hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

অমুসলিমদের সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ প্রসঙ্গ

লেখকঃ ড. রাগিব আস-সারজানী

১৭
প্রথম পরিচ্ছেদ: ইসলামী শরী‘আতে ন্যায়পরায়ণতা
ইসলামী শরী‘আতের মূলনীতিগুলোর মধ্যে ন্যয়পরায়ণতা একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। এতে কোনো ধরণের তারতম্য বা অবহেলার সুযোগ নেই। এটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ও তাঁর সকল উম্মতের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত নির্দেশ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُ بِٱلۡعَدۡلِ وَٱلۡإِحۡسَٰنِ وَإِيتَآيِٕ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَيَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِ وَٱلۡبَغۡيِۚ يَعِظُكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ٩٠ ﴾ [ النحل : ٩٠ ]

‍‌‌‍‌‍ “আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯০]

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُكُمۡ أَن تُؤَدُّواْ ٱلۡأَمَٰنَٰتِ إِلَىٰٓ أَهۡلِهَا وَإِذَا حَكَمۡتُم بَيۡنَ ٱلنَّاسِ أَن تَحۡكُمُواْ بِٱلۡعَدۡلِۚ ﴾ [ النساء : ٥٨ ]

“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করবে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৮]

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ‘আদল’ শব্দটির পাশাপাশি ‘আমর’ (আদেশমূলক) শব্দেরও ব্যবহার করেছেন। কেননা ন্যয়পরায়ণতা কোনো ঐচ্ছিক বিষয় বা শুধু ফযীলতপূর্ণ আমল নয়; বরং এটি একটি অত্যাবশ্যকীয় আদেশ, যা ছাড়া শরী‘আতের বিধান প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। কোনো মু‌মিনের জন্য কখনোই ন্যয়পরায়ণতা ছাড়া কোনো ফয়সালা সম্পাদন করা যথাযথ হতে পারে না।

ন্যায়নিষ্ঠা, ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা ও নিরপেক্ষতার গুরুত্ব হৃদয়ঙ্গম করার জন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাচারই হলো প্রকৃত বাস্তব নমুনা। কারণ তাঁর প্রতিটি কথা ও কাজে ন্যয়পরায়ণতার পুঙ্খানুপুঙ্খ চিত্র ফুঠে উঠেছে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন,

» سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللَّهُ تَعَالَى فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ إِمَامٌ عَدْلٌ «

“যেদিন আল্লাহর (‘আরশের) ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহ তা‘আলা সাত শ্রেণির মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। (তাদের মধ্যে এক প্রকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন) ন্যায়পরায়ণ শাসক।” [. সহীহ বুখারী ( كتاب الصلاة : باب من ينتظر الصلاة وفضل الجماعة ) হাদীস নং ৬২৯; ( كتاب الرقاق : باب البكاء من خشية الله ) হাদীস নং ৬১১৪; ( كتاب الزكاة : باب الصدقة باليمين ) হাদীস নং ১৩৭৫; ( كتاب المحاربين من أهل الكفر والردة : باب فضل من ترك الفواحش ) হাদীস নং ৬৪২১; সহীহ মুসলিম ( كتاب الزكاة : باب فضل إخفاء الصدقة ) হাদীস নং ১০৩১।]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ আরেকটি হাদীস আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন,

» مَنْ ظَلَمَ قِيدَ شِبْرٍ مِنْ الْأَرْضِ طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أَرَضِينَ «

‍“যে ব্যক্তি এক বিঘত জমি অন্যায়ভাবে নিয়ে নেয়, কিয়ামতের দিন এর সাত তবক জমি তার গলায় লটকিয়ে দেওয়া হবে।” [. সহীহ বুখারী ( كتاب المظالم : باب إثم من ظلم شيئا من الارض ) হাদীস নং ২৩২১; সহীহ মুসিলম ( كتاب المساقاة : باب تحريم الظلم وغصب الارض و غيرها ) হাদীস নং ১৬১২।]

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

» من أعان على خصومة بظلم أو يعين على ظلم لم يزل في سخط الله حتى ينزع «

“যে ব্যক্তি কোনো অন্যায় ঝগড়া বা যুলুমের ব্যাপারে অন্যকে সহযোগিতা করে ততক্ষণ পর্যন্ত তার ওপর আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত হতে থাকে যতক্ষণ ঐ যুলুমের অবসান না হয়।” [. ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৩২০; আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৯৭; আল্লামা নাসীরুদ্দিন আলবানী এই হাদীসটি সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন: সহীহ আল-জামিউ (৬০৩৯)।]

এ ক’টি হাদীসে ব্যাপক অর্থবোধক শব্দাবলী ব্যবহৃত হয়েছে, যা মুসলিম ও অমুসলিম সকলকেই অন্তর্ভুক্ত করে। কাজেই সর্বাবস্থায় যুলুম প্রত্যাখ্যাত এবং যে কোনো প্রেক্ষিতেই যুলুম নিষিদ্ধ। অতএব, ধর্মীয় বিশ্বাস, জাতি, বংশ, এলাকা বা গোত্রীয় সম্পর্কের ভিন্নতায়ও সর্বাবস্থায় যুলুম বা অন্যায় নিষিদ্ধ। ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠায় কোনো তারতম্য প্রদর্শন করা যাবে না।

এ সকল কারণেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এ কথা বিশ্বাস করার পথ চিরতরে রূদ্ধ করে দিয়েছেন যে, অমুসলিমদের ওপর সামান্যতম হলেও যুলুমের বৈধতা রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি অতি চমৎকার ও অনুপম কয়েকটি কথা বলেছেন, যেগুলো ভূপৃষ্টের সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব, যেন সকলেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহান আদর্শ সম্পর্কে জ্ঞাত হতে পারে। তিনি বলেন,

«أَلاَ مَنْ ظَلَمَ مُعَاهِدًا أَوِ انْتَقَصَهُ أَوْ كَلَّفَهُ فَوْقَ طَاقَتِهِ أَوْ أَخَذَ مِنْهُ شَيْئًا بِغَيْرِ طِيبِ نَفْسٍ فَأَنَا حَجِيجُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ » .

‍“যে ব্যক্তি কোনো চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমের ওপর যুলুম করে অথবা তার কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন করে অথবা সাধ্যের বাইরে তার ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেয় অথবা তার সম্মতি ছাড়া তার নিকট থেকে কোনো কিছু নিয়ে নেয় তাহলে কিয়ামত দিবসে আমি সে চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমের পক্ষে তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াব।” [. সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩০৫২; বায়হাক্বী: আস-সুনানুল কুবরা হাদীস নং ১৮৫১১; আল্লামা নাসীরুদ্দিন আলবানী এ হাদীসটিকে সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন। সহীহ আল-জামি‘ (২৬৫৫)।]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এসব চমৎকার বাক্যাবলি ও তার মহত্ত্ববোধক অর্থ শুধুমাত্র ক’টি তাত্ত্বিক নীতিই নয় যে, মানব জীবনে এর কোনো কার্যকারিতা নেই; রবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল সম্মতি ও কর্মকাণ্ডে এর পরিষ্কার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি নিজ সকল সম্পৃক্ততা ও চুক্তিসম্পাদনে নিরপেক্ষতা ও ন্যয়পরায়ণতার চেতনাটিকে আরো বেশি সমোজ্জ্বল করে তুলতেন এবং পূর্ণাঙ্গ ন্যায়পরায়ণতা বাস্তবায়নে সহায়ক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা গ্রহণে সদা সচেষ্ট থাকতেন।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ইয়াহূদীদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিসমূহে ‘আদল’ এর নমুনা দৃষ্টিগোচর হয়। যেমন, মদীনার উদ্দেশ্যে হিজরতের সময় কৃত চুক্তিপত্রে তিনি এ বিষয়টিকে স্পষ্টাকারে তুলে ধরেছেন। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে,

» وإنه لم يأثم امرؤ بحليفه وإن النصر للمظلوم «

“নিশ্চয় কোনো ব্যক্তিকে তার সাথীর কারণে অপরাধী সাব্যস্থ করা হবে না এবং অবশ্যই মযলুমকে সহযোগিতা করা হবে।” [. ইবন কাসীর: আল-ইবদায়া ওয়ান নিহায়া (৩/২৫১); ইবন সায়্যিদুন নাস: উয়ুনুল আছর (১/৩১৮), ইবন হিশাম: আস-সীরাতুন্নবুবিয়্যাহ (৩/৩১); আকরামুল উমরী: আল-মুজতামিউল মাদানী (১১৯-১২১)]

চুক্তিনামায় সম্পাদিত এ ধারা/নীতিটি ছিল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ মর্মে প্রকাশ্য বিবৃতি যে, যুলুম সাধারণভাবেই অগ্রহণযোগ্য এবং সাহায্য হবে সর্বদা নিপীড়িতের পক্ষে। নিপীড়িত মুসলিম হোক বা ইয়াহূদী হোক। পরবর্তী সময়ে এ ঘোষণার যথাযথ বাস্তবায়ন ন্যায়পরায়ণতার দাবীতে আরো দৃঢ়তা এনে দিয়েছে। শুধু এ একটিই নয়; বস্তুত চুক্তিপত্রের প্রতিটি ধারাই ছিল ন্যায়নিষ্ঠার বাহক।

অনুরূপ ইয়াহূদীদের সাথে কৃত অনেক চুক্তি রয়েছে যাতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ন্যায়পরায়ণতা ও নিরপেক্ষতার দাবীটিকে আরো আলোকময় করেছেন। তদ্রুপ খ্রিস্টানদের সাথে কৃত চুক্তিপত্রেও তিনি ন্যায়পরায়ণতার পারাকাষ্টা প্রদর্শন করেছেন। যেমন, নাজরানের খ্রিস্টানদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিনামায় তিনি বলেন:

» ولَا يوخذ رجل منهم بظلم آخر»

“একের অন্যায়ে অন্যকে পাকড়াও করা হবে না’’। [. মুহাম্মাদ ফারুক হাম্মাদ: আল-আলাকাতুল ইসলামিয়্যাহ ওয়ান নাসরানিয়্যাহ (১১০)।]

মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক চলমান রাখার স্বার্থে রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজরানের খ্রিস্টানদের সাথে এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন, যে ব্যক্তি খ্রিস্টান ও মুসলিমগণের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্রে উল্লিখিত ঐক্যমতের বিষয়াদির বাস্তবায়ন প্রত্যক্ষ করবে এবং ঐ ব্যক্তির সবচেয়ে বড় গুণ হবে বিশ্বস্ততা। বস্তুত বিশ্বস্ততা তো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল সাহাবীরই অত্যাবশ্যকীয় একটি গুণ। তদুপরি তিনি এ ক্ষেত্রে এমন একজনকে বেচে নিলেন যার মধ্যে এ গুণটি চুড়ান্ত মাত্রায় অর্জিত হয়েছিল। এমনকি রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই ঐ ব্যক্তির প্রসংশায় বলেন,

«لأبعثن إليكم رجلا أمينا حق أمين»

‍“আমি তোমাদের মাঝে একজন আমীন (বিশ্বস্ত) লোককে পাঠাবো, তিনি সত্যই আমীন, সত্যই আমীন।” [. সহীহ বুখারী ( كتاب المغازي : باب قصة اهل نجران ) হাদীস নং ৪১১২; সহীহ মুসিলম ( كتاب فضائل الصحابة : باب فضائل ابو عبيدة بن الجراح ) হাদীস নং ২৪১৯।]

এমতাবস্থায় সাহাবীগণ প্রত্যেকেই আকাঙ্ক্ষা করছিলেন যে, তিনি হবেন ঐ সুসংবাদপ্রাপ্ত ব্যক্তি। তখন রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, قُمْ يَا ابَا عُبَيْدَةَ بنَ الجرَّاحِ ‍ “হে আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ! তুমি দাড়াও” অতঃপর আবু উবায়দা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন দাড়ালেন, তখন রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

هَذَا أمِيْنُ هَذه الأُمَّةِ»»

“এ হচ্ছে এ উম্মতের আমীন (বিশ্বস্ত)।”

ন্যায়পরায়ণতার গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য আরেকটি ঘটনার প্রতি দৃষ্টিপাত করা যেতে পারে, সেটি হচ্ছে, খায়বার বিজয়ের পর খায়বার উপত্যকার ফলাফল মুসলিম ও ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্টন প্রক্রিয়ায় উভয় পক্ষ ঐক্যমত হলো তখন রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একজনকে খায়বার প্রেরণের ইচ্ছা করলেন যিনি যথাযথ উভয়পক্ষের সম্মতি বাস্তবায়ন করবেন। অতঃপর তিনি আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সেখানে প্রেরণ করলেন, যার মধ্যে ন্যায়পরায়ণতা ছিল সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত একটি গুণ। এমনকি কতক ইয়াহূদী যখন তার বণ্টনব্যবস্থায় অহেতুক আপত্তি উত্থাপন করল, তখন তিনি তার ঐ প্রসিদ্ধ উক্তিটি বললেন যে, “হে ইয়াহূদী যুবকরা! আমার দৃষ্টিতে তোমরা হচ্ছ সৃষ্টিকূলের সবচেয়ে ঘৃণিত প্রাণী। কেননা তোমরা আল্লাহর অনেক নবী আলাইহিমুস সালামকে হত্যা করেছ, আল্লাহ তা‘আলার ওপর মিথ্যারোপ করেছ। তারপরও আমার ক্রোধ আমাকে উদ্বুদ্ধ করে না যে, আমি তোমাদের ওপর অবিচার করব”।

প্রিয় পাঠক! এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন যে, একদিকে সেই ইয়াহূদীরা যারা তার ভাষ্যে নিকৃষ্টতম প্রাণী। অপরদিকে রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ। যে রাসূল তাঁর নিকট দুনিয়ায় সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব। এমতাবস্থায়ও তার কাছে যুলুম বৈধতা পায় নি। তিনি রাগান্বিত হয়ে ইয়াহূদীদের ওপর কোনোরূপ অবিচার করেন নি।

মূলত রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ন্যায়পরায়ণতার প্রতি অগাধ গুরুত্বারোপ তো তখন থেকেই সূচনা হয়েছে যখন তিনি বিখ্যাত সাহাবী মা‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান অধ্যুসিত এলাকা ইয়ামানে গভর্ণর হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন,

«إِنَّكَ سَتَأْتِي قَوْمًا أَهْلَ كِتَابٍ فَإِذَا جِئْتَهُمْ فَادْعُهُمْ إِلَى أَنْ يَشْهَدُوا أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ «

“তুমি আহলে কিতাবদের কাছে যাচ্ছ। কাজেই তাদের কাছে যখন পৌঁছবে তখন তাদেরকে এ কথার দিকে দাওয়াত দিবে যে, তারা যেন সাক্ষ্য দিয়ে বলে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয়, তবে তাদের বলবে যে, আল্লাহ তাদের ওপর দিন-রাত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যদি তারা এ কথাও মেনে নেয়, তবে তাদের বলবে যে, আল্লাহ তাদের ওপর সদকা (যাকাত) ফরয করেছেন, যা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে এবং অভাবগ্রস্থদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হবে। তোমার এ কথা যদি তারা মেনে নেয়, তবে (কেবল) তাদের মাল গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে এবং মযলুমের বদ-দো‘আকে ভয় করবে। কেননা, তার (বদ-দো‘আ) এবং আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।” [. সহীহ বুখারী ( كتاب الزكاة : باب أخذ الصدقة من الأغنياء و ترد في الفقراء حيث كانوا ) হাদীস নং ১৪২৫; ( كتاب الجهاد والسير : باب بعث ابي موسى و معاذبن جبل إلى اليمن قبل حجه ) হাদীস নং ৪০৯০; সহীহ মুসিলম ( كتاب الإيمان : باب الدعاء إلى الشهادتين و إلى شرائع الإسلام ) হাদীস নং ১৯।]

এটি মা‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং সাথে সাথে সমগ্র মুসলিম জাতির জন্যও সামষ্টিক অর্থবোধক এমন এক উপদেশ যার কারণে কোনো সম্রাট বা অশুভ শক্তিও তাকে সত্য দর্শন ও নিপীড়িতকে সাহায্য করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। কেননা মযলুম যে কোনো দীনে বিশ্বাসীই হোক মযলুমের দো‘আ এবং আল্লাহ তা‘আলার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না। মযলুমের ফরিয়াদ সরাসরি কবুল হয়।

মযলুমের প্রতি সাধারণ বিবেচনায় এমনটিই ছিল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৃষ্টিভঙ্গি।

প্রিয় পাঠক! বে-দীন কাফির হওয়ার পরও শুধু মযলুম বিবেচনায় একজন মানুষের প্রতি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ধরণের উদার নীতি যদি আপনাকে আশ্চর্যান্বিত করে, তাহলে অন্য এক হাদীসে তাঁর আরো চমকপ্রদ কথাটি শুনুন, আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

» اتَّقُوا دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ وَإِنْ كَانَ كَافِرًا فَإِنَّهُ لَيْسَ دُونَهَا حِجَابٌ «

“তোমরা মযলুমের আর্তনাদকে ভয় কর, যদিও সে কাফির হয়। মযলুমের দো‘আ এবং আল্লাহর মাঝে পর্দা থাকে না।” [. মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১২৫৭১, শু‘আইব আল-আরনাউত এ হাদীসের সনদকে দুর্বল বন্তব্য করেছেন, আল্লামা নাসীরুদ্দীন আলবানী তাঁর আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ গ্রন্থে এ হাদীসিটিকে হাসান বলেছেন। দেখুন: আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ (৭৬৭)]

ইমাম আহমদ রহ. নিজ গ্রন্থে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ مُسْتَجَابَةٌ وَإِنْ كَانَ فَاجِرًا فَفُجُورُهُ عَلَى نَفْسِهِ «

“পাপাচারী হলেও মযলুমের দো‘আ কবুল হয়, আর তার পাপাচারের দায়ভার তো তার ওপরই থেকে যায়।” [. মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ৮৭৮১, শু‘আইব আল-আরনাউত এ হাদীসের সনদকে দুর্বল বন্তব্য করেছেন, আল্লাহা ইবন হাজার তার গ্রন্থ ফতহুল বারীতে এ হাদীনটি হাসান বলেছেন (৩/১৬০), আল্লামা নাসীরুদ্দীন আলবানী এ হাদীসিটিকে হাসান বলেছেন। দেখুন: সহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব (৭২২৯), সহীহ আল-জামি‘ (৩৩৮২)।]

এসবই ছিল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে এ কথার প্রকাশ্য বিবৃতি যে, মযলুম এবং আল্লাহ তা‘আলার মাঝে কোনো পর্দা নেই। কাজেই মযলুমের প্রার্থনা আল্লাহ তা‘আলা সরাসরি কবুল করেন। এজন্যই কোনো সত্যবাদী মুসলিম কখনই যুলুম করতে পারে না। কারণ তার মধ্যে সর্বদা এ অনুভূতিবোধ জাগ্রত থাকে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সব কিছু প্রত্যক্ষ করছেন। মূলত এটি একটি বিশ্বাসগত ব্যাপার, যার কারণে একজন মুসিলম যুলুম করতে পারে না।

এ কথা চিরন্তন সত্য যে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিবসে মযলুমকে সাহায্য করবেন, যদি ব্যপারটা এমনও হয় যে, যালিম মুসলিম আর মাযলুম কাফির। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও যালিমের বিরুদ্ধে মযলুমের পক্ষে অবস্থান নিবেন। এ ক্ষেত্রে তাদের দু পক্ষের ধর্মীয় বিষয় বিবেচিত হবে না।

অতএব, যারা শাশ্বত দীন ইসলামকে আজও চিনতে পারে নি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, দেখ! কতো উদার ও মহৎ আমাদের দীনে ইসলাম, এ তো সেই মহান চরিত্র মাধুর্য্য, যার দ্বারা আমরা সম্মানিত হয়েছি।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন