hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

অমুসলিমদের সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ প্রসঙ্গ

লেখকঃ ড. রাগিব আস-সারজানী

৩৭
এক. মালেক ইবন ‌‌‘আউফ আন-নাসরী-র সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সদাচরণ।
হাওয়াযিন গোত্রসমূহের দলনেতা মালেক ইবন ‌‌ ‘আউফ আন-নাসরী-র সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণের ঘটনাটি হচ্ছে আমাদের ধারণার চেয়েও আশ্চর্যজনক।

মালেক ইবন ‘আউফ ছিল আরবের সবচেয়ে ভয়ংকর নেতা। সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুকাবেলার জন্য হাওয়াযিন ও সাক্বীফ ইত্যাদি সহযোগী গোত্রসমূহকে নিয়ে একটি শক্তিশালী বাহিনী তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিল যার সদস্য সংখ্যা পঁচিশ হাজারে গিয়ে উপনীত হয়েছে। যাকে সাধারণত তৎকালীন আরবের সবচেয়ে বড় বাহিনী বলা যায়। এ বাহিনীকে সে এমনভাবে উত্তেজিত করে তুলেছে যে, তারা রণাঙ্গন থেকে পালিয়ে আসার পথ রুদ্ধ করার জন্য নিজেদের স্ত্রী-সন্তান, পশু-পাখি ও ধন-সম্পদ সবকিছু নিয়েই যুদ্ধমাঠে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল।

এভাবেই তারা মুসিলম নিধনে নিজেদের সর্বস্ব ত্যাগ করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতো।

মালেক ইবন ‘আউফের লক্ষ্য আগে থেকেই স্থির করা ছিল। আর তা হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের চিরকালের জন্য মূলোৎপাটন করে ফেলা। এ লক্ষ্যে সে সুপরিকল্পিত চকও এঁকেছিল এবং হুনাইন [. হুনাইন হচ্ছে মক্কা ও তায়েফের মাঝখানে একটি উপাত্যকার নাম। মক্কা বিজয়ের পর সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাওয়াযিন গোত্রের সাথে এক যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং বিজয় লাভ করেন। ইতিহাসে যা ‘হুনাইন যুদ্ধ’ নামে প্রসিদ্ধ।] উপাত্যকার নিকটবর্তী একটি স্থানে মুসলিমদের সাথে এক ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে চলছিল। মুসলিমরা মহা বিপর্যয়ে পতিত হয়ে যায় এবং ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংকটের সম্মুখীন হয়ে পড়ে। ইসলামের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো প্রায় নিহত হয়েই গিয়েছিলেন। ইসলাম ও মুসলিমদের ইতিহাসে সেটিই ছিল স্মরণকালের বৃহত্তম মহা সংকট। কিন্তু এ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের শেষের দিকে এসে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের দিকে ফিরে চাইলেন। যুদ্ধের চুড়ান্ত পর্বে সাক্বীফ ও হাওয়াযিনের লোকেরা পালাতে শুরু করলো। মালেক ইবন ‘আউফও পালিয়ে গিয়ে তায়েফের দূর্গগুলোতে সাক্বীফের লোকদের সাথে মিলিত হয়ে আশ্রয় গ্রহণ করল..।

হাওয়াযিন গোত্রসমূহের লোকেরা যখন দেখল তাদের দলপতি মালেক ইবন ‘আউফও পালিয়ে গেছে তখন তারা ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে চিন্তা-ফিকির করতে শুরু করল। ইসলাম গ্রহণের প্রতি তাদের এ আগ্রহের পেছনে গনীমত ও যুদ্ধবন্ধি হিসেবে মুসলিমরা তাদের যেসব ধন-সম্পদ, জীব-জন্তু ও নারীদেরকে আয়ত্ব করেছিল সেগুলোর পুনরুদ্ধার করাই ছিল সবচেয়ে বড় কারণ।

প্রবল প্রতাপশালী গোত্রপ্রধান ও সেনানায়ক মালেক ইবন ‘আউফ খুব একাকিত্ব ও অসহায় বোধ করতে লাগল। সে দেখল যে, তার ধন-সম্পদ, স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজন ও গোত্রের লোকেরা কেউই তার পাশে নেই। উপরন্তু সে আছে এখন অন্য গোত্র তথা বনু সাক্বীফের আশ্রিত হয়ে। যেখানে সে নিজের প্রাণের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কামুক্ত নয়..। একজন সেনাপ্রধান যতটা মানিসক বিপর্যয়ের স্বীকার হতে পারে মালেক ইবন ‘আউফ তার সবটাই অনুভব করছে। তার এহেন নৈরাশ্যজনক দুরাবস্থায় তাকে নিয়ে ভাবার মতো শুধু একজন মানুষই আছেন..! তিনি হলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মালেক ইবন ‘আউফ ও তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তার কওমের লোকেরা জানাল যে, সে পালিয়ে গিয়ে তায়েফের দূর্গগুলোতে সাক্বীফের লোকদের সাথে মিলিত হয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। যেখানে সে নিজের প্রাণের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কামুক্ত নয়।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্বকীয় কমনীয় স্বরে বললেন, “তোমরা মালেক ইবন আউফকে এ মর্মে সংবাদ পাঠাও যে, সে যদি আমার নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করে নেয় তাহলে আমি তার ধন-সম্পদ ও আত্মীয়-স্বজন সবই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং আরো একশত উট দান করবো।” [. তাবারী: তারীখুল উমামি ওয়াল মুলূক (২/১৭৪)]

এ ধরণের ঘোষণার কথা কি আগে কেউ কল্পনা করতে পেরেছে? একজন বিজয়ী সেনানায়কের নিকট পরাজিত শত্রুনেতার সাথে এ ধরণের আচরণ কি কেউ আশা করতে পারে?

পৃথিবীতে আমরা দেখতে পাই যে, সাধারণত বিজয়ী নেতারা পরাজিত শত্রুনেতাদের ওপর আইন প্রয়োগ করে, লাঞ্চিত-অপমানিত করে ও কঠোর শাস্তি প্রদান করেই মজা পায় এবং তৃপ্তি অনুভব করে। বিজয়ী সেনাপ্রধান কর্তৃক পরাজিত শত্রুনেতার প্রতি দয়া করা, সহানুভুতিশীল হওয়া, তার জন্য ত্যাগ শিকার করা ও তাকে অকৃপনভাবে দান-সদকা করার কথা তো জগতের অন্যান্য সেনানায়কদের কল্পনাতেও আসতে পারে না!

মালেক ইবন ‘আউফ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ধরণের মন্তব্যের কথা শুনে বিদ্যমান সংকটের অবসান ও নিজের প্রাণ রক্ষার পথ আবিস্কার করে ফেলল। সে দ্রুত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিয়ে দিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোনো তিরস্কার করলেন না, কোনো প্রকারের কঠোর আচরণ করলেন না, এমনকি তার কোনো কাজের ব্যাখ্যাও জানতে চাইলেন না; বরং তিনি কোনো শর্ত ও মন্তব্য ছাড়াই তার ইসলাম গ্রহণকে মেনে নিলেন। শুধু তাই নয়, আরো উন্নত ও মহৎ আচরণ দেখিয়ে তিনি তাকে হাওয়াযিনের গোত্রপ্রধানের পদ ফিরিয়ে দিলেন এবং মুসলিম সেনাবাহিনীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করলেন। তায়েফ অবরোধ অভিযানে তিনি তাকে দলনেতার দায়িত্ব দিলেন। কতক নেতার অহংকার ও দাম্ভিকতার ফলস্বরূপ যেমন তাদের অতীতের মান-সম্মান ও পদমর্যাদা সব বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে মালেক ইবন আউফের বেলায় তা করা হয় নি; বরং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি সম্ভাব্য সকল প্রকার সম্মান প্রদর্শন করেছেন। তার অতীতের যশ-খ্যাতি, মান-সম্মান ও পদমর্যাদা সবকিছুই বহাল রেখেছেন। এক মুহুর্তেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মালেক ইবন ‘আউফের সকল অতীতকে ভুলে গেলেন। তার সাথে তিনি নিজেদের একজন সম্মানিত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির মতোই আচরণ করলেন। পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টিতে ব্যয় হওয়া তার শক্তি-সামর্থ্য ও যোগ্যতাকে তিনি শান্তি ও প্রগতির পক্ষের শক্তিতে রূপান্তিরত করে দিলেন।

কতইনা সৌভাগ্য মুসিলমদের..!!

কতইনা সৌভাগ্য হাওয়াযিনবাসীর..!!

কতইনা সৌভাগ্য মালেক ইবন ‘আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহুর..!!

এতকিছুর পরও এমন কেউ কি আছেন যারা মুসলিমদের প্রতি এ অভিযোগ করতে পারেন যে, তারা অন্য সম্প্রদায়কে স্বীকৃতি দেয় না বা যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করে না? পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম বা মতাদর্শে কি এমন কিছু পাওয়া যাবে, যা আমাদের মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এহেন মহৎ আদর্শের ধারে কাছেও যেতে পারে?

বাস্তবতা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন