মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ইসলামে কবর যিয়ারত করা জায়েয ও সুন্নাত সমর্থিত। কিন্তু বর্তমানে কবর বিশেষ করে পীর অলী বলে কথিত লোকদের কবরকে কেন্দ্র করে দীর্ঘকাল ধরে যা কিছু হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ বিদয়াত, ইসলাম বিরোধী এবং সুস্পষ্ট শিরক, তাতে কোনো সন্দেহই থাকতে পারেনা।
কবর যিয়ারত সম্পর্কিত হাদীসসমূহ থেকে জানা যায়, ইসলামের প্রাথমিক যুগে কবর যিয়ারত করার অনুমতি ছিলনা। পরে সে অনুমতি দেয়া হয়। এ পর্যায়ে নবী করীম(স) এর একটি কথাই বড় দলীল। তিনি বলেছেনঃ (আরবি)
-আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু এখন বলছি তোমরা কবর যিয়ারত করো।
অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ (আরবি)
-তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কবর যিয়ারত করতে চায়, তবে সে তা করতে পারে। কেননা কবর যিয়ারত মানুষকে পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
ইমাম নবয়ী এ হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, কবর যিয়ারত করা মুসলমানদের জন্য সুন্নাত সমর্থিত।
হযরত আনাস(রা) বর্ণিত হাদীসে এ ব্যাপারে আরো একটি বিস্তারিত কথা বলা হয়েছে। নবী করীম(স) বলেছেনঃ (আরবি)
-আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে প্রথমে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু পরে আমার নিকট স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এ কবর যিয়ারতে মন নরম হয়, চোখে পানি আসে এবং পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত করো। কিন্তু তা করতে গিয়ে তোমরা অশ্লীল, গর্হিত ও বাজে কথাবার্তা বলোনা।
ইবনুল হাজার আল আসকালানী লিখেছেনঃ অশ্লীল কথা এবং অবাঞ্চনীয় অতিরিক্ত কথাবার্তা অর্থাৎ অশ্লীল, অপ্রয়োজনীয় ও অবাঞ্চনীয় কথাবার্তা কবরস্থানে বেশি করে বলা নিষিদ্ধ।
হযরত ইবনে আব্বাস(রা) বলেছেন-রাসূলে করীম(স) অভিশাপ বর্ষণ করেছেন কবর যিয়ারতকারী মেয়েলোকদের ওপর এবং তাদের ওপরও, যারা কবরের ওপর মসজিদ, গুম্বদ বা কোব্বা ইত্যাদি নির্মাণ করে।
হযরত আয়েশা(রা) তাঁর মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায় বলেছিলেন-আল্লাহ তা‘আলা লানত করেছেন ইহুদী ও খৃস্টানদের ওপর এজন্য যে, তারা তাদের নবী-রাসূলের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে।
আর গুম্বদ বা কোব্বা নিষিদ্ধের কারণ হচ্ছে- তাতে করে ধন মালের অপচয় হয়, কারো কোনো উপকার সাধিত হয়না। আর কবরস্থানে মসজিদ বানান হলে কবরের প্রতি অধিক সম্মান প্রদর্শন করা হয়। তা থেকে বিরত রাখাই এ নিষেধের উদ্দেশ্য।
অপর এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ (আরবি)
-কবর যিয়ারতকারী মেয়েলোক এবং তার ওপর যারা বাতি জ্বালায় তাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলা অভিশাপ করেছেন।
আর একটি হাদীসে বলা হয়েছে এভাবে-(আরবি)
-কবরকে পাকা-পোক্ত ও শক্ত করে বানাতে, তার ওপর কোনোরূপ নির্মাণ কাজ করতে, তার ওপর বসতে এবং তার ওপর কোনো কিছু লিখতে নবী করীম(স) সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন।
নবী করীমের ফরমান অনুযায়ী বলা যায় যে, কবরকে কেন্দ্র করে এসব কাজ করা মহা অন্যায়, অবাঞ্জনীয়। আর যারা একাজ করে তারা নিকৃষ্টতম লোক। নবী করীম(স) নিজে নিজের সম্পর্কে দো‘আ করেছেন এই বলেঃ (আরবি)
-হে আল্লাহ! তুমি আমার কবরকে কোনো পূজ্যমূর্তি বানিয়ে দিওনা। বস্তুত যে জাতি তাদের নবী রাসূলের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে, তাদের ওপর আল্লাহর গজব তীব্র হয়ে উঠছে।
এ হাদীসের তাৎপর্য্ সুস্পষ্ট। কবরের দিকে মুখ ফিরিয়ে সিজদা করা, কবরকে কিবলার দিকে রেখে নামাজ পড়া শরীয়তে সুস্পষ্ট হারাম। হযরত জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বর্ণনা করেছেন, নবী করীম(স) মুসলমানদের লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছেনঃ (আরবি)
-সাবধান হও, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা নবী-রাসূল ও নেক লোকদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছিল। তোমরা কিন্তু সাবধান হবে, তোমরা কখনো কবরকে মসজিদ বানাবেনা। আমি এ থেকে তোমাদের স্পষ্ট নিষেধ করছি।
কবরকে কেন্দ্র করে যে ওরশ ও মেলা অনুষ্ঠিত হয় তা ইসলামে নিষিদ্ধ। হযরত আবু হুরায়রা(রা) বলেনঃ (আরবি)
-রাসূলে করীম (স) কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা তোমাদের ঘরকে কবরস্থানে পরিণত করোনা(অন্তত নফল নামায নিজেদের ঘরেই পড়বে)। আমার কবর কেন্দ্রে মেলা বসাবেনা, তোমরা আমার প্রতি দুরুদ পাঠাবে। যেখানে থেকেই তোমরা দুরুদ পাঠাওনা কেন, তা অবশ্যই আমার নিকট পৌছবে।
এ কারণেই কবরকে কোনো স্পষ্ট ও উন্নত স্থানরূপে নির্মিত করতেও নিষেধ করা হয়েছে। নবী করীম(স) হযরত আলী(রা) কে এ দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন-(আরবি)
-সব মূর্তি চুরমার করে দিবে এবং সব উচ্চ ও উন্নত কবর ভেঙ্গে সমান ও মাটির সাথে একাকার করে দিবে। এ থেকে যেন কোনো প্রতিকৃতি ও কোনো কবর রক্ষা না পায়। (হাদীসটি সহীস মুসলিম শরীফে উদ্ধৃত। এর বর্ণনাকারী আবুল হাইয়্যাজ আল আমাদী। হযরত আলী(রা) তাঁকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন-রাসূল(স) আমাকে যে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, আমি ও কি তোমাকে সে দায়িত্ব দিয়ে পাঠাবোনা? খলীফাতুল মুসলিমীন হিসেবেই হযরত আলী(রা) তাঁকে এই দায়িত্বে নিযুক্ত করেছিলেন।)
এসব কয়টি হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে কবর যিয়ারত করা সাধারণ মুসলমানদের জন্যই নিষিদ্ধ ছিলো। নিষেধের কারণ এখানে স্পষ্ট বলা হয়নি। তবে অন্যান্য কারণের মধ্যে এও একটি বড় কারণ অবশ্যই ছিল যে, কবর পূজা জাহিলিয়াতের জমানায় একটি মুশরিকী কাজ হিসেবে আরব সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। মুসলমান হওয়ার পরও কবর যিয়ারতের ব্যাপক সুযোগ থাকলে তওহীদবাদী এ মানুষের পক্ষে কবর পূজার শিরক এ নিমজ্জিত হয়ে পড়ার বড় বেশি আশংকা ছিল। কিন্তু পরে যখন ইসলামী আকীদার ব্যাপক প্রচার ও বিপুল সংখ্যক লোকের মন-মগজে তা দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়, পূর্ণ বাস্তবায়িত হয় ইসলামী জীবনাদর্শ, তখন কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু সে অনুমতি কেবল পুরুষদের জন্য, মেয়েদের তা থেকে বাদ দিয় রাখা হয়। শুধু তা-ই নয়, কবর যিয়ারত করতে মেয়েদের যাওয়ার ব্যাপারটিকে ইসলামের দৃষ্টিতে অভিশাপের কাজ বলে ঘোষণা করা হয়।
এ পর্যায়ে শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী লিখেছেনঃ (আরবি)
-আমি বলছি, শুরুতে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ ছিল। কেননা তা কবর পূজার দ্বার খুলে দিত। কিন্তু পরে যখন ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হলো এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর ইবাদত হারাম হওয়ার ব্যাপারে তাদের মন-মগজ স্থির বিশ্বাসী হলো, তখন কবর যিয়ারত করার অনুমতি দেয়া হয়।
অবশ্য মেয়েলোকদের কবর যিয়ারত করতে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো কোনো ফিকাহবিদ সামান্য ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তাঁরা এক দিকে নিষেধ ও অপর দিকে অনুমতি- এ দুয়ের মাঝে সামঞ্জস্য স্থাপনের উদ্দেশ্যে বলেছেন- নেককার লোকদের কবর যিয়ারত করে বরকত লাভ করা বৃদ্ধা মেয়েলোকদের জন্য জায়েয, তাতে কোনো দোষ নেই। কিন্তু যুবতী মেয়েলোকদের পক্ষে মাকরূহ তাহরীম।
কবর যিয়ারত করতে অনুমতি দেয়ার কারণ হাদীসে বলা হয়েছে-তাতে মানুষের মন নরম হয়, চোখে পানি আসে এবং পরকালের কথা মনে আসে। মনে আসে, কবরস্থ সব লোকই একদিন তাদেরই মতো জীবিত ছিল। কিন্তু আজ দুনিয়ার বুকে তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। এমনিভাবে তাদেরও সব মানুষেরই এরূপ পরিণতি দেখা দিবে। এ থেকে কারোরই রেহাই নেই। এতে করে যিয়ারতকারীর মনে পরকালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের এক প্রয়োজনীয় ভাবধারা জাগে। আর ইসলামে তা বিশেষভাবে কাম্য।
কিন্তু কবর নির্মাণ সম্পর্কে এ হাদীসসমূহে দু’টো কড়া নিষেধ উদ্ধৃত হয়েছে। একটি এই যে, কবরস্থানে মসজিদ নির্মাণ করা চলবেনা। কেননা তা করা হলে মানুষ মসজিদের মতো কবরের প্রতিও ভক্তিভাজন হয়ে পড়তে পারে, কবরের প্রতি দেখাতে পারে আন্তরিক সম্মান ও শ্রদ্ধা। আর এ জিনিসই হলো শিরক এর উৎস। কবরগাহে মসজিদ বানানোর প্রচলন মুসলিম সমাজে দীর্ঘদিন থেকে চালু হয়ে আছে। অলী-আল্লাহ বলে কথিত কোনো লোকের কবর এখন কোথাও পাওয়া যাবেনা, যার নিকট মসজিদ নির্মাণ করা হয়নি। আর এসব কবরস্থানই শিরক ও বিদয়াতের লীলাকেন্দ্র হয়ে রয়েছে। বহু শত রকমের বিদয়াত মুসলিম সমাজে এখান থেকেই বিস্তার লাভ করেছে। বস্তুত এসব হচ্ছে ইসলামের তওহীদী আকীদায় শিরক এর বিদয়াতের অনুপ্রবেশ।
হাদীস অনুযায়ী কবরের ওপর কোনো কিছু নির্মাণ করাই হারাম। ইমাম শাওকানী পূর্বোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ
-এ হাদীসে এ কথার দলীল পাওয়া গেল যে, কবরের ওপর কোনো কিছু নির্মাণ করাই হারাম।
শুধু তা-ই নয়, কবরের ওপর কিছু লিখাও হারাম। তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হাদীসে অন্যান্য কথার সাথে এ বাক্যাংশটুকুও রয়েছে। -কবরের ওপর কিছু লেখাও নিষেধ।
অর্থাৎ কবরে মৃত ব্যক্তির নাম, জন্ম ও মৃত্যুর সন-তারিখ কিংবা কোনো মর্সিয়া বা শোক গাঁথা লেখা নিষিদ্ধ। শরীয়তে নাম লেখা আর অন্য কিছুই লেখা হারাম হওয়ার ব্যাপারে পার্থক্য করা হয়নি।
মাওলানা ইদরীস কান্দেলভী এ সম্পর্কে ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ এ কথার দু’টো অর্থ হতে পারেঃ একটি হচ্ছে কবরের ওপর ইট পাথর দিয়ে কোনো নির্মাণ কাজ করা কিংবা এ পর্যায়ের অন্য কোনো কাজ আর দ্বিতীয় হচ্ছে, কবরের ওপর কোনো চাঁদর, তাবু ইত্যাদি টানিয়ে দেয়া। আর এ দু’ধরনের কাজই নিষিদ্ধ। প্রথমটি নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ আগেই বলা হয়েছে। আর দ্বিতীয়টি এজন্য যে, তাও প্রথমটির মতই নিষ্ফল, অর্থহীন কাজ। এতে অর্থের অপচয় হয় আর তা হচ্ছে জাহিলিয়াতের লোকদের কাজ।
জনসাধারণ শরীয়তের মূল বিধানের সাথে পরিচিত নয় বলে তারা সব অলী-আল্লাহ বলে পরিচিত লোকদের কবরের কোব্বা নির্মিত ও তার প্রত্যেকটির ওপর নাম ও অন্যান্য জিনিস লিখিত দেখে মনে করে যে, এ বুঝি শরীয়ত সম্মত কাজ, অন্তত এতে শরীয়তে কোনো দোষ নেই। অথচ তা সবই ইসলামে নিষিদ্ধ। হাদীসে এ পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক কথা রাসূলে করীম(স) থেকে বর্ণিত এবং কিতাবসমূহে উদ্ধৃতি হয়েছে। এসব হাদীস সম্পর্কে ইমাম হাকিম লিখেছেনঃ
-কবরের ওপর কোনো কিছু লিখতে নিষেধ করা হয়েছে যে হাদীসে তার সবকটিই বিলকুল সহীহ। কিন্তু তদনুযায়ী আমল করা হচ্ছেনা। কেননা সর্বত্র মুসলিম ইমামদের কবরের ওপর কিছু না কিছু লিখিত দেখা যায়। পরবর্তী লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের কাছে এসব শিখছে (ও জায়েয বলে মনে করছে)।
আসলে এ আমল না নবী করীম(স) থেকে প্রমাণিত না সাহাবীদের থেকে। পরবর্তীকালের লোকেরাই উদ্যোক্তা। কিন্তু তারা ছিল এমন লোক যাদের কথা বা কাজ শরীয়তে দলীলরূপে গৃহীত নয়। এ পর্যায়ে ইমাম যাহবী লিখেছেন-ইমাম হাকিমের উপরোক্ত কথা কোনো কাজের কথা নয়। আসলে কোনো সাহাবীই উক্ত নিষিদ্ধ কাজটি করেননি। এ হচ্ছে উত্তরকালের উদ্ভাবিত একটি কাজ-বিদয়াত। কোনো কোনো তাবেয়ী এবং তাদের পরবর্তীকালের লোকেরাই উদ্ভাবন করেছেন। নবী করীম(স) এর এ নিষেধ তাঁদের নিকট পৌছায়নি।
আর পাক ভারতে প্রখ্যাত মনীষী কাযী সানাউল্ল্যাহ পানিপত্তি লিখেছেনঃ
-আউলিয়াগণের কবর প্রসঙ্গে তাদের কবরকে উন্নত করা, তার ওপর গম্বুজ নির্মাণ, ওরস অনুষ্ঠান করা, চেরাগ বাতি জ্বালানো সম্পূর্ণ বিদয়াত। এর মাঝে কতগুলো হারাম মাকরুহ(তাহরীম)। নবী করীম(স) যারা কবরে বাতি জ্বালায় ও মানত করে তাদের ওপর লা‘নত করেছেন। বলেছেন-না আমার কবরের ওপর উৎসব পালন করবে, না তাকে সেজদার স্থান বানাবে, না এরূপ কোনো মসজিদে নামায পড়বে। না কোনো নির্দিষ্ট তারিখে সেখানে একত্রিত হবে। নবী করীম(স) হযরত আলী(রা) কে পাঠিয়েছিলেন এ নির্দেশ দিয়ে যে, উঁচু কবর ভেঙ্গে সমান করে দেবে এবং প্রতিকৃতি যেখানেই পাবে মুছে দিবে।
সহীহ হাদীসে প্রমাণ রয়েছে, নেককার অলী লোকদের কবরস্থানে মসজিদ নির্মাণ করা সাধারণ ও মূর্খ লোকদের একটি চিরন্তন স্বভাব। হযরত আয়েশা(রা) বলেনঃ নবী করীম(স) যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত, তখন তাঁর স্ত্রী মারিয়া আবিসিনিয়ায় তার দেখা গীর্জার কথা রাসূল(স) এর নিকট উল্লেখ করেন। সে সময় উম্মে সালমা ও উম্মে হাবীবা(রা)ও উল্লেখ করেন তাঁদের দেখা সে গীর্জাসমূহের সৌন্দর্য্ ও তাতে রক্ষিত সব ছবি ও প্রতিকৃতির কথা। এসব কথা শুনে নবী করীম(স) মাথা ওপরে তুললেন এবং বললেনঃ (আরবি)
-এসব ছবি ও প্রতিকৃতির ইতিহাস হলো এই যে, তাদের মধ্য থেকে কোনো নেককার(আমাদের ভাষায় কোনো পীর বা অলী-আল্লাহ বলে কথিত) ব্যক্তি যখন মরে গেছেন, তখন তার কবরের ওপর তারা মসজিদ নির্মাণ করেছে। অতঃপর তার মধ্যে এসব ছবি ও প্রতিকৃতি সংস্থাপিত করেছে। আসলে এরা হলো আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম লোক।
এ হাদীসও প্রমাণ করে যে, কারো কবরকে কেন্দ্র করে মসজিদ নির্মাণ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। কেননা আশংকা রয়েছে, সাধারণ লোকেরা কবরের সাথে সেরূপ ব্যবহারই করবে, যা করছে এসব অভিশপ্ত যেমনে করবে।
বস্তুত বর্তমানকালেও কোনো নামকরা বা খ্যাতনামা ‘অলী’(?)আলিম বা খ্যাতনামা পীরের মাজার খুব কমই দেখা যাবে, যার ওপর কোনো গুম্বদ বা কোব্বা নির্মিত হয়নি। নাম ও জন্ম-মৃত্যুর তারিখ এবং তৎসহ মর্সিয়া গাঁথা লেখা হয়নি। এসব কাজ যেমন হাদীসের স্পষ্ট বরখেলাপ, তেমনি তওহীদী আকীদারও সম্পূর্ণ পরিপন্থী। রাসূলে করীম(স) ইসলামের মৌল ভাবধারা তওহীদী আকীদার সুষ্ঠ হেফাজতের জন্যই এ সব কাজ করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু রাসূলের এ সুস্পষ্ট নিষেধ নির্ভয়ে অমান্য করে পীর অলী-আল্লাহ বলে কথিত লোকদের, রাজনৈতিক নেতাদের ও প্রখ্যাত ব্যক্তিদের কবরের ওপর বানান হয়েছে ও হচ্ছে কুম্বদ, কোব্বা, স্মৃতি, মিনার প্রভৃতি আর তার ওপর লেখা হচ্ছে তাদের নাম, জন্ম-মৃত্যুর তারিখ ও শ্রদ্ধাঞ্জলী বা মর্সিয়া গাঁথা। কিন্তু এগুলো যে বিদয়াত এবং ইসলামের সম্পূর্ণ খেলাফ কাজ তাতে কোনো ঈমানদার মানুষেরই একবিন্দু সন্দেহ থাকতে পারেনা।
ওপরের দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিতে হলো যে, কবর উঁচু করা, তার ওপর কোব্বা নির্মাণ করা, মসজিদ বা নামায পড়ার স্থান নির্ধারণ, তাকে সর্বসাধারণের যিয়ারতগাহে পরিণত করা-কবরের পাশ্বে লোকদের দাঁড়ানোর জন্য ব্যালকনি তৈরি করা-এই সবই অত্যন্ত ও সুস্পষ্ট নিষিদ্ধ কাজ। এই ব্যাপারে রাসূলে করীম(স) কখনও অভিশাপ বর্ষণ করেছেন সেই লোকদের ওপর যারা এসব করে।
আবার কখনও তিনি বলেছেন- (আরবি)
-সেই লোকদের ওপর আল্লাহর গজব অত্যন্ত তীব্র ও প্রচন্ড হয়ে এসেছে যারা তাদের নবী-রাসূলগণের কবরসমূহকে মসজিদ বানিয়েছে।
তাই কখনও তিনি নিজেই ঐ কাজ যারা করে তাদের ওপর আল্লাহর গজব তীব্র ও কঠিন হয়ে বর্ষিত হওয়ার জন্য দো’আ করেছেন। সহীহ হাদীসেই তার উল্লেখ রয়েছে।
আবার কখনও তিনি সেই ধরনের সব কবর কোব্বা ইত্যাদি ধ্বংস করার জন্য দায়িত্ব দিয়ে লোক পাঠিয়েছেন। কখনও তিনি এই কাজকে ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানদের কাজ বলে অভিহিত করেছেন। কখনও বলেছেনঃ তোমরা আমার কবরকে মূর্তি বানিয়ে অনুরূপ আচরণ করোনা। আবার কখনও বলেছেন-(আরবি)
-তোমরা আমার কবরকে ঈদের ন্যায় উৎসবের কেন্দ্র বানিওনা।
অর্থাৎ এমন একটি মৌসুম বা সময় নির্ধারণ করে সেই সময় আবার কবরস্থানে লোকজন একত্রিত করে উৎসব করোনা। যেমন করে কবর পূজারীরা করে থাকে। তথায় তারা নানা অনুষ্ঠান পালন করে। কবরে অবস্থান গ্রহণ করে। ওরা আসলেও কার্য্ত আল্লাহর ইবাদত সম্পূর্ণ পরিহার করে কবর বা কবরস্থ ব্যক্তির ইবাদতে মেতে যায়। নবী করীম(স) এইসবকে তীব্র ভাষায় ও অত্যন্ত কঠোরতা সহকারে প্রতিরোধ করেছেন। আর আজ তাঁরই উম্মাহ হওয়ার দাবিদার অলী-আল্লাহ, পীর শায়খ, ইত্যাদির ছদ্মাবরণ ধরে মানুষকে কবর পূজারী বানাচ্ছে। কোথাও কোথাও আল্লাহকে হটিয়ে নিজেরাই মানুষের মা‘বুদ হয়ে বসেছে। সেখানে-তাদের প্রতি মুরীদরা-ভক্তরা-সেই ভক্তি শ্রদ্ধা ও আচার আচরণ করে, যা একান্তভাবে আল্লাহরই প্রাপ্য।
এ শুধু বিদয়াত নয়, এ হচ্ছে প্রচন্ড শিরক। তওহীদী ইসলামের দোহাই দিয়ে শিরক এর পীঠস্থানে পরিণত হয়েছে এমন দরগাহ মুসলিম দুনিয়ার সর্বত্রই বিরাজ করছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/289/36
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।