hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আম্মা পারা

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৭৯- সূরা নাযিআত
সূরার নামকরণ :

সূরাটির প্রথম আয়াতের প্রথম শব্দ اَلنَّازِعَاتُ হতে এর নাম সূরা আন-নাযিআত রাখা হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে আস-সাহিরাহ ও আত-ত্বাম্মাহ নামে অভিহিত করেছেন। আন-নাযিআত শব্দের অর্থ হচ্ছে, উৎপাটনকারী।

নাযিলের সময়কাল :

আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, ‘‘আম্মা ইয়াতাসা-আলূন’’ এর পরে এ সূরাটি নাযিল হয়। এটি মাক্কী যুগের প্রথম দিকের সূরা।

সূরার বিষয়বস্তু :

এ সূরার বিষয়বস্তু হচ্ছে কিয়ামাত ও মৃত্যুর পরের জীবনের প্রমাণ এবং আল্লাহর রাসূলকে মিথ্যা বলার পরিণাম সম্পর্কে সাবধানবাণী।

বক্তব্যের সূচনায় মৃত্যুকালে প্রাণ হরণকারী, আল্লাহর বিধানসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নকারী এবং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী সারা বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থা পরিচালনাকারী ফেরেশতাদের কসম খেয়ে নিশ্চয়তা দান করা হয়েছে যে, কিয়ামত অবশ্যই হবে এবং মৃত্যুর পরে নিশ্চিতভাবে আরেকটি নতুন জীবনের সূচনা হবে।

এরপর লোকদের জানানো হয়েছে, এই যে কাজটিকে তোমরা একেবারেই অসম্ভব মনে করো, আল্লাহর জন্য এটি এমন কোন কঠিন কাজই নয়, যার জন্য বিরাট ধরনের কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন হতে পারে। একবার ঝাঁকুনি দিলেই দুনিয়ার এ সমস্ত ব্যবস্থা ওলটপালট হয়ে যাবে। তখন যারা এ পরবর্তী জগতের কথা অস্বীকার করতো তারা ভয়ে কাঁপতে থাকবে।

তারপর সংক্ষেপে মূসা (আঃ) ও ফিরাউনের কথা বর্ণনা করে লোকদেরকে সাবধান করে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূলকে মিথ্যা বলার এবং তাঁর হিদায়াত ও পথনির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করার পরিণাম ফিরাউন দেখেছে। ফিরাউনের পরিণাম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তোমরা যদি নিজেদের কর্মনীতি পরিবর্তন না কর, তাহলে তোমাদের পরিণামও এ রকম হবে।

এরপর ২৭ থেকে ৩৩ আয়াত পর্যন্ত মৃত্যুর পরের জীবনের স্বপক্ষে যুক্তি-প্রমাণ পেশ করা হয়েছে এ প্রসঙ্গে প্রথমেই অস্বীকারকারীদের জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তোমাদেরকে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা বেশি কঠিন কাজ নাকি এ বিশাল বিস্তীর্ণ বিশ্ব-জগত সৃষ্টি করা কঠিন কাজ।

দুনিয়ায় নির্ধারিত সীমানা লঙ্ঘন করে কে পার্থিব লাভ, স্বার্থ ও স্বাদ আস্বাদনকে উদ্দেশ্যে পরিণত করেছে এবং কে নিজের রবের সামনে হিসাব-নিকাশের জন্য দাঁড়াবার ব্যাপারে ভীতি অনুভব করেছে ও নফসের অবৈধ আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করতে অস্বীকার করেছে, এরই ভিত্তিতে সেদিন ফায়সালা হবে।

মক্কার কাফিরদের একটি প্রশ্ন ছিল কিয়ামত কবে আসবে, সবশেষে তার জবাব দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কিয়ামত কবে হবে তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাজ হচ্ছে শুধুমাত্র কিয়ামত যে অবশ্যই হবে এ সম্পর্কে লোকদেরকে সতর্ক করে দেয়া। এ দুনিয়ার জীবনের জন্য যারা প্রাণ দিতো এবং একেই সবকিছু মনে করতো, তারা অনুভব করতে থাকবে যে, এ দুনিয়ার বুকে তারা মাত্র সামান্য সময় অবস্থান করেছিল। তখন তারা জানতে পারবে, এই মাত্র কয়েক দিনের জীবনের বিনিময়ে তারা চিরকালের জন্য নিজেদের ভবিষ্যৎ কীভাবে বরবাদ করে দিয়েছে।

আয়াত : ১-১৪



وَالنَّازِعَاتِ غَرْقًا (১) وَالنَّاشِطَاتِ نَشْطًا (২) وَالسَّابِحَاتِ سَبْحًا (৩) فَالسَّابِقَاتِ سَبْقًا (৪) فَالْمُدَبِّرَاتِ اَمْرًا (৫) يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ (৬) تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ (৭) قُلُوْبٌ يَّوْمَئِذٍ وَّاجِفَةٌ (৮) اَبْصَارُهَا خَاشِعَةٌ (৯) يَقُوْلُوْنَ اَاِنَّا لَمَرْدُوْدُوْنَ فِي الْحَافِرَةِ (১০) اَاِذَا كُنَّا عِظَامًا نَّخِرَةً (১১) قَالُوْا تِلْكَ اِذًا كَرَّةٌ خَاسِرَةٌ (১২) فَاِنَّمَا هِيَ زَجْرَةٌ وَّاحِدَةٌ (১৩) فَاِذَا هُمْ بِالسَّاهِرَةِ (১৪)

শাব্দিক অর্থ :

(১) وَالنَّازِعَاتِ শপথ কঠোরভাবে উৎপাটনকারীদের غَرْقًا যারা ডুব দিয়ে টেনে বের করে (২) وَالنَّاشِطَاتِ আর শপথ মৃদুভাবে বন্ধন মুক্তকারীদের نَشْطًا যারা মৃদুভাবে টেনে বের করে, (৩) وَالسَّابِحَاتِ শপথ দ্রুত সাঁতারকারীদের سَبْحًا যারা (শূন্য লোকে) সাঁতরে চলে, (৪) فَالسَّابِقَاتِ অতঃপর শপথ দ্রুত গতিশীলদের سَبْقًا যারা দ্রুত এগিয়ে যায়। (৫) فَالْمُدَبِّرَاتِ অতঃপর শপথ নির্বাহকারীদের اَمْرًا কর্ম। (৬) يَوْمَ সেদিন تَرْجُفُ প্রকম্পিত হবে اَلرَّاجِفَةُ প্রকম্পনকারী, (৭) تَتْبَعُهَا তাকে অনুসরণ করবে اَلرَّادِفَةُ পরবর্তী প্রকম্পন। (৮) قُلُوْبٌ হৃদয়সমূহ হবে يَوْمَئِذٍ সেদিন وَاجِفَةٌ কম্পিত। (৯) اَبْصَارُهَا তাদের দৃষ্টিসমূহ হবে خَاشِعَةٌ ভীত-বিহবল। (১০) يَقُوْلُوْنَ তারা বলে, اَاِنَّا لَمَرْدُوْدُوْنَ আমরা কি প্রত্যাবর্তিত হব فِي الْحَافِرَةِ পূর্বাবস্থায়? (১১) اَاِذَا كُنَّا যখন আমরা হব عِظَامًا হাড্ডি نَخِرَةً গলিত। (১২) قَالُوْا তারা বলে, تِلْكَ اِذًا তখন তা হবে كَرَّةٌ প্রত্যাবর্তন خَاسِرَةٌ লোকসানের! (১৩) فَاِنَّمَا هِيَ এটা তো কেবল وَّاحِدَةٌ زَجْرَةٌ একটি ভয়ঙ্কর ধমক মাত্র। (১৪) فَاِذَا هُمْ ফলে তারা উপস্থিত হবে بِالسَّاهِرَةِ প্রশস্ত ময়দানে।

সরল অনুবাদ :

(১) শপথ সজোরে উৎপাটনকারী (ফেরেশতার), যারা কঠোরভাবে (রূহ্) টেনে বের করে১ (২) আর শপথ মৃদুভাবে (রূহের) বন্ধন মুক্তকারীদের,২ (৩) শপথ দ্রুত সাঁতারকারীদের, যারা তীব্র গতিতে (শূন্য লোকে) সাঁতরে চলে,৩ (৪) অতঃপর শপথ দ্রুত গতিশীলদের, যারা দ্রুত অগ্রসর হয়,৪ (৫) অতঃপর শপথ কর্ম নির্বাহকারীদের।৫ (৬) সেদিন প্রকম্পনকারী প্রবলভাবে কাঁপিয়ে তুলবে, (৭) তাকে অনুসরণ করবে পরবর্তী প্রকম্পন।৬ (৮) সেদিন হৃদয়সমূহ ভীত-সন্ত্রস্ত হবে।৭ (৯) তাদের দৃষ্টিসমূহ হবে ভয়ে অবনত। (১০) তারা বলে, আমরা কি পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তিত হব? (১১) যখন আমরা গলিত হাড্ডিতে পরিণত হয়ে যাব। (১২) তারা বলে, তাহলে সেই প্রত্যাবর্তনটি হবে খুবই ক্ষতিকর! (১৩) এটা তো একটি ভয়ঙ্কর ধমক মাত্র।৮ (১৪) ফলে হঠাৎ প্রশস্ত ময়দানে তাদের আবির্ভাব হবে।৯

টীকা :

[১] ডুব দিয়ে টানা এমন সব ফেরেশতার কাজ, যারা মৃত্যুকালে প্রাণ টেনে বের করে। এখানে আযাবের সেসব ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা কাফেরের আত্মা নির্মমভাবে বের করে।

[২] এটা ফেরেশতাগণের দ্বিতীয় বিশেষণ। তারা মুমিনের রূহ কবজ করার সময় অনায়াসে রূহ কবজ করে, কঠোরতা করে না। প্রকৃত কারণ এই যে, কাফেরের আত্মা বের করার সময় থেকেই বারযাখের আযাব সামনে এসে যায়। এতে তার আত্মা অস্থির হয়ে দেহে আত্মগোপন করতে চায়। ফেরেশতা জোরে-জোরে টানা-হেঁচড়া করে তাকে বের করে। পক্ষান্তরে মুমিনের রূহের সামনে বারযাখের নিয়ামত ও সুসংবাদ ভেসে উঠে। ফলে সে দ্রুতবেগে সেদিকে যেতে চায়।

[৩] سَابِحَاتُ (সাবিহাত) এর আভিধানিক অর্থ সাঁতার কাটা। ফেরেশতাগণ মানুষের রূহ কবজ করার পর তা দ্রুতগতিতে আকাশের দিকে নিয়ে যায়।

[৪] যে আত্মা ফেরেশতাগণের হস্তগত হয় তাকে ভাল অথবা মন্দ ঠিকানায় পৌঁছানোর কাজে তারা দ্রুত একে অপরকে ডিঙ্গিয়ে যায়। তারা মুমিনের আত্মাকে জান্নাতের আবহাওয়ায় ও কাফিরের আত্মাকে আযাবের জায়গায় পৌঁছিয়ে দেয়।

[৫] ফেরেশতাদের কাজ এটাও যে, তারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে দুনিয়ার বিভিন্ন কাজ নির্বাহের ব্যবস্থা করে।

[৬] প্রথম প্রকম্পনকারী বলতে এমন প্রকম্পন বুঝানো হয়েছে, যা পৃথিবী ও তার মধ্যকার সমস্ত জিনিস ধ্বংস করে দেবে। আর দ্বিতীয় প্রকম্পন বলতে যে কম্পনে সমস্ত মৃত জীবিত হয়ে বের হয়ে আসবে তাকে বুঝানো হয়েছে।

[৭] এখানে ‘‘কতক হৃদয়’’ বলতে কাফির ও নাফরমানদের বুঝানো হয়েছে। কিয়ামতের দিন তারা ভীত ও আতঙ্কিত হবে। তবে সৎ মুমিন বান্দাদের উপর এ ভীতি প্রভাব বিস্তার করবে না। (সূরা আন্বিয়া- ১০৩)

[৮] অর্থাৎ আল্লাহর জন্য এটা কোন কঠিন কাজ নয়। এ কাজটি করতে তাঁকে কোন বড় রকমের প্রস্তুতি নিতে হবে না। এর জন্য শুধুমাত্র একটি ধমক বা আওয়াজই যথেষ্ট। এরপরই তোমরা সমতল ময়দানে আবির্ভূত হবে।

[৯] আয়াতে বর্ণিত سَاهِرَةٌ শব্দের অর্থ সমতল ময়দান। কিয়ামতের দিন পুনরায় যে ভূ-পৃষ্ঠ সৃষ্টি করা হবে, তা সমতল হবে।

আয়াত : ১৫-২৬

هَلْ اَتَاكَ حَدِيْثُ مُوْسٰى (১৫) اِذْ نَادَاهُ رَبُّهٗ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى (১৬) اِذْهَبْ اِلٰى فِرْعَوْنَ اِنَّهٗ طَغٰى (১৭) فَقُلْ هَلْ لَّكَ اِلٰۤى اَنْ تَزَكّٰى (১৮) وَاَهْدِيَكَ اِلٰى رَبِّكَ فَتَخْشٰى (১৯) فَاَرَاهُ الْاٰيَةَ الْكُبْرٰى (২০) فَكَذَّبَ وَعَصٰى (২১) ثُمَّ اَدْبَرَ يَسْعٰى (২২) فَحَشَرَ فَنَادٰى (২৩) فَقَالَ اَنَا رَبُّكُمُ الْاَعْلٰى (২৪) فَاَخَذَهُ اللهُ نَكَالَ الْاٰخِرَةِ وَالْاُوْلٰى (২৫) اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّمَنْ يَّخْشٰى (২৬)

শাব্দিক অনুবাদ :

(১৫) هَلْ اَتَاكَ তোমার নিকট পৌঁছেছে কি حَدِيْثُ مُوْسٰى মূসার কাহিনী? (১৬) اِذْ যখন نَادَاهُ তাকে ডেকেছিলেন رَبُّهٗ তাঁর প্রতিপালক بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ পবিত্র উপত্যকা طُوًى তোওয়ায়। (৭) اِذْهَبْ তুমি যাও اِلٰى فِرْعَوْنَ ফিরাউনের নিকট اِنَّهٗ নিশ্চয় সে طَغٰى সীমালঙ্ঘন করেছে। (১৮) فَقُلْ এবং বলো, هَلْ لَّكَ তুমি কি চাও اِلٰۤى اَنْ تَزَكّٰى পবিত্র হতে? (১৯) وَاَهْدِيَكَ আর আমি তোমাকে পথ দেখাবো اِلٰى رَبِّكَ তোমার প্রতিপালকের দিকে فَتَخْشٰى অতঃপর তুমি তাকে ভয় করবে। (২০) فَاَرَاهُ অতঃপর তিনি তাকে দেখালেন اَلْاٰيَةَ الْكُبْرٰى বড় নিদর্শন। (২১) فَكَذَّبَ কিন্তু সে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো وَعَصٰى এবং অবাধ্য হলো। (২২) ثُمَّ তারপর اَدْبَرَ সে পিছনে ফিরে গেলো يَسْعٰى দ্রুত পায়ে। (২৩) فَحَشَرَ এরপর সে সকলকে সমবেত করলো فَنَادٰى এবং ঘোষণা করলো, (২৪) فَقَالَ অতঃপর বললো, اَنَا আমিই رَبُّكُمُ الْاَعْلٰى তোমাদের সর্বোচ্চ প্রতিপালক। (২৫) فَاَخَذَهُ اللهُ ফলে আল্লাহ তাকে পাকড়াও করলেন نَكَالَ আযাবে اَلْاٰخِرَةِ وَالْاُوْلٰى পরকালের ও ইহকালের, (২৬) اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ নিশ্চয় এতে রয়েছে لَعِبْرَةً উপদেশ لِمَنْ তার জন্য যে يَخْشٰى ভয় করে।

সরল অনুবাদ :

(১৫) (হে মুহাম্মদ!) তোমার নিকট মূসা (আঃ)-এর কাহিনী পৌঁছেছে কি?১০ (১৬) যখন তাঁর প্রতিপালক পবিত্র তোওয়া উপত্যকায় তাকে ডেকে বলেছিলেন, (১৭) ফিরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে, (১৮) এবং (তাকে) বল, তুমি কি পবিত্র হতে চাও? (১৯) আর আমি তোমাকে তোমার প্রতিপালকের দিকে পথ দেখাব, যাতে তুমি তাঁকে ভয় কর। (২০) অতঃপর তিনি তাকে বড় নিদর্শন দেখালেন।১১ (২১) কিন্তু সে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো এবং অবাধ্য হলো। (২২) আর সে পুনরায় পিছনে ফিরে গেলো দ্রুত পায়ে।১২ (২৩) সে সকলকে সমবেত করল এবং ঘোষণা করল, (২৪) অতঃপর বলল, আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ প্রতিপালক। (২৫) ফলে আল্লাহ তাকে পরকালের ও ইহকালের আযাবে পাকড়াও করলেন,১৩ (২৬) এতে অবশ্যই উপদেশ রয়েছে তার জন্য, যে ভয় করে।

টীকা :

[১০] কাফিরদের অবিশবাস, হঠকারিতা ও শত্রুতার ফলে রাসূলুল্লাহ ﷺ যে মর্মপীড়া অনুভব করতেন, তা দূর করার উদ্দেশ্যে মূসা (আঃ) ও ফিরাউনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, শত্রুরা কেবল আপনাকেই কষ্ট দেয়নি, পূর্ববর্তী সকল রাসূলকেও কষ্ট দিয়েছে, কিন্তু তাদের পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ। সুতরাং আপনিও সবর করুন।

[১১] বড় নিদর্শন বলতে সবগুলো মুজিযা উদ্দেশ্য হতে পারে। আবার লাঠির অজগর হয়ে যাওয়া এবং হাত শুভ্র হওয়ার কথাও বুঝানো হতে পারে।

[১২] অর্থাৎ হককে বাতিল দ্বারা প্রতিহত করতে চেষ্টা করতে লাগল।

[১৩] نَكَالٌ (নাকাল) শব্দের অর্থ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, যা দেখে অন্যরাও আতঙ্কিত হয়ে যায় এবং শিক্ষা পায়।

আয়াত : ২৭-৪৬

اَاَنْتُمْ اَشَدُّ خَلْقًا اَمِ السَّمَآءُ بَنَاهَا (২৭) رَفَعَ سَمْكَهَا فَسَوَّاهَا (২৮) وَاَغْطَشَ لَيْلَهَا وَاَخْرَجَ ضُحَاهَا (২৯) وَالْاَرْضَ بَعْدَ ذٰلِكَ دَحَاهَا (৩০) اَخْرَجَ مِنْهَا مَآءَهَا وَمَرْعَاهَا (৩১) وَالْجِبَالَ اَرْسَاهَا (৩২) مَتَاعًا لَّكُمْ وَلِاَنْعَامِكُمْ (৩৩) فَاِذَا جَآءَتِ الطَّآمَّةُ الْكُبْرٰى (৩৪) يَوْمَ يَتَذَكَّرُ الْاِنْسَانُ مَا سَعٰى (৩৫) وَبُرِّزَتِ الْجَحِيْمُ لِمَنْ يَّرٰى (৩৬) فَاَمَّا مَنْ طَغٰى (৩৭) وَاٰثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا (৩৮) فَاِنَّ الْجَحِيْمَ هِيَ الْمَأْوٰى (৩৯) وَاَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّه وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوٰى (৪০) فَاِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوٰى (৪১) يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ السَّاعَةِ اَيَّانَ مُرْسَاهَا (৪২) فِيْمَ اَنْتَ مِنْ ذِكْرَاهَا (৪৩) اِلٰى رَبِّكَ مُنْتَهَاهَا (৪৪) اِنَّمَاۤ اَنْتَ مُنْذِرُ مَنْ يَّخْشَاهَا (৪৫) كَاَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوْاۤ اِلَّا عَشِيَّةً اَوْ ضُحَاهَا (৪৬)

শাব্দিক অনুবাদ :

(২৭) اَاَنْتُمْ اَشَدُّ خَلْقًا তোমাদেরকে সৃষ্টি করা কি কঠিন কাজ, اَمْ নাকি اَلسَّمَآءُ আকাশ? بَنَاهَا তিনি তা সৃষ্টি করেছেন। (২৮) رَفَعَ سَمْكَهَا তিনি তার ছাদ সুউচ্চ করেছেন فَسَوَّاهَا অতঃপর তা সুবিন্যস্ত করেছেন। (২৯) وَاَغْطَشَ এবং তিনি অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন لَيْلَهَا এর রজনীকে وَاَخْرَجَ এবং বের করেছেন ضُحَاهَا তার দিবসকে। (৩০) وَالْاَرْضَ এবং পৃথিবীকে بَعْدَ ذٰلِكَ এরপর دَحَاهَا বিস্তৃত করেছেন। (৩১) اَخْرَجَ তিনি বের করেছেন مِنْهَا তা থেকে مَآءَهَا তার পানি وَمَرْعَاهَا ও তার উদ্ভিদ, (৩২) وَالْجِبَالَ আর পাহাড়সমূহ اَرْسَاهَا তিনি সেগুলোকে দৃঢ়ভাবে গেঁড়ে দিয়েছেন, (৩৩) مَتَاعًا এগুলো সামগ্রীস্বরূপ لَكُمْ তেমাদের জন্য وَلِاَنْعَامِكُمْ এবং তোমাদের গৃহপালিত জন্তুর জন্য। (৩৪) فَاِذَا جَآءَتْ অতঃপর যখন উপস্থিত হবে اَلطَّآمَّةُ اَلْكُبْرٰى মহা বিপর্যয় (৩৫) يَوْمَ সেদিন يَتَذَكَّرُ الْاِنْسَانُ মানুষ স্মরণ করবে مَا سَعٰى সে যা করেছে, (৩৬) وَبُرِّزَتْ এবং প্রকাশ করা হবে اَلْجَحِيْمُ জাহান্নামকে لِمَنْ يَّرٰى যে দেখবে তার জন্যে। (৩৭) فَاَمَّا مَنْ অনন্তর যে طَغٰى সীমালঙ্ঘন করেছে, (৩৮) وَاٰثَرَ এবং অগ্রাধিকার দিয়েছে اَلْحَيَاةَ الدُّنْيَا দুনিয়ার জীবনকে, (৩৯) فَاِنَّ الْجَحِيْمَ নিশ্চয় জাহান্নামই হবে هِيَ الْمَأْوٰى তার ঠিকানা। (৪০) وَاَمَّا مَنْ পক্ষান্তরে যে خَافَ ভয় করেছে مَقَامَ رَبِّه  নিজ প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোর وَنَهَى এবং বিরত রেখেছে اَلنَّفْسَ নিজেকে عَنِ الْهَوٰى কুপ্রবৃত্তি হতে, (৪১) فَاِنَّ الْجَنَّةَ অবশ্যই জান্নাত হবে هِيَ الْمَأْوٰى তার ঠিকানা। (৪২) يَسْاَلُوْنَكَ তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে عَنِ السَّاعَةِ কিয়ামত সম্পর্কে اَيَّانَ কখন مُرْسَاهَا তা ঘটবে? (৪৩) فِيْمَ اَنْتَ তোমার কী সম্পর্ক مِنْ ذِكْرَاهَا এ আলোচনার সাথে। (৪৪) اِلٰى رَبِّكَ তোমার প্রতিপালকের নিকট রয়েছে مُنْتَهَاهَا এ ব্যাপারে চূড়ান্ত জ্ঞান, (৪৫) اِنَّمَاۤ اَنْتَ নিশ্চয় তুমি কেবল مُنْذِرُ সতর্ককারী مَنْ يَّخْشَاهَا যে একে ভয় করে। (৪৬) كَاَنَّهُمْ যেন তারা يَوْمَ يَرَوْنَهَا যেদিন এটা দেখবে, لَمْ يَلْبَثُوْا তারা (পৃথিবীতে) অবস্থান করেনি اِلَّا عَشِيَّةً এক সন্ধ্যা ব্যতীত اَوْ ضُحَاهَا অথবা এক সকাল।

সরল অনুবাদ :

(২৭) তোমাদেরকে১৪ সৃষ্টি করা কঠিন কাজ, না আকাশ সৃষ্টি করা? তিনিই এটা নির্মাণ করেছেন।১৫ (২৮) তিনি তার ছাদ সুউচ্চ ও সুবিন্যস্ত করেছেন। (২৯) আর তিনি এর রজনীকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন এবং স্পষ্ট করেছেন তার দিবসকে। (৩০) এরপর তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন। (৩১) তিনি তা থেকে বের করেছেন পানি ও উদ্ভিদ, (৩২) আর পাহাড়সমূহকে তিনি দৃঢ়ভাবে গেঁড়ে দিয়েছেন, (৩৩) এসব ও তোমাদের গৃহপালিত জন্তুর সামগ্রীরূপে। (৩৪) অতঃপর যখন মহা বিপর্যয় (কিয়ামত) উপস্থিত হবে,১৬ (৩৫) সেদিন মানুষ যা করেছে তা স্মরণ করবে, (৩৬) আর যে দেখবে তার জন্যে প্রকাশ করা হবে জাহান্নামকে। (৩৭) অনন্তর যে সীমালঙ্ঘন করেছে, (৩৮) এবং দুনিয়ার জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, (৩৯) নিশ্চয় জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা।১৭ (৪০) পক্ষান্তরে যে নিজ প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোর ভয় রেখেছে১৮ এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিজেকে বিরত রেখেছে, (৪১) অবশ্যই তার ঠিকানা হবে জান্নাত। (৪২) তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে কিয়ামত সম্পর্কে যে, ওটা কখন ঘটবে? (৪৩) এর আলোচনার সাথে তোমার কী সম্পর্ক? (৪৪) এ ব্যাপারে চূড়ান্ত জ্ঞান তো তোমার প্রতিপালকের নিকট,১৯ (৪৫) তুমি তো শুধু তার সতর্ককারী, যে ওটাকে ভয় করে। (৪৬) যেদিন তারা ওটা দেখবে, তখন (তাদের মনে হবে) যেন তারা (পৃথিবীতে) এক সন্ধ্যা অথবা এক সকালের বেশি অবস্থান করেনি।২০

টীকা :

[১৪] কিয়ামত ও মৃত্যুর পরের জীবন যে সম্ভব এ কথার যৌক্তিকতা এখানে পেশ করা হয়েছে।

[১৫] এখানে মরে মাটিতে পরিণত হওয়ার পর পুনরুজ্জীবিত কীরূপে হবে, কাফিরদের এ কথার জবাব দেয়া হয়েছে। এখানে সৃষ্টি করা মানে দ্বিতীয়বার মানুষ সৃষ্টি করা। মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে এই যুক্তিটিই কুরআনের বিভিন্ন স্থানে পেশ করা হয়েছে। (সূরা ইয়াসীন- ৮১) (সূরা গাফির- ৫৭)।

[১৬] এই মহাসংকট ও বিপর্যয় হচ্ছে কিয়ামত। এজন্য এখানে ‘‘আত-তাম্মাতুল কুবরা’’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ‘তাম্মাহ’ বলতে এমন ধরনের মহাবিপর্যয় বুঝায়, যা সবকিছুর উপর ছেয়ে যায়। এরপর আবার তার সাথে ‘কুবরা’ (মহা) শব্দ ব্যবহার করে এ কথা প্রকাশ করা হয়েছে যে, সেই বিপদ, সংকট ও বিপর্যয় হবে অতি ভয়াবহ ও ব্যাপক।

[১৭] এ আয়াতে জাহান্নামবাসীদের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে, আর পার্থিব জীবনকে আখেরাতের উপর অগ্রাধিকার দেবে অর্থাৎ আখেরাতের কাজ ভুলে গিয়ে দুনিয়ার সুখ ও আনন্দকেই অগ্রাধিকার দিবে; তার সম্পর্কে বলা হয়েছে, জাহান্নামই তার ঠিকানা।

[১৮] রবের সামনে অবস্থানের দুটি অর্থ হতে পারে- (এক) রবের সামনে হাজির হয়ে হিসাব নিকাশের সম্মুখীন হতে হবে- এ বিশ্বাস করে প্রবৃত্তির অনুসরণ হতে যে নিজেকে হেফাযত করেছে তার জন্য রয়েছে জান্নাত। (দুই) রবের যে সুমহান মর্যাদা ও তাঁর উচ্চ মর্তবার কথা স্মরণ করে অন্যায় কাজ ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করে বিরত থেকেছে সে জান্নাতী হবে।

[১৯] এ সম্পর্কে অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে কিয়ামত কখন ঘটবে। বলুন, এ বিষয়ের জ্ঞান আমার প্রতিপালকেরই আছে। শুধু তিনিই যথাসময়ে এর প্রকাশ ঘটাবেন; এটা আকাশমন্ডলী ও জমিনের একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা হবে। হাদীসেও জিবরাঈলের প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ ﷺ একই উত্তর দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, সে প্রশ্নকারীর চেয়ে বেশি জানে না।’’-(বুখারী হা/৫০)

[২০] কিয়ামতের দিন দুনিয়ার জীবনের কথা মানুষের মনে পড়বে, কিন্তু দুনিয়াতে তারা কতদিন ছিল এ নিয়ে নানা রকম কথা বলবে। কেউ বলবে দশ দিন, (সূরা ত্বা-হা ১০৩)। কেউ বলবে একদিন (সূরা ত্বা-হা ১০৪), কেউ বলবে একদিন বা অর্ধদিন, (সূরা মু’মিনূন ১১৩)। কেউ বলবে দিবসের মাত্র এক মুহূর্তকাল- (সূরা ইউনুস ৪৫), (সূরা আহকাফ ৩৫), (সূরা রূম ৫৫)।

কিয়ামতের দিন লোকেরা নিজেদের দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে আন্দাজ করে নেবে যে, তা ছিল অতি সামান্য কয়েকটি দিন। মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যে সময়কাল অতিবাহিত হবে সে সম্পর্কেও তাদের প্রায় একই ধরনের অনুমান হবে। নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থায় একটি চিরন্তন জীবন যখন তাদের সামনে উপস্থিত হবে এবং তারা দেখবে যে, এখানকার জন্য তারা কিছুই করেনি, তখন তারা চরম আক্ষেপ ও হতাশার সাথে নিজেদের দুনিয়ার জীবনের দিকে ফিরে দেখবে এবং দুঃখ করে বলতে থাকবে, হায়! মাত্র দু’দিনের আনন্দ ও ভোগবিলাসের লোভে আমরা চিরকালের জন্য নিজেদের জীবনকে ধ্বংস করলাম।

এ সূরার শিক্ষাসমূহ :

যার পক্ষে আসমান সৃষ্টির মতো আশ্চর্য বস্তু সৃষ্টি করা সম্ভব, সে মহান আল্লাহর পক্ষে পুনরুত্থান ঘটানো মোটেও কঠিন নয়।

কিয়ামত আকস্মিকভাবে সংঘটিত হয়ে যাবে।

কিয়ামতের দিন কঠিন পরিস্থিতি দেখে মানুষ তার ইহকালীন জীবনের কথা স্মরণ করবে এবং আফসোস করবে।

ফিরাউন দুনিয়ার সাময়িক ক্ষমতা লাভ করেই নিজেকে রব হিসেবে দাবী করেছিল; সুতরাং বর্তমান যুগের শাসকদের জন্য ফিরাউনের কার্যকলাপ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।

সীমালঙ্ঘন করা এবং দুনিয়াকে আখেরাতের উপর প্রাধান্য দেয়াটা জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

আল্লাহকে ভয় করা এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিজেদেরকে বিরত রাখাটা জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম।

রাসূলুল্লাহ ﷺ ইলমে গায়েব সম্পর্কে অবগত নন; তিনি কেবলমাত্র একজন সতর্ককারী।

আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার সময়কাল একটি সন্ধ্যা বা একটি সকালের সমতুল্য।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন