মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
প্রথম আয়াতের প্রথম শব্দ اَلْفَجْرُ (আল-ফাজর) এর আলোকেই এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে। ফাজর অর্থ হচ্ছে, প্রতিদিনের ফজরের সময়।
নাযিলের সময় :
সকলের মতে, এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এটি এমন এক যুগে নাযিল হয়, যখন মক্কায় ইসলাম গ্রহণকারীদের উপর ব্যাপকভাবে নির্যাতন চলছিল।
সূরার বিষয়বস্তু :
এর বিষয়বস্তু হচ্ছে আখেরাতের শাস্তি ও পুরস্কারের সত্যতা প্রমাণ করা। মানব জাতির ইতিহাস থেকে প্রমাণ পেশ করে উদাহরণস্বরূপ আদ ও সামূদ জাতি এবং ফিরাউনের পরিণাম পেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যখন তারা সীমা পেরিয়ে গেছে এবং পৃথিবীতে ব্যাপক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে তখন আল্লাহর আযাব তাদেরকে গ্রাস করেছে।
তারপর মানব সমাজের সাধারণত নৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে তার দুটি দিকের সমালোচনা করা হয়েছে। (এক) সাধারণ মানুষের বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গী। যার ফলে তারা নৈতিক ভালো-মন্দের দিকটাকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র পার্থিব ধনসম্পদ, মর্যাদা ও প্রতিপত্তি অর্জন বা এর অভাবকে সম্মানহানির মানদন্ড গণ্য করেছিল। তারা ভুলে গিয়েছিল, সম্পদশালীতা কোন পুরস্কার নয় এবং আর্থিক অভাব অনটন কোন শাস্তি নয়; বরং এ দুটি অবস্থাতেই মহান আল্লাহ মানুষের পরীক্ষা নিচ্ছেন। সম্পদ লাভ করে মানুষ কী দৃষ্টিভঙ্গী ও কর্মনীতি অবলম্বন করে এবং আর্থিক অনটন ক্লিষ্ট হয়ে সে কোন পথে চলে- এটা দেখাই তাঁর উদ্দেশ্য। (দুই) লোকদের সাধারণ কর্মনীতি। পিতার মৃত্যুর সাথে সাথেই তাদের সমাজে এতীম ছেলেমেয়েরা চরম দুরাবস্থার সম্মুখীন হয়। গরীবদের খবর নেয়ার এবং তাদের পক্ষে কথা বলার একটি লোকও পাওয়া যায় না। যার ক্ষমতা থাকে সে মৃতের সমস্ত সম্পত্তি গ্রাস করে বসে।
সবশেষে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, হিসেব-নিকেশ অবশ্যই হবে। সেদিন তাদের বোধগম্য হবে। কিন্তু তখন কোন লাভ হবে না। অস্বীকারকারী সেদিন আফসোস করে বলবে, হায়! আজকের দিনের জন্য। কিন্তু এই লজ্জা ও দুঃখ তাকে আল্লাহর আযাব হতে বাঁচাতে পারবে না।
তবে যেসব লোক আসমানী কিতাব ও আল্লাহর নবীগণের পেশকৃত সত্য মেনে নিয়েছিল আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন এবং তারাও আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিদান পেয়ে সন্তুষ্ট হবে। তাদেরকে আহবান জানানো হবে, তোমরা নিজেদের রবের প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করো।
(১) وَالْفَجْرِ শপথ ফজরের, (২) وَلَيَالٍ শপথ রাত্রির عَشْرٍ দশ, (৩) وَالشَّفْعِ এবং জোড় وَالْوَتْرِ ও বেজোড়ের, (৪) وَاللَّيْلِ এবং শপথ রাত্রির اِذَا যখন يَسْرِ তা গত হতে থাকে, (৫) هَلْ فِيْ ذٰلِكَ এর মধ্যে আছে কি قَسَمٌ কোন শপথ لِذِيْ حِجْرٍ জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য। (৬) اَلَمْ تَرَ আপনি কি লক্ষ্য করেননি, كَيْفَ কিরূপ فَعَلَ আচরণ করেছিলেন رَبُّكَ আপনার পালনকর্তা بِعَادٍ আদ জাতির সাথে (৭) اِرَمَ ইরাম গোত্র ذَاتِ অধিকারী اَلْعِمَادِ সুউচ্চ স্তম্ভের (৮) اَلَّتِيْ যাদের لَمْ يُخْلَقْ সৃজিত হয়নি مِثْلُهَا তাদের মতো فِي الْبِلَادِ শহরসমূহে, (৯) وَثَمُوْدَ এবং সামূদ গোত্রের সাথে, اَلَّذِيْنَ যারা جَابُوْا কেটে (গৃহ) নির্মাণ করেছিল اَلصَّخْرَ পাথর بِالْوَادِ উপত্যকায়। (১০) وَفِرْعَوْنَ এবং ফিরাউনের সাথে ذِي الْاَوْتَادِ কীলকসমূহের অধিপতি, (১১) اَلَّذِيْنَ যারা طَغَوْا সীমালঙ্ঘন করেছিল فِي الْبِلَادِ সারাদেশে। (১২) فَاَكْثَرُوْا অতঃপর তারা বাড়িয়ে দিয়েছিল فِيْهَا সেখানে اَلْفَسَادَ অশান্তি। (১৩) فَصَبَّ অতঃপর মারলেন عَلَيْهِمْ তাদের উপর رَبُّكَ আপনার প্রতিপালক سَوْطَ কোড়া عَذَابٍ শাস্তির। (১৪) اِنَّ নিশ্চয় رَبَّكَ আপনার পালনকর্তা لَبِالْمِرْصَادِ ঘাঁটিতেই আছেন।
সরল অনুবাদ :
(১) শপথ ফজরের,১ (২) শপথ দশ রাত্রির,২ (৩) শপথ জোড় ও বেজোড়ের,৩ (৪) শপথ রাত্রির- যখন তা গত হতে থাকে,৪ (৫) এর মধ্যে আছে কি কোন শপথ- জ্ঞানী লোকদের জন্য।৫ (৬) আপনি কি লক্ষ্য করেননি, আপনার প্রতিপালক আদ জাতির সাথে কিরূপ আচরণ করেছিলেন, (৭) ইরাম গোত্রের;৬ যাদের দৈহিক গঠন ছিল স্তম্ভ ও খুঁটির ন্যায় দীর্ঘ এবং (৮) যাদের মতো (শক্তিশালী) কাউকে কোন দেশে সৃষ্টি করা হয়নি।৭ (৯) আর (আপনি কি লক্ষ্য করেননি) সামূদ জাতির সাথে (কিরূপ আচরণ করা হয়েছিল), যারা উপত্যকায়৮ পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল। (১০) আর (আপনি কি লক্ষ্য করেননি) বহু কীলকের অধিপতি ফিরাউনের সাথে (কিরূপ আচরণ করা হয়েছিল),৯ (১১) যারা দেশে সীমালঙ্ঘন করেছিল। (১২) অতঃপর সেখানে ব্যাপক অশান্তি সৃষ্টি করেছিল। (১৩) অতঃপর আপনার প্রতিপালক তাদেরকে শাস্তির কোড়া মারলেন। (১৪) নিশ্চয় আপনার প্রতিপালক সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।১০
টীকা :
[১] সূরার বর্ণনাভঙ্গি সম্পর্কে চিন্তা করলে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, প্রথম থেকে কোন আলোচনা চলছিল। সেখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি কথা পেশ করেছিলেন এবং অস্বীকারকারীরা তা অস্বীকার করছিল। এ প্রসঙ্গে রাসূলের কথার সত্যতা প্রমাণ করে বলা হয়েছে, এই এই জিনিসের কসম! যা কিছু মুহাম্মাদ ﷺ বলছেন সব সত্য। তারপর এ প্রশ্নের ভিত্তিতে এ বক্তব্য পেশ করা হয়েছে যে, কোন বুদ্ধিমান লোকের জন্য কি এর মধ্যে কোন কসম আছে। মুহাম্মাদ ﷺ যে কথা বলছেন তা জেনে নেবার জন্য কি একজন বুদ্ধি-বিবেকমান ব্যক্তির জন্য এই কসমই যথেষ্ট নয়? সূরার শেষ পর্যন্ত সমগ্র আলোচ্য বিষয় থেকে জানা যায়, আলোচনা চলছিল শাস্তি ও পুরস্কার সম্পর্কে।
শপথের পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে প্রথম বিষয় হচ্ছে ফজর অর্থাৎ সুবহে-সাদিকের সময়, যা ঊষা নামে খ্যাত। অর্থাৎ যখন রাতের অন্ধকার ভেদ করে দিনের প্রথম আলো পূর্ব দিগন্তে একটি সাদা রেখার মতো আত্মপ্রকাশ করে।
[২] শপথের দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে দশ রাত্রি। ইবনে আববাস (রাঃ), কাতাদা ও মুজাহিদ প্রমুখ তাফসীরবিদের মতে এতে যিলহজ্জ মাসের দশ দিন বুঝানো হয়েছে। যা সর্বোত্তম দিন বলে বিভিন্ন হাদীসে স্বীকৃত।
[৩] এ দুটি শব্দের আভিধানিক অর্থ যথাক্রমে- জোড় ও বিজোড়। এই জোড় ও বিজোড় বলে আসলে কী বুঝানো হয়েছে, এ ব্যাপারে জাবের (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, বেজোড় এর অর্থ আরাফা দিবস (যিলহজ্জের নবম তারিখ) এবং জোড় এর অর্থ ইয়াওমুন নাহার (যিলহজ্জের দশম তারিখ)’’। (মুসনাদে আহমাদ : ৩/৩২৭) কোন কোন তাফসীরবিদ বলেন, জোড় বলে সমগ্র সৃষ্টিজগৎ বুঝানো হয়েছে। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত সৃষ্টিকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। এগুলোর বিপরীতে বিজোড় একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সত্তা।
[৪] يَسْرِي অর্থ রাত্রিতে চলা। অর্থাৎ রাত্রির শপথ, যখন সে চলতে থাকে তথা খতম হতে থাকে।
[৫] উপরোক্ত পাঁচটি শপথ উল্লেখ করার পর আল্লাহ তা‘আলা গাফেল মানুষকে চিন্তাভাবনা করার জন্য বলেছেন, ‘‘এতে কি বিবেকবানরা শপথ নেয়ার মতো গুরুত্ব খুঁজে পায়? মূলতঃ حِجْرٌ এর শাব্দিক অর্থ বাধা দেয়া। মানুষের বিবেক মানুষকে মন্দ ও ক্ষতিকর বিষয়াদি থেকে বাধা দান করে। তাই حِجْرٌ এর অর্থ বিবেকও হয়ে থাকে। এখানে তাই বুঝানো হয়েছে। আয়াতের অর্থ এই যে, বিবেকবানের জন্য এসব শপথও যথেষ্ট কিনা? এই প্রশ্ন প্রকৃতপক্ষে মানুষকে গাফলতি থেকে জাগ্রত করার একটি কৌশল।
[৬] আদ ও সামূদ জাতিদ্বয়ের বংশতালিকা উপরের দিকে ইরামে গিয়ে এক হয়ে যায়। তাই আয়াতে বর্ণিত ইরাম শব্দটি আদ ও সামূদ উভয়ের বেলায় প্রযোজ্য। এখানে ইরাম শব্দ ব্যবহার করে আদ গোত্রের পূর্ববর্তী বংশধর তথা প্রথম আদকে নির্দিষ্ট করা হয়ছে।
এখানে তাদের বিশেষণে বলা হয়েছে, ذَاتُ الْعِمَادِ । মূলত عِمَادٌ শব্দের অর্থ স্তম্ভ। দুনিয়ায় তারাই সর্বপ্রথম উঁচু উঁচু স্তম্ভের উপর ইমারাত নির্মাণ করার কাজ শুরু করে। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘‘আর তারা পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করত নিরাপদে বসবাসের জন্য।’’ (সূরা হিজর : ৮২)
[৭] অর্থাৎ আদ জাতি দৈহিক গঠন ও শক্তি-সাহসে অন্যসব জাতি থেকে স্বতন্ত্র ছিল। কুরআনের অন্য স্থানে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘‘দৈহিক গঠনের দিক দিয়ে তোমাদের অবয়বকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ করেছেন। (সূরা আরাফ : ৬৯)
[৮] উপত্যকা বলতে ‘আল কুরা’ উপত্যকা বুঝানো হয়েছে। সামূদ জাতির লোকেরা সেখানে পাথর কেটে কেটে তার মধ্যে এভাবে ইমারত নির্মাণের রীতি প্রচলন করেছিল।
[৯] أَوْتَادٌ শব্দটি وَتَدٌ এর বহুচন। এর অর্থ কীলক। ফিরাউনকে কীলকওয়ালা বলার বিভিন্ন কারণ তাফসীরবিদগণ বর্ণনা করেছেন। কারো কারো মতে এর দ্বারা যুলুম নিপীড়ন বুঝানোই উদ্দেশ্য। কারণ ফিরাউন যার উপর ক্রোধান্বিত হত, তার হাত-পা চারটি পেরেকে বেঁধে অথবা চার হাত-পায়ে পেরেক মেরে রৌদ্রে শুইয়ে রাখত অথবা কোন গাছের সাথে পেরেক মেরে রাখত। কোন কোন তাফসীরবিদ বলেন, এখানে তার সেনাবাহিনীকেই কীলকের সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং সেই অর্থে কীলকধারী মানে সেনাবাহিনীর অধিকারী। কারো কারো মতে, এর দ্বারা ফিরাউনের প্রাসাদ-অট্টালিকা বুঝানো হয়েছে। এসবের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। ফিরাউন মূলত এসবেরই অধিকারী ছিল।
[১০] অর্থাৎ এ দুনিয়াতে তোমরা যা কিছু করছ, তার শাস্তি ও প্রতিদান অপরিহার্য ও নিশ্চিত। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের যাবতীয় কাজকর্ম ও গতিবিধির প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন এবং সবাইকে প্রতিদান ও শাস্তি দেবেন।
(১৫) فَاَمَّا الْاِنْسَانُ মানুষ এরূপ যে, اِذَا যখন مَا ابْتَلَاهُ তাকে পরীক্ষা করেন رَبُّهٗ তার পালনকর্তা, فَاَكْرَمَهٗ অতঃপর তাকে সম্মান দান করেন وَنَعَّمَهٗ এবং তাকে অনুগ্রহ দান করেন, فَيَقُوْلُ তখন সে বলে, رَبِّيْ আমার পালনকর্তা اَكْرَمَنِ আমাকে সম্মান দান করেছেন। (১৬) اِذَا وَاَمَّا আর যখন مَا ابْتَلَاهُ তাকে পরীক্ষা করেন فَقَدَرَ অতঃপর সংকুচিত করে দেন عَلَيْهِ তার উপর رِزْقَهٗ তার রিযিক, فَيَقُوْلُ তখন সে বলে, رَبِّيْ আমার পালনকর্তা اَهَانَنِ আমাকে হেয় করেছেন। (১৭) كَلَّا কখনো নয় بَلْ বরং لَا تُكْرِمُوْنَ তোমরা সম্মান কর না اَلْيَتِيْمَ এতীমকে। (১৮) وَلَا تَحَآضُّوْنَ এবং একে অপরকে উৎসাহিত কর না عَلٰى طَعَامِ খাদ্যদানে اَلْمِسْكِيْنِ মিসকীনকে। (১৯) وَتَأْكُلُوْنَ এবং তোমরা খেয়ে ফেল اَلتُّرَاثَ মীরাসী ধন-সম্পদ اَكْلًا لَّمًّا সম্পূর্ণরূপে খেয়ে ফেল। (২০) وَتُحِبُّوْنَ এবং তোমরা ভালোবাস اَلْمَالَ ধন-সম্পদকে حُبًّا جَمًّا অধিক ভালোবাসা।
সরল অনুবাদ :
(১৫) মানুষ এরূপ যে, যখন তার প্রতিপালক তাকে পরীক্ষা করেন এবং সম্মান ও অনুগ্রহ দান করেন, তখন সে বলে- আমার প্রতিপালক আমাকে সম্মান দান করেছেন।১১ (১৬) আর যখন তাকে পরীক্ষা করেন এবং রিযিক সংকুচিত করে দেন, তখন বলে- আমার প্রতিপালক আমাকে হেয় করেছেন। (১৭) কখনো নয়;১২ বরং১৩ তোমরা এতীমকে সম্মান কর না। (১৮) এবং মিসকীনকে অন্নদানে পরস্পরকে উৎসাহিত কর না।১৪ (১৯) উপরন্তু তোমরা মৃতের পরিত্যাজ্য সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে কুক্ষিগত করে ফেল।১৫ (২০) এবং তোমরা ধন-সম্পদকে অত্যাধিক ভালোবাস।১৬
টীকা :
[১১] আল্লাহ তা‘আলা যখন কাউকে জীবনোপকরণে সমৃদ্ধি দান করেন, তখন শয়তান তাকে বিভিন্নভাবে ভ্রান্ত ধারণায় লিপ্ত করে। সে মনে করতে থাকে যে, এটা আমার ব্যক্তিগত প্রতিভা, গুণ-গরিমা ও কর্ম প্রচেষ্টারই অবশ্যাম্ভাবী ফলশ্রুতি, যা আমার লাভ করাই সঙ্গত। আমি এর যোগ্য পাত্র। সে আরো মনে করে যে, আমি আল্লাহর কাছেও প্রিয় পাত্র। যদি প্রত্যাখ্যাত হতাম, তবে তিনি আমাকে এসব নিয়ামত দান করতেন না। এমনিভাবে কেউ অভাব-অনটন ও দারিদ্রের সম্মুখীন হলে একে আল্লাহর কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার দলীল মনে করে।
[১২] পূর্ববর্তী ধারণা খন্ডানোর জন্যই মহান আল্লাহ এ আয়াতে বলেছেন যে, তোমাদের ধারণাসমূহ সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন। দুনিয়াতে জীবনোপকরণের স্বাচ্ছন্দ যেরকমভাবে সৎ ও আল্লাহর প্রিয় পাত্র হওয়ার আলামত নয়, তেমনি অভাব-অনটন ও দারিদ্র প্রত্যাখ্যাত ও লাঞ্ছিত হওয়ার দলীল নয়। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ উল্টো হয়ে থাকে। কারণ কোন কোন নবী-রাসূল কঠিন কষ্ট ভোগ করেছেন, আবার কোন কোন আল্লাহদ্রোহী আরাম-আয়েশে জীবন অতিবাহিত করে দিয়েছে।
[১৩] এখানে কাফির ও তাদের অনুসারী ফাসিকদের কয়েকটি মন্দ অভ্যাস সম্পর্কে সাবধান করা হচ্ছে। প্রথমেই বলা হয়েছে যে, তোমরা এতীমকে সম্মান করো না। এখানে আসলে বলার উদ্দেশ্য, তোমরা এতীমদের প্রাপ্য আদায় করো না এবং তাদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার গ্রহণ করো না।
[১৪] এখানে তাদের দ্বিতীয় মন্দ অভ্যাস বর্ণনা করা হয়েছে যে, তোমরা নিজেরা তো গরীব-মিসকীনকে খাবার দাও না, উপরন্তু অপরকেও এ কাজে উৎসাহিত কর না।
[১৫] এখানে তাদের তৃতীয় মন্দ অভ্যাস বর্ণনা করা হয়েছে যে, তোমরা হালাল ও হারাম সব রকম ওয়ারিশী সম্পদ একত্রিত করে খেয়ে ফেল।
[১৬] এখানে চতুর্থ মন্দ অভ্যাস বর্ণনা করা হয়েছে যে, তোমরা ধন-সম্পদকে অত্যাধিক ভালোবাস।
(২১) كَلَّا কখনো নয় اِذَا যখন دُكَّتْ চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে اَلْاَرْضُ পৃথিবী دَكًّا دَكًّا চূর্ণ-বিচূর্ণের মতো (২২) وَجَآءَ এবং উপস্থিত হবেন رَبُّكَ আপনার পালনকর্তা وَالْمَلَكُ ও ফেরেশতাগণ صَفًّا صَفًّا সারিবদ্ধভাবে, (২৩) وَجِيْٓءَ এবং আনা হবে يَوْمَئِذٍ সেদিন بِجَهَنَّمَ জাহান্নামকে, يَوْمَئِذٍ আর সেদিন يَتَذَكَّرُ বুঝতে পারবে اَلْاِنْسَانُ মানুষ, وَاَنّٰى কিন্তু কী (লাভ) হবে لَهُ তার জন্য اَلذِّكْرٰى বুঝতে পারায়? (২৪) يَقُوْلُ সে বলবে يَا لَيْتَنِيْ হায়! قَدَّمْتُ আমি যদি কিছু অগ্রীম পাঠাতাম لِحَيَاتِيْ আমার এ জীবনের জন্যে! (২৫) فَيَوْمَئِذٍ অতঃপর সেদিন لَا يُعَذِّبُ আযাব দিতে পারবে না عَذَابَهٗ তাঁর (আল্লাহ্র) আযাবের মত اَحَدٌ কেউই, (২৬) وَلَا يُوْثِقُ এবং বাঁধতে পারবে না وَثَاقَهٗ তাঁর বন্ধনের মত اَحَدٌ কেউই। (২৭) يَاۤ اَيَّتُهَا হে اَلنَّفْسُ আত্মা اَلْمُطْمَئِنَّةُ প্রশান্ত! (২৮) اِرْجِعِيْ তুমি ফিরে এসো اِلٰى رَبِّكِ তোমার প্রতিপালকের নিকট رَاضِيَةً সন্তুষ্ট مَرْضِيَّةً ও প্রিয়পাত্র হয়ে। (২৯) فَادْخُلِيْ অতএব তুমি প্রবেশ করো فِيْ عِبَادِيْ আমার বান্দাদের মধ্যে, (৩০) وَادْخُلِيْ এবং তুমি প্রবেশ করো جَنَّتِيْ আমার জান্নাতে।
সরল অনুবাদ :
(২১) কখনো নয়;১৭ যখন পৃথিবী চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে,১৮ (২২) এবং আপনার প্রতিপালক ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে উপস্থিত হবেন,১৯ (২৩) আর যেদিন জাহান্নামকে আনা হবে,২০ সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু এই স্মরণ তার কী কাজে আসবে?২১ (২৪) সে বলবে, হায়! আমার এ জীবনের জন্য আমি যদি কিছু অগ্রীম পাঠাতাম! (২৫) সেদিন তাঁর (আল্লাহ্র) আযাবের মত আযাব কেউ দিতে পারবে না, (২৬) এবং তাঁর বন্ধনের মত বন্ধনও কেউ করতে পারবে না। (২৭) হে প্রশান্ত আত্মা! (২৮) তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট ফিরে এসো সন্তুষ্ট ও প্রিয়পাত্র হয়ে।২২ (২৯) আর তুমি আমার বান্দাদের অর্ন্তভুক্ত হও,২৩ (৩০) এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।
টীকা :
[১৭] অর্থাৎ তোমাদের কাজ এরকম হওয়া উচিত নয়।
[১৮] কাফিরদের মন্দ অভ্যাসসমূহ বর্ণনার পর আবার আখেরাতের আলোচনা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, যখন ভূ-কম্পন শুরু হয়ে সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে; তখন কার কী অবস্থা হবে একটু চিন্তা করা দরকার।
[১৯] আয়াতে বলা হয়েছে وَجَاءَ رَبُّكَ এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে, ‘‘আপনার রব আসবেন’’। এখানে হাশরের মাঠে আল্লাহর আগমনকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। তিনি অবশ্যই হাশরের মাঠে বিচার ফায়সালা করার জন্য স্বয়ং আসবেন। যেভাবে আসা তাঁর জন্য উপযুক্ত তিনি সেভাবে আসবেন। এই আগমনের অর্থ আমরা বুঝি কিন্তু তিনি কিভাবে আগমন করবেন তা তিনি ব্যতীত কেউ জানে না।
[২০] অর্থাৎ সেদিন জাহান্নামকে আনা হবে বা সামনে উপস্থিত করা হবে। হাদীসে এসেছে, জাহান্নামকে ফেরেশতারা টেনে নিয়ে আসবে, সেদিন জাহান্নামের হাজার লাগাম হবে, প্রতি লাগামে সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবে।
(সহীহ মুসলিম, হা/২৮৪২; তিরমিযী, হা/২৫৭৩)
[২১] يَتَذَكَّرُ এর অর্থ এখানে বুঝে আসা। সুতরাং সেদিন মানুষ সচেতন হবে। সে উপদেশ গ্রহণ করবে। সে বুঝতে পারবে, নবীগণ তাকে যা কিছু বলেছিলেন তাই ছিল সঠিক এবং তাদের কথা না মেনে সে বোকামি করেছে। কিন্তু সে সময় সচেতন হওয়া, উপদেশ গ্রহণ করা এবং নিজের ভুল বুঝতে পারায় কী লাভ?।
অথবা يَتَذَكَّرُ অর্থ স্মরণ করা। অর্থাৎ সেদিন মানুষ দুনিয়ায় যা কিছু করে এসেছে তা স্মরণ করবে এবং সেজন্য লজ্জিত হবে। কিন্তু তখন স্মরণ করায় এবং লজ্জিত হওয়ায় কোন লাভ হবে না।
[২২] এখানে মুমিনদের রূহকে ‘আন-নাফসুল মুতমায়িন্নাহ’ বা প্রশান্ত আত্মা বলে সম্বোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ এ আত্মা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং আল্লাহ তা‘আলাও তার প্রতি সন্তুষ্ট। কেননা বান্দার সন্তুষ্টির দ্বারাই বুঝা যায় যে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট। আল্লাহ বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট না হলে বান্দা আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট হওয়ার তাওফীকই পায় না।
এখন প্রশ্ন হলো, এ কথা তাকে কখন বলা হবে? বলা হয় মৃত্যুকালে বলা হবে; অথবা সে সময়ও বলা হবে এবং আল্লাহর আদালতে পেশ করার সময়ও তাকে এ কথা বলা হবে। প্রতিটি পর্যায়ে তাকে এই কর্মে নিশ্চয়তা দান করা হবে যে, সে আল্লাহর রহমতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
[২৩] প্রশান্ত আত্মাকে সম্বোধন করে বলা হবে, আমার বিশেষ বান্দাদের কাতারভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর। এ আদেশ হতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, জান্নাতে প্রবেশ করা নেককার সৎ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার উপর নির্ভরশীল। তাদের সাথেই জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে। এ কারণেই সুলাইমান (আঃ) দু‘আ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘আপনার অনুগ্রহে আমাকে আপনার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের শামিল করুন’’- (সূরা নামল : ১৯)।
এ সূরার শিক্ষাসমূহ :
যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।
যারা দুনিয়ায় ফাসাদ সৃষ্টি করে, তাদের পরিণাম অতি মারাত্মক হবে।
প্রত্যেক ব্যক্তির যাবতীয় হিসাব মহান আল্লাহ সংরক্ষণ করছেন; সে আলোকে আখেরাতে তাকে প্রতিফল দেয়া হবে।
ধনসম্পদের মোহ মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
এতীমদের সম্মান করা ও ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার দেয়া আবশ্যক।
অন্যের হক্ব আত্মসাৎ করা অতি ঘৃণিত অপরাধ।
যারা আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত আছে, তারা কিয়ামতের দিন কঠিন আফসোস করবে।
প্রশান্ত ও নেক আত্মার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সুখবর রয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/319/14
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।