মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
অমুসলিমদের সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ প্রসঙ্গ
লেখকঃ ড. রাগিব আস-সারজানী
৩২
তিন. সফওয়ান ইবন উমাইয়ার সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সদাচরণ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/400/32
উত্তরসূরী হিসাবে সাফওয়ান ইবন উমাইয়াও ইকরামার চেয়ে কোনো অংশে কম ছিলো না। তার পিতাও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘোরতর শত্রু ছিল। বদর যুদ্ধে সে নিহত হয়েছিল। সাফওয়ান এ ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ পিতা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে নিজের সর্ব শক্তি ব্যয় করতে নেমে পড়েছে। উহুদ যুদ্ধে পেছন থেকে আক্রমনকারীদের মধ্যে খালেদ ইবন ওয়ালীদের সাথে এ সাফওয়ানও ছিলো। সত্তরজন সাহাবী হত্যায় এরই ভুমিকা ছিল অন্যতম। আহযাবের যুদ্ধেও সে অংশ নিয়েছিলো। মক্কার অভ্যন্তরে রণ-প্রস্তুতিতে লিপ্তদের তালিকায়ও ছিলো সে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হত্যা চেষ্টায় সে এক স্বতন্ত্র পরিকল্পনা এঁকেছিলো। তারই চাচাতো ভাই উমায়ের ইবন ওয়াহাব তখনো ইসলাম গ্রহণ করে নি। সে তার সাথে চুক্তি করেছিলো যে, উমায়ের যদি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করতে পারে তাহলে সে উমায়েরের পরিবারের যাবতীয় ভরণ-পোষণ ও তার সকল ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নেবে। তবে পরিকল্পনাটি ভেস্তে যায়। উমায়ের ইবন ওয়াহাব [. উমায়ের ইবন ওয়াহাব আল-জামহী আল-ক্বারশী। বদর যুদ্ধে মুশরিকদের পক্ষাবলম্বী হয়ে অংশগ্রহণ করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলো। তবে পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেন। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতকাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। অধিকতর জানতে- ইবনু আবদিল বার: আল-ইসতি‘আব (৩/২৯৪), ইবনুল আসীর: উসদুল গাবাহ (৩/৭৯৭), ইবন হাজার: আল-ইসাবাহ (৬০৫৮)] মদীনায় পৌঁছলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সাফওয়ান ও তার মাঝে সংঘটিত চুক্তির সব কথা অগ্রীম বলে দিলে তিনি ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়ে যান।
দিন অনেক কেটে গেল। মক্কা বিজয় হয়ে গেল। সফওয়ান পালানোর পথ খুঁজতে লাগল। মক্কায় পালাবার কোনো স্থান খুঁজে পেল না। তার জানা হয়ে গেছে যে, আরব উপদ্বীপের কোথাও কেউ তাকে ঠাঁই দেবে না। ততক্ষণে ইসলাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সে স্থীর করলো, সমুদ্রে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করবে। এ লক্ষ্যে সে ইয়াসার [. আবু ফুকাইহা ইয়াসার। সফওয়ান ইবন উমাইয়ার গোলাম ছিল। ইবন ইসহাক বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মজলিসে বসতেন তখন তার নিকটে নীপিড়ীত সাহাবীরা তথা খাব্বাব, আম্মার ও আবু ফুকাইহা ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহুম-গণ বসতেন। অধিকতর জানতে- ইবনুল আসীর: উসদুল গাবাহ (৫/২৪৯), ইবন হাজার: আল-ইসাবাহ (১০৩৮৪)।] নামীয় তার এক গোলামকে সাথে নিয়ে লোহিত সাগরের দিকে রওয়ানা করলো। গোলাম ছাড়া তার সাথে আর কেউই ছিল না। ঐ সময় সে ছিল মানসিক বিপর্যয়ের চুড়ান্ত পর্যায়ে। হঠাৎ সে পেছনে অনেক দূরে একজন ব্যক্তিকে তাদের অনুসরণ করতে দেখল এবং ইয়াসারকে লক্ষ্য করে বলল, ‘তোমার নাশ হোক, পেছনে দেখ কাকে দেখা যায়?!’ গোলাম ইয়াসার বলল, এ হচ্ছে উমায়ের ইবন ওয়াহাব। সফওয়ান বলল, উমায়ের ইবন ওয়াহাবকে দিয়ে আমার কী হবে...?! আল্লাহর শপথ! সে আমাকে হত্যা করার জন্যই আসছে। সে মুহাম্মাদের দলভুক্ত হয়ে গেছে। আর মুহাম্মাদ এখন আমার উপর বিজয়ী। ইতোমধ্যে উমায়ের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিকটে এসে গেছেন। সাফওয়ান তাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘উমায়ের! তুমি আমার সাথে অনেক করেছ। তোমার ঋণ ও পরিবারের বোঝা আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছ। আর এখন আমাকে হত্যা করতে এসেছ’। উমায়ের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘হে আবুল ওয়াহাব! আমার জীবন তোমার জন্য কুরবান হোক, আমি এখন সবচেয়ে সদাচারী ও সবচেয়ে অধিক সু-সম্পর্ক স্থাপনকারী ব্যক্তির নিকট থেকে এসেছি।
উমায়ের ইবন ওয়াহাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন জানতে পারলেন যে, তার পুরোনো দিনের বন্ধু চাচাতো ভাই সাফওয়ান মক্কা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে তখন তার দয়া হলো। তিনি দ্রুত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার গোত্রপতি সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার জন্য পালিয়ে গেছে। সে আশংকা করছে যে, আপনি তাকে নিরাপত্তা দেবেন না। আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি তাকে নিরাপত্তা দিলাম’। এমনই তাঁর আচরণ ছিল সাফওয়ানের সাথে যেমন ছিল ইকরামার সাথে। এগুলো কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়; বরং এটিই হলো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লাইফ স্টাইল।
উমায়ের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সাফওয়ানকে বললেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। সাফওয়ানের মনে ভয় ঢুকে গেল। সে বলল, আল্লাহর শপথ! তুমি তোমার কথার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ না আনলে আমি তোমার সাথে যাবো না। উমায়ের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তৎক্ষনাৎ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারের দিকে ছুটলেন। লোহিত সাগরের পাড় থেকে মক্কা প্রায় আট কিলোমিটারের পথ তিনি সর্ব শক্তি ব্যয় করে দৌড়ে পাড়ি দিলেন। এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার জন্য পালিয়ে যাওয়া সফওয়ানের নিকট থেকে এসেছি। আমি তাকে আপনার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা প্রদানের সংবাদ দিয়েছি; কিন্তু সে কোনো প্রমাণ ছাড়া আমার সাথে আসবে না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমার এ পাগড়ি নিয়ে যাও তার কাছে!’ উমায়ের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সফওয়ানের কাছে ফিরে এসে পাগড়ি দেখিয়ে তাকে বললেন, হে আবুল ওয়াহাব! আমি এমন ব্যক্তির নিকট থেকে এসেছি যিনি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে সদাচারী, সবচেয়ে ধৈর্যশীল ও সবচেয়ে সু-সম্পর্ক স্থাপনকারী ব্যক্তি। যার গৌরব তোমারই গৌরব। যার সম্মান তোমারই সম্মান। যার রাজত্ব তোমারই রাজত্ব। সে তোমারই আপন (বংশীয়) [. অনুবাদক।] ভাই। আত্মহত্যা করার ব্যাপারে আমি তোমাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। সফওয়ান অত্যন্ত দুর্বল স্বরে বলল, আমার আশংকা হচ্ছে আমাকে হত্যা করে ফেলা হবে। উমায়ের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, না। তিনি তোমাকে ইসলামের প্রতি আহ্বান করেছেন। তুমি গ্রহণ করলে তো ভালো। অন্যথায় তিনি তোমাকে নিরাপত্তার সাথে দুই মাস অবকাশ দিয়েছেন।
প্রিয় পাঠক! রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বদান্যতা দেখুন! সফওয়ান যদি ইসলাম গ্রহণে রাজি হয় তাহলে তো সে মুসলিমদের মতো সব সুযোগ-সুবিধাই ভোগ করবে। আর যদি সে এখনো ইসলাম গ্রহণে অসম্মতি জানায় তাহলে সে পূর্ণ দুই মাস চিন্তা-ভাবনার জন্য অবকাশ পাবে এবং এ দুই মাস সে মুসলিমদের মতোই পরিপূর্ণ নিরাপত্তা পাবে!
সাফওয়ান উমায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে ফিরে এলো। মসজিদে হারাম প্রবেশ করলো। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সাহাবীদের নিয়ে আসরের সালাত আদায় করছিলেন। তারা সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল।
সাফওয়ান: সব সালাতেই কি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইমামতি করেন?
উমায়ের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু: হ্যাঁ।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরিয়ে সালাত থেকে অবসর হলেন তখন সফওয়ান তাঁকে সম্বোধন করে দূর থেকেই চিল্লিয়ে উঠল, হে মুহাম্মাদ! উমায়ের আমাকে আপনার পাগড়ি দেখিয়ে বলেছে, আপনি নাকি আমাকে আসতে বলেছেন এবং আপনার দাওয়াতে সাড়া না দিলে দুই মাস অবকাশ দিয়েছেন?
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহজ সরলভাবে বললেন, এসো হে আবু ওয়াহাব! (দেখুন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিনয়ের সাথে তাকে তার উপনাম দ্বারা ডাকছেন।)
সাফওয়ান ভয়ে ভয়ে বলল, না। আল্লাহর শপথ! আপনি আমাকে স্পষ্ট করে বলুন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বরং তোমাকে চার মাস অবকাশ দিলাম।
বাস্তবেও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চিন্তা-ভাবনার জন্য চার মাস অবকাশ দিয়ে দিলেন! [. পুর্ণ ঘটনাটি ইয়াহইয়া লাইসীর বর্ণনায় মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক রহ. গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে (১১৩৩), মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: যুহরী থেকে (১২৬৪৬)]
কিছুদিন পর হুনাইন যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হলে মুসলিমদের কিছু লৌহবর্ম ও যুদ্ধাস্ত্রের প্রয়োজন হয়। সফওয়ান ছিল মক্কার প্রসিদ্ধ অস্ত্র ব্যবসায়ী। সে সময় সাফওয়ান ইবন উমাইয়া ছাড়া গোটা মক্কাবাসী সবাই মুসলিম। এতো কিছুর পরও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দুর্বলতা ও দুরাবস্থার সুযোগ নিলেন না; বরং তিনি তার নিকট থেকে কিছু অস্ত্র ভাড়া নিলেন।
যুদ্ধের দিন মুসলিমদের সাথে সফওয়ানও তার ভাড়া দেওয়া যুদ্ধাস্ত্রের দেখা-শুনার জন্য বেরিয়েছে। হুনাইন যুদ্ধে প্রথমে মুসলিমদের মনোবল ভেঙ্গে গেলেও চুড়ান্ত পর্যায়ে অসাধারণ ঐশ্বরিক সাহায্য এসেছিল এবং মুসলিমরা এতো বেশি গনীমতের সম্পদ অর্জন করেছে যা আরবের লোকেরা কখনো চোখেও দেখে নি। যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বণ্টনের ব্যাপারে ইতিহাসের কোনো সেনাপ্রধানই যা করেন নি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই করলেন। তিনি সকল সম্পদ মুজাহিদদের মাঝে বেশি বেশি করে ভাগ করে দিয়ে দিলেন। নিজের জন্য কিছুই রাখলেন না। অনেক নও মুসলিমদেরকে মন গলানোর জন্য শত শত উট, বকরী দিয়ে দিলেন, যা তাদের বিবেককেও হয়রান করে দিয়েছে। [. মক্বার কিছু নেতৃস্থানীয় নও মুসলিম। ইমানের দুর্বালতা হেতু তাদের পূর্বা জাতিয়তাবোধ যেন তাদেরকে কাফিরদের পক্ষাবলম্বনের দিকে নিয়ে না যায় সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া ও তাদের মন গলানোর মতো আচরণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করেছেন। আবার যেন এতে তারা নিজেদের অধীনস্তদেরকেও ইসলাম গ্রহণে উদ্ভুদ্ধ করতে পারে। এদের মধ্যে ছিলেন, আকরা‘ ইবন হাবিস আত-তামীমী, আব্বাস ইবন মিরদাস আস-সুলামী, উয়াইনাহ ইবন হিসন আল-ফাযারী ও আবু সুফিয়ান ইবন হারব। সূত্র: আল্লামা ইবন মনযূর: লিসানুল আরব (৯/৯)।] এমনকি অনেক নেতৃস্থানীয় নও মুসলিমরাও সেদিন লজ্জা-শরম সব ভুলে গিয়ে বারবার চাইলেন, বারবার হাত পাতলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সেদিন কারো আবেদনকেই ফিরিয়ে দেন নি, কোনো প্রার্থীকেই বঞ্চিত করেন নি।
সাফওয়ান দূরে দাঁড়িয়ে গনীমতের সম্পদ বণ্টন দেখছে আর আফসোস করছে। সে তো এখনো অমুসলিম, সে তো যুদ্ধাস্ত্রের ভাড়া ছাড়া আর কিছুই পাবে না। কিন্তু এরপরের মুহুর্তে যা ঘটেলো তা সফওয়ান স্বপ্নেও ভাবে নি। উপস্থিতদের মধ্যেও কেউ কল্পনা করতে পারে নি। কিয়ামত পর্যন্ত যারাই শুনবে অবাক হয়ে যাবে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফওয়ানকে ডাকলেন। মক্কার অনেক নেতৃস্থানীয় নও মুসলিমদের মতো সাফওয়ানকেও এক শত উট দিয়ে দিলেন! দানশীলতা ও বদান্যতায় বিশ্ব-রেকর্ড করা ব্যক্তি হলেও কোনো মানব সন্তান দ্বারা কি এ ধরণের আচরণ সম্ভব?
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন যে, সাফওয়ান হুনাইনের উপাত্যকাগুলোর দিকে স্থীর তাকিয়ে রয়েছে যেগুলো উট ও বকরীতে ভর্তি হয়ে আছে। সম্পদের প্রাচুর্য দেখে তার মধ্যে হতভম্ব ও আশ্চার্যান্বিত হওয়ার স্পষ্ট লক্ষণ ফুটে উঠেছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নম্র ও শান্ত স্বরে বললেন, হে আবু ওয়াহাব! তোমার কি এটি (উট ও বকরীতে ভর্তি একটি উপাত্যকার দিকে ইঙ্গিত করে) খুব পছন্দ হয়? সাফওয়ান অতি স্পষ্ট উচ্চারণে বলল, হ্যাঁ। আর স্বীকার করতেই হবে সে দৃশ্য ছিল বাস্তবেই অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ও হৃদয়গ্রাহী। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অবাক করে দিয়ে একেবারে সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন, ‘এ উপাত্যকা এবং এর মাঝে যত সম্পদ আছে সব তোমার’! [. ইবনু সাইয়্যিদিন নাস: উয়ূনুল আসার (২/২৫৩-৪৩৪)।]
বিস্ময় তাকে হতবুদ্ধি করে ফেলল। আজ তার চোখের সামনে সে বাস্তব-সত্য উদ্ভাসিত হয়ে গেছে এতদিন যা সে বুঝতে পারে নি। সে আর কিছুই ভাবতে পারলো না। অকপটেই, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সে বলে উঠল, ‘নবী স্বত্তা ছাড়া এমন আচরণ আর কেউ করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।’
সাফওয়ান ইবন উমাইয়া সেখানেই মুসলিম হয়ে গেলেন। এরপর সফওয়ান ইবন উমাইয়া রাদিয়ল্লাহু ‘আনহু বললেন, আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দিয়েছেন। অনেক অনেক দিয়েছেন। তিনি ছিলেন আমার নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত। আর (নিরাপত্তা, অবকাশ ও অগণিত সম্পদ) [. অনুবাদক।] দিতে দিতে এখন তিনি হলেন আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব। [. সহীহ মুসলিম: ( كتاب الفضائل، باب ما سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم شيئا قط فقال : لاوكثرة عطائه ) হাদীস নং ২৩১৩।]
কতইনা সৌভাগ্য সফওয়ানের...!
কতইনা সৌভাগ্য বনু জুমাহ গোত্রের যাদের অধিপতি মুসলিম হয়ে গেছেন…!
কতইনা সৌভাগ্য মক্কাবাসীর…!
কতইনা সৌভাগ্য মুসলিমদের, যাদের দলে মক্কার প্রসিদ্ধ নেতা সফওয়ান ইবন উমাইয়া যোগদান করে আল্লাহর পথের খাঁটি মুজাহিদ হয়ে গেছেন…! আর এসব কল্যাণ ও সৌভাগ্য অর্জিত হয়েছে উট-বকরীতে পূর্ণ একটি উপত্যকার বিনিময়ে।
এ উট ও বকরীগুলোর মূল্য কতই আর হবে?
এগুলো হয়তো খেয়ে ফেলা হবে কিংবা বয়সকালে মারা যাবে…।
শুধু উট ও বকরী কেন, এ ধ্বংসশীল গোটা পৃথিবীর মূল্যই বা কত!
চিরসুখের এবং মহা-অমূল্য নি‘আমত তো জান্নাতের নি‘আমত। আর এ সামান্য এক উপাত্যকা ভর্তি উট-বকরীর বিনিময়ে সফওয়ান থেকে নিয়ে কতগুলো মানুষ চিরস্থায়ী জান্নাতের অধিকারী হয়ে গেলো!
দুনিয়া ও আখিরাতের তুলনামূলক মান নির্ণয় এবং কিছু গনীমতের মালের বিপরীতে একজন মানুষের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে এটি কি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমুচিত, যৌক্তিক ও অতি উন্নত বিজ্ঞানসম্মত চিন্তা-ধারা নয়। তাৎক্ষনিকভাবে তুলনা করে তিনি যা স্থীর করলেন এটা কি প্রজ্ঞাময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একশ ভাগ সঠিক সিদ্ধান্ত ছিলো না?
গনীমতের মালের বিনিময়ে ইসলাম গ্রহণ..।
দুনিয়ার বিনিময়ে আখিরাত..।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন যে, গনীমতের মাল যত বেশিই হোক না কেন -একজন মানুষের ইসলাম গ্রহণের বিনিময় হিসেবে কিছুই না। শুধু গনীমতের মালই নয়, গোটা বিশ্বটাই তাঁর কাছে তুচ্ছ। তাই তিনি কোনো দ্বিধা-সংকোচ ছাড়াই এতগুলো সম্পদ দিয়ে দিলেন। দুনিয়ার মূল্য তো তাঁর নিকট মাছির ডানা পরিমানও নয়। তাঁর দৃষ্টিতে তো আখিরাতের তুলনায় দুনিয়া হচ্ছে বিশাল সমুদ্রের মাঝে এক ফোটা পানির ন্যায়। দুনিয়াকে তো তিনি ছোট ছোট কান বিশিষ্ট (বিশ্রী) মরা-পঁচা ছাগলছানার চেয়েও নিকৃষ্ট মনে করেন। দুনিয়া সম্পর্কে এসব দর্শন শুধু থিওরিক্যালই নয়; বরং সমসাময়িক সকলেই তাঁর প্রাকটিক্যাল লাইফে এবং সাহাবীদের জীবনেও এর সু-স্পষ্ট বাস্তবায়ন প্রত্যক্ষ করেছেন এবং মুসলিম কিংবা অমুসলিম যারাই তাঁর সাথে উঠা-বসা চলা-ফেরা করেছেন সকলেই তা লক্ষ্য করেছেন।
হুনাইনের গনীমত থেকে তিনি নিজের জন্য কিছুই রাখলেন না!
দু-এক বছরের দারিদ্র্য বিমোচন কিংবা জীবিকা নির্বাহ পরিমাণও না। অথচ তখন তাঁর বয়স ষাটেরও উপরে। তাঁর জন্য কিছুই অবশিষ্ট ছিলো না দেখে উপস্থিত লোকদের বুদ্ধি বিবেচনা লোপ পাওয়ার উপক্রম হলো। তারা কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে গেল। এদিকে গ্রাম্য লোকেরা নিজেদের জন্য কিছু ধন-সম্পদ ও জীব-জন্তু চেয়ে নেওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে ভিড়াভিড়ি ও পীড়াপীড়ি করতে শুরু করল। এক পর্যায়ে তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একটি গাছের সাথে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। অথচ তিনি তখন একজন বিজয়ী সম্রাট ও সেনানায়ক। ভিড়াভিড়ির ফাঁকে তারা তাঁর শরীরের চাদরটিও নিয়ে নিল। তিনি একজন মমতাময়ী নবী ও প্রশিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে অত্যন্ত নম্র ও কোমল স্বরে বললেন,
«أيها الناس ! ردوا علي ردائي، فوالذي نفسي بيده لو كان لكم عندي عدد شجر تهامة نعما لقسمته عليكم، ثم لا تجدوني بخيلا ولا جبانا ولا كذابا»
“হে লোক সকল! তোমরা আমার চাদর আমাকে ফিরিয়ে দাও, ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! আমার নিকট যদি তিহামা [. তিহামাহ হচ্ছে নিম্নভূমি/হিজাযের একটি এলাকার নাম সূত্র: আল-মূজামুল ওয়াফী। (৩৩১)। –অনুবাদক।] অঞ্চলের/এ নিম্ন ভূমির বৃক্ষরাজি পরিমানও উট থাকতো তাহলে আমি তাও তোমাদের মাঝে বণ্টন করে দিতাম এরপরও তোমরা আমাকে কৃপন, কাপুরুষ ও মিথ্যাবাদী হিসেবে দেখবে না।” [. সহীহ বুখারী: ( كتاب الخمس، باب ما كان النبي صلى الله عليه و سلم يعطي المؤلفة قلوبهم ) যুবাইর ইবন মুত‘ইম সূত্রে হাদীস নং ২৯৭৯, ইবন হিব্বান হাদীস নং ৪৮২০, আমর ইবন শু‘আইব থেকে ইয়াহইয়া লাইসীর বর্ণনায় মুআত্তায়ে ইমাম মালেক রহ. হাদীস নং ৯৭৭।]
বাস্তবেও তিনি কোনো কৃপনতা, কাপুরুষতা কিংবা মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করেন নি।
এ সব শত্রুনেতাদের সাথে যা ঘটেছে হুবহু একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে সুহাইল ইবন আমরের ক্ষেত্রেও।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/400/32
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।