hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সংক্ষেপিত ইযহারুল হক্ক

লেখকঃ ড. মুহাম্মাদ আহমদ আব্দুল কাদির মালকাবী

১৪
১. ২. ৩. ৩. যোহনলিখিত সুসমাচার
কোনো পূর্ণ সূত্র পরম্পরার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়নি যে, এই সুসমাচারটি যীশুর শিষ্য যোহন কর্তৃক রচিত। বরং বিভিন্ন বিষয় প্রমাণ করে যে, এ সুসমাচারটি যীশুর শিষ্য যোহনের লেখা নয়:

প্রথম বিষয়: যোহনলিখিত সুসমাচার পাঠ করে মোটেও বুঝা যায় না যে যীশুর শিষ্য যোহন নিজের চোখে দেখে সে সকল বিষয় লিখছেন। বরং বাহ্যত বুঝা যায় যে, পরবর্তী কোনো ব্যক্তি এগুলির বর্ণনা করছেন। উপরন্তু এ সুসমাচারের বক্তব্য প্রমাণ করে যে, গ্রন্থটি নিঃসন্দেহে অন্য কেউ, যীশু শিষ্য যোহন নন। যোহনলিখিত সুসমাচারের শেষে, ২১ অধ্যায়ের ২৪ শ্লোকটি নিম্নরূপ: ‘‘সেই শিষ্যই এই সকল বিষয়ে সাক্ষ্য দিতেছেন এবং এই সকল বিষয় লিখিয়াছেন; আর আমরা জানি, তাঁহার সাক্ষ্য সত্য।’’

এখানে আমরা দেখছি যে, সুসমাচারের লেখক শিষ্য যোহনের বিষয়ে বলছেন: ‘সেই শিষ্যই এই সকল বিষয়ে সাক্ষ্য দিতেছেন’, ‘তাঁহার সাক্ষ্য’, ইত্যাদি। এভাবে তিনি যোহনের জন্য নাম পুরুষে সর্বনাম ব্যবহার করছেন। পক্ষান্তরে লেখক তার নিজের জন্য উত্তম পুরুষের সর্বনাম ব্যবহার করে বলছেন: ‘আমরা জানি’ [এর পরের শ্লোকটি (যোহন ২১/২৫) নিম্নরূপ: ‘‘যীশু আরও অনেক কর্ম করিয়াছেন। সে সকল যদি এক এক করিয়া লেখা যায়, তবে আমার বোধ হয়, লিখিতে লিখিতে এত গ্রন্থ হইয়া উঠে যে, জগতেও তাহা ধরে না।’’ এ দু শ্লোকের মাধ্যমে এ সুসমাচারের ইতি টানা হয়েছে। এখানে এ শ্লোকের ‘আমার’ (I) ও উপরের শ্লোকের ‘আমরা’ (We) এর সাথে সেই শিষ্য... তাহার.. ইত্যাদির তুলনা করলে আমরা বুঝতে পারি যে, সেই শিষ্য বলতে যোহনকে বুঝানো হয়েছে। যোহনের কথার ভিত্তিতে অন্য কেউ এ গসপেল বা সুসমাচারটি রচনা করেছেন এবং সুসমাচারের শেষে বিষয়টি বর্ণনা করে এর ইতি টেনেছেন।]। এথেকে স্পষ্টতই জানা যায় যে, এই সুসমাচারের লেখক যোহন ছাড়া অন্য কেউ।

দ্বিতীয় বিষয়: দ্বিতীয় খৃস্টীয় শতকে অনেকেই এই ‘সুসমাচারটিকে’ অস্বীকার করেন এবং বলেন যে, এটি যোহনের লিখিত নয়। এ সময়ে আরিনূস (১৩০-২০০খৃ) [(Irenaeus) দ্বিতীয় খৃস্টীয় শতকের প্রখ্যাত খৃস্টান। তিনিই সর্বপ্রথম খৃস্টানধর্মকে একটি কেতাবী ধর্ম হিসাবে রূপ প্রদানের চেষ্টা করেন। এরপূর্বে খৃস্টান ধর্মপ্রচারক ও ধমগুরুগণ মূলত ইহূদীদের ধর্মগ্রন্থ বা পুরাতন নিয়মের গ্রন্থগুলিকেই নিজেদের ধর্মীয় গ্রন্থরূপে মেনে চলতেন। যীশুর শিক্ষা মৌখিক প্রচার করা হতো, যদিও কিছু কিছু শিক্ষা, গসপেল, চিঠি ইত্যাদি তাদের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে প্রচলিত ছিল। তিনিই প্রথম ২০০ খৃস্টাব্দের দিকে প্রথম তিনটি গসপেলের (মথি, মার্ক ও লূক) কথা উল্লেখ করেন। সর্বপ্রথম তার কথা থেকেই এই তিনটি গসপেলের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এরপর ২১৬ খৃস্টাব্দে ক্লিমেন্ট ইসকাদ্রিয়ানূস (Clement of Alexandira) এই তিনটি গসপেলের কথা উল্লেখ করেছেন। দেখুন: Oxford Illustrated History of Christianity, New York, Oxford University Press, 1990, page 30-31. তারিখ কানীসাতিল মাসীহ, পৃষ্ঠা ৪৫।] জীবিত ছিলেন। আরিনূস ছিলেন পোলিকার্পের (St. Polycarp, Bishop of Smyrna c. 69-155) শিষ্য। আর পোলিকার্প ছিলেন যীশু-শিষ্য যোহনের শিষ্য। যখন মানুষেরা যোহনের নামে প্রচারিত এই সুসমাচারটি অস্বীকার করছিলেন তখন তিনি একটিবারের জন্যও বলেন নি যে, আমি আমার গুরু পোলিকার্পকে বলতে শুনেছি যে, এই সুসমাচারটি তার গুরু যোহনের রচিত।

একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, যীশু শিষ্য যোহন যদি কোনো ‘সুসমাচার’ লিখে থাকতেন তাহলে তার শিষ্য পোলিকার্প তা জানতেন এবং আরিনূসকে বলতেন।

আরিনূস মৌখিক বর্ণনা মুখস্থ করতে অতীব আগ্রহী ছিলেন। তিনি পোলিকার্প থেকে অনেক গুরুত্বহীন বিষয় মুখস্ত ও বর্ণনা করেছেন। একথা কল্পনা করা যায় না যে, আরিনূস তার গুরু পোলিকার্প থেকে বিভিন্ন অতি সাধারণ বিষয় বারংবার শুনবেন এবং উদ্ধৃত করবেন, অথচ সুসমাচার-এর মত এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একটিবারও শুনবেন না বা শুনলেও তা বলবেন না, এমনকি বিতর্ক ও সংঘাতের মধ্যেও সে বিষয়ে কিছু বলবেন না।

সর্বোপরি আরিনূসই সর্বপ্রথম ২০০ খৃস্টাব্দের দিকে প্রথম তিনটি সুসমাচার: মথি, মার্ক ও লূকের সুসমাচারের কথা উল্লেখ করেন। তার বক্তব্য থেকেই সর্বপ্রথম এ তিনটি পুস্তকের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। কিন্তু তিনি যোহনের সুসমাচারের কথা উল্লেখ করেন নি। এরপর ২১৬ খৃস্টাব্দে ক্লিমেন্ট ইসকাদ্রিয়ানূস (Clement of Alexandira) এ তিনটি গসপেলের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনিই প্রথম যোহন লিখিত সুসমাচারের কথা উল্লেখ করেন। যারা বিশ্বাস বা দাবি করেন যে, এ গ্রন্থটি যীশু শিষ্য যোহনের লেখা তারা তাদের মতের পক্ষে একটিও প্রমাণ পেশ করতে পারেন নি, এমনকি আরিনূসের বক্তব্যে তাদের মতের সমর্থন পাওয়া যায় নি।

তৃতীয় বিষয়: শুধু মুসলিম পণ্ডিতগণই নয়, প্রাচীনকাল থেকেই অনেক খৃস্টান ও অখৃস্টান পণ্ডিত বলেছেন যে, এ সুসমাচারটি যোহনের লিখিত নয়। কয়েকটি নমুনা দেখুন:

(১) দ্বিতীয় খৃস্টীয় শতকের একজন প্রসিদ্ধ পৌত্তলিক পণ্ডিত ছিলেন সেলসাস (Celsus)। [Philosopher Celsus, an influential 2nd-century Platonist of Alexandria and perhaps the first serious critic of Christianity. Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007. Article Origen, Contra Celsum (Against Celsus)] তিনি সেই সময়েই চিৎকার করে বলতেন যে, খৃস্টানগণ তাদের ইঞ্জিলগুলি তিনবার বা চারবার বা তারও বেশিবার কঠিনভাবে পরিবর্তন করেছে, এমনকি সেগুলির বিষয়বস্তুও পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে।

(২) ‘মানীকীয’ (Manichees/Manichaeism) সম্প্রদায়ের অস্ট্রীয় পণ্ডিত ফাস্টিস চতুর্থ শতকে চিৎকার করে ঘোষণা করেছেন: ‘‘একথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে, নতুন নিয়ম যীশু খৃস্ট লিখেন নি এবং তার শিষ্যগণও লিখেন নি। বরং কোনো অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তা লিখেছে এবং সেগুলিকে যীশুর শিষ্যগণ এবং তাদের সহচরদের নামে চালিয়েছে। কারণ সে ভয় পেয়েছিল যে, যেহেতু যীশু সময়কালীন যে সকল ঘটনা সে লিখেছে সেগুলি সে প্রত্যক্ষ করেনি এজন্য মানুষেরা তার লেখা গ্রন্থ গ্রহণ করবে না। এই জালিয়াতি কর্মের মাধ্যমে সে যীশুর অনুসারীদেরকে অত্যন্ত কঠিনভাবে কষ্ট দিয়েছে। কারণ সে অগণিত ভুল ও বৈপরীত্যে ভরা কিছু বই লিখেছে।’’

(৩) ইস্টাডলিন লিখেছেন যে, ‘‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আলেকজেন্দ্রীয় স্কুলের একজন ছাত্র যোহনলিখিত সুসমাচারটি লিখেছে।’’

(৪) পণ্ডিত ব্রিটিশনিডার বলেছেন: ‘‘এই সুসমাচারটির কোনো কিছু এবং যোহনের নামে প্রচলিত পত্রগুলি যোহনের নিজের রচিত নয়; বরং দ্বিতীয় শতকের শুরুতে কোনো একজন তা রচনা করেছে।’’

(৫) প্রসিদ্ধ পণ্ডিত ক্রোটিস বলেছেন: ‘‘এই সুসমাচারটি ছিল ২০ অধ্যায়। যোহনের মৃত্যুর পরে অফসিস চার্চের পক্ষ থেকে এতে ২১ অধ্যায়টি সংযুক্ত করা হয়।’’

(৬) দ্বিতীয় শতকে বিদ্যমান ‘এ্যলোগিন’ নামক খৃস্টীয় সম্প্রদায় এই সুসমাচারটি এবং যোহনের নামে প্রচালিত পত্রগুলি মানতেন না এবং এগুলিকে বাইবেলের অংশ মনে করতেন না।

বাইবেল বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত হর্ণ-এর বক্তব্য দিয়ে এ আলোচনা শেষ করছি। তিনি তার রচিত বাইবেলের ব্যাখ্যাগ্রন্থে লিখেছেন যে, প্রাচীন চার্চের বা খৃস্টধর্মের ঐতিহাসিকগণের পক্ষ থেকে সুসমাচারগুলির রচনার সময় ও অবস্থা সম্পর্কে সে সকল তথ্য আমরা পেয়েছি সেগুলি অনির্ধারিত ও অসম্পূর্ণ। এ সকল মতামত ও বক্তব্য আমাদেরকে কোনো একটি নির্ধারিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে দেয় না। প্রথম যুগের ধর্মগুরু পণ্ডিতগণ বানোয়াট, বাতুল বা দুর্বল বর্ণনাগুলিকেই সত্য বলে গ্রহণ করেছেন এবং লিখে রেখেছেন। তাদের পরে যারা এসেছেন তারা পূর্ববর্তীদের প্রতি ভক্তির কারণে এসকল বাতুল বিবরণগুলিকেই সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। এ সকল সত্য ও মিথ্যা বিবরণ এক লেখক থেকে অন্য লেখক গ্রহণ করেছেন। এখন বর্তমান যুগে এগুলির মধ্য থেকে সঠিক তথ্য বাছাই করার কোনো সুযোগ আর নেই।

অতঃপর হর্ন উল্লেখ করেছেন যে, সুসমাচারগুলির প্রণয়নের সময়কাল সম্পর্কে নিম্নরূপ মতভেদ উল্লেখ করেছেন:

ক. মথিলিখিত সুসমাচার। এ পুস্তকটি ৩৭ অথবা ৩৮ অথবা ৪১ অথবা ৪৩ অথবা ৪৮ অথবা ৬১ অথবা ৬২ অথবা ৬৩ অথবা ৬৪ খৃস্টাব্দে রচিত হয়েছে।

খ. মার্কলিখিত সুসমাচার। এ পুস্তকটি ৫৬ অথবা তার পরে ৬৫ খৃস্টাব্দের মধ্যে কোনো সময়ে রচিত হয়েছে। যতদূর মনে হয়, গ্রন্থটি ৬০ খৃস্টাব্দে অথবা ৬৩ খৃস্টাব্দে রচনা করা হয়েছে।

গ. লূকলিখিত সুসমাচার। এ পুস্তকটি ৫৩ অথবা ৬৩ অথবা ৬৪ খৃস্টাব্দে রচিত হয়েছে।

ঘ. যোহনলিখিত সুসমাচার। এটি ৬৮ অথবা ৬৯ অথবা ৭০ অথবা ৯৭ অথবা ৯৮ খৃস্টাব্দে রচিত হয়েছে।

উপরের আলোচনা থেকে পাঠক খৃস্টধর্মের মূল চারটি ‘ইঞ্জিল’ বা সুসমাচারের অবস্থা জানতে পেরেছেন। নতুন নিয়মের অবশিষ্ট পুস্তক বা পত্রগুলির অবস্থার এগুলির চেয়ে মোটেও ভাল নয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন