মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সূরা ফালাক ও সূরা নাস এ দুটি আলাদা আলাদা সূরা হলেও এদের পারস্পরিক সম্পর্ক এত গভীর যার ফলে এদের একটি যুক্ত নাম রাখা হয়েছে মু‘আওবিযাতাইন (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দুটি সূরা)। ফালাক অর্থ প্রভাত, ভোর। আর নাস অর্থ হলো মানুষ।
নাযিলের সময়কাল :
এদের বিষয়বস্তু পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, মক্কায় এমন এক সময় সূরা দুটি নাযিল হয়েছিল, যখন সেখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিরোধিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল।
সূরাদ্বয়ের উপকারিতা :
সূরা ফালাক ও নাস এর উপকারিতা ও কল্যাণ অপরিসীম এবং মানুষের জন্য এ দুটি সূরার প্রয়োজন অত্যধিক। বদনজর এবং সমস্ত দৈহিক ও আত্মিক অনিষ্টতা দূর করার জন্য এ সূরাদ্বয়ের কার্যকারিতা অনেক। নির্ভরযোগ্য হাদীসমূহে উভয় সূরার অনেক ফযীলত ও বরকত বর্ণিত আছে।
ঝাড়ফুঁক করা :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পরিবারবর্গের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি ‘মু‘আব্বিযাত’ সূরাগুলো পড়ে তাকে ফুঁক দিতেন। পরবর্তীতে তিনি যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত হলেন তখন আমি তাকে ফুঁক দিতে লাগলাম এবং তাঁর-ই হাত দিয়ে তাঁর দেহ মুছে দিতে লাগলাম।
(সহীহ বুখারী, হা/৫০১৬; সহীহ মুসলিম, হা/২১৯২)
শুয়ার সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিয়মিত আমল :
সূরা ইখলাসের ফযীলতে হাদীসটি উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রত্যেক সালাতের পর পড়ার জন্য নবী নির্দেশ দিয়েছেন :
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন প্রত্যেক সালাতের পর সূরা ফালাক ও নাস পাঠ করি।
(সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৩৬)
সারকথা এই যে, যাবতীয় বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরাম এই সূরাদ্বয়ের আমল করতেন।
পটভূমি :
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দাওয়াত যতই বিস্তার লাভ করেছে কুরাইশ বংশীয় কাফিরদের বিরোধিতাও ততোই বেড়েছে। যতদিন তাদের আশা ছিল, কোন রকম দেয়া-নেয়া করে অথবা ফুসলিয়ে তাঁকে ইসলামী দাওয়াতের কাজ থেকে বিরত রাখতে পারা যাবে, ততদিন তো বিদ্বেষ ও শত্রুতার তীব্রতা কিছুটা কম ছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন দীনের ব্যাপারে কোন প্রকার আপোষ করার প্রশ্নে তাদেরকে সম্পূর্ণ নিরাশ করে দিলেন এবং সূরা আল-কাফিরুনের মাধ্যমে তাদেরকে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে দিলেন- যাদের ইবাদাত তোমরা করছো আমি তাদের ইবাদাত করবো না। তখন কাফিরদের শত্রুতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। ঘরে ঘরে তাঁকে অভিশাপ দেয়া হচ্ছিল। কোন দিন রাতের আঁধারে লুকিয়ে তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনাও করা হয়েছিল। যাতে বনী হাশেমদের কেউ হত্যাকারীর সন্ধান পেয়ে আবার প্রতিশোধ নিতে না পারে। তাঁকে যাদুটোনাও করা হয়েছিল।
নবী ﷺ এর উপর যাদুর ঘটনা :
হুদায়বিয়ার সন্ধির পর মহানবী ﷺ যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন ৭ম হিজরীর মুহাররম মাসে খাইবার হতে একদল ইয়াহুদি মদিনায় আগমন করে বিখ্যাত যাদুকর লাবীদের সাথে সাক্ষাৎ করল। তারা বলল, আমরা মুহাম্মাদকে ধ্বংস করার জন্য বহুবার যাদু করার চেষ্টা করেছি; কিন্তু তাতে সফল হতে পারিনি। আমরা তোমাকে তিনটি আশরাফি (স্বর্ণমুদ্রা) দিচ্ছি, তুমি তার উপর খুব শক্ত আকারের যাদু করো। এ সময় এক ইয়াহুদি ছেলে মহানবী ﷺ এর খাদিম ছিল। তারা তার সাথে যোগাযোগ করে নবী ﷺ এর চিরুনির একটি অংশ সংগ্রহ করে নিল, যাতে নবী ﷺ এর চুল লাগানো ছিল। লাবীদ, অন্য বর্ণনায় তার যাদুকর বোন এ চিরুনি ও চুলের সঙ্গে এগার গিরা বিশিষ্ট এক গাছি সূতা ও সুঁচ বিশিষ্ট একটি মোমের পুতলিসহ খেজুর গাছের ছড়ার আবরণে রেখে যারওয়ান কূপের নিচে একটি পাথরের তলায় চাপা দিয়ে রেখেছিল।
নবী ﷺ এর উপর এ যাদুর প্রভাব পড়ল, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মুসনাদে আহমাদে আছে নবীর এ অসুস্থতা ছয় মাস পর্যন্ত চলছিল। অবশেষে নবী ﷺ আয়েশা (রাঃ) এর ঘরে অবস্থান করে আল্লাহর দরবারে পর পর দু‘আ করলেন। এক সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। জেগে উঠে আয়েশা (রাঃ) কে বললেন, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম তা তিনি আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, সেটা কী? নবী ﷺ বললেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, দু’জন ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধারণ করে একজন আমার মাথার দিকে ও অপরজন পায়ের দিকে বসলেন। একজন জিজ্ঞেস করলেন, এর কী হয়েছে? অপরজন উত্তর দিলেন, এর উপর যাদু করা হয়েছে। আবার জিজ্ঞেস করলেন, কে যাদু করেছে? বলা হলো লাবীদ। জিজ্ঞেস করা হলো, কিসে? বলা হলো- চিরুনি ও চুলে একটি পুরুষ খেজুর গাছের আবরণের মধ্যে। বলা হলো কোথায়? উত্তর হলো, যারওয়ান কূপের তলায় পাথরের নিচে। বলা হলো, এখন কী করা যায়? উত্তর হলো, পানি শুঁকিয়ে তা বের করতে হবে।
নবী ﷺ কয়েকজন সাহাবীকে সাথে নিয়ে কূপে গেলেন। পানি শুঁকিয়ে জিনিসটা বের করলেন, জিবরাঈল এসে নবী ﷺ কে বললেন, আপনি ফালাক ও নাস সূরা দুটি পড়ুন। নবী ﷺ একটি করে আয়াত পড়তে লাগলেন- এতে একেকটি গিরা খুলতে লাগল, এভাবে এগারটি আয়াত পড়া শেষ করলেন।
এতে এগারটি গিরা খুলে গেল এবং সকল সুঁচ পুতলি হতে বের হয়ে গেল। এবার নবী ﷺ এর শরীরে শক্তি ফিরে আসলো এবং তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। মনে হলো যেন আট-সাট করে বেঁধে রাখা একজন মানুষকে এই মাত্র ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
অতঃপর নবী ﷺ লাবীদকে ডেকে এনে কৈফিয়ত চাইলে সে তার দোষ স্বীকার করে নিল। ফলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। কারণ নবী ﷺ ব্যক্তিগত কারণে কখনো কারো কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতেন না। তখন কোন কোন সাহাবী বলেছিলেন, হে আল্লাহর নবী! আমরা এ খবীসকে হত্যা করব না কেন? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে রোগমুক্ত করে দিয়েছেন- আমি কারো কষ্টের কারণ হতে চাই না।
(তাফসীর ইবনে কাসীর, সূরা নাস ও ফালাকের তাফসীর দ্রষ্টব্য।)
সূরার বিষয়বস্তু :
রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলা হয়েছে, এদেরকে বলে দাও আমি আশ্রয় চাচ্ছি আমার রবের নিকট সমুদয় সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে। এটা মূসা (আঃ) এর ঠিক সেই সময়ের কথার মতো, যখন ফিরাউন ভরা দরবারে তাঁকে হত্যা করার সংকল্প প্রকাশ করেছিল। মূসা (আঃ) তখন বলেছিলেন, ‘‘আর তোমরা আমার উপর আক্রমণ করবে এজন্য আমি নিজের ও তোমাদের রবের আশ্রয় নিয়েছি। (সূরা দুখান : ২০)
মূলত যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে, আল্লাহর শক্তি সব শক্তির সেরা, তাঁর মোকাবেলায় দুনিয়ার সব শক্তি তুচ্ছ এবং যে ব্যক্তি তাঁর আশ্রয় নিয়েছে তার সামান্যতম ক্ষতি করার ক্ষমতা কারো নেই।
সূরা ফালাক- এ দুনিয়াবী বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে সূরা নাসে আখেরাতের আপদ ও মুসীবত থেকে আশ্রয় প্রার্থনার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে।
(১) قُلْ তুমি বলো, اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই بِرَبِّ প্রতিপালকের নিকট اَلْفَلَقِ প্রভাতের। (২) مِنْ شَرِّ অনিষ্ট থেকে مَا خَلَقَ যা তিনি সৃষ্টি করেছেন। (৩) وَمِنْ شَرِّ এবং অনিষ্ট থেকে غَاسِقٍ রাতের অন্ধকারে اِذَا যখন وَقَبَ তা গভীর হয়। (৪) وَمِنْ شَرِّ এবং অনিষ্ট থেকে اَلنَّفَّاثَاتِ যাদুটোনাকারিণীদের فِي الْعُقَدِ গিরায়। (৫) وَمِنْ شَرِّ এবং অনিষ্ট থেকে حَاسِدٍ হিংসুকের اِذَا যখন حَسَدَ সে হিংসা করে।
সরল অনুবাদ :
(১) তুমি বলো, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের১ মালিকের কাছে আশ্রয় চাই।২ (২) তাঁর সৃষ্টি করা প্রতিটি জিনিসের অনিষ্ট থেকে।৩ (৩) আমি আশ্রয় চাই রাতের অন্ধকারে সংঘটিত অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়।৪ (৪) গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের অনিষ্ট থেকে।৫ (৫) হিংসুক ব্যক্তির৬ (সব ধরনের হিংসার) অনিষ্ট থেকেও যখন সে হিংসা করে।৭
টীকা :
[১] ফালাক শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে ফাটানো, চিরে ফেলা বা ভেদ করা। অন্য এক আয়াতে আল্লাহর গুণ فَالِقُ الْاِصْبَاحِ (সূরা আনআম : ৯৬) বর্ণনা করা হয়েছে। এর একটি অর্থ হল- প্রভাত। রাতের অন্ধকার চিরে প্রভাতের শুভ্রতা বেরিয়ে আসার কারণে এরূপ বলা হয়েছে।
ফালাক শব্দের আরেকটি অর্থ হচ্ছে সৃষ্টি। এখানে ফালাক বলতে আল্লাহ যেসব বস্তু একটি অপরটি থেকে চিরে বা ভেদ করে বের করেছেন, তা সবই উদ্দেশ্য। যেমন- দিবস বের হয় রাতের আবরণ চিরে; বীজের বুক চিরে সব ধরনের গাছ ও উদ্ভিদের অংকুর বের হয়; জমিন থেকে তরু-লতা, ফসল ইত্যাদি বের করা হয়; সব ধরনের প্রাণী মায়ের গর্ভাশয় চিরে অথবা ডিম ফুটে কিংবা অন্য কোন আবরণ ভেদ করে বের হয়; বৃষ্টির ধারা মেঘের স্তর ভেদ করে পৃথিবীতে নামে। এখানে ফালাক বলতে যা বুঝায় তার সবই উদ্দেশ্য হবে।
[২] রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর কাছে যেভাবে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন তা থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, প্রতিটি বিপদ-আপদ ও অনিষ্টতার মোকাবিলায় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়াটাই মুমিনের কাজ, অন্য কারো কাছে নয়। তাছাড়া আল্লাহর প্রতি বিমুখ ও অনির্ভর হয়ে নিজের উপর ভরসা করাও তার কাজ নয়।
[৩] আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম (রহ.) বলেন, شَرٌّ শব্দটি দু‘প্রকার বিষয়বস্তুকে শামিল করে- (এক) প্রত্যক্ষ অনিষ্ট ও বিপদ, যা দ্বারা মানুষ সরাসরি কষ্ট পায়, (দুই) যা মুসীবত ও বিপদাপদের কারণ হয়ে থাকে, যেমন কুফর ও শিরক। কুরআন ও হাদীসে যেসব বস্তু থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা আছে, সেগুলো এই প্রকারদ্বয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সেগুলো হয় নিজেই বিপদ, না হয় কোন বিপদের কারণ।
[৪] পূর্বোক্ত আয়াতের ভাষায় সমগ্র সৃষ্টির অনিষ্টই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কাজেই আশ্রয় গ্রহণের জন্য এ বাক্যটিই যথেষ্ট ছিল, কিন্তু এ স্থলে আরো তিনটি বিষয় আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে, যা প্রায়ই বিপদ ও মুসীবতের কারণ হয়ে থাকে। প্রথমে বলা হয়েছে, غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ এখানে غَسَقٌ শব্দের অর্থ অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়া। কোন কোন মুফাসসির এর অর্থ নিয়েছেন রাত্রি। وَقَبَ এর অর্থ অন্ধকার পূর্ণরূপে বৃদ্ধি পাওয়া বা ছেয়ে যাওয়া। আয়াতের অর্থ এই যে, আমি আল্লাহর আশ্রয় চাই রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তার অন্ধকার গভীর হয়। রাতের অন্ধকারের অনিষ্টকারিতা থেকে বিশেষ করে পানাহ চাওয়ার নির্দেশ দেবার কারণ হচ্ছে এই যে, রাত্রিবেলায় জিন, শয়তান, ইতর প্রাণী, কীট-পতঙ্গ ও চোর-ডাকাত বিচরণ করে এবং অপকার করতে পারে। তাই রাতের বেলা যেসব অনিষ্টকারিতা ও বিপদ-আপদ নাযিল হয় সেগুলো থেকে আশ্রয় চাওয়ার হুকুম দেয়া হয়েছে।
[৫] দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, اَلنَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ এখানে نَفَثٌ এর অর্থ ফুঁ দেয়া। عُقَدٌ অর্থ গ্রন্থি। যারা যাদু করে, তারা ডোরা ইত্যাদিতে গিরা লাগিয়ে তাতে যাদুমন্ত্র পড়ে ফুঁ দেয়। এখানে نَفَّاثَاتُ স্ত্রী লিঙ্গ ব্যবহার করা হয়েছে। বাহ্যত এটি নারীর বিশেষণ। এটি খারাপ আত্মাকেও বুঝাতে পারে। তখন অর্থ হবে ফুঁকদানকারী খারাপ আত্মা থেকে আমি আশ্রয় চাচ্ছি। আবার এটা ফুঁ দানকারীদের সমষ্টিকেও নির্দেশ করতে পারে, যাতে পুরুষ ও নারী উভয়ই দাখিল আছে।
[৬] তৃতীয় বিষয় হচ্ছে, حَسَدٌ যার শাব্দিক অর্থ হিংসা। হিংসার মানে হচ্ছে, কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ যে অনুগ্রহ, শ্রেষ্ঠত্ব বা গুণাবলী দান করেছে তা দেখে কোন ব্যক্তি নিজের মধ্যে জবালা অনুভব করে এবং তার থেকে এগুলো ছিনিয়ে নিয়ে এ দ্বিতীয় ব্যক্তিকে দেয়া হোক, অথবা কমপক্ষে তার থেকে সেগুলো ছিনিয়ে নেয়া হোক- এ আশা করা। তবে কোন ব্যক্তি যদি আশা করে অন্যের প্রতি যে অনুগ্রহ করা হয়েছে তার প্রতিও তাই করা হোক, তাহলে এটাকে হিংসার সংজ্ঞায় ফেলা যায় না। সুতরাং হিংসার মূল হলো, কারো নিয়ামত ও সুখ দেখে অসন্তুষ্ট হওয়া ও সে নিয়ামতের অবসান কামনা করা।
[৭] এখানে বলা হয়েছে, হিংসুক যখন হিংসা করে অর্থাৎ তার মনের আগুন নিবারণের জন্য নিজের কথা ও কাজের মাধ্যমে কোন পদক্ষেপ নেয়, তার হিংসাকে প্রকাশ করে, সেই অবস্থায় তার অনিষ্টতা থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয় চাওয়া হয়েছে।
এ সূরার শিক্ষাসমূহ :
সকল অবস্থায় আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা জরুরি।
উজ্জ্বল প্রভাত আল্লাহ তা‘আলার একটি বড় ধরনের নিয়ামত।
শয়তানের দল রাতের মধ্যে অধিক কার্য সম্পাদন করে থাকে।
অনেক সময় হিংসুক ব্যক্তিরা কারো অনিষ্ট করার জন্য যাদুর আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে।
হিংসা মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়; সুতরাং হিংসা থেকে দূরে থাকা অতি জরুরি।
আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করলে যাদুকরদের যাদু এবং হিংসুকদের হিংসা থেকে আত্মরক্ষা লাভ করা যায়।
(১) قُلْ তুমি বলো, اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই بِرَبِّ প্রতিপালকের নিকট اَلنَّاسِ মানুষের। (২) مَلِكِ (যিনি) বাদশাহ اَلنَّاسِ মানুষের। (৩) اِلٰهِ ইলাহ اَلنَّاسِ মানুষের। (৪) مِنْ شَرِّ অনিষ্ট থেকে اَلْوَسْوَاسِ কুমন্ত্রণার اَلْخَنَّاسِ আত্মগোপনকারী শয়তানের। (৫) اَلَّذِيْ যে يُوَسْوِسُ কুমন্ত্রণা দেয় فِيْ صُدُوْرِ অন্তরে اَلنَّاسِ মানুষের। (৬) مِنَ الْجِنَّةِ জিনদের মধ্য থেকে হোক وَالنَّاسِ বা মানুষদের মধ্য থেকে হোক।
সরল অনুবাদ :
(১) তুমি বলো, আমি আশ্রয় চাই মানুষের প্রতিপালকের কাছে। (২) মানুষের (আসল) বাদশাহের কাছে। (৩) মানুষের (একমাত্র) মা‘বুদের কাছে।১ (৪) কুমন্ত্রণাকারীর২ অনিষ্ট থেকে, যে (প্ররোচনা দিয়েই) গা ঢাকা দেয়। (৫) যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। (৬) জিনদের মধ্য থেকে হোক বা মানুষদের মধ্য থেকে।৩
টীকা :
[১] এখানে রব, মালিক এবং ইলাহ এ তিনটি গুণের অধিকারীর নিকট আশ্রয় চাওয়া হয়েছে। আল্লাহ রব, মালিক বা অধিপতি, মাবুদ সবই। সব কিছুই তাঁর সৃষ্টি, তাঁর মালিকানাধীন এবং তাঁর বান্দা। তাই আশ্রয় প্রার্থনাকারীকে তিনটি গুণে গুণান্বিত মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
[২] এখানে কুমন্ত্রণাদাতা বলতে মানুষের সাথে নিয়োগকৃত শয়তানের কথা বলা হয়েছে, যে সঙ্গী তাকে খারাপ কাজ করাতে চেষ্টার ত্রুটি রাখে না। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই একজন শয়তান সঙ্গী নিয়োগ করা হয়েছে। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার সাথেও? তিনি বললেন, হ্যাঁ- তবে আল্লাহ আমাকে তার উপর নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেছেন। ফলে তার থেকে আমি নিরাপদ হয়েছি এবং সে আমাকে শুধুমাত্র ভাল কাজের কথাই বলে। (সহীহ মুসলিম, হা/২৮১৪)
[৩] কুমন্ত্রণাদাতা শয়তান জিনদের মধ্য থেকেও হয়, মানুষের মধ্য থেকেও হয়। আল্লাহ তা‘আলা রাসূলকে তাঁর আশ্রয় প্রার্থনার শিক্ষা দিয়েছেন জিন-শয়তানের অনিষ্ট থেকে এবং মানুষ-শয়তানের অনিষ্ট থেকে। জিন-শয়তানের কুমন্ত্রণা হল অলক্ষ্যে থেকে মানুষের অন্তরে কোন কথা রাখা। শয়তান যেমন মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়, তেমনিভাবে মানুষের নফসও মানুষকে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ ﷺ আপন নফসের অনিষ্ট থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা শিক্ষা দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় চাই, আমার নফসের অনিষ্ট হতে, শয়তানের অনিষ্ট থেকেও এবং তার শিরক (বা জাল) থেকেও। (আবু দাউদ, হা/৫০৬৭; তিরমিযী, হা/৩৩৯২; মুসনাদে আহমাদ : ১/৯)
এ সূরার শিক্ষাসমূহ :
কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা হলে তা বৈধ রয়েছে, অন্যথায় তা অবৈধ।
কারো উপর যাদুর প্রভাব পড়লে এ দুটি সূরা বেশি করে পড়া উচিত।
যেকোন ধরনের বিপদাপদের সম্মুখীন হলে আল্লাহর আশ্রয় নিতে হবে।
সত্যের পথে তথা ইসলামের পথে দাওয়াত প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বদায় বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
শয়তানের কুমন্ত্রণা খুবই গোপনীয় ও সূক্ষ্ম।
কুমন্ত্রণাদানকারী শয়তান শুধুমাত্র জিনদের মধ্যেই হয় না; বরং অনেক সময় মানুষের মধ্যেও হতে পারে।
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।