hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

অমুসলিমদের সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ প্রসঙ্গ

লেখকঃ ড. রাগিব আস-সারজানী

১৯
তৃতীয় পরিচ্ছেদ: বিচার ব্যবস্থায় ন্যায়পরায়ণতা/নিরপেক্ষতা
অত্র গ্রন্থের বিগত দু’টি পরিচ্ছেদে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ন্যায়পরায়ণতা দেখে যদি আমরা আশ্চর্যান্বিত হই। তাহলে এক মুসলিম ও অমুসলিমের মাঝে বিচার ব্যবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ন্যায়-নিষ্ঠা দেখে বিস্ময়ে হতবাক হতে হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আদল একটি সাধারণ বিষয়। যা ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের ভিন্নতায় কোনো স্বার্থ লঙ্ঘন, ভৌগলিক সম্পর্ক কিংবা দুনিয়াবী সূত্রের কারণে তারতম্যের অবকাশ রাখে না।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাচারে এ ধরনের ঘটনার দৃষ্টান্ত অনেক। তন্মধ্যে একটি হলো,

আনসার গোত্র বনী উবাইরাক ইবন যুফার ইবন হারিস-এর এক মুসলিম ব্যক্তি কতাদাহ ইবন নু‘মান নামীয় এক প্রতিবেশীর একটি বর্ম চুরি করল। তার নাম ছিল ত্ব‘মা ইবন উবাইরাক, অন্য এক বর্ণনা মতে তার নাম হলো বাশীর ইবন উবাইরাক। আর এ বর্মটি আটা ভরতি একটি খাপে ঢুকানো ছিল। কাজেই চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় খাপের ছিদ্র দিয়ে আটা ছড়াতে ছড়াতে নিজ ঘর পর্যন্ত গেল। তার পর সেটি যায়িদ ইবন সামীন নামীয় এক ইয়াহূদীর কাছে লুকিয়ে রাখল। অতপর ত্ব‘মা ইবন উবাইরাকের কাছে বর্মের অনুসন্ধান চাইলে সে বর্ম নেয় নি মর্মে আল্লাহর নামে শপথ করল। তখন বর্মের মালিক বলল, আমি তার ঘরে আটার চিহ্ন দেখেছি। তারপরও যেহেতু সে শপথ করেছে তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো এবং সকলে মিলে আটার চিহ্ন অনুসরণ করে করে ঐ ইয়াহূদীর ঘর পর্যন্ত পৌঁছল এবং সেখানে বর্মটি পেয়ে গেল। তখন চাপের মুখে ইয়াহূদী স্বীকার করল যে, ত্ব‘মা ইবন উবাইরাক আমাকে এটি দিয়েছে। ত্ব’মা ইবন উবাইরাকের এলাকাবাসী বনু যুফারের লোকেরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে তাদের সাথীর স্বপক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ইয়াহূদীর ঘরে বর্ম পাওয়া গেছে তাকে শাস্তি দেওয়ার মনস্থ করলেন। তখন সূরা নিসার নিম্নোক্ত আয়াতগুলো নাযিল হয়:

﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ لِتَحۡكُمَ بَيۡنَ ٱلنَّاسِ بِمَآ أَرَىٰكَ ٱللَّهُۚ وَلَا تَكُن لِّلۡخَآئِنِينَ خَصِيمٗا ١٠٥ وَٱسۡتَغۡفِرِ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٠٦ وَلَا تُجَٰدِلۡ عَنِ ٱلَّذِينَ يَخۡتَانُونَ أَنفُسَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ خَوَّانًا أَثِيمٗا ١٠٧﴾ [ النساء : ١٠٥، ١٠٧ ]

“নিশ্চয় আমরা আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যা আল্লাহ আপনাকে হৃদয়ঙ্গম করান। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ থেকে বিতর্ককারী হবেন না এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। যারা মনে বিশ্বাসঘাতকতা পোষণ করে তাদের পক্ষ থেকে বিতর্ক করবেন না। আল্লাহ পছন্দ করেন না তাকে, যে বিশ্বাসঘাতক পাপী হয়।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৫-১০৭]

একসাথে নিম্নের আয়াত পর্যন্ত নাযিল হয়:

﴿وَمَن يَكۡسِبۡ خَطِيٓ‍َٔةً أَوۡ إِثۡمٗا ثُمَّ يَرۡمِ بِهِۦ بَرِيٓ‍ٔٗا فَقَدِ ٱحۡتَمَلَ بُهۡتَٰنٗا وَإِثۡمٗا مُّبِينٗا ١١٢﴾ [ النساء : ١٠٤- ١١٢ ]

“যে ব্যক্তি ভূল কিংবা গোনাহ করে, অতঃপর কোনো নিরপরাধের ওপর অপবাদ আরোপ করে সে নিজের মাথায় বহন করে জঘন্য মিথ্যা ও প্রকাশ্য গুনাহ।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৫-১১২] [. তিরমিযী: কাতাদাহ ইবন নু’মান থেকে, হাদীস নং ৩০৩৬, ইমাম তিরমিযি বলেছেন, এটি গারীব হাদীস। হাকিম (৪/৩৮৫-৩৮৮) তিনি বলেছেন, এটি মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ; তবে বুখারী মুসলিমের কেউই এটি সংকলন করেন নি। তিনি তুহফাতুল আহওয়াযী গ্রন্থেও এটিকে ইবনুল মুনযির ও আবুশ- শায়খ ইস্পাহানীর নামে চালিয়ে দিয়েছেন। অধিকতর জানতে- তাফসীরুত তাবারী (৪০/২৬৫), তাফসীরুল কুরতুবী (৩/৩২৭), তাফসীরে ইবন কাসীর (১৫/৭৩১), শাওকানী: ফতহুল কাদীর (১/৭৭১), তাফসীরুল বাগবী (১/২৮৩), তাফসীরুল বায়যাবী (১/২৪৭), তাফসীরুল জালালাইন (১/১২০), আল্লামা ওয়াহেদী: আল-ওয়াজীয (১/২৮৭), তাফসীরু আবিস-সা‘ঊদ (২/২২৯), আল্লামা সুয়ূতী: আদ-দুররুল মানসূর (২/৬৭১), তাফসীরুন নাসাফী (১/২৪৬), আল্লামা আলূসী: রুহুল মা’আনী (৫/১৪০), ইবনুল জাওযী: যাদুল মাসীর (২/১৯০), ইবন ‘আশূর: আত-তাহরীর ওয়াত-তানবীর (১/১০২১), মা’আনী আল-কুরআন (২/১৮৫)।]

আটার নিদর্শন ও ঘরে বর্ম পাওয়ার কারণে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ধারণা ছিল যে, ইয়াহূদী লোকটিই চোর। কিন্তু তাঁর ধারণার বিপরীতে অহী নাযিল হলে তিনি তা লুকিয়ে রাখেন নি; বরং দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করলেন যে, ইয়াহূদী নিরপরাধ, চোর হচ্ছে মুসলিম ব্যক্তিটি..!

ব্যাপারটি কিন্তু এতো সহজ নয়..!!

দেখুন, সাফায়ীর ঘোষণা এসেছে ইয়াহূদী ব্যক্তির পক্ষে। যে ইয়াহূদী জাতি ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যারোপ করা, ষড়যন্ত্র করা, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো এবং তাঁর অনুসারীদের মাঝে ফাটল সৃষ্টিতে সদাতৎপর থাকে। এতো কিছুর পরও এসব নেতিবাচক দিক ও প্রেক্ষাপটগুলোও একজন ইয়াহূদীকে অযথা দোষারোপ করার অনুমতি দেয় না। আরো দেখুন, অভিযোগটি দাঁড়িয়েছে এক আনসারী মুসলিম ব্যক্তির বিপক্ষে। আপনি জানেন কি, কারা এ আনসার.?! তার ঐসব লোক যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর দূরাবস্থার সময় সাহায্য করেছে, আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিয়েছে। যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভেতর বাহির সব। যারা ইসলামী রাষ্ট্রের কর্ণধার। যাদের কাঁধের উপর দিয়েই মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের ভীত রচিত হয়েছে। কিন্তু এসব কিছুও তাদের একজন চোরের পক্ষাবলম্বন ও সাফায়ী ঘোষণার অনুমোদন দেয় নি; যদিও প্রতিপক্ষের লোকটি একজন ইয়াহূদী। উপরন্তু এ ঘটনাটি মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের জন্য ইয়াহূদীদেরকে নতুন ক্ষেত্র তৈরি করে দেবে। ইয়াহূদীরা বলে বেড়াবে যে, দেখ, মুসলিমরা হলো চোরের জাতি। তারা নিজেরা অপরাধ করে তার দায় অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়। তারা অত্যাচারীর পক্ষ অবলম্বন করে। তারা মিথ্যা কথা বলে ইত্যাদি ইত্যাদি। এতে মুসলিম সম্প্রদায়ের চরিত্রে ধারাবাহিক কুৎসা রটনা ও কলঙ্ক লেপনে ইয়াহূদীদের জন্য এক মহা সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে।

এতকিছুর পরও সত্যের সত্যায়ন ও ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।

এ ঘটনায় আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্য শুধু একজনের দায়মুক্তি ও অন্যজনের ওপর অভিযোগ আরোপ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এ ঘটনার মাধ্যমে তিনি উম্মতে মুসলিমাকে পৃথিবীর শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে যাবতীয় যুলুম-নির্যাতনের মূলোৎপাটনের দীক্ষা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে মূলনীতি ঘোষণা করেছেন যে, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে কোনো স্বার্থ লঙ্ঘন, ভৌগলিক সম্পর্ক কিংবা পার্থিব কোনো ইস্যু দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে মানুষের মাঝে সত্য ফয়সালা করতে হবে। [. তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন (২/৭৫৩)।]

বরাবরের মতো আবারো আমরা প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাই যে, উম্মতে মুসলিমা ছাড়া অন্য কোনো সম্প্রদায়ের ইতিহাসে কি এমন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে..?! সত্য প্রকাশ, ইনসাফ প্রতিষ্ঠা এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে সততা ও উদারতা প্রদর্শনে পৃথিবীর কোনো নেতা কি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ধারে কাছেও পৌঁছতে পেরেছে..?!!

এখানে এ কথাও উল্লেখ করে দেওয়া জরুরী যে, পূর্বোক্ত ঘটনায় যে মুসলিম ব্যক্তিটি নিজে চুরি করে ইয়াহূদীর ওপর দায় চাপিয়ে দিয়েছিল সে ছিল প্রকৃত অর্থে মুনাফিক। যা এ ঘটনার পরে প্রকাশ পেয়েছে। ইমাম তিরমিযী বর্ণিত একটি হাদীসে এ ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। হাদীসটি হচ্ছে:

কাতাদাহ ইবন নু‘মান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমাদের আনসারদের মধ্যে বনু উবাইরিক নামীয় একটি পরিবারে তিন ভাই ছিল। বাশার, বশীর ও মুবাশ্শির। বশীর ছিল মুনাফিক। সে কবিতা চর্চা করতো। কবিতায় সে সাহাবীদেরকে কটুক্তি করতো এবং আরবের অন্যান্য কবিদের নামে তা চালিয়ে দিতো। বলতো যে, অমুক কবি এমন বলেছে, অমুক কবি এমন এমন বলেছে। সাহাবীগণ তার কথা শুনে নিজেরা বলাবলি করতো যে, আল্লাহর শপথ এ ধরণের কথা এ ইতর লোকটিই বলেছে। বশীর ইবন উবাইরিকই এগুলো বলেছে। (বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন), জাহেলী যুগে ও ইসলাম পরবর্তী সময়ে এটি ছিল অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার। সে সময় মদীনার মানুষের খাবার ছিল খেজুর ও যব। তবে কারো সামর্থ্য থাকলে সে শামের দিক থেকে আগমনকারী বণিক কাফেলার নিকট থেকে ময়দা ক্রয় করতো যা ক্রয়কারী নিজেই খেতো। পরিবারের অন্যদের খাবার খেজুর ও যবই হতো। একবার শামের একটি ব্যবসায়ী কাফেলা আসলে আমার চাচা রিফা‘আহ ইবন যায়েদ তাদের নিকট থেকে ময়দার একটি পুটলী ক্রয় করে নিজের যে ঘরে বর্ম, তরবারী ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র থাকতো সে ঘরে রাখলেন। একদিন কে যেন ঘরে সিদ কেটে চুরি করে আটা ও অন্যান্য সামানা সব নিয়ে যায়। সকালে আমার চাচা রিফা‘আহ আমার নিকট এসে বলল, ভাতিজা! গতরাতে আমার প্রতি যুলুম করা হয়েছে। আমার ঘরে সিদ কেটে চুরি করে আটা ও অন্যান্য সামানা সব নিয়ে গেছে। অতঃপর আমরা যখন খোজ-খবর নিতে লাগলাম তখন মহল্লার লোকেরা বলল, আজ রাতে আমরা বনু উবাইরিককে আগুন জালাতে দেখেছি। আমাদের তো মনে হয় তোমাদের খাদ্যের ওপরই আগুন জালানো হয়েছে। বনু উবাইরিককে জিজ্ঞাস করা হলে তারা বলল, আল্লাহর শপথ! আমাদের মনে হয় চোর হচ্ছে তোমাদের মুসলিম ও নেককার ভাই লাবীদ ইবন সাহাল। লাবীদ ইবন সাহাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এটি শোনে তরবারী উত্তোলন করে বললেন, আমি করবো চুরি?! আল্লাহর শপথ! হয়তো তোমরা এ চুরির বাস্তবতা প্রকাশ করবে নয়তো তোমাদের ওপর আমার তরবারীর ধার পরীক্ষা করে নেবো। তারা বলল, তুমি তোমার তরবারী নিয়ে থাক, তুমি চোর নও। অতঃপর আমরা মহল্লায় আরো খোঁজ-খবর নিয়ে নিশ্চিত হলাম যে, বনু উবাইরিকই চোর। এরপর আমার চাচা আমাকে বলল, ভাতিজা! তুমি যদি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ঘটনাটি জানাতে তাহলে ভালো হতো। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললাম যে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের একটি পরিবার আমার চাচা রিফা‘আহ ইবন যায়েদের ওপর যুলুম করেছে। তার ঘরে সিদ কেটে চুরি করে আটা ও অন্যান্য সামানা সব নিয়ে গেছে। এখান খাদ্য-দ্রব্যের আমাদের প্রয়োজন নেই। আমরা আমাদের যুদ্ধাস্ত্রগুলো ফেরত চাই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি অতি সত্ত্বর এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। বনু উবাইরিক এটি জানতে পেরে তাদের এক ব্যক্তি আসীর ইবন উরওয়াহ’র নিকট গিয়ে ঘটনা জানাল এবং স্বগোত্রীয় অনেকগুলো লোক একত্র হয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে আরয করল যে, হে আল্লাহর রাসূল! রিফা‘আহ ও তার চাচা আমাদের এক সৎ ও মুসলিম পরিবারের ওপর দলিল প্রমাণ ছাড়া চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি একটি সৎ মুসলিম পরিবারকে প্রমাণ ছাড়া চুরির অপবাদ দিচ্ছ কেন? (কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন), এটি শোনে আমি বেরিয়ে আসলাম আর মনে মনে বললাম, হায়! যদি আমার কিছু সম্পদ চলে যেত এরপরেও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতাম না। এরপর আমার চাচা রিফা‘আহ এসে বলল, ভাতিজা! কী করতে পারলে? আমি তাকে ঘটনা জানালাম। সে বলল, আল্লাহই সাহায্যকারী। এরপর বেশি দেরি হয় নি। ইতোমধ্যে কুরআন আয়াত নাযিল হল:

﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ لِتَحۡكُمَ بَيۡنَ ٱلنَّاسِ بِمَآ أَرَىٰكَ ٱللَّهُۚ وَلَا تَكُن لِّلۡخَآئِنِينَ خَصِيمٗا ١٠٥ وَٱسۡتَغۡفِرِ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا١٠٦﴾ [ النساء : ١٠٥-١٠٦ ]

“নিশ্চয় আমরা আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যা আল্লাহ আপনাকে হৃদয়ঙ্গম করান। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের (বনু উবাইরিকের) পক্ষ থেকে বিতর্ককারী হবেন না। এবং আল্লাহর কাছে (কাতাদাহকে যা বলেছেন সেজন্য) ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৫-১০৬]

আয়াত নাযিলের পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যুদ্ধাস্ত্রগুলো নিয়ে আসা হলে তিনি তা রিফা‘আহ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ফিরিয়ে দিলেন। (কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন), আমি যুদ্ধাস্ত্রগুলো নিয়ে চাচা রিফা‘আহ’র নিকট আসলাম। সে জাহেলী যুগেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে বৃদ্ধ হয়ে যায় এবং আমি মনে করতাম তার ঈমানে কিছুটা খটকা আছে। যুদ্ধাস্ত্রগুলো নিয়ে আসা হলে সে বলল, ভাতিজা! আমি এগুলো আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিলাম। এতে আমি বুঝলাম যে, তার ইসলাম গ্রহণ খাঁটিই ছিল। আয়াত নাযিলের পর বশীর মুশরিকদের সাথে মিলিত হয়ে যায় এবং সুলাফাহ বিনত সা‘আদ ইবন সুমাইয়ার নিকট গিয়ে অবস্থান নেয়। এরপর আয়াত নাযিল হয়:

﴿وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلَۢا بَعِيدًا ١١٦﴾ [ النساء : ١١٥، ١١٦ ]

“যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলিমের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান। নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৫-১১৬]

বশীর সুলাফাহ’র নিকট গিয়ে অবস্থান করার পর হাসসান ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কয়েকটি কবিতায় সুলাফাহ’র নিন্দাবাদ করেন। ফলে সুলাফাহ বশীরের সামানাপত্র সব মাথায় তুলে বাইরে এনে ফেলে দেয় এবং বলে যে, তুমি কি আমার জন্য হাসসানের কবিতার হাদিয়া নিয়ে এসেছ? তোমার দ্বারা কখনো আমার কোনো উপকার হয় নি। [. তিরমিযী, হাদীস নং ৩০৩৬, আবু ঈসা বলেছেন, হাদীসটি গারীব। আল্লামা নাসীরুদ্দীন আলবানী একে হাসান বলেছেন।] অন্য বর্ণনাতে আছে সে মুরতাদ হয়ে পালিয়ে মক্কা চলে যায় এবং সেখানেই মারা যায়।” [. তাফসীরে ইবন কাসীর (২/৪০৬,৪০৭), ইমাম রাযী: মাফাতীহুল গাইব (৫/৩৬৯)।]

এ ঘটনায় ইয়াহূদীর পক্ষে মুসলিমের বিরুদ্ধে রায়টি সে মুসলিমের ঈমানের দুর্বলতা কিংবা নিফাকের কারণে নয়; বরং তার অপরাধী হওয়ার কারণেই হয়েছে। কেননা, শরী‘আত কারো জন্য একান্ত নয় এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও নিজ সাহাবী ও নিকটাত্মীয়দের প্রতি কোনোরূপ স্বজনপ্রীতি করতেন না।

প্রিয় পাঠক! আপনি যদি এ ব্যাপারে আরো সুস্পষ্ট ধারণা পেতে চান এবং এ বাস্তবতাকে আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে চান তাহলে সামনের ঘটনাটির প্রতি লক্ষ্য করুন যা ঘটেছিল এক ইয়াহূদী ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অত্যন্ত স্নেহভাজন একজন গুরুত্বপূর্ণ সম্মানিত সাহাবীর মধ্যে। তিনি হলেন জাবির ইবন আব্দুল্লাহ ইবন হারাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। [. জাবির ইবন আব্দুল্লাহ ইবন হারাম। বাল্যকালে আক্বাবার দ্বিতীয় শপথে পিতার সাথে অংশগ্রহণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আঠারটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি ছিলেন অধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীদের অন্যতম। অধিকতর জানতে- ইবনুল আসীর: উসদুল গাবাহ (১/৩৫১), ইবনু আবদিল বার: আল-ইসতি‘আব (১/২৯২), ইবন হাজার: আল-ইসাবাহ (১০২২)।] বাল্যকালে আক্বাবার দ্বিতীয় শপথে পিতা আব্দুল্লাহ ইবন হারাম [. আব্দুল্লাহ ইবন হারাম আস-সুলামী আল-আনসারী। আক্বাবার শপথের সময় প্রতিনিধি হয়ে এসেছেন। বদরেও ছিলেন। তিনি ছিলেন উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণকারীদের প্রথম ব্যক্তি। তাকে এবং আমর ইবনুল জুমূহকে একই কবরে দাফন করা হয়। অধিকতর জানতে- ইবনু আবদিল বার: আল-ইসতি’আব (৩/৮৪), ইবন হাজার: আল-ইসাবাহ (৪৮৩৬)।] রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে উপস্থিত ছিলেন। উহুদ থেকে শুরু করে ইসলামের সবগুলো বড় বড় ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। [. ইবনুল আসীর: উসদুল গাবাহ (৩/২৪১)।]

জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মদীনায় এক ইয়াহূদী ছিল। সে আমাকে কর্জ দিত! আমার খেজুর পাড়ার মেয়াদ পর্যন্ত। (রাওমা নামক স্থানে পথের ধারে জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহুর এক খণ্ড জমি ছিল)। একবার আমি কর্জ পরিশোধে এক বছর বিলম্ব করলাম। এরপর খেজুর পাড়ার মৌসুমে ইয়াহূদী আমার কাছে আসলো, আমি তখনো খেজুর পাড়তে পারি নি। আমি তার কাছে আগামী বছর পর্যন্ত অবকাশ চাইলাম। সে অস্বীকার করল। এ খবর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানান হলো। তিনি সাহাবীদের বললেন, চলো জাবিরের জন্য ইয়াহূদী থেকে অবকাশ নিই। তারপর তারা আমার বাগানে আসলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীর সাথে এ নিয়ে কথাবার্তা বললেন। সে বললো, হে আবুল কাসিম। আমি তাকে আর অবকাশ দেব না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে তার এ কথা শুনে উঠলেন এবং বাগানটি প্রদক্ষিণ করে তার কাছে এসে আবার আলাপ করলেন। সে এবারও অস্বীকার করল। এরপর আমি উঠে পিঠে সামান্য কিছু তাজা খেজুর নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে রাখলাম। তিনি কিছু খেলেন। তারপর বললেন, হে জাবির! তোমার ছাপড়াটা কোথায়? আমি তাকে জানিয়ে দিলাম। তিনি বললেন, সেখানে আমার জন্য বিছানা দাও। আমি বিছানা বিছিয়ে দিলে তিনি এতে ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুম থেকে জাগ্রত হলে আমি তার কাছে এক মুষ্টি খেজুর নিয়ে আসলাম। তিনি তা থেকে খেলেন। তারপর উঠে আবার ইয়াহূদীর সাথে কথা বললেন। সে অস্বীকার করলো। তখন তিনি দ্বিতীয়বার খেজুর বাগানে গেলেন এবং বললেন, হে জাবির তুমি খেজুর কাটতে থাক এবং কর্জ পরিশোধ কর। এ বলে, তিনি খেজুর পাড়ার স্থানে অবস্থান করলেন, আমি খেজুর পেড়ে ইয়াহূদীর পাওনা শোধ করলাম। এরপর আরও সে পরিমাণ খেজুর উদ্বৃত্ত রইল। আমি বেরিয়ে এসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সুসংবাদ দিলাম। তিনি বললেন, তুমি স্বাক্ষী থাক যে, আমি আল্লাহর রাসূল।” [. সহীহ বুখারী: ( كتاب الأطعمة، باب الرطب و التمر ) হাদীস নং ৫১২৮।]

এটি একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা। যেখানে জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এক ইয়াহূদী থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন। ঋণ পরিশোধের সময় এসে গেছে অথচ তার কাছে ঋন পরিশোধের মত কিছু নেই। জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র সাহাবী। তাই তিনি ইয়াহূদীর নিকট এক বছরের সময় চাচ্ছেন। কিন্তু সে অস্বীকার করল এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধের জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগল। অবশেষে জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ব্যাপারটি জানালেন এবং তাদের মাঝে মধ্যস্থতা করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সাহাবীকে নিয়ে জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহুর পক্ষে সুপারিশ করার জন্য ইয়াহূদীর নিকট গেলেন। কিন্তু ইয়াহূদী কোনো ভাবেই রাজি হল না। সে বার বার একই কথা বলল যে, হে আবুল কাসিম! আমি তাকে আর অবকাশ দেব না।

এ ঘটনা ঘটেছে গোটা মদীনার একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিত্ব রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একান্ত স্নেহভাজন এক সাহাবী এবং মদীনারই আরেক সাধারণ যিম্মী ইয়াহূদী নাগরিকের সাথে। ঋণী ব্যক্তি শুধু সময় চাচ্ছেন। টালবাহানাও করছেন না আবার অস্বীকারও করছেন না। উপরন্তু স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুপারিশ করলেন; কিন্তু ইয়াহূদী মানলো না। এতকিছুর পরও আমাদের নেতা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীকে সুপারিশ গ্রহণে বাধ্য করলেন না।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীর দূর্বলতার দিকে তাকালেন না। জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি তাঁর স্নেহ-ভালোবাসাকেও দৃষ্টির আড়াল করে দিলেন। না তাকালেন ইয়াহূদীর অতীতের দীর্ঘ কালো ইতিহাসের দিকে। এসবের কিছুই তিনি লক্ষ্য করেন নি; বরং তিনি শুধু উত্তমভাবে ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠার দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছেন।

পাওনাদার একজন ইয়াহুদী। পরিশোধের সময়ও এসে গেছে। সুপারিশও প্রত্যাখ্যাত। তাই পরিশোধ করতেই হলো। রায় ইয়াহূদীর পক্ষেই গেল। যদিও তা ছিল একজন সম্মানিত সাহাবীর ছেলে সাহাবীর বিরুদ্ধে।

এটিই ইসলাম...!

এটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কৃত্রিমতা কিংবা সংযম প্রদর্শন কিছুই নয়; বরং এটি ছিল দীনের বিধানের স্বাভাবিক বাস্তবায়ন মাত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُونُواْ قَوَّٰمِينَ بِٱلۡقِسۡطِ شُهَدَآءَ لِلَّهِ وَلَوۡ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمۡ أَوِ ٱلۡوَٰلِدَيۡنِ وَٱلۡأَقۡرَبِينَۚ إِن يَكُنۡ غَنِيًّا أَوۡ فَقِيرٗا فَٱللَّهُ أَوۡلَىٰ بِهِمَاۖ فَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلۡهَوَىٰٓ أَن تَعۡدِلُواْۚ وَإِن تَلۡوُۥٓاْ أَوۡ تُعۡرِضُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٗا ١٣٥ ﴾ [ النساء : ١٣٥ ]

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক, আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশি। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কেই অবগত।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩৫]

দারিদ্র্যের কারণে জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি সহানুভুতিও তার পক্ষে ইয়াহূদীর বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার অনুমতি দেয় না। ফাতহুল কাদীরে আল্লামা শাওকানী -কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয় -একথার ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, প্রতিপক্ষ যদি ধনী হয় তাহলে তার সম্পদ থেকে উপকৃত হওয়া কিংবা তার ক্ষতি থেকে বাচার জন্য তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকা যাবে না। আবার যদি দরিদ্র হয় তাহলে তার প্রতি সহানুভুতি প্রদর্শন পূর্বক তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া থেকেও বিরত থাকা যাবে না। [. আল্লামা শাওকানী: ফাতহুল কাদীর (১/৭৯০)।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন