মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
প্রথম আয়াতে উল্লেখিত اَلْكَوْثَرُ (আল-কাউসার) শব্দের আলোকে এ সূরার নামকরণ করা হয় সূরা আল-কাউসার। এর অর্থ বেশি, অজস্র কল্যাণ।
নাযিলের সময়কাল :
সূরা কাউসার মক্কায় এমন এক সময় নাযিল হয় যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ অত্যন্ত কঠিন হতাশাব্যঞ্জক অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন।
ঐতিহাসিক পটভূমি :
সূরা দ্বোহা ও সূরা আলাম নাশরাহ- এ দেখা গেছে, নবুওয়াতের প্রাথমিক যুগে মুহাম্মাদ ﷺ যখন সবচেয়ে কঠিন সংকটের সম্মুখীন হয়েছিলেন, সমগ্র জাতি তাঁর সাথে শত্রুতা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল, বাধার বিরাট পাহাড়গুলো তাঁর পথে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল, চতুর্দিকে প্রবল বিরোধিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তখন তাঁকে সান্ত্বনা দেবার ও তাঁর মনে সাহস সঞ্চারের জন্য মহান আল্লাহ বহু আয়াত নাযিল করেন।
এমনি এক অবস্থা ও পরিস্থিতিতে সূরা কাউসার নাযিল করে আল্লাহ, নবী ﷺ কে সান্ত্বনা দান করেন এবং তাঁর শত্রুদেরকে ধ্বংস করে দেবার ভবিষ্যদ্বাণীও শুনিয়ে দেন। কুরাইশ বংশীয় কাফিররা বলতো, মুহাম্মাদ ﷺ সমগ্র জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তার অবস্থা হয়ে গেছে একজন সহায় ও বান্ধবহীন ব্যক্তির মতো। ইকরামা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, মুহাম্মাদ ﷺ কে যখন নবীর পদে অধিষ্ঠিত করা হয় এবং তিনি কুরাইশদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন, তখন কুরাইশরা বলতে থাকে بَتِرَ مُحَمَّدٌ مِنَّا অর্থাৎ মুহাম্মাদ নিজের জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছে যেমন কোন গাছের শিকড় কেটে দেয়া হলে তার অবস্থা হয়। কিছুদিনের মধ্যে সেটি শুঁকিয়ে মাটির সাথে মিশে যায়।
ইবনে সাদ ও ইবনে আসাকিরের বর্ণনা অনুযায়ী আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সবচেয়ে বড় ছেলের নাম ছিল কাসেম, তার ছোট ছিলেন যয়নাব, তার ছোট ছিলেন আবদুল্লাহ। তারপর জন্ম নেন যথাক্রমে তিন কন্যা; উম্মে কুলসুম, ফাতেমা ও রুকাইয়া। এদের মধ্যে সর্বপ্রথম মারা যান কাসেম। তারপর মারা যান আবদুল্লাহ। এ অবস্থা দেখে আস ইবনে ওয়ায়েল বলে, তার বংশই খতম হয়ে গেছে। এখন সে আবতার অর্থাৎ তার শিকড় কেটে গেছে।
আতা বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দ্বিতীয় পুত্র ইন্তিকালের পর তাঁর চাচা আবু লাহাব (তার ঘর ছিল রাসূলের ঘরের সাথেই) দৌড়ে মুশরিকদের কাছে চলে যায় এবং তাদের এই সুখবর দেয় যে, রাতে মুহাম্মাদ সন্তান হারা হয়ে গেছে অথবা তার শিকড় কেটে গেছে।
এ ধরনের চরম হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতিতে নবী ﷺ এর উপর সূরা কাউসার নাযিল করা হয়। তিনি কেবল আল্লাহর ইবাদাত করতেন এবং আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করাকে প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এ কারণে কুরাইশরা ছিল তার প্রতি বিরূপ। এ জন্যই নবুওয়াত লাভের আগে সমগ্র জাতির মধ্যে তার যে মর্যাদা ছিল নবুওয়াত লাভের পর তা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল। তাঁকে এক রকম গোত্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল। তাঁর সঙ্গী-সাথী ছিলেন মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোক। তাঁরাও ছিলেন বন্ধু-বান্ধব ও সহায়-সম্বলহীন। তাঁরাও জুলুম-নিপীড়ন সহ্য করে চলছিলেন। এই সাথে তাঁর একের পর এক সন্তানের মৃত্যুতে তার উপর যেন দুঃখ ও শোকের পাহাড় ভেঙ্গে পড়েছিল। এ সময় আত্মীয়-স্বজন জাতি-গোষ্ঠী ও প্রতিবেশীদের পক্ষ থেকে সহানুভূতি প্রকাশ ও সান্ত্বনাবাণী শুনাবার পরিবর্তে আনন্দ করা হচ্ছিল। এমন একজন লোক যিনি শুধু আপন লোকদের সাথেই নয়, অপরিচিত ও অনাত্মীয়দের সাথেও সবসময় পরম প্রীতিপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল ব্যবহার করছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের বিভিন্ন অপ্রীতিকর কথা ও আচরণ তাঁর মনভেঙ্গে দেবার জন্য যথেষ্ট ছিল। এ অবস্থায় এ ছোট্ট সূরাটির একটি বাক্যে আল্লাহ তাঁকে এমন একটি সুখবর দিয়েছেন যার চাইতে বড় সুখবর দুনিয়ার কোন মানুষকে কোন দিন দেয়া হয়নি। এই সঙ্গে তাঁকে এ সিদ্ধান্তও শুনিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তাঁর বিরোধিতাকারীদেরই শিকড় কেটে যাবে।
(৩) নিশ্চয় (পরিশেষে) তোমার নিন্দুকরাই হবে শিকড়-কাটা (অসহায়)।৩
টীকা :
[১] ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, কাউসার সেই অজস্র কল্যাণ, যা আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে দান করেছেন। ইকরিমা বলেন, এটা নবুওয়াত, কুরআন ও আখেরাতের সওয়াব। অনুরূপভাবে কাউসার জান্নাতের একটি প্রস্রবণের নাম। এ তাফসীরসমূহে কোনবিরোধ নেই; কারণ কাউসার নামক প্রস্রবণটি অজস্র কল্যাণের একটি। আসলে কাউসার শব্দটি এখানে যেভাবে ব্যবহৃত হয়েছে তাতে এক শব্দে এর পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এ শব্দটি মূলত বিপুল ও অত্যধিক পরিমাণ বুঝাবার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সীমাহীন আধিক্য। কিন্তু যে অবস্থায় ও পরিবেশে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তাতে শুধুমাত্র আধিক্য নয়; বরং কল্যাণ ও নিয়ামতের আধিক্য।
বিভিন্ন হাদীসে কাউসার ঝর্ণাধারার কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমরা কি জান ‘কাওসার’ কী? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই বেশি ভালো জানেন। তিনি বললেন, এটা একটা ঝর্ণা। আমার প্রতিপালক আমাকে তা দেয়ার জন্য ওয়াদা করেছেন। এর মধ্যে অশেষ কল্যাণ রয়েছে, আমার উম্মতের লোকেরা কিয়ামতের দিন এ হাউযের পানি পান করতে আসবে। এ হাউযে রয়েছে তারকার মতো অসংখ্য পানপাত্র (গ্লাস)। একটি দলকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, প্রভু! এরা আমার উম্মতেরই লোক। আমাকে তখন বলা হবে, তুমি জান না, তোমার মৃত্যুর পর এরা কী অভিনব কাজ (বিদআত) করেছে। (সহীহ মুসলিম, হা/৪০০; মুসনাদে আহমাদ : ৩/১০২)
[২] نَحْرٌ শব্দের অর্থ উট কুরবানী করা। এর প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে হাত-পা বেঁধে কণ্ঠনালীতে বর্শা অথবা ছুরি দিয়ে আঘাত করা এবং রক্ত বের করে দেয়া। গরু-ছাগল ইত্যাদির কুরবানীর পদ্ধতি যবাই করা। অর্থাৎ জন্তুকে শুইয়ে কণ্ঠনালিতে ছুরি চালিয়ে রক্ত প্রবাহিত করা। আরবে সাধারণত উট কুরবানী করা হতো। তাই কুরবানী বুঝানোর জন্য এখানে نَحْرٌ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। মাঝে মাঝে এ শব্দটি যে কোন কুরবানীর অর্থেও ব্যবহৃত হয়। এ আয়াতে পূর্ববর্তী আয়াতে প্রদত্ত কাউসারের কারণে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দুটি কাজ করতে বলা হয়েছে। (এক) একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করা। (দুই) তাঁরই উদ্দেশ্যে কুরবানী করা ও যবাই করা। কেননা, সালাত শারিরীক ইবাদাতসমূহের মধ্যে সর্ববৃহৎ এবং কুরবানী আর্থিক ইবাদাতসমূহের মধ্যে বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী।
[৩] সাধারণত যে ব্যক্তির পুত্র সন্তান মারা যায়, আরবে তাকে أَبْتَرَ বা নির্বংশ বলা হত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পুত্র কাসেম অথবা ইবরাহীম যখন শৈশবেই মারা গেলেন, তখন কাফিররা তাকে নির্বংশ বলে উপহাস করত। এ আয়াতের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি নির্বংশ বলে যে দোষারোপ করা হতো তার জবাব দেয়া হয়েছে। শুধু পুত্র সন্তান না থাকার কারণে যারা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে নির্বংশ বলে টিটকারী করে, তারা তার প্রকৃত মর্যাদা সম্পর্কে বেখবর। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বংশগত সন্তান-সন্ততিও কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, যদিও তা কন্যা-সন্তানের তরফ থেকে হয়। তাছাড়া নবীর আধ্যাত্মিক সন্তান অর্থাৎ উম্মত তো এত অধিক সংখ্যক হবে যে, পূর্ববর্তী সকল নবীর উম্মতের সমষ্টি অপেক্ষাও বেশি হবে। এছাড়া এ সূরায় রাসূলুল্লাহ ﷺ যে আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রিয় ও সম্মানিত তাও বিবৃত হয়েছে।
এ সূরার শিক্ষাসমূহ :
হাউজে কাউসার আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক মুহাম্মাদ ﷺ-কে প্রদত্ত একটি বিশেষ নিয়ামত।
কিয়ামতের দিন বিদআতীরা হাউজে কাউসারের পানি পান করার সৌভাগ্য লাভ করতে পারবে না।
আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার জন্য সালাত ও কুরবানী হচ্ছে দুটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত।
মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর আরোপিত নির্বংশ অভিযোগটি যথার্থ নয়; কেননা তার বংশ এখনো পৃথিবীতে বিদ্যমান রয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/319/33
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।