মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সুসমাচারগুলির কিছু বক্তব্যকে, বিশেষত যোহনলিখিত সুসমাচারের কিছু বক্তব্যকে খৃস্টান ধর্মগুরুগণ যীশুর ঈশ্বরত্বের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন। [যীশু তার স্বর্গারোহণ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কখনোই তার ঈশ্বরত্বের কথা দ্ব্যর্থহীন সন্দেহমুক্তভাবে উল্লেখ করেন নি। তিনি এমন কিছুই বলেন নি যা থেকে তার ঈশ্বরত্বের বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে জানা যায়। এ বিষয়ে খৃস্টানগণ যে সকল বাক্য উদ্ধৃত করেন তা মূলত যোহনের লেখা থেকে গৃহীত দ্ব্যর্থবোধক অস্পষ্ট কিছু কথা। সকল খৃস্টান গবেষক একমত যে, যোহনের বাক্যাবলি রূপকতায় পরিপূর্ণ। ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই এমন অনুচ্ছেদ তার পুস্তকে কমই পাওয়া যায়। এছাড়া সুসমাচারগুলি থেকে দেখা যায় যে, খৃস্টের কথার মধ্যে অনেক অস্পষ্টতা থাকত, যে কারণে তার সমসাময়িক মানুষেরা এবং তার নিকটতম শিষ্যরাও অনেক সময় তিনি বুঝিয়ে না দিলে তার কথার মর্ম বুঝতে পারতেন না।] এ পরিচ্ছেদে আমরা তাদের এ সকল প্রমাণগুলি উল্লেখ করে তার অসারতা প্রমাণ করব।
প্রথম প্রমাণ: যীশুর ঈশ্বরত্বের পক্ষে খৃস্টান ধর্মগুরুগণের পেশকৃত প্রথম প্রমাণ, বাইবেলে বিভিন্ন স্থানে যীশুর ক্ষেত্রে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ (Son of God) কথাটির প্রয়োগ।
দুটি কারণে এ প্রমাণটি বাতিল:
প্রথমত, ‘ঈশ্বরের পুত্র’ কথাটির বিপরীতে বাইবেলে বারংবার যীশুকে ‘মনুষ্য পুত্র’ (son of man) বলা হয়েছে। এছাড়া তাকে বারংবার ‘দাঊদের পুত্র’ বা ‘দাউদ সন্তান’ (son of David) বলেও অভিহিত করা হয়েছে। যীশুকে মানুষের পুত্র বা মানুষের সন্তান বলে আখ্যায়িত করার বিষয়ে নমুনা স্বরূপ পাঠক মথির সুসমাচারের নিম্নের শ্লোকগুলি দেখতে পারেন: ৮/২০, ৯/৬, ১৬/১৩, ২৭, ১৭/৯, ১২, ২২, ১৮/১১, ১৯/২৮, ২০/১৮, ২৮, ২৪/২৭, ২৬/২৪, ৪৫, ৬৪। আর যীশুকে দায়ূদের পুত্র বলার বিষয়ে পাঠক নমুনা হিসেবে নিম্নের শ্লোকগুলি দেখতে পারেন: মথি ১/১, ৯/২৭, ১২/২৩, ১৫/২২, ২০/৩০, ৩১, ২১/৯, ১৫ ২২/৪২; মার্ক ১০/৪৭, ৪৮; লূক ১৮/৩৮, ৩৯।
এছাড়া মথির ১/১-১৭ ও লূকের ৩/২৩-৩৪ শ্লোকে যীশুর বংশতালিকা উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে তাকে দায়ূদের বংশধর ও দায়ূদের মাধ্যমে ইয়াকূব, ইসহাক ও ইব্রাহীমের বংশধর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সকল ভাববাদী সকলেই আদম সন্তান বা মানব সন্তান ও মানুষ ছিলেন। তাঁদের বংশধর যীশু নিঃসন্দেহে মানব সন্তান ছিলেন। আর এজন্যই তাঁকে বারংবার ‘‘মানুষের পুত্র (son of man) বলা হয়েছে। আর মানুষের পুত্র তো মানুষই হবেন, তিনি ঈশ্বর হতে পারেন না বা আক্ষরিক অর্থে ঈশ্বরের পুত্র হতে পারেন না। [বাইবেলে, বিশেষ করে পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলিতে বারংবার ‘‘মনুষ্যপুত্র’’ বা মানুষের পুত্র বলতে মানুষ বুঝানো হয়েছে। পুরাতন নিয়মে মনুষ্যপুত্র শতাধিক স্থানে ‘‘মনুষ্যপুত্র’’ বা ‘‘মানুষের ব্যাটা’’ (Son of man) পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। সর্বত্র একমাত্র উদ্দেশ্য ‘‘মরণশীল মানুষ’’ বুঝানো। নবী বা ভাববাদীকে বিশেষভাবে ‘‘মানুষের পুত্র বা মানব সন্তান বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে একই উদ্দেশ্যে যেন কেউ অলৌকিক কার্যাদি দেখে তাদেরকে ঈশ্বরের সাথে সম্পৃক্ত মনে না করে। নমুনা হিসেবে পাঠক নিম্নের শ্লোকগুলি দেখতে পারেন: গণনা পুস্তক ২৩/১৯; ইয়োব ২৫/৬, ৩৫/৮; গীতসংহিতা ৮/৪, ৮০/১৭, ১৪৪/৩, ১৪৬/৩; যিশাইয় ৫১/১২, ৫৬/২; যিরমিয় ৪৯/১৮, ৪৯/৩৩, ৫০/৪০, ৫১/৪৩; যিহিষ্কেল ২/১, ৩, ৬, ৮, ৩/১, ৩, ৪, ১০, ১৭, ২৫, ৪/১, ১৬, ৫/১, ৬/২, ৭/২, ৮/৫, ৬, ৮, ১২, ১৫, ১৭, ১১/২, ৪, ১৫, ১২/২, ৩, ৯, ১৮, ২২, ২৭, ১৩/২, ১৭, ১৪/৩, ১৩, ১৫/২, ১৬/২, ১৭/২, ২০/৩, ৪, ৭, ৪৬, ২১/২, ৬, ৯, ১২, ১৪, ১৯, ২৮, ২২/২, ১৮, ২৪, ২৩/২, ৩৬, ২৪/২, ১৬, ২৫, ২৫/২, ২৬/২, ২৭/২, ২৮/২, ১২, ২১, ২৯/২, ১৮, ৩০/২, ২১, ৩১/২, ৩২/২, ১৮, ৩৩/২, ৭, ১০, ১২, ২৪, ৩০, ৩৪/২, ৩৫/২, ৩৬/১, ১৭, ৩৭/৩, ৯, ১১, ১৬, ৩৮/২, ১৪, ৩৯/১, ১৭, ৪০/৪, ৪৩/৭, ১০, ১৮, ৪৪/৫, ৪৭/৬, ১৩, দানিয়েল ৮/১৭। এগুলি পাঠ করলে পাঠক সন্দেহাতীতভাবে সুনিশ্চিত হবেন যে, বাইবেলের পরিভাষায় মানুষ্যপুত্র অর্থ মানুষের ব্যাটা মানুষ মাত্র। এর পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে বারংবার বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর কখনোই মনুষ্যপুত্র নন, এবং কোনো মনুষ্যপুত্র কখনো ঈশ্বর হতে পারে না। নিম্নের কয়েকটি অনুচ্ছেদ দেখুন: গণনা পুস্তক ২৩/১৯: ‘‘God is not a man, that he should lie; neither the son of man, that he should repent: ঈশ্বর মনুষ্য নহেন যে, মিথ্যা বলিবেন; তিনি মনুষ্যপুত্র (কেরির বঙ্গানুবাদে: মনুষ্য-সন্তান) নহেন যে অনুশোচনা করিবেন।’’ ইয়োব ২৫/৬: (How much less man, that is a worm? and the son of man, which is a worm?) মানুষের মূল্য কত কম, যা একটি কীটের তুল্য? মনূষ্যপুত্রের মূল্য কত কম, যা একটি কীটের তুল্য (কেরির বঙ্গানুবাদে: তবে কীটসদৃশ মত্ত্য কি? কৃমিসদৃশ মনুষ্য-সন্তান কি?) গীতসংহিতা ১৪৬/২-৫ শ্লোকে রাজা-বাদশা ও মনুষ্যপুত্রের উপর নির্ভর না করে একমাত্র আল্লাহর উপর নির্ভর করতে ও তারই কাছে সাহায্য চাইতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বলা হয়েছে: (Put not your trust in princes, nor in the son of man, in whom there is no help. His breath goeth forth, he returneth to his earth; in that very day his thoughts perish. Happy is he that hath the God of Jacob for his help, whose hope is in the LORD his God) ‘‘(৩) তোমরা নির্ভর করিও না রাজন্যগণে, বা মনুষ্যপুত্রে (কেরির অনুবাদে: মানুষ্য-সন্তানে), যাহার নিকট ত্রাণ নাই। (৪) তাহার স্বাস নির্গত হয়, সে নিজ মৃত্তিকায় প্রতিগমন করে; সেই দিনেই তাহার সঙ্কল্প সকল নষ্ট হইবে। (৫) ধন্য সেই, যাহার সহায় যাকোবের ঈশ্বর, যাহার আশাভূমি সদাপ্রভু, তাহার ঈশ্বর।’’ যিশাইয় ৫১/১২-১৩ তেও একই কথা বলা হয়েছে: ‘‘(I, even I, am he that comforteth you: who art thou, that thou shouldest be afraid of a man that shall die, and of the son of man which shall be made as grass; And forgettest the LORD thy maker) আমি, আমিই তোমাদের সান্তনাকর্তা। তুমি কি যে, মানুষকে (মর্তকে) ভয় করিতেছ, সে ত মরিয়া যাইবে; এবং মনুষ্যপুত্রকে (মনুষ্য-সন্তানকে) ভয় করিতেছ, সে ত তৃণের ন্যায় হইয়া পড়িবে; আর তোমার নির্মাতা সদাপ্রভুকে ভুলিয়া গিয়াছ?...’’ এভাবে বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, মনুষ্যপুত্র অসহায়, তার নিকট কোনো ত্রাণ নেই, তার কাছে কিছু আশা করা যাবে না, সে মরণশীল, সে তৃণের ন্যায়, সে কীটের ন্যায়। এরপরও কি আমরা মনে করব যে, বাইবেলের পরিভাষায় মনুষ্যপুত্র বলতে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো কিছু বুঝানো হতে পারে?]
দ্বিতীয়ত, ‘ঈশ্বরের পুত্র’ (son of God) কথাটির মধ্যে ‘পুত্র’ শব্দটি কখনোই তার প্রকৃত ও আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে না। কারণ সকল জ্ঞানী একমত যে, আভিধানিক ও প্রকৃত অর্থে পুত্র বলতে বুঝানো হয় পিতামাতা উভয়ের দৈহিক জৈবিক মিশ্রণের মাধ্যমে যার জন্ম। এ অর্থ ‘ঈশ্বরের পুত্র’ (son of God)-এর ক্ষেত্রে কোনোভাবেই প্রযোজ্য হতে পারে না। কাজেই এক্ষেত্রে এমন একটি রূপক অর্থ গ্রহণ করতে হবে যা খৃস্টের মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যতাপূর্ণ। আর ইঞ্জিল বা নতুন নিয়মের ব্যবহার থেকে নিশ্চিতরূপে জানা যায় যে, ‘ঈশ্বরের পুত্র’ কথাটি যীশুর ক্ষেত্রে ‘ধার্মিক’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এর প্রমাণ, মার্কলিখিত সুসমাচারের ১৫ অধ্যায়ের ৩৯ শ্লোকে যীশুর ক্রুসবিদ্ধ হয়ে প্রাণত্যাগের ঘটনা বর্ণনা করে বলা হয়েছে: ‘‘আর যে শতপতি তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিলেন, তিনি যখন দেখিলেন যে, যীশু এই প্রকারে প্রাণত্যাগ করিলেন, তখন কহিলেন, সত্যই এ মানুষটি (ইনি) ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন (Truly this man was the Son of God)।’’
একই ঘটনায় উক্ত শতপতির উপর্যুক্ত বক্তব্য লূক তার সুসমাচারের ২৩ অধ্যায়ের ৪৭ শ্লোকে উদ্ধৃত করেছেন। লূকের ভাষা: ‘‘যাহা ঘটিল, তাহা দেখিয়া শতপতি ঈশ্বরের গৌরব করিয়া কহিলেন, সত্য, এই ব্যক্তি ধার্মিক ছিলেন (Certainly this was a righteous man)।’’
এভাবে আমরা দেখছি যে, মার্ক যেখানে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন সেখানে লূক ‘ঈশ্বরের পুত্র’-র পরিবর্তে ‘ধার্মিক’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এ থেকে সুনিশ্চিতরূপে জানা যায় যে, যীশু ও যীশুর যুগের মানুষদের ভাষায় ‘ঈশ্বরের পুত্র’ কথাটির অর্থ ছিল ‘‘ধার্মিক মানুষ (righteous man)’’।
আমরা দেখেছি যে, যীশুর ঈশ্বরত্ব প্রমাণের জন্য খৃস্টান ধর্মগুরুগণ সুসামাচরগুলির মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের পরিবর্তন ও বিকৃতি সাধন করেছেন, যে কারণে সুসমাচারগুলির মধ্যে বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়েছে এবং এগুলি নির্ভরযোগ্যতা হারিয়েছে। তারপরও খৃস্টানগণের দাবিমত এগুলি বিশুদ্ধ এবং তাঁদের দাবিমতই একথা প্রমাণিত হলো যে, সুসমাচারের পরিভাষায় ঈশ্বরের পুত্র অর্থ ধার্মিক মানুষ (righteous man)। বিশেষত মার্ক ও লূক উভয়ের বর্ণনাতেই শতপতি যীশুকে মানুষ (man) বলে উল্লেখ করেছেন।
সুসমাচারগুলির বিভিন্ন স্থানে যীশু ছাড়া অন্যান্য ধার্মিক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও ‘ঈশ্বরের পুত্র’ কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে, যেমনভাবে ‘পাপী’র ক্ষেত্রে ‘দিয়াবলের পুত্র’ কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে।
মথিলিখিত সুসমাচারের ৫ অধ্যায়ে রয়েছে: ‘‘৯ ধন্য যাহারা মিলন করিয়া দেয়, কারণ তাহারা ঈশ্বরের পুত্র বলিয়া আখ্যাত হইবে।... ৪৪ কিনতু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও, এবং যাহারা তোমাদিগকে তাড়না করে, তাহাদের জন্য প্রার্থনা করিও; ৪৫ যেন তোমরা আপনাদের স্বর্গস্থ পিতার সনতান হও...।’’
এখানে যীশু যারা শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন ও মানুষদের মধ্যে মিল করে দেন তাদেরকে এবং যারা এভাবে শত্রুমিত্র সকলকেই ভালবাসেন তাদেরকে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ বলে অভিহিত করেছেন এবং ‘ঈশ্বর’-কে তাদের পিতা বলে উল্লেখ করেছেন।
যোহনলিখিত সুসমাচারের ৮ম অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইয়াহূদীগণ ও খৃস্টের মধ্যে নিম্নরূপ কথোপকথন হয়: ‘‘(৪১) তোমাদের পিতার কার্য তোমরা করিতেছ। তাহারা তাঁহাকে কহিল, আমরা ব্যভিচারজাত নহি; আমাদের একমাত্র পিতা আছেন, তিনি ঈশ্বর। (৪২) যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, ঈশ্বর যদি তোমাদের পিতা হইতেন, তবে তোমরা আমাকে প্রেম করিতে ... (৪৪) তোমরা তোমাদের পিতা দিয়াবলের, এবং তোমাদের পিতার অভিলাষ সকল পালন করাই তোমাদের ইচ্ছা; ... কেননা সে মিথ্যাবাদী ও তাহার (মিথ্যাবাদীর) পিতা।’’
এখানে আমরা দেখছি যে, ইয়াহূদীগণ দাবি করেন যে, তারা ঈশ্বরের পুত্র, একমাত্র একজনই তাদের পিতা, তিনি হচ্ছেন ঈশ্বর। যীশু তাদেরকে বললেন, না, বরং তোমাদের পিতা দিয়াবল বা শয়তান। কারণ তারা মিথ্যাবাদী ও শয়তানের অনুগত। শয়তান মিথ্যাবাদী এবং মিথ্যাবাদীগণের পিতা। এ কথা তো সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ অথবা দিয়াবল তাদের প্রকৃত পিতা নয়। পুত্র শব্দটি এখানে শাব্দিক বা প্রকৃত অর্থে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। কাজেই রূপক অর্থ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। ইয়াহূদীদের বক্তব্যের অর্থ হলো, আমরা ধার্মিক ও ঈশ্বরের আদেশ পালন কারী। আর যীশুর কথার অর্থ হলো, তোমরা ধার্মিক ও ঈশ্বরের আদেশ পালনকারী নও, বরং তোমরা অধার্মিক ও দিয়াবলের আদেশ পালনকারী।
সুসমাচারের আরো অনেক স্থানে পিতা বা পুত্র শব্দের এরূপ ব্যাখ্য ছাড়া গত্যন্তর নেই। যোহনের প্রথম পত্রের ৩ অধ্যায়ে রয়েছে: ‘‘(৮) যে পাপাচরণ করে সে দিয়াবলের; কেননা দিয়াবল আদি হইতে পাপ করিতেছে।... (৯) যে কেহ ঈশ্বর হইতে জাত, সে পাপাচরণ করে না, কারণ তাঁহার বীর্য তাহার অনতরে থাকে; এবং সে পাপ করিতে পারে না, কারণ সে ঈশ্বর হইতে জাত। (১০) ইহাতে ঈশ্বরের সনতানগণ এবং দিয়াবলের সনতানগণ প্রকাশ হইয়া পড়ে (the children of God are manifest, and the children of the devil)।’’
উক্ত পত্রের ৪ অধ্যায়ের ৭ শ্লোকে বলা হয়েছে: ‘‘যে কেহ প্রেম করে, সে ঈশ্বর হইতে জাত (born of God) ও ঈশ্বরকে জানে’’।
উক্ত পত্রের ৫ অধ্যায়ে রয়েছে: ‘‘(১) যে কেহ বিশ্বাস করে যে, যীশুই সেই খ্রীষ্ট, সে ঈশ্বর হইতে জাত (born of God); এবং যে কেহ জন্মদাতাকে প্রেম করে; সে তাঁহা হইতে জাত ব্যক্তিকেও প্রেম করে (every one that loveth him that begat loveth him also that is begotten of him) (২) ইহাতে আমরা জানিতে পারি যে, ঈশ্বরের সনতানগণকে প্রেম করি, যখন ঈশ্বরকে প্রেম করি ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি।’’
রোমীয় ৮ অধ্যায়ের ১৪ শ্লোকে বলা হয়েছে: ‘‘কেননা যত লোক ঈশ্বরের আজ্ঞা দ্বারা চালিত হয়, তাহারাই ঈশ্বরের পুত্র।’’
ফিলিপীয় ২/১৪-১৫: ‘‘(১৪) তোমরা বচসা ও তর্কবিতর্ক বিনা সমস্ত কার্য কর, (১৫) যেন তোমরা অনিন্দনীয় ও অমায়িক হও, এই কালের সেই কুটিল ও বিপথগামী লোকদের মধ্যে ঈশ্বরের নিষ্কলঙ্ক সন্তান হও।’’
উপরের উদ্ধৃতিগুলি সুস্পষ্টরূপে আমাদের দাবি প্রমাণ করে। এ সকল শ্লোকে যাদেরকে ‘‘ঈশ্বরের পুত্র’’ ও ‘‘ঈশ্বরের জাত’’ বলা হয়েছে তারা কেউই আক্ষরিক অর্থে ‘‘ঈশ্বরের জাত’’ বা ‘‘ঈশ্বরের পুত্র’’ নন; বরং উপরে উল্লেখিত রূপক অর্থে তাদেরকে ‘‘ঈশ্বরের পুত্র’’ বলা হয়েছে।
এছাড়া আরো একটি বিষয় লক্ষণীয়। বাইবেলের পুরাতন ও নতুন নিয়মের পুস্তকগুলিতে ‘পিতা’ ও ‘পুত্র’ শব্দদ্বয়কে অসংখ্য অগণিত স্থানে রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি উদ্ধৃতি প্রদান করছি।
(১) লূক তার সুসমাচারের ৩ অধ্যায়ে খৃস্টের বংশাবলি বর্ণনা করতে যেয়ে ৩৮ শ্লোকে বলেছেন: আদম ঈশ্বরের পুত্র।
(২) যাত্রাপুস্তক ৪ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঈশ্বর সদাপ্রভু মোশিকে নিম্নরূপ নির্দেশ প্রদান করেন: ‘‘২২ আর তুমি ফরৌণকে কহিবে, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইস্রায়েল আমার পুত্র, আমার প্রথমজাত (my son, even my firstborn)। ২৩ আর আমি তোমাকে বলিয়াছি, আমার সেবা করণার্থে আমার পুত্রকে ছাড়িয়া দেও; কিনতু তুমি তাহাকে ছাড়িয়া দিতে অসম্মত হইলে; দেখ, আমি তোমার পুত্রকে, তোমার প্রথমজাতকে, বধ করিব।’’
এখানে দুই স্থানে ‘ইস্রায়েল’-কে ঈশ্বরের পুত্র বলা হয়েছে, উপরন্তু তাকে প্রথমজাত পুত্র অর্থাৎ বড় ছেলে বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
(৩) গীতসংহিতার ৮৯ গীতে দায়ূদ সদাপ্রভু ঈশ্বরকে সম্বোধন করে বলেছেন: ‘‘(২০) আমার দাস দায়ূদকেই পাইয়াছি, আমার পবিত্র তৈলে তাহাকে অভিষিক্ত করিয়াছি (with my holy oil have I anointed him)।... (২৬) সে আমাকে ডাকিয়া বলিবে, তুমি আমার পিতা, আমার ঈশ্বর (Thou art my father, my God)...। (২৭) আবার আমি তাহাকে প্রথমজাত করিব ...।’’
এখানে দায়ূদকে অভিষিক্ত অর্থাৎ মসীহ (The Messiah) বা খৃস্ট (The Christ, The Anointed) ও ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র (firstborn) বলে অভিহিত করা হয়েছে।
(৪) যিরমিয় ৩১/৯-এ ঈশ্বরের নিম্নোক্ত বাক্য উদ্ধৃত করা হয়েছে: ‘‘যেহেতু আমি ইস্রায়েলের পিতা, এবং ইফ্রয়িম আমার প্রথমজাত পুত্র।’’
(৫) ২ শমূয়েল ৭ অধ্যায়ে শলোমনের বিষয়ে ঈশ্বরের নিম্নোক্ত উক্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে: ‘‘আমি তাহার পিতা হইব, ও সে আমার পুত্র হইবে’’।
যদি যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র বলায় তাঁর ঈশ্বরত্ব প্রমাণিত হয়, তাহলে আদম, ইস্রায়েল, ইফ্রয়িম দায়ূদ ও সুলাইমান ঈশ্বরত্বের বেশি অধিকারী বলে প্রমাণিত হবে; কারণ তাঁরা যীশুর পূর্বেই এ পদ লাভ করেছেন, তাঁরা তাঁর পূর্বপুরুষ এবং বিশেষত ইস্রায়ৈল, ইফ্রয়িম ও দায়ূদকে ‘ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র’ বলা হয়েছে। আর আবরাহাম, মোশি ও অন্যান্য পূর্ববর্তী ভাববাদীদের ব্যবস্থা অনুসারে প্রথমজাত পুত্রই সম্মান-মর্যাদার সর্বাধিক অধিকার ভোগ করেন। সাধারণভাবে সকল মানুষের মধ্যেই এর প্রচলন রয়েছে। [এখানে খৃস্টানগণ বলতে পারেন যে, যীশুকে নতুন নিয়মের কোথাও কোথাও ‘ঈশ্বরের একজাত পুত্র বা ‘ঈশ্বরের জন্মদেওয়া একমাত্র পুত্র’ (only begotten son)’ বলে উল্লেখ করেছেন। এতে তার বিশেষত্ব বুঝা যায়। তাদের এ দাবি বাইবেলের আলোকে বাতিল বলে প্রমাণিত। এক্ষেত্রে ‘একজাত’ বা ‘একমাত্র জন্মদেওয়া’ শব্দটি কখনোই তার প্রকৃত অর্থে গৃহীত হতে পারে না। কারণ ঈশ্বর নিজেই এ ‘একমাত্র জন্মদেওয়া পুত্রের’ আরো অনেক ভাইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন, তাদের মধ্যে তিনজনতে ‘প্রথমজাত’ বলে উল্লেখ করেছেন। কাজেই ‘পুত্র’ বা ‘প্রথমজাত’ শব্দের ন্যায় ‘একজাত’ শব্দেরও রূপক অর্থ গ্রহণ করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। ইস্রায়েল, ইফ্রমিয় ও দায়ূদ-এর ক্ষেত্রে ঈশ্বর স্বয়ং বলেছেন যে তাঁরা তাঁর প্রথমজাত। আর যীশুর ক্ষেত্রে ঈশ্বর নিজে এরূপ কিছু বলেছেন বলে প্রচলিত সুসমাচারগুলিতেও নেই। যীশুর অস্পষ্ট বক্তব্যের মধ্যে বা সুসমাচার লেখকদের কথার মধ্যে এরূপ বক্তব্য পাওয়া যায়। সর্বোপরি (only begotten son) বা ‘‘একমাত্র জন্মদেওয়া পুত্র’’ কথাটিকে প্রকৃত ও আক্ষরিক অথ্যে গ্রহণ করলে বাইবেরের আলোকে তা মিথ্যা বলে গণ্য হবে। কারণ বাইবেলেই ঈশ্বর আরো অনেক পুত্র জন্ম দেওয়ার কথা বলেছেন। গীতসংহিতা ২/৭: ‘‘(the LORD hath said unto me, Thou art my Son; this day have I begotten thee) সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি আমার পুত্র, অদ্য আমি তোমাকে জন্ম দিয়াছি।’’ কাজেই ঈশ্বরের জন্মদেওয়া (begotten) পুত্র মাত্র একজন একথা বাইবেলের আলোকে মিথ্যা।]
(৬) বাইবেলের অনেক স্থানে সকল ইস্রায়েল-সন্তানকে ‘‘ঈশ্বরের পুত্র’’ বা ‘‘ঈশ্বরের সন্তান’’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে দ্বিতীয় বিবরণ ১৪/১, ৩২/১৯; যিশাইয় ১/২, ৩০/১, ৬৩/৮; হোশেয় ১/১০।
(৭) আদিপুস্তকের ৬ অধ্যায়ে রয়েছে: ‘‘(২) তখন ঈশ্বরের পুত্রেরা মনুষ্যদের কন্যাগণকে সুন্দরী দেখিয়া যাহার যাহাকে ইচ্ছা, সে তাহাকে বিবাহ করিতে লাগিল। (৪) তৎকালে পৃথিবীতে মহাবীরগণ ছিল, এবং তৎপরেও ঈশ্বরের পুত্রেরা মনুষ্যদের কন্যাদের নিকটে গমন করিলে তাহাদের গর্ভে সনতান জন্মিল, তাহারাই সেকালের প্রসিদ্ধ বীর।’’
এখানে আদম সন্তানদেরকে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
(৮) যিশাইয় ৬৩/১৬ ও ৬৪/৮ শ্লোকে ঈশ্বরকে ইস্রায়েল-সন্তানদের সকলের পিতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
(১০) গীতসংহিতার ৬৮/৫: ‘‘ঈশ্বর আপন পবিত্র বাসস্থানে পিতৃহীনদের পিতা ও বিধবাদের বিচারকর্তা।’’
এখানে ঈশ্বরকে পিতৃহীনদের পিতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ সকল স্থানে ‘‘ঈশ্বরের পুত্র’’ পরিভাষাকে অবশ্যই ‘‘রূপক’’ অর্থে ব্যবহার করতে হবে। কোনো একজন খৃস্টানও বলবেন না যে, এ সকল স্থানে ঈশ্বরের পুত্র বলতে বা ঈশ্বরকে পিতা বলতে প্রকৃত ও আক্ষরিক অর্থ বুঝানো হয়েছে। যেভাবে আদম, আদম-পুত্রগণ, ইস্রায়েল (ইয়াকুব), ইফ্রয়িম, দায়ূদ, সুলাইমান, সকল ইস্রায়েলীয় মানুষ এবং সকল এতিম-পিতৃহীন-কে ঈশ্বরের পুত্র বা অনুরূপ কিছু বলার কারণে ঈশ্বর, ঈশ্বরের সত্ত্বার অংশ বা প্রকৃত অর্থে ঈশ্বরের পুত্র বলে কল্পনা করা সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি যীশুখৃস্টের ক্ষেত্রেও তাকে ঈশ্বরের পুত্র বা অনুরূপ কিছু বলার কারণে তাকে ঈশ্বর, ঈশ্বরের সত্ত্বার অংশ বা প্রকৃত অর্থে ঈশ্বরের পুত্র বলে কল্পনা করা সম্ভব নয়। এরূপ কল্পনা বাইবেল, সকল ভাববাদীর শিক্ষা ও মানবীয় জ্ঞান-বিবেকের সাথে সাংঘর্ষিক।
দ্বিতীয় প্রমাণ: যীশুর ঈশবরত্বের পক্ষে খৃস্টানগণের দ্বিতীয় প্রমাণ, নতুন নিয়মের কিছু শ্লোকে যীশুকে এ জগতের নন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যোহন ৮/২৩: ‘‘তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা অধঃস্থানের, আমি ঊর্ধ্বস্থানের (Ye are from beneath; I am from above); তোমরা এ জগতের, আমি এ জগতের নহি।’’
খৃস্টানগণ ধারণা করেন যে, এখানে যীশু তাঁর ঈশ্বরত্বের প্রতি ‘‘ইঙ্গিত’’ করেছেন এবং বুঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি পিতা ঈশ্বরের নিকট থেকে আগমন করেছেন এবং তিনি এ জগতের নন। তিনি মানুষরূপী হলেও মানুষ নন, বরং স্বর্গের বা ঊর্ধ্বজগতের ঈশ্বর।
তাদের এ ব্যাখ্যা মোটেও সঠিক নয়। কারণ যীশু বাহ্যত ও প্রকৃত অর্থে এ জগতেরই ছিলেন। তাদের ব্যাখ্যাটি দুই কারণে বাতিল:
প্রথমত, এ ব্যাখ্যা যুক্তি, জ্ঞান ও বিবেকের সাথে সাংঘর্ষিক। তেমনি ভাবে তা নতুন ও পুরাতন নিয়মের অগণিত বাক্যের সাথে সাংঘর্ষিক।
দ্বিতীয়ত, যীশু তাঁর শিষ্যদের ক্ষেত্রেও এরূপ কথা বলেছেন। যোহনের সুসমাচারের ১৫ অধ্যায়ের ১৯ শ্লোকে যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে বলেছেন: ‘‘তোমরা যদি জগতের হইতে, তবে জগৎ আপনার নিজস্ব বলিয়া ভাল বাসিত; কিনতু তোমরা ত জগতের নহ, বরং আমি তোমাদিগকে জগতের মধ্য হইতে মনোনীত করিয়াছি, এই জন্য জগৎ তোমাদিগকে দ্বেষ করে।’’
যোহনের সুসমাচারের ১৭ অধ্যায়ে রয়েছে: ‘‘১৪ আমি তাহাদিগকে তোমার বাক্য দিয়াছি; আর জগৎ তাহাদিগকে দ্বেষ করিয়াছে, কারণ তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই। ... ১৬ তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই।’’
এভাবে যীশু তাঁর শিষ্যদের সম্পর্কে বললেন যে, তাঁরা এ জগতের নন। উপরন্তু তিনি স্পষ্টভাবেই এ বিষয়ে তাঁদেরকে তাঁরই মত একই পর্যায়ের বলে উল্লেখ করলেন। তিনি যেমন এ জগতের নন, তাঁর শিষ্যরাও ঠিক তেমনি এ জগতের নন। খৃস্টানদের দাবি অনুসারে, যদি এ জগতের না হওয়ার কারণে ঈশ্বরত প্রমাণিত হয়, তবে যীশুর শিষ্যগণ সকলেই ঈশ্বর ছিলেন বলে প্রমাণিত হবে। আর যেহেতু খৃস্টানগণ যীশুর শিষ্যদের ঈশ্বরত্ব অস্বীকার করেন, সেহেতু তাদেরকে স্বীকার করতে হবে যে, ঊর্ধ্বজগতের হওয়া, ঈশ্বরের নিকট থেকে আগমন করা বা এ জগতের না হওয়া অর্থের বাক্যাদি দিয়ে যীশুর ঈশ্বরত্ব প্রমাণ করার কোনো উপায় নেই।
যীশুর এ বাক্যের সঠিক অর্থ হলো, তোমরা পার্থিব জগতের লোভ লালসার অনুসারী ও জাগতিক স্বার্থান্বেষী আর আমি তদ্রুপ নই, বরং আমি ও আমার শিষ্যগণ ঊর্ধ্বজগতের বা স্বর্গের মর্যাদার অভিলাসী এবং ঈশ্বরের প্রেম অনুসন্ধানী। এরূপ রূপক ব্যবহার সকল ভাষাতেই বিদ্যমান। ধার্মিক ও সংসারবিমুখ মানুষদেরকে সকল দেশে এবং সকল ভাষাতেই বলা হয় ‘এরা এ জগতের মানুষ না।’
তৃতীয় প্রমাণ: যীশুর ঈশ্বরত্বের পক্ষে খৃস্টানদের তৃতীয় দলিল, যীশু নিজেকে ঈশ্বরের সাথে এক বলে উল্লেখ করেছেন। যোহনলিখিত সুসমাচারের ১০ অধ্যায়ে যীশুর নিম্নোক্ত বাক্য উদ্ধৃত করা হয়েছে: ‘‘আমি ও পিতা, আমরা এক (I and my Father are one)।’’
খৃস্টানগণ দাবি করেন যে, এই বাক্য যীশুর ঈশ্বরত্ব প্রমাণ করে। দু কারণে তাঁদের এই দাবি বাতিল:
প্রথম কারণ: প্রকৃত অর্থে খৃস্ট এবং ঈশ্বর কখনোই এক হতে পারেন না। খৃস্টানদের বিশ্বাস অনুসারেও তিনি ও ঈশ্বর এক ছিলেন না। কারণ খৃস্টের একটি মানবীয় আত্মা ও দেহ ছিল, খৃস্টানগণ বিশ্বাস করেন যে, এ দিক থেকে তিনি ঈশ্বর থেকে পৃথক ছিলেন। তাঁরা বলেন যে, ‘আমি ও পিতা এক’ কথাটি বাহ্যিক অর্থে গ্রহণ করা যাবে না বরং এর ব্যাখ্যা করতে হবে। তাদের মতে এর ব্যাখ্যা হলো, ঈশ্বরত্বের দিক থেকে তিনি ও ঈশ্বর এক। মানুষ হিসেবে তিনি একজন পরিপূর্ণ মানুষ ছিলেন। আবার ঈশ্বরত্বের দিক থেকে তিনি পরিপূর্ণ ঈশ্বর ছিলেন। তার মধ্যে দুটি পৃথক সত্ত্বা বিদ্যমান ছিল। তার মধ্যকার পুত্র সত্ত্বার দিক তিনি ও পিতা এক ছিলেন।
তাঁদের এ ব্যাখ্যা অন্তসারশূন্য বাগাড়ম্বর মাত্র। কারণ খৃস্টের বাক্য হয় তার প্রকৃত ও বাহ্যিক অর্থে গ্রহণ করতে হবে। অথবা যীশুর অন্যান্য বাক্য, অন্যান্য ঐশ্বরিক গ্রন্থের বাক্য এবং যুক্তি, বিবেক ও জ্ঞানের দাবির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাখ্যা করতে হবে। তাদের ব্যাখ্যাটি প্রকৃত ও বাহ্যিক অর্থের সাথে সাংঘর্ষিক, আবার জ্ঞান, যুক্তি এবং বাইবেলের অন্যান্য বাণীর সাথেও সাংঘর্ষিক।
দ্বিতীয় কারণ: এরূপ কথা যীশুর শিষ্যদের ক্ষেত্রেও বলা হয়েছে। যোহনলিখিত সুসমাচারের ১৭ অধ্যায়ে রয়েছে যে, যীশু তাঁর শিষ্যদের বিষয়ে বলেন: ‘‘২১ যেন তাহারা সকলে এক হয় (they all may be one); ২১ পিতঃ, যেমন তুমি আমাতে ও আমি তোমাতে, তেমনি তাহারাও যেন আমাদের মধ্যে (এক) [(এক) শব্দটি বাংলা বাইবেলে উল্লেখ করা হয় নি, তবে ইংরেজিতে রয়েছে।] থাকে (that they also may be one in us); যেন জগৎ বিশ্বাস করে যে, তুমি আমাকে প্রেরণ করিয়াছ। ২২ আর তুমি আমাকে যে মহিমা দিয়াছ, তাহা আমি তাহাদিগকে দিয়াছি; যেন তাহারা এক হয়, যেমন আমরা এক (that they may be one, even as we are one); ২৩ আমি তাহাদের মধ্যে ও তুমি আমাতে, যেন তাহারা একের মধ্যে পরিপূর্ণতা লাভ করে [বাংলা বাইবেলের ভাষ্য: যেন তাহারা সিদ্ধ হইয়া এক হয়।] (I in them, and thou in me, that they may be made perfect in one)।’’
এখানে যীশু বলেছেন: ‘‘যেন তাহারা সকলে এক হয়’’, ‘‘যেন তাহারা এক হয় যেমন আমরা এক’’ এবং ‘‘যেন তাহারা একের মধ্যে পরিপূর্ণতা লাভ করে’’। এ বাক্যগুলি থেকে বুঝা যায় যে, তাঁরা সকলে এক ছিলেন। দ্বিতীয় বাক্যে যীশু উল্লেখ করেছেন যে, ‘ঈশ্বরের সাথে তাঁর একত্ব’ যেরূপ ‘তাদের মধ্যকার একত্ব’-ও ঠিক তদ্রূপ।
এ কথা সুস্পষ্ট যে, যীশুর প্রেরিতগণ প্রকৃত অর্থে ‘একসত্ত্বা’ ছিলেন না, ঠিক তেমনি যীশুও প্রকৃত অর্থে ‘ঈশ্বরের’ সাথে ‘একসত্ত্বা’ ছিলেন না।
বস্তুত, ‘ঈশ্বরের সাথে এক’ হওয়ার অর্থ হলো, ঈশ্বরের ইচ্ছা ও নির্দেশের সাথে নিজের ইচ্ছা ও কর্ম এক করে দেওয়া। তাঁর পরিপূর্ণ আনুগত্য করা ও ধার্মিক জীবন যাপন করা। এই ঐক্যের মূল পর্যায়ে খৃস্ট, প্রেরিতগণ ও সকল বিশ্বাসী সমান। পার্থক্য হলো ঐক্যের শক্তি ও দুর্বলতায়। ঈশ্বরের সাথে এরূপ ঐক্যে খৃস্ট অন্যদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী ও তাঁর ঐক্য পূর্ণতর।
তাহলে এ সকল বক্তব্যে ‘একত্ব’, ঐক্য বা এক হওয়ার অর্থ আল্লাহর ইচ্ছার সাথে নিজের ইচ্ছাকে এক করে দেওয়া, তার আনুগত্যে ও সেবায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া। একত্ব অর্থ সকলে সত্ত্বা এক হয়ে যাওয়া নয়। প্রেরিত ও শিষ্যগণের এক হওয়ার অর্থ তাদের সকলের সত্ত্বা এক হওয়া নয়। অনুরূপভাবে যীশু ও ঈশ্বরের এক হওয়ার অর্থ উভয়ের সত্ত্বা এক হওয়া নয়।
চতুর্থ প্রমাণ: যীশুর ঈশ্বরত্বের পক্ষে খৃস্টানদের চতুর্থ প্রমাণ যীশুকে দেখলেই ঈশ্বরকে দেখা হবে বলে যীশুর বক্তব্য। যোহনলিখিত সুসমাচারের ১৪ অধ্যায়ে রয়েছে: ‘‘(৯)...যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে; তুমি কেমন করিয়া বলিতেছ, পিতাকে আমাদের দেখাউন? (১০) তুমি কি বিশ্বাস কর না যে, আমি পিতাতে আছি এবং পিতা আমাতে আছেন? আমি তোমাদিগকে যে সকল কথা বলি, তাহা আপনা হইতে বলি না; কিনতু পিতা আমাতে থাকিয়া আপনার কার্য সকল সাধন করেন।’’
খৃস্টানগণ দাবি করেন যে, খৃস্টের এই কথাগুলি: ‘‘যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে (he that hath seen me hath seen the Father)’’, ‘‘আমি পিতাতে আছি এবং পিতা আমাতে আছেন (I am in the Father, and the Father in me)’’ এবং ‘‘পিতা আমাতে থাকিয়া (the Father that dwelleth in me) আপনার কার্য সকল সাধন করেন’’ এগুলি প্রমাণ করে যে, খৃস্ট ও ঈশ্বর একই সত্ত্বা ছিলেন বা ঈশ্বরের সত্ত্বা যীশুর সত্ত্বার মধ্যে অবতরণ ও অবস্থান করেছিল।
তাঁদের এই দাবি দুটি কারণে অগ্রহণযোগ্য।
প্রথমত, বাইবেলে প্রমাণ করে যে, এ পৃথিবীতে ঈশ্বরকে দেখা যায় না। কাজেই যীশুর কথা তাদের মতেই প্রকৃত অর্থে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এজন্য তাঁরা ব্যাখ্যা করেন যে, এখানে ঈশ্বরকে দেখা বলতে ঈশ্বরকে জানা বুঝানো হয়েছে। আর খৃস্টকে তার দৈহিকরূপে দেখলে বা তার দেহকে জানলে ঈশ্বরকে দেখা বা জানা হয় না। এ বক্তব্যের সঠিক অর্থ হলো, যে ব্যক্তি যীশুর কর্মকান্ড দেখবে সে যেন ঈশ্বরের কর্মই দেখল; কারণ ঈশ্বরের ইচ্ছা, আদেশ ও শক্তিতেই তিনি এ সকল কর্ম করেছেন।
দ্বিতীয়ত, যীশুর শিষ্যদের ক্ষেত্রেও এরূপ কথা বলা হয়েছে। উপর্যুক্ত যোহনলিখিত সুসমাচারের ১৪ অধ্যায়ের ২০ শ্লোকে যীশু বলেছেন: ‘‘সেই দিন তোমরা জানিবে যে, আমি আমার পিতাতে আছি, ও তোমরা আমাতে আছ, এবং আমি তোমাদের মধ্যে আছি।’’
যোহন ১৭/২১ শ্লোকে যীশু তাঁর শিষ্যদের বিষয়ে বলেন: ‘‘পিতঃ, যেমন তুমি আমাতে ও আমি তোমাতে, তেমনি তাহারাও যেন আমাদের মধ্যে থাকে (that they also may be one in us)।’’
করিন্থীয়দের প্রতি প্রেরিত ১ম পত্রের ৬/১৯ শ্লোকে [বাংলায় শেষ বাক্যটি ২০ শ্লোকের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।] শ্লাকে সাধু পল বলেন: ‘‘অথবা তোমরা কি জান যে, তোমাদের দেহ পবিত্র আত্মার মন্দির, যিনি তোমাদের অনতরে থাকেন, যাঁহাকে তোমরা ঈশ্বর হইতে প্রাপ্ত হইয়াছ? আর তোমরা নিজের নও।’’
২ করিন্থীয় ৬/১৬: ‘‘আমরাই ত জীবনত ঈশ্বরের মন্দির, যেমন ঈশ্বর বলিয়াছেন, আমি তাহাদের মধ্যে বসতি করিব (I will dwell in them)।
ইফিষীয় ৪/৬: ‘‘সকলের ঈশ্বর ও পিতা এক, তিনি সকলের উপরে, সকলের নিকটে ও (তোমাদের) সকলের মধ্যে (in you all) [বাংলা বাইবেলে ‘‘সকলের অন্তরে’’।] আছেন।’’
খৃস্টানদের ব্যাখ্যা অনুসারে এ বাক্যগুলি দ্বারা যীশুর শিষ্যদের ঈশ্বরত্ব প্রমাণিত হয়! কারণ একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, যার মধ্যে কেউ অবস্থান করছেন তিনি যদি কোথাও অবস্থান করেন, তবে তার মধ্যের সত্ত্বাও তথায় অবস্থান করবেন। আর যীশু ও ঈশ্বর এক এবং যীশুর মধ্যে ঈশ্বর রয়েছেন। সেই যীশু ও শিষ্যগণ এক এবং শিষ্যগণের মধ্যে যীশু অবস্থান ও অবতরণ করেছেন। কাজেই শিষ্যদের মধ্যেও ঈশ্বর অবতরণ ও অবস্থান করছেন। কারো মধ্যে ঈশ্বরের অবস্থান করা যদি উক্ত ব্যক্তির সাথে ঈশ্বরের একত্ব (union) বা উক্ত ব্যক্তির ঈশ্বরত্ব প্রমাণ করে, তবে বাইবেলের উপর্যুক্ত বক্তব্যগুলি দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, যীশুর প্রেরিত শিষ্যগণ সকলেই ঈশ্বর, বরং করিন্থের বাসিন্দাগণ সকলেই ঈশ্বর এবং ইফেসাস (Ephesus) অঞ্চলের সকল বাসিন্দাই ঈশ্বর! কোনো খৃস্টান কি তা মানবেন!
বস্তুত কারো মধ্যে ঈশ্বরের অবস্থান, কারো সাথে ঈশ্বরের এক হওয়া, কারো মধ্যে যীশুর অবস্থান বা কারো সাথে যীশুর এক হওয়া ইত্যাদি দ্বারা আনুগত্য ও মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। যীশুকে জানা ও তার আনুগত্য করার অর্থ তাঁর প্রেরণকারী মহান আল্লাহকে জানা ও তাঁর আনুগত্য করা। কারণ তাঁর আদেশের মধ্যেই রয়েছে আল্লাহর আদেশ। অনুরূপভাবে শিষ্যদের আনুগত্য করার অর্থ তাঁদের প্রেরণকারী যীশুর আনুগত্য করা; কারণ তাঁদের নির্দেশের মধ্যেই তাঁর নির্দেশ নিহিত। ঐক্য ও মধ্যে থাকার এ হলো সঠিক ব্যাখ্যা। [যদিও যীশুর ঈশ্বরত্ব প্রচলিত খৃস্টধর্মের মূল ভিত্তি, কিন্তু বাইবেলের বক্তব্য দিয়ে তা সমর্থন করা খুবই কঠিন। কোথাও যীশু স্পষ্ট করে তা বলেন নি। তার বিপরীতে ঈশ্বরের একত্বের কথা ও তাঁর নিজের মানবত্বের কথা ও অ-ঈশ্বরত্বের কথা তিনি বারংবার বলেছেন। তারপরও তাঁরা বাইবেলের বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে তা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। তাদের মূল দলীলগুলি উপরে আলোচিত হয়েছে। এগুলির পাশাপাশি অনেক সময় তারা যে সকল বিষয়কে যীশুর ঈশ্বরত্বের প্রমাণ হিসেবে পেশ করতে চেষ্টা করেন সেগুলির অন্যতম হলো: (১) যীশুর পিতা ব্যতিরেকে জন্ম ও (২) যীশু কর্তৃক অলৌকিক কার্যাদি, বিশেষত মৃতকে জীবিত করা। বাইবেলের আলোকে এ দুটি বিষয়ের একটিও ঈশ্বরত্বের প্রমাণ নয়। বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আদম পিতামাতা ব্যতিরেকে জন্মগ্রহণ করেন। এছাড়া বাইবেলের উল্লেখ করা হয়েছে যে, অবরাহামের সমসাময়িক যাজক মল্কীষেদক (Melchisedec)-ও পিতামাতা ব্যতিরেকেই জন্ম গ্রহণ করেন। ইব্রীয় ৭/১-৩ শ্লোকে সাধু পল লিখেছেন: ‘‘সেই যে মল্কীষেদক... তাঁহার পিতা নাই, মাতা নাই, পূর্বপুরুষাবলি নাই, ... ’’। অলৌকিক কার্য বা মৃতকে জীবিত করাও যীশুর কোনো বিশেষত্ব নয়। যদি আমরা প্রচলিত সুসমাচারগুলির এ বিষয়ক বর্ণনাগুলি সঠিক বলে মেনে গ্রহণ করি, তবে তা থেকে প্রমাণিত হবে যে, যীশু মাত্র তিন ব্যক্তিকে জীবিত করেছিলেন। পক্ষান্তরে যিহিষ্কেল ভাববাদী হাজার হাজার মৃত মানুষকে জীবিত করেন (যিহিষ্কেল ৩৭/১-১৪)। কাজেই মৃতকে জীবিত করা যদি ঈশ্বরত্বের প্রমাণ হয় তবে যিহিষ্কেল ভাববাদীই ঈশ্বর হওয়ার অধিকতর যোগ্যতা রাখেন। এছাড়া এলিয় (Elijah) একটি মৃত শিশুকে পুনর্জীবিত করেন (১ রাজাবলির ১৭/১৭-২৪)। ইলীশায় (Elisha) একজন মৃত বালককে পুনর্জীবিত করেন (২ রাজাবলির ৪/৮-৩৭)। এছাড়া ইলীশায় ভাববাদী কুষ্ঠরোগীকে তার কুষ্ঠরোগ থেকে আরোগ্য করেছিলেন (২ রাজাবলির ৫/১-১৪)। মূসা (আ)-এর অলৌকিক কার্যাদি প্রসিদ্ধ। অলৌকিক কার্য ঈশ্বরত্বের প্রমাণ হলে এরা সকলেই ঈশ্বর বলে গণ্য হতেন।]
প্রিয় পাঠক, এখানে খৃস্টের ঈশ্বরত্বের পক্ষে পেশকৃত খৃস্টের বা প্রেরিতদের বাণীগুলি উল্লেখ করে সেগুলির প্রকৃত অর্থ ব্যাখ্যা করেছি খৃস্টান প্রচারকদের দাবির অসারতা নিশ্চিত করার জন্য। অন্যথায় আমাদের বিশ্বাস, নতুন নিয়মে উদ্ধৃত এ সকল বক্তব্য বা বাণী খৃস্টের বা তার প্রেরিতদের বলে প্রমাণিত নয়। প্রচলিত এ সকল পুস্তকের কোনোটিরই অবিচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরা সংরক্ষিত নেই। এছাড়া এসকল পুস্তকের মধ্যে সাধারণভাবে পরিবর্তন, পরিবর্তন, সংযোজন ও বিয়োজনের মাধ্যমে অগণিত বিকৃতি সাধিত হয়েছে। খৃস্টের ঈশ্বরত বা ত্রিত্বের বিষয়ে বিশেষভাবে বিকৃতি সাধন করা হয়েছে। এ সকল বিষয়ে বিকৃতি সাধন করা বা মিথ্যা বলা খৃস্টান পণ্ডিতদের একটি সুপরিচিত অভ্যাস। [ঈশ্বরের গৌরব প্রমাণের জন্য পৌল মিথ্যা কথা বলতেন বলে নিজেই স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন: "For if the truth of God hath more abounded through my lie unto his glory; why yet am I also judged as a sinner? কিনতু আমার মিথ্যায় যদি ঈশ্বরের সত্য তাঁহার গৌরবার্থে উপচিয়া পড়ে, তবে আমিও বা এখন পাপী বলিয়া আর বিচারিত হইতেছি কেন?’’ (রোমান ৩/৭) এ থেকে জানা যায় যে, তিনি যে বিষয়কে ‘ঈশ্বরের গৌরব’ প্রকাশক বলে কল্পনা করেছেন, সে বিষয়ে ঈশ্বর, যীশু বা পবিত্র-আত্মার নামে বানোয়াট ও মিথ্যা কথা বলতে মোটেও দ্বিধা করতেন না। তাঁর অনুসারী খৃস্টান ধর্মগুরুগণও এ মূলনীতিতে বিশ্বাসী ও পালনকারী।]
আমরা বিশ্বাস করি যে, নিঃসন্দেহে যীশু খৃস্ট এবং তাঁর প্রেরিতগণ এ সব কুফরী বা ঈশ্বর বিরোধী (blasphemous) বিশ্বাস থেকে বিমুক্ত ও পবিত্র ছিলেন। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা (দাস) ও রাসূল (প্রেরিত ভাববাদী) এবং ঈসা (যীশু) আল্লাহর বান্দা (দাস) ও রাসূল (প্রেরিত ভাববাদী) এবং যীশুর প্রেরিতগণ আল্লাহ প্রেরিতের প্রেরিত।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/612/43
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।