hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সংক্ষেপিত ইযহারুল হক্ক

লেখকঃ ড. মুহাম্মাদ আহমদ আব্দুল কাদির মালকাবী

১৫
১. ২. ৪. পবিত্র বাইবেলের পুস্তকগুলি ঐশী নয়
উপরের আলোচনা থেকে জ্ঞানী পাঠকের নিকট এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, খৃস্টানগণের নিকট বাইবেলের পুরাতন নিয়ম ও নতুন নিয়মের গ্রন্থগুলির কোনোটিরই কোনো মূল উৎস বা সূত্র পরম্পরা সংরক্ষিত নেই। এজন্য ইয়াহূদী-খৃস্টানগণের এ কথা দাবি করার সুযোগ নেই যে, ‘‘পবিত্র বাইবেল’’ নামে প্রচারিত পুস্তকসংকলনের পু্স্তকগুলি আসমানী, ঐশ্বরিক বা ঐশী পুস্তক বা ওহী, ইলহাম বা ঐশ্বরিক প্রেরণার (Divine Inspiration, Revelation) ভিত্তিতে লেখা পুস্তক। যদি কেউ তা দাবি করেন তবে তা ভিত্তিহীন ও বাতিল বলে প্রমাণিত হবে। উপরের আলোচনার পাশাপাশি নিম্নের বিষয়গুলি লক্ষ্য করুন:

(১) নতুন ও পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলিতে উল্লিখিত তথ্য ও বিবরণের মধ্যে অগণিত অর্থগত বৈপরীত্য রয়েছে। ইয়াহূদী-খৃস্টান গবেষক, পণ্ডিত ও ভাষ্যকারগণ এ সকল বৈপরীত্যের কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, দুই বা ততোধিক পরস্পর-বিরোধী বিবরণের একটি সত্য ও অন্যটি বা অন্যগুলি মিথ্যা ও জাল। ইচ্ছাকৃত বিকৃতি অথবা অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে এই মিথ্যা তথ্যটি পরিবেশিত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা এ সকল বৈপরীত্য ও পরস্পরবিরোধিতা সমন্বয়ের জন্য এমন অবাস্তব ও ফালতু কথা বলেছেন যা কোনো স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন বিবেক গ্রহণ করতে পারে না। ‘ঐশ্বরিক প্রেরণা’ বা প্রত্যাদেশ (Divine Inspiration/ Revelation)-লব্ধ কথায় কখনো এরূপ অর্থগত বৈপরীত্য ও ভুল থাকতে পারে না। ঐশী কথা ভুলের শত যোজন দূরে থাকবে।

বাইবেল ভাষ্যকার হর্ন তার বাইবেলের ব্যাখ্যাগ্রন্থে লিখেছেন যে, বাইবেলের লেখকগণ বা বাইবেলের বিভিন্ন পুস্তকের রচয়িতাদের প্রক্যেকের নিজ নিজ প্রকৃতি, অভ্যাস ও জ্ঞানবুদ্ধি অনুসারে লিখার অনুমতি ছিল। ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশের মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞানকে তারা প্রচলিত জ্ঞানের ন্যায় ব্যবহার করতেন। একথা কল্পনা করা যায় না যে, তারা যে সকল বিষয় লিখেছেন বা যে সকল বিধিবিধান প্রদান করেছেন সেগুলি সবই তারা ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশ বা প্রেরণার মাধ্যমে লাভ করেছিলেন।

হেনরী ও স্কট-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থের সংকলকগণ লিখেছেন যে, এ কথা মোটেও জরুরী নয় যে, একজন ভাববাদী (তার পুস্তকে) যা কিছু লিখেছেন তা সবই ঐশী প্রেরণা বা প্রত্যাদেশ হবে বা বাইবেলের (canonical text) অংশ হবে।

‘এনসাইক্লোপীডিয়া ব্রিটানিকা’-য় উল্লেখ করা হয়েছে যে, অনেক খৃস্টান পণ্ডিতই মনে করেন, বাইবেলের পুস্তকাবলির সকল কথা এবং সকল বর্ণনা ইলহাম বা ঐশ্বরিক প্রেরণা (Inspiration)-লব্ধ নয়। যারা বলেন যে, বাইবেলের পুস্তকাবলির মধ্যে উল্লিখিত সকল কথাই ঐশ্বরিক প্রেরণালব্ধ, তাদের জন্য এ দাবি প্রমাণ করা সহজ হবে না।

আব্রাহাম রীস (Abraham Rees) অনেক গবেষক পণ্ডিতের সমন্বয়ে দীর্ঘদিনের গবেষণায় (১৮০২-১৮২০ সালে) ৪৫ খণ্ডে একটি বিশ্বকোষ প্রকাশ করেন, যা রীস এনসাইক্লোপীডিয়া (New Cyclopaedia; or, Universal Dictionary of Arts and Sciences) নামে পরিচিত। এ বিশ্বকোষে লেখা হয়েছে:

বাইবেলের এ সকল পুস্তকের রচয়িতাদের কর্মে ও কথায় অনেক ভুলভ্রান্তি ও বৈপরীত্য রয়েছে। প্রাচীন খৃস্টানগণ প্রেরিতদেরকে ভুলভ্রান্তির ঊর্ধ্বে বা ঐশ্বরিক প্রেরণায় ভুলভ্রান্তি থেকে সংরক্ষিত বলে বিশ্বাস করতেন না; কারণ, কখনো কখনো তারা তাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন।

অনুরূপভাবে মার্ক, লূক ও অনুরূপ ব্যক্তিবর্গ, যারা যীশুর প্রেরিত শিষ্যগণের শিষ্য ছিলেন, তাদের রচিত পু্স্তকগুলির বিষয়েও অনেকেই মত প্রকাশ করেছেন যে, এগুলি ঐশ্বরিক প্রেরণা বা ইলহাম দ্বারা লিখিত পুস্তক নয়, এগুলি নিতান্তই মানবিক রচনা। এজন্য প্রটেস্ট্যন্ট সম্প্রদায়ের প্রসিদ্ধ ধর্মগুরুগণ মার্ক ও লূকের লেখা ইঞ্জিল ও লূকের লেখা প্রেরিতগণের কার্যবিবরণকে ইলহাম বা ঐশ্বরিক প্রেরণানির্ভর নয় বরং মানবীয় কর্ম বলে গণ্য করেছেন।

(২) প্রসিদ্ধ বাইবেল বিশারদ ও খৃস্টধর্ম গবেষক খৃস্টান পণ্ডিত মহাত্মা নরটন পণ্ডিত একহার্ন থেকে উদ্ধৃত করেছেন: খৃস্টান ধর্মের প্রথম অবস্থায় যীশুর অবস্থাদি বর্ণনার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা ছিল। একথা বলা যায় যে, এই পুস্তিকাটিই ছিল ‘মূল সুসমাচার’। যে সকল নতুন খৃস্টান খৃস্টের কথাবার্তা নিজের কানে শুনেন নি এবং তাঁর অবস্থাদি স্বচক্ষে দেখেন নি, সম্ভবত তাদের জন্য এই পুস্তিকাটি রচনা করা হয়েছিল। এই সুসমাচারটি একটি অতি সাধারণ সংকলনের আকৃতিতে ছিল। এতে যীশুর ঘটনাবলি সুশৃঙ্খল পরম্পরায় লিখিত ছিল না। [খৃস্টান গবেষকগণ প্রায় সকলেই একমত যে, মথি, মার্ক ও লূকের সুসমাচারের উৎস মূল একটি সংক্ষিপ্ত ‘সুসমাচার’। যাতে বিস্তারিত ঘটনাবলি কিছুই ছিল না। শুধু যীশুর বক্তব্যসমূহ তাতে সংকলিত ছিল। হারিয়ে যাওয়া এই মূল সুসমাচারটিকে খৃস্টান গবেষকগণ ‘কিউ’ (Q) বলে অভিহিত করেন। জার্মান (Quelle) শব্দ থেকে এই ‘কিউ’ অক্ষরটি নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ (source) বা উৎস। এতে ইস্টার, প্যাশন ইত্যাদি কিছুই ছিল না। যেহেতু এতে শুধু যীশুর বচন সংকলন করা হয়েছিল এজন্য গবেষকগণ একে (Logia) বলে অভিহিত করেন। দেখুন: The New Encyclopedia Britannica, 15th Edition, Vol-10, Jesus Christ, p 146.]

এ সুসমাচারটিই ছিল প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীতে প্রচলিত সকল ‘সুসমাচারের’ মূল উৎস। মথি, মার্ক ও লূকের উৎসও ছিল এই সুসমাচারটি। এ তিনটি ছাড়া আরো অনেক সুসমাচার এ সময়ে লেখা হয়। এ সকল সুসমাচার পরবর্তী মানুষদের হাতে পড়ে। তারা এগুলির মধ্যে অপূর্ণতা অনুভব করেন এবং বিভিন্ন সংযোজন ও বিয়োজনের মাধ্যমে অপূর্ণতা পূর্ণ করতে থাকেন। এভাবে সংযোজন ও সংমিশ্রণের ফলে সুসমাচারগুলিতে সত্য এবং মিথ্যা সংমিশ্রিত হয়ে গিয়েছে। অনুরূপভাবে সত্য ঘটনার সাথে দীর্ঘ বানোয়াট কাহিনীগুলি সংমিশ্রিত হয়ে একটি অত্যন্ত কদর্য চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। এই কাহিনীগুলি যতবারই এক মুখ থেকে অন্য মুখে গিয়েছে, ততবারই তাতে নতুন অপছন্দনীয় সংযোজন যুক্ত হয়েছে। আবর্তনের পরিমাণে অসংলগ্ন সংযোজন বেড়েছে।

একারণে দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষে অথবা তৃতীয় শতাব্দীর শুরুতে খৃস্টীয় চার্চ সত্য সুসমাচার সংরক্ষণের জন্য সচেষ্ট হয়। সে সময়ে প্রচলিত ৭০টিরও অধিক ইঞ্জিল বা সুসমাচারের মধ্য থকে এ চারটি ইঞ্জিল বাছাই করে। খৃস্টীয় চার্চ চায় যে, মানুষেরা অন্য সকল প্রচলিত সুসমাচার বাদ দিয়ে শুধু এই চারটিই মেনে চলে। প্রাচীন প্রচারকদের প্রচারকার্যের সত্যতা প্রমাণের জন্য যে মূল সুসমাচারটি সংকলন করা হয়েছিল, যদি চার্চ সেই মূল সুসমাচারটি সকল সংযোজন ও বৃদ্ধি থেকে মুক্ত করে প্রকাশ করত তবে পরবর্তী প্রজন্মগুলি তাদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকতো। কিন্তু এ কাজটি তাদের জন্য কঠিন ছিল। কারণ ইঞ্জিলের পাণ্ডুলিপিগুলির মধ্যে এরূপ সংযোজন ছিল খুবই বেশি এবং একটি পাণ্ডুলিপিও এইরূপ বৃদ্ধি ও সংযোজন থেকে মুক্ত ছিল না। ফলে সংযোজন থেকে মূল বক্তব্য পৃথক করা তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে যায়।

প্রাচীন যুগের অধিকাংশ ধর্মবেত্তা পণ্ডিতই প্রচলিত এ সুসমাচারগুলির অনেক অংশ সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু তারা তা বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করতে পারেন নি। সে যুগে প্রেস বা মুদ্রণ-যন্ত্র ছিল না। একটি পাণ্ডুলিপি একজন মানুষের মালিকানাধীন। প্রত্যেক মালিক তার পাণ্ডুলিপিটির মধ্যে তার নিজের পক্ষ থেকে ইচ্ছামত কিছু বক্তব্য বা গল্পকাহিনী সংযোজন করতেন বা পুস্তকের মূল পাঠের নীচে বা পার্শ্বে লিখে রাখতেন। এরপর যখন এ পাণ্ডুলিপি থেকে অনেক কপি করা হতো, তখন এ কপিগুলি শুধু মূল লেখকের কথাই কপি করছে, না সংযোজিত বাক্যগুলিও কপি করছে তা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হতো না। অনেক ধর্মগুরু পণ্ডিত কঠিনভাবে অভিযোগ করেছেন যে, তাদের লেখা বইগুলি কিছুদিনের মধ্যেই লিপিকার ও পাণ্ডুলিপির মালিকেরা বিকৃত করে ফেলেছে। তারা অভিযোগ করতেন যে, শয়তানের শিষ্যরা এগুলির মধ্যে অপবিত্র কথা সংযোজন করেছে, কিছু বিষয় বের করে দিয়েছে এবং তাদের নিজেদের পক্ষ থেকে কিছু বিষয় সংযোজন করে। এভাবে পবিত্র পুস্তকগুলির মূল রূপও সংরক্ষিত থাকে নি। ফলে এগুলি ‘‘ঐশ্বরিক’’, ‘‘ঐশী’’ বা ঐশ্বরিক প্রেরণাভিত্তিক গ্রন্থ বলে গণ্য হওয়ার যোগ্যতা হারায়।

তৎকালীন মানুষদের মধ্যে এরূপ সংযোজনের অভ্যাসের বড় প্রমাণ যে, সে যুগের খৃস্টান লেখকগণের রীতি ছিল, তাদের লিখনির মধ্যে কেউ যেন কোনো বিকৃতি না করে সে বিষয়ে তারা কঠিন প্রতিজ্ঞা ও অভিশাপের ঘোষণা দিতেন।

যীশুর ইতিহাসের ক্ষেত্রেও এ বিষয়ই ঘটেছে। এ বিকৃতি ও সংযোজন এরূপ প্রসিদ্ধি লাভ করে যে, রোমান পণ্ডিত সিলসূস অভিযোগ করেন, তারা তিনবার বা চারবার বা তার বেশি বার তাদের সুসমাচারগুলিকে পরিবর্তন করেছে।

এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তৎকালীন মানুষদের গবেষণা ও চুলচেরা বিশ্লেষণের কোনো আগ্রহ ও মানসিকতা ছিল না। খৃস্টীয় ইতিহাসের শুরু থেকেই মানুষেরা তাদের কাছে সংরক্ষিত ওয়াজ-উপদেশের বাক্যাবলি এবং যীশুর বিভিন্ন ঘটনাবলি নিজেদের জ্ঞানানুসারে পরিবর্তন পরিবর্ধন করতেন। প্রথম প্রজন্মের খৃস্টানগণই এ অভ্যাস চালু করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মেও তা অব্যাহত থাকে। দ্বিতীয় শতাব্দীতে এই অভ্যাস অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ছিল। ফলে খৃস্টধর্মের বিরোধীরাও বিষয়টি অবগত ছিলেন। দ্বিতীয় শতকের শেষে ক্লীমেন্স (Clement of Alexandira) উল্লেখ করেছেন যে, কিছু মানুষের কর্মই ছিল সুসমাচারগুলি বিকৃত করা।

একহার্নের বক্ত্যবের উপর মন্তব্য করে নর্টন বলেন: কেউ যেন মনে না করে যে, এ মতটি একহার্নের একার মত। অনেক সমসাময়িক জার্মান গবেষকই একহার্নের সাথে একমত। এ সাতটি স্থান সংযোজিত ও ঐশ্বরিক প্রেরণা-লব্ধ নয় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া তিনি উল্লেখ করেছেন যে, যীশুর অলৌকিক চিহ্নসমূহ উল্লেখ করার ক্ষেত্রে মিথ্যা কথা সংযোজন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন যে, সত্যকে মিথ্যা থেকে বাছাই করা বর্তমান যুগে খুবই কঠিন।

প্রিয় পাঠক, যে পুস্তকের মধ্যে সত্যের সাথে মিথ্যা মিশ্রিত হয়ে গিয়েছে তাকে কি ‘ঐশ্বরিক’ বা ইলহাম-প্রাপ্ত পু্স্তক (Divine Scripture) বলা যায়? ইয়াহূদী-খৃস্টান কারো কি এ অধিকার আছে যে, বাইবেলের সকল পুস্তককে ঐশ্বরিক, ইলহাম-প্রাপ্ত বা আসমানী কিতাব বলে দাবি করবেন? অথবা এ সকল পুস্তকের সকল তথ্য ও বর্ণনাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত বলে দাবি করবেন? [খৃস্টান পন্ডিতগণ অনেক সময় সুসমচারগুলির বিশুদ্ধতার প্রমাণ হিসেবে বলেন যে, ১০৪ খৃস্টাব্দে মৃত রোমের বিশপ ক্লীমেন্ট (Clement) ও ১০৭ খৃস্টাব্দে নিহত এন্টিয়কের দ্বিতীয় বিশপ ইগনাটিয়াস (Ignatius)-এর চিঠিপত্রের মধ্যে দু-একটি বাক্য রয়েছে, যে বাক্যগুলি এ সকল সুসমাচারের মধ্যে বিদ্যমান। এতে প্রমাণিত হয় যে, এ সকল সুসমাচার তাদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। বড় উদ্ভট প্রমাণ! তারা কখনোই এ সকল সুসমাচারের নাম উল্লেখ করেন নি, এগুলি থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন তাও বলেন নি। সর্বপ্রথম এ সকল সুসমাচারের ‘‘নাম’’ শুনা যায় দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষে। আরিনূস (১৩০-২০০খৃ)-এর লিখনিতে সর্বপ্রথম প্রথম তিন সুসমাচারের উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু এ ‘‘উল্লেখ’’ বর্তমানে বিদ্যমান সুসমাচারের বিশুদ্ধতার প্রমাণ নয়। তার এবং পরবর্তীদের কথা থেকে বুঝা যায় যে, দ্বিতীয় শতকের শেষে এ নামে কয়েকটি পুস্তক প্রচারিত ছিল। এমন একজন ব্যক্তির অস্তিত্বও পাওয়া যায় না যিনি বলেছেন যে, মথি, মার্ক, লূক, যোহন, পিতর, যাকোব বা অমুক... এ সুসমাচারটি বা পত্রটি লিখেছেন, অমুক ব্যক্তি তার নিকট থেকে পূর্ণ সুসমাচারটি বা পত্রটি শুনেছিলেন বা পড়ে নিয়েছিলেন, তাঁর নিকট থেকে অমুক ব্যক্তি তা পড়েছিলেন, শুনেছিলেন বা অনুলিপি তৈরি করেছিলেন... তার নিকট থেকে আমি তা শুনেছি বা অনুলিপি তৈরি করেছি। প্রায় ২০০ বৎসর পর্যন্ত এরূপ কোনো সূত্র পরম্পরা নতুন নিয়মের কোনো একটি পুস্তক বা পত্রেরও নেই। প্রায় দুই শতাব্দী পরে এসে বলা হচ্ছে যে, এই সুসমাচারটি মথির লেখা, এই সুসমাচারটি মার্কের লেখা.... ইত্যাদি। তিনি আদৌ লিখেছেন কিনা, লিখলে কতটুকু লিখেছিলেন তা কিছুই জানা যাচ্ছে না। বড় অবাক লাগে যে, প্রথম যুগের খৃস্টানগণ সবচেয়ে অবহেলা করেছেন তাদের ধর্মগ্রন্থের প্রতি। প্রথম দুই শতাব্দীতে প্রথম দুই তিন প্রজন্মের খৃস্টানগণ অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে বিভিন্ন দেশে যীশুর বাণী ও বিশ্বাস প্রচার করেছেন, কিন্তু কেউই যীশুর শিক্ষা বা সুসমাচারের কোনো লিখিত রূপ সংরক্ষণ করেন নি বা সাথে রাখেন নি। সবাই যা শুনেছেন বা বুঝেছেন তাই নিজের মনমত প্রচার করেছেন। প্রথম শতাব্দীর মধ্যেই যিরুশালেম, রোম, আলেকজেন্দ্রিয়া, এন্টিয়ক ইত্যাদি এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে খৃস্টান চার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বিশপ নিযুক্ত হয়েছে। স্বভাবতই প্রত্যেক চার্চে অন্তত কয়েক কপি ‘সুসমাচার’ থাকার কথা ছিল, প্রত্যেক খৃস্টানের নিকট না হলেও হাজার হাজার খৃস্টানের মধ্যে অনেকের কাছেই ধর্মগ্রন্থ থাকার কথা ছিল। কিন্তু প্রকৃত বিষয় ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ সকল বিশপের অনেকের অনেক চিঠি বা বই এখনো সংরক্ষিত আছে। তাতে অনেক উপদেশ রয়েছে। কিন্তু তাতে এ সকল সুসমাচারের কোনো উল্লেখ নেই। ২০০ বৎসর পর্যন্ত কোনো চার্চে কোনো সুসমাচার সংরক্ষিত রাখা বা পঠিত হওয়া তো দূরের কথা এগুলির কোনো উল্লেখই পাওয়া যায় না। এ সময়ের মধ্যে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন, অনেক কথা লিখেছেন, সবই ব্যক্তিগত পর্যায়ে ছিল। কেউই তাকে ঐশ্বরিক প্রেরণা নির্ভর বলে মনে করেন নি। নইলে প্রথম শতকের শেষভাগে মথি, মার্ক, লূক বা যোহন তার সুসমাচার লিখে সকল বিশপের নিকট পাঠিয়ে দিতে পারতেন এই বলে যে, ইশ্বরের প্রেরণায় আমি এই সুসামাচর লিখলাম। একে মান্য করতে হবে।... কখনোই তারা তা করেন নি। ৩০০ বৎসর পরে এ সব অগণিত পুস্তকের মধ্য থেকে তৎকালীণ ধর্মগুরুগণ নিজেদের মর্জি মাফিক কিছু পুস্তক পছন্দ করে তাকে বিশুদ্ধ বা ক্যাননিক্যাল বলে মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন