hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আম্মা পারা

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৩১
১০৬- সূরা কুরাইশ
সূরার নামকরণ :

প্রথম আয়াতে উল্লেখিত قُرَيْشٌ (কুরাইশ) শব্দের আলোকে এ সূরার নামকরণ করা হয় আল-কুরাইশ। আবার প্রথম শব্দের প্রতি লক্ষ্য করে কেউ কেউ এটিকে সূরা ঈলাফ বলে অভিহিত করেছেন। কুরাইশ একটি গোত্রের নাম

নাযিলের সময়কাল :

সূরা আল ফীলের বিষয়বস্তুর সাথে এর এত গভীর সম্পর্ক রয়েছে যে, আল ফীল নাযিল হওয়ার পর পরই এ সূরাটি নাযিল হয়ে থাকবে বলে মনে হয়।

ঐতিহাসিক পটভূমি :

আবদুল মুত্তালিবের পিতা ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রপিতামহ হাশেমের মনে সর্বপ্রথম আরবের সাথে প্রাচ্য এলাকার দেশসমূহ এবং সিরিয়া ও মিসরের মধ্যে যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চলতো তাতে অংশগ্রহণ করার এবং সেই সঙ্গে আরববাসীদের জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে আনার চিন্তা জাগে। সেসময় দক্ষিণ আরব থেকে লোহিত সাগরের উপকূল ঘেঁসে সিরিয়া ও মিসরের দিকে প্রসারিত বাণিজ্য পথে ব্যবসা বিপুলভাবে জমে উঠেছিল। আরবের অন্যান্য বাণিজ্য কাফেলার তুলনায় কুরাইশদের বাড়তি সুবিধা ছিল। কাবার খাদেম হওয়ার কারণে পথের সমস্ত গোত্র তাদেরকে মর্যাদার চোখে দেখতো। হজ্জের সময় কুরাইশ বংশীয় লোকেরা যে আন্তরিকতা, উদারতা ও বদান্যতা সহকারে হাজীদের খেদমত করতো সে জন্য সবাই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ ছিল। কাজেই কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলার উপর ডাকাতদের আক্রমণ হত না। পথের বিভিন্ন গোত্র অন্যান্য বাণিজ্য কাফেলার কাছ থেকে যে বিপুল পরিমাণ চাদা আদায় করতো তাও তাদের কাছ থেকে আদায় করতে পারতো না। এভাবে তাদের ব্যবসা দ্রুত উন্নতি লাভ করতে থাকে। আর এই সঙ্গে তারা আশপাশের গোত্রদের ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে যে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল সেজন্য তাদেরকে ‘আসহাবুল ঈলাফ’ তথা প্রীতির সম্পর্ক সৃষ্টিকারী বলা হতো।

এ ব্যবসার কারণে কুরাইশ বংশীয় লোকেরা সিরিয়া, মিসর, ইরান, ইয়ামান ও হাবশার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ লাভ করে। সরাসরি বিভিন্ন দেশের সমাজ, সংস্কৃতি, সভ্যতার সংস্পর্শে আসার কারণে তাদের দেখার, জানার ও উপলব্ধি করার মান অনেক উন্নত হতে থাকে। ফলে আরবের দ্বিতীয় কোন গোত্র তাদের সমপর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। ধন-সম্পদের দিক দিয়েও তারা আরবের সবচেয়ে উঁচু পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। মক্কা পরিণত হয়েছিল সমগ্র আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্রে।

কুরাইশরা এভাবে একের পর এক উন্নতির মনযিল অতিক্রম করে চলছিল। এমন সময় আবরাহা কর্তৃক মক্কা আক্রমণের ঘটনা ঘটে। যদি সে সময় আবরাহা কাবা ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হতো তাহলে এ ঘরের খাদেম হিসেবে সারা দেশে কুরাইশদের যে মর্যাদা ও প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল তাও মুহূর্তের মধ্যে ধূলিস্যাৎ হয়ে যেতো। কিন্তু মহান আল্লাহ তার অসীম কুদরতের খেলা দেখান। পক্ষীবাহিনী পাথর মেরে মেরে আবরাহার ৬০ হাজারের বিশাল হাবশী বাহিনীকে ধ্বংস করে দেন। এই সঙ্গে সারা দেশে কুরাইশদের প্রতিপত্তি আগের চাইতেও আরো অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে এরা নির্বিঘ্নে আরবের যে কোন অংশে যেতো এবং নিজেদের বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে যে কোন এলাকা অতিক্রম করতো।

মূল বক্তব্য :

নবী ﷺ এর আবির্ভাবকালে যেহেতু এ অবস্থা সবার জানা ছিল তাই এসব কথা আলোচনা করার প্রয়োজন ছিল না। এ কারণে এ ছোট্ট সূরাটিতে চারটি বাক্যের মধ্য দিয়ে কুরাইশদেরকে কেবলমাত্র এতটুকু কথা বলাই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে যে, যখন তোমরা নিজেরাই এ ঘরটিকে (কাবা ঘর) দেবমূর্তির মন্দির নয় বরং আল্লাহর ঘর বলে মনে করো এবং যখন তোমরা ভালোভাবেই জান যে, আল্লাহই তোমাদেরকে এ ঘরের বদৌলতে এ পর্যায়ের শান্তি ও নিরাপত্তা দান করেছেন, তোমাদের ব্যবসায় উন্নতি দান করেছেন এবং অভাব-অনাহার থেকে রক্ষা করে তোমাদেরকে এ ধরনের সমৃদ্ধি দান করেছেন, তখন তোমাদের তো আসলে তাঁরই ইবাদাত করা উচিত।

আয়াত : ১-৪



لِاِيْلَافِ قُرَيْشٍ (১) اِيْلَافِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَآءِ وَالصَّيْفِ (২) فَلْيَعْبُدُوْا رَبَّ هٰذَا الْبَيْتِ (৩) اَلَّذِيْۤ اَطْعَمَهُمْ مِّنْ جُوْعٍ وَّاٰمَنَهُمْ مِّنْ خَوْفٍ (৪)

শাব্দিক অনুবাদ :

(১) لِاِيْلَافِ যেহেতু আসক্তি রয়েছে قُرَيْشٍ কুরাইশদের। (২) اِيْلَافِهِمْ তাদের আসক্তি রয়েছে رِحْلَةَ সফরের اَلشِّتَآءِ শীতকালীন وَالصَّيْفِ ও গ্রীষ্মকালীন। (৩) فَلْيَعْبُدُوْا অতএব তাদের ইবাদত করা উচিত رَبَّ প্রতিপালকের هٰذَا الْبَيْتِ এ ঘরের। (৪) اَلَّذِيْ যিনি اَطْعَمَهُمْ তাদের খাবার সরবরাহ করেছেন مِنْ جُوْعٍ ক্ষুধার সময় وَاٰمَنَهُمْ এবং তাদেরকে নিরাপদ রেখেছেন مِنْ خَوْفٍ ভয়-ভীতি থেকে।

সরল অনুবাদ :

(১) কুরাইশদের১ অনুকূল (ও নিরাপদ) হওয়ার কারণে২। (২) অনুকূলে হওয়ার কারণে তাদের শীত ও গ্রীষ্ম কালের (ব্যবসায়িক) সফর।৩ (৩) অতএব তাদের এ ঘরের মালিকেরই ইবাদত করা উচিত।৪ (৪) যিনি ক্ষুধায় তাদের খাবার সরবরাহ করেছেন৫ এবং তাদেরকে ভয়-ভীতি থেকে নিরাপদ রেখেছেন।৫

টীকা :

[১] কুরাইশ একটি গোত্রের নাম। নদর এর সন্তানদেরকে কুরাইশ বলা হয়। কারো কারো মতে, ফিহর ইবনে মালিক ইবনে নাদর ইবনে কিনানাহ এর বংশধরদেরকে কুরাইশ বলা হয়। হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ইসমাঈলের বংশধর থেকে কিনানাহকে, কিনানাহর বংশধর থেকে কুরাইশকে, কুরাইশ থেকে বনী হাশেমকে, বনী হাশেম থেকে আমাকে পছন্দ করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হা/২২৭৬)

[২] إِيْلَافٌ শব্দটি تَأْلِيْفٌ থেকে এসেছে। তখন অর্থ হবে, মিল-মহববত থাকা, একত্রিত থাকা। অর্থাৎ কুরাইশদেরকে একত্রিত রাখা, বিচ্ছেদের পর মিলিত হওয়া এবং তাদের সাথে মানুষের সম্পর্ক ঠিক রাখা। বলা হয়েছে, কুরাইশদের আসক্তির কারণে। কিন্তু আসক্তির কারণে কী হয়েছে? এ কথা উহ্য আছে। কেউ কেউ বলেন, এখানে উহ্য বাক্য হচ্ছে, আমি হস্তীবাহিনীকে এজন্য ধ্বংস করেছি কিংবা আমি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণের সাদৃশ্য এজন্য করেছি, যাতে কুরাইশদের শীত ও গ্রীষ্মকালীন দুই সফরের পথে কোন বাধাবিপত্তি না থাকে এবং সবার অন্তরে তাদের মাহাত্ম্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।

কেউ কেউ বলেছেন যে, এখানে উহ্য বাক্য হচ্ছে أَعْجَبُوْا অর্থাৎ তোমরা কুরাইশদের ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ কর, তারা কীভাবে শীত ও গ্রীষ্মের সফর নিরাপদে নির্বিবাদে করে, তবুও তারা এ ঘরের রবের ইবাদাত করে না। এ মতটি ইমাম তাবারী গ্রহণ করেছেন।

কেউ কেউ বলেন, এর সম্পর্ক পরবর্তী বাক্য فَلْيَعْبُدُوْا এর সাথে। অর্থাৎ এই নিয়ামতের কারণে কুরাইশদের কৃতজ্ঞ হওয়া ও আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা উচিত।

[৩] শীত ও গ্রীষ্মের সফরের অর্থ হচ্ছে গ্রীষ্মকালে কুরাইশরা সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের দিকে বাণিজ্য সফর করত। কারণ এ দুটি শীত প্রধান দেশ। আর শীতকালে সফর করতো দক্ষিণ আরব তথা ইয়েমেনের দিকে। কারণ সেটি গ্রীষ্ম প্রধান এলাকা।

[৪] ‘এ ঘর’ অর্থ কাবা ঘর। বলা হয়েছে, এ ঘরের রবের ইবাদাত করো। এখানে ঘরটিকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত করার মাধ্যমে ঘরকে সম্মানিত করাই উদ্দেশ্য। আর এই গৃহই যেহেতু তাদের সব শ্রেষ্ঠত্ব ও কল্যাণের উৎস ছিল, তাই বিশেষভাবে এই গৃহের মৌলিক গুণটির উল্লেখ করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে, এটি মহান রবের ঘর। অর্থাৎ এ ঘরের বদৌলতেই কুরাইশরা এই নিয়ামতের অধিকারী হয়েছে।

[৫] মক্কায় আসার পূর্বে কুরাইশরা যখন আরবের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল তখন তারা অনাহারে মরতে বসেছিল। এখানে আসার পর তাদের জন্য রিযিকের দরজাগুলো খুলে যেতে থাকে। তাদের স্বপক্ষে ইবরাহীম (আঃ) দু‘আ করেছিলেন, হে আল্লাহ! তাদের খাবারের জন্য ফলমূল দান করুন। (সূরা ইবরাহীম : ৩৭)

[৬] অর্থাৎ যে ভীতি থেকে আরব দেশের কেউ নিরাপদ নয়, তা থেকে তারা নিরাপদ রয়েছে। সে যুগে আরবের অবস্থা এমন ছিল যে, সারা দেশে এমন কোন জনপদ ছিল না যেখানে লোকেরা রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতো। কারণ সবসময় তারা আশঙ্কা করতো, এই বুঝি কোন লুটের দল রাতের অন্ধকারে হঠাৎ তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং তাদের সবকিছু লুট করে নিয়ে গেলো। কিন্তু কুরাইশরা মক্কায় সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল। তাদের নিজেদের উপর কোন শত্রুর আক্রমণের ভয় ছিল না।

এখানে লক্ষ্যণীয় যে, সুখী জীবনের জন্য যা যা দরকার তা সমস্তই এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কুরাইশকে এগুলো দান করেছিলেন। اَطْعَمَهُمْ مِنْ جُوْعٍ বলে পানাহারের যাবতীয় সরঞ্জাম বুঝানো হয়েছে এবং وَاٰمَنَهُمْ مِنْ خَوْفٍ বাক্যে দস্যু ও শত্রুদের থেকে এবং যাবতীয় ভয়-ভীতি থেকে নিরাপত্তা বুঝানো হয়েছে।

এ সূরার শিক্ষাসমূহ :

সত্যকে জানার পর সত্যের বিরোধিতা করা উচিত নয়।

সর্বদা নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উচিত।

আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার একমাত্র পদ্ধতি হলো একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করা এবং এ ক্ষেত্রে কাউকে শরীক না করা।

ক্ষুধার সময় খাদ্য পাওয়া এবং ভয়ের সময় নিরাপত্তা লাভ করা অনেক বড় নিয়ামত।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন