মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
প্রথম আয়াতে উল্লেখিত اَلْمُطَفِّفِيْنُ শব্দের আলোকে এ সূরাটির নামকরণ হয় সূরা আল-মুত্বাফফিফীন। এর মূল শব্দ হলো تَطْفِيْفٌ যার অর্থ মাপ ও ওজনে কম দেয়া।
নাযিলের সময়কাল :
এই সূরার বিষয়বস্তু থেকে পরিষ্কার জানা যায়, এটি মক্কায় প্রথম দিকে নাযিল হয়। সূরাটি ঠিক তখনই নাযিল হয় যখন মক্কার লোকেরা পথে-ঘাটে বাজারে-মজলিসে মুসলিমদেরকে টিটকারী দিচ্ছিল এবং তাদেরকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করছিল। তবে জুলুম, নিপীড়ন ও মারপিট করার যুগ তখনো শুরু হয়নি।
সূরার বিষয়বস্তু :
এর বিষয়বস্তু আখেরাত। ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি সাধারণ বেঈমানী রয়েছে যে, তারা অন্যের থেকে নেয়ার সময় ওজন ও মাপ পুরো করে নেয়; কিন্তু অন্যদেরকে দেয়ার সময় কিছু না কিছু কম দেয়। সমাজের আরো অসংখ্য অসৎকাজের মধ্যে এটি এমন একটি অসৎকাজ, যার অসৎ হবার ব্যাপারটি কেউ অস্বীকার করতে পারে না। এটি আখেরাত থেকে গাফেল হয়ে থাকার অপরিহার্য ফল।
দুষ্কৃতকারীদের কাজের বিবরণী লেখা হচ্ছে এবং আখেরাতে তাদেরকে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে। সবশেষে বলা হয়েছে, যারা সর্বদা ঈমানদারদেরকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করার কাজে লিপ্ত আছে, কিয়ামতের দিন তারা অপরাধীর পর্যায়ে থাকবে এবং নিজেদের এ কাজের জন্য অত্যন্ত খারাপ পরিণাম দেখবে। আর সেদিন এ ঈমানদাররা এ অপরাধীদের খারাপ ও ভয়াবহ পরিণাম দেখে নিজেদের চোখ শীতল করবে।
(১) وَيْلٌ মন্দ পরিণাম لِلْمُطَفِّفِيْنَ পরিমাপে কমকারীদের জন্য, (২) اَلَّذِيْنَ যারা اِذَا اكْتَالُوْا যখন মেপে নেয় عَلَى النَّاسِ লোকের নিকট হতে يَسْتَوْفُوْنَ পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে, (৩) وَاِذَا كَالُوْهُمْ এবং যখন তাদের জন্যে মেপে দেয় اَوْ অথবা وَزَنُوْهُمْ ওজন করে দেয়, يُخْسِرُوْنَ তখন কম দেয়। (৪) اَلَا يَظُنُّ কি চিন্তা করে না اُولٰٓئِكَ ঐসব লোকেরা اَنَّهُمْ অবশ্যই তারা مَبْعُوْثُوْنَ পুনরুত্থিত হবে। (৫) لِيَوْمٍ عَظِيْمٍ সে মহান দিবসে; (৬) يَوْمَ যেদিন يَقُوْمُ দাঁড়াবে اَلنَّاسُ সমস্ত মানুষ لِرَبِّ প্রতিপালকের সামনে اَلْعَالَمِيْنَ জগত সমূহের।
সরল অনুবাদ :
(১) মন্দ পরিণাম পরিমাপে কম দানকারীদের জন্য,২ (২) যারা লোকের নিকট হতে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে, (৩) (পক্ষান্তরে) যখন তাদের জন্যে মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। (৪) তারা কি চিন্তা করে না যে, তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে। (৫) সে মহান দিবসে (৬) যেদিন সমস্ত মানুষ জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে।৩
টীকা :
[১] বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন মদীনাবাসীরা মাপে কম দেওয়াতে খুবই অভ্যস্ত ছিল। এর প্রেক্ষিতে সূরা মুত্বাফ্ফিফীন নাযিল হয়। এই সূরা নাযিল হওয়ার পর তারা এই বদভ্যাস থেকে বিরত হয়। (সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১১৫৯০; ইবনে মাজাহ, হা/২২২৩)
[২] تَطْفِيْفٌ এর অর্থ মাপে কম দেয়া। যে এরূপ করে তাকে বলা হয় مُطَفِّفٌ । আরবী ভাষায় তাতফীফ ছোট্ট, তুচ্ছ ও নগণ্য জিনিসকে বলা হয়ে থাকে। পারিভাষিক অর্থে তাতফীফ মানে হচ্ছে মাপে ও ওজনে চুরি করা। কারণ এ কাজ করার সময় এক ব্যক্তি মাপ ও ওজনের মাধ্যমে কোন বড় পরিমাণ জিনিস চুরি করে না। বরং প্রত্যেক ক্রেতার অংশ থেকে সামান্য সামান্য করে বাচিয়ে নেয়। ফলে বিক্রেতা কতটুকু চুরি করেছে ক্রেতা তা টেরও পায় না।
কুরআনের এই আয়াত ও বিভিন্ন হাদীসে মাপ ও ওজনে কম দেয়াকে হারাম করা হয়েছে এবং সঠিকভাবে ওজন ও পরিমাপ করার জন্য কড়া তাগিদ করা হয়েছে। যেমন বলা হয়ছে, ‘‘মাপার সময় পুরো মাপবে এবং সঠিক পাল্লা দিয়ে ওজন করবে।’’- (সূরা ইসরা- ৩৫)
তবে আয়াতে উল্লেখিত تَطْفِيْفٌ শুধু মাপ ও ওজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং মাপ ও ওজনের মাধ্যমে হোক, গণনার মাধ্যমে হোক অথবা অন্য কোন পন্থায় প্রাপককে তার প্রাপ্য কম দিলে তা تَطْفِيْفٌ এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে হারাম হবে। সুতরাং প্রত্যেক প্রাপকের প্রাপ্য পূর্ণমাত্রায় দেয়াই আয়াতের উদ্দেশ্যে।
[৩] ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যেদিন সমস্ত মানুষ জগতসমূহের রবের সামনে দাঁড়াবে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের কানের মধ্যভাগ পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে। (সহীহ বুখারী, হা/৬৫৩১) অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, কিয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টির এত নিকটে আনা হবে যে, তাদের মধ্যে দূরত্ব হবে এক মাইল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জানি না- এখানে মাইল বলে পরিচিত এক মাইল না সুরমাদানি (যা আরবিতে মাইল বলা হয় তা) বুঝানো হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, মানুষ তাদের স্বীয় আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে নিমজ্জিত থাকবে। কারো ঘাম হবে গোড়ালি পর্যন্ত, কারো হবে হাঁটু পর্যন্ত। আবার কারো ঘাম হবে কমর পর্যন্ত। কারো ঘাম মুখের লাগামের মতো হবে। (সহীহ মুসলিম, হা/২৮৬৪)
(৭) كَلَّا কখনই না, اِنَّ كِتَابَ নিশ্চয় আমলনামা اَلْفُجَّارِ পাপাচারীদের لَفِيْ سِجِّيْنٍ সিজ্জীনে থাকে; (৮) وَمَاۤ اَدْرَاكَ তুমি কি জান مَا سِجِّيْنٌ সিজ্জীন কী? (৯) كِتَابٌ ওটা হচ্ছে কিতাব مَرْقُوْمٌ লিখিত। (১০) وَيْلٌ মন্দ পরিণাম يَوْمَئِذٍ সেদিন لِلْمُكَذِّبِيْنَ মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের। (১১) اَلَّذِيْنَ যারা يُكَذِّبُوْنَ মিথ্যা প্রতিপন্ন করে بِيَوْمِ الدِّيْنِ কর্মফল দিবসকে, (১২) وَمَا يُكَذِّبُ بِه আর কেউই ওকে মিথ্যা বলতে পারে না اِلَّا ব্যতীত كُلُّ প্রত্যেক مُعْتَدٍ সীমালঙ্ঘনকারী اَثِيْمٍ মহাপাপী। (১৩) اِذَا যখন تُتْلٰى তেলাওয়াত করা হয় عَلَيْهِ তার নিকট اٰيَاتُنَا আমার আয়াতসমূহ قَالَ তখন সে বলে اَسَاطِيْرُ এটা তো কাহিনী اَلْاَوَّلِيْنَ পূর্বযুগের! (১৪) كَلَّا কখনো নয়; بَلْ বরং رَانَ মরিচা জমে গেছে عَلٰى قُلُوْبِهِمْ তাদের মনের উপর مَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ যা তারা উপার্জন করেছেন। (১৫) كَلَّا কখনো নয়, اِنَّهُمْ অবশ্যই তারা عَنْ رَّبِّهِمْ তাদের প্রতিপালক থেকে يَوْمَئِذٍ সেদিন لَمَحْجُوْبُوْنَ বাধাগ্রস্ত হবে। (১৬) ثُمَّ অতঃপর اِنَّهُمْ নিশ্চয় তারা لَصَالُو প্রবেশ করবে اَلْجَحِيْمِ জাহান্নামে; (১৭) ثُمَّ অতঃপর يُقَالُ বলা হবে, هٰذَا এটাই সেটা اَلَّذِيْ كُنْتُمْ بِه যাকে তোমরা تُكَذِّبُوْنَ মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে।
সরল অনুবাদ :
(৭) কখনই না, নিশ্চয় পাপাচারীদের আমলনামা সিজ্জীনে থাকে;৪ (৮) তুমি কি জান- সিজ্জীন কী? (৯) ওটা হচ্ছে লিখিত কিতাব।৫ (১০) সেদিন মন্দ পরিণাম হবে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের। (১১) যারা কর্মফল দিবসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল, (১২) আর সীমালঙ্ঘনকারী মহাপাপী ব্যতীত, কেউই ওটাকে মিথ্যা বলতে পারে না। (১৩) যখন তার নিকট আমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হয় তখন সে বলে, এটা তো পুরনো দিনের কাহিনী! (১৪) কখনও নয়; বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনের উপর মরিচারূপে জমে গেছে।৬ (১৫) কখনও নয়, অবশ্যই সেদিন তারা তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভ হতে বাঁধাগ্রস্ত হবে।৭ (১৬) নিশ্চয় তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে; (১৭) অতঃপর বলা হবে, এটাই তা যাকে তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে।
টীকা :
[৪] سِجْنٌ এর অর্থ সংকীর্ণ জায়গায় বন্দী করা। আর سِجِّيْنٍ এর অর্থ চিরস্থায়ী কয়েদ। এটি একটি বিশেষ স্থানের নাম। যেখানে কাফিরদের রূহ অবস্থান করে। অথবা এখানেই তাদের আমলনামা থাকে।
[৫] مَرْقُوْمٌ শব্দের কয়েকটি অর্থ আছে, লিখিত, চিহ্নিত এবং মোহরাঙ্কিত। অর্থাৎ কিতাবটি লিখা শেষ হওয়ার পর তাতে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। ফলে তাতে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটবে না। আর কিতাব বলতে, আমলনামা বুঝানো হয়েছে। কাফির ও পাপাচারীদের আমলনামা মোহর লাগিয়ে সংরক্ষিত করা হবে। মহান আল্লাহ কাফিরদের রূহ হরণ হওয়ার পর বলবেন, اُكْتُبُوْا كِتَابَهٗ فِيْ سِجِّيْنَ فِيْ الْاَرْضِ السُّفْلٰى অর্থাৎ তাঁর কিতাবকে সর্বনিম্ন জমিনে সিজ্জীনে লিখে রাখ।
(মুসনাদে আহমাদ ৪/২৮৭)
[৬] رَانَ শব্দটি رَيْنٌ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ প্রাধান্য বিস্তার করা, ঢেকে রাখা। অর্থাৎ শাস্তি ও পুরস্কারকে গল্প বা উপকথা গণ্য করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। কিন্তু যে কারণে তারা একে গল্প বলছে তা হচ্ছে এই যে, এরা যেসব গোনাহে লিপ্ত রয়েছে তাদের অন্তরে মরিচা ধরেছে। মরিচা যেমন লোহাকে খেয়ে মাটিতে পরিণত করে দেয়, তেমনি তাদের পাপের মরিচা তাদের অন্তরের যোগ্যতা নিঃশেষ করে দিয়েছে। ফলে তারা ভাল ও মন্দের পার্থক্য বুঝে না। ফলে পুরোপুরি যুক্তিসঙ্গত কথাও এদের কাছে গল্প বলে মনে হচ্ছে। এই জং ও মরিচার ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, বান্দা যখন কোন গোনাহ করে, তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। সে তওবা করলে দাগটি উঠে যায়। কিন্তু যদি সে গোনাহ করে যেতেই থাকে তাহলে সমগ্র অন্তরের উপর তা ছেয়ে যায়।
(তিরমিযী, হা/৩৩৩৪; ইবনে মাজাহ, হা/৪২৪৪)
[৭] অর্থাৎ কিয়ামতের দিন এই কাফিররা তাদের রবের দীদার বা দর্শন ও যিয়ারত থেকে বঞ্চিত থাকবে এবং পর্দার আড়ালে অবস্থান করবে। এই আয়াত থেকে জানা যায় যে, সেদিন মুমিনগণ আল্লাহ তা‘আলার দীদার ও যিয়ারত লাভে ধন্য হবে।
(১৮) كَلَّا কখনো না اِنَّ অবশ্যই كِتَابَ الْاَبْرَارِ পুণ্যবানদের আমলনামা لَفِيْ عِلِّيِّيْنَ ইল্লিয়্যীনে থাকবে, (১৯) وَمَاۤ اَدْرَاكَ তুমি কি জান مَا عِلِّيُّوْنَ ইল্লিয়্যীন কী? (২০) كِتَابٌ مَّرْقُوْمٌ লিখিত কিতাব। (২১) يَشْهَدُهٗ ওটা প্রত্যক্ষ করবে اَلْمُقَرَّبُوْنَ সান্নিধ্যপ্রাপ্তরা। (২২) اِنَّ নিশ্চয় اَلْاَبْرَارَ পুণ্যবানগণ لَفِيْ نَعِيْمٍ অতি স্বাচ্ছন্দ্যে (জান্নাতে) থাকবে (২৩) عَلَى الْاَرَآئِكِ সুসজ্জিত আসনে বসে يَنْظُرُوْنَ তারা দেখতে থাকবে। (২৪) تَعْرِفُ তুমি চিনতে পারবে فِيْ وُجُوْهِهِمْ তাদের মুখমন্ডলে نَضْرَةَ দীপ্তি اَلنَّعِيْمِ স্বাচ্ছন্দ্যের, (২৫) يُسْقَوْنَ তাদেরকে পান করানো হবে مِنْ رَّحِيْقٍ বিশুদ্ধতম শরাব হতে مَخْتُوْمٍ মোহর করা, (২৬) خِتَامُهٗ এর মোহর হচ্ছে مِسْكٌ কস্তুরীর। وَفِيْ ذٰلِكَ সুতরাং এ বিষয়ে فَلْيَتَنَافَسِ প্রতিযোগিতা করুক اَلْمُتَنَافِسُوْنَ প্রতিযোগীরা। (২৭) وَمِزَاجُهٗ এর মিশ্রণ হবে مِنْ تَسْنِيْمٍ তাসনীমের, (২৮) عَيْنًا এটা একটা ঝর্ণা, يَشْرَبُ بِهَا যা হতে পান করবে اَلْمُقَرَّبُوْنَ নৈকট্যপ্রাপ্তগণ।
সরল অনুবাদ :
(১৮) অবশ্যই পুণ্যবানদের আমলনামা ইল্লিয়্যীনে থাকবে,৮ (১৯) ইল্লিয়্যীন কী তা তুমি জান? (২০) (তা হচ্ছে) লিখিত কিতাব।৯ (২১) (আল্লাহর) সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ফেরেশ্তারা ওটা প্রত্যক্ষ করবে।১০ (২২) পুণ্যবানগণ তো থাকবে অতি স্বাচ্ছন্দ্যে (জান্নাতে) (২৩) তারা সুসজ্জিত আসনে বসে দেখতে থাকবে। (২৪) তুমি তাদের মুখমন্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি অনুভব করবে, (২৫) তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধতম শরাব হতে পান করানো হবে, (২৬) এর মোহর হচ্ছে কস্তুরীর।১১ সুতরাং প্রতিযোগীরা এ বিষয়ে প্রতিযোগিতা করুক।১২ (২৭) এর মিশ্রণ হবে তাসনীমের,১৩ (২৮) এটা একটি ঝর্ণা, যা হতে নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা পান করবে।
টীকা :
[৮] عِلِّيِّيْنٌ একটি জায়গার নাম। বারা ইবনে আযিব (রাঃ) এর হাদীসে এসেছে, ফেরেশতাগণ রূহ নিয়ে উঠতেই থাকবেন। শেষ পর্যন্ত সপ্তম আসমানে উঠবেন, তখন মহান আল্লাহ বলবেন, আমার বান্দার কিতাব ইল্লিয়্যীনে লিখে নাও’’- (মুসনাদে আহমাদ ৪/২৮৭)। এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ইল্লিয়্যীন সপ্তম আকাশে আরশের কাছে একটি স্থানের নাম। এতে মুমিনদের রূহ ও আমলনামা রাখা হয়।
[৯] হাদীসে এসেছে, মহান আল্লাহ মুমিনদের রূহ কবজ করার পর বলবেন, اُكْتُبُوْا كِتَابَ عَبْدِيْ فِيْ عِلِّيِّيْنَ অর্থাৎ অতঃপর আমার বানদার আমলনামা ইল্লিয়্যীনে লিখে রাখ। (মুসনাদে আহমাদ ৪/২৮৭)
[১০] يَشْهَدُ শব্দটি شُهُوْدٌ থেকে উদ্ভূত। شُهُوْدٌ এর এক অর্থ প্রত্যক্ষ করা, তত্ত্বাবধান করা। তখন আয়াতের উদ্দেশ্য হবে এই যে, সৎকর্মশীলদের আমলনামা আসমানের নৈকট্যশীল ফেরেশতাগণ দেখবে অর্থাৎ তত্ত্বাবধান ও হেফাযত করবে। তাছাড়া شُهُوْدٌ এর আরেক অর্থ উপস্থিত হওয়া। তখন এর অর্থ হবে, প্রতি আসমানের নৈকট্যপ্রাপ্তগণ সেখানে হাযির হবেন এবং সেটাকে হেফাযত করবেন; কেননা এটা নেক আমলকারীর জন্য জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তা পত্র এবং জান্নাতে যাওয়ার সফলতার গ্যারান্টি।
[১১] যেসব পাত্রে এই শরাব রাখা হবে তার ওপর মাটি বা মোমের পরিবর্তে মিশকের মোহর লাগানো থাকবে। এ অর্থের দিক দিয়ে আয়াতের অর্থ হয়; এটি হবে উন্নত পর্যায়ের পরিচ্ছন্ন শরাব। এর দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে : এই শরাব যখন পানকারীদের গলা দিয়ে নামবে তখন শেষের দিকে তারা মিশকের খুশবু পাবে। এই অবস্থাটি দুনিয়ার শরাবের সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে শরাবের বোতল খোলার সাথে সাথেই একটি দুর্গন্ধ নাকে লাগে। পান করার সময়ও এর দুর্গন্ধ অনুভব হতে থাকে এবং গলা দিয়ে নামবার সময় মস্তিষ্কের অভ্যন্তরেও পঁচা গন্ধ পৌঁছে যায়। এর ফলে শরাবীর চেহারায় বিস্বাদের একটা ভাব জেগে ওঠে।
[১২] কোন বিশেষ পছন্দনীয় জিনিস অর্জন করার জন্য প্রতিযোগিতা করার নাম تَنَافُسٌ । এখানে জান্নাতের নিয়ামতরাজি উল্লেখ করার পর আল্লাহ তা‘আলা গাফেল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, আজ তোমরা যেসব বস্তুকে প্রিয় ও কাম্য মনে করে সেগুলো অর্জন করার জন্য অগ্রে চলে যাওয়ার চেষ্টায় রত আছ, সেগুলো অসম্পূর্ণ ও ধ্বংসশীল নিয়ামত। এসব নিয়ামত প্রতিযোগিতার যোগ্য নয়। এসব ক্ষণস্থায়ী সুখের সামগ্রী হাতছাড়া হয়ে গেলেও তেমন দুঃখের কারণ নয়। হ্যাঁ- জান্নাতের নিয়ামতরাজির জন্যই প্রতিযোগিতা করা উচিত। এগুলো সব দিক দিয়ে সম্পূর্ণ চিরস্থায়ী।
[১৩] তাসনীম মানে উন্নত ও উঁচু। কোন কোন মুফাসসির বলেন, ঝরনাকে তাসনীম বলার মানে হচ্ছে এই যে, তা উঁচু থেকে প্রবাহিত হয়ে নীচের দিকে আসে।
(২৯) اِنَّ নিশ্চয় اَلَّذِيْنَ যারা اَجْرَمُوْا অপরাধী كَانُوْا তারা এমন ছিল যে مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে يَضْحَكُوْنَ তারা উপহাস করতো। (৩০) وَاِذَا এবং যখন مَرُّوْا তারা অতিক্রম করতো بِهِمْ তাদের পাশ দিয়ে يَتَغَامَزُوْنَ তখন চোখ টিপে কটাক্ষ করতো। (৩১) وَاِذَا এবং যখন اِنْقَلَبُوْا তারা ফিরে আসতো اِلٰۤى اَهْلِهِمُ তাদের আপনজনের নিকট اِنْقَلَبُوْا তখন তারা ফিরতো فَكِهِيْنَ উৎফুল্ল হয়ে, (৩২) وَاِذَا এবং যখন رَاَوْهُمْ তাদেরকে দেখতো قَالُوْا তখন বলতো, اِنَّ নিশ্চয় هٰۤؤُلَآءِ এরা لَضَآلُّوْنَ পথভ্রষ্ট, (৩৩) وَمَاۤ اُرْسِلُوْا তাদেরকে তো পাঠানো হয়নি عَلَيْهِمْ এদের জন্য حَافِظِيْنَ সংরক্ষকরূপে (৩৪) فَالْيَوْمَ তাই আজ, اَلَّذِيْنَ যারা اٰمَنُوْا ঈমান এনেছে (তারা) مِنَ الْكُفَّارِ কাফিরদেরকে يَضْحَكُوْنَ উপহাস করছে, (৩৫) عَلَى الْاَرَآئِكِ সুসজ্জিত আসনে বসে يَنْظُرُوْنَ তারা (তাদেরকে) দেখছে। (৩৬) هَلْ ثُوِّبَ ফল পেলো তো اَلْكُفَّارُ কাফিররা مَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ যা তারা করত তার?
সরল অনুবাদ :
(২৯) নিশ্চয় যারা অপরাধে লিপ্ত তারা মু’মিনদেরকে উপহাস করতো।১৪ (৩০) তারা যখন তাদের নিকট দিয়ে যেতো তখন চোখ টিপে কটাক্ষ করতো। (৩১) (পক্ষান্তরে) যখন তারা আপনজনের নিকট ফিরে আসতো তখন তারা উৎফুল্ল হয়ে ফিরতো, (৩২) এবং যখন তাদেরকে দেখতো তখন বলতো, নিশ্চয় এরা পথভ্রষ্ট,১৫ (৩৩) তাদেরকে তো এদের সংরক্ষকরূপে পাঠানো হয়নি!১৬ (৩৪) তাই আজ, মুমিনগণ উপহাস করছে কাফিরদেরকে, (৩৫) সুসজ্জিত আসনে বসে তাদেরকে দেখছে। (৩৬) কাফিররা তাদের কৃতকর্মের ফল পেলো তো?
টীকা :
[১৪] অর্থাৎ এ কথা ভাবতে ভাবতে ঘরের দিকে ফিরতো; আজ তো বড়ই মজা। অমুক মুসলিমকে বিদ্রূপ করে বড়ই মজা পাওয়া গেছে এবং সাধারণ মানুষের সামনে তাকে চরমভাবে অপদস্থ করা গেছে। মোটকথা তারা মুমিনদের নিয়ে অপমানজনক কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, ইশারা-ইঙ্গিত করত।
[১৫] এরা বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে গেছে। মুহাম্মাদ ﷺ এদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের চক্করে ফেলে দিয়েছেন। ফলে এরা নিজেরা নিজেদেরকে দুনিয়ার লোভ, স্বার্থ ও ভোগ-বিলাসিতা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে এবং সব রকমের আশঙ্কা ও বিপদ আপদের মুখোমুখি হয়েছে। এভাবে যুগে যুগে মুমিনদেরকে অপমানজনক কথা সহ্য করতে হয়েছে। বর্তমানেও কেউ দ্বীনদার হলে তার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে শোনা যায়।
[১৬] এই ছোট বাক্যটিতে বিদ্রূপকারীদের জন্য বড়ই শিক্ষাপ্রদ হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে অর্থাৎ ধরে নেয়া যাক মুসলিমরা যা কিছুর প্রতি ঈমান এনেছে সবকিছুই ভুল। কিন্তু তাতে তারা তোমাদের তো কোন ক্ষতি করছে না। যে জিনিসকে তারা সত্য মনে করেছে সেই অনুযায়ী তারা নিজেরাই আমল করছে। তোমরা তাদের সমালোচনা করেছ কেন? আল্লাহ কি তোমাদেরকে এই দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন? মুমিনদের কর্মকান্ড হেফাযত করার দায়িত্ব তো তোমাদেরকে দেয়া হয়নি। তাহলে সেটা করতে যাবে কেন? এটাকেই তোমাদের উদ্দেশ্য বানিয়েছ কেন?
এ সূরার শিক্ষাসমূহ :
মাল কেনা-বেচার সময় ওজন বা মাপে কম বেশি করা হারাম। যারা এমন গর্হিত অন্যায় করবে, তাদের পরিণাম অতি ভয়াবহ হবে।
কিয়ামতের বিচার অবশ্যই হবে এবং আল্লাহ প্রত্যেককে স্বীয় আমলের বদলা দেবেন। ভাল করলে ভাল ফলাফল পাবে। আর মন্দ করলে মন্দের প্রতিফল যথাযথভাবে পাবে।
মুমিনদের আত্মা সর্বোচ্চ মঞ্জিলে এবং কাফিরদের আত্মা সবচেয়ে নিম্ন মঞ্জিলে রাখা হবে।
কাফিররা আল্লাহর দীদার/দর্শন হতে বঞ্চিত হবে। পক্ষান্তরে মুমিনরা সেদিন মহান আল্লাহর দর্শন পেয়ে ধন্য হবে।
নেকীর কাজে প্রতিযোগিতা করা ঈমানদারদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ সে মর্মে তাঁর বান্দাদেরকে উৎসাহিত করেছেন।
শেষ পরিণতি শুভ হওয়া একান্তই কাম্য, যার শেষ ভাল হবে এবং ঈমানের উপর মৃত্যু হবে সে-ই হবে সফলকাম।
দুনিয়ায় কাফিররা ঈমানদারদেরকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। কিন্তু মহান আল্লাহ এর বদলা নেয়ার সুযোগ করে দিবেন। মুমিনরা জান্নাতে এবং কাফিররা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তখন মুমিনরা কাফিরদের করুণ পরিণতি দেখে হাসবে এবং দুনিয়ার হাসি-ঠাট্টার জাবাব দেবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/319/8
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।