মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ইসলামের তওহীদী আকীদায় আল্লাহর একত্ব ও অনন্যতা স্বীকৃত যেমন বিশ্বসৃষ্টি, লালন-পালন, রিযিকদান এবং দো‘আ ও ইবাদত পাওয়ার অধিকার প্রভৃতির ক্ষেত্রে। অনুরূপভাবে মানুষের বাস্তব জীবনের সর্বস্তরে ও সর্বক্ষেত্রে নিরংকুশভাবে আনুগত্য করে চলতে হবে এক আল্লাহকেই। মানুষের নিকট এই আনুগত্য পাওয়ার একমাত্র অধিকার হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার, আল্লাহ ছাড়া আর কারোরই এই অধিকার নেই, যেমন সমগ্র বিশ্বলোক-বিশ্বলোকের অনু-পরমাণু পর্য্ন্ত আনুগত্য করে চলছে একমাত্র আল্লাহর। পরন্তু নিখিল জগতের সবকিছুর ওপর যেমন আইন বিধান চলে একমাত্র আল্লাহর, তেমনি মানুষের জীবনেও সর্বদিকে ও বিভাগে আইন জারি করার নিরংকুশ অধিকারও একমাত্র আল্লাহর। আল্লাহর সৃষ্ট এই মানুষের ওপর আল্লাহ ছাড়া আর কারোরই আইন জারি করার নেই। মানুষও পারেনা আল্লাহ ছাড়া আর কারো আইন মেনে নিতে ও পালন করতে। করলে তা হবে সম্পূর্ণরূপে অনধিকারচর্চা, অন্যায় এবং অত্যাচার; তা হবে সুস্পষ্টরূপে শিরক।
বস্তুত মানুষের জন্য আইন বিধান তিনিই রচনা করবেন, মানুষ তার জীবনের সকল দিক ও বিভাগে কেবল তাঁরই দেয়া আইন পালন করে চলবে। তাঁর দেয়া আইন বিধানের বিপরীত কোনো কাজ কিছুতেই করবেনা। কেননা মানুষের ওপর হুকুম করার, অন্য কথায়-আইন দেয়ার ও জারি করার অধিকারতো আল্লাহ ছাড়া আর কারোরই নেই, থাকতে পারেনা। এ বিষয়ে মূল কথা হলো; আপনি কাকে এই অধিকার দিচ্ছেন যে, সে আপনার জন্যে আইন তৈয়ার করবে, আর আপনি তা পালন করবেন, করতে প্রস্তুত হবেন আর কাকে এই অধিকার আপনি দিচ্ছেননা।
যদি আপনি একমাত্র আল্লাহকে এই অধিকার দেন, তাহলে আল্লাহর তওহীদ বিশ্বাস পূর্ণ হলো, আর যদি ওপর কাউকে, কোনো ব্যক্তিকে, কোনো প্রতিষ্ঠানকে –এই অধিকার দেন বা অধিকার আছে বলে মনে করেন, তা হলে প্রকৃতপক্ষে সে-ই হলো আপনার আল্লাহ, আর আপনি তার বান্দা-দাস। কিন্তু এই শেষোক্ত অবস্থা নিঃসন্দেহে শিরক এর অবস্থা। একথাই ঘোষিত হয়েছে কুরআন মজীদে নিম্নোক্ত আয়াতসমূহে।
সূরা আল-আনআমের আয়াতে রাসূলে করীমের জবানীতে বলা হয়েছেঃ
-তোমরা যে জন্যে খুব তাড়াহুড়া করছো তা তো আমার কাছে নেই। সব ব্যাপারে ফয়সালা ও হুকুম করার অধিকার কারোই নেই-একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। তিনিই সত্য বর্ণনা করেন এবং তিনিই সর্বোত্তম ফয়সালা দানকারী।
সূরা ইউসূফের আয়াত হলোঃ
(আরবি)
-হুকুমদানের-আইন বিধান রচনার চূড়ান্ত অধিকার কারোরই নেই এক আল্লাহ ছাড়া। সেই আল্লাহ-ই ফরমান দিয়েছেন যে, হে মানুষ তোমরা কারোরই দাসত্ব করবেনা, করবে কেবলমাত্র সেই আল্লাহর।
এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর লিখেছেনঃ নির্দেশদান, হস্তক্ষেপকরণ, ইচ্ছা করা ও মালিকানা বা নিরংকুশ কর্তৃত্ব এই সব কিছুই একমাত্র আল্লাহর জন্য। তিনি তাঁর বান্দাদের চূড়ান্তভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারোরই ইবাদাত-বন্দেগী বা দাসত্ব করবেনা।
উপরোক্ত এ আয়াতে একদিকে বলা হয়েছে হুকুম দানের কথা, অপরদিকে দাসত্বের কথা। যার হুকুম পালন করা হয়, কার্য্ত দাসত্ব তাঁরই করা হয়। আর কারো হুকুম আইন, আদেশ নিষেধ, হালাল হারাম পালন করা, মেনে নেয়া ও অনুসরণ করাই হচ্ছে শরীয়তের পরিভাষায় ইবাদত। কাজেই এ ব্যাপারে আল্লাহকেই একমাত্র আইনদাতা বলে মেনে নেয়া তওহীদেরই আকীদা ও আমল। আর এই দিক দিয়ে অপর কাউকে এ অধিকার দিলে তা হবে সুস্পষ্ট শিরক।
-লোকদের জন্য এক আল্লাহ ছাড়া কোনো ‘অলী’ নেই এবং তিনি তাঁর হুকুম রচনা ও জারি করার ক্ষেত্রে কাউকেই শরীক করেননা।
এখানে ‘অলী’ শব্দটি ঠিক ‘আদেশদাতা’ ‘আইন-বিধানদাতা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং আল্লাহ ছাড়া কোনো ‘অলী’ নেই-এর মানে আল্লাহ ছাড়া আদেশদাতা, আইন বিধানদাতা ও প্রভুত্ব কর্তৃত্বসম্পন্ন আর কেউ নেই, কেউ হতে পারেনা। এ কথাই এ আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে। আর এ কথাকে অধিক চূড়ান্ত করে বলা হয়েছে আয়াতের শেষাংশে এই বলে যে, তাঁর হুকুমের ক্ষেত্রে তিনি কাউকেই শরীক করেননা। অর্থাৎ আইন-বিধানদাতা হিসেবে আল্লাহ এক, একক ও অনন্য। তিনি আর কাউকেই নিজস্বভাবে মানুষের ওপর হুকুম দানের ও আইন জারী করার অধিকার দেননি। সেই সঙ্গে মানুষকেও অধিকার দেয়া হয়নি আর কাউকে হুকুমদাতা বলে মেনে নেয়ার এবং আর কারো দেয়া আইন পালন করার। মানুষ যদি কাউকে এরূপ অধিকার দেয়, তবে আল্লাহর সাথে শিরক করা হয়। তা হবে অনধিকার চর্চা। কেননা আল্লাহর সৃষ্টির ওপর আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেই এই অধিকার তিনি নিজে দেননি; এখন আল্লাহর সৃষ্টির ওপর অপর কারো হুকুমদানের এবং হুকুমদাতা বলে মেনে নেয়ার কার অধিকার থাকতে পারে? আল্লাহ তো শিরক এর গুনাহ কখনো মাফ করেননা। অন্যান্য গুনাহ্র কথা স্বতন্ত্র।
-আল্লাহর সাথে শিরক হলে তিনি তা মাফ করেননা। এছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন। (আন-নিসাঃ116)
বস্তুত ইসলামের তওহীদী আকীদায় এ-ই হচ্ছে সুন্নাত। কুরআন মজীদের ত্রিশ পারা কালাম এই আকীদারই বিশ্লেষণে পরিপূর্ণ। নবী করীম(স) এই আকীদাই প্রচার করেছেন, এই আকীদার ভিত্তিতেই তিনি চালিয়েছেন তাঁর সমগ্র দাওয়াতী ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। তখনকার সময়ের লোকেরা এই কথাই বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর প্রচারিত আকীদা থেকে এবং আকীদা গ্রহণ করেই তাঁরা মুসলমান হয়েছিলেন। এক কথায় এই হচ্ছে ইসলামের বুনিয়াদী আকীদা এবং এরই ভিত্তিতে নবী করীম(স) গড়ে তুলেছিলেন পূর্ণাঙ্গ সমাজ ও রাষ্ট্র।
এক আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছেঃ
(আরবি)
-হুকুম আইন-বিধান রচনা ও জারী করার অধিকার কেবলমাত্র মহান আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট।
-নিশ্চয়ই আমরা কুরআন নাযিল করেছি। অতএব আল্লাহর হুকুম পালনের মধ্যেই সবর করে থাকো, তা বাদ দিয়ে কোনো গুনাহগার কিংবা কাফির ব্যক্তির আনুগত্য করোনা, তার দেয়া হুকুম মেনো না।
কুরআন নাযিল করার কথা বলার পরই আল্লাহর হুকুম পালনে সবর করতে বলার তাৎপর্য্ এই যে, কুরআনই হলো আল্লাহর হুকুমপূর্ণ কিতাব। এ কিতাব মেনে চললেই আল্লাহর হুকুম মান্য করা হবে। আর তা পালনে সবর করার অর্থ আল্লাহর হুকুম পালন করেই ক্ষান্ত থাকা, তাছাড়া আর কারো হুকুম পালন না করা।
নবী করীম(স) নিজের ভাষায় বলেছেন-
(আরবি)
-সৃষ্টির আনুগত্য করতে গিয়ে আল্লাহর নাফরমানী করার অধিকার নেই কারো।
তার মানে, আনুগত্য মৌলিকভাবে কেবল আল্লাহরই প্রাপ্য মানুষের কাছে। মানুষ কেবল তাঁরই আনুগত্য করতে আদিষ্ট। কিন্তু যদি কোনো ক্ষেত্রে অন্য কারো আনুগত্য করতে হয়, অন্য কারো আইন বিধান পালন করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তাহলে কি করা যাবে? রাসূলের এই কথাটুকুতে তারই জবাব রয়েছে। এখন এর তাৎপর্য্ হলো এই যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আনুগত্য করা যেতে পারে কেবলমাত্র একটি শর্তে আর সেই শর্ত হলো এই যে, অন্য কারো আনুগত্য করা হলে তাতে যেন আনুগত হওয়ার আসল ও মৌল অধিকার আল্লাহর নাফরমানী হয়ে না যায়। যদি তা হয় তাহলে কিছুতেই অন্য কারো আনুগত্য করা যেতে পারেনা।
ইলমে ফিকাহ্ও এই কথাই আমাদের সামনে পেশ করে নানা কথায়, নানা ভাষায়। উসুলুল ফিকহর কিতাব ‘নুরুল আনোয়ার’ এ লিখিত হয়েছেঃ
তওজীহ কিতাবের বিশ্লেষণ থেকে যা জানা যায়, তা হলো এই যে, প্রত্যেকটি হুকুমের জন্য (১) হুকুমদাতা, (২)যার প্রতি হুকুম দেয়া হয় এবং (৩) যে বিষয়ে হুকুম দেয়া হলো এই তিনটি জিনিস জরুরী। অতএব হুকুমদাতা হচ্ছে এক আল্লাহ, হুকুম দেয়া হয়েছে শরীয়ত পালনে বাধ্য মানুষকে এবং হুকুম দেয়া হয়েছে শরীয়ত পালনের।
‘তাওজীহ’ কিতাবে আরো স্পষ্ট করে কথাটি বলা হয়েছে এভাবেঃ
কিতাবের দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনা হবে হুকুম সম্পর্কে। হুকুম এর জন্য হুকুমদাতা আবশ্যক, আর হুকুমদাতা হচ্ছে আল্লাহতা‘আলা, মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি বিবেক নয়।
বলা হয়েছেঃ হুকুম কেবল আল্লাহর ই হতে পারে। এ ব্যাপারে সব ইমামই সম্পূর্ণ একমত।
কুরআন, হাদীস ও ইজমা-ইসলামী শরীয়তের এই তিনটি বুনিয়াদী দলীল থেকে এ কথাই প্রমাণিত হয়। তা হচ্ছে এই যে, হুকুম দেয়ার অধিকার আল্লাহ ছাড়া আর কারোই নেই। আল্লাহর তওহীদে বিশ্বাসী লো্ক এক আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেই হুকুমদাতা, বিধান-দাতা ও জায়েয-নাজায়েয নির্ধারণকারী হিসেবে মানতে পারেনা। মানলে তা হবে শিরক। রাসূলে করীমের পরে খোলাফায়ে রাশেদীন এর আমলেও মুসলমানদের এই ছিল আকীদা এবং এই ছিল তাঁদের আমল।
হযরত উমর ফারূক(রা) হযরত আবু মূসা আশ‘আরীর নিকট ইসলামী শাসন কার্য্ পরিচালনা সম্পর্কিত পলিসি নির্ধারণকারী এক চিঠিতে লিখেছিলেনঃ
শরীয়ত ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থা কায়েম করা এক অকাট্য দ্বীনি ফরয এবং অনুসরণযোগ্য এক সুন্নাত।
কিন্তু উত্তরকালে মুসলিম সমাজে তওহীদের এই মৌলিক ভাবধারা-যাকে আমাদের ভাষায় বলতে পারি তওহীদ আকীকার রাজনৈতিক তাৎপর্য্-স্তিমিত হয়ে আসে। শেষ পর্য্ন্ত এমন একদিনও আসে, যখন মুসলমানরা দ্বীন ইসলামে ধর্ম ও রাজনীতিকে দুই বিচ্ছিন্ন ও পরস্পর সম্পর্কহীন জিনিস বলে মনে করতে শুরু করে এবং এই মনোভাবের ফলে ধর্মের ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতাদের কর্তৃত্ব মেনে নেয়। কেবল আল্লাহর হুকুমই নয়, সেই সঙ্গে ধর্ম নেতা তথা পীর সাহেবের হুকুম পালন করাও দরকারী বলে মনে করে। জীবনের বৃহত্তম দিক-রাজনীতি, সমাজনীতি ও অর্থনৈতিক কাজকর্মকে ইসলামের আওতার বাইরে বলে মনে করে। সেখানে মেনে নেয়া হয় রাজনীতিকও শাসকদের বিধান। নামাযের ইমামতি ধার্মিক লোকই করবে বলে গুরুত্ব দেয়া হয়, কিন্তু সমাজ, রাষ্ট্র ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ফাসিক-ফাজির তথা ইসলামের দুশমনদের নেতৃত্ব স্বীকার করে নিতেও এতটুকু দ্বিধাবোধ করা হয়না-একে ইসলামের বিপরীত কাজ বলে মনে করা হয়না। শুধু তাই নয়, ব্যক্তি জীবনে যারা ধর্মকে খুব গুরুত্ব সহকারে পালন করে –পালন করা দরকার বলে মনে করে, তারাই যখন রাজনীতি করতে নামে, তখন সেখানে করে চরম গায়র ইসলামী রাজনীতি, চরম শরীয়ত বিরোধী সামাজিকতা এবং সুস্পষ্ট হারাম উপায়ে ব্যবসা বাণিজ্য ও লেনদেন। কেননা এসব ক্ষেত্রে তারা আল্লাহকে হুকুম দেয়ার অধিকার দিতে রাজি হয়না, আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে হবে এক্ষেত্রে তা মনে করতে পারেনা। ধর্ম ও রাজনীতি কিংবা ধর্ম ও অর্থনীতি ইত্যাদিকে বিচ্ছিন্ন পরস্পর সম্পর্কহীন মনে করাই হলো আধুনিক সেকিউলারিজম এর মূল কথা এবং ইসলামের তওহীদী আকীদার সামাজিক-রাজনৈতিক দিকে এই হলো এক মারাত্মক বিদয়াত। এই পর্যায়ে এসে সমাজের ধার্মিক লোকেরা আল্লাহকে পাওয়ার জন্য পীর ধরা ফরয বলে প্রচার করে। আর অপর শ্রেণীর লোকেরা রাজতন্ত্র, বাদশাহী ও ডিকটেটরী শাসন ব্যবস্থা পর্য্ন্ত ইসলাম সম্মত মনে করতে শুরু করে। ফাসিক-ফাজির নেতা, রাজা-বাদশাহ ও ডিকটেটরকে বাস্তব জীবনে আইন শাসনের ক্ষেত্রে ঠিক আল্লাহর স্থানে বসিয়ে দেয়। তারা এজন্যে রাসূলের হাদীস ‘সুলতানরা আল্লাহর ছায়া সদৃশ’ প্রচার করে। রাজা-বাদশাহ ও ফাসিক ফাজির নেতৃবৃন্দকে মানব সমাজের ওপর আল্লাহর সমান মাননীয় করে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মুসলমানদের বাস্তব আনুগত্যের ক্ষেত্রে ধর্মীয় দিক দিয়ে আলিম ও পীরকে এবং জাগতিক ব্যাপারে রাজা-বাদশাহ, রাজনৈতিক নেতা ও ডিকটেটরকে আল্লাহর সমতুল্য করে ফেলেছে। আল্লাহ যেমন জনগণের ওপর নিজস্ব আইন বিধান জারী করেন, তেমনি ধর্মনেতা বা পীর-বুযুর্গ এবং রাজা-বাদশাহ ও রাষ্ট্রকর্তাদেরও নিজেদের মর্জিমত আইন বিধান জারী করার অধিকার আছে বলে মনে করেছে। ইসলামী ধর্ম ব্যবস্থায় এবং বৈষয়িক রাজনীতির ক্ষেত্রে এমনিভাবে এক মহা বিদয়াতের অনুপ্রবেশ সম্ভব হয়েছে। আর তারই ফলে আল্লাহর তওহীদী ধর্মে ধর্মনেতার তথা পীর-বুজুর্গ লোকদের এবং রাজনীতি ও সমাজ সংস্থায় রাজনীতিবিদদের নিরংকুশ কর্তৃত্ব স্বীকার করে শিরক এর এক অতি বড় বিদয়াত দাঁড় করিয়ে নিয়েছে। পরবর্তীকালে ক্রমশ এমন একদিন এসে পড়ে, যখন রাজা-বাদশাহ ও রাষ্ট্রকর্তাদের রচিত আইন বিধান পালন করাকে আল্লাহর আইন পালনের মতোই কর্তব্য এবং পীরের হুকুম মানা আল্লাহর হুকুম পালনের সমান কর্তব্য বলে মনে করতে থাকে। আর তাদের নাফরমানীকে আল্লাহর নাফরমানীর মতোই গুনাহের কাজ বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে।(ঠিক এ কারণে এক সঙ্গে দু’জন ইমাম-রাষ্ট্রপ্রধান মেনে নেয়াও জায়েয নয়। একজন ধর্মীয় ইমাম-পীর ও একজন রাষ্ট্রীয় ইমাম-বাদশাহ বা ডিকটেটর মেনে নেয়া শরীয়তবিরোধী।)
অথচ শরীয়তের নির্দেশ মুতাবিক তাদের কর্তব্য ছিল এক ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করা এবং সেজন্য ইসলামী আদর্শবাদী ইমাম তথা রাষ্ট্রচালক নিয়োগ করা। কুরআনের আয়াত ‘আমি পৃথিবীতে খলীফা বানাব’-এর ভিত্তিতে ইমাম কুরতবী লিখেছেনঃ
ইমাম ও খলীফা নিয়োগ কর্তব্য – যার কথা শোনা হবে ও আনুগত্য করা হবে, যেন জাতির ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয় ও খলীফার আইন আদেশ পুরোপুরি জারী হয়-এ পর্যায়ে উপরোক্ত আয়াতই মূল দলীল। ইমাম ও মুজতাহিদ ইমামদের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো মতভেদ নেই। অতএব এ কাজ যে ওয়াজিব তা প্রমাণিত হলো। প্রমাণিত হলো যে, এরূপ একজন ইমাম বা খলীফা নিয়োগ করা সেই দ্বীন ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ, যে দ্বীন হলো মুসলমানদের সামাজিক ও সামগ্রিক জীবনের ভিত্তি।
আল্লাহর হুকুম ও আইন ছাড়া অন্য কারো আইন পালন করা যে শিরক, পূর্বের আলোচনায় শরীয়তের অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে তা প্রমাণিত হয়েছে।
কিন্তু আলিম নামধারী এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা জাহিল পীরদের ফেরেবে পড়ে কেবল আল্লাহকেই একমাত্র আইন বিধানদাতা বলে মানতে রাজি নয়। কেননা হুকুম আইনদাতা রূপে কেবল আল্লাহকেই যদি মানতে হয়, তাহলে ‘হুযুর কিবলা’র স্থান হবে কোথায়? অতএব আল্লাহর সঙ্গে ‘হুযুর কিবলাকে’ও হুকুম দেয়ার অধিকারী মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। এ জন্যে এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো হুকুম মানা শিরক-‘ইসলামের তওহীদী’ আকীদাসম্মত এই কথার জবাবে নেহায়েত মূর্খের মতই বলতে শুরু করেঃ
“পাঠকগণ! একটু চিন্তা করুন-স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মক্তব প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে, রাজনৈতিক, সামাজিক, বিভিন্ন সমিতি, কমিটি ও সংস্থায়, নৌকা, স্টীমার, বাস, ট্রেন ইত্যাদি পরিচালনায় ও যাতায়াত প্রভৃতি অসংখ্য পার্থিব ও বৈষয়িক ব্যাপারে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষকে কি মানুষের গড়া কোনো আইন মেনে চলতে হয়না? জ্বি হ্যা, তাতো নিশ্চয়ই হয়; তাতে আর সন্দেহ কি? তাহলে কি আল্লাহকে একমাত্র হুকুমদাতা বলে মানতে হবে? আমাদের পূর্বোক্ত দীর্ঘ আলোচনার আলোকে চিন্তা করলে আলিম নামধারী ব্যক্তির উপরোক্ত কথা যে কতখানি হাস্যকর তা যে কোনো লোকই বুঝতে পারেন। একেতো তিনি নিজেই বলছেনঃ ‘পার্থিব ও বৈষয়িক ব্যাপারে মানুষের গড়া আইন পালন করতে হয়।’ নিতান্ত বৈষয়িক ব্যাপারেও আল্লাহ ও রাসূলের কোনো বিধান বা আদর্শ নেই, সেসব ক্ষেত্রে আর কারো হুকুম মানা যাবেনা- একথা আপনাকে কে বলেছে? এখানে মূল কথা হচ্ছে মানুষের জীবনকে বৈষয়িক ও ধর্মীয়-এ দু’ভাগে ভাগ করাই আপনার মারাত্মক ভুল। ইসলামে এ বিভাগকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। অতএব কেবল জাগতিক ব্যাপারেই নয়, নিছক ধর্মীয় ব্যাপার বলে আপনি যাকে মনে করছেন, তাতেও আল্লাহ ছাড়া অন্যের হুকুম পালন করা যেতে পারে; কিন্তু বিনাশর্তে নয়, একটি বিশেষ শর্তের ভিত্তিতে। তাহলো প্রথমতো সে হুকুম আল্লাহর হুকুম মুতাবিক হবে। আর দ্বিতীয়ত আল্লাহর হুকুমের বিপরীত কিছু হবেনা-এ শর্তের ভিত্তিতে যে কোন ক্ষেত্রে যে কারোরই হুকুম পালন করা যেতে পারে। কেননা তা মূলত আল্লাহরই হুকুম। কিন্তু জনাব, হুযুর কিবলার হুকুমকে যে আল্লাহর হুকুমের মতোই বিনাশর্তে নির্বিচারে মানবেন, তা চলবেনা, তাহলে সুস্পষ্ট শিরক হবে এবং আপনি সেই শিরকের অতল সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে থাকবেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/289/24
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।