hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আম্মা পারা

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

২৯
১০৪- সূরা হুমাযাহ্
সূরার নামকরণ :

প্রথম আয়াতে উল্লেখিত هُمَزَةٌ (হুমাযাহ) শব্দের আলোকে এ সূরার নামকরণ করা হয় আল-হুমাযাহ। এর অর্থ পশ্চাতে পরনিন্দাকারী।

নাযিলের সময়কাল :

এ সূরাটির মক্কী হওয়ার ব্যাপারে সকল মুফাসসির একমত পোষণ করেছেন। এর বিষয় ও বর্ণনাভঙ্গী বিশ্লেষণ করলে এটি মক্কায় প্রথম দিকে অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্তর্ভুক্ত বলে মনে হয়।

সূরার বিষয়বস্তু :

এই সূরায় এমন কিছু অনৈতিক কাজের নিন্দা করা হয়েছে, যেগুলো জাহেলী সমাজে অর্থলোভী ধনীদের মধ্যে পাওয়া যেতো। প্রত্যেক আরববাসী জানতো, এই অসৎ-প্রবণতাগুলো যথার্থই তাদের সমাজে সক্রিয় রয়েছে। এই জঘন্য প্রবণতাগুলো পেশ করার পর আখেরাতে এই ধরনের চরিত্রের অধিকারী লোকদের পরিণাম কী হবে তা বলা হয়েছে। এই দুটি বিষয় এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যার ফলে শ্রোতা নিজে নিজেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে যে, এই ধরনের কাজের ও চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির পরিণাম এটিই হয়ে থাকে।

আয়াত : ১-৯



وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ (১) اَلَّذِيْ جَمَعَ مَالًا وَّعَدَّدَهٗ (২) يَحْسَبُ اَنَّ مَالَهٗۤ اَخْلَدَهٗ (৩) كَلَّا لَيُنْۢبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ (৪) وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ (৫) نَارُ اللهِ الْمُوْقَدَةُ (৬) اَلَّتِيْ تَطَّلِعُ عَلَى الْاَفْئِدَةِ (৭) اِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُّؤْصَدَةٌ (৮) فِيْ عَمَدٍ مُّمَدَّدَةٍ (৯)

শাব্দিক অনুবাদ :

(১) وَيْلٌ দুর্ভোগ لِكُلِّ প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জন্য هُمَزَةٍ যে লোকের পশ্চাতে অপবাদ রটায় لُمَزَةٍ সম্মুখে (মানুষকে) অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে, (২) اَلَّذِيْ যে جَمَعَ সঞ্চিত করে مَالًا অর্থ وَعَدَّدَهٗ এবং তা গণনা করে (৩) يَحْسَبُ সে মনে করে اَنَّ যে مَالَهٗ তার অর্থ اَخْلَدَهٗ তাকে চিরস্থায়ী করবে। (৪) كَلَّا কখনও না, لَيُنْۢبَذَنَّ অবশ্যই সে নিক্ষিপ্ত হবে فِي الْحُطَمَةِ পিষ্টকারীর মধ্যে। (৫) وَمَاۤ اَدْرَاكَ আপনি কি জানেন, مَا الْحُطَمَةُ পিষ্টকারী কী? (৬) اللهِ نَارُ (এটা হল) আল্লাহর আগুন اَلْمُوْقَدَةُ প্রজ্বলিত, (৭) اَلَّتِيْ যা تَطَّلِعُ পৌঁছবে عَلَى الْاَفْئِدَةِ হৃদয় পর্যন্ত। (৮) اِنَّهَا নিশ্চয় তা عَلَيْهِمْ তাদের উপর مُؤْصَدَةٌ বেঁধে দেয়া হবে, (৯) فِيْ عَمَدٍ খুঁটির সাথে (তারা বাঁধা থাকবে) مُمَدَّدَةٍ লম্বা লম্বা।

সরল অনুবাদ :

(১) প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ,১ (২) যে ধন-সম্পদ কুক্ষিগত করে এবং তা গুনে গুনে রাখে।২ (৩) সে মনে করে যে, তার ধন-সম্পদ চিরকাল তার সাথে থাকবে।৩ (৪) কখনো না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে।৪ (৫) আপনি কি জানেন, পিষ্টকারী কী? (৬) এটা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি,৫ (৭) যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে। (৮) এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে,৬ (৯) লম্বা লম্বা খুঁটিতে।৭

টীকা :

[১] আয়াতে ‘হুমাযাহ’ ও ‘লুমাযাহ’ দুটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অধিকাংশ তাফসীরকারের মতে هُمَزَةٌ এর অর্থ গীবত অর্থাৎ পশ্চাতে পরনিন্দা করা এবং لُمَزَةٌ এর অর্থ সামনাসামনি দোষারোপ করা ও মন্দ বলা। এ দুটি কাজই জঘন্য গোনাহ। তাফসীরকারদের বর্ণিত তাফসীর অনুসারে উভয় শব্দ মিলে এখানে যে অর্থ দাঁড়ায় তা হচ্ছে, সে কাউকে লাঞ্ছিত ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। কারোর প্রতি তাচ্ছিল্য ভরে আংগুলি নির্দেশ করে। চোখের ইশারায় কাউকে ব্যঙ্গ করে কারো বংশের নিন্দা করে। কারো ব্যক্তি সত্তার বিরূপ সমালোচনা করে। কারো মুখের উপর তার বিরুদ্ধে মন্তব্য করে। কারো পেছনে তার দোষ বলে বেড়ায়। কোথাও এর কথা ওর কানে লাগিয়ে বন্ধুদেরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। কোথাও ভাইদের পারস্পরিক ঐক্যে ফাটল ধরায়। কোথাও লোকদের নাম বিকৃত করে খারাপ নামে অভিহিত করে। কোথাও কথার খোঁচায় কাউকে আহত করে এবং কাউকে দোষারোপ করে। এসব তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অথচ এসবই মারাত্মক গোনাহ। পশ্চাতে পরনিন্দার শাস্তির কথা কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এর কারণ এরূপ হতে পারে যে, এ গোনাহের মশগুল হওয়ার পথে সামনে কোন বাধা থাকে না। যে এতে মশগুল হয়, সে কেবল এগিয়েই চলে। ফলে গোনাহ বৃহৎ থেকে বৃহত্তর ও অধিকতর হতে থাকে। সম্মুখের নিন্দা এরূপ নয়। এতে প্রতিপক্ষও বাধা দিতে প্রস্তুত থাকে। ফলে গোনাহ দীর্ঘ হয় না। এছাড়া কারো পশ্চাতে নিন্দা করা এ কারণেও বড় অন্যায় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জানতেও পারে না যে, তার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে নিকৃষ্টতম তারা, যারা পরোক্ষ নিন্দা করে, বন্ধুদের মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে এবং নিরপরাধ লোকদের দোষ খুঁজে ফিরে।

[২] অর্থাৎ নিজের অগাধ ধনদৌলতের অহঙ্কারে সে মানুষকে এভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে। যেসব বদভ্যাসের কারণে আয়াতে শাস্তির কথা উচ্চারণ করা হয়েছে তন্মধ্যে এটি হচ্ছে তৃতীয়। যার মূল কথা হচ্ছে, অর্থ লিপ্সা। আয়াতে একে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে- অর্থলিপ্সার কারণে সে তা বার বার গণনা করে। তবে অন্যান্য আয়াত ও হাদীস সাক্ষ্য দেয় যে, অর্থ সঞ্চয় করা সর্বাবস্থায় হারাম ও গোনাহ নয়। তাই এখানে উদ্দেশ্য সেই সঞ্চয় হবে, যাতে জরুরি হক আদায় করা হয় না, কিংবা গর্ব ও অহমিকা লক্ষ্য হয় কিংবা লালসার কারণে দ্বীনের জরুরি কাজ বিঘ্নিত হয়।

[৩] এর অর্থ হচ্ছে এই যে, সে মনে করে তার অর্থ-সম্পদ তাকে চিরন্তন জীবন দান করবে। তার মনে কখনো এ চিন্তার উদয় হয় না যে, এক সময় তাকে এসব কিছু ছেড়ে দিয়ে খালি হাতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে। তাছাড়া তাকে এ সম্পদের হিসাবও দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, কিয়ামতের দিন কোন বান্দার দুপা সামনে অগ্রসর হতে পারবে না যতক্ষণ না তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তার জীবনকে কিসে নিঃশেষ করেছে; তার জ্ঞান দ্বারা সে কী করেছে; তার সম্পদ কোথা থেকে আহরণ করেছে ও কিসে ব্যয় করেছে এবং তার শরীর কিসে খাটিয়েছে। (তিরমিযী, হা/২৪১৭)

[৪] আরবী ভাষায় نَبْذٌ ‘নবয’ শব্দটি কোন জিনিসকে তুচ্ছ মনে করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া অর্থে ব্যবহার করা হয়। নিজের ধনশালী হওয়ার কারণে সে দুনিয়ায় নিজেকে অনেক বড় কিছু মনে করে। কিন্তু কিয়ামতের দিন তাকে ঘৃণাভরে জাহান্নামে ছুঁড়ে দেয়া হবে।

[৫] হুতামা শব্দটির মূল হচ্ছে, হাত্ম। এর মানে ভেঙ্গে ফেলা, পিষে ফেলা ও টুকরা করে ফেলা। জাহান্নামকে হাত্ম নামে অভিহিত করার কারণ হচ্ছে এই যে, তার মধ্যে যা কিছু ফেলে দেয়া হবে তাকে সে নিজের গভীরতা ও আগুনের কারণে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেবে।

[৬] এখানে مُوْقَدَةٌ অর্থ অত্যন্ত লেলিহান শিখাযুক্ত প্রজ্বলিত আগুন। এই আগুনকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করার মাধ্যমে এর প্রচন্ডতা ও ভয়াবহতা প্রকাশ পাচ্ছে।

[৭] ‘তাত্তালিউ’ শব্দটির মূলে হচ্ছে ইত্তিলা। আর ‘ইত্তিলা’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে চড়া, আরোহণ করা ও উপরে পৌঁছে যাওয়া। আফইদাহ শব্দটি হচ্ছে বহুবচন। এর একবচন হচ্ছে ফুওয়াদ। এর মানে হৃদয়। অর্থাৎ জাহান্নামের এই আগুন হৃদয়কে পর্যন্ত গ্রাস করবে। হৃদয় পর্যন্ত এই আগুন পৌঁছবার একটি অর্থ হচ্ছে এই যে, এই আগুন এমন জায়গায় পৌঁছে যাবে যেখানে মানুষের অসৎচিন্তা, ভুল আকীদা-বিশ্বাস, অপবিত্র ইচ্ছা, বাসনা, প্রবৃত্তি, আবেগ এবং দুষ্ট সংকল্প ও নিয়তের কেন্দ্র। এর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর এই আগুন দুনিয়ার আগুনের মতো অন্ধ হবে না। সে দোষী ও নির্দোষ সবাইকে জ্বালিয়ে দেবে না। বরং প্রত্যেক অপরাধীর হৃদয় অভ্যন্তরে পৌঁছে সে তার অপরাধের প্রকৃতি নির্ধারণ করবে এবং প্রত্যেককে তার দোষ ও অপরাধ অনুযায়ী আযাব দেবে। এর তৃতীয় অর্থ হচ্ছে, দুনিয়ার আগুন মানুষের দেহে লাগলেই মানুষ মারা যায়; কিন্তু জাহান্নামের আগুন হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে এবং হৃদয়-দহনের তীব্র কষ্ট মানুষ অনুভব করবে।

[৮] অর্থাৎ অপরাধীদেরকে জাহান্নামের মধ্যে নিক্ষেপ করে উপর থেকে তা বন্ধ করে দেয়া হবে। কোন দরজা তো দূরের কথা তার কোন একটি ছিদ্রও খোলা থাকবে না।

[৯] ‘ফি আমাদিম মুমাদ্দাদাহ’ এর একটি অর্থ হচ্ছে, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দিয়ে তার উপর উঁচু উঁচু থাম গেঁড়ে দেয়া হবে। এর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এই অপরাধীরা উঁচু উঁচু থামের গায়ে বাঁধা থাকবে। এর তৃতীয় অর্থ হল এরূপ স্তম্ভসমূহ বা থাম দিয়ে জাহান্নামীদের শাস্তি প্রদান করা হবে।

এ সূরার শিক্ষাসমূহ :

পরনিন্দা করা ও যাকাত আদায় না করে সম্পদ সঞ্চয় করা- এগুলো মারাত্মক অপরাধ।

ধন-সম্পদ মানুষের ক্ষণস্থায়ী সঙ্গী; সুতরাং ধন-সম্পদের পেছনে পড়ে থাকাটা খুবই নিন্দনীয় কাজ।

জাহান্নামের আগুন হৃদয় পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিতে সক্ষম।

জাহান্নামে লম্বা লম্বা খুঁটি রয়েছে; সেখানে জাহান্নামীদেরকে বেঁধে শাস্তি প্রদান করা হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন