hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আম্মা পারা

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৭৮- সূরা নাবা
সূরার নামকরণ :

সূরাটির দ্বিতীয় আয়াতে উল্লেখিত اَلنَّبَاُ (আন নাবা) শব্দটিকেই সূরার নাম হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। নাবা শব্দের অর্থ হচ্ছে, সংবাদ বা খবর।

নাযিলের সময়কাল :

এই সূরাটি ইসলামের প্রাথমিক যুগে মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।

সূরার বিষয়বস্তু :

ইসলামের প্রাথমিক যুগে রাসূলুল্লাহ ﷺ যেসব বিষয়ের উপর দাওয়াত প্রদান করেছিলেন তা হলো- (১) তাওহীদ, (২) নবীর রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন, (৩) আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন।

প্রথম দুটি বিষয়ের তুলনায় তৃতীয় বিষয়টি মেনে নেয়া মক্কাবাসীদের জন্য অনেক বেশি কঠিন ছিল। এ কারণে মক্কার প্রাথমিক যুগের সূরাগুলোতে আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসকে মনের মধ্যে মজবুতভাবে বদ্ধমূল করে দেয়ার উপরই বেশি জোর দেয়া হয়েছে।

এ সূরাটিতে মূলত চারটি বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। (এক) কিয়ামতের ভয়াবহতার বিবরণ। (দুই) মূর্খদের ধমক প্রদান। (তিন) কিয়ামতের প্রমাণ উপস্থাপন। (চার) কিয়ামতের পর চূড়ান্ত শাস্তি অথবা সুখের বর্ণনা।

কিয়ামতের খবর শুনে সর্বত্র যেসব আলোচনা, সমালোচনা শুরু হয়েছিল সবার আগে সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তারপর অস্বীকারকারীদের জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তোমাদের জন্য যে জমিকে আমি বিছানা বানিয়ে দিয়েছি তা কি তোমাদের নজরে পড়ে না? জমির মধ্যে আমি এই যে উঁচু বিশাল বিস্তৃত পাহাড়সমূহ গেঁড়ে রেখেছি তা কি তোমাদের নজরে পড়ে না? এসব জিনিস কি তোমাদের এ কথা জানাচ্ছে না যে, আমি কিয়ামত কায়েম করতে সক্ষম।

এরপর নিশ্চিতভাবে বলা হয়েছে, বিচারের দিন নির্ধারিত সময়ে অবশ্যই আসবে। শিঙ্গায় ফুঁক দেবার সাথে সাথেই তোমাদের যেসব বিষয়ের খবর দেয়া হচ্ছে তা সবই সামনে এসে যাবে। তোমরা যে যেখানে মরে থাকবে সেখান থেকে নিজেদের হিসাব দেবার জন্য দলে দলে বের হয়ে আসবে।

এরপর বলা হয়েছে, যারা হিসাব-নিকাশের আশা করে না এবং যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করেছে তাদের প্রত্যেকটি কথা ও কাজ লিখা হচ্ছে। তাদেরকে শাস্তি দেবার জন্য জাহান্নাম ওঁৎ পেতে বসে আছে।

এরপর এমনসব লোকের উত্তম প্রতিদানের বর্ণনা দেয়া হয়েছে, যারা আল্লাহর কাছে নিজেদের সমস্ত কাজের জবাবদিহিতার ভয় করত। তারা দুনিয়ার জীবনে আখেরাতের কাজ করেছে। তাদের কার্যাবলীর শুধু প্রতিদানই দেয়া হবে না; বরং তার চাইতে বেশি পুরস্কারও দেয়া হবে।

সবশেষে আল্লাহর আদালতের চিত্র আঁকা হয়েছে। সেখানে কারো নিজের সাথে সম্পর্কিত লোকদের মাফ করিয়ে নেয়া তো দূরের কথা, অনুমতি ছাড়া কেউ কথাই বলতে পারবে না।

তারপর এক সাবধানবাণী উচ্চারণ করে বক্তব্য শেষ করা হয়েছে। এ সাবধানবাণী সত্ত্বেও যে ব্যক্তি বুঝবে না সে কেবল অনুতাপই করবে। সে আফসোস করে বলতে থাকবে, হায়! যদি দুনিয়ায় আমার জন্মই না হতো। আজ যে দুনিয়ার প্রেমে সে পাগল সেদিন সেই দুনিয়ার জন্যই তার মনে এ অনুভূতি জাগবে।

আয়াত : ১-১৬



عَمَّ يَتَسَآءَلُوْنَ (১) عَنِ النَّبَاِ الْعَظِيْمِ (২) اَلَّذِيْ هُمْ فِيْهِ مُخْتَلِفُوْنَ (৩) كَلَّا سَيَعْلَمُوْنَ (৪) ثُمَّ كَلَّا سَيَعْلَمُوْنَ (৫) اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَرْضَ مِهَادًا (৬) وَالْجِبَالَ اَوْتَادًا (৭) وَخَلَقْنَاكُمْ اَزْوَاجًا (৮) وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا (৯) وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا (১০) وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا (১১) وَبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًا (১২) وَجَعَلْنَا سِرَاجًا وَّهَّاجًا (১৩) وَاَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرَاتِ مَآءً ثَجَّاجًا (১৪) لِنُخْرِجَ بِه حَبًّا وَّنَبَاتًا (১৫) وَجَنَّاتٍ اَلْفَافًا (১৬)

শাব্দিক অনুবাদ :

(১) عَمَّ কোন বিষয়ে يَتَسَآءَلُوْنَ তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে? (২) عَنِ النَّبَاِ সে সংবাদের বিষয়ে اَلْعَظِيْمِ মহা। (৩) اَلَّذِيْ هُمْ فِيْهِ যে বিষয়ে তারা مُخْتَلِفُوْنَ মতভেদ করছে।

(৪) كَلَّا কখনই নয়, سَيَعْلَمُوْنَ শীঘ্রই তারা জানতে পারবে। (৫) ثُمَّ অতঃপর كَلَّا কখনই নয় سَيَعْلَمُوْنَ শীঘ্রই তারা জানতে পারবে। (৬) اَلَمْ نَجْعَلْ আমি কি করিনি اَلْاَرْضَ জমিনকে مِهَادًا বিছানাস্বরূপ? (৭) وَالْجِبَالَ এবং পাহাড়সমূহকে اَوْتَادًا পেরেকস্বরূপ? (৮) وَخَلَقْنَاكُمْ আর আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি اَزْوَاجًا জোড়ায় জোড়ায়। (৯) وَجَعَلْنَا আর আমি করেছি نَوْمَكُمْ তোমাদের নিদ্রাকে سُبَاتًا আরামদায়ক। (১০) وَجَعَلْنَا এবং করেছি اَللَّيْلَ রাত্রিকে لِبَاسًا আবরণস্বরূপ। (১১) وَجَعَلْنَا আর আমিই করেছি اَلنَّهَارَ দিনকে مَعَاشًا জীবিকা অর্জনের (সময়); (১২) وَبَنَيْنَا আর আমিই নির্মাণ করেছি فَوْقَكُمْ তোমাদের উপর سَبْعًا সাতটি (আকাশ) شِدَادًا মজবুত। (১৩) وَجَعَلْنَا এবং আমি সৃষ্টি করেছি سِرَاجًا একটি প্রদীপ وَهَّاجًا দীপ্তমান, (১৪) وَاَنْزَلْنَا আর আমিই বর্ষণ করি مِنَ الْمُعْصِرَاتِ মেঘমালা থেকে مَآءً পানি ثَجَّاجًا প্রচুর, (১৫) لِنُخْرِجَ যেন আমি উৎপন্ন করি بِه  তা দিয়ে حَبًّا শস্য وَنَبَاتًا ও উদ্ভিদ, (১৬) وَجَنَّاتٍ এবং বাগানসমূহ اَلْفَافًا ঘনপল্লবিত।

সরল অনুবাদ :

(১) তারা পরস্পর কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে? (২) সেই মহা সংবাদের বিষয়ে।১ (৩) যে বিষয়ে তারা নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে।২ (৪) কখনই নয়৩, শীঘ্রই তারা জানতে পারবে; (৫) অতঃপর কখনই নয়, শীঘ্রই তারা জানতে পারবে। (৬) আমি কি জমিনকে বিছানাস্বরূপ করিনি? (৭) এবং পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ। (৮) আর আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়। (৯) আমিই তোমাদের নিদ্রাকে করেছি আরামদায়ক।৪ (১০) এবং রাত্রিকে করেছি আবরণস্বরূপ। (১১) আর আমি দিবসকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়; (১২) আর আমিই নির্মাণ করেছি তোমাদের উপর সাতটি মজবুত আসমান।৫ (১৩) এবং আমি সৃষ্টি করেছি একটি দীপ্তিমান প্রদীপ।৬ (১৪) আমিই বর্ষণ করি মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টির পানি, (১৫) যেন আমি তা দিয়ে উৎপন্ন করি শস্য ও উদ্ভিদ, (১৬) এবং বৃক্ষাদিতে পরিপূর্ণ বাগানসমূহ ।

টীকা :

[১] তারা কী বিষয়ে পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে? এ প্রশ্ন করার পর আল্লাহ নিজেই উত্তর দিয়েছেন যে, মহাখবর সম্পর্কে। এখানে মহাখবর বলে কিয়ামত দিবসকে বুঝানো হয়েছে।

[২] পরকাল সম্পর্কে তাদের মধ্যে বিভিন্ন মত ছিল। কেউ কেউ একদম পরিষ্কার বলতো, ‘‘আমাদের এ দুনিয়ার জীবনটিই সবকিছু এবং মরার পর আমাদের আর কখনো দ্বিতীয়বার উঠানো হবে না’’- (সূরা আনআম- ২৯)। আবার কেউ কেউ আখেরাত পুরোপুরি অস্বীকার করতো না, তবে তা ঘটতে পারে কি না, এ ব্যাপারে তাদের সন্দেহ ছিল। কুরআন মাজীদে এ ধরনের লোকদের উক্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে এভাবে, ‘‘আমরা তো মাত্র একটি ধারণাই পোষণ করি, আমাদের কোন নিশ্চিত বিশ্বাস নেই’’- (সূরা জাসিয়াহ- ৩২)।

[৩] অর্থাৎ আখেরাত সম্পর্কে যেসব কথা এরা বলে যাচ্ছে এগুলো সবই ভুল। এরা যা কিছু মনে করেছে ও বুঝেছে তা কোনক্রমেই সঠিক নয়।

[৪] মানুষকে দুনিয়ায় কাজ করার যোগ্য করার জন্য মহান আল্লাহ তার প্রকৃতিতে ঘুমের এক চাহিদা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। কর্মের ক্লান্তির পর ঘুম তাকে আরাম ও শান্তি দান করে।

[৫] মজবুত বলা হয়েছে এ অর্থে যে, আকাশ তৈরি হয়েছে অত্যন্ত দৃঢ়-সংঘবদ্ধভাবে, তার মধ্যে সামান্যতম পরিবর্তনও কখনো হয় না, ধ্বংস হয় না।

[৬] এখানে সূর্যকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যা সমগ্র পৃথিবীর মানুষের জন্য প্রজ্বলিত প্রদীপ।

আয়াত : ১৭-৩০

اِنَّ يَوْمَ الْفَصْلِ كَانَ مِيْقَاتًا (১৭) يَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّوْرِ فَتَأْتُوْنَ اَفْوَاجًا (১৮) وَفُتِحَتِ السَّمَآءُ فَكَانَتْ اَبْوَابًا (১৯) وَسُيِّرَتِ الْجِبَالُ فَكَانَتْ سَرَابًا (২০) اِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا (২১) لِلطَّاغِيْنَ مَاٰبًا (২২) لَابِثِيْنَ فِيْهَاۤ اَحْقَابًا (২৩) لَا يَذُوْقُوْنَ فِيْهَا بَرْدًا وَّلَا شَرَابًا (২৪) اِلَّا حَمِيْمًا وَّغَسَّاقًا (২৫) جَزَآءً وِّفَاقًا (২৬) اِنَّهُمْ كَانُوْا لَا يَرْجُوْنَ حِسَابًا (২৭) وَكَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا كِذَّابًا (২৮) وَكُلَّ شَيْءٍ اَحْصَيْنَاهُ كِتَابًا (২৯) فَذُوْقُوْا فَلَنْ نَّزِيْدَكُمْ اِلَّا عَذَابًا (৩০)

শাব্দিক অনুবাদ :

(১৭) اِنَّ يَوْمَ الْفَصْلِ নিশ্চয় বিচারের দিন كَانَ مِيْقَاتًا নির্ধারিত সময়; (১৮) يَوْمَ যেদিন يُنْفَخُ ফুঁ দেয়া হবে فِي الصُّوْرِ শিঙ্গায়, فَتَأْتُوْنَ তখন তোমরা আসবে اَفْوَاجًا দলে দলে, (১৯) وَفُتِحَتْ আর খুলে দেয়া হবে اَلسَّمَآءُ আসমানসমূহ, فَكَانَتْ ফলে তা হয়ে যাবে اَبْوَابًا বহু দরজা বিশিষ্ট, (২০) وَسُيِّرَتْ এবং চালিত করা হবে اَلْجِبَالُ পাহাড়সমূহকে, سَرَابًا মরীচিকার মতো। (২১) اِنَّ جَهَنَّمَ নিশ্চয় জাহান্নাম كَانَتْ مِرْصَادًا ওঁৎ পেতে রয়েছে; (২২) لِلطَّاغِيْنَ নাফরমানদের জন্য مَاٰبًا আশ্রয়স্থল হিসেবে; (২৩) لَابِثِيْنَ فِيْهَا সেখানে তারা অবস্থান করবে اَحْقَابًا শতাব্দীর পর শতাব্দী; (২৪) لَايَذُوْقُوْنَ তারা স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে না فِيْهَا সেখানে بَرْدًا শীতলতার, وَلَا شَرَابًا আর না কোন পানীয় বস্তুর; (২৫) اِلَّا ব্যতীত حَمِيْمًا ফুটন্ত পানি وَغَسَّاقًا ও পুঁজ; (২৬) جَزَآءً প্রতিদানস্বরূপ وِفَاقًا পরিপূর্ণ। (২৭) اِنَّهُمْ নিশ্চয় তারা لَايَرْجُوْنَ كَانُوْا আকাঙ্ক্ষা করত না حِسَابًا হিসাব-নিকাশের। (২৮) وَكَذَّبُوْا এবং তারা অবিশ্বাস করেছিলো بِاٰيَاتِنَا আমার আয়াতসমূহকে كِذَّابًا অবিশ্বাস করার মতো। (২৯) وَكُلَّ شَيْءٍ আর সব কিছুই اَحْصَيْنَاهُ আমি তা সংরক্ষিত রেখেছি كِتَابًا লিখিতভাবে। (৩০) فَذُوْقُوْا অতএব এখন তোমরা স্বাদ গ্রহণ কর, فَلَنْ نَّزِيْدَكُمْ আর আমি কখনো বৃদ্ধি করব না اِلَّا عَذَابًا শাস্তি ছাড়া (অন্যকিছু)।

সরল অনুবাদ :

(১৭) নিশ্চয় বিচারের দিন একটি নির্ধারিত সময়;৭ (১৮) যেদিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে, তখন তোমরা দলে দলে আসবে,৮ (১৯) আসমান খুলে দেয়া হবে, ফলে তাতে বহু দরজা হবে,৯ (২০) এবং পাহাড়সমূহকে চালিত করা হবে, ফলে সেগুলো হবে মরীচিকার ন্যায়।১০ (২১) নিশ্চয় জাহান্নাম ওঁৎ পেতে রয়েছে; (২২) নাফরমানদের জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে; (২৩) সেখানে তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী অবস্থান করবে;১১ (২৪) সেখানে তারা কোন প্রকার শীতলতার স্বাদও গ্রহণ করতে পারবে না, আর না কোন পানীয় বস্তুর; (২৫) ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ব্যতীত;১২ (২৬) তা স্বীয় কর্মের পরিপূর্ণ প্রতিফলস্বরূপ পাবে।২৩ (২৭) তারা তো হিসাব-নিকাশের আকাঙ্ক্ষা করত না। (২৮) এবং তারা আমার আয়াতসমূহকে পুরোপুরিভাবে অবিশ্বাস করেছিল।১৪ (২৯) আর আমি সব কিছুই লিখিতভাবে সংরক্ষিত রেখেছি। (৩০) অতএব এখন তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের স্বাদ গ্রহণ করো। আমি তোমাদের জন্য শাস্তি ছাড়া কিছুই বৃদ্ধি করব না।

টীকা :

[৭] যেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির মাঝে বিচার-মীমাংসা করবেন সেদিন তথা কিয়ামত নির্দিষ্ট সময়ে আসবেই।

[৮] শিঙ্গায় প্রথম ফুৎকারের সাথে সাথে সমগ্র বিশ্ব ধ্বংস প্রাপ্ত হবে এবং দ্বিতীয় ফুৎকারের সাথে সাথে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এ সময় বিশ্বের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষ দলে দলে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। এ স্থানে শিঙ্গার দ্বিতীয় ফুঁকের কথা বলা হয়েছে। এর আওয়াজ বুলন্দ হওয়ার সাথে সাথেই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত মৃত মানুষ জেগে উঠবে।

[৯] ‘‘আকাশ খুলে দেয়া হবে’’ এর মানে এটাও হতে পারে যে, ঊর্ধ্বজগতে কোন বাধা ও বন্ধন থাকবে না। আসমানে বিভিন্ন দরজা তৈরি হয়ে সেগুলো হতে সবদিক থেকে ফেরেশতারা নেমে আসতে থাকবে। (ইবনে কাসীর)

[১০] পাহাড়ের চলার ও মরীচিকায় পরিণত হওয়ার মানে হচ্ছে, দেখতে দেখতে মুহূর্তের মধ্যে পর্বতমালা ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে এমনভাবে মরীচিকার মতো ছড়িয়ে পড়বে যে, মনে হবে সেখানে কিছু আছে, কিন্তু কিছুই নেই। যেখানে একটু আগে বিশাল পর্বত ছিল সেখানে কিছুই থাকবে না। এ অবস্থাকে অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘‘এরা আপনাকে জিজ্ঞেস করছে, সেদিন এ পাহাড় কোথায় চলে যাবে? এদের বলে দিন, আমার রব তাদেরকে ধূলায় পরিণত করে দেবেন যে, তাদের মধ্যে কোথাও একটুও অসমতল ও উঁচু-নীচু জায়গা এবং সামান্যতম ভাঁজও দেখতে পাবে না’’- (সূরা ত্বা-হা : ১০৫-১০৭)।

[১১] আয়াতে ব্যবহৃত أَحْقَابٌ (আহকাব) দ্বারা ‘সুদীর্ঘ সময়’ উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। সুতরাং এর দ্বারা কোন সুনির্দিষ্ট সময় বুঝা উচিত হবে না। এর মানে হচ্ছে একের পর এক আগমনকারী দীর্ঘ সময় তারা সেখানে অবস্থান করবে। এমন একটি ধারাবাহিক যুগ যে, একটি যুগ শেষ হওয়ার পর আরেকটি যুগ শুরু হয়ে যায়।

[১২] غَسَّاقٌ শব্দের অর্থ হয়- পুঁজ, রক্ত, পুঁজ মেশানো রক্ত এবং চোখ ও গায়ের চামড়া থেকে যেসব রস বের হয়, যা প্রচন্ড দুর্গন্ধযুক্ত।

[১৩] জাহান্নামে তাদেরকে যে শাস্তি দেয়া হবে, তা ন্যায় ও ইনসাফের দৃষ্টিতে তাদের বাতিল বিশ্বাস ও কুকর্মের অনুরূপ হবে। এতে কোন বাড়াবাড়ি হবে না।

[১৪] এটা হচ্ছে তাদের জাহান্নামের ভয়াবহ আযাব ভোগ করার কারণ। তারা আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে নিজেদের হিসাব পেশ করার সময়ের কোন আশা করত না। আর আল্লাহ যেসব আয়াত পাঠিয়েছিলেন সেগুলো মেনে নিতে তারা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করত এবং সেগুলোকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করত।

আয়াত : ৩১-৪০

اِنَّ لِلْمُتَّقِيْنَ مَفَازًا (৩১) حَدَآئِقَ وَاَعْنَابًا (৩২) وَكَوَاعِبَ اَتْرَابًا (৩৩) وَكَأْسًا دِهَاقًا (৩৪) لَا يَسْمَعُوْنَ فِيْهَا لَغْوًا وَّلَا كِذَّابًا (৩৫) جَزَآءً مِّنْ رَّبِّكَ عَطَآءً حِسَابًا (৩৬) رَبِّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الرَّحْمٰنِ لَا يَمْلِكُوْنَ مِنْهُ خِطَابًا (৩৭) يَوْمَ يَقُوْمُ الرُّوْحُ وَالْمَلَآئِكَةُ صَفًّا لَّا يَتَكَلَّمُوْنَ اِلَّا مَنْ اَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ وَقَالَ صَوَابًا (৩৮) ذٰلِكَ الْيَوْمُ الْحَقُّ فَمَنْ شَآءَ اتَّخَذَ اِلٰى رَبِّه مَاٰبًا (৩৯) اِنَّاۤ اَنْذَرْنَاكُمْ عَذَابًا قَرِيْبًا يَوْمَ يَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ وَيَقُوْلُ الْكَافِرُ يَا لَيْتَنِيْ كُنْتُ تُرَابًا (৪০)

শাব্দিক অনুবাদ :

(৩১) اِنَّ لِلْمُتَّقِيْنَ নিশ্চয় মুত্তাক্বীদের জন্য রয়েছে مَفَازًا সাফল্য; (৩২) حَدَآئِقَ উদ্যানসমূহ وَاَعْنَابًا ও নানাবিধ আঙ্গুর, (৩৩) وَكَوَاعِبَ এবং সমবয়স্কা, اَتْرَابًا পূর্ণ যৌবনা তরুণী। (৩৪) وَكَأْسًا এবং পানপাত্র دِهَاقًا পরিপূর্ণ। (৩৫) لَا يَسْمَعُوْنَ فِيْهَا সেখানে তারা শুনবে না لَغْوًا নিরর্থক কথা, وَلَا كِذَّابًا আর না কোন মিথ্যা বাক্য; (৩৬) جَزَآءً এটা হল পুরস্কারস্বরূপ مِنْ رَّبِّكَ আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে عَطَآءً حِسَابًا যথোপযুক্ত দান। (৩৭) رَبِّ প্রতিপালক اَلسَّمَاوَاتِ আসমানসমূহের وَالْاَرْضِ এবং জমিনের وَمَا بَيْنَهُمَا এবং এ দুয়ের মধ্যে অবস্থিত সবকিছুর, اَلرَّحْمٰنِ যিনি পরম দয়ালু; لَا يَمْلِكُوْنَ مِنْهُ এগুলো থেকে কেউ অধিকার লাভ করতে পারবে না خِطَابًا আবেদন-নিবেদন করার; (৩৮) يَوْمَ সেদিন يَقُوْمُ দাঁড়াবে اَلرُّوْحُ রূহ وَالْمَلَآئِكَةُ ও ফেরেশতাগণ صَفًّا সারিবদ্ধভাবে; لَا يَتَكَلَّمُوْنَ কেউ কথা বলতে পারবে না اِلَّا তবে مَنْ اَذِنَ لَهُ যাকে অনুমতি দেবেন اَلرَّحْمٰنُ দয়াময় (আল্লাহ), وَقَالَ এবং সে বলবে صَوَابًا সঠিক কথা। (৩৯) ذٰلِكَ এটা اَلْيَوْمُ الْحَقُّ সত্য দিন। فَمَنْ شَآءَ সুতরাং যার ইচ্ছা اِتَّخَذَ সে গ্রহণ করুক اِلٰى رَبِّه  তার প্রতিপালকের কাছে مَاٰبًا আশ্রয়। (৪০) اِنَّاۤ اَنْذَرْنَاكُمْ আমি তোমাদেরকে ভয় প্রদর্শন করছি عَذَابًا قَرِيْبًا এক আসন্ন আযাবের; يَوْمَ সেদিন يَنْظُرُ الْمَرْءُ মানুষ দেখবে مَا قَدَّمَتْ যা সে আগে পাঠিয়েছে يَدَاهُ তার দু’হাত। وَيَقُوْلُ الْكَافِرُ তখন কাফির ব্যক্তি বলে উঠবে, يَا لَيْتَنِيْ হায়! كُنْتُ تُرَابًا আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম!

সরল অনুবাদ :

(৩১) নিশ্চয় মুত্তাক্বীদের জন্য রয়েছে সাফল্য (৩২) উদ্যানসমূহ ও নানাবিধ আঙ্গুর, (৩৩) আরও আছে সমবয়স্কা, পূর্ণ যৌবনা তরুণী। (৩৪) এবং পরিপূর্ণ পানপাত্র। (৩৫) তারা সেথায় শুনবে না কোন প্রকার নিরর্থক কথা, আর না কোন মিথ্যা বাক্য;১৫ (৩৬) এটা আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যথোচিত দান- যথোপযুক্ত পুরস্কারস্বরূপ।১৬ (৩৭) যিনি আসমান-জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুর প্রতিপালক, যিনি পরম দয়ালু; (সেদিন) তাঁর কাছে আবেদন-নিবেদন করার ক্ষমতা কারো থাকবে না (৩৮) সেদিন রূহ ও ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে;১৭ কেউ কোন কথা বলতে পারবে না- তবে দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন সে ব্যতীত; উপরন্তু সে সঠিক কথা বলবে।১৮ (৩৯) এ দিনটি সুনিশ্চিত সত্য; সুতরাং যার ইচ্ছা সে তার প্রতিপালকের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করুক। (৪০) আমি তো তোমাদেরকে এক আসন্ন আযাবের ভয় প্রদর্শন করলাম; সেদিন মানুষ দেখতে পাবে, যা সে নিজ হাতে আগে পাঠিয়েছিল। তখন কাফির ব্যক্তি বলবে, হায়! (এর আগেই) আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম।১৯

টীকা :

[১৫] জান্নাতে কোন আজেবাজে গল্পগুজব হবে না। কেউ কারো সাথে মিথ্যা বলবে না। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়টিকে জান্নাতের বিরাট নিয়ামত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

[১৬] এসব নিয়ামত বর্ণনা করে বলা হয়েছে, জান্নাতের এসব নিয়ামত মুমিনদের প্রতিদান এবং আপনার রবের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত দান। এখানে জান্নাতের নিয়ামতসমূহকে প্রথমে কর্মের প্রতিদান ও পরে আল্লাহর দান বলা হয়েছে। প্রতিদান শব্দের পরে আবার যথেষ্ট পুরস্কার দেবার কথা বলার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, তারা নিজেদের সৎকাজের বিনিময়ে যে প্রতিদান লাভের অধিকারী হবে কেবলমাত্র ততটুকুই তাদেরকে দেয়া হবে না, বরং তার উপর অতিরিক্ত পুরস্কারও দেয়া হবে। বিপরীতপক্ষ জাহান্নামবাসীদের জন্য কেবলমাত্র এতটুকুই বলা হয়েছে যে, তাদেরকে তাদের কাজের পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে। অর্থাৎ তাদের যে পরিমাণ অপরাধ তার চেয়ে বেশি শাস্তি দেয়া হবে না।

[১৭] অধিকাংশ তাফসীরকারগণের মতে এখানে ‘রূহ’ বলে জিবরাঈল (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে।

[১৮] এখানে কথা বলা মানে শাফাআত করা বলা হয়েছে। শাফাআত করতে হলে যে ব্যক্তিকে যে গুনাহগারের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে শাফাআত করার অনুমতি দেয়া হবে একমাত্র সে-ই ঐ ব্যক্তির জন্য শাফাআত করতে পারবে। আর শাফাআতকারীকে সঠিক ও যথার্থ সত্য কথা বলতে হবে। কোন অন্যায় সুপারিশ করতে পারবে না।

[১৯] আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। কিয়ামতের দিন সমগ্র ভূপৃষ্ঠ এক সমতল ভূমি হয়ে যাবে। এতে মানব, জিন, গৃহপালিত জন্তু এবং বন্য জন্তু সবাইকে একত্রিত করা হবে। জন্তুদের মধ্যে কেউ দুনিয়াতে অন্য জন্তুর উপর জুলুম করে থাকলে তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেয়া হবে। এমনকি কোন শিংবিশিষ্ট ছাগল কোন শিংবিহীন ছাগলকে মেরে থাকলে সেদিন তার প্রতিশোধ নেয়া হবে। এ কর্ম সমাপ্ত হলে সব জন্তুকে আদেশ করা হবে, মাটি হয়ে যাও। তখন সব মাটি হয়ে যাবে। এই দৃশ্য দেখে কাফিররা আকাঙ্ক্ষা করবে- হায়! আমরাও যদি মাটি হয়ে যেতাম। (মুস্তাদরাকে হাকেম ২/৩৪৫, ৪/৫৭৫; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৯৬৬)

এ সূরার শিক্ষাসমূহ :

কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে- এতে কোন সন্দেহ নেই; এটি সংঘটিত হওয়ার সময় আল্লাহর কাছে নির্ধারিত রয়েছে।

কিয়ামত আসার সাথে সাথেই এতদ্বসংক্রান্ত যাবতীয় সন্দেহের অবসান ঘটবে।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে অসংখ্য অমূল্য নিয়ামত দ্বারা বেষ্টিত করে রেখেছেন; আকাশ, জমিন, পাহাড়-পর্বত, দিন-রাত, চন্দ্র-সূর্য, মেঘমালা, শস্য, উদ্ভিদ ইত্যাদি তাঁরই নিয়ামতের কতিপয় নমুনা।

ঘুম আল্লাহ তা‘আলার একটি বিশেষ নিয়ামত।

শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার সাথে সাথে পৃথিবীর পরিস্থিতি অতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

জাহান্নামে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে; পিপাসার্ত হওয়া, ফুটন্ত পানি ও পুঁজ খেতে দেয়াটা এরই একটি নমুনা।

জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হলে সর্বদা নিজেকে উত্তম কর্মে ব্যস্ত রাখতে হবে।

হিসাব-নিকাশের চিন্তা-ভাবনা না করা এবং আল্লাহর যে কোন নিদর্শনকে অবিশ্বাস করাটাও একটি বড় ধরনের নাফরমানী।

মানুষের যাবতীয় কর্ম প্রতিনিয়ত লিখিত আকারে রেকর্ড করা হচ্ছে; কিয়ামতের দিন এর আলোকেই প্রতিদান প্রদান করা হবে।

কিয়ামতের দিন মুত্তাকীরাই হবে সবচেয়ে বড় সাফল্যবান; সেদিন তারা নিজেদের কর্মফল হিসেবে জান্নাত লাভ করে আল্লাহ তা‘আলার অশেষ নিয়ামত ভোগ করতে পারবে।

শাফায়াতের একচ্ছত্র মালিক আল্লাহ তা‘আলা; তিনি যার জন্য এবং যার পক্ষে সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন, কেবল সেই সুপারিশ করতে পারবে।

কিয়ামতের দিন কাফিররা ভীষণভাবে আফসোস করবে; কিন্তু সেদিন আফসোস করে কোন লাভ হবে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন