hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সুন্নাত ও বিদয়াত

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

২৬
আল্লাহর নৈকট্য লাভে অসীলা’র বিদয়াত
কুরআন ও হাদীসে যে সর্বাত্মক তওহীদী আকীদা পেশ করেছে, তদানুযায়ী একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই হলেন সমগ্র বিশ্বলোকের নিরংকুশ অধিকারী কর্তা ও পরিচালক। মানুষ কেবল এক আল্লাহরই বন্দেগী দাসত্ব ও আনুগত্য করবে, জীবনের সমগ্র ক্ষেত্রে এক আল্লাহরই দেয়া আইন বিধান পালন করে চলবে এবং এই সব ব্যাপারেই একমাত্র অনুসরণ করবে আল্লাহর রাসূলের। হেদায়াত লাভ করবে রাসূলের নিকট থেকে। তিনি যে পথ, পন্থা ও উপায় এবং কর্মনীতি উপস্থাপিত করেছেন, মানুষ তাদের সমগ্র কাজ সেই অনুযায়ীই সম্পন্ন করবে। কোনো কিছু চাইতে হলে কেবল তাঁরই নিকট চাইবে এবং কোনো কিছু পাওয়ার আশা করলেও কেবল তাঁরই নিকট হতে আশা করবে।

কুরআন মজীদে উদাত্ত ভাষায় বলা হয়েছেঃ

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٣: ٣١ ]

– তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তবে তোমরা আমার(নবীর) অনুসরণ করে চলো। তা হলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ খাতা মাফ করে দেবেন।

এই আয়াত অনুসারে আল্লাহকে ভালোবাসার, আল্লাহর বন্দেগী করার ইচ্ছা বান্দার মনে জাগাবার অনিবার্য্ ফলশ্রুতি যেমন রাসূলের অনুসরণ করা; তেমনি বাস্তব ক্ষেত্রে রাসূলের অনুসরণ করা ছাড়া আল্লাহকে ভালোবাসার কোনো দাবিই অর্থবহ হতে পারেনা। উপরন্তু আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার একমাত্র উপায়ই হচ্ছে রাসূলের অনুসরণ।

আল্লামা আলুসী এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ যে লোক আল্লাহর আনুগত্য করে তাঁর প্রতি ভালোবাসা দেখাল এবং তাঁর নবীর অনুসরণ করে তাঁর নৈকট্য অর্জন করলো, আল্লাহ তার জন্য ক্ষমাশীল ও দয়াবান।

রাসূলে করীম(স) কে মুসলমানদের জন্য একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে পেশ করা হয়েছে কোরআন মজীদে।

ইরশাদ হয়েছেঃ

لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا [ ٣٣ : ٢١ ]

-নিশ্চিতই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের চরিত্রে উত্তম অনুসরণীয় নমুনা ও আদর্শ রয়েছে। তাদের জন্য তা ফলপ্রসূ হবে যারা আল্লাহকে পেতে চায়, পরকালে মুক্তি চায় এবং আল্লাহকে খুব বেশি স্মরণ করে।

এ আয়াত অনুযায়ীও যে লোক আল্লাহকে পেতে চায়, পরকালের মুক্তি চায় এবং আল্লাহর জিকির করে বেশি বেশি করে, তার জন্য বাস্তব অনুসরণযোগ্য আদর্শ চরিত্র হচ্ছে রাসূলে করীম(স)। যে লোক তাঁকে অনুসরণ করবে সর্বোতভাবে, সে যেমন আল্লাহকে পাবে, পাবে পরকালীন মুক্তি, তেমনি তাঁর আল্লাহ জিকির বাস্তবরূপ লাভ করবে নবীর অনুসরণের মাধ্যমে, তারই মাঝে তা রূপায়িত ও প্রতিফলিত হয়ে উঠবে।

কুরআনের এসব উদাত্ত ঘোষণা অনুযায়ী মানুষ মানতে বাধ্য একমাত্র আল্লাহকে এবং অনুসরণ করতে বাধ্য একমাত্র রাসূলে করীম(স) কে। বস্তুত ইসলামের তওহীদী আকীকা অনুযায়ী আল্লাহকে পাওয়ার উপায় রাসূলের বাস্তব অনুসরণ ছাড়া আর কিছু নেই। রাসূলের জামানায়, সাহাবীদের সময়ে এবং তাবেই ও তাবে তাবেয়ীনের সময়েও এই ছিল ইসলামী সমাজের বাস্তবরূপ। আল্লাহকে পাওয়ার এছাড়া অন্য কোনো পথই তাঁদের জানা ছিলনা, তাঁরা অন্য কোনো উপায়ই গ্রহণ করতেননা। কিন্তু পরবর্তীকালে মানুষের ওপর চেপে বসে পীরত্বের বিদয়াত। সমাজে এক শ্রেণীর লোক পীর হয়ে বসে এবং দাবি করে যে, তারা আল্লাহর নিকট বান্দাদের পৌছার অসীলা বা মাধ্যম। তাদের গ্রহণ করলে আল্লাহকে পাওয়া যাবে আর তাদেরকে গ্রহণ না করলে আল্লাহকে পাওয়া যাবেনা (নাউজুবিল্লাহ)।

অথচ কুরআন থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহকে পাওয়ার জন্য রাসূলের অনুসরণে শরীয়ত পালন ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মাধ্যমের কোনো অবকাশই নেই, তার কোনো প্রয়োজনই নেই। বান্দার দো‘আ আল্লাহর নিকট সরাসরি পৌছে যায়, আল্লাহ সরাসরিভাবে বান্দার দো‘আ কবুল করে থাকেন, সে জন্য তিনি কোনো মাধ্যম গ্রহণ করতে বলেননি, দো‘আ কবুল হওয়ার জন্য তিনি কোনো মাধ্যম গ্রহণের শর্তও আরোপ করেননি। বরং এ পর্যায়ের যাবতীয় বিভ্রান্তি ও ভুল আকীদা দূর করে দিয়ে তিনি স্পষ্টভাষায় ঘোষণা করেছেনঃ

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ [٢: ١٨٦ ]

-হে নবী! আমার বান্দা যদি তোমার নিকট আমার বিষয়ে জিজ্ঞেস করে, তবে বলে দাও আমি অতি নিকটে, কোনো দো‘আকারী যখন আমাকে ডাকে তখন আমি তার দো‘আ র জবাব দিই-দো‘আ কবুল করি। অতএব আমারই নিকট জবাব পেতে চাওয়া তাদের কর্তব্য এবং আমার প্রতিই তাদের ঈমান রাখা উচিত। তাহলে সম্ভবত তারা সঠিক পথে চলতে পারবে।

আল্লাহ-ই সব দো‘আ প্রার্থনাকারীর দো‘আ কবুল করেন, কেবল তাঁরই নিকট দো‘আ করে তাঁরই নিকট থেকে তাঁর জবাব পেতে চেষ্টা করা উচিত, এ কথাই বলা হয়েছে উক্ত আয়াতে। আল্লাহর নিকট কোনো মাধ্যম ছাড়া পৌছা যায়না বলে বিদয়াতীরা যে ধারণা সৃষ্টি করেছে তার মূলোৎপাটন করা হয়েছে এ আয়াতে। “দো‘আ কারীর দো‘আ আমিই কবুল করি” বলে আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিলেন যে, আল্লাহর নিকট দো‘আ করতে এবং দো‘আ কবুল করাতে কোনো অসীলার প্রয়োজন নেই। সঠিকভাবে আল্লাহর নিকট দো‘আ করতে পারলে আল্লাহ সরাসরিভাবেই তা কবুল করে থাকেন। “আমারই জবাব পেতে চাওয়া কর্তব্য” বলে আল্লাহ বুঝিয়ে দিলেন যে, যে লোক দো‘আ করবে তার মনে এ দো‘আ কবুলের জন্য বিশেষ আগ্রহ, উৎসাহ ও আবেগ থাকা বাঞ্চনীয়। এ জিনিস অপরের দ্বারা হয়না, অসীলা কিছুই করতে পারেনা। আর ‘‘আমার প্রতিই ঈমান রাখা উচিত” বাক্য দ্বারা বলে দিলেন যে, আমার এই ঘোষণাকে মনে রেখে আল্লাহকে আপনার অতি নিকটে বলে বিশ্বাস করা কর্তব্য। কোনো মাধ্যমের ধোঁকায় পড়ে গিয়ে সরাসরি আল্লাহর নিকট দো‘আ করার পরিবর্তে কোনো মাধ্যমের আশ্রয় গ্রহণের বিভ্রান্তিতে পড়া উচিত নয়। আয়াতের শেষ শব্দেও এ পথকেই সত্যিকার বিদয়াতের পথ বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের একমাত্র উপায় হলো, আল্লাহর নিকট কাতরভাবে দো‘আ করা ও এই বিশ্বাস মনে রাখা যে, আল্লাহ-ই আমার দো‘আ কবুল করবেন।

অপর এক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আরো জোরালোভাবে ঘোষণা করেছেনঃ

وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ [ ٤٠ : ٦٠ ]

– তোমাদের আল্লাহ বলেছেনঃ তোমরা আমাকেই ডাকো, আমারই নিকট দো‘আ করো, আমিই তোমাদের জবাব দেবো-দো‘আ কবুল করবো। যে সব লোক আমার ইবাদত করার ব্যাপারে অহংকার করবে, তাদের সকলকে জাহান্নামে একত্রিত করা হবে। (আল মোমেনঃ60)

এখানেও আল্লাহকে সরাসরি ডাকার-সরাসরিভাবে আল্লাহর নিকট দো‘আ করার নির্দেশ। আর আয়াতের দ্বিতীয় অংশে এই দো‘আ কেই আল্লাহর ইবাদত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা সরাসরিভাবে আল্লাহর নিকট দো‘আ করেনা, অসীলা ধরে অগ্রসর হতে চায়, তারা একান্তভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে প্রস্তুত নয়, তারা যে জাহান্নামে যাবে তাতে আর কোনোই সন্দেহ থাকতে পারেনা। মক্কার কাফিরদের তো এই অপরাধই ছিলো যে, যার জন্য তারা জাহান্নামী হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

কোরআন মজীদের এসব আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য, নিজেদের দো‘আ কবুল করবার জন্যে এবং ইসলামী শরীয়ত মোতাবিক আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করবার জন্য কোনো ‘অসীলার’ আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই এবং আল্লাহর নিকট তা পছন্দনীয়ও নয়। বরং আল্লাহতো চান বান্দা সরাসরিভাবে তাঁরই দিকে রুজু হোক, তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ করুক; তাঁর পরিবর্তে অন্য কারো নিকট দরবারে কপাল লুটানো ত্যাগ করুক। কিন্তু পরবর্তীকালে মুসলিম সমাজে ইসলামেরই দোহাই দিয়ে প্রবর্তন করা হয়েছে ‘অসীলা’। অসীলা ছাড়া আল্লাহকে পাওয়ার নাকি আর কোনো উপায়-ই নেই-এমন প্রচারণা চালানো হয়েছে। ইসলামের তওহীদী ব্যবস্থায় এই ‘অসীলা’র প্রচলন এক অতি বড় বিদয়াত এবং এ বিদয়াত তওহীদবাদিদের কঠিন শিরক-এ নিমজ্জিত করে ছেড়েছে। বিদয়াতীদের দরবার থেকে ফতোয়া জারি করা হয়েছেঃ আল্লাহ প্রাপ্তির জন্য অথবা আল্লাহপাকের অনুগ্রহ লাভের উদ্দেশ্যে অসীলা অবলম্বন করা কেবলমাত্র জায়েজই নয়; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফরয ও ওয়াজিবও বটে।

বস্তুত যা কুরআন থেকে প্রমাণিত নয়, যা রাসূলের কথা, কাজ ও অনুমোদন দ্বারা প্রমাণিত নয়-তাকে ফরয, ওয়াজিব বলাই হলো বিদয়াত। উপরোল্লিখিত অংশ এই বিদয়াতেরই সপক্ষে এক বিশেষ ফতোয়া। এই বিদয়াত এখন জনগণের একাংশকে গ্রাস করে রয়েছে। তাদের মধ্যে কারো ধারণাঃ “আমরা নামায রোজা করিনা; কেননা আমরা পীরকে ধান দিয়ে থাকি”। (নাউজুবিল্লাহ)

তার মানে পীরকে ধান দিলে পীর তো খুশি হবে। আর পীর খুশি হলে আল্লাহও খুশি হবেন। তাহলে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করার আর প্রয়োজন কি? আল্লাহকে পাওয়ার জন্য পীরকে ধান দেয়া-ভেট দেয়াই –নাকি যথেষ্ট।

আবার অন্য কিছু লোকের ধারণা যে, পীর সাহেব যে বেহেশতে যাবেনই একথা তো নিশ্চিত-যেন তারা আল্লাহর কাছ থেকে জানতে পেরেছে যে, পীর সাহেব একজন বেহেশতী হয়েই আছেন। অথচ এ ধারণা চরম বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা যাকে এরূপ মর্যাদা দিয়ে তার হাত হাত রাখা হচ্ছে, তার পক্ষে অন্যদের বেহেশতে নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, সে নিজেই যে বেহেশতে যাবে তারও কোনোই ঠিক ঠিকানা নেই।

অসীলাবাদীরা তাদের মতের সমর্থনে কোরআনের একটি আয়াতের অংশও পেশ করে থাকেঃ সে আয়াতাংশ হচ্ছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ

-হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা ভয় করো আল্লাহকে এবং তাঁর নিকট অসীলার সন্ধান করো।

আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহকে ভয় করে তাঁর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে। কিন্তু কুরআনের আয়াতের মূল প্রতিপাদ্য কথার সম্পূর্ণ বিপরীত কথা প্রমাণ করতে চেষ্টা করা হয়েছে এভাবে এ আয়াতকে ব্যবহার করে। প্রথম কথা, অসীলাবাদীরা এ আয়াতকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করেনি, আয়াতটির শুধু একটি অংশকে নিজেদের কথা প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ পূর্ণ আয়াতের অর্থ হয় এক, আর আয়াতের একটি অংশ পেশ করে নিজেদের মতলব মতো সম্পূর্ণ ভিন্ন কথাও বলতে চেষ্টা করা যেতে পারে। এখানে ঠিক তাই হয়েছে।

সম্পূর্ণ আয়াতটি এইঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٥: ٣٥ ]

-হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তাঁর নিকট অসীলার সন্ধান করো এবং জিহাদ করো তাঁর পথে। সম্ভবত তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে। (আল মায়েদাঃ35)

প্রখসে প্রমাণ করতে হবে-‘অসীলা’ শব্দের অর্থ কি, কুরআনের এ আয়াতে কোন্ অর্থে ‘অসীলা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। তারপরই এ আয়াতের যথার্থ বক্তব্য বুঝতে পারা যাবে। আমরা তাই দেখছি, কুরআন মজীদে এই ‘অসীলা’ শব্দটি এ আয়াত ছাড়া আরো একটি আয়াতে-মোট দুই জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে।

অপর আয়াতটি হলো এইঃ

قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُم مِّن دُونِهِ فَلَا يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنكُمْ وَلَا تَحْوِيلًا [ ١٧ : ٥٦ ]

أُولَٰئِكَ الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ ۚ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُورًا [ ١٧ : ٥٧ ]

-বলো! তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের মা’বুদ বলে মনে করো, তাদের একবার ডাকো, তারা তোমাদের থেকে বিপদ ও কষ্ট দূর করতে কিংবা তা বদলে দেবার কোনো ক্ষমতা রাখেনা। এই লোকেরা যাদের ডাকে, তারাই তাদের পরোয়ারদিগারের নিকট নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী, তাঁর রহমতের তারা আশা করে, তাঁর আযাবকে তারা ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহর আযাব ভয় করার যোগ্য।

(বনী ঈসরাইলঃ 56-57)

এ দু জায়গায় যে ‘অসীলা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তার অর্থ কি? কুরআন মজীদের শব্দ ব্যাখ্যাকারী লেখক সর্বজনমান্য মনীষী আল্লামা রাগেব ইসফাহানী এ শব্দের অর্থ লিখেছেন এভাবেঃ অসীলা মানে কোনো জিনিসের নিকট আগ্রহ সহকারে পৌছা। এর মধ্যে আগ্রহের ভাব বলে তা অসীলা বা পৌছা অপেক্ষা একটু বিশেষ অর্থজ্ঞাপক।

তিনি তাঁর খতীব নামক গ্রন্থে লিখেছেনঃ ‘অসীলা’ বিশেষ্য অর্থাৎ নৈকট্য, নিকটবর্তী হওয়া, নৈকট্য লাভের উপায় অর্থাৎ আনুগত্য।

আল্লামা কুরতবী তাফসীরে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ ‘অসীলা’ শব্দের অর্থ হলো নৈকট্য। আর এ অর্থই বর্ণিত হয়েছে আবু অয়েল, হাসান, মুজাহিদ, কাতাদাহ, আতা, সুদ্দী, ইবনে যায়দ ও আবদুল্লাহ ইবনে কাসীর প্রমূখ তাবেয়ী ও কুরআনবিদ মনীষীদের কাছ হতে।

তিনি আরো লিখেছেনঃ অসীলা হলো এমন নৈকট্য যার দরুণ কারো কাছে কোনো কিছু চাওয়া বাঞ্চনীয় নয়। চাওয়া যেতে পারে আল্লাহর নিকট, কাজেই এ নৈকট্যও আল্লাহরই হতে হবে।

ইমাম সুয়ূতী প্রথমোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ অসীলা হচ্ছে সেই আনুগত্য-ইবাদাত, যা তোমাদেরকে তাঁর নিকটবর্তী করে দেয়।

মওলানা আবদূর রশীদ নোমানী ‘লাগাতুল কুরআন’ এ লিখেছেনঃ শব্দটি সম্পর্কে দু’ধরনের মত রয়েছে। খতীব ও ইমাম রাযীর মতে এর অর্থ নৈকট্য লাভের উপায়। আর ইমাম সুয়ূতী এর দু’প্রকারের অর্থ করেছেন। একটি হলো-নৈকট্যের উপায় মানে ইবাদাত আর অপরটি হলো খোদ নৈকট্য যা ইবাদাত এর সাহায্যে লাভ করা যায়।

ইমাম শাওকানী লিখেছেনঃ ‘অসীলা’ মানে নৈকট্য, যা সন্ধান করা উচিত।

আবু ওয়ায়েল, হাসান, মুজাহিদ, কাতাদাহ, সুদ্দী, ইবনে যায়দ প্রমুখ মনীষী এই মতই প্রকাশ করেছেন এবং হযরত ইবনে আব্বাস, আতা ও আবদুল্লাহ ইবনে কাসীর হতেও একই মত বর্ণিত হয়েছে।

তাফসীরে ফতহুল বয়ানেও এই কথাই বলা হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছেঃ অসীলা জান্নাতের একটি বিশেষ মর্যাদা, যা রাসূলের জন্য বিশেষভাবে নির্দিষ্ট।

বুখারী শরীফে হযরত জাবির হতে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম(স) বলেছেনঃ আযান শুনে যে লোক বলবে-হে আল্লাহ! এই পূর্ণ দাওয়াতের ও কায়েম করা নামাযের রব্ব তুমি মুহাম্মাদ কে ‘অসীলা’ দান করো, মর্যাদা দান করো এবং তাঁকে সেই মাকামে মাহমুদে পাঠাও, যার ওয়াদা তুমি তাঁকে করেছ, কিয়ামাতের দিন এই লোকের শাফায়াত অনিবার্য্ হবে।

মুসলিম শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি নবী করীম(স) কে বলতে শুনেছেনঃ তোমরা মুয়াযযিনের আযান শুনতে পেলে সে যা যা বলে তোমরাও তাই বলতে থাকে। পরে আমার প্রতি দুরুদ পাঠ করো। বস্তুত যে লোক আমার প্রতি এক দুরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার প্রতি দশ দুরুদ পাঠাবেন।

অতঃপর তোমরা আমার জন্য অসীলার সওয়াল করো। কেননা এ হচ্ছে জান্নাতের একটি বিশেষ মঞ্জিল।

‘ফতহুল বয়ান’ গ্রন্থে অসীলা শব্দের প্রথম অর্থের ব্যাখ্যায় লেখা হয়েছেঃ এ কথা সুস্পষ্ট যে-অসীলা-যার মানে নৈকট্য-তাকওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে, তাকওয়া ছাড়াও এমন সব গুনাবলী যার সাহায্যে বান্দাগণ তাদের আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা বোঝায়। কেউ কেউ বলেছেন-অসীলা অর্থ প্রেম-ভালোবাসা অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করো। কিন্তু প্রথম অর্থই উত্তম।

আল্লামা ইবনে কাসীর তাঁর তাফসীরে প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যায় যা লিখেছেন তার তরজমা এইঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে তাঁর প্রতি তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। আর তাঁকওয়াকে যদি তাঁর আনুগত্যের সংগে মিলিয়ে দেয়া যায় তাহলে তার অর্থ হবে হারাম কাজ হতে বিরত থাকা এবং যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করা। আর তারপরই বলেছেন-তাঁর নিকট অসীলা সন্ধান করো।

অতঃপর লিখেছেনঃ সুফিয়ান সওরী তালহা থেকে, তালহা আতা থেকে এবং আতা ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এই ‘অসীলা’ মানে নৈকট্য।

আবু ওয়ায়েল, হাসান, মুজাহিদ, কাতাদাহ, সুদ্দী, ইবনে যায়দ, আবদুল্লাহ ইবনে কাসীর প্রমুখ প্রখ্যাত প্রাচীন মনীষীগণও এই মতই প্রকাশ করেছেন এবং কাতাদাহ্ এ আয়াতের তরজমা করেছেন এভাবেঃ

অর্থাৎ তাঁর দিকে তোমরা নৈকট্য লাভ করো, তাঁর আনুগত্য করো এবং যে কাজে তিনি সন্তুষ্ট হন তা করো।

তারপরই আল্লামা ইবনে কাসীর লিখেছেনঃ ইলমে কুরআনের এই ইমামগণ ‘অসীলা’ শব্দের অর্থ যা কিছু বলেছেন, সে বিষয়ে মুফাসসিরদের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই।

তিনি ‘অসীলা’ শব্দের আরোদুটো অর্থ লিখেছেন।

একটি হলোঃ অসীলাতা, যার সাহায্যে মূল লক্ষ্যে পৌছা যায়।

আর দ্বিতীয়ঃ অসীলা জান্নাতের এক উচ্চতর মঞ্জিলের নামও। আর তা হচ্ছে রাসূলে করীম(স) এর মরতবা।

অসীলার এই অর্থের সমর্থনে ইমাম ইবনে কাসীর বহু সংখ্যক হাদীস উদ্বৃত করেছেন। হযরত আলী(রা) বর্ণিত এই পর্যায়ের একটি হাদীসের ভাষা হলোঃ জান্নাতে একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ স্থান আছে যাকে বলা হয় ‘অসীলা’। তোমরা যখন আল্লাহর নিকট কিছু চাইবে তখন তোমরা আমার জন্য অসীলার প্রার্থনা করবে।

আর এ আয়াতের শেষাংশের তাফসীরে লিখেছেনঃ

আল্লাহ যখন হারাম কাজ ত্যাগ করার ও ইবাদাত আনুগত্যের কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিলেন, তখন সীরাতাল মুস্তাকিম-বহির্ভূত কাফির মুশরিক শত্রু বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দিলেন।

ইমাম বায়জাবী এ আয়াতের তাফসীরে লিখেছেনঃ

অর্থাৎ সন্ধান করো সেই জিনিস যার সাহায্যে তোমরা তাঁর সওয়াব এবং তাঁর নৈকট্য লাভ করতে পারো। আর তা হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্যমূলক কাজ করা এবং নাফরমানীমূলক কাজ ত্যাগ করা।

আল্লামা যামাখশারী লিখেছেনঃ অসীলা হচ্ছে এমন জিনিস, যার দ্বারা কোনোরূপ নৈকট্য লাভ করা যায় বা এমন কোনো কাজ কিংবা অন্য কিছু। পরে তা ব্যবহার করা হয়েছে সে জিনিস বোঝাবার জন্য, যা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা পর্য্ন্ত পৌছানো যায়। তা হচ্ছে ইবাদাত ও আনুগত্যের কাজ করা এবং নাফরমানী ত্যাগ করা। আল্লামা আবুস সয়ুদও এ আয়াতের তাফসীরে একই কথা বলেছেন নিজস্ব ভাষায়।

তাতে অসীলা সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ ‘অসীলা’ তা, যা দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়-আল্লাহ পর্যন্ত পৌছা যায়। আর তা হচ্ছে ইবাদাত আনুগত্যের কাজ করা এবং নাফরমানী ত্যাগ করা।

তিনি আরো লিখেছেনঃ আয়াতের এরূপ অর্থও করা হয়েছে-প্রথম বাক্যে আল্লাহকে ভয় করো বলে গুনাহ ও নাফরমানী ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। আর দ্বিতীয় বাক্যে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করো বলে আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্য অবলম্বন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর যে লোকই নাফরমানীর কাজ ত্যাগ করবে এবং মনের পক্ষে দুঃসহজনক কাজ সম্পন্ন করবে তার কিছু না কিছু কষ্ট ও শ্রম অবশ্যই হবে। তাই এ দু’টি আদেশের পরপর আল্লাহর আদেশ হলো-আল্লাহর পথে জিহাদ করো আল্লাহর প্রকাশ্য ও শক্ত দুশমনদের সাথে যুদ্ধ করে।

আল্লামা সাইয়েদ মাহমুদ আলুসীও এ আয়াতের ব্যাখ্যায় অনেক কথা বিস্তারিতরূপে আলোচনা করেছেন। তিনি সূরা আল মায়েদার উপরোল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এবং তালাশ করো-সন্ধান করো তোমাদের নিজেদের জন্য তাঁর সওয়াব এবং তাঁর নৈকট্য।

আর ‘অসীলা’র অর্থ লিখেছেনঃ অসীলা তা, যার সাহায্যে পৌছা যায় এবং আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া যায়, তা হলো ইবাদত বন্দেগীর কাজ করা ও নাফরমানীর কাজ ত্যাগ করা।

আল্লামা ইবনে জরীর তারাবী লিখেছেনঃ আল্লাহর নিকট আমল সহকারে নৈকট্য পেতে চাও, যা তাঁর সন্তোষের কারণ হবে, ‘অসীলা’, ‘ফাযীলা’ ওজনের শব্দে। যেমন কেউ বলে, ‘আমি তার নিকটবর্তী হলাম’ এতে তাওয়াসসূল ‘তাকাররূব’ অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। ‘তাওয়াসালতু ইলাইহি’ মানে আমি তার নিকটবর্তী হলাম।

তিনি আরো লিখেছেনঃ আমরা যেমন বলেছি, শব্দের ব্যাখ্যাকার ও তাৎপর্য্ বিদগণ এ অর্থই গ্রহণ করেছেন। বাশশার ও সুফিয়ান আবু ওয়েল থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘ওয়াবতাগু ইলাইহিল অসীলাতা’ বলে আমলের নৈকট্য লাভের হুকুম করা হয়েছে। সুফিয়ান, আবু তালহা, আতা প্রমুখও এ ব্যাপারে অর্থ করেছেন নৈকট্য। কাতাদাহ থেকে বর্ণিতঃ তিনি এ আয়াতের তরজমা করেছেন এভাবেঃ ‘আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর পছন্দমতো কাজ করে আল্লাহর নিকটবর্তী হও।’ হুযায়ফা থেকে বর্ণিত, মাশীদ আবু নজীহ বলেছেন যে, মুজাহিদ ‘ওয়াবতাগু ইলাইহিল অসীলাতা’র অর্থ করেছেন নৈকট্য।

আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী লিখেছেনঃ আল্লাহর নিকট ‘অসীলা’ তালাশ করো অর্থ-আমলের সাহায্যে আল্লাহর নৈকট্য তালাশ করো।

আল্লামা আলুসী বলেছেনঃ ইবনুল আনবারী ইবনে আব্বাসের কথা উদ্বৃত করে বলেছেন-অসীলা মানে প্রয়োজন, আবশ্যকতা।

এ অর্থের দিক দিয়ে আয়াতের অর্থ হবেঃ তোমরা আল্লামুখী হয়ে তোমাদের প্রয়োজন পূরণ করতে চাও। কেননা আসমান জমিনের সব চাবিই তাঁর হস্তে এবং আর কারো প্রতি মুখাপেক্ষী হয়ে তোমরা প্রয়োজন পূরণ করতে চেওনা।

‘অসীলা’ শব্দের এ অর্থটি বলা যায় নতুন। অর্থাৎ অপর কোনো মুফাসসীর তা উল্লেখ করেননি। তবু বলা যায়- মূল (আরবি) অভিধান, সব সাহাবী, তাবেয়ী এবং প্রামাণ্য সব কয়খানি তাফসীরই ‘অসীলা’ শব্দের অর্থ এই হতে পারে, অন্য কিছু নয়। অন্য কিছু অর্থ করা হলে তা হবে পরবর্তীকালের লোকদের মনগড়া। মূল কোরআন হাদীস ও (আরবি) ভাষার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এ আয়াতের ভিত্তিতে জানা গেল যে, এ আয়াতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ‘অসীলা’ সন্ধানের যে নির্দেশ আল্লাহ তা‘আলা দিয়েছেন, তার মানে হলো আল্লাহরই আনুগত্য করা, কেবল তাঁরই ইবাদত বন্দেগী করা এবং তাঁর নাফরমানী না করা। কিংবা নিজেদের প্রয়োজন কেবল আল্লাহর নৈকট্যের থেকে পূরণ করতে চাওয়া অন্য কারো নিকট থেকে নয়। অপর কাউকে অসীলা বা মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারেনা, করা হলে তা হবে শিরক আর বিদয়াত। এই শিরক এর পথ চিরতরে বন্ধ করার জন্যই আল্লাহর এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই আয়াতকেই পেশ করা হচ্ছে অসীলার শিরককে সুষ্ঠু-জায়েয-ওয়াজিব-ফরয প্রমাণ করার কুমতলবে। আর এই পর্যায়ে ‘হেসনে হাসীন’ ‘আল-মুহান্নাদ’ আর ‘শেফাউস-সেকাম’ ধরনের কিতাবাদিতে লিখিত কথা পেশ করে তওহীদের এই চিরন্তন শাশ্বত আকীদাকে বিকৃত ও বিনষ্ট করতে চেষ্টা করা হচ্ছে।

কুরআনের যে দুটো আয়াতে এ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, সমস্ত মুফাসসির এ সম্পর্কে একমত যে, উভয় জায়গায়ই এ শব্দের এ অর্থই লক্ষ্যভূত হয়েছে, অন্য কোনো অর্থ নয়। আর বিস্তারিত আলোচনার দৃষ্টিতে গোটা আয়াতের অর্থ হলোঃ ‘হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, ভয় করো আল্লাহর নৈকট্য বা নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করো এবং এ জন্যই আল্লাহর পথে জিহাদ করো।’ (ইমাম কুরতবী, ইমাম ইবনে কাসীর, ইমাম শাওকানী প্রমূখ তাঁদের তাফসীরসমূহে এই একই কথা বলেছেন যার বাংলা তরজমা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে)।

আর হাদীসে ব্যবহৃত ‘অসীলা’ শব্দের অর্থ আল্লাহর এক বিশেষ মঞ্জিল। শরীয়তে এ অর্থকেই গ্রহণ করা হয়েছে। এখন দেখতে হবে, আল্লাহর নিকট অসীলা বানানোর শরীয়তসম্মত পন্থা ও পদ্ধতি কি? এ পর্যায়ে কয়েকটি জিনিস পেশ করা হচ্ছে।

প্রথমতঃ আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য অসীলা গ্রহণ সম্পূর্ণরূপে কুরআন হাদীসসম্মত। আল্লাহ নিজেই ইরশাদ করেছেনঃ

وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا ۖ

-আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা সে নাম ধরে ধরে তাঁকে ডাকো।(আল আরাফ 180)।

হাদীসে বর্ণিত রয়েছে, আবদুল্লাহ তাঁর পিতা বরিদা(রা) হতে বর্ণনা করেছেনঃ নবী করীম(স) এক ব্যক্তিকে নিম্নোক্ত ভাষায় দোআ করতে শুনতে পেলেন।

-হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি এ দিক দিয়ে যে, তুমিই আল্লাহ, তুমি ছাড়া কেউ মাবুদ নেই, তুমি পরমুখাপেক্ষীহীন, যিনি নিজে পয়দা হননি, জন্মও দেননি এবং কেউ তাঁর সমান সমকক্ষ নেই।

তখন নবী করীম(স) বললেন-এ লোকটি আল্লাহর নিকট তাঁর এমন বিরাট মহান নাম নিয়ে দো‘আ করল যে, এভাবে কিছু প্রার্থনা করলে নিশ্চয়ই কিছু দেয়া হবে, আর দোআ করা হলে তা অবশ্যই কবুল করা হবে।

হযরত আনাস ইবনে মালিক(রা) ও হযরত আয়েশা(রা) হতে বর্ণিত হাদীসেও এর সমর্থন পাওয়া যায়।

দ্বিতীয়ঃ নেক আমলের অসীলা। এ পর্যায়েও কুরআন হাদীসের দলীল বর্তমান। কুরআনের দলীল হচ্ছে সে দুটো আয়াত যাতে অসীলা শব্দের উল্লেখ রয়েছে। কেননা দুটো আয়াতেই ‘অসীলা’ শব্দের মানে ‘নৈকট্য’ হওয়া সম্পর্কে সমস্ত মুফাসসিরের ইজমা রয়েছে। এ পর্যায়ের তৃতীয় দলীল হচ্ছে সূরা ফাতিহার আয়াত إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ কেবল তোমারই বন্দেগী করি, কেবল তোমারই নিকট সাহায্য চাই হে আল্লাহ! এতে সাহায্য প্রার্থনা এর পূর্বে ইবাদত এর উল্লেখ করাই হয়েছে প্রথমটিকে দ্বিতীয়টির অসীলা বানানোর জন্য।

হাদীসে এর দলীল হলো বুখারী শরীফে উল্লিখিত সেই কাহিনী, যাতে বলা হয়েছে –তিনজন লোক বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য পর্বত গুহায় আশ্রয় নেয়। অমনি এক বিরাট শিলাখন্ড এসে পর্বতগুহীর মুখ বন্ধ করে দেয়। মুক্তির কোনো পথ নেই মনে করে তারা প্রত্যেকেই নিজের নিজের নেক আমলের উল্লেখ করে আল্লাহর নিকট মুক্তির প্রার্থনা করতে লাগলো। পরে তাদের দোআ আল্লাহর দরবারে কবুল হয় এবং তারা মুক্তি লাভ করে। নবী করীম (স) এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন প্রশংসাচ্ছলে এবং গুণ বর্ণনা প্রসঙ্গে।

এ হাদীস সম্পর্কে বলা যায়ঃ জুম’আর দিন যখন সূর্য্ যথেষ্ট পশ্চিমে ঢলে পড়বে, তখন দু’রাকাআত নামায পড়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করো। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল যে, জুম‘আর নামায পড়লেও আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়।

হাদীসে আরো বলা হয়েছেঃ এ কাহিনী থেকে প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের আমলকে অসীলা বানাতে পারে; কিন্তু অপরের-নবী ও অলী-আল্লাহদের আমলের অসীলা গ্রহণের কোনো প্রমাণ এতে নেই।

বিশেষত বান্দার নিজের নেক আমলকে অসীলা বানিয়ে আল্লাহর নিকট দোআ করলে তাতে বান্দা আল্লাহর আরো নিকটতর হয়। আর এ কাজ কুরআন ও ইজমা উভয় দলীল মতেই শরীয়তসম্মত। এতে ব্যক্তির নফস পবিত্র হয় এবং আল্লাহর সন্তোষ লাভের যোগ্য হয়ে গড়ে ওঠে।

তৃতীয়ঃ নবী করীম(স)কে তাঁর নব্যুয়ত ও রিসালাতের ব্যাপারে সত্য বলে স্বীকার করে নিয়ে তাঁকে ‘অসীলা’ বানান। তিনি যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন, তার প্রতি ঈমান এনে তাকে অসীলা ধরা। নবীর আদেশ নিষেধ মান্য করা এবং তাঁর সাহায্য করাকে অসীলা বানানো। তাঁর সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিত করা, তাঁর দাওয়াতকে জারী রাখা, সে বিষয়ে চিন্তা গবেষণা করা প্রভৃতিও অসীলা হতে পারে। এসব জিনিসকে অসীলা বানানো মূল দ্বীনের মুতাবিক কাজ। কেননা এ অসীলা বানানো ঠিক নেক আমলকে অসীলা বানানোর অন্তর্ভূক্ত।

চতূর্থঃ নবীর জীবদ্দশায় তাঁর দো’আকে অসীলা বানানো, দো’আর কাজে তাঁকে শরীক করা, তাঁকে দিয়ে আল্লাহর নিকট দো’আ করানো এবং তাঁর ইন্তেকালের পরে সময়ের যে কোনো নেক লোকের দ্বারা দো’আ করানো বা দো’আয় তাঁকে শরীক করা এবং তাঁর দো’আকে অসীলা মনে করা।

হাদীসে এর দলীল এই যে, হযরত উমর(রা) একবার দূর্ভিক্ষের সময় হযরত আব্বাস(রা)কে অসীলাস্বরূপ শামিল করে দো’আ করেছিলেন এই বলেঃ

হে আল্লাহ, আমার পূর্বে আামাদের নবীকে তোমার নিকট অসীলা বানাতাম। তখন তুমি আমাদের পানি দিয়ে সিক্ত করেছিলে। এখন আমরা তোমার নিকট দো’আ কবুল হবার জন্য তাঁর চাচাকে অসীলা বানাচ্ছি। অতএব তুমি আমাদের পানি দিয়ে সিক্ত করে দাও।

এখানে সুস্পষ্ট যে, এতদুপলক্ষে যে সামষ্টিক দো’আ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে হযরত আব্বাসই দো’আকারীদের মধ্যে শরীক ও শামিল ছিলেন। তাঁকে দো’আয় অসীলা বানিয়েছিলেন, কেননা সাহাবীগণের মধ্যে তিনিই ছিলেন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি। তাঁর মর্যাদা ছিল সকলের ওপর। হযরত মুআবিয়া(রা) ও তাঁর সঙ্গীরা ইয়াযীদ ইবনুল আসওয়াদ আল জকরীকে অসীলা বানিয়েছিলেন তাঁর নেক আমল ও তাকওয়া পরহেযগারীর জন্য। তাঁদের সকলের পক্ষে রওযায়ে পাকে যাওয়া ও রাসূল(সা) কে অসীলা বানানো কঠিন ছিলনা কিন্তু বানাননি। কাজেই এরূপ দো’আর কোনো দোষ হতে পারেনা তওহীদী সুন্নাতের দৃষ্টিতে, তা হতে পারেনা কোনো বিদয়াত। আরো কথা এই যে, নবী করীম(স) এর ইন্তিকালের পরে সাহাবায়ে কিরাম স্বয়ং রাসূল(স) কে দো’আর ক্ষেত্রে অসীলা বানাননি। কেননা মৃত লোককে সে নবীই হোননা কেন অসীলা বানানোকে তাঁরা বিদয়াত ও শিরক মনে করতেন। হযরত উমরের দো’আয় রাসূলে করীম(স) কে অসীলা না বানিয়ে অসীলা বানানো হয়েছিল তাঁর চাচা আব্বাসকে-যিনি জীবিত থেকে দো’আয় উপস্থিত ছিলেন। আর তাঁকে অসীলা বানানো থেকেই এ কথাটি স্পষ্ট হয়ে উঠে। এ দো’আয় বড় বড় সাহাবীগণও উপস্থিত ছিলেন কিন্তু তাঁরা কেউই এর প্রতিবাদ করেননি। তখনো যদি রাসূলকে অসীলা বানানো জায়েয হতো, তাহলে অন্যান্য সাহাবীরা তাঁকে তা-ই করতে বলতেন। কিন্তু তা কেউই বলেননি; বরং এ দো’আয় তাঁরা সকলেই শরীক হয়েছেন। আর রাসূলকেই যদি মৃত্যুর পর অসীলা বানানো বিদয়াত হয়ে থাকে, তাহলে অলী আল্লাহ কথিত মরে যাওয়া লোকদের কাউকে অসীলা বানানো তো একশ বার বিদয়াত হবে। কেননা মরে যাওয়ার পরও কাউকে বিশেষ ক্ষেত্রে দো’আয় অসীলা বানানোর মানে এই যে, তার সম্পর্কে ধারণা করা হচ্ছে যে, সে মরে গিয়েও এতদূর ক্ষমতা রাখে যে, সে বিপদগ্রস্ত লোকদের উদ্ধার করতে পারে বা উদ্ধার কাজে আল্লাহর সাথে শরীক হতে পারে। আর এরূপ আকীদাই তওহীদী শরীয়তের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট শিরক।

হাদীসে বর্ণিত আছে, এক বেদুঈন কঠিন দূর্ভিক্ষের সময় রাসূলে করীম(স) কে লক্ষ্য করে বলেছিলঃ (আরবি)

-হে আল্লাহর রাসূল, ধন-মাল ধ্বংস হয়ে গেছে; পরিবার-পরিজন অভুক্ত হয়ে আছে। অতএব আপনি আমাদের জন্য দো’আ করুন।

আল্লাহর কুরআন মজীদেও এর দলীল রয়েছে। আল্লাহ নিজেই ইরশাদ করেছেনঃ

وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُوا أَنفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا [٤: ٦٤ ]

-তারা যখন নিজেদের উপর জুলুম করেছিল তখন যদি তারা হে নবী! তোমার নিকট আসত এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতো আর রাসূলও তাদের জন্যে ক্ষমা চাইতো, তাহলে নিশ্চয়ই তারা আ্লাহকে তওবা কবুলকারী ও দয়াবান হিসেবে পেত।(আন নিসাঃ৬৪)

এ আয়াতে লোকদের জন্য রাসূলের ক্ষমা চাওয়ার পূর্বে তাদের নিজেদের ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তার অর্থ, তারা নিজেরা ক্ষমা না চাইলে তাদের জন্য রাসূলের ক্ষমা চাওয়ার কোনো মূল্য আল্লাহর নিকট নেই।

এ ধরনের অসীলা গ্রহণের ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই, থাকতে পারেনা। কিন্তু নবী করীম(স) এর মৃত্যুর পর তাঁর ব্যক্তিত্বকে আল্লাহর নৈকট্যের জন্য অসীলা বানানো স্পষ্ট বিদয়াত।

পঞ্চমঃ আল্লাহর নিকট তাঁর নেক বান্দাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক দেখিয়ে দো’আ করা। যেমন হাদীসে হযরত আয়েশা(রা) হতে বর্ণিত হয়েছেঃ (আরবি)

-হে আমাদের আল্লাহ, যিনি জীবরাঈল, মিকাঈল ও ইসরাফীলের রব্ব।

এরূপ দো’আ করা জায়েয মনে করা হলেও অনেকেই এটাকে নাজায়েয বলেছেন।

ষষ্ঠঃ নবী করীম(স)এর প্রতি দুরূদ পাঠানোকে অসীলা বানানো। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা(রা) হতে বর্ণিত হয়েছে-নবী করীম(স) বলেছেনঃ (আরবি)

-আল্লাহর নিকট যার কোনো প্রয়োজন দেখা দিবে কিংবা কোনো মানুষের নিকট, সে যেন খুব ভালো করে অযূ করে এবং দু’রাকাআত নামায পড়ে, আল্লাহর ভালো প্রশংসা করে এবং নবীর প্রতি দুরূদ পাঠ করে, তারপর বলে আল্লাহ ধৈর্য্শীল ও অনুগ্রহ সম্পন্ন, তিনি ছাড়া কেউই মা‘বুদ নেই।

মোট কথা আল্লাহর নিকট দো’আ করার এসবই হলো ইসলাম ও সুন্নাত মোতাবিক নিয়ম। এছাড়া অন্য কোনো নিয়মে ও পন্থায় দো’আ করা ঈমানদার লোকদের পক্ষে জায়েয নয়।

সপ্তমঃ এরূপ দো’আ করাঃ

হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট তোমার অমুক নেক বান্দার দোহাই দিচ্ছি বা তার সম্মানের দোহাই দিয়ে তোমার নিকট দো’আ করছি।

কিন্তু এ ধরনের দো’আ শরীয়তে আদৌ সমর্থনযোগ্য নয়। ইজ্জ ইবনে আবদুস সালাম ও তাঁর অনুসারীদের মতে কেবল নবীর নামেই এরূপ দোহাই দেয়া জায়েয হতে পারে, অন্য কারো নামে জায়েয নয়। হাম্বলী মাযহাবে এরূপ দো’আ করা মাকরূহ তাহরীম। ‘কুদূরী’ প্রমুখ হানাফী মাযহাবের ফকীহগণ ইমাম আবু ইউসুফ হতে বর্ণনা করেছেনঃ

ইমাম আবু হানীফা(রা)বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট, আল্লাহর নামে ছাড়া অন্য কারো দোহাই দিয়ে দো’আ করা কারো পক্ষেই উচিত হতে পারেনা।

‘হে আল্লাহ, তোমার আরশের মর্যাদা বন্ধনের দোহাই দিয়ে তোমার নিকট প্রার্থনা করি; অমুকের দোহাইতে দো’আ করি; তোমার নবী ও রাসূলগণের দোহাই দিয়ে দো’আ করি বা তোমার মহান ঘরের দোহাই দিয়ে দো’আ করি’, এরূপ বলে দো’আ করাকেও আমি মাকরূহ মনে করি।

ইমাম আবু হানীফা(রহ) হতে তাতারখানিয়া এবং তাঁর থেকে কিতাবে আল আলায়ী উদ্ধৃত করে বলেছেনঃ আল্লাহু সুবহানাহুর নিকট তাঁর নিজের দোহাই ছাড়া অপর কারো দোহাই দিয়ে(অসীলা বানিয়ে)দো’আ করা কিছুতেই উচিত নয়।

ইমাম বদলজী বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট আল্লাহ ছাড়া অপর কারো অসীলায় দো’আ করা মাকরূহ। আর ‘হে আল্লাহ তোমার নিকট তোমার ফেরেশতা ও নবীগণের অসীলায় প্রার্থনা করি’ বলবেনা কখনো।

হানাফী মাযহাবের সব কিতাবেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, নবী-রাসূল ও অলী-পীর বা আল্লাহর ঘর ইত্যাদিকে অসীলা করে দো’আ করা মাকরূহে তাহরীম। আর জাহান্নামের আযাবের দিক দিয়ে মাকরূহে তাহরীম হারামের সমান্।

আল্লাহর নিকট অপর কারো দোহাই দিয়ে দো’আ করা বা অপর কাউকে অসীলা বানানো হারাম কেন? হারাম এজন্য যে- মাখলুকের মধ্যে কারোই কোনো হক্ নেই সৃষ্টিকর্তার ওপর। তাই এই দোহাই চলতে পারেনা। দোহাই দিলে বা কাউকে অসীলা বানালে তা হবে অর্থহীন।কাজেই মুসলিম সমাজে এরূপ করা সুস্পষ্টরূপে বিদয়াত।

মক্কার কাফির মুশরিকগণ যে সব মূর্তি দেব-দেবী উপাসনা করতো আল্লাহ আছেন-তিনি এক ও একক-একথা জানা থাকা এবং তার স্বীকৃত দেয়া সত্ত্বেও। তাদেরও তো মূল লক্ষ্য সেগুলোর পূজা-উপাসনা ইবাদত ছিলনা, মূল লক্ষ্য ছিল একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য লাভ, আল্লাহর নিকট ঘনিষ্ট হওয়া, উচ্চতর মর্যাদা পাওয়া। মূর্তি ও দেব-দেবীর পূজা-উপাসনাকে তারা সেই লক্ষ্যে পৌছার মাধ্যমে বা অসীলা রূপেইতো গ্রহণ করেছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের এ কাজকে আল্লাহ শিরক বলেছেন, তাদেরকে হেদায়াতবঞ্চিত ও মিথ্যাবাদী কাফির বলে আখ্যায়িত করেছেন। নিম্নোদ্ধৃত আয়াতটিতে সে কথাই বলা হয়েছেঃ

أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ ۚ وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَىٰ إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ [ ٣٩ :٣]

(আঝ ঝুমারঃ৩)

-জেনে রাখো, আল্লাহর জন্য তো খালিস অবিমিশ্র আনুগত্য হতে হবে। আর যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যান্যদের বন্ধু পৃষ্ঠপোষকরূপে গ্রহণ করে এই বিশ্বাস পোষণের দাবি নিয়ে যে, আমরা তো আসলে ওদের ইবাদত করিনা- ওদের প্রতি যা কিছু করি, তা তো এই উদ্দেশ্যে যে, ওরাই আমাদেরকে আল্লাহর অতি ঘনিষ্ট নৈকট্যে পৌছে দেবে(তাদের এই কথা অসত্য, অযথার্থ) আল্লাহই তাদের পারস্পরিক মত-পার্থক্যের ব্যাপারাদির চূড়ান্ত মীমাংসা করে দিবেন। মনে রেখো আল্লাহ কখনোই মিথ্যাবাদী চরম মাত্রার কাফিরকে হেদায়াত দেননা।

এ আয়াতের আলোকে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে, সেকালের আরব জনগণ আল্লাহকে পাওয়ার, তাঁর নৈকট্য অর্জনের লক্ষৌ মূর্তি ও দেব-দেবীর প্রতি যে আচরণ করতো, আজকের দিনের সে প্রকৃতির লোক আল্লাহর নৈকট্য লাভের লক্ষ্যে পীর-দরবেশদের প্রতি ঠিক সেই আচরণই গ্রহণ করেছে। এ দু’টির মধ্যে মৌলিক কোনেই পার্থক্য নেই। তাহলে আরবদের সেই কাজ যদি শিরক গণ্য হয়ে থাকে এবং তাদের মৌলিক দাবিকে আল্লাহ অসত্য ধরে নিয়ে তাদের স্পষ্ট ভাষায় মিথ্যাবাদী বলে থাকেন। তাহলে আজকের দিনের এই অসীলা গ্রহণকারী লোকেরা আল্লাহর নিকট মিথাবাদী আখ্যায়িত হবেনা কেন? আর তাদেরকে যদি কেবল এজন্যই কাফির বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে, তাহলে আজকের দিনের এইসব বড় বড় অসীলা গ্রহণকারী লোকেরা ‘কাফির’ বলে অভিহিত হবেনা কেন?

আল্লাহর নিকটি কি সেকাল ও একাল এবং আরব ও এদেশের লোকদের মধ্যে কোনোরূপ পার্থক্য বা তারতম্য আছে?

অত্যন্ত খারাপ কথা, যা তারা বলছে বা মনে করছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন