মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
অমুসলিমদের সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ প্রসঙ্গ
লেখকঃ ড. রাগিব আস-সারজানী
১৪
তৃতীয় পরিচ্ছেদ: অমুসলিমদের প্রশংসা করা প্রসঙ্গে
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/400/14
সম্বোধনের ক্ষেত্রে নম্রতা, কোমলতা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশই শুধু নয় বরং আরো আগে বেড়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো অমুসলিমদের প্রশংসা এবং গুণাগুণও করতেন। নিম্নে কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেখুন।
এক. হুদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তির ব্যাপারে কথা বলতে আসা মক্কার প্রতিনিধি কাফির নেতা সুহাইল ইবন আমরের [. সুহাইল ইবন আমর ইবন লুওয়াই ইবন গালিব। জাহেলী যুগে কুরাইশের নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিদের একজন ছিলেন। অনেক বড় বাগ্মী বক্তা ছিলেন। বদর যুদ্ধে মুসলিমদের হাতে যুদ্ধবন্দি হয়েছিলেন। যুদ্ধবন্দি থাকাকালে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছিলেন: ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি তার সামনের দাঁতগুলো ফেলে দেব, ফলে সে আর আপনার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে পারবে না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না তাকে ছেড়ে দাও, হয়ত একদিন সে এমন অবস্থানে গিয়ে দাড়াবে যে, তুমিও তার প্রশংসা করবে’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের পরে মক্কার অনেক নতুন মুসলিমরা যখন মুরতাদ হয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিলেন এবং মুসলিম হয়ে গেলেন। তখন এক বক্তব্যে তিনি বলেছেন, “আল্লাহর শপথ! এ দীন সূর্যের উদয়স্থল থেকে অস্ত যাওয়ার স্থান পর্যন্ত প্রসার লাভ করবে” এবং রাসূলের ইন্তেকাল পরবর্তী সময়টিতে মদীনায় আবু বকরের ন্যায় মক্কায় তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের ভূমিকা পালন করেছেন।] প্রশংসা করতে গিয়ে মুসলিমদেরকে লক্ষ্য করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لقد سهل أمركم»
“(প্রতিনিধি হিসেবে সুহাইলের আগমনের ফলে) তোমাদের জন্য ব্যাপারটি অনেক সহজ হয়ে গেছে।” [. সহীহ বুখারী, ( كتاب الشروط، باب الشروط في الجهاد والمصالحة مع أهل الحرب ) হাদীস নং ২৫৮১।]
কারণ, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বভাবগত নম্রতা ও সৌন্দর্য সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন।
দুই. সপ্তম হিজরীর ঘটনা। খালেদ ইবন ওয়ালীদ তখনো ইসলাম গ্রহণ করেন নি। ইতিঃপূর্বে তিনি উহুদ, খন্দক ও হুদায়বিয়ার ঘটনাসহ বিভিন্ন রণক্ষেত্রে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা পালন করেছেন। তার ভাই ওয়ালীদ ইবন ওয়ালীদ তখন ছিলেন মুসলিম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়ালীদকে লক্ষ্য করে আশ্চার্যান্বিত হওয়ার ভঙ্গিতে বলছেন, খালেদ কোথায়? (অর্থ্যাৎ সে কেন এখনো ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছে না?)। ওয়ালীদ বলল, ‘আল্লাহ তাকেও নিয়ে আসবেন’। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«ما مثله جهل الإسلام، ولو كان جعل نكايته وجده مع المسلمين على المشركين لكان خيرا له، ولقدمناه على غيره»
“তার মতো (বিচক্ষণ) ব্যক্তি তো ইসলামকে না বুঝার কথা নয়। সে যদি তার শক্তি-সামর্থ্যকে ইসলামের পক্ষে কাফিরদের বিরুদ্ধে ব্যয় করতো তাহলে এটা তার জন্য অনেক ভালো হতো এবং আমরা তাকে অন্যান্যদের তুলনায় এগিয়ে দিতাম।” [. ইমাম যাহাবী, তারীখুল ইসলাম, ১/২৯৩।]
দেখুন, খালেদ ইবন ওয়ালীদের সাথে সম্পৃক্ত অনেকগুলো কষ্টদায়ক ঘটনা স্মৃতিতে থাকা সত্ত্বেও বিশেষ করে উহুদ যুদ্ধের যন্ত্রনাদায়ক ভোগান্তির কথাও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার প্রশংসা থেকে বিরত রাখতে পারে নি। তিনি তার জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার প্রতি আশ্চার্যান্বিত হয়ে বলছেন যে, ‘সে কেন এখনো ইসলাম থেকে দূরে? তিনি তাঁর যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শিতা ও সৈনিক হিসেবে অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলছেন যে, ‘সে যদি আমাদের পক্ষে চলে আসে তাহলে আমরা তাকে অন্যান্যদের তুলনায় এগিয়ে দেব।’ এতদিন যারা জীবন বাজি রেখে ইসলামের জন্য যুদ্ধ করেছে ঐ সকল অগ্রজ ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবীদের তুলনায় তিনি তাকে এগিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। এটা খালেদ ইবন ওয়ালীদের আল্লাহ প্রদত্ত অসাধারণ প্রতিভা ও বৈশিষ্ট্যের মূল্যায়ন বৈ কিছুই নয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাহলে একজন সেনাপ্রধানের জন্য নিজের ঘোরতর শত্রু এক প্রতিপক্ষ সৈনিকের এহেন অকৃত্রিম প্রশংসা করা কি এত সহজ ব্যাপার?
তিন. আরবের কবি লবীদ ইবন রবী‘আহ [. কবি লবীদ ইবন রবী‘আহ আমেরী, পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। অধিকতর জানতে দেখুন: ইবন হাজার-এর ‘আল-ইসাবাহ’ (৭৫৪০)।] তখনো কাফির ছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কবিতার প্রশংসা করে বলেন:
«أصدق كلمة قالها الشاعر كلمة لبيد " ألا كل شيء ما خلا الله باطل "»
“কবিরা যেসব কথা বলে, তন্মধ্যে লবীদের কথাটাই সবচেয়ে বেশি সত্য যে, (সে বলেছে) ‘শোন! আল্লাহ ব্যতীত সব কিছুই বাতিল।” [. সহীহ বুখারী, ( كتاب الآداب ،باب ما يجوز من الشعر والرجز ) হদীস নং ৫৭৯৫; সহীহ মুসলিম كتاب الشعر ) ) হাদীস নং ২২৫৬।]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে কবিতার চর্চা করতেন না এবং তেমন বেশি শুনতেনও না। তারপরও কবিতায় ভালো বিষয়বস্তু উপস্থাপনের কারণে তিনি একজন মুশরিক কবির প্রশংসা করতেও দ্বিধাবোধ করেন নি। অথচ মুসলিমদের মধ্যেও হাসসান ইবন সাবিত, কা‘আব ইবন মালিক ও আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহা প্রমুখ ভালো ভালো কবি ও সাহিত্যিকগণ বিদ্যমান ছিলেন।
চার. এবার দেখুন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি মুশরিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করছেন যারা তাঁর দাওয়াতে সাড়া দেয় নি, তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে নি এবং ইসলাম গ্রহণ করতে সরাসরি অপারগতা প্রকাশ করেছিল। এর কারণ হলো, তিনি যখনই নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে তাদের মধ্যে কোনো ইতিবাচক গুণ দেখতে পেলেন তখনই তার প্রশংসাও করে দিলেন অথচ তাদের মধ্যে অনেক নেতিবাচক দিক বা দোষও বিদ্যমান ছিল। এটি ছিল বনু শায়বান গোত্র। এরা ইরাকের নিকটবর্তী আরব উপদ্বীপের উত্তর পূর্ব এলাকায় বসবাস করত এবং ফারস্য সাম্রাজ্যের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাদের অধীনতা স্বীকার করে থাকত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত নিয়ে গেলে তারা অত্যন্ত সদাচরণ করেছিল এবং কথাবার্তায় বেশ ভদ্রতার পরিচয় দিয়েছিল; কিন্তু তারা ফারস্য সম্রাটের ভয়ে ইসলাম গ্রহণে স্পষ্ট অসম্মতি জানিয়ে ছিল। দেখুন, এখানে সভ্যতা ও আভিজাত্য পরিপন্থি তাদের কতগুলো নেতিবাচক দিক বা দোষ ফুটে উঠেছে। যেমন, ইসলামের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার অভাব হেতু ইসলাম গ্রহণে পিছিয়ে থাকা, ফারস্য সম্রাট কিসরার ভয়ে কাপুরুষতা প্রদর্শন, মযলুম মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে না আসা এবং সংকল্প ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দ্বিধা-দন্ধে ভোগা ইত্যাদি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসবের দিকে দৃষ্টি না রেখে শুধুমাত্র তাদের অন্য একটি ইতিবাচক গুণের প্রশংসা করে বললেন,
«ما أسأتم في الرد إذ أفصحتم بالصدق وإن دين الله لن ينصره إلا من حاطه من جميع جوانبه أرأيتم أن لم تلبثوا إلا قليلا حتى يورثكم الله أرضهم وديارهم وأموالهم ويفرشكم نساءهم أتسبحون الله وتقدسونه»
“তোমরা স্পষ্ট অপারগতা প্রকাশ করে কোনো মন্দ কাজ করো নি। বস্তুত যেই আল্লাহর দীনকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে তার ওপরই সব দিক থেকে বিপদাপদ নেমে এসেছে। তোমাদের কী অভিমত, যদি আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে না হয় যে, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের বাস্তুভিটা, তাদের জনপদ ও ধন-সম্পদের মালিক বানিয়ে দেন এবং তাদের মহিলাদেরকে তোমাদের অধীন করে দেন তাহলে কি তোমরা এক আল্লাহর তাসবীহ পাঠ ও তার পবিত্রতা বর্ণনা করবে না?”
এ কথার পর তাদের মধ্য থেকে নু‘মান ইবন শারীক বলে উঠল, ‘হে আল্লাহ! যেন তাই হয়’ (আল্লাহ আপনার কথা কবূল করুন)। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত আয়াতদ্বয় তেলাওয়াত করলেন:
“হে নবী, আমরা আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী ও আলোকদৃপ্ত প্রদীপ হিসেবে।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪৫-৪৬]
অতঃপর তিনি উঠে গেলেন এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাত ধরে বললেন,
«يا أبا بكر أية أخلاق في الجاهلية ما أشرفها بها يدفع الله عز وجل بأس بعضهم عن بعض وبها يتحاجزون فيما بينهم»
“হে আবু বকর, জাহেলী যুগে কোন মহান চরিত্রের দ্বারা আল্লাহ তাদের মধ্যকার পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করতেন এবং তারা নিজেদের ঝগড়া-বিবাধের সমাধান করত?” [. দালাইলুন নাবুওয়াহ লিল বায়হাকী (২/৪২২-৪২৭); দালাইলু আবী নাঈম (১/২৩৭-২৪২); ইবন কাসীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ (৩/২৬৪-২৬৫)।]
দেখুন, এখানে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে কোনো মন্তব্য করেন নি। বলেন নি যে, তোমাদের মধ্যে অমুক অমুক গুণের অভাব রয়েছে; বরং তিনি তাদের ইতিবাচক গুণটির প্রশংসা করেছেন। আর তা হলো তাদের সদাচরণ ও স্পষ্টবাদিতা। কেননা, প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করে কিছুদিন পর ধর্মত্যাগ করে পূণরায় আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়া সবদিক থেকেই ক্ষতিকর। তাই কোনো ভয়-ভীতি বা উদ্বেগের কারণে ইসলাম গ্রহণ করতে না পারলে প্রথমেই তা বলে দেওয়া। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির জন্য সময় নেওয়া অনেক ভালো এবং তাদের ইসলাম গ্রহণের অপারগতা প্রকাশের ধরণটিও ছিল বেশ ভদ্রতা ও শিষ্টাচারপূর্ণ।
তারা কোনো প্রকার দাম্ভিকতা ও অহংকার প্রকাশ না করেই বিনয়ের সাথে আরয করল যে, যদি ইসলাম পারস্য সম্রাটের চেয়েও অধিক শক্তিশালী হয়ে যায় তাহলে তারা নিজেদের মতো থেকে ফিরে আসবে এবং অবশ্যই ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেবে।
মুশরিক সম্প্রদায়টির সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্ত আচরণগত অবস্থানটি ইসলোম ধর্মের কেন্দ্রীয় নীতিমালাসমূহেরই অংশ। যাকে অমুসলিমদের সাথে আলাপচারিতার ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহ মডেল হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।
এখানে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো প্রকার কৃত্তিমতা ও মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া ছাড়াই অন্যের মাঝে বিদ্যমান সৌন্দর্য্য ও গুণাবলীর প্রশংসা করেছেন। এটা মূলত বাস্তব-সত্যকে স্বীকৃতিদানের প্রবণতা বৈ কিছুই নয়। আবার অমুসলিমদের মন গলানো ও তাদের অন্তরকে ইসলামের প্রতি ধাবিতকরণের জন্যেও এ ধরণের আচরণ অনেক ফল বয়ে আনে।
পাঁচ. অমুসলিমদের প্রতি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান প্রদর্শনের আরেকটি উজ্জল দৃষ্টান্ত হলো আবিসিনিয়ার খৃস্টান রাজা নাজ্জাসীর অনবরত প্রশংসা করার আগ্রহবোধ। তিনি কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই প্রায় বলতেন:
“সেখানকার বাদশার নিকট কেউ অত্যাচারিত হয় না। সে দেশ সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত।” [. মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৮৩০৪; সীরাতে ইবন হিশাম (২/১৬৪)।]
এখানে তিনি নাজ্জাশীর মাঝে বিদ্যমান একটি গুণের প্রশংসা করেছেন। এ ধরণের দু একটি প্রশংসনীয় গুণ তো মানুষ হিসেবে সব মানুষের মাঝেই আছে; কিন্তু কয়জন আমরা অন্যের সে গুণের অকপটে স্বীকৃতি দান বা প্রশংসা করতে পারি। এমনকি অনেক স্বল্প-জ্ঞানী সংকীর্ণমনা মুসলিমরা পর্যন্ত অমুসলিমদের প্রশংসা করা বা তাদের সাথে সদাচরণ করা থেকে বিরত থাকেন। তারা এ আশংকা বোধ করেন যে, এ ধরণের সদাচরণ তাদের সাথে এমন বন্ধুত্ব-স্থাপনের পর্যায়ে পড়ে কি না, যা আল-কুরআনে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। আমার মনে হয়, এখানে তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুদ্ধকালীন সময়ের বা শত্রু কাফিরদের সাথে আচরণ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় বা চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমদের সাথে আচরণের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে অক্ষম হয়েছেন।
এখানে আমরা নবী জীবনের একটি সূক্ষ্ম ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের আলোচনা করছি যা সবার আগে আমাদের মুসলিমদের সঠিকভাবে হৃদয়ঙ্গম করা জরুরী এবং এটাও বুঝা জরুরী যে, এটি আমাদের দীন; আমরা যার অনুসারী এবং যাকে নিয়ে আমাদের গর্ব করি। আর এ হচ্ছে আমাদের নবী; আমরা যার অনুকরণ করি এবং যাকে নিয়ে আমরা সম্মানবোধ করি।
আর এটি নিশ্চিত যে, বর্তমান বিশ্বের যে কোনো স্থানের মতো তৎকালীন আবিসিনিয়ার খৃস্টধর্মীয় কিতাবগুলোও বিকৃত ছিল। তথাপি এ বিকৃতিও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাদের গুণ বর্ণনা থেকে বিরত রাখতে পারে নি। শুধু তাই নয় বরং আরো আগে বেড়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হাবীবাহ বিনতে আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বিবাহ করার জন্য নাজ্জাশীকে উকিল নিযুক্ত করে তাকে আরো সম্মানিত করেছেন। [. ইবন কাসীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ (৪/১৬১)।] উম্মে হাবীবাহ রমলাহ বিনতে আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার স্বামী উবায়দুল্লাহ ইবন জাহাশসহ [. উবায়দুল্লাহ ইবন জাহাশ, মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করে স্বীয় স্ত্রী উম্মে হাবীবাহ রমলাহ বিনতে আবু সুফিয়ানসহ আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে খ্রিস্টান হয়ে যান এবং খ্রিস্টান অবস্থা্য়ই মৃত্যু হয়। অতঃপর উম্মে হাবীবাহকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহ করে নেন।] আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছেন। কিন্তু উবায়দুল্লাহ সেখানে গিয়ে দীন ত্যাগ করে খৃস্টান হয়ে যায়। [. মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ২৭৪৪৮, মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ৬৭৭০।] ফলে উম্মে হাবীবাহ তাকে ছেড়ে দেন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিয়ে করে নেন। আর সে বিয়ের উকিল নিযুক্ত করেন নাজ্জাশীকে। অথচ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পারতেন জা‘ফর ইবন আবু তালেবকে [. জা‘ফর ইবন আবু তালিব ইবন আবদুল মুত্তালিব, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর আপন ভাই। আকৃতি ও চারিত্রিক দিক থেকে তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। হাবশায় হিজরত করেছেন এবং খায়বার বিজয়ের দিন সেখান থেকে ফিরে আসলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আলিঙ্গন করে বললেন, আমি জানি না যে, কোন কারণে আমি বেশি খুশি; খায়বার বিজয়ের কারণে নাকি জা‘ফরের আগমনে? মু‘তার যুদ্ধের তিন প্রধানের মধ্যে তিনি একজন ছিলেন এবং সে যুদ্ধেই শাহাদাত বরণ করেন। অধিকতর জানতে: ইবন হাজার-এর ‘আল-ইসাবাহ’ (১১৬৭)।] উকিল বানাতে। কেননা সে ছিল মুহাজিরদের দলপতি আবার তাঁর আপন চাচাত ভাই কিংবা তিনি পারতেন উম্মে হাবীবার গোত্র তথা বনু উমাইয়্যার মধ্য হতে হিজরতকারীদের কাউকে উকিল বানাতে। কিন্তু তিনি নাজ্জাশী অবস্থানকে তা‘যীম করতে এবং তাকে সম্মান প্রদর্শন করতে চাইলেন ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/400/14
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।