মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সূরাটির দ্বিতীয় আয়াতে উল্লেখিত আলাক ( عَلَقٌ ) শব্দ থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে। এর অর্থ ঝুলন্ত, জমাটবাধা রক্ত।
নাযিলের সময়কাল :
এই সূরাটির দুটি অংশ। প্রথম অংশটি اِقْرَأْ থেকে শুরু হয়ে পঞ্চম আয়াতে مَا لَمْ يَعْلَمْ এ গিয়ে শেষ হয়েছে। আর দ্বিতীয় অংশটি كَلَّاۤ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَيَطْغٰى থেকে শুরু করে সূরার শেষ পর্যন্ত চলেছে। প্রথম অংশটি যে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উপর অবতীর্ণ সর্বপ্রথম অহী- এ ব্যাপারে আলেম সমাজের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ একমত। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন হারামে সালাত আদায় শুরু করেন এবং আবু জাহেল তাঁকে হুমকি দিয়ে তা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে তখন দ্বিতীয় অংশটি নাযিল হয়।
নাযিলের প্রেক্ষাপট :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট ওহী আগমনের সূচনা হয় ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। স্বপ্নে তিনি যা দেখতেন তা-ই প্রভাতের আলোর ন্যায় তাঁর কাছে প্রকাশ হয়ে যেত। কিছুকাল এ অবস্থা চলার পর আপনা থেকেই তাঁর অন্তরে নির্জনে থাকার প্রেরণা জাগ্রত হয়। তিনি (মক্কা নগরী হতে তিন মাইল দূরে) হেরা গুহায় নির্জনে (ইবাদাতের উদ্দেশ্যে) অবস্থান করতে লাগলেন। তিনি তাঁর পরিবারের নিকট না গিয়ে সেথায় কয়েক রাত পর্যন্ত ইবাদাতে মগ্ন থাকতে লাগলেন। এজন্য তিনি সঙ্গে কিছু খাবার নিয়ে যেতেন। তারপর খাদীজা (রাঃ) এর নিকট ফিরে যেতেন। পুনরায় কিছু খাবার নিয়ে (একাধারে ইবাদাতে রত হওয়ার জন্য) হেরা গুহায় চলে যেতেন।
এমনিভাবে হেরা গুহায় থাকাকালীন হঠাৎ তাঁর নিকট হক্ব (ওহী) এল। অর্থাৎ ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) আসলেন। অতঃপর বললেন, اِقْرَأْ (ইক্রা) (হে নবী) ‘‘আপনি পড়ুন।’’ উত্তরে তিনি বললেন, আমি তো পড়তে জানি না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, এ কথা শুনে জিবরীল আমাকে ধরে এমন জোরে চাপ দিলেন যাতে আমার খুব কষ্ট অনুভূত হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘আপনি পড়ুন!’ জবাবে আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানি না। এটা শুনে আবার (তিনি) আমাকে ধরে এমন জোরে চাপ দিলেন যাতে এবার আমার আরো বেশি কষ্ট অনুভূত হতে লাগল। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে পুনরায় বললেন, ‘‘আপনি পড়ুন’’। জবাবে আমি আগের ন্যায় বললাম, ‘আমি তো পড়তে জানি না।’ এটা শুনে জিবরাঈল (আঃ) তৃতীয় বার আমাকে জোরে চাপ দিলেন, তারপর ছেড়ে দিয়ে নিচের আয়াতগুলো পাঠ করতে বললেন-
পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ঝুলন্ত রক্তপিন্ড হতে। পড়ুন, আপনার পালনকর্তা অতি সম্মানিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। (সূরা আলাক- ১-৫)
তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ উক্ত আয়াতসমূহ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। তখন ভয়ে তাঁর অন্তর কাঁপতেছিল। তিনি তাঁর স্ত্রী খাদীজা বিনতে খুয়াইলিদ এর কাছে এসে বললেন, আমাকে চাদর জড়িয়ে দাও! আমাকে চাদর জড়িয়ে দাও। অতঃপর খাদীজা (রাঃ) তাঁকে চাদর জড়িয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর থেকে ভয় কেটে গেলে তিনি বিবি খাদীজাকে সব ঘটনা খুলে বললেন। তিনি বললেন, আমি আমার জীবন নিয়ে ভয় করছি। তখন খাদীজা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ কে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আল্লাহর কসম! মহান আল্লাহ আপনাকে কখনো চিন্তায় ফেলবেন না। কেননা আপনি আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভাল ব্যবহার করেন। এতিম, বিধবা, অন্ধ ও অক্ষমদের খাওয়া পরা ও থাকার ব্যবস্থা করেন। বেকারদের কর্মসংস্থান করেন। মেহমানের সমাদর করেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্দশাগ্রস্ত জনগণকে সাহায্য করেন। (অতএব এ অবস্থায় আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই)।
এরূপ সান্ত্বনা দেয়ার পর খাদীজা (রাঃ) রাসূল ﷺ কে সাথে নিয়ে স্বীয় চাচাত ভাই ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল এর নিকট গেলেন। যিনি জাহেলী যুগে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি হিব্রু ভাষায় কিতাব লিখতেন। সুতরাং আল্লাহ যতটুকু চাইতেন তিনি ইঞ্জিল হতে ততটুকু হিব্রু ভাষায় লিখতেন। তিনি সেসময় খুব বৃদ্ধ হওয়ায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে চাচাত ভাই! আপনি আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। তখন ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল রাসূলুল্লাহ ﷺ কে লক্ষ্য করে বললেন, হে ভাতিজা! তুমি কী দেখেছ? রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে সব কাহিনী খুলে বললেন। কাহিনী শুনার পর ওয়ারাকা ইবনে নাওফাল রাসূল ﷺ কে বললেন, ইনি তো সেই জিবরাঈল, যাকে আল্লাহ মূসা (আঃ) এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! (তোমার নবুওয়াতের প্রচারকালে) যদি আমি ক্ষমতাশালী যুবক হতাম, যদি আমি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার জাতি তোমাকে দেশান্তরিত করে ছাড়বে!
এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, আমার দেশবাসী কি আমাকে বিতাড়িত করবে? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ! তুমি সত্য দ্বীন নিয়ে প্রেরিত হয়েছ। তোমার ন্যায় যাঁরা পূর্বে এরূপ সত্য দ্বীন নিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের সকলের সাথেই শত্রুতা করা হয়েছে। (আমি তোমাকে কথা দিলাম) যদি আমি সেদিন জীবিত থাকি, তাহলে অবশ্যই প্রবলভাবে তোমাকে সাহায্য করব। এ কাহিনীর অল্পদিন পরই ওয়ারাকা ইন্তেকাল করেন। এরপর (কিছু দিন) ওহী নাযিল হওয়া বন্ধ ছিল। (বুখারী হা/৩)
সূরার বিষয়বস্তু :
এ সূরার প্রথম পাঁচটি আয়াতে জ্ঞান অর্জনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এবং এ কথাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, জ্ঞানের মূল উৎস হলেন আল্লাহ তা‘আলা। সকল জ্ঞান তার কাছ থেকেই আসে। তিনি যাকে যতটুকু ইচ্ছা জ্ঞান দান করেন। সেই সাথে এখানে কলমের গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে। যেহেতু জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে লেখালেখির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, তিনি কলম দ্বারা মানুষকে শিক্ষা দান করেছেন।
সূরার দ্বিতীয় অংশে ঐসকল কাফির-মুশরিকদেরকে হুশিয়ারী শুনানো হয়েছে, যারা নবী ﷺ এর নবুওয়াতকে মানতে রাজি ছিল না- এমনকি তাকে আল্লাহর ঘরে ইবাদাত করতেও বাধা প্রদান করত। এর কারণ ছিল যে, তারা নিজেদেরকে অমুখাপেক্ষী মনে করত। কারো সামনে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে- এ বিশ্বাস তাদের ছিল না। এজন্য তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে কঠিনভাবে পাকড়াও করে শাস্তি দেবেন। সবশেষে নবী ﷺ কে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে তার ইবাদাত করা এবং তাকে সিজদা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
(১) اِقْرَأْ পাঠ করুন بِاسْمِ رَبِّكَ আপনার পালনকর্তার নামে اَلَّذِيْ যিনি خَلَقَ সৃষ্টি করেছেন (২) خَلَقَ তিনি সৃষ্টি করেছেন اَلْاِنْسَانَ মানুষকে مِنْ عَلَقٍ জমাটবাধা রক্ত থেকে। (৩) اِقْرَأْ পাঠ করুন, وَرَبُّكَ আপনার পালনকর্তা اَلْاَكْرَمُ মহান দয়ালু, (৪) اَلَّذِيْ যিনি عَلَّمَ শিক্ষা দিয়েছেন بِالْقَلَمِ কলমের দ্বারা, (৫) عَلَّمَ তিনি শিক্ষা দিয়েছেন اَلْاِنْسَانَ মানুষকে مَا যা لَمْ يَعْلَمْ সে জানত না।
সরল অনুবাদ :
(১) পাঠ করুন! আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন।১ (২) তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাটবাধা রক্ত থেকে।২ (৩) পাঠ করুন! আপনার প্রতিপালক মহান দয়ালু।৩ (৪) যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।৪ (৫) তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।৫
টীকা :
[১] শুধু বলা হয়েছে, সৃষ্টি করেছেন। কাকে সৃষ্টি করেছেন তা বলা হয়নি। এ ক্ষেত্রে আপনা-আপনিই এ অর্থ বের হয়ে আসে যে, সেই রবের নাম নিয়ে পড়ো, যিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহানের এবং সমগ্র সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা।
[২] পূর্বের আয়াতে সমগ্র সৃষ্টিজগত সৃষ্টির বর্ণনা ছিল। এ আয়াতে সৃষ্টিজগতের মধ্যে মানব সৃষ্টি করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, মানুষকে আলাক থেকে সৃষ্টি করেছেন। আলাক হচ্ছে জমাটবাধা রক্ত। সাধারণভাবে বিশ্ব-জাহানের সৃষ্টির কথা বলার পর বিশেষ করে মানুষের কথা বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ কেমন হীন অবস্থা থেকে তার সৃষ্টিপর্ব শুরু করে তাকে পূর্ণাঙ্গ মানুষে রূপান্তরিত করেছেন।
[৩] এখানে পড়ার আদেশের পুনরুল্লেখ করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, প্রথম আদেশটি নিজে পাঠ করার আদেশ, আর দ্বিতীয়টি অন্যকে পাঠ করানো বা অন্যের নিকট প্রচারের নির্দেশ। অতঃপর মহান রব আল্লাহর সাথে أَلْاَكْرَمُ বিশেষণ যোগ্য করার মধ্যে এই ইঙ্গিত রয়েছে যে, মানুষ সৃষ্টি করা এবং তাদের শিক্ষাদান করার নিয়ামতের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার নিজের কোন স্বার্থ ও লাভ নেই; বরং এগুলো তাঁরই অনুগ্রহ এবং তারই দান। তিনি সর্বমহান দানশীল ও মহিমান্বিত।
[৪] মানব সৃষ্টির কারণ বর্ণনার পর এখানে মানুষের শিক্ষার প্রসঙ্গটি উল্লেখিত হয়েছে। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণী যে, তিনি মানুষকে কলমের মাধ্যমে লেখার শিক্ষা দান করেছেন। তা না হলে মানুষের মধ্যে উন্নতি, ক্রমবিকাশ সম্ভব হতো না। জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সবকিছুই সংরক্ষিত হয়েছে লেখনির মাধ্যমে। কলম না থাকলে, দ্বীন এবং দুনিয়ার কোন কিছুই পূর্ণরূপে গড়ে উঠত না। হাদীসে আরো বলা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেন এবং তাকে লেখার নির্দেশ দেন। সে মতে কলম কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে, সব লিখে ফেলে। (মুসনাদে আহমাদ : ৫/৩১৭)
[৫] পূর্বের আয়াতে ছিল কলমের সাহায্যে শিক্ষা দানের বর্ণনা। এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রকৃত শিক্ষাদাতা আল্লাহ তা‘আলা। মানুষ আসলে ছিল সম্পূর্ণ জ্ঞানহীন। আল্লাহর কাছ থেকেই সে যা কিছু জ্ঞান লাভ করেছে। কলমের সাহায্যে যে শিক্ষা দেয়া হয়ছে, তার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, তিনি এমন সব বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা মানুষ জানত না।
(৬) كَلَّا কখনো নয় اِنَّ অবশ্যই اَلْاِنْسَانَ মানুষ لَيَطْغٰى সীমালঙ্ঘন করে, (৭) اَنْ কেননা رَاٰهُ সে নিজেকে মনে করে اِسْتَغْنٰى অভাবমুক্ত। (৮) اِنَّ নিশ্চয় اِلٰى رَبِّكَ আপনার পালনকর্তার দিকেই اَلرُّجْعٰى সমস্ত প্রত্যাবর্তন। (৯) اَرَاَيْتَ আপনি কি দেখেছেন اَلَّذِيْ তাকে, যে يَنْهٰى নিষেধ করে। (১০) عَبْدًا এক বান্দাকে اِذَا যখন صَلّٰى সে সালাত আদায় করে? (১১) اَرَاَيْتَ আপনি কি দেখেছেন اِنْ যদি كَانَ সে থাকে عَلَى الْهُدٰى সৎপথে (১২) اَوْ অথবা اَمَرَ নির্দেশ দেয় بِالتَّقْوٰى খোদাভীতির। (১৩) اَرَاَيْتَ আপনি কি দেখেছেন, اِنْ যদি كَذَّبَ সে মিথ্যারোপ করে وَتَوَلّٰى ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। (১৪) اَلَمْ يَعْلَمْ সে কি জানে না بِاَنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ يَرٰى দেখছেন? (১৫) كَلَّا কখনই নয়, لَئِنْ যদি لَمْ يَنْتَهِ সে বিরত না হয়, لَنَسْفَعًا তবে আমি হেঁচড়াবই بِالنَّاصِيَةِ মস্তকের সামনের কেশগুচ্ছ ধরে। (১৬) نَاصِيَةٍ সেই কেশগুচ্ছ كَاذِبَةٍ মিথ্যাচারী خَاطِئَةٍ ও পাপীর। (১৭) فَلْيَدْعُ অতএব সে আহবান করুক نَادِيَهٗ তার সভা সদস্যদেরকে। (১৮) سَنَدْعُ আমিও আহবান করব اَلزَّبَانِيَةَ জাহান্নামের প্রহরীকে (১৯) كَلَّا কখনই নয়, لَا تُطِعْهُ আপনি তার আনুগত্য করবেন না। وَاسْجُدْ (বরং) আপনি সিজদা করুন وَاقْتَرِبْ ও আমার নৈকট্য অর্জন করুন।
সরল অনুবাদ :
(৬) কখনো নয়, অবশ্যই৬ মানুষ সীমালঙ্ঘন করে, (৭) কেননা সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে।৭ (৮) নিশ্চয় সমস্ত প্রত্যাবর্তন আপনার প্রতিপালকের দিকেই।৮ (৯) আপনি কি তাকে দেখেছেন, যে নিষেধ করে। (১০) এক বান্দাকে-৯ যখন সে সালাত আদায় করে? (১১) আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, সে যদি সৎপথে থাকে, (১২) অথবা আল্লাহভীতির নির্দেশ দেয়। (১৩) আপনি কি মনে করেন, যদি সে (বাধাদানকারী) মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। (১৪) সে কি জানে না যে, আল্লাহ দেখেন?১০ (১৫) কখনই নয়, যদি সে বিরত না হয়, তবে আমি মস্তকের সামনের কেশগুচ্ছ ধরে হেঁচড়াবই-১১ (১৬) মিথ্যাচারী, পাপীর কেশগুচ্ছ। (১৭) অতএব সে তার সভা সদস্যদেরকে আহবান করুক। (১৮) আমিও আহবান করব জাহান্নামের প্রহরীদেরকে১২ (১৯) কখনই নয়, আপনি তার আনুগত্য করবেন না। (বরং) আপনি সিজদা করুন এবং (আমার) নৈকট্য অর্জন করুন।১৩
টীকা :
[৬] كَلَّا বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে, حَقًّا বা বাস্তবেই, অবশ্যই হয় এমন।
[৭] অর্থাৎ দুনিয়ায় ধন-দৌলত, সম্মান-প্রতিপত্তি যা কিছু সে চাইতো তার সবই সে লাভ করেছে এ দৃশ্য দেখে সে কৃতজ্ঞ হওয়ার পরিবর্তে, বরং বিদ্রোহের পথ অবলম্বন করেছে। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, একবার আবু জাহেল বলল, যদি মুহাম্মদকে কিবলার দিকে ফিরে সালাত আদায় করতে দেখি তবে আমি অবশ্যই তাকে হত্যা করব। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত আদায় করতে আসলে আবু জাহেল তাকে বলল, তোমাকে কি আমি সালাত আদায় করতে নিষেধ করিনি? রাসূল তার কাছ থেকে ফিরে আসলেন। আবু জাহেলের সাথে তার বিতন্ডা হলো, তখন আবু জাহেল বলল, আমার চেয়ে বড় সভাসদের অধিকারী কি কেউ আছে? তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করলেন যে, সে যেন তার সভাসদদের ডাকে, আমরাও সভাসদদের ডাকব। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯৫৮; তিরমিযী, হা/৩৩৪৯)
আয়াতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী আবু জাহেলকে লক্ষ্য করে বক্তব্য রাখা হলেও ব্যাপক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের একটি নৈতিক দুর্বলতা বিধৃত হয়েছে। মানুষ যতদিন নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অমুখাপেক্ষী মনে না করে, ততদিন সে সীমালঙ্ঘন করে না। কিন্তু যখন সে মনে করতে থাকে যে, সে কারো মুখাপেক্ষী নয়; তখন তার মধ্যে অবাধ্যতা এবং সীমালঙ্ঘনের প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এমনকি তার রবের সাথেও সীমালঙ্ঘন করে।
[৮] অর্থাৎ দুনিয়ায় সে যা কিছুই অর্জন করে থাকুক না কেন এবং তার ভিত্তিতে অহঙ্কার ও বিদ্রোহ করতে থাকুক না কেন, অবশেষে তাকে আপনার রবের কাছেই ফিরে যেতে হবে। সেখানে সে অবাধ্যতার কুপরিণাম তখন স্বচক্ষে দেখে নেবে।
[৯] বান্দা বলতে এখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বুঝানো হয়েছে। এ পদ্ধতিতে কুরআনের কয়েক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- [(সূরা ইসরা : ১) (সূরা কাহফ : ১) (সূরা জিন : ১৯)]
[১০] এখানে আশ্চর্যবোধক এবং তিরস্কারসূচক প্রশ্ন করা হয়েছে যে, সে কি জানে না, আল্লাহ তাকে দেখছেন এবং তার কাজ-কর্মের প্রতিদান দেবেন? তবুও সে অবাধ্যতা করছে ও সৎকাজে বাধা প্রদান করছে কেন? (কুরতুবী)
[১১] سَفْعٌ এর অর্থ কোন কিছু ধরে কঠোরভাবে হেঁচড়ানো। আর نَاصِيَةٌ শব্দের অর্থ কপালের উপরিভাগের কেশগুচ্ছ। আরবদের মধ্যে রীতি ছিল যে, কাউকে অতি অসম্মান করার জন্য এই কেশগুচ্ছ মুঠোর ভেতরে নেয়া হত।
[১২] এখানে যাবানিয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, জাহান্নামের প্রহরী কঠোর ফেরেশতাগণ। কাতাদাহ বলেন, আরবী ভাষায় ‘যাবানিয়া’ শব্দের অর্থই হলো প্রহরী পুলিশ।
[১৩] এতে নবী করীম ﷺ কে আদেশ করা হয়েছে যে, আবু জাহেলের কথায় কর্ণপাত করবেন না এবং সিজদা ও সালাতে মশগুল থাকুন। সিজদা করা মানে সালাত আদায় করা। অর্থাৎ হে নবী! আপনি নির্ভয়ে আগের মতো সালাত আদায় করতে থাকুন। এর মাধ্যমে নিজের রবের নৈকট্য লাভ করুন। কারণ এটাই আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জনের উপায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, বান্দা যখন সিজদায় থাকে, তখন তার পালনকর্তার অধিক নিকটবর্তী হয়। তাই তোমরা সিজদায় বেশি পরিমাণে দু‘আ কর। (সহীহ মুসলিম, হা/৪৮২; আবু দাউদ, হা/৮৭৫)
এ সূরার শিক্ষাসমূহ :
জ্ঞানের মূল উৎস হলেন আল্লাহ তা‘আলা।
জ্ঞানের জগতে কলমের অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করা বৈধ নয়; কেননা এরূপ করলে সীমালঙ্ঘন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সৎকাজে বাধা প্রদান করা মারাত্মক অপরাধ; এজন্য দুনিয়া ও আখেরাতে ভয়াবহ আযাবের সম্মুখীন হতে হবে।
শত বাধা সত্ত্বেও সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে এবং বেশি বেশি সিজদা করার মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/319/21
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।