hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সুন্নাত ও বিদয়াত

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

৩৫
মানত মানায় শিরক এর বিদয়াত
কোনো কিছুর জন্য কোনো কাজ করার বা কোনো কিছু দেয়ার মানত মানার সুযোগ ইসলামে রয়েছে। এ মানতকে (আরবি) ভাষায় বলা হয় নজর। আর ‘নজর’ এর অর্থ ইমাম রাগেব লিখেছেনঃ

-মানত বলা হয় এরূপ কাজকে যে, কোনো কিছু ঘটবার জন্য তুমি নিজের ওপর এমন কোনো কাজ করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে-ওয়াজিব করে নেবে- যা আসলে তোমার ওপর ওয়াজিব নয়। যেমন বলা হয়ঃ আমি আল্লাহর জন্যে একাজ করার মানত করেছি।

ইবনুল আরাবীন মানত এর সংজ্ঞাদান প্রসঙ্গে লিখেছেনঃ

-কোনো কাজ করার বাধ্যবাধকতা নিজের ওপর নিজের কথার সাহায্যে চাপিয়ে নেয়া, যে কাজ হবে একান্তভাবে আল্লাহর ফরমাবরদারীমূলক এবং যা দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ হতে পারে।

তাফসীরে আবুস সউদে লিখিত হয়েছেঃ

-মানত হচ্ছে মনকে কোনো কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করা এবং তাকে বাধ্যতামূলকভাবে সম্পন্ন করা।

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী লিখেছেনঃ

-আমাদের মতের লোকেরা বলেছেনঃ ইবাদত বা দান খয়রাতের কিছু নিজের ওপর অতিরিক্তভাবে জায়েয করে নেয়াকেই মানত বলা হয়। কুরআন মজীদে এ মানত মানার কথা বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা আল বাকারার ২৭০ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ

وَمَا أَنفَقْتُم مِّن نَّفَقَةٍ أَوْ نَذَرْتُم مِّن نَّذْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُهُ ۗ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ [٢: ٢٧٠ ]

-তোমরা যা কিছু খরচ করো বা মানত মানো, আল্লাহ তার সবকিছুই জানেন। আর জালিমদের জন্য সাহায্যকারী নেই। (আল বাকারাঃ২৭০)।

তাসীরে মাজহারীতে এ আয়াতে ব্যাখ্যা লিখা হয়েছে এভাবেঃ মানত হচ্ছে এই যে, তোমরা আল্লাহর জন্য করবে বলে কোনো কাজ নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নিবে শর্তাধীন কিংবা বিনাশর্তে।

এ আয়াত ও তাফসীরের উদ্ধৃতি স্পষ্ট বলে দেয় যে, মানত হতে হবে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য। যে মানত হবে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যে, কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী কেবল তাই জায়েয; যে মানত খালিসভাবে আল্লাহর জন্য নয়, তা কুরআনের দৃষ্টিতে কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। কুরআনের যে ধরনের মানত সমর্থিত, তাঁর দৃষ্টান্ত হচ্ছে ইমরান-স্ত্রীর মানত।

সূরা আল ইমরানে ৩৫ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ

إِذْ قَالَتِ امْرَأَتُ عِمْرَانَ رَبِّ إِنِّي نَذَرْتُ لَكَ مَا فِي بَطْنِي مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّي ۖ

–ইমরান স্ত্রী বললেনঃ হে আল্লাহ! আমার গর্ভে যে সন্তান রয়েছে তা আমি তোমারই জন্য মানত করলাম, তাকে দুনিয়ার ঝামেলা থেকে মুক্ত করবে, অতএব তুমি আমার এ মানত কবুল করো। (আল ইমরানঃ৩৫)।

ইমরান স্ত্রীর মানত ছিল একান্তভাবেই আল্লাহরই জন্য। সে মানতে এ দুনিয়ার কোনো স্বার্থলাভ লক্ষ্য ছিলনা, তাতে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করা হয়নি। মানত যে কেবল আল্লাহর জন্যই মানতে হয়-এ আয়াতে তার স্পষ্ট পথ নির্দেশ রয়েছে। ইমরান-স্ত্রীর কথা ‘তোমারই জন্য মানত করেছি’ তা স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছে। আর একটি দৃষ্টান্ত হলো সূরা মরীয়মের ২৬নং আয়াত। আল্লাহ তা‘আলা নিজেই মরিয়মকে লক্ষ্য করে বলেছেনঃ

فَقُولِي إِنِّي نَذَرْتُ لِلرَّحْمَٰنِ صَوْمًا

–অতএব তুমি বলো আমি আল্লাহর জন্যই রোযা মানত করলাম। (মরিয়মঃ ২৬)

আল্লাহ নিজেই শিক্ষা দিলেন এ আয়াতের মাধ্যমে যে, মানত কেবল আল্লাহর জন্যই মানতে হবে, অন্য কারো জন্য অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়।

এ পর্যায়ে কুরআন থেকে আরোদুটো আয়াতাংশ উদ্ধৃত করা যাচ্ছে। একটি হলোঃ তারা যেন তাদের মানতসমূহ পুরো করে।

আর রাসূলের সাহাবীদের প্রশংসা করে কুরআনে বলা হয়েছেঃ তারা মানত পুরা করে।

এ ছাড়া আরো বহু আয়াত রয়েছে কুরআনে, যাতে আল্লাহর সাথে করা ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি পূরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর মানত যেহেতু আল্লাহর সাথেই করা এক বিশেষ ধরনের ওয়াদা, সে জন্যে মানত অবশ্যই পূরণ করতে হবে।

কুরআন, হাদীস ও ফিকাহ এর দৃষ্টিতে মানত মানার ব্যাপারে বুনিয়াদী শর্ত হলো এই যে, তা মানতে হবে একান্তভাবে আল্লাহর জন্যে, আল্লাহর সন্তোষ বিধানের জন্য। যে মানত আল্লাহর সন্তোষ বিধানের জন্য করা হয়নি, তা মূলতই মানত নয়। তা পূরণ করাও ওয়াজিব নয়। উপরন্তু সে মানত হবে এমন কাজ করার, যে কাজ আল্লাহর আনুগত্যমূলক, যা আল্লাহর নাফরমানীর কোনো কাজ নয়।

হাদীসে এ কথা স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। আবু দাউদের কিতাবে উদ্ধৃত হয়েছে-হযরত ইবনে আমর বর্ণনা করেছেনঃ আমি রাসূল(স)কে বলতে শুনেছিঃ (আরবি)

-যে মানত দ্বারা আল্লাহর সন্তোষ লাভ করতে চাওয়া হয়নি, তা মূলতই মানত নয়।

অথবা এর তরজমা হবে, ‘মানত শুধু তাই যা থেকে আল্লাহর সন্তোষ লাভ করতে চাওয়া হয়েছে।’

ইমাম আহমদ মুসনাদে এবং তিবরানী বর্ণনা করেছেনঃ

নবী করীম(স) এক কঠিন গরমের দিনে লোকদের সামনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। এ সময় একটি লোককে (সম্ভবত কোনো মরুবাসীকে) রোদের খরতাপের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন- কি ব্যাপার; তোমাকে রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছি কেন? লোকটি বললো, ‘আমি মানত করেছি আপনার ভাষণ শেষ না হওয়া পর্য্ন্ত রোদে দাঁড়িয়ে থাকবো।’ তখন নবী করীম(স) বললেন-(আরবি)

-তুমি বসো, এটাতো কোনো মানত হলোনা। মানত তো শুধু তাই, যা করে আল্লাহর সন্তোষ হাসিল করা উদ্দেশ্য হবে।

এ মর্মের বহু সংখ্যক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সে সবগুলো থেকে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, মানত এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তোষ লাভ; ব্যক্তির কোনো বৈষয়িক স্বার্থের লাভ নয়, নয় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সন্তোষ লাভ, আর যে মানত সেরূপ হবেনা, তা মানতই নয়, তা আদায় করাও কর্তব্য নয়।

মানত কেবল আল্লাহর সন্তোষ লাভ করার উদ্দেশ্যেই হলে চলবেনা, তা হতে হবে এমন কাজের মানত, যে কাজ মূলতই আল্লাহর আনুগত্যমূলক। যে কাজ আল্লাহর আনুগত্যমূলক নয়, তা করার মানত করা হলেও তা মানত বলে গণ্য হবেনা, তা পূরণ করাও হবেনা ওয়াজিব। হাদীসে তার ভুঁড়ি ভুঁড়ি প্রমাণ রয়েছে। হযরত ইমরান ইবনে হুসায়েন(রা) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে-নবী করীম(স) বলেছেনঃ

-মানত দু’প্রকারের হয়। যে মানত আল্লাহর আনুগত্যের কোনো কাজের হবে, তা আল্লাহর জন্য বটে এবং তাই পূরণ করতে হবে। আর যে মানত আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজের মাধ্যমে হবে, তা হবে শয়তানের উদ্দেশ্যে। তা পূরণ করার কোনো দায়িত্ব নেই। কর্তব্যও নয়।

বুখারী শরীফে এমন কিছু হাদীসের উল্লেখ রয়েছে, যা থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, ইসলামে এই মানত মানার কাজের কিছুমাত্র উৎসাহ দেয়া হয়নি। কথায় কথায় মানত মানার যে রোগ দেখা যায় অশিক্ষিত লোকদের মধ্যে এবং যে মানত মানার ইসলামী পদ্ধতি জানা না থাকার কারণে লোকেরা এক্ষেত্রে নানা প্রকার শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে, রাসূলে করীম(স) একে কিছুমাত্র উৎসাহিত করেননি, এবং তিনি একে সম্পূর্ণ অর্থহীন কাজ বলে ঘোষণা করেছেন। হযরত ইবনে উমর(রা) বলেনঃ

-তোমরা কি লোকদেরকে মানত মানা থেকে নিষেধ করোনা? অথচ নবী করীম(স) বলেছেনঃ মানত মানায় না কিছু আসে, না কিছু যায়(বা মানত কিছু এগিয়েও দেয়না, কিছু পিছিয়েও দেয়না)। এতে বরং শুধু এতটুকু কাজ হয় যে, এর ফলে কৃপণের কিছু ধন খরচ হয়ে যায় মাত্র।

হযরত আবু হুরায়রা(রা) বর্ণনা করেছেন, নবী করীম(স) ইরশাদ করেছেনঃ মানত মানব সন্তানকে কোনো ফায়দাই দেয়না। দেয় শুধু তাই, যা তার তকদীরে লিখিত হয়েছে। বরং মানত মানুষকে তার তকদীরের দিকেই নিয়ে যায়। অতঃপর কৃপণ ব্যক্তির হাত থেকে আল্লাহ কিছু খরচ করান। তার ফলে সে আমাকে(আল্লাহকে)এমন কিছু দেয়, যা এর পূর্বে সে কখনো দেয়নি।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমরের যে হাদীসটি মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে, তাতে মানত মানা থেকে রাসূল করীম(স) স্পষ্ট বাণী উচ্চারণ করেছেন।

ইরশাদ হয়েছেঃ (আরবি)

-একদিন নবী করীম (স) আমাদের মানত মানা থেকে নিষেধ করেছিলেন। বলছিলেন, মানত কোনো কিছু থেকেই ফিরাতে পারেনা, তাতে শুধু কৃপণের কিছু অর্থ ব্যয় হয় মাত্র।

অপর এক হাদীসে স্পষ্ট বলা হয়েছেঃ মানত মানা থেকে রাসূলে করীম(স) নিষেধ করেছেন। অপর বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ তোমরা মানত মানবেনা। কেননা এ মানত এক বিন্দু তকদীর বদলাতে বা ফিরাতে পারেনা।

এই হাদীস কয়টি থেকে বোঝা যায়, ইসলামে মানত মানার রীতি পছন্দনীয় নয়, বরং তা রাসূলের সুন্নাতের সম্পূর্ণ বিপরীত এক বিশেষ ধরনের বিদয়াত। আরো স্পষ্ট বলা যায়, টাকা পয়সা বা ধন সম্পদের মানত করা সম্পূর্ণ হারাম, তা যে কোনো উদ্দেশ্যেই করা হোকনা কেন? ইমাম মুহাম্মদ ইসমাইল আল-কাহলানী আস সানয়ানী লিখেছেন তাই লিখেছেনঃ

-মানত মানাকে হারাম বলা, এ কথাতো হাদীস থেকেই প্রমাণিত। এ হারাম হওয়ার কথা আরো শক্ত হয় এজন্য যে, মানত মানা থেকে নিষেধ করতে গিয়ে তার কারণ দর্শানো হয়েছে এই যে, এতে কোনো কল্যাণই আসেনা। তাতে যে অর্থ ব্যয় হয়, তা তো অযথা বিনষ্ট করা হয়। আর অর্থ বিনষ্ট করা হারাম। অতএব ধন মাল দেয়ার মানত মানাও হারাম।

অধিকাংশ শাফেয়ী ও মালেকী মাযহাবের লোকের বিশ্বাস, মানত মানা মাকরূহ। হাম্বলী মাযহাবেও একে মাকরূহ তাহরীম মনে করা হয়েছে। এর কারণ বলা হয়েছে এই যে, মানত কখনো আল্লাহর জন্য খালেস হয়না। তাতে ‘কোনো না কোনো বিনিময়’ লাভ লক্ষ্যভূত থাকে। অনেক সময় মানত মানা হয়; কিন্তু তা পূরণ করা কঠিন হয় বলে তা অপূরণীয়ই থেকে যায়। আল্লামা কাযী ইয়াজ বলেছেনঃ “মানত তাকদীরের ওপর জয়ী হতে চায় আর জাহিল লোকেরা মনে করে যে, মানত করলে তাকদীর ফিরে যাবে।” ইমাম তিরমিযী এবং কোনো কোনো সাহাবীও মানত মানাকে মাকরূহ মনে করতেন বলে উল্লেখ করেছেন। আর আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক লিখেছেনঃ মানত –তা আল্লাহর হুকুমবরদারীরই হোক কি নাফরমানীর- উভয় ক্ষেত্রে অবশ্য মাকরূহ হবে।

আর মাকরূহ মানে এসব ক্ষেত্রে মাকরূহ তাহরীম। ইবনুল আরাবী লিখেছেন-‘মানত মানা দো’আর সাদৃশ্য, তাতে তাকদীর ফিরে যায়না।” এ-ই হচ্ছে তকদীর। অথচ দো’আ করাকে পছন্দ করা হয়েছে, কিন্তু মানত মানতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা মানত উপস্থিত ইবাদত। তাতে সোজাসুজি বান্দার মন মগজ আল্লাহর দিকেই ঝুঁকে পড়ে। তা হয় বিনয়া্বনত, কাতর, উৎসর্গীত আল্লাহরই সমীপে। কিন্তু মানত মানায় উপস্থিত কোনো ইবাদত দেখা যায়না; বরং তাতে সরাসরি আল্লাহর পরিবর্তে সেই মানতের ওপরই নির্ভরতা দেখা দেয়। আর তা-ই শিরক পর্য্ন্ত পৌছায়।

এই প্রেক্ষিতে দেখা যায় যে, বর্তমানে সাধারণভাবে জনগণের মাঝে এবং এক শ্রেণীর জাহিল পীরের মুরীদরেদ মধ্যে কথায় কথায় মানত মানার যে হিড়িক পড়ে গেছে এবং ওয়ায-নসীহতে মানত মানার যে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে, তা আর যা-ই হোক ইসলামের আদর্শ নয়, নয় রাসূলের প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত বরং তা স্পষ্টভাবে বিদয়াত। এ বিদয়াত-ই কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিরক এ পরিণত হয়ে যায়। শিরক হয় তখন, যখন মানত মানা হয় কোনো মরা পীরের কবরের নামে। কেননা এসব ক্ষেত্রে ‘আল্লাহর ওয়াস্তে’ যতই মানত মানা হোকনা কেন, আসলে তা ‘আল্লাহর ওয়াস্তে’ থাকেনা। তার সামনে পীর, মাদ্রাসা ইত্যাদি-ই থাকে প্রবল হয়ে এবং মনে করা হয়, এদরে এমন কিছু বিশেষত্ব আছে, আছে এমন কিছু অলৌকিক ক্ষমতা, যার কারণে সে এ মানতের দরুন উপস্থিত বিপদ থেকে উদ্ধার লাভ করতে পারবে; কিংবা তা বাঞ্চিত কোনো সুবিধা লাভ করিয়ে দিতে পারবে। আর ইসলামের দৃষ্টিতে এ-ই হচ্ছে সুস্পষ্ট শিরক। এ ধরনের মানত মানায় আল্লাহকে রাখা হয় পেছনে, আর যার নামে মানত করা হয়, সেই হয় মুখ্য। মনে ঐকান্তিক সম্পর্ক তারই সাথে স্থাপিত হয়, তাকে খুশি করাই হয় আসল লক্ষ্য। কাজেই এই জিনিস আল্লাহর নিষেধ এবং তা আল্লাহর বাণীঃ

فَلَا تَجْعَلُوا لِلَّهِ أَندَاد ا

–‘কাউকেই আল্লাহর সমতুল্য ও প্রতিদ্বন্ধী বানিওনা’(আল বাকারাঃ২২) এর বিপরীত হয়ে যায়।

এ ধরনের মানত মানা যে হারাম তাতে কোনো মুসলমানেরই কি এক বিন্দু সন্দেহ থাকতে পারে?

পূর্বোক্ত হাদীস হতে অবশ্য এ কথাও জানা যায় যে, মানত যদি খালেসভাবে কেবল মাত্র আল্লাহর জন্যেই হয়, তবে তা পূরণ করতে হবে এবং তা জায়েয। কিন্তু দুঃখের বিষয়, জায়েয নিয়মে খালেসভাবে মানত মানা খুব কম লোকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে থাকে। তাই টাকা পয়সা খরচ করার বা কোনো মাল দেয়ার মানত মানা না মানাই তওহীদবাদী লোকদের জন্য নিরাপদ পথ। যদি মানত মানতেই হয়, তবে যেন নামায রোযা, আল্লাহর ঘরের হ্জ্জ ইত্যাদি ধরনের কোনো কাজের মানত মানা হয়। কেননা তাতে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ-ই বান্দার সামনে আসেনা- আসার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু ধন-মালের যে মানত মানা হয় তাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু বা অন্য কারো প্রতিই মন বেশি করে ঝুঁকে পড়ে, বিশেষ করে এক শ্রেণীর শোষক জাহিল অর্থলোভী গদীনশিন পীর যখন মানত মানার এক জাল বিস্তার করে দিয়েছে সমস্ত সমাজের ওপর, তখন মূর্খ লোকেরা ও অজ্ঞ লোকেরা এ জালে সহজেই ধরা পড়ে যেতে পারে, নিমজ্জিত হতে পারে কঠিন শিরক এর অন্ধ গহবরে। এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা দরকার যে, যদি কোনো বিশেষ জায়গার বিশেষ লোকদের জন্যে টাকা পয়সা বা কোনো মাল খরচ করার মানত করা হয়, তবে সে টাকা ইত্যাদি সেখানেই খরচ করতে হবে ইসলামে এমন কোনো জরুরী শর্ত নেই।

হানাফী ফিকহের কিতাবে লিখিত হয়েছে-

কেউ যদি বলে, অমুক দিন আল্লাহর নামে কিছু দান করা আমার ওপর ওয়াজিব কিংবা বলে অমুক স্থানের মিসকীনদের জন্য কিছু সদকা দেয়া ওয়াজিব, তাহলে দিন ও স্থানের কয়েদ পালন করা জরুরী হবেনা।

অর্থাৎ, যে কোনো দিন ও যে কোনো স্থানের গরীবদের মধ্যে দান করলেই মানত পূরণ হয়ে যাবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন