hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সংক্ষেপিত ইযহারুল হক্ক

লেখকঃ ড. মুহাম্মাদ আহমদ আব্দুল কাদির মালকাবী

৩৭
১. ৪. ৩. ১. পরবর্তী ব্যবস্থায় পূর্ববর্তী ব্যবস্থার রহিতকরণ
প্রথমে পরবর্তী নবীর শরীয়ত বা ব্যবস্থায় পূর্ববর্তী নবীর শরীয়ত বা ব্যবস্থার নাসখ বা রহিতকরণের কিছু উদাহরণ পেশ করছি:

১. ভাই-বোনের বিবাহের বৈধতা রহিত

আদম আলাইহিস সালাম-এর শরীয়তে বা ব্যবস্থায় ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ বৈধ ছিল। তাঁর সন্তানগণ এভাবে বিবাহ-শাদি করতেন। [বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী অবরাহামের স্ত্রী সারা আবরাহামের বৈমাত্রেয় ভগ্নি ছিলেন। আদিপুস্তক ২০/১২।] পরে মোশির ব্যবস্থায় ভগ্নিকে বিবাহ করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। আপন ভগ্নি, বৈমাত্রেয় ভগ্নি ও বৈপিত্রেয় ভগ্নি সকল প্রকারের ভগ্নিকে বিবাহ করাই নিষিদ্ধ। এরূপ বিবাহ ব্যভিচার বলে গণ্য এবং এরূপ বিবাহকারী অভিশপ্ত। এরূপ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ স্বামী-স্ত্রী উভয়কে হত্যা করা অত্যাবশ্যক। লেবীয় পুস্তকের ১৮ অধ্যায়ের ৯ শ্লোকে বলা হয়েছে: ‘‘তোমার ভগিনী, তোমার পিতৃকন্যা কিম্বা তোমার মাতৃকন্যা, গৃহজাতা হউক কিম্বা অন্যত্র জাতা হউক, তাহাদের আবরণীয় অনাবৃত করিও না।’’

লেবীয় ২০/১৭ শ্লোকটি নিম্নরূপ: ‘‘আর যদি কেহ আপন ভগিনীকে, পিতৃকন্যাকে কিম্বা মাতৃকন্যাকে গ্রহণ করে, ও উভয়ে উভয়ের্ আবরণীয় দেখে, তবে তাহা লজ্জাকর বিষয়; তাহারা আপন জাতির সন্তানদের সাক্ষাতে হত্যাকৃত [বাংলা বাইবেলে এখানে ‘হত্যাকৃত’-এর পরিবর্তে ‘‘উচ্ছিন্ন’’ বলা হয়েছে। আরবীতে ‘হত্যাকৃত’ বলা হয়েছে। ইংরেজি বাইবেলের পাঠ নিম্নরূপ: (and they shall be cut off in the sight of their people)।] হইবে; আপন ভগিনীর আবরণীয় অনাবৃত করাতে সে আপন অপরাধ বহন করিবে।’’

দ্বিতীয় বিবরণ ২৭/২২: ‘‘যে কেহ আপন ভগিনীর সহিত, অর্থাৎ পিতৃকন্যার কিম্বা মাতৃকন্যার সহিত শয়ন করে, সে শাপগ্রস্থ।’’

এথেকে প্রমাণিত হলো যে, আদম আলাইহিস সালাম-এর ব্যবস্থায় (শরীয়তে) ভগিনীকে বিবাহ করা বৈধ ছিল। তা নাহলে প্রমাণিত হবে যে, সকল আদম-সন্তান ‘ব্যভিচার-তুল্য বিবাহের’ জারজ সন্তান এবং আদমের সন্তানগণ যারা এরূপ বিবাহ করেছিলেন তাঁরা সকলেই ব্যভিচারী ছিলেন, হত্যাযোগ্য অপরাধে অপরাধী ছিলেন এবং অভিশপ্ত ছিলেন। সঠিক কথা হলো, এরূপ বিবাহ পূর্বতন ভাববাদিগণের ব্যবস্থায় বৈধ ছিল, এরপর মোশির ব্যবস্থায় এই বৈধতা ‘রহিত’ করা হয়।

২. সকল প্রাণী ভক্ষণের জন্য বৈধ ছিল পরে তা রহিত করা হয়

আদিপুস্তকের ৯ম অধ্যায়ের ৩ শ্লোকে নোহের সন্তানদেরকে উদ্দেশ্য করে ঈশ্বর বলেন: ‘‘প্রত্যেক গমনশীল প্রাণী তোমাদের খাদ্য হইবে (Every moving thing that liveth shall be meat for you); আমি হরিৎ ওষধির (green herb) ন্যায় সে সকল তোমাদিগকে দিলাম।’’

এভাবে আমরা দেখছি যে, নোহ-এর ব্যবস্থায় সকল প্রাণীই সবুজ শাকশব্জি-ফলমুলের মত বৈধ বা হালাল ছিল। পরবর্তীকালে মোশির ব্যবস্থায় অনেক প্রাণীর বৈধতা ‘‘রহিত’’ করে সেগুলি ভক্ষণ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। লেবীয় পুস্তকের ১১/৪-৮ এবং দ্বিতীয় বিবরণের ১৪/৭-৮-এ যে বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এখানে দ্বিতীয় বিবরণের ১৪/৭-৮ উদ্ধৃত করছি: ‘‘(৭) কিন্তু যাহারা জাওর কাট, কিম্বা দ্বিখণ্ড খুরবিশিষ্ট, তাহাদের মধ্যে এইগুলি ভোজন করিবে না: উষ্ট্র, শশক (hare: খরগোশ) ও শাফন (coney: খরগোশ); কেননা তাহারা জাওর কাটে বটে, কিন্তু দ্বিখণ্ড খুরবিশিষ্ট নয়, তাহারা তোমাদের পক্ষে অশুচি; (৮) আর শূকর দ্বিখণ্ড খুরবিশিষ্ট বটে, কিন্তু জাওর কাটে না, সে তোমাদের পক্ষে অশুচি; তোমরা তাহাদের মাংস ভোজন করিবে না, তাহাদের শব স্পর্শও করিবে না।’’

৩. দুবোনকে একত্রে বিবাহ করা বৈধ ছিল পরে রহিত করা হয়

যাকোব (ইয়াকূব আ) লেয়া ও রাহেল নামক দু বোনকে বিবাহ করেন। এ দুইজনই ছিলেন তাঁর মামাতো বোন। আদিপুস্তকের ২৯ অধ্যায়ের ১৫-৩৫ শ্লোকে বিষয়টি স্পষ্ট বলা হয়েছে। মোশির ব্যবস্থায় দু বোনকে একত্রে বিবাহ করার বৈধতা ‘‘রহিত’’ করা হয়। লেবীয় পুস্তকের ১৮/১৮ শ্লোকে বলা হয়েছে: ‘‘আর স্ত্রীর সপত্নী হইবার জন্য তাহার জীবৎকালে আবরণীয় অনাবৃত করণার্থে তাহার ভগিনীকে বিবাহ করিও না।’’

যদি যাকোবের ব্যবস্থায় দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা বৈধ না হতো তা নাহলে প্রমাণিত হবে যে, যাকোবের এ বিবাহদুইটি অবৈধ ছিল এবং এ দুই স্ত্রীর সন্তানগণ সকলেই ব্যভিচার-জাত জারজ সন্তান, নাঊযু বিল্লাহ! অধিকাংশ ইস্রায়েলীয় ভাববাদীই যাকোবের এ দুই স্ত্রীর সন্তান।

৪. স্ত্রীকে তালাক দেওয়া ও অন্যত্র বিবাহ

মোশির ব্যবস্থায় বা শরীয়তে যে কোনো কারণে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন বা বিবাহ বিচ্ছেদ করতে পারেন। তালাকপ্রাপ্তা বা পরিত্যক্তা স্ত্রী তালাকদাতা স্বামীর গৃহ থেকে বেরিয়ে গেলে অন্য যে কোনো পুরুষ তাকে বিবাহ করতে পারেন। দ্বিতীয় বিবরণের ২৪ অধ্যায়ের ১-২ শ্লোকে বলা হয়েছে: ‘‘(১) কোন পুরুষ কোন স্ত্রীকে গ্রহণকরিয়া বিবাহ করিবার পর যদি তাহাতে কোন প্রকার অনুপযুক্ত ব্যবহার দেখিতে পায়, আর সেই জন্য সে স্ত্রী তাহার দৃষ্টিতে প্রীতিপাত্র না হয়, তবে সেই পুরুষ তাহার জন্য এক ত্যাগপত্র লিখিয়া তাহার হস্তে দিয়া আপন বাটী হইতে তাহাকে বিদায় করিতে পারিবে। (২) আর সে স্ত্রী তাহার বাটী হইতে বাহির হইবার পর গিয়া অন্য পুরুষের ভার্যা হইতে পারে।’’

পক্ষান্তরে যীশুর ব্যবস্থায় একমাত্র ব্যভিচারের অপরাধ ছাড়া কোনো স্বামী তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে না বা পরিত্যাগ করতে পারে না। অনুরূপভাবে অন্য কোনো ব্যক্তি সে পরিত্যক্তা স্ত্রীকে বিবাহ করতে পারবে না। এইরূপ বিবাহ ব্যভিচার বলে গণ্য হবে। মথিলিখিত সুসমাচারের ৫ম অধ্যায়ের ৩১-৩২ শ্লোকে এবং ১৯ অধ্যায়ের ৩-৯ শ্লোকে তা স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। মোশির ব্যবস্থার গোঁড়া অনুসারী ফরীশীগণ যীশুর নিকট এ বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করে বলেন যে, মোশি যেখানে ত্যাগপত্র বা তালাকনামা দিয়ে স্ত্রী পরিত্যাগের বিধান দিয়েছেন, সেখানে আপনি তা নিষেধ করছেন কেন? উত্তরে যীশু বলেন: ‘‘তোমাদের অন্তঃকরণ কঠিন বলিয়া মোশি তোমাদিগকে আপন আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিবার অনুমতি দিয়াছিলেন, কিন্তু আদি হইতে এরূপ হয় নাই। আর আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, ব্যভিচার দোষ ব্যতিরেকে যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্যাকে বিবাহ করে, সে ব্যভিচার করে; এবং যে ব্যক্তি সেই পরিত্যাক্তা স্ত্রীকে বিবাহ করে, সেও ব্যভিচার করে।’’ (মথি ১৯/৮-৯)

যীশুর এ উত্তর থেকে জানা গেল যে, এ বিধানের ক্ষেত্রে দুবার ‘রহিতকরণ’ ঘটেছে। প্রথম যুগে এইরূপ স্ত্রী-পরিত্যাগ অবৈধ ছিল। মোশির ব্যবস্থায় সেই অবৈধতা রহিত করে তা বৈধ করা হয়। পুনরায় যীশুর ব্যবস্থায় মোশির দেওয়া বৈধতা রহিত করা হয়। মূসার আলাইহিস সালাম শরীয়তে বৈধ বিষয়টি ঈসার আলাইহিস সালাম শরীয়তে ব্যভিচারের মত পাপ বলে গণ্য হয়।

৫. মূসার আলাইহিস সালাম ব্যবস্থার সকল বিধান রহিতকরণ!

ইস্রায়েলীগণের সকল বিধিবিধান তাওরাতের মধ্যে বিদ্যমান। ইস্রায়েল-বংশের সকল নবী বা ভাববাদী এ সকল বিধান পালনের জন্য আদিষ্ট ছিলেন। এ সকল বিধানের মধ্যে রয়েছে বৈধ ও অবৈধ বা শুচি ও অশুচি প্রাণী, খাদ্য ও পানীয়ের বিধান। ঈসা আলাইহিস সালাম ইস্রায়েল বংশের একজন নবী বা ভাববাদী। তিনি মূসার আলাইহিস সালাম শরীয়ত রহিত করেন নি, বরং তিনি তার অনুসারী ছিলেন। মথিলিখিত সুসমাচারের ৫/১৭-১৮ শ্লোকের বর্ণনায় তিনি বলেন: ‘‘(১৭) মনে করিও না যে, আমি ব্যবস্থা কি ভাববাদিগ্রন্থ লোপ করিতে আসিয়াছি; আমি লোপ করিতে আস নাই, কিন্তু পূর্ণ করিতে আসিয়াছি। (১৮) আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যে পর্যনত আকাশ ও পৃথিবী লুপ্ত না হইবে, সেই পর্যনত ব্যবস্থার (তাওরাত বা পুরাতন নিয়মের বিধিবিধান) এক মাত্রা কি এক বিন্দুও লুপ্ত হইবে না, সমস্তই সফল হইবে।’’

ড. ফান্ডার (Carl Gottaleb Pfander) তার লেখা ‘‘মীযানুল হক্ক’’ (Scale of Truth) গ্রন্থে যীশুর এ বক্তব্যকে ভিত্তি করে বলেছেন যে, তাওরাতের কোনো বিধান নাসখ বা রহিত হতে পারে না। তিনি বলেন যে, যীশু তাওরাতের কোনো বিধান রহিত করেন নি; কারণ তিনি রহিত করতে বা লোপ করতে আগমন করেন নি, বরং পূর্ণ করতে এসেছিলেন।

কিন্তু প্রকৃত সত্য কথা এই যে, মূসা আলাইহিস সালাম-এর ব্যবস্থার সকল হারাম ও নিষিদ্ধ বিষয় সাধু পলের (Paul)-এর এক ফতোয়ায় বৈধ ও হালালে পরিণত হয়েছে। সাধু পলের ধর্মে কোনো হারাম বা অবৈধ কিছু নেই। শুধু যারা নিজেরা অপবিত্র তাদের জন্যই হালাল-হারাম বা শুচি-অশুচির ব্যবস্থা। অশুচি বা খারাপ মানুষদের জন্য হালাল বা শুচি ও পবিত্র খাদ্যও অপবিত্র। আর শুচি বা পবিত্র মানুষদের জন্য সকল প্রকার হারাম, অপবিত্র ও অশুচি বিষয়ই হালাল ও পবিত্র। সাধু পলের এ এক মহা-বিস্ময়কর ফতোয়া!

রোমীয়দের প্রতি প্রেরিত পৌলের পত্রের ১৪ অধ্যায়ের ১৪ শ্লোকটি নিম্নরূপ: ‘‘আমি জানি, এবং প্রভু যীশুতে নিশ্চয় বুঝিয়াছি, কোন বস্তুই স্বভাবত অপবিত্র নয়; কিন্তু যে যাহা অপবিত্র জ্ঞান করে, তাহারই পক্ষে তাহা অপবিত্র।’’ তীতের প্রতি প্রেরিত পত্রের ১ম অধ্যায়ের ১৫ শ্লোকে পৌল লিখেছেন: ‘‘শুচিগণের পক্ষে সকলই শুচি (Unto the pure all things are pure); কিন্তু কলুষিত ও অবিশ্বাসীদের পক্ষে কিছুই শুচি নয়; বরং তাহাদের মন ও সংবেদ (বিবেক) উভয়ই কলুষিত হইয়া পড়িয়াছে।’’

সাধু পলের এ ফতোয়া থেকে প্রমাণিত হয় যে, মূসা আলাইহিস সালাম থেকে ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত ইস্রা্য়েল বংশের সকল নবী-ভাববাদী ও স্বয়ং যীশু কেউই পবিত্র ছিলেন না, একারণে তাঁদের ভাগ্যে এইরূপ ঢালাও বৈধতা জোটে নি। পক্ষান্তরে খৃস্টানগণ যেহেতু ‘পবিত্র’ সেহেতু তাঁরা এইরূপ ঢালাও বৈধতা লাভ করলেন। তাঁদের জন্য সব কিছুই বৈধ ও পবিত্র হয়ে গেল। স্বয়ং যীশু খৃস্টও মূসা আলাইহিস সালাম-এর ব্যবস্থা রহিত করে সব কিছু হালাল করতে পারলেন না; কারণ তিনি ও তার শিষ্যরা তো পবিত্র বা শুচি হতে পারেন নি। যেহেতু সাধু পল ও তার অনুসারীরা শুচিতা অর্জন করেন সেহেতু তাদের জন্য সকল হারাম ও অপবিত্র খাদ্য ও পানীয় বৈধ ও পবিত্র হয়ে গেল। এভাবে মহামতি সাধু পল মোশির ব্যবস্থা পুরোপুরি রহিত করতে সক্ষম হলেন!

খৃস্টধর্মের প্রতিষ্ঠাতা সাধু পল এ ‘ঢালাও বৈধতা’ প্রচারের ক্ষেত্রে খুবই সচেষ্ট ছিলেন। তিনি সর্বদা প্রাণপনে তাঁর অনুসারীদের বুঝাতে চেষ্টা করতেন যে, মোশির ব্যবস্থা পুরোপুরি রহিত ও বাতিল হয়ে গিয়েছে। এজন্য তিনি তীমথিয়ের প্রতি প্রেরিত প্রথম পত্রের ৪র্থ অধ্যায়ের ১-৭ শ্লোকে লিখেছেন: ‘‘(১) ... উত্তরকালে কতক লোক ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগেতে ও শয়তানদের [এখানে কেরির বঙ্গানুবাদে ‘‘ভুতগণের’’ লেখা হয়েছে। মূল ইংরেজী (devil)-এর সুপ্রসিদ্ধ অর্থ শয়তান।] শিক্ষামালায় মন দিয়া (giving heed to seducing spirits, and doctrines of devils) বিশ্বাস হইতে সরিয়া পড়িবে। ... (৩) ... এবং বিভিন্ন খাদ্যের ব্যবহার নিষেধ করে, যাহা ঈশ্বর এই অভিপ্রায়ে সৃষ্টি করিয়াছেন, যেন, যাহারা বিশ্বাসী ও সত্যের তত্ত্ব জানে, তাহারা ধন্যবাদ-পূর্ব ভোজন করে (and commanding to abstain from meats, which God hath created to be received with thanksgiving of them which believe and know the truth)। (৪) বাস্তবিক ঈশ্বরে সৃষ্ট সমস্ত বস্তুই ভাল; ধন্যবাদসহ গ্রহণ করিলে কিছুই অগ্রাহ্য নয়, (৫) কেননা ঈশ্বরের বাক্য ও প্রার্থনা দ্বারা তাহা পবিত্রীকৃত হয়। (৬) এই সকল কথা ভ্রাতৃগণকে মনে করাইয়া দিলে তুমি খৃস্ট যীশুর উত্তম পরিচারক হইবে; যে বিশ্বাসের ও উত্তম শিক্ষার অনুসরণ করিয়া আসিতেছ তাহার বাক্যে পোষিত থাকিবে। (৭) আর ধর্মবিরূপক ও জরাতুর স্ত্রীলোকের যোগ্য গল্পসকল অগ্রাহ্য কর (But refuse profane and old wives' fables)।’’ [সাধু পলের এ বক্তব্য থেকে কয়েকটি বিষয় জানা যায়: (১) যীশুখৃস্ট ও অন্যান্য ভাববাদিগণ যারা বিভিন্ন খাদ্যের ব্যবহার নিষেধ করেছেন তারা ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগের শয়তানদের শিক্ষামালা প্রচার করেছেন, (২) বিশ্বাস ও সত্যজ্ঞান থাকলে সকল হারাম খাদ্যই হালাল হয়ে যায়। (৩) সকল হারাম দ্রব্য ঈশ্বরের নাম নিয়ে খাওয়া যাবে এ কথা যত বেশি প্রচার করা যাবে ততবেশি যীশুর উত্তম শিষ্য হওয়া যাবে। (৪) অপবিত্র খাদ্য বর্জনের বিষয়ে যীশু ও অন্যান্য ভাববাদীর শিক্ষা ধর্মবিদ্বেষীয় কথা। আর যীশুখৃস্ট এরূপ ধর্মবিদ্বেষী কথাই বলেছেন, কারণ তিনি বলেছেন: ‘‘কেননা আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, অধ্যাপক ও ফরীশীদের অপেক্ষা তোমাদের ধার্মিকতা যদি অধিক না হয় তবে তোমরা কোন মতে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পারিবে না।’’ মথি ৫/১৭-২০।]

৬- মূসার আলাইহিস সালাম শরীয়তের সকল পর্ব ও দিবস রহিতকরণ

লেবীয় পুস্তকের ২৩ অধ্যায়ে যে সকল সাপ্তাহিক, মাসিক ও বাৎসরিক পর্ব পালনের বিধিবিধান প্রদান করা হয়েছে, মোশির ব্যবস্থা অনুসারে সেগুলি সবই চিরন্তন ও চিরস্থায়ী। এই অধ্যায়ের ১৪, ২১, ৩১ ও ৪১ শ্লোকে সুস্পষ্টতই উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই পর্ববিষয়ক বিধানগুলি সর্বত্র ও সর্বদা পালনীয় চিরস্থায়ী বিধান। [এ সকল শ্লোকে বারংবার বলা হয়েছে: ‘‘ইহা তোমাদের সকল নিবাসে পুরুষানুক্রমে পালনীয় চিরস্থায়ী বিধি।’’]

শনিবার (the sabbath of the LORD)-কে সম্মান করা এবং এ দিনে সকল প্রকার কাজকর্ম বন্ধ রাখা মোশির ব্যবস্থা অনুসারে একটি অলঙ্ঘনীয় চিরস্থায়ী বিধান। কেউ এ দিনে সামান্যতম কর্মও করতে পারবেন না। কেউ যদি এ দিনে কোনো প্রকারের কর্ম করেন তবে তাকে হত্যা করা অত্যাবশ্যক। পুরাতন নিয়মের পুস্তকাদির বিভিন্ন স্থানে বারংবার এই বিধান বর্ণনা করা হয়েছে এবং এর গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন: আদিপুস্তক ২/৩; যাত্রাপুস্তক ২০/৮-১১, ২৩/১২ ও ৩৪/২১; লেবীয় ১৯/৩ ও ২৩/৩; দ্বিতীয় বিবরণ ৫/১২-১৫; যিরমিয় ১৭/১৯-২৭; যিশাইয় ৫৬/১-৮ ও ৫৮/১৩-১৪; নহিমিয় ৯/১৪; যিহিষ্কেল ২০/১২-২৪।

এ দিনে সামান্যতম কর্ম করলেই তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাত্রাপুস্তকের ৩১/১২-১৭ ও ৩৫/১-৩ শ্লোকে। মূসার আলাইহিস সালাম সময়ে ইস্রায়েল-সন্তানগণ এক শনিবারে এক ব্যক্তিকে কাষ্ঠ সংগ্রহ করতে দেখেন। তখন তারা সেই কাষ্ঠসংগ্রহকারীকে আটক করে এবং সদাপ্রভুর নির্দেশে তাকে আবাসিক এলাকার বাইরে নিয়ে পাথর মেরে হত্যা করে। গণনা পুস্তকের ১৫ অধ্যায়ের ৩২-৩৬ শ্লোকে এ ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।

খৃস্টধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মহাপুরুষ সাধু পল (পৌল) মহাশয় শনিবার-সহ তাওরাতের সকল পর্ব ও দিবস রহিত ও বাতিল করে দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এ সকল বিধান সবই ছিল এক প্রকারের ইঙ্গিত ও ছায়া মাত্র। কলসীয়দের প্রতি প্রেরিত পৌলের পত্রের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ১৬ শ্লোকে তিনি লিখেছেন: ‘‘অতএব ভোজন কি পান, কি উৎসব, কি অমাবস্যা, কি বিশ্রামবার, এই সকলের সম্মন্ধে কেহ তোমাদের বিচার না করুক।’’

ডাওয়ালি ও রজারমেন্ট (G. D'Oyley and R. Mant)-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থে (Notes, Practical and Explanatory to the Holy Bible) কতিপয় খৃস্টান পণ্ডিতের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে যে, ইয়াহূদীদের মধ্যে তিন প্রকারের পর্ব প্রচলিত ছিল: প্রতি বছর বছর পালিত পর্ব, প্রতি মাসে মাসে পালিত পর্ব ও প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে পালিত পর্ব। এ সকল পর্ব সবই রহিত হয়ে গিয়েছে। এমনকি শনিবার সাবাথ বা বিশ্রামদিন পালনও রহিত হয়ে যায়। তদস্থলে খৃস্টানদের সাবাথ (রবিবার) পালনের ব্যবস্থা করা হয়।’’

৭- খাতনা বা ত্বকচ্ছেদ বিধান রহিতকরণ

খতনা বা ত্বক্ছেদ করা (circumcision) ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর শরীয়তের একটি অলঙ্ঘনীয় চিরস্থায়ী বিধান। আদিপুস্তকের ১৭ অধ্যায়ের ৯-১৪ শ্লোকে তা স্পষ্টরূপে বলা হয়েছে। কয়েকটি শ্লোক দেখুন: ‘‘(১২) পুরুষানুক্রমে তোমাদের প্রত্যেক পুত্রসন্তানের আট দিন বয়সে ত্বকচ্ছেদ হইবে। (১৩) ... আর তোমাদের মাংসে-বিদ্যমান আমার নিয়ম চিরকালের নিয়ম হইবে (my covenant shall be in your flesh for an everlasting covenant)।’’

এজন্য ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর দুই পুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ও ইসহাক আলাইহিস সালাম-এর বংশধরদের মধ্যে এ বিধান প্রচলিত থাকে। মূসা আলাইহিস সালাম-এর শরীয়ত বা ব্যবস্থায়ও এ বিধান কার্যকর থাকে। লেবীয় পুস্তকের ১২ অধ্যায়ের ৩ শ্লোকটি নিম্নরূপ: ‘‘পরে অষ্টম দিনে বালকটির পুরুষাঙ্গের ত্বক্ছেদ হইবে।’’

যীশুরও ত্বক্ছেদ করা হয়েছিল। লূকলিখিত সুসমাচারের ২ অধ্যায়ের ২১ শ্লোকে তা উল্লেখ করে বলা হয়েছে: ‘‘আর যখন বালকটির ত্বকচ্ছেদনের জন্য আট দিন পূর্ণ হইল, তখন তাঁহার নাম যীশু রাখা গেল।’’ খৃস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে এখন পর্যন্ত যীশুর ত্বক্ছেদ দিবস উপলক্ষে নির্ধারিত প্রার্থনা রয়েছে, যা তাঁরা এই দিবসের স্মরণে পালন করেন।

যীশুর ঊর্ধ্বারোহণ পর্যন্ত তক্বচ্ছেদ বা খাতনার এ বিধান কার্যকর ছিল। যীশু এ বিধান রহিত করেন নি। কিন্তু পরবর্তীকালে প্রেরিতগণের যুগে তাঁরা এই ‘চিরন্তন’ বিধানটি রহিত করেন। [প্রেরিতগণের কার্যবিবরণ ১৫ অধ্যায় দেখুন।]

খৃস্টধর্মের প্রতিষ্ঠাতা সাধু পল এ বিধানটি রহিত করার বিষয়ে অত্যন্ত দৃঢ়তা ও কঠোরতা অবলম্বন করেছেন। গালাতীয় ২/৩-৫, ৫/১-৬, ৬/১১-১৬; ফিলীপিয় ৩/৩; কলসীয় ২/১১ ইত্যাদি স্থানে তিনি বারংবার খাতনা বা তক্বচ্ছেদ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এবং খাতনা করলে আর যীশুর অনুগ্রহ পাওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করেছেন। এখানে শুধু গালাতীয় ৫/২ ও ৬ শ্লোক উদ্ধৃত করছি। তিনি বলেন: ‘‘(২) দেখ, আমি পৌল তোমাদিগকে কহিতেছি, যদি তোমরা ত্বক্ছেদ প্রাপ্ত হও, তবে খৃস্ট হইতে তোমাদের কিছুই লাভ হইবে না। ... (৬) কারণ খৃস্ট যীশুতে ত্বক্ছেদের কোন শক্তি নাই, অত্বকচ্ছেদেরও নাই; কিন্তু প্রেম দ্বারা কার্যসাধক বিশ্বাসই শক্তিযুক্ত।’’ [অর্থাৎ, অপবিত্র খাদ্যভক্ষণ, ব্যভিচার ইত্যাদির চেয়েও কঠিন অপরাধ হলো ত্বকছেদ করা। এ সকল অপরাধ করলে কেউ অনুগ্রহ থেকে পতিত হবে না। কিন্তু ত্বকছেদ করলে সে অনুগ্রহ থেকে পতিত হবে এবং খৃস্ট থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।]

খৃস্টানগণ তাদের ধর্মগ্রন্থের এ চিরস্থায়ী বিধান, যা স্বয়ং যীশুও পালন করেছেন এবং নিষেধ বা রহিত করেন নি, সে বিধানকে সাধু পলের নির্দেশে বাতিল করে দেন এবং রহিত বলে গণ্য করেন।

৮- সাধু পলের দৃষ্টিতে তাওরাত বা পুরাতন নিয়মের মূল্য:

সাধু পল বারংবার বলেছেন যে, তাওরাত বা পুরাতন নিয়ম বাতিল, অচল, দুর্বল ও নিষ্ফল। ইব্রীয়দের প্রতি পত্রের ৭ম অধ্যায়েরই ১৮ শ্লোকটি নিম্নরূপ: ‘‘কারণ এক পক্ষে পূর্বকার বিধির দুর্বলতা ও নিষ্ফলতা প্রযুক্ত তাহার লোপ (রহিতকরণ) হইতেছে (For there is verily a disannulling of the commandment going before for the weakness and unprofitanleness thereof)।’’

বাইবেলের আরবী অনুবাদের বিভিন্ন সংস্করণের এখানে disannulling বা লোপ-এর অনুবাদে ‘‘নাসখ’’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ১৮২৫, ১৮২৬ সালের আরবী বাইবেলে এ শ্লোকের অনুবাদে বলা হয়েছ: ‘‘পূর্ববতী বিধানের (পুরাতন নিয়মের) দুর্বলতা ও নিষ্ফলতার কারণে তা নাসখ বা রহিত করা হয়েছে।’’

১৬৭১, ১৮২৩ ও ১৮৪৪ সালের আরবী বাইবেলে শ্লোকটি নিম্নরূপ: ‘‘পূর্ববর্তী নিয়ম বাতিল ও অচল হয়েছে কারণ তার দুর্বল ও তার মধ্যে কোনো ফায়েদা বা উপকার নেই।’’ ১৮৮২ সালের আরবী সংস্করণে বলা হয়েছে: ‘‘পূর্ববর্তী নিয়ম আমরা প্রত্যাখ্যান করি কারণ তার দুর্বলতা ও তার মধ্যে কোনো ফায়দা বা কল্যাণ না থাকা।’’

ইব্রীয়দের প্রতি প্রেরিত পৌলের পত্রের ৮ম অধ্যায়ের ৭ ও ১৩ শ্লোক: ‘‘(৭) কারণ ঐ প্রথম নিয়ম যদি নির্দোষ হইত, তবে দ্বিতীয় এক নিয়মের জন্য স্থানের চেষ্টা করা যাইত না।... (১৩) ‘নূতন’ বলাতে তিনি প্রথমটি পুরাতন করিয়াছেন; কিন্তু যাহা পুরাতন ও জীর্ণ হইতেছে, তাহা অন্তর্হিত হইতে উদ্যত (ready to vanish away)।’’

ইব্রীয়দের পত্রের ১০ অধ্যায়ের ৯ শ্লোকে সাধু পল বলেন: ‘‘তিনি প্রথম বিষয় লোপ (নাসখ) করিতেছেন, যেন দ্বিতীয় বিষয় স্থির করেন।’’

আরবী বাইবেলের কোনো কোনো সংস্করণে এখানে ‘‘নাসখ’’ (রহিত) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

এ সকল বক্তব্যে সাধু পল বারংবার বলেছেন যে, তাওরাত দুর্বল, নিষ্ফল, কল্যাণবিহীন, অচল, ত্রুটিযুক্ত, পুরাতন, জরাজীর্ণ, প্রস্থান-উদ্যত, বিলুপ্ত-প্রায়, প্রায়-অচল, প্রত্যাখ্যাত এবং রহিত।

ডাওয়ালি ও রজারমেন্ট-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থে পাবেল-এর নিম্নলিখিত বক্তব্যটি উদ্ধৃত করা হয়েছে: একথা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, ঈশ্বর নতুন উত্তম বিধানের মাধ্যমে পুরাতন অসম্পূর্ণ বিধানকে রহিত করতে চান। এজন্যই ইয়াহূদীয় আচার-অনুষ্ঠানের বিধানাবলি বিলোপ করে সেখানে খৃস্টধর্মকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, ইয়াহূদীদের যজ্ঞ ও নৈবেদ্য মুক্তি ও ঈশ্বর প্রেমের জন্য যথেষ্ট ছিল না। এজন্য যীশু নিজে মৃত্যু গ্রহণ করে সেই অপূর্ণতা পূর্ণ করেছেন। তিনি একটি কর্মের মাধ্যমে অপরটি রহিত করেছেন।

উপরের আলোচনা থেকে আমরা নিম্নের বিষয়গুলি বুঝতে পেরেছি:

১- পরবর্তী ব্যবস্থা বা ধর্মে পূর্ববর্তী ব্যবস্থা বা ধর্মের কিছু বিধিবিধান রহিত হওয়া শুধু মুসলমানদের দাবি নয় বা ইসলামের সাথে বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় নয় বরং পূর্ববর্তী ধর্ম ও ব্যবস্থাগুলিতেও তা দেখতে পাওয়া যায়।

২- তোরাহ বা পুরাতন নিয়মের সকল বিধানই খৃস্টধর্মে রহিত করা হয়েছে। পুরাতন নিয়মে যে সকল বিধান ‘চিরস্থায়ী’ ও ‘চিরন্তন’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলিসহ সকল ফরয দায়িত্ব, ইবাদত, শুচি-অশুচি বা হালাল-হারামের বিধান ইত্যাদি সবই সাধু পল রহিত করেছেন। তার অনুসারিগণের জন্য এ সকল বিধান পালনীয় নয় বলে তিনি ঘোষণা করেছেন। [উপরন্তু এ সকল বিধান পালন করলে যীশুর দয়া থেকে বঞ্চিত হতে হবে বলে ভীতি প্রদর্শন করেছেন। মহাপাপের চেয়েও বড় মহাপাপ মূসা (আ)-এর ব্যবস্থা মেনে চলা।]

৩- খৃস্টধর্মের প্রতিষ্ঠাতা সাধু পলের বক্তব্যের মধ্যে তাওরাতের বিধানাবলির ক্ষেত্রে ‘নাসখ’ বা ‘রহিত করা’ বা ‘বিলোপ করা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। পরবর্তী খৃস্টান গবেষক ও ধর্মগুরুগণও এক্ষেত্রে এ সকল শব্দ ব্যবহার করেছেন।

৪-সাধু পল দাবি করেছেন যে, পুরাতন ব্যবস্থা দুর্বল, নিষ্ফল, কল্যাণবিহীন, অচল, ত্রুটিযুক্ত, পুরাতন, জরাজীর্ণ, প্রস্থান-উদ্যত, বিলুপ্ত-প্রায়, প্রায়-অচল, প্রত্যাখ্যাত এবং রহিত। এ থেকে বুঝা যায় যে, ইসলামী শরীয়ত বা ইসলামের ব্যবস্থা দ্বারা ইয়াহূদী-খৃস্টানগণের ব্যবস্থা রহিত ও বিলুপ্ত হওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়। বরং সাধু পলের বক্তব্য অনুসারে এরূপ বিলোপ সাধন জরুরী। কারণ যীশুর ব্যবস্থাটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রাচীন ও জীর্ণ। সর্বোপরি খৃস্টানদের প্রাণপুরুষ পল মহাশয় এবং খৃস্টান ব্যাখ্যাকার পণ্ডিতগণ তাওরাত সম্পর্কে অনেক অশালীন ও অশোভনীয় মন্তব্য করেছেন, যদিও তাঁরা তাকে ঈশ্বরের বাণী বলে বিশ্বাস করেন।

উপরের আলোচনা থেকে আমরা সুনিশ্চিতরূপে জানতে পারছি যে, কুরআনের বিধান ও ব্যবস্থা দ্বারা তাওরাত ও ইঞ্জিলের কিছু বিধান ও ব্যবস্থা রহিত হওয়া কোনো অস্বাভাবিক কিছু নয়। এরূপ রহিতকরণ, স্থগিতকরণ বা পরিবর্তন পূর্ববর্তী ভাববাদিগণের ব্যবস্থায় ঘটেছে বলে আমরা বাইবেলের আলোকে জানতে পারলাম। কুরআনের বিধান পালনের মাধ্যমে তাওরাত ও ইঞ্জিলের বিধান রহিতকরণ কার্যকর হয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন