hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

অমুসলিমদের সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ প্রসঙ্গ

লেখকঃ ড. রাগিব আস-সারজানী

২৩
সপ্তম পরিচ্ছেদ: অত্যন্ত বিরাগভাজনদের সাথেও ন্যায়পরায়ণতা
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনন্য ন্যায়পরায়ণতার আরেকটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে, অপরাধ যত মারাত্মকই হোক না কেন তিনি কাউকে শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রেও ইনসাফের সীমা আতিক্রম করতেন না। তাঁর ও মুসলিমদের অধিকার হরণের ব্যাপারে কেউ যত বড় সীমালঙ্ঘনই করুক না কেন।

উবাই ইবন কা‘আব বর্ণনা করেন, “উহুদ যুদ্ধে আনসারদের ৬৪ জন এবং মুহাজিরদের ছয়জন শাহাদাত বরণ করেন। যাদের মধ্যে হামযাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুও ছিলেন। সবকটি লাশেরই অঙ্গ-প্রতঙ্গের বিকৃতি সাধন করে ফেলা হয়। আনসাররা বললেন, ‘যদি কোনো দিন আমাদের হাতে এমন সুযোগ আসে তাহলে আমরাও দেখিয়ে ছাড়বো’।”

যখন মক্কা বিজয় হয়ে গেল আল্লাহ তা‘আলা আয়াত নাযিল করলেন,

﴿وَإِنۡ عَاقَبۡتُمۡ فَعَاقِبُواْبِمِثۡلِ مَاعُوقِبۡتُم بِهِۦۖوَلَئِن صَبَرۡتُمۡ لَهُوَخَيۡرٞ لِّلصَّٰبِرِينَ ١٢٦﴾ [ النحل : ١٢٦ ]

‍“আর যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তবে ঐ পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়। যদি সবর কর, তবে তা সবরকারীদের জন্যে উত্তম।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১২৬]

এক ব্যক্তি বলে উঠলেন, ‘আজকের পরে কোনো কুরাইশ থাকবে না’। উবাই ইবন কা‘আব থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

«كفوا عن القوم إلا أربعة»

‍“(কুরাইশের) চারজন ব্যতীত আর কাউকে হত্যা করবে না।” [. তিরমিযী, হাদীস নং ৩১২৯; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৪৮৭; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ৩৩৬৮; বায়হাকী: শু‘আবুল ঈমান, হাদসি নং ৯৭০৪; নাসায়ী: আস-সুনানুল কুবরা, হাদীস নং ১১২৭৯। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এটি গারীব হাদীস। হাকিম বলেছেন, এটি বিশুদ্ধ সনদের হাদীস। দু’জনের কেউই এর তাখরীজ করেন নি। ইমাম যাহবীও ঐক্যমত পোষণ করেছেন। আলবানী বলেছেন, এটি বিশুদ্ধ সনদের হাদীস।]

উহুদ যুদ্ধের এ কঠিন মুসীবত এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মনে এত মারাত্মক আঘাত প্রাপ্তির পরেও তিনি শুধু আল্লাহর বিধানই বাস্তবায়ন করলেন। কোনো প্রকার বাড়াবাড়ির অনুমতি দিলেন না। ন্যূনতম সীমালঙ্ঘনকেও মেনে নিলেন না।

আর এ আয়াতের অবতরণের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কথিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের দিন আপন চাচা হামযাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিকৃত লাশ দেখে বলেছিলেন, ‘আমরা অবশ্যই তাদের সত্তরটি লাশের বিকৃতি সাধন করে ছাড়বো’। [. মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ৪৮৯৪। ইমাম যাহাবী ‘তালখীস’ গ্রন্থে, আল্লামা হায়সামী ‘মাজমাউয যাওয়ায়েদ’ গ্রন্থে আল্লামা নাসীরুদ্দীন আলবানী ‘আস-সিলসিলাতুয দ্ব’য়ীফাহ’ গ্রন্থের ৫৫০ পৃষ্ঠায় এ হাদীসের বর্ণনাকারী সালেহ ইবন বশীরকে দুর্বল বলেছেন।] ফতহুল বারীতে আল্লামা ইবন হাজার এটিকে দুর্বল বলেছেন। [. ইবন হাজার: ফতহুল বারী (৭/৩৭১)।] এবং পূর্বের যে হাদীসে এ বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে যে, আয়াতটি নাযিল হয়েছে উহুদ যুদ্ধের সময় নয়, মক্কা বিজয়ের দিন; সে হাদীসটিও এ মতের সাথে সাংঘর্ষিক। আর যেমনটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বভাবও এমন ছিল না যে, তিনি আবেগতাড়িত হয়ে এ ধরণের মন্তব্য করতে পারেন। আবার এ মতের হাদীসটিকে যদি সহীহও ধরে নেওয়া হয় তাহলেও বলবো যে, সত্তরটি লাশের বিকৃতি সাধন করার মন্তব্যটি ছিল তাঁর সাময়িক চিন্তা থেকে যা কুরআনের আয়াত নাযিলের পর স্থায়িত্ব পায় নি। কারণ, তিনি ছিলেন পবিত্র কুরআনেরই বাস্তব অনুশীলন ক্ষেত্র। আর তিনি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর যদি তার বিপরীতে এর চেয়ে ভালো কিছু দেখতেন তাহলে প্রথম সিদ্ধান্ত ত্যাগ করতেন এবং যা অধিক সঠিক ও সুন্দর তাই করতেন। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من حلف على يمين، فرأى غيرها خيرا منها،فليأت الذي هوخير،وليكفرعن يمينه»

“যে ব্যক্তি কোনো বিষয়ে কসম খায়, পরে তার বিপরীতটিকে তা থেকে উত্তম মনে করে, সে যেন তা করে ফেলে এবং নিজের কসমের কাফফারা দেয়।” [. সহীহ মুসলিম: ( كتاب الأيمان، باب من حلف يمينا، فرأى غيرها خيرا منها )হাদীস নং ১৬৫০। আবু দাঊদ, হাদীস নং ৩২৭৪। তিরমিযী, হাদীস নং ১৩৫০। নাসায়ী, হাদীস নং ৩৭৮১। ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২১০৮। মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৮৭১৯।]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিস্ময়কর ন্যায়পরায়ণতার আরেকটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে, তিনি যাদেরকে অত্যাধিক অপছন্দ করতেন তাদের প্রতিও কোনো প্রকার আবিচার করা থেকে বিরত থাকতেন। এ ব্যাপারে তিনি কুরআনের এ মৌলিক আয়াতকে লক্ষ্য রাখতেন,

﴿وَلَا يَجۡرِمَنَّكُمۡ شَنَ‍َٔانُ قَوۡمٍ عَلَىٰٓ أَلَّا تَعۡدِلُواْۚ﴾ [ المائ‍دة : ٨ ]

“কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনো ভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করেব না।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৮]

এ আয়াতেরই বাস্তব প্রতিফলন আমরা মুসায়লামা কাযযাবের দূতদ্বয়ের সাথে আলাপকালে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দেখতে পেয়েছি।

দূতদ্বয় স্পষ্ট বলেছে যে, তারা মুসায়লামা কাযযাবকে নবী হিসাবে স্বীকার করে এবং তার মতাদর্শ মেনে চলে। এক কথায় স্বঘোষিত মুরতাদ। যাদের হত্যা করে ফেলার বিধান রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«ولا يحل دم امرئ مسلم يشهد أن لا إلاه إلا الله و أني رسول الله إلا بإحدى ثلاث : الثيب الزاني، والنفس بالنفس، والتارك لدينه المفارق للجماعة»

“যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল তাকে তিন কারণ ব্যতীত হত্যা করা বৈধ নয়।

এক. বিবাহিত যিনাকারী।

দুই. প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ।

তিন. ধর্মত্যাগী দল পরিহারকারী।” [. সহীহ বুখারী: ( كتاب الديات، باب قول الله تعالى " أن النفس بالنفس ) হাদীস নং ৬৪৮৪; সহীহ মুসলিম: ( كتاب القسامة، باب ما يباح به دم المسلم ) হাদীস নং ১৬৭৬ শব্দ মুসলিমের।]

এ হলো ধর্মত্যাগী দল পরিহারকারীর শর‘ঈ বিধান। এ দূতদ্বয় শুধু স্বধর্ম ত্যাগ ও দল পরিহারই করে নি; বরং মানুষের মাঝে ফিতনা সৃষ্টি করে বেড়াচ্ছে এবং মুসায়লামার মতাদর্শের প্রতি অন্যদেরকে দাওয়াতও দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, আরো একধাপ এগিয়ে তারা এসেছে নবুওয়াতকে ভাগাভাগি কিংবা রদবদল করে নেওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দর কষাকষি করতে।

কেউ যদি প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে জীবন যাপন করে এবং ন্যায়পরায়ণতা ও শরী‘আতের বিধানের প্রতি লক্ষ্য না রেখে শুধু নিজ স্বার্থ চিন্তা করে তাহলে এহেন পরিস্থিতিতে এ দূতদ্বয়কে হত্যা করে ফেলা তার জন্য আবশ্যকীয় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরণের অসাধারণ পরিস্থিতিতেও দূতদ্বয়ের প্রাণ রক্ষা করলেন। কারণ, তারা ছিল দূত বা প্রতিনিধি। সে সময় বিশ্বের কোথাও দূত হত্যার প্রচলন ছিল না। ইসলামী শরী‘আতও পৃথিবীর এ প্রথাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বহাল রেখেছে। দূতদ্বয়কে সম্বোধন করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

«أما والله لو لا أن الرسل لا تقتل لضربت أعناقكما»

“জেনে রেখো, আল্লাহর শপথ! যদি দূত হত্যা না করার প্রচলন না থাকতো তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের দু’জনের গর্দান উড়িয়ে দিতাম।” [. সুনান আবু দাঊদ, হাদীস নং ২৭৬১; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ২৬৩২; আহমদ, হাদীস নং ১৬০৩২। আল্লামা নাসীরুদ্দীন আলবানী বলেছেন, এটি হাসান হাদীস। দেখুন: সাহীহুল জামি‘ (১৩৩৯)।]

দেখুন, এ দূত-দয়ের স্ব-ধর্ম ত্যাগ করে কাফির হয়ে যাওয়া এবং তাদের এ ধরণের অসভ্য আচরণ কোনো কিছুই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাদের ওপর অবিচার কিংবা বাড়াবাড়ি করার দিকে নিয়ে যেতে পারে নি; বরং তিনি তাদেরকে নিরাপত্তা দিলেন। তাদের সাথে উন্নত নৈতিকতা প্রদর্শন করলেন। অনেক শত্রু কাফিররা না মানলেও তিনি দূত হত্যা না করার প্রাচীন রীতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা দেখিয়ে সে রীতির ওপর অটল রইলেন। স্বয়ং মুসায়লামা কাযযাব নিজে যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক দূত হাবীব ইবন যায়দ [. হাবীব ইবন যায়দ আল-আনসারী আন-নাজ্জারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইয়ামামায় মুসায়লামা কাযযাবের নিকট পাঠালেন। মুসায়লামা যখন তাকে প্রশ্ন করল যে, তুমি কি এটা বিশ্বাস কর যে, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর প্রশ্ন করল, তুমি কি এটা জান যে, আমি আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, আমি বধির, আমি তোমার কথা শুনি না। এ উত্তর শুনে তাকে শহীদ করে ফেলা হয়। অধিকতর জানতে- ইবন হাজর: আল-ইসাবাহ (১৫৮০), ইবন সা‘দ: আত-তাবাকাতুল কুবরা (১/৩২৮), ইবনুল আসীর: উসদুল গাবাহ (১/৫০৪)।] রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বাগে পেল তখন তাকে মেরে তার লাশ কেটে টুকরা টুকরা করে ফেলেছিল।

বাস্তবতা আর কতো অধিক থেকে অধিকতর স্পষ্ট হওয়ার বাকি আছে..?! ইসলামী বিধি-বিধান ও অন্যান্য রীতি-নীতির বিরাট পার্থক্য সকলেই বুঝুক..! আসমানী আইন ও মানব-রচিত মতাদর্শের মধ্যকার ব্যতিক্রমধর্মী দূরত্ব সবাই অনুধাবন করুক...!!

উপসংহারে আমরা এ গুরত্বপূর্ণ অধ্যায় তথা অমুসলিমদের সাথে ন্যায়পরায়ণতা বিধানে তাঁর কর্মপন্থা সম্পর্কে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনাটির অবতারণা করতে চাই। তা হচ্ছে খায়বার বিজয়ের পর ইয়াহূদী সম্প্রদায় কর্তৃক রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিষ প্রয়োগে হত্যা প্রচেষ্টার ঘটনা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

» لَمَّا فُتِحَتْ خَيْبَرُ أُهْدِيَتْ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَاةٌ فِيهَا سُمٌّ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اجْمَعُوا إِلَيَّ مَنْ كَانَ هَا هُنَا مِنْ يَهُودَ فَجُمِعُوا لَهُ فَقَالَ إِنِّي سَائِلُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَهَلْ أَنْتُمْ صَادِقِيَّ عَنْهُ فَقَالُوا نَعَمْ قَالَ لَهُمْ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَبُوكُمْ قَالُوا فُلَانٌ فَقَالَ كَذَبْتُمْ بَلْ أَبُوكُمْ فُلَانٌ قَالُوا صَدَقْتَ قَالَ فَهَلْ أَنْتُمْ صَادِقِيَّ عَنْ شَيْءٍ إِنْ سَأَلْتُ عَنْهُ فَقَالُوا نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ وَإِنْ كَذَبْنَا عَرَفْتَ كَذِبَنَا كَمَا عَرَفْتَهُ فِي أَبِينَا فَقَالَ لَهُمْ مَنْ أَهْلُ النَّارِ قَالُوا نَكُونُ فِيهَا يَسِيرًا ثُمَّ تَخْلُفُونَا فِيهَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اخْسَئُوا فِيهَا وَاللَّهِ لَا نَخْلُفُكُمْ فأَبَدًا ثُمَّ قَالَ هَلْ أَنْتُمْ صَادِقِيَّ عَنْ شَيْءٍ إِنْ سَأَلْتُكُمْ عَنْهُ فَقَالُوا نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ قَالَ هَلْ جَعَلْتُمْ فِي هَذِهِ الشَّاةِ سُمًّا قَالُوا نَعَمْ قَالَ مَا حَمَلَكُمْ عَلَى ذَلِكَ قَالُوا أَرَدْنَا إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا نَسْتَرِيحُ وَإِنْ كُنْتَ نَبِيًّا لَمْ يَضُرَّكَ . «

“খায়বার যখন বিজয় হয়, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হাদীয়াস্বরূপ একটি (ভুনা) বকরী প্রেরিত হয়। এর মধ্যে ছিল বিষ। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এখানে যত ইয়াহূদী আছে আমার কাছে তাদের জমায়েত কর। তার কাছে সবাইকে জমায়েত করা হলো। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সম্বোধন করে বললেন, আমি তোমাদের নিকট একটি বিষয়ে জানতে চাই, তোমরা কি সে বিষয়ে আমাকে সত্য কথা বলবে? তারা বলল: হ্যাঁ, হে আবুল কাসিম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের পিতা কে? তারা বলল, আমাদের পিতা অমুক। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা মিথ্যা বলেছ; বরং তোমাদের পিতা অমুক। তারা বলল, আপনি সত্য বলেছেন ও সঠিক বলেছেন। এরপর তিনি বললেন, আমি যদি তোমাদের নিকট আর একটি প্রশ্ন করি, তা হলে কি তোমরা সে ব্যাপারে আমাকে সত্য কথা বলবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবুল কাসিম! যদি আমরা মিথ্যা বলি তবে তো আপনি আমাদের মিথ্যা জেনে ফেলবেন, যেমনিভাবে জেনেছেন আমাদের পিতার ব্যাপারে। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, জাহান্নামী কারা? তারা বলল, আমরা সেখানে অল্প দিনের জন্যে থাকবো। তারপর আপনারা আমাদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাই সেখানে লাঞ্চিত হয়ে থাকো। আল্লাহর কসম! আমরা কখনও সেখানে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হবো না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বলেন, আমি যদি তোমাদের কাছে আর একটি বিষয়ে প্রশ্ন করি, তবে কি তোমরা সে ব্যাপারে আমার কাছে সত্য কথা বলবে? তারা বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, তোমরা কি এ বকরীর মধ্যে বিষ মিশ্রিত করেছ? তারা বলল: হ্যাঁ। তিনি বললেন, কিসে তোমাদের এ উদ্বুদ্ধ করেছে? তারা বলল: আমরা চেয়েছি, যদি আপনি (নবুওয়াতের দাবীতে) মিথ্যাবাদী হন, তবে আমরা আপনার থেকে মুক্তি পেয়ে যাব। আর যদি আপনি সত্য নবী হন, তবে এ বিষ আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।” [. সহীহ বুখারী: ( كتاب الطب، باب ما يذكر في سم النبي صلى الله عليه وسلم ) হাদীস নং ২৯৯৮; সুনান আবু দাঊদ, হাদীস নং ৪৫০৮; আহমদ, হাদীস নং ৯৮২৬।]

এখানে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনোরূপ প্রতক্রিয়াশীল আচরণ না করে অত্যন্ত ধীরতার সাথে তাঁর প্রাণনাশের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা ইয়াহূদীদের নিকট থেকে আগে ঘটনাটি যাচাই করলেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রমান সাব্যস্ত করলেন। এমনকি তারা নিজেরাই স্বীকার করল যে, হত্যা প্রচেষ্টায় তারা জড়িত ছিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাও খুজে বের করলেন যে, এসব ইহুদীরা এক ইয়াহূদী মহিলাকে আদেশ করেছে যে, সে যেন একটি ভুনা করা বকরীর মধ্যে বিষ মিশিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিয়ে যায়। পুরুষরা হলো হুকুমের আসামী। আর যে বাস্তবায়ন করেছে সে হলো একজন নারী।

প্রিয় পাঠক! এ ঘটনায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিক্রিয়া জানার আগে এক মূহুর্ত একটু ভাবুন তো এ ধরণের ঘটনা যদি পৃথিবীর অন্য কোনো রাজা-বাদশাহ, নেতা-নেত্রী ও আমীর-উমারাদের বেলায় ঘটতো তাহলে তাদের প্রতিক্রিয়া কী দাড়াত...?! এ ধরণের পরিস্থিতিতে ঘটনার উদ্দোক্তা, পরামর্শদাতা, আদেশদাতা, বাস্তবায়নকারী, অবগত ব্যক্তিসহ এহেন ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত সকলকেই হত্যার আদেশ দেওয়া ছাড়া আর কোনো কিছুই কেউ ভাবতে পারতো না। কখনো কখনো এ ধরণের অপরাধে অপরাধী ব্যক্তির গোটা এলাকা জুড়ে গণ-গ্রেফতার চালিয়ে দেওয়া হয়। কোনো অতিরঞ্জন নয়; এটাই বাস্তবতা!! এবার চলুন, দেখি, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন কী করেছিলেন?! সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুম তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি মহিলাটিকে হত্যা করছেন না কেন?! রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বারণ করলেন। বললেন, ‘এটা তো হত্যা প্রচেষ্টা মাত্র। বাস্তব হত্যা নয়। এর কারণে মহিলাকে হত্যা করা যাবে না’। তিনি মহিলাকে কোনো শাস্তিও দিলেন না। মহিলাকে আদেশ দানকারী ইয়াহূদীদের কাউকেও না। কারণ, তিনি তাদের ব্যাখ্যা মেনে নিয়েছেন। বিষ প্রয়োগের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে তারা বলেছিল যে, আমরা চেয়েছি, যদি আপনি (নবুওয়াতের দাবীতে) মিথ্যাবাদী হন তাহলে আমরা মুক্তি পেলাম। আর যদি সত্য নবী হন তাহলে বিষ আপনার কিছুই করতে পারবে না।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ব্যাখ্যা মেনে নিলেন। অথচ তাদের কেউই তখন মুসলিম ছিল না এবং পরবর্তীতেও ইসলাম গ্রহণ করে নি। এতে বুঝা যায় যে, তারা তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নবুওয়াতের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য নয়; বরং হিংসা বশতঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার জন্যই তা করেছে।

এতকিছুর পরও তাদের কাউকেই কোনো শাস্তি দেওয়া হয় নি...।

তবে হ্যাঁ, বিশর ইবনুল বারা ইবন মা‘রূর [. বিশর ইবনুল বারা ইবন মা‘রূর আল-আনসারী আল-খাযরাজী। আকাবার শপথ, বদর, উহুদ ও খনদকে অংশগ্রহণ করেছেন। সপ্তম হিজরীতে খায়বর বিজয়ের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাওয়া বিষের ক্রিয়ায় শাহাদাত বরণ করেন। অধিকতর জানতে- ইবন হাজর: আল-ইসাবাহ (৬৫৪), ইবনুল আসীর: উসদুল গাবাহ (১/১১৫,১১৬), ইবন আবদিল বার: আল-ইসতি’আব (১/১৫)।] নামীয় এক সাহাবীও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে উক্ত বিষাক্ত বকরীর গোশত খেয়েছেন। পরবর্তীতে সে বিষের প্রভাবেই তিনি মারা যান। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসাসস্বরূপ ঐ মহিলাকে হত্যা করার আদেশ দেন। মহিলা ব্যতীত অন্য কাউকেই হত্যা করা হয় নি। আল্লামা কাজী ‘ইয়ায [. কাজী ‘ইয়ায। আবুল ফযল ‘ইয়ায ইবন মূসা ইবন ‘ইয়ায আল- হাইসাবী আস-সাবতী। (৪৭৬-৫৪৪ হি. মোতাবেক ১০৮৩-১১৪৯ ইং) তার সময়ে তিনি হাদীস, নাহু, ভাষা ও বিভিন্ন শাস্ত্রের ইমাম ছিলেন। প্রথমে নিজ জন্মস্থান সাবতাহ শহরের ও পরে গারতানাহ শহরের বিচারক ছিলেন। মারাকাশে মারা যান। দেখুন- আয-যারাকলী: আল‘লাম (৫/৯৯)।] বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষ প্রয়োগের কথা জানতে পেরে সাথে সাথেই মহিলাকে হত্যা করেন নি। তাঁকে হত্যা করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, না। পরবর্তীতে বিশর ইবনুল বারা যখন সে বিষের ক্রিয়ায়ই মারা গেলেন তখন কিসাস স্বরূপ মহিলাকে হত্যা করা হয়েছে।” [. আল্লামা নববী: শরহে সহীহ মুসলিম (১৪/১৭৯)।]

একটু ভেবে দেখুন তো, পৃথিবীর অতীত কিংবা বর্তমানের কোনো নেতা-নেত্রীদের হত্যা প্রচেষ্টায় তদবীরকারীদের সাথে তাদের আচরণ কীরূপ হয়?! তাদের নিকটতম কোনো সহচরের মৃত্যুতেই বা তাদের প্রতিক্রিয়া কী হয়?!!

গবেষণা দ্বারাই অস্পষ্টতা দূরিভূত হয়..!

তুলনা করলেই পার্থক্য ফুটে ওঠে..!

পৃথিবীর অন্যান্য মানুষের চরিত্রের সাথে নবী চরিত্রের তুলনা করার দুঃসাহস কে দেখাবে..? সাধারণ মানুষের আখলাক এক জিনিষ আর নববী আখলাক তো সম্পূর্ণ অন্য জিনিষ...!!

﴿إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَذِكۡرَىٰ لِأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ﴾ [ الزمر : ٢١ ]

“এতে অবশ্যই উপদেশ রয়েছে বুদ্ধিমানদের জন্য।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ২১]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন