hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সংক্ষেপিত ইযহারুল হক্ক

লেখকঃ ড. মুহাম্মাদ আহমদ আব্দুল কাদির মালকাবী

৪২
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: যীশুর বক্তব্য দ্বারা ত্রিত্ববাদ খণ্ডন
প্রথম বাক্য: যোহনলিখিত সুসমাচারের ১৭ অধ্যায়ের ৩ শ্লোকে যীশুখৃস্ট ঈশ্বরকে সম্বোধন করে বলেছেন: ‘‘আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়। (And this is life eternal, that they might know thee the only true God, and Jesus Christ, whom thou hast sent.)’’

এখানে যীশু অনন্ত জীবন কী তা অতি সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, অনন্ত জীবন হলো আল্লাহকে একমাত্র সত্য ঈশ্বর বা উপাস্য বলে জানা এবং যীশুখৃস্টকে তাঁর প্রেরিত (রাসূল) বলে জানা।

তিনি বলেন নি যে, ‘ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা জানিবে তোমার সত্ত্বা তিনটি সম্পূর্ণ পৃথক সত্ত্বার সমন্বয় এবং যীশু মনুষ্য ও ঈশ্বর, অথবা যীশু মাংশে প্রকাশিত ঈশ্বর (God manifested in the flesh/ God in the flesh/ God incarnate)।’

যীশুর এ কথা বলেছিলেন ঈশ্বরকে সম্বোধন করে প্রার্থনার মধ্যে। কাজেই ইয়াহূদীদের ভয়ে প্রকৃত সত্য এড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে চিন্তা করার কোনো সুযোগ এখানে নেই। যদি সত্যই ‘ঈশ্বরের ত্রিত্বে’ ও ‘যীশুর ঈশ্বরত্বে’ বিশ্বাসের’ উপর অনন্ত জীবনের ভিত্তি হতো তবে নিশ্চয়ই তিনি এখানে তা উল্লেখ করতেন। তিনি তা জানান নি, বরং জানিয়েছেন যে, ‘ঈশ্বরের প্রকৃত (true) একত্বে’ ও ‘যীশুর প্রেরিতত্বে’ বিশ্বাসই অনন্ত জীবন। এথেকে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, এর বিপরীত কোনো বিশ্বাস পোষণ করা অনন্ত ধ্বংস বা অনন্ত মৃত্যু। কাজেই ঈশ্বরের একত্বের বিপরতীতে ঈশ্বরের ত্রিত্বে বিশ্বাস করা এবং যীশুর প্রেরিতত্বের বিপরীতে যীশুর ঈশ্বরত্বে বিশ্বাস করা অনন্ত ধ্বংস ও অনন্ত মৃত্যু। এখানে যীশু নিজেকে প্রেরিত ও আল্লাহকে প্রেরণকারী বলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। যীশুর প্রেরিত হওয়া তাঁর ঈশ্বর হওয়ার সাথে সাংঘর্ষিক। প্রেরিত ও প্রেরণকারী কখনোই এক হতে পারেন না; তারা অবশ্যই পৃথক। নইলে এ কথার কোনো অর্থ থাকে না।

দ্বিতীয় বাক্য: মার্কলিখিত সুসমাচারের ১২/২৮-৩৪: ‘‘(২৮) আর অধ্যাপকদের এক জন নিকটে আসিয়া তাঁহাদিগকে তর্ক বিতর্ক করিতে শুনিয়া, এবং যীশু তাঁহাদিগকে বিলক্ষণ উত্তর দিয়াছেন জানিয়া, তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, সকল আজ্ঞার মধ্যে কোন্টি প্রথম? (২৯) যীশু উত্তর করিলেন, প্রথমটি এই, ‘হে ইস্রায়েল, শুন; আমাদের ঈশ্বর প্রভু একই প্রভু; (৩০) আর তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত মন ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে। (৩১) দ্বিতীয়টি এই, ‘তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে। এই দুই আজ্ঞা হইতে বড় আর কোন আজ্ঞা নাই। (৩২) অধ্যাপক তাঁহাকে কহিল, বেশ, গুরু, আপনি সত্য বলিয়াছেন যে, তিনি এক, এবং তিনি ব্যতীত অন্য নাই; (৩৩) আর সমস্ত অন্তঃকরণ, সমস্ত বুদ্ধি ও সমস্ত শক্তি দিয়া তাঁহাকে প্রেম করা এবং প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করা সমস্ত হোম ও বলিদান হইতে শ্রেষ্ঠ। (৩৪) তখন সে বুদ্ধিপূর্বক উত্তর দিয়াছে দেখিয়া যীশু তাহাকে কহিলেন, ঈশ্বরের রাজ্য হইতে তুমি দূরবর্তী নও।’’

মথিলিখিত সুসমাচারের ২২ অধ্যায়ের ৩৪-৪০ শ্লোকেও যীশুর এ বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। এখানে তিনি উপর্যু&ক্ত দুটি আজ্ঞার কথা উল্লেখ করে বলেন: ‘‘এই দুইটি আজ্ঞাতেই সমস্ত ব্যবস্থা এবং ভাববাদীগ্রন্থও ঝুলিতেছে।’’ [মথি ২২/৪০।]

এ থেকে একটি বাস্তব মহাসত্য জানা গেল। তা হলো, প্রথম যে আজ্ঞাটি তোরাহ ও সকল ভাববাদীর গ্রন্থেই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং যা ঈশ্বরের রাজ্যের নৈকট্যের মূল কারণ তা হলো একত্ববাদ, অর্থাৎ একথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহই একমাত্র ঈশ্বর বা উপাস্য এবং তিনি ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নেই। যদি ত্রিত্ববাদের উপরে মুক্তি নির্ভর করতো, তবে নিশ্চয়ই তা তোরাহ ও অন্য সকল ভাববাদীর গ্রন্থে প্রথম আজ্ঞা হিসেবে সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ করা হতো। আর তাহলে যীশু বলতেন: ‘প্রথম আজ্ঞাটি এই, ‘ঈশ্বর প্রভু এক, যিনি তিনটি প্রকৃত ও সম্পূর্ণ পৃথক সত্তার অধিকারী এবং আমিই দ্বিতীয় ঈশ্বর বা ঈশ্বরের দ্বিতীয় ব্যক্তি ও ঈশ্বরের পুত্র।’

যেহেতু যীশু তা বলেন নি এবং পুরাতন নিয়মের কোনো পুস্তকেই তা বলা হয় নি, সেহেতু আমরা সুনিশ্চিতরূপে জানতে পারছি যে, ঈশ্বরের প্রকৃত একত্বে বিশ্বাস করাই মুক্তির পথ। ঈশ্বরের ত্রিত্বে বিশ্বাস ঈশ্বরের একত্বে বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক, কাজেই তা মুক্তির পথ নয়, বরং ধ্বংসের পথ। [এখানে লক্ষণীয় যে, এ অধ্যাপক ত্রিত্বে বিশ্বাস করতেন না। উপরন্তু কেউ ত্রিত্বের কথা বললে বা যীশু নিজেকে ঈশ্বরের এক অংশ বলে দাবি করলে তাকে নির্দ্বিধায় হত্যা করতেন। অথচ যীশু সুস্পষ্ট উক্ত অধ্যাপককে ঈশ্বরের রাজ্যের নিকটবর্তী বলে উল্লেখ করেছেন। এতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে, ঈশ্বরের রাজ্যে বা জান্নাতে প্রবেশের জন্য ত্রিত্বে বিশ্বাস ও যীশুর ঈশ্বরত্বে বিশ্বাস প্রয়োজনীয় নয়; বরং ত্রিত্বমুক্ত প্রকৃত একত্বে বিশ্বাসই জান্নাতের জন্য যথেষ্ট।]

পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলি ঈশ্বরের প্রকৃত একত্বের নির্দেশনায় ভরপুর। নমুনা হিসেবে পাঠক নিম্নের কয়েকটি অনুচ্ছেদ দেখতে পারেন: দ্বিতীয় বিবরণ ৪/৩৫ ও ৩৯; ৬/৪-৫; যিশাইয় ৪৫/৫-৬; ৪৬/৯।

তৃতীয় বাক্য: মার্কলিখিত সুসমাচারের ১৩ অধ্যায়ের ৩২ শ্লোকে বলা হয়েছে: ‘‘কিনতু সেই দিনের বা সেই দন্ডের তত্ত্ব কেহই জানে না; স্বর্গস্থ দূতগণও জানেন না, পুত্রও জানেন না, কেবল পিতা জানেন।’’

এ বাক্যটি সন্দেহাতীতভাবে ত্রিত্ববাদের বাতুলতা ঘোষণা করছে। কারণ যীশু এখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করছেন যে, কিয়ামত বা বিনাশ দিবসের জ্ঞান একমাত্র ঈশ্বরেই আছে, আর কারো নেই। অন্য সকল সৃষ্টির সাথে তাঁর নিজেকেও তিনি এই জ্ঞান থেকে বঞ্চিত বলে উল্লেখ করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনিও অন্য সকল সৃষ্টির সমান বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। তাঁকে ঈশ্বর কল্পনা করলে তা কখনোই সম্ভব নয়। [বিশেষত, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, খৃস্টধর্মের প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে ‘বাক্য’ এবং ঈশ্বরের ‘পুত্রসত্ত্বা’ বলতে ঈশ্বরের জ্ঞানকেই বুঝানো হয়। খৃস্টানগণ বিশ্বাস করেন যে, ঈশ্বরের জ্ঞান, ঈশ্বরের বাক্য বা ঈশ্বরের পুত্রসত্ত্বা যীশুর সত্ত্বার সাথে একাকার হয়ে ছিল। এ সংমিশ্রণের প্রকৃতি নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যেভাবেই হোক, তারা বিশ্বাস করেন যে, যীশু ছিলেন ঈশ্বরের জীবন্ত জ্ঞান। আর সেক্ষেত্রে পিতা ঈশ্বরের চেয়ে পুত্র ঈশ্বরের মধ্যে জ্ঞান বেশি থাকা উচিত। তা না হলে অন্তত পুত্রের জ্ঞান পিতার চেয়ে কোনো অংশেই কম হতে পারে না। খৃস্টান পন্ডিতগণ যীশুর এ জাতীয় বাক্যের ব্যাখ্যায় অনেক সময় বলেন যে, যীশু তার দেহের দিকে লক্ষ্য করে ঈশ্বরত্ব অস্বীকার করতেন। কিন্তু এক্ষেত্রে এ ব্যাখ্যার কোনো উপায় নেই। কারণ ‘জ্ঞান’ কোনো দৈহিক বিষয় নয় বা দেহ সম্পৃক্ত গুণ নয়। এতে প্রমাণিত হয় যে, দেহ, প্রাণ, সত্ত্বা বা আত্মায় কোনো দিক থেকেই যীশু ঈশ্বর ছিলেন না। এছাড়া এখানে যীশু সুস্পষ্ট পুত্রের কথা বলেছেন। অর্থাৎ ঈশ্বরের পুত্র হিসেবেও তিনি এ দিবসের কথা জানেন না। এতে প্রমাণিত যে, ঈশ্বরের পুত্র বলতে তিনি কখনোই নিজেকে ঈশ্বরের সত্ত্বার অংশ বলে দাবি করেন নি; বরং ইস্রায়েলীয়গণ অন্যান্য নেককার মানুষ বা ভাববাদিগণকে যেভাবে ঈশ্বরের পুত্র বলত, সেভাবেই তিনি নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলতেন।]

চতুর্থ বাক্য: মথিলিখিত সুসমাচারের ২৭/৪৬ ও ৫০ শ্লোক: ‘‘(৪৬) আর নয় ঘটিকার সময়ে যীশু উচ্চ রবে চিৎকার করিয়া ডাকিয়া কহিলেন, এলী এলী লামা শবক্তানী, অর্থাৎ ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ? (৫০) পরে যীশু আবার উচ্চ রবে চিৎকার করিয়া নিজ আত্মাকে সমর্পণ করিলেন।’’

লূকলিখিত সুসমাচারের ২৩ অধ্যায়ের ৪৬ শ্লোকে বলা হয়েছে: ‘‘আর যীশু উচ্চ রবে চিৎকার করিয়া কহিলেন, পিত, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি; আর এই বলিয়া প্রাণত্যাগ করিলেন।’’

খৃস্টানগণের বিশ্বাস অনুসারে এ হলো যীশুর জীবনের সর্বশেষ কথা। আর এ কথাগুলি তাঁর ঈশ্বরত্বের বিষয়ে খৃস্টানদের দাবি সর্বোতভাবে মিথ্যা ও বাতিল বলে প্রমাণ করে। তিনি যদি ঈশ্বরই হতেন তাহলে অন্য কোনো ঈশ্বরের নিকট তিনি ত্রাণ বা সাহায্য প্রার্থনা করতেন না। ঈশ্বর এরূপ অসহায় হতে পারেন না বা ঈশ্বর এভাবে মৃত্যুবরণ করতে পারেন না। অবসাদ, দুর্বলতা, অসহায়ত্ব, শ্রান্তি, ক্লান্তি ইত্যাদির দুর্বলতা কখনো ঈশ্বরকে স্পর্শ করতে পারে না। যিশাইয় ৪০/২৮: ‘‘তুমি কি জ্ঞাত হও নাই? তুমি কি শুন নাই? অনাদি অননত ঈশ্বর, সদাপ্রভু, পৃথিবীর প্রান্ত সকলের সৃষ্টিকর্তা ক্লান্ত হন না, শ্রান্ত হন না; তাঁহার বুদ্ধির অনুসন্ধান করা যায় না।’’

এভাবে পুরাতন ও নতুন নিয়মের মধ্যে অগণিত শ্লোক ও অনুচ্ছেদ বিদ্যমান যেগুলিতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে এরূপ মানবীয় দর্বলতা কখনো ঈশ্বরকে স্পর্শ করতে পারে না। নমুনা হিসেবে পাঠক যিশাইয় ৪৪/৬; যিরমিয় ১০/১০; হবক্কুক ১/১২; তিমথীয় ১/১৭ ইত্যাদি দেখতে পারেন। এ সকল শ্লোকে বারংবার বলা হয়েছে যে, প্রকৃত ঈশ্বর অনাদি, অনন্ত, জীবন্ত, অমর (everlasnting), অক্ষয় ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বে (immortal)।

যে ঈশ্বর অনাদি, অনন্ত, যাকে কোনো ক্লান্তি, শ্রান্তি বা দুর্বলতা স্পর্শ করতে পারে না, যিনি জীবন্ত-চিরঞ্জীব, অমর ও অক্ষয় তিনি কিভাবে অসহায় হয়ে ত্রাণপ্রার্থনা করতে করতে মৃত্যুবরণ করবেন? মরণশীল ক্ষয়শীল অসহায় অক্ষম কি ঈশ্বর হতে পারে? কখনোই নয়! কোনোভাবেই নয়!! বরং তাদের ধারণা ও বর্ণনা অনুসারে এই অন্তিম সময়ে যীশু যার কাছে ত্রাণ প্রার্থনা করে চিৎকার করেছিলেন তিনিই হলেন প্রকৃত ও সত্য ঈশ্বর।

এখানে লক্ষণীয় যে, ঈশ্বরকে বাইবেলের বিভিন্ন স্থানে অমর বা মৃতুহীন বলা হয়েছে। এর মধ্যে হবক্কুক ১/১২। আরবী অনুবাদের প্রাচীন সংস্করণগুলিতে এ শ্লোকটি নিম্নরূপ: ‘‘হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমার পবিত্রতম ..... তুমি মরিবে না ( لا تموت )।’’ কিন্তু পরবর্তী আরবী সংস্করণগুলিতে লেখা হয়েছে: ‘‘... আমরা মরিব না ( لا نموت )।’’

কেরির বঙ্গানুবাদে আয়াতটি নিম্নরূপ: ‘‘ হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমার পবিত্রতম, তুমি কি অনাদিকাল হইতে নহ? আমরা মারা পড়িব না; হে আমার সদাপ্রভু, তুমি বিচারার্থে উহাকে নিরূপন করিয়াছ...।’’ ‘আমরা মারা পড়িব না’ কথাটির টীকায় লেখা হয়েছে ‘‘(বা) তুমি মরিবে না।’’

যে কোনো পাঠক এ শ্লোকটি পাঠ করলে বুঝবেন যে, ‘‘আমরা মারা পড়িব না’’ কথাটি এখানে অর্থহীন। এ বাক্য সম্পূর্ণ ঈশ্বরের প্রশংসায় বলা হয়েছে, আগে ও পরে সবই ঈশ্বরকে সম্বোধন করে তার গুণাবলি বর্ণনা করা। এখানে মাঝখানে ‘‘আমরা মরিব না’’ কথাটি অর্থহীন। একথা সুস্পষ্ট যে, ‘‘তুমি মরিবে না’’ কথাটি কোনো ধার্মিক খৃস্টান লিপিকার বিকৃত করে ‘‘আমরা মরিব না’’ বানিয়ে দেন; যেন যীশুর মৃত্যু দাবির বৈধতা পাওয়া যায়। আর আরবী, হিব্রু ইত্যাদি ভাষায় এরূপ বিকৃতি খুবই সহজ, একটি বা দুটি নুকতা পরিবর্তন করলেই হয়।

পঞ্চম বাক্য: যোহন ২০/১৭ শ্লোকে মগ্দলীনী মরিয়মকে সম্বোধন করে যীশু বলেন: ‘‘আমাকে স্পর্শ করিও না, কেননা এখনও আমি ঊর্ধ্বে পিতার নিকটে যাই নাই; কিনতু তুমি আমার ভ্রাতৃগণের কাছে গিয়া তাহাদিগকে বল, যিনি আমার পিতা ও তোমাদের পিতা, এবং আমার ঈশ্বর ও তোমাদের ঈশ্বর, তাঁহার নিকটে আমি ঊর্ধ্বে যাইতেছি (I ascend unto my Father, and your Father; and to my God, and your God)।’’

এখানে যীশু ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁর নিজেকে অন্য সকল মানুষের সমান বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন: ‘‘যিনি আমার পিতা ও তোমাদের পিতা, এবং আমার ঈশ্বর ও তোমাদের ঈশ্বর’’। তাঁর একথা বলার উদ্দেশই হলো, যেন মানুষ মিথ্যা অবপাদ দিয়ে তাঁকে ঈশ্বর বা ঈশ্বরের পুত্র বলতে না পারে। তিনি সুস্পষ্টভাবে বললেন যে, তার শিষ্যরাও তারই মত ঈশ্বরের পুত্র। অর্থাৎ তারাও যেমন ঈশ্বরের প্রকৃত পুত্র নয়, বরং রূপক অর্থে ‘আল্লাহর বান্দা’ অর্থে ঈশ্বরের পুত্র, তিনিও ঠিক তেমনি রূপক অর্থে ‘আল্লাহর বান্দা’ অর্থে ঈশ্বরের পুত্র, প্রকৃত অর্থে নন। ঈশ্বর যেমন তাদের সকলের ঈশ্বর, ঠিক তেমনিভাবে তিনি তাঁরও ঈশ্বর এবং সকলেই ঈশ্বরের দাস অর্থে ঈশ্বরের পুত্র।

এখানে লক্ষণীয় যে, খৃস্টানদের বর্ণনা অনুসারে যীশু একথা বলেছেন মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হওয়ার পরে স্বর্গারোহণের কিছু আগে। এথেকে প্রমাণিত হয় যে, স্বর্গারোহণের পূর্ব পর্যন্ত আজীবনই তিনি নিজেকে ‘আল্লাহর বান্দা’ বা ‘ঈশ্বরের দাস’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং ‘ঈশ্বরের পুত্র’ পরিভাষাটি এ অর্থেই ব্যবহার করেছেন। এর সাথে কুরআনের বর্ণনা মিলে যায়। সূরা আল-ইমরানের ৫১ আয়াতের বর্ণনায় ঈসা আলাইহিস সালাম বলেন: ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার প্রভু ও তোমাদের প্রভু।’’ সূরা মায়িদার ৭২ ও ১১৭ আয়াতের বর্ণনায় তিনি বলেন: ‘‘তোমরা আমার প্রভু ও তোমাদের প্রভু আল্লাহর ইবাদত কর...।’’ সূরা মরিয়মের ৩৬ আয়াতের বর্ণনায় তিনি বলেন: ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার প্রভু ও তোমাদের প্রভু, অতএব তোমরা তার ইবাদত কর।’’ সূরা যুখরুফের ৬৪ আয়াতের বর্ণনায় তিনি বলেন: ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার প্রভু ও তোমাদের প্রভু, অতএব তোমরা তার ইবাদত কর।’’

এভাবে আমরা দেখছি যে, যীশু সর্বশেষ যে কথাগুলি বলেছেন এবং তার ঊর্ধ্বারোহণের পূর্বমুহূর্তে শিষ্যদেরকে যে শিক্ষা দিয়েছেন তার সাথে ত্রিত্ববাদ এবং যীশুর ঈশ্বরত্বের দাবি সাংঘর্ষিক। তিনি সেই সর্বশেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর শিষ্যদেরকে আল্লাহর একত্ববাদ এবং তিনি নিজেও যে তাঁদেরই মত আল্লাহর বান্দা তা শিক্ষা দিয়েছেন।

ষষ্ঠ বাক্য: সুসমাচারগুলিতে অগণিত স্থানে যীশু বলেছেন যে, তিনি মানুষের সন্তান বা ‘মনুষ্যপুত্র’ (son of man)। [হিব্রু বা সেমিটিক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রভু অর্থে ঈশ্বরকে ‘পিতা’ বলার প্রচলন ছিল। তেমনিভাবে মানুষদেরকে বা ঈশ্বরের প্রিয় মানুষদেরকে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ বলার প্রচলন ছিল। এই অর্থে যীশুও ঈশ্বরকে পিতা বলতেন। তবে মানুষ যেন অতিভক্তির কারণে তাকে প্রকৃত অর্থে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ বলে শির্ক বা অংশীবাদিতায় নিপতিত না হতে পারে, এজন্য তিনি নিজেকে সর্বদা ‘মনুষ্য পুত্র’ বলে আখ্যায়িত করতেন। কারণ, বাইবেলে বারংবার ‘‘মনুষ্যপুত্র’’ বা মানুষের পুত্র বলতে মানুষ বুঝানো হয়েছে। উপরন্তু বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর মানুষ নন এবং মনুষ্যপুত্রও নন। দেখুন গণনা পুস্তক ২৩/১৯।] তিনি যে মানুষ মাত্র তা বুঝাতেই তিনি তা বলেছেন; কারণ মনুষ্য পুত্র মানুষ ছাড়া আর কিছুই হতে পারেন না। এছাড়া তিনি বারংবার বলেছেন যে, তিনি আচার্য বা শিক্ষক, তিনি প্রেরিত-রাসূল, তিনি নবী বা ভাববাদী। নমুনা হিসেবে পাঠক নিম্নের শ্লোকগুলি দেখতে পারেন: মথি ১০/৪০, ১১/১৯, ১৩/৫৭, ১৫/২৪, ১৭/১২, ২২, ১৯/১৬, ২১/১১, ৪৬, ২৩/৮, ১০, ২৬/১৮; মার্ক ৯/৩৭, ৩৮, ১০/৩৫; লূক ৪/৪৩, ৫/৫, ৭/১৬, ৩৯, ৪০, ৮/২৪, ৪৫, ৯/৩৩, ৩৮, ৫৬, ১০/১৬, ১২/১৩, ১৩/৩৩, ৩৪, ১৭/১৩, ২৩/৪৭, ২৪/১৯; যোহন ১/৩৮, ৪/১৯, ৩১, ৩৪, ৫/২৩, ২৪, ৩৬, ৩৭, ৬/১৪, ২৫, ৭/১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ৫২, ৮/১৬, ১৮, ২৬, ২৮, ২৯, ৪০, ৪২, ৯/১১, ১৫, ১৭, ১১/৪২, ১২/৪৪, ৪৯, ৫০, ১৩/১৩, ১৪, ১৪/২৪, ১৭/৩, ৮, ১৮, ২৫, ২০/১৬, ২১।

এখানে সামান্য কয়েকটি শ্লোক উদ্ধৃত করছি। মথি ১০/৪০: ‘‘যে তোমাদিগকে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে; আর যে আমাকে গ্রহণ করে, সে যিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন তাকে (আমার প্রেরণকর্তাকে) গ্রহণ করে (he that receiveth me receiveth him that sent me)।’’

মথি ১৫/২৪: ‘‘তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষ ছাড়া আর কাহারো নিকটে আমি প্রেরিত হই নাই (I am not sent but unto the lost sheep of the house of Israel)।’’

মথি ২১/১১: ‘‘তাহাতে লোকসমূহ কহিল, উনি সেই ভাববাদী, গালীলের নাসরাতীয় যীশু।’’

মথি ২৩/৮ ও ১০: ‘‘তোমাদের গুরু (আচার্য) একজন তিনি খৃস্ট (one is your Master, even Christ)।’’

লূক ৪/৪৩: ‘‘কিন্তু তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, অন্য অন্য নগরেও আমাকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিতে হইবে; কেননা সেই জন্যই আমি প্রেরিত হইয়াছি।’’

লূক ৭/১৬: ‘‘তখন সকলে ভয়গ্রস্ত হইল, এবং ঈশ্বরের গৌরব করিয়া বলিতে লাগিল, ‘আমাদের মধ্যে একজন মহান ভাববাদীর (a great prophet) উদয় হইয়াছে, আর ‘ঈশ্বর আপন প্রজাদের তত্ত্বাবধান করিয়াছেন।’’

লূক ১০/১৬: ‘‘ যে তোমাদিগকে মানে, সে আমাকেই মানে, এবং যে তোমাদিগকে অগ্রাহ্য করে, সে আমাকেই অগ্রাহ্য করে, আর যে আমাকে অগ্রাহ্য করে, সে তাঁহাকেই অগ্রাহ্য করে, যিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন।’’

যোহন ৫/৩৬, ৩৭: ‘‘(৩৬) ... যে সকল কার্য আমি করিতেছি, সেই সকল আমার বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিতেছে যে, পিতা আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন। (৩৭) আর পিতা যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনিই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়াছেন; তাঁহার রব তোমরা কখনও শুন নাই, তাহার আকারও দেখ নাই।’’

যোহন ৬/১৪ শ্লোকে যীশুর অল্প খাদ্য দিয়ে অনেক মানুষকে খাওয়ানোর অলৌকিক চিহ্নের কথা উল্লেখের পরে বলা হয়েছে: ‘‘অতএব সেই লোকের তাঁহার কৃত চিহ্ন-কার্য দেখিয়া বলিতে লাগিল, উনি সত্যই সেই ভাববাদী যিনি জগতে আসিতেছেন (This is of a truth that prophet that should come into the world)।’’

যোহন ৭/১৫-১৭: ‘‘(১৫) তাহাতে যিহূদীরা আশ্চর্য জ্ঞান করিয়া কহিল, এ ব্যক্তি শিক্ষা না করিয়া কি প্রকারে শাস্ত্রজ্ঞ হইয়া উঠিল? (১৬) যীশু তাহাদিগকে উত্তর করিয়া কহিলেন, আমার উপদেশ আমার নহে, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাহার। (১৭) যদি কেহ তাঁহার ইচ্ছা পালন করিতে ইচ্ছা করে, সে এই উপদেশের বিষয়ে জানিতে পারিবে, ইহা ঈশ্বর ইহতে হইয়াছে, না আমি আপনা হইতে বলি।’’

যোহন ৮/১৮, ২৬, ২৯, ৪০, ৪২: ‘‘(১৮) আর পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। (২৬) যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি সত্য, এবং আমি তাঁহার নিকটে যাহা যাহা শুনিয়াছি, তাহাই জগৎকে বলিতেছি। (২৯) আর যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আমার সঙ্গে সঙ্গে আছেন, তিনি আমাকে একা ছাড়িয়া দেন নাই...। (৪০) কিন্তু ঈশ্বরের কাছে সত্য শুনিয়া তোমাদিগকে জানাইয়াছি যে, আমি, আমাকেই বধ করিতে চেষ্টা করিতেছ...। (৪২) আমি তো আপনা হইতে আসি নাই, কিন্তু তিনিই আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন।’’

যোহন ৯/১০, ১১, ১৭ শ্লোকে জন্মান্ধকে চক্ষু দান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে: ‘‘তখন তাহারা তাহাকে (জন্মান্ধকে) বলিল, তবে কি প্রকারে তোমার চক্ষু খুলিয়া গেল? (১১) সে উত্তর করিল, যীশু নামের একজন মানুষ (A man that is called Jesus) [কেরির বাংলা বাইবেলে: যীশু নামের সেই ব্যক্তি।] কাদা করিয়া আমার চক্ষুতে লেপন করিলেন...। (১৭) পরে তাহারা পুনরায় সেই অন্ধকে কহিল, তুমি তাহার বিষয়ে কি বল? কারণ সে তোমারই চক্ষু খুলিয়া দিয়াছে। সে কহিল তিনি ভাববাদী।’’

যোহন ১৩/১৩: ‘‘তোমরা আমাকে গুরু ও প্রভু বলিয়া সম্বোধন করিয়া থাক; আর তাহা ভালই বল, কেননা আমি সেই।’’

যোহন ১৪/২৪: ‘‘আর তোমরা যে বাক্য শুনিতে পাইতেছ, তাহা আমার নয়, কিন্তু পিতার, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন।’’

এ সকল বক্তব্যে এবং অনুরূপ অগণিত বক্তব্যে যীশু অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন যে, তিনি একজন মানুষ, শিক্ষাদাতা গুরু, একজন ভাববাদী ও আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত (রাসূল), তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত বাণী, কথা বা প্রত্যাদেশ বিশ্বস্ততার সাথে শিষ্যদেরকে শিক্ষা দেন, কোনো কিছু গোপন করেন না, তিনি যেভাবে আল্লাহর নিকট থেকে শুনেন সেভাবেই তা শিষ্যদেরকে শিক্ষা দেন এবং আল্লাহ তাঁর হাতে যে সকল অলৌকিক চিহ্ন-কার্য সম্পন্ন করান তা সবই একজন মানুষ ও প্রেরিত নবী বা ভাববাদী হিসেবে, তিনি এগুলি ঈশ্বর বা ঈশ্বরের প্রকৃত পুত্র হিসেবে এ সকল চিহ্ন-কার্য করেন নি।

সপ্তম বাক্য: মথি ২৬/৩৬-৪৬: ‘‘(৩৬) তখন যীশু তাঁহাদের সহিত গেৎশিমানী নামক এক স্থানে গেলেন, আর আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, আমি যতক্ষণ ঐখানে গিয়া প্রার্থনা করি, ততক্ষণ তোমরা এইখানে বসিয়া থাক। (৩৭) পরে তিনি পিতরকে এবং সিবদিয়ের দুই পুত্রকে সঙ্গে লইয়া গেলেন, আর দুঃখার্ত ও ব্যাকুল হইতে লাগিলেন। (৩৮) তখন তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, আমার প্রাণ মরণ পর্যনত দুঃখার্ত হইয়াছে; তোমরা এখানে থাক, আমার সঙ্গে জাগিয়া থাক। (৩৯) পরে তিনি কিঞ্চিৎ অগ্রে গিয়া উবুড় হইয়া পড়িয়া (fell on his face: সাজদা করিয়া) প্রার্থনা করিয়া কহিলেন, হে আমার পিতঃ, যদি হইতে পারে, তবে এই পানপাত্র আমার নিকট হইতে দূরে যাউক; তথাপি আমার ইচ্ছামত না হউক, তোমার ইচ্ছামত হউক। (৪০) পরে তিনি সেই শিষ্যদের নিকটে আসিয়া দেখিলেন, তাঁহারা ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন, আর তিনি পিতরেক কহিলেন, এ কি? এক ঘন্টাও কি আমার সঙ্গে জাগিয়া থাকিতে তোমাদের শক্তি হইল না? (৪১) জাগিয়া থাক, ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়; আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্বল। (৪২) পুনরায় তিনি দ্বিতীয় বার গিয়া এই প্রার্থনা করিলেন, হে আমার পিতঃ আমি পান না করিলে যদি ইহা দূরে যাইতে না পারে, তবে তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক। (৪৩) পরে তিনি আবার আসিয়া দেখিলেন, তাঁহারা ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন, কেননা তাঁহাদের চক্ষু ভারী হইয়া পড়িয়াছিল। (৪৪) আর তিনি পুনরায় তাহাদিগকে ছাড়িয়া গিয়া তৃতীয় বার পূর্বমত কথা বলিয়া প্রার্থনা করিলেন। (৪৫) তখন তিনি শিষ্যদের কাছে আসিয়া কহিলেন, এখন তোমরা নিদ্রা যাও, বিশ্রাম কর, দেখ, সময় উপস্থিত, মনুষ্যপুত্র পাপীদের হস্তে সমর্পিত হন। (৪৬) উঠ, আমরা যাই; এই দেখ, যে ব্যক্তি আমাকে সমর্পন করিতেছে, সে নিকটে আসিয়াছে।’’

এ বিষয়টি লূকলিখিত সুসমাচারের ২২/৩৯-৪৬ শ্লোকে আলোচনা করা হয়েছে। উপরের উদ্ধৃতিতে বর্ণিত যীশুর অবস্থা ও কথাবার্তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, তিনি ঈশ্বর ছিলেন না, বরং ঈশ্বরের দাস ও মানুষ ছিলেন। ঈশ্বর কি কখনো দুঃখার্ত, বেদনার্ত ও আকুল হতে পারেন? ঈশ্বর কি মৃত্যু বরণ করেন এবং অন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন? ঈশ্বর কি অন্য ঈশ্বরের কাছে এভাবে আকুল আবেগ ও কাতরতা নিয়ে প্রার্থনা করেন? কখনোই নয়। [খৃস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে যীশু ঈশ্বর ছিলেন, তাঁর রক্ত দিয়ে বিশ্ববাসীকে নরক থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই তিনি দেহ গ্রহণ করে এই বিশ্বে এসেছিলেন। তাহলে এই দুঃখ, বেদনা ও আহাজারির অর্থ কী? আর সম্ভব হলে এই পানপাত্র দূরীভুত করার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনারই বা অর্থ কী?!]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন