hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সুন্নাত ও বিদয়াত

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

২৮
শরীয়ত মারিফাত
এ পর্যায়ে সবচেয়ে মৌলিক বিদয়াত হলো শরীয়ত ও তরীকতকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন এবং পরস্পর সম্পর্কহীন দুই স্বতন্ত্র জিনিস মনে করা। এতোদূর পতন ঘটেছে যে, শরীয়তকে ‘ইলমে জাহের’ এবং ‘তরিকত’ বা ‘মারেফত’ কে ইলমে বাতেন বলে অভিহিত করে দ্বীন-ইসলামকেই দ্বিধাবিভক্ত করে দেয়া হয়েছে। এক শ্রেণীর জাহিল তরীকতপন্থী লোক বলতে শুরু করেছে যে, ইসলামের আসলই হলো তরীকত বা মারিফত, আর এ-ই হাকীকত। এ হাকীকত কেউ যদি লাভ করতে পারলো, তাহলে তাকে শরীয়ত পালন করতে হয়না, সে তো আল্লাহকে পেয়েই গেছে। তাদের মতে শরীয়তের আলিম এক আর মারিফত বা তরীকতের আলিম অন্য। এই তরীকতের আলিমরাই উপমহাদেশে পীর নামে অভিহিত হয়ে থাকেন। ধারণা প্রচার করা হয় যে, কেউ যদি শরীয়তের আলিম হয় আর সে তরীয়তের ইলম না জানে-কোনো পীরের নিকট মুরীদ না হয়-তবে সে ফাসিক।

তাসাউফকে বলা হয় সাধারণত মারিফাত। প্রখ্যাত অলী-আল্লাহ হযরত জুনাইদ বাগদাদী এ মারিফাত এর মূল্যহীনতা আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ

মারিফাতের তুলনায় ইলম অনেক উন্নত, সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ। আল্লাহ নিজে ইলম এর নামে অভিহিত হয়েছেন, মারিফাতের নামে নয়। আর তিনি বলেছেন-যারা ইলম লাভ করেছেন, তাদেরই উচ্চ মর্যাদা। এছাড়া তিনি যখন নবী করীম(স) কে সম্বোধন করলেন, সম্বোধন করলেন সর্বোত্তম, অধিকতর ব্যাপক কল্যাণময় ও পূর্ণাঙ্গ এক গুণ উল্লেখ করে।

আর বলেছেনঃ فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ

-‘তুমি জেনে রাখো, আল্লাহ ছাড়া কোনোই মা’বুদ নেই’।

কিংবাঃ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ ۚ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللَّهِ

-অতঃপর জানবে যে, এ লোকেরা নিজেদের কামনা বাসনাকে অনুসরণ করে চলেছে। আর যারাই নিজেদের কামনা বাসনাকে অনুসরণ করে চলে, তাদের চাইতে অধিক গোমরাহ আর কে হতে পারে।

পীর-মুরীদী সম্পর্কে এ আয়াত খুবই প্রযোজ্য। কিন্তু ‘মারিফাত হাসিল করো’ একথা কোথাও বলেননি। কেননা মানুষ একটা জিনিসকে চিনতে পারে; কিন্তু তার সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা সম্ভবপর হয়না । আর যখন সে জিনিস সম্পর্কে ইলম হলো, সম্যকভাবে সে সম্পর্কে জানতে পারলো, তখন তাকে চিনতেও পারলো।

হযরত জুনাইদের একথার সারমর্ম হলো এই যে, মারিফাতের চাইতে ‘ইলম’ বড়। অতএব আল্লাহর মারিফাত নয়, আল্লাহ সম্পর্কে ইলম হাসিল করতে হবে। ‘ইলম’ হাসিল হলেই ‘মারিফাত’ লাভ হতে পারে। আর যার ইলম নেই, সে মারিফাতও পেতে পারেনা। এ ইলম-এর একমাত্র উৎস হলো আল্লাহর কুরআন ও রাসূলের হাদীস। কুরআন-হাদীসের মাধ্যমেই রাসূলকে জানতে হবে এবং আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার ফলেই মানুষ পারে আল্লাহকে জানতে ও চিনতে-অন্য কোনো উপায়ে নয়।

কিন্তু তাসাউফবাদীরা এ মারিফাতকে কেন্দ্র করে গোলকধাঁধার এক প্রাসাদ রচনা করেছে। তাদের মতে মারিফাত বা ইলমে বাতেন এক সুসংবদ্ধ ও সুশৃংখলিত কর্মপন্থা, ইসলামী শরীয়ত থেকে তা সম্পূর্ণ এক ভিন্ন জিনিস। তাদের মতে রাসূলে করীম(স) তাঁর এই মারিফাত কোনো কোনো সাহাবীকে শিক্ষা দিয়েছিলেন, আর অনেককে দেননি। তারা আরো মনে করেন, ইলমে বাতেন হযরত আলী(রা) হতে হাসান বসরী পর্য্ন্ত পৌছেছে। আর তাঁরই থেকে সীনায় সীনায় এ জিনিস চলে এসেছে এ কালের পীরদের পর্য্ন্ত।

এ সমস্ত কথাই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কেননা রাসূলে করীম(স) এ জিনিস কাউকেই শিখিয়ে যাননি, যা এখনকার পীর তার মুরীদদের শিখিয়ে থাকে। তিনি এরূপ করতে কাউকে বলেও যাননি। কোনো দরকারী ইলম তিনি কোনো কোনো সাহাবীকে শিখিয়ে যাবেন আর অন্য সাহাবীদেরকে বঞ্চিত করবেন-এরূপ তরা নবী করীমের নীতি ও আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাছাড়া হাসান বসরী(র) হযরত আলী(রা) এর সাক্ষাৎ পাননি, তাঁর নিকট থেকে মারিফাত এর শিক্ষা লাভ করা ও খিলাফত এর ‘খিরকা’ লাভ করাতো দূরের কথা।

আল্লামা মুল্লা আলী আল কারী আল্লামা ইবনে হাযার আল আসকালানীর উদ্বৃতি দিয়ে লিখেছেনঃ

-সূফী ও মারিফাতপন্থীরা যেসব তরীকা ও নিয়ম-নীতি প্রমাণ করতে চায়, প্রমাণ হওয়ার মতো কোন জিনিসই নয়। সহীহ, হাসান বা যয়ীফ কোনো প্রকার হাদীসেই এ কথা বলা হয়নি যে, নবী করীম(স) তাঁর কোনো সাহাবীকে তাসাউফপন্থীদের প্রচলিত ধরনের খিলাফতের ‘খিরকা’(বিশেষ ধরনের জামা বা পোষাক)পড়িয়ে দিয়েছেন। সেসব করতে তিনি কাউকে হুকুমও করেননি। এ নিয়ে যা কিছু বর্ণনা করা হয় তা সবই সুস্পষ্টরূপে বাতিল। তাছাড়া হযরত আলী(রা) হাসান বসরীকে ‘খিরকা’ পরিয়েছেন(মারিফাতের খিলাফত দিয়েছেন) বলে যে দাবি করা হয়, তা সম্পূর্ণরূপে মনগড়া মিথ্যা কথা। কেননা হাদীসের ইমামগণ প্রমাণ করতে পারেননি যে, হাসান বসরী হযরত আলীর নিকট হতে কিছু শুনেছেন-তাঁকে হযরত আলীর ‘খিরকা’ পরিয়ে দেয়াতো দূরের কথা।

মুল্লা আলী কারী আরও লিখেছেনঃ

-এমনিভাবে তাসাউফপন্থীদের মধ্যে মুরীদকে তালকীন করা-রূহানী ফায়েজ দেয়ার যে ব্যাপারটি চালু করেছে, তাকে হাসান বসরীর সূত্রে হযরত আলীর সাথে সম্পর্ক পাতিয়ে নেয়ারও শরীয়তে কোনোই ভিত্তি নেই।

বস্তুত তাসাউফপন্থী লোকদের এ একটি অমূলক ধারণামাত্র। শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী এ সম্পর্কে লিখেছেনঃ

-সূফী বা তাসাউফপন্থীদের কথা যে, এসব তরীকতের সিলসিলা হযরত আলী (রা) পর্য্ন্ত পৌছে গেছে-এর জবাব এই যে, এটি পীর মুরীদের মুখে ধ্বনিত ও প্রসিদ্ধ একটি কথা। কিন্তু অনুসন্ধান করে জানা গেছে যে, এ কথার মূলে কোনোই ভিত্তি ও সত্য নেই।

এ পর্যায়ে তিনি আরো লিখেছেন যে, প্রসিদ্ধ দু রকমের হয়ে থাকে। এক রকমের প্রসিদ্ধ কথা যা সকল জ্ঞানী মনীষীদের নিকটই প্রসিদ্ধ। আর এক প্রকারের প্রসিদ্ধ কথা হলো, যা কেবল মাত্র একদল লোকের নিকট প্রসিদ্ধ। হযরত আলীর নিকট হতে মারিফাতের ইলম শুরু এ কথাটা কেবল এই সূফী পীরদের নিকটই প্রসিদ্ধ; অন্য কারোরই এ কথা জানা নেই। আসলে এ কথাটাই বাতিল। কিংবা বলা যায়, একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। শেষের জমানার লোকেরা এটাকে রচনা করেছে ও কবুল করেছে। আর এ ধরনের কথা আদৌ গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। মারিফাতের যেসব তরীকা, মুরাকাবা-মুশাহিদা ও যিকির এখনকার পীরেরা তাদের মুরীদদের শিখিয়ে থাকে তা যে রাসূলে করীম(স) বা সাহাবায়ে কিরামের জামানায় ছিলনা, শাহ দেহলভী সে কথাও ঘোষণা করেছেন।

তিনি বলেছেনঃ

-জ্ঞাতব্য বিষয় হচ্ছে, সূফী পীরদের তাসাউফের রীতিনীতি সাহাবা ও তাবেয়ীদের যুগে ছিলনা। উপায় উপার্জন ত্যাগ করা, তালিযুক্ত পোশাক পরা, বিয়ে ঘর সংসার না করা ও খানকার মধ্যে বসে থাকা সেকালে প্রচলিত ছিলনা।

মারিফাত পন্থীদের বিশ্বাস, মারিফাতের এ কর্মপন্থা পুরোপুরি অনুসরণ করে চললেই পথিক-সালেক-নিগূঢ় তত্ত্ব (হাকীকত) কে জানতে পারে। আর শেষ পর্য্ন্ত এ মারিফাত এই তত্ত্ব লাভ করে যে, বাহ্য দৃশ্যমান এ জিনিসগুলো নির্ধারণ হিসেবে যদিও আল্লাহ হতে ভিন্ন জিনিস; কিন্তু মূল ব্যাপারের দৃষ্টিতে তা-ই হলো মূল আল্লাহ। আল্লাহ ও বাহ্যিক জিনিসগুলো মধ্যে যে পার্থক্য মনে হচ্ছে, তা হলো আমাদের ভ্রম। অর্থাৎ বাইরে দৃশ্যমান বর্তমান জিনিসের বৈচিত্র ও বিপুলতা সৃষ্টির ধোঁকা বা মায়া। অন্য কথায় বলা চলে, এ কর্মপন্থা অনুসরণ করলে মানুষ শেষ পর্য্ন্ত দৃষ্টি বিভ্রম হতে মুক্তি পেতে পারে। আর তখন মনে হয়, এক আল্লাহকে-ই এই বিপুলতার রূপে দেখতে পাচ্ছি। এ লোকদের মতে এ-ই হচ্ছে তওহীদের মারিফাত।

কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে যে, এসব তত্ত্বকথাই হচ্ছে বেদ-উপনিষদের দর্শন-বেদান্তবাদ। আর এ দর্শনের সঠিক পরিচয় হলো অদ্বৈতবাদ। মানে, আল্লাহ ও জগত কিংবা স্রষ্টা ও সৃষ্টি আসলে এক ও অভিন্ন। যা স্রষ্টি তাই স্রষ্টা এবং যিনি স্রষ্টা তিনিই সৃষ্টি। অদ্বৈতবাদী আদর্শের এই হলো গোড়ার কথা। আর তা-ই হচ্ছে হিন্দু ধর্মের তত্ত্ব, যা বর্তমান পীর-মুরীদী ধারায় ইসলামের মারিফাত নাম ধারণ করে মুসলিম সমাজে প্রচলিত হয়েছে এবং এ যে সুস্পষ্ট শিরক তাতে এক বিন্দু সন্দেহের অবকাশ নেই।

বস্তুত ইসলাম এক সর্বাত্বক দ্বীন। এতে এক ব্যক্তির মন হৃদয় অন্তর একান্তভাবে আল্লাহর জন্য খালিস করে দেয়ার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বাস্তব জীবনের সর্বদিক ও বিভাগ, সব কাজ ও বিষয় সম্পর্কেই বিস্তারিত বিধান দেয়া হয়েছে। তাতে শরীয়ত ও তরীকত কোনো বিচ্ছিন্ন,স্বতন্ত্র ও পরস্পর বিপরীত জিনিস নয়। যেমন দুই বিপরীত জিনিস নয় ব্যক্তির দেহ ও মন। দেহ ও মনের সমন্বয়েই যেমন মানুষ, তেমনি শরীয়ত-তরীকত বা মারিফত সবই একই জিনিসের এদিক ওদিক- বাহির ও ভিতর এবং একই কুরআন হাদীস হতে উৎসারিত।

কুরআন থেকেই পাওয়া যায় আল্লাহর সঠিক ও সার্বিক পরিচয়, তাঁর জাত ও সিফাত সম্পর্কিত নাম এবং তাঁর কুদরতের বিচিত্র বর্ণনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে। কুরআন থেকেই জানা যায় আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার, তাঁর বন্দেগী কবুল করার এবং ঐকান্তিক নিষ্ঠার সাথে তাঁর আদেশ নিষেধ পালন করার শরীয়তী বিধান। এগুলোর নিগুঢ় তত্ত্ব, মাহাত্ম্য ও অন্তর্নিহিত তাৎপর্য্ যখন মানুষের মর্মমূলে প্রতিষ্ঠিত হয়, তখনি তা হয় তরীকত বা মারিফাত। মানুষ যখন শরীয়ত মোতাবিক আমল করে, তখন হয় শরীয়তের আমল। আর এই আমল যদি ইখলাস, আল্লাহর ভয় ও আল্লাহ ভালোবাসায় সিক্ত ও সঞ্জীবিত হয়ে ওঠে, আল্লাহকে সব সময় হাজির নাজির অনুভব করতে পারে, তখনি তা হয় মারিফাত বা তরীকত। ইলম ও আমলের মাঝে যদ্দিন দ্বন্ধ থাকবে মনে, ততোদিন তা হবে শরীয়ত পর্যায়ের ব্যাপার। আর যখন এ দ্বন্ধে মন অন্তর মুতমায়িন হবে, পুরোপুরিভাবে আত্মসমর্পণ করবে আমলের নিকট, আমলময় হয়ে উঠবে জীবন, তখন তরীকত বা মারিফাত অর্জিত হলো বলা যাবে। শায়খ আবদুল মুহাদ্দিসে দেহলভী লিখেছেনঃ “হাকীকতকে শরীয়ত থেকে কোনো বিচ্ছিন্ন জিনিস মনে করে নিওনা।” আসলে হাকীকত শরীয়তেরই আসল জাওহার ও মূল প্রাণবস্তু। আর শরীয়ত হচ্ছে হাকীকতেরই বাহ্য রূপ ও অবয়ব।

শরীয়ত হচ্ছে এই যে, আল্লাহ ও রাসূলে করীম(স) যা কিছু বলেছেন তা বিশ্বাস করতে হবে এবং তদনুযায়ী আমল করতে হবে। আর ‘হাকীকত’ হচ্ছে এই যে যেসব বিষয়ে ইয়াকীন রয়েছে, তার প্রতি বিশ্বাসটা যেন সর্বাধিক দৃঢ় ও প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে।

শায়খ মহি উদ্দিন আবদুল কাদির জিলানি কুদ্দেশা সিররুহুশ বলেছেনঃ ‘যে হাকীকত শরীয়ত প্রত্যাখ্যান করবে, তাই ‘জান্দাকা’-“দ্বীন বিরোধিতা”- এ বাক্যের অর্থ হলো, কেউ যদি এমন কাশফ লাভ করে, যা দ্বীন ও শরীয়ত মোতাবিক নয়, আর সে যদি তাকেই নিজের আকীদা বানিয়ে নেয়, তাহলে সে কাফির ও জিন্দীক হয়ে যাবে।

আবু সালমান দুররানী বলেনঃ “অনেক সময় সলুক-পথের ‘অজুদ’ ও শোকর এর কোনো তত্ত্ব পূর্ণ সৌন্দর্য্ মন্ডিত হয়ে আমার সামনে এসে উপস্থিত হয়; কিন্তু আমি তা কবুল করিনা। আমি বলি দুজন বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য স্বাক্ষী তোমার সত্যতা ও যথার্থতা সম্পর্কে যতক্ষণ না সাক্ষ্য দেবে, ততক্ষণ আমি তোমাকে কিছুতেই গ্রহণ করতে পারিনে। আর এ দুজন বিশ্বস্ত সাক্ষী কে?…তাহলো আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত।”(শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মকতুব নং ১৩)

বস্তুত এ দুয়ের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই, নেই কোনো বিরোধ বা দ্বন্ধ, নেই কোনোরূপ দ্বৈততা। বরং সত্য কথা এই যে, এখানে তরীকত বা মারিফাতের যে পরিচয় দেয়া হলো, তা-ই হলো প্রকৃতপক্ষে দ্বীন ইসলাম। এই অখন্ড ইসলামই আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেছেন, কুরআন এই দ্বীন ইসলামই পেশ করেছে, নবী করীম(স) তাঁর জীবন, চরিত্র, আমল ও যাবতীয় কাজের মাধ্যমে এই অবিচ্ছিন্ন দ্বীনকেই দুনিয়ার সামনে উজ্জ্বল করে তুলে ধরেছেন এবং সম্পূর্ণ জিনিসেরই নাম হলো কুরআনের ভাষায় শরীয়ত। কাজেই না এ শরীয়তকে অস্বীকার করতে পারে কোনো মুসলমান না এ তরীকত বা মারিফাতকে। তাসাউফের বিশেষজ্ঞ মনীষীদের মতে তাসাউফ হলোঃ উত্তম চরিত্রই তাসাউফ। কিন্তু উত্তরকালে শরীয়ত ও তরীকত দুটি বিচ্ছিন্ন জিনিস হয়ে গিয়ে দুই বিপরীত ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। শরীয়ততো কুরআন ও সুন্নাতের ভিত্তিতে অবিকৃত অপরিবর্তিত রয়েছে-থাকবে চিরদিন, কিন্তু তরীকত আর মারিফাতের নামে যে অলিখিত ও ‘সীনা-বা- সীনা’ চলে আসা স্বতন্ত্র জিনিসটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠল, তাতে উত্তম নির্মল চরিত্রের কোনো গুরুত্বই থাকলোনা; তাতে পুঞ্জীভূত হয়ে উঠল নানাবিধ শিরকের আবর্জনা। আর এ ক্ষেত্রে এ-ই হলো বিদয়াত।

মারিফাত বা তরীকত শরীয়ত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে যখন সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধারায় বইতে লাগলো, তখন তাতে এসে জমলো এমন সব জিনিস যা শরীয়ত তথা কুরআন ও সুন্নাত থেকে গৃহীত নয়। তাতে শামিল হলো গ্রীক দর্শন, প্রাচীন মিশরীয় দর্শন এবং ভারতীয় বেদান্ত দর্শন। এ সবের সমন্বয়ে মারিফাত বা তরীকতের এই স্বতন্ত্র ইলম গড়ে উঠল; যার নাম রাখা হলো ‘ইলমে তাসাউফ’ বা শুধু তাসাউফ। অথচ পূর্বে কোনো যুগেই এই নামে কোনো ইলম ইসলামে ছিলনা, তাই মুসলমানরা জানতো না যে, ইসলামে শরীয়ত ও মারিফাতের দ্বৈততার ধারণা অতি বড় বিদয়াত। যেমন অতি বড় বিদয়াত হচ্ছে ইসলামে ধর্ম ও রাজনীতিকে দুই বিচ্ছিন্ন জিনিস মনে করা। ধর্ম ও রাজনীতিকে বিচ্ছিন্ন ও পারস্পরিক সম্পর্কহীন করে রাজনীতির ক্ষেত্রে ফাসিক-কাফির-জালিম লোকদের কর্তৃত্ব কায়েম করা হয়েছে। আর দ্বীনকে সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে শুধু নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাতের মধ্যে। অনুরূপভাবে শরীয়ত ও তরীকতকে বিচ্ছিন্ন করে সৃষ্টি হয়েছে এক শ্রেণীর জাহিল পীর। মুসলিম সমাজে চলছে পীরবাদ নামে এক সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র মুশরিকী প্রতিষ্ঠান। এ পীরবাদ চিরদিনই ফাসিক-ফাজির-জালিম শাসকদের- রাজা বাদশাহদের – আশ্রয়ে লালিত পালিত ও শাখায় পাতায় সুশোভিত হয়েছে। সাধারণত পীরেরা চিরদিনই এ ধরনের শাসকদের সমর্থন দিয়েছে। তারা কোনো দিনই জালিম ফাসিক শাসকদের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করেনি। বরং সব সময়ই “আল্লাহ আপ কা হায়াত দারাজ করে” বলে দুহাত তুলে তাদের জন্য দো’আ করেছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন