hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সংক্ষেপিত ইযহারুল হক্ক

লেখকঃ ড. মুহাম্মাদ আহমদ আব্দুল কাদির মালকাবী

৬৮
৩. ২. ২. ১. ইয়াহূদী ধর্মে হাদীস বা মৌখিক বর্ণনা
ইয়াহূদীগণ তাদের ধর্মীয় বিধান বা শরীয়ত (Law) দুই ভাগে বিভক্ত করেন। প্রথম ভাগ লিখিত শরীয়ত (scriptural laws), যাকে তারা তোরাহ বলত এবং দ্বিতীয় ভাগ মৌখিক শরীয়ত (oral laws), যেগুলি ধর্মগুরু ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের (elders) মাধ্যমে যুগ পরম্পরায় তাদের নিকট পৌঁছেছে। তারা দাবি করেন যে, সদাপ্রভু ঈশ্বর মোশিকে সিনাই পর্বতে এ দু প্রকার বিধানই প্রদান করেন। আমাদের নিকট এক প্রকারের বিধান লিখিতভাবে পৌঁছেছে এবং দ্বিতীয় প্রকারের বিধান ধর্মগুরুদের মাধ্যমে মৌখিকভাবে পৌঁছেছে। এজন্য তারা বিশ্বাস করেন যে, উভয় প্রকারের বিধানই সমান গুরুত্বপূর্ণ, উভয়ই ঈশ্বরের পক্ষ থেকে এবং উভয়কেই গ্রহণ করতে হবে। বরং তারা দ্বিতীয় প্রকার বিধান বা অলিখিত মৌখিকভাবে বর্ণিত বিধানকেই অধিকতর গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার প্রদান করেন। তারা বলেন, লিখিত বিধান (scriptural laws) অনেক স্থানেই অসম্পূর্ণ ও অবোধগম্য। কাজেই মৌখিক বর্ণনার উপর নির্ভর না করে কেবলমাত্র লিখিত বিধান পরিপূর্ণভাবে ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তি হতে পারে না। মৌখিক বর্ণনাগুলি সুস্পষ্ট ও পূর্ণতর। সেগুলি লিখিত বিধানের ব্যাখ্যা করে এবং পূর্ণতা প্রদান করে। একারণে লিখিত বিধানের বা তাওরাতের কোনো অর্থ মৌখিক বিধান, অর্থাৎ tradition বা হাদীসের বিপরীত হলে ইয়াহূদীগণ তা প্রত্যাখ্যান করেন।

ইয়াহূদীদের মধ্যে প্রসিদ্ধ যে, ইয়াহূদীদের থেকে ঈশ্বর যে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেছেন, তা লিখিত বিধান পালনের জন্য নয়, বরং এ সকল মৌখিক লোখমুখে প্রচারিত বিধিবিধানের জন্য। এভাবে তারা প্রকৃতপক্ষে লিখিত বিধান বা তোরাহকে বাতিল বলে পরিত্যাগ করেন এবং অলিখিত বা মৌখিকভাবে প্রচলিত বিধানগুলিকেই তাদের ধর্মের ও বিশ্বাসের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেন। এ সকল মৌখিক বর্ণনার ভিত্তিতেই ইয়াহূদীগণ ঈশ্বরের বাণীর ব্যাখ্যা করেন, যদিও অনেক স্থানেই এ সকল মৌখিক বর্ণনার অর্থ লিখিত কিতাব বা তাওরাতের সাথে সাংঘর্ষিক।

যীশু খৃস্টের সময়ে এ বিষয়ে তাদের অবস্থা সীমালঙ্ঘনের পর্যায়ে পৌঁছায়। এ সময়ে তারা লিখিত তাওরাতের চেয়ে মৌখিক বর্ণনা ও জনশ্রুতিকে অনেক বেশি মর্যাদা দিতেন। যীশু তাদেরকে মৌখিক বর্ণনার ভিত্তিতে ঈশ্বরের বাণী বাতিল করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। যীশুর যুগের পরে তারা মৌখিক বর্ণনার বিষয়ে আরো বেশি গুরুত্ব আরোপ করতে থাকেন। ইয়াহূদীদের গ্রন্থাবলিতে তারা উল্লেখ করেন যে, মৌখিক বর্ণনার মাধ্যমে প্রাপ্ত ধর্মগুরুগণের বা আলিমগণের বাণী তোরাহ-এর বাণীর চেয়েও বেশি প্রিয়। তোরাহ-এর বাণী কোনোটি সুন্দর ও কোনোটি অসুন্দর। আর পণ্ডিতগণ বা ধর্মগুরুদের বাণী সবই সুন্দর। ধর্মগুরুগণের বাণী ভাববাদীগণের বাণীর চেয়েও সুন্দরতর।

এরূপ আরো অনেক কথা তাদের পুস্তকাদিতে রয়েছে, যেগুলি থেকে জানা যায় যে, তারা লিখিত তোরাহ-এর চেয়ে অলিখিত মৌখিক বর্ণনাগুলিকে বেশি মর্যাদা প্রদান করেন। এ সকল মৌখিক বর্ণনা যেভাবে ব্যাখ্যা করে, তারা সেভাবেই ঈশ্বরের বাণীর ব্যাখ্যা করেন। এভাবে মনে হয় যে, তাদের বিশ্বাসে লিখিত তোরাহ প্রাণহীন দেহের মত, আর মৌখিক বর্ণনাসমূহ আত্মার মত, যদ্বারা তোরাহ প্রাণলাভ করে।

ইয়াহূদীরা বলেন, সদাপ্রভু ঈশ্বর যখন মোশিকে তোরাহ প্রদান করেন, তখন তোরাহ-এর অর্থও তাঁকে প্রদান করেন। তিনি প্রথমটিকে লিখে রাখতে নির্দেশ দেন। আর দ্বিতীয়টির বিষয়ে নির্দেশ দেন যে, তা মুখস্থ রাখতে হবে এবং একমাত্র মৌখিক বর্ণনার মাধ্যমেই তা সবাইকে জানাতে হবে।

মোশি উভয় প্রকারের বিধান নিয়ে পর্বত থেকে ফিরে আসেন। ইস্রায়েল সন্তানগণকে তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি পর্বত থেকে ফিরে এসে হারোণ ও তার পুত্রদ্বয় ইলীয়াসর (Eleazar) ও ঈথামর (Ithamar) ও ৭০ জন ধর্মগুরু বা গোত্রপতিকে উভয় প্রকারের বিধান শিক্ষা দেন। তারা সকল ইস্রায়েল সন্তানকে এ বিষয়ে জানান। এভাবে তারা লিখিত বিধানকে লিখিতভাবে ও মৌখিক বিধানকে মৌখিকভাবে পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষা দেন। এভাবে পরবর্তী প্রায় দেড় হাজার বৎসর যাবৎ তা মৌখিকভাবে প্রচারিত হয়। অবশেষে ১৫০ খৃস্টাব্দের দিকে পবিত্র যিহূদা বা যিহূদা হা-কাদোশ (Judah ha-Nasi/ Judah ha-qadosh: 135-220AD) এ সকল মৌখিক বর্ণনা গ্রন্থাকারে সংকলন করতে শুরু করেন। প্রায় ৪০ বৎসর যাবৎ অক্লান্ত পরিশ্রম করে তিনি এগুলি গ্রন্থাকারে সংকলন করেন এবং গ্রন্থের নামকরণ করেন ‘মিশনা’ (Mishna)।’’ মূসা আলাইহিস সালাম থেকে প্রায় ১৭০০ বৎসর যাবৎ শুধুমাত্র লোকমুখে প্রচলিত ও প্রচারিত এ সকল মৌখিক বর্ণনার সমষ্টি এ মিশনা (Mishna) গ্রন্থ।

এই পুস্তকটি ‘মিশনা’ রচিত হওয়ার পর থেকে ইয়াহূদীদের মধ্যে তা অত্যন্ত প্রসিদ্ধি ও প্রচলন লাভ করে। তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তা শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষাদান করতে থাকেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, এর মধ্যে যা কিছু আছে সবই লিখিত তাওরাতের মতই আল্লাহর নিকট থেকে পাওয়া এবং তা মান্য করা অত্যাবশ্যক।

বড় বড় ইয়াহূদী পণ্ডিত এই পুস্তকটির দুটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করেন। একটি তৃতীয় খৃস্টীয় শতকে (অন্য মতে পঞ্চম শতকে) যিরূশালেমে রচিত। দ্বিতীয় ব্যাখ্যাগ্রন্থটি খৃস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে ব্যাবিলনে রচিত হয়। প্রত্যেক ব্যাখ্যাগ্রন্থকেই ‘জেমারা’ (Gemara)। জেমারার আভিধানিক অর্থ ‘পূর্ণতা’। তাদের ধারণায় এই দুই ব্যাখ্যার মাধ্যমে ‘মিশনা’ গ্রন্থটির অর্থ পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হয়। এজন্য এগুলিকে ‘জেমারা’ বলা হয়। মিশনার মূল পাঠ ও ব্যাখ্যাকে একত্রে ‘তালমূদ’ (study or learning) বলা হয়। উভয় ব্যাখ্যাকে পৃথক করার জন্য প্রথমটিকে বলা হয় ‘যিরূশালেমীয় তালমূদ’ বা ‘ফিলিস্থিনী তালমূদ’ (Palestinian Talmud/Talmud Yerushalmi) এবং দ্বিতীয়টিকে বলা হয় ‘ব্যাবিলনীয় তালমূদ (Babylonian Talmud/Talmud Bavli)।

মিশনার ব্যাখ্যা জেমারাগুলি অবাস্তব ভিত্তিহীন কাহিনীতে পরিপূর্ণ। তবে ইয়াহূদীদের নিকট তা অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও পবিত্র। এগুলির পঠন ও পাঠন তাদের মধ্যে অতি প্রচলিত। সকল সমস্যায় তারা এগুলির স্মরণাপন্ন হন। তাঁরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, এই পুস্তকই তাদের পথের দিশারী।

বর্তমানে ইয়াহূদীদের ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মাচারের ভিত্তি মূলত এ দুই তালমূদের উপরে, যেগুলি তাওরাত ও পুরাতন নিয়মের অন্যান্য পুস্তক থেকে অনেক দূরবর্তী। তারা যিরুশালেমের তালমূদের চেয়ে ব্যাবেলনীয় তালমূদকে অধিক গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন।

এভাবে আমরা দেখছি যে, ইয়াহূদীগণ ১৭০০ বৎসর যাবৎ শুধুমাত্র মৌখিকভাবে প্রচলিত ও প্রচারিত বর্ণনার উপরে নির্ভর করেন এবং লিখিত তাওরাত ও পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলির চেয়ে এগুলিকে অধিক গ্রহণযোগ্য বলে বিশ্বাস করেন। আমরা দেখেছি যে, এ ১৭০০ বৎসরের মধ্যে তারা অনেকবার ভয়ঙ্কর ধ্বংসযজ্ঞ, গণহত্যা, গণবন্দীদশা ও গণবিতাড়ণের শিকার হন। যে সকল ঘটনায় তাদের লিখিত ধর্মগ্রন্থই বিলুপ্ত হয়ে যায়, কাজেই মৌখিক বর্ণনার সূত্র আর থাকে কোথায়? আর এরূপ মৌখিক বর্ণনার উপর নির্ভরকরিগণ কিভাবে মুসলিমদের মৌখিক বর্ণনার বিষয়ে আপত্তি করেন? মুসলিমরা তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের মাত্র দুই শতাব্দীর মধ্যে মৌখিক বর্ণনাগুলি সংকলন করেছেন। এ দুশ বৎসরও তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলি লিখে রেখেছেন, এগুলির সূত্র রক্ষা করেছেন এবং এগুলির বিশুদ্ধতা বিচারে বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষাপদ্ধতি অনুসরণ করেছেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন