মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
বর্তমানকালের পীর ও আলিমদের দরবারে কদমবুসির বড় ছড়াছড়ি দেখা যায়। মুরীদ হলেই পীরের কদমবুসি করতে হয়, মাদ্রাসার ছাত্র হলেই ওস্তাদ হুযুরের কদমবুসি করতে বাধ্য। তা না করলে না মুরীদ ফায়েজ পেতে পারে পীরের, না ছাত্র ওস্তাদের কাছ হতে লাভ করতে পারে ইলম। বরং উভয় দরবারেই সে বেয়াদব বলে দোষী সাব্যস্ত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গেই ‘বড় কুরআনের (?) দলীল পেশ করে বলা হয়ঃ (আরবি)
-বেয়াদব লোক আল্লাহর অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত হয়ে যায়।
কদমবুসি করলে আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয় কিনা- তা আল্লাহই জানেন। কিন্তু এ ধরনের মুরীদ আর ছাত্র যে পীর ও ওস্তাদের স্নেহ দৃষ্টি থেকে মাহরুম হয়ে যায় তা বাস্তব সত্য। কিন্তু প্রশ্ন এই যে, এই কদমবুসি করা কি সত্যই শরীয়ত মোতাবিক কাজ? এ জিনিস মুসলিম সমাজে কোথ্থেকে এসে প্রবেশ করলো? এর ফলাফলই বা কি?
সাহাবায়ে কিরামের সামনে নবী করীম(স) এর যে সম্মান ও মর্যাদা এবং নবী করীম(স) কে সাহাবায়ে কিরাম যতদূর ভক্তি শ্রদ্ধা করতেন, তার তুলনা অন্য কোথাও হতে পারেনা এবং সেই রকম সম্মান শ্রদ্ধা অন্য কাউকেই কেউ দিতে পারেনা। কিন্তু সেই সাহাবীগণ বাহ্যত নবী করীমের প্রতি কিরূপ সম্মান দেখাতেন? এ পর্যায়ে হাদীসে শুধু এতটুকুরই উল্লেখ পাওয়া যায় যে, সাহাবীদের কেউ কেউ নবী করীমের হাতে ও কপালে হালকা ভাবে চুমু দিয়েছেন। এই চুমু’য় ভক্তির চাইতে ভালোবাসাই প্রকাশ পেতো সমধিক। তাঁদের কেউ কোনোদিন রাসূলে করীমের পা হাত দিয়ে স্পর্শ করে সে হাত দ্বারা মুখমন্ডল মুছে দেয়ার যে কদমবুসি, তা করেছেন বলে কোনো উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যাবেনা হাদীসের বা জীবন চরিতের কিতাবে।
এ পর্যায়ে হাদীসে শুধু এতটুকুই উল্লেখ পাওয়া যায় যে, কোনো কোনো সাহাবী ভালোবাসার আতিশয্যে কখনো কখনো নবী করীম(স) এর হাত পা চুম্বন করেছেন। কিন্তু নির্বিশেষে সব সাহাবীর মধ্যে এ জিনিসের কোনো প্রচলন ছিলনা। তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীন এর যুগেও মুসলিম সমাজে এর কোনো রেওয়াজ দেখা যায়নি। এ কদমবুসির কোনো নাম নিশানাই পাওয়া যায়না ইসলামের এ সোনালী যুগের ইতিহাসে। তাহলে এ কাজটি যে ইজমা ও মুতাওয়াতির ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত তা অনস্বীকার্য্।
তা ছাড়া ইসলামী শরীয়তের একটি মূলনীতি হলো, কোনো মুবাহ বা সুন্নাত মোতাবিক কাজও যদি আকীদা বা আমলের ক্ষেত্রে খারাবী পয়দার কারণ হয়ে পড়ে, তাহলে তা করার পরিবর্তে বরং না করাই ওয়াজিব। এ কারণেই হযরত ওমর ফারূক(রা) সে গাছটি কেটে ফেলেছিলেন, যার পাদদেশে বসে নবী করীম(স) ঐতিহাসিক ‘বায়’আতে রেজওয়ান’ গ্রহণ করেছিলেন। কেননা তাঁর সময়কার লোকেরা এ গাছের নিকট সমবেত হওয়াকে সুন্নাতী কাজ বলে মনে করতো এবং তার নিকট রীতিমত হাজিরা দেওয়াকে একান্ত জরুরী ও সওয়াবের কাজ বলে মনে করতে শুরু করেছিল। অথচ এ জামানা ছিল ইসলামের উজ্জ্বলতম যুগ। এ জন্যে ইলমে ফিকহর মূলনীতি দাঁড়িয়েছেঃ যে মুবাহ কাজ ওয়াজিবের পর্যায়ে পৌছে যায়, তা করা মাকরূহ।
তা ছাড়া কদমবুসি করার সময় মানুষ ঠিক সে অবস্থায় পৌছে যায় , যে অবস্থায় পৌছে নামাযের রুকু ও সেজদার সময়ে, আর ইচ্ছে করে কারো জন্য এরূপ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয।
কাযী ইয়াজ লিখেছেনঃ (আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে)সেজদা করা যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি রুকূর ধরনে কারো সামনে মাথা নত করাও নিষিদ্ধ।
আল মুজাদ্দিদে আল ফেসানী(রহ) লিখেছেনঃ কারো সামনে মাথা নত করা কূফরীর কাছাকাছি।
আর ফিকাহবিদদের মত হলোঃ রাজা বাদশাহ বা অন্য কারো জন্য মাথা নোয়ানো মাকরূহ। আর মাকরূহ মানে মাকরূহ তাহরীম।
এ সব কথা থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, পীর, ওস্তাদ বা অন্য কোনো মুরুব্বী- তিনি যেই হোননা কেন, তার যে কদমবুসি করতে হবে ইসলামী শরীয়তে তার কোনো নিয়ম নেই। আর এ কাজ রাসূলে করীমের সুন্নাতের সম্পূর্ণ পরিপন্থী-অতি বড় বিদয়াত।
কদমবুসি সম্পর্কে আর একটি কথা হলো, এর রেওয়াজ কেবল পাক ভারতের আলিম ও পীরের দরবারেই দেখা যায়। অন্যান্য মুসলিম সমাজে এর নাম নিশানাও নেই। এ কারণে এ কথা সহজেই মনে করা যেতে পারে যে, কদমবুসির এ কাজটি এতদ্দেশীয় হিন্দু সমাজ থেকে মুসলিম সমাজে এসে তা মুসলমানী রূপ পরিগ্রহ করেছে। মুসলিম সমাজের বর্তমান কদমবুসি ছিল আসলে ‘ব্রাক্ষ্মণের পদপ্রান্তে প্রণিপাত’। এখনো তা দেখা যায় এখানে সেখানে। যজমান ব্রাক্ষ্মণের সামনে আসলেই ব্রাক্ষ্মণ তার বাঁ পায়ের বুড়ো অঙ্গুলী উঁচু করে ধরবে, আর যজমান তার কপাল সে অঙ্গুলির অগ্রভাগে স্থাপন করবে। অতঃপর যখন ইচ্ছা ব্রাক্ষ্মণ তার পা টেনে নেবে। ব্রাক্ষ্মণ্য ধর্মে এ রীতি আদিম। কেননা ব্রাক্ষ্মণ্য ধর্ম দর্শনে ব্রাক্ষ্মণরাই মানুষ আর অন্যান্যরা ব্রাক্ষ্মণের দাসানুদাস। অতএব ব্রাক্ষ্মণের পদপ্রান্তে প্রণিপাত করাই তাদের কর্তব্য।
পরবর্তীকালে এ দেশের হিন্দুরা মুসলমান হয়ে এ হিন্দুয়ানী ব্রাক্ষ্মণ্য প্রথাকেই- এ ‘পদপ্রান্তে প্রণিপাতকে’ই ‘মুসলমান’ বানিয়ে কদমবুসিতে পরিণত করে দিয়েছে। এক কথায় সম্পূর্ণ হিন্দুয়ানী ব্রাক্ষ্মণ্য প্রথাকে মুসলিম সমাজে-বিশেষ করে পীর সাহেবান ও আলিম ওস্তাদ সাহেবানের দরবারে বড় সওয়াবের কাজ হিসেবে চালু করে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এর কুফল, যা মুসলিম সমাজে প্রতিফলিত হয়েছে, তওহীদের দৃষ্টিতে তা খুবই ভয়াবহ। পীর মুরীদী আর ওস্তাদ শাগরিদীর পরিবেশে এ কদমবুসি রীতিমত শিরকী ভাবধারা বিস্তার করে দিয়েছে। মুরীদ আর ছাত্র মনে করে এ কাজ অপরিহার্য্। অন্যথায় হুজুরের নেক নজর পাওয়া যাবেনা, হুজুর খুশি হবেননা। দ্বিতীয়ত, হুজুর তো এমন উঁচু মর্যাদার যে, তিনি যা-ই বলবেন, অথবা যাতে তাঁর দিল খুশি হবে, তাই করা তাঁর কর্তব্য। তার উপর টু শব্দ করাও চরম বেয়াদবী। আর তাতে আল্লাহ বেজার হবেন। অথচ ইসলামের তওহিদী আকীদায় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আল্লাহর এবং বাস্তব আমলের ক্ষেত্রে রাসূল(স) ছাড়া এ মর্যাদা আর কারোই হতে পারেনা।
অপরদিকে ‘হযরত পীর কেবলা’ ও ওস্তাদ হুযুরের মনে এ বাসনা স্পষ্টত মনে থাকে- তারা তো ফেরেশতা নয়, মানুষই-যে, মুরীদ বা ছাত্র আমার কদমবুসি করবেই। অনেক হুজুরকে এমনভাবে প্রস্তুত হয়েই আসন গ্রহণ করতে দেখা যায় যে, মুরীদ বা ছাত্রের পক্ষে পায়ে হাত দিতে যেন কোনো অসুবিধা না হয়। বরং অনায়াসেই যেন একাজ সম্পাদিত হতে পারে। তাই বলে তাঁরা মুখে কাউকে কদমবুসি করতে বলেন, এমন নয়; বরং তাঁরা নিষেধই করে থাকেন। আর সে নিষেধ বাণীটা উচ্চারিত হয় কদমবুসির কাজটা যথারীতি সম্পন্ন হয়ে যাবার পর, তার আগে নয়। আর সে নিষেধও ঠিক আদেশেরই অনুরূপ।
সবচেয়ে বড় কথা, কদমবুসির যে রূপটি তা সেজদার মতোই। আল্লামা শামী তাঁর সময়কার অবস্থা অনুযায়ী এ ধরনের কাজকে ‘সেজদা’ বলেই অভিহিত করেছেন।
তিনি লিখেছেনঃ এমনিভাবে লোকেরা যে আলিম ও বড় লোকদের জমিনবুসি করে, এ কাজ সম্পূর্ণ হারাম। আর যে একাজ করে এবং যে তাতে রাজি থাকে- খুশি হয়, উভয়ই গোনাহগার হয়। কেননা একাজ ঠিক মূর্তি পূজা সদৃশ্য।
বস্তুত কুরআন হাদীসে কদমবুসির কোনো উল্লেখ নেই, ইসলামী তাহযীব ও তমদ্দুনের ক্ষেত্রে এর কোনো স্থান নেই। এর পরিবর্তে কুরআন-হাদীসে সালাম দেয়ার ও মুসাফাহা করার উল্লেখ এবং সুস্পষ্ট নির্দেশ পাওয়া যায়।
– তোমাদেরকে যখন কোনো প্রকার সম্ভাষণে সম্ভাষিত করা হবে, তখন তোমরা তার অপেক্ষা উত্তম সম্ভাষণে সম্ভাষিত করো অথবা ততোটুকুই ফিরিয়ে দাও। মনে রেখো, আল্লাহ সর্ব বিষয়ে নিশ্চিত হিসাব গ্রহণকারী। (আন নিসাঃ৪৬)
এ থেকে সুস্পষ্ট বোঝা গেল, মুসলমানদের পরস্পরের যখন দেখা সাক্ষাত হবে, তখন পরস্পরের সম্ভাষণের আদান প্রদান করবে। এ সম্ভাষণ মৌখিক হতে হবে এবং এ সম্ভাষণের ব্যাপারে পরস্পরে ঐকান্তিক নিষ্ঠা পোষণ করতে হবে এবং কোনোরূপ কৃপণতা পোষণ করা চলবেনা। বরং প্রত্যেককে অপরের তুলনায় উত্তম সম্ভাষণ দানে প্রস্তুত থাকতে হবে অকুন্ঠিতভাবে। আয়াতের শেষ অংশ এ সম্ভাষণের গুরুত্ব এবং তা যথারীতি আদান প্রদানের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিচ্ছে।
হাদীসে নবী করীম(স) বারবার নানাভাবে পারস্পরিক সালাম আদান প্রদানের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। হযরত আবু হুরায়রা(রা) বর্ণনা করেছেন, নবী করীম(স) ইরশাদ করেছেনঃ
(আরবি)
-আমার প্রাণ যে আল্লাহর মুষ্টিবদ্ধ তাঁর কসম করে বলছিঃ তোমরা জান্নাতে যেতে পারবেনা, যতক্ষণ না তোমরা ঈমান আনবে, আর তোমরা ঈমান আনতে পারবেনা যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবে। অতঃপর বললেনঃ আমি কি তোমাদের এমন একটা কাজের পথ দেখাব, যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসতে পারবে? তা হলো এই যে, তোমরা তোমাদের পরস্পরের মাঝে সালাম দেয়ার প্রচলনকে চালু করবে।
নবী করীম(স) হিজরত করে মদীনায় উপস্থিত হলে মদীনার মুসলমানগণে তাঁকে সাদর সম্বর্ধনা জানিয়েছিলেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম এ সম্বর্ধনার বিবরণ দান প্রসঙ্গে বলেছেনঃ (আরবি)
-নবী করীম(স) যখন মদীনায় উপস্থিত হলেন, তখন জনগণ তাকে সম্বর্ধনা করার উদ্দেশ্যে দ্রুততা সহকারে এগিয়ে এল। যারা এই সময় সামনে এগিয়ে গিয়েছিল, আমিও তাদের মধ্যে একজন। …এই সময় আমি যে কথা তাঁকে যে কথা সর্বপ্রথম বলতে শুনেছিলাম তা হলোঃ তোমরা পরস্পরের প্রতি সালাম আদান প্রদান করো।
কুরআনের আয়াত থেকে পারস্পরিক সম্ভাষণের যে হেদায়াত পাওয়া যায়, সে সম্ভাষণ যে কি এবং কিভাবে, কি কথা দিয়ে তা করতে হবে, তার সঠিক সুস্পষ্ট নির্দেশ পাওয়া যায় এ হাদীস থেকে। অতএব নতুন সাক্ষাতকালে একজন মুসলমানের অপর মুসলমানের প্রতি প্রথম জরুরী কর্তব্য হচ্ছে সালাম দেয়া, বলা আসসালামু আলাইকুম। আর অপর পক্ষ জবাবে বলবেঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। বুখারী শরীফের একটি হাদীস থেকে জানা যায়, হযরত আদম(আ) সৃষ্ট হওয়ার পরই আল্লাহর নির্দেশক্রমে ফেরেশতাদের সাথে এই সালামের আদান প্রদান করেছিলেন।
শেষোক্ত হাদীস থেকে একজন নবাগত মহাসম্মানিত মেহমানকে সম্বর্ধনা জানাবার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ জানতে পারা যায়। এই পর্যায়ে অপর হাদীস থেকে জানা যায়, এ সালাম করার সময় কি ধরনের আচরণ অবলম্বন করা উচিত এবং কি ধরনের অনুচিত।
এই পর্যায়ে যত হাদীসই বর্ণিত হয়েছে, তা সব সামনে রেখে চিন্তা করলে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, ‘সালাম’ মুখে উচ্চারণ করার-কথার মাধ্যমে বলে দেবার ব্যাপার। এজন্যে কোনোরূপ অঙ্গভঙ্গি করা জরুরী নয়, তা হাদীস থেকেও প্রমাণিত নয়।
দ্বিতীয় যে কাজ নবাগত মুসলিমের সাথে করার কথা হাদীস থেকে সুন্নাত বলে প্রমাণিত, তা হলো মুসাফাহা করা। বুখারীর একটি হাদীস থেকে জানা যায়, হযরত কাব ইবনে মালিক(রা) বলেনঃ (আরবি)
-আমি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম সেখানে নবী করীম(স) রয়েছেন। আমাকে দেখেই তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ দাঁড়িয়ে আমার দিকে দ্রুত এগিয়ে আসলেন। আমার সাথে মুসাফাহা করলেন এবং আমাকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে গেলেন।
বুখারীর অপর হাদীস থেকে জানা যায়, তাবেয়ী কাতাদাহ হযরত আনাস(রা) কে জিজ্ঞেস করলেনঃ (আরবি)
-নবী করীমের(স) সাহাবীদের পরস্পর মুসাফাহা করার রীতি বহুল প্রচলিত ছিল কি? হযরত আনাস(রা) জবাবে বললেন, হ্যা, তা চালু ছিল।
আবদুল্লাহ হিশাম বলেন, আমরা নবী করীমের সঙ্গে ছিলাম। আর তিনি হযরত উমরের হাত ধরে ছিলেন।
এ পর্যায়ের হাদীস থেকে নবাগতের সাথে সালামের পর মুসাফাহার সুস্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায় এবং তা রাসূলে করীম(স) এর সাহাবীদের সমাজে পুরা মাত্রায় চালু ছিল বলে অকাট্যভাবে জানা যায়।
এই সম্পর্কে তিরমিযী শরীফে বর্ণিত একটি হাদীস সর্বাধিক স্পষ্টভাষী। হযরত আনাস ইবনে মালিক(রা) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলে করীম(স) কে জিজ্ঞেস করলেনঃ (আরবি)
-ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমাদের একজন তার ভাই বা বন্ধুর সাথে যখন সাক্ষাত করে, তখন কি সে তার জন্য মাথা নুইয়ে দিবে? রাসূল(স) বললেনঃ না। জিজ্ঞেস করলো, তবে কি তাকে জড়িয়ে ধরবে ও তার মুখমন্ডলে চুমু খাবে? রাসূল(স) বললেনঃ না। জিজ্ঞেস করলোঃ তবে কি তার হাত ধরে মুসাফাহা করবে? রাসূল(স) বললেনঃ হ্যা।
এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী বলেছেন-‘মুসাফাহা’ হাতে হাত ধরা ও পরস্পরের জন্য দো‘আ করা ‘আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের মাফ করে দিন’-বলবে।
এর ফযীলত বর্ণনা সম্পর্কে রাসূলে করীম(স) ইরশাদ করেছেনঃ (আরবি)
-দু’জন মুসলমান পরস্পরের সাক্ষাতকালে যদি মুসাফাহা করে, তাহলে দু’খানি হাত বিচ্ছিন্ন করার আগেই সে দুজনকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।
হাদীসে তৃতীয় যে জিনিসের উল্লেখ পাওয়া যায়, তা হচ্ছে ‘মুয়ানাকা’-কোলাকুলি। তিরমিযী শরীফে এ সম্পর্কে যে একমাত্র হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে তাহলো হযরত আয়েশা(রা) বলেনঃ
(আরবি)
-যায়দ ইবনে হারিসা [রাসূল(স) এর পালিত পুত্র] মদীনায় উপস্থিত হলো। তখন নবী করীম(স) আমার ঘরে এলেন। যায়দ তাঁর সাথে দেখা করার জন্য এলো এবং দরজায় ধাক্কা দিলো। নবী করীম(স) তার কাছে উঠে গেলেন এবং তিনি তার সাথে গলাগলি করলেন, একজন আরেকজন এর গলা জড়িয়ে ধরলেন এবং তাকে স্নেহের চুম্বন দিলেন।
এ পর্যায়ে আরো কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করে আল্লামা আহমাদুল বান্না লিখেছেনঃ এসব হাদীস প্রমাণ করে যে, মুয়ানাকা(গলাগলি বা কোলাকুলি)শরীয়তে জায়েয। বিশেষ করে যে আসবে তার সাথে।
নবী করীম(স) এর সাহাবীদের তরীকা ছিলো এই যে, যখন তাঁরা পরস্পরের সাথে দেখা করতেন, পরস্পরের মুসাফাহা করতেন। আর যখন বিদেশ সফর করে ফিরে আসতেন, তখন তাঁরা পরস্পরে গলাগলি করতেন।
এ আলোচনা থেকে জানা গেল, ইসলামের সুন্নাত হচ্ছে এই যে, দু’জন মুসলমান যখন পরস্পর সাক্ষাত করবে তখন সালাম করবে, মুসাফাহা করবে এবং গলাগলিও করবে-বিশেষ করে বিদেশাগত ব্যক্তির সাথে। এসব কয়টি কথাই সুস্পষ্ট হাদীস থেকে প্রমাণিত। রাসূলে করীম(স) তাই করেছেন, সাহাবাদের সমাজে এই ছিল স্থায়ী রীতি, বস্তুত এই হচ্ছে সুন্নাত। কিন্তু এই কদমবুসি এল কোথ্থেকে? কে কদমবুসি করতে বলেছে? কে তা রেওয়াজ করেছে ইসলামী সমাজে? কুরআন নয়, হাদীস নয়, রাসূল নয়, রাসূলের গড়া সমাজ নয়। অতএব এটি বিদয়াত ও মুশরিকী রীতি হওয়ার কোনোই সন্দেহ নেই। অথচ আমাদের সমাজের তথাকথিত পীরবাদি আহলে সুন্নাত(?) দের সমাজে কদমবুসি একটি অপরিহার্য্ রীতি। আর তা হবেই না বা কেন? এখানে ইসলাম ও সুন্নাত কুরআন, হাদীস, রাসূল ও সাহাবাদের আমল থেকে গ্রহণ করা হয়না, গ্রহণ করা হয় মরহুম বা বর্তমান পীর সাহেবানদের কাছ থেকে। আর এ ধরনের পীর মুরীদী যেহেতু বেদান্তবাদী ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী থেকে গৃহীত, তাই কদমবুসির ব্রাক্ষ্মণ্য রীতিও এখানে চালু হতে বাধ্য। কেউ যদি বলেন যে, ওস্তাদ, পীর ও মুরুব্বীদের তাজীম করার জন্যই এ রীতি চালু করা হয়েছে, তাহলে বলবো-ওস্তাদ, পীর ও মুরুব্বীদের তাজীমের তরীকা সুন্নাত থেকে যা প্রমাণিত তাই দিয়ে তাজীম করতে হবে। নিজেদের মনগড়া একটা রীতিকে চালু করার বিশেষ করে তাতে যদি শরীয়তের দৃষ্টিতে ভয়ানক খারাবী থাকে-কারো অধিকার থাকতে পারেনা। করলে তাই তো হবে বিদয়াত। যারা চলতি প্রথার দোহাই দিয়ে শরীয়তের বাইরের জিনিসকে শরীয়তসম্মত বলে চালু করতে চাইবে, তারাইতো বিদয়াতী। আল্লাহ এই বিদয়াতীদের প্রভাব থেকে বাঁচান ঈমানদার ও তওহীদবাদী মুসলিম সমাজকে।
কদমবুসি পর্যায়ে আলোচনার শেষভাগে একটি কথার উল্লেখ করে তার জবাব না দিলে এ দীর্ঘ আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। কোনো কোনো পীরের অনুমোদনক্রমে প্রকাশিত তাসাউফ সংক্রান্ত কদমবুসি- বিশেষ করে পীর ওস্তাদের কদমবুসি-করা জায়েয বলে ফতোয়া দেয়া হয়েছে। এ ফতোয়ার দলীল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দুটো হাদীস। একটি হাদীস তিরমিযী থেকে, অপরটি আবু দাঊদ থেকে। প্রথম হাদীসটিতে দু’জন ইয়াহুদীর কথা বলা হয়েছেঃ তারা রাসূলে করীমের নিকট দ্বীন ইসলামের ব্যাখ্যা শ্রবণ করে। অতঃপর তারা রাসূলে করীমের দু’হাত ও দু’পা চুম্বন করলো এবং বললোঃ আমরা স্বাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি নবী।
এ সম্পর্কে আমাদের প্রথম কথা হলো, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে উত্তম বিশুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেছেন বটে, কিন্তু ইমাম নাসায়ী হাদীস সম্পর্কে বলেছেন-অগ্রাহ্য হাদীস। আর মুনযেরী বলেছেন, হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনে সালেমার কারণেই যয়ীফ। কেননা হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে তাঁর দোষ বের করা হয়েছে। তাছাড়া হাদীসের সুস্পষ্ট কথা হলো-হাত ও পা চু্ম্বনের কাজটি দু’জন ইয়াহুদী করেছে। ইয়াহুদীদের কাজ মুসলমানদের জন্য অনুসরণীয় হতে পারেনা। আবু দাউদ বর্ণিত অপর হাদীসে ঊমামাত ইবনে শরীক(রা) এর কথা উদ্ধৃত হয়েছেঃ (আরবি)
-আবু দাউদে উদ্ধৃত হাদীসে রাসূলে করীম(স) এর হাত বা পা নয়, কটিদেশ চুম্বনের কথা বলা হয়েছে। (হযরত উসাইদ ইবনে উজাইর(রা) হতে হাদীসটি বর্ণিত। একজন আনসারের কথায় রাসূলে করীম(স) তাঁর পরিহিত জামা পিছনের দিক দিয়ে তুলে ধরলে তিনি তাঁকে আলিঙ্গন করলেন এবং তার কটিদেশে চুম্বন করতে লাগলেন।)
দ্বিতীয় কথা, এ পর্যায়ের সব কটি হাদীসকে একত্রিত করে বিচার করলে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, এসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় সব হাদীসে একই রকম নয়। কোনোটিতে শুধু দু’হাত চুম্বনের কথা বলা হয়েছে, কোনোটিতে এক হাত, এক পা চুম্বনের কথা বলা হয়েছে। এমন কি হযরত ইবনে উমর(রা) হতে বর্ণিত হাদীসে শুধু হাত চুম্বনের কথা উল্লিখিত হয়েছে। বলা হয়েছেঃ (আরবি)
-অতঃপর আমরা তাঁর হাত চুম্বন করলাম। তিনি বললেনঃ এবং আবু লুকাবা ও কাব ইবনে মালিক এবং তাঁর দু’জন সঙ্গীও নবী করীম(স) এর হাত চুম্বন করলেন, যখন আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করলেন। এ কথা আবরাহীও উল্লেখ করেছেন।
ইবনে উমার বর্ণিত এ হাদীসটি ইমাম বুখারী ‘আদাবুল মুফরাদ’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন। হযরত বুরাইদা ইবনে বর্ণিত একটি হাদীসে উদ্ধৃত হয়েছে, জনৈক বুদ্ধু লোক রাসূলের মস্তক ও দু’পা চুম্বনের অনুমতি প্রার্থনা করলে রাসূলে করীম(স) তাকে অনুমতি দেন। আবদুর রহমান ইবনে রুজাইন বলেছেন, সালেমা ইবনুল আকওয়া তাঁর উটের হাতের মতো হাত বের করলেন, আমরা তা চুম্বন করলাম। সাবিত হতে বর্ণিত, তিনি হযরত আনাসের হাত চুম্বন করলেন। আর হযরত ‘আলী নাকি’ হযরত আব্বাসের হাত ও পা চুম্বন করেছিলেন।
এভাবে বর্ণিত হাদীসসমূহ হতে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়না। মূলত হাত পা দু’টোই চুম্বন করার কথা ঠিক, না শুধু হাত চুম্বনের কথাই ঠিক। কাজেই এসব হাদীসের ভিত্তিতে কদমবুসি করা জায়েয কিছুতেই বলা যায়না। আবু মালিক আল আশযায়ী বলেনঃ আমি আবু আওফ(রা) কে বললাম, আপনি যে হাত দিয়ে রাসূলের বায়’আত করেছেন, তা বের করুন। তিনি সে হাত বের করেন। অতঃপর আমরা তা চুম্বন করি।
এ ধরনের হাদীস হতে কোনো আবিদ জাহিদ ব্যক্তির হাত ভক্তিভরে চুম্বন করা জায়েয প্রমাণিত হয় বটে; কিন্তু কদমবুসি প্রমাণিত হয়না। ইমাম নববীও এ মত প্রকাশ করেছেন।
আরো কথা হলো, কোনো নওমুসলিম যদি ভক্তি শ্রদ্ধায় ভারাক্রান্ত হয়ে রাসূলে করীমের হাত ও পা উভয়ই চুম্বন করে থাকেন, তবে তার ভিত্তিতে আজকের পীর ওস্তাদেরা ভক্ত মুরীদ ও ছাত্রদের দ্বারা নিজেদের হাত পা চুম্বন করাতে পারেননা। তাঁরা কি নিজেদের রাসূলের মর্যাদাভিষিক্ত মনে করে নিয়েছেন?
বস্তুত কদমবুসির বর্তমান রেওয়াজ রাসূলের সুন্নাতের বিপরীত; মানবতার পক্ষে চরম অবমাননাকর। অনতিবিলম্বে এ প্রথা বন্ধ হওয়া বাঞ্চনীয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/289/46
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।