মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
অমুসলিমদের সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ প্রসঙ্গ
লেখকঃ ড. রাগিব আস-সারজানী
৯
প্রথম পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক অমুসলিমদের স্বীকৃতি
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/400/9
এ শাশ্বত মহান দাওয়াতে ইসলামিয়ার প্রাথমিক দিনগুলো থেকেই কুরআন মাজীদ অবতীর্ণ হচ্ছিল এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য পূর্ববর্তী নবীগণের ঘটনাবলী বর্ণনা করা হচ্ছিল। আর কুরআন মাজীদ কোনো মন্তব্য ছাড়া শুধুমাত্র পূর্ববর্তী নবীগণের ঘটনাবলী বর্ণনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং সর্বদা অন্যান্য নবীগণের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব উপস্থাপন করেছে এবং সে ক্ষেত্রে কোনো একজন নবীর ব্যাপারেও ভিন্নতা করে নি।
আর পূর্ববর্তী নবীগণের ব্যাপারে গৃহীত এ পন্থা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কী জীবন থেকে শুরু করে মাদানী জীবনেও অব্যাহত ছিল। এমনকি ইয়াহূদী কিংবা খ্রিস্টানদের সাথে সংঘটিত দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের পরও কুরআন মাজীদ ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের নবী ঈসা ও মূসা আলাইহিমাস সালাম-এর মাহাত্ম্য বর্ণনায় বিরত থাকে নি। যেমন, মূসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে:
“আর মূসা যখন যৌবনে পদার্পণ করল এবং পরিণত বয়স্ক হলো, তখন আমি তাকে বিচারবুদ্ধি ও জ্ঞান দান করলাম। আর এভাবেই আমরা সৎকর্মশীলদের পুরস্কার দিয়ে থাকি।” [সূরা আল-ক্বাসাস, আয়াত: ১৪]
“তিনি বললেন, হে মূসা, আমি আমার রিসালাত ও বাক্যালাপ দ্বারা তোমাকে মানুষের ওপর পছন্দ করে নিয়েছি। সুতরাং যা কিছু আমি তোমাকে প্রদান করলাম তা গ্রহণ কর এবং শোকর আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৪৪]
পবিত্র কুরআনে অনুরূপ উদাহরণ অনেক রয়েছে।
ঈসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারেও পবিত্র কুরআনে অনুরূপ আলোচনা এসেছে। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে:
“তিনি বলেন, আমি তো আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন। আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি ততদিন সালাত ও যাকাত আদায় করতে এবং জননীর অনুগত থাকতে। আর আমাকে তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেন নি। আমার প্রতি সালাম যেদিন আমার জন্ম হয়েছে, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৩০-৩৩]
শুধু তাই নয় পূর্ববর্তী নবীগণের এ শ্রেষ্ঠত্ব এবং সম্মানসূচক আলোচনা মদীনায় ইয়াহূদী-খ্রিস্টান কর্তৃক সৃষ্ট বৈরী পরিস্থিতিতেও চলমান ছিল। যখন মদীনায় ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের সাথে মুসলিমদের দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও বিরোধ চলছিল এবং ইয়াহূদী-খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে অনবরত মিথ্যারোপ করা হচ্ছিল তখনও পূর্ববর্তী নবীগণের গুণাগুণ বিরতিহীনভাবে চলছিল।
মূসা ও ঈসা আলাইহিমাস সালাম -এ দু’জনকে আল্লাহ তা‘আলা প্রবল দৃঢ়চেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর স্মরণ কর (সে সময়ের কথা), যখন আমরা অঙ্গীকার নিয়েছিলাম নবীদের থেকে এবং তোমার থেকে, নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও মারইয়াম পুত্র ঈসা থেকে। আর আমরা তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ০৭]
আমরা যদি হিসাব কষি তাহলে দেখতে পাব যে, উক্ত আয়াতটি সূরা আল-আহযাব-এর অন্তর্ভুক্ত, যা বনু কুরাইযা কর্তৃক মুসলিমদের সাথে কৃত বিশ্বাসঘাতকতা ও মুসলিমদেরকে মদীনা থেকে পুরোপুরি উচ্ছেদের অপচেষ্টার পর অবতীর্ণ হয়েছে। তথাপি আমরা উপলব্ধি করেছি যে, ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের নবী মূসা ও ঈসা আলাইহিমাস সালামের সম্মাননা ও গুণাগুণ তখনও চলছিল। আমাদের আরও অনুভূত হয়েছে যে, মূসা ও ঈসা আলাইহিমাস সালামের স্ব স্ব অনুসারী ও সম্প্রদায়ের বিশ্বাসঘাতকতার পরও কুরআনে তাঁদের (মুসা ও ঈসা আলাইহিমাস সালাম-এর) প্রশংসা বর্ণিত হয়েছে ব্যাপকহারে এবং কুরআনে বর্ণিত সেসব প্রশংসাবলী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় ইনসাফপূর্ণ চরিত্রগুণে নিজ উম্মত ও ইয়াহূদী-খ্রিস্টানদের নিকট পৌঁছেও দিয়েছিলেন।
কুরআনে কারীমে এ মহান নবীদ্বয়ের সম্মাননা ও শ্রেষ্ঠত্বের বিবরণ কোনো দৈবক্রম বা গতানুগতিক ঘটনা ছিল না; বরং যথোপযুক্ত বিবেচনায়ই বারবার বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ‘মুহাম্মাদ’ শব্দটি শুধুমাত্র চারবার এবং ‘আহমাদ’ শব্দটি শুধুমাত্র পাঁচবার উল্লেখ হওয়া সত্বেও আমরা দেখেতে পাই যে, ‘ঈসা’ শব্দটি পচিশ বার, ‘মসীহ’ শব্দটি এগার বারসহ মোট ছত্রিশ বার ঈসা আলাইহিস সালাম-এর নাম উল্লেখ হয়েছে। আর মূসা আলাইহিস সালাম তো সেসব নবীদের তালিকাভুক্ত হয়েছেন পবিত্র কুরআনে যাদের নামোল্লেখ করণের ষোলকলা পূর্ণ করা হয়েছে। যেহেতু মূসা আলাইহিস সালাম-এর নাম একশত চল্লিশ বার উল্লেখ হয়েছে।
বস্তুত পূর্ববর্তী নবীগণের নাম পবিত্র কুরআনে যতবার উল্লেখ হয়েছে তার সংখ্যার দিকে তাকালে এটাই অনুভূত হয় যে, এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানষপটে পূর্ববর্তী নবীগণের জন্য এক বিনম্র শ্রদ্ধা ও সাদর অভ্যর্থনার বীজ বপন করে। অথচ বাস্তবতা হলো আমি যখন পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত নবীগণের নাম গণনার কাজে হাত দিয়েছি, তখন বিস্মিত হয়েছি। কারণ তখন বেশ কিছু চমৎকার সংখ্যাতত্ত্ব বা সূক্ষ্ন নিদর্শন আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে পবিত্র কুরআনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নাম উল্লেখ হয়ে মূসা আলাইহিস সালামের, অতঃপর পর্যায়ক্রমে ইবরাহীম, নূহ ও ঈসা আলাইহিমুস সালামের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের সকলের ওপর সর্বোত্তম শান্তি ও দুরূদ বর্ষিত হোক এবং তারা সকলেই দৃঢ়চেতা রাসূলগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আর এতেও কোনো সন্দেহ নেই যে, ঐ সমস্ত রাসূলগণের মর্যাদা এবং শ্রেষ্ঠত্ব যথোপযুক্ত এবং নির্ধারিত ছিল। কিন্তু যেমনটা আমি পূর্বেই আভাস দিয়েছিলাম যে, পবিত্র কুরআনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম মাত্র পাঁচবার উল্লেখ হয়েছে -এ সংখ্যাতত্ত্বের বিশ্লেষণে আমি দেখতে পাচ্ছি যে, পবিত্র কুরআনে সতের জন নবীর নাম রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে অধিক বার উল্লেখ করা হয়েছে, যার দ্বারা এ কথা নির্দ্বিধায় ও সুস্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, নিশ্চয় ইসলাম সকল নবী ও রাসূলগণকে যথোপযুক্ত সম্মান ও মর্যাদা দেয়।
আর এ সংখ্যাতত্ত্ব এ কথাও দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করে যে, নিশ্চয় এ কুরআন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সংকলন করেন নি।
অনেক বিকৃত মস্তিষ্কধারী পাশ্চাত্যবাদীদের দাবী অনুযায়ী কুরআন যদি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংকলন হতো তাহলে অন্যদের নয়; বরং নিজের পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করাই তাঁর মূল চেষ্টা হতো। বস্তুত এটি সম্পূর্ণ তাদের ভ্রান্ত চিন্তা বৈ কিছুই নয়।
এমতাবস্থায় আমরা সমন্বিত কন্ঠে প্রশ্ন রাখতে চাই যে, ইসলামের ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআনে পূর্ববর্তী নবীগণের এত সম্মান ও নানা প্রেক্ষিতে তাঁদের স্মরণ করার পরও একথা কী করে বলা সম্ভব যে, ইসলাম অন্যদের ব্যাপারে জ্ঞাত নয় ও স্বীকৃতি দেয় না?
এ ভূপৃষ্ঠে এমন কারা আছে যারা আমাদের ব্যাপারে জানে এবং স্বীকার করে, যেমনভাবে আমরা অন্যদের সম্পর্কে জানি ও স্বীকার করি:
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবকূলের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব এবং সমস্ত সৃষ্ট জগতের সর্দার -এ কথায় আমাদের দৃঢ়শ্বিাস থাকার পরও আল-কুরআন আমাদেরকে কোনো পার্থক্যকরণ ছাড়া সকল নবীগণের ওপর ঈমান আনার নির্দেশ প্রদান করে। স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা ঈমানের স্বরূপ বর্ণনায় সে বিষয়গুলোই বলেন যেগুলোতে সহমত প্রদর্শন উম্মতে মুসলিমাহ-এর জন্য আবশ্যক। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তোমরা বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর ওপর এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের ওপর ও যা নাযিল করা হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের সন্তানদের ওপর আর যা প্রদান করা হয়েছে মূসা ও ঈসাকে এবং যা প্রদান করা হয়েছে তাদের রবের পক্ষ হতে নবীগণকে। আমরা তাদের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁরই অনুগত।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৩৬]
রাসূলগণ ও তাদের রিসালাতের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা, আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পাওয়া সকল ধর্মের একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া এবং সকল রাসূলের রিসালাতের কেন্দ্রবিন্দু এক আল্লাহ হওয়ার ওপর ঈমান আনাসহ এ সকল কিছুকেই ইসলাম ব্যাপৃত করে নেয়। উপরোক্ত আয়াতে ইসলামের এ দৃষ্টিভঙ্গিরই বর্ণনা রয়েছে। [. সায়্যিদ কুতুব: যিলালিল কুরআন ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪২৩।]
আল্লামা ইবন কাসীর রহ. উপরোক্ত আয়াতের ব্যাপকার্থবোধক অংশ বিশেষ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّنۡهُمۡ এর মন্তব্যে বলেন, এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে, “আমরা তাঁদের সকলের ওপরেই বিশ্বাস পোষণ করি।” কাজেই এ উম্মতের সকল মুসলিমগণ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত সকল রাসূলগণকে, আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত সকল কিতাবসমূহকেই বিশ্বাস করেন। এসবের কোনোটিকেই তারা অস্বীকার করেন না; বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে যা-ই অবতীর্ণ হয়েছে তাই এ উম্মতের মুমিনরা বিশ্বাস করে এবং যে সকল নবীকে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন সকলকেই মুমিনরা স্বীকার করেন। [. ইবন কাসীর, তাফসীরুল কুরআনুল কারীম: ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০৩।] শুধু তাই নয় বরং নবীগণের মধ্যে যে তারতম্য সৃষ্টি করে তার ব্যাপারে আল-কুরআন অতীব কঠোরতা অবলম্বন করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফুরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি আর কতকের সাথে কুফুরী করি’ এবং তারা এর মাঝামাঝি একটি পথ গ্রহণ করতে চায়, তারাই প্রকৃত কাফির এবং আমরা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছি অপমানকর ‘আযাব।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৫০-১৫১]
পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলগণের ব্যাপারে কথা বলার সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এহেন মৌলিক বিষয়টি চিন্তায় রেখেই কথা বলতেন। আমাদেরকেও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমরা নবীগণের মধ্যে একজনকে অন্যের ওপর প্রাধান্য না দেই। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا تُخَيِّرُوْا بَيْنَ الْأَنْبِيَاءِ»
“তোমরা নবীগণের একজনকে অন্যের ওপর প্রধান্য দিও না (তারতম্য করো না)।” [. সহীহ সহীহ বুখারী: ( كتاب الخصومات : باب ما يذكر في الأشخاص والملازمة والخصومة بين المسلم واليهوديّ ) হাদীস নং ২২৮১; সহীহ মুসলিম ( كتاب الفضائل : باب من فضائل موسى عليه السلام ) হাদীস নং ২৩৭৪।]
বিশেষত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকে অপরাপর নবীগণের ওপর অগ্রাধিকার দিতে নিষেধ করেছেন। অন্য এক বর্ণনায় আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا تُخَيِّرُوْنِيْ مِنْ بَيْنِ الْأَنْبِيَاءِ»
“তোমরা আমাকে অপরাপর নবীগণের ওপর প্রধান্য দিও না।” [. সহীহ বুখারী ( كتاب الديات : باب اذا لطم يهوديا عند الغضب ) হাদীস নং ৬৫১৯।]
এছাড়াও নবীদের মধ্যে একজনকে অন্যের ওপর প্রধান্য দেওয়ার বিষয় নিয়ে যখন এক মুসলিম ও ইয়াহূদীর মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হলো তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীর পক্ষপাত গ্রহণ করে রাগান্বিত হলেন।
“একবার এক ইয়াহূদী তার কিছু দ্রব্য সামগ্রী বিক্রির জন্য পেশ করছিল, তার বিনিময়ে তাঁকে এমন কিছু দেওয়া হলো যা সে পছন্দ করল না। তখন সে বললো, না! সেই সত্তার কসম, যিনি মূসা আলাইহিস সালামকে মানব জাতির ওপর মর্যাদা দান করেছেন। এ কথাটি একজন আনসারী (মুসলিম) শুনলেন, তুমি বলছো, সেই সত্তার কসম! যিনি মূসাকে মানব জাতির ওপর মর্যাদা দান করেছেন অথচ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে বিদ্যমান। তখন সে ইয়াহূদী লোকটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর নিকট গেল এবং বলল, হে আবুল কাসিম। নিশ্চয় আমার জন্য নিরাপত্তা এবং আহাদ রয়েছে অর্থাৎ আমি একজন যিম্মি। অতএব, অমুক ব্যাক্তির কী হলো, কী কারণে সে আমার মুখে চড় মারলো? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, কেন তুমি তার মুখে চড় মারলে? আনসারী ব্যাক্তি ঘটনাটি বর্ণনা করলো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হলেন। এমনকি তার চেহারায় সেটা প্রকাশ পেল। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহর নবীগণের মধ্যে কাউকে কারো ওপর (অন্যকে হেয় করে) মর্যাদা দান করো না। কেননা কিয়ামতের দিন যখন শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন আল্লাহ যাকে চাইবেন সে ব্যতীত আসমান ও জমিনের বাকী সবাই বেহুশ হয়ে যাবে। তারপর দ্বিতীয়বার তাতে ফুঁক দেওয়া হবে। তখন সর্বপ্রথম আমাকেই উঠানো হবে। তখনই আমি দেখতে পাব মূসা আলাইহিস সালাম ‘আরশ ধরে রয়েছেন। আমি জানি না, তূর পর্বতের ঘটনার দিন তিনি যে বেহুশ হয়েছিলেন এটা কি তারই বিনিময়, না আমারই আগে তাঁকে উঠানো হয়েছে? আর আমি এ কথাও বলি না যে, কোনো ব্যাক্তি ইউনুস ইবন মাত্তার চেয়ে অধিক মর্যাদাবান।” [সহীহ বুখারী ( كتاب الأنبياء : باب قوله تعالى و يونس لمن المرسلين ) হাদীস নং ৩২৩৩; তিরমিযী, হাদীস নং ৩২৪৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪২৭৪।]
রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের বাস্তবিক ঘটনাবলি উল্লেখ করা থেকে কখনই বিরত থাকতেন না। বিশেষ করে ঐ সকল ক্ষেত্রে যেখানে ইয়াহূদী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় নববী ভাই মূসা ইবন ইমরানের নামোল্লেখসহ তাঁর যথাযোগ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হাদীসে বর্ণিত বিরোধের ঘটনাকে সমূলে সমাহিত করেছেন।
রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকে এবং পূর্ববর্তী সকল নবীগণকে একই ধারাবাহিকতায় বৃত্তায়ণ ও একই ভবনের অনেকগুলো ইটতুল্য মূল্যায়ণ করতেন। পরস্পরে দ্বন্দ্ব-সংঘাত প্রতিযোগিতা কিংবা বিরোধের তো কোনো সুযোগই ছিল না। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“আমার দৃষ্টান্ত এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের ন্যায়, যে একটি আট্টালিকা তৈরি করল এবং তা উত্তম ও সুন্দর করল। তবে তার কোণগুলোর কোনো এক কোণায় একটি ইটের জায়গা ছাড়া। লোকেরা তার চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল আর তা দেখে বিস্মিত হতে লাগল এবং পরস্পর বলতে লাগল, ঐ ইটখানি স্থাপন করা হলো না কেন? (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি-ই সে ইট আর আমি নবীগণের মোহর ও শেষ নবী।” [সহীহ বুখারী, ( كتاب المناقب : باب خاتم النبيين ) হাদীস নং ৩৩৪২; সহীহ মুসলিম ( كتاب الفضائل : باب ذكر كونه صلعم تم النبيين ) হাদীস নং ২২৮৬।]
ইতিহাসে দীর্ঘ পরিক্রমার পথ চলায় পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলগণের ব্যাপারে এটাই ছিল আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। আম্বিয়ায়ে কেরামের সম্পর্ক; সেতো একটি বৃহদায়তন বিশাল ভবনের ইটসমূহের মতো। আর ইটের উপমা দ্বারা মুখোমুখি সংঘর্ষ বা অবস্থান উদ্দেশ্য নয়; বরং একটি ভবন যেমন অনেকগুলো ইটের দ্বারা পূর্ণতা পায় এবং একটি ইট অন্যটির সহযোগিতায় উপরে উঠে, ঠিক তেমনি আম্বিয়ায়ে কেরামও এক মহান দায়িত্ব পালনে যুগে যুগে একে অপরকে সহযোগিতা করে গেছেন, একজন আরেকজনকে পূর্ণতা অর্জনে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছেন। আর সেই মহান দায়িত্বটি হলো মহান রবের একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা।
অতএব, এ তাওহীদ প্রতিষ্ঠার পথে যারা আমাদের পূর্ববর্তী হয়েছেন তাদেরকে আমরা সম্পূর্ণরূপে চিনি ও জানি এবং আমরা যখন এ কথা বলি যে, ‘আমরা পূর্ববর্তী নবীগণকে তাদের অনুসারীদের থেকে বেশী ভালোবাসি এবং তাদের সম্প্রদায় থেকে বেশী মর্যাদা দিই’ তখনো আমরা অতিরঞ্জিত করি না। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাদীসের মধ্যেই এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। যেমন, একজন ইয়াহূদীকে আশুরার দিনে সাওম পালন করতে দেখে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিজ্ঞাসা, জবাব ও তার প্রতি উত্তর। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করে দেখতে পান যে, ইয়াহূদীরা আশুরার দিনে সাওম পালন করে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার? (তোমরা এ দিনে সাওম পালন কর কেন?) তারা উত্তর দিল, এ অতি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ বনী ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর কবল হতে মুক্তি দান করেন, ফলে এ দিনে মূসা আলাইহিস সালাম সাওম পালন করেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের অপেক্ষা মূসার অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এ দিনে সাওম পালন করেন এবং সাওম পালনের নির্দেশ দেন।” [সহীহ বুখারী, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত ( كتاب الصوم : باب صيام عاشوراء ) হাদীস নং ১৯০০; সহীহ মুসলিম ( كتاب الصيام : باب صوم يوم عاشوراء ) হাদীস নং ১১৩০।]
এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে নিজেকে বনী ইসরাঈলদের থেকেও বেশি হকদার মনে করছেন। কেননা বনী ইসরাঈলের ফির‘আউন থেকে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি তাকে এত আনন্দিত করেছে যে, এ নি‘আমতের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে তিনি নিজে ঐ দিন সাওম পালন করেছেন এবং তার উম্মতকেও সাওম পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এতগুলো বিষয় ও ঘটনাবলী কি মূসা আলাইহিস সালাম এবং বনী ইসরাঈল সম্প্রদায় সম্পর্কে আমাদের অবগতি এবং তাদেরকে আমাদের স্বীকৃতি দান বলে গণ্য হবে না?
ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কেও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“ইহ ও পরজগতে আমি ঈসা আলাইহিস সালাম-এর সবচেয়ে নিকটবর্তী। লোকেরা বলল, কীভাবে হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন, নবীগণ একই পিতার সন্তানের মতো [ভিন্ন ভিন্ন মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া একই পিতার সন্তান।]। তাদের মা বিভিন্ন। তাঁদের দীন একটিই।” [সহীহ বুখারী, ( كتاب الأنبياء : باب واذكر فى الكتب مريم .... مانا شرقياًّ ) হাদীস নং ৩২৫৯; সহীহ মুসলিম ( كتاب الفضائل : باب فضل عيسى عليه السلام ) হাদীস নং ২৩৬৫।]
এ সাবলীল উদার বক্তব্যটি কি ঈসা আলাইহিস সালাম এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায় সম্পর্কে আমাদের অবগতি এবং তাদেরকে আমাদের স্বীকৃতি দান বলে গণ্য হবে না?
আমরা আরো দেখতে পাই যে, যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পর ইসলামের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও মহান দুই ব্যক্তিত্ব আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের ইচ্ছা করলেন, তখন তিনি তাদের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বকে পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলদের সাথে দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। নিশ্চয়ই এ সাদৃশ্য বা সামঞ্জস্য সাধন নবী ও রাসূলদের প্রতি ভক্তি ভালোবাসা ও সম্মানের চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ এবং প্রশংসার দাবীদার। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«وإن مثلك يا أبا بكر كمثل إبراهيم عليه السلام»
“হে আবু বকর, নিশ্চয় তোমার উপমা হচ্ছে ইবরাহীম আলাহিস সালামের মতো।” যে ইবরাহীম বলেন,
“যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারা আপনারই বান্দা, আর তাদেরকে যদি ক্ষমা করেন তবে নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ১১৮]
উক্ত দু’টি আয়াতে ইবরাহীম ও ঈসা আলাইহিমাস সালামের যে রকম বিনম্র চিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকেও সেই বিশেষ গুণে বিশেষায়িত করা হয়েছে।
উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«وان مثلك ياعمر كمثل نوح عليه السلام»
“হে উমার, নিশ্চয় তোমার উপমা হচ্ছে নূহ আলাইহিস সালামের মতো।” যেই নূহ বলেন,
এমনকি কোনো নবী থেকে প্রকাশিত কোনো কাজের ভিন্নরূপ যদি কোথাও তিনি আশা করতেন তাহলে প্রথমে সেই নবীর জন্য আল্লাহ তা‘আলার দরবারে দো‘আ-প্রার্থনার দ্বারা স্বীয় বাসনা প্রকাশ করতেন। যেমন, মূসা ও খিদিরের সফরে যখন তিনি মূসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে আফসোস করলেন যে, যদি তিনি ধৈর্য ধারণ করতেন… সে ক্ষেত্রে তিনি বললেন,
“আল্লাহ তা‘আলা মূসার ওপর রহম করুন। আমাদের কতই না মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হতো যদি তিনি সবর করতেন, তাহলে আমাদের কাছে তাদের আরো ঘটনাবলী বর্ণনা করা হতো।” [সহীহ বুখারী ( كتاب العلم : باب ما يستحب للعالم إذا سئل أي الناس أعلم فيكل العلم إلى الله ) হাদীস নং ১২২; সহীহ মুসলিম ( كتاب الفضائل : باب من فضائل خضر ) হাদীস নং ২৩৮০।]
অনুরূপভাবে লূত আলাইহিস সালামের ব্যাপারে কুরআনে বর্ণিত ঘটনা:
“লূত আলাইহিস সালামকে আল্লাহ রহম করুন, তিনি শক্ত-কঠিন স্তম্ভের [এখানে স্তম্ভ বলে বংশীয় দিক থেকে শক্তিশালী হওয়া বুঝিয়েছেন। [সম্পাদক]] আশ্রয় চাইতেন।” [সহীহ বুখারী, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ( كتاب الانبياء : باب قوله تعالى ونبئهم عن ضيف إبراهيم ) হাদীস নং ৩১৯৩, সহীহ মুসলিম ( كتاب الفضائل : باب من فضائل إبراهيم الخليل ) হাদীস নং ১৫১।]
এছাড়াও বিভিন্ন সুনানে নববীয়্যাহ গ্রন্থসমূহ পাঠ করলে আমরা দেখতে পাই যে, পূর্ববর্তী নবীগণ তাদের অনুসারীদের মধ্যে যারা ধার্মিকতায় যথেষ্ট অগ্রগামী হয়েছে ও দীনের পথে অটল থেকেছে, তাদের ব্যাপারে যতটুকু গুণাগুণ বা প্রশংসা করেছেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐসব ব্যক্তিদের প্রশংসায় তাদের নবীদেরকে অতিক্রম করে গেছেন। যেমন, পবিত্র করআনের সূরা বুরূজে বর্ণিত ‘আসহাবে উখদূদ’ [সুহাইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ইমাম মুসলিম রহ. আসহাবে উখদুদের হাদীটি বর্ণনা করেছেন। ( كتاب الزهد والرقائق : باب قصة أصحاب الأخدود والساحر والراهب والغلام ) হাদীস নং ৩০০৫; আহমদ হাদীস নং ২৩৯৭৬।]-এর ঘটনা বর্ণনার সময় খ্রিস্টান ধর্মসাধকের প্রশংসা, আল্লাহর নি‘আমতের শুকরিয়া আদায়কারী বনী ইসরাঈলের “অন্ধ আবেদ” [অন্ধ, কুষ্ঠরোগী ও বধীর-এর ঘটনা, যা ইমাম সহীহ বুখারী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন ( كتاب الانبياء : باب ما ذكر عن بني إسرائيل ) হাদসি নং ২৩৭৭, ইমাম মুসলিম ( كتاب الزهد والرقائق ) হাদীস নং ২৯৬৪।]-এর প্রশংসা, বনী ইসরাঈলে আবেদ জুরাইয এবং শিশু বাচ্চার দোলনায় কথা বলার ঘটনা, যা সাহাবীগণের জন্যে তিনি উল্লেখ করতেন সেই জুরাইয [বনী ইসরাঈলের জুরাইজ নামীয় আবেদ ও শিশু বাচ্চার দোলনায় কথা বলার ঘটনা, যা ইমাম সহীহ বুখারী আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন ( كتاب أبواب العمل في الصلاة : باب إذا دعت الأم ولدها في الصلاة ) হাদীস নং ১১৪৪; ইমাম মুসলিম ( كتاب البر والصلة والأداب : باب تقديم بر الوالدين على التطوع بالصلاة ) হাদীস নং ২৫৫০।] নামীয় আবেদ এর প্রশংসা। অনুরূপ ঘটনার বিবরণ বিভিন্ন সুনানে নববীয়্যাহ গ্রন্থমালায় এত বেশি বর্ণিত হয়েছে যে, এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে এগুলোর পরিসংখ্যান আনয়ন খুবই কঠিন।
এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ববর্তী দীনসমূহের আবেদগণকে হিদায়াতের পথে আদর্শ এবং আলোকবর্তিকা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য সাহাবায়ে কেরামের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
প্রিয় পাঠক! আগত হাদীসের বিষয়বস্তুর দিকে একটু দৃষ্টিপাত করুন, দেখুন অন্য দীনের অনুসরণের কিরূপ উপমা উপস্থাপিত হয়েছে। খাব্বাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কোনো বিষয়ে অভিযোগ করলাম। তখন তিনি কা‘বা ঘরের ছায়ায় তাঁর চাদরকে বালিশ বানিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা বললাম, (আমাদের জন্য কি) সাহায্য কামনা করবেন না? আমাদের জন্য কি দো‘আ করবেন না? তিনি বললেন, তোমাদের পূর্বেকার লোকদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও ছিল যাকে ধরে নিয়ে তার জন্য জমিনে গর্ত করত। তারপর করাত এনে মাথায় আঘাত হেনে দুই টুকরা করে ফেলা হতো। লোহার শলাকা দিয়ে তার গোশত ও হাড্ডি খসানো হত। এতদসত্ত্বেও তাকে তার দীন থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারত না। আল্লাহর কসম! এ দীন অবশ্যই পূর্ণতা লাভ করবে। এমন হবে যে, সান‘আ থেকে হাযরামাউত পর্যন্ত ভ্রমণকারী ভ্রমণ করবে অথচ সে আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করবে না এবং নিজের মেষপালের জন্য শুধু বাঘের ভয় থাকবে; কিন্তু তোমরা তো তাড়াহুড়া করছ।” [সহীহ বুখারী ( كتاب الإكراه : باب من اختار لبضرب والقتل والهوان على الكفر ) হাদীস নং ৬৫৪৪, আহমদ, হাদীস নং ২১১০৬।]
অগ্রজ আম্বিয়ায়ে কেরাম ও তাদের অনুসারীবৃন্দের প্রতি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চিন্তা-চেতনা এমনই সম্মানসূচক ছিল এবং এ চেতনা তিনি স্বীয় জীবনাচারের প্রতিটি ধাপে অটুট রেখেছেন।
শুধু তাই নয় বরং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রথমবার যখন অহী নাযিল হলো এবং তিনি বুঝতে পারছিলেন না যে, এটা কী? তখন তিনি খ্রিস্টান পাদ্রী ওয়ারাকা ইবন নাওফল [. ওয়ারাকা ইবন নাওফল ইবন আব্দুল আসাদ ইবন আব্দুল-উযযা ইবন কুসাই। জাহেলী যুগেও তিনি নাসরানী ধর্ম পালন করতেন। অতঃপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর হেরা গুহায় অহী নাযিল হলো তখন তখন খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে নিজ চাচাত ভাই ওয়ারাকার কাছে গেলেন। ওয়ারাকা সব শুনে বললেন, এ তো ঐ (নামুস) অহী যা মূসা আলাইহিস সালামের ওপর নাযিল হয়েছিল। অধিকতর জানতে পড়ুন: আল্লামা ইবনুল আসীরের উসদুল গাবাহ ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠ ৪৬৩-৪৬৫ এবং আল্লামা ইবন হাজার আসকালানীর আল-ইসাবাহ ৬ষ্ট খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬০৭।]-এর কাছে গেলেন এবং তার কাছে এ ঘটনাবলী [. সহীহ বুখারী ( كتاب بدء الوحي : باب كيف كان بدء الوحي إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم ) সহীহ মুসলিম ( كتاب الإيمان : باب بدء الوحي إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم ) হাদীস নং ১৬০।] বললেন। সব শুনে ওয়ারাকা ঘোষণা করল যে, সে যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঐ দিনগুলোতে (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর স্বগোত্রীয়দের থেকে আগত বিতাড়ন ও বিপদাপদ) জীবিত থাকে (কারণ ওয়ারাকা খুব বৃদ্ধ ছিল) তাহলে সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রকাশ্য সাহায্য করবে; কিন্তু তা সম্ভব হয় নি। কারণ দ্বিতীয়বার অহী শুরু হওয়ার আগেই ওয়ারাকা দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছেন, তথাপি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ভুলেন নি; বরং তার ঈমানের প্রশংসা করেছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন যে, ওয়ারাকা জান্নাতবাসীদের একজন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا تَسُبُّوا وَرَقَة؛ فَأَنِّيْ رَأيتُ له جَنَّة أوْ جَنّتَيْنِ»
“তোমরা ওয়ারাকাকে গালি দিও না। কেননা আমি তার জন্য এক জান্নাত কিংবা দু জান্নাত দেখেছি।” [. মুসতাদরাকে হাকিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে, হাদীস নং ৪২১১ এবং হাকিম বলেন যে, এ হাদীসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিমের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ কিন্তু তারা এটি তাখরীজ করেন নি। ইমাম যাহাবীও (রহ.) তালখীস গ্রন্থে এ কথা বলেছেন। নাসীরুদ্দীন আলবানীও এটিকে সহীহ বলেছেন। অধিকতর জানতে দেখুন: সহীহ আল-জামিউ হাদীস নং ৭৩২০।]
ভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ ধরণের অনূভূতি অসংখ্য রয়েছে। এ অনূভূতিগুলো বিরোধীদের সাথে আপস বা সংবেদনশীলতা নয়; বরং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ পদক্ষেপগুলো সম্পূর্ণ ইতিবাচক মানসিকতায় ছিল এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাও জানতেন যে, কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে ইয়াহূদী-খ্রিস্টানদের অস্তিত্ব থাকবেই। এটি অনস্বীকার্য বাস্তবতা। এজন্য তিনি বিভিন্ন হাদীসে সে দিকে ইঙ্গিতও করেছেন [. যেমন দেখুন: সহীহ বুখারী হাদীস নং ২৭৬৮, ২১০৯; সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২৯৪৪, ১৫৫।]। আর যাদের বিদ্যমানতা অনস্বীকার্য তাদেরকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের সাথে সহাবস্থানকে মেনে নেওয়াই স্বাভাবিক এবং তাদের সাথে চলা-ফেরা, লেন-দেন ও আচার-আচরণের নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পথ খুঁজে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এজন্যই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক অমুসলিমদেরকে স্বীকার করে নেওয়া কিংবা তাদের কারো প্রশংসা করা শুধুমাত্র খামখেয়ালি চিন্তাধারা বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্য নয়, যা ইসলাম ও মুসলিমদের বাস্তবিক জীবনেতিহাসের প্রতি লক্ষ্য করলে আপনি দেখতে পাবেন; বরং ইসলামী জীবন-বিধানে এ সকল চিন্তাধারা ও বক্তব্যের পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটেছে। ফলে তা বহু ইতিবাচক ফলাফল বয়ে এনেছে। একই সমাজে ভিন্ন মতাবলম্বী অনেকগুলো সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে স্বীকার করা ও তাদের সাথে সদাচরণের এ ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিটি অনেক ফলপ্রসু ও কার্যকরী। যা পারস্পরিক সহাবস্থানকে সহজ, স্বাভাবিক ও নিরাপদ করে তোলে।
আর এজন্যই মদীনায় আগমন করেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানকার ইয়াহূদীদের সাথে সহাবস্থানকে স্বতস্ফূর্তভাবে মেনে নিলেন এবং তাদের সাথে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে আবদ্ধ হলেন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময় এসকল চুক্তিকে অটুট রাখতে চাইতেন। যত বিশ্বাসঘাতকতা বা চুক্তিভঙ্গের অঘটন ঘটেছিল সব ইয়াহূদীদের পক্ষ থেকেই হয়েছে। যতক্ষণ প্রতিপক্ষ থেকে কোনো অন্যায় বা সীমালঙ্ঘন প্রকাশ পায় নি ততক্ষণ তিনি মজবুতভাবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রেখেছেন। বরং মদীনাতে স্থায়ী শান্তি বিরাজমান রাখার স্বার্থে অনেক সময় তিনি প্রতিপক্ষের অনেক অন্যায় বাড়াবাড়িকেও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি এ আচরণ-বিধির প্রতি লক্ষ্য রেখেছেন। এমনকি তাঁর কিছু কিছু কাজে অনেকেই হয়রান হয়ে যেত। যেমন, তিনি নিজের লৌহবর্ম বন্দক রেখে বাকীতে কিছু খাবার ক্রয় করেছেন এক ইয়াহূদীর নিকট থেকে!! [. সহীহ বুখারী, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, ( كتاب الرهن، باب من رهن درعه ) হাদীস নং ২৩৭৪; সহীহ মুসলিম ( كتاب المساقاة، باب الرهن وجوازه في الحضر والسفر ) হাদীস নং ১৬০৩।] আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, মদীনাতে সাহাবীদের মধ্যে অনেকেই ধনী ছিলেন। যাদের নিকট রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে প্রিয় কেউ ছিল না। হতে পারতো যে, তাদের কাউকে জানালে তারা হাদিয়া ইত্যাদির মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রয়োজন পূর্ণ করে দিত কিংবা কমপক্ষে এটাতো হতে পারতো যে, তিনি কোনো ধনী সাহাবীর নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করতেন এবং সে সাহাবীর নিকটই লৌহবর্ম বন্ধক রাখতেন। কিন্তু পরিস্থিতি থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, তিনি মুসলিমদের জন্য এ ধরণের কাজের বৈধতা দেওয়ার জন্য এমন করেছেন এবং এতে তিনি এ দিকেও ইঙ্গিত করেছেন যে, প্রতিবেশী অমুসলিমগণ যদি মুসলিমদের কোনো প্রকার সম্মানহানি না করে তাহলে তাদের সাথে এ ধরণের সম্পর্ক স্থাপন করা স্বাভাবিক। সেটি লৌহবর্ম বন্ধক রাখা পর্যায় পর্যন্ত গড়ালেও। লৌহবর্ম অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি যুদ্ধ-সরঞ্জাম। এরপরও প্রতিবেশী ইয়াহূদীর প্রতি পূর্ণ নির্ভরতা ও আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ করার জন্যই তিনি তার নিকট সেটি বন্ধক রেখেছেন।
ইয়াহূদীদের মতো খৃস্টানদের সাথেও তিনি একই ধরণের আচরণ করতেন, তাদের সাথেও একাধিকবার অনেকগুলো চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন এবং তাদেরকে সামাজিক স্বীকৃতিও দিয়েছেন। অথচ ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক তাদের এমন কিছু সুক্ষ্ম আক্বীদা-বিশ্বাস রয়েছে যা স্পষ্টত শির্ক। তথাপিও তাদের শির্কের প্রতি ধাবমানতা দেখেও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ সৃষ্টি করলেন না । আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বলেন:
“তবে কি তুমি মানুষকে বাধ্য করবে, যাতে তারা মুমিন হয়?” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৯৯]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দায়িত্ব ছিল শুধুমাত্র উত্তম পন্থায় দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া এবং যথাযথ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ খুলে খুলে বর্ণনা করে দেওয়া। অতঃপর প্রতিটি মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা সত্যকে গ্রহণ করা কিংবা না করার পূর্ণ স্বাধীনতা দান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“অতএব, যার ইচছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ২৯]
এখান থেকেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা মেনে নিয়েছেন যে, ইয়াহূদীদের অনেকে ইয়াহুদিয়্যাতের ওপর এবং খৃস্টানদের অনেকে নাসরানিয়্যাতের ওপর থেকে যাবেই এবং তিনি এটাও গ্রহণ করে নিয়েছেন যে, বিরোধী সকল সম্প্রদায়ের সাথেই শান্তিপূর্ণ সদাচরণ চালিয়ে যেতে হবে। এ ব্যাপারে সাধারণ মূলনীতি তো হচ্ছে,
﴿لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِ﴾ [ البقرة : ٢٥٦ ]
“দীন গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৬]
কেননা, যে স্বেচ্ছায় সাগ্রহে ইসলাম গ্রহণ করে না তার এ ইসলাম না তার নিজের কোনো উপকারে আসে এবং না এর দ্বারা সমাজের কোনো ফায়দা হয়। সুতরাং মনে কুফুর লুকিয়ে রেখে এবং ভেতরে ভেতরে ইসলামের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করে চাপে পড়ে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের কোনো মানে হয় না; বরং এমন ব্যক্তি অমুসলিমদের মাঝে থেকে শান্তি ও সস্তির জীবন বেচে নিক এবং কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলার ফয়সালা মেনে নিক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তারা যে সব বিষয়ে মতোবিরোধ করত তোমার রব কিয়ামতের দিনে সে সব বিষয়ে মীমাংসা করে দেবেন।” [সূরা আল-জাছিয়াহ, আয়াত: ১৭]
শুধু ইয়াহূদী-খ্রিস্টান তথা আহলে কিতাবীদের সাথেই নয়; বরং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় জীবনের দীর্ঘ একটি সময় কাফির-মুশরিকদের সাথেও সহাবস্থান ও সদাচরণকে গ্রহণ ও বরণ করে এসেছেন। দেখুন, মক্কী জীবনে এ ধরণের বহু আয়াত নাযিল হয়েছে,
এটি ছিল মক্কী জীবনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ-বিধি। মক্কায় কাফির-মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরোধিতা করেছে, তার ওপর যুলুম-নির্যাতন করেছে, তাঁর সাহাবীদেরকে দেশান্তরিত করেছে এবং তাঁর জন্য যাবতীয় পথই সংকীর্ণ করে ফেলেছে তবুও মোকাবেলায় ফিরে দাঁড়নোর সুযোগ ছিল না।
ইসলাম বিরোধী সকল সম্প্রদায়কে স্বীকৃতিদান, ইসলামের সাথে আক্বীদাগত দিক থেকে চরম অসামাঞ্জস্য হওয়া সত্বেও সকল দল-মতকে মেনে নেওয়া এবং এ জাতীয় অসাধারণ ধৈর্য, সহ্য ও বিনম্র আচরণের পরও ইসলাম বিদ্বেষীরা কি তাঁকে সামাজিক স্বীকৃতিটুকু পর্যন্ত দিয়েছে?!
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/400/9
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।