মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
অমুসলিমদের সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ প্রসঙ্গ
লেখকঃ ড. রাগিব আস-সারজানী
২২
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ: একের পাপের বোঝা অন্যে বহন করবে না
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/400/22
অমুসলিমদের সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ন্যায়পরায়ণতার একটি দিক এটাও ছিল যে, তিনি এক জনের অপরাধের কারণে সামষ্টিকভাবে সকলকে শাস্তি দিতেন না। প্রত্যেক গোত্রেই ভালো-মন্দ উভয় শ্রেণির লোকই রয়েছে। প্রত্যেক দলেই বিশ্বস্ত ও বিশ্বাসঘাতক উভয় প্রকৃতির লোক থাকে। অপরাধ যত বড়ই হোক কখনোই তিনি একজনের অপরাধের কারণে অন্যকে অভিযুক্ত করতেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে এ বিষয়ে সবচেয়ে স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে বীরে মা‘ঊনার [. বীরে মা‘ঊনা। বানূ আমের ও বানূ সুলাইমের প্রস্তরময় ভুমির মাঝামাঝি একটি স্থান। বানু সুলাইমের অধিক নিকটবর্তী এবং তাদের মালিকানাধীন। কেউ কেউ বলেছেন, এটি মক্কা থেকে মদীনার দিকে ওঠার পথে। সেখানেই রাজী‘-এর ঘটনা সংঘটিত হয়। দেখুন: ইয়াকূত আল-হামাওয়ী: মু‘জামুল বুলদান (১/৩০২)।] যুদ্ধের পরে সাহাবী আমর ইবন উমাইয়া আদ-দ্বমরী [. আমর ইবন উমাইয়া আয-যামরী রাদিয়াল্লাহু আনহু। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন কাজে তাকে নিজ প্রতিনিধি বানাতেন। তিনি ছিলেন বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য আরবের খ্যাতিমান ব্যক্তি। বীরে মা‘ঊনা হলো তার প্রথম অভিযান। তাকে আটক করে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ষষ্ঠ হিজরীতে নাজ্জাশীর নিকট ইসলামের দাওয়াত পত্র নিয়ে তাকে পাঠানো হয় এবং সে পত্রটি তিনি নিজ হাতে লিখেন। এ প্রেক্ষিতে নাজ্জাশী ইসলাম গ্রহণ করে নেয়। অধিকতর জানতে: ইবনুল আসীর: উসদুল গাবাহ (৩/৬৮৯), ইবন হাজর: আল-ইসাবাহ (৫৭৬৫)।] রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে সংশ্লীষ্ট ঘটনাটি। পুরো ঘটনাটি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট রি‘ল, যাকওয়ান, ‘উসাইয়া ও বানু লাহইয়ান গোত্রের কিছু লোক এসে বলল, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং তারা তাঁর নিকট তাদের সম্প্রদায়ের মোকাবেলায় সাহায্য প্রার্থনা করলো। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্তর জন আনসার পাঠিয়ে তাদের সাহায্য করলেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা তাদের ক্বারী নামে আখ্যায়িত করতাম। তারা দিনের বেলায় লাকড়ী সংগ্রহ করতেন, আর রাত্রিকালে সালাতে মগ্ন থাকতেন। তারা তাঁদের নিয়ে রওয়ারা হয়ে গেল। যখন তাঁরা বীরে মা‘উনা নামক স্থানে পৌঁছালো, তখন তারা বিশ্বাসঘাতকতা করল এবং তাঁদের হত্যাকরে ফেলল। এ সংবাদ শোনার পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রি‘ল, যাকওয়ান ও বানু লাহইয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে দো‘আ করে একমাস যাবত কুনূতে নাযিলা পাঠ করেন।” [. সহীহ বুখারী: ( كتاب الجهاد و السير، باب العون والمدد ) হাদীস নং ২৮৯৯; আহমদ, হাদীস নং ১৩৭০৭; বায়হাকী, হাদীস নং ২৯১৫।]
এটি মুসলিমদের জন্য অনেক বড় দূর্ঘটনা। গাদ্দারীর ফলস্বরূপ সত্তর জন সাহাবীকে জীবন দিতে হল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনে এ পরিমাণ ব্যথা পেলেন যে, তিনি একমাস যাবৎ সেসব বিশ্বাসঘাতকদের জন্য বদ-দো‘আ করেছেন। এ ধরণের ঘটনা তাঁর জীবনে এ একটিই। ভাবুন তো! কী পরিমাণ ব্যথা পেলে তিনি শত্রুপক্ষকে অভিশাপ দিতে পারেন..!!
এ হত্যাযজ্ঞ থেকে একজন সাহাবী শুধু মুক্তি পেলেন। তিনি হলেন আমর ইবন উমাইয়া আদ-দ্বামরী রাদিয়াল্লাহু আনহু। আমের ইবন তোফায়েল [. আমের ইবন তোফায়েল। বানু আমের গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। ইসলামের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেছিল। বীরে মা‘ঊনায় সত্তর জন সাহাবী হত্যায় জড়িত ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য বদ-দো‘আ করেছেন এবং সে কারণেই সে মারা যায়।] তার মায়ের ওপর একটি গোলাম মুক্ত করার যিম্মা ছিল বলে আমর ইবন উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মুক্তি দিয়ে দিল। আমর ইবন উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মদীনায় ফিরে আসলেন। ফেরার পথে তিনি সত্তর জন সাহাবী হত্যায় জড়িত থাকা বানু সুলাইমের একটি শাখা গোত্র বানু আমেরের দুই মুশরিককে পেয়ে গেলেন। তিনি মনে করলেন যে, এদের হত্যা করতে পারলে কিছুটা হলেও সাথীদেরকে হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হবে। তাই এ দু’জনকে হত্যা করে ফেললেন। পরক্ষণেই তার মনে পড়লো যে, এরা তো চুক্তিবদ্ধ। এদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরাপত্তা দিয়েছেন। তাই তিনি দ্রুত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে পুরো ঘটনা জানালেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহুর্তের মধ্যেই সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে গেলেন। আবেগ, অনুভূতি ও প্রবৃত্তিকে ঝেড়ে ফেলে বিবেক ও ধর্মীয় বিধান কার্যকরী করতে ব্রতী হয়ে ওঠলেন। তিনি আমর ইবন উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, তুমি যে দু’জনকে হত্যা করে ফেলেছ আমি তাদের রক্তপণ আদায় করে দেব। [. যাইলা‘ঈ: নাসবুর রায়াহ (৪/৩৯৬), ইবন কাসীর: আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ (৪/৮৫)।]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিহত দু’জনের পরিবারকে রক্তপণ আদায় করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন..!!
তিনি তো এটাও বলতে পারতেন যে, তাদের গোত্রের লোকেরা আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে আমাদের সত্তর জনকে হত্যা করেছে, বিনিময়ে আমরা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাদের দু’জনকে তো মারতেই পারি। কিন্তু না। তিনি একের অপরাধের জন্য অন্যকে শাস্তি দেন নি। কারণ, ‘আমেরী দু’ব্যক্তি তো এমন কোনো আপরাধ করে নি যেজন্য তাদেরকে হত্যা করা যেতে পারে। আবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ। তাই তাদেরকে হত্যা করা কোনোভাবেই বৈধ হয় নি।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য সত্তর জন খ্যাতনামা সাহাবীকে হারানোর বেদনা ও রাজনৈতিক সংকটই একমাত্র সংকট ছিল না; বরং এর পরিপ্রেক্ষিতে দু’জন মুশরিক হত্যার জন্য রক্তপণ আদায় করার যে বাধ্য-বাধকতা তৈরি হলো এতে আরেকটি অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতে হলো। কারণ, এ ঘটনা ছিল উহুদ যুদ্ধ পরবর্তী কয়েক মাসের ভেতরে। তখন মদীনায় চরম দারিদ্র্যাবস্থা চলছিল। আবার রক্তপণের এ মোটা অংক জোগাড় করতে তিনি চুক্তিবদ্ধতার দাবি নিয়ে বনু নাদ্বীরের ইয়াহূদীদের সাথে সাক্ষাৎ করে সাহায্য চাইলেন। এতে ইয়াহূদীদের সাথে আরেকটি সংকটের সৃষ্টি হয়েছে এবং এ সাক্ষাতের ঘটনাই পরবর্তীতে বানু নাদ্বীরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। [. সহীহ বুখারী: ( كتاب المغازي، باب حديث بني النضير ومخرج رسول الله صلى الله عليه وسلم إليهم قي دية الرجلين وما أرادوا من الغدر برسول الل صلى الله عليه وسلم ) অধিকতর জানতে: তাবারী: তারীখুল উমামি ওয়ালমুলূক (২/৮৩), ইবন কাসীর: আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ (৪/৮৪)।]
অতীত কিংবা বর্তমানে এ স্তরের ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠার নযীর কি অন্য কোথাও কেউ দেখাতে পারবে..?!
এতকিছুর পরও কি কেউ এ দাবী করতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অমুসলিমদেরকে সামাজিক স্বীকৃতি দিতেন না, সম্মান প্রদর্শন করতেন না বা তাদের প্রতি ইনসাফ করতেন না...?!
আমাদের এসব আলোচনাকে অনেকেই অলিক কল্পনা বা পূর্বকালের রূপকথার বানানো গল্প মনে করতে পারেন, কিন্তু না। ইসলাম এসব কিছুকে এমনভাবে বাস্তবে রূপদান করে দেখিয়েছে যা অন্য কারো দ্বারা স্বপ্নেও কল্পনা করা সম্ভব নয়।
বানু আমের গোত্রের দু’জন মুশরিকের নিহত হওয়া এবং এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পদক্ষেপের এ ঘটনাকে বিশাল সমুদ্রের মাঝে এক ফোটা পানির ন্যায়ই মনে হবে। তাঁর ঐ আচরণের সাথে তুলনা করলে যে আচরণ তিনি মক্কা থেকে বিতাড়িত হয়ে মদীনা পানে হিজরত করার সময় মক্কাবাসীর আমানতের মালের ব্যাপারে করেছেন।
ঘটনা সবারই জানা। কিন্তু প্রয়োজন গভীর চিন্তা ও অনুধাবনের...।
মক্কাবাসীদের রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্য কারো প্রতিই পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস ছিল না। ফলে সকলেই নিজেদের অর্থকড়ি ও বিভিন্ন জিনিষপত্র তাঁর কাছেই আমানত রাখতো। কোনো অতিরঞ্জন নয় বাস্তবেই তিনি ছিলেন মহা বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী। এমনকি কুরাইশ কর্তৃক নানাভাবে কঠিন নির্যাতন করা এবং তাঁকে জাদুকর, মিথ্যুক, গণক, কবি ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষায়িত করার পরও তারা নিয়মিত তাদের ধন-সম্পদের আমানত তাঁর কাছেই রাখতো। আর তিনিও তাদের পক্ষ থেকে প্রচণ্ড বিরোধিতা ও শত্রুতা চলাকালীন সময়েও তাদের সম্পদ হিফাযতের গুরুদায়িত্ব পালন করে গেছেন।
অতঃপর এসে গেলো মদীনায় পাড়ি জমানোর পালা।
কাজ-কর্ম, ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পদ সব ত্যাগ করার পালা।
কুরাইশের পক্ষ থেকে যুলুম-নির্যাতন চুড়ান্ত পর্বে এসে দেশত্যাগে বাধ্য করার পালা।
অসভ্যতা ও অমানবিকতার সর্বসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পালা।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহা যন্ত্রনাদায়ক পরিস্থতির মুখোমুখি হলেন। তাঁর নিজ মাতৃভূমি, পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় ভূখণ্ড ‘মক্কা’ ত্যাগের বিরহ যন্ত্রণা। যেমন, বিদায়কালে মক্কানগরীকে লক্ষ্য করে তিনি বলেছেন: “আমি জানি তুমি আল্লাহর সৃষ্ট সবচেয়ে উত্তম ভূমি এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় ভূমি। তোমার অধিবাসীরা যদি বের করে না দিত তাহলে আমি তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।” [. তিরমিযী: আব্দুল্লাহ ইবন আদী আয-যুহরী থেকে, হাদীস নং ৩৯২৫। আবু ঈসা বলেছেন, হাদীসটি হাসান গারীব সহীহ। আহমদ, হাদীস নং ১৮৭৩৭। আদ-দারমী, হাদীস নং ২৫১০। মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ৫২২০। আন-নাসায়ী: আস-সুনানুল কুবরা, হাদীস নং ৪২৫২। মিশকাত, হাদীস নং ২৭২৫। আলবানী বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। দেখুন: সাহীহুল জামে‘ (৭০৮৯)।]
এতসব ব্যথা-বেদনার পরেও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্ভাব্য সর্বোত্তম পন্থায় ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে গেলেন। তিনি সকল গচ্ছিত সম্পদ আলী ইবন আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট রেখে তাকে এ আদেশ দিয়ে গেলেন যে, সবগুলো সম্পদ পাওনাদারদের নিকট পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তিন দিন মক্কায় অবস্থান করে সকল আমানত মালিকদের নিকট পৌঁছে দিয়ে গেলেন। [. ইবন কাসীর: আস-সীরাতুন নাববিয়্যাহ (২/২৭০), ইবন হিশাম: আস-সীরাতুন নাববিয়্যাহ (২/২১), মোবারকপুরী: আর-রাহীকুল মাখতূম (১২১)।]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্য কারো দ্বারা এ ধরণের উত্তম চরিত্র ও পূর্ণ ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হতে পারে -এটা আমি বিশ্বাস করি না।
এমন পরিস্থিতিতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্থানে অন্য যে কেউ হলে আমানতের এ মালগুলো আত্মসাৎ করে ফেলার জন্য কোনো না কোনো একটি অপব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে ফেলত এবং সেগুলো যথাযথ মালিকদের নিকট আদৌ পৌঁছে দিত না।
কেউ কেউ এ ব্যাখ্যা দিত যে, তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘর-বাড়ি ধন-সম্পদ সব দখল করে নিয়েছে। বিনিময়ে তাদের আমানতের মালগুলো ফেরত না দেওয়া তো অন্যায় হওয়ার কথা না...।
আবার কেউ বলত যে, তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বদেশ ত্যাগে বাধ্য করেছিল...।
কেউ বলত, তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রাণ নাশের ষড়যন্ত্র করেছিল। এমনকি ষড়যন্ত্র প্রায় বাস্তবায়নও হতে চলেছিল। যদি না তিনি শেষ মুহুর্তে মু’জিযার মাধ্যমে তাদের ফাঁদ ভেদ করে বেরিয়ে না যেতেন...।
কেউ বলত যে, এ সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ইসলামের প্রচার প্রসারে ব্যয় করা হবে। বিশেষ করে মদীনার প্রাথমিক দিনগুলোতে এর বেশ প্রয়োজনও ছিল...।
হ্যাঁ, আপনি যা ইচ্ছা ব্যাখ্যা করতে পারেন; কিন্তু আপনি যখন ব্যক্তিগত চিন্তা ও নিজস্ব প্রবৃত্তির চাহিদা বাদ দিয়ে নিরপেক্ষভাবে বাস্তবতার প্রতি লক্ষ্য করবেন তখন বুঝতে পারবেন যে, এসব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ কোনোটিই গ্রহণযোগ্য নয়। আমানতের সম্পদগুলো নির্দিষ্ট কিছু লোকের ব্যক্তি-স্বার্থের সাথে সম্পৃক্ত। যারা পূর্ণ হিফাযতে রাখার শর্তে/চুক্তিতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আমানত রেখেছিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও নিজের সম্পদের চেয়েও যত্ন ও নিরাপত্তার সাথে সেগুলো সংরক্ষণ করতেন। তাই পরিস্থতি যাই হোক এবং তাদের পক্ষ থেকে নির্যাতনের মাত্রা যে পর্যায়েই পৌঁছুক তিনি তাদের সম্পদগুলো আত্মসাৎ করে ফেলতে বা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন না। তাঁর প্রাণনাশের তদবীরকারীদের অপরাধের কারণে যারা তাঁকে বিশ্বাস করে আমানত রেখেছিল তাদেরকে শাস্তি না দেওয়াই হলো ন্যায়পরায়ণতার দাবী।
তারা মগ্ন হয়ে আছে তাঁর প্রাণ নাশের তদবীরে...।
আর তিনি ব্যস্ত হয়ে গেলেন তাদের আমানত রক্ষায়...।
তারা রয়েছে বিশ্বাসঘাতকতার চুড়ান্ত পর্যায়ে...।
আর তিনি আছেন বিশ্বস্ততার উচ্চ শিখায়...।
তারা হলো মুশরিক...।
আর তিনি হলেন জগৎসমূহের রবের প্রেরিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)...।
তাঁর মাঝে ও তাদের মাঝে আসমান-জমিনের ফারাক....।
আরো সৌন্দর্যের ব্যাপারটি হলো, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব আচরণ কৃত্রিমতা বা অনুগ্রহ প্রকাশের জন্য করতেন না..।
তিনি সদাচরণ ও ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠা এজন্য করতেন না যে, চারিদিকে তার সুনাম সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ুক। সকলেই তাকে বাহবা দিক...।
তাঁর কবি ও সাহিত্যিক শিষ্যদেরকে তিনি তাঁর প্রশংসা ও গুণগান করে সাহিত্য কিংবা কবিতা রচনা করতেও বলেন নি...।
আল্লাহ তাঁকে মহৎ চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে আদেশ করেছেন। এ আদেশই তাঁকে উপরোক্ত সব চিন্তা ভুলিয়ে দিয়েছে। তিনি শুধু আল্লাহর আদেশ পালনার্থে তাঁরই জন্য একান্ত ও একনিষ্ঠভাবে এসব আচরণ করতেন। এজন্য আল্লাহর বান্দাদের নিকট তিনি কোনোরূপ প্রতিদান, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন ও সুনাম-সুখ্যাতি কিছুরই আশা করতেন না।
“বলুন, ‘এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না আর আমি ভানকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।’’ [সূরা সোয়াদ, আয়াত: ৮৬]
فصل اللهم عليك و سلم يا إمام العادلين، و سيد النبيين والمرسبين .
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/400/22
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।