মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
দ্বিতীয় খৃস্টীয় শতকের একজন পৌত্তলিক পণ্ডিত ছিলেন সেলসাস (Celsus Epicurean)। তিনি খৃস্টধর্মের প্রতিবাদে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। প্রসিদ্ধ জার্মান খৃস্টান-পণ্ডিত একহর্ন এ পৌত্তলিক পণ্ডিতের পুস্তক থেকে তাঁর নিম্নের বক্তব্যটি উদ্ধৃত করেছেন: ‘‘খৃস্টানগণ তাদের সুসমাচারগুলি তিনবার বা চারবার বা তারও বেশিবার কঠিনভাবে পরিবর্তন করেছে, এমনকি সেগুলির বিষয়বস্তুও পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে।’’
সম্মানিত পাঠক, তাহলে লক্ষ্য করুন, এই পৌত্তলিক পণ্ডিত জানাচ্ছেন যে, তাঁর যুগেই খৃস্টানগণ চার বারেরও বেশি বিকৃত করেছেন তাঁদের সুসমাচারগুলিকে।
(২) আধুনিক পণ্ডিত পার্কারের মত:
ঊনবিংশ শতকের প্রসিদ্ধ আমেরিকান সংস্কারক ও পাদরী থিয়োডোর পার্কার (Theodore Parker: ১৮৬০)। চার্চ নিয়ন্ত্রিত খৃস্টানদের দৃষ্টিতে তিনি ধর্মদ্রোহী (Heretic)। তিনি বলেন: ‘‘বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান ভুল ও বিকৃতি- যাকে খৃস্টান পণ্ডিতগণ ভুল, পাঠের বিভিন্নতা (erratum, Various readings/Variety of reading) ইত্যাদি বলে অভিহিত করেন- এরূপ ভুলের সংখ্যা মিলের হিসাব অনুযায়ী ত্রিশ হাজার।
(৩) প্রায় একশত জাল ইঞ্জিল
একজন চার্চবিরোধী খৃস্টান পণ্ডিত বাইবেলের নতুন নিয়মের অন্তর্ভুক্ত পুস্তক ও পত্রাবলি ছাড়াও প্রাচীন খৃস্টান ধর্মগুরুগণ যীশুখৃস্ট, তাঁর মাতা মেরি বা তাঁর প্রেরিত শিষ্যগণ বা তাদের অনুসারিগণের নামে প্রচারিত পুস্তক ও পত্রের নাম উল্লেখ করে তালিকা তৈরি করেন। তাতে তিনি এরূপ ৭৪টি জাল ইঞ্জিল বা পত্রের নাম উল্লেখ করেছেন।
এরপর তিনি বলেন, এভাবে আমরা ‘সুসমাচার’, ‘প্রকাশিত বাক্য’ ও পত্রাবলির এক সুবিশাল ভান্ডার দেখতে পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত অধিকাংশ খৃস্টান মনে করেন যে, এ সকল পুস্তকের অধিকাংশই সত্যিকারেই উল্লিখিত লেখকদের রচনা। তাহলে প্রটেস্টান্ট সম্প্রদায় যে পুস্তক বা পত্রগুলিকে মেনে নিয়েছেন সেগুলিই যে সত্যিকারের ঐশ্বরিক প্রেরণালব্ধ পুস্তক তা আমরা কিভাবে জানব? এছাড়া আমার জানি যে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হওয়ার আগে এ সকল ‘স্বীকৃত’ পুস্তকও বিকৃতি, পরিবর্তন ও সংযোজনের জন্য উন্মুক্ত ছিল। এতে সমস্যা আরো ঘনীভুত হয়।
দ্বিতীয়ত: অ-গোঁড়া (heretic) খৃস্টানগণের মতামত
(১). প্রথম শতাব্দী থেকে এবোনাইট খৃস্টানগণের মত
প্রথম যুগের অত্যন্ত প্রসিদ্ধ খৃস্টান সম্প্রদায় এবোনাইট সম্প্রদায় (Ebionites)। তাঁর পৌলের সমসাময়িক ছিলেন এবং পৌলের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তাঁরা বলতেন যে, পৌল ধর্মত্যাগী। [এবোনাইট খৃস্টানগণ যীশুর ঈশ্বরত্ব অস্বীকার করতেন। তাঁরা যীশুকে অন্য দশজন মানুষের মতই একজন মানুষ ও ভাববাদী বলে বিশ্বাস করতেন। তাঁদের মতে যীশুর নির্দেশ অনুসারে খৃস্টানদের জন্যও ‘মোশির ব্যবস্থা’ বা মূসার শরীয়ত পালন করা আবশ্যকীয়। পৌলই সর্বপ্রথম মোশির ব্যবস্থা রহিত করে দেন। তিনি দাবি করেন যে, শুধু বিশ্বাসেই মুক্তি; কাজেই ব্যবস্থা বা শরীয়ত পালন করা উচিত নয়। যে শরীয়ত বা ব্যবস্থা পালন করবে সে যীশুর প্রেম বা দয়া লাভ করতে পারবে না... ইত্যাদি। এজন্য এবোনাইট খৃস্টানগণ পৌলকে ধর্মত্যাগী বলে গণ্য করেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে কর্মহীন ভক্তির মূল্য বেশী। এজন্য শেষ পর্যন্ত পৌলীয় ধর্মই প্রসার লাভ করে।] এই সম্প্রদায়ের খৃস্টানগণ মথির সুসমাচারটি বিশ্বাস করতেন। কিন্তু তাঁদের নিকট সংরক্ষিত মথিলিখিত সুসমাচারটির সাথে বর্তমানে পৌলের অনুসারী খৃস্টানগণের নিকট প্রচলিত ‘মথিলিখিত সুসমাচারের’ অনেক স্থানেই মিল নেই। প্রচলিত ‘মথি’-র প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায়দ্বয় তাঁদের ‘মথি’র মধ্যে ছিল না। এবোনাইটদের মতে এ দু অধ্যায় ও অন্যান্য অনেক স্থানে অনেক কথা জাল ও বানোয়াট। তারা যীশুর ঈশ্বরত্বে বিশ্বাস করত না; বরং তাঁকে মানুষ ও রাসূল বলে বিশ্বাস করত।
(২). দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে মারসিওনীয় খৃস্টানগণের মত
দ্বিতীয় খৃস্টীয় শতকের প্রসিদ্ধ আধ্যাত্মবাদী (Gnostic) খৃস্টান সম্প্রদায় ‘মারসিওনীয় সম্প্রদায় [আধ্যাত্মবাদি গুরু মারসিওনের (Marcion) অনুসারী।]’। তাঁরা পুরাতন নিয়মের কোনো পুস্তকই মানতেন না। তাঁরা বলতেন যে, এগুলি কোনোটিই ঐশ্বরিক প্রেরণা-লব্ধ পুস্তক নয়। অনুরূপভাবে তাঁরা নতুন নিয়মের সকল পুস্তক অস্বীকার করতেন। কেবল লূকলিখিত সুসমাচার এবং পৌলের পত্রাবলি থেকে ১০টি পত্র তাঁরা ঐশ্বরিক বলে মানতেন। আর তাঁদের স্বীকৃত এ সুসমাচার ও পত্রাবলিও বর্তমানে প্রচলিত সুসমাচার ও পত্রাবলি থেকে ভিন্ন। লূকের সুসমাচারের প্রথম দুটি অধ্যায়কে তারা জাল বলে গণ্য করত। এছাড়াও এ সুসমাচারের আরো অনেক বিষয় তারা অস্বীকার করত। লার্ডনার তাঁর ব্যাখ্যাগ্রন্থে এরূপ ১৪টি স্থানের কথা উল্লেখ করেছেন। বেল উল্লেখ করেছেন যে, এ খৃস্টান সম্প্রদায় দুটি ঈশ্বরে বিশ্বাস করত: একজন মঙ্গলের ঈশ্বর ও অন্যজন অমঙ্গলের ঈশ্বর। তারা বিশ্বাস করত যে, তাওরাত ও পুরাতন নিয়মের সকল পুস্তক অমঙ্গলের ঈশ্বরের প্রদত্ত; কারণ তা নতুন নিয়মের বিপরীত।
(৩) তৃতীয়-চতুর্থ শতাব্দী থেকে মানিকীয সম্প্রদায়ের মত
তৃতীয় খৃস্টীয় শতকের প্রসিদ্ধ ধর্ম প্রচারক মানী (Manes/Mani) ও তাঁর অনুসারী মানিকীয সম্প্রদায় (Manichees/ Manichaen/ Manichean) নিজেদেরকে খৃস্টের অনুসারী ও খৃস্টান বলে দাবি করতেন। এ সম্প্রদায়ের একজন প্রসিদ্ধ অস্ট্রীয় পণ্ডিত ফাস্টিস। তিনি চতুর্থ শতাব্দীর মানুষ। তিনি ইঞ্জিলগুলির বিকৃতির বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন। লার্ডনার তাঁর ব্যাখ্যাগ্রন্থে চতুর্থ শতকের প্রসিদ্ধতম খৃস্টান পণ্ডিত সেন্ট অগাস্টাইনের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, ফাস্টিস বলেন: আপনাদের পিতা ও পিতামহগণ ষড়যন্ত্র করে নতুন নিয়মের পুস্তকাবলির মধ্যে যে সকল বিষয় সংযোজন করেছেন আমি সেগুলির নিন্দা করি ও প্রত্যাখ্যান করি। এরূপ জালিয়াতির মাধ্যমে তাঁরা নতুন নিয়মের সুন্দর অবস্থাকে দুষিত ও ত্রুটিময় করেছেন এবং তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব নষ্ট করেছেন। আর এ কথা তো সুনিশ্চিত যে, খৃস্ট বা তাঁর প্রেরিত শিষ্যগণের কেউই নতুন নিয়ম রচনা করেন নি বরং একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তা রচনা করে প্রেরিতগণ ও প্রেরিতগণের সঙ্গীদের নামে চালিয়েছে। কারণ এই অজ্ঞাতনামা লেখক ভয় পেয়েছিল যে, সাধারণ মানুষেরা তাঁর লেখা পুস্তক গ্রহণ করবেন না। তারা ভাববেন যে, এ লেখক যীশুর যে সকল বিবরণ লিখেছেন সেগুলি প্রত্যক্ষ করে বা ভালভাবে জেনে লিখে নি। এ ভয়ে সে বইগুলি লিখে প্রেরিতগণ বা তাঁদের শিষ্যগণের নামে চালিয়েছে। এ অপকর্মের মাধ্যমে লোকটি যীশুর অনুসারী ও প্রেমিকগণকে অত্যন্ত কঠিন কষ্ট দিয়েছে। কারণ সে অগণিত ভুল ও বৈপরীত্যে ভরা কিছু বই লিখেছে।
এ হলো নতুন নিয়ম সম্পর্কে এই সম্প্রদায়ের বিশ্বাস। তাঁদের এই পণ্ডিত যে বিষয়গুলি উল্লেখ করেছেন সেগুলির অন্যতম:
(১) ত্রিত্ববাদী খৃস্টানগণ নতুন নিয়মের মধ্যে অনেক কিছু সংযোজন ও জালিয়াতি করেছেন।
(২) এ পুস্তকগুলি প্রেরিতগণ বা তাদের সঙ্গীদের রচিত নয় বরং একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি সেগুলি রচনা করেছেন।
(৩) এগুলি অগণিত ভুল ও বৈপরীত্যে পূর্ণ।
লার্ডনার তার বাইবেল-ব্যাখ্যাগ্রন্থে লিখেছেন যে, ঐতিহাসিকগণ একমত যে, মানিকীয সম্প্রদায় পুরাতন নিয়মের কোনো পুস্তককেই স্বীকার করত না; উপরন্তু তারা বিশ্বাস করত যে, শয়তান মূসা আলাইহিস সালাম-এর সাথে কথা বলেছিল এবং ইয়াহূদী নবীগণকে প্রবঞ্চনা করেছিল। তারা ইয়াহূদী নবীগণকে চোর ও দস্যু বলে আখ্যায়িত করত। [যোহনলিখিতি সুসমাচারের ১০ অধ্যায়ের ৮ম শ্লোকে যীশু বলেন: ‘‘যাহারা আমার পূর্বে আসিয়াছিল, তাহারা সকলে চোর ও দস্যু, কিন্তু মেষেরা তাহাদের রব শুনে নাই।’’ খৃস্টের এই কথার ভিত্তিতেই তাঁরা এভাবে পূর্ববর্তী ভাববাদিগণকে ‘চোর ও দস্যু’ বা শয়তান কর্তৃক প্রতারিত ও প্রবঞ্চিত বলে বিশ্বাস করত।]
উপরের দুইটি অনুচ্ছেদ থেকে একথা প্রমাণিত হলো যে, অ-খৃস্টানগণ এবং এবং খৃস্টানগণের মধ্যে অনেক সম্প্রদায়, যাদেরকে গোঁড়া খৃস্টানগণ অ-ধার্মিক বা বিভ্রান্ত বলে মনে করেন তাঁরা সেই প্রথম শতাব্দী থেকে আজ পর্যন্ত উচ্চরবে ঘোষণা দিচ্ছেন যে, বাইবেলের মধ্যে বিকৃতি ও জালিয়াতি ঘটেছে।
তৃতীয়ত: প্রসিদ্ধ গোঁড়া খৃস্টানগণের মতামত
তৃতীয় পর্যায়ে আমরা বাইবেলের বিকৃতির বিষয়ে মূলধারার গোঁড়া খৃস্টান সম্প্রদায়ের নিকট গ্রহণযোগ্য ও প্রসিদ্ধ বাইবেল ব্যাখ্যাকার ও ঐতিহাসিকদের বক্তব্য উদ্ধৃত করব। বস্তুত বাইবেলের বিকৃতির বিষয়ে প্রায় সকল খৃস্টান গবেষকই একমত। কিন্তু খৃস্টধর্ম প্রচারকগণ এগুলি গোপন করার চেষ্টা করেন। এখানে সামান্য কয়েকটি নমুনা উল্লেখ করা হচ্ছে:
(ক) আদম ক্লার্ক তাঁর ব্যাখ্যাগ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ৩৬৯ পৃষ্ঠায় বলেন: ‘‘প্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত রীতি হলো, অনেকেই মহান ব্যক্তিদের ইতিহাস রচনা করেন। প্রভু যীশুর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা ছিল (অনেকেই তাঁর ইতিহাস রচনা করেছেন।) কিন্তু তাঁদের অধিকাংশ বর্ণনা ছিল অসত্য। অনেক বিষয় যা কখনোই ঘটেনি সেগুলি নিশ্চিত ঘটেছে বলে তাঁরা উল্লেখ করেছেন। অন্য অনেক ঘটনা ও অবস্থার বর্ণনায় তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করেছেন। এ কথা সুপ্রমাণিত ও সুনিশ্চিত যে, প্রথম খৃস্টীয় শতাব্দীতে অনেক মিথ্যা সুসমাচার প্রচলিত ছিল। সত্তরেরও বেশি এরূপ মিথ্যা সুসমাচারের উল্লেখ পাওয়া যায়। এ সকল সুসমাচারের অনেক অংশ এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। ফ্যাবারিসিয়াস এসকল মিথ্যা সুসমাচার একত্রে সংকলন করে তিন খণ্ডে মুদ্রণ করেছেন।
(খ) পুরাতন নিয়মের প্রথম পাঁচটি পুস্তক মোশির রচিত বলে বর্তমানে প্রসিদ্ধ। এছাড়াও আরো ছয়টি পুস্তক তাঁর রচিত বলে প্রচারিত ও পরিচিত ছিল। পুস্তকগুলির নাম নিম্নরূপ:
মোশির নিকট প্রকাশিত বাক্য।
ক্ষুদ্র আদিপুস্তক (Genesis Apocryphon)।
উর্ধ্বারোহণ পুস্তক (The Assumption of Moses)।
রহস্য পুস্তক।
প্রতিজ্ঞা বা নিয়ম পুস্তক (Testament)।
স্বীকৃতি পুস্তক।
হর্ন বলেন: ‘‘ধারণা করা হয় যে, খৃস্টধর্মের শুরুর দিকে, অর্থাৎ খৃস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে এ সকল জাল পুস্তকগুলি রচনা করা হয়েছে।’’
(গ)ঐতিহাসিক মোশিম বলেন: প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকদের মধ্যে একটি কথা প্রসিদ্ধ ছিল। কথাটি হলো: ‘সত্যের বৃদ্ধির জন্য ও ঈশ্বরের উপাসনার জন্য মিথ্যা এবং প্রবঞ্চনা শুধু বৈধ-ই নয় উপরন্তু তা প্রশংসনীয় বলে গণ্য হওয়ার যোগ্য।’ খৃস্টের আগমনের পূর্বেই এই কথাটি তাঁদের থেকে প্রথমে মিসরের ইয়াহূদীরা শিক্ষালাভ করে। অনেক প্রাচীন পুস্তক থেকে এ কথা নিশ্চিতরূপে জানা যায়। এরপর এ ঘৃণিত মহামারী খৃস্টানগণের মধ্যে প্রভাব ফেলে। মহান ধর্মগুরুদের নামে জালিয়াতি করে প্রচারিত বিপুল সংখ্যক পুস্তক থেকে এ কথা স্পষ্টরূপে বুঝা যায়।’’
তাহলে আমরা জানতে পারছি যে, খৃস্টের পূর্বেই ইয়াহূদীদের নিকট মিথ্যা ও প্রবঞ্চনা ধর্মীয়ভাবে প্রসংশনীয় কর্মে পরিণত হয়। এরপর দ্বিতীয় খৃস্টীয় শতাব্দীতে খৃস্টানদের নিকটেও এভাবে মিথ্যা ও প্রবঞ্চনা প্রশংসনীয় ধর্মীয় কাজে পরিণত হয়। অতএব জালিয়াতি, বিকৃতি ও মিথ্যার কোনো সীমারেখা কোথাও ছিল না। তাঁরা যা করার সবই করেছেন। [এখানে উল্লেখ্য যে, প্রচলিত ত্রিত্ববাদী খৃস্টধর্মের প্রতিষ্ঠাতা সাধু পল (Paul) এ মতের একনিষ্ঠ অনুসারী ও প্রচারক ছিলেন। তিনি সগৌরবে স্বীকার করেছেন যে, তিনি ঈশ্বরের গৌরবার্থে ও সত্যের বৃদ্ধির জন্য মিথ্যা বলেন এবং এরূপ মিথ্যা বলাতে কোনো পাপ হয় না। বাইবেলের নতুন নিয়মের অন্তর্ভুক্ত রোমীয়দের প্রতি প্রেরিত পত্রে তিনি লিখেছেন: "For if the truth of God hath more abounded through my lie unto his glory; why yet am I also judged as a sinner? কিন্তু আমার মিথ্যায় যদি ঈশ্বরের সত্য তাঁহার গৌরবার্থে উপচিয়া পড়ে, তবে আমিও বা এখন পাপী বলিয়া আর বিচারিত হইতেছি কেন?’’ (রোমান ৩/৭)। এ নীতির ভিত্তিতেই ‘সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য’ বা ‘ঈশ্বরের গৌরব প্রকাশের জন্য’ পল নিজে মিথ্যাচারের মাধ্যমে খৃস্টধর্মকে বিকৃত করেছেন। এ নীতির অনুসরণেই বাইবেল বিকৃত করাকে ভাল কাজ বলে গণ্য করতেন পূর্ববর্তী খৃস্টান পন্ডিতগণ।]
(ঘ)লার্ডনার তাঁর ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেন: ‘‘(৬ষ্ঠ শতাব্দীতে) রোমান সম্রাট আনাসতেসিয়াস (Anastasius I:491-518)-এর যুগে, অজ্ঞাতপরিচয় লেখকের রচিত হওয়ার কারণে পবিত্র সুসমাচারগুলিকে অশুদ্ধ বলে সম্রাটের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন এগুলিকে পুনরায় সংশোধন করা হয়।’’
সুসমাচারগুলি যদি প্রকৃতই ঐশ্বরিক প্রেরণালব্ধ হতো এবং উক্ত সম্রাটের যুগে বিদ্যমান প্রাচীন খৃস্টান পণ্ডিতগণের নিকট বিশুদ্ধ সুত্রে প্রমাণিত হতো যে পুস্তকগুলি অমুক, অমুক প্রেরিত বা তাঁদের অমুক অনুগামীর রচিত, তবে ‘অজ্ঞাত পরিচয় লেখকের রচনা’ বলে সেগুলিকে অশুদ্ধ ঘোষণা করার কোনো অর্থ থাকতো না। এ থেকে প্রমাণিত হলো যে, সে যুগের খৃস্টানগণের নিকট সেগুলির লেখকের বিষয়ে কোনো প্রমাণিত তথ্য ছিল না। এ ছাড়া তাঁরা পুস্তকগুলিকে ঐশ্বরিক প্রেরণালব্ধ বলেও মনে করতেন না। এজন্য তাঁরা যথাসাধ্য সেগুলির সংশোধন করেছেন এবং ভুলভ্রান্তি ও বৈপরীত্য দূর করেছেন। এভাবে বিকৃতির ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। এখানে বাইবেলের বিকৃতি যেমন প্রমাণিত হলো, তেমনি প্রমাণিত হলো যে, সেগুলির গ্রহণযোগ্যতার কোনো প্রমাণ বা সূত্র পরম্পরা নেই। সকল প্রশংসাই আল্লাহর নিমিত্ত।
(ঙ) চতুর্থ শতকের শ্রেষ্ঠ খৃস্টান পণ্ডিত ও ধর্মগুরু অগাস্টাইন (St. Augustine) এবং অন্যান্য প্রাচীন খৃস্টান ধর্মজ্ঞ পণ্ডিত বলেছেন যে, গ্রীক অনুবাদকে অগ্রহণযোগ্য করার উদ্দেশ্যে ইয়াহূদীরা হিব্রু বাইবেলকে বিকৃত করে। ১৩০ খৃস্টাব্দে ইয়াহূদীরা এ বিকৃতি সাধন করে। হেলয, কেনিকট ও অন্যান্য আধুনিক গবেষক প্রাচীণ ধর্মগুরুগণের সাথে একমত পোষণ করেছেন। কেনিকট অকাট্য প্রমাণাদি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, ইয়াহূদীগণ শমরীয়দের সাথে শত্রুতার কারণে তাদের নিজেদের তাওরাতে বিকৃতি সাধন করে; যাতে শমরীয়দের নিকট সংরক্ষিত তাওরাত ভুল বলে প্রমাণিত হয়।
(চ)হার্সলি তাঁর বাইবেল-ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেন, ‘বাইবেলের পাঠ বিকৃত হয়েছে’ এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিভিন্ন সংস্করণ ও পাণ্ডুলিপির বৈপরীত্য থেকেও এ কথা স্পষ্টত জানা যায়। বাইবেলের বিভিন্ন স্থানে যে সকল অত্যন্ত আপত্তিকর ও খারাপ কথা বিদ্যমান সেগুলি থেকে বিকৃতির এ বিষয়টি সুদৃঢ় বিশ্বাসের কাছাকাছি চলে যায়। একথা নিঃসন্দেহে সত্য যে, নেবুকাদনেজারের ঘটনার পরে, বরং তার সামান্য কিছু আগে থেকেই মানুষদের নিকট হিব্রু বাইবেলের যে উদ্ধৃতি ও অংশগুলি ছিল তা ছিল বিকৃতির চূড়ান্ত পর্যায়ে।
(ছ)ওয়াটসন বলেন, অনেক যুগ আগেই ওরিগন এ সকল বৈপরীত্যের বিষয়ে অভিযোগ- আপত্তি প্রকাশ করতেন। তাঁর মতে এ সকল বৈপরীত্যের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন লেখকদের অবহেল ও অমনোযোগ, তাঁদের অসততা ও অসদেচ্ছা, তাদের বেপরোয়া ভাব ইত্যাদি। জিরোম (Jerome) বলেন, আমি যখন নতুন নিয়মের অনুবাদ করার ইচ্ছা করলাম, তখন আমি আমার নিকট সংরক্ষিত পাণ্ডুলিপিটি মিলিয়ে দেখলাম। এতে আমি ভয়ানক বৈপরীত্য দেখতে পেলাম। আদম ক্লার্ক বলেন, ‘‘জিরোমের (Jerome) যুগের (৫ম শতকের) পূর্ব থেকেই বাইবেলের অনেক ল্যাটিন অনুবাদ প্রচলিত ছিল। বিভিন্ন অনুবাদক এগুলি লিখেছিলেন। কোনো কোনো অনুবাদ ছিল বিকৃতির চূড়ান্ত পর্যায়ে। এগুলির একস্থানের বক্তব্য অন্য স্থানের বিপরীত ছিল। জিরোম এ সকল বিষয় উল্লেখ করেছেন।’’
(জ)খৃস্টান সন্যাসী (monk) ফিলিপস কোয়াডনলস ‘খায়ালাত’ (খেয়ালগুলি) নামে একটি বই লিখেন। ১৬৪৯ খৃস্টাব্দে বইটি (রোমে) মুদ্রিত হয়েছে। এই পুস্তকে তিনি বলেন: ‘‘পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলির বিকৃতির সংখ্যা খুবই বেশি। ইয়াহূদীদের বিকৃতি প্রমাণ করার জন্যই আমরা খৃস্টানগণ এ সকল পুস্তকের সংরক্ষণ করেছি, আমরা তাঁদের জালিয়াতির স্বীকৃতি প্রদান করি না।’’
(ঝ)প্রটেস্টান্ট সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস (James) [ইংল্যান্ডের প্রটেস্ট্যন্ট রাজা। তাঁর মাতা মেরি ছিলেন স্কটল্যান্ডের রাণী। তাঁর মাতা সিংহাসন ত্যাগ করলে তিনি স্কটল্যান্ডের রাজা হন। এরপর তিনি ইংল্যান্ডের রাজা হন। তাঁর মাতা ক্যাথলিক ছিলেন। এজন্য তিনি তাঁর মাতাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। তাঁরই সময়ে প্রটেস্টান্ট ধর্মমতের ভিত্তিতে বাইবেলের ‘সংশোধিত’ ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়, যা Authorised Version ((AV) বা King James Version (KJV) নামে পরিচিত। জেমস ১৬০৩ থেকে ১৬২৫ সালে মৃত্যু পর্যন্ত ইংল্যান্ডের রাজা ছিলেন।]-এর নিকট এ মর্মে দরখাস্ত পেশ করা হয় যে, ‘‘আমাদের প্রার্থনা গ্রন্থের মধ্যে যাবূরের যে পংক্তিগুলি উদ্ধৃত করা রয়েছে সেগুলির সাথে হিব্রু যাবুরের অনেক পার্থক্য। সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তনের মাধ্যমে কমবেশি ২০০ স্থানে এই পার্থক্য করা হয়েছে।’’
(ঞ)ইংরেজ ঐতিহাসিক মি. টমাস কার্লাইল (১৭৯৫-১৮৮১) বলেন: ‘‘ইংরেজি অনুবাদকগণ বাইবেলের মূল বক্তব্য নষ্ট করেছেন, সত্য গোপন করেছেন, অজ্ঞদেরকে ধোঁকা দিয়েছেন এবং নতুন নিয়মের পুস্তকাবলির সহজ সরল অর্থকে বক্র করেছেন। তাঁদের কাছে আলোর চেয়ে অন্ধকার এবং সত্যের চেয়ে মিথ্যাই বেশি প্রিয়।’’
(ট)নতুন অনুবাদ কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য মি. প্রোটন বলেন: ইংল্যন্ডে বর্তমানে প্রচলিত অনুবাদটি ভুলভ্রান্তিতে ভরা। তিনি পাদরীদেরকে বলেন: ‘‘আপনাদের প্রসিদ্ধ ইংরেজি অনুবাদটিতে পুরাতন নিয়মের বক্তব্য ৮৪৮ স্থানে বিকৃত করা হয়েছে। এ বিকৃতিগুলিই ছিল অনেক মানুষের বাইবেল অস্বীকারের কারণ।
বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান বৈপরীত্য, ভুল, ও বিকৃতির আলোচনায় আমরা আরো অনেক প্রসিদ্ধ গোঁড়া খৃস্টান পণ্ডিতের এ বিষয়ক আরো অনেক মতামত দেখেছি। বস্তুত বাইবেলের বিকৃতির বিষয়টি সকল গবেষকই স্বীকার করেন। অনেকে গোঁড়ামি করে সাধারণ মূলনীতি হিসেবে বিকৃতির কথা অস্বীকার করলেও বাস্তবে যখন বাইবেলের এ সকল বৈপরীত্য ও ভুল তথ্যের সম্মুখিন হন তখন বিকৃতির বিষয়টি মেনে নেন।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, মুসলমানগণ ছাড়াও খৃস্টান ও অখৃস্টান সকলেই বাইবেলের বিকৃতির কথা বলেছেন। এখন আমরা খৃস্টান পণ্ডিতগণ বিকৃতির যে সকল কারণ উল্লেখ করেছেন তা পর্যালোচনা করব।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/612/23
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।