hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

প্রিয় নবীর সান্নিধ্যে চল্লিশ আসর

লেখকঃ আদেল বিন আলী আশ-শিদ্দী

৩০
আটাশতম আসর: উহুদ যুদ্ধ
হিজরতের তৃতীয় বছর শাওয়াল মাসে উহুদ যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হয়। যেহেতু বদর যুদ্ধে কুরাইশদের বড় বড় নেতৃবৃন্দ নিহত হয়েছে এবং তারা এমনভাবে পরাভূত হয়েছে, যেমনটি এরপূর্বে আর কখনো ঘটেনি, তাই তারা প্রতিশোধ নেয়ার সংকল্প করল এবং হারানো মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে চাইল।

আবু সুফিয়ান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে লোকদেরকে উদ্বুদ্ধ করে বিরাট এক বাহিনী তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলল। সে কুরাইশ এবং পার্শ্ববর্তী শান্তিচুক্তিতে আবদ্ধ ও শরণার্থীদের সমন্বয়ে প্রায় তিন হাজারের এক বিরাট বাহিনী প্রস্তুত করল। তারা নিজ স্ত্রীদেরও সাথে নিয়ে নিল, যাতে যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করতে না পারে এবং কমপক্ষে তাদের স্ত্রীদের রক্ষার্থে ময়দানে টিকে থাকে। অতঃপর তাদের নিয়ে মদীনার দিকে অগ্রসর হল এবং মদীনার নিকটবর্তী উহুদ পাহাড়ের নিকট অবস্থান নিল।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করলেন। মদীনায়ই অবস্থান নেবেন, না তাদের মোকাবেলায় বেরিয়ে যাবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মদীনা থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা ছিল না। তাঁর ইচ্ছা ছিল মদীনায় থেকে রক্ষণাত্মক ভূমিকায় যুদ্ধ করা। অর্থাৎ শত্রুরা মদীনা আক্রমণ করলে প্রতিরোধ করা হবে। কিন্তু বেশ কয়েকজন বড় বড় সাহাবি বের হয়ে যুদ্ধ করার পরামর্শ দিলেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাজার সাহাবির একটি দল নিয়ে বের হয়ে পড়লেন। দিবসটি ছিল শুক্রবার। যখন মদীনা ও উহুদের মাঝামাঝি পৌঁছলেন, আব্দুল্লহ বিন উবাই-মুনাফিক- এক তৃতীয়াংশ সৈন্য নিয়ে ফিরে গেল, এবং বলল, আপনি আমার বিরোধিতা করেন এবং অন্যের কথা শোনেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম বের হয়ে উহুদের এক উপত্যকায় অবতরণ করলেন। উহুদকে তিনি পেছনে রেখে লোকদের তাঁর আদেশ পাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ হতে বিরত থাকতে বললেন। শনিবার সকালে সাত শত সৈন্য নিয়ে তিনি কিতালের সিদ্ধান্ত নিলেন যাদের মাত্র পঞ্চাশ জন ছিল অশ্বারোহী।

সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়েরকে তীরন্দাজদের-যার সংখ্যা ছিল পঞ্চাশ- আমীর নিযুক্ত করে আদেশ দিয়েছিলেন, তারা যেন নিজ অবস্থানে দৃঢ় থাকে। শত্রুরা মুসলিম সৈন্যদের উঠিয়ে নিয়ে যেতে দেখলেও যেন কেউ নিজ স্থান ত্যাগ না করে। তারা ছিল সৈন্যবাহিনীর পেছন দিকে তাই তিনি তাদেরকে শত্রুর প্রতি তীর নিক্ষেপ করে তাদের প্রতিহত করার নির্দেশও দিয়েছিলেন যাতে শত্রুপক্ষ পেছন দিয়ে মুসলমানদের আঘাত করতে না পারে।

যুদ্ধ শুরু হল, দিনের প্রথমাংশেই মুসলমানদের বিজয় সাধিত হয়ে গেল। আর মুশরিকরা পরাজিত হয়ে তাদের নারীদের সাথে গিয়ে মিলিত হল। তীরন্দাজ সৈন্য বাহিনী শত্রুপক্ষের পরাজয় দেখে, রাসূলুল্লাহ তাদের যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা ভুলে গিয়ে সেখান থেকে চলে আসলেন। তারা বলল, হে আমাদের কওম! গনীমত। দলনেতা তাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ স্মরণ করিয়ে দিলেন। কিন্তু তারা সেদিকে কর্ণপাত করেনি। তারা ভাবল, মুশরিকদের আর ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। তাই তারা গনীমত সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে নেমে এল। ফলে গিরিপথ অরক্ষিত হয়ে পড়ল। এদিকে মুশরিকদের অশ্বারোহী দল আবার ফিরে এসে দেখল তিরন্দাজরা তাদের অবস্থানে নেই এবং গিরিপথ ফাঁকা। তখন তারা সে দিক দিয়ে আগে বাড়ল। তাদের পেছনের সৈন্যরা এসে তাদের সাথে মিলিত হলে তারা আরো শক্তিশালী হল। এরপর মুসলমানদের ঘেরাও করে তীব্র আক্রমণ চালাল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শহীদের মর্যাদা দান করলেন। সাহাবাগণ ময়দান ছেড়ে পেছনে হটে গেলেন। এ সুযোগে মুশরিকরা রাসূলের অতি নিকটে পৌঁছে গেল এবং তাঁর পবিত্র চেহারা আহত করে দিল। তাঁর ডান চোয়ালের দাঁত ভেঙে ফেলল। মাথার হেলমেট ভেঙে চুরমার করল। একটি পাথর আঘাত করে তাঁর শরীরের এক পাশে প্রচণ্ড ক্ষতের সৃষ্টি করল। আবু আমের নামক জনৈক পাপিষ্ঠ মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য খনন করা একটি গর্তে তিনি পড়ে গেলেন। আলী রা. এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত ধরলেন আর তালহা বিন উবায়দুল্লাহ রাসূলকে কোলে তুলে নিলেন। মুসআব বিন উমায়ের তার সামনে শহীদ হয়ে গেলেন। এসময় যুদ্ধের ঝান্ডা আলী বিন আবু তালেবের হাতে তুলে দেয়া হল। অন্যদিকে শিরস্ত্রাণের দুটি আংটা তাঁর চেহারায় বিদ্ধ হয়ে গেল। আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ আংটাদ্বয় টেনে বের করলেন, এবং আবু সাঈদ খুদরী রা. এর পিতা মালেক বিন সিনান তার গণ্ডদেশ থেকে রক্ত চুষে নিলেন। মুশরিকরা তাঁকে হাতের নাগালে পেয়ে গেল। তারা ঐ বাধা অতিক্রম করতে চাইল আল্লাহ তাদের ও তাঁর মাঝে সৃষ্টি করেছেন। এর মুকাবিলায় মুসলমানদের দশজনের একটি ছোট দল প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ালেন, এবং তাদের সকলেই শাহাদত বরন করলেন, তালহা তাদের মুকাবিলায় অবিচল থাকলেন।

আবু দুজানা রা. স্বীয় পিঠ ঢাল বানিয়ে রাসূল স.-কে হেফাযত করলেন। বিরামহীনভাবে তীর তার দেহে বিদ্ধ হতে থাকল, আর তিনি নিজ স্থানে স্থির দাঁড়িয়ে থাকলেন। সেদিন কাতাদা বিন নোমান চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হন। তাকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিয়ে আসা হলে নবীজী তার চোখের উপর হাত বুলিয়ে দিলেন। তার চক্ষুদ্বয় আগের থেকেও সুস্থ ও সুন্দর চোখে পরিণত হয়ে গেল।

এদিকে শয়তান চিৎকার করে ঘোষণা করল, মুহাম্মদ নিহত হয়ে গিয়েছেন। এতে অনেক মুসলমানের মনোবল ভেঙে গেল। অনেকে যুদ্ধ ছেড়ে চলে গেলেন। আল্লাহর সিদ্ধান্ত যা ছিল তাই হলো।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের দিকে এগিয়ে এলেন। তাঁকে হেলমেটের নীচে প্রথমে চিনতে পারেন কাব বিন মালেক। তাঁকে দেখে তিনি চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন, হে মুসলমানবৃন্দ! সুসংবাদ গ্রহণ কর, এই তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি ইশারা করে তাকে চুপ থাকতে বললেন। মুসলমানেরা তার পাশে এসে জমায়েত হলেন এবং তাঁর সাথে একই গিরিপথে অবতরণ করলেন। তাদের মধ্যে আবু বকর, ওমর, আলী, হারেছ বিন ছাম্মাহসহ আরো অনেকে ছিলেন। অতঃপর তারা পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হলে উবাই বিন খালফ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পেল। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে এদিকে আসছিল। রাসূলুল্লাহ তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করলেন। বর্শা তার কণ্ঠাস্থিতে আঘাত করল, ফলে সে পরাজিত হয়ে নিজ কওমের দিকে পালিয়ে গেল। এবং মক্কায় ফেরার পথে মারা গেল।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র চেহারা থেকে রক্ত ধুয়ে ফেললেন। যখমের কারণে বসে সালাত আদায় করলেন। হানযালাহ রা. এ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। তিনি স্ত্রী সহবাসের কারণে অপবিত্র অবস্থায় ছিলেন। যুদ্ধের ঘোষণা শুনে গোসলের পূর্বেই যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। তাঁকে ফেরেশ্‌তারা গোসল দিয়েছেন। মুসলমানরা মুশরিকদের পতাকাবাহীকে হত্যা করেছিল। উম্মে ইমারা-নাসাবিয়্যা বিনতে কাব আল মাযিনিয়্যা কঠিন যুদ্ধ করেছিলেন। তাকে আঘাত করেছিল আমর বিন কামিআহ। তিনি খুবই মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন।

মুসলমানদের মধ্যে যারা শহীদ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন তাদের সংখ্যা ছিল সত্তরের কিছু বেশি। আর মুশরিকদের মধ্যে নিহত হয়েছিল তেইশ জন। কুরাইশরা মুসলমানদের লাশ মারাত্মকভাবে বিকৃত করেছিল।

শাহাদাত বরণকারী মুসলমানদের মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচা হামযাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুও ছিলেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন