hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সুন্নাত ও বিদয়াত

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

১৭
সাহাবীদের জামা‘আতই আদর্শ
দুনিয়া ইসলামের এ সুন্নাতের আদর্শ লাভ করেছে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ(স) এর কাছ থেকে। মুহাম্মদ(স)-ই এ সুন্নাতকে বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং তাঁর সাহাবীরাও এ সুন্নাতেরই উপর অটল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সাহাবীদের পরে তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীনের যুগেও সুন্নাতই সমাজের ওপর জয়ী ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে মুসলিম মিল্লাতের নানাবিধ দূর্বলতা দেখা দেয়, দেখা দেয় নব নব বিদয়াত। সমাজের সাধারণ অবস্থা প্রচন্ডভাবে বদলে যায়। বিদয়াত জয়ী ও প্রকট হয়ে পড়ে এবং সুন্নাত হয় দূর্বল ও পরাজিত বরং লোকেরা বিদয়াতকেই সুন্নাত হিসেবে গ্রহণ করে এবং সুন্নাতকে বিদয়াতের ন্যায় পরিহার করে। সে আজ প্রায় বার তেরশ’ বছর আগের কথা। তারপর মুসলিম জীবন সুন্নাতের আদর্শ থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে পড়তে থাকে এবং সুন্নাতের আদর্শের পরিবর্তে শিকড় গাড়তে থাকে বিদয়াত। আজকের মুসলমান তো এ দৃষ্টিতে বিদয়াত-অজগরের একেবারে উদর গহবরে আটকে গেছে। কিন্তু আজও তাদের সামনে আদর্শ ও অনুকরণীয় ও অনুসরণযোগ্য হচ্ছে রাসূলে করীম(স) ও তাঁর সাহাবায়ে কিরাম। তাঁদেরই অনুসরণ করে চলা উচিত সকল মুসলমানের। রাসূল ও সাহাবদের যুগে সুন্নাত বিশ্ব মুসলিমের নিকট চিরকালের তরে আঁধার সমুদ্রের আলোকস্তম্ভ। আজো সেখান থেকেই আলো গ্রহণ করতে হবে, পেতে হবে পথ-নির্দেশ। রাসূলে করীম(স) এমনি এক ভবিষ্যদ্বাণী করে বিভ্রান্ত মুসলিমের জন্য পথ-নির্দেশ করে গেছেন।

রাসূলের একটি হাদীসের শেষাংশ হচ্ছে এইঃ

(আরবি)

-বনী-ইসরাঈলীরা বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল আর আমার উম্মত তিহাত্তর ফির্কায় বিভক্ত হবে। তাদের মধ্যে একটি ফির্কা ছাড়া আর সব ফির্কা-ই জাহান্নামী হবে। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেনঃ সে একটি ফির্কা কারা হে রাসূল (স)? তিনি বললেন, “তারা হচ্ছে সেই লোক যারা অনুসরণ করবে আমার ও আমার আসহাবদের আদর্শ”।

এ হাদীসকে ভিত্তি ধরে ইমাম তিরমিযী এবং ইমাম ইবনুল জাওজী যে কথাটি বলেছেন, তার মর্ম হলো এইঃ এ হাদীসে প্রমাণ রয়েছে যে, ‘এক জামা‘আত’ বলতে সাহাবাদের জামা‘আতকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ বিশেষ কোনো একজন সাহাবী নন, নবী করীম(স) এবং সামগ্রিকভাবে সাহাবীদের জামা‘আত যে সুন্নাতকে পালন করে গেছেন, পরিবর্তিত অবস্থায় এবং পতন যুগেও যারা সেই সুন্নাতকে অনুসরণ করবে, তারাই জান্নাতে যাওয়ার অধিকারী হবে। তারা হবে সেই লোক যারা আকীদা, কথা ও বাহ্যিক আমলের রীতি-নীতি সব-ই সাহাবীদের ইজমা থেকে গ্রহণ করবে।

আবুল আলীয় তাবেয়ী বলেছেনঃ মুসলিম সমাজ ফির্কায় ফির্কায় বিভক্ত হওয়ার পূর্বে যে অবস্থায় ছিল, তোমরা সেই অবস্থাকে শক্ত করে বজায় রাখতে ও বহাল করতে চেষ্টা করবে।

এ কথাটিতেও ঠিক সাহাবাদের যুগের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। কেননা সাহাবীদের যুগই ছিল এমন যুগ-যখন মুসলিম সমাজ ছিল ঐক্যবদ্ধ, অবিভক্ত।

আসেম বলেন, আবুল আলীয়ার এ নসীহতের কথা হাসানুল বসরীকে বলায় তিনি বলেনঃ আল্লাহ্র কসম, তোমাকে ঠিকই উপদেশ দিয়েছে এবং তোমাকে একান্তই সত্য কথা বলেছে।

ইমাম আওয়াজী বলেছেনঃ তোমরা নিজেকে সুন্নাতের ওপর অবিচল রাখো সুন্নাতে ধারক লোকেরা যেখানে দাঁড়িয়েছেন অর্থাৎ যে নীতি গ্রহণ করেছেন, তুমিও সে নীতিই গ্রহণ করো, তাঁরা যা বলেছেন, তুমি তাই বলবে, যা থেকে তাঁরা বিরত রয়েছেন, তুমিও তা থেকে বিরত থাকবে। আর তোমার পূর্ববর্তী নেককার লোক যে পথ ধরে চলে গেছেন, তুমিও সেই পথেই চলবেন। তাহলে তাঁরা যা করেছেন, তা-ই করার তওফীক তুমিও পাবে।

মনে রাখতে হবে, ইমাম আওজায়ী একজন তাবেয়ী এবং তিনি সলফে সালেহ বলতে বুঝিয়েছেন সাহাবীদের জামা‘আতকে। অতএব রাসূলের পরে সুন্নাতের আদর্শ সমাজ যেমন ছিলেন সাহাবায়ে কিরাম, তেমনি রাসূলের পরে সাহাবায়ে কিরামই হতে পারেন সকল কালের, সকল মুসলিমের আদর্শ ও অনুসরণীয়। সলফে সালেহীন বলতে দুনিয়ার মুসলমানের নিকট তাঁরাই বরণীয়। কেননা তাঁদের আদর্শবাদিতা ও রাসূলের অনুসরণ গুণের কথা স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা সাক্ষ্য দিয়েছেন কুরআন হাদীসে সাক্ষ্য দিয়েছেন স্বয়ং নবী করীম(স)। রাসূলের সত্য মাপকাঠিতে পুরোপুরিভাবে তাঁরাই উত্তীর্ণ হয়েছেন।

বস্তুত রাসূল(স) এর পরে সাহাবায়ে কিরাম ছাড়া মুসলমানদের নিকট আর কোনো ব্যক্তি কোনো কালের, কোনো দেশের কোনো বুযুর্গ ও(?) আদর্শ ও অনুসরণীয়রূপে গণ্য হতে পারে না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা) কোনো ব্যক্তিকে আদর্শরূপে গ্রহণ করা সম্পর্কে বলেছেনঃ কারো যদি সুন্নাতকে ধারণ করতেই হয়, তাহলে তার উচিত এমন ব্যক্তির সুন্নাত ধারণ করা, যে মরে গেছে। কেননা যে লোক এখনো জীবিত সে যে ভবিষ্যতে ফিতনায় পড়বেনা, তার কোনো নিশ্চয়তাই নেই। আর মরে যাওয়া লোক হচ্ছেন মুহাম্মদ(স) এর সাহাবীগণ, যারা ছিলেন এ উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম লোক, যাঁদের দিল ছিল সর্বাধিক পূণ্যময়, গভীরতম জ্ঞানসম্পন্ন। কৃত্রিমতা ছিলনা তাঁদের মধ্যে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের বাছাই করে নিয়েছিলেন তাঁর নবীর সাহাবী হওয়ার জন্যে এবং তাঁর দ্বীন কায়েম করবার জন্যে। অতএব তোমরা তাদের সঠিক মর্যাদা অনুধাবন করো-স্বীকার করো। তাঁদের পদাংক অনুসরণ করো। আর তাঁদের চরিত্র ও স্বভাবের যতদূর সম্ভব তোমরা ধারণ ও গ্রহণ করো। কেননা তাঁরা ছিলেন সঠিক ও সুদৃঢ় হেদায়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা) এর মতো একজন সাহাবীরও এ এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ। এর তাৎপর্য্ এই যে, সাহাবায়ে কিরামই সর্বকালের লোকদের জন্য পরিপূর্ণ ও নিখুঁত নির্ভরযোগ্য আদর্শ। আকীদা-বিশ্বাস, আমল-আখলাকের দৃষ্টিতে তাঁরা সর্বোন্নত পর্যায়ে উন্নীত ও সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। কিন্তু এখানে বিশেষ কোনো ব্যক্তি সাহাবীর কথা বলা হয়নি, বলা হয়েছে সমষ্ঠিগতভাবে সাহাবীদের জামা‘আতের কথা। এই সাহাবীদের জামা‘আতই মুসলিমের নিকট অনুসরণীয়।

এ থেকে বোঝা গেল যে, রাসূলে করীম(স) ছাড়া মানব সমাজের কোনো এক ব্যক্তিকে-ই একান্তভাবে অনুসরণীয়রূপে গ্রহণ করা কিছুতেই কল্যাণকর হতে পারেনা, ইসলাম সে নির্দেশ দেয়নি কাউকেই-সে যে যুগের এবং যত বড় বুযুর্গ ও অলী-আল্লাহ্ই হোকনা কেন। শুধু তাই নয়, ইসলামে সে বিষয়ে স্পষ্ট নিষেধ বাণীও উচ্চারিত হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা) হতে বর্ণিত হয়েছেঃ কেউ যেন নিজের দ্বীনকে কোনো ব্যক্তির সাথে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে না দেয় যে, সে ঈমান আনলে সেও ঈমান আনবে আর সে কুফরী করলে সেও কুফরী করবে। যদি তোমরা কারো অনুসরণ করতে বাধ্য হও-ই, তাহলে তোমরা অনুসরণ করবে মরে যাওয়া লোকদের। কেননা জীবিত মানুষ জীবিত থাকা অবস্থায় ফিতনা হতে মুক্ত হতে পারেনা।

এখানেও মরে যাওয়া লোক বলতে বোঝায়, সাহাবীদের জামা‘আত, কোনো বিশেষ ব্যক্তি-সাহাবী নয়। একমাত্র রাসূলে করীম(স) ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির অন্ধ অনুসরণ ইসলামে আদৌ সমর্থিত নয়। এ হচ্ছে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের মতো একজন জলীলুল কদর সাহাবার কথা। তিনি যেমন ছিলেন প্রথম যুগের সাহাবী, তেমনি রাসূলের বিশেষ খাদেম। কাজেই সাধারণভাবে মুসলমানদের জন্য সঠিক নির্ভরযোগ্য কর্মনীতি এ-ই হতে পারে যে, তারা মেনে চলবে শুধু আল্লা্হকে, আল্লাহ্র রাসূলকে-কুরআন এবং হাদীসকে; আর এক কথায় সুন্নাতকে। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত মতকে ব্যক্তিগত চাল-চলন, স্বভাব চরিত্র ও আচার ব্যবহারকে কখনোই একমাত্র আদর্শরূপে আঁকড়ে ধরবেনা। কোনো জীবিত বা মৃত মানুষের বিনা শর্তে আনুগত্য স্বীকার করবেনা। বিনা শর্তে আনুগত্য মানব সমাজে কেবলমাত্র রাসূলে করীম(স) কে করা যেতে পারে, করতে হবে, অন্য কারো নয়।

এ পর্যায়ে একটি বড় বিভ্রান্তির অপনোদন করা একান্তই আবশ্যক। বিভ্রান্তিটি হচ্ছে একটি প্রখ্যাত হাদীসকে কেন্দ্র করে।

হাদীসটি হলো এইঃ (আরবি)

-আমার সাহাবীগণ নক্ষত্রপুঞ্জের মতোই উজ্জ্বল। এদের মধ্যে যার-ই তোমরা অনুসরণ করবে, হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।

এই হাদীসের ভিত্তিতে কেউ কেউ বলতে চান যে, নিজেদের ইচ্ছেমতো যে কোনো একজন সাহাবীর অনুসরণ করলেই হেদায়াতের পথে চলা সম্ভব হবে। কিন্তু কয়েকটি কারণে এই হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করা যুক্তিযুক্ত হতে পারেনা। প্রথম কারণটি এই যে, এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে। একটি সূত্র হলোঃ আ‘মাশ থেকে আবু সুফিয়ান হতে, জাবির(রা) হতে। আর একটি হলো সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব হতে, ইবনে আমর থেকে। আর তৃতীয় হলো হামযা আল-জজী থেকে, নাফে থেকে, ইবনে উমর থেকে। কিন্তু মুহাদ্দিসদের বিচারে এ সব সূত্রে কোনো হাদীস প্রমাণিত নয়। ইবনে আবদুল বার্র এর উদ্বৃতি দিয়ে আল্লামা ইবনুল কায়্যিম লিখেছেনঃ আমাদের নিকট সাঈদের পুত্র ইবরাহীম, তাঁর পুত্র মুহাম্মদ হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, তাদের নিকট হামদ ইবনে আইয়ূব আস সামূত বর্ণনা করেছেন যে, আমাদের নিকট বাজ্জার বলেছেন যে, “আমার সাহাবীরা নক্ষত্রপুঞ্জের মতো, তাদের মধ্যে যার-ই তোমরা অনুসরণ করবে, হেদায়াত পাবে”। এই অর্থের যে হাদীসটি বর্ণনা করা হয় তা এমন একটি কথা, যা নবী করীম(স) হতেই সহীহ বলে প্রমাণিত হয়নি। (খতীব আল বাগদাদীর উদ্ধৃত হযরত ইবনুল খাত্তাব (রা) এর বর্ণনা থেকে এর বিপরীত কথা জানা যায়।)

হাদীস বিচারে সনদের গুরুত্ব হলো মৌলিক। আর সনদের বিচারে যে হাদীস সহীহ বলে প্রমাণিত নয়, তাকে শরীয়তের দলীল হিসেবে পেশ করার কোনো অধিকার কারোই থাকতে পারেনা।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন