মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
শরী‘আতের বক্তব্যের সাথে ভৌগলিক বিষয়ের বিরোধ হয় কি?
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/376/74
প্রশ্ন: আমরা কীভাবে দীন ও কিছু কিছু বিষয়ে অর্জিত শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় সাধন করব, যা বাহ্যিকভাবে উভয়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে। যেমন, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়: আমরা দীনের মধ্যে জানতে পেরেছি যে, নক্ষত্ররাজিকে তিনটি জিনিসের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে: এগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে আকাশকে সুসজ্জিত করার জন্য, শয়তানদেরকে বিতাড়িত করার জন্য এবং এগুলোকে নিশানা বানানো হয়েছে, যাতে তার দ্বারা সঠিকভাবে পথ চলা যায়, আর অপরদিকে আমরা ভূগোলে পড়েছি যে, এগুলো হলো কিছু পদার্থের সমষ্টি, যার পরিভ্রমণের নির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে। আর আমরা রাতের বেলায় যাকে জ্বলতে ও পতিত হতে দেখি, তা অগ্নিশিখা ও উল্কা, যা এক আকর্ষণ থেকে বের হয়ে পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণে আসে; অতঃপর তা প্রজ্বলিত হয় এবং প্রতি সেকেন্ডে ৪৫ মাইল গতিতে পতিত হয়।
উত্তর:
الحمد لله , و الصلاة و السلام على نبينا محمد و على آله و صحبه و بعد :
(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আর সালাত ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের ওপর)
অতঃপর.......
নিশ্চয়ই যিনি কুরআন মাজীদ অবতীর্ণ করেছেন এবং ওহীর মাধ্যমে ইসলামের শরী‘আত প্রেরণ করেছেন তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি, তিনি হলেন মহাজ্ঞানী ও বিজ্ঞানী তা‘আলা, যিনি আকশমণ্ডলী ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন সকল কিছু, আর তাকে যার জন্য সৃষ্টি করেছেন, তার অনুগত করে দিয়েছেন এবং তিনি জানেন তার মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য ও গোপন রহস্যসমূহ গচ্ছিত রেখেছেন, সে সম্পর্কে। সুতরাং তিনি যা সৃষ্টি করেছেন ও তাঁর বান্দাদের জন্য অনুগত করেছেন, তার সাথে সাথে তিনি যে বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন অথবা যা শরী‘আত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, তা পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বা বৈসাদৃশ্যপূর্ণ হওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়; বরং এর প্রতিটিই সুবিন্যস্ত, তার সৃষ্টি ও শৃঙ্খলার সাথে সাথে তার ব্যাপারে দেওয়া তথ্য ও শরী‘আতের বক্তব্যের মাঝে যথেষ্ট মিল রয়েছে। সুতরাং তাঁর দেওয়া তথ্য বাস্তবসম্মত এবং তাঁর সৃষ্টি ও তাকে নিয়মের অধীন করাটা তাঁর দেওয়া তথ্যের দাবি অনুযায়ী যথাযথ; অতএব মানুষ যদি মনে করে আল-কুরআনের মধ্যে দেওয়া আল্লাহর বক্তব্য অথবা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের মধ্যে বিরোধ বা বৈপরীত্য রয়েছে, তাহলে তার এমন ধারণার উৎস হলো তার জ্ঞানের কমতি অথবা তার বুঝের ঘাটতি এবং তার গবেষণা বা অনুসন্ধানের কমতি অথবা সৃষ্টিতত্ত্ব ও শরী‘আতের বক্তব্য সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের অভাব, আর এর দৃষ্টান্ত হলো যা তা‘আলা’র পক্ষ থেকে তাঁর কিতাবের মধ্যে এসেছে, তিনি বলেন,
“নিশ্চয় আমরা কাছের আসমানকে নক্ষত্ররাজির সুষমা দ্বারা সুশোভিত করেছি, এবং রক্ষা করেছি প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান থেকে। ফলে ওরা ঊর্ধ্ব জগতের কিছু শুনতে পারে না। আর তাদের প্রতি নিক্ষিপ্ত হয় সব দিক থেকে- বিতাড়নের জন্য এবং তাদের জন্য আছে অবিরাম শাস্তি। তবে কেউ হঠাৎ কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড তার পশ্চাদ্ধাবন করে।” [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৬-১০]
“আর অবশ্যই আমরা নিকটবর্তী আসমানকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং সেগুলোকে করেছি শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং তাদের জন্য প্রস্ত্তত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।” [সূরা আল-মুলক, আয়াত: ৫]
“আর অবশ্যই আমরা আকাশে বুরুজসমূহ সৃষ্টি করেছি এবং দর্শকদের জন্য সেগুলোকে সুশোভিত করেছি, আর প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হতে আমরা সেগুলোকে সুরক্ষিত করেছি; কিন্তু কেউ চুরি করে শুনতে চাইলে দীপ্ত শিখা তার পশ্চাদ্ধাবন করে।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ১৬- ১৮]
“আর তিনিই তোমাদের জন্য তারকামণ্ডল সৃষ্টি করেছেন, যেন তা দ্বারা তোমরা স্থলের ও সাগরের অন্ধকারে পথ খুঁজে পাও। অবশ্যই আমরা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করেছি।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৯৭]
“এবং পথ নির্ণায়ক চিহ্নসমূহও। আর তারা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১৬]
আর সহীহ সুন্নাহর মধ্যেও এই ব্যাপারে কিছু বক্তব্য এসেছে, যা আল-কুরআনের বক্তব্যসমূহের সাথে অর্থগত দিক থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
যে ব্যক্তি এই বক্তব্যসমূহের প্রতি দৃষ্টি দেবে, সে তাতে স্পষ্ট বুঝতে পারবে যে, এতে বস্তুত নক্ষত্রসমূহের কিছু বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে; তাতে এমন কিছু নেই, যা নক্ষত্ররাজির উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্যসমূহকে উল্লেখিত তিনটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার প্রমাণ বহন করে, যেমনিভাবে তার মধ্যে এমন কিছুও নেই, যা নক্ষত্ররাজিকে শুধু ঐসব উল্কার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করার প্রমাণ বহন করে, যার দ্বারা আমরা শয়তানকে আঘাত করতে দেখতে পাই এবং তার দ্বারা তাদের (শয়তানদের) মধ্যে যারা চুরি করে (ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত থেকে) কোনো তথ্য শুনতে চায়, তাদেরকে আঘাত করা হয়। যেমনিভাবে এ সকল বক্তব্যের মধ্যে অন্যান্য উল্কারাজিকে সাব্যস্ত বা নিষেধ করার মত কিছুও নেই; বিষয়টি এমন প্রত্যেক লোকই বুঝতে পারে যার কাছে আরবদের ভাষা জ্ঞান রয়েছে, আর যার কাছে কোনো কিছু সীমাবদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত আরবদের ভাষার অব্যয়সমূহের জ্ঞান রয়েছে।
সুতরাং যখন জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের মধ্যে প্রমাণিত হয় যে, সেখানে মহাশূন্যে পাথর ও সৌর জাগতিক বিভিন্ন বস্তু ছড়িয়ে আছে এবং তা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত, তন্মধ্যে প্রত্যেকটি গ্রুপ তাদের মধ্যকার সবচেয়ে বড় নক্ষত্রের আকর্ষণিক বলয়ে অবস্থিত। আর তা যখন এই নক্ষত্রের আকর্ষণিক বলয় থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, অতঃপর ঐ নক্ষত্রের বলয় থেকে দূরে সরে যায় এবং তার থেকে অপর এক নক্ষত্রের আকর্ষণিক বলয়ের নিকটবর্তী হয়, তখন তা দ্রুত গতিতে নীচের দিকে ধাবিত হয় এবং তার পৃষ্ঠদেশের সাথে অপরাপর নক্ষত্রের পৃষ্ঠদেশের ঘর্ষণের ফলে অগ্নিশিখার জন্ম হয়, সৃষ্টিজগতের এই বাহ্যিকতাকে উল্কা নামে নামকরণ করা হয়। যখন এটা প্রমাণিত, তখন তা ইসলামী শরী‘আতের নস তথা বক্তব্যসমূহের মধ্যে যেই ভাষ্য এসেছে, তার সাথে সাংঘর্ষিক নয়, আর সেই ভাষ্যের মধ্যে রয়েছে শুধুমাত্র নক্ষত্ররাজির মধ্যে উল্কা বা অগ্নিশিখার দ্বারা শয়তানদেরকে আঘাত করার সংবাদ। কেননা হতে পারে উল্কারাজির প্রকাশ দু’টি কারণেই হয়ে থাকে। কারণ, জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের মধ্যে এমন কথা নেই যা প্রমাণ করে যে উল্কারাজি তারকাপূঞ্জ ছাড়া অন্য কোথাও থেকে ঝরে পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তদ্রূপ কুরআন ও সুন্নাহ’র বক্তব্যের মধ্যেও এমন কথা নেই যে, শয়তানদেরকে বিতাড়িত করার জন্য নিক্ষিপ্ত উল্কারাজি তারকারাজির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
আর প্রশ্নকারী যে অগ্নিশিখা বা উল্কাপিণ্ডের কথা উল্লেখ করেছে, তা ভূগোল বিশেষজ্ঞদের মতে নিক্ষিপ্ত বস্তু যা উল্কাপিণ্ড হিসেবে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়, তবে তা প্রজ্জ্বলিত হয় না এবং তা ছাই-ভষ্মেও রূপান্তরিত হয় না। সুতরাং তা শিহাব ( شهاب ) জাতীয় উল্কাপিণ্ডের শ্রেণীভুক্ত নয়, বরং তা শিহাব ( شهاب ) জাতীয় উল্কাপিণ্ডের বিপরীত শ্রেণীর উল্কাপিণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। অতএব প্রশ্নকারীর কর্তব্য হচ্ছে, সে তার জ্ঞান ও তথ্যভাণ্ডারকে বিশ্লেষণ করবে এবং তার দীন ও দুনিয়ার বিষয়সমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করবে, আর আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহম করুন, যে তার মর্যাদা সম্পর্কে জানে এবং কোনো বিষয়ে জটিলতার মুখোমুখি হলে তার মান বা স্তরের নির্ধারিত সীমারেখায় দাঁড়িয়ে যায়।
و صلى الله على نبينا محمد و على آله و صحبه و سلم .
(আল্লাহ রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর ওপর)।
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।