hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সুন্নাত ও বিদয়াত

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

৪৪
তাবিজ তুমার ও কবর বাঁধার বিদয়াত
আমাদের সমাজে সাধারণ অশিক্ষিত লোকদের মাঝে তাবিজ কবজ এবং এক শ্রেণীর বড় লোকদের মাঝে, বিশেষ করে বিদেশ সফরকালে ‘ইমামে জামেন’ বাঁধার একটি ব্যাপক রেওয়াজ রয়েছে দেখা যায়। এ সব লোক ইসলামের মৌলিক আদর্শের বড় একটা ধার ধারেনা, বুঝেও না তেমন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিপদে পড়লে বা বিপদ দেখা দিলে অথবা বিপদের আশংকা করলে হাতে, গলায় তাবিজ কবজ ও ‘ইমামে জামেন’ না বেঁধে তারা পারেনা। এরা মনে করে, এতে করে বিপদ কেটে যাবে কিংবা বিপদ আসতেই পারবেনা। কিন্তু কুরআন হাদীসের দৃষ্টিতে এসব যে ইসলামের তওহীদী আকীদার সম্পূর্ণ বিপরীত এবং মুসলমানদের মাঝে এটা যে একটা সম্পূর্ণ বিদয়াত ও শিরকী কাজ, সে কথা তারা ভেবে দেখবারও অবকাশ পায়না। একটু গভীরভাবে তলিয়ে দেখলে বুঝতে পারা যায়, মূলত দোষ এ লোকদের নয়, এক শ্রেণীর আলিম বেশ ধারী মোল্লা মৌলবীরাই সাধারণ মানুষের মাঝে এ জিনিসের প্রচলন করেছে এবং এতে করে তারা দু পয়সা রোজগার করে খাচ্ছে। তারা অজ্ঞ মূর্খ লোকদের মনে তওহীদী আকীদার কোনো ধারণা সৃষ্টি করতেই চেষ্টা করেনি। বরং তার বিপরীতে এ ধারণা দিয়েছে যে, বিপদ কেটে যাবে। বিপদ থেকে উদ্ধার পাবে। অর্থাৎ তওহীদী আকীদার পরিবর্তে স্পষ্ট শিরকী আকীদাই তাদের মন মগজে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এক আল্লাহর ওপর সর্বাবস্থায় নির্ভর করার, আল্লাহর নিকট বিপদ হতে উদ্ধার পাওয়ার জন্য দো’আ করার কথা না শিখিয়ে তাদের পরিচালিত করা হয়েছে সুস্পষ্ট শিরকের পথে। এতে করে মুসলিম সমাজে তাবিজ কবজ ও ইমামে জামেন বাঁধার রেওয়াজ দিয়ে এক সুস্পষ্ট বিদয়াতকেই চালু করা হয়েছে মুসলমানদের মধ্যে।

অথচ যে কোনো আলিম কুরআনের দিকে তাকালে দেখতে পেত, কুরআন মুসলমানদের পরিচয় দান প্রসঙ্গে ওজস্বিনী ভাষায় ঘোষণা করেছেঃ

وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ ۚ

–মুমিন-মুসলমানেরা কেবল আল্লাহরই রহমত পাওয়ার আশা করে এবং কেবল তারই আজাববে ভয় করে। (বনী ঈসরাইলঃ৫৭)।

অন্য কথায় তারা আল্লাহ ছাড়া আর কারো নিকট, কোনো জিনিসের নিকট একবিন্দু সাহায্য, শান্তি ও নিরাপত্তা পেতে চায়না। তাদের মন কোনো অবস্থাতেই অন্য কারো দিকে, কিছুর দিকে আশান্বিত হয়না। অপর কারো ক্ষতির একবিন্দু ভয়ও তাদের মনে জাগেনা। তারা যেমন কোনো মৃত্যু ও অনুপস্থিত ব্যক্তি বা কোনো প্রাণহীন জিনিসের আশ্রয় নেয়না – না কোনো ফায়দা লাভের আশায়, না কোনো বিপদ বা ক্ষতি দূর করার উদ্দেশ্যে। বস্তুত এই তওহীদী আকীদা এবং এই হচ্ছে তওহীদবাদী মুমিনের পরিচয়।

কিন্তু তাবিজ-তুমার-কবজ বাঁধা এর সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তা কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াতের স্পষ্ট বিরোধী। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেনঃ

قُلْ أَفَرَأَيْتُم مَّا تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ إِنْ أَرَادَنِيَ اللَّهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِي بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ ۚ

–বলো হে নবী! তোমরা কি লক্ষ্য করছো তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাকে তাকে ডাকো, আল্লাহ যদি আমাকে কোনো ক্ষতি করতে চান তাহলে কি তারা তা রোধ বা দূর করতে পারবে? কিংবা আল্লাহ যদি আমাকে কোনো রহমত দিতে চান তাহলে কি তারা আল্লাহর এ রহমতকে বাধা দিতে পারবে? (আঝ ঝুমার ৩৮)।

ক্ষতি বা রহমত দেয়ার একমাত্র নিরংকুশ মালিক এক আল্লাহই, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নয়। আল্লাহ চাইলে ক্ষতি করে দেবেন, সে ক্ষতি থেকে সে বাঁচতে পারবেনা। অনুরূপভাবে আল্লাহ যদি কাউকে রহমত দান করতে চান, তাহলে সে রহমত থেকে বঞ্চিত থাকবেনা, কেউ তাকে রহমত থেকে বঞ্চিত করতে পারবেনা। যার জন্য রহমত নির্দিষ্ট, সে রহমত অন্য কাউকেও দিতে পারবেনা কেউ। অবস্থা যখন এই, তখন বুদ্ধিমান লোকেরা কেন আল্লাহ ছাড়া অপর কোনো ব্যক্তি, শক্তি বা জিনিসের কাছে কিছু পেতে চাইবে, পেতে চাইবে তার দয়া সাহায্য, পেতে চাইবে বিপদ হতে তার কাছে নিষ্কৃতি? আমাদের দেশে তাবিজ কবজ, ইমামে জামেন কি এ ধরনের জিনিস নয়? হাদীসে তো এসব সম্পর্কে স্পষ্ট নিষেধ বাণী উচ্চারিত হয়েছে। যে কোনো আলিম এ হাদীস দেখতে পারেন। দেখলে বুঝতে পারবেন যে, হাদীসের দৃষ্টিতেই এসব শিরকী কাজ। এখানে আমরা কয়েকটি হাদীসের উল্লেখ করছি।

(আরবি)

-হযরত ইমরান ইবনে হুসায়ন (রা) হতে বর্ণিত, নবী করীম(স) এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন, সে পিত্তরসের রোগ থেকে বাঁচার জন্য একটি আংটি হাতে পড়ে রেখেছে। তিনি অসন্তোষের সুরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওটা কি পরেছ? বললো, রোগ হতে উদ্ধার পাওয়ার উদ্দেশ্যে এটা পড়েছি। রাসূল(স) বললেন, ওটা খুলে ফেল। কেননা ওটা তোমার হাতে পরা থাকলে তোমার বিপদ বাড়িয়ে দেবে- কমাবেনা একটুও। আর এটা রাখা অবস্থায় যদি তুমি মরে যাও, তাহলে তুমি কখনোই কল্যাণ লাভ করতে পারবেনা।

হযরত উকবা ইবনে আমের(রা) হতে বর্ণিত, নবী করীম(স) ইরশাদ করেছেনঃ (আরবি)

-যে ব্যক্তি কোনো তাবিজ তুমার ঝুলাবে, আল্লাহ তাকে কোনো ফায়দা দেবেননা। আর যে কোনো কবজ ঝুলাবে, আল্লাহ তার বিপদ দূর করবেননা কখনো (কোনো শান্তি পাবেনা সে)।

অপর বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ (আরবি)

-যে লোক কোনো তাবিজ কবজ বাঁধবে, সে শিরক করলো।

পরপর উল্লেখ করা এ তিনটি হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, কোনো ক্ষতি লোকসান বিপদ হতে উদ্ধার পাবার জন্য কিংবা কোনো স্বার্থ উদ্দেশ্য লাভের আশায় তাবিজ কবয বাঁধা সুস্পষ্ট শিরক। ঈমানের বুনিয়াদ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কালেমা বান্দার নিকট যে ইখলাস দাবি করে, এ কাজ তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কেননা যে লোক সত্যিকার ইখলাস সম্পন্ন মুমিন সে তো কারো নিকট হতে ফায়দা পাওয়ার বা কারো লোকসান থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দিকে মনকে উন্মুখ করবেনা। অতএব এসব ত্যাগ না করলে পূর্ণ তওহীদের দাবি পূরণ হতে পারেনা। এটা ছোট শিরক বলে অনেকেই এর গুনাহ এর মারাত্মকতা লক্ষ্য করেনা, বরং উপেক্ষা করে। কিন্তু আসলে এ ছোট শিরক হলেও অত্যন্ত সাংঘাতিক। হাদীসের থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, নবী করীমের জীবদ্দশায় কোনো সাহাবীর নিকট এর মারাত্মক রূপ অস্পষ্ট বা অজানা ছিল। তা হলে বর্তমান কালের কম ইলমের ও দূর্বল ঈমানের লোকদের নিকট তা গোপন থাকায় আশ্চর্য্যের কি আছে- বিশেষত যখন চারিদিকে শিরক ও বিদয়াত ব্যাপকভাবে ছেয়ে গেছে।

হযরত হুযায়ফা(রা) এক ব্যক্তিকে দেখলেন সে জ্বরের তীব্রতার কারণে তাবিজ স্বরূপ একটি সুতা হাতে বেঁধে রেখেছে। তখন তিনি তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং এ আয়াতটি পাঠ করলেনঃ ‘তারা অধিকাংশ লোকই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেনি, বরং তারা মুশরিক।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ(রা) শিরক ও বিদয়াতের বিরুদ্ধে বড় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে গেছেন। যখন যেখানেই যে বিদয়াত বা শিরক দেখেছেন, তারই বিরুদ্ধে তিনি দ্রুত প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেছেন, ক্ষিপ্র কার্য্কর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। একদা তিনি ঘরের মধ্যে গিয়ে তার স্ত্রীর গলায় একটা তাগা ঝুলতে দেখলেন। তিনি জিজ্ঞেস করায় স্ত্রী জবাবে বললেনঃ এটা অমুক অসুখের টোটকা চিকিৎসার জন্য গলায় বেঁধেছি। তিনি সেটি ধরে এত শক্তভাবে টান দিলেন যে, সেটা ছিঁড়ে গেল। নতুবা তাঁর স্ত্রীই উপুড় হয়ে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতেন। চরিত্রের দৃঢ়তার জন্যই শুধু তিনি তা করেননি বরং শিরক বিদয়াতের বিরুদ্ধে দ্বীনি দায়িত্ব পালনের জন্যই করেছিলেন।

জাহিলিয়াত যুগে ‘যাতে আনওয়াত’ নামে একটি বৃক্ষ ছিল, সেখানে কুরাইশ ও সমস্ত আরব প্রতি বছর একবার একত্রিত হতো এবং তাদের তরবারী সেই বৃক্ষের সাথে ঝুলিয়ে দিত, তারই নিকট জন্তু জবাই করবো এবং একদিন তথায় সকলে অবস্থান করতো।

মক্কা বিজয়ের পর মক্কার নবদীক্ষিত মুসলমান ও মদীনা থেকে আগত সাহাবী সমভিব্যাহারে নবী করীম(স) হুনায়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সে বৃক্ষটি দেখতে পেয়েই মক্কার নবদীক্ষিত মুসলিমগণ পার্শ্ব থেকে বলে উঠলোঃ হে রাসূল(স)! আমাদের জন্যও একটি ‘যাতে আনওয়াত’ বানিয়ে দিন, যেমন ওদের জন্য ‘যাতে আনওয়াত’ রয়েছে। এই কথা শুনেই নবী করীম(স) বললেনঃ আল্লাহু আকবার, তোমরাতো সে রকম কথাই বলছো যেমন মূসার সঙ্গীরা বলেছিল-ওদের যেমন পূজ্য দেবতা রয়েছে আমাদের জন্যও অনুরূপ দেবতা বানিয়ে দাও হে মূসা!

অর্থাৎ তাদের ঐ কথা যেমন ইসলামের তওহীদী আকীদার পরিপন্থী ছিল, আজকের তোমাদের এই কথাও তেমনি তওহীদী ঈমানের বিপরীত। কেননা ওদের কথার মতো এদের কথাও মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। ফলে তা একটি অতি বড় শিরকী কথা। ওদের মতো ‘যাতে আনওয়াত’ বানিয়ে তার সাথে তরবারী ঝুলানো, তার নিকট জন্তু যবাই করা এবং সেখানে একদিন অবস্থান করা এক আল্লাহর সাথে আর একজন ইলাহ বানানো সমতুল্য গণ্য হওয়ায় রাসূলে করীম(স) ওদের কথা প্রত্যাখ্যান করলেন। (তিরমিযী, মুসনাদের আহমদ, ইবনে জরীর ও ইবনে ইসহাকে ফীসীরাতে নবী)।

এ ঐতিহাসিক কথা যদি সত্যি হয়(কে বলবে তা সত্যি নয়) তাহলে একালের মুসলিমরা যে বড় বড় নামকরা অলী-পীর-গাওসের(?) কবরের নিকট অবস্থান করছে, তার নিকট দো’আ করছে, তাকে ডাকছে এবং তার দো’আ চাচ্ছে, তা পরিষ্কার শিরক ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য হবেনা কেন?

দু’টি কাজের মধ্যে শিরক হওয়ার দিক দিয়ে পূর্ণ মিল রয়েছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই ইমাম মালিকের ছাত্র আবু বকর তাতুশী লোকজনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তোমরা যেখানেই এ ধরনের বৃক্ষ দেখতে পাবে, যাতে কেন্দ্র করে জনতা একত্রিত হয়, বৃক্ষটির প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে, রোগ ও বিপদে মুক্তি চায় তার নিকট এবং বৃক্ষটিকে কেন্দ্র করে ওরস করে-সেই বৃক্ষটিকে অবিলম্বে কেটে ফেলবে এবং শিরকের এই আড্ডাখানা ভেঙ্গে নির্মূল করে ফেলবে।

এ থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল যে, হযরত হুযায়ফার দৃষ্টিতে জ্বর ইত্যাদি থেকে বাঁচার জন্য তাবিজ তুমার বাঁধা পরিষ্কার শিরক। এটা ছোট শিরক হলেও সাহাবায়ে কিরাম তার প্রতিবাদে এমন সব আয়াত দলীল পেশ করতেন, যা বড় শিরকের প্রতিবাদে নাযিল হয়েছে। কেননা ছোট হলেও সেটা যে শিরক তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ জন্যে নবী করীম(স) বলেছেনঃ (আরবি)

-তোমাদের ব্যাপারে আমি সবচাইতে ভয় করি ছোট ছোট শিরককে।

অতএব শিরক যত ছোটই হোকনা কেন, আসলে তা আদৌ ছোট নয়। বরং সাহাবীদের দৃষ্টিতে ছোট শিরকও ছিল কবীরা গুনাহর চাইতেও বড় কঠিন।

কুরআনের আয়াত ও হাদীসসমূহের দৃষ্টিতে আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে প্রচলিত তাবিজ-তুমার-কবজ- ইমামে জামেন বাঁধার রেওয়াজটি সম্পর্কে চিন্তা করলে দুঃখে কলিজা ফেটে যায়। কেবল জাহিল লোকরাই যদি এসব করতো, তাহলে কোনো কথা ছিলনা। কিন্তু বড় বড় আলিম নামধারী লোকদেরও এই শিরকে নিমজ্জিত দেখতে পাচ্ছি। রাষ্ট্রপ্রধানের বিদেশ গমনকালে বিমানবন্দরে বিদায়কালে যখন একজন আলিম নামধারী ব্যক্তি ঘটা করে তাঁর হাতে ইমামে জামেন বেঁধে দেন, যখন বিদেশে বিবাহিতা মেয়ে রুখসত করার সময় মা কন্যার হাতে ইমামে জামেন বাঁধে এবং তার খবর খবরের কাগজে বড় বড় অক্ষরে প্রকাশ করা হয়, তখন তওহীদে বিশ্বাসী মানুষের মস্তক লজ্জায় ও দুঃখে নত না হয়ে পারেনা।

আমাদের গ্রা্ম্য মূর্খ সমাজে দেখা যায়, সদ্যজাত সন্তানের গলায় হাতে রাজ্যের বাজে জিনিস বেঁধে দেয়া হয়। বড়ইর আটি, তামার পয়সা, মোল্লার দেয়া তাবিজের ঢোল, নানা গাছ গাছড়ার পাতা বা শিকড়ের টুকরা ঝুলিযে দেয়া হয়। হাটা চলা করতে পারে-এমন ছেলে মেয়ের পায়ে মল, ঝুনঝুনি পরিয়ে দেয়া হয়- পুকুরের দিকে যেতে লাগলে টের পাওয়া যাবে, পানিতে পড়ে মরা থেকে তাকে বাঁচানো যাবে এই আশায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, যার মৃত্যু শিশুকালে নির্ধারিত থাকে তাকে এসব আবর্জনার বোঝা রক্ষা করতে পারেনা। মল বা ঝুনঝুনি পরা ছেলেমেয়েও পানিতে ডুবে মারা যায়। কেননা মৃত্যু এগুলোর ওপর নির্ভরশীল নয়। বস্তুত মানুষের ক্ষেত্রে এসবের শিরক হওয়া এবং সব রেওয়াজের বিদয়াত হওয়ার কোনোই সন্দেহ নেই। নবী করীম(স) যেমন এসব ব্যাপারে স্পষ্ট উক্তি করেছেন, নিষেধ বাণী উচ্চারণ করেছেন, তেমনি কার্য্তও তিনি জাহিলিয়াতের জামানায় প্রচলিত এসব রীতির প্রতিবাদ করেছেন। এমন কি তিনি জন্তু জানোয়ারের গলায়ও এসব বাঁধতে নিষেধ করেছেন, বাঁধা থাকলে তা ছিঁড়ে ফেলেছেন।

জাহিলিয়াতের জমানায় একটি রেওয়াজ ছিল, ভালো ভালো উটকে লোকদের নজরের দোষ থেকে বাঁচার জন্য উটের গলায় নানা তাবিজ-তুমার বাঁধা হতো। হযরত আবু বুশাইর-কুরাইশ ইবনে উবাইদ বলেন, একবার বিদেশ যাত্রাকালে তিনি রাসূল(স) এর সঙ্গী ছিলেন। নবী করীম(স) যাত্রার পূর্বেই একজন লোক পাঠিয়ে দিলেন এই বলেঃ (আরবি)

-কোনো উটের গলায় যেন এ ধরনের কোনো সূতা বাঁধা না থাকে, থাকলে তা যেন ছিঁড়ে ফেলা হয়।

ইমাম আহমদ ও আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন, নবী করীম(স) বলেছেনঃ (আরবি)

-তাবিজ-তুমার ও নির্ভরতার জিনিসগুলো ব্যবহার স্পষ্ট শিরক।

এ আলোচনার শেষভাগে একটি সন্দেহের অপনোদন প্রয়োজন। পূর্বের আলোচনা পাঠে কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবিজ বানালেও কি শিরক হবে? এর সংক্ষিপ্ত জবাব এই যে, সলফে সালেহীনদের মধ্যে কেউ কেউ কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবিজ কবয বানানো জায়েয বলেছেন। কিন্তু কেউ কেউ এ কাজকেও হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। হযরত ইবনে মাসঊদ(রা) এই শেষের লোকদের মধ্যে অন্যতম। ফিকহবিদদের মধ্যে কাতাদাহ, শাবী, সাঈদ ইবনে জোবাইর ও এক বড় দল বলেছেনঃ তাবিজ তুমার ব্যবহার মাকরূহ(তাহরীম)। মুমিন মাত্রই কর্তব্য এগুলো পরিহার করা, আল্লাহর প্রতি ঈমান দৃঢ় রেখে তাঁর ওপর নির্ভর ও ভরসা করা এবং এই জ্ঞান সহকারে যে, তার কোনো ফায়দা দেয়না, তা ত্যাগ করলে কোনো ক্ষতি হবেনা।

আমার মনে হয়, এসব কাজের পিছনে যে মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা থাকে, তা চিন্তা করলে সবাই স্বীকার করবেন, এসব কাজ হারাম ও তওহীদ বিরোধী না হয়ে পারেনা- তা কুরআনের আয়াত দ্বারা বানানো হলেও নয়। কেননা একজন যখন বিপদে পড়ার আশংকায় এসব কাজ করবে, তার মনের লক্ষ্য আল্লাহ হতে অ-আল্লাহ জিনিসের দিকে কেন্দ্রীভূত হবে। আল্লাহকে বাদ দিয়ে সে এই জিনিসের ওপর নির্ভরতা গ্রহণ করবে। আর তওহীদরে দৃষ্টিতে এটাই শিরক। দ্বিতীয়ত এ কাজে কুরআনের আয়াত ব্যবহৃত হলে, তা যে কুরআনের সঠিক ব্যবহার নয়, কুরআন যে তাবিজ হয়ে থাকার জন্য দুনিয়াতে আসেনি, কুরআনের উদ্দেশ্য থেকে সরিয়ে তাকে অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়, তাতে কি কোনো সন্দেহ আছে? এত কুরআনের প্রকাশ্য অপমান, কুরআনের অপব্যবহার, কুরআনের এও এক প্রকার তাহরীফ-ব্যবহারিক তাহরীফ(বিকৃতি সাধন), কুরআনের অভিজ্ঞ তওহীদ বিশ্বাসী মানুষের নিকট তা কিছু মাত্র অস্পষ্ট নয়। তাই এ কাজ যত শীঘ্রই বন্ধ হবে মানুষ তা ত্যাগ করে খলীস তওহীদবাদী তওহীদপন্থী হয়ে উঠবে, ততই মঙ্গল। অন্তত সমাজের আলিমদের যে এজন্য বিশেষ তৎপর হওয়া উচিত এবং এসব জিনিসকে একটুও প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়, তা আমি জোর গলায় বলতে চাই।

অবশ্য এ থেকে একথা প্রমাণ হয়না যে, কোনো আকস্মিক বিপদে কুরআনের আয়াত পড়ে আল্লাহর রহমত চাওয়া যাবেনা কিংবা বিপদগ্রস্ত লোকের ওপর আল্লাহর শিফা লাভের জন্য ফুঁ দেয়া যাবেনা। তা যে করা যাবে, তা হাদীস থেকেই প্রমাণিত এবং বহু সংখ্যক ফিকহবিদও সে মত জাহির করেছেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন