hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সুন্নাত ও বিদয়াত

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

৩১
পীর মুরীদী সম্পর্কে মুজাদ্দিদে আলফেসানীর বক্তব্য
এ সম্পর্কে আমরা বেশি শুনতে চাইব মুজাদ্দিদে আলফেসানী শায়খ আহমদ সরহিন্দীর নিকট থেকে, জানতে চাইব তাঁর মতামত। কেননা পাক-ভারতে একদিকে তিনি যেমন তাসাউফ বা ইলমে মারিফাতের গোড়া তেমনি আকবরী ‘দ্বীনি-ইলাহী’ ফিতনা ও ইসলামের দুশমনির সয়লাবের মুখে তিনি প্রকৃত দ্বীন ইসলামকে জাগিয়ে তুলেছেন। কাজেই তাসাউফ সম্পর্কে তাঁর মতামত ‘আপনি আমি বা সে’ এর তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মত পেশ করা এজন্যও বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে, এ দেশের পীরের সাধারণত তাঁকেই সব পীরের গোড়া বলে দাবি করে থাকেন।

শরীয়ত ও মারিফাত পর্যায়ে তিনি তাঁর ‘মকতুবাত’ এ লিখেছেন-

কাল কিয়ামতের দিন শরীয়ত সম্পর্কেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তাসাউফ সম্পর্কে কিছূই জিজ্ঞাসা করা হবেনা। জান্নাতে যাওয়া ও জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়া শরীয়তের বিধান পালনের উপর নির্ভরশীল। নবী-রাসূলগণ-যাঁরা গোটা সৃষ্টিলোকের মাঝে সর্বোত্তম-শরীয়ত কবুল করারই দাওয়াত দিয়েছেন, পরকালীন নাজাতের জন্য শরীয়তই একমাত্র উপায় বলে ঘোষণা করেছেন। এ মহান মানবদের দুনিয়ায় আগমনের উদ্দেশ্যই হলো শরীয়তের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা। সবচেয়ে বড় নেকীর কাজ হলো শরীয়তকে চালু করা। এবং শরীয়তের বিধানসমূহের মধ্যে একটি হুকুমকে হলেও জিন্দা করা বিশেষ করে এমন সময় যখন ইসলামের নিদর্শনসমূহ ধ্বংস হয়ে গেছে। কোটি কোটি টাকা আল্লাহর পথে খরচ করাও শরীয়তের কোনো একটি মাসালাকে রেয়াজ দেয়ার সওয়াবের সমান হতে পারেনা।

মুজাদ্দিদে আলফেসানী(রহ) এ পর্যায়ে আরো একটি প্রশ্নের বিশদ ও স্পষ্ট জবাব দিয়েছেন। সাধারণ্যে প্রচলিত মত জাহিল পীরেরা ও তাদের মুরীদেরা প্রচার করে বেড়ায় যে, শরীয়ত হচ্ছে দ্বীনের বাইরের দিকের চামড়া, আর আসল মগজ হচ্ছে তরীকত বা মারিফাত। একথা বলে যারা শরীয়তের আলিম, কিন্তু তরীকত, মারিফাত ইত্যাদির ধার ধারেননা, শরীয়তকেই যথেষ্ট মনে করেন-তাঁদের ফাসিক ও বিদয়াতী ইত্যাদি বলে অভিহিত করে, তাঁদের সমালোচনা করে এবং তাঁদের দোষ গেয়ে বেড়ায়। এর জবাবে মুজাদ্দেদি আলফেসানীর-যিনি এদেশের প্রকৃত মারিফাতেরও গোড়া-তাঁর দাঁতভাঙ্গা জবাব শুনুন।

তিনি বলেছেনঃ শরীয়তের তিনটি অংশ রয়েছে। ইলম(শরীয়তকে জানা), আমল(শরীয়ত অনুযায়ী কাজ) এবং ইখলাস(নিষ্ঠা)। তরীকত ও হাকীকত উভয়ই শরীয়তের এই তৃতীয় অংশ-ইসলামের পরিপূরক হিসেবে শরীয়তের খাদেম মাত্র। এটিই আসল কথা, কিন্তু সকলে এতদূর বুঝতে সক্ষম হয়না। অধিকাংশ আলেম লোক কল্পনার সুখ স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। আর বেহুদা অর্থহীন ও অকাজের কথাবার্তা বলাই যথেষ্ট মনে করে। এ লোকেরা শরীয়তের প্রতিপালন সম্পর্কে কি জানে, কি বুঝবে! তরীকতের হাকীকতই বা এরা কি বুঝবে! এরা শরীয়তকে চামড়া বা বাইরের জিনিস মনে করে বসে আছে আর হাকীকতকে মনে করছে মূল, মগজ ও আসল। আসল ব্যাপার কি, তা এরা আদৌ বুঝতে পারছেনা। সুফী লোকদের-পীরদের বেহুদা অর্থহীন কথাবার্তা নিয়ে অহমিকায় নিমগ্ন রয়েছে এবং মারিফাতের ‘আহওয়াল’ ও ‘মাকামাত’ এর মধ্যে পাগল হয়ে ঘুরে মরছে তারা। আল্লাহ তা‘আলা এ লোকদেরকে সঠিক পথে হেদায়াত করুন এ দোয়া করি।

শরীয়ত ও মারিফাতকে যারা দুটো জিনিস মনে করে নিয়েছে এবং তরীকতের অর্থহীন অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তায় যারা নিমগ্ন হয়েছে, মোজাদ্দেদি আলফেসানী(রহ) তাদেরকে জাহিল ও বিভ্রান্ত লোক বলে অভিহিত করেছেন। মুজাদ্দিদে আলফেসানীর এ কথা যে সম্পূর্ণ সত্য ও একান্তই নির্ভূল, তাতে অন্তত শরীয়তের আলিমদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। বস্তুত শরীয়তের আলিম ও জাহিল পীর ও তাদের অন্ধ মুরীদদের মাঝে মতভেদ শুরু থেকেই চলে এসেছে। শরীয়ত এর আলিমগণ ইসলামী শরীয়ত আর তরীকতের বিভক্তিকে কোনোদিনই সমর্থন করেননি, চিরদিনই এর বিরোধিতা করেছেন-এ জিনিসকে দ্বীন ইসলামের বাইরে থেকে আমদানি করা এক মারাত্মক বিদয়াত বলে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু আজ জাহিল পীরেরা নিজেদের বৈষয়িক স্বার্থের জন্য এবং শরীয়ত পালন ও কায়েমের দায়িত্বপূর্ণ কাজ থেকে দূরে খানকা শরীফের চার দেয়ালের মধ্যে সহজ ও সস্তা সুন্নাত পালনের অভিনয় করার জন্য শরীয়ত থেকে বিচ্ছিন্ন ‘তরীকত’ নামের এক নতুন বস্তু প্রচলন করেছে। এরূপ অবস্থায় কার কথা বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করা যাবে? আলিমদের, না সূফী ও পীরদের? এর জবাব দিয়েছেন মুজাদ্দেদি আলফেসানী(রহ)। তিনি বলেছেনঃ জেনে রাখা ভালো, যে বিষয়ে সূফী, পীর ও শরীয়তের আলিমদের মাঝে মতভেদ হয়, ভালোভাবে চিন্তা ও অধ্যয়ন করলে দেখা যাবে যে, সে বিষয়ে আলিমদের মত-ই হক। এর কারণ এই যে, আলিমগণ নবী রাসূলগণের অনুসরণ করার মাধ্যমে নব্যুয়তের গভীর মাহাত্ম এবং তদলব্ধ ইলম লাভ করতে পেরেছেন। আর সূফী পীরদের দৃষ্টি বেলায়েতের কালিমাত ও তত্ত্বকথার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে।

পীরদের মুরীদ বানানো ব্যবসার সবচেয়ে বড় মূলধন হচ্ছে কাশফ ও ইলহামের দোহাই। পীরেরা যখন বলে আমার কাশফ হয়েছে-ইলহামযোগে আমি একথা জানতে পেরেছি’-তখন জাহিল মুরীদান ভক্তিতে গদগদ হয়ে কদমবুসি করতে শুরু করে। কিন্তু এসব জিনিস যে পীর মুরীদীর ব্যবসা চালাবার জন্য হয়, তা বুঝবার ক্ষমতা এই মূর্খ পীরদের নেই। ‘ইলহাম’ হতে পারে, কাশফও হয়, হয় আল্লাহর মেহেরবানীতে। যদি কেউ তা লাভ করে তাহলে অন্য লোকদের তা না বলে আল্লাহর শোকর আদায় করা উচিত। কিন্তু জাহিল পীরেরা শরীয়তের ধার ধারেনা। তারা ইলহামের দোহাই দিয়ে জায়েয-নাজায়েয, হালাল-হারাম ও ফরয ওয়াজিব ঠিক করে ফেলে। আর অন্ধ মুরীদরা তাই মাথা পেতে নেয়, শরীয়তের হুকুমের প্রতি তাকাবার খেয়ালও জাগেনা। এ সম্পর্কে মুজাদ্দেদি আলফেসানীর কথাই আমাদেরকে নির্ভূল পথ-নির্দেশ করতে পারে। তিনি বলেছেনঃ

কিয়াস ও ইজতিহাদ শরীয়তের মূলনীতিসমূহের মধ্যে অন্যতম। তা মেনে চলার জন্য আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে।কিন্তু কাশফ ও ইলহাম মেনে নেয়ার কোনো নির্দেশ আমাদেরকে দেয়া হয়নি। উপরন্তু ইলহাম অপর লোকের বিরুদ্ধে দলীল নয়। ইজতিহাদ মুকাল্লীদ এর জন্য দলীল(মেনে চলতে বাধ্য)। অতএব মুজতাহিদ আলিমদের মেনে চলাই উচিত এবং তাঁদের মতের ভিত্তিতে দ্বীনের নীতি তালাশ করা কর্তব্য। আর সূফীরা মুজতাহিদ আলিমদের মতের বিপরীত যা কিছু বলে বা দাবি করে, তা মেনে চলা কিছুতেই উচিত নয়।

সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, পীর ও জাহিল লোক নিজেরা যেমন সাধারণত জাহিল হয়ে থাকে, মুরীদদেরকেও তেমনি জাহিল করে রাখতে চায় এবং তাদের দ্বীন-ইসলাম ও ইসলামী শরীয়ত সম্পর্কে কুরআন হাদীস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার জন্য কখনো হেদায়াত দেয়না। পীর কিবলা মুরীদকে মুরাকাবা করতে বলবে, আল্লাহর যিকির করতে বলবে এবং হাযার বার করে ‘বানানো দুরুদ শরীফের অজীফা’ পড়তে বলবে; কিন্তু আল্লাহর কালাম দ্বীন ইসলামের মূল উৎস কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করতে, তার তরজমা ও তাফসীর বুঝতে এবং আল্লাহর কথার সাথে গভীরভাবে পরিচিত হতে কখনোই বলবেনা। বস্তুত এ এক আশ্চর্যের ব্যাপার। কিন্তু মুজাদ্দিদে আলফেসানী(রহ) স্পষ্ট ভাষায় বলেছেনঃ

অধিক জরুরী নসীহত হলো এই যে, কুরআন শরীফের অধ্যয়নে ও পড়াশোনায় কোনোরূপ ত্রুটি করবেনা। আপনার সমস্ত সময় যদি এই অধ্যয়নে ব্যয় হয়ে যায় যায় তাহলে ভালো। যিকির ও মুরাকাবার কোনো লাভ করবেননা।

মোগলদের ইসলাম বিরোধী শাসন আমলে মুজাদ্দিদে আলফেসানী যখন দ্বীন ইসলাম প্রচার এবং বাতিলের প্রতিবাদ শুরু করেন, তখন বাতিল পীরেরা তাঁর এ কাজের পথে অন্যতম প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। তিনি তখন স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন যে, এ বাতিলপন্থী পীরদের উৎখাত এবং তাসাউফের সংশোধন না হলে দ্বীন-ইসলামকে সঠিকভাবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা যাবেনা। এজন্য তিনি তাসাউফের অনেকখানি সংশোধনও করেছেন, মুক্ত করেছেন তাকে বাতিল চিন্তা ও তরীকা থেকে।

আসল কথা হলো, পীরবাদ মোটেই ইসলামী জিনিস নয়। ইসলামের আলোকোজ্জ্বল পরিবেশে তার প্রচলন হয়নি। তার উন্মেষই হয়েছে ইসলামের পতন যুগে। অবশ্য ইসলামের অনেক মনীষীও ইলমে তাসাউফের মাধ্যমে জনগণকে দ্বীন ইসলামের দিকে নিয়ে আসতে চেষ্টা করেছেন; কিন্তু পীরবাদে যে মূল দোষত্রুটি ছিল, তার বীজ রয়েই গেছে এবং তা সৃষ্টি করেছে একটি বিষবৃক্ষ। বর্তমানে তাই এক বিরাট বৃক্ষে পরিণত হয়ে জনগণকে চরমভাবে বিভ্রান্ত করেছে, বিষাক্ত করেছে জনগণের আকীদা ও আমলকে। দ্বীন ইসলামের মূল সুন্নাতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এ বাতিল পীরবারে মূলোৎপাটন আজও অপরিহার্য্ , যেমন অপরিহার্য্ ছিল মোজাদ্দিদে আলফেসানীর জীবনকালে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন