hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

অমুসলিমদের সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ প্রসঙ্গ

লেখকঃ ড. রাগিব আস-সারজানী

২০
চতুর্থ পরিচ্ছেদ: ব্যক্তিগত অধিকার হরণকারীদের সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ন্যায়পরায়ণতা
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ন্যায়পরায়ণাতার প্রতি সদা সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। এমনকি যদি সেটা নিজের ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়েও হতো। আর এর দৃষ্টান্ত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাচারে অনেক অ-নে-ক। কিন্তু অত্র গ্রন্থে আমরা শুধুমাত্র অমুসলিমদের সাথে ঘটমান অবস্থাগুলোই তুলে ধরার প্রয়াস চালাব। কাজেই এখানে সাহাবায়ে কেরাম ও তাঁর অনুসারীদের সাথে ঘটমান অনন্য ন্যায়পরায়ণতার ঘটনাবলীর প্রতি আমরা দৃষ্টিপাত করব না; বরং অমুসলিমদের সাথে ঘটমান কিছু অনুপম ঘটনার বিবরণ উপস্থাপনেই সীমাবদ্ধ থাকব।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دَخَلَ رَهْطٌ مِنْ الْيَهُودِ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا السَّامُ عَلَيْكَ فَفَهِمْتُهَا فَقُلْتُ عَلَيْكُمْ السَّامُ وَاللَّعْنَةُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَهْلًا يَا عَائِشَةُ فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الرِّفْقَ فِي الْأَمْرِ كُلِّهِ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَوَلَمْ تَسْمَعْ مَا قَالُوا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ قُلْتُ وَعَلَيْكُمْ»

“ইয়াহুদীদের একটি দল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসল। অতঃপর তারা বলল, ‘আস-সামু [.আসসামু অর্থ মৃত্যু, ইবনুল মানযুর: লিসানুল আরব سوم অধ্যায় (১২/৩১৪)] আলাইকুম’ তোমাদের ওপর মৃত্যু আসুক। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি এ কথার অর্থ বুঝলাম এবং বললাম, ‘ওয়া আলাইকুমুস-সামু ওয়ালা‘নাহ’ তোমাদের ওপরও মৃত্যূ ও লা‘নত আসুক। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, থাম, হে আয়েশা! আল্লাহ সকল কাজে নম্রতা ভালোবাসেন। অন্য এক বর্ণনা মতে হে আয়েশা! তুমি সহিংসতা ও অশ্লীলতা মুক্ত থাক। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অপনি কি শোনেন নি তারা কী বলেছে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমিও তো বলেছি ‘ওয়া আলাইকুম’ এবং তোমাদের ওপরও।” [. সহীহ বুখারী ( كتاب الأدب : باب الرفق في الأمر كله ) হাদীস নং ৫৬৭৮; সহীহ মুসলিম ( كتاب السلام : باب النهي عن ابتداء أهل الكتاب بالسلام و كيف يرد عليهم ) হাদীস নং ২১৬৫]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই মহানুভব ও সাম্যের প্রতিক ছিলেন যে, তিনি মদীনায় ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পরও একদল ইয়াহূদী তাঁর কার্যালয়ে প্রবেশ করে সামনাসামনী তাঁর মৃত্যু কামনা করল। ইয়াহূদীরা এ ক্ষেত্রে যে কুটকৌশলের অপচেষ্টা করল তা এ যে, ‘সালাম’ শব্দের প্রায় সমোচ্চারিত শব্দ ‘সাম’ ব্যবহার করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বোকা বানিয়ে পাশ কেটে পার পেয়ে যেতে চাইল আর সীদ্ধান্ত নিয়ে রাখল যে, যদি এ জন্যে তিনি তাদেরকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেন তাহলে তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলে দিবে আমরা তো ‘আস-সালামু’ বলেছি। অথচ বাস্তবতা তো এ যে, তারা যা বলতে চেয়েছে তার সবই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালোভাবেই শুনেছেন এবং বুঝেছেন। তা ছাড়া আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিনিও সেভাবে শুনেছেন। তারপরও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন রাষ্ট্রপ্রধানের মৃত্যু কামনার মতো গুরুতর অপরাধের জন্য বিচারিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন না। বললেন না যে, আমি এবং আয়েশাই তোমাদের বিপক্ষের সাক্ষী। পক্ষান্তরে তিনি ভদ্রতাসূচক শব্দ ‘ওয়া আলাইকুম’ তোমাদের ওপরও বলে তাদের কথার জবাব দিলেন। শুধু তাই নয়; বরং তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে সহিংসতা ও কঠোরতা থেকে নিষেধ করে সকল ক্ষেত্রে বিনম্র আচরণের আদেশ দিলেন। এমনকি সেটা যদি নিজের সামনে দাঁড়িয়ে মৃত্যু কামনাও হয়।

এর চেয়েও চমকপ্রদ ঘটনা হচ্ছে ইয়াহূদী পণ্ডিত যায়েদ ইবন সা‘নাহ-এর সাথে সংঘটিত ঘটনায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থান। যায়েদ ইবন সা‘নাহ বলেন, আমি মুহাম্মাদ (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর চেহারায় দৃষ্টিপাত করে দু’টি ছাড়া নবুওয়তের বাকী সকল নিদর্শন চিনতে পেরেছি। আমি ঐ দু’টি নিদর্শন তাঁর থেকে যাচাই করতে পারি নি।

«يسبق حلمه جهله، ولا يزيد شدة الجهل عليه إلا حلما»

“তাঁর ধৈর্য ক্রোধ থেকে অগ্রগামী হবে। কারো প্রচণ্ড নির্বুদ্ধিতাও তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে পারবে না।”

যায়েদ ইবন সা‘নাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবন আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সাথে নিয়ে কক্ষ থেকে বের হলেন এমতাবস্থায় রাখাল শ্রেণির মতো এক লোক নিজ বাহনে আরোহিত অবস্থায় তাঁর সামনে এলো। অতঃপর বলল, হে আল্লাহর রাসূল! অমুক গোত্রের গ্রামবাসী ইসলাম গ্রহণ করেছে। আর ইতোপূর্বে আমি তাদেরকে এ মর্মে অবহিত করেছিলাম যে, যদি তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো তাহলে স্বাচ্ছন্দপূর্ণ রিযিক প্রাপ্ত হবে, অথচ এখন অনাবৃষ্টির কারণে তাদের মাঝে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। হে আল্লাহর রাসূল, এহেন অবস্থায় আমি ভয় পাচ্ছি যে, ঐ লোকগুলো যেমন আশাবাদী হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিল তেমনি দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচার তাগিদে আবার ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় কি না? অতএব, আপনি যদি মুনাসিব মরে করেন তাহলে তাদের নিকট এমন কাউকে প্রেরণ করুন যে তাদেরকে সাহায্য করবে।

যায়েদ ইবন সা‘নাহ বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগন্তুকের পাশে এক ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে দেখলেন যে, তিনি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু। তখন উমার বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ ব্যক্তির আর কিছু বলার নেই।

যায়েদ ইবন সা‘নাহ বলেন, তখন আমি তাঁর নিকটবর্তী হলাম এবং বললাম: হে মুহাম্মাদ! আপনি কি আমার কাছে অমুক গোত্রের বাগানের নির্ধারিত পরিমাণ খেজুর অমুক মেয়াদে বিক্রি করবেন? তিনি বললেন, হে ইয়াহূদী এমনটি নয়; বরং নির্ধারিত পরিমাণ খেজুর অমুক মেয়াদে বিক্রি করব। তিনি কোনো নির্দিষ্ট বাগানের নাম উল্লেখ করেন নি। আমি বললাম, ঠিক আছে। তখন তিনি আমার কাছে খেজুর বিক্রি করলেন, আমি আমার টাকার থলি [. খোরপোশের ব্যায় রাখার থলি। যা কোমরে বেধে রাখা হয়। ইবন হাজার আসকালানী: ফাতহুলবারী( ৩/৩৯৭), ইবন মানযুর: লিসানুল আরব ( مادة : همي ) (১৫/৩৬৪।] বের করলাম এবং নির্ধারিত মেয়াদে নির্ধারিত খেজুরের জন্য তাঁকে আশিটি স্বর্ণ মুদ্রা দিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণমুদ্রাগুলো আগন্তুককে দিলেন এবং বললেন খুব দ্রুত ঐ গোত্রে চলে যাও এবং তাদের সাহায্য কর। যায়েদ ইবন সা‘নাহ বলেন, চুক্তি অনুযায়ী দুই বা তিন দিন মেয়াদ অবশিষ্ট থাকাবস্থায় একদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর, উমার, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমসহ একদল সাহাবীকে নিয়ে এক আনসার ব্যক্তির জানাযায় শরীক হলেন। জানাযা শেষে একটি দেয়ালের কাছে তিনি বসলেন। তখন আমি গিয়ে তাঁর জামার কলার টেনে ধরলাম এবং তাঁর দিকে রূঢ় দৃষ্টিতে তাকালাম। আর বললাম হে মুহাম্মদ! তুমি আমার অধিকার কেন আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছ না? আল্লাহ কসম! হে আব্দুল মোতালিবের সম্প্রদায়, তোমরা তো টালবাহানাকারী গোত্র। তোমাদের টালবাহানার ব্যাপারে আমি পূর্ব থেকেই জ্ঞাত আছি।

যায়েদ ইবন সা‘নাহ বলেন, তখন আমি উমার ইবনুল খাত্তাবের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম যে, ক্ষোভে তার চক্ষুদ্বয় ঘুর্ণায়মান নক্ষত্রের মতো তার চেহারায় আন্দোলিত হচ্ছে। অতঃপর আমার ওপর রূঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল: হে আল্লাহর দুশমন! তুমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যা করেছ এবং বলেছ আমি তা শুনেছি ও দেখেছি?! আফসোস! শপথ ঐ আল্লাহর যিনি তাঁকে সত্য দীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যদি আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি হারানোর ভয় [. রাসূলের পথ ও নির্দেশ অমান্য হওয়া যার কারণে আল্লাহ ও তার রাসুলের সন্তুষ্টি হারানোর ভয়। কেননা সে যে পরিমাণ অপরাধ করেছে, তাতে তাকে হত্যা করা বৈধ হয় না।] না করতাম তাহলে আমার এ তরবারি দ্বারা তোমার গর্দান কেটে ফেলতাম। এ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমারের দিকে শান্ত ও ভালোবাসাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন, অতঃপর বললেন, হে উমার! আমি এবং সে তোমার কাছে এর থেকে ভিন্নতর কিছুর আশা করেছিলাম। আমরা আশাবাদী ছিলাম যে, তুমি আমাকে উত্তমভাবে পরিশোধের অনুরোধ করবে এবং তাকে উত্তম পন্থায় চাওয়ার আদেশ করবে। হে উমার! তুমি একে নিয়ে যাও এবং তার পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা কর। আর তুমি তাকে ধমকানোর কারণে বিশ সা‘ খেজুর বেশি দিয়ে দিবে।

যায়েদ বলেন, উমার আমাকে নিয়ে গিয়ে আমার পাওয়া আদায় করে দিল, সাথে বিশ সা‘ খেজুর বেশি দিল। তখন আমি তাকে বললাম, অতিরিক্ত কী জন্যে দিচ্ছেন? উত্তরে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তোমাকে ধমকানোর জন্যে এ অতিরিক্তগুলো দিয়ে দিতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

(যায়েদ বলেন), আমি বললাম, হে উমার! তুমি কি আমাকে চিনতে পেরেছ? উমার বললেন, না, তুমি কে? তখন আমি বললাম, আমি যায়েদ ইবন সা‘নাহ, তিনি বললেন. ইয়াহূদী পণ্ডিত? আমি বললাম হ্যাঁ। আমিই পণ্ডিত। উমার বললেন, তুমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যা বললে এবং যে জঘন্য আচরণ করলে তা করতে তোমাকে কিসে উদ্বুদ্ধ করেছে? যায়েদ বলেন, আমি বললাম হে উমার, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারায় দৃষ্টিপাত করে দু’টি ছাড়া নবুওয়তের বাকী সকল নিদর্শন চিনতে পেরেছি। আমি যে দু’টি নিদর্শন তাঁর থেকে যাচাই করতে পারি নি তা হচ্ছে-

এক. তাঁর ধৈর্য তাঁর ক্রোধ থেকে অগ্রগামী হবে।

দুই. কারো প্রচণ্ড নির্বুদ্ধিতাও তাঁর ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে পারবে না।

এখন আমি এ দুইটাও যাচাই করে নিয়েছি। অতএব, হে উমার! আপনাকে সাক্ষ্য রেখে বলছি, ‘আমি আল্লাহকে আমার রব হিসেবে, ইসলামকে আমার দীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসেবে মেনে নিচ্ছি।’ আমি আপনাকে এ কথারও সাক্ষ্য রাখছি যে, আমার পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে তা থেকে অর্ধেক উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য দান করে দিলাম। এ কথা শুনে উমার বললেন, উম্মতে মুহাম্মাদীর কিছু লোকের জন্য তুমি দান কর। কেননা সকলের জন্য দান করার সামর্থ্য তোমার নেই। তখন আমি বললাম, কিছু লোকের জন্যই আমার দান। অতঃপর উমার এবং যায়েদ উভয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে এলেন এবং যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন,

«أشْهَدُ انْ لَا إله إلا الله و أن محمداً عبده و رسوله»

“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।” [. ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২৮৮; মুসতাদরাক আল-হাকিম, হাদীস নং ৬৫৪৭; বায়হাকী, হাদীস নং ১১০৬৬। হাকিম বলেন এ হাদীসের সনদ বিশুদ্ধ যদিও হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম তাখরীজ করেন নি। ত্বাবরানী বলেন, এ হাদীসের সকল বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।]

প্রিয় পাঠক! আপনি ঐ ইয়াহূদীর প্রতি লক্ষ্য করে দেখুন, সে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় এ মর্মে পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা চালিয়েছে যেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্রোধকে ক্রিয়াশীল করে তুলতে পারে। আর এর দ্বারা সে তাঁর নবুওয়াতের সত্যতাও যাচাই করে নিতে পারে। বস্তুত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো অহী ছাড়া অদৃশ্যের ইলম জানতেন না। উক্ত ঘটনায়ও এমন কোনো ইঙ্গিত নেই যার দ্বারা ইয়াহূদীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা লাভ হবে। সে তার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়েছে যেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তীব্র ক্রোধান্বিত করে তুলতে পারে এবং এ জন্য সে এমন একাধিক পন্থা অবলম্বন করেছে যার কোনো একটিতেই সাধারণ মানুষ রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে যেত।

প্রথমত: সে নির্ধারিত সময়ের পুর্বেই তার পাওনা চাইতে এসেছে। যে সময়ে চাওয়ার অধিকারই সে রাখে না।

দ্বিতীয়ত: সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামার কলার ও চাদরের সম্মুখভাগ কাছে ভিড়ানোর জন্য টেনে ধরেছে!! প্রিয় পাঠক! আপনি সে দৃশ্যটি একটু কল্পনা করে দেখুন যে, প্রকাশ্য জনসম্মুখে সাহাবাগণের মধ্যখানে এক ইয়াহূদী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামার কলার ও চাদর টেনে ধরেছে। এটি কত বড় দৃষ্টতা!!

তৃতীয়ত: সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে কপট দৃষ্টিতে তাকিয়েছে।

চতুর্থত: সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো উপাধি বা উপনাম ব্যতিরেকে দৃষ্টতাবশত সরাসরি নাম ধরে ডেকেছে, হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তুমি কি আমার পাওনা পরিশোধ করবে না?

পঞ্চমত: সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পূর্বসুরীগণ সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে বলেছে যে, আল্লাহর কসম, তোমরা আব্দুল মুত্তালিবের বংশধরেরা টালবাহানাকারী গোত্র।

সূধীবৃন্দ! এ পাঁচটি কারণে যে ধরণের সীমালঙ্ঘণ ও আগ্রাসী চিত্র ফুঠে উঠেছে তার সাথে আপনি এ বিষয়টিও যোগ করে ভেবে দেখুন যে, ঐ ইয়াহূদী এ দৃষ্টতাগুলো প্রদর্শন করছে এমন একজনের সাথে যিনি মদীনার প্রধান নেতা এবং মদীনার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। শুধু তাই নয় সে সময়টাতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবস্থান করছিলেন মুহাজির ও আনসারদের দ্বারা অর্জিত প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার ষোলকলা বেষ্টনিতে। এ সকল প্রেক্ষাপট নিয়ে যদি আপনি ভাবেন তাহলে আপনিসহ অধিকাংশ মানুষই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন যে, এ ধরণের সীমালঙ্ঘনকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বৈ কিছুই হতে পারে না। শুধু মৃত্যুদণ্ডের শাস্তিটুকুও তার ক্ষেত্রে যথেষ্ট না। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ শাস্তির প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা ইতিহাস অবলোকন করেছি। আমাদের মনোজগতকে স্তব্ধ করে দিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী করেছেন?!!

তিনি সকল আক্রমনাত্মক অভিব্যক্তিকে হজম করে নিয়েছেন। আমি একথা বলব না যে, তিনি শুধুমাত্র তাকে ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা বা বিবেচনাবোধের জন্য এমনটি করেছেন; বরং তিনি স্থির-মানসে মুসকি হেসে হর্ষচিত্তে সব কিছু মেনে নিয়েছেন। যেমনটি যায়েদ ইবন সা‘নাহ বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমারের দিকে শান্ত ও ভালোবাসাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন, অতঃপর বললেন, হে উমার! আমি এবং সে তোমার কাছে এর থেকে ভিন্নতর কিছু আশা করেছিলাম। আমরা আশাবাদী ছিলাম যে, তুমি আমাকে উত্তমভাবে পরিশোধের অনুরোধ করবে এবং তাকে উত্তম পন্থায় চাওয়ার আদেশ করবে!!

এ ধরণের উন্নত চরিত্র মাধূর্যের তাৎপর্য অনুধাবন করা সাধারণ রাজন্যবর্গ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রকারান্তে সকল মানুষের জন্যই অসাধ্য ও অকল্পনীয় ব্যাপার। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিনয় দেখুন! তিনি উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে উত্তমভাবে ঋণ পরিশোধের নসীহতের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অথচ তখনও ঋণ পরিশোধের সময়ই হয় নি। সেখানে অন্যের উপদেশের প্রয়োজনীয়তার তো প্রশ্নই আসে না। তথাপি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধুমাত্র ইয়াহূদীর মনের প্রশান্তি ও তার সাথে সম্পর্ক অটুট রাখার মানসে এরূপ মন্তব্য করেছেন।

এখানেই শেষ নয়, এতকিছুর পরও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বলে বিবৃতি দিয়েছেন যে, ন্যায়পরায়ণতা তো হবে এটাই যে, উমারের ধমকে তার মধ্যে যেই ভীতি সঞ্চার হয়েছে তার বিনিময়ে তাকে কিছু দেওয়া হোক। আর সে জন্য তাকে বিশ সা‘ খেজুর বেশি দিয়ে দিলেন।

এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক গৃহীত এ সকল সীদ্ধান্ত আবেগতাড়িত হয়ে সাময়িক আপোস চেষ্টা বা পরবর্তীতে সময় সাপেক্ষে চিন্তা-ভাবনা করে যথোপযুক্ত প্রতিশোধ গ্রহণের বাসনা নয়; বরং এটিই তার অকৃত্রিম যথাযথ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রতিক্রীয়া। সকল মানুষের সাথে তাঁর স্বভাবজাত আচরণই এমন। চাই সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম হোক। চাই সে উত্তম উপস্থাপনায় নিজেকে প্রকাশ করুক বা মন্দভাবে উদিত হোক।

বিশ্বের সকল রাজণ্যবর্গ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও ক্ষমতাধরদের কি উচিত নয় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ অনুপম অবস্থানের ইতিবৃত্ত অধ্যয়ন করা? যেন নিজেদের পারিপার্শ্বিক কর্মকাণ্ডকে ন্যায়পরায়ণতার মানদণ্ডে যাচাই করে নিতে পারে!

পৃথিবীর সভ্যতার ধারকবাহকদের কি উচিত নয় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাচার গভীরভাবে হৃদয়ঙ্গস করা? যেন নিজেদের চারিত্রিক মানদণ্ড ও মূল্যবোধকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র মাধুর্য্য অনুযায়ী পরিবর্তন করে নিতে পারে!

বাস্তবিকই আজকের বিশ্ব নবী চরিত্রের এ স্বচ্ছ সুধার বড়ই মুখাপেক্ষী। যে দিন বিশ্ববাসী এ অনন্য মহান চরিত্রকে অনুধাবন করতে পারবে সেদিন সন্দেহাতীতভাবে বিশ্ব পরিস্থিতি সমুলে পাল্টে যাবে এবং নানামুখী সংকট ও সমস্যা থেকে উত্তরণের প্রসস্ত পথ খুলে যাবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন