মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
মুসলমান সমাজে বহু দিন থেকেই মিলাদ পাঠ ও মিলাদের মজলিস অনুষ্ঠানের রেওয়াজ চলে আসছে।সাধারণভাবে মুসলমানরা একে বড় সওয়াবের কাজ বলে মনে করে এবং খুব আন্তরিকতা সহকারে তা পালন করে। কিন্তু কোনো এক সময় মুহুর্তের জন্যও বোধ হয় মুসলমানরা- মুসলিম সমাজের শিক্ষিত সচেতন জনতা-ভেবে দেখতেও রাজি হয়না যে, এ কাজ ইসলামী শরীয়ত মোতাবিক কিনা, সেই সুন্নাত মোতাবিক কিনা, যা মুসলমানেরা লাভ করেছে হযরত মুহাম্মদ(স) এর নিকট থেকে তাঁর প্রতি ঈমান আনার কারণে। এমন কি এ দেশের আলিম সমাজেও সমাজের এ আবহমান কাল হতে চলে আসা রেওয়াজের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। কখনো তাকিয়ে দেখেনা-আমরা সুন্নাত মোতাবিক কাজ করছি, না বিদয়াত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে খানিকটা বিস্তারিত আলোচনা করা এ গ্রন্থে বিশেষ প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে।
এ কথা সবাই জানেন ও স্বীকার করেন যে, প্রচলিত মিলাদের কোনো রেওয়াজ রাসূলে করীম(স) এর জীবনে ছিলনা, ছিল না সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ীন ও পরবর্তীকালের মুজাহিদদের সময়ে। এ মিলাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হলো এই যে, নবী করীম(স) এর প্রায় দুইশ বছর পরে এমন এক বাদশা এর প্রচলন করে, যাকে ইতিহাসে একজন ফাসিক ব্যক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জামে আজহারের শিক্ষক ডঃ আহমাদ শারবাকী লিখেছেন-চতূর্থ হিজরীতে ফাহিমীয় শাসকরা মিসরে এর প্রচলন করেন। একথাও বলা হয় যে, শায়খ উমর ইবনে মুহাম্মদ নামক এক ব্যক্তি ইরাকের মুসল শহরে এর প্রচলন করেছেন। পরে আল মুজাফফর আবু সাঈদ বাদশাহ ইরাকের এরকেল শহরে মীলাদ চালু করেন। ইবনে দাহইয়া এ বিষয়ে একখানা কিতাব লিখে তাকে দেন। বাদশাহ তাকে এক হাজার দীনার পুরস্কার দেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, বর্তমানে মিলাদ সুন্নাতের ব্যবস্থা নয়, সুন্নাত মোতাবিক ব্যবস্থাও এটি নয়। বরং তা সুস্পষ্টরূপে বিদয়াত।
এর বিদয়াত হওয়ার সবচেয়ে সুস্পষ্ট ও অকাট্য দলীল হচ্ছে এই যে, এই কাজ রাসূলে করীম(স) এর জমানায় ছিলনা, রাসূলের পরে খুলাফায়ে রাশেদুন তথা সাহাবায়ে কিরামের যুগেও তা একটি সওয়াবের কাজরূপে চালু হয়নি। এমন কি তার পরবর্তী যুগেও তাবেয়ী মুজতাহিদদের সময়েও এর প্রচলন হতে দেখা যায়নি। আর এ ইসলামী যুগে যে কাজ একটি ইবাদত বা সওয়াবের কাজ হিসেবে প্রচলিত হয়নি, পরবর্তীকালের কোনো লোকের পক্ষে তেমন কোনো কাজকে সওয়াবের কাজরূপে চালু করা সম্ভব হতে পারেনা, সে অধিকারও কাউকে দেয়া হয়নি।
একে তো ইসলামের জায়েয নাজায়েয, সওয়াব-গুনাহ এবং আল্লাহ রাসূলের সন্তোষ অসন্তোষের বিধি ব্যবস্থা কেবলমাত্র কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতেই প্রমাণিত হবে। কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে প্রমাণিত নয় অথচ তাকে বড় সওয়াবের কাজ বলে মনে করা হবে, তার কোনো অবকাশই ইসলামে নেই। প্রকৃতপক্ষে এরূপ কাজই বিদয়াত। আর যে কাজ মূলতই বিদয়াত, সে কাজ কোনোরূপ সওয়াব হওয়ার আশা করাই বাতুলতা মাত্র। রাসূলে করী(স) কয়যুগের কল্যাণময়তার সাক্ষ্য দিয়েছেন নিজে এই বলেঃ (আরবি)
-অতীব কল্যাণময় ইসলামী যুগ হলো আমার এই যুগ, তারপর পরবর্তীকালের লোকদের যুগ এবং তারপরে তৎপরবতীকালের লোকদের যুগ।
এ তিনটি যুগের কোনো এক যুগেই অর্থাৎ রাসূলের নিজের সাহাবীদের এবং তাবেয়ীদের যুগে মিলাদের এ অনুষ্ঠানের রেওয়াজ মুসলিম সমাজে চালু হয়নি, হয়েছে তারও বহু পরে। কাজেই এ কাজে কোনো প্রকৃত কল্যাণ আছে বলে মনে করাই একটি বড় বিদয়াত। বিশেষত কয়েকটি বিশেষ কারণে মিলাদের এ অনুষ্ঠান মুসলমানদের আকীদা ও দ্বীনের দিক দিয়ে খুবই মারাত্মক হয়ে উঠে। কারণ কয়টি সংক্ষেপে এইঃ
(ক) এ অনুষ্ঠানে নবী করীম (স) এর জন্ম বৃত্তান্ত যেভাবে আলোচিত হয় বা (আরবি) উর্দূ বা বাংলা উচ্চারণে পঠিত হয়, তা মূলতই ঘৃণার্হ। অথচ ঠিক এই সময়েই নবী করীম(স) মজলিসে স্বশরীরে উপস্থিত হন বলে লোকদের আকীদা রয়েছে। কিন্তু সব বিশেষজ্ঞদের মতেই এ ধরনের আকীদা সুস্পষ্ট কুফরী। কুরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণায় এবং ফিকাহর দৃঢ় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এরূপ আকীদার হারাম হওয়ার কথা প্রমাণিত হয়েছে।
নবী করীম(স) দুনিয়া থেকে চিরতরে বিদায় গ্রহণ করে চলে গেছেন। তাঁর পক্ষে দুনিয়ায় ফিরে আসার আকীদা পোষণ করা শিরক। এ কাজ কেবল আল্লাহর পক্ষেই সম্ভব। আল আল্লাহর কুদরতের কাজ কোনো বান্দার জন্য ধারণা করা পরিষ্কার শিরক। এ পর্যায়ে ফতোয়ায়ে বাজ্জাজিয়ার কথা আবার উল্লেখ করা যেতে পারে।
তাতে লেখা হয়েছেঃ (আরবি)
-হানাফী মাযহাবে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, নবী করীম (স) গায়েবের ইলম জানেন- এরূপ আকীদা যে রাখবে, সে কাফির হয়ে যাবে। কেননা এরূপ আকীদা আল্লাহর ঘোষণার সম্পূর্ণ বিপরীত। আল্লাহ ইরশাদ করেছেনঃ
যদি কেউ বিবাহের অনুষ্ঠানে বলে যে, আমার এ বিবাহের সাক্ষী হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহ ও রাসূল, তবে সে কাফির হয়ে যাবে বলে ফিকহর কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা সেতো রাসূল(স) কে আলীমুল গায়েব বলে বিশ্বাস করলো।
(খ) মিলাদ মাহফিল শিরনি মিঠাই বন্টনকে একান্ত জরুরী মনে করা হয়। আর মিলাদ মাহফিল এর অনুষ্ঠানকে ওয়াজিব এর পর্যায়ে গণ্য করা হয়। এভাবে কোনো নাজায়েয কাজকে ওয়াজিব বা জরুরী মনে করা হলে তা মাকরূহ হয়ে যাবে। ফিকহর কিতাবে বলা হয়েছেঃ যে মুবাহ কাজই ওয়াজিব গণ্য হবে, তা মাকরূহ হবে(আর মাকরূহ মানে মাকরূহ তাহরীম)।
(গ) নির্দিষ্ট দিন ও তারিখে মিলাদ করাকে জরুরী মনে করা হয়। অথচ শরীয়তে যখন কোনো তারিখকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি এ কাজের জন্য, তখন এরূপ করাতো শরীয়তের বিধানের ওপর নিজেদের থেকে বৃদ্ধি করার শামিল।
হাদীসে স্পষ্ট বলা হয়েছেঃ (আরবি)
-রাত্রিসমূহের মধ্যে কেবল জুম‘আর রাত্রিকেই তাহাজ্জুদের নামাযের জন্য এবং দিনসমূহের মধ্যে কেবল শুক্রবারের দিনটিকেই নফল রোযার জন্য বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করে নিওনা।
অতএব নফল রোযার জন্যই যখন কোনো রাত বা দিন নিজেদের থেকে নির্দিষ্ট করে নিতে রাসূলে করীম(স) সুস্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেছেন, তখন মিলাদের জন্যই বা নিজেদের থেকে এ নির্ধারণ কেমন করে জায়েয হতে পারে!
(ঘ) মিলাদ মজলিসের সাজ সজ্জার জন্য খুব আলো বাতির ব্যবস্থা করা হয়, মোমবাতি আর আগরবাতির ধুম পড়ে যায়। এসব নিতান্তই বেহুদা কাজ। আর একাজে যে পয়সা খরচ করা হয়, তাও বেহুদা খরচ। এ কাজ নিষিদ্ধ, এর ওপরই আরোপিত হয় আল্লাহর ঘোষণাঃ
-বেহুদা অর্থ খরচ করোনা। কেননা বেহুদা খরচকারী শয়তানের ভাই।
এসব করা হয় যে অনুষ্ঠানে, যাতে করে আল্লাহর কালামের স্পষ্ট বিরোধিতা করা হয়, তা করে সওয়াব হতে পারে বলে মনে কার কি নিতান্ত আহাম্মকী নয়?
মওলানা রশীদ আহমদ গংগুহী মিলাদ সংক্রান্ত এক সওয়ালে জবাবে লিখেছেনঃ প্রচলিত ধরনের মিলাদ অনুষ্ঠান বিদয়াত ও মাকরূহ।
এ জবাবকে সমকালীন বহু গণ্যমান্য আলিম ‘সহীহ’ বলে সমর্থন করেছেন এবং ফতোয়ার দস্তখতও দিয়েছেন। মওলানা গংগুহী অন্যত্র লিখেছেনঃ শরীয়তে যা বিনা শর্তে রয়েছে, তাকে শর্তাধীন করা এবং যা শর্তাধীন রয়েছে তাকে শর্তমুক্ত করাই হলো বিদয়াত। যেমন মিলাদের মজলিস অনুষ্ঠান করা। আসলে আল্লাহর যিকির কিংবা রাসূলের জীবন চরিত বর্ণনা ও আলোচনা করা শরীয়তে মুস্তাহাব ও জায়েয। কিন্তু ঠিক সেই উদ্দেশ্যেই কোনো মজলিস অনুষ্ঠান করা বিদয়াত ও হারাম। আল্লাহ ও রাসূলের কথা বলা তো মুস্তাহাব; কিন্তু বিশেষভাবে মিলাদের আলোচনার শর্ত করা বিদয়াত।
ইমাম আল্লামা ইবনুল হাজ্জ লিখেছেনঃ
তারা যে সব বিদয়াত রচনা করে নিয়েছে, তন্মধ্যে একটি তাদের এই আকীদা যে, তারা এ পর্যায়ে যা কিছু করছে তাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ইবাদত এবং আল্লাহর নির্দেশাবলীর বহিঃপ্রকাশ। আর তা হচ্ছে এই যে, রবিউল আউয়াল মাসে তারা মিলাদের অনুষ্ঠান করে, যাতে কয়েক প্রকারের বিদয়াতের অনুষ্ঠান করে, হারাম কাজ করে। এমন কি, এতদূর বলেছেন যে, এসব মিলাদেরই কারণে সৃষ্ট বিপর্য্য়। তাতে কোনোরূপ সুর গান হোক আর মিলাদের নিয়্যত করা হয়, লোকদের সেজন্য দাওয়াত দেয়া হয়, উপরোল্লিখিত কোনো দোষের কাজ যদি তাতে নাও থাকে তবু শুধু এ কাজের নিয়্যত করার কারণেও তা বিদয়াতই হবে। কেননা মূলতই এ জিনিস দ্বীন ইসলামে অতিরিক্ত বৃদ্ধি। অতীতকালের নেক ও দ্বীনদার লোকদের আমল এরূপ ছিলনা অথচ তাদের অনুসরণ করাই উত্তম। তারা কেউ মিলাদের নিয়্যত করেছেন বলে কোনোই উল্লেখ নেই? আমরাতো তাঁদেরই অনুসরণ করি। কাজেই তাঁদের কাজের যতদূর সুযোগ-সুবিধ ও ক্ষেত্র বিশালতা ছিল, আমাদেরও তো ঠিক ততোদূরই থাকবে।
মওলানা আবদূর রহমান আল মাগরিবী আল হানাফী(রহ) তাঁর ফতোয়ায় লিখেছেনঃ মিলাদ অনুষ্ঠান করা বিদয়াত। নবী করীম(স) খুলাফায়ে রাশেদীন এবং ইমামগণ তা করেনওনি, করতে বলেনওনি। ‘শরীয়াতুল ইলাহিয়া গ্রণ্থেও এমনিই লেখা হয়েছে।
মাওলানা নাসিরুদ্দীন আল আওদী শাফেয়ী এক প্রশ্নের জবাবে এ সম্পর্কে লিখেছেনঃ
মিলাদ পাঠের অনুষ্ঠান করা যাবেনা। কেনা সলফে সালেহীন কেউই এ কাজ করেছেন বলে বর্ণিত হয়নি। বরং তিন যুগ(তাবেয়ী পরবর্তী যুগ)পরে এক খারাপ জমানার লোকেরা এ কাজ নতুন করে উদ্ভাবন করেছে। যে কাজ সলফে সালেহীন করেননি, তাই আমরা পরবর্তী লোকদের অনুসরণ করতে পারিনা। কেননা সলফে সালেহীন এর অনুসরণই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এ বিদয়াতী কাজ করার প্রয়োজন কোথায়?
হাম্বলী মাযহাবের শায়খ শরফুদ্দীন(রহ) বলেছেনঃ দেশের এই শাসকমন্ডলী প্রতি বছর নবী করীম(স) এর মিলাদের যে উৎসব অনুষ্ঠান করে, তাকে খুব খারাপ ধরনের বাড়াবাড়ি ছাড়াও তা মূলতই একটা বিদয়াতী কাজ। নফসের খায়েশের অনুসরণ করে তারাই এ কাজ নতুন করে উদ্ভাবন করেছে। তারা জানেনা নবী করীম(স) কি করতে আদেশ করেছেন, আর কি করতে নিষেধ করেছেন। অথচ তিনিই শরীয়তের বাহক ও প্রবর্তক।
কাযী শিহাবুদ্দীন(রহ) এক প্রশ্নের জবাবে লিখেছেনঃ
না, তা করা যাবেনা। কেননা তা বিদয়াত। আর সব বিদয়াতই সুস্পষ্ট গোমরাহী। সব গোমরাহীরই পরিণাম জাহান্নাম। জাহিল লোকেরা রবিউল আউয়াল মাসে প্রত্যেক বছরের শুরুতে যা কিছু করে, তা শরীয়তের কোনো জিনিসই নয়। আর নবী করীমের জন্মের কথা উল্লেখ করার সময় তারা যে দাঁড়ায়, মনে করে নবী করীমের রূহ তাশরীফ এনেছে এবং উপস্থিত আছে, এ এক বাতিল ধারণা মাত্র। এ আকীদা পরিষ্কার শিরক। ইমামগণ এ ধরনের কাজ করতে নিষেধ করছেন।
শামী চরিত গ্রন্থ প্রণেতা লিখেছেনঃ রাসূল(স) এর প্রেমিকদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে যে, তারা যখন নবী করীম(স) এর জন্ম বৃত্তান্ত শুনতে পায় তখন তারা তাঁর তাজীমের জন্য দাঁড়িয়ে যায়। অথচ এই দাঁড়ানো বিদয়াত, এর কোনো ভিত্তি নেই।
মওলানা ফজলুল্লাহ জৌনপুরী বলেনঃ নবী করীমের ভূমিষ্ট হওয়ার কাহিনী শুনবার সময় সাধারণ মানুষ যে কিয়াম করে, তার কোনো দলীল নেই; বরং তা মাকরূহ।
কাযী নসিরউদ্দীন গুজরাটি লিখেছেনঃ কোনো কোনো জাহিল পীর এমন বহু বিদয়াত চালু করেছেন, যার সমর্থনে কোনো হাদীস বা কোনো নীতি কুরআন-সুন্নাতে পাওয়া যায়না। তার মধ্যে একটি হচ্ছে রাসূলে করীমের জন্ম বৃত্তান্ত বলার সময় দাঁড়ানো।
মুজাদ্দিদে আলফেসানী শায়খ আহমদ শরহিন্দী লিখেছেনঃ ইনসাফের দৃষ্টিতে বিচার করে দেখুন। মনে করুন নবী করীম(স) যদি এ সময়ে বর্তমান থাকতেন, দুনিয়ায় জীবিত থাকতেন আর এ ধরনের মজলিস অনুষ্ঠান হতে দেখতেন, তবে কি তিনি এতে রাজি হতেন, এ অনুষ্ঠান পছন্দ করতেন? এটাই নিশ্চিত যে, তিনি কিছুতেই এ কাজকে পছন্দ করতেননা। বরং এ কাজের প্রতিবাদই করতেন।
এসব মজলিস সম্পর্কে কুরআন মজীদের এ আয়াতটি বিশেষভাবে
প্রযোজ্যঃ –আল্লাহ তোমাদের প্রতি এই নির্দেশ জারি করেছেন, তোমরা যখন আল্লাহর আয়াতকে অমান্য করা হচ্ছে শুনতে পাও এবং তার ঠাট্টা বিদ্রুপ হতে দেখতে পাও, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবেন-যতক্ষণ না তারা অন্য কাজে মনোযোগী হয়ে পড়ে। অন্যথায় সে সময় তোমরাও তাদেরই মতো গুনাহগার হবে। (আন নিসাঃ140)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতবী ও মুহীউস সুন্নাহ ইমাম বগভী লিখেছেনঃ যহহাক হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বলেছেন যে, এ আয়াতের আওতায় পড়ে গেছে দ্বীন ইসলামের নতুন উদ্ভাবিত সব কাজ এবং কিয়ামত পর্য্ন্ত যা কিছু বিদয়াত রচনা করা হবে তা সবই।
–নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিক ও কাফির সকলকেই জাহান্নামে একত্রিত করবেন, বিদয়াতী ও কাফির উভয়ের জন্য অত্যন্ত কঠোর সতর্কবাণী।
এ পর্যায়ে আমার শেষ কথা হলো, নবী করীম(স) দুনিয়ার মুসলমানদের আদর্শ, সর্বাধিক প্রিয়, আল্লাহর হেদায়াত ও রহমত লাভের একমাত্র মাধ্যম। এ জন্যে রাসূলে করীমের জীবনী, তাঁর চরিত্র ও কর্মাদর্শই এ অন্ধকার দুনিয়ায় একমাত্র মুক্তির আলোকস্তম্ভ। তাই সব মানুষের জন্য বারে বারে তা আলোচনা করতে হবে, পড়তে হবে, জানতে হবে, অন্যদের সামনে বিস্তারিতভাবে তা তুলেও ধরতে হবে, বাস্তব জীবনের কদমে কদমে তাঁকেই অনুসরণ করে চলতে হবে, তাঁকেই মানতে হবে, ভালোবাসতে হবে, তারই কাছ থেকে চলার পথের সন্ধান ও নির্দেশ লাভ করতে হবে। এছাড়া মুসলমানের কোনোই উপায় নেই, থাকতে পারেনা। কুরআন হাদীসে রাসূল(স) সম্পর্কে যেসব বুনিয়াদী হেদায়াত দেয়া হয়েছে, তার সারকথা এ-ই। কিন্তু রাসূলে করীম(স) কে পূজা করা চলবেনা। তাঁর সম্পর্কে এমন ধারণা রাখা যাবেনা, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেবল আল্লাহর সম্পর্কেই রাখা যেতে পারে।
রাসূলে করীমের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা ঈমানদার ব্যক্তির ইসলামের পথে চলার সবচেয়ে বড় পাথেয়। সে ভালোবাসা নিশ্চয়ই এত মাত্রাতিরিক্ত হবেনা, যা কেবল আল্লাহর জন্যই হওয়া উচিত। রাসূল(স) কে সে মর্যাদা, সে গুরুত্ব এবং সে ভালোবাসাই দিতে হবে, যা দিতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন এবং রাসূল(স) যা করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন।
এ পর্যায়ে আল্লাহর সবচেয়ে বড় হেদায়াত হচ্ছে রাসূলে করীম(স) কে অনুসরণ করা।
-বলে দাও হে নবী! তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে তোমরা হে মুসলমানরা! আমার অনুসরণ করে চলো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তিনি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াবান।(আল ইমরানঃ ৩১)
এ আয়াতের মূল কথা হলো আল্লাহকে ভালোবাসলে নবীর অনুসরণ করতে হবে। নবীর অনুসরণ করলে আল্লাহর ভালোবাসা ও ক্ষমা লাভই হচ্ছে বান্দার সবচেয়ে বেশি-সবচেয়ে বড় কাম্য। আর তা পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে রাসূলে করীম(স) এর সার্বিক অনুসরণ।
রাসূল(স) এর প্রতি উম্মতের দ্বিতীয় কর্তব্য হচ্ছে দুরূদ পাঠ। কুরআন মজীদের আয়াতে বলা হয়েছেঃ (আরবি)
-নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দুরূদ পাঠান। হে মুমিন লোকেরা! তোমরাও নবীর প্রতি দুরূদ ও সালাম পাঠাও।
নবীর প্রতি দুরূদ পাঠানো একটি মহৎ কাজ, একটি অতি সওয়াবের কাজ। আল্লাহ নিজে যে নবীর প্রতি দুরূদ পাঠান, পাঠান ফেরেশতাগণ, সে নবীর প্রতি দুরূদ পাঠানো যে কত বড় মুবারক কাজ, কত বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে এ থেকে; তার ব্যাখ্যা করে শেষ করা সম্ভব নয়।
এছাড়া নবীর প্রতি উম্মতের আর কি করণীয় থাকতে পারে? নবীর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা এবং নবীর জননীর প্রসব বেদনাকালীন ঘটনাবলীর উল্লেখ যে সওয়াব হবে এ কথা কে বললো? কেমন করে তা জানা গেল? আর এই যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দল বেঁধে ‘ইয়া নবী সালাম আলাইকা’ ‘ইয়া হাবীব সালাম আলাইকা’ বলতে হবে আর এতে বড় সওয়াব হবে বলে মনে করা হচ্ছে, এ কথা তো কুরআন হাদীস থেকে প্রমাণিত নয়। অনেকের মতে এসব কাজ হিন্দুদের এক ধরনের পূজা অনুষ্ঠানের মতোই ব্যাপার। আর ইবাদত পর্যায়ের কোনো কাজেই অন্য ধর্মাবলম্বীর সাথে সাদৃশ্য হওয়া মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বর্জনীয়। কেননা নবী করীম(স) বলেছেনঃ (আরবি)
-যে লোক অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য রক্ষা করে চলবে, কিয়ামতের দিন সে তাদের মধ্যেই গণ্য হবে।
মিলাদ মাহফীলে নবী করীমের ‘রূহ’ হাযির হয়, এ কথা যদি তর্কের খাতিরেও মেনে নেয়া হয়, তবু প্রশ্ন এই যে, তখন সে কথা মনে করে মজলিসে সবাইকে দাঁড়াতে হবে কেন? রাসূলের জীবদ্দশায়ও কি সাহাবীগণ রাসূলের আগমনে তাজীমের জন্য দাঁড়াতেন এবং এ দাঁড়ানোয় রাসূলে করীম(স) খুশি হতেন কিংবা তিনি দাঁড়িয়ে কি তাঁর তাজীম করতে বলেছেন কোনোদিন? এ পর্যায়ে আমরা সহীহ হাদীসের সম্পূর্ণ বিপরীত জিনিস দেখতে পাই। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে যে, আনাস(রা) সাহাবীদের সম্পর্কে বলেনঃ (আরবি)
-সাহাবীদের নিকট রাসূলে করীম(স) সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা যখন রাসূলকে উপস্থিত দেখতে পেতেন, তাঁরা তাঁর জন্যে দাঁড়াতেননা। কেননা তাঁরা জানতেন যে, তাঁর তাজীমের উদ্দেশ্যে দাঁড়ানোকে তিনি অপছন্দ করেন।
আবু মাজলাজ বলেনঃ হযরত মুআবিয়া(রা) এমন একটি ঘরে প্রবেশ করলেন, যেখানে হযরত ইবনে আমের ও ইবনে যুবায়র উপস্থিত ছিলেন। মুআবিয়ার আগমনে ইবনে আমের দাঁড়ালেন কিন্তু ইবনে যুবায়র বসে থাকলেন। তখন মুআবিয়া(রা) তাঁকে বললেনঃ (আরবি)
-তুমি বসো। কেননা আমি রাসূলে করীমের(স) নিকট শুনেছি তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার সম্মানার্থে লোকেরা দাঁড়াক-এটা চায় এবং এতে খুশী হয়, সে যেন জাহান্নামে নিজের ঘর বানিয়ে নেয়।
নবী করীম(স) নিজে মোটেই পছন্দ করতেননা, চাইতেননা যে তাঁর তাজীমের জন্য লোকেরা উঠে দাঁড়াবে। তার প্রমাণ হযরত আবু ইমামের বর্ণনা। তিনি বলেনঃ (আরবি)
-নবী করীম(স) লাঠির ওপর ভর দিয়ে আমাদের সামনে আসলেন। তখন আমরা তার তাজীমের জন্য দাঁড়িয়ে গেলাম। নবী করীম(স) বললেনঃ অমুসলিম লোকেরা যেমন পরস্পরের তাজীমের জন্য দাঁড়ায়, তোমরা তেমনি করে দাঁড়াবেনা।
রাসূলে করীমের(স) এ কথাটিকে কেউ কেউ তাঁর স্বভাবজনিত বিনয় বলে অভিহিত করতে পারেন। বলতে পারেন, রাসূলে করীম(স) বিনয়বশত তাঁর তাজীমার্থে কাউকে দাঁড়াতে বলেননি বা দাঁড়ালেও নিষেধ করেছেন। তাই বলে আমরা কি দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতি সম্মান দেখাব না?
এরূপ কথার প্রকৃত তাৎপর্য্ যে কতো ভয়াবহতা এ লোকেরা বুঝতে পারেনা। তাঁর মানে এই হয়ে যে, তিনি নিষেধ করেছেন কৃত্রিমভাবে, আসলে দাঁড়ানটাকেই তিনি পছন্দ করতেন, দাঁড়ালে তিনি খুশি হতেন, তাতে সওয়াবও হয়। অথচ প্রশ্ন এই যে, যে যে কাজ করলে মুসলমানরা সওয়াবও পেতে পারে কিংবা তাদের তাজীমার্থে দাঁড়ালে যদি সওয়াবই হতো বা তা যদি নবীর প্রতি মুসলমানদের কর্তব্যই ছিল, তবে এভাবে নিষেধ করার কোনো কারণ থাকতে পারেনা। তিনি অকপটে তা বলতে পারতেন, যেমন বলেছেন তাঁর জন্য দুরূদ পড়তে, তাঁকে অনুসরণ করতে, এ ব্যাপারে কৃত্রিমতার কোনোই প্রয়োজন ছিলনা। আর নবীর পক্ষে কৃত্রিমতা করা সম্ভব বা কৃত্রিমতা করেছেন বলে মনে করা- দ্বীনের মূলের ওপরই কুঠারাঘাত। কোনো ঈমানদার লোকের পক্ষেই এরূপ ধারণা করা সম্ভবপর নয়।
মনে রাখা আবশ্যক- রাসূলে করীমের রূহ মিলাদে হাযির হয় মনে করে তাঁর তাজীমার্থে দাঁড়ানোর ব্যাপারটিই এখানে আমাদের আলোচ্য। নতুবা সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিদের আগমনে সাময়িকভাবে দাঁড়িয়ে তাঁকে প্রসন্নচিত্তে সংবর্ধনা জানানো এবং তাঁকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করার জন্য দাঁড়ানো এ থেকে ভিন্ন কথা। সহীহ হাদীসে উদ্ধৃত হয়েছে, হযরত সায়াদ ইবনে মুয়ায (রা) যখন তাঁর জন্তুযানে চড়ে আসছিলেন, তখন খোদ নবী করীম(স) আনসারদের নির্দেশ দিয়েছিলেনঃ তোমরা তোমাদের নেতার প্রতি সম্মানা প্রদর্শনার্থে দাঁড়াও। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোনো মর্যাদাবান ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখানো নাজায়েয নয়। বরং জমহুর আলিমগণ তা মুস্তাহাব বলেছেন। এ পর্যায়ে কোনো নিষেধ পাওয়া যায়নি।
খোদ নবী করীম(স) স্নেহের আতিশয্যে তদীয় দুহিতা হযরত ফাতিমা(রা) এর জন্যও দাঁড়িয়েছেন। এই দাঁড়ান নিষিদ্ধ নয়। বরং নিষিদ্ধ হচ্ছে সেই দাঁড়ানো, যে সম্পর্কে রাসূলে করীম(স) বলেছেনঃ (আরবি)
-যে লোক পছন্দ করবে যে লোকেরা তার প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য দাঁড়াক, সে যেন তার আসন জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।
কোনো প্রকৃত ঈমানদারই তা পছন্দ করতে এবং দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান দেখালে নিশ্চয়ই খুশি হতে পারেনা। অতএব কোনো নেতা বা ব্যক্তি খুশি হবে-এ জন্য দাঁড়ানো সম্পূর্ণ হারাম।
এ বিস্তারিত আলোচনার দৃষ্টিতে বর্তমানে প্রচলিত আনুষ্ঠানিক মিলাদ মাহফিল এবং প্রতি বছর অতীব ধুম-ধামের সহিত ১২ই রবিউল আওয়ালের ‘ফাতিহা-ই-দোয়াজদহম’ নামের অনুষ্ঠান জাতীয় উৎসবরূপে পালন করা যে সুস্পষ্ট বিদয়াত, তাতে কোনোই সন্দেহ থাকতে পারেনা। সাহাবী, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীন এর যুগে এর কোনো একটিরও কোনো দৃষ্টান্ত দেখানো যেতে পারেনা। কুরআন হাদীস থেকেও এর অনুকূলে কোনো দলীল পেশ করা সম্ভব নয়। কাজেই এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আল্লাহর কোনো সওয়াব পাওয়ার আশা করাও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এগুলোকে জাতীয় অনুষ্ঠানরূপে গ্রহণ করে জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পালন করার, পালন করে রাসূলের প্রতি একটা বড় দায়িত্ব পালন করা হলো বলে আত্মশ্লাঘা লাভ করা কিংবা এসবের মাধ্যমে নিজেদেরকে রাসূলের বড় অনুসারীরূপে জাহির করে জনগণকে ধোঁকা দেয়া শুধু বিদয়াতই নয়, বিদয়াত অপেক্ষাও অধিক বড় ধৃষ্টতা, সন্দেহ নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/289/45
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।