hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

অমুসলিমদের সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ প্রসঙ্গ

লেখকঃ ড. রাগিব আস-সারজানী

ইসলাম বিরোধীদের শেকড় সন্ধানে
হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক! এসব মিথ্যাবাদী অস্বীকারকারীদের বাস্তবিক জীবনাবস্থার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবো। খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, গোটা দুনিয়ার ইসলামবিদ্বেষী মানুষগুলো দুই শ্রেণিতে বিভক্ত। এক. হিংসুক। দুই. মূর্খ। হয়তো এদের কারো মধ্যে হিংসা ও মূর্খতা উভয়ই পাওয়া যাবে আর না হয় দুয়ের একটা অবশ্যই পাওয়া যাবে।

প্রথম শ্রেণি: হিংসুক

যারা হিংসুক তাদের দ্বারা ইসলামের বিরোধিতা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, বুদ্ধি-বিবেচনা, জ্ঞান-বিজ্ঞান কোনো কিছুই হিংসুকের হিংসাকে প্রশমিত করতে পারে না। হিংসুকরা দুনিয়ালোভী, স্বার্থবাদী হয়ে থাকে। এরা স্বভাবতই প্রতিপক্ষের সৌন্দর্য ও মাহাত্ম্যের কারণে মনের মধ্যে একধরণের ব্যাথা ও কষ্ট অনুভব করতে থাকে। এরা মানবতার এক বিকৃত শ্রেণি। কোনো দলিল-প্রমাণই এদের বিরোধিতার মাত্রাকে হ্রাস করতে পারে না। এদের ব্যাপারেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَجَحَدُواْ بِهَا وَٱسۡتَيۡقَنَتۡهَآ أَنفُسُهُمۡ ظُلۡمٗا وَعُلُوّٗاۚ فَٱنظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ١٤﴾ [ النمل : ١٤ ]

“আর তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করল অথচ তাদের অন্তর তা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করেছিল। অতএব দেখ, ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ১৪]

এ হিংসুক শ্রেণিতে রয়েছে বড় বড় অপরাধী, ফিৎনা ও গুমরাহীর মূল হোতা এবং অভিশপ্ত ইবলিসের চেলা-চামুন্ডারা। এরা সব যুগেই ছিল। কোনো নবী, ওলী বা সিদ্দিীক; কারো জীবনকালই এ শ্রেণি থেকে মুক্ত ছিল না। সব ক্ষেত্রেই এরা সত্য, সুন্দর ও শৃঙ্খলার শত্রু। সব সময়ই এরা অসত্য, অসুন্দর ও উশৃঙ্খলার বাহক। এদের আধ্যাত্মিক ও মূল চালিকাশক্তি ইবলিস হলেও এরা মানুষের মধ্য হতে এমন কিছু দূর্ভাগাকে নিজেদের নেতা বানিয়ে নেয় যাদের ভালো-মন্দের অনূভূতি শক্তির মৃত্যু ঘটেছে, যাদের স্বভাবে ধরেছে পঁচন, অন্তর হয়ে গেছে কালিমাযুক্ত এবং অন্তর্দৃষ্টি হয়ে গেছে অন্ধ। ফলে তারা নিজেদের ও অধিনস্থদের জন্য একমাত্র গোমরাহী এবং ভ্রষ্টতার পথ বেচে নেয়। সত্য ও কল্যাণের প্রতি আহ্বানকারী সকল কিছু থেকেই পূর্ণ বিমুখতা প্রদর্শন করে এবং সত্য ও কল্যাণের ধারক-বাহক ব্যক্তি বা আদর্শের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ করে।

এ শ্রেণিরই অন্তর্ভুক্ত ছিল ফির‘আউন, হামান ও কারূন। আবু জাহল, উবাই ইবন খালফ ও আবু লাহাব এ দলেরই অংশ। এ ক্যাটাগরীতেই ছিল কিসরা ও কাইসার। হুয়াই ইবন আখতাব এবং কা‘আব ইবন আশরাফও এদের বাইরে নয়।

এদের মধ্যে কেউ রাজা-বাদশাহর পোষাকে আত্মপ্রকাশ করে আবার কেউ ধরে সাধু-সন্ন্যাসিদের বেশ। কেউ তরবারী তুলে নেয় এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায় আবার কেউ কলম হাতে নিয়ে ব্যাঙ্গ ও কটুক্তিতে লেগে যায়। এদের মধ্যে রয়েছে ইয়াহূদী, খ্রিস্টান, মুশরিক ও অগ্নিপূজক। রয়েছে নাস্তিক। রয়েছে মুসলিম নামধারী মুনাফিকরাও। যেমন আব্দুল্লাহ ইবন উবাই ইবন সালূল-এর ঘটনা কারো কাছেই অজানা নয়।

এরা বড় ভয়ংকর প্রজাতি। মুসলিমদের সব সময় এদের মুখোস উন্মোচন, এদের ষড়যন্ত্র ও নীল নকশার স্বরূপ উদঘাটনের এবং বিশ্ববাসীকে এদের অনিষ্ট ও অপকর্ম থেকে সতর্ককরণের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়। এত ভয়ংকর হওয়া সত্যেও খুশির বিষয় হলো এরা সংখ্যায় অতি স্বল্প। সারা দুনিয়ার ইসলামবিরোধী জনগোষ্টির তুলনায় এরা সমুদ্রের মাঝে কয়েক ফোটা পানির ন্যায়। যেমন, সমগ্র মিসরবাসীর তুলনায় ফির‘আউন, হামান ও কারূন কী? গোটা মক্কাবাসীর সামনে আবু জাহল, উবাই ইবন খালফ ও আবু লাহাব কয় জন? ফারস্য, ইরাক ও এতদুভয়ের আশ-পাশের গণমানুষের তুলনায় কিসরার অবস্থান কোথায়? শাম, এশিয়া মাইনর ও ইউরোপের খ্রিস্টানদের মধ্যে হিরাক্লিয়াসই বা কয় জন?

হিংসা ও খলতার ফাঁদে বন্দী এ শ্রেণির লোকেরা স্বেচ্ছায়, সাগ্রহে, জেনে-বুঝে ইসলামের মাহাত্ম্য ও নবী চরিত্রের পবিত্রতার ব্যাপারে পূর্ণ ওয়াকেফহাল হয়েই কেবল হিংসার বশবর্তী হয়ে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরোধিতা করে এবং সত্যনিষ্ঠ মহামানবের চরিত্রে কলঙ্ক লেপনের অপচেষ্টায় ব্যস্ত থাকে। তবে ইসলামের নিন্দাবাদে লিপ্ত, বিরুদ্ধাচারী ও লোকদেরকে ইসলাম থেকে বাধা প্রদানকারী মোট জনগোষ্ঠির তুলনায় এ হিংসুক শ্রেণি হাতে গণা কয়েকজন মাত্র।

দ্বিতীয় শ্রেণী: মূর্খ

প্রিয় পাঠক! তাহলে ইসলাম বিদ্ধেষীদের অবশিষ্ট বৃহদাংশ কোন শ্রেণির? হ্যাঁ তারা এ প্রথম শ্রেণির হিংসুকদের অন্ধ অনুসারী মূর্খ শ্রেণির লোক। যারা অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অপ-প্রচার ও তথ্য সন্ত্রাসের শিকার। যারা ইসলাম সম্পর্কে সঠিক উৎস থেকে ধারণা লাভ করতে পারে নি। যাদের নিকট ইসলামের বিকৃত রূপ তুলে ধরা হয়েছে। যাদেরকে এ ধারণ দেওয়া হয়েছে যে, ইসলাম হলো নিছক কিছু অসংলগ্ন নব আবিস্কৃত বিষয়াবলি, কষ্টদায়ক অন্ধ অনুকরণ এবং কতিপয় বিকৃত চিন্তা-চেতনার নাম মাত্র। ফলে তারা ইবলিসদের পেছনে বকরীর পালের মতো ছুটে চলেছে এবং নিজেদের বাহনজন্তুকে তাদের পতনের পথে ছুটিয়ে দিয়েছে আর তারা ধারণা করছে যে, তারা ভালো কাজই করছে। এদের মধ্যে কেউ হয়ত একেবারেই মূর্খ; জ্ঞানের আলো যাদেরকে সঠিক পথ দেখাতে পারে, আবার কেউ স্বল্প জ্ঞানী; বিস্তারিত ব্যাংখ্যা-বিশ্লেষণ যাদের সন্দেহ-সংশয় দূর করতে পারে কিংবা কেউ মোটামুটি জ্ঞানের অধিকারী; দলীল প্রমাণের বর্ধিত জ্ঞান যাদেরকে সত্যের পথে সুপ্রতিষ্ঠিত করে দিতে পারে। মোটকথা এ দ্বিতীয় শ্রেণির লোকদের শুধু জ্ঞান প্রদীপের অভাব। এরা জ্ঞান-দরিদ্র জনসাধারণ। এরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আগ্রহী হয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয় না এবং মন থেকে ইসলামের বিরোধিতাও করে না। এরা জেনে-বুঝে স্বেচ্ছায় সাগ্রহে এবং সংকল্পের সাথে ইসলামের বিরোধিতা ও নবী চরিত্রে কলঙ্ক লেপনে লিপ্ত হয় না। ইতিহাসের পৃষ্ঠা ওল্টালে আমরা কী দেখতে পাই? ফারস্যের জনসাধারণ কি ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল? নাকি ইসলাম বিরোধী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল শুধুমাত্র কিসরা তার সুবিধাভোগী উজির-উমারা এবং তার বশিভূত কিছু সৈনিকদের দ্বারা? ফারস্যের জনসাধারণ বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ এ বিশ্বাস লালন করে এসেছে যে, আগুন তাদের প্রভূ, বংশ পরম্পরায় কিসরা তাদের নেতা এবং মযদক [মযদক, প্রখ্যাত ফারস্য দার্শনিক, আনুশারওয়া এর পিতা কবায কিসরা এর যুগে যার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। কবায কিসরা তার মাযহাবের অনুসরণ শুরু করে, ছেলে আনুশারওয়া তা জানতে পেরে তাকে হত্যা করে ফেলে।] ও তার অনুসারীদের ধর্মই তাদের সঠিক ধর্ম। এভাবেই দিন অতিবাহিত হচ্ছিল। হঠাৎ তাদের মাঝে ইসলামের স্বচ্ছ-সুন্দর বাণী উপস্থাপিত হলো। তাদের চোখের পর্দা সরিয়ে ফেলা হলো। তাদের নেতা ও সর্দাররা তাদের কানে সত্য ও সুন্দরের প্রতিবন্ধক এবং ভ্রষ্টতার যে সরঞ্জামাদী স্থাপন করে রেখেছিল তা বিদূরিত করা হলো। ফলে অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে তারা তাদের বিপদগামিতার স্বরূপ উদঘাটন করে ফেলল, ইসলামের মাহাত্ম্য ও সৌন্দর্য স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করল এবং অতি নিকট থেকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উন্নত স্বভাব ও বিজ্ঞান সম্মত কথা-বার্তা, চাল-চলন অবলোকন করল। অতঃপর কোনো প্রকার জোর-জবরদস্তি ছাড়াই পূর্ণ আগ্রহ ও আন্তরিকতার সাথে ইসলামকে গ্রহণ করে নিল। আল্লাহর শপথ! কাউকে ইসলামে দীক্ষিত করতে আমাদের কোনো বল প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না এবং কারো চেতনা-বিশ্বাসে চাপ সৃষ্টির চেষ্টাও করি না। উপরন্তু আমরা জোর-জবরদস্তী ও চাপ সৃষ্টি না করতে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِۖ قَد تَّبَيَّنَ ٱلرُّشۡدُ مِنَ ٱلۡغَيِّۚ﴾ [ البقرة : ٢٥٦ ]

“দীন গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় হিদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৬]

ফারস্য জাতির সামনে ভ্রষ্টতা থেকে হিদায়াত বা সৎপথ স্পষ্ট হয়ে গেছে। তারা সত্যকে পেয়ে গেছে এবং স্পষ্টভাবে হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য বুঝে ফেলেছে। ফলে ফারস্যের বৃহৎ জনগোষ্ঠি তাদের স্বভাবজাত প্রবৃত্তির পথ অবলম্বন করেছে। যে স্বভাবজাত প্রবৃত্তির বীজ আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিটি বান্দার অন্তরে গচ্ছিত রেখেছেন।

﴿فِطۡرَتَ ٱللَّهِ ٱلَّتِي فَطَرَ ٱلنَّاسَ عَلَيۡهَاۚ﴾ [ الروم : ٣٠ ]

“আল্লাহর প্রকৃতি, যে প্রকৃতির ওপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন।” [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৩০]

অধিকাংশ ফারস্যবাসীই ইসলাম গ্রহণ করেছে। মিথ্যা, অস্বিকার ও বিরোধিতার ওপর অবিচল থাকে নি। তবে নেতৃস্থানীয় কাফিরদের কথা ভিন্ন; যারা জেনে-বুঝে হিংসা ও অংকারবশত স্বধর্ম ত্যাগ করে নি।

হুবহু একই ঘটনা ঘটেছিল শাম, মিসর, উত্তর আফ্রিকার জনগণ এবং স্পেন, এশিয়া মাইনর ও পশ্চিম ইউরোপের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ব্যাপারেও। এমনকি পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং হিন্দুস্থান প্রভৃতির জনসাধারণের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য।

অস্ত্র ও তরবারীর জোরে নয়; বরং দলীল প্রমাণ ও আপন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ইসলাম চিরবিজয়ী দীন। ইসলামের সঠিক দাওয়াত ও নবীচরিত্রের বাস্তবিক বিবরণ তুলে ধরতে পারলেই মানুষের হিদায়াতের জন্যে আর কিছুর প্রয়োজন নেই। দলে দলে লোক ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গহণের জন্য শুধুমাত্র ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়াই যথেষ্ট। এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿فَهَلۡ عَلَى ٱلرُّسُلِ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُ ٱلۡمُبِينُ ٣٥ ﴾ [ النحل : ٣٥ ]

“আর রাসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া নয় কি?” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৫]

﴿وَمَا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُ ٱلۡمُبِينُ ٥٤﴾ [ النور : ٥٤ ]

“আর রাসূলের দায়িত্ব তো শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫৪]

﴿فَإِن تَوَلَّيۡتُمۡ فَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّمَا عَلَىٰ رَسُولِنَا ٱلۡبَلَٰغُ ٱلۡمُبِينُ﴾ [ المائ‍دة : ٩٢ ]

“তার পর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রাখ যে, আমার রাসূলের দায়িত্ব শুধু সুস্পষ্ট প্রচার।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৯২]

পবিত্র কুরআনে এ ধরণের অসংখ্য আয়াত রয়েছে, যার সবগুলো উল্লেখ করা দুরূহ ব্যাপার।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে মুসলিমরা যদি তাদের ধর্মের পয়গাম ও যথাযথ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সকলের কাছে পৌঁছে দিতে এবং নবীচরিত্রের সৌন্দর্যগুলো অন্যের নিকট তুলে ধরতে অক্ষম হয় তাহলে এর ফলাফল কী দাঁড়াবে? এ ব্যাপারে মুসলিমদের অক্ষমতা বিকৃত মতাদর্শের ধ্বজাধারীদের এবং ভ্রষ্টতা ও গোমরাহীর ধারক-বাহকদের জন্য এ পথ উন্মুক্ত করে দেয় যে, তারা নিজেদের মতো করে জনসাধারণের সামনে ইসলামের একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করায় এবং এর ফাঁকে নিজেদের রচিত মতাদর্শের দাওয়াত গলাধকরণ করায়। আর মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে সমাজবদ্ধভাবে কারো নেতৃত্ব মেনে চলা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তাই ইসলামের ধারক-বাহকগণ যখন ইসলামের দাওয়াত, ইসলামী দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্বদানে উদাসিনতা এবং অক্ষমতা প্রদর্শন করে তখন এর ফলাফল কী দাঁড়ায়? আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে সে দিকেই ইঙ্গিত করেছেন:

«إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنْ الْعِبَادِ وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا»

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মানুষের অন্তর থেকে ইলম কেড়ে নেবেন না। তবে তিনি ‘আলেম শ্রেণিকে কবয করে ইলম তুলে নেবেন। যখন কোনো আলেম থাকবে না তখন লোকেরা মূর্খ লোকদের নেতা বানিয়ে নেবে। তাদের কাছে ফাতওয়া চাওয়া হবে এবং তারা না জেনে ফাতওয়া দিবে। এতে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং লোকদেরও পথভ্রষ্ট করবে।” [. সহীহ বুখারী ( كتاب العلم : باب كيف يقبض العلم ) হাদীস নং ১০০। সহীহ মুসলিম ( كتاب العلم : باب رفع العلم و قبضه ) হাদীস নং ২৬৭৩।]

পৃথিবীতে মুসলিমদের ভূমিকা ও দায়িত্বের ব্যাখ্যা সম্বলিত প্রখ্যাত সাহাবী রব‘ঈ ইবন ‘আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু [. ফারস্য অভিযানে অংশগ্রহণকারী বিখ্যাত এক সাহাবী। সা‘দ ইবন আবি ওয়াক্কাস যাকে রুস্তমের নিকট দূত হিসেবে পাঠিয়েছেন। খুরাসান বিজয়ের পর আহনাফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে তাখারিস্তানের গভর্ণর বানিয়ে পাঠিয়েছেন।] এর একটি চমৎকার প্রজ্ঞাময় উক্তি রয়েছে। তিনি বলেন,

الله ابتعثنا لنخرج من شاء من عبادة العباد إلى عبادة الله، ومن ضيق الدنيا إلى سعتها، ومن جور الأديان إلى عدل الإسلام

“আল্লাহ আমাদেরকে (মুসলিমদেরকে) সৃষ্টি করেছেন মানুষকে মানুষের গোলামী থেকে মুক্তি দিয়ে আল্লাহর গোলামীর দিকে, সংকীর্ণতা থেকে প্রসস্ততার দিকে এবং অন্যান্য মতাদর্শগুলোর অবিচার থেকে মুক্ত করে ইসলামের সাম্য ও সম্প্রীতির দিকে বের করে আনার লক্ষ্যে।” [. আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ৭ম খণ্ড ৪৩ পৃষ্ঠা।]

এ দায়িত্ব ও ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মহান। মুসলিমদের সর্বদা এ দায়িত্বের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা একান্ত জরুরী। কারণ যারা আমাদের বিরোধিতা করছে তাদের অধিকাংশ আমাদের পরিচয় পায় নি। আমাদেরকে যারা ঘৃণার চোখে দেখছে, তাদের অনেকেই আমাদের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে বে-খবর। আমাদের উচিৎ আমাদের দীন ও নবীচরিত্রের পূর্ণতা ও মাহাত্ম্যের ক্ষেত্রগুলোকে খুলে খুলে বিশ্লেষণ করা। প্রয়োজন আমাদের কথা আমাদেরই মুখে বলা। আমাদের আখলাক-চরিত্রের বিষয়গুলো আমাদেরই কলমে লেখা। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনেতিহাস আমাদেরই ভাষায় রচিত হওয়া। আমি ইংরেজি ভাষায় ইসলাম সম্পর্কে লেখা বই খোঁজার জন্য ইউরোপ আমেরিকার বড় বড় লাইব্রেরীগুলোতে প্রবেশ করেছি, সেখানে আমি ইসলাম ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে লেখা হাজারো বই দেখতে পেলাম; কিন্তু আফসোসের সাথে বলতে হয় যে, সেগুলোর অধিকাংশই রচিত হয়েছে অমুসলিমদের হাতে। ফল যা হবার তাই হয়েছে, খুব কম লেখকই ইসলামের সঠিক রূপরেখা তুলে ধরেছেন এবং সততার পরিচয় দিয়েছেন। অবশিষ্ট অনেকেই নিজেদের রুচি মতো বিকৃতি সাধন, মিথ্যারোপ, অপব্যাখ্যা ও অবিচার করতে ছাড়েন নি।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন