hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

অমুসলিমদের সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ প্রসঙ্গ

লেখকঃ ড. রাগিব আস-সারজানী

১২
প্রথম পরিচ্ছেদ: অমুসলিমদের সাথে কথোপকথনের মাধুর্য্য
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে অমুসলিমদের সাথে আচার-আচরণের আদর্শিক পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে শিখিয়েছেন যে, অমুসলিমদেরকে শুধুমাত্র স্বীকার করাই যথেষ্ট নয়; বরং তাদের প্রতি যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনও করতে হবে। আর এটা তিনি আল্লাহর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ইশারা ছাড়া শুধু ব্যক্তিগত চিন্তা থেকেই করেন নি; বরং তাঁর এ শিক্ষা পবিত্র কুরআনেরই প্রতিধ্বনি। পবিত্র কুরআনে অমুসলিমদের সাথে কথোপকথনের পদ্ধতি শিক্ষা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,

﴿قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ قُلِ ٱللَّهُۖ وَإِنَّآ أَوۡ إِيَّاكُمۡ لَعَلَىٰ هُدًى أَوۡ فِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٖ ٢٤ قُل لَّا تُسۡ‍َٔلُونَ عَمَّآ أَجۡرَمۡنَا وَلَا نُسۡ‍َٔلُ عَمَّا تَعۡمَلُونَ ٢٥ قُلۡ يَجۡمَعُ بَيۡنَنَا رَبُّنَا ثُمَّ يَفۡتَحُ بَيۡنَنَا بِٱلۡحَقِّ وَهُوَ ٱلۡفَتَّاحُ ٱلۡعَلِيمُ ٢٦﴾ [ سبا : ٢٤، ٢٦ ]

“বল, ‘আসমানসমূহ ও জমিন থেকে কে তোমাদেরকে রিযিক দেন? বল, ‘আল্লাহ’, আর নিশ্চয় আমরা অথবা তোমরা সৎপথে প্রতিষ্ঠিত অথবা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত। বল, ‘আমরা যে অপরাধ করছি সে ব্যাপারে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না আর তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমাদেরকেও জিজ্ঞাসা করা হবে না’। বল, ‘আমাদের রব আমাদেরকে একত্র করবেন। তারপর তিনি আমাদের মধ্যে সঠিকভাবে ফয়সালা করবেন। আর তিনিই শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী ও সম্যক পরিজ্ঞাত’।” [সূরা সাবা, আয়াত: ২৪-২৬]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল যে, তিনিই সত্য ও হিদায়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন তথাপিও আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে অমুসলিমদের সাথে এভাবে কথা বলতে আদেশ দিয়েছেন যে,

﴿وَإِنَّآ أَوۡ إِيَّاكُمۡ لَعَلَىٰ هُدًى أَوۡ فِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٖ ٢٤ ﴾ [ سبا : ٢٤ ]

“নিশ্চয় আমরা অথবা তোমরা সৎপথে প্রতিষ্ঠিত অথবা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত।” [সূরা সাবা, আয়াত: ২৪]

এটি তো ঐ দুই প্রতিপক্ষের কথোপকথনের পদ্ধতি যাদের মধ্য হতে কোনো এক পক্ষের সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা সু-নিশ্চিত নয়। অথচ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ পদ্ধতিতে কথা বলতে আদেশ করা হয়েছে। এটি ইসলামের উন্নত চরিত্র, চূড়ান্ত সভ্যতা ও কথোপকথনের সর্বোত্তম আদর্শিক পন্থা নির্ধারণ বৈ কিছুই নয়।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা অমুসলমেদেরকে পূর্ণ ভদ্রতা বজায় রেখে সম্বোধন করার আদেশ দিয়ে বলেন,

﴿قُل لَّا تُسۡ‍َٔلُونَ عَمَّآ أَجۡرَمۡنَا وَلَا نُسۡ‍َٔلُ عَمَّا تَعۡمَلُونَ ٢٥﴾ [ سبا : ٢٥ ]

“আমরা যে অপরাধ করছি সে ব্যাপারে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না আর তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমাদেরকেও জিজ্ঞাসা করা হবে না।” [সূরা সাবা, আয়াত: ২৫]

এ আয়াতে ( جرم ) তথা ‘অপরাধ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে মুসলিমদের বেলায়। বলা হয়েছে- ‘আমরা যদি অপরাধ করে খাকি তাহলে সেজন্য তোমরা জিজ্ঞেসিত হবেন না’। আর অমুসলিমদের বেলায় ব্যবহৃত হয়েছে ( عْمل ) তথা ‘কাজ’ শব্দটি। বলা হয়েছে- ‘আর তোমরা যে সমস্ত কাজ করছ সেজন্য আমরা জিজ্ঞাসিত হব না। আরো লক্ষ্য করার বিষয় হলো, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিসাব-নিকাসের পূর্ণ দায়িত্ব আল্লাহর দিকে সমর্পিত করে দেওয়ার কথাটি নিজ ভাষায় বলেছেন এভাবে যে, “নিশ্চই আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামত দিবসে আমাদের সবাইকে একত্রিত করবেন এবং সত্যের পক্ষে ফায়সালা দিয়ে দেবেন, তখন আমরা জানতে পারব- কে সঠিক পথে ছিল আর কে ভুল করেছিল”।

এটিই হলো পারস্পারিক কথোপকথনের সর্বোৎকৃষ্ট হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতি যেখানে পক্ষপাতমূলক চিন্তা কিংবা রূঢ়তা ও কঠোরতার লেশ মাত্রও নেই। যেখানে রয়েছে প্রতিপক্ষকে যথাযথ মূল্যায়ন ও পূর্ণ ভদ্রতা প্রকাশের বাস্তব প্রতিফলন। এমনিভাবে আহলে কিতাবদের সাথে কথোপকথনের পদ্ধতি নির্ধারণপূর্বক আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تُجَٰدِلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ إِلَّا بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ إِلَّا ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنۡهُمۡۖ وَقُولُوٓاْ ءَامَنَّا بِٱلَّذِيٓ أُنزِلَ إِلَيۡنَا وَأُنزِلَ إِلَيۡكُمۡ وَإِلَٰهُنَا وَإِلَٰهُكُمۡ وَٰحِدٞ وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ ٤٦﴾ [ العنكبوت : ٤٦ ]

“আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না। তবে তাদের মধ্যে ওরা ছাড়া যারা যুলুম করেছে। আর তোমরা বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ তো একই। আর আমরা তারই সমীপে আত্মসমর্পানকারী।” [সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ৪৬]

বাহ! কি চমৎকার পদ্ধতি! আমাদেরকে আহলে কিতাবদের সাথে কেবল সুন্দর ও উত্তম পন্থায় কথোপকথনের জন্যই বলা হয় নি; বরং অতি সুন্দর, অতি উত্তম ও অতি উৎকৃষ্ট পদ্ধতিতে কথা বলার আদেশ দেওয়া হয়েছে। পৃথীবির কোনো দর্শন কিংবা মতোবাদে কী এমন কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে যা এ ধরণের অনুপম চরিত্র বৈশিষ্ট্যের ধারে-কাছেও যেতে পারে? আরো লক্ষ্য করুন, প্রতিপক্ষের মন নরম করা ও অন্তর গলানোর মতো সম্বোধন দেখুন,

﴿وَقُولُوٓاْ ءَامَنَّا بِٱلَّذِيٓ أُنزِلَ إِلَيۡنَا وَأُنزِلَ إِلَيۡكُمۡ وَإِلَٰهُنَا وَإِلَٰهُكُمۡ وَٰحِدٞ وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ ٤٦﴾ [ العنكبوت : ٤٦ ]

“আর তোমরা বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ তো একই। আর আমরা তারই সমীপে আত্মসমর্পানকারী।” [সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ৪৬]

এ ধরণের সম্বোধন আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের মনে পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ

ভুলে গিয়ে সৌহার্দ ও সম্প্রীতির মনোভাব জাগিয়ে তোলে। তারা এভাবে চিন্তা করার অবকাশ পায় যে, আমাদের উভয়ের ইলাহ এক ও অদ্বিতীয়। আমাদের ওপরও কিতাব নাযিল হয়েছে তাদের ওপরও কিতাব নাযিল হয়েছে। তারা উভয় কিতাবকে বিশ্বাসও করে। তাহলে আর অনৈক্য বা বিরোধ কিসের?

অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, পবিত্র কুরআনে এ ধরণের আয়াতের মহা সম্ভার বিদ্যমান রয়েছে। দেখুন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلۡ يَٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ كَلِمَةٖ سَوَآءِۢ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمۡ أَلَّا نَعۡبُدَ إِلَّا ٱللَّهَ وَلَا نُشۡرِكَ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا يَتَّخِذَ بَعۡضُنَا بَعۡضًا أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِۚ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَقُولُواْ ٱشۡهَدُواْ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ ٦٤﴾ [ ال عمران : ٦٤ ]

“বলুন, ‘হে কিতাবীগণ, তোমরা এমন কথার দিকে আস, যেটি আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত না করি। আর তার সাথে কোনো কিছুকে শরীক না করি এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ছাড়া রব হিসেবে গ্রহণ না করি’। তারপর যদি তারা বিমুখ হয় তবে বল, ‘তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬৪]

অন্যত্র তিনি বলেন,

﴿وَدَّ كَثِيرٞ مِّنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ لَوۡ يَرُدُّونَكُم مِّنۢ بَعۡدِ إِيمَٰنِكُمۡ كُفَّارًا حَسَدٗا مِّنۡ عِندِ أَنفُسِهِم مِّنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ ٱلۡحَقُّۖ فَٱعۡفُواْ وَٱصۡفَحُواْ حَتَّىٰ يَأۡتِيَ ٱللَّهُ بِأَمۡرِهِۦٓۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ١٠٩﴾ [ البقرة : ١٠٩ ]

“আহলে কিতাবের অনেকেই চায়, যদি তারা তোমাদেরকে ঈমান আনার পর কাফির অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারতো! সত্য স্পষ্ট হওয়ার পর তাদের পক্ষ থেকে হিংসাবশত (তারা এরূপ করে থাকে)। সুতরাং তোমরা ক্ষমা কর এবং এড়িয়ে চল, যতক্ষন না আল্লাহ তাঁর নির্দেশ দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১০৯]

এ ছোট্ট পরিসরে এ জাতীয় সকল আয়াত উল্লেখ করা সম্ভব নয়। এ গ্রন্থের মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ জাতীয় কতিপয় আয়াতকে এবং এ বিষয়ে আল্লাহ প্রদত্ত নির্দেশনাবলীকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে প্রক্ষেপন করা, যাতে আমাদের সামনে অমুসলিমদের সাথে তাঁর আচরণ-বিধি ও অমুসলিমদের প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধের প্রকৃত অবস্থা স্পষ্ট উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাক্যালাপের সৌন্দর্য্যসমূহের মধ্যে আরেকটি হলো প্রতিপক্ষের কথা যত মিথ্যা, অশ্লীল, অবাস্তব ও কষ্টদায়কই হোক না কেন তিনি তা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং প্রতিপক্ষের কথা বলার সময় পূর্ণ নিরব থাকতেন। নিম্মোক্ত কথোপকথনটি লক্ষ্য করুন। এখানে কুরাইশ নেতা উতবাহ ইবন রবী‘আহ’র [. উতবাহ ইবন রাবী‘আহ। কুরাইশদের অনেক বড় নেতা ছিল। তার কারণেই ‘হরবুল ফুজ্জার’ বন্ধ হয়েছিল। তবে সে মুসলিম হয় নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং সাহাবায়ে কেরামকে অনেক কষ্ট দিয়েছিল। একদিন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে অনেক প্রহার করেছিল। ফলে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর গোত্র ‘বনু তাইম’-এর লোকেরা বলেছিল, আল্লাহর শপথ! যদি আবু বকর এ প্রহারের কারণে মারা যায় তাহলে অবশ্যই আমরা উতবাহ ইবন রবী‘আহকে হত্যা করবো। কাফের অবস্থায় নিজ ছেলে ওয়ালীদসহ বদরের যুদ্ধে নিহত হয়েছিল।] সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীর্ঘ আলাপচারিতার বিবরণ রয়েছে।

উতবাহ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলাম থেকে সরে আসার জন্য অত্যন্ত মনোযোগসহ বুঝাচ্ছিল, সে বলছে: হে ভাতিজা! আমাদের মাঝে এবং আমাদের সম্প্রদায়ের মাঝে তোমার মর্যাদা ও সম্মানের কথা তো তোমার জানা আছে। কিন্তু নিশ্চই তুমি অনেক বড় বিষয় নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছো। তুমি আমাদের সম্প্রদায়ের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করছো। তোমার অনুসারীদেরকে তুমি জান্নাত-জাহান্নামের মিথ্যা স্বপ্ন দেখাচ্ছ। তুমি আমাদের দেব-দেবি ও ধর্মের নিন্দাবাদ করে বেড়াচ্ছ। আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে গাল-মন্দ করছ। আমি তোমার নিকট কয়েকটি বিষয় পেশ করছি, তুমি মনোযোগসহ শুন যাতে তন্মধ্য কোনো একটাকে বেছে নিতে পার। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বলুন, হে আবুল ওয়ালীদ! আমি শুনছি ওতবা বলল: ভাতিজা! তুমি এটা বলো যে, শেষ পর্যান্ত তুমি চাও কী? তুমি কি মক্কার সবচেয়ে বড় ধনী হতে চাও? তাহলে আমরা বহু ধন-সম্পদ এনে তোমার সামনে স্তুপ করে দেব। নাকি তুমি সম্মান চাও? তাহলে আমরা সবাই মিলে তোমাকে এমনভাবে সম্মান প্রদর্শন করবো যে, তোমাকে ছাড়া আমাদের কোনো সিদ্ধান্তই বাস্তবায়িত হবে না। নাকি তুমি মক্কার রাজত্ব চাও? তাহলে আমরা তোমাকে আমাদের রাজা বানিয়ে দেব। নাকি এসব কিছু তুমি স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে করছ না বরং তোমার নিকট যে অদৃশ্য আগন্তুক আসে সে জিন্ন এবং তার হাত থেকে আত্মরক্ষায় তুমি যদি অক্ষম হয়ে থাক তাহলে বলো, আমরা আমাদের টাকা-পয়সা ব্যয় করে চিকিৎসা করে তোমাকে সুস্থ করে তুলব। কেননা, অনেক সময় অনুসঙ্গী তার মূল ব্যক্তির ওপর প্রাধান্য লাভ করে, ফলে চিকিৎসার প্রযোজন দেখা দেয়। এতক্ষণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উতবার কথা মন দিয়ে শুনছিলেন। তার কথা শেষ হলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবুল ওয়ালীদ! আপনার বক্তব্য কি শেষ হয়েছে? সে বলল: হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এবার আমার কথা শুনুন। সে বলল, শুনছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়তে শুরু কলেন,

﴿حمٓ ١ تَنزِيلٞ مِّنَ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٢ كِتَٰبٞ فُصِّلَتۡ ءَايَٰتُهُۥ قُرۡءَانًا عَرَبِيّٗا لِّقَوۡمٖ يَعۡلَمُونَ ٣ بَشِيرٗا وَنَذِيرٗا فَأَعۡرَضَ أَكۡثَرُهُمۡ فَهُمۡ لَا يَسۡمَعُونَ ٤ وَقَالُواْ قُلُوبُنَا فِيٓ أَكِنَّةٖ مِّمَّا تَدۡعُونَآ إِلَيۡهِ وَفِيٓ ءَاذَانِنَا وَقۡرٞ وَمِنۢ بَيۡنِنَا وَبَيۡنِكَ حِجَابٞ فَٱعۡمَلۡ إِنَّنَا عَٰمِلُونَ ٥﴾ [ فصلت : ١، ٥ ]

“হা-মীম। (এ গ্রন্থ) পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত। এমন এক কিতাব, যার আয়াতগুলো জ্ঞানী কওমের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে কুরআনরূপে, আরবী ভাষায়, সুসংবাদদাতা ও সতর্কাকারী হিসেবে। অতঃপর তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অতএব, তারা শুনবে না। আর তারা বলে, ‘তুমি আমাদেরকে যার প্রতি আহ্বান করছ সে বিষয়ে আমাদের অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত, আমাদের কানের মধ্যে রয়েছে বধিরতা আর তোমার ও আমাদের মধ্যে রয়েছে অন্তরায়। অতএব, তুমি (তোমার) কাজ কর, নিশ্চয় আমরা (আমাদের) কাজ করব।” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ১-৫]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়েই যাচ্ছেন। ওতবা শুনতে শুনতে একেবারে নিরব-নিস্তব্ধ হয়ে গেল এবং উভয় হাত পেছনে দিয়ে টেক লাগিয়ে শুনতেছিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদাহর আয়াত পর্যন্ত পড়লেন এবং সাজদাহ আদায় করলেন। অতঃপর উতবাকে লক্ষ্য করে বললেন,

«قد سمعت يا أبا الوليد ! ما سمعت فأنت وذاك»

“হে আবুল ওয়ালীদ! তুমি যা শুনার শুনেছ? এটাই আমার পক্ষ থেকে তোমার বক্তব্যের উত্তর।”

এরপর উতবাহ তার গোত্রের নিকট ফিরে গেল।উতবাহকে দেখে তার গোত্রের লোকেরা বলাবলি করতে লাগল যে, আল্লাহর শপথ! উতবাহ যে চেহারা নিয়ে গিয়েছে তার ভিন্ন চেহারা নিয়ে ফিরেছে। উতবাহ যখন তাদের নিকট গিয়ে বসলো তখন তারা তাকে জিজ্ঞাসা করল, কী খবর হে আবুল ওয়ালীদ? সে বলল, আজ আমি যা শুনেছি জীবনে কোনো দিন তা শুনি নি। আল্লাহর শপথ! এটা কোনো কবিতা নয় এবং কোনো যাদুকর কিংবা গণকের কথাও নয়। হে কোরাইশ সম্প্রদায়! তোমরা আমার কথা মেনে তার অনুসরণ কর এবং আমাকে তার অনুসরণ করতে দাও। আমার মতে, তোমরা তাকে তার অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও। আল্লাহর শপথ! যা আমি শুনেছি তা অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ হতে প্রাপ্ত অহী বৈ অন্য কিছু নয়। সে যদি তার উদ্দেশ্যে অকৃতকার্য হয় তাহলে সে নিজে নিজেই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি সে সফল হয়ে যায় তাহলে তাতে তোমাদেরই সম্মান। তার রাজত্ব তোমাদেরই রাজত্ব। তার কারণে তোমরা হয়ে যাবে অন্য সকল জাতির চেয়ে সৌভাগ্যবান। উতবাহর এ কথাগুলো শুনে তারা বলতে লাগল, হে আবুল ওয়ালীদ! মুহাম্মাদ তার ভাষা দ্বারা তোমাকেও যাদু করে ফেলেছে। উতবাহ বলল, এটা আমার মতামত, তোমরা যা ইচ্ছা তাই করতে পার। [. মুসনাদে আবী ইয়া‘লা, হাদীস নং ১৮১৮; সীরাতে ইবন হিশাম (১/২৯৩-২৯৪), দালাইলুল বায়হাকী (১/২৩০-২৩১); দালাইলু আবী নাঈম (১৮২); মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবাহ (১৪/২৯৫-২৯৬); মুনতাখাবে আব্দুর রহমান (১১২৩); মুসতাদরাকে হাকিম (২/২৫৩)।]

এ কথোপকথনের মাঝে লক্ষ্য করার মতো অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। উতবাহ তার কথা শুরুই করেছে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অনেকগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ উত্থাপনের মাধ্যমে। তথাপিও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৎক্ষনাত কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে অত্যন্ত ধৈর্য্য ও মনোযোগ সহকারে শুনতে লাগলেন এবং উতবাহ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলামের দাওয়াত থেকে বিরত রাখার জন্য প্ররোচনা দিতে শুরু করলেও তিনি পূর্ণ নিরবতা পালন করলেন এবং বেশ শান্তস্বরে বললেন, ‘বলুন, হে আবুল ওয়ালীদ! আমি শুনছি’ এবং তিনি তাকে উতবাহ নামে সম্বোধন না করে তার সবচেয়ে প্রিয় তার উপনাম তথা ‘আবুল ওয়ালীদ’ দ্বারা সম্বোধন করলেন। আবার দেখুন, উতবাহ যখন অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে সম্পদ, সম্মান, রাজত্ব ইত্যাদি পার্থিব লোভ-লালসার বিষয়গুলো উপস্থাপন করতে লাগল তখনও তিনি রাগান্বিত হন নি বরং শেষ পর্যন্ত শুনে গেলেন এবং চুড়ান্ত সম্মানপ্রদর্শন পূর্বক বললেন, হে আবুল ওয়ালীদ! আপনার বক্তব্য কি শেষ হয়েছে? সে বলল: হ্যাঁ। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এবার আমার কথা শুনুন।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে স্বাধীনভাবে তার বক্তব্য উপস্থাপনের এবং নিজ মতামত পেশ করার পূর্ণ সুযোগ দিলেন। তার বক্তব্যের সমাপ্তির পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথা বলা শুরু করলেন। এখানে তিনি আমাদের জন্য অন্যদের সাথে এমনকি ভিন্ন মতাবলম্বীদের সাথেও কথোপকথনের এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন