মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
পূর্বোক্ত বৈপরীত্য ও অনুরূপ অগণিত বৈপরীত্য ছাড়াও বাইবেলের পুস্তকগুলির মধ্যে রয়েছে অগণিত ভুলভ্রান্তি। বৈপরীত্য ও ভুলভ্রান্তির মধ্যে পার্থক্য হলো, বাইবেলের বিভিন্ন পুস্তক, পাণ্ডুলিপি বা সংস্করণের মধ্যে তুলনা করে বৈপরীত্য জানা যায়। আর ভুল জানা যায় জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক, মানবীয় রীতি, ঐতিহাসিক তথ্য, গণিত বিদ্যা বা অন্য কোনো জ্ঞানের আলোকে বাইবেলের তথ্য বিচার করার মাধ্যমে। গবেষক পণ্ডিতগণ বাইবেলের মধ্যে এরূপ অনেক ভুলভ্রান্তির কথা উল্লেখ করেছেন। এখানে অল্প কয়েকটি দেখুন:
১- ইস্রায়েল সন্তানদের মিসরে অবস্থানকার সম্পর্কে ভুল তথ্য:
যাত্রাপুস্তকের ১২ অধ্যায়ের ৪০ শ্লোকে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘ইস্রায়েল-সন্তানেরা চারি শত ত্রিশ বৎসর কাল মিসরে প্রবাস করিয়াছিল।’
এ তথ্যটি ভুল। ইস্রায়েল-সন্তানগণ ৪৩০ বৎসর নয়, বরং ২১৫ বৎসরকাল মিশরে অবস্থান করেছিল। তবে কনান দেশে ও মিসরে উভয় স্থানে ইস্রায়েল সন্তানগণের পূর্বপুরুষ ও তাদের মোট অবস্থানকাল ছিল ৪৩০ বৎসর। কারণ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর কনান দেশে প্রবেশ থেকে তাঁর পুত্র ইসহাক আলাইহিস সালাম-এর জন্ম পর্যন্ত ২৫ বৎসর। ইসহাকের জন্ম থেকে ইয়াকূব আলাইহিস সালাম বা ইস্রায়েল-এর জন্ম পর্যন্ত ৬০ বৎসর। ইয়াকূব আলাইহিস সালাম-এর অপর নাম বা প্রসিদ্ধ উপাধি ‘‘ইস্রায়েল’’ এবং তাঁর বংশধররাই বনী ইসরাঈল বা ইস্রায়েল সন্তানগণ বলে পরিচিত।
ইয়াকূব বা ইস্রায়েল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর বংশধরদের নিয়ে মিসরে প্রবেশ করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ১৩০ বৎসর। এভাবে আমরা দেখছি যে, ইব্রাহীমের আলাইহিস সালাম মিসরে প্রবেশ থেকে তাঁর পৌত্র ইয়াকূব (ইস্রায়েল)-এর মিসরে প্রবেশ পর্যন্ত সময়কাল (২৫+৬০+১৩০=) ২১৫।
ইস্রায়েল আলাইহিস সালাম-এর মিসরে প্রবেশ থেকে মূসা আলাইহিস সালাম-এর সাথে তাঁর বংশধরদের মিসর ত্যাগ পর্যন্ত সময়কাল ২১৫ বৎসর। এভাবে কানানে ও মিসরে তাদের মোট অবস্থানকাল (২১৫+২১৫=) ৪৩০ বৎসর।
ইয়াহূদী-খৃস্টান পণ্ডিতগণ একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, হিব্রু বাইবেলের এ তথ্যটি ভুল। তারা বলেন: শমরীয় তাওরাতে এখানে উভয় স্থানের অবস্থান একত্রে বলা হয়েছে এবং এখানে শমরীয় তাওরাতের বক্তব্যই সঠিক।
শমরীয় তাওরাত বা তাওরাতের শমরীয় সংস্করণ অনুসারে যাত্রাপুস্তকের ১২ অধ্যায়ের ৪০ পঙক্তি নিম্নরূপ: ‘‘ইস্রায়েল-সন্তানেরা ও তাদের পিতৃগণ কনান দেশে ও মিসরে চারি শত ত্রিশ বৎসর কাল অবস্থান করিয়াছিল।’
এখানে গ্রীক তাওরাত বা তাওরাতে গ্রীক সংস্করণের ভাষ্য নিম্নরূপ: ‘‘কনান দেশে ও মিসরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ ও তাদের পিতা-পিতামহগণের মোট অবস্থানকাল চারি শত ত্রিশ বৎসর।’’
খৃস্টান গবেষক ও পণ্ডিতগণের নিকট নির্ভরযোগ্য পুস্তক ‘‘মুরশিদুত তালিবীন ইলাল কিতাবিল মুকাদ্দাসিস সামীন’’ (মহামূল্য পবিত্র বাইবেলের ছাত্রগণের পথ নির্দেশক) নামক গ্রন্থে এভাবেই ইস্রায়েল সন্তানগণের ইতিহাস উল্লেখ করা হয়েছে। এ গ্রন্থের লেখক উল্লেখ করেছেন যে, ইয়াকূব আলাইহিস সালাম-এর মিসরে আগমন থেকে ঈসা আলাইহিস সালাম-এর জন্ম পর্যন্ত সময়কাল ১৭০৬ বৎসর। আর ইস্রায়েল সন্তানদের মিসর পরিত্যাগ ও ফিরাউনের সলিল সমাধি থেকে ইসা আলাইহিস সালাম-এর জন্ম পর্যন্ত সময়কাল ১৪৯১ বৎসর। ১৭০৬ থেকে ১৪০৯ বাদ দিলে ২১৫ বৎসর থাকে, এটিই হলো ইয়াকূব আলাইহিস সালাম-এর মিসর আগমন থেকে ইস্রায়েল সন্তানদের মিসর পরিত্যাগ পর্যন্ত সময়।
এখানে অন্য একটি বিষয় এ সময়কাল নিশ্চিত করে। মূসা আলাইহিস সালাম ছিলেন ইয়াকূব (ইস্রায়েল আ.)-এর অধস্তন ৪র্থ পুরুষ। ইয়াকূবের পুত্র লেবি, তার পুত্র কহাৎ, তার পুত্র অম্রাম (Amram: ইমরান), তার পুত্র মূসা আলাইহিস সালাম। এতে বুঝা যায় যে, মিসরে ইস্রায়েল সন্তানগণের অবস্থান ২১৫ বৎসরের বেশি হওয়া অসম্ভব। আর ইয়াহূদী-খৃস্টান ঐতিহাসিক, ব্যাখ্যাকার ও গবেষকগণ একমত পোষণ করেছেন যে, ইস্রায়েলীয়গণ ২১৫ বৎসর মিসরে অবস্থান করেন। তাদের মিসরে ৪৩০ বৎসর অবস্থানের যে তথ্য বাইবেলের হিব্রু সংস্করণে দেওয়া হয়েছে তা ভুল বলে তারা একমত হয়েছেন। এজন্য আদম ক্লার্ক বলেন, ‘‘সকলেই একমত যে, হিব্রু সংস্করণে যা বলা হয়েছে তার অর্থ অত্যন্ত সমস্যাসঙ্কুল। আর মূসা আলাইহিস সালাম-এর পাঁচ পুস্তক বা তোরাহ-এর বিষয়ে শমরীয় সংস্করণ অন্যান্য সংস্করণ থেকে অধিকতর বিশুদ্ধ। আর ইতিহাস শমরীয় তাওরাতের বক্তব্য সঠিক বলে প্রমাণ করে।
হেনরি ও স্কটের ব্যাখ্যাগ্রন্থের সংকলকগণ বলেন: শমরীয় তোরাহ-এর এই বক্তব্যই সত্য। এর দ্বারা হিব্রু তোরাহ-এর পাঠে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা দূরীভুত হয়।
এ থেকে জানা গেল যে, হিব্রু বাইবেলে যাত্রাপুস্তকের ১২/৪০-এ যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা ভুল বলে স্বীকার করা ছাড়া ইয়াহূদী-খৃস্টান পণ্ডিতদের কোনো উপায় নেই।
২- মিসর পরিত্যাগের সময় ইস্রায়েলীয়দের সংখ্যা বর্ণনায় ভুল:
গণনাপুস্তকের প্রথম অধ্যায়ের ৪৪-৪৭ শ্লোকে উল্লেখ করা হয়েছে: ‘‘(৪৪) এই সকল লোক মোশি ও হারোণ ... কর্তৃক গণিত হইল। (৪৫) স্ব স্ব পিতৃকুলানুসারে ইস্রায়েল-সন্তানগণ, অর্থাৎ বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক ইস্রায়েলের মধ্যে যুদ্ধে গমনযোগ্য (৪৬) সমস্ত পুরুষ গণিত হইলে গণিত লোকদের সংখ্যা ছয় লক্ষ তিন সহস্র পাঁচ শত পঞ্চাশ হইল। (৪৭) আর লেবীয়েরা আপন পিতৃবংশানুসারে তাহাদিগের মধ্যে গণিত হইল না।’’ [গণনাপুস্তক ১/৪৫-৪৭।]
এ শ্লোকগুলি থেকে জানা যায় যে, ইস্রায়েল-সন্তানগণ যখন মোশির সাথে মিশর ত্যাগ করে তখন তাদের ২০ বৎসরের অধিক বয়সের যুদ্ধেসক্ষম পুরুষদের সংখ্যা ছিল ছয় লক্ষের অধিক (৬,০৩,৫৫০)। লেবীর বংশের সকল নারী, লেবীয় বংশের সকল পুরুষ, অন্যান্য সকল বংশের সকল নারী এবং সকল বংশের ২০ বৎসরের কম বয়স্ক সকল যুবক ও কিশোর পুরুষ বাদ দিয়েই ছিল এই সংখ্যা।
চার শ্রেণীর মানুষ এই গণনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে: ১. লেবীর বংশের সকল নারী, ২. লেবীয় বংশের সকল পুরুষ, ৩. অন্যান্য সকল বংশের সকল নারী এবং ৪. সকল বংশের ২০ বৎসরের কম বয়স্ক সকল যুবক ও কিশোর পুরুষ বাদ দিয়েই ছিল এই সংখ্যা।
তাহলে যদি এই চার প্রকারের নারী, পুরুষ ও যুবক-কিশোরদের গণনায় ধরা হয় তাহলে মিশর ত্যাগকালে তাদের সংখ্যা দাঁড়াবে কমপক্ষে ২৫ লক্ষ। আর এই তথ্য কেনোমতেই সঠিক হতে পারে না। কারণ:
প্রথমত, আদিপুস্তক ৪৬/২৭, যাত্রাপুস্তক ১/৫, দ্বিতীয় বিবরণ ১০/২২ -এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইস্রায়েল-সন্তানগণ যখন মিশরে প্রবেশ করে তখন তাদের সংখ্যা ছিল ৭০ জন।
দ্বিতীয়ত, ইস্রা্য়েল-সন্তানগণ মিশরে অবস্থান করেছিলেন সর্বমোট ২১৫ বৎসর। এর বেশি তারা অবস্থান করেন নি।
তৃতীয়ত, যাত্রাপুস্তকের প্রথম অধ্যায়ের ১৫-২২ শ্লোকে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাদের মিশর ত্যাগের ৮০ বৎসর পূর্ব থেকে তাদের সকল পুত্র সন্তানকে হত্যা করা হত থাকে এবং কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত রাখা হত।
এ তিনটি বিষয়ের আলোকে যে কোনো সাধারণ জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ নিশ্চিত হবেন যে, মিসর ত্যাগের সময় ইস্রায়েল সন্তানদের যে সংখ্যা (৬,০৩,৫৫০) উল্লেখ করা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে ভুল।
আমরা যদি পুত্র সন্তান হত্যার বিষয়টি একেবারে বাদ দিই এবং মনে করি যে, ইস্রায়েল সন্তানগণ মিশরে অবস্থানকালে তাদের জনসংখ্যা এত বেশি বৃদ্ধি পেত যে, প্রতি ২৫ বৎসরে তাদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যেত, তাহলেও তাদের সর্বমোট জনসংখ্যা ২১৫ বৎসরে ৭০ থেকে ৩৬০০০ (ছত্রিশ হাজার)-ও হতে পারে না। তাহলে সর্বমোট জনসংখ্যা ২৫ লক্ষ হওয়া বা লেবীয়গণ বাদে মোট পুরুষ যোদ্ধার সংখ্যা ছয় লক্ষ হওয়া কিভাবে সম্ভব! এর সাথে যদি শেষ ৮০ বছরের পুরুষ সন্তান হত্যার বিষয় যোগ করা হয় তাহলে বিষয়টি আরো অসম্ভব ও অযৌক্তিক বলে প্রমাণিত হয়।
প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ও সমাজবিজ্ঞানী ইবনু খলদূন (৮০৮ হি/১৪০৫খৃ) তার ইতিহাসের ভূমিকায় বাইবেলে উল্লেখিত এ সংখ্যা অবাস্তব বলে মতপ্রকাশ করেছেন। কারণ মূসা ও ইস্রায়েল (ইয়াকূব)-এর মধ্যে মাত্র তিনটি স্তর বা চারটি প্রজন্ম। যাত্রাপুস্তক ৬/১৬-২০, গণনাপুস্তক ৩/১৭-১৯ ও ১ বংশাবলী ৬/১৮-এর বর্ণনা অনুসারে: মোশির পিতা অম্রাম (ইমরান), তার পিতা কহাৎ, তার পিতা লেবি, তার পিতা যাকোব। যাকোব ও মোশির মধ্যে তিন পুরুষ মাত্র। আর মানবীয় জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেক কখনোই মানতে পারে না যে, মাত্র চার পুরুষে ৭০ জনের বংশধর ২০-২৫ লক্ষ হতে পারে।
নিম্নের বিষয়দুটি এ ভুলকে আরো নিশ্চিত করে:
(১) যাত্রাপুস্তকের ১২ অধ্যায়ের ৩৮-৪২ শ্লোক থেকে জানা যায় যে, ইস্রায়েল-সন্তানগণ যখন মিশর পরিত্যাগ করে তখন তাদের সাথে ছিল গৃহপালিত পশুর বিশাল বাহিনী। সকল মানুষ ও পশু একরাতের মধ্যে সমূদ্র পার হয়েছিলেন। তারা প্রতিদিন পথ চলতেন এবং তাদের যাত্রার জন্য মোশির নিজের মুখের সরাসরি নির্দেশই যথেষ্ট ছিল। তারা সমূদ্র অতিক্রম করার পরে সিনাই পর্বতের পার্শে ১২টি ঝর্ণার পার্শ্বে অবস্থান গ্রহণ করেন। যদি ইস্রায়েল সন্তানগণের সংখ্যা এ সময়ে ২০/২৫ লক্ষই হতো তাহলে কখনোই একরাতে তারা সকল মানুষ ও পশুর বিশাল বাহিনী সমূদ্র অতিক্রম করতে পারতেন না, প্রতিদিন পথ চলতে পারতেন না, মূসা আলাইহিস সালাম-এর মুখের কথা শুনেই সকলে যাত্রা শুরু করতে পারতেন না এবং সিনাই প্রান্তরের সীমিত স্থানে মাত্র ১২টি ঝর্ণায় তাদের এত মানুষ ও পশুর বিশাল বাহিনীর স্থান সংকুলান হতো না।
(২) যাত্রাপুস্তকের প্রথম অধ্যায়ের ১৫-২২ শ্লোকে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইস্রায়েল সন্তানদের মধ্যে মাত্র দুজন ধাত্রী ছিল: একজনের নাম শিফ্রা ও অন্যজনের নাম পূয়া। মিশরের রাজা ফরৌণ এ দুই ইব্রীয়া ধাত্রীকে নির্দেশ প্রদান করেন যে, তোমরা ইব্রীয় (ইস্রায়েলী) মহিলাদের সন্তান প্রসব করানোর সময় তাদের পুত্র সন্তান হলে হত্যা করবে এবং কন্যা সন্তান হলে তাকে জীবিত রাখবে। যদি ইস্রায়েলীগণের সংখ্যা এত বেশি হতো তাহলে কোনো অবস্থাতেই মাত্র দুইজন ধাত্রী তাদের সকলের জন্য ধাত্রীকর্ম করতে পারতো না। বরং তাদের মধ্যে শতশত ধাত্রী থাকতো।
উপরের আলোচনা থেকে এথা স্পষ্ট যে, মিশর ত্যাগের সময় ইস্রায়েল-সন্তানদের সংখ্যা ছিল, ৭০ জন থেকে স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ২১৫ বৎসরে যেমন হতে পরে, যাদের মহিলাদের ধাত্রী-কর্ম করার জন্য দুইজন ধাত্রীই যথেষ্ট ছিল, একটি রাতই যাদের সমূদ্র পারাপারের জন্য যথেষ্ট ছিল, একদিনে মৌখিক আদেশ প্রদান করেই মোশি যাদেরকে নিয়ে সমূদ্র পার হতে পেরেছেন, সিনাই পর্বতের পাদদেশে এবং ইলমের সংকীর্ণ স্থানে সাথের গৃহপালিত পশু সহ যাদের স্থান সংকুলান হয়েছিল। সামান্যতম সন্দেহ ছাড়াই আমরা সুনিশ্চিত যে মিসর ত্যাগের সময় ইস্রায়েলীয়দের সংখ্যার বিষয়ে যাত্রাপুস্তকের ১/৪৪-৪৭-এর বর্ণনা ভুল ও অসত্য।
৩- যে ভুলের জন্য দায়ূদ আলাইহিস সালামের নুবুওয়াত বাতিল হয়!
দ্বিতীয় বিববরণ ২৩/২: ‘‘জারজ ব্যক্তি সদাপ্রভুর সমাজে প্রবেশ করিবে না; তাহার দশম পুরুষ পর্যন্তও সদাপ্রভুর সমাজে প্রবেশ করিতে পারিবে না।’’ এ বক্তব্যটি ভুল। কারণ এটি সত্য হলে দায়ূদ আলাইহিস সালাম সদাপ্রভুর সমাজে প্রবেশ করতে পারবেন না; নবী বা ভাববাদী হওয়া তো দূরের কথা। কারণ দায়ূদের দশম পূর্বপুরুষ পেরস তারা দাদা যিহূদার জারজ সন্তান ছিলেন। [অর্থাৎ বর্তমান তোরাহ এর ভাষ্যমতে। [সম্পাদক]] যিহূদা তার পুত্রবধু -মৃতপুত্রের স্ত্রী- তামরের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হন এবং এ ব্যভিচারের ফলে পেরসের জন্ম হয়। আদিপুস্তকের ৩৮/১২-৩০ শ্লোকে তা সুস্পষ্টত বর্ণিত হয়েছে।
পেরস থেকে শুরু করলে দায়ূদ দশম পুরুষ হন। মথিলিখিত সুসমাচারের ১/১-৬ এবং লূকলিখিত সুসমাচারের ৩/৩১-৩৩-এ বর্ণিত দায়ূদের বংশতালিকা নিম্নরূপ: (১) দায়ূদ বিন (২) যিশয় বিন (৩) ওবেদ বিন (৪) বোয়স বিন (৫) সল্মোন বিন (৬) নহশোন বিন (৭) অম্মীনাদব বিন (৮) রাম বিন (৯) হিষ্রোন বিন (১০) পেরস। মথি ১/৩-৬: ‘‘যিহূদার পুত্র পেরস... পেরসের পুত্র হিয্রোন, হিয্রোণের পুত্র রাম, রামের পুত্র অম্মীনাদব, অম্মীনাদবের পুত্র সলমোন, সলমোনের পুত্র বোয়স ... বোয়সের পুত্র ওবেদ ... ওবেদের পুত্র যিশয়, যিশয়ের পুত্র দায়ূদ।’’
দ্বিতীয় বিবরণের ৩২ অধ্যায়ের দ্বিতীয় শ্লোক সঠিক হলে দায়ূদ কখনোই নবী হতে পারেন না। অথচ দায়ূদ আলাইহিস সালাম- সদাপ্রভুর সমাজের নেতা ও গৌরব। তারই পরিচয়ে যীশুখৃস্টের পরিচয়।
গীতসংহিতার ৮৯ গীতের ২৬-২৭ শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে তিনি সদাপ্রভুর প্রথমজাত (firstborn) সন্তান বা জ্যৈষ্ঠ পুত্র এবং সকল রাজার সেরা ও সর্বোচ্চ রাজা। কাজেই দ্বিতীয় বিবরণের এ শ্লোকটি নিঃসন্দেহে ভুল ও অসত্য।
এখানে একটি জালিয়াতির অবস্থা দেখুন। লন্ডনে ১৮২৫ সালে মুদ্রিত রজার্ড ওয়াটস-এর বাইবেলে এবং ১৮২৬ সালে কলকাতায় মুদ্রিত বাইবেলে (উইলিয়াম কেরির বঙ্গানুবাদ বাইবেলে) লূকলিখিত সুসমাচারের তৃতীয় অধ্যায়ে যীশুর বংশতালিকায় দায়ূদের অষ্টম পূর্বপুরুষ ‘‘রাম’’ ও নবম পূর্বপুরুষ ‘‘হিয্রোন’’-এর মধ্যে ‘‘অর্নি’’ নামটি সংযোজন করে বলা হয়েছে ‘‘রাম বিন অর্ণি বিন হিয্রোন বিন পেরস’’ (কেরির বাংলা বাইবেলে: ইনি অদমানের পুত্র, ইনি অর্নির পুত্র, ইনি হিয্রোনের পুত্র, ইনি পেরসের পুত্র)।
এ সংযোজনের উদ্দেশ্য দায়ূদকে বাঁচানো, যেন তিনি পেরসের দশম পুরুষ না হয়ে একাদশ পুরুষ হন। কিন্তু বিকৃতিকারীগণ এখানে সংযোজনের সময় মথির লেখা বংশতালিকায় ‘‘অর্নি’’ নামটি সংযোজন করতে ভুলে গিয়েছেন। ফলে উক্ত দুটি সংস্করণেই মথির বংশতালিকা অনুসারে দায়ূদ পেরসের দশম পুরুষই রয়ে গিয়েছেন। ফলে তাদের সংস্করণেই মথির বক্তব্যের সাথে লূকের বক্তব্যের বৈপরীত্য দেখা দিয়েছে এবং তাদের জালিয়াতি ধরা পড়ে গিয়েছে। আর সর্বাবস্থায় দায়ূদের জারজ সন্তানের দশম পুরুষ হওয়ার বিষয়টি থেকেই যাচ্ছে।
অনুরূপভাবে ১৮৪৪ সালের সংস্করণে ও ১৮৬৫ সালের সংস্করণেও ‘‘অর্নি’’ নামটি সংযোজন করা হয় নি, মথিতেও না, লূকেও না, বরং উভয় সুসমাচারেই ‘‘রাম বিন হিষ্রোন’’ লেখা হয়েছে। [ইংরেজি কিং জেমস ভার্সন (অথোরাইযড ভার্সন)-উভয় স্থানেই ‘‘হিয্রোনের পুত্র রাম’’ বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে রিভাইযড স্টান্ডার্ড ভার্সনে মথির সুসমাচারে ‘হিয্রোনের পুত্র রাম’ এবং লূকের সুসমাচারে ‘হিয্রোনের পুত্র অর্নি, অর্নির পুত্র রাম’ লেখা হয়েছে।]
প্রকৃত সত্য কথা হলো, আদিপুস্তকের ৩৮ অধ্যায়ের ১২-৩০ শ্লোকে পুত্রবধু তামরের সাথে যিহূদার ব্যভিচারের যে ঘৃণ্য কাহিনী লেখা হয়েছে তা সম্পূর্ণ জাল ও বানোয়াট কাহিনী। পাশাপাশি দ্বিতীয় বিবরণের ২৩ অধ্যায়ের ২ শ্লোকটি (জারজ সন্তানের দশম পুরুষ পর্যন্ত জান্নাতে যাবে না) ভুল। কারণ এরূপ বিধান কখনো আল্লাহর পক্ষ থেকে আসতে পারে না। মূসা আলাইহিস সালাম কখনো এরূপ কথা লিখতে পারেন না। কারণ একের পাপের ভার অন্যে বহন করবে তা হতে পারে না। এজন্য বাইবেল ভাষ্যকার হার্সলি বলেন: ‘‘(দশম পরুষ পর্যন্ত সদাপ্রভুর সমাজে {জান্নাতে} প্রবেশ করতে পারবে না) কথাটি সংযোজিত (জাল ও বানোয়াট)।’’
৪- বৈত-শেমস গ্রামের নিহতদের সংখ্যা বর্ণনায় ভুল
১ শমূয়েল-এর ৬ অধ্যায়ের ১৯ শ্লোকে বলা হয়েছে: ‘‘পঞ্চাশ সহস্র জনকে’’ [‘‘ফলতঃ তিনি লোকেদের মধ্যে সত্তর জনকে এবং পঞ্চাশ সহস্র জনকে আঘাত করিলেন।’’]। এই কথাটি নির্ভেজাল ভুল ও অসত্য। দ্বিতীয় অধ্যায়ের দ্বিতীয় আলোচ্যে পাঠক তা বিস্তারিত জানতে পারবেন।
শমূয়েল ভাববাদীর ১ম পুস্তকের ৪-৬ অধ্যায়ে ইস্রায়েল সন্তানদের নিয়ম-সিন্দুক বা ঈশ্বরীয় সিন্দুক পলেষ্টীয়দের হস্তগত হওয়া ও তা পুনরুদ্ধারের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। সদাপ্রভুর-সিন্দুক ফেরত আনার সময়ে বৈৎ-শেমশ গ্রামের বাসিন্দারা মাঠে গম কাটছিল। তাঁরা চোখ তুলে সিন্দুকটি দেখতে পান এবং আনন্দিত হন। এজন্য সদাপ্রভু ঈশ্বর তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন। শাস্তির বিবরণে ১ শমূয়েলের ৬ অধ্যায়ের ১৩ ও ১৯ শ্লোকে বলা হয়েছে: ‘‘(১৩) ঐ সময়ে বৈৎ-শেমন নিবাসীরা তলভূমিতে গোম কাটিতেছিল; তাহারা চুক্ষু তুলিয়া সিন্দুকটা দেখিল, দেখিয়া আহ্লাদিত হইল। ... (১৯) পরে তিনি বৈৎ-শেমশের লোকদের মধ্যে কাহাকে কাহাকে আঘাত করিলেন, কারণ তাহারা সদাপ্রভুর সিন্দুকে দৃষ্টিপাত করিয়াছিল, ফলত তিনি লোকদের মধ্যে সত্তর জনকে এবং পঞ্চাশ সহস্র জনকে আঘাত করিলেন (he smote of the people fifty thousand and threescore and ten men)। তাহাতে লোকের বিলাপ করিল, কেননা সদাপ্রভু মহা আঘাতে লোকদিগকে আঘাত করিয়াছেন।’’
এ কথাটি নিঃসন্দেহে ভুল ও বিকৃত। আদম ক্লার্ক তাঁর ব্যখ্যাগ্রন্থের এ কথাগুলির ত্রুটি বর্ণনা করার পরে বলেন: বাহ্যত বুঝা যায় যে, হিব্রু পাঠ এখানে বিকৃত। সম্ভবত এখানে মূল পাঠ থেকে কিছু শব্দ ছুটে গিয়েছে, অথবা অজ্ঞতার কারণে বা ইচ্ছাকৃতভাবে এর মধ্যে কিছু শব্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কারণ, একথা জ্ঞানত অসম্ভব যে, সেই ছোট্ট একটি গ্রামে এত পরিমাণ মানুষ বসবাস করবে অথবা এত অধিক সংখ্যক মানুষ একত্রে মাঠের মধ্যে গম কাটায় রত থাকবে। সবচেয়ে অসম্ভব বিষয় হলো, যে উটের পিঠে রাখা একটি ছোট্ট সিন্দকের দিকে বা মধ্যে পঞ্চাশ হাজার সত্তর জন মানুষ একত্রে বা একসাথে দৃষ্টিপাত করবেন বা দেখতে পাবেন।
অতঃপর তিনি বলেন: ‘‘ল্যাটিন অনুবাদে রয়েছে: ‘সত্তর জন নেতা ও ৫০ হাজার সাধারণ মানুষ’, সিরীয় অনুবাদে রয়েছে: ‘পাঁচ হাজার ৭০ জন মানুষ’, অনুরূপভাবে প্রাচীন আরবী অনুবাদে রয়েছে: ‘পাঁচ হাজার ৭০ জন মানুষ’। ঐতিহাসিক জোসেফাস (Flavius Josephus) শুধু ‘৭০ জন মানুষ’ লিখেছেন। ইয়াহূদী পণ্ডিত শলোমন গার্গি ও অন্যান্য রাব্বি বিভিন্ন সংখ্যা লিখেছেন। এ সকল পরস্পরবিরোধী তথ্য এবং বাইবেলের পাঠে উল্লিখিত সংখ্যার অবাস্তবতার ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত যে, নিঃসন্দেহে এ স্থানে বিকৃতি সাধিত হয়েছে। হয়তবা কিছু কথা বৃদ্ধি করা হয়েছে অথবা কিছু কথা পড়ে গিয়েছে।’’
হেনরি ও স্কটের ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলা হয়েছে: মূল হিব্রু বাইবেলে নিহতদের সংখ্যা (৫০,০৭০) বলা হয়েছে উল্টাভাবে (৭০ ও ৫০ হাজার)। এ ছাড়াও একটি ছোট্ট গ্রামের মধ্যে এত অধিক সংখ্যক মানুষের পাপে লিপ্ত হওয়া ও নিহত হওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক ও অবিশ্বাস্য। কাজেই এই ঘটনার সত্যতার বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। জোসেফাস নিহতদের সংখ্যা শুধু ‘৭০’ লিখেছেন।
তাহলে দেখুন, কিভাবে এ সকল পণ্ডিত এ ঘটনা অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিলেন, এ বর্ণনাকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করলেন এবং এখানে ইচ্ছাকৃত বিকৃতি ঘটেছে বলে স্বীকার করলেন।
৫- সুলাইমান আলাইহিস সালাম-এর বারান্ডার উচ্চতা বর্ণনায় ভুল
২ বংশাবলির ৩য় অধ্যায়ের ৪র্থ শ্লোকে সুলাইমান আলাইহিস সালাম এর মসজিদ বা আল-মাসজিদুল আকসার (বাইবেলের ভাষায়: শলোমনের মন্দিরের) বর্ণনায় বলা হয়েছে: ‘‘আর গৃহের সম্মুখস্থ বারান্ডা গৃহের প্রস্থানুসারে বিংশতি হস্ত দীর্ঘ ও এক শত বিংশতি হস্ত উচ্চ হইল।’’
‘‘১২০ হাত উচ্চ’’ কথাটি নিখাদ ভুল। ১ রাজাবলির ৬ অধ্যায়ের ২ শ্লোকে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, শলোমনের নির্মিত মন্দিরটির উচ্চতা ছিল ত্রিশ হস্ত। তাহলে বারান্ডা কিভাবে ১২০ হাত উচু হবে?
আদম ক্লার্ক তার ভাষ্যগ্রন্থে ২ বংশাবলির ৩য় অধ্যায়ের ৪র্থ শ্লোকের ভুল স্বীকার করেছেন। এজন্য সিরিয় (সুরিয়ানী) ভাষায় ও আরবী ভাষায় অনুবাদে অনুবাদকগণ ১২০ সংখ্যাকে বিকৃত করেছেন। তারা ‘‘এক শত’’ কথাটি ফেলে দিয়ে বলেছেন: ‘‘বিশ হাত উচ্চ’’।
১৮৪৪ সালের আরবী অনুবাদে মূল হিব্রু বাইবেলের এ ভুল ‘‘সংশোধন’’ (!) করে লেখা হয়েছে: ‘‘আর গৃহের সম্মুখস্থ বারান্ডা গৃহের প্রস্থানুসারে বিংশতি হস্ত দীর্ঘ ও বিংশতি হস্ত উচ্চ হইল।’’
৬- অবিয় ও যারবিয়ামের সৈন্যসংখ্যা বর্ণনায় ভুল
২ বংশাবলির ১৩ অধ্যায়ে ৩ ও ১৭ শ্লোকে বলা হয়েছে: ‘‘(৩) অবিয় চারি লক্ষ মনোনিত যুদ্ধবীরের সহিত যুদ্ধে গমন করিলেন, এবং যারবিয়াম আট লক্ষ মনোনীত বলবান বীরের সহিত তাঁহার বিরুদ্ধে সৈন্য রচনা করিলেন। ... (১৭) আর অবিয় ও তাঁহার লোকেরা মহাসংহারে উহাদিগকে সংহার করিলেন; বস্তুত ইস্রায়েলের পাঁচ লক্ষ মনোনীত লোক মারা পড়িল।’’
উপরের শ্লোকদ্বয়ে উল্লিখিত সংখ্যাগুলি সবই ভুল। বাইবেল ব্যাখাকারগণ তা স্বীকার করেছেন। সে যুগের ছোট্ট দুটি ‘গোত্র রাজ্য’ যিহূদা ও ইস্রায়েরের জন্য উপরের সংখ্যাগুলি অস্বাভাবিক ও অবাস্তব। এ কারণে ল্যাটিন অনুবাদের অধিকাংশ কপিতে ‘লক্ষ’-কে হাজারে নামিয়ে আনা হয়েছে, অর্থাৎ প্রথম স্থানে ‘চারি লক্ষ’ পাল্টিয়ে ‘চল্লিশ হাজার’, দ্বিতীয় স্থানে ‘আট লক্ষ’ পাল্টিয়ে ‘আশি হাজার’ ও তৃতীয় স্থানে ‘পাঁচ লক্ষ’ পাল্টিয়ে ‘৫০ হাজার’ করা হয়েছে। বাইবেলের ব্যাখ্যাকারগণ এই বিকৃতি ও পরিবর্তনকে মেনে নিয়েছেন। হর্ন ও আদম ক্লার্ক এ ‘‘সংশোধন’’ (!) সমর্থন করেছেন। আদম ক্লার্ক অনেক স্থানেই বারংবার সুস্পষ্টত উল্লেখ করেছেন এবং ঘোষণা করেছেন যে, বাইবেলের ইতিহাস বিষয়ক পুস্তগুলিতে বিকৃতি সাধিত হয়েছে।
৭- ফল ভোজন ও মানুষের আয়ু বিষয়ক ভুল
আদিপুস্তকের ২য় অধ্যায়ের ১৭ শ্লোকটি নিম্নরূপ: ‘‘কিন্তু সদসদ্-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে (for in the day that thou eatest thereof thou shalt surely die)।’’
এ কথাটি ভুল। কারণ আদম আলাইহিস সালাম এই বৃক্ষের ফল ভোজন করেছেন এবং যে দিন এই বৃক্ষের ফল ভোজন করেছেন, সে দিন তিনি মরেন নি। বরং এর পরেও ৯০০ বৎসরেরও বেশি সময় তিনি জীবিত ছিলেন।
আদিপুস্তকের ৬ অধ্যায়ের ৩ শ্লোকটি নিম্নরূপ: ‘‘তাহাতে সদাপ্রভু কহিলেন, আমার আত্মা মানুষের মধ্যে সর্বদা অবস্থান করিবে না; কারণ সেও তো মাংসমাত্র; পরন্তু তার সময় এক শত বিংশতি বৎসর হইবে।’’ [এই শ্লোকটির ইংরেজী পাঠ নিম্নরূপ: (And the Lord said, My Spirit shall not always strive with man, for that he also is flesh; yet his days shall be a hundred and twenty years) এই ইংরেজী পাঠের ভিত্তিতে ও গ্রন্থকারের প্রদত্ত আরবী পাঠের ভিত্তিতে উপরের বাংলা অনুবাদটি করা হয়েছে। এখানে প্রচলিত বাংলা বাইবেলের ভাষা নিম্নরূপ: ‘‘তাহাতে সদাপ্রভু কহিলেন, আমার আত্মা মনুষ্যদের মধ্যে নিত্য অধিষ্ঠান করিবে না; তাহাদের বিপথগমনে তাহারা মাংসমাত্র। পরন্তু তাহাদের সময় এক শত বিংশতি বৎসর হইবে।’’]
‘‘মানুষের আয়ু ১২০ বৎসর হবে’’ এই কথাটি ভুল। কারণ পূর্ববর্তী যুগের মানুষদের বয়স আরো অনেক দীর্ঘ ছিল। আদিপুস্তকের ৫ অধ্যায়ের ১-৩১ শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে আদম ৯৩০ বৎসর জীবিত ছিলেন। অনুরূপভাবে শিস (শেথ) ৯১২ বৎসর, ইনোশ ৯০৫ বৎসর, কৈনন ৯১০ বৎসর, মহললেল ৮৯৫ বৎসর, যেরদ ৯৬২, হানোক (ইদরীস আ.) ৩৬৫ বৎসর, মথূশেলহ ৯৬৯ বৎসর, লেমক ৭৭৭ বৎসর পৃথিবীতে জীবিত ছিলেন। নোহ (নূহ) ৯৫০ বৎসর জীবিত ছিলেন। [আদিপুস্তক ৯/২৯।] শেম (সাম) ৬০০ বৎসর জীবিত ছিলেন। [আদিপুস্তক ১১/১০-১১।] অর্ফক্ষদ ৩৩৮ বৎসর আয়ু লাভ করেন। [আদিপুস্তক ৯/১২-১৩।] এভাবে অন্যান্যরা দীর্ঘ জীবন লাভ করেছিলেন। আর বর্তমান যুগে ৭০ বা ৮০ বৎসর আয়ু পাওয়ার ঘটনাও কম ঘটে। এভাবে প্রমাণিত যে, মানুষের আয়ু ১২০ বৎসর বলে নির্ধারণ করা ভুল।
৮- যীশুর বংশতালিকায় পুরুষ গণনায় ভুল
মথিলিখিত সুসমাচারের ১ম অধ্যায়ের ১-১৭ শ্লোকে যীশুর বংশতালিকা বর্ণনা করা হয়েছে। ১৭ শ্লোকটি নিম্নরূপ: ‘‘এইরূপে আব্রাহাম অবধি দায়ূদ পর্যন্ত সর্বশুদ্ধ চৌদ্দ পুরুষ; দায়ূদ অবধি বাবিলে নির্বাসন পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ; এবং বাবিলে নির্বাসন অবধি খ্রীষ্ট পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ।’’
এখানে স্পষ্টত বলা হয়েছে যে, যীশুর বংশতালিকা তিন অংশে বিভক্ত, প্রত্যেক অংশে ১৪ পুরুষ রয়েছে এবং যীশু থেকে আব্রাহাম পর্যন্ত ৪২ পুরুষ। এ কথাটি সুস্পষ্ট ভুল। মথির ১/১-১৭-র বংশ তালিকায় যীশু থেকে আবরাহাম পর্যন্ত ৪২ পুরুষ নয়, বরং ৪১ পুরুষের উল্লেখ রয়েছে। প্রথম অংশ: ইবরাহীম আলাইহিস সালাম থেকে দায়ূদ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত ১৪ পুরুষ, দ্বিতীয় অংশ সুলাইমান আলাইহিস সালাম থেকে যিকনিয় পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ এবং তৃতীয় অংশ শল্টীয়েল থেকে এবং যীশু পর্যন্ত মাত্র ১৩ পুরুষ রয়েছেন।
তৃতীয় খৃস্টীয় শতকে বোরফেরী এই বিষয়টি সম্পর্কে আপত্তি উত্থাপন করেন, কিন্তু এর কোনো সঠিক সমাধান কেউ দিতে পারেন নি। [এখানে আরো লক্ষণীয় যে, মথি লিখেছেন: ‘‘দায়ূদ অবধি বাবিলে নির্বাসন পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ।’’ বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে এ কথাটি মারাত্মক ভুল। ১ বংশাবলির ১ম অধ্যায় থেকে স্পষ্ট জানা যায় যে, এই পর্যায়ে ১৮ পুরুষ ছিল, ১৪ পুরুষ নয়। মথির বিবরণ অনুসারে শলোমন থেকে যিকনিয় পর্যন্ত বংশধারা নিম্নরূপ: ১. শলোমন, ২. রহবিয়াম, ৩. অবিয়, ৪. আসা, ৫. যিহোশাফট, ৬. যোরাম, ৭. উষিয়, ৮. যোথাম, ৯. আহস, ১০. হিষ্কিয়, ১১. মনঃশি, ১২. আমোন, ১৩. যোশিয় ও ১৪. যিকনিয়। অপরদিকে ১ বংশাবলির বিবরণ অনুসারে শলোমন থেকে যিকনিয় পর্যন্ত বংশধারা নিম্নরূপ: ১. শলোমন, ২. রহবিয়াম, ৩. অবিয়, ৪. আসা, ৫. যিহোশাফট, ৬. যোরাম, ৭. অহসিয়, ৮. যোয়াশ, ৯. অমৎসিয়, ১০. অসরিয় (৭. উষিয়,) ১১. (৮) যোথাম, ১২. (৯) আহস, ১৩. (১০) হিষ্কিয়, ১৪. (১১) মনঃশি, ১৫. (১২) আমোন, ১৬. (১৩) যোশিয়, ১৭. যিহোয়াকীম ও ১৮. (১৪) যিকনিয়। এখানে বাইবেলের দুই স্থানেই স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী ব্যক্তি পরবর্তী ব্যক্তিকে জন্ম দিয়েছেন বা পরবর্তী ব্যক্তি পূর্ববর্তী ব্যক্তির পুত্র। মথি যোরাম ও উষিয় (অসরিয়) এর মধ্যে তিন পুরুষ ফেলে দিয়েছেন এবং যোশিয় ও যিকনিয়র মাঝে এক পুরুষ ফেলে দিয়েছেন। তিনি শুধু ফেলে দিয়েই ক্ষান্ত হন নি, উপরন্তু এখানে যে আর কেউ ছিল না নিশ্চিত করতে এই পর্যায়ে সর্বমোট ১৪ পুরুষ ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। এজন্য প্রসিদ্ধ ব্রিটিশ কার্ডিনাল জন হেনরী নিউম্যান (১৮০১-১৮৯০) আফসোস করে বলেন, খৃস্টান ধর্মে একথা বিশ্বাস করা জরুরী যে, তিনে এক হয় বা তিন ও এক একই সংখ্যা। কিন্তু এখন একথাও বিশ্বাস করা জরুরী হয়ে গেল যে, ১৪ এবং ১৮ একই সংখ্যা; কারণ পবিত্র গ্রন্থে কোনো ভুল থাকার সম্ভাবনা নেই।]
৯- দায়ূদ কর্তৃক মহাযাজকের রুটি খাওয়ার বর্ণনায় ভুল
মথিলিখিত সুসমাচারের ১২ অধ্যায়ের ৩-৪ শ্লোক নিম্নরূপ: ‘‘(৩) তিনি (যীশু) তাহাদিগকে (ইয়াহূদী ফরীশীগণকে) কহিলেন, দায়ূদ ও তাঁহার সঙ্গীরা ক্ষধিত হইলে তিনি যাহা করিয়াছিলেন, তাহা কি তোমরা পাঠ কর নাই? (৪) তিনি ত ঈশ্বরে গৃহে প্রবেশ করিলেন, এবং তাঁহার দর্শন-রুটী ভোজন করিলেন, যাহা তাঁহার ও তাঁহার সঙ্গীদের ভোজন করা বিধেয় ছিল না, কেবল যাজকবর্গেরই বিধেয় ছিল।’’
মার্কলিখিত সুসমাচারের ২ অধ্যায়ের ২৫-২৬ শ্লোক নিম্নরূপ: ‘‘(২৫) তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, দায়ূদ ও তাঁহার সঙ্গীরা খাদ্যের অভাবে ক্ষুধিত হইলে তিনি যাহা করিয়াছিলেন, তাহা কি তোমরা কখনো পাঠ কর নাই? (২৬) তিনি ত অবিয়াথর মহাযাজকের সময়ে ঈশ্বরের গৃহে প্রবেশ করিয়া, যে দর্শন-রুটী যাজকবর্গ ব্যতিরেকে আর কাহারও ভোজন করা বিধেয় নয়, তাহাই ভোজন করিয়াছিলেন, এবং সঙ্গিগণকেও দিয়াছিলেন।’’
এখানে ‘ও তাঁহার সঙ্গীরা’, ‘তাঁহার সঙ্গীদের’ এবং ‘‘সঙ্গীদেরকেও দিয়াছিলেন’’ কথাগুলি সবই ভুল। কারণ ‘দর্শন-রুটী’ ভোজন করার সময় দায়ূদ ‘একা’ ছিলেন, তাঁর সাথে অন্য কেউ ছিল না।
এছাড়া ‘তিনি ত অবিয়াথর মহাযাজকের সময়ে ঈশ্বরের গৃহে প্রবেশ করিয়া’ কথাগুলিও ভুল। কারণ এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট মহাযাজকের নাম ছিল ‘অহীমেলক’। ‘অবিয়াথর’ এ সময়ে যাজক ছিলেন না। অবিয়াথর ছিলেন অহীমেলকের পুত্র। এ কথাগুলি যে ভুল তা ১ শমূয়েল-এর ২১ অধ্যায়ের ১-৯ শ্লোক ও ২২ অধ্যায়ের ৯-২৩ শ্লোকে মূল ঘটনা পাঠ করলেই জানা যায়। মি. জুয়েল তার গ্রন্থে লিখেছেন যে, এ কথাগুলি ভুল। অন্যান্য অনেক পণ্ডিত তা স্বীকার করেছেন। তাদের মতে এ কথাগুলি পরবর্তীকালে সংযোজন করা হয়েছে, যা ইচ্ছাকৃত বিকৃতির প্রমাণ।
১০- ক্রুশের ঘটনার বর্ণনায় ভুল
মথিলিখিত সুসমাচারের ২৭ অধ্যায়ের ৫০-৫৩ শ্লোক নিম্নরূপ: ‘‘(৫০) পরে যীশু উচ্চ রবে চিৎকার করিয়া নিজ আত্মা সমর্পন করিলেন। (৫১) আর দেখ, মন্দিরের তিরস্করিণী (veil) উপর হইতে নীচ পর্যন্ত চিরিয়া দুইখান হইল, ভূমিকম্প হইল, ও শৈল সকল বিদীর্ণ হইল, (৫২) এবং কবর সকল খুলিয়া গেল, আর অনেক নিদ্রাগত পবিত্র লোকের দেহ উত্থাপিত হইল; (৫৩) এবং তাঁহার পুনরুত্থানের পর তাঁহারা কবর হইতে বাহির হইয়া পবিত্র নগরে প্রবেশ করিলেন, আর অনেক লোককে দেখা দিলেন।’’
মন্দিরের তিরস্করিণী (পর্দা) বিদীর্ণ হওয়ার কথা মার্কের ১৫/৩৮ ও লূকের ২৩/৪৫-এ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বাকি বিষয়গুলি, অর্থাৎ পাথরগুলি ফেটে যাওয়া, কবরগুলি খুলে যাওয়া, মৃত লাশগুলির বেরিয়ে আসা, যেরুশালেমে প্রবেশ করা, তথাকার অধিবাসীদের সাথে মৃতলাশগুলির দেখা-সাক্ষাত হওয়া ইত্যাদি বিষয় তারা উল্লেখ করেন নি।
এগুলি অত্যন্ত বড় বিষয়। মথির দাবি অনুসারে এ বিষয়গুলি প্রকাশ্যে সকলেই অবলোকন করেছিলেন। অথচ একমাত্র মথি ছাড়া সে সময়ের অন্য কোনো ঐতিহাসিক এই ঘটনাগুলি লিখলেন না! এমনকি এর পরের যুগের কোনো ঐতিহাসিকও এ বিষয়ে কিছু লিখেন নি। তারা ভুলে গিয়েছিলেন বলে দবি করার কোনো সুযোগ নেই; কারণ মানুষ সব কিছু ভুললেও এরূপ অস্বাভাবিক অত্যাশ্চর্য ঘটনা কখনো ভুলতে পারে না। বিশেষত লূক ছিলেন আশ্চর্য ও অলৌকিক ঘটনাবলির সংকলনে অত্যন্ত আগ্রহী। এ কথা কিভাবে কল্পনা করা যায় যে, সুসমাচার লেখকগণ সকলেই অথবা অধিকাংশই সাধারণ লৌকিক ঘটনা ও অবস্থাদি লিখবেন, অথচ মথি ছাড়া কেউই এই অসাধারণ অলৌকিক ঘটনাগুলি লিখবেন না?
এ কাহিনীটি মিথ্যা। পণ্ডিত নর্টন পবিত্র বাইবেলের বিশুদ্ধতা প্রমাণের জন্য সদা সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু তিনিও তার পুস্তকে এ কাহিনীটি মিথ্যা বলে বিভিন্ন প্রমাণ পেশ করেছেন। এরপর তিনি বলেন, এই কাহিনীটি মিথ্যা। সম্ভবত যিরূশালেমের ধ্বংসের পর থেকে এই ধরনের কিছু গল্প-কাহিনী ইয়াহূদীদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। সম্ভবত কেউ একজন মথিলিখিত সুসমাচারের হিব্রু পাণ্ডুলিপির টীকায় তা লিখেছিলেন এবং অনুলিপি লেখক (copier) লেখার সময় তা মূল পাঠের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এরপর সেই কপিটিই অনুবাদকের হাতে পড়ে এবং সেভাবেই তিনি অনুবাদ করেন।
পণ্ডিত নর্টনের বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, মথির সুসমাচারের (মূল হিব্রু থেকে প্রথম গ্রীক) অনুবাদক ছিলেন ‘রাতের আঁধারে কাঠ-সংগ্রহকারীর মত’ বিবেচনা ও বিচার শক্তিবিহীন। শুখনো ও ভিজের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা তার ছিল না। এ গ্রন্থের মধ্যে শুদ্ধ ও অশুদ্ধ যা কিছু পেয়েছেন সবই অনুবাদ করেছেন। এইরূপ একজনের অনুবাদ ও সম্পাদনার উপরে কি নির্ভর করা যায়? কখনোই না।
এ কথাটি ভুল। কারণ, শেলহ নিজেই অর্ফকষদের পুত্র ছিলেন, তিনি অর্ফকষদের পৌত্র ছিলেন না। আদিপুস্তক ১০/২৪ নিম্নরূপ: ‘‘আর অর্ফক্ষদ শেলহের জন্ম দিলেন।’’ আদিপুস্তক ১/১২-১৩ নিম্নরূপ: ‘‘অর্ফক্ষদ পঁয়ত্রিশ বৎসর বয়সে শেলহের জন্ম দিলেন। শেলহের জন্ম দিলে পর অর্ফক্ষদ চারি শত তিন বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন।’’ হিব্রু তাওরাত ও শমরীয় তাওরাত উভয়ই সুস্পষ্টভাবে এ সকল স্থানে উল্লেখ করেছে যে, অর্ফক্ষদ শেলহের পিতা এবং শেলহ অর্ফক্ষদের ঔরষজাত সন্তান। ১ বংশাবলি ১/১৮-তেও এ কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোথাও অর্ফকষদ ও শেলহের মধ্যে কৈননের নাম উল্লেখ করা হয় নি। এতে প্রমাণিত হয় যে, লূকের সুসমাচারের উপর্যু&ক্ত কথাটি ভুল। এখানে উল্লেখ্য যে তাওরাতের গ্রীক অনুবাদের (the Septuagint: LXX) শেলহের পিতা হিসেবে ‘‘কৈননের’’ নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাহ্যত খৃস্টানগণ নিজেদের সুসমাচারের বর্ণনাকে সঠিক বলে প্রমাণ করার জন্য অনুবাদের মধ্যে বিকৃতির আশ্রয় নিয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/612/19
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।