hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সংক্ষেপিত ইযহারুল হক্ক

লেখকঃ ড. মুহাম্মাদ আহমদ আব্দুল কাদির মালকাবী

২৮
১. ৩. ৪. ৭. বাইবেলের ইতিহাস ও বিকৃতির প্রেক্ষাপট
(ক) মূসা আলাইহিস সালাম থেকে নেবুকাদনেজার পর্যন্ত পুরাতন নিয়ম

মূসা আলাইহিস সালাম-এর সময়কাল সম্পর্কে বাইবেল ব্যাখ্যাকার ও ঐতিহাসিকদের মধ্যে কিছু মতভেদ রয়েছে। মোটামুটি বলা চলে যে, খৃস্টপূর্ব ১৩৫০ সালের দিকে মূসা আলাইহিস সালাম জন্মগ্রহণ করেন এবং খৃ. পূর্ব ১২৩০/৩১ সালের দিকে ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকাল থেকে খৃস্টপূর্ব ৫৮৭/৫৮৬ সালে নেবুকাদনেজারের হাতে ইয়াহূদী রাষ্ট্রের ধ্বংস পর্যন্ত প্রায় সড়ে ছয় শত বৎসরে ইয়াহূদী জাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই আমরা বাইবেলের বিকৃতির পেক্ষাপট অনুধাবন করতে পারব।

মূসা আলাইহিস সালাম তোরাহ লিখে সেই পাণ্ডুলিপিটি ইস্রায়েল সন্তানগণের যাজক ও গোত্রপতিগণের নিকট সমর্পণ করেছিলেন। তিনি তাঁদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন যে, তাঁরা যেন সেই পাণ্ডুলিপিটিকে সংরক্ষণ করেন এবং ‘সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকের’ মধ্যে তা রেখে দেন। তিনি তাঁদেরকে প্রতি সাত বৎসর পর পর সকল ইস্রায়েলের সামনে তা পাঠ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন: ‘‘সাত সাত বৎসরের পরে, মোচন বৎসরের কালে, কুটীরোৎসব পর্বে, যখন সমস্ত ইস্রায়েল তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর মনোনীত স্থানে তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইবে, তৎকালে তুমি সমস্ত ইস্রায়েলের সাক্ষাতে তাহাদের কর্ণগোচরে এই ব্যবস্থা পাঠ করিবে।’’ [দ্বিতীয় বিবরণ ৩১/১০-১১।]

ইস্রায়েল সন্তানগণের প্রথম প্রজন্ম মোশির এই নির্দেশ মেনে চলেন। এই প্রজন্মের গত হওয়ার পরে ইস্রায়েল সন্তানদের অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে পাপাচারিতা, অবাধ্যতা ও ধর্মদ্রোহিতা ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে। কখনো তাঁরা ধর্মত্যাগ করতেন। আবার কখনো পুনরায় ধর্ম মানতে শুরু করতেন। দায়ূদ-এর রাজত্বের শুরু পর্যন্ত (প্রায় তিনশত বৎসর যাবৎ) তাঁদের অবস্থা এইরূপ ছিল।

দায়ূদের রাজত্বকালে ইস্রায়েল সন্তানগণের ধর্মীয় ও নৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। দায়ূদের রাজত্বকালে ও শলোমনের রাজত্বের প্রথমাংশে ইস্রায়েল সন্তানগণ ধর্মদ্রোহ পরিত্যাগ করে ধর্মীয় অনুশাসনাদি পালন করে চলেন। কিন্তু বিগত শতাব্দীগুলির ধর্মদ্রোহিতা, অস্থিরতা ও অরাজকতার মধ্যে মোশির প্রদত্ত ‘সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকে রক্ষিত’ তোরাহটি হারিয়ে যায়। কখন তা হারিয়ে যায় তা সঠিকভাবে জানা যায় না। এতটুকুই জানা যায় যে, শলোমানের রাজত্বের পূর্বেই তা হারিয়ে যায়। কারণ শলোমনের রাজত্বকালে যখন তিনি ‘সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক’-টি উন্মোচন করেন তখন তার মধ্যে তোরাহের কোনো অস্তিত্ব পান নি। সিন্দুকটির মধ্যে শুধু দুইটি ‘তোরাহ-বহির্ভূত’ প্রাচীন প্রস্তরফলকই অবশিষ্ট ছিল। ১ রাজাবলির ৮ম অধ্যায়ের ৯ম শ্লোকে এ বিষয়ে বলা হয়েছে: ‘‘সিন্দুকের মধ্যে আর কিছু ছিল না, কেবল সেই দুইখানা প্রস্তরফলক ছিল, যাহা মোশি হোরেবে তাহার মধ্যে রাখিয়াছিলেন; সেই সময়ে, মিসর হইতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের বাহির হইয়া আসিবার পর, সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণের সহিত নিয়ম করিয়াছিলেন।’’

বাইবেলের বিবরণ অনুসারে শলোমনের রাজত্বের শেষভাগ থেকে ইস্রায়েলীয়গণের মধ্যে জঘন্য বিপর্যয় নেমে আসে। স্বয়ং শলোমন তাঁর শেষ জীবনে ধর্মত্যাগ করেন (নাঊযু বিল্লাহ!)। তিনি তাঁর স্ত্রীগণের পরামর্শে মুর্তিপূজা শুরু করেন মুর্তিপূজার নিমিত্ত মন্দিরাদি নির্মাণ করেন। এভাবে তিনি যখন ধর্মত্যাগী (মুর্তাদ) ও পৌত্তলিকে পরিণত হলেন (নাঊযু বিল্লাহ!!) তখন তোরাহ-এর প্রতি তাঁর আর কোনো আগ্রহ থাকে না।

তাঁর মৃত্যুর পরে আরো কঠিনতর বিপর্যয় শুরু হয়। খৃস্টপূর্ব ৯৩১ সালের দিকে ইস্রায়েল-সন্তানগণ অভ্যন্তরীন কোন্দল ও দলাদলির ফলে দু ভাগে বিভক্ত হয়ে যান। ইয়াহূদীগণের একটি রাজ্য দুইটি রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। ইস্রায়েল-সন্তানগণের ১২ গোত্রের মধ্যে ১০টি গোত্র এক পক্ষে এবং বাকি দুইটি বংশ এক পক্ষে থাকেন। নবাটের পুত্র যারবিয়ামের (Jeroboam I) নেতৃত্বে বিদ্রোহী ১০টি গোত্র প্যালেস্টাইনের উত্তর অংশে পৃথক রাজ্য ঘোষণা করেন। তাঁদের রাজ্যের নাম হয় ‘ইস্রায়েল’ (the kingdom of Israel)। ইস্রায়েল রাজ্যকে অনেক সময় শামেরা (Samaria) বা ইফ্রমিয় (Ephraimites) বলা হতো। এর রাজধানী ছিল নাবলুস। অবশিষ্ট দুইটি গোত্র: যিহূদা ও বিন্যামিন বংশের রাজা হন শলোমনের পুত্র রহবিয়াম (Rehoboam)। এই রাজ্যের নাম হয় জুডিয়া বা জুডাই রাজ্য (the Kingdom of Judea, also Judaea or Judah)। এর রাজধানী ছিল যিরূশালেম।

উভয় রাজ্যেই ধর্মদ্রোহিতা, মুর্তিপুজা ও অনাচার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। উত্তরের ইস্রায়েল বা শমরীয় রাজ্যের রাজা যারবিয়াম রাজ্যভার গ্রহণ করার পরপরই মোশির ধর্ম ত্যাগ করেন। তাঁর সাথে ইস্রায়েলীয়দের ১০টি গোত্রের মানুষেরা মোশির ধর্ম ত্যাগ করেন। তাঁরা মুর্তিপুজা শুরু করেন। এদের মধ্যে যাঁরা তোরাহ-এর অনুসারী ছিলেন তাঁরা নিজেদের রাজ্য পরিত্যাগ করে যুডাহ (যিহূদা) রাজ্যে হিজরত করেন।

এভাবে এ রাজ্য বা ইস্রায়েল সন্তানদের মূল অংশ এ সময় থেকে মূসার আলাইহিস সালাম ধর্ম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যান এবং কুফর, মুর্তিপুজা ও অনাচারের মধ্যে অতিবাহিত করেন। পরবর্তী প্রায় ২০০ বৎসর এ রাজত্বের অস্তিত্ব ছিল। সন-তারিখের বিষয়ে বেশ মতভেদ রয়েছে। আধুনিক গবেষকগণের মতে ইস্রায়েল রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল খৃ. পু. ৯২২ সাল থেকে ৭২২/৭২১ সাল পর্যন্ত কমবেশি ২০০ বৎসর। এ সময়ে ১৯ জন রাজা এই রাজ্যে রাজত্ব করেন। এরপর আল্লাহ তাঁদেরকে ধ্বংস করেন। অশুরীয়দের (the Neo-Assyrian Empire) আক্রমণে তারা পরাজিত হয়। খৃস্টপূর্ব ৭২৪ সালে অ্যসিরিয়ান (অশূরীয়) সম্রাট চতুর্থ শালমানেসার বা শল্মনেষর (Shalmaneser iv) ইস্রায়েল রাজ্য আক্রমন করেন। তার মৃত্যুর পর তার সেনাপতি দ্বিতীয় সার্গন (Sargon II: ruled 722-705 bc) উপাধি ধারণ করে রাজ্যভার গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে আসিরিয়্যানগণ ইস্রায়েলীয়দেরকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। বিজয়ী অশুরীয়গণ পরাজিত ইস্রায়েলীয়গণকে বন্দি করে অশুরীয় রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে নির্বাসিত করে। এ এলাকায় অল্পসংখ্যক ইস্রায়েলীয় অবশিষ্ট থাকে।

আশুরীয়গণ ইস্রায়েলীয়দেরকে এ সকল অঞ্চল থেকে নির্বাসিত করার পরে সেখানে অশুরীয় রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে পৌত্তলিকগণকে এনে বসতি স্থাপন করায়। সেখানে অবশিষ্ট অল্প সংখ্যক ইস্রায়েলীয় এ সকল পৌত্তলিকদের সাথে সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে ওতপ্রোতভাবে মিশে যায়। তাঁরা পৌত্তলিকগণের পুত্র কন্যাদেরকে বিবাহ করেন এবং তাদের সাথে একত্র পরিবার গঠন করেন। এ সকল ‘ইস্রায়েলীয়’ ইয়াহূদীদেরকে ‘শমরীয়’ (Samaritans) বলা হয়। [ইহূদীরা এদেরকে প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করত। যীশুখৃস্ট যখন তাঁর দ্বাদশ শিষ্যকে তাঁর সুসমাচার প্রচারের জন্য প্রেরণ করেন তখন বিশেষ করে শমরীয়দের কাছে না যাওয়ার ও তাদেরক তাঁর ধর্মে দীক্ষা না দেওয়ার নির্দেশ দেন। মথি বলেন: ‘‘These twelve Jesus sent forth, and commanded them, saying, Go not into the way of the Gentiles, and into any city of the Samaritans enter ye not: But go rather to the lost sheep of the house of Israel: এই বার জনকে যীশু প্রেরণ করিলেন, আর তাঁহাদিগকে এই আদেশ দিলেন- তোমরা পরজাতিগণের (অ-ইহূদী জাতিগণের) পথে যাইও না, এবং শমরীয়দের কোন নগরে প্রবেশ করিও না; বরং ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষগণের কাছে যাও। (মথি ১০/৫-৬)]

এভাবে আমরা দেখছি যে, বাইবেলের বর্ণনা অনুসারেই ইয়াহূদীদের বৃহৎ অংশ বা ১২ বংশের দশ বংশ উত্তর রাজ্যের ইস্রায়েলীয় বা শমরীয় ইয়াহূদীগণ শলোমনের পর থেকেই ধর্মচ্যুত হন এবং শেষে পৌত্তলিকদের মধ্যে বিলীন হয়ে যান। মূসার আলাইহিস সালাম ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থের সাথে তাঁদের সম্পর্ক শুধু নামেই অবশিষ্ট থাকে। ফলে এদের মধ্যে মূসা আলাইহিস সালাম-এর ধর্মগ্রন্থ ‘তোরাহ’-এর কোনো পাণ্ডুলিপির অস্তিত্ব ‘আনকা’ (গরুড়) পক্ষীর ন্যায় কাল্পনিক বিষয়ে পরিণত হয়।

অপরদিকে শলোমনের মৃত্যু পর থেকে পরবর্তী ৩৭২ বৎসর [আমরা ইতোপূর্বে বলেছি যে, মোশি, দায়ূদ, শলোমন প্রমুখ ভাববাদী ও রাজার সময়কালের বিষয়ে পাশ্চাত্য ধর্মবিদ ও ঐতিহাসিকদের প্রদত্ত তারিখগুলির মধ্যে বৈপরীত্য আছে। লেখক তৎকালে খৃস্টান পন্ডিতদের মধ্যে প্রচলিত সন তারিখ ব্যবহার করেছেন। মোটামুটি ঐতিহাসিকগণ একমত যে, খৃ. পূ. ৫৮৭ বা ৫৮৬ সালে যিহূদা রাজ্যের পতন হয়। লেখকের প্রদত্ত তারিখ অনুসারে ৫৮৭+৩৭২=খৃ.পূ. ৯৫৯ সালে শলোমনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে প্রসিদ্ধ মত হলো, খৃ. পূ. ৯৩১/৯৩০ সালে শলোমন মৃত্যু বরণ করেন।] যাবৎ শলোমনের বংশের ২০ জন রাজা যিহূদা রাজ্যে রাজত্ব করেন। এ সকল রাজার মধ্যে বিশ্বাসী ও ধর্মপরায়ণ রাজার সংখ্যা ছিল কম। অধিকাংশ রাজাই ছিলেন ধর্মত্যাগী ও মুর্তিপুজক। প্রথম রাজা রহবিয়ামের যুগ থেকেই মুর্তিপূজার ব্যাপক প্রচলন ঘটে। প্রতিটি বৃক্ষের নিচে মুর্তি স্থাপন করা হয় এবং পূজা করা হয়। রহবিয়ামের রাজত্বকালেই যুডিয়া রাজ্যের উপর গযব নেমে আসে। তার সময়েই খৃস্ট পূর্ব ৯২৫ অব্দে মিশরের ফিরাউন ১ম শেশাঙ্ক বা শীশক (Shashanq I) যুডাহ রাজ্য আক্রমন করে যিরূশালেম নগর ও ধর্মধাম লুন্ঠন করেন। তিনি ধর্মধামের সকল আসবাবপত্র ও রাজ প্রাসাদের সকল মালামাল লুণ্ঠন করে নিয়ে যান।। [১ রাজাবলি১৪/২৫-২৬; মতিওর রহমান, ঐতিহাসিক অভিধান, পৃ. ৬।]

কিছুদিন পরে যিহূদা রাজ্যের তৃতীয় রাজা আসার (Asa) রাজত্বকালে ইস্রায়েল রাজ্যের ধর্মত্যাগী ও মুর্তিপূজক রাজা বাশা (Baasha) যিরূশালেম আক্রমন করে ধর্মধাম ও রাজ প্রাসাদ ব্যাপকভাবে লুণ্ঠন করেন। [১ রাজাবালি ১৫/১৬-২২।]

যিহূদা বা যুডিয়া রাজ্যের ষষ্ঠ রাজা অহসিয় (Ahaziah)-এর সময়ে বাল-প্রতিমার পূজা ও তার উদ্দেশ্যে পশু-উৎসর্গ করার জন্য যিরূশালেমের অলিতে গলিতে ও সকল স্থানে বেদি স্থাপন করা হয়। শলোমনের মন্দির বা ধর্মধামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

যিহূদা বা যুডিয়া রাজ্যে ধর্মদ্রোহ, মুর্তিপুজা ও অনাচারের ব্যাপকতম প্রসার ও প্রতিষ্ঠা ঘটে রাজা মনঃশি (Manasseh)-এর শাসনামলে (খৃ. পূ ৬৯৩-৬৩৯ অব্দ)। এ সময়ে এই রাজ্যে প্রায় সকল অধিবাসীই মোশির ধর্ম পরিত্যাগ করে মুর্তিপূজা ও পৌত্তলিক ধর্ম গ্রহণ করেন। শলোমনের ধর্মধাম বা সদাপ্রভুর মন্দিরের মধ্যেই মুর্তিপূজা ও প্রতিমার জন্য পশু-উৎসর্গ করার নিমিত্ত বেদি নির্মাণ করা হয়। রাজা মনঃশি যে প্রতিমার পূজা করতেন তিনি সদাপ্রভুর মন্দিরের মধ্যে সেই প্রতিমা স্থাপন করেন। তাঁর পুত্র আমোন (Amon)-এর শাসনামলেও (খৃ. পূ. ৬৩৯-৬৩৮ অব্দ) ধর্মত্যাগ ও পৌত্তলিকতার অবস্থা একইরূপ থাকে।

আমোনের মৃত্যুর পরে খৃ.পূ. ৬৩৮ সালে তাঁর পুত্র যোশিয় (Josiah) আট বৎসর বয়সে যিহূদা রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। তিনি ধর্মদ্রোহিতা ও অনাচার থেকে বিশুদ্ধভাবে তাওবা করেন। তিনি ও তাঁর রাজ্যের কর্ণধারগণ ধর্মদ্রোহিতা, পৌত্তলিকতা ও অনাচারকে সমূলে বিনাশ করে মোশির ব্যবস্থা বা শরীয়ত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করেন। মহাযাজক হিল্কিয় (Hilki'ah the high priest) ছিলেন তার দীক্ষাগুরু। তিনি সুলাইমানের ধর্মধাম বা মসজিদ সংস্কার ও চালু করার জন্য জনগণ থেকে কর সংগ্রহ করতে ধর্মীয় লিপিকার শাফনকে (Shaphan the scribe)-কে দায়িত্ব দেনে। এ সকল সংস্কার কাজের জন্য ‘‘তাওরাত’’-এর প্রয়োজনীয়তা তারা বিশেষ করে অনুভব করেন। তা সত্ত্বেও তাঁর রাজত্বের ১৭শ বৎসর পর্যন্ত বা খৃস্টপূর্ব ৬২১ সাল পর্যন্ত কেউ মোশির তোরাহ-এর কোনো পাণ্ডুলিপির চিহ্ন দেখেন নি বা এর কোনো কথাও কেউ শুনেন নি।

যোশিয় রাজার রাজত্বের ১৮শ বৎসরে (খৃ. পূ. ৬২০/৬২১ সালে) রাজা যোশিয়ের গুরু মহাযাজক হিল্কিয় (Hilki'ah) দাবি করেন যে, তিনি ‘সদাপ্রভুর গৃহে’, অর্থাৎ যিরূশালেমের ধর্মধাম বা শলোমনের মন্দিরের মধ্যে রৌপ্যের হিসাব করতে যেয়ে মোশির তোরাহ বা সদাপ্রভুর ব্যবস্থাপুস্তকখানি (the book of the law) পেয়েছেন। তিনি পুস্তকটি শাফন লেখককে (Shaphan the scribe) প্রদান করেন। শাফন লেখক রাজা যোশিয়কে পুস্তকটি পাঠ করে শোনান। রাজা এই পুস্তকটির বাক্যাদি শুনে এত বেশি বিমোহিত ও উদ্বেলিত হন যে তিনি নিজের পরিধেয় বস্ত্র ছিড়ে ফেলেন। ইস্রায়েলীয়দের অবাধ্যতার কথা স্মরণ করে তিনি এভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। এ সকল বিষয় ২ রাজাবলির ২২ অধ্যায়ে এবং ২ বংশাবলির ৩৪ অধ্যায়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। [২ রাজাবলি ২২/১-১১; ২ বংশাবলি ৩৪/১-১৯।]

তোরাহ বা ব্যবস্থা পুস্তক’ বলে কথিত এই পাণ্ডুলিপিটির নির্ভরযোগ্যতা ও বিশুদ্ধতা স্বীকৃত নয়। যাজক হিল্কিয়ের দাবিও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ রাজা অহসিয়ের পূর্বেই ‘সদাপ্রভুর গৃহ’ বা ধর্মধামটি ইতোপূর্বে দুইবার বিজয়ী শত্রুদের দ্বারা লুণ্ঠিত হয়েছে। এরপর এই গৃহটিকে প্রতিমা পূজার কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। প্রতিমাপুজারিগণ প্রতিদিন এই গৃহে প্রবেশ করতেন। এভাবে অহসিয় (Ahaziah) রাজার রাজত্বকাল থেকে যেশিয়ের রাজত্বকালের ১৭শ বৎসর পর্যন্ত খৃস্টপূর্ব ৮৪৩ থেকে ৬২১ সাল পর্যন্ত দু শতাব্দীরও অধিক সময় কেউ কোনোভাবে তোরাহ বা ব্যবস্থাপুস্তকের নামও শুনেন নি, চোখে দেখা তো দূরের কথা।

যোশিয়ের রাজত্বের প্রথম ১৭টি বৎসর অতিবাহিত হয়ে গেল। এ দীর্ঘ সময়ে রাজা স্বয়ং ও রাজ্যের নেতৃবর্গ ও সাধারণ প্রজাগণ সকলেই মোশির ব্যবস্থার পালন ও পুন-প্রতিষ্ঠায় প্রানান্ত প্রচেষ্টায় নিরত ছিলেন। এত কিছু সত্ত্বেও এ দীর্ঘ সময়ে কেউ ব্যবস্থাপুস্তকের নামটি পর্যন্ত শুনতে পেলেন না। এই দীর্ঘ সময়ে ‘সদাপ্রভুর গৃহের রক্ষক ও যাজকগণ প্রতিদিন এই গৃহের মধ্যে যাতায়াত করতেন। বড় অবাক কথা যে, এ দীর্ঘ সময় পুস্তকটি সদাপ্রভুর গৃহে থাকবে, অথচ এত মানুষ কেউ তার দেখা পাবে না!

প্রকৃত কথা হলো, এই পুস্তকটি বা ‘তোরাহ’-এর এই পাণ্ডুলিপিটি পুরোটিই হিল্কিয় মহাযাজকের উদ্ভাবনা ও রচনা ছাড়া কিছুই নয়। তিনি যখন দেখলেন যে, রাজা যোশিয় এবং তাঁর অমাত্যবর্গ সকলেই মোশির ব্যবস্থার প্রতিপালন ও পুনপ্রতিষ্ঠায় আগ্রহী, তখন তিনি তাঁর যুগে লোকমুখে প্রচলিত সত্য ও মিথ্যা সকল প্রকারের মৌখিক বর্ণনা একত্রিত করে এই পুস্তকটি রচনা করেন। এগুলি সংকলন ও লিপিবদ্ধ করতেই তাঁর এই দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। যখন তা সংকলনের কাজ তিনি সমাপ্ত করেন, তখন তিনি পুস্তকটিকে সরাসরি মোশির নামেই চালিয়ে দেন। পাঠক ইতোপূর্বে জেনেছেন যে, ধার্মিকতার প্রচার প্রসার ও সত্যের প্রতিষ্ঠার জন্য এই ধরনের মিথ্যাচার ও জালিয়াতি শেষ শতাব্দীগুলির ইয়াহূদীগণ এবং প্রথম যুগগুলির খৃস্টানগণের নিকট ধর্মীয় পুণ্যকর্ম বলে গণ্য ছিল।

এ প্রকৃত সত্যটিকে পাশ কাটিয়ে প্রচলিত কাহিনীর ভিত্তিতে আমরা ধরে নিচ্ছি যে, হিল্কিয় তোরাহ-এর পাণ্ডুলিপিটি পেয়েছিলেন। রাজা যোশিয়ের রাজত্বের ১৮শ বৎসরে পাণ্ডুলিপিটি পাওয়া যায়। পরবর্তী ১৩ বৎসর, যতদিন রাজা যোশিয় জীবিত ছিলেন, ততদিন যিহূদা বা জুডাহ রাজ্যের ইয়াহূদীগণ এ তোরাহ অনুসারে নিজেদের ধর্মকর্ম পরিচালনা করেন।

যোশিয়ের মৃত্যুর পরে (খৃ. পূ. ৬০৮/৬০৯ সালে) তদীয় পুত্র যিহোয়াহস (Jeho'ahaz) রাজত্ব লাভ করেন। তিনি রাজত্ব লাভ করে মোশির ধর্ম পরিত্যাগ করেন এবং রাজ্যে অবিশ্বাস, ধর্মদ্রোহিতা ও পৌত্তলিকতার প্রসার ঘটান। মিশরের সম্রাট ফরৌণ-নখো বা নেকু (Neku) যিহোয়াহসকে বন্দি করে নিয়ে যান এবং তার ভ্রাতা ইলিয়াকীমকে যিহোয়াকীম (Jehoiakim/Joakim) নাম প্রদান পূর্বক সিংহাসনে বসান। যিহোয়াকীমও তার ভাইয়ের মত ধর্মদ্রোহী ও পৌত্তলিক ছিলেন।

যিহোয়াকীমের মৃত্যুর পরে (খৃ. পূ. ৫৯৮/৫৯৭ অব্দে) তার পুত্র যিহোয়াখীন (Jehoiachin/Joachin) রাজত্ব লাভ করেন। তিনিও তাঁর পিতা ও চাচার মতই ধর্মত্যাগী ও পৌত্তলিক ছিলেন। এ সময়ে ব্যাবিলনের সম্রাট বখত নসর বা নেবুকাদনেজার (Nebuchadrezzar II) জুডাহ বা যিহূদা রাজ্য দখল করেন। তিনি যিরূশালেম শহর, রাজ প্রাসাদ, ও ‘সদাপ্রভুর গৃহ’ বা ধর্মধামের সমস্ত ধন-সম্পদ ও দ্রব্যাদি লুণ্ঠন করে নিয়ে যান। তিনি রাজা যিহোয়াখীনকে বন্দি করে ব্যাবিলনে নিয়ে যান এবং তাঁর পরিবর্তে তাঁর চাচা সিদকিয়কে (Zedekiah) রাজত্ব প্রদান করেন। নেবুকাদনেজার বিপুল সংখ্যক ইয়াহূদীকে বন্দি করে ব্যাবিলনে নিয়ে যান। [বাইবেলের ভাষায়: তিনি যিরূশালেমের সমস্ত লোক, সমস্ত প্রধান লোক ও সমস্ত বলবান বীর, অর্থাৎ দশ সহস্র বন্দি এবং সমস্ত শিল্পকার ও কর্মকারকে লইয়া গেলেন; দেশের দীন দরিদ্র লোক ব্যতিরেকে আর কেহ অবশিষ্ট থাকিল না। ২ রাজাবলি ২৪/১৪]

কাফির পৌত্তলিক রাজা সিদকিয় (Zedekiah) প্রায় ১১ বৎসর নেবুকাদনেজারের অধীনে লাঞ্ছিত অবস্থায় যিহূদা রাজ্যের রাজত্ব করেন। এরপর তিনি বিদ্রোহ করেন। খৃ. পূ. ৫৮৭/৫৮৬ সালে নেবুকাদনেজার দ্বিতীয়বার যিরূশালেম আক্রমন ও দখল করেন। তিনি রাজা সিদকিয়কে বন্দি করে তাঁরই সামনে তাঁর পুত্রগণকে জবাই করেন। এরপর তিনি সিদকিয়ের চক্ষু উৎপাটন করেন এবং তাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে ব্যাবিলন প্রেরণ করেন। নেবুকাদনেজার-এর বাহিনী এবার যিরূশালেমকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে। তারা যিরূশালেমের ধর্মধাম বা ‘সদাপ্রভুর গৃহ’, রাজ-প্রাসাদসমূহ, যিরূশালেমের সকল বাড়িঘর ও অট্টালিকায় অগ্নিসংযোগ করে ভস্মিভুত করে, যিরূশালেম নগরীর চারিদিকের প্রাচীর ভেঙ্গে দেয় এবং যিহূদা (Judah) রাজ্যে অবস্থানকারী অবশিষ্ট ইস্রায়েল সন্তানকে বন্দি করে ব্যাবিলনে নিয়ে যায়। এভাবে তিনি যিহূদা রাজ্য সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করেন। [২ রাজাবলি ২৪ অধ্যায়ে এ সকল ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।]

আমরা দেখেছি যে, ইয়াহূদীদের ১২ গোত্রের দশ গোত্রের নিয়ন্ত্রণাধীন উত্তরের ইস্রায়েল রাজ্য খৃস্টপূর্ব ৭২২ সালে রাজা দ্বিতীয় সার্গন (Sargon II) কর্তৃক চিরতরে বিনষ্ট হয়। এর মাত্র ১৩৫ বৎসর পরে খৃ. পূ. ৫৮৭ সালে ইয়াহূদীদের অবশিষ্ট দুই গোত্রের নিয়ন্ত্রণাধীন দক্ষিণের যুডাই রাজ্যও নেবুকাদনেজার কর্তৃক সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়। বিশেষত যিরুশালেম ও ধর্মধাম (মসজিদে আকসা) সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়। স্বভাবতই এ ঘটনায় তোরাহ এবং পুরাতন নিয়মের অন্যান্য সকল পুস্তক যেগুলি এই ঘটনার পূর্বে লিখিত হয়েছিল সবই চিরতরে পৃথিবীর বুক থেকে বিলীন হয়ে যায়। ইয়াহূদী-খৃস্টান পণ্ডিতগণও একথা একবাক্যে স্বীকার করেন। [তোরাহ বা ইহূদীদের ধর্মগ্রন্থ গণ পুস্তক ছিল না। একমাত্র ধর্মগুরুগণ ছাড়া কেউ তা পাঠ করত না। ধর্মধাম ছাড়া অন্যত্র তার কোনো কপিও থাকত না। কোনো ধর্মগুরু বা অন্য কেউ কখনো তা মুখস্ত করত না। ফলে বিনষ্ট হওয়ার পরে পুনরায় হুবহু তা লিখে ফেলার কোনো সুযোগ ছিল না।]

এভাবে আমরা দেখছি যে, রাজা যোশিয়ের (রাজত্বকাল খৃস্টপূর্ব ৬৩৮-৬০৮) পূর্বেই তাওরাত-এর ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যায়। তার সময়ের পূর্বেই তোরাহ-এর প্রচলন ও ব্যবহার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এ সময়ে তোরাহ-এর কোনো প্রকারের অস্তিত্বের কথাই জানা যায় না। যোশিয়ের সময়ে যে পাণ্ডুলিপিটি পাওয়া যায় তা নির্ভরযোগ্য নয়। বিশেষত একটিমাত্র পাণ্ডুলিপির দ্বারা ধারাবাহিক বহুল প্রচলন প্রমাণিত হয় না। তোরাহ-এর এ ‘পূনর্জন্ম’ও ক্ষণস্থায়ী। মাত্র ১৩ বৎসরের (খৃ. পূ ৬২০-৬০৮ সাল) বেশি তা ব্যবহৃত হয় নি। এরপর আর তার কোনো খবর জানা যায় না। বাহ্যত বুঝা যায় যে, যোশিয়ের পুত্র-পৌত্রগণের মধ্যে ধর্মদ্রোহিতা ও পৌত্তলিকতার পুনরাবির্ভাবের কারণে যোশিয়ের মৃত্যুর পরে নেবুকাদনেজারের আক্রমনের পূর্বেই তা বিনষ্ট হয়ে যায়। আর যদি তাদের দ্বারা তা নষ্ট না-ও হয় তাহলে সুনিশ্চিতভাবেই তা নেবুকাদনেজারের আক্রমনের সময়ে বিনষ্ট হয়ে যায়। ইয়াহূদী-খৃস্টানগণ একবাক্যে স্বীকার করেন যে, এ আক্রমনের পূর্বে লেখা ও বিদ্যমান পুরাতন নিয়মের সকল পুস্তক এ সময়ে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে বিলীন হয়ে যায়। এজন্য তারা দাবি করেন যে, ব্যাবিলন থেকে ফেরার পর ইয্রা সেগুলি নতুন করে লিখেন।

আরবী ভাষায় লিখিত বাইবেল ডিকশনারীতে তারা উল্লেখ করেছেন যে, ইয়াহূদীদের ধর্মত্যাগ, অবিশ্বাস, অনাচার, মূর্তিপূজা, হানাহানি ও জুলুম-অত্যাচারের সুদীর্ঘ সময়ে, বিশেষত রাজা মনঃশি (Manasseh)-এর শাসনামলের ৫৫ বৎসরে (খৃ. পূ ৬৯৩-৬৩৯ অব্দ) পুরাতন নিয়মের গ্রন্থগুলি নষ্ট করা হয় বা হারিয়ে যায়। রাজা যোশিয়ের সময়ে মহাযাজক হিল্কিয় ব্যবস্থাপুস্তকের যে পাণ্ডুলিপিটি পেয়েছিলেন ধর্মধামের অবমাননার সময়ে তার মধ্যে বিকৃতি ও জালিয়াতি হওয়ার মতটিকে তারা অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করেছেন।

(খ) ব্যাবিলন থেকে প্রথম শতাব্দী পর্যন্ত পুরাতন নিয়ম

নেবুকাদনেজারের এ ঘটনা (খৃ. পূ. ৫৮৭/৫৮৬) থেকে প্রথম খৃস্টীয় শতাব্দী পর্যন্ত পরবর্তী প্রায় ৬০০ বৎসরের ইতিহাস পূর্ববর্তী অধ্যায়ের চেয়ে মোটেও ভাল নয়। ইয়াহূদী-খৃস্টানগণের ধারণা ও দাবি অনুযায়ী নেবুকাদনেজারের এ ঘটনার প্রায় এক শতাব্দী পরে ইয্রা (Ezra) পুনরায় পুরাতন নিয়মের এ সকল গ্রন্থ নিজের পক্ষ থেকে লিখেন। এ পুনর্জন্ম ও পুনর্লিখনের প্রায় তিন শতাব্দী পরে আবার একটি ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ও ধ্বংস গ্রাস করে হিব্রু জাতিকে। বাইবেলের ‘সন্দেহজনক পুস্তক’ (Apocrypha) মাকাবিজের প্রথম পুস্তক (The First Book of Maccabees) ও খৃস্টীয় প্রথম শতাব্দীর প্রসিদ্ধ ইয়াহূদী ঐতিহাসিক জোসেফাস (Flavius Josephus)-এর পুস্তকে এ সকল ঘটনা বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

এ ঘটনার সার-সংক্ষেপ হলো, খৃ. পূ. ১৬১ সালের দিকে [অনেকে ঘটনাটি খৃ. পূ. ১৬৮-১৬৪ সালে ঘটেছিল বলে উল্লেখ করেছেন।] সিরিয়ার গ্রীক শাসক চতুর্থ এন্টিয়ক (Antiochus IV Epiphanes c. 215-164 BC) যিরুশালেম অধিকার করেন এবং ইয়াহূদী ধর্ম চিরতরে নির্মূল করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি পুরাতন নিয়মের পুস্তকাদির কপি-পাণ্ডুলিপি যেখানে যা পান তা সবই ছিড়ে টুকরো করার পরে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেন। তিনি নির্দেশ প্রদান করেন যে, কোনো ব্যক্তির নিকট পুরাতন নিয়মের কোনো পুস্তকের পাণ্ডুলিপি বা কপি পাওয়া গেলে, অথবা কোনো ব্যক্তি মোশির ব্যবস্থার (শরীয়তের) কোনো বিধান পালন করলে তাকে হত্যা করতে হবে। প্রতি মাসে অনুসন্ধান করা হতো। কারো নিকট পুরাতন নিয়মের কোনো পুস্তকের পাণ্ডুলিপি বা কপি পাওয়া গেলে, অথবা কেউ মোশির ব্যবস্থার কোনো বিধান পালন করলে তাকে হত্যা করা হতো। আর সেই পাণ্ডুলিপি বা কপিটি বিনষ্ট করা হতো। সাড়ে তিন বৎসর পর্যন্ত এই নিধন ও বিনাশের কর্ম অব্যাহত থাকে।

এ ঘটনায় অগণিত ইয়াহূদী নিহত হন এবং ইয্রার লেখা তোরাহ বা পুরাতন নিয়ম এবং এর সকল কপি বিনষ্ট হয়। [তাওরাত কখনই সকলের পাঠ বই ছিল না। শুর্ধ ধর্মধামে তা রক্ষিত থাকত ও বিশেষ অনুষ্ঠানে তার কিছু অংশ পাঠ করা হতো। এজন্য সে যুগে পূর্ণ তাওরাতের বা পুরাতন নিয়মের বেশি কপি ছিল না বলেই প্রতীয়মান হয়। সাধারণ ইহূদীরা হয়ত প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় কপি করে রাখত। পূর্ণাজ্ঞ কপির সাথে এ সকল আংশিক অনুলিপিও এ সময় বিনষ্ট হয়ে যায়।]

ক্যাথলিক পণ্ডিত জন মিলনার লিখেন: পণ্ডিতগণ একমত যে, তোরাহ-এর মূল কপি এবং পুরাতন নিয়মের অন্যান্য পুস্তকাবলির কপিগুলি নেবুকাদনেজারের সেনাবাহিনীর হাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এরপর ইয্রার মাধ্যমে এ সকল পুস্তকের উদ্ধৃতি প্রকাশ পায়। এন্টিয়ক (Antiochus Epiphanes)-এর ঘটনায় (খৃস্টপূর্ব ১৬৮ অব্দের দিকে) সেগুলিও আবার নিশ্চিহ্ন ও বিলুপ্ত হয়ে যায়।

এর পর আবার ইয়াহূদীরা গ্রীক ও রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে যুডাই রাজ্যে বসবাস করতে থাকেন। তবে তাদের অবাধ্যতা ও অনাচারের ফলে বারংবার তারা রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মধ্যে পড়েন। এভাবে তারা আরো অনেক কঠিন বিপদ ও রাষ্ট্রীয় হত্যাযজ্ঞের মধ্যে নিপতিত হয়েছেন, ইয্রা লিখিত তোরাহ-এর বিকৃত বা অবিকৃতি যা কিছু পাণ্ডুলিপি তাদের নিকট বিদ্যমান ছিল এ সকল ঘটনায় সেগুলি বিনষ্ট হয়ে যায়। এসকল হত্যাযজ্ঞের অন্যতম হলো রোমান যুবরাজ টিটাস (Titus) এর ঘটনা। রোমান সম্রা্ট ভেসপাসিয়ান (Vespasian) তাঁর পুত্র (পরবর্তী সম্রাট) টিটাসকে ইয়াহূদীদের দমনের জন্য প্রেরণ করেন। তিনি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান এবং ‘সদাপ্রভুর গৃহ’ বা ধর্মধাম সম্পূর্ণ গুড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেন। এই ঘটনাটি ঘটে খৃস্টের উর্ধ্বারোহণের ৩৭ বৎসর পরে (৭০ খৃস্টাব্দে)। জোসেফাসের ইতিহাসে ও অন্যান্য ইতিহাসে এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। এই ঘটনায় হত্যা, ক্রুশ, অগ্নিসংযোগ ও অনাহারে যিরূশালেম ও তার পার্শবর্তী অঞ্চলের ১১ লক্ষ ইয়াহূদী মৃত্যুবরণ করে। ৯৭ হাজার ইয়াহূদীকে বন্দি করে বিভিন্ন দেশে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রয় করে দেওয়া হয়। এছাড়া অন্যান্য এলাকাতেও অনেক ইয়াহূদী এই ঘটনার সময়ে নিহত হন বা মৃত্যু বরণ করেন। এ কথা নিশ্চিত যে, এন্টিয়কের ঘটনার পরেও যদি পুরাতন নিয়মের কোনো কিছু অবশিষ্ট থেকে থাকে তাহলে এ সকল ঘটনায় তাও হারিয়ে ও বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে। (এ গ্রন্থের ২৪-২৫ পৃষ্ঠায় ‘প্রথম বিষয়’ দেখুন।)

(গ) হিব্রু তাওরাত বনাম গ্রীক অনুবাদ

আমরা আগেই বলেছি যে, ইয়াহূদীদের ধর্মীয় ও জাগতিক ভাষা হিব্রু ভাষা। এ ভাষাতেই পুরাতন নিয়মের সকল পুস্তক রচিত। খৃস্টপূর্ব ৩৩২ সালে আলেকজান্ডার যুডাই রাজ্য দখল করেন এবং তা গ্রীক সাম্রাজ্যের অংশে পরিণত হয়। ইয়াহূদীদের মধ্যে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রীক ভাষার কিছু প্রচলন ক্রমান্বয়ে শুরু হয়। প্রায় এক শতাব্দী পরে, খৃস্টপূর্ব ২৮৫-২৪৫ সালের দিকে বাইবেলের পুরাতন নিয়মের গ্রীক অনুবাদ প্রকাশিত হয়। ক্রমান্বয়ে এ অনুবাদই মূল গ্রন্থের স্থান দখল করে।

প্রাচীন খৃস্টানগণ পুরাতন নিয়মের হিব্রু সংস্করণের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করতেন না। বরং তাঁরা হিব্রু বাইবেলকে বিকৃত বলে বিশ্বাস করতেন। তাঁরা গ্রীক অনুবাদটিকেই নির্ভরযোগ্য বলে গণ্য করতেন। বিশেষত দ্বিতীয় খৃস্টীয় শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত কোনো খৃস্টান হিব্রু বাইবেলের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করেন নি। উপরন্তু ১ম খৃস্টীয় শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত সকল ইয়াহূদী উপাসনালয়েও গ্রীক অনুবাদই ব্যবহৃত হতো। এ কারণে হিব্রু বাইবেলের পাণ্ডুলিপির সংখ্যা ছিল খুবই কম। এ সামান্য সংখ্যক পাণ্ডুলিপিও শুধু ইয়াহূদীদের নিকটেই ছিল। ইয়াহূদীরা ৭ম ও ৮ম খৃস্টীয় শতকে লিখিত সকল পাণ্ডুলিপি নষ্ট করে দেন। কারণ তাঁদের নিকট গ্রহণযোগ্য পাণ্ডুলিপির সাথে এগুলির অনেক অমিল ও বৈপরীত্য ছিল। এজন্য এ সময়ে লিখিত কোনো পাণ্ডুলিপি আধুনিক যুগের বাইবেল-গবেষকগণের নিকট পৌঁছায় নি। এ সকল পাণ্ডুলিপি বিনষ্ট করার পরে তাঁদের পছন্দনীয় পাণ্ডুলিপিগুলিই শুধু অবশিষ্ট থাকে। এভাবে বিকৃতির বিশেষ সুযোগ তাদের সামনে উপস্থিত হয়।

(ঘ) প্রথম তিন শতাব্দীতে খৃস্টানগণ ও নতুন নিয়ম

প্রথম প্রজন্মগুলিতে খৃস্টানদের অবস্থাও ছিল শোচনীয়। ফলে তাঁদের মধ্যে বাইবেলের পাণ্ডুলিপির সংখ্যা ছিল খুবই কম এবং বিকৃতি-ইচ্ছুকদের জন্য সেগুলির মধ্যে বিকৃতি করার সুযোগ ছিল অনেক। খৃস্টধর্মের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, ৩০০ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত খৃস্টানগণ কঠিন বিপদাপদ ও রাষ্ট্রীয় অত্যাচার-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছেন। তাঁরা দশটি রাষ্ট্রীয় হত্যাযজ্ঞের সম্মুখীন হন:

প্রথমবার: রোমান সম্রাট নিরো (Nero)-এর সময়ে ৬৪ খৃস্টাব্দে। এ সময়ে খৃস্টের প্রেরিত শিষ্য পিতর ও তাঁর স্ত্রী নিহত হন। [আধুনিক খৃস্টধর্মের প্রবর্তক সাধু পৌলও এ সময়ে নিহত হন।] এ সময়ে রাজধানী রোমে ও অন্যান্য সকল প্রদেশে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। ৬৮ খৃস্টাব্দে নিরোর মৃত্যু পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকে। খৃস্টধর্মের স্বীকৃতিই খৃস্টানগণের জন্য কঠিন অপরাধ বলে গণ্য ছিল।

দ্বিতীয়বার: রোমান সম্রাট ডোমিশিয়ান (Domitian)-এর রাজত্বকালে ৮১ সালে এ হত্যাযজ্ঞের শুরু। [ডোমিশিয়ান ছিলেন সম্রাট টিটোর ভাই, যিনি ৭০ খৃস্টাব্দে যিরুশালেম ও যুডিয়ায় ইহূদীদের মধ্যে গণ হত্যাযজ্ঞ চালান।] এ সম্রাটও নিরোর ন্যায় খৃস্টধর্মের শত্রু ছিলেন। তিনি খৃস্টানদেরকে হত্যার নির্দেশ দেন। ফলে সর্বত্র খৃস্টানদেরকে পাইকারীভাবে হত্যা করা শুরু হয়। এমনকি পৃথিবী থেকে সর্বশেষ খৃস্টানকেও নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়। এ সময়ে প্রেরিত যোহনকে নির্বাসিত করা হয় এবং ফ্লাবিয়াস ক্লিমেন্টকে হত্যা করা হয়। ৯৬ সালে এ সম্রাটের মৃত্যু পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকে।

তৃতীয়বার: রোমান সম্রাট ট্রাজান (Trajan)-এর রাজত্বকালে। ১০১ খৃস্টাব্দে এই হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। ১০৮ সালে তা ভয়ঙ্করতম রূপ গ্রহণ করে। এমনকি দায়ূদ বংশের সর্বশেষ ব্যক্তিকে পর্যন্ত হত্যা করার নির্দেশ দেন তিনি। তার নির্দেশে সৈনিকের এরূপ সকলকে পাইকারীভাবে হত্যা করতে থাকে। প্রহার করে, ক্রুশে বিদ্ধ করে, পানিতে ডুবিয়ে ও বিভিন্নভাবে অনেক খৃস্টান পাদরী, বিশপ ও ধর্মগুরুকে হত্যা করা হয়। ১১৭ সালে এ সম্রাটের মৃত্যু পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকে।

চতুর্থবার: রোমান সম্রাট মারকাস এন্টোনিয়াস (Marcus Aurelius Antoninus)-এর রাজত্বকালে। তিনি ১৬১ খৃস্টাব্দে রাজত্ব গ্রহণ করেন। এ সম্রাট দার্শনিক হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন এবং পৌত্তলিক রোমান ধর্মের গোঁড়া অনুসারী ছিলেন। ১৬১ খৃস্টাব্দে তিনি সর্বাত্মক নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করেন। ১০ বৎসরেরও বেশি সময় তা অব্যাহত থাকে। পূর্ব-পশ্চিম সর্বত্র একভাবে খৃস্টানদেরকে হত্যা করা হয়। তিনি খৃস্টান পাদরি ও বিশপদেরকে মূর্তিপূজা ও মন্দিরের পুরোহিত হতে বলতেন। যারা অস্বীকার করত তাদেরকে লোহার চেয়ারে বসিয়ে নিচে আগুন জ্বালানো হতো। এরপর লোহার আংটা দিয়ে তার প্রজ্বলিত দেহের মাংস ছিন্নভিন্ন করা হতো।

পঞ্চমবার: রোমান সম্রাট সিভেরাস (Septimius Severus)-এর শাসনামলে (১৯৩-২১১খৃ.)। ২০২ খৃস্টাব্দ থেকে এই হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। এ সময়ে মিসরে, ফ্রান্সে ও কার্থেজে হাজার হাজার খৃস্টানকে হত্যা করা হয়। এই পাইকারী হত্যাযজ্ঞের নির্মমতা ছিল এত ভয়ানক যে, তখনকার খৃস্টানগণ মনে করেন যে, খৃস্টারি (দাজ্জাল) বা পাপ পুরুষ (Antichrist, Man of Sin)-এর যুগ এসে গেছে বা কিয়ামত সন্নিকটে।

ষষ্ঠবার: রোমান সম্রাট ম্যাক্সিমিনের (Maximin) এর সময়ে। ২৩৫ খৃস্টাব্দে তিনি রাজত্ব গ্রহণ করেন। ২৩৭ খৃস্টাব্দে এ হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। তিনি ধর্মগুরু ও পণ্ডিতদের গণহারে হত্যার নির্দেশ দেন। কারণ তাঁর ধারণা ছিল যে, ধর্মগুরু ও পণ্ডিতগণকে হত্যা করলে সাধারণ মানুষেরা অতি সহজেই তাঁর আনুগত্য করবে। এরপর তিনি নির্বিচারে সকল খৃস্টানকে হত্যার নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশে গণহত্যা চলতে থাকে। অনেক সময় একটি গর্তে ৫০/৬০টি দেহ ফেলা হতো। এরপর তিনি রোমের সকল বাসিন্দাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় ২৩৮ সালে তারই এক সৈনিক তাকে হত্যা করে।

সপ্তমবার: রোমান সম্রাট ডেসিয়াস (Decius)-এর সময়ে। ২৫৩ খৃস্টাব্দে এই পাইকারী হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। এ সম্রাট সিদ্ধান্ত নেন যে, সকল খৃস্টানকে হত্যা করে তিনি খৃস্টধর্মকে সমূলে বিনাশ করবেন। এ জন্য তিনি তাঁর রাজ্যের সকল আঞ্চলিক প্রশাসককে এই মর্মে নির্দেশ প্রদান করেন। এ সময়ে কিছু খৃস্টান ধর্মত্যাগ করেন। মিসর, আফ্রিকা, ইটালি, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়া মাইনর ছিল তাঁর এই পাইকারী নিধনযজ্ঞের কেন্দ্রবিন্দু।

অষ্টমবার: রোমান সম্রাট ভ্যলেরিয়ান (Valerian/ Valerianus)-এর সময়ে ২৫৭ খৃস্টাব্দে। এ সময়ে হাজার হাজার খৃস্টানকে হত্যা করা হয়। এরপর তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করেন যে, সকল বিশপ ও ধর্মযাজককে হত্যা করতে হবে। সকল সম্মানীয় খৃস্টানকে লাঞ্ছিত করতে হবে এবং তাঁদের ধন-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এরপরও তাঁরা খৃস্টধর্ম পরিত্যাগ না করলে তাঁদেরকে হত্যা করতে হবে। সম্মানীয় মহিলাদের ধন-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং তাঁদেরকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে। এরপর যারা খৃস্টান ছিল তাদের মধ্যে যারা রোমান দেবতা জুপিটারের পূজা করতে অস্বীকার করত তাদেরকে হত্যা করা হতো বা আগুনে পুড়িয়ে মারা হতো বা হিংস্র পশুর খাদ্য হিসেবে ছেড়ে দেওয়া হতো। অন্যান্যদের বন্দি করে ক্রীতদাস বানিয়ে পায়ে বেড়ি পরিয়ে রাষ্ট্রের কাজে ব্যবহার করা হতো।

নবমবার: রোমান সম্রাট আরেলিয়ান (Aurelian /Aurelianus)-এর সময়ে। ২৭৪ খৃস্টাব্দে এই নিধনযজ্ঞ শুরু হয়। সম্রাট এ মর্মে ফরমান জারি করেন। তবে এবারের নিধনযজ্ঞ বেশিদিন স্থায়ী হয় নি। কারণ বৎসরখানেক পরে সম্রাট নিজেই নিহত হন।

দশমবার: রোমান সম্রাট ডিওক্লেশিয়ান (Diocletian/ Diocleti-anus)-এর শাসনামলে। তিনি ২৮৪ খৃস্টাব্দে রাজত্ব গ্রহণ করেন। ২৮৬ সাল থেকে তিনি খৃস্টানদের নিপীড়ন শুরু করেন। ৩০২ খৃস্টাব্দে তা মহা-নিধনযজ্ঞে পরিণত হয় এব ৩১৩ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। রোমান রাজ্যের পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সর্বত্র পাইকারী হারে খৃস্টানদের হত্যা করা হয়। ৩০২ সালে ফ্রিজিয়া শহরকে একবারে এমনভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হয় যে, সেখানে একজন খৃস্টানও অবশিষ্ট থাকেন নি।

সম্রাট ডিওক্লেশিয়ান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, পৃথিবীর বুক থেকে বাইবেলের অস্তিত্ব মুছে দিবেন। এ জন্য তিনি অত্যন্ত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে চেষ্টা করেন। ৩০৩ খৃস্টাব্দে তিনি সকল চার্চ-গীর্জা ভেঙ্গে ফেলার ও সকল ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি খৃস্টানদের উপাসনার জন্য একত্রিত হওয়া নিষিদ্ধ করে দেন। তাঁর নির্দেশানুসারে সকল গীর্জা ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং ব্যাপক অনুসন্ধানের মাধ্যমে যত প্রকারের ধর্মীয় পুস্তক পাওয়া যায় তা সবই পুড়িয়ে ফেলা হয়। যে ব্যক্তি এই নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জানায় বা যে ব্যক্তি কোনো ধর্মীয় পুস্তক গোপন করে রেখেছে বলে সন্দেহ করা হয় তাকে নির্মমভাবে শাস্তি প্রদান করা হয়। খৃস্টানগণ উপাসনার জন্য সমবেত হওয়া বন্ধ করে দেন। ইউসেবিয়াস (Eusebius) লিখেছেন যে, তিনি নিজে স্বচক্ষে গীর্জাগুলি ভেঙ্গে ফেলতে এবং বাইবেল বা পবিত্র পুস্তকগুলিকে বাজারের মধ্যে পুড়িয়ে ফেলতে দেখেছেন।

এ সম্রাট মিসরের শাসককে নির্দেশ দেন মিসরের কপ্টিক খৃস্টানদেরকে রোমান প্রতিমা পূজা করতে বাধ্য করতে। যারা এ আদেশ মানবে না তাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। এ নির্দেশে ৮,০০,০০০ (আট লক্ষ) কপ্টিক খৃস্টানকে হত্যা করা হয়। এজন্য তার যুগকে ‘‘শহীদদের যুগ’’ বলা হয়। তিনি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৮০ জন খৃস্টান হত্যা করতেন। তার হত্যাযজ্ঞ ১০ বৎসর স্থায়ী হয় এবং পুরো রোমান রাজ্যের সর্বত্র হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে। এ হত্যাযজ্ঞ পূর্ববর্তী ঘটনাগুলির চেয়ে অধিক হিংস্র ও অধিক সময় স্থায়ী হয়।

খৃস্টানগণ ঘটনাগুলির যেরূপ বিবরণ দিয়েছেন তা যদি আংশিকও সত্য হয় তবে কখনোই কল্পনা করা যায় না যে, এ সময়ে খৃস্টানদের মধ্যে বাইবেলের অনেক কপি বিদ্যমান বা প্রচলিত ছিল। একথাও চিন্তা করা যায় না যে, তাঁরা তাঁদের ধর্মগ্রন্থকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে, বিশুদ্ধ রাখতে ও এ বিষয়ে গবেষণা পর্যালোচনা করতে পেরেছেন। বরং এ সময় ছিল বিকৃতিকারীদের জন্য বাইবেল বিকৃত করার সুবর্ণ সুযোগ। তারা ইচ্ছামত বিকৃতি ও জালিয়াতি করার অনেক সুযোগ পেয়েছিল। পাঠক জেনেছেন যে, খৃস্টীয় প্রথম শতকে খৃস্টানদের মধ্যে বিভ্রান্ত দল উপদলের সংখ্যা ছিল অনেক এবং তারা সকলেই বাইবেল বিকৃত করতেন। [এখানে আরো কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়: (১) প্রথম কয়েক শতাব্দীর খৃস্টানগণ, বিশেষত যীশুর যুগ ও তার পরবর্তী প্রজন্মের খৃস্টানগণ কখনোই ধর্মগ্রন্থ সংরক্ষণের কথা চিন্তা করেন নি। উপরন্তু তারা ধর্মগ্রন্থ বা সুসমাচার লিখে রাখা বা সংরক্ষণ করার বিরোধিতা করতেন এবং একে পাগলামি বলে মনে করতেন। কারণ, তাঁরা সুনিশ্চিতরূপে বিশ্বাস করতেন যে, অচিরেই- তাদের জীবদ্দশাতেই- কিয়ামত বা মহাপ্রলয়, পুনরুত্থান ও মহাবিচার সংঘটিত হবে। জীবিতরা রূপান্তরিত হবে এবং মৃতরা উত্থিত হবে। যীশু স্বর্গ থেকে নেমে আসবেন এবং খৃস্টানদেরকে স্বর্গে নিয়ে যাবেন। তাদের মধ্যে প্রচলিত যীশু ও প্রেরিতদের বিভিন্ন বাণী ও বক্তব্য থেকেই তারা তা বিশ্বাস করতেন। যীশুর এ সকল বাণী ও বক্তব্য বিভিন্ন সুসমাচার ও পত্রে এখনো বিদ্যমান। এ অর্থে অনেক বক্তব্য নতুন নিয়মের পত্রাবলিতে বিদ্যমান। থিষলনীকীয়দের প্রতি প্রেরিত পৌলের ১ম পত্রের চতুর্থ অধ্যায়ে রয়েছে: ‘‘১৫ কেননা আমরা প্রভুর বাক্য দ্বারা তোমাদিগকে ইহা বলিতেছি যে, আমরা যাহারা জীবিত আছি, যাহারা প্রভুর আগমন পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকিব, আমরা কোন ক্রমেই সেই নিদ্রাগত লোকদের অগ্রগামী হইব না। ১৬ কারণ প্রভু স্বয়ং আনন্দধ্বনি সহ, প্রধান দূতের রব সহ, এবং ঈশ্বরের তূরীবাদ্য সহ স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিবেন, আর যাহারা খ্রীষ্টে মরিয়াছে তাহারা প্রথমে উঠিবে। ১৭ পরে আমরা যাহারা জীবিত আছি, যাহারা অবশিষ্ট থাকিব, আমরা আকাশে প্রভুর সহিত সাক্ষাৎ করিবার নিমিত্ত একসঙ্গে তাহাদের সহিত মেঘযোগে নীত হইব; আর এইরূপে সতত প্রভুর সঙ্গে থাকিব।’’ করিন্থীয়দের প্রতি প্রেরিত পৌলের প্রথম পত্রের ১৫ অধ্যায়ে রয়েছে: ‘‘৫১ দেখ, আমি তোমাদিগকে এক নিগূঢ়তত্ত্ব বলি; আমরা সকলে নিদ্রাগত হইব না, কিন্তু সকলে রূপান্তরীকৃত হইব; ৫২ এক মুহূর্তের মধ্যে, চক্ষুর পলকে, শেষ তূরীধ্বনিতে হইবে; কেননা তূরী বাজিবে, তাহাতে মৃতেরা অক্ষয় হইয়া উত্থাপিত হইবে, এবং আমরা রূপান্তরীকৃত হইব।’’ এভাবে তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, তারা মরবেন না, বরং তাদের জীবদ্দশাতেই কিয়ামত শুরু হবে এবং তারা শুধু রূপান্তরিত হয়ে স্বর্গে যাবে। যীশু যোহনের বিষয়ে পিতরকে বলেন: ‘‘আমি যদি ইচ্ছা করি, এ আমার আগমন পর্যন্ত থাকে, তাহাতে তোমার কি?’’ (যোহন ২১/২২) এ কথা থেকে শিষ্যরা বুঝেন যে, যীশুর পুনরাগমণের পূর্বে যোহন মরবেন না। আর ঘটনাক্রমে যোহন দীর্ঘ আয়ু লাভ করেন। (অথবা যোহনের দীর্ঘায়ুর কারণেই এ কথাটি যীশুর নামে জালিয়াতি করে প্রচার করা হয়েছিল।) যীশুর পরেও তিনি প্রায় শতবৎসর বেঁচে ছিলেন। ফলে তাঁদের বিশ্বাস আরো জোরালো হয়। প্রতিদিনই তাঁরা কিয়ামতের অপেক্ষা করতেন। এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে তাঁরা সুসমাচার বা ধর্মপু্স্তক লিখতে নিষেধ করতেন। প্রকাশিত বাক্যের ২২ অধ্যায়ে যীশুর কথাগুলি নিম্নরূপ: ‘‘৭ আর দেখ, আমি শীঘ্রই আসিতেছি।... ১০ তুমি এই গ্রন্থের ভাববাণীর বচন সকল মুদ্রাঙ্কিত করিও না; কেননা সময় সন্নিকট।... ২০ আমি শীঘ্র আসিতেছি।’’ (২) উপরের বিশ্বাসের সাথে দ্বিতীয় একটি প্রগাঢ় বিশ্বাস তাদের মধ্যে ছিল, তা হলো, যীশু মূসার শরীয়ত পূর্ণ করতে এসেছিলেন। কাজেই পুরাতন নিয়মকেই তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ বলে বিশ্বাস করতেন এবং পাঠ করতেন, যীশুর সুসমাচার বা শিক্ষা সংকলন বা সংরক্ষরণের কোনোরূপ নিয়মতান্ত্রিক চেষ্টাই তাঁরা করেন নি। দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরু থেকে যীশুর শিক্ষা, সুসমাচার, প্রেরিতদের পত্র ইত্যাদি নামে বিক্ষিপ্তভাবে অনেক কিছু মৌখিক বা লিখিতভাবে প্রচারিত হয়। কিন্তু এগুলির কোনো গুরুত্ব দেয় নি খৃস্টান চার্চ। সাধু আরিয়ানুস (Saint Irenaeus/Irenaeus) ২০০ খৃস্টাব্দের দিকে সর্বপ্রথম খৃস্টধর্মকে একটি কেতাবী ধর্ম হিসাবে রূপ প্রদানের চেষ্টা শুরু করেন। দেখুন: Oxford Illustrated History of Christianity, New York, Oxford University Press, 1990, page 30-31. তারিখ কানীসাতিল মাসীহ, পৃষ্ঠা ৪৫। (৩) খৃস্টধর্মের প্রথম ২০০ বৎসরের ইতিহাসে গসপেল বা সুসমাচারের কোনো উল্লেখই পাওয়া যায় না। কোথাও পাওয়া যায় না যে, কোনো মন্ডলীতে বা চার্চে ‘‘গসপেল’’ পাঠ করা হতো, সংরক্ষণ করা হতো বা এগুলির প্রচার বা শিক্ষার কোনোরূপ চেষ্টা করা হতো। এত অত্যাচারের মধ্যেও বিভিন্ন ধর্মগুরুদের চিঠিপত্র যত্ন সহকারে বিভিন্ন চার্চে সংরক্ষণ করা হয়েছে, কিন্তু কোথাও ‘‘গসপেল’’ বা সুসমাচারের সংরক্ষণের সামান্যতম উল্লেখ নেই।]

উপরের বিষয়গুলির আলোকে আমরা বুঝতে পারি যে, ইয়াহূদী-খৃস্টানগণের নিকট থেকে তাঁদের ধর্মগ্রন্থগুলির অবিচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরা বা বিশুদ্ধতার প্রমাণ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। পুরাতন নিয়ম এবং নতুন নিয়মের কোনো একটি পুস্তকেরও লেখক থেকে কেনো অবিচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরা তাঁদের নিকট সংরক্ষিত নেই। ইয়াহূদীগণের নিকটেও নেই এবং খৃস্টানগণের নিকটেও নেই। ইযহারুল হক্কের প্রণেতা আল্লামা রাহমাতুল্লাহ তাঁর সাথে প্রকাশ্য বিতর্কের সময় (১৮৫৪ খৃস্টাব্দে) পাদ্রী মি. ফানডার ও মি. ফ্রেঞ্চ-এর নিকট এরূপ সূত্র দাবি করেন। তাঁরা একথা বলে ওজরখাহি পেশ করেন যে, এ সকল গ্রন্থের সূত্র আমরা হারিয়ে ফেলেছি। খৃস্টধর্মের শুরু থেকে ৩১৩ বৎসর পর্যন্ত আমাদের উপর যে জুলুম-অত্যাচার হয়েছিল তার ফলে এ গ্রন্থগুলির সূত্র পরম্পরার বিবরণ আমাদের নিকট থেকে হারিয়ে গিয়েছে।

এভাবে প্রমাণিত হয় যে, ধারণা ও অনুমান ছাড়া কোনো প্রকার সূত্র (chain of authorities) ইয়াহূদী-খৃস্টানগণের কাছে নেই। তাদের নিকট অতিপ্রাচীন কোনো পাণ্ডুলিপি নেই। যে সকল পাণ্ডুলিপি তারা ‘‘প্রাচীন’’ বলে দাবি করেন সেগুলি খৃস্টীয় ৪র্থ/৫ম শতকের বা তার পরের বলে তারাই দাবি করেন। আর এসকল প্রাচীন বলে কথিত পাণ্ডুলিপিগুলি প্রকৃতপক্ষে কবে, কখন বা কোথায় লেখা হয়েছে তার কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই।

মুসলিম লেখকগণ সাধারণত তাঁদের লেখা বই-পুস্তক বা পাণ্ডুলিপির শেষে লিখেন যে, অমুক সালের অমুক তারিখে পুস্তকটির রচনা বা অনুলিপি করা শেষ হলো। অনুলিপির ক্ষেত্রে অনুলিপিকারের নামও তাঁরা লিখেন। এধরনের কোনো কথা বাইবেলীয় পাণ্ডুলিপির কোথাও লেখা নেই। কে এই অনুলিপি করেছেন, কবে, কখন বা কোথায় তা করেছেন কিছুই তাতে উল্লেখ করা হয় নি। খৃস্টান পণ্ডিতগণ কিছু কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ভিত্তিতে অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে বলেন যে, সম্ভবত অমুক শতকে বা অমুক শতকে তা লেখা হয়েছিল। এই প্রকারের ধারণা ও অনুমান বিতর্কের ক্ষেত্রে বিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে পেশ করা যায় না।

খৃস্টান প্রচারকগণ বিভ্রান্তিমূলকভাবে প্রচার করেন যে, কুরআনে যেহেতু ইয়াহূদী-খৃস্টানগণকে ‘‘আহল কিতাব’’ বলা হয়েছে এবং তাদের নিকট কিতাব আছে, কিতাবের মধ্যে আল্লাহর বিধান আছে ইত্যাদি কথা বলা হয়েছে, সেহেতু কুরআন থেকে বুঝা যায় যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত বাইবেল বিশুদ্ধ ছিল।

তাদের এ সকল কথা জঘন্য মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়। কুরআনে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে যে, ইয়াহূদী-খৃস্টানগণ তাদের কিতাব বিকৃত করেছে, নিজে হাতে পুস্তক রচনা করে তা ‘‘আল্লাহর কিতাব’’ বলে চালিয়েছে, তাদের উপর অবতীর্ণ অনেক কিতাব ও বিধান তারা ভুলে গিয়েছে বা হারিয়ে ফেলেছে। এজন্য আমরা মুসলিমগণ বিশ্বাস ও প্রমাণ করি যে, কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার আগেই বাইবেলের পুস্তকগুলি বিকৃত হয়েছে।

আমরা কখনোই দাবি করি না যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগ পর্যন্ত বাইবেল অবিকৃত ছিল এবং এরপর তা বিকৃত হয়েছে। বরং কুরআনের নির্দেশনার আলোকে মুসলিম উম্মাহ একমত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পূর্বেই এ সকল পুস্তক বিকৃত হয়েছে এবং এগুলির সূত্র হারিয়ে গিয়েছে। এছাড়া তাঁর যুগের পরেও এরূপ বিকৃতির ধারা অব্যাহত থেকেছে।

খৃস্টানগণ দাবি করেন যে, তাদের নিকট ৪র্থ-৫ম শতকে লেখা বাইবেলের কিছু পাণ্ডুলিপি রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, বাইবেল বিকৃত নয়। প্রকৃতপক্ষে এ সকল পাণ্ডুলিপি প্রমাণ করে যে, বাইবেল বিকৃত। কারণ এ সকল পাণ্ডুলিপির একটির সাথে আরেকটির ব্যাপক অমিল ও বৈপরীত্য রয়েছে। এগুলির মধ্যে জাল ও ভিত্তিহীন পুস্তকাদি রয়েছে বলে তারাই স্বীকার করেন। এ সকল ‘‘প্রাচীন’’ পান্ডলিপি প্রমাণ করে, তাদের পূর্বসূরীরা তাদের ধর্মগ্রন্থগুলিকে কিভাবে বিকৃত করতেন এবং এগুলির মধ্যে জাল ও বানোয়াট পুস্তকাদি ঢুকাতেন।

উপরের আলোচনা থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাইবেলের উভয় নিয়মের পুস্তকগুলিতে ব্যাপক বৈপরীত্য, ভুলভ্রান্তি ও সর্বপ্রকারের বিকৃতি বিদ্যমান। আর এসকল পুস্তকের কোনো সূত্র বা উৎস তাদের নিকট সংরক্ষিত নেই। তাঁরা যা কিছু বলেন সবই আন্দায-অনুমান মাত্র। আর আন্দায-অনুমান দিয়ে সত্যকে পাওয়া যায় না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন