মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
আমাদের দেশে বর্তমানে ‘সুন্নাতী লেবাস’ বলে এক ধরনের বিশেষ কাটিং ও বিশেষ পরিমাণের লম্বা কোর্তা পরিধান করা হচ্ছে। প্রচার করা হচ্ছে যে, এই হচ্ছে সুন্নাতী পোষাক। আর এ সুন্নাতী পোষাক যে না পরবে সে ফাসিক বলে বিবেচিত হবে এবং এমন লোক যদি আলিম হয়, তাহলে তার পিছনে নামায পড়া জায়েয হবেনা। এ কারণে সমাজের এক বিশেষ শ্রেণীর লোক-আলিম ও পীরগণ এ ধরনের কোর্তা পরাকেই সুন্নাত মনে করেন, ‘সুন্নাতী পোশাক’ বলেই তারা এর প্রচারও করেন। শুধু নিজেরাই তা পরিধান করেননা, তাঁদের ছাত্র ও মুরীদানকেও অনুরূপ কাটিং ও লম্বা মাপের কল্লিদার কোর্তা পরিধান করতে বাধ্য করে থাকেন।
কিন্তু প্রশ্ন এই যে, সুন্নাতী পোশাক বলতে কি বোঝায়, কোনো বিশেষ কাটিং বা বিশেষ লম্বা মাপের জামা পরা কি সত্যিই সুন্নাত? সে সুন্নাত কোন দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণিত হলো? কুরআন থেকে? হাদীস থেকে? কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমরা বিষয়টিকে বুঝতে চেষ্টা করবো।
পোশাক কি রকম হতে হবে সে সম্পর্কে কুরআন মজীদে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়াত হলো এই।
-হে আদম সন্তান! নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের জন্য এমন পোশাক(পরিধানের বিধান)নাযিল করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখবে এবং যা হবে ভূষণ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা-ই কল্যাণময়। এ হচ্ছে আল্লাহর আয়াতসমূহের অন্যতম; এবং বলা হচ্ছে এই আশায় যে, তারা নসীহত কবুল করবে।(আল আরাফঃ২৬)
এ আয়াত থেকে কয়েকটি মৌলিক কথা জানতে পারা যায়। প্রথম এই যে, পোশাক মানুষের জন্য আল্লাহ তা‘আলার এক বিশেষ দান। অতএব পোশাক সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সে পোশাক কি রকমের হতে হবে; সে বিষয়ে এ আয়াত থেকে দু’টো কথা জানতে পারা যায়।
একটি হলো, পোশাক এমন হতে হবে যা অবশ্যই মানুষের লজ্জাস্থানকে আবৃত করে রাখবে। যে পোশাক মানুষের লজ্জাস্থানকে আবৃত করেনা, তা মানুষের পোশাক হতে পারেনা। আর দ্বিতীয় কথা হলো, সে পোশাককে ‘ভূষণ’ হতে হবে।( رِيش শব্দের মানে হলো উজ্জ্বল্য, চাকচিক্য, শোভাবর্ধক। আভিধানিকদের মতে رِيش শব্দের আসল অর্থ হলো পাখির পালক যা চাকচিক্যময় ও শোভাবর্ধক হয়ে থাকে। আর মানুষের পোশাকও যেহেতু পাখির পক্ষ ও পালকের মতোই, এ কারণে মানুষের পোশাক বাহ্যত কেমন হবে তা বোঝাতে رِيش শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।) পোশাক পরলে যেন দেখতে মানুষকে ভালো দেখায়, বদসুরত যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল করতে হবে। বস্তুত পোশাকই মানুষের সৌন্দর্য্ বৃদ্ধি করে, পোশাকের মাধ্যমে মানুষের সৌন্দর্য্ বোধ, ভদ্রতা, শালীনতা ও রুচি-সুস্থতা প্রমাণিত হয়। আর পোশাক যদি সে রকম না হয়, তা হলে আল্লাহর দেয়া এক সুন্দর ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করা হবে, হবে আল্লাহর নাশোকরী।(নতুন পোশাক পরে যে দো‘আটি পড়তে রাসূলে করীম(স) বলেছেন তা হলোঃ ‘প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাকে এমন পোশাক পরিয়েছেন, যা দ্বারা আমি লজ্জাস্থান আবৃত করি এবং আমার জীবনে শোভা ও সৌন্দর্য্ লাভ করি।’ এ দো‘আতে ও সেই ছতার ঢাকা এবং প্রশংসা লাভের লক্ষ্যের কথাই বলা হয়েছে, পোশাক পড়ার মূলে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নাই। এ ঠিক কুরআনের আয়াতেরই ব্যাখ্যা যেন।)
এর সঙ্গে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, ভূষণ ও শোভার ব্যাপারে মানুষের রুচি পরিবর্তনশীল এবং স্থান, কাল ও মানসিক অবস্থার দৃষ্টিতে রুচির ক্ষেত্রে অনেক পার্থক্য ও পরিবর্তন সূচিত হতে পারে। অতএব কুরআনের মতে পোশাকের ধরণ ও কাটিং পরিবর্তনশীল। কোনো ধরাবাঁধা কাটিং এর পোশাক ইসলামী পোশাক বলে অভিহিত হতে পারেনা।
এ আয়াতের তৃতীয় কথা হলোঃ তাকওয়ার লেবাস। তাকওয়ার লেবাস কাকে বলে এ বিষয়ে বিভিন্ন মত দেখা যায়। কাতাদাহ বলেছেন, ‘লেবাসুত-তাকওয়া’ বলে এখানে ঈমান বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ পূর্বোক্ত দুটি পরিচয়সহ পোশাক পরতে হবে, কিন্তু এ ব্যাপারে সর্বাধিক কল্যাণময় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ঈমানকে তাজা রাখা, সঠিকরূপে বহাল রাখা। হাসান বসরী এর মানে বলেছেনঃ লজ্জা, লজ্জাশীলতা, শালীনতা। কেননা, এই লজ্জাশীলতা ও শালীনতাই মানুষকে তাকওয়া অবলম্বন করতে উদ্বুদ্ধ করে। ইবনে আব্বাস(রা) বলেছেন- তা হলো, নেক আমল। ওসমান ইবনে আফফান(রা) বলেছেন, তা হলো নৈতিক পবিত্রতা।
আর আয়াতের মানে হলোঃ তাকওয়ার পোশাক ভালো-কল্যাণময়, যদি তা গ্রহণ করা হয় আল্লাহর সৃষ্ট পোশাক ও সৌন্দর্য্ ব্যবস্থা থেকে।
মোটকথা, পোশাককে প্রথমে লজ্জাস্থান আবরণকারী হতে হবে। এজন্যে নারী ও পুরুষের পোশাকে মৌলিকভাবে পার্থক্য হতে বাধ্য এ কারণে যে, পুরুষের লজ্জাস্থান এবং নারীদেহের লজ্জাস্থানের পরিধির দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। আর দ্বিতীয় হচ্ছে, তা অবশ্যই ভূষণ বা শোভাবর্ধক ও সৌন্দর্য্ প্রকাশক হতে হবে। যে পোশাক মানুষের আকার-আকৃতিকে কিম্ভূতকিমাকার বা বীভৎস করে দেয়, চেহারা বিকৃত করে দেয়, সে পোশাক কুরআন সমর্থিত পোশাক নয়, কোনো মুসলমানের পক্ষেই তা ব্যবহারযোগ্য হতে পারেনা।
এই পর্যায়ে কুরআন মজীদ থেকে দ্বিতীয় যে আয়াতটি উদ্ধৃত করা যায় তা হলো এইঃ
-বলো হে নবী! আল্লাহর সৌন্দর্য্- যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য বের করেছেন- তা কে হারাম করে দিলো? (আল আরাফঃ৩২)
‘আল্লাহর সৌন্দর্য্’ মানে মানুষের জন্য আল্লাহর সৃষ্টি করে দেয়া সৌন্দর্যের সামগ্রী, আর তা হলো্ পোশাক ও অন্যান্য সৌন্দর্যের উপাদান, সৌন্দর্য্ বৃদ্ধিকারী জিনিসপত্র। অর্থাৎ পোশাক ও সৌন্দর্য্ বৃদ্ধিকারী দ্রব্যাদি তো আল্লাহরই সৃষ্টি এবং তিনি তা সৃষ্টি করেছেন তাঁর বান্দাদের জন্য। তিনি তা ভোগ ব্যবহার করার জন্যই বানিয়েছেন, মূলগতভাবেই তা সকলের জন্য জায়েয। এ জায়েয জিনিসকে কে হারাম করে দিতে পারে? আল্লাহর সৃষ্টি জিনিসকে হারাম করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। আর তিনিই একে হালাল করে দিয়েছেন-শুধু একে হালাল-ই করে দেননি, তা গ্রহণ ও ব্যবহার করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি এই বলেঃ
(আরবি)
-তোমাদের সৌন্দর্য্ বৃদ্ধিকারী জিনিস- পোশাক- তোমরা তা গ্রহণ করো প্রতি নামাযের সময়।
এ আয়াতেও সেই পোশাক গ্রহণের কথাই বলা হয়েছে যা হবে জিনাত, শোভামন্ডিত, সৌন্দর্য্ বৃদ্ধিকারী। অতএব পোশাক গ্রহণের ব্যাপারে কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী মূলগতভাবে তিনটি জিনিসের দিকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবেঃ প্রথমত লজ্জাস্থান আবরণকারী, দ্বিতীয় ভূষণ, শোভাবর্ধনকারী এবং তৃতীয় সে পোশাক শালীনতাপূর্ণ হতে হবে, লজ্জাশীলতার অনুভূতির প্রতীক হতে হবে, নির্লজ্জতাব্যঞ্জক হবে না তা।
কুরআন মজীদে পোশাক সম্পর্কে যে হেদায়াত পাওয়া যায়, তা এই। এছাড়া কুরআন থেকে পোশাক পর্যায়ে আর কিছু জানা যায়না। কুরআন থেকে যা জানা গেল, তাতে কিন্তু পোশাকের কাটিং, ধরন, আকার ও পরিমাণ দৈর্ঘ্য প্রস্থ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি।
অতঃপর দেখতে হবে, এ বিষয়ে হাদীস থেকে কি জানা যায়। সর্বপ্রথম বুখারী শরীফের ‘কিতাবুল লিবাস’ এ উদ্ধৃত হাদীস লক্ষ্যণীয়। নবী করীম(স) বলেছেনঃ (আরবি)
-তোমরা খাও, পান করো, পোশাক পরো এবং দান-খয়রাত করো। (আর এসব কাজ করবে দুটো শর্তে) না বেহুদা খরচ করবে, না অহংকারের দরুণ করবে।
খাওয়া, পান করা, পোশাক পর এবং দান খয়রাত করা সম্পর্কে রাসূলে করীমের এ নির্দেশ। এ কাজ অবাধ ও উন্মুক্ত-কেবলমাত্র দুটো শর্তের অধীন। একটি হলো, এর কোনোটিই বেহুদা বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘনকারী হবেনা। আর দ্বিতীয় হচ্ছে অহংকারের বশবর্তী হয়ে একাজগুলো করবেনা। বাঞ্চনীয় নয় এমন এমন পরিমাণ অতিরিক্ত ব্যয় করাই হলো ‘ইসরাফ’। আর অহংকার করা, খুব বেশী দামী পোশাক এবং বাহদুরী ও বড়মানুষী প্রকাশ হয় যে পোশাকে তা নিষিদ্ধ। আর পোশাক পর্যায়ে আমাদের জন্য হেদায়াত এই যে, প্রথম বেহুদা খরচ হয় যে পোশাকে, যে ধরনের যে পরিমাপের পোশাক, তা পরিধান করা সুন্নাতের খেলাফ। পোশাককে অবশ্যই এ থেকে মুক্ত হতে হবে। আর দ্বিতীয়ত গৌরব অহংকারবশত কোনো পোশাক পরা এবং যে ধরনের, যে আকারের ও যে পরিমাপের পোশাক পরলে গৌরব-অহংকার, বড় মানুষী ও বাহাদুরী প্রকাশ পায়, যা মানুষকে সাধারণ মানুষ থেকে স্বতন্ত্র ও বিশিষ্ট করে দেয়, তা পরা যাবেনা। তা পরলে হবে সুন্নাতের বিপরীত কাজ। অতএব ব্যয় বাহুল্য ও অহংকার বিবর্জিত যে কোনো আকারের, প্রকারের ধরনের, কাটিং এর এবং পরিমাপের পোশাকই সুন্নাত অনুমোদিত পোশাক। সুন্নাতী লেবাস তাই, যা হবে এরূপ। হযরত ইবনে আব্বাস(রা) বলেছেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ এ দুটো বিকার থেকে মুক্ত যে কোনো পোশাকই হাদীস মোতাবিক পোশাক এবং তা পরা সম্পূর্ণ জায়েয। আকার, ধরন, কাটিং ও লম্বা খাটোর ব্যাপারে হাদীস কোনো বিশেষ নির্দেশ দেয়নি, আরোপ করেনি কোনো বাধ্যবাধকতা।
বুখারী শরীফেই এরপর যে হাদীসটি উদ্ধৃত হয়েছে, তা হলো এইঃ
(আরবি)
-নবী করীম(স) বলেছেনঃ আল্লাহ এমন কোনো ব্যক্তির দিকে রহমতের দৃষ্টি দিবেননা, সে আল্লাহর রহমত থেকে হবে বঞ্চিত।
মনে রাখতে হবে, এ হাদীস থেকে জামা কাপড়ের আকার, কাটিং বা দৈর্ঘ্য সম্পর্কে কোনো হেদায়াত পাওয়া যাচ্ছেনা। শুধু মানসিক ব্যাপারেই নির্দেশ করা হয়েছে। কাপড় পরার বাহ্যিক ধরণ কি হবে, কি না হবে তা-ই বলা হয়েছে। আর অহংকারের ভাব নিয়ে যাই করা হবে, যেভাবেই অহংকার প্রকাশ পাবে, তা-ই নিষিদ্ধ হবে।
অতঃপর বুখারী শরীফের সব কয়টি হাদীসই আপনি পড়ে যান, কোনো একটি হাদীসেও পোশাক সম্পর্কে বিশেষ কোনো কাটিং বা পরিমাপ গ্রহণের নির্দেশ পাবেননা। তবে হাদীস থেকে এ কথা জানা যায় যে, নবী করীমের কোর্তার আস্তিন বা হাত ছিল খুবই সংকীর্ণ। তা থেকে এখানকার চুরিদার আস্তিনের জামা পরা জায়েয প্রমাণিত হয়। নবী করীম(স) যে কামীস পরতেন তা কতখানি লম্বা ছিল? একটি হাদীস থেকে স্পষ্ট জানা যায় যে, তা খুব লম্বা ছিলনা। হাদীসটির ভাষা এইঃ (আরবি)
-নবী করীমের কামীস সাধারণত সূতীর কাপড় দিয়ে তৈরী হতো এবং তার ঝুল খুব কম হতো ও আস্তিন চুরিদার হতো।
এ থেকে অকাট্যভাবে জানা গেল যে, যারা বলে বেড়ায় যে, নবী করীম(স) অর্ধেক নলা পর্য্ন্ত ঝুল কোর্তা পরেছেন, তারা বানানো মিথ্যা কথা বলেছেন। সত্য কথা হলো তিনি লুংগী পরলে খাটো কোর্তা পরিধান করতেন।
তিরমিযী শরীফে পোশাক পর্যায়ে যে হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে, তার মধ্যে ও প্রথম হাদীস হলো এইঃ
(আরবি)
-নবী করীম(স)বলেছেনঃ আমার উম্মতের পুরুষ লোকদের জন্য রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ হারাম করা হয়েছে, আর মেয়েদের জন্য হালাল করা হয়েছে।
অর্থাৎ পুরুষদের জন্য রেশমী পোশাক হারাম।
এছাড়া মুসনাদে আহমদ এর একটি হাদীস থেকে পরিধেয় বস্ত্রের ঝুল কতখানি হওয়া উচিত সে বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট ধারণা মেলে। হযরত আবু হুরায়রা(রা) বর্ণনা করেনঃ (আরবি)
-ঈমানদার লোকদের ইজার পায়ের দুই নলার মাঝ বরাবর ঝুলতে পারে। এর নীচে যেতে পারে পায়ের গিরা ওপর পর্য্ন্ত। এর নীচে গেলে তা হবে জাহান্নামে যাওয়ার কাজ।
হাদীসে ইজার শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর মানে পরিধেয় বস্ত্র, যা কোমরের নীচের দিক ঢাকার জন্য ব্যবহৃত হয়। তা লুঙ্গি হতে পারে, পাজামা হতে পারে, হতে পারে আজকালকার পোশাক প্যান্ট বা অন্য কিছু। এগুলো ঝুল হাঁটু হতে গিরা পর্য্ন্তকার মাঝ বরাবর ‘নিসফে সাক’ পর্য্ন্ত হতে পারে। ‘নিসফে সাক’ এর নীচে পায়ের গীরা পর্য্ন্ত ও ঝুলতে পারে; কিন্তু এর নীচে গেলে তা জায়েয হতে পারেনা।
নবী করীম(স) এর এ পর্যায়ের হাদীসসমূহকে ভিত্তি করে হযরত ইবনে উমর(রা) বলেনঃ (আরবি)
-রাসূলে করীম(স) ইজারকে পায়ের গীরার নীচে ঝুলবার ব্যাপারে যে আযাবের কথা বলেছেন, তা-ই তিনি বলেছেন কামীস এর ব্যাপারেও।
‘কামীস’ হলো গাত্রাবরণ, শরীরের ঊর্ধ্বভাগ ঢাকার জন্য যাই পরিধান করা হয়, তাই কামীস তার কাটিং বা ধরন যাই হোকনা কেন। তা এখনকার পাঞ্জাবী, শার্ট, কোর্ট বা কল্লিদার জামা-যে কোনোটাই হতে পারে। তার কাটিং কি হবে, সে বিষয়ে হাদীস কিছুই বলছেনা। বলছে শুধু এ কথা যে, তা যেনো এতদূর লম্বা না হয় যে, তদ্দারা পায়ের গিরাও ঢেকে যায়। হযরত ইবনে উমরের কথা থেকে স্পষ্ট জানা গেল যে, পায়ের গিরার নিচে ইজার বা কামীস যাই ঝুলবে, তাই হারাম হবে। মনে রাখতে হবে যে, তদানীন্তন আরব সমাজে সাধারণত একখানা কাপড় দিয়ে শরীরের ওপরভাগ হতে হাটুর নীচের ভাগ পর্য্ন্ত ঢেকে ফেলত। এমনকি বর্তমানেও আরবদের পোশাক এরকমই। নীচে ছোটো-খাটো একটা পরে, আর তার ওপর দিয়ে পায়ের গিরা পর্য্ন্ত লম্বা একটা জামা পরে-এই হলো এখনকার আরবদের সাধারণ পোশাক। এর কোনোটিকেই যে নীচের দিকে ঝুলিয়ে দিয়ে পায়ের গিরা ঢেকে ফেলা যাবেনা তাই বলা হচ্ছে এইসব হাদীসে। বস্তুত ‘নিসফে সাক’ বলতে কোনো কিছুর উল্লেখ বা থাকলে তা হলো এই।
কিন্তু একটা লুঙ্গি বা পাজামা পরা সত্ত্বেও ‘নিসফে সাক’-নলার মাঝ বরাবর পর্য্ন্ত একটি কোর্তাও ওপর থেকে ঝুলে পড়তে হবে এবং এরূপ কোর্তা পরা সুন্নাত হবে-একথা কোথ্থেকে জানা গেল? কুরআন থেকে নয়, হাদীস থেকেও নয়। আর কুরআনও হাদীস থেকে যা প্রমাণিত নয়, তা ফিকাহর কিতাব থেকেও প্রমাণিত হতে পারেনা। বর্তমান আরবদের রেওয়াজ থেকেও তা প্রমাণিত নয়। অতএব বর্তমানে এক শ্রেণীর আলিম ও পীর সাহেবানদের ‘সুন্নাতি লেবাস’ বলে চালিয়ে দেয়া ‘নলার অর্ধেক পর্য্ন্ত’ লম্বা কল্লিদার কোর্তা শরীয়তের মূল দলীল থেকে প্রমাণিত জিনিস নয়। এ হলো সম্পূর্ণ মনগড়া এক জিনিস। আর শরীয়তের সুন্নাত রূপে প্রমাণিত নয়- এমন একটি পোশাককে ‘সুন্নাতি লেবাস’ বলে চালিয়ে দেয়া এক অতি বড় বিদয়াত(এ দেশের এক শ্রেণীর আলিম ও পীর সাহেবান যে পাজামা বা লুঙ্গির ওপর কল্লিদার নিসফে সাফ কোর্তা পরেন, তাকে ‘সুন্নাতী লেবাস’ বলা একটা মনগড়া কথা। এ পোশাককে বড়জোর এতদ্দেশীয় পরহেযগার আলিম ও পীর সাহেবানদের পছন্দনীয় পোশাক-লিবালুস ওলামা-বলা যেতে পারে মাত্র)। তা বিদয়াত এজন্যেও যে, তাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ হয়। আর বেহুদা খরচ থেকে দূরে থাকা পোশাকের ব্যাপারে প্রথম শর্ত। বর্তমানে এই বিদয়াত চালু হয়ে রয়েছে সমাজের একশ্রেণীর জনগণের মাঝে। তারা মনে করছে ‘সুন্নাতী পোশাক পরছি আমরা; রাসূলের পায়বরী করছি আমরা, সে কথা এই লোকদের খেয়ালেই আসেনা। বস্তুত এ চরম অন্ধত্ব ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমার এ দলীলভিত্তিক আলোচনায় এ পোশাকের প্রতি কোনো বিদ্বেষ প্রচার করা হয়নি, তা পরতে নিষেধও করা হয়নি। আমার বক্তব্য শুধু এতটুকু যে, শুধুমাত্র এ ধরনের পোশাককেই ‘সুন্নাতী পোশাক’ বলাটাই বিদয়াত। এ পোশাক শুধু পরাকে আমি বিদয়াত বলিনি- বিদয়াত বলতেও চাইনা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/289/48
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।