hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সুন্নাত ও বিদয়াত

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

৫০
বিদয়াত প্রতিরোধ ও সুন্নাতের প্রতিষ্ঠা
সুন্নাত ও বিদয়াতের এ দীর্ঘ আলোচনা থেকে একথা প্রমাণিত হয় যে, ইসলামের পূর্ণাঙ্গ আদর্শই হচ্ছে এবং এরই বিপরীতকে বলা হয় বিদয়াত। সুন্নাত হচ্ছে ‘উসওয়ায়ে হাসান’-নিখুঁত, উৎকৃষ্টতম ও উন্নততর আদর্শ; যা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমানদার প্রত্যেকটি মানুষের জন্যিই একান্তভাবে অনুসরণীয়। বস্তুত ইসলামী আদর্শবাদী যে, সে এই আদর্শকে মনে মগজে ও কাজে কর্মে পুরোপুরিভাবে গ্রহণ ও অনুসরণ করে চলে। আর সেই হচ্ছে প্রকৃত মুসলিম।

পক্ষান্তরে ইসলামের বিপরীত চিন্তা-বিশ্বাস ও বাস্তব রীতিনীতি যাই গ্রহণ করা হবে, তাই বিদয়াত। তাই সে জাহিলিয়াত, যা খতম করার জন্য দুনিয়ায় এসেছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(স)। তিনি নিজে তাঁর নব্যুয়তের জীবন-ব্যাপি অবিশ্রান্ত সাধনার ফলে একদিকে যেমন জাহিলিয়াতের বুনিয়াদ চূর্ণ করেছিলেন এবং বিদয়াতের পথ রুদ্ধ করেছেন চিরতরে অপরদিকে তেমনি করেছেন সুন্নাতের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা। সাহাবীদের সমাজকেও তিনি এ আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তুলেছিলেন পুরো মাত্রায়। তিনি নিজে এ পর্যায়ে এত অসংখ্য ও মহামূল্য হেদায়েত দিয়ে গেছেন, যার বর্ণনা করে শেষ করা সম্ভব নয়। তিনি একান্তভাবে কামনা করেছিলেন তাঁর তৈরী সমাজ যেন কোনো অবস্থায় বিদয়াতের প্রশ্রয় না দেয়, বিচ্যূত না হয় সুন্নাতের আলোকো্জ্জ্বল আদর্শ রাজপথ থেকে। শুধু তাই নয়, তাঁর তৈরি সমাজ যেন প্রতিনিয়ত বিদয়াতের প্রতিরোধে এবং সুন্নাতের পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে ব্যতিব্যস্ত ও আত্মনিয়োজিত থাকে- এই ছিল তাঁর ঐকান্তিক কামনা। তাঁর এ পর্যায়ের বাণীসমূহের মধ্য থেকে কিছু কথা আমরা এখানে উল্লেখ করছি।

নবী করীম(স) হযরত বিলাল ইবনে হারীস(রা) কে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছিলেনঃ (আরবি)

-জেনে রেখো, যে লোক আমার পরে আমার কোনো সুন্নাতকে যা মরে গেছে তা পুনরুজ্জীবিত করবে, তার জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে সেই পরিমাণ সওয়াব ও প্রতিফল, যা পাবে সে, যে তদনুযায়ী আমল করেছে। কিন্তু যারা তদনুযায়ী আমল করবে তাদের প্রতিফল থেকে বিন্দুমাত্র সওয়াব হ্রাসপ্রাপ্ত হবেনা। পক্ষান্তরে যে লোক কোনো গোমরাহীপূর্ণ বিদয়াতের উদ্ভাবন ও প্রচলন করবে, যার প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কিছুমাত্র রাজি নন-তার গুনাহ হবে সেই পরিমাণ, যতখানি গুনাহ হবে তার, যে তদনুযায়ী আমল করবে।কিন্তু তাদের গোনাহ হতে কিছুমাত্র হ্রাস করা হবেনা।

এ পর্যায়ে তাঁর আর একটি হাদীস হলো এই। হযরত আনাস (রা) কে লক্ষ্য করে তিনি বলেছিলেনঃ (আরবি)

-হে প্রিয় পুত্র! তুমি যদি পারো সকাল সন্ধ্যা সর্বক্ষণই কারো প্রতি মনে কোনো ক্লেদ রাখিবেনা, তবে অবশ্যই তা করবে। হে প্রিয় পুত্র! এ হচ্ছে আমার উপস্থাপিত সুন্নাতের অন্যতম। আর যে লোক আমার সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিত করলো, সে আমাকে ভালোবাসল, আর যে আমাকে ভালোবাসল, সে পরকালে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে।

প্রথমোক্ত হাদীস থেকে স্পষ্ট জানা যায় যে, রাসূলে করীমের উপস্থাপিত ও প্রতিষ্ঠিত সুন্নাতও কোনো এক সময় মরে যেতে পারে, পরিত্যক্ত হতে পারে মুসলিম সমাজ কর্তৃক, তা তিনি ভালো করেই জানতেন এবং বুঝতেন। কিন্তু সে সুন্নাত চিরদিনের তরেই মৃত হয়ে থাকবে ও মিটে যাবে, কোনোদিনই তা পুনরুজ্জীবিত ও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবেনা- তা তিনি ভাবতেও পারেননি। এই কারণেই তিনি তাঁর তৈরি করা উম্মাতকে মরে যাওয়া সুন্নাতের পুনরুজ্জীবন সাধনের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন এ হাদীসসমূহের মাধ্যমে। অনুরূপ কোনো সুন্নাতও যখন মরে যেতে পারে, তখন অবশ্যই তাঁর গড়া উম্মাতের মাঝে বিদয়াতের উদ্ভাবন ও অনুপ্রবেশও ঘটতে পারে, এ কথাও তিনি বুঝতেন স্পষ্টভাবে। এ কারণেই তিনি বিদয়াত উদ্ভাবন ও প্রচলন করার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে সাবধান করে গেছেন তাঁর উম্মতকে।

শেষোক্ত হাদীসে প্রথমে নবী করীম(স) এর একটি বিশেষ সুন্নাতের বিশ্লেষণ দেয়া হয়েছে। সুন্নাতটি হলো মুসলিম সমাজের কোনো লোকের মনেই অপর লোকের বিরুদ্ধে কোনোরূপ হিংসা বা বিদ্বেষের স্থান না দেয়া। এ হিংসা বিদ্বেষ যে বড় মারাত্মক ঈমান ও আমলের পক্ষে এবং পারস্পরিক সম্পর্ক ও সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলার দৃষ্টিতে, এ হাদীসাংশ থেকে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নবী করীম(স) বলেছেন যে, এরূপ পরিচ্ছন্ন মন নিয়ে কাল যাপন করাই আমার আদর্শ, আমার সুন্নাত। কোনো সময় যদি সমাজ, সমাজের ব্যক্তিগণ-এ অতি উন্নত সুন্নাত পালনের গুণ হারিয়ে ফেলে, তাহলে তা হবে সামগ্রিকভাবে জাতির লোকদের আদর্শ বিচ্যূতি। আর মুসলমানদের আদর্শ বিচ্যূতি রাসূল(স) এর নিকট কিছুতেই মনোঃপুত হতে পারেনা। তাই তিনি ছোট্ট ধরনের এ সুন্নাতকে উপলক্ষ করে সমগ্র মুসলিম উম্মাতকে এক মহামূল্য নীতি বাণী শুনিয়েছেন। তা হলো এই যে, যে আমার কোনো সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলবে, অ-চালু সুন্নাতকে চালু করবে, সে-ই রাসূলকে ভালোবাসল। অন্য কথায়, যে লোক রাসূলকে ভালোবাসে তার পক্ষেই রাসূলের সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিত করা-পুনরুজ্জীবনের চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করা সম্ভব হতে পারে, অন্য কারো পক্ষে নয়। শুধু তাই নয়, রাসূলের প্রতি ভালোবাসা পোষণের অকৃত্রিমতা ও নিষ্ঠা সে-ই প্রমাণ করতে পারল। যে লোক তার সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিত করার কোনো চেষ্টা করলোনা, তার মনে রাসূলের প্রতি একবিন্দু পরিমাণ ভালোবাসা যে আছে, তার কোনো প্রমাণ-ই থাকতে পারেনা। তা দাবি করারও তার কোনো অধিকার নেই। অথচ রাসূলের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা পোষণ করা ঈমানের মৌল শর্ত। অতএব যারাই রাসূলের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে, তারাই ভালোবাসে রাসূলের সুন্নাতকে এবং যারাই রাসূলের সুন্নাতকে ভালোবাসে তারা যেমন তাঁর সুন্নাতকে উপক্ষা করতে পারেনা, পারেনা সে সুন্নাতের মরে যাওয়া মিটে যাওয়াকে বরদাশত করতে, পারেনা তার মিটে যাওয়ার পর নির্বাক, নিশ্চুপ এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকতে। রাসূলের প্রতি ঈমান ও ভালোবাসাই তাকে সুন্নাত প্রতিষ্ঠার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য এবং বিদয়াতকে প্রতিরোধ করার জন্য পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করবে, নিশ্চিন্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকতে দেবেনা এক বিন্দু সময়ের তরেও। নবীর প্রতি এরূপ গভীর ভালোবাসা এবং নবীর সুন্নাতের এরূপ অকৃত্রিম মমত্ব বোধ মুমিন মাত্রেরই দিলে বর্তমান থাকা একান্ত প্রয়োজন। আরো প্রয়োজন এ মুমিনদের সমন্বয়ে গড়া এক জনসমষ্টির, যারা ঈমানী শক্তিতে হবে বলীয়ান, সুন্নাতের ব্যাপারে হবে ক্ষমাহীন এবং বিদয়াত প্রতিরোধে অনমনীয়। নবী করীম(স) এমনি এক সুসংবদ্ধ জনসমষ্টি গড়ে গিয়েছিলেন। যতদিন এ জনসমষ্টি দুনিয়ায় ছিল ততোদিন পর্য্ন্ত মুসলিম সমাজে কোনো বিদয়াত প্রবেশ করতে পারেনি, পারেনি কোনো সুন্নাত পরিত্যক্ত হতে। কিন্তু উত্তরকালে ইতিহাসে এমন এক অধ্যায় আসে, যখন মুসলিম সমাজে বিদয়াত প্রবেশ করে এবং সুন্নাত হয় পরিত্যক্ত। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনো পর্যায়েই এমন দেখা যায়নি, যখন মুসলিম সমাজে বিদয়াতের প্রতিবাদ এবং সুন্নাত প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টানুবর্তী লোকের অভাব ঘটেছে। অতীতে সুন্নাত ও বিদয়াতের মাঝে প্রচন্ড দ্বন্দ্ব ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করছে। কখনো বিদয়াতপন্থীরা বাহ্যত জয়ী হয়েছে, আর কখনো প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে সুন্নাত প্রতিষ্ঠাকামীরা। এ জয় পরাজয়ও এক শাশ্বত সত্য। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম সমাজে বিদয়াতের প্রভাব প্রচন্ডরূপে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, বিদয়াতের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এখানে অবাধে। প্রতিবাদ হচ্ছেনা তা নয়; কিন্তু বিদয়াত যে প্রচন্ড শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আসছে, প্রতিবাদ হচ্ছে তার তুলনায় অত্যন্ত ক্ষীণ কন্ঠে, অসংবদ্ধভাবে প্রায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে। অথচ প্রয়োজন সুসংবদ্ধ এক প্রবল প্রতিরোধের। শুধু নেতিবাচক প্রতিরোধই নয়, প্রয়োজন হচ্ছে ইতিবাচকভাবে সুন্নাত প্রতিষ্ঠার এক সামগ্রিক ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টার। এরূপ এক সর্বাত্মক ও পূর্ণাঙ্গ প্রচেষ্টাই এখন মুসলিম সমাজকে রক্ষা করতে পারে বিদয়াতের এ সয়লাবের স্রোত থেকে। অন্যথায় এ সমাজ বিদয়াতের স্রোতে ভেসে যেতে পারে রসাতলে। তাই আজ ‘সুন্নাত ও বিদয়াত’ পর্যায়ে এ দীর্ঘ আলোচনা সমাজের সামনে উপস্থাপিত করা হলো। বিদয়াত প্রতিরুদ্ধ হোক, প্রতিরুদ্ধ হোক কেবল আংশিক বিদয়াত নয়, বিদয়াতের কতকগুলো ছোটোখাট অনুষ্ঠান নয়, প্রতিরুদ্ধ হোক সম্পূর্ণরূপে সর্বাত্মকভাবে, মূলোৎপাটিত হোক বিদয়াতের এ সর্বগ্রাসী বিষবৃক্ষ। আর সে সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হোক সুন্নাত। কেবল পোশাকী সুন্নাত নয়, প্রকৃত সুন্নাত, সম্পূর্ণ সুন্নাত। সেই সুন্নাত, যা দুনিয়ায় রেখে গেছেন সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ(স) চিরদিনের তরে। বিশ্বমানবতার জন্য এই হচ্ছে আমার একমাত্র কামনা, অন্তরের একান্ত বাসনা। এ দাওয়াতই আমি আজ পেশ করছি সাধারণভাবে সব মুসলমানের সামনে, বিশেষ করে আলিম সমাজের সামনে এবং আরো বিশেষভাবে ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী যু্ব সমাজের সামনে।

সুন্নাত ও বিদয়াত সম্পর্কে এ দীর্ঘ আলোচনায় দলীল ও প্রমাণের ভিত্তিতে এ কথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, কুরআন ও সুন্নাহ বহির্ভূত কোনো কাজ বা বিষয়, ব্যাপার, নিয়ম-প্রথা ও পদ্ধতিকে ধর্মের নামে নেক আমল ও সওয়াবের কাজ বলে চালিয়ে দেয়াই হলো বিদয়াত- যে সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাত থেকে কোনো সনদ পেশ করা যাবেনা, যার কোনো নজীর পাওয়া যাবেনা খোলাফায়ে রাশেদীন এর আমলে।

বস্তুত নিজস্বভাবে শরীয়ত রচনা এবং আল্লাহর কুদরত ও উলুহিয়াতে অন্যকে শরীক মনে করা, ও শরীক বলে মেনে নেয়াই হচ্ছে বিদয়াত। আর আল্লাহর শরীক বানানো বা শরীক আছে মনে করা যে কত বড় গুনাহ তা কারোই অজানা নয়। এ পর্যায়ে কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি উল্লেখযোগ্য। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেনঃ

(আরবি)

أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ ۗ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ [ ٤٢ : ٢١ ]

– তাদের এমন শরীক আছে নাকি, যারা তাদের জন্য দ্বীনের শরীয়ত রচনা করে এমন সব বিষয়ে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? চূড়ান্ত ফয়সালার কথা যদি আগেই সিদ্ধান্ত করে না নেয়া হতো, তাহলে আজই তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত করে দেয়া হতো। আর জালিমদের জন্য কঠিন পীড়াদায়ক আযাব রয়েছে। (আশ শূরাঃ২১)।

এ আয়াতের অর্থ হলোঃ আল্লাহর শরীয়তকে যারা যথেষ্ট মনে করেনা, অন্যদের রচিত আইন ও শরীয়ত মনে করা যারা জরুরী মনে করে এবং আল্লাহর দেয়া শরীয়তের বাইরে-তার বিপরীত-মানুষের মনগড়া শরীয়ত ও আইনকে যারা আল্লাহর অনুমোদিত সওয়াবের কাজ বলে বিশ্বাস করে তারা জালিম। আর এ জালিমদের জন্যই কঠিন আযাব নির্দিষ্ট।

আল্লাহর শরীয়তের বাইরে মানুষের মনগড়া শরীয়ত ও আইন পালন করাই হলো বিদয়াত। আর এ আয়াতের ঘোষণা অনুযায়ী এ বিদয়াত হলো শিরক। কেননা আসলে তো আল্লাহর শরীক কেউ নেই, কিছু নেই। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বানানো শরীয়ত বা আইন পালন করতে মানুষ বাধ্য নয়। অতএব আল্লাহর শরীয়তের দলীল ছাড়া যারাই ফতোয়া দেয়, মাসআলা বানায়, রসম ও তরীকার প্রচলন করে, তারাই বিদয়াতের শিরকে নিমজ্জিত হয়।

বিদয়াত পালনে শুধু আল্লাহরই সাথে শিরক করা হয়না, রাসূলে করীম(স) এর রিসালাতেও শিরক করা হয়। কেননা আল্লাহর নাযিল করা শরীয়ত রাসূলই পেশ করে গেছেন পুরোমাত্রায়-রাসূল পাঠাবার উদ্দেশ্যও তাই। আল্লাহর দ্বীন কি, তা আল্লাহর অনুমতিক্রমে রাসূলেই নির্দেশ করে গেছেন।

রাসূলের দ্বারাই আদেশ-নিষেধ, হালাল-হারাম, জায়েয-নাজায়েয, সওয়াব-আয়াবের সীমা নির্ধারিত হয়েছে। এরূপ অবস্থায় অপর কেউ যদি রাসূলের শরীয়তের বাইরে কোনো জিনিসকে শরীয়তের জিনিস বলে পেশ করে এবং যে তা মেনে নেয়, সে যুগপৎভাবে আল্লাহর সাথেও শিরক করে, শিরক বানায় রাসূলের সাথেও। সে তো রাসূলের দায়িত্ব ও মর্যাদা নিজের দখলে করে নিতে চায় কিংবা রাসূল ছাড়া এ মর্যাদা অন্য কাউকে দিতে চায়। ইসলামের পূর্ণাঙ্গ দ্বীনে সে নতুন আচার রীতি প্রবেশ করিয়ে দিয়ে নিজেই নবীর স্থান দখল করে, যদিও মুখে তারা দাবি করেনা। আর রাসূলে করীম হযরত মুহাম্মদ(স) এর পর আর কেউ নবী হবেনা, হতে পারেনা, এ কথা তো ইসলামের বুনিয়াদী আকীদারই অন্তর্ভূক্ত।

সহীহ মুসলিম ও মুসনাদে আহমদ বর্ণিত একটি হাদীসের কথা এখানে উল্লেখ করতে হচ্ছেঃ

-হাশরের ময়দানে রাসূলে করীম(স) তাঁর উম্মতকে পেয়ালা ভরে ভরে ‘হাওযে কাওসার’ এর পানি পান করাবেন। লোকেরা একদিক থেকে আসতে থাকবে ও পানি পান করে পরিতৃপ্ত হয়ে অপর দিকে সরে যেতে থাকবে। তখন নবী বলেনঃ আমার ও তাদের মাঝে এক প্রতিবন্ধক দাঁড় করিয়ে দেয়া হবে। তারা আমার নিকট পোঁছতে পারবেনা। আমি আল্লাহর নিকট দাবি করে বলবো-হে আল্লাহ! এরা তো আমার উম্মত, এদের আসতে বাঁধা দেয়া হলো কেন? তখন আল্লাহ তা‘আলা জবাব দেবেনঃ এই লোকেরা তোমার মৃত্যুর পর কি কি বিদয়াত উদ্ভাবন করছে তা তুমি জাননা। বলা হবেঃ এরা তো তোমার পেশ করা দ্বীনকে বদলে দিয়েছে, বিকৃত করেছে। (এজন্য বিদয়াতীরা-‘হাউযে কাওসার’ এ কখনো হাযির হতে পারবেনা)। নবী করীম(স) বলেনঃ তখন আমি তাদের লক্ষ্য করে বলবো-দূর হয়ে যাও, দূর হয়ে যাও। আমার চোখের সামনে থেকে সরে যাও।

বিদয়াত ও বিদয়াতপন্থীদের মর্মান্তিক পরিণতির কথা এ সহীহ হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে জানা গেল। এমতাবস্থায় বিদয়াতকে সর্বতোভাবে পরিহার করে চলা এবং সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে একে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার জন্য চেষ্টা করা যে ঈমানদার মুসলমানদের কত বড় কর্তব্য তা বলাই বাহুল্য। আর এজন্য সঠিক কর্মনীতি হচ্ছে এই যে, বিদয়াত মুক্ত ইসলামের পূর্ণাঙ্গ আদর্শ প্রচার করে জনমত গঠন করতে হবে এবং জনমতের জোরে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে হবে। অতঃপর এই ইসলামী রাষ্ট্র শক্তিকে পুরোপুরি প্র্রয়োগ করতে হবে জীবনে ও সমাজে অবশিষ্ট বিদয়াতের শেষ চিহ্নকেও মুছে ফেলবার কাজে। এ পন্থায় কাজ করলে বিদয়াতও মিটবে এবং সুন্নাত ও প্রতিষ্ঠিত হবে। বস্তুত এই হচ্ছে ইসলামের কর্মনীতি।

সর্বশেষ আমি ইমাম গাযযালীর একটা কথা এখানে উদ্ধৃত করে এ গ্রন্থের সমাপ্তি ঘোষণা করতে চাই। তিনি বলেছেনঃ (আরবি)

-বিদয়াত যত রকমেরই হোক, সবগুলোরই দ্বার রুদ্ধ করতে হবে আর বিদয়াতীদের মুখের ওপর নিক্ষেপ করতে হবে তাদের বিদয়াতসমূহ-তারা তাকে যতোই বরহক বলে বিশ্বাস করুকনা কেন!

— সমাপ্ত —

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন