উভয় সম্প্রদায়ে মাঝে তাদের অবস্থান।
তারা এ ধরণের বাতিল, গোমরাহী ও অগ্রহণযোগ্য মতাদর্শ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। মহান আল্লাহ তাদের অন্তরে ঈমানকে সু-সজ্জিত ও প্রিয় করে দিয়ে এবং কুফুরী, নাফরমানী ও অন্যায় করাকে ঘৃণিত করে দিয়ে তাদের উপর যে ইহসান ও দয়া করেছেন তাতে তারা গর্বিত। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَنِعۡمَةٗۚ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٨﴾ [ الحجرات : ٨ ]
“আল্লাহর পক্ষ থেকে করুণা ও নি‘আমতস্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ৮]
وصلى الله وسلم على عبده ونبيه محمد، وعلى آله وصحبه أجمعين
লেখক:
ড. আহমদ ইবন আব্দুর রহমান উসমান আল-কাযী
সমাপ্ত কাল: ১৫/০২/১৪২৭ হি.
উনাইযাহ
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন