hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সংক্ষেপিত ইযহারুল হক্ক

লেখকঃ ড. মুহাম্মাদ আহমদ আব্দুল কাদির মালকাবী

৬০
৩. ১. ৩. কুরআন প্রসঙ্গে পাদরিগণের দুটি আপত্তি ৩. ১. ৩. ১. ভাষার উচ্চাঙ্গতা অলৌকিকত্বের অকাট্য প্রমাণ নয়
কুরআন প্রসঙ্গে খৃস্টান পাদরি ও প্রচারকগণ যে সকল আপত্তি ও বিভ্রান্তি প্রচার করেন তন্মধ্যে অন্যতম দুটি বিষয়। প্রথমটি হলো কুরআনের সাহিত্যিক উচ্চাঙ্গতাকে অলৌকিকতার প্রমাণ হিসেবে স্বীকার না করা।

তাঁরা বলেন: আমরা একথা স্বীকার করি না যে, কুরআনের ভাষা সর্বোচ্চ পর্যায়ের সাহিত্য ও আলঙ্কারিক সুষমায় মন্ডিত যা স্বাভাবিক সাহিত্য মানের উর্দ্ধে। যদি তা আমরা স্বীকারও করি, তবে তা কুরআনের অলৌকিকত্বের জন্য পরিপূর্ণ প্রমাণ বলে গণ্য হবে না, বরং অসম্পূর্ণ প্রমাণ বলে গণ্য হবে। কারণ আরবী ভাষায় যাদের পরিপূর্ণ দখল আছে শুধু তারাই এ অলৌকিকত্ব বুঝতে পারবেন। এছাড়া এতে প্রমাণিত হবে যে, গ্রীক, ল্যাটিন ও অন্যান্য ভাষায় সর্বোচ্চ সাহিত্যমানের গ্রন্থগুলি সবই আল্লাহ বাণী। সর্বোপরি অনেক সময় বাতিল, অন্যায় ও ঘৃণিত অর্থও সর্বোচ্চ সাহিত্যিক ও আলঙ্কারিক ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়।

আপত্তির পর্যালোচনা ও বিভ্রান্তির অপনোদন:

প্রথমত: পাদরিদের প্রথম কথা ‘‘আমরা একথা স্বীকার করি না যে, কুরআনের ভাষা সর্বোচ্চ পর্যায়ের সাহিত্য ও আলঙ্কারিক সুষমায় মন্ডিত যা স্বাভাবিক সাহিত্য মানের উর্দ্ধে’’ ভিত্তিহীন গলাবাজি ও সুস্পষ্ট সত্যকে বুঝার পরেও গায়ের জোরে অস্বীকার করার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। পূর্বের আলোচনা থেকে পাঠক তা জানতে পেরেছেন। [খৃস্টানগণ, বিশেষত, আরব খৃস্টানগণ, যাদের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি, কুরআনের ভাষার অভাবনীয় যাদুকরি প্রভাবের কথা খুব ভালভাবেই উপলব্ধি করেন। শুধু ভাষার সৌন্দর্য অর্জন ও হৃদয়ের প্রশান্তির জন্য অনেক আরব খৃস্টান কুরআন পাঠ করেন। অনেকে কুরআনের অনেক অংশ মুখস্থও করেন। এজন্য আরবীয় খৃস্টান পন্ডিতগণ দীর্ঘ কয়েক যুগ চেষ্টা করে কুরআনের শব্দ, শব্দবিন্যাস, আয়াত বিন্যাস সব কিছু চুরি করে অবিকল কুরআনী শৈলীতে একটি আরবী বাইবেল লিখেছেন। এমনকি প্রত্যেক ‘অধ্যায়ের’ পূর্বে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ লিখেছেন। বিভিন্ন খৃস্টান বেতার কেন্দ্র থেকে এই বাইবেল কুরআনের পদ্ধতিতে ‘কারিয়ানা’ তিলাওয়াত করা হয়। এত কিছুর পরেও যে কোনো সাধারণ আরব খৃস্টানও বুঝতে পারেন যে কুরআনের যাদুকরি প্রভাব এর মধ্যে নেই। কোনো আরব খৃস্টান আরবী ভাষার যোগ্যতা অর্জনের জন্য এ বাইবেল পাঠ করেন না, পড়ে মজাও পাওয়া যায় না। বরং এতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, কুরআন সত্যই অলৌকিক এবং এর ভাষা ও শৈলী অননুকরণীয়। দেখুন, Ahmed Deedat, The Choice: Islam and Christiaanity, Vol-1, page 227-228.]

দ্বিতীয়ত: তাদের দ্বিতীয় কথা ‘‘আরবী ভাষায় যাদের পরিপূর্ণ দখল আছে শুধু তারাই এই অলৌকিকত্ব বুঝতে পারবেন’’- কথাটি ঠিক হলেও এতে প্রমাণিত হয় না যে, তা কুরআনের অলৌকিকত্বের অসম্পূর্ণ প্রমাণ।

বস্তুত, কুরআনের সাহিত্যিক ও অলঙ্কারিক অলৌকিকত্ব ভাষাবিদ ও সাহিত্যিকদের নিকটেই সর্বোচ্চ পর্যায়ে উদ্ভাসিত। কুরআনের মুকাবিলায় তাদের অক্ষমতা, অপারগতা ও তাদের স্বীকারোক্তি তা প্রমাণ করেছে। আরবী ভাষাভাষী মানুষেরা নিজেদের স্বভাবজাত রুচি দিয়ে কুরআনের অলৌকিক ভাষাশৈলী অনুভব করেন। অন্যভাষার পণ্ডিতগণও আরবী ভাষার সাহিত্য ও অলঙ্কার শাস্ত্রে পান্ডিত্য অর্জন করলে তা বুঝতে পারেন। আর সকল জাতি ও ধর্মের সাধারণ মানুষেরা হাজার হাজার আরবী ভাষী মানুষ ও অন্যান্য জ্ঞানী, গুণী ও পণ্ডিতের সাক্ষ্য থেকে তা জানতে পারেন। এভাবে প্রমাণিত হয় যে, এ ভাষাশৈলী কুরআনের অলৌকিক বৈশিষ্টের অসম্পূর্ণ প্রমাণ নয়, বরং একটি পরিপূর্ণ প্রমাণ। অনেক কিছুই প্রমাণ করে যে, কুরআন আল্লাহর বাণী। সেগুলির মধ্যে এটিও একটি।

মুসলিমগণ দাবি করেন না যে, শুধু সাহিত্যমানই কুরআনের অলৌকিকত্বের একমাত্র প্রমাণ। অনুরূপভাবে তাঁরা দাবি করেন না যে, শুধু কুরআনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একমাত্র অলৌকিক চিহ্ন। বরং মুসলিমগণ দাবি করেন যে, বহু বিষয় কুরআনের অলৌকিকত্ব প্রমাণ করে, যেগুলির একটি বিষয় হলো অলৌকিক সাহিত্যমান। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আল্লাহ বহুসংখ্যক অলৌকিক চিহ্ন প্রদান করেছিলেন, কুরআন সেগুলির একটি। এ অলৌকিকত্ব বর্তমান যুগ পর্যন্ত প্রকাশিত ও প্রতিষ্ঠিত। বিরোধীদের অক্ষমতাও প্রমাণিত। কুরআন অবতীর্ণ হওয়া থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কেউই এর মুকাবিলায় একটি ছোট্ট সূরাও পেশ করতে পারেন নি।

তৃতীয়ত: পাদরিগণ বলেছেন: ‘‘এতে প্রমাণিত হবে যে, গ্রীক, ল্যাটিন ও অন্যান্য ভাষায় সর্বোচ্চ সাহিত্যমানের গ্রন্থগুলি সবই আল্লাহ বাণী।’’ তাদের এ কথাটির মধ্যে অনেক ফাঁক রয়েছে। কারণ:

(১) পূর্ববর্তী আলোচনায় কুরআনের মধ্যে ভাষা ও সাহিত্যমানের যে বিভিন্ন দিক আমরা দেখেছি এরূপ বিভিন্নমুখি সাহিত্যমান গ্রীক, ল্যাটিন বা অন্যান্য ভাষার কোনো পুস্তকের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই না।

(২) এ সকল পুস্তকের লেখকগণ তাদের নিজেদের ভাববাদিত্ব বা তাদের পুস্তকের অলৌকিকত্ব দাবি করেন নি।

(৩) এ সকল ভাষার অন্যান্য লেখক ও সাহিত্যিক সে সকল পুস্তকের অনুরূপ পুস্তক রচনা করতে অক্ষম হয়েছেন বলেও প্রমাণিত হয় নি।

যদি কেউ এ সকল পুস্তকের ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত বিষয় তিনটি দাবি করেন তবে তাকে তা প্রমাণ করতে হবে। তাকে গ্রীক, ল্যাটিন বা অন্য কোনো ভাষার কোনো একটি পুস্তক সম্পর্কে প্রমাণ করতে হবে যে, উক্ত পুস্তকটিতে বিভিন্নমুখি অলৌকিক সাহিত্যমান রয়েছে, উক্ত পুস্তকের লেখক তার অলৌকিকত্ব দাবি করেছিলেন এবং সে ভাষার সাহিত্যিকগণ তার চ্যালেঞ্জ মুকাবিলায় অক্ষম হয়েছিলেন। আর এ বিষয়গুলি প্রমাণ করতে না পারলে পাদরি সাহেবদের উপর্যুক্ত কথাটি ভিত্তিহীন ও অন্তসারশূন্য বাতিল কথা বলে গণ্য হবে।

আর এরূপ বিষয় দাবি ও প্রমাণ করতে হলে তাকে অবশ্যই কুরআনের ভাষায় ও দ্বিতীয় যে ভাষায় অনুরূপ গ্রন্থ বিদ্যমান বলে দাবি করছেন উভয় ভাষায় সুগভীর পান্ডিত্য অর্জন করতে হবে। আর প্রকৃতপক্ষে এরা কেউ নিজের ভাষা ছাড়া অন্য ভাষার তেমন কিছুই জানেন না। অন্য ভাষার পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, একবচন ও বহুবচনের মধ্যেও পার্থক্য করতে পারেন না। অন্য ভাষার বিভক্তি চিহ্নের পার্থক্যও করতে পারেন না। কাজেই কোনটি উচ্চমানের সাহিত্যকর্ম, কোনটি উচ্চতর তা তারা কিভাবে বুঝবেন!

তাঁদের ভাষাগত দুর্বলতার একটি নমুনা দেখুন। ভ্যাটিকানের পোপ অষ্টম উর্বানের (Urban) [পোপ অষ্টম উর্বান ১৫৬৮ খৃস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ১৬২৩ খৃস্টাব্দে পোপ পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৬৪৩/১৬৪৪ খৃস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।]-এর নির্দেশে সিরিয়ার প্রধান বিশপ সার্কিস হারূনী আরবী, গ্রীক, হিব্রু ও অন্যান্য ভাষায় অভিজ্ঞ বহুসংখ্যক পাদরি, সন্যাসী, পণ্ডিত ও ভাষাবিদকে একত্রিত করেন। তিনি তাদেরকে বাইবেলের আরবী অনুবাদটিকে পরিমার্জিত করতে দায়িত্ব দেন; কারণ আরবী অনুবাদটি অগণিত ভুলে ভরা ছিল। পোপের নির্দেশে ও বিশপের তত্ত্বাবধানে এ সকল পণ্ডিত প্রাণপন পরিশ্রম করে ১৬২৫ খৃস্টাব্দে বাইবেলের আরবী অনুবাদটি পরিমার্জন ও সংশোধন করে প্রকাশ করেন। কিন্তু এভাবে পরিপূর্ণ সংশোধন ও পরিমার্জনের পরেও এই অনুবাদের মধ্যে অগণিত ভুলভ্রান্তি থেকে যায়; কারণ ভুলভ্রান্তি খৃস্টীয় প্রকৃতির সাথে ওতপ্রোত জড়িত।

এজন্য তারা উপর্যুক্ত অনুবাদটির ভূমিকায় এ বিষয়ে ওযরখাহি পেশ করেন। তারা লিখেছেন: ‘‘অতঃপর আপনি এই অনুবাদের মধ্যে কিছু কথা এমন দেখবেন যা ভাষার নিয়মের বাইরে বরং ভাষার নিয়মনীতির উল্টো। কোথাও স্ত্রীলিঙ্গের স্থলে পুংলিঙ্গ ব্যবহার করা হয়েছে, কোথাও বহুবচনের স্থলে একবচন ব্যবহার করা হয়েছে এবং কোথাও দ্বিবচনের স্থলে রয়েছে বহুবচন। কোথাও ভুল বিভক্তি চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে: ইসমের মধ্যে যের বা যবরের স্থানে এবং ফি'লের মধ্যে জায্মের স্থলে পেশ ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও স্বরচিহ্নের স্থলে অতিরিক্ত বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া অনুরূপ অন্যান্য বিষয় দেখবেন। এর কারণ হলো খৃস্টানদের ভাষা সাদাসিদে। এজন্য এরূপ ভুলভ্রান্তি ভরা ভাষা তাদের বৈশিষ্ট্য। এ বিষয়টি শুধু আরবী ভাষার ক্ষেত্রেই নয়, বরং ল্যাটিন, গ্রীক ও হিব্রু ভাষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ সকল ভাষাতেও ভাববাদী ও প্রেরিতগণ এবং পূর্ববর্তী ধর্মগুরুগণ ভাষার নিয়মনীতি বর্জন করতেন। কারণ, পবিত্র আত্মা ঐশ্বরিক শব্দের প্রশস্ততাকে ভাষার ব্যাকরণের সংকীর্ণ সীমারেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে চান নি। এজন্য ভাষার বিশুদ্ধতা, সাহিত্যমান ও অলঙ্কার ছাড়াই তিনি ঐশ্বরিক রহস্যাবলি আমাদেরকে প্রদান করেছেন।’’ [মানব রচিত জাল গ্রন্থগুলির দুর্বলতা ও অক্ষমতা ঢাকতে কি অদ্ভুত যুক্তি!! কথাটির অর্থ হলো, পবিত্র আত্মা ঈশ্বর সৃষ্ট খাদ্যের প্রশস্ততাকে সুস্বাদু রান্নার মধ্যে সংকীর্ণ করতে চান নি। তাই তিনি কাঁচা খাদ্য গোবর মিষিয়ে পেশ করেছেন!! যেন খাদ্যের পুষ্টি পাওয়া যায় কিন্তু স্বাদের তৃপ্তি না মেলে!! খাদ্যের স্বাদ যেমন পুষ্টিকর খাদ্য সহজে ও তৃপ্তির সাথে গ্রহণ করতে সাহায্য করে, ভাষার বিশুদ্ধতা ও উচ্চাঙ্গতা তেমনি ঐশ্বরিক সত্যকে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করতে সাহায্য করে। পবিত্র আত্মা কি সত্যকে দুঃসাধ্য করতে চান?]

চতুর্থত: পাদরিগণ বলেছেন, ‘‘অনেক সময় বাতিল, অন্যায় ও নিন্দনীয় অর্থও সর্বোচ্চ সাহিত্যিক ও আলঙ্কারিক ভাষায় প্রকাশ করা যায়’’।

তাদের এ কথটি এখানে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। কুরআনের ক্ষেত্রে এরূপ সম্ভাবনার কোনো অবকাশই নেই। কুরআনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কল্যাণময় ও প্রশংসনীয় কথায় পরিপূর্ণ। কুরআনের আলোচ্য বিষয়গুলি সবই প্রশংসিত ও কল্যাণময়। যেমন:

(১)আল্লাহর মহান গুণাবলি বর্ণনা করা এবং অক্ষমতা, অজ্ঞতা, অত্যাচার ইত্যাদি সকল ত্রুটি ও দুর্বলতা থেকে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা।

(২) বিশুদ্ধ একত্ববাদের প্রচার এবং সকল প্রকারের শিরক, বহু উপাস্য উপাসনা নিষেধ করা, এবং বিশেষ করে ত্রিত্ববাদ নিষেধ করা, যা শিরক ও বহু-ইশ্বরবাদিতার একটি প্রকাশ।

(৩) নবীগণের বা ভাববাদীগণের আলোচনা করা এবং মুর্তিপূজা, অবিশ্বাস ও অন্যান্য পাপ-অন্যায় থেকে তাঁদের পবিত্রতা বর্ণনা করা। নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারীদের প্রশংসা করা। নবীদেরকে যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের নিন্দা করা। সাধারণভাবে সকল নবীকে বিশ্বাস করার এবং বিশেষ করে যীশু খৃস্ট এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর বিশ্বাস করার গুরুত্ব বর্ণনা করা।

(৪) চূড়ান্ত পরিণতিতে বিশ্বাসীগণ অবিশ্বাসীদের উপর বিজয়ী হবেন সে সম্পর্কে ওয়াদা করা।

(৫) পুনরুত্থান, পরকাল, পারলৌকিক জীবন, পুনরুত্থান দিবসে ধার্মিক ও অধার্মিকদের কর্মের ফলাফল প্রদান, জান্নাত- জাহান্নাম বা স্বর্গ ও নরকের কথা উল্লেখ করা। পার্থিব জগতের অস্থায়িত্ব ঘোষণা করা এবং জগৎমুখিতার নিন্দা করা। পারলৌকিক জীবনের প্রশংসা করা ও তার স্থায়িত্ব বর্ণনা করা।

(৬) ধর্মব্যবস্থার বৈধ ও অবৈধ, আদেশ নিষেধ ও পানাহার, ইবাদত-বন্দেগি, ব্যক্তিগত ও অন্যান্য সকল বিধিবিধান বর্ণনা করা।

(৭) আল্লাহর প্রেম ও আল্লাহর প্রিয় মানুষদের প্রেম অর্জনে উৎসাহ প্রদান। পাপী ও অধার্মিকদের সাহচর্য গ্রহণ থেকে নিষেধ করা।

(৮) সকল ক্ষেত্রে অন্তরের বিশুদ্ধতা ও শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দয়া লাভের জন্য কর্ম করার গুরুত্ব বর্ণনা করা। লোক দেখানো বা লোক শোনানো কর্ম বা মানুষের প্রশংসা লাভের জন্য কর্ম করার নিন্দা।

(৯) উত্তম আচরণ অর্জনের জন্য সাধারণভাবে ও বিস্তারিতভাবে উৎসাহ প্রদান করা, সদাচারণ ও উত্তম চারিত্রিক গুণাবলির প্রশংসা করা। অসদাচারণ ও অসৎস্বভাবের নিন্দা করা।

(১০) আল্লাহর ভয়, আল্লাহর যিকর-স্মরণ ও ইবাদতের জন্য উৎসাহ ব্যঞ্জক উপদেশ ও আজ্ঞা প্রদান।

নিঃসন্দেহে জ্ঞান, বিবেক, যুক্তি ও সকল ধর্মের ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে এ বিষয়গুলি প্রশংসিত। এ সকল বিষয়ের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য এবং পাঠকের মনের গভীরে তাকে স্থায়ী আসন দেওয়ার জন্য কুরআনে এগুলি বারংবার বিভিন্ন আঙ্গিকে আলোচনা করা হয়েছে। এ সকল বিষয় যদি নিন্দনীয় হয়, তবে প্রশংসনীয় বিষয় কী হবে?

তবে লক্ষণীয় যে, ইয়াহূদী-খৃস্টানগণের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বাইবেলের মধ্যে বহুল আলোচিত ও বারংবার বিভিন্ন আঙ্গিকে পুনরাবৃত্ত নিম্নোক্ত বিষয়গুলি কুরআনের মধ্যে পাওয়া যায় না:

(১) বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে যে, ভাববাদী লোট (লূুত আ) মদ পান করে মাতাল হয়ে তার কন্যাদ্বয়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হন। দেখুন: আদিপুস্তক ১৯/৩০-৩৮।

(২) বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র বা বড় ছেলে দায়ূদ উরিয়ের স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হন এবং উরিয়কে কৌশলে হত্যা করেন। এরপর উক্ত স্ত্রীকে বিবাহ করেন। দেখুন: ২ শমূয়েল ১১/১-২৭।

(৩) বাইবেলে আছে যে, হারোণ গোবৎসের প্রতিমা তৈরি করে তার পুজা করেন। দেখুন: যাত্রাপুস্তক ৩২/১-৬।

(৪) বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুলাইমান আলাইহিস সালাম শেষ জীবনে ধর্মত্যাগ করে মুরতাদ্দ-মুশরিক হয়ে প্রতিমা পূজা করতে শুরু করেন এবং মুর্তিপূজার প্রচার প্রসারের জন্য মন্দিরাদি নির্মাণ করেন। দেখুন: ১ রাজাবলি ১১/১-১৩।

(৫) বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একজন ভাববাদী একান্তই হিংসাবশত অন্য একজন ভাববাদীকে ঈশ্বরের ভাববানী বা ওহীর নামে মিথ্যা কথা বলে ধোঁকা দেন এবং তার কথা বিশ্বাস করে প্রথম ভাববাদী ঈশ্বরের ক্রোধের মধ্যে নিপতিত হয়ে নিহত হন। দেখুন: ১ রাজাবলি ১৩/১-৩০।

(৬) ইস্রায়েল বা যাকোবকে (ইয়াকূব আ.) বাইবেলে ঈশ্বরের প্রথমজাত (firstborn) পুত্র বা বড় ছেলে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাইবেলের সকল ভাববাদী বা সকল হিব্রু ভাববাদীর মূল পিতা তিনিই। বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঈশ্বরের এ প্রথমজাত পুত্র বা বড় ছেলে ইস্রায়েল (ইয়াকূব আ)-এর পুত্র যিহূদা আপন পুত্রবধু তামর-এর সাথে ব্যভিচার করেন এবং এ ব্যভিচারের ফলে অবৈধ জারজ সন্তান ‘পেরস’ এর জন্ম হয়। দায়ূদ, শলোমন ও যীশু- ঈশ্বরের এ তিন পুত্র [ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি যে, বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে এরা তিনজনই ঈশ্বরের পুত্র, প্রথম জন ঈশ্বরের বড় ছেলে (firstborn) এবং স্বয়ং জন্মদেওয়া (begotten) ছেলে, দ্বিতীয় জন ঈশ্বরের ছেলে এবং তৃতীয়জন ঈশ্বরের একমাত্র জন্মদেওয়া ছেলে (only begotten son)। ঈশ্বরের এ তিন পুত্রই জারজ সন্তানের বংশধর।] সকলেই এ যারজ সন্তানের বংশধর ছিলেন। দেখুন: আদিপুস্তক ৩৮/১২-৩০।

(৭) বাইবেলে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঈশ্বরের এ প্রথমজাত পুত্র বা বড় ছেলে ইস্রায়েলের প্রথমজাত পুত্র বা বড় ছেলে পুত্র রূবেন তার পিতার ‘বিলহা’ নামের উপপত্নীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হন। ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র ইস্রায়েল তার প্রথমজাত পুত্রের নিজ বিমাতার সাথে ব্যভিচার এবং চতুর্থ পুত্রের পুত্রবধুর সাথে ব্যভিচারের সংবাদ জানার পরও তাদেরকে ঈশ্বরের বিধান অনুসারে শাস্তি প্রদান করেন নি। উপরন্তু ব্যভিচারী যিহূদাকে পরিপূর্ণ বরকত ও চিরস্থায়ী কল্যাণের জন্য আশীর্বাদ বা দুআ করেন। তিনি তাঁর পুত্রগণের মধ্যে এ যিহূদার জন্য সবচেয়ে বেশি দুআ করেন। যাত্রাপুস্তক ৪/২২-২৩; আদিপুস্তক ৩৫/২২, ৪৯/১-২৮।

(৮) আমরা দেখেছি যে, বাইবেলের বর্ণনানুসারে ঈশ্বরের আরেকজন প্রথমজাত পুত্র বা বড় ছেলে (firstborn) এবং জন্মদেওয়া পুত্র (begotten son) দায়ূদ আলাইহিস সালাম। বাইবেলের বর্ণনানুসারে তিনি নিজেই পরস্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করতেন। এ ছাড়াও বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঈশ্বরের এ বড় ছেলের (দায়ূদের) প্রিয় পুত্র তারই প্রিয় কন্যার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। ঈশ্বরের এ প্রথমজাত পুত্র তার পুত্র ও কন্যার ব্যভিচারের সংবাদ জানতে পারেন। মোশির ব্যবস্থা অনুসারে ব্যভিচারীর যে শাস্তি পাওনা সে শাস্তি তিনি তার পুত্র-কন্যাকে প্রদান করেন নি। দেখুন: গীতসংহিতা ২/৭, ৮৯/২৭, ২ শমূয়েল ১৩/১-৩৯।

(৯) খৃস্টানগণের বিশ্বাস অনুসারে যীশু খৃস্টের ১২ জন প্রেরিতের মর্যাদা মোশি ও অন্য সকল ইস্রায়েলীয় ভাববাদীর চেয়েও বেশি। এ মহান মর্যাদার অধিকারী প্রেরিত শিষ্যদের একজন ছিলেন ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা (Judas Iscariot), যিনি অলৌকিক চিহ্নাদির অধিকারী প্রেরিত রাসূল ছিলেন [মথি ১০/১-৮; মার্ক ৩/১৪-১৫; লূক ৬/১৩।]। এ মহান প্রেরিত একজন চোর ছিলেন। তার কাছে টাকার থলি থাকত এবং তাতে যা রাখা হতো তিনি তা চুরি করতেন। [যোহন ১২/৬।] এ মহান প্রেরিত শিষ্য মাত্র ত্রিশটি রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে তার ধর্ম বিক্রয় করে দেন। এ সামান্য অর্থের জন্য তিনি তার ঈশ্বরকে ইয়াহূদীদের হাতে তুলে দিতে রাযি হয়ে যান। ইয়াহূদীরা তার ঈশ্বরকে ধরে নিয়ে ক্রুশে বিদ্ধ করে। [মথি ২৬/১৪-১৬, ২৭/৩-৯; মার্ক ১৪/১০-১১; লূক ২২/৩-৬; যোহন ১৮/১-৫।]

(১০) ইয়াহূদী মহাযাজক কায়াফা (Caiaphas) ঈশ্বরের একজন ভাববাদী (prophet) বা নবী ছিলেন বলে সুসমাচার লেখক যোহন সাক্ষ্য দিয়েছেন [যোহন ১১/৪৯-৫১।]। এ ভাববাদী যীশুকে মিথ্যাবাদী ও অবিশ্বাসী (কাফির) বলে ঘোষণা করেন, তাঁকে লাঞ্ছিত করেন এবং তাকে হত্যা করার রায় প্রদান করেন। [মথি ২৬/৫৭-৬৮; মার্ক ১৪/৫৩-৬৫; লূক ২২/৫৪-৭১; যোহন ১৮/১২-২৪।] খৃস্টানদের বিশ্বাসানুসারে যীশুই ঈশ্বর (God Incarnate)। তাহলে কায়াফা ছিলেন যীশুরই একজন ভাববাদী। আর এ ভাববাদী স্বয়ং তার ঈশ্বরকে মিথ্যবাদী ও কাফির বলে ঘোষণা করলেন, তাকে লাঞ্ছিত করলেন এবং তাকে হত্যা করার রায় দিলেন!

এ ধরনের আরো অনেক নোংরা ও ঘৃণিত বিষয় বাইবেলের মধ্যে রয়েছে। খৃস্টান ধর্মগুরু, পণ্ডিত ও ধর্মপ্রচারকদের কাছে এগুলি সুপরিচিত। তাঁরা এ সকল কথা সঠিক, নির্ভুল ও ধর্মগ্রন্থের বাণী বলে বিশ্বাস করেন। এ সকল বিষয়কে তারা উচ্চাঙ্গের ভাবসম্পন্ন, সুন্দর, মহান, আত্মার খোরাক ও সুরুচিসম্পন্ন বিষয় বলে গণ্য করেন। সম্ভবত এ সকল ‘‘উচ্চাঙ্গের ভাবসম্পন্ন, সুন্দর ও মহান বিষয় (ব্যভিচার, অনাচার, অগম্য-গমন, মিথ্যা, ঈশ্বর ও ভাববাদীগণের নিন্দাজ্ঞাপক কথা, মূর্তিপূজা, বুদ্ধি বিরোধী কথা ইত্যাদি) যদি কুরআনের মধ্যে বিদ্যমান থাকত তবে হয়ত খৃস্টান পাদরি ও যাজকগণ কুরআনকে ‘ঈশ্বরের বাণী’ (God's Word) বলে মেনে নিতেন। কিন্তু যেহেতু কুরআনের মধ্যে এ সকল ‘মহান’ বিষয় ও অনুরূপ বিষয়াদি আলোচিত হয় নি, সেহেতু তারা কুরআনকে ঈশ্বরের বাণী বলে মানতে পারছেন না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন